
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত সর্বনিম্ন সরকারি প্রণোদনার পরিমাণ এক হাজার টাকা ধার্য করা হতে পারে। অর্থাৎ মূল বেতনের ৫ শতাংশ যে বাড়তি প্রণোদনা দেওয়া হবে, এতে কারোর প্রণোদনার পরিমাণই এক হাজার টাকার কম হবে না। যা চলতি মাস থেকেই কার্যকর হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর বক্তব্য দেওয়ার সময় সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়ার কথা জানান। এ নির্দেশ সামনে রেখে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করে তা অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে হুবহু অনুসরণ করা হলে শেষ অর্থাৎ ২০তম ধাপে প্রণোদনা পরিমাণ দাঁড়ায় ৪১২ টাকা ৫০ পয়সা। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীকে এ হিসাব জানানো হলে প্রণোদনার পরিমাণ বাড়িয়ে হিসাব করতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। আর এ নির্দেশ অনুযায়ী সর্বনিম্ন প্রণোদনার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়।
প্রস্তাবে প্রণোদনা সরকারি কর্মরতদের পাশাপাশি রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব প্রণয়ন করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। যা চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই কার্যকর ধরা হবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত যা বহাল থাকবে।
এর আগে ১ জুলাই থেকে সরকারি কর্মচারীদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) হয় ২০১৫ সালে ঘোষিত বেতনকাঠামো অনুযায়ী প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে। নতুন এ বিধান কার্যকর হওয়ায় তার সঙ্গে আরও মূল বেতনের ৫ শতাংশ প্রণোদনা যোগ হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তাদের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী প্রণোদনা দিতে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বাড়তি ব্যয় হবে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮১৮।
নিয়মিত যে ৫ শতাংশ মূল বেতন বাড়ে, তার অনুপাতে বাড়িভাড়া ভাতাও বৃদ্ধি পায়। অর্থ বিভাগের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রণোদনা বাবদ যে ৫ শতাংশ দেওয়া হবে, তা মূল বেতনে যোগ হবে না। শুধু থোক হিসেবে মূল বেতনের ৫ শতাংশ অর্থ পাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে ২০টি ধাপ (গ্রেড) রয়েছে। প্রথম ধাপে বেতন-ভাতা পান সচিবরা। ২০ ধাপের মধ্যে তাদের মূল বেতনই নির্ধারিত ৭৮ হাজার টাকা। আর শেষ অর্থাৎ ২০তম ধাপের মূল বেতন ৮ হাজার ২৫০ টাকা।
অর্থ বিভাগ হিসাব করে দেখেছে, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে হুবহু অনুসরণ করলে ২০তম ধাপে প্রণোদনা হয় ৪১২ টাকা ৫০ পয়সা।
অর্থ বিভাগ প্রণোদনার কম পরিমাণের বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী প্রণোদনা বাড়াতে বলায় তা বাড়িয়ে প্রস্তাব তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাব দিয়েছে ৫ শতাংশ প্রণোদনা ঠিক থাকবে, তবে কারও প্রণোদনাই এক হাজার টাকার কম হবে না। দশম থেকে ২০তম ধাপের কর্মচারীদের কথা মাথায় রেখে এমন প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে বলে অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রথম ধাপের সরকারি কর্মচারীদের প্রণোদনা যোগ হবে ৩ হাজার ৯০০ টাকা। দ্বিতীয় ধাপের ৩ হাজার ৩০০ টাকা। আর শেষ মূল বেতনকে ভিত্তি ধরলে প্রণোদনা যোগ হবে ৩ হাজার ৮২৫ টাকা। তৃতীয় ধাপে ২ হাজার ৮২৫ টাকা, চতুর্থ ধাপে ২ হাজার ৫০০ টাকা, পঞ্চম ধাপে ২ হাজার ১৫০, ষষ্ঠ ধাপে ১ হাজার ৭৭৫, সপ্তম ধাপে ১ হাজার ৪৫০, অষ্টম ধাপে ১ হাজার ১৫০, নবম ধাপে ১ হাজার ১০০ টাকা বাড়বে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব ও সমমর্যাদার সরকারি কর্মচারীদের মূল বেতন ৮৬ হাজার টাকা। সে হিসেবে তারা প্রণোদনা পাবেন ৪ হাজার ৩০০ টাকা। আর সিনিয়র সচিব ও সমমর্যাদার সরকারি কর্মচারীরা নির্ধারিত ৮২ হাজার টাকার ভিত্তিতে প্রণোদনা পাবেন ৪ হাজার ১০০ টাকা। অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো অবশ্য বলছে, প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে সবার বেতন বৃদ্ধি হয় না। কারণ, এ বৃদ্ধি একটা পর্যায়ে এসে থেমে যায়। আবার কারও বাড়ে ৪, কারও সাড়ে ৪ শতাংশ।
ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের একটি প্রকল্প তিন বছরের কথা বলে ৯ বছরেও শেষ করতে পারেনি বাংলাদেশ রেলওয়ে। বরং আরও তিন বছর সময় বাড়িয়ে ২০২৬ সালে কাজ শেষ করার বলছে তারা। পাঁচবার মেয়াদ বেড়েছে, প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে রেললাইন স্থাপন ও অনুষঙ্গিক কাজ না করার ঘোষণা দিয়েছে ঠিকাদার। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চিঠি চালাচালি, আলোচনা চললেও সুরাহা হয়নি বিষয়টির।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজে ফেরাতে না পারলে প্রকল্প শেষ করতে আরও দেরি হবে। কোনোভাবে তাদের ম্যানেজ করে ২০২৬ সালে কাজ শেষ করলেও ১২ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে সময় লাগবে ১২ বছর।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নিষ্কণ্টক জমিতে প্রকল্পের কাজ শেষ হতে এত দেরি হওয়ায় রেলওয়ের সক্ষমতাই প্রশ্নবিদ্ধ। এরপরও ১২ বছরে যা হতে যাচ্ছে তাতে সমস্যা থেকে যাবে। কারণ কোনো ‘গেট সেপারেশন’ রাখা হচ্ছে না। রাস্তার মোড়ে ‘গেট সেপারেশন’ হওয়ার কথা ছিল। এটা না হলে এত বড় বিনিয়োগের সুবিধা পুরো মিলবে না। ট্রেনের গতি ধীরই থাকবে। এই করিডরে যতগুলো সড়ক-মোড় আছে, ততগুলো গেট সেপারেশন রাখার ব্যবস্থা সংসদীয় কমিটি ও রেলওয়ের পরিকল্পনায় ছিল। তা না করেই লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে মানুষের উন্নয়ন যন্ত্রণা ভোগের পরও দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকবে।’
রেলওয়ে সূত্রমতে, ২০১৪ সালের জুলাই মাসে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরালে ডুয়েলগেজ লাইন স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ৩৭৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হলেও এখন তা বেড়ে ৬৫৪ কোটি টাকা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। ঠিক সময়ে কাজ শুরু করতে পারায় এর মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। পরে আরও তিন দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। চতুর্থবার মেয়াদ বাড়ানোর পরও কাজ হয় ৮২ শতাংশ। এবার মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০২৬ সালের জুন।
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ সেলিম রউফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় পাঁচটি স্টেশন নির্মাণ শেষে ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট জটিলতা কেটে গেছে। তেমন কোনো সমস্যা নেই। আশা করছি, আগামী ডিসেম্বর থেