
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারা (সরকার) চেষ্টা করছে আবারও প্রোভোক (উত্তেজিত) করতে। ইচ্ছা করেই সংঘাতের দিকে গোটা দেশকে, জাতিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। লক্ষ্য করেছেন, দু-একটা চ্যানেলে খবর এসেছে গত রাতে, মগবাজারে নাকি একটা ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে। এটা অত্যন্ত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ষড়যন্ত্রমূলক চক্রান্ত। এটা করা হচ্ছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে। বিরোধী দলকে যারা সব সময় দোষারোপ করতে চায় তারাই এটা করছে। মূলত সরকার তাদের বিভিন্ন সংস্থা দিয়ে এগুলো করাচ্ছে।
গত সোমবার রাতে মগবাজারে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে গতকাল মঙ্গলবার সকালে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। বিএনপির ‘প্রশিক্ষণ সেল’-এর উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের (ডিআই)’ সহযোগিতায় নারী প্রতিনিধিদের দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের এই কর্মশালার উদ্বোধন করেন মির্জা ফখরুল। বিকেলে সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। এই কর্মশালায় ২৫ জন নারী নেত্রী অংশ নেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ডেনা এল ওলস, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহসম্পাদক রাশেদা বেগম হীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে শিক্ষক মাজহারুল হক, প্রশিক্ষণ সেলের সদস্য রেহানা আক্তার রানু, নেওয়াজ হালিমা আরলি প্রমুখ অংশ নেন।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ প্রোগ্রাম চলছে। তার সঙ্গেই তাদের (সরকার) তথাকথিত ‘শান্তি সমাবেশ’ ‘শান্তি মিছিল’ নামে কাউন্টার প্রোগ্রাম দিচ্ছে। এটি সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়। এভাবে যদি প্রভোগেশন করে, যদি সংঘাতের দিকে ঠেলে দিয়ে দেশকে অন্যদিকে নিয়ে যাওয়া হয় তা কখনই জনগণ মেনে নেবে না। এর সব দায়দায়িত্ব সরকারকে বহন করতে হবে। অবৈধ সরকারকে এখনো বলি, এই প্রচেষ্টা থেকে সরে আসুন। নির্দলীয় সরকারের ব্যাপারে সহায়তা করুন, নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে সমস্যার সমাধান করুন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমেরিকা থেকে একটা টিম আসবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে টিম এসেছে। কেন এসেছে? এতে বোঝা গেল বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। তারা (বিদেশিরা) এখানে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও নির্বাচন সম্পর্কে জানতে এসেছে। তারা বুঝতে চায়। এখানে নির্বাচন হয়নি, এখানে নির্বাচন হয় না। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে গণমাধ্যম ও ভিন্নমতকে দাবিয়ে রাখা এবং বিচার বিভাগের দলীয়করণের বিষয়টি তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
এদিকে বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনের ভাসানী মিলনায়তনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সুস্থতা কামনায় আয়োজিত দোয়া মাহফিলে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, কেউ যদি মনে করে এ দেশকে আজীবন পরাধীন করে রাখবে তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ইউনুস মৃধা, মোশাররফ হোসেন খোকন, ওলামা দলের মাওলানা নেছারুল হক প্রমুখ অংশ নেন।
জাতীয়করণকৃত কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি সরকারীকরণের জটিলতার নিরসন হচ্ছে না। বছর-ছয়েক আগে প্রধানমন্ত্রী জাতীয়করণে সম্মতি দেওয়া শুরু করলেও এখনো অর্ধেকের চাকরি সরকারি হয়নি। উপরন্তু শিক্ষকদের চাকরি সরকারীকরণে ভিন্ন নিয়ম চালু হয়েছে।
