
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের আন্দোলন চলমান আছে। সে আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে আমরা কাজ করছি। শিগগিরই চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণা আসবে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণফোরামের একাংশ ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে একথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী, লুটেরা, গণবিরোধী, অবৈধভাবে জোর করে, সংবিধান লঙ্ঘন করে শুধুমাত্র রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে এই সরকার ক্ষমতায় বসে আছে। তারা জনগণের সব অধিকারগুলো কেড়ে নিয়েছে। বিশেষ করে ভোটের অধিকার, কথা বলার আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে কাজ করছি : ফখরুল
অধিকার, লেখার অধিকার সমস্ত কিছু কেড়ে নিয়েছে। আমরা এই লুটেরাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছি। আমরা প্রায় ৩৬টি দল একমত হয়েছি। আমাদের আন্দোলন চলমান আছে, সেটাকে চূড়ান্ত পর্যায়ে আনতে আমরা কাজ করছি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে আমাদের আলোচনা হয়েছে যুগপৎ আন্দোলন ও সামনে কী ধরনের কর্মসূচি আসবে সে বিষয়ে। সব দলের দাবিগুলোকে নিয়ে এক দফার আন্দোলনরূপ কীভাবে আনা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’
আশাবাদ ব্যক্ত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত আশাবাদী এদেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তারা এই অবৈধ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে।’
গণফোরামের একাংশের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘এই সরকার যে নৈরাজ্য, লুটেরা সৃষ্টি করেছে। দ্রব্যমূল্যের নাভিশ্বাস পর্যায় গেছে। এদেশের জনগণ মনে করে এই সরকারকে আর এক মুহূর্তে ক্ষমতায় রাখা যাবে না। আমরা বলেছি, আগামী নির্বাচনে নির্দিষ্ট সরকারের অধীনে হতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না এবং জনগণ সেটা গ্রহণ করবে না। সেই লক্ষ্যেই আমরা এক দফার আন্দোলনে যাচ্ছি অচিরেই।’
বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। গণফোরামের সভাপতি মোস্তফা মহসিন মন্টুর নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, জগলুল হায়দার আফ্রিক, মহিউদ্দিন আবদুল কাদের ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী, মহাসচিব মো. আবদুল কাদের।
যশোর সদর উপজেলায় বাসচাপায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের সাত যাত্রী নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে লেবুতলা বাজারে যশোর-মাগুরা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের পাঁচজন রয়েছেন। তাদের বাড়ি যশোরের বাঘারপাড়ার যাদবপুর ও সদর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামে।
যশোরের এ দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মাথায় সিলেটে বাসচাপায় নিহত হয়েছেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার (ইজিবাইক) আরও পাঁচ যাত্রী। গতকাল রাত ১০টার দিকে জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত এলাকায় সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এদিকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।
যশোরের দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচজনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলো ইজিবাইকচালক সদর উপজেলার সুলতানপুরের সাইফুলের ছেলে ইমরান হোসেন (২৭), বাঘারপাড়ার যাদবপুরের হেলালের যমজ দুই ছেলে হোসেন ও হোসাইন (২), তার মেয়ে খাদিজা (৭), একই গ্রামের বাবুল মুন্সির স্ত্রী ফাহিমা খাতুন (৩০)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, যশোর থেকে ছেড়ে যাওয়া মাগুরাগামী বাস একটি ইজিবাইককে চাপা দেয়। পরে স্থানীয় বাসিন্দা, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করেন।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেপরোয়া গতির বাস সামনে থাকা ইজিবাইকের ওপর উঠে যায়। এ সময় আরোহীসহ ইজিবাইকটি বাসের নিচে চাপা পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে চারজন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও তিনজনের মৃত্যু হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর চালক ও হেলপার বাস রেখে পালিয়ে যায়। তাদের আটকের চেষ্টা চলছে।’
সিলেটের দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন জৈন্তাপুরের বড়খোলা গ্রামের মৃত খুর্শেদ আলমের ছেলে মুসদ আলী (৫০), শ্রীখেল গ্রামের মোজাম্মেল আলীর ছেলে নূর উদ্দিন (৫৫), বারগাতি গ্রামের আবদুল বারীর ছেলে আবদুল লতিফ (৫০) ও ফরফরা গ্রামের তরিকুল ইসলামের ছেলে মোহাম্মদ কামাল (২৫)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রাত ১০টার দিকে একটি বাস সিলেট থেকে জাফলংয়ের দিকে যাচ্ছিল। মহাসড়কের দরবস্ত এলাকায় বিপরীতমুখী ইজিবাইকের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ইজিবাইকটিতে সাতজন যাত্রী ছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করেন। এ দুর্ঘটনায় ইজিবাইকের অন্তত পাঁচ যাত্রী নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন দরবস্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাহারুল আলম বাহার।
টাঙ্গাইলে আলাদা তিনটি সড়ক দুর্ঘটনায় নারী ও শিশুসহ পাঁচজন নিহত হয়েছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছে ১২ জন। গতকাল বিকেলে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের রাবনায় এলাকায় কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপের সংঘর্ষে তিনজন এবং বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় এক নারী ও বাসাইলে এক শিশু নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলো জেলার গোপালপুর উপজেলার হযরত আলীর ছেলে শাহ আলম (৪০), সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার গোয়াকড়া গ্রামের হামিদ মিয়ার ছেলে শাহান শাহ (২৫) ও নুরজাহান (৪৫)। তারা সবাই পিকআপের যাত্রী ছিলেন।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল পুলিশ বক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম জানান, ঈদের ছুটি শেষে গতকাল বিকেলে সিরাজগঞ্জ
থেকে ঢাকায় কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য একটি পিকআপে করে রওনা হন বেশ কয়েকজন। পিকআপটি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের রাবনা বাইপাস এলাকায় পৌঁছলে একই দিক থেকে আসা একটি কাভার্ড ভ্যান পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে পিকআপে থাকা ১৫ যাত্রী আহত হন। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে একই মহাসড়কে বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় বাসচাপায় এক নারী ও বাসাইলে মোটরসাইকলচাপায় এক শিশুর মৃত্যু হয়।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশে কক্সবাজারগামী সৌদিয়া বাসের ধাক্কায় মো. জসিম উদ্দিন (৩৮) নামে এক নিরাপত্তাকর্মী নিহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার দোহাজারী পৌরসভা শাহি মসজিদসংলগ্ন দোহাজারী বাজারে নবী হোটেল অ্যান্ড বিরানি হাউজের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বাসের চালক মো. মিজানুর রহমানকে (৪৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নিহত জসিম উপজেলার দোহাজারী পৌরসভা ২ নম্বর ওয়ার্ড বারুদখানা এলাকার মৃত মো. ইসহাকের ছেলে। তিনি দোহাজারী কাঁচাবাজারের নৈশপ্রহরী ছিলেন।
খুলনায় সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী সোনিয়া আক্তার নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় তার স্বামী গুরুতর আহত হয়েছেন। গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নগরীর লবণচরা থানার বিশ্বরোড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সোনিয়া জি গ্যাস কোম্পানির কর্মকর্তা আবদুল আলীমের স্ত্রী। তারা দাকোপ উপজেলায় বসবাস করেন।
লবণচরা থানার সহকারী পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মো. সাইদুর রহমান বলেন, আলীম দম্পতি রাজবাড়ী জেলার বাসিন্দা। চাকরির সুবাদে তারা খুলনার দাকোপ উপজেলায় থাকেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার হওয়ায় তারা ঘুরতে বের হন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মোটরসাইকেলে নগরীর জিরোপয়েন্টের পৌঁছায় এ দম্পতি। এ সময় পেছন থেকে বিআরটিসির একটি বাস মোটরসাইকেলটি ধাক্কা দেয়। সোনিয়া রাস্তার ওপর পড়ে গেলে বাসটির চাকা তার মাথার ওপর দিয়ে চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় স্বামী গুরুতর আহত হন। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বগুড়া সদরে ট্রাকচাপায় আল ইমরান (৩৫) নামে এক মোটরসাইকেলচালক নিহত ও এর আরোহী আহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে সদর উপজেলার বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের মাটিডালি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত আল ইমরান জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় জিয়ানগর ইউনিয়নের বড়িয়া গ্রামের ইয়াসিন আলীর ছেলে।
বগুড়া ফুলবাড়ী ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক জালাল উদ্দিন জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে বগুড়া মমইন ইকোপার্ক থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজ বাড়ি দুপচাঁচিয়া যাওয়ার পথে মাটিডালি এলাকায় রাস্তার ওঠার সময় মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যান ইমরান। এ সময় একটি মালবাহী ট্রাক তার ওপর উঠে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই ইমরান মারা যান। ট্রাকটি হাইওয়ে পুলিশ জব্দ করেছে। তবে ট্রাকের চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছে।
কুড়িগ্রামের রাজীবপুরে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাহসিন জামান (১৪) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকেলে উপজেলার সদর ইউনিয়নের বড়াইডাঙ্গী জামে মসজিদ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত তাহসিন উপজেলার সদর ইউনিয়নের চররাজীবপুর বটতলা গ্রামের প্রভাষক মনিরুজ্জামান মিলনের ছেলে। সে রাজীবপুর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগে সড়ক দুর্ঘটনায় সিএনজি অটোরিকশার চালক নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম সুমন (৩৬)। অন্যদিকে দয়াগঞ্জ ট্রাকস্ট্যান্ড মোড়ে বাসের ধাক্কায় সিএনজি অটোরিকশা আরোহী একই পরিবারের তিনজনসহ চারজন আহত হয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় সুমনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতি গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের ছেলে সুমন। এক ছেলে ও দুই মেয়ের জনক তিনি। থাকতেন রাজধানীর হাজারীবাগ বোরহানপুর বটতলা বাজার এলাকায়।
নিহত সুমনের মামা মো. আল-আমিন জানান, ভাড়া করা সিএনজি অটোরিকশা চালাতেন সুমন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে অটোরিকশা নিয়ে বের হয়েছিলেন। এরপর রাত সাড়ে ৪টার দিকে তারা খবর পান, রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ডে কাভার্ড ভ্যান ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়েছেন সুমন। তার অটোরিকশাটিও দুমড়েমুচড়ে গেছে। তখন তারা ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে সুমনের মরদেহ দেখতে পান।
যাত্রাবাড়ী থানার এসআই রফিকুল ইসলাম জানান, রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ডে ফুটওভার ব্রিজের নিচে একটি কাভার্ড ভ্যান মোড় নিচ্ছিল। তখন অটোরিকশাটি সজোরে কাভার্ড ভ্যানের পেছনে ধাক্কা দেয়। এতে চালকের মৃত্যু হয়। অবশ্য অটোরিকশায় কোনো যাত্রী ছিল না। ঘটনার পরপরই কাভার্ড ভ্যানটি চালকসহ জব্দ করা হয়েছে।
দয়াগঞ্জ ট্রাকস্ট্যান্ড মোড়ে বাসের ধাক্কায় আহত সিএনজি অটোরিকশা আরোহীরা হলেন শামসুন্নাহার (৫২), তার ছেলে আলিম উদ্দিন পলাশ (২৯) ও মেয়ে সালেহা বেগম (৩৫) এবং অটোরিকশাচালক মো. আমজাদ আলী (৬০)। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
আহত পলাশ জানান, তাদের বাড়ি জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায়। গ্রামের বাড়ি থেকে সকালে ট্রেনে করে ঢাকার কমলাপুর আসেন তারা। সেখান থেকে সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে তাদের বাসা ওয়ারীর নারিন্দায় যাচ্ছিলেন। পথে একটি বাস তাদের বহনকারী অটোরিকশাকে ধাক্কায় দেয়।
খুলনা ব্যুরো, ঢামেক প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে প্রতিবেদনটি তৈরি
সারা দিন মানুষের ভিড়ে হিজিবিজি লেগে থাকা রাস্তা, ঘিঞ্জি গলি, মনে হয় একটু ঝুঁকে পড়া ঘরবাড়িগুলো আকাশ ঢেকে ফেলতে ব্যস্ত। কোনো বর্ষায় তেড়ে বৃষ্টি নামলে ঝাপসা হয়ে যাওয়া বাহাদুর শাহ পার্কের সামান্য সবুজ, নিভু নিভু সিঙাড়ার দোকান, টমাস ডেন্টালের সবুজ দরজা। জনসন রোডের মাথায় রিকশা থেকে নেমে মাথা বাঁচাতে এক দৌড়ে বাংলাবাজারের বইপাড়ার বারান্দা। বইয়ের ঘ্রাণ ভাসে সেখানে, সরু সিঁড়ি, প্রায়ই আলোহীন করিডর, মাথায় বইয়ের স্তূপ নিয়ে শ্রমিকদের ঘর্মাক্ত শরীর, প্রকাশকদের অফিসে কবি-সাহিত্যিকদের চলাচল; সেই শহরের বইপাড়ার ভাঙা ভাঙা পুরনো ছবি মনের মধ্যে জট পাকিয়ে ডুব সাঁতারে ফিরে আসে আবার হারিয়ে যায়।
বাংলাবাজারের বইপাড়ার এই আবহের সঙ্গে আমার পরিচয়ের বয়স প্রায় তিরিশ বছর। মনে পড়ে, শিশুসাহিত্যিক আমীরুল ইসলামের সঙ্গে এক সকালে বাংলাবাজার। একটা ইংরেজি বই অনুবাদ করতে হবে। আমীরুল ভাই নিয়ে গিয়েছিলেন তখনকার শিখা প্রকাশনীর বাহার ভাইয়ের কাছে। এখন থেকে বছর তিরিশ আগে প্রকাশকদের ঘরে ঘুরে ঘুরে আড্ডা দিয়ে দিন কাটিয়ে দেওয়াটা দেখলাম ধীরে ধীরে আমার কাছে আকর্ষণের বিষয় হয়ে উঠল।
নিজের লেখা বই প্রকাশ প্রায় নিয়মিত হয়ে উঠলে প্রুফ দেখতে যেতে হতো বাংলাবাজারে। অনন্যার মনিরুল হক, সময় প্রকাশনের ফরিদ আহমেদ, অনুপম প্রকাশনীর মিলন নাথ; কত প্রকাশকদের সঙ্গে পরিচয় হচ্ছে তখন! কবি নির্মলেন্দু গুণকে দেখছি কোনো প্রকাশকের ঘরে বসে প্রুফ দেখছেন। ইমদাদুল হক মিলন ঢুকছেন কোনো কাজ নিয়ে। প্রয়াত কবি আবিদ আজাদ হাঁটছেন পথে প্রুফের কপি অথবা কোনো বই বগলদাবা করে। প্রয়াত কথাশিল্পী বুলবুল চৌধুরীকে পেয়ে যেতাম তার সিগারেট খাওয়ার নিমগ্ন ভঙ্গিসহ। পরিচিতদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে রাস্তায় দাঁড়িয়েই আড্ডা শুরু হয়ে যেত। কখনো কোনো প্রকাশকের অফিসে দীর্ঘ আড্ডার জালে আটকে পড়া সাহিত্যিকদের কথার খই ছড়িয়ে পড়ত সামনের বারান্দায়। সুন্দর ছিল সেই দিনগুলো। জ্যেষ্ঠ সাহিত্যিকদের সঙ্গে বইপাড়ায় দেখা হওয়া মানেই চা, সিঙাড়া খাওয়ার ধুম পড়ত। একটু হাঁটলেই বিউটি বোর্ডিং। অধিকারী তারকদার স্মিত হাসির আমন্ত্রণ খাবার ঘরে। কাছে দাঁড়িয়ে এমনভাবে খাওয়াতেন যেন কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা। তারকদাও পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। কত ভালোবাসার দৃশ্য ছবি হয়ে থাকল মনের মধ্যে!
বাংলাবাজারে সেই ঘোরাঘুরির সময়ে আমীরুল ইসলাম হঠাৎ একদিন বলেন, ‘তুমি একটা উপন্যাস লেখো।’
মনে মনে প্রমাদ গুনলাম। কবিতা লেখা আমার কাজ আর আমি লিখব উপন্যাস! কিন্তু আমীরুল ভাইয়ের তাগাদা বন্ধ হলো না। শেষে অনেক ভেবে উপন্যাসের একটা প্লট মাথার মধ্যে গুছিয়ে ফেললাম। লেখাও হয়ে গেল। আমীরুল ভাইকে জানাতেই তার স্বভাবসুলভ প্রশ্ন ছিল, ‘উপন্যাসের নাম কী দিছ মিয়া?’
বললাম, ‘বৃষ্টির পরে’।
মনে আছে, আমীরুল ভাই চোখ কুঁচকে বলেছিলেন, ‘নাম শুনে মনে হইতাছে একটা লোক বৃষ্টির দিনে বসিলার বিল থেইকা উল্টাইনা ছাতি নিয়া শহরে আসতেছে। নামটা বদলাও।’
পাল্টে গিয়ে উপন্যাসের নাম হলো, ‘এই সব অন্ধকার’। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে অনন্যা প্রকাশনী উপন্যাসটা প্রকাশ করেছিল। অবশ্য তার আগে আমার কবিতার প্রথম বই আলোর মুখ দেখে ফেলেছিল। বাংলাবাজারে গেলে মাঝে মাঝে সেই উপন্যাসটা লেখার সময়টা মনে পড়ে। আমীরুল ভাই চাপ প্রয়োগ না করলে হয়তো টানা গদ্য লেখার কাজটা আমার করা হতো না।
বাংলাবাজার থেকে বের হয়ে একটু হাঁটলেই বুড়িগঙ্গা নদী, সদরঘাট। মাঝে মাঝে বইপাড়া থেকে বের হয়ে চলে যেতাম নদী দেখতে। তখনো এত মানুষ আর যানবাহনের ভিড়, কোলাহল কলঙ্কিত করেনি এলাকাটাকে। শীতকালের দুপুরে কুয়াশামাখা নদী, টার্মিনাল, অলস নৌকা আমাকে টানত। বসে থাকতাম সেখানে গিয়ে।
সেখান থেকে কোনো দিন রিকশা নিয়ে সোজা চলে যেতাম পুরানাপল্টনে মানুদার গ্রাফিক প্রিন্টার্সের অফিসে। সেখানে বসে গভীর মনোযোগে বইয়ের প্রচ্ছদ করছে শিল্পী ধ্রুব এষ। নীরবতা ধ্রুবর এক জীবনের দোসর। তবুও পল্টনের বড় রাস্তার দিকে একটা নিরিবিলি চায়ের দোকানে আমরা চা খেতে যেতাম। কথা না বলেও বসে থাকতাম দোকানের বেঞ্চিতে। ধীরে নেমে আসা বিকেলবেলা আমাদের হয়তো আচ্ছন্ন করত। সেখানে কখনো পেতাম বুলবুল চৌধুরী অথবা শিল্পী মাসুক হেলালকে। উদাসীন ধ্রুব একসময় চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে রওনা হতো বাড়ির পথে।
এখন লেখকরা অন্তর্জালেই তাদের প্রকাশকদের কাছে লেখা পাঠান, প্রুফ সংশোধন করে দেন অনায়াসে। ঢাকার যানজট টপকে তাদের ছুটতে হয় না বাংলাবাজারে।
বহু বছর আগে ঢাকার নৈশ জীবন নিয়ে পত্রিকায় রিপোর্ট করার জন্য গোটা রাত ঘুরতে হয়েছিল। মনে আছে, নিশুতি রাতে বাংলাবাজারে গিয়ে দেখেছিলাম বন্ধ সারি সারি দোকান ঘর। প্রকাশকদের অফিস নিঝুম হয়ে আছে। সারা দিনের কোলাহলের কোনো দাগ লেগে নেই সরু পথে অথবা বন্ধ শাটারে। আমার মনে হয়েছিল, বইগুলো বন্ধ ঘরের ভেতর ভূত হয়ে জেগে উঠে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। হঠাৎ ভয় পেয়েছিলাম!
আমি আজও বাংলাবাজারে যাই। বইমেলা শুরু হওয়ার আগে প্রকাশকদের ঘরে যাই। চা, সিঙাড়া খাই। বই প্রকাশ নিয়ে কথা বলি। খুঁজি চেনা মানুষ, সাহিত্যিকদের। বের হয়ে খামোখাই এ গলি-সে গলি ঘুরে বেড়াই একা একা। পাল্টে গেছে বাংলাবাজারও। চারপাশের ঘরবাড়ির শরীরে দেখি পরিবর্তনের চিহ্ন। ফেলে আসা দিনের ছবিগুলো আমার সঙ্গে সঙ্গে পথ হাঁটে। ফিরে দেখি হারানো সময়।
বর্ষাকালে নৌযান চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ বঙ্গোপসাগরের ভাসানচর এলাকা। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ‘পানগাঁও এক্সপ্রেস’ ছাড়াও আরও তিনটি জাহাজ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। এ ছাড়া গত পাঁচ বছরে ১৩টি লাইটার জাহাজ (ছোট জাহাজ) দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল এই এলাকায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত জোয়ার ও বাতাসে গতি কমে আসায় ভাসানচর এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হয় ছোট জাহাজ।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছরের ১৮ মে ১৬০০ টন গম নিয়ে ‘এমভি তামিম’ নামের একটি লাইটার জাহাজ ডুবে যায় এই এলাকায়। এ ছাড়া একই বছরের ১৬ এপ্রিল কয়লাবাহী লাইটার জাহাজ ‘তন্ময়-২’ ডুবে যায়। ডুবে থাকা অন্য জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ২০২১ সালের ১৩ জুলাই ডুবে যায় ‘এমভি হ্যাং গ্যাং’ নামের একটি লাইটার জাহাজ। একই পয়েন্টে ২০২১ সালের প্রথম সপ্তাহে ডুবে যায় ‘ফুলতলা-১’ নামের আরও একটি জাহাজ। ২০২০ সালের ১৫ আগস্ট সাগরের অতিরিক্ত ঢেউয়ে হ্যাজে পানি প্রবেশ করে সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন ‘এমভি সিটি-১৪’ নামের একটি চিনি বোঝাই জাহাজ ডুবে যায়।
এই এলাকার নৌ চলাচল রুটের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ। দুর্ঘটনার বিষয়ে কথা হয় সংস্থাটির যুগ্ম পরিচালক (নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন) সবুর খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শুধু গত সাত মাসে ভাসানচর ও হাতিয়া এলাকায় ছয়টি জাহাজডুবির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে তিনটি উত্তোলন করা হলেও এখনো বাকিগুলো ডুবন্ত অবস্থায় রয়েছে। আর গতকাল পানগাঁও এক্সপ্রেস ছাড়াও আরও তিনটি জাহাজ জোয়ারের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে কোনোক্রমে উপকূলে গিয়ে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে।’
কেন এত দুর্ঘটনা ঘটে : দুর্ঘটনার কারণ জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার) কমোডর এম ফজলার রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই পয়েন্টে জোয়ারের সময় ঢেউ ও স্রোত খুব বেশি থাকে। তখন জাহাজের গতিবেগ প্রায় শূন্যে নেমে আসে। আর তখনই দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়। গতকাল পানগাঁও এক্সপ্রেসের ক্ষেত্রেও এমনটি হয়েছে। আরও তিনটি জাহাজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’ চট্টগ্রাম থেকে পানগাঁওয়ের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ‘পানগাঁও এক্সপ্রেস’ জাহাজটিতে ৯৬টি একক কনটেইনার পণ্য ছিল। সব কনটেইনার নিয়ে জাহাজটি সাগরে ডুবে যায়।
এই ঢেউ কোন সময়ে বেশি থাকে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাধারণত সাগরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখানো হলেই এই অংশে ঢেউয়ের সঙ্গে বাতাসের গতিবেগ বেশি দেখা যায়। কিন্তু তারপরও যেহেতু পণ্য পরিবহন সচল রাখতে হয় তারা সিগন্যালের সময় জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন। তবে বৃহস্পতিবার জাহাজটি চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসার সময় সিগন্যাল ছিল না, মাঝপথে এসে সিগন্যাল পায় এবং দুর্ঘটনায় পড়ে।
গত কয়েক বছরের দুর্ঘটনার সময়গুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটেছে এপ্রিল থেকে জুলাই মাসের মধ্যে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের যুগ্ম পরিচালক (নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন) সবুর খান বলেন, ‘এপ্রিল থেকে জুলাই মাসে সাগর উত্তাল থাকে বলে এখানে জোয়ার ও ঢেউ বেশি থাকে। এ ছাড়া শীতকালে এই এলাকায় কুয়াশা বেশি থাকে। তখন এক জাহাজের সঙ্গে আরেক জাহাজের ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম থেকে পানগাঁও এবং খুলনা বা মোংলায় পণ্য স্থানান্তরে জাহাজগুলো ভাসানচরের কাছ দিয়ে অতিক্রম করে থাকে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন বন্দরের উপকূলীয় বাণিজ্য প্রকল্পের আওতায়ও কিছু জাহাজ উপকূল দিয়ে ভারতে গিয়ে থাকে। তখনো কিছু জাহাজ দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়ে থাকে।
একটি এতিমখানা স্থাপনের জন্য ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হয়েছে। একজন শিক্ষকের নামে আসা এই টাকা পেতে বিমানবন্দরে পরিশোধ করতে হবে ৬৫ হাজার টাকা। এ টাকা দেওয়ার পর কয়েক দফায় চাওয়া হয় আরও টাকা। বিদেশি এসব মুদ্রা নিতে টাকা না দিলে অর্থ পাচার আইনে মামলা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ওই শিক্ষককে এমন হুমকিও দেওয়া হয়। এতে ঘাবড়ে গিয়ে টাকা দিয়ে দেন।
একটি সংঘবদ্ধ সাইবার প্রতারক চক্রের কবলে পড়ে এভাবেই এক শিক্ষক হারিয়েছেন ৪ লাখ টাকা। পরিচয় প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষক দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, ২০২১ সালে এ ঘটনার পর রাজধানীর রামপুরা থানায় একটি মামলা করেন। এরপর মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
জানতে চাইলে পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু ইউসুফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, চক্রটি একজন শিক্ষককে ফাঁদে ফেলে ৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গত বছর নভেম্বরে মামলাটির তদন্ত শেষে চারজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তারা হলো মো. ইউসুফ সরকার (৩২), মো. সাইফুর রহমান মিঠু (৫৮), মো. আলাল হোসেন (২৭) ও এমদাদুল্লাহ (৩৫)।
পিবিআই ও ভুক্তভোগী ওই শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিনথিয়া ফিলিপস নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে বন্ধুত্বের আমন্ত্রণ জানালে তা গ্রহণ করেন শিক্ষক। এরপর আফগানিস্তানের কাবুলে কর্মরত মার্কিন সেনাবাহিনীর সদস্য পরিচয়ে শিক্ষকের সঙ্গে নানা আলাপ চালিয়ে আসছিল কথিত সেই সিনথিয়া। পরে তার মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি এতিমখানা স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানায় এবং নিজেই সেখানে দান করবে বলে প্রস্তাব দেয়। ওই শিক্ষক সরল বিশ্বাসে রাজি হয়ে যান। তবে তাকে বিষয়টি গোপন রাখার শর্ত জানিয়ে দেওয়া হয়।
কিছুদিন পর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ‘এআরও’ এম কে আজাদ পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি ওই শিক্ষককে ফোন করে জানায়, তার নামে একটি পার্সেল আছে। এ পার্সেল নিতে হলে তাকে এয়ারপোর্ট ক্লিয়ারেন্স ফি বাবদ ৬৫ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। তার কথামতো একটি বেসরকারি ব্যাংকের হিসাব নম্বরে ৬৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। কিন্তু ওই পার্সেল তার কাছে আসেনি।
এরপর শিক্ষককে আবারও ফোন করে ৫০ হাজার টাকা পাঠাতে বলা হয়। এভাবে কয়েকবার টাকা চাওয়ায় তিনি দিতে না চাইলে চক্রটি তাকে ভয় দেখায়। চক্রের সদস্যরা বলতে থাকেন, তাদের দাবি করা টাকা পরিশোধ করে এ পার্সেল না নিয়ে গেলে শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার আইনে মামলা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপর তিনি কয়েক দফায় ৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা দেন।
চক্রটি পার্সেল ডেলিভারির কপি পাঠায়, কিন্তু তার ঠিকানায় পার্সেল না আসায় আবার যোগাযোগ করেন। এরপর রামপুরার একটি ঠিকানা পাঠিয়ে সেখানে গিয়ে পার্সেলটি নিতে বলা হয়। তাদের কথামতো শিক্ষক ওই এলাকায় গিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে বুঝতে পারেন এটি ছিল প্রতারণা।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ওই শিক্ষক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চক্রটি অত্যন্ত কৌশলী। তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় বোঝার সুযোগ ছিল না এটি প্রতারণা। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, এজন্য তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সাইফুর রহমান মিঠু ও তার দুই সহযোগী আলাল হোসেন ও ইউসুফ সরকারকে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা অপরাধের বিষয় স্বীকার করে। তবে চক্রে জড়িত অন্য সদস্যদের পরিচয় প্রকাশ করেনি।
এ ছাড়া পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে চক্রটির প্রধান মিঠু জানায়, গ্রেপ্তার এড়াতে তারা নানা অপকৌশল করে। তারা গরিব লোকজনকে টাকার লোভ দেখিয়ে তাদের দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে হিসাব খোলায়। এরপর তাদের নামে করা এসব ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া টাকা তুলে নেয়।
এ ছাড়া এ ঘটনায় তদন্তে এমদাদুল্লাহ নামে একজনের জড়িত থাকার কথা জানা গেলেও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ প্রতারণার ঘটনায় ব্যবহার করা ব্যাংক হিসাবটি গোলাম কিবরিয়া নামে এক ব্যক্তির। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করলেও তার অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি বলে জানিয়েছে পিবিআই।
বরিশাল বিভাগের অভ্যন্তরীণ নদী এবং সমুদ্র মিলিয়ে গত এক যুগে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। জাটকা নিধন বন্ধ ও ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফলভাবে হওয়ায় নদীতে ইলিশের ঝাঁক বাধাহীনভাবে চলাফেরা করতে পেরেছে। তাই ইলিশের বেড়ে ওঠার পাশাপাশি বংশবিস্তার হয়েছে নির্বিঘেœ। এমন পরিস্থিতিতে চলতি মৌসুমে ইলিশ উৎপাদনে বিগত দিনের রেকর্ড ভাঙার প্রত্যাশা করছে বরিশাল মৎস্য বিভাগ। সব মিলিয়ে জেলেরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিও চাঙা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, বরিশাল বিভাগে জাটকা নিধন বন্ধে ২০০৪ সালে এবং ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান শুরু হয় ২০০৯ সালে। এরপর থেকেই আশানুরূপভাবে ইলিশের উৎপাদন বাড়তে শুরু করে। ২০১০ থেকে ২০২২ সালের মৎস্য উৎপাদনের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। এতে দেখা যায়, গত ১২ বছরের ব্যবধানে এই বিভাগে ৪৬ শতাংশ ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে। আর চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ইলিশ উৎপাদনের জন্য উপযোগী। তাই বিগত দিনের চেয়ে এই মৌসুমে বেশি ইলিশ পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন মৎস্য কর্মকর্তারা।
বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল বিভাগে ২০১০-১১ অর্থবছরে মোট ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৬২ মেট্রিক টন, ২০১১-১২ অর্থবছরে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৯৭৭ মেট্রিক টন, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৭৬ মেট্রিক টন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২ লাখ ২১ হাজার ৫৯৮ মেট্রিক টন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২ লাখ ৫৩ হাজার ১৮১ মেট্রিক টন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২ লাখ ৫৮ হাজার ২২৫ মেট্রিক টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ লাখ ২৪ হাজার ২৯৭ মেট্রিক টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩ লাখ ২৯ হাজার ২৫ মেট্রিক টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ লাখ ৪১ হাজার ১১৯ মেট্রিক টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৯২৭ মেট্রিক টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৩০১ মেট্রিক টন এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট উৎপাদিত ইলিশের পরিমাণ ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৮৫১ মেট্রিক টন।
বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকতা মো. আসাদুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উজানের স্রোত বাড়লেই আর পানির তাপমাত্রা কমে এলে ইলিশ সমুদ্র থেকে ওপরের দিকে উঠে আসবে। তখন জেলেদের জালে আশানুরূপ ইলিশ ধরা পড়বে।’
জুন-জুলাইয়ে নদীতে ইলিশ কম পাওয়া স্বাভাবিক জানিয়ে বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক আনিছুর রহমান তালুকদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিগত দিনের তুলনায় বর্তমানে ইলিশের পরিমাণ ও আকারে অনেক বড়। আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে পর্যাপ্ত ইলিশ পাওয়া যাবে।’
এদিকে সাগরে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা ২০ জুলাই শেষ হবে। তাই জেলেরাও নিচ্ছেন সাগরে নামার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। তবে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে দেওয়া সরকারি সহায়তা প্রকৃত জেলেদের হাতে পৌঁছাতে টাস্কফোর্স গঠনের দাবি জানিয়েছেন জেলেরা। এ ছাড়া ইলিশ শিকারে তাদের বিভিন্ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ প্রান্তিক পর্যায়ের জেলেদের।
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সন্ধ্যা নদী তীরের মিরেরহাট এলাকার বাসিন্দা ইউসুফ হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, ‘ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞাকালে আমরা জেলেরা নদীতে নামতে পারি না। কিন্তু এলাকার নেতারা মৎস্য অফিসার ম্যানেজ করে লোক দিয়ে মাছ ধরায়। এ নিয়ে কথা বলতে গেলে এলাকায়ই থাকতে পারব না।’
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার আন্ধারমানিক এলাকার বাসিন্দা মো. ছগির তালুকদার বলেন, ‘বর্তমানে নদী আর সাগরে দুই স্থানেই ইলিশ বেড়েছে। কিন্তু সারা বছর নিষেধাজ্ঞা লেগেই থাকে। ঠিকমতো মাছ ধরতেও পারি না। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞাকালে বরাদ্দের চালও ঠিকমতো পাই না। একটি গ্রুপ যাদের নামে সুপারিশ করে তারাই চাল পায়।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক-সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি এখনো নিশ্চিত হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাজেটস্বল্পতার যুক্তিতে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষকদল পাঠাতে পারবে না বলেছে। এখন পর্যন্ত আবেদনকারী ২১০টি দেশি সংস্থা বা সংগঠনের মধ্যে ৬৬টিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে।
নির্বাচনের তিন মাসেরও কম সময় বাকি। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের কাছ থেকে কাক্সিক্ষত সাড়া না পেয়ে তাদের চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানানোর কথা ভাবছে ইসি। তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচন নিয়ে বড় কোনো প্রশ্ন যাতে না ওঠে, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা যেন বাধাগ্রস্ত না হয়। এ লক্ষ্যে সব চেষ্টাই নির্বাচন কমিশন করবে। ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে।
অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়েছে, সেটি বোঝাতে হলে আন্তর্জাতিক মহলে বার্তা পৌঁছাতে হবে। আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে এ বার্তা পৌঁছানোর কাজটি করেন বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। ইইউ বলে দিয়েছে, তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। যুক্তরাষ্ট্র সরকার নির্বাচন-পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না, তার জন্য ক্ষেত্রসমীক্ষণে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) যৌথ প্রতিনিধিদল আসবে। ৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল ও তাদের সহায়তাকারীরা ৭ থেকে ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি এবং দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করা নিয়ে টুইটবার্তা এবং বিভিন্ন বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের ধারণা, তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত এ বার্তাই দিচ্ছে যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু না-ও হতে পারে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার কাছে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত না হলে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) পর্যবেক্ষক না পাঠালেও আরও অনেক দেশ আছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোকে (আফগানিস্তান, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা) আমন্ত্রণ জানিয়ে অক্টোবরে চিঠি দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষকদের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে ভালো হয়। আমরা চাই দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা বেশি সংখ্যায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করুক। আমরা আশা করি বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি সংস্থা।
