
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে তোলা ছবি পাঠানোর প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গত বুধবার নতুন একটি ছবি প্রকাশ করেছে নাসা। নক্ষত্র সৃষ্টির সময়ের এ ছবি রো অফিউচি নামের ক্লাউড কমপ্লেক্স থেকে তোলা। ছবির নিচের অংশে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের স্টেলার নার্সারি বা আঁতুড়ঘরে (নতুন নক্ষত্র গঠনের স্থান) নবগঠিত একটি নক্ষত্র জ্বলজ্বল করছে
ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের একটি প্রকল্প তিন বছরের কথা বলে ৯ বছরেও শেষ করতে পারেনি বাংলাদেশ রেলওয়ে। বরং আরও তিন বছর সময় বাড়িয়ে ২০২৬ সালে কাজ শেষ করার বলছে তারা। পাঁচবার মেয়াদ বেড়েছে, প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে রেললাইন স্থাপন ও অনুষঙ্গিক কাজ না করার ঘোষণা দিয়েছে ঠিকাদার। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চিঠি চালাচালি, আলোচনা চললেও সুরাহা হয়নি বিষয়টির।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজে ফেরাতে না পারলে প্রকল্প শেষ করতে আরও দেরি হবে। কোনোভাবে তাদের ম্যানেজ করে ২০২৬ সালে কাজ শেষ করলেও ১২ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে সময় লাগবে ১২ বছর।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নিষ্কণ্টক জমিতে প্রকল্পের কাজ শেষ হতে এত দেরি হওয়ায় রেলওয়ের সক্ষমতাই প্রশ্নবিদ্ধ। এরপরও ১২ বছরে যা হতে যাচ্ছে তাতে সমস্যা থেকে যাবে। কারণ কোনো ‘গেট সেপারেশন’ রাখা হচ্ছে না। রাস্তার মোড়ে ‘গেট সেপারেশন’ হওয়ার কথা ছিল। এটা না হলে এত বড় বিনিয়োগের সুবিধা পুরো মিলবে না। ট্রেনের গতি ধীরই থাকবে। এই করিডরে যতগুলো সড়ক-মোড় আছে, ততগুলো গেট সেপারেশন রাখার ব্যবস্থা সংসদীয় কমিটি ও রেলওয়ের পরিকল্পনায় ছিল। তা না করেই লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে মানুষের উন্নয়ন যন্ত্রণা ভোগের পরও দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকবে।’
রেলওয়ে সূত্রমতে, ২০১৪ সালের জুলাই মাসে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরালে ডুয়েলগেজ লাইন স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ৩৭৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হলেও এখন তা বেড়ে ৬৫৪ কোটি টাকা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। ঠিক সময়ে কাজ শুরু করতে পারায় এর মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। পরে আরও তিন দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। চতুর্থবার মেয়াদ বাড়ানোর পরও কাজ হয় ৮২ শতাংশ। এবার মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০২৬ সালের জুন।
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ সেলিম রউফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় পাঁচটি স্টেশন নির্মাণ শেষে ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট জটিলতা কেটে গেছে। তেমন কোনো সমস্যা নেই। আশা করছি, আগামী ডিসেম্বর থেকে রেললাইন নির্মাণের কাজ শুরু হবে।’
প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জমি অধিগ্রহণ জটিলতা ও এ সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে প্রায় দেড় বছর লেগেছে। করোনা মহামারীর কারণেও কিছুটা সময় নষ্ট হয়েছে। ফলে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। নতুন লাইন নির্মাণের পাশাপাশি পুরনো মিটারগেজ লাইন উঠিয়ে সেখানে ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণের কাজ যুক্ত হওয়ায় ব্যয় বেড়েছে।’
অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, ‘রেলের প্রকল্পে অন্যান্য প্রকল্পের মতো জমি অধিগ্রহণের ঝামেলা নেই। রেলওয়ে যদি নিজেদের জমি রক্ষা করতে না পারে তার চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে? ব্রিটিশরা রেলওয়ের এত জমি রেখে যাওয়ার পরও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাবে সেগুলো নিজেদের দখলে রাখতে পারেনি তারা। এখন নিজেদের জমিই অধিগ্রহণ করতে হচ্ছে।’ প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দুটি প্যাকেজে এ প্রকল্পে ঠিকাদার হিসেবে চীনের পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না (পিসিসিসি) লিমিটেড ও কোরিয়ার এলএস ইলেকট্রিক কোম্পানি লিমিটেডকে নিয়োগ দেওয়া হয়। রেললাইন স্থাপন ও অবকাঠামো নির্মাণসহ বেশিরভাগ কাজের দায়িত্বে রয়েছে পিসিসিসি। তারা অবকাঠামো নির্মাণের কাজ করেছে। কিন্তু রেললাইন নির্মাণের আগেই তারা কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে চুক্তি সমাপ্তের চিঠি দিয়েছে রেলওয়েকে।
গত ১৫ মার্চ প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে দেওয়া চিঠিতে তারা বলেছে, সময়মতো প্রকল্পের অর্থ না পাওয়া ও নির্ধারিত জায়গা বুঝিয়ে না দেওয়ার কারণে তাদের কাজে অনেক দেরি হয়েছে। এতে তারা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক বলেছেন, ‘সর্বশেষ প্রকল্প রিভিশনের সময় ঠিকাদারকে পেমেন্ট দেওয়া সম্ভব হয়নি কিছু নিয়মনীতির কারণে। এখন যেহেতু রিভিশন হয়েছে তাই পেমেন্ট দিতে সমস্যা নেই। এ কথা তাদের জানানো হয়েছে। আশা করছি, তারা কাজ করবে।’
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, এখন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ যে রেললাইন আছে তাতে সারা দিনে ৩২টি ট্রেন চলাচল করতে পারে। ট্রেনের গতিসীমা ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৪৫ কিলোমিটার। ব্রডগেজ ডাবল লাইন চালু হলে গতি হবে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার। অনেক বেশি যাত্রীও পরিবহন করা যাবে। কোনো ধরনের ক্রসিং করার প্রয়োজন হবে না বলে যাতায়াতে সময় কম লাগবে।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলের ভাড়া মাত্র ১৫ টাকা। এ পথে যাত্রীদের বাসভাড়া গুনতে হয় অন্তত ৫০ টাকা। সাশ্রয়ে ও নিরাপদে দ্রুত যাতায়াতের জন্য এ রেলরুটটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। অনেকেই প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জ থেকে ট্রেনে করে ঢাকায় অফিস, ব্যবসা ও অন্যান্য কাজ করেন।
মাগুরা জেলার মহম্মদপুরের রাজাপুর গ্রামের নয়ন মোল্যা, ইকতিয়ার মোল্যা, রেহেনা বেগম ও আজিজ মোল্যারা সবাই পেশায় দিনমজুর ও ভ্যানচালক। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির (ইজিপিপি) দ্বিতীয় পর্যায়ের মজুরির টাকার অপেক্ষায় ছিলেন এসব শ্রমজীবী। সেই টাকা এলো মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। বিস্ময়করভাবে সেই প্রাপ্য টাকার সঙ্গে অনেকে ১০ গুণ টাকাও পেলেন। আনন্দে শ্রমজীবী মানুষগুলো টাকা তুলেও ফেলেছেন। এখন সেই টাকাই গলার কাঁটা হয়ে গেছে। কারণ, বাড়তি এ টাকা আদায়ের জন্য এখন তাদের ধড়পাকড় করা হচ্ছে। এটা শুধু মাগুরার চিত্র নয়; এ ঘটনা ঘটেছে দেশের বিভিন্ন জেলার ১০টি ভিন্ন ভিন্ন উপজেলায়।
সম্প্রতি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় এ মজুরির টাকা বিতরণ করা হয়। উপকারভোগীদের শ্রম মজুরি গভর্নমেন্ট টু পারসন (জিটুপি) পদ্ধতিতে পরিশোধ করা হয়। মজুরিভোগীরা সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে মোবাইল আর্থিক সেবা নগদের মাধ্যমে ৭ থেকে ৪০ দিন পর্যন্ত কাজের মজুরি পাওয়ার কথা। আর এখানেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ডেটা এন্ট্রির ভুলে মোবাইল অ্যাকাউন্টে চলে গেছে প্রায় ১০ গুণ টাকা।