শিক্ষা, জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয় পার হয়েও প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে গিয়ে অধিকতর যাচাইয়ের ফাঁদে আটকা পড়েছেন নন-এমপিও শিক্ষকরা। সরকারের মেয়াদ শেষের পথে থাকায় প্রায় ২০০ কলেজের নন-এমপিও শিক্ষকরা চাকরি সরকারি হওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন।
প্রত্যেক উপজেলায় অন্তত একটি কলেজকে সরকারি করার লক্ষ্যে ২০১৬ সালে জাতীয়করণে সম্মতি দিতে শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন পর্যন্ত ৩২৪টি কলেজকে সরকারি করার (জাতীয়করণ) গেজেট জারি হয়েছে। তবে নানা প্রতিকূলতা পার করে শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগ সম্পন্ন হওয়া কলেজের সংখ্যা ১৩৩। বেতন উত্তোলনকারী কলেজের সংখ্যা ৬৩। প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে অনুমোদিত কলেজের সংখ্যা ১৬৪। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নামের ২৯টি প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষক-কর্মচারীর পদ অনুমোদিত হয়েছে আর অন্য কলেজগুলোর আংশিক পদ অনুমোদিত হয়েছে।
আগে সচিব কমিটি শিক্ষা, জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয় পার হয়ে আসা কলেজগুলোতে বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষকদের চাকরিও সরকারীকরণে সম্মতি দিয়েছে। ১২১টি কলেজ এভাবে পার হয়ে যাওয়ার পর কমিটির মনে হয়েছে, নন-এমপিও শিক্ষকদের আরও যাচাই প্রয়োজন। ফলে অর্ধশতাধিক কলেজের নন-এমপিও শিক্ষকরা আটকে রয়েছেন। বিশেষ করে যেসব কলেজে অনার্স-মাস্টার্স রয়েছে, সেখানে শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও হওয়ার সুযোগ নেই। অথচ তাদের নিয়োগ বৈধ। তারাই এখন মহাবিপদে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) আবদুন নুর মুহম্মদ আল ফিরোজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে জাতীয়করণকৃত কলেজে চাকরি আত্মীকরণের কাজ করছি। সচিব কমিটি থেকে কোনো জিজ্ঞাসা বা যাচাইয়ের প্রয়োজন থাকলে সেটাও দ্রুততার সঙ্গে করার চেষ্টা করছি। কাজ শেষ হতে খুব বেশি সময় লাগবে না।’
মৌলভীবাজার জেলার একটি জাতীয়করণকৃত কলেজের অনার্সের শিক্ষক নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আমাদের জেলায় পাঁচটি কলেজকে জাতীয়করণ করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্মীকরণের বিষয়টি সচিব কমিটিতে গেলে নন-এমপিও শিক্ষকদের অধিকতর যাচাইয়ের জন্য ফাইল আবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। শুধু আমাদের জেলাই নয়, সচিব কমিটিতে যাওয়া আরও অনেক কলেজের ফাইল আটকে আছে। অথচ কয়েক মাস আগে যেসব কলেজের ফাইল সচিব কমিটিতে গেছে, সেসব কলেজের নন-এমপিও শিক্ষকদের চাকরি সরকারি হয়েছে। তারা এখন সরকারি বেতন পাচ্ছেন। আমার প্রশ্ন, একই দেশে একই শিক্ষকদের চাকরি সরকারীকরণে দুই নিয়ম কেন? আমরা আতঙ্কে দিন পার করছি যাচাই শেষে আমাদের আবার বাদ দেওয়া না হয়।’
জাতীয়করণের গেজেট জারির পর শিক্ষক-কর্মচারীদের তথ্য যাচাইয়ের কাজ শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর। তারা এ কাজে তিন বছর সময় নেয়। এরপর যাচাই করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই কাজ দুই দপ্তর থেকে দুবার করায় অনেক সময় লেগে যায়। এরপর ফাইল যায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। পরে যায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে। সবশেষে ফাইল যায় সচিব কমিটিতে। এরপর ফাইল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফেরত এলে শিক্ষক-কর্মচারীদের অ্যাডহক নিয়োগ দিয়ে চাকরি সরকারীকরণের আদেশ জারি হয়।
সূত্র জানায়, ১২১টি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের পদ অনুমোদনের পরই দেখা দেয় নতুন জটিলতা। বর্তমান সচিব কমিটি প্রতিষ্ঠানভিত্তিক পদসংখ্যা ৪০-এর বেশি হলেই ‘অধিকতর যাচাই’ শব্দ সংযোজন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফাইল ফেরত পাঠিয়েছে। তারাই আবার কিছু প্রতিষ্ঠানের দ্বিগুণ জনবল অনুমোদন করেছে। এই বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শিক্ষকরা মাঠে নামলে একটি কলেজে এমপিও এবং নন-এমপিও শিক্ষকদের আলাদা করা হয়েছে। এতে আটকা পড়ছেন নন-এমপিও শিক্ষকরা।
জানা যায়, জাতীয়করণকৃত কলেজে দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ-নিষেধাজ্ঞা থাকায় প্রায় ২১২টির অধ্যক্ষ ও ১৯৩টির উপাধ্যক্ষ এবং অনেক বিষয়ের শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। অনেক কলেজে করণিক এমনকি অফিস-সহায়কের পদও শূন্য হয়ে যাচ্ছে। এত প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। কিছু কলেজে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদে শিক্ষা ক্যাডারের লোক পাঠানো হলেও বেশির ভাগ কলেজে পদ শূন্য রয়েছে।
সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির (সকশিস) সভাপতি জহুরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জাতীয়করণকৃত কলেজে সপ্তম গ্রেডে কর্মরত প্রভাষক, নবম গ্রেডে কর্মরত প্রদর্শক ও শরীরচর্চা শিক্ষক, সপ্তম গ্রেডে কর্মরত লাইব্রেরিয়ান, দশম গ্রেডে কর্মরত সহকারী লাইব্রেরিয়ানদের বেতন পদের প্রারম্ভিক ধাপে নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সবার বেতন আগের চেয়ে কমে গেছে, যা দিয়ে বর্তমান বাজারে জীবনযাপন কষ্টকর। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে আগের গ্রেড নির্ধারণের দাবি জানিয়েছি। এর পক্ষে অভিমত এলেও তা ফাইলবন্দি।’
সকশিসের তথ্যানুযায়ী, জাতীয়করণকৃত ৩২৪ কলেজের এমপিও ও নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ১৯ হাজার ২০৬। শিক্ষকের সংখ্যা ১৩ হাজার ২১৭ ও কর্মচারীর সংখ্যা ৫ হাজার ৯৮৯। ছয় বছরে চার হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী অবসরে গেছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, শিক্ষক-কর্মচারীরা অবসরে গেলেও যেদিন জাতীয়করণের গেজেট জারি হয়েছে, সেদিন থেকে বৈধ নিয়োগপ্রাপ্তরা সরকারীকরণের সুবিধা পাবেন, যদি সেদিন তাদের বয়স ৫৯ বছরের মধ্যে হয়ে থাকে।
দেশের বট, পাকুর, নিশিন্দা, সুন্দরীর সঙ্গে স্টলে স্টলে শোভা পাচ্ছে চীনাবট, ফাইকাস, জুনিপার, ঝুমুরা। বৃক্ষ ‘সমাজে’ সমীহ করা দেশের এসব গাছের বয়সও কম নয়। আকৃতিতে প্রজাতির ভাবটা রক্ষা করতে পারলেও আকারে একেবারেই ছোট। স্বাভাবিক অবস্থায় মাটিতে দাঁড়িয়ে কোনো গাছের মগডাল ছোঁয়া সম্ভব নয়। অথচ টবে বসানো আস্ত গাছটি ঘরে নিয়ে দিব্যি রেখে দিতে পারেন ড্রয়িংরুমে। যে কারণে ঘরের শোভা বাড়াতেই তাদের কদর বেশি। বলা হচ্ছে, বনসাইয়ের কথা।
জাতীয় বৃক্ষমেলা ঘুরে দেখা গেল, স্টলে স্টলে বনসাইয়ের বাহার। আকারে ছোট হলেও দামে কিন্তু কম নয়। চীনাবটের বনসাই বিক্রি হয়েছে ৫ লাখ টাকায়। যদিও স্টল মালিক দাম হাঁকিয়েছিলেন ১০ লাখ।
ওই স্টলটি ফয়সাল নার্সারির। প্রতি বছর স্টল নেয় তারা। এবারের মেলায় সবচেয়ে বেশি দামের বনসাই বিক্রি করেছে এই নার্সারি। তাদের স্টল ঘুরে দেখা যায়, চীন, আফ্রিকা, ভারতের বিভিন্ন জাতের সঙ্গে দেশি জাতের গাছেরও বেশ কিছু বনসাই সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
নার্সারির মালিক মো. ফয়সাল আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশের বাজারে বনসাইয়ের চাহিদা ভালো। দেশির চেয়ে বিদেশি বনসাইয়ে আগ্রহ বেশি ক্রেতার। তারা গত সোমবার পর্যন্ত ২৩টি বনসাই বিক্রি করেছেন। যেগুলো বাজারমূল্য লাখ টাকার ওপর। কিন্তু নিম্নমানের বনসাইয়ে বাজার সয়লাব হওয়ায় দাম কমাতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘চীনাবট নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। এ গাছটির বয়স ২৫ বছর। আমাদের এখানে ছিল প্রায় এক বছর। শুরুতে এর দাম ১০ লাখ টাকা চেয়েছিলাম। মাঝে বেশ ভালোই দাম উঠেছিল। ভেবেছিলাম শেষের দিকে বিক্রি করব। কিন্তু মেলার বিভিন্ন স্টলে নিম্নমানের বনসাই দেখে আর ঝুঁকি নিতে চাচ্ছিলাম না। তাই ৫ লাখে বিক্রি করে দিয়েছি।’ এ ছাড়া বাওবাব, পাকুরসহ যেসব বনসাই রয়েছে, সেগুলোও অর্ধেক দামে ছেড়ে দিতে হয়েছে বলে তিনি জানান।
গত ৫ জুন থেকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের আগারগাঁওয়ে চলছে মাসব্যাপী জাতীয় বৃক্ষমেলা। চলবে আজ ১২ জুলাই পর্যন্ত। সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য মেলা উন্মুক্ত। এবারের জাতীয় বৃক্ষমেলার প্রতিপাদ্য : ‘গাছ লাগিয়ে যতœ করি, সুস্থ প্রজন্মের দেশ গড়ি’।
গত সোমবার মেলা ঘুরে দেখা যায়, বিদেশি বিভিন্ন জাতের বনসাইয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশীয় গাছের বনসাইও বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। বেশি আগ্রহের তালিকায় রয়েছে বট, পাকুর, নিশিন্দা, সুন্দরী, কাঞ্চন, কতবেল, তেঁতুল, হিজল, শেওড়া, কৃষ্ণচূড়া, কামিনী, ডুমুর, নারিকেল, নাগলিঙ্গম, বাগানবিলাস, প্রেমনা, বকুল ইত্যাদি। আর বিদেশি বনসাইয়ের মধ্যে রয়েছে ফাইকাস, চীনাবট, পুকেন্টি, জুনিপার, ঝুমুর, সাফেলারা ইত্যাদি।
ব্র্যাক নার্সারি ঘুরে দেখা গেছে, বিদেশি বনসাইয়ের পাশাপাশি সুন্দর বনের সুন্দরীও ক্রেতাদের আকর্ষণ করছে। ২ লাখ টাকা দাম হাঁকলেও শেষ পর্যন্ত সুন্দরী বিক্রি হয়েছে দেড় লাখ টাকায়।
প্রতিষ্ঠানটির সেলসম্যান রুবেল শেখ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এবারের মেলায় বনসাইয়ের বিক্রি বেশ ভালো হয়েছে। বিদেশি বনসাইয়ের পাশাপাশি দেশি বনসাইও বিক্রি হয়েছে।’
ওই সময় একই স্টলে চীনাবট নিয়ে দামাদামি করছিলেন মিরপুরের বাসিন্দা ডা. রেবেকা জামান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার গাছের প্রতি এক ধরনের ভালোলাগা কাজ করে। গ্রামের বাড়িতে একটা ছোট বাগানও করেছিলাম। কিন্তু শহরে যে বাগান করব সে জায়গা কই। অল্প জায়গায় বিভিন্ন প্রজাতির অনেক বনসাই রাখা যায়। অনেক বছর বয়সের বনসাই ঘরের ভেতর ও অফিসের টেবিলসহ বিভিন্ন স্থানে রাখা যায়। এতে সৌন্দর্য বাড়ে। তাই মেলায় এসেছি। শেষ সময়ে দামও একটু কম থাকে।’
আরেক বনসাই বিক্রেতা হোসেন বলেন, ‘আমরা শুরু থেকে অনেক বনসাই স্টলে তুলেছি। অধিকাংশই বিক্রি হয়ে গেছে। এখন চীনাবট ও সুন্দরীর বনসাই আছে। তবে কেউ চাইলে আমরা এনে দিতে পারি।’ মেলায় আসা বনসাইয়ের দাম ৫০০ টাকা থেকে শুরু। সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ৫ লাখ টাকা।
বনসাই ছাড়াও নানা জাতের ফলদ, বনজ, ঔষধি গাছের পাশাপাশি দেখা মিলল ঘর সাজানোর অর্কিডের। রয়েছে নানা জাতের ফুলের গাছও। প্রদর্শনীর পাশাপাশি গাছের চারা বিক্রি হচ্ছে।
গত সোমবার মেলা দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের বনসাই ঘিরে ভিড় দেখা গেছে। তারা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বনসাই দেখছিলেন। কেউবা আবার পছন্দের বনসাই নিয়ে দামাদামিও করছিলেন। একটা বড় গাছকে যে এভাবে আকৃতি ঠিক রেখে ছোট করা যায়, সেটাও তো কম বিস্ময়ের নয়!
স্বামীর পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সদ্যপ্রয়াত নেত্রকোনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) রেবেকা মমিন (৭৬)। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে মোহনগঞ্জের কাজিয়াটি গ্রামে নিজ বাড়িতে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। গতকাল ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রেবেকা মমিন। তিনি দীর্ঘদিন থেকে বার্ধক্যের কারণে নানা রোগে ভুগছিলেন।
নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল অধ্যুষিত তিনটি উপজেলা মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরী নিয়ে গঠিত নেত্রকোনা-৪ আসনের এমপি ছিলেন তিনি। নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার কাজিয়াহাঁটি গ্রামের বাড়িতে প্রয়াত এমপিকে শেষবারের মতো দেখার জন্য গতকাল সকাল থেকে পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ ভিড় করেন।
রেবেকা মমিনের জানাজায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান, জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ, পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শামছুর রহমান লিটন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শহীদ ইকবালসহ হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
রেবেকা মমিন ১৯৪৭ সালের ১৫ মে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার স্বামী আব্দুল মমিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী। আব্দুল মমিনের মৃত্যুর পর প্রথমবার ২০০৮ সালে নেত্রকোনা-৪ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
পাঁচ প্রকল্পের মাধ্যমে পুরো চট্টগ্রাম নগরী আসছে স্যুয়ারেজের আওতায়। এতে খরচ হবে ১৮ হাজার কোটি টাকা। সব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ২০৩৫ সালের পর বন্দরনগরীতে আর সেপটিক ট্যাংক থাকবে। তবে তার আগেই আংশিক এলাকায় স্যুয়ারেজ লাইন হয়ে যাবে।
পাঁচ প্রকল্পের মধ্যে সরকারি অনুদানের প্রথম প্রকল্পটি ২০২৬ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। বাকি প্রকল্পগুলোর একটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি), অন্যগুলো জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ফ্রান্সের বিনিয়োগে হচ্ছে।
১৯৬৩ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রতিষ্ঠিত হলেও ৫৫ বছর পর ২০১৮ সালে সর্বপ্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্পের অনুমোদন পায়। ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার সরকারি অনুদানের প্রকল্পটির কাজ চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নগরীর একটি অংশের ২৮ হাজার বাসায় স্যুয়ারেজের সংযোগ দেওয়া হবে। এসব বাসায় আর সেপটিক ট্যাংক থাকবে না। সব পয়ঃবর্জ্য স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্টের আওতায় চলে আসবে।
একটি বাসার তিনটি উৎস থেকে পানি নিষ্কাশিত হয়। একটি হলো বৃষ্টির পানি, অন্যটি রান্নাঘর ও গোসলখানার এবং তৃতীয়টি টয়লেটের পানি ও বর্জ্য। স্যুয়ারেজ প্রকল্পের আওতায় বৃষ্টির পানি চলে যাবে নালায় আর বাকি সব পানি পাইপলাইনের মাধ্যমে স্যুয়ারেজ লাইনে চলে যাবে। এজন্য পুরো নগরীতে বিভিন্ন সাইজের পাইপ বসানো হচ্ছে। এসব পাইপ দিয়ে বর্জ্য হালিশহর আনন্দবাজার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে যাবে। সেখানে পরিশোধন হবে। এখন যেমন নালা বা খালে স্যুয়ারেজের আউটলেট দেওয়া হয়ে থাকে। তখন আর এ পদ্ধতি থাকবে না। অর্থাৎ, এতে নগরীর নালা ও খালগুলোও দুর্গন্ধমুক্ত হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে স্যুয়ারেজ প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা পুরো নগরীকে ছয়টি জোনে ভাগ করেছি। এর মধ্যে প্রথম জোনের কাজ সরকারি অর্থায়নে চলছে। বাকি জোনগুলোর কোনোটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায়, আবার কোনোটি বিভিন্ন দেশ অর্থায়নে হচ্ছে। সব জোনের কাজ ২০৩৫ সালের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলে আমরা আশা করছি।’