পৃথিবীতে আরও অনেক দেশ আছে।’
আপনারা তো ভোটের জন্য শতভাগ প্রস্তুত কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতি নির্বাচনমুখী কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেভাবেই হোক সংবিধান অনুযায়ী জানুয়ারির ২৯ তারিখের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। না হলে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে। এতে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। নির্বাচন কমিশন সেটা হতে দিতে পারে না।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমেরিকা আসবে না বলেনি। আসলে আমরা খুশি হব। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য যেসব যোগ্যতার প্রয়োজন, সেসব থাকলে যে কেউ আসতে পারে।’
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষক দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। আশা করি নির্ধারিত সময়ের আগেই তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসবে।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বদিউল আলম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে, নির্বাচনসংক্রান্ত বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামো, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে যে দলীয়করণ হয়েছে, তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অতীতেও তা হয়নি। আগামীতে হবে বিশ্বাস করা কঠিন। যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, তথ্য-উপাত্ত নিয়েই তা করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও বলেছে, তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। নেতিবাচক মনোভাবই তাদের সিদ্ধান্তে প্রকাশ পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা আসেনি। ফলে সেটি আন্তর্জাতিক মানদ-ে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। ওই দুটি নির্বাচন সব মহলেই প্রশ্নবিদ্ধ। এখন সরকার বা ইসি যে কথা বলছে, তাতে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নীতির বদল হবে বলে মনে হয় না। আস্থা তৈরি করতে হলে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সূত্রগুলো বলছে, তারা নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে কাজ করছে। ইতিমধ্যে ইইউকে ছোট পরিসরে হলেও পর্যবেক্ষক পাঠাতে ২৪ সেপ্টেম্বর চিঠি দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে কমিশন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে এমন প্রতিশ্রুতি সিইসি দিচ্ছেন। সরকারও একই কথা বলছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার ও নির্বাচন কমিশন। যদিও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ফলে আস্থার একটা সংকট তৈরি হয়েছে। তা কাটানোর জন্যই ইসি নানা পরিসরে কাজ করছে।
সূত্রমতে, ইইউর নেতিবাচক মনোভাবের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষকদের সন্তেুাষজনক তথ্য তৈরির কাজ করছে ইসি সচিবালয়। মার্কিন দলের মনোতুষ্টির বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে কমিশনের। নির্বাচনী তফসিল থেকে নির্বাচনী ফল ঘোষণা পর্যন্ত সব কর্মকা-, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়গুলো তাদের কাছে তুলে ধরা হবে।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতির সুবিধা হলো তারা নির্বাচনী কাজে জড়িতদের জবাবদিহির মুখোমুখি করে। পর্যবেক্ষকদের কোনো আইনি শক্তি নেই। তবে তারা নৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এতে প্রার্থীদের সমর্থকদের আচরণও প্রভাবিত হয়। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে ভোটারদের ওপর, তারা আস্থা পান।’
তিনি বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে তাতে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা অংশ নেয় না। আগামী নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এখন পর্যন্ত সব দলের অংশ নেওয়ার বার্তা নেই। সব দলই নিজ অবস্থানে অনড়। এ কারণেই বিদেশিরা আগ্রহ প্রকাশ করছে না।’
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশে সাধারণত ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, সার্কভুক্ত দেশ, কমনওয়েলথ, ওআইসি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে এমন সংস্থা, মানবাধিকার গোষ্ঠী, ঢাকায় বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। ২০১৮ সালে দেশি ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন এবং ওআইসি ও কমনওয়েলথ থেকে আমন্ত্রিত ও অন্যান্য বিদেশি পর্যবেক্ষক ছিলেন ৩৮ জন, কূটনৈতিক বা বিদেশি মিশনের কর্মকর্তা ৬৪ জন এবং বাংলাদেশে দূতাবাস বা হাইকমিশন বা বিদেশি সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশি ৬১ জন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের সুযোগ দিতে এবার দ্বিতীয়বারের মতো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। দেড় শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে। প্রথমবার দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বাদপড়াদের মধ্য থেকেই বেশি আবেদন এসেছে বলে জানা গেছে।
