
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যাকে বাংলাদেশের জন্য অস্তিত্বের লড়াই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের অর্থনীতি এখন নির্ভর করছে জলবায়ুর যে চ্যালেঞ্জ আমরা কীভাবে মোকাবিলা করি, এর ওপর।’ গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত জলবায়ু বাজেট এবং সুপারিশ পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ দূত।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রবৃদ্ধি যদি সাত থেকে আটে চলে যায় তাহলে আমরা কিন্তু নেগেটিভ গ্রোথে চলে যাচ্ছি। জলবায়ু সমস্যার কারণে আমাদের কী ক্ষতি হচ্ছে সে বিষয়ে জানতে হবে। জলবায়ুর কারণে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়, সেই ক্ষতি মোকাবিলায় সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।’
স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, পরিসংখ্যান এবং তথ্যের বিশ্লেষণ খুবই প্রয়োজনীয় বলে উল্লেখ করেন সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিনিয়োগের সংকট থাকতে পারে। আমরা বলতেই পারি যে তারুণ্য, জেন্ডার এনভায়রনমেন্টের ওপর আমাদের নজর রাখা উচিত। আমাদের প্রশ্ন জন্মায় বাংলাদেশের জলবায়ুর জন্য কী ধরনের অর্থনীতি প্রয়োজন। আর বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সঙ্গে বাইরে থেকে কী পরিমাণ বিনিয়োগ হবে সেটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আমাদের দেখতে হবে কী ধরনের বরাদ্দ আছে, সেটা পর্যাপ্ত কি না। এ ছাড়া কী পরিমাণ রিসোর্সেস (সম্পদ) অ্যাভেইলেবল (প্রাপ্যতা) আছে এবং আমাদের কোনটা প্রয়োজন সেটা জানতে হবে। আমাদের প্রয়োজন নিয়েও মূল্যায়ন থাকতে হবে। আমরা যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলছি সেটা কোনো স্থির বিষয় নয়। এটি একটি চলমান বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, যাকে আমরা মুভিং গোল পোস্ট বলতে পারি।’
অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তানভীর শাকিল জয় বলেন, ‘আমাদের সমস্যা অনুযায়ী দাতা সংস্থা থেকে যে অর্থ পাচ্ছি তা অনেক কম। কারণ এখন পর্যন্ত জলবায়ু নিয়ে আমরা কী ধরনের সমস্যা বাংলাদেশ মোকাবিলা করছে, সেটা ভালোভাবে তুলে ধরতে পারিনি। যেকোনো দেশ চাওয়ার সময় অবশ্যই বেশি চাইবে। কিন্তু প্রাপ্তির জায়গা অনেক কম।’
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘জলবায়ু বাজেট সংস্কার করা উচিত, যা জাতীয় অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কৌশল হিসেবে বিবেচিত হয়। সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা (পিএফএম) এজেন্ডাসহ জলবায়ু বাজেট সংস্কার হওয়া প্রয়োজন। জলবায়ু বাজেট সংস্কার পরিচালনার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়া উচিত। পাশাপাশি সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হওয়া উচিত অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের। বেসরকারি খাত, বেসরকারি সংস্থা, সুশীলসমাজ এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক সংস্থাগুলোসহ বৃহত্তর স্টেক হোল্ডাররা এই সংস্কারকাজে যুক্ত হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির (এসএসএনপি) বরাদ্দ বাড়াতে হবে। জলবায়ু বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে জলবায়ু বাজেটকে জাতীয় বাজেট প্রক্রিয়ার সঙ্গে আরও ভালোভাবে সংযুক্ত করা এবং জলবায়ু সম্পর্কিত তহবিল ব্যয়ের সামর্থ্য আরও বাড়াতে জনশক্তির সক্ষমতা অপরিহার্য।’
চলতি বছরের জলবায়ুর বাজেট প্রসঙ্গে ফাহমিদা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড (সিসিটিএফ) শক্তিশালী করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চলতি বছরের বাজেটে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের আকার ১ হাজার ৪৩৫ কোটি ৯০ লাখ টাকার বেশি। যদিও অষ্টম বার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২০-২৫ সালের মধ্যে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা আট হাজার কোটি টাকা থেকে পিছিয়ে আছে।’
জাতীয়করণকৃত কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি সরকারীকরণের জটিলতার নিরসন হচ্ছে না। বছর-ছয়েক আগে প্রধানমন্ত্রী জাতীয়করণে সম্মতি দেওয়া শুরু করলেও এখনো অর্ধেকের চাকরি সরকারি হয়নি। উপরন্তু শিক্ষকদের চাকরি সরকারীকরণে ভিন্ন নিয়ম চালু হয়েছে।
শিক্ষা, জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয় পার হয়েও প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে গিয়ে অধিকতর যাচাইয়ের ফাঁদে আটকা পড়েছেন নন-এমপিও শিক্ষকরা। সরকারের মেয়াদ শেষের পথে থাকায় প্রায় ২০০ কলেজের নন-এমপিও শিক্ষকরা চাকরি সরকারি হওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন।