যদিও মন্ত্রণালয় বলছে, ভুলটা তাদেরই। আইবাস সিস্টেমের ভুলের কারণে দশমিক বাদ পড়ায় এমনটি ঘটেছে। যে শ্রমিক ৩১৭২.০৫ টাকা পেতেন, মন্ত্রণালয়ের ভুলে দশমিক বাদ পড়ায় নগদ অ্যাকাউন্টে পৌঁছেছে ৩ লাখ ১৭ হাজার ২০৫ টাকা। এদিকে শ্রমজীবীদের মধ্যে যারা অর্থ উত্তোলন করেছেন, অধিকাংশই তা খরচ করে ফেলেছেন। এখন তাদের টাকা ফেরত দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মোটা অঙ্কের এ টাকা খরচ করে ফেরত দিতে গিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন হতদরিদ্র সুবিধাভোগীরা। তারা জানিয়েছেন, তারা আয় করে কিস্তিতে শোধ করবেন। একসঙ্গে তারা এত টাকা দিতে পারবেন না।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমানের কাছে এ ভুলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত ২৫ জুন আমার কাছে তথ্য আসে, আইবাস সিস্টেমে সমস্যা হয়েছিল। জানার সঙ্গে সঙ্গে সেটি বন্ধ করে দিয়েছি। যে পরিমাণ টাকা চলে গেছে তার ৮৫ শতাংশ ইউএনও, চেয়ারম্যান বা জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এগুলো সমন্বয় করা হচ্ছে। আশা করি শতভাগ সমন্বয় হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, যেহেতু তারা (উপকারভোগীরা) নিয়মিত সুবিধাপ্রাপ্ত। তাদের কাছ থেকে সহজেই টাকা উত্তোলন করা গেছে। একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। মূল ঘটনা তারা বের করে আমাকে রিপোর্ট দেবে। আগামীতে যাতে এ ধরনের ভুল না হয় সেটি নিশ্চিত করা হবে।
১০ উপজেলায় ৯ হাজার ৮৪৬ জন শ্রমিকের বিপরীতে চাহিদা এসেছিল ৮ কোটি ৫৩ লাখ ১০ হাজার টাকা। এ চাহিদাপত্রের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে আছে। এরপর সরকারের দিক থেকে প্রতি এক হাজারে ৭ টাকা ক্যাশআউট চার্জ যোগ করা হয়। ফলে এ অঙ্ক দাঁড়ায় ৮ কোটি ৫৯ লাখ ৭ হাজার ৪৭২ টাকা। কিন্তু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ভুলের কারণে আসলে শ্রমিকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ৮২ কোটি ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার ৪২৭ টাকা।
চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপচিালক মো. মিজানুর রহমানের স্বাক্ষরে ৮২ কোটি ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার ৪২৭ টাকার কথা উল্লেখ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দেওয়া হয়। এ চিঠির কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। পরে এই একই অঙ্ক উল্লেখ করে তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাগুলোর কাছে টাকা ছাড় করার জন্য চিঠি পায়।
অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, ডেটা এন্ট্রির গড়বড়ের কারণেই সরকারের এত বেশি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের একাধিক উপপরিচালক এবং পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে এক্সেল ফাইলে ডেটা এন্ট্রি দেওয়া হয়, সেখানে দশমিকের পরও দুই ঘর ছিল। কিন্তু যে এক্সেল ফাইলসহ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর সরকারের অনুমোদনের জন্য তোলে সেখানে কোনো দশমিকের ঘর ছিল না। অনেক শ্রমিকের মূল পাওনা ছিল ২ হাজার ৮১৯ দশমিক ৬ টাকা। কিন্তু তিনি পেয়ে গেছেন ২৮ হাজার ১৯৬ টাকা।
গত ২৫ জুন ডাক বিভাগের মোবাইল আর্থিক সেবা নগদের মাধ্যমে এ টাকা বিতরণ করা হয়। এ বিতরণের কিছুক্ষণের মধ্যেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর তাদের ভুলের বিষয়টি বুঝতে পারে এবং মজুরি বিতরণ হওয়া অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করার জন্য নগদকে নির্দেশ দেয়। তারপর থেকে ওই অ্যাকাউন্ট বন্ধ রয়েছে। তবে এরই মধ্যে অনেক অ্যাকাউন্ট থেকে বেশ কিছু টাকা ক্যাশআউট হয়ে গেছে।
মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রামানন্দ পাল বলেন, ‘টাকা ফেরত আনার বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর চিঠি দিয়েছে। সেই আলোকে আমরা ইউপি চেয়ারম্যানদের চিঠি দিয়েছি। অতিরিক্ত টাকা ফেরত আনতে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছি। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সহযোগিতায় টাকা ফেরত আনার কাজ চলছে।’
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে নগদের পাবলিক কমিউনিকেশনস বিভাগের প্রধান জাহিদুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের সরকারি বিতরণে কোনো মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানই বিতরণ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট থাকে না। ফলে কাকে কত টাকা দেওয়া হচ্ছে, তা প্রতিষ্ঠানটি আগে জানতে পারে না। বিতরণ সম্পন্ন হলে তারা এসব তথ্য জানতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, এ ভুলের কোনো পর্যায়েই আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। প্রয়োজনে সরকার উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি করে বিষয়টি যাচাই করতে পারে।’ নগদ একই সঙ্গেও বলছে যে, প্রায় ১০ গুণ বরাদ্দের ফাইলে মহাপরিচালকের স্বাক্ষর রয়েছে, ফলে তিনিই বলতে পারবেন কোথায় কীভাবে টাকার অঙ্ক এত বেশি হয়েছে।
থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বদলের ডাক দিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির নেতা পিটা লিমজারোয়েনরাট। জনমত জরিপের ফলাফলকে টেক্কা দিয়ে দেশটির যেকোনো দলের তুলনায় পিটার দল আসন ও ভোট দুটোই বেশি পেয়েছিল। সেনাবাহিনীর মদদপুষ্ট দলগুলোর ভরাডুবি হওয়ায় ভোটে দ্বিতীয় হওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার মেয়ে পেতোংতার্ন সিনাওয়াত্রার
নেতৃত্বাধীন পুয়ে থাই পার্টিও তার সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গঠন করবে বলে আশাও করা হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল রাজতন্ত্র আর সেনাবাহিনীর প্রভাব বলয়ে থাকা রাজনীতির মাঠে দারুণ নৈপুণ্য দেখানো পিটা লিমজারোয়েনরাটের হাত ধরেই থাই রাজনীতিতে আসবে নতুন সকাল। কিন্তু শেষ অবধি সেটা হলো না। খুব কাছে গিয়েও দেশটির সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হতে পারছেন না থাই রাজনীতির তরুণ তুর্কি পিটা।
বিবিসি জানাচ্ছে, জন রায় পেলেও পার্লামেন্টের সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের ভোট না পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী হতে পারছেন না পিটা লিমজারোয়েনরাট। দেশটির নিয়ম অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীকে অবশ্যই ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির উচ্চ ও নিম্ন দুটো কক্ষেরই সম্মিলিত ভোটে জিততে হয়। উচ্চ ও নিম্ন দুটো কক্ষেরই সম্মিলিত ভোট ৭৫০ (৫০০ এমপি ও ২৫০ সিনেটর)। প্রধানমন্ত্রী হতে এর মধ্যে কমপক্ষে ৩৭৬ জনের সমর্থন পেতে হতো পিটাকে। কিন্তু উচ্চকক্ষ সিনেটের ২৫০ সদস্য সেনাবাহিনীতে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ায় সেটা পাননি। ফলে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি ও পুয়ে থাই পার্টি দুই দল মিলে প্রতিনিধি পরিষদের ৫০০টির মধ্যে ২৯৩টি আসন পেলেও প্রধানমন্ত্রী হওয়া হলো না পিটার।
বিবিসি বলছে, সিনেটের ভোটে হারের পাশাপাশি পিটার বিরুদ্ধে ছিল ভোটের নিয়ম ভাঙার অভিযোগও। যদিও পিটা তা অস্বীকার করেছেন। তবে সিনেটের ভোটের ফলাফল মেনে নিয়েছেন তিনি। বলেছেন, প্রথম দফার এ ফল আমি মেনে নিচ্ছি। তবে আমি সব কিছু ছেড়ে দিচ্ছি না এখনই। কারণ আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। আমি আমার লক্ষ্য অর্জনে সামনের দিনগুলোতে লড়ে যাব।