নগরীর ছয়টি জোনের মধ্যে ক্যাচমেন্ট এরিয়া-১ নামে প্রথম জোনের (কোতোয়ালি, ডাবলমুড়িং, আগ্রাবাদ, হালিশহর প্রভৃতি এলাকা) স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের জায়গায় করা হচ্ছে ক্যাচমেন্ট এরিয়া-৫ (কাট্টলী) এবং ক্যাচমেন্ট এরিয়া-৬ (পতেঙ্গা)-এর ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। এর মধ্যে ক্যাচমেন্ট এরিয়া-৬ বাস্তবায়ন হচ্ছে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায়। প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকায় এ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রায় ২৫ বছর পর তা ওয়াসাকে হস্তান্তর করা হবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘পিপিপি পদ্ধতিতে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে জাপানের মারুবিনি কোম্পানি। ২০৩০ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। আর এটি হলে পুরো পতেঙ্গা ও হালিশহরের অবশিষ্ট এলাকা স্যুয়ারেজের আওতায় চলে আসবে।’
অন্যদিকে ক্যাচমেন্ট এরিয়া-৫ (কাট্টলী) এলাকার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি ফ্রান্সের ১৭৫ মিলিয়ন ইউরো (২০৮২ কোটি টাকা, এক ইউরো সমান ১১৫ টাকা হিসেবে) বিনিয়োগে বাস্তবায়ন করছে ফ্রান্সের একটি প্রতিষ্ঠান। এ প্রকল্পটি ২০২৯ সালের মধ্যে শেষ হবে। আর এটি হলে পুরো পাহাড়তলি, কাট্টলী, খুলশী, ষোলশহর ও নাসিরাবাদ প্রভৃতি এলাকা স্যুয়ারেজের আওতায় চলে আসবে। ক্যাচমেন্ট এরিয়া-৩ (ফতেয়াবাদ) এলাকায় বাস্তবায়ন হতে যাওয়া ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের আওতায় থাকবে অক্সিজেন, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও প্রভৃতি এলাকা। দক্ষিণ কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংকের দুই হাজার কোটি টাকা অর্থায়নে ২০৩৩ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে প্রকল্পটি। ক্যাচমেন্ট এরিয়া-২ (কালুরঘাট) ও ক্যাচমেন্ট এরিয়া-৪ (পূর্ব বাকলিয়া) যৌথভাবে বাস্তবায়ন হবে পূর্ব বাকলিয়া এলাকায়। সেখানেই গড়ে তোলা হবে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে এ প্রকল্পটি। এটি বাস্তবায়ন হলে কালুরঘাট থেকে বাকলিয়া হয়ে ফিরিঙ্গীবাজার পর্যন্ত পুরো এলাকাটি স্যুয়ারেজের আওতায় চলে আসবে। প্রকল্পটি ২০৩৩ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
২০৩৩ সালের মধ্যেই সব ক্যাচমেন্টের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। তারপরও দুই বছর বাড়তি ধরলে তা সর্বোচ্চ ২০২৩৫ সাল পর্যন্ত যেতে পারে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘স্যুয়ারেজে ফ্রান্স এককভাবে আগে বাংলাদেশে কোনো বিনিয়োগ করেনি। এবারই প্রথম তারা একক বিনিয়োগ করেছে।’
একটি জোন বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে বাস্তবায়ন হলেও বাকি পাঁচটি জোনের একটি পিপিপি এবং চারটি জোনে ৬ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান। এসব ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য ওয়াসার রয়েছে কি না, জানতে চাইলে প্রকৌশলী ফজলুল্লাহ বলেন, ‘সব ঋণের সুদের হার ১ শতাংশের নিচে। তাই এসব ঋণ পরিশোধে সমস্যা হবে না।’
২০১৭ সালের ১২ মার্চ, চট্টগ্রাম বোট ক্লাব প্রাঙ্গণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম ওয়াসার ‘শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার’ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনের জন্য স্যুয়ারেজ প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর একনেক সভায় স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে চট্টগ্রাম ওয়াসাকে বরাদ্দের অনুমোদন দেওয়া হয়। অর্থাৎ এ অর্থ সরকারকে ফেরত দিতে হবে না। প্রকল্পের মাঠপর্যায়ের কাজ শুরু হয় ২০২০ সাল থেকে।
রাজধানীর পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রংপুর, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ ও বগুড়ার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ ও বগুড়ায় ২ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু কর্নার না থাকায় হাসপাতালের সাধারণ রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
নোংরা পরিবেশে চমেকে ডেঙ্গুর চিকিৎসা : চট্টগ্রামে একদিনে নতুন করে আরও ৭৪ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৩৭ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৩৭ জন ভর্তি হয়েছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যায়নি কেউ। এ নিয়ে চলতি মৌসুমে চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে গত ১ জানুয়ারি থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৭ জনই শিশু।
রবিবার চমেক হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা। শৌচাগারের দরজা খোলা। ভাসছে মলমূত্র। মেঝেতে চলছে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা। তাদের পাশেই ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। নোংরা পরিবেশে সাধারণ রোগীর সঙ্গে রেখেই ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা চলছে। শয্যা না পেয়ে অনেক ডেঙ্গু রোগীর স্থান হয়েছে ওয়ার্ডের মেঝেতে। তাদের মধ্যে অনেকে মশারি ছাড়াই থাকছেন।
নগরের এনায়েতবাজার এলাকার বাসিন্দা আবদুল গফুর। পেশায় তিনি রিকশাচালক। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৮ জুলাই রাতে ভর্তি হয়েছেন ১৪ নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডে। গফুর অভিযোগ করে বলেন, ‘সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ৪০ নম্বরে চিকিৎসাধীন আছি। একজন চিকিৎসকেরও দেখা পাচ্ছি না।’
ডেঙ্গু রোগীর চলমান ঊর্ধ্বমুখী হার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আগামীতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ। এদিকে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু পরিস্থিতি অবনতির দিকে গেলেও চমেক হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য চালু করা হয়নি আলাদা কোনো কর্নার। নোংরা পরিবেশে চলছে ডেঙ্গু রোগীদের সেবা। হাসপাতালের ভর্তি হওয়া কিছু রোগী চিকিৎসকদের অবহেলার অভিযোগও করেছেন। তবে চমেক কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা কোনো কর্নার চালু না হওয়া প্রসঙ্গে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, ‘জায়গার অভাবে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা কর্নার চালু করা যায়নি। বিষয়টি মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকেও জানিয়েছি। হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডকে ডেঙ্গু কর্নার করতে বিভাগীয় পরিচালককে প্রস্তাব দিয়েছি। ডেঙ্গু রোগীর চলমান ঊর্ধ্বমুখী হার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আগামীতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।’
রমেকে ভর্তি রোগী সবই ঢাকা থেকে আসা : রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (রমেক) ডেঙ্গু চিকিৎসায় আলাদা কোনো বিশেষ ব্যবস্থা নেই। তবে এক রোগীর মৃত্যুতে কিছুটা তৎপর হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের রমেকের নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলার মেডিসিন ওয়ার্ডের ৩ নম্বর এবং ৬ নম্বর ইউনিটের কর্নার অংশে চিকিৎসা দিতে দেখা গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৭ রোগী ভর্তিসহ এ হাসপাতালে বর্তমানে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ জনে। রমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে রংপুরে ডেঙ্গু রোগীর প্রায় সব রোগীই ঈদে ঢাকা থেকে আসা মানুষ।
গতকাল মঙ্গলবার হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ রোগীদের ইউনিটের পাশেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে আলাদা ইউনিট স্থাপনের কাজ চলছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল প্রশাসন। আলাদা ওয়ার্ড না থাকায় আতঙ্কে আছেন চিকিৎসা নিতে আসা অন্য রোগী ও তাদের স্বজনরা।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মাহফুজ রহমান জানান, ভর্তি হওয়া রোগীর মধ্যে রংপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস করা মানুষ নেই বললেই চলে। এসব রোগীদের যথাযথভাবে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে।
রমেক পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুস আলী জানান, হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের কাছ থেকে আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। যদি কেউ অভিযোগ করেন তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। এছাড়াও ডেঙ্গু রোগীদের বিশেষ নজরে রাখারও আশ্বাস দেন তিনি।
রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, মশার উপদ্রব কমাতে সিটি করপোরেশন এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধন ওষুধ স্প্রে দিয়ে ছিটানোর কার্যক্রম বর্ষার কারণে কিছু কিছু জায়গায় বন্ধ রয়েছে। তবে আমরা দ্রুত সব জায়গায় মশা নিধন স্প্রে দেওয়া শুরু করব।
ফরিদপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৬১ রোগী : গত কয়েক দিনে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় অর্ধশতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৬ জন।
ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মহা. এনামুল হক জানান, এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে তাদের চিকিৎসা করা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ডে ভাগ করে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে।
ফরিদপুর জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর ফরিদপুর জেলায় সর্বমোট ১১৩ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। তার মধ্য ৫২ জন রোগী ছাড়পত্র নিয়ে চলে গেছেন। ফরিদপুরে বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন ৬১জন।
ময়মনসিংহ মেডিকেলে ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু, একজনের মৃত্যু : ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে আসমা বেগম (৫০) নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার বিকেল পৌনে ৬টার দিকে তিনি মারা যান। পুরান ঢাকা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আসমা সোমবার বিকেলে এই হাসপাতালে ভর্তি হন।
ডাক্তার ফরহাদ হোসেন হীরা জানান, সম্প্রতি ডেঙ্গু রোগী আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকায় আজ (গতকাল) থেকে পৃথক ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। সকাল থেকে ডেঙ্গু রোগীদের আলাদা ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ১৭ জন পুরুষ ও ৮ জন নারীর রোগীর জন্য বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রয়োজনে তা আরও বাড়ানো হবে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে নতুন ভর্তি হয়েছে তিনজন। এ নিয়ে হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে মোট ২৭ জন ডেঙ্গু রোগী।
এদিকে, গতকাল সকালে ময়মনসিংহ নগরীকে মশক ও ডেঙ্গুমুক্ত রাখতে মশক নিধন ক্র্যাশ প্রোগ্রাম ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। এ সময় সিটি মেয়র বলেন, আমরা নগরীকে মশক ও ডেঙ্গুমুক্ত রাখতে ক্র্যাশ প্রোগ্রামের পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
বগুড়ায় বৃদ্ধের মৃত্যু : জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাফিজার রহমান (৭৫) নামের এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া হাফিজার রহমান নন্দীগ্রাম উপজেলার কুমিড়ার বাসিন্দা। দুপুরে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শফিক আমিন কাজল। বর্তমানে বগুড়ায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ৩ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বগুড়ায় বর্তমানে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ২ জন এবং শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ১ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। যে সিরিজে চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। আর এই সিরিজে পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল! এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। একদিন পরে অবশ্য অবসর ভাঙলেও সেই সিরিজ আর খেলেননি তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে সাকিব সেই সিরিজ হারের দায় দিলেন তামিমের ওপরই।
'আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হারটা আমি পুরোপুরি একজনকে দায় দেব, অধিনায়ক। এক ম্যাচ পরে আমাদের হাতে আরও দুই ম্যাচ ছিল। আমরা তৃতীয় ম্যাচে ঠিকই কামব্যাক করেছি কিন্তু একটা ম্যাচ সময় লেগেছে আমাদের। সুতরাং এটা আর কারো দায় নয়, পুরো সিরিজটায় দায় একজনের ওপর। বিশ্বের কোথাও অন্তত দেখিনি যে এক ম্যাচ পরেই এরকম অধিনায়ক এসে ইমোশনালি বলে ফেলেন যে আমি ভাই খেলব না আর ক্রিকেট।’
সাকিব বলেন, 'আমার ধারণা যদি কোনো অধিনায়কের দায়িত্ববোধ থাকত, সে এটা করতে পারত না। আমার কাছে মনে হয়, এটা দলকে অনেক বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে এবং আমার মনে হয় ওইটাই এখনো রিকভার করতে সময় লাগছে, যেটা আমি অনুভব করি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।