প্রত্যেক উপজেলায় অন্তত একটি কলেজকে সরকারি করার লক্ষ্যে ২০১৬ সালে জাতীয়করণে সম্মতি দিতে শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন পর্যন্ত ৩২৪টি কলেজকে সরকারি করার (জাতীয়করণ) গেজেট জারি হয়েছে। তবে নানা প্রতিকূলতা পার করে শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগ সম্পন্ন হওয়া কলেজের সংখ্যা ১৩৩। বেতন উত্তোলনকারী কলেজের সংখ্যা ৬৩। প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে অনুমোদিত কলেজের সংখ্যা ১৬৪। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নামের ২৯টি প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষক-কর্মচারীর পদ অনুমোদিত হয়েছে আর অন্য কলেজগুলোর আংশিক পদ অনুমোদিত হয়েছে।
আগে সচিব কমিটি শিক্ষা, জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয় পার হয়ে আসা কলেজগুলোতে বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষকদের চাকরিও সরকারীকরণে সম্মতি দিয়েছে। ১২১টি কলেজ এভাবে পার হয়ে যাওয়ার পর কমিটির মনে হয়েছে, নন-এমপিও শিক্ষকদের আরও যাচাই প্রয়োজন। ফলে অর্ধশতাধিক কলেজের নন-এমপিও শিক্ষকরা আটকে রয়েছেন। বিশেষ করে যেসব কলেজে অনার্স-মাস্টার্স রয়েছে, সেখানে শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও হওয়ার সুযোগ নেই। অথচ তাদের নিয়োগ বৈধ। তারাই এখন মহাবিপদে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) আবদুন নুর মুহম্মদ আল ফিরোজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে জাতীয়করণকৃত কলেজে চাকরি আত্মীকরণের কাজ করছি। সচিব কমিটি থেকে কোনো জিজ্ঞাসা বা যাচাইয়ের প্রয়োজন থাকলে সেটাও দ্রুততার সঙ্গে করার চেষ্টা করছি। কাজ শেষ হতে খুব বেশি সময় লাগবে না।’
মৌলভীবাজার জেলার একটি জাতীয়করণকৃত কলেজের অনার্সের শিক্ষক নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আমাদের জেলায় পাঁচটি কলেজকে জাতীয়করণ করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্মীকরণের বিষয়টি সচিব কমিটিতে গেলে নন-এমপিও শিক্ষকদের অধিকতর যাচাইয়ের জন্য ফাইল আবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। শুধু আমাদের জেলাই নয়, সচিব কমিটিতে যাওয়া আরও অনেক কলেজের ফাইল আটকে আছে। অথচ কয়েক মাস আগে যেসব কলেজের ফাইল সচিব কমিটিতে গেছে, সেসব কলেজের নন-এমপিও শিক্ষকদের চাকরি সরকারি হয়েছে। তারা এখন সরকারি বেতন পাচ্ছেন। আমার প্রশ্ন, একই দেশে একই শিক্ষকদের চাকরি সরকারীকরণে দুই নিয়ম কেন? আমরা আতঙ্কে দিন পার করছি যাচাই শেষে আমাদের আবার বাদ দেওয়া না হয়।’
জাতীয়করণের গেজেট জারির পর শিক্ষক-কর্মচারীদের তথ্য যাচাইয়ের কাজ শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর। তারা এ কাজে তিন বছর সময় নেয়। এরপর যাচাই করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই কাজ দুই দপ্তর থেকে দুবার করায় অনেক সময় লেগে যায়। এরপর ফাইল যায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। পরে যায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে। সবশেষে ফাইল যায় সচিব কমিটিতে। এরপর ফাইল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফেরত এলে শিক্ষক-কর্মচারীদের অ্যাডহক নিয়োগ দিয়ে চাকরি সরকারীকরণের আদেশ জারি হয়।
সূত্র জানায়, ১২১টি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের পদ অনুমোদনের পরই দেখা দেয় নতুন জটিলতা। বর্তমান সচিব কমিটি প্রতিষ্ঠানভিত্তিক পদসংখ্যা ৪০-এর বেশি হলেই ‘অধিকতর যাচাই’ শব্দ সংযোজন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফাইল ফেরত পাঠিয়েছে। তারাই আবার কিছু প্রতিষ্ঠানের দ্বিগুণ জনবল অনুমোদন করেছে। এই বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শিক্ষকরা মাঠে নামলে একটি কলেজে এমপিও এবং নন-এমপিও শিক্ষকদের আলাদা করা হয়েছে। এতে আটকা পড়ছেন নন-এমপিও শিক্ষকরা।
জানা যায়, জাতীয়করণকৃত কলেজে দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ-নিষেধাজ্ঞা থাকায় প্রায় ২১২টির অধ্যক্ষ ও ১৯৩টির উপাধ্যক্ষ এবং অনেক বিষয়ের শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। অনেক কলেজে করণিক এমনকি অফিস-সহায়কের পদও শূন্য হয়ে যাচ্ছে। এত প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। কিছু কলেজে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদে শিক্ষা ক্যাডারের লোক পাঠানো হলেও বেশির ভাগ কলেজে পদ শূন্য রয়েছে।
সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির (সকশিস) সভাপতি জহুরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জাতীয়করণকৃত কলেজে সপ্তম গ্রেডে কর্মরত প্রভাষক, নবম গ্রেডে কর্মরত প্রদর্শক ও শরীরচর্চা শিক্ষক, সপ্তম গ্রেডে কর্মরত লাইব্রেরিয়ান, দশম গ্রেডে কর্মরত সহকারী লাইব্রেরিয়ানদের বেতন পদের প্রারম্ভিক ধাপে নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সবার বেতন আগের চেয়ে কমে গেছে, যা দিয়ে বর্তমান বাজারে জীবনযাপন কষ্টকর। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে আগের গ্রেড নির্ধারণের দাবি জানিয়েছি। এর পক্ষে অভিমত এলেও তা ফাইলবন্দি।’