পিটা লিমজারোয়েনরাট এক ধনী পরিবারের সদস্য। তার পরিবারের সঙ্গে রাজনীতির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। পিটার বাবা ছিলেন থাইল্যান্ডের কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। পাশাপাশি তার চাচা ছিলেন দেশটির ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার ঘনিষ্ঠ সহযোগী। পিটা নিউজিল্যান্ডে স্কুলের ছাত্র থাকাকালেই রাজনীতিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। থাইল্যান্ডের থামাসাট বিশ^বিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়া পিটা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক পলিসিতে স্নাতকোত্তর করেন। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে এমবিএ করেছেন পিটা।
ছাত্রজীবনে রাজনীতিতে ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগে পিটা তার বাবার ব্যবসায় যোগ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। ২০১৯ সালে ফিউচার ফরোয়ার্ড পার্টির এমপি হিসেবে পার্লামেন্টে যাওয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল পিটার। ধনকুবের ও সেনাবাহিনীর কট্টর সমালোচক থানাথর্ন জুয়ানগ্রুনগ্রুয়াংকির প্রতিষ্ঠিত এ দলটি সেবারের নির্বাচনে বেশ ভালো ফল করেছিল; পরিবর্তনের দাবি তুলে নাড়িয়ে দিয়েছিল থাই রাজনৈতিক অঙ্গনকে। বিতর্কিত সব অভিযোগে পরের বছর বিলুপ্ত করে দেওয়া হয় ফিউচার ফরোয়ার্ড পার্টিকে। তবে এর প্রতিবাদে হাজার হাজার তরুণ সে বছর থাইল্যান্ডের সড়কগুলোতে নেমে এসেছিল। দাবি তুলেছিল, সংবিধান সংশোধন, নতুন নির্বাচন এবং মানবাধিকারকর্মী ও রাষ্ট্রের সমালোচকদের হয়রানি বন্ধের। সেই তারুণ্যের শক্তি নিয়েই গঠিত হয় মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি। পিটা হন দলটির নেতা। ক্ষুরধার বক্তব্যের জন্য আগেই থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে উদীয়মান তারকা খ্যাতি পেয়েছিলেন তিনি। রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর প্রভাব কমানো এবং রাজতন্ত্র সংশ্লিষ্ট আইনের সংস্কারের মতো দলের সাহসী সব প্রতিশ্রুতি তার জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়ে দেয়।
এ বছর ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে তরুণ বয়সী এবং শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা। এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে তরুণ বয়সী ছেলে-মেয়ে, যা মোট আক্রান্তের ৪৬ শতাংশ বা ৭ হাজার ৪২৬ জন। এরপর সবচেয়ে বেশি ভর্তি হয়েছে শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা, যা মোট আক্রান্তের ৩২ শতাংশ বা ৫ হাজার ১৬৬ জন।
অন্যদিকে নারী-পুরুষের মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে পুরুষ, যা মোট ভর্তির ৫৯ শতাংশ এবং নারী ভর্তি হয়েছে ৪১ শতাংশ। অর্থাৎ ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি পুরুষের সংখ্যা ৯ হাজার ৫২৪ জন ও নারী ৬ হাজার ৬১৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ গত বুধবার পর্যন্ত সারা দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পেয়েছে। সেদিন পর্যন্ত এ বছরের মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ১৪৩ জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ভর্তি হয়েছে ১১ হাজার ১ জন ও ঢাকার বাইরে ৫ হাজার ১৪২ জন। সেদিন পর্যন্ত মোট মারা গেছে ৮৮ জন।
বয়সভেদে আক্রান্তের কারণ ব্যাখ্যা করে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাচ্চারা দিনে ঘুমায় বেশি, মশারি ছাড়া ঘুমায়। কিশোর-কিশোরীরা বাসার নিচে খেলাধুলা করে, বিভিন্ন জায়গায় ঘোরে। এ কারণে এই বয়সীরা আক্রান্ত বেশি হচ্ছে। আর ১৯-৩৯ বছরের তরুণ-তরুণীরা সবচেয়ে সক্রিয়। এরা বিভিন্ন জায়গায় আসছে, যাচ্ছে। তারা অন্য এলাকা থেকে ডেঙ্গু নিয়ে আসছে। এ কারণে এই বয়সীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত। বয়স্করা অতটা সক্রিয় না। বাসায় থাকে, মশারি ব্যবহার করে না। ফলে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে নারীদের মধ্যে তরুণ বয়সী নারীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