গত ১৮ জানুয়ারি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের জন্য প্রথমবারের মতো আবেদন আহ্বান করেছিল নির্বাচন কমিশন। ২১১টি সংস্থা আবেদন করেছিল। গত ৮ আগস্ট প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ ৬৮টি সংস্থার তালিকা প্রকাশ করে সংস্থাটি। আপত্তি ওঠায় দুটি সংস্থাকে বাদ দিয়ে শেষপর্যন্ত ৬৬টি সংস্থাকে নিবন্ধন দেয় কমিশন। এসব সংস্থার ৪২টিই ছিল নতুন। এর আগে তারা কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজ করেনি; সংস্থাগুলোর সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে পর্যবেক্ষক সংস্থার সংখ্যা অর্ধেকের মতো কমে যাওয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো ১৫ সেপ্টেম্বর ১০ দিনের জন্য ফের আবেদন আহ্বান করে ইসি। এর সময় শেষ হয়েছে ২৪ সেপ্টেম্বর।
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগের মতোই বাছাই শেষে দাবি-আপত্তি আহ্বান করা হবে। তারপর চূড়ান্ত হবে কোন কোন সংস্থা নিবন্ধন পাচ্ছে।
ইসির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দেড় শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে।’
২০০৮ সাল থেকে ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষক নিবন্ধন দিচ্ছে ইসি। সে সময় ১৩৮টি সংস্থা নিবন্ধন পেয়েছিল। ২০১৮ সালে ১১৮টি সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল ইসি। পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের পাঁচ বছরের মেয়াদ গত ১১ জুলাই শেষ হয়েছে।
আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য সংশোধিত নীতিমালা : আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য নীতিমালা সংশোধন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ২৬ সেপ্টেম্বর ইসি এই নীতিমালা জারি করেছে। সংশোধিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো বিদেশি নাগরিক বা সংস্থা বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে চাইলে তাদের সুশাসন, নির্বাচন, গণতন্ত্র, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সংস্থাগুলোকে সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধিত হতে হবে।
শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করা হচ্ছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, ‘ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হবে।’
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি জামায়াতে ইসলামকে ইসলামের দুশমন মন্তব্য করে বলেন, ‘যারা একাত্তরে মানুষ হত্যা করেছে, তারা মুসলমান হতে পারে না। তাদের জামাকাপড়ে মুসলমান ভাব থাকলেও অন্তরে নেই। খুনিরা মুসলমান হতে পারে না- কারণ ইসলাম শান্তির ধর্ম- যা মানবতার কথা বলে।’
এ সময় সারা দেশে মডেল মসজিদ নির্মাণসহ ইসলেমের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরেন শাজাহান খান।
অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘আশেকানে গাউছিয়া রহমানিয়া মইনীয়া সহিদীয়া মাইজভাণ্ডারীয়া’।
সংগঠনের প্রধান পৃষ্টপোষক শাহসূফি মাওলানা শাহজাদা সৈয়দ সহিদউদ্দিন আহমেদ আল-হাসানী ওয়াল-হোসাইনি মাইজভাণ্ডারী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ সা. সৃষ্টি না হলে পৃথিবী সৃষ্টি হতো না। সেই দয়াল নবীর মত ও পথকে অনুসরন করতে হবে। সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে, জীবন চালাতে হবে। এ ছাড়া আল্লাহর নৈকট্য লাভের ভিন্ন কোনো সুযোগ নেই।
আলোচনা সভা সেমিনারের পর দুপুর সোয়া ১২টায় ঈদে মিলাদুন্নবীর জশনে জুলুশ (র্যালি) বের হয়। গুলিস্তান জিরোপয়েন্ট থেকে পল্টন মোড় হয়ে র্যালিটি আবার জিরো পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়।
পরে আখেরি মোনাজাতে দেশ ও জাতির শান্তি-সমৃদ্ধি কামনা করেন সৈয়দ সহিদউদ্দিন আহমেদ মাইজভাণ্ডারী।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ইলেকশন মনিটরিং কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবেদ আলীসহ হাক্ক্বানি ওলামায়ে ক্বেরামগণ। এ সময় ভক্ত ও আশেকানবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সাত বছর পর ভারতের মাটিতে অবতরণ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে তারা গিয়েছিল সেখানে। তারপর এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে। টুর্নামেন্ট শুরুর এক সপ্তাহ আগে তারা পৌঁছালেন দেশটিতে। সেখানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হোটেলে।
বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বাবর আজমরা সেখানে পৌঁছানো মাত্রই উচ্ছ্বসিত জনতা ভিড় করেন। হায়দ্রবাদের বিমানবন্দরের বাইরে তাদের দেখে অনেকেই চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। বাবরের নাম উচ্চারণ করতও শোনা গেছে এসময়। পুলিশ উৎসুক জনতাকে আটকে রেখেছিল।
রাজনৈতিক বৈরি সম্পর্কের কারণে দুই দলের দেখা হয় না দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজে। বিশ্ব মাতানো ক্রিকেটার থাকলেও পাকিস্তানিরা খেলতে পারে না আইপিএলে। কারণ ঐ একটাই। তবে বৈশ্বিক বা মহাদেশীয় ইভেন্টে তাদের ঘিরে আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। সেটা দেখা গেছে এশিয়া কাপেও।
বিশ্বকাপ খেলতে আজ বাংলাদেশ উড়াল দিয়েছে ভারতে। সেই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখে টাইগাররা। তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছাড়ার পর সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের ভার। আর আজই জানা গেল, বিশ্বকাপের পর একদিনও তিনি অধিনায়কত্ব করবেন না।
গত ১১ আগস্ট তৃতীয় দফায় ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান। তখনই বলা হয়েছিল, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ ও ভারত বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
দেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এই বিশ্বকাপই শেষ। এরপর একদিনও (অধিনায়কত্ব) করবো না। যে কারণে আমি এশিয়া কাপের আগে নিতে চাইনি। এরপরও এটা না। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি হাসতে চাই, খেলতে চাই, পারফর্ম করতে চাই। এই একটা কারণে আমি করতে চাইনি।’
সাকিব যোগ করেন, ‘আর কোনে কারণ নেই। বেস্ট হয় যদি অধিনায়ক না থাকি। অধিনায়কত্ব কি আমার কোনো ভেল্যু এড করতেছে ক্যারিয়ারে এই স্টেজে এসে? আমি তো মনে করি না।’
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।