সকশিসের তথ্যানুযায়ী, জাতীয়করণকৃত ৩২৪ কলেজের এমপিও ও নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ১৯ হাজার ২০৬। শিক্ষকের সংখ্যা ১৩ হাজার ২১৭ ও কর্মচারীর সংখ্যা ৫ হাজার ৯৮৯। ছয় বছরে চার হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী অবসরে গেছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, শিক্ষক-কর্মচারীরা অবসরে গেলেও যেদিন জাতীয়করণের গেজেট জারি হয়েছে, সেদিন থেকে বৈধ নিয়োগপ্রাপ্তরা সরকারীকরণের সুবিধা পাবেন, যদি সেদিন তাদের বয়স ৫৯ বছরের মধ্যে হয়ে থাকে।
দেশের বট, পাকুর, নিশিন্দা, সুন্দরীর সঙ্গে স্টলে স্টলে শোভা পাচ্ছে চীনাবট, ফাইকাস, জুনিপার, ঝুমুরা। বৃক্ষ ‘সমাজে’ সমীহ করা দেশের এসব গাছের বয়সও কম নয়। আকৃতিতে প্রজাতির ভাবটা রক্ষা করতে পারলেও আকারে একেবারেই ছোট। স্বাভাবিক অবস্থায় মাটিতে দাঁড়িয়ে কোনো গাছের মগডাল ছোঁয়া সম্ভব নয়। অথচ টবে বসানো আস্ত গাছটি ঘরে নিয়ে দিব্যি রেখে দিতে পারেন ড্রয়িংরুমে। যে কারণে ঘরের শোভা বাড়াতেই তাদের কদর বেশি। বলা হচ্ছে, বনসাইয়ের কথা।
জাতীয় বৃক্ষমেলা ঘুরে দেখা গেল, স্টলে স্টলে বনসাইয়ের বাহার। আকারে ছোট হলেও দামে কিন্তু কম নয়। চীনাবটের বনসাই বিক্রি হয়েছে ৫ লাখ টাকায়। যদিও স্টল মালিক দাম হাঁকিয়েছিলেন ১০ লাখ।
ওই স্টলটি ফয়সাল নার্সারির। প্রতি বছর স্টল নেয় তারা। এবারের মেলায় সবচেয়ে বেশি দামের বনসাই বিক্রি করেছে এই নার্সারি। তাদের স্টল ঘুরে দেখা যায়, চীন, আফ্রিকা, ভারতের বিভিন্ন জাতের সঙ্গে দেশি জাতের গাছেরও বেশ কিছু বনসাই সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
নার্সারির মালিক মো. ফয়সাল আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশের বাজারে বনসাইয়ের চাহিদা ভালো। দেশির চেয়ে বিদেশি বনসাইয়ে আগ্রহ বেশি ক্রেতার। তারা গত সোমবার পর্যন্ত ২৩টি বনসাই বিক্রি করেছেন। যেগুলো বাজারমূল্য লাখ টাকার ওপর। কিন্তু নিম্নমানের বনসাইয়ে বাজার সয়লাব হওয়ায় দাম কমাতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘চীনাবট নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। এ গাছটির বয়স ২৫ বছর। আমাদের এখানে ছিল প্রায় এক বছর। শুরুতে এর দাম ১০ লাখ টাকা চেয়েছিলাম। মাঝে বেশ ভালোই দাম উঠেছিল। ভেবেছিলাম শেষের দিকে বিক্রি করব। কিন্তু মেলার বিভিন্ন স্টলে নিম্নমানের বনসাই দেখে আর ঝুঁকি নিতে চাচ্ছিলাম না। তাই ৫ লাখে বিক্রি করে দিয়েছি।’ এ ছাড়া বাওবাব, পাকুরসহ যেসব বনসাই রয়েছে, সেগুলোও অর্ধেক দামে ছেড়ে দিতে হয়েছে বলে তিনি জানান।
গত ৫ জুন থেকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের আগারগাঁওয়ে চলছে মাসব্যাপী জাতীয় বৃক্ষমেলা। চলবে আজ ১২ জুলাই পর্যন্ত। সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য মেলা উন্মুক্ত। এবারের জাতীয় বৃক্ষমেলার প্রতিপাদ্য : ‘গাছ লাগিয়ে যতœ করি, সুস্থ প্রজন্মের দেশ গড়ি’।
গত সোমবার মেলা ঘুরে দেখা যায়, বিদেশি বিভিন্ন জাতের বনসাইয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশীয় গাছের বনসাইও বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। বেশি আগ্রহের তালিকায় রয়েছে বট, পাকুর, নিশিন্দা, সুন্দরী, কাঞ্চন, কতবেল, তেঁতুল, হিজল, শেওড়া, কৃষ্ণচূড়া, কামিনী, ডুমুর, নারিকেল, নাগলিঙ্গম, বাগানবিলাস, প্রেমনা, বকুল ইত্যাদি। আর বিদেশি বনসাইয়ের মধ্যে রয়েছে ফাইকাস, চীনাবট, পুকেন্টি, জুনিপার, ঝুমুর, সাফেলারা ইত্যাদি।
ব্র্যাক নার্সারি ঘুরে দেখা গেছে, বিদেশি বনসাইয়ের পাশাপাশি সুন্দর বনের সুন্দরীও ক্রেতাদের আকর্ষণ করছে। ২ লাখ টাকা দাম হাঁকলেও শেষ পর্যন্ত সুন্দরী বিক্রি হয়েছে দেড় লাখ টাকায়।
প্রতিষ্ঠানটির সেলসম্যান রুবেল শেখ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এবারের মেলায় বনসাইয়ের বিক্রি বেশ ভালো হয়েছে। বিদেশি বনসাইয়ের পাশাপাশি দেশি বনসাইও বিক্রি হয়েছে।’
ওই সময় একই স্টলে চীনাবট নিয়ে দামাদামি করছিলেন মিরপুরের বাসিন্দা ডা. রেবেকা জামান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার গাছের প্রতি এক ধরনের ভালোলাগা কাজ করে। গ্রামের বাড়িতে একটা ছোট বাগানও করেছিলাম। কিন্তু শহরে যে বাগান করব সে জায়গা কই। অল্প জায়গায় বিভিন্ন প্রজাতির অনেক বনসাই রাখা যায়। অনেক বছর বয়সের বনসাই ঘরের ভেতর ও অফিসের টেবিলসহ বিভিন্ন স্থানে রাখা যায়। এতে সৌন্দর্য বাড়ে। তাই মেলায় এসেছি। শেষ সময়ে দামও একটু কম থাকে।’
আরেক বনসাই বিক্রেতা হোসেন বলেন, ‘আমরা শুরু থেকে অনেক বনসাই স্টলে তুলেছি। অধিকাংশই বিক্রি হয়ে গেছে। এখন চীনাবট ও সুন্দরীর বনসাই আছে। তবে কেউ চাইলে আমরা এনে দিতে পারি।’ মেলায় আসা বনসাইয়ের দাম ৫০০ টাকা থেকে শুরু। সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ৫ লাখ টাকা।
বনসাই ছাড়াও নানা জাতের ফলদ, বনজ, ঔষধি গাছের পাশাপাশি দেখা মিলল ঘর সাজানোর অর্কিডের। রয়েছে নানা জাতের ফুলের গাছও। প্রদর্শনীর পাশাপাশি গাছের চারা বিক্রি হচ্ছে।
গত সোমবার মেলা দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের বনসাই ঘিরে ভিড় দেখা গেছে। তারা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বনসাই দেখছিলেন। কেউবা আবার পছন্দের বনসাই নিয়ে দামাদামিও করছিলেন। একটা বড় গাছকে যে এভাবে আকৃতি ঠিক রেখে ছোট করা যায়, সেটাও তো কম বিস্ময়ের নয়!
স্বামীর পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সদ্যপ্রয়াত নেত্রকোনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) রেবেকা মমিন (৭৬)। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে মোহনগঞ্জের কাজিয়াটি গ্রামে নিজ বাড়িতে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। গতকাল ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রেবেকা মমিন। তিনি দীর্ঘদিন থেকে বার্ধক্যের কারণে নানা রোগে ভুগছিলেন।
নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল অধ্যুষিত তিনটি উপজেলা মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরী নিয়ে গঠিত নেত্রকোনা-৪ আসনের এমপি ছিলেন তিনি। নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার কাজিয়াহাঁটি গ্রামের বাড়িতে প্রয়াত এমপিকে শেষবারের মতো দেখার জন্য গতকাল সকাল থেকে পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ ভিড় করেন।
রেবেকা মমিনের জানাজায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান, জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ, পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শামছুর রহমান লিটন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শহীদ ইকবালসহ হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
রেবেকা মমিন ১৯৪৭ সালের ১৫ মে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার স্বামী আব্দুল মমিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী। আব্দুল মমিনের মৃত্যুর পর প্রথমবার ২০০৮ সালে নেত্রকোনা-৪ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
পাঁচ প্রকল্পের মাধ্যমে পুরো চট্টগ্রাম নগরী আসছে স্যুয়ারেজের আওতায়। এতে খরচ হবে ১৮ হাজার কোটি টাকা। সব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ২০৩৫ সালের পর বন্দরনগরীতে আর সেপটিক ট্যাংক থাকবে। তবে তার আগেই আংশিক এলাকায় স্যুয়ারেজ লাইন হয়ে যাবে।
পাঁচ প্রকল্পের মধ্যে সরকারি অনুদানের প্রথম প্রকল্পটি ২০২৬ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। বাকি প্রকল্পগুলোর একটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি), অন্যগুলো জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ফ্রান্সের বিনিয়োগে হচ্ছে।
১৯৬৩ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রতিষ্ঠিত হলেও ৫৫ বছর পর ২০১৮ সালে সর্বপ্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্পের অনুমোদন পায়। ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার সরকারি অনুদানের প্রকল্পটির কাজ চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নগরীর একটি অংশের ২৮ হাজার বাসায় স্যুয়ারেজের সংযোগ দেওয়া হবে। এসব বাসায় আর সেপটিক ট্যাংক থাকবে না। সব পয়ঃবর্জ্য স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্টের আওতায় চলে আসবে।
একটি বাসার তিনটি উৎস থেকে পানি নিষ্কাশিত হয়। একটি হলো বৃষ্টির পানি, অন্যটি রান্নাঘর ও গোসলখানার এবং তৃতীয়টি টয়লেটের পানি ও বর্জ্য। স্যুয়ারেজ প্রকল্পের আওতায় বৃষ্টির পানি চলে যাবে নালায় আর বাকি সব পানি পাইপলাইনের মাধ্যমে স্যুয়ারেজ লাইনে চলে যাবে। এজন্য পুরো নগরীতে বিভিন্ন সাইজের পাইপ বসানো হচ্ছে। এসব পাইপ দিয়ে বর্জ্য হালিশহর আনন্দবাজার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে যাবে। সেখানে পরিশোধন হবে। এখন যেমন নালা বা খালে স্যুয়ারেজের আউটলেট দেওয়া হয়ে থাকে। তখন আর এ পদ্ধতি থাকবে না। অর্থাৎ, এতে নগরীর নালা ও খালগুলোও দুর্গন্ধমুক্ত হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে স্যুয়ারেজ প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা পুরো নগরীকে ছয়টি জোনে ভাগ করেছি। এর মধ্যে প্রথম জোনের কাজ সরকারি অর্থায়নে চলছে। বাকি জোনগুলোর কোনোটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায়, আবার কোনোটি বিভিন্ন দেশ অর্থায়নে হচ্ছে। সব জোনের কাজ ২০৩৫ সালের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলে আমরা আশা করছি।’
নগরীর ছয়টি জোনের মধ্যে ক্যাচমেন্ট এরিয়া-১ নামে প্রথম জোনের (কোতোয়ালি, ডাবলমুড়িং, আগ্রাবাদ, হালিশহর প্রভৃতি এলাকা) স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের জায়গায় করা হচ্ছে ক্যাচমেন্ট এরিয়া-৫ (কাট্টলী) এবং ক্যাচমেন্ট এরিয়া-৬ (পতেঙ্গা)-এর ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। এর মধ্যে ক্যাচমেন্ট এরিয়া-৬ বাস্তবায়ন হচ্ছে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায়। প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকায় এ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রায় ২৫ বছর পর তা ওয়াসাকে হস্তান্তর করা হবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘পিপিপি পদ্ধতিতে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে জাপানের মারুবিনি কোম্পানি। ২০৩০ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। আর এটি হলে পুরো পতেঙ্গা ও হালিশহরের অবশিষ্ট এলাকা স্যুয়ারেজের আওতায় চলে আসবে।’
অন্যদিকে ক্যাচমেন্ট এরিয়া-৫ (কাট্টলী) এলাকার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি ফ্রান্সের ১৭৫ মিলিয়ন ইউরো (২০৮২ কোটি টাকা, এক ইউরো সমান ১১৫ টাকা হিসেবে) বিনিয়োগে বাস্তবায়ন করছে ফ্রান্সের একটি প্রতিষ্ঠান। এ প্রকল্পটি ২০২৯ সালের মধ্যে শেষ হবে। আর এটি হলে পুরো পাহাড়তলি, কাট্টলী, খুলশী, ষোলশহর ও নাসিরাবাদ প্রভৃতি এলাকা স্যুয়ারেজের আওতায় চলে আসবে। ক্যাচমেন্ট এরিয়া-৩ (ফতেয়াবাদ) এলাকায় বাস্তবায়ন হতে যাওয়া ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের আওতায় থাকবে অক্সিজেন, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও প্রভৃতি এলাকা। দক্ষিণ কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংকের দুই হাজার কোটি টাকা অর্থায়নে ২০৩৩ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে প্রকল্পটি। ক্যাচমেন্ট এরিয়া-২ (কালুরঘাট) ও ক্যাচমেন্ট এরিয়া-৪ (পূর্ব বাকলিয়া) যৌথভাবে বাস্তবায়ন হবে পূর্ব বাকলিয়া এলাকায়। সেখানেই গড়ে তোলা হবে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে এ প্রকল্পটি। এটি বাস্তবায়ন হলে কালুরঘাট থেকে বাকলিয়া হয়ে ফিরিঙ্গীবাজার পর্যন্ত পুরো এলাকাটি স্যুয়ারেজের আওতায় চলে আসবে। প্রকল্পটি ২০৩৩ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
২০৩৩ সালের মধ্যেই সব ক্যাচমেন্টের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। তারপরও দুই বছর বাড়তি ধরলে তা সর্বোচ্চ ২০২৩৫ সাল পর্যন্ত যেতে পারে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘স্যুয়ারেজে ফ্রান্স এককভাবে আগে বাংলাদেশে কোনো বিনিয়োগ করেনি। এবারই প্রথম তারা একক বিনিয়োগ করেছে।’
একটি জোন বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে বাস্তবায়ন হলেও বাকি পাঁচটি জোনের একটি পিপিপি এবং চারটি জোনে ৬ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান। এসব ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য ওয়াসার রয়েছে কি না, জানতে চাইলে প্রকৌশলী ফজলুল্লাহ বলেন, ‘সব ঋণের সুদের হার ১ শতাংশের নিচে। তাই এসব ঋণ পরিশোধে সমস্যা হবে না।’
২০১৭ সালের ১২ মার্চ, চট্টগ্রাম বোট ক্লাব প্রাঙ্গণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম ওয়াসার ‘শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার’ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনের জন্য স্যুয়ারেজ প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর একনেক সভায় স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে চট্টগ্রাম ওয়াসাকে বরাদ্দের অনুমোদন দেওয়া হয়। অর্থাৎ এ অর্থ সরকারকে ফেরত দিতে হবে না। প্রকল্পের মাঠপর্যায়ের কাজ শুরু হয় ২০২০ সাল থেকে।
রাজধানীর পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রংপুর, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ ও বগুড়ার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ ও বগুড়ায় ২ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু কর্নার না থাকায় হাসপাতালের সাধারণ রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
নোংরা পরিবেশে চমেকে ডেঙ্গুর চিকিৎসা : চট্টগ্রামে একদিনে নতুন করে আরও ৭৪ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৩৭ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৩৭ জন ভর্তি হয়েছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যায়নি কেউ। এ নিয়ে চলতি মৌসুমে চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে গত ১ জানুয়ারি থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৭ জনই শিশু।
রবিবার চমেক হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা। শৌচাগারের দরজা খোলা। ভাসছে মলমূত্র। মেঝেতে চলছে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা। তাদের পাশেই ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। নোংরা পরিবেশে সাধারণ রোগীর সঙ্গে রেখেই ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা চলছে। শয্যা না পেয়ে অনেক ডেঙ্গু রোগীর স্থান হয়েছে ওয়ার্ডের মেঝেতে। তাদের মধ্যে অনেকে মশারি ছাড়াই থাকছেন।
নগরের এনায়েতবাজার এলাকার বাসিন্দা আবদুল গফুর। পেশায় তিনি রিকশাচালক। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৮ জুলাই রাতে ভর্তি হয়েছেন ১৪ নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডে। গফুর অভিযোগ করে বলেন, ‘সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ৪০ নম্বরে চিকিৎসাধীন আছি। একজন চিকিৎসকেরও দেখা পাচ্ছি না।’
ডেঙ্গু রোগীর চলমান ঊর্ধ্বমুখী হার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আগামীতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ। এদিকে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু পরিস্থিতি অবনতির দিকে গেলেও চমেক হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য চালু করা হয়নি আলাদা কোনো কর্নার। নোংরা পরিবেশে চলছে ডেঙ্গু রোগীদের সেবা। হাসপাতালের ভর্তি হওয়া কিছু রোগী চিকিৎসকদের অবহেলার অভিযোগও করেছেন। তবে চমেক কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা কোনো কর্নার চালু না হওয়া প্রসঙ্গে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, ‘জায়গার অভাবে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা কর্নার চালু করা যায়নি। বিষয়টি মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকেও জানিয়েছি। হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডকে ডেঙ্গু কর্নার করতে বিভাগীয় পরিচালককে প্রস্তাব দিয়েছি। ডেঙ্গু রোগীর চলমান ঊর্ধ্বমুখী হার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আগামীতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।’
রমেকে ভর্তি রোগী সবই ঢাকা থেকে আসা : রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (রমেক) ডেঙ্গু চিকিৎসায় আলাদা কোনো বিশেষ ব্যবস্থা নেই। তবে এক রোগীর মৃত্যুতে কিছুটা তৎপর হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের রমেকের নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলার মেডিসিন ওয়ার্ডের ৩ নম্বর এবং ৬ নম্বর ইউনিটের কর্নার অংশে চিকিৎসা দিতে দেখা গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৭ রোগী ভর্তিসহ এ হাসপাতালে বর্তমানে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ জনে। রমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে রংপুরে ডেঙ্গু রোগীর প্রায় সব রোগীই ঈদে ঢাকা থেকে আসা মানুষ।
গতকাল মঙ্গলবার হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ রোগীদের ইউনিটের পাশেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে আলাদা ইউনিট স্থাপনের কাজ চলছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল প্রশাসন। আলাদা ওয়ার্ড না থাকায় আতঙ্কে আছেন চিকিৎসা নিতে আসা অন্য রোগী ও তাদের স্বজনরা।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মাহফুজ রহমান জানান, ভর্তি হওয়া রোগীর মধ্যে রংপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস করা মানুষ নেই বললেই চলে। এসব রোগীদের যথাযথভাবে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে।
রমেক পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুস আলী জানান, হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের কাছ থেকে আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। যদি কেউ অভিযোগ করেন তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। এছাড়াও ডেঙ্গু রোগীদের বিশেষ নজরে রাখারও আশ্বাস দেন তিনি।
রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, মশার উপদ্রব কমাতে সিটি করপোরেশন এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধন ওষুধ স্প্রে দিয়ে ছিটানোর কার্যক্রম বর্ষার কারণে কিছু কিছু জায়গায় বন্ধ রয়েছে। তবে আমরা দ্রুত সব জায়গায় মশা নিধন স্প্রে দেওয়া শুরু করব।
ফরিদপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৬১ রোগী : গত কয়েক দিনে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় অর্ধশতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৬ জন।
ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মহা. এনামুল হক জানান, এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে তাদের চিকিৎসা করা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ডে ভাগ করে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে।
ফরিদপুর জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর ফরিদপুর জেলায় সর্বমোট ১১৩ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। তার মধ্য ৫২ জন রোগী ছাড়পত্র নিয়ে চলে গেছেন। ফরিদপুরে বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন ৬১জন।
ময়মনসিংহ মেডিকেলে ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু, একজনের মৃত্যু : ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে আসমা বেগম (৫০) নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার বিকেল পৌনে ৬টার দিকে তিনি মারা যান। পুরান ঢাকা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আসমা সোমবার বিকেলে এই হাসপাতালে ভর্তি হন।
ডাক্তার ফরহাদ হোসেন হীরা জানান, সম্প্রতি ডেঙ্গু রোগী আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকায় আজ (গতকাল) থেকে পৃথক ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। সকাল থেকে ডেঙ্গু রোগীদের আলাদা ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ১৭ জন পুরুষ ও ৮ জন নারীর রোগীর জন্য বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রয়োজনে তা আরও বাড়ানো হবে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে নতুন ভর্তি হয়েছে তিনজন। এ নিয়ে হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে মোট ২৭ জন ডেঙ্গু রোগী।
এদিকে, গতকাল সকালে ময়মনসিংহ নগরীকে মশক ও ডেঙ্গুমুক্ত রাখতে মশক নিধন ক্র্যাশ প্রোগ্রাম ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। এ সময় সিটি মেয়র বলেন, আমরা নগরীকে মশক ও ডেঙ্গুমুক্ত রাখতে ক্র্যাশ প্রোগ্রামের পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
বগুড়ায় বৃদ্ধের মৃত্যু : জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাফিজার রহমান (৭৫) নামের এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া হাফিজার রহমান নন্দীগ্রাম উপজেলার কুমিড়ার বাসিন্দা। দুপুরে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শফিক আমিন কাজল। বর্তমানে বগুড়ায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ৩ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বগুড়ায় বর্তমানে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ২ জন এবং শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ১ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আইন মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি বলছে, আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে। সরকারের এমন নেতিবাচক সিদ্ধান্তের পর এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি দেয়নি দলটি। তবে এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে যোগ হতে পারে বলে জানা গেছে।
৫৩ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও দলীয় নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। বিদেশে নেওয়া ছাড়া তার উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে তার ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। এতে মতামত দিতে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় আইন মন্ত্রণালয় এতে মতামত দেয়। এ বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেছেন, তার সাময়িক মুক্তির আদেশটা বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) কারাগারে নেওয়া হলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বাসায় চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না এমন দুটো শর্ত সাপেক্ষে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে দন্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। দরখাস্তটা নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে আটবার দন্ড স্থগিত করা হয়েছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো সুযোগ আইনে থাকে না। আমরা ৪০১ ধারার উপধারা ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ ব্যাখ্যা করে মতামত পাঠিয়েছি। আমাদের মতামত হলো, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে, সেটা অতীত এবং মীমাংসিত। এটা আর খোলার কোনো উপায় নেই।’
এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) সাজা স্থগিত রেখে যে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সেটা বাতিল করে তারপর পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই উপমহাদেশে ৪০১ ধারার ক্ষমতা যখন প্রয়োগ করে, তখন এটি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলে সিদ্ধান্তের নজির আছে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন যে আদেশটা আছে, সেটা যদি বাতিল করা হয়, বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) যদি আবার কারাগারে নেওয়া হয়, তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু এ অবস্থায় আদালতে যেতে পারবেন না।’ খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের বিষয়টি বাতিল করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা অমানবিক হবে, বাতিল করব না।’
আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এক বার্তায় বলেন, ‘আজকের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, দেশে আইনের শাসন নেই। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক ভয়ংকর তামাশা করা হচ্ছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, নির্বাহী বিভাগ চাইলেই কাউকে মুক্তি দিতে পারে।’
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় বিএনপি কী এখন ভাবছে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে।’
আর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর নীলনকশার অংশ। মানবতাবিরোধী ও সরকারের বর্বর ইচ্ছা পূরণের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।’
দলটির নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা না করে, রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করতে না পারলে বিএনপিপ্রধানের মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমেই এই ইস্যুর সুরাহা করতে চায় দলটি।
কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। কিন্তু দেশে চিকিৎসা গ্রহণের শর্তারোপ করা হলে তা যে চিকিৎসার বিবেচনায় না করে রাজনীতির বিবেচনায় করা হবে, সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি সাধারণ মানুষের আছে।’
অসুস্থতার কারণে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের মার্চে করোনার সময় টানা দুই বছর কারাভোগের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরেছিলেন খালেদা জিয়া। পরে এ পর্যন্ত তার মুক্তির মেয়াদ আটবার বাড়িয়েছে সরকার।
এরই মধ্যে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ দিতে পরিবারের পক্ষে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এ বিষয়ে আইনি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি পাঠায়।
বিএনপিপ্রধানকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি সরকার ইতিবাচকভাবে দেখতে পারে’। কিন্তু সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘বিদেশে যাওয়ার আবেদন করতে হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত গিয়ে করতে হবে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের পর সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় এবারও ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না। গত শনিবার এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ শঙ্কাই প্রকাশ করেছিলেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা আছে, যেকোনো মূল্যে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকার মরিয়া। সে কারণে হয়তো খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি ঝুঁলিয়ে রাখতে চাইছে এমনটাই মনে করছে সরকারবিরোধীরা। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিলেই সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলেও বিরোধী নেতাদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। তবে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথাই নেতাদের বলে রেখেছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির হাইকমান্ড মনে করছেন, এ অবস্থায় চলমান এক দফার আন্দোলনে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিষয়টি থাকলেও সেটাকে আরও জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে; যাতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নেয়।
জানা গেছে, এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলটি। আজ সোমবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক রয়েছে। সূত্র বলছে, জোটগত ছাড়াও দলীয়ভাবেও কর্মসূচি আসতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক চিকিৎসক জানান, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তার কেবিনে এক্স-রে মেশিন নেওয়া হয়েছিল গতকাল ভোরে। শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে না এলে সিসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ ছিল। দুপুরে তার ইসিজি ও ইকো ডায়াগ্রাম করানো হয়েছে। ফুসফুসের পানি অপসারণের জন্য তার ডান পাশে যে ক্যাথেটার লাগানো ছিল, সেটা আপাতত খুলে ফেলা হয়েছে।
লিভার জটিলতা ছাড়াও ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ফুসফুস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। গত ৯ আগস্ট ফিরোজায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দলীয় মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সেটআপে কেবিনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে।
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘ওনার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সে জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানো দরকার।’
হতাশায় শেষ খালেদার অপেক্ষা
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
সাড়ে ৩ বছরে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স
দেশের বিদেশি মুদ্রা আয়ের অন্যতম হাতিয়ার প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের ধস নেমেছে। সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধপথে ও ব্যাংকের মাধ্যমে মাত্র ১৩৪ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। গত সাড়ে তিন বছরে এটি সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স। ৪১ মাস আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এর চেয়ে কম ১০৯ কোটি ডলার সমপরিমাণের রেমিট্যান্স এসেছিল। রেমিট্যান্স-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দামের ব্যবধান বেশি হলে হুন্ডিতে লেনদেন বেড়ে যায়। আর যখন হুন্ডির চাহিদা বাড়ে তখন রেমিট্যান্স কমে যায়। গত মাসে ব্যাংকের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দাম ৬ থেকে ৭ টাকা বেশি ছিল। তাই বেশি লাভের আশায় বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন প্রবাসীরা।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজার ছাড়াল
এ বছর অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে ডেঙ্গু। গতকাল রবিবার ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজারের কোটা ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) সারা দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬ জনে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৮৮২ জন।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