এই পরিচালক বলেন, তরুণরা আক্রান্ত হওয়ার একটা ভালো দিক হলো তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি ও মৃত্যুহার কম। এই গ্রুপের ছেলে-মেয়েরা সঠিক সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে মৃত্যু একেবারেই হবে না। তবে ভয় শিশু ও বয়স্কদের নিয়ে। এই শ্রেণির আক্রান্তের মৃত্যুহার বেশি। কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। বিশেষ করে বয়স্কদের ডেঙ্গুর পাশাপাশি অন্য রোগও থাকে। এই গ্রুপ বেশি আক্রান্ত হলে খারাপ বেশি। এ ছাড়া ৫ বছরের নিচের বয়সী বাচ্চারাও ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে শিশু ও বয়স্কদের ব্যাপারে আমাদের নজর বেশি দিতে হবে। এরা দিনে ঘুমালেও যেন মশারি ব্যবহার করে, সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) দেশে ডেঙ্গুতে নতুন করে আরও ১ হাজার ২৩৯ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ও মারা গেছে ৫ জন। ভর্তির সংখ্যা আগের দিন বুধবারের চেয়ে ৭ জন কম। তবে আগের দিন মৃত্যু ছিল ৫। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত এ বছর ডেঙ্গু নিয়ে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১৭ হাজার ৩৮২ জন ও মৃত্যু ৯৩ জন। নতুন রোগীদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭৫৬ জন ও ঢাকার বাইরে ৪৮৩ জন।
১৯-২৯ বছর বয়সীরা আক্রান্তের শীর্ষে : গত বুধবার পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে যত ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে তাদের মধ্যে ১৯-২৯ বছর বয়সীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, ২৮ শতাংশ। অর্থাৎ মোট ভর্তি রোগীর মধ্যে ৪ হাজার ৪২০ জনই এই বয়সী। এরপর আক্রান্তের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ৩০-৩৯ বছর বয়সী মানুষ। তাদের সংখ্যা ২ হাজার ৯০৬ জন, যা মোট ভর্তি রোগীর ১৮ শতাংশ। অর্থাৎ ১৯-৩৯ বছর বয়সী তরুণরাই এবার এখন পর্যন্ত আক্রান্তের শীর্ষে রয়েছে, যা মোট ভর্তি রোগীর ৪৬ শতাংশ।
দ্বিতীয় অবস্থানে শিশুরা : বয়স বিবেচনায় মোট ভর্তি রোগীদের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ১০-১৮ বছরের শিশুরা। এই বয়সী ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৭৪৪ জন, যা মোট রোগীর ১৭ শতাংশ। শিশুদের মধ্যে ৫-৯ বছর বয়সী ১ হাজার ৪৫৩ জন, যা মোট ভর্তি রোগীর ৯ শতাংশ ও ১-৪ বছরের মধ্যে ৯৬৯ জন বা ৬ শতাংশ। সে হিসাবে ১-১৮ বছর বয়সী শিশুরা আক্রান্তের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে, যা মোট ভর্তি রোগীর ৩২ শতাংশ। ১ বছরের নিচে শিশু ভর্তি হয়েছে ১ শতাংশ বা ১৬১ জন।
এ ছাড়া বয়স বিবেচনায় সর্বোচ্চ আক্রান্তের চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ৪০-৪৯ বছর বয়সী মানুষ। হাসপাতালে ভর্তিদের মধ্যে এই বয়সীর সংখ্যা ১ হাজার ৬১৪ জন, যা মোট ভর্তি রোগীর ১০ শতাংশ।
৫০-৬০ বছর ঊর্ধ্ব ১১% : শ্রেণি বিবেচনায় মধ্যবয়সী থেকে বয়স্ক মানুষ সর্বোচ্চ আক্রান্তের চতুর্থ নম্বরে রয়েছে। এই শ্রেণির মানুষ মোট ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৭৭৬ জন, যা মোট ভর্তি রোগীর ১১ শতাংশ। তবে এই বয়সী মানুষের মধ্যে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ৫০-৬০ বছরের মধ্যে ১ হাজার ১৩০ জন, যা মোট ভর্তি রোগীর ৭ শতাংশ এবং ষাটোর্ধ্ব বয়সী মানুষ আক্রান্ত হয়েছে ৪ শতাংশ, যা মোট ভর্তি রোগীর মধ্যে ৬৪৬ জন।
৭৯% মৃত্যু ভর্তির ১-৩ দিনের মধ্যে : স্বাস্থ্য অধিপ্তরের পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৭৯ শতাংশই মারা গেছে হাসপাতালে ভর্তির এক থেকে তিন দিনের মধ্যে। এ পর্যন্ত মোট ৮৮ জনের মৃত্যুর মধ্যে (গত বুধবার পর্যন্ত) সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ বা ২২ জন মারা গেছে রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এই হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, এবার রোগীরা দেরিতে হাসপাতালে আসছে। ডেঙ্গু শনাক্তের আগে তারা বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিচ্ছে। হাসপাতালে আসছে একেবারে শেষদিকে খুব জটিল অবস্থা নিয়ে। তখন আর আমাদের কিছু করার থাকে না। রোগীরা মারা যায়। আর যারা বেঁচে যায় তাদের দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকতে হয়।
লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতির মধ্য দিয়েই একটি জাতির নিজস্ব কৃষ্টি, সভ্যতা, ঐতিহ্য ও ইতিহাসের উজ্জ্বল উদ্ধার সম্ভব। লোকজীবন, সাহিত্য ও ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধারেই শুধু জাতি, সমাজ ও ব্যক্তিসত্তা বেঁচে থাকতে পারে। ফিরে পেতে তার সোনালি অতীত।
কুমিল্লা অঞ্চলের লোকায়ত জীবনের প্রতিচ্ছবিÑ কুমিল্লার লোকগীতিকার প্রেমের গান। নরনারীর একটি প্রগাঢ় সবুজ অনুভূতির নাম প্রেম। আর সংস্কৃতিতে সংগীত সে অনুভূতির চিরায়ত প্রকাশেরই বাঙ্গময় প্রকাশ। লোককবিদের রচিত এসব প্রেমগীতিগুলো সর্বজনীন। তা শাশ্বত মানবিক আবেগ আবেদনে প্লাবিত, কখনো কালমুখর। প্রেমের ব্যাপারে গ্রাম্য আর শহুরে, সভ্য আর অসভ্যের মধ্যে কোনো হেরফের নেই। প্রেম সর্বত্রই এক।
প্রেমগীতি সাধারণত একক গীতি। এতে নারী ও পুরুষের মনের অনুভূতির প্রকাশ ঘটে থাকে। বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানের মতো কুমিল্লার নারী পুরুষের কাছে অথবা পুরুষ নারীর কাছে প্রেমনিবেদন করে থাকে। কুমিল্লার লোকগীতিকার প্রধান ধর্মই একক প্রেম। গীতিকারও প্রধান উপজীব্য বিষয় প্রেমই। গীতিকা কাহিনিপ্রধান আর গীতি অনুভূতিপ্রধান। এদিক দিয়ে কুমিল্লা অঞ্চলের প্রেমগীতি উল্লেখ করার মতো। যেমন
‘কেমন তোমার মাতা-পিতা কেমন তোমার হিয়া
এত বড় অইয়া রইচ দুলা তোমারে না করাইল বিয়া।
কঠিন না তোমার মাতা-পিতা কঠিন না আমার হিয়া।
তোমার মত সুন্দরী পাইলে আমি অক্ষন করি বিয়া।
জাল্লার মাথাত জালি আমার মাথাত ডালি কেমনে বেচিব মাছ পাড়া-পড়শির বাড়ি।’
এ ছাড়া প্রেমের চিরন্তন রূপ ধরে কোনো কুমারীর বাগানে ফুল তোলা বা পুকুর পাড়ে কোনো ফুল পাড়তে যাওয়ার দৃশ্য কুমিল্লা গীতিকায় প্রতিভাত হয়েছে এভাবে :
‘তুমি আইলা বিদেশী নাগর
আমি আইছি অবিয়াস্তা নারী
কেমনে দিবাম আমি তোমারে তরুফল।’
কুমিল্লার প্রেমের গানের একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে বিরহ-বেদনা। এ বিরহের বিমূর্ত প্রকাশই কুমিল্লা লোকগীতিকাগুলো। যাতে বিরহগীতির সুগভীর বেদনার প্রসবন লুক্কায়িত থাকে। লুকিয়ে আছে সজল মেঘের প্রতিবিম্ব। যাতে প্রকাশিত হয়েছে হৃদয়ের অকথিত রাগিণী। যেমন :
‘আরে নয়া বাড়ি বাইন্দা সাধুরে
রইয়া গেলারে কচু
বিয়া কইরা থুইয়া গেলারে সাধু
ঘরে সুন্দর বধুরে।’
এ কারণে প্রেমের গানের মধ্যে বিরহগীতির একটি অংশ কুমিল্লার, যা বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে সর্বাধিক বিখ্যাত।
মূলত বিরহী নারী মনের ঋতু বিবর্তনে যে দুঃখ-বেদনার প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তারই প্রতিচ্ছবি প্রকাশ পায়-কুমিল্লার লোকজ প্রেমের গানে। যেখানে একজন বিরহিণী নারীর সংসারের সুখ-দুঃখের সজীব চিত্র রূপবাণীর মতো চিত্রিত এভাবে :
‘তুমি আর না আসিলা দেশেরে শ্যামচান্দ
তুমি আর না আসিলে দেশে।’
আমাদের লোকঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বলয়ে লোকায়ত বাংলার আয়নায় কুমিল্লার প্রেমের গান বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের খোরাক জোগাতে পারে।
লেখক : শিক্ষাবিদ
অপেক্ষা আর মাত্র ৩ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই।
শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে। কিং খানের ‘জাওয়ান’ কাঁপাচ্ছে পর্দা, কাটতি বাড়ছে বক্স অফিসে; বিশ্বকাপে আইসিসির পকেট ভরবে তো?
প্রস্তুতি বলছে, ভরবে। উইকেটে হবে রান উৎসব, লড়াই হবে ধুন্ধুমার। তাতেই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হবে এক ব্লকবাস্টার মেগা হিট।
মাস তিনেক আগে, বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচগুলো যে ১০ ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে সেই ভেন্যুগুলোর কিউরেটরদের সঙ্গে বসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কিউরেটর। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের একটাই মন্ত্র, রান চাই।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে, ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলেছে সেই ম্যাচগুলো যদিও বিশ্বকাপের ভেন্যুতে হয়নি তবে সেই সব ম্যাচেও রানের বন্যা বয়েছে।
প্রথম দুটো ওয়ানডেতে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার করা ২৭৬ রান অনায়াসে তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে ভারত। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ঠেঙিয়ে তুলেছেন ৩৯৯ রান। তিন নম্বর ম্যাচে আবার অস্ট্রেলিয়া করেছে ৩৫২ রান, যা তাড়া করে ভারতও গিয়েছিল ২৮৬ অবধি।
উদ্বোধনী ম্যাচ হবে গুজরাতের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এখানে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। ম্যাচে শুভমান গিল করেন সেঞ্চুরি, ভারত করে ৪ উইকেটে ২৩৪ রান আর জবাবে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ৬৬ রানে।
বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের ধরন বুঝে ব্যাট করতে পারলে ৫০ ওভারে এখানে রানবন্যা হবে। বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দুই দল এখানে মুখোমুখি হয়েছে বহুবার, পোশাকের রঙ কখনো রঙিন কিংবা কখনো সাদা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ কমেনি। এই মাঠে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রান করে ভারতকে ২১ রানে হারিয়েছে সবশেষ ম্যাচে।
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ঘরের মাঠে সবশেষ মৌসুমে ধোনির ‘ইয়েলো আর্মি’ ৮ ম্যাচ খেলে ২০০ রানের ওপরে করেছে দুইবার, একবার জিতেছে অন্যবার হেরেছে। তবে দুই ইনিংসেই ২০০’র বেশি রান হয়েছে দুটো ম্যাচেই। অর্থাৎ চাইলে চেন্নাইকেও ব্যাটিং স্বর্গে পরিণত করা সম্ভব।
বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর টানা তিন ওয়ানডে জিতে সিরিজ তো নিশ্চিত করেছেই, টানা তিন ম্যাচে ৩০০’র ওপর রান করেছে। চতুর্থ ওয়ানডেতে তো ৪০০ পার করেছে প্রোটিয়ারা। ব্যাটিং উইকেটে তারাও যে কোনো প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। হেনরিক ক্লাসেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৮৩ বলে খেলেছেন ১৭৪ রানের ইনিংস। বিধ্বংসী রূপে ফিরছেন ডেভিড মিলারও।
প্রোটিয়ারা প্রথম ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে। সেখানে অবশ্য সবশেষ হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচেও খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে তারা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯৯ রানে। দিল্লির মাঠটা হয়তো খানিকটা স্পিনারদের দিকেই ঝুঁকবে, তবে অন্য মাঠগুলোতে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবে মেতে উঠতে দেখার সম্ভাবনা জোরালো। তাই অনেক সাবেক ক্রিকেটারই প্রোটিয়াদের দেখছেন শেষ চারে।
বিশ্বকাপের আগে ক্লাসেন ছাড়াও ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস খেলেছেন ১৮২ রানের ইনিংস, দারুণ ছন্দে ইংল্যান্ডের ডাভিড মালানও। তবে সেরা ছন্দে নিঃসন্দেহে শুভমান গিল। সবশেষ ৫ ইনিংসে দুটো শতরান আর একটা হাফসেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেলও আছেন দারুণ ছন্দে। দুটো হাফসেঞ্চুরি আর একটা সেঞ্চুরি সবশেষ ৫ ইনিংসে। হায়দ্রাবাদে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের ৩৪৫ রান কিউইরা তাড়া করেছে ৩৮ বল হাতে রেখে।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, এই বারের বিশ্বকাপে রানবন্যায় বোলারদের জন্য কাজটা হবে কঠিন। দেশ রূপান্তরকে আশরাফুল বলেন, ‘আমাদের পেসাররা গত এক দেড় বছর ধরে খুবই ভালো করছে। তবে যেহেতু ভারতের মাটিতে খেলা, আমরা দেখেছি যে সাড়ে ৩০০’র বেশি রান হচ্ছে প্রতিটা ম্যাচে। কেউ যদি ভালো না করে, তাকে মনে রাখতে হবে যে টুর্নামেন্টে পরের ম্যাচে ফিরে আসতে হবে। একজনের দিন খারাপ যেতেই পারে, কোনো ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান উঠেই যেতে পারে। ৯টা ম্যাচের ভেতর ৪-৫টা ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান হতে পারে। তাই বোলারদের ফিরে আসার মানসিকতা থাকতে হবে।’
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমও বলেছেন যে দেড় মাসের আসরে প্রস্তুত থাকতে হবে যে কোনো কিছুর জন্যই, ‘দেড় মাসের আসর, ৯টা ম্যাচ এই সময়ে খেলতে হবে বা তারও বেশি। অনেক উত্থান-পতন হবে। যে কোনো কিছুর জন্যই তৈরি থাকতে হবে।’
রান উৎসবের বিশ্বকাপ যে হতে যাচ্ছে, তার সব রসদই মজুদ। মাঠগুলোকে করা হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গ, বিশ্বকাপে আসার আগে সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরাও আছেন ছন্দে। শুধু প্রশ্ন এটাই, রান উৎসবের এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রান করবেন কে? সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাটিংয়ের ছবিটা যে মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।