অকাজের ৩৭০০ কোটির সেতু
সেতু হয়। কিন্তু সড়ক হয় না। সেতু করার জন্য নানান প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু সেসব সেতু করেই দায়সারা বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়। ভোগান্তি সাধারণ মানুষের। আবার যতগুলো সেতু করার কথা ততগুলো না করেও প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করার প্রতিবেদনও দেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সারা দেশের গ্রামের রাস্তাগুলোতে সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পে। প্রকল্পের এসব অনিয়ম উঠে এসেছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবি আ.লীগ নেতার
আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার। গত শনিবার রাতে তার ফেসবুকে এ দাবি জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন তিনি।
মুহূর্তেই স্ট্যাটাসটি ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিএনপির অসংখ্য নেতা, কর্মী-সমর্থক তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রশংসা করেন। অন্যদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নিন্দা জানিয়ে দলীয় সব পদ থেকে তার বহিষ্কারের দাবি জানান।
আবদুল মোতালেব হাওলাদার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘রাজনৈতিক কারণে আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়া হউক।’
স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন অধরাই
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
ফুটপাত থেকে মদের বার সবখানে চাঁদাবাজি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের কমিটি পার করেছে পাঁচ বছরের বেশি সময়। মেয়াদোত্তীর্ণ এ কমিটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। কিছু নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে। সর্বশেষ মদের বার ভাঙচুর ও লুট করে আবারও আলোচনায় এ কমিটির নেতাকর্মীরা।
নতুন কমিটি না হওয়ায় নেতারা বেপরোয়া আচরণের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছেন বলে মনে করেন সাধারণ কর্মীরা। তারা বলেন, সংগঠনের কর্মকাণ্ডও স্থবির হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান তারা।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মো. রিপন মিয়াকে সভাপতি ও মাহমুদুল হক জুয়েল মোড়লকে সাধারণ সম্পাদক করে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের জন্য আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে গত বছর ১২ জুন ৩২১ জনের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য।
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী, দেশে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১১৯। এ তালিকায় রয়েছে যারা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মাজার, ফুটপাত, সিঁড়ি, ওভারব্রিজের নিচে, লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাট, মার্কেটের বারান্দায় দিন কাটান। আর বস্তিতে বসবাস করছে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন। তারা মূলত শহর ও উপশহর এলাকায় টিনের ঘর, সেমিপাকা ঘর বা ঘিঞ্জি পাকা ঘরে বাস করে। তবে বস্তিবাসী কারা সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৬ সালে সরকার আবাসন নীতিমালা করেছে। আবাসন উন্নয়ন তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। আবাসন সংকট নিরসন করতে হলে সরকারকে আবাসন তহবিল করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বস্তিবাসী, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত কারা তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। না হলে বোঝা যাবে না কত মানুষ বস্তিতে থাকে।’
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে আবাসন সংকট কাটছে না। স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে আবাসন।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে ৯ লাখ গৃহহীন মানুষকে চিহ্নিত করে। ইতিমধ্যে আট লাখ মানুষের গৃহের ব্যবস্থা করেছে; প্রায় ৪০ লাখ মানুষের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বাকিদের জন্যও শেখ হাসিনা ব্যবস্থা করবেন। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যও আবাসনের ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা তার সৈনিক হিসেবে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জানা যায়, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার সবার জন্য আবাসন। অঙ্গীকার পূরণে সরকার নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সারা দেশে ৩০টি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, নোয়াখালী, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, শরীয়তপুর, নড়াইল, খুলনা, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব প্রকল্পে ৬ হাজার ৪৩২টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৭টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পে ৫ হাজার ৯৩০টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে। শেরপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, হবিগঞ্জ, সিলেট, ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ১৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৩৫টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় রাজউক পূর্বাচল, ঝিলমিল, উত্তরা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় আবাসন প্রকল্পে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ফ্ল্যাটগুলো উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। পূর্বাচল, ঝিলমিল ও উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনেও বিভিন্ন সংস্থা আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন শহরে বসবাসরত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্পদশালী ব্যক্তিরা। যাদের অনেক ফ্ল্যাট আছে তারা আরও ফ্ল্যাট কিনছেন। কিন্তু বাস্তুহারা, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত সরকারি এসব আবাসনের সুবিধা পাচ্ছেন না। অল্প দামে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার আবাসন প্রকল্প তৈরি করে যাদের নামে বরাদ্দ দিচ্ছে তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত।
জাতিসংঘ ১৯৮৫ সালে বিশ্ব বসতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশে^ অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার এ দিবসটি পালিত হয়।
বিশ্বজুড়ে বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউ এয়ারের তথ্য অনুযায়ী আজ সোমবার (০২ অক্টোবর) ঢাকার বাতাসের মান ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’। এদিন সকাল ১০টার দিকে ১২৯ স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে ঢাকা।
এসময় ১৮৩ স্কোর নিয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকার প্রথম স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর। ১৬২ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা। ১৬০ স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি। ১৫৬ স্কোর নিয়ে চতুর্থ ভারতের আরেক শহর করাচি। ১৫৩ স্কোর নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে ইতালির মিলানো।
এ ছাড়া একইসময়ে একিউআই স্কোর ১১৭ স্কোর নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে চীনের উহান। ১১৩ স্কোর নিয়ে অষ্টম স্থানে রয়েছে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর। ১১২ স্কোর নিয়ে নবম স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। ১০৯ স্কোর নিয়ে দশম স্থানে রয়েছে সৌদি আরবের রিয়াদ।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরের এ তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই স্কোর একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে কি না, তা জানায়।
একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং স্কোর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকলে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়।
অপেক্ষা আর মাত্র ৩ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই।
শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে। কিং খানের ‘জাওয়ান’ কাঁপাচ্ছে পর্দা, কাটতি বাড়ছে বক্স অফিসে; বিশ্বকাপে আইসিসির পকেট ভরবে তো?
প্রস্তুতি বলছে, ভরবে। উইকেটে হবে রান উৎসব, লড়াই হবে ধুন্ধুমার। তাতেই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হবে এক ব্লকবাস্টার মেগা হিট।
মাস তিনেক আগে, বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচগুলো যে ১০ ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে সেই ভেন্যুগুলোর কিউরেটরদের সঙ্গে বসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কিউরেটর। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের একটাই মন্ত্র, রান চাই।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে, ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলেছে সেই ম্যাচগুলো যদিও বিশ্বকাপের ভেন্যুতে হয়নি তবে সেই সব ম্যাচেও রানের বন্যা বয়েছে।
প্রথম দুটো ওয়ানডেতে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার করা ২৭৬ রান অনায়াসে তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে ভারত। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ঠেঙিয়ে তুলেছেন ৩৯৯ রান। তিন নম্বর ম্যাচে আবার অস্ট্রেলিয়া করেছে ৩৫২ রান, যা তাড়া করে ভারতও গিয়েছিল ২৮৬ অবধি।
উদ্বোধনী ম্যাচ হবে গুজরাতের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এখানে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। ম্যাচে শুভমান গিল করেন সেঞ্চুরি, ভারত করে ৪ উইকেটে ২৩৪ রান আর জবাবে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ৬৬ রানে।
বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের ধরন বুঝে ব্যাট করতে পারলে ৫০ ওভারে এখানে রানবন্যা হবে। বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দুই দল এখানে মুখোমুখি হয়েছে বহুবার, পোশাকের রঙ কখনো রঙিন কিংবা কখনো সাদা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ কমেনি। এই মাঠে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রান করে ভারতকে ২১ রানে হারিয়েছে সবশেষ ম্যাচে।
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ঘরের মাঠে সবশেষ মৌসুমে ধোনির ‘ইয়েলো আর্মি’ ৮ ম্যাচ খেলে ২০০ রানের ওপরে করেছে দুইবার, একবার জিতেছে অন্যবার হেরেছে। তবে দুই ইনিংসেই ২০০’র বেশি রান হয়েছে দুটো ম্যাচেই। অর্থাৎ চাইলে চেন্নাইকেও ব্যাটিং স্বর্গে পরিণত করা সম্ভব।
বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর টানা তিন ওয়ানডে জিতে সিরিজ তো নিশ্চিত করেছেই, টানা তিন ম্যাচে ৩০০’র ওপর রান করেছে। চতুর্থ ওয়ানডেতে তো ৪০০ পার করেছে প্রোটিয়ারা। ব্যাটিং উইকেটে তারাও যে কোনো প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। হেনরিক ক্লাসেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৮৩ বলে খেলেছেন ১৭৪ রানের ইনিংস। বিধ্বংসী রূপে ফিরছেন ডেভিড মিলারও।
প্রোটিয়ারা প্রথম ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে। সেখানে অবশ্য সবশেষ হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচেও খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে তারা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯৯ রানে। দিল্লির মাঠটা হয়তো খানিকটা স্পিনারদের দিকেই ঝুঁকবে, তবে অন্য মাঠগুলোতে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবে মেতে উঠতে দেখার সম্ভাবনা জোরালো। তাই অনেক সাবেক ক্রিকেটারই প্রোটিয়াদের দেখছেন শেষ চারে।
বিশ্বকাপের আগে ক্লাসেন ছাড়াও ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস খেলেছেন ১৮২ রানের ইনিংস, দারুণ ছন্দে ইংল্যান্ডের ডাভিড মালানও। তবে সেরা ছন্দে নিঃসন্দেহে শুভমান গিল। সবশেষ ৫ ইনিংসে দুটো শতরান আর একটা হাফসেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেলও আছেন দারুণ ছন্দে। দুটো হাফসেঞ্চুরি আর একটা সেঞ্চুরি সবশেষ ৫ ইনিংসে। হায়দ্রাবাদে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের ৩৪৫ রান কিউইরা তাড়া করেছে ৩৮ বল হাতে রেখে।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, এই বারের বিশ্বকাপে রানবন্যায় বোলারদের জন্য কাজটা হবে কঠিন। দেশ রূপান্তরকে আশরাফুল বলেন, ‘আমাদের পেসাররা গত এক দেড় বছর ধরে খুবই ভালো করছে। তবে যেহেতু ভারতের মাটিতে খেলা, আমরা দেখেছি যে সাড়ে ৩০০’র বেশি রান হচ্ছে প্রতিটা ম্যাচে। কেউ যদি ভালো না করে, তাকে মনে রাখতে হবে যে টুর্নামেন্টে পরের ম্যাচে ফিরে আসতে হবে। একজনের দিন খারাপ যেতেই পারে, কোনো ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান উঠেই যেতে পারে। ৯টা ম্যাচের ভেতর ৪-৫টা ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান হতে পারে। তাই বোলারদের ফিরে আসার মানসিকতা থাকতে হবে।’
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমও বলেছেন যে দেড় মাসের আসরে প্রস্তুত থাকতে হবে যে কোনো কিছুর জন্যই, ‘দেড় মাসের আসর, ৯টা ম্যাচ এই সময়ে খেলতে হবে বা তারও বেশি। অনেক উত্থান-পতন হবে। যে কোনো কিছুর জন্যই তৈরি থাকতে হবে।’
রান উৎসবের বিশ্বকাপ যে হতে যাচ্ছে, তার সব রসদই মজুদ। মাঠগুলোকে করা হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গ, বিশ্বকাপে আসার আগে সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরাও আছেন ছন্দে। শুধু প্রশ্ন এটাই, রান উৎসবের এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রান করবেন কে? সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাটিংয়ের ছবিটা যে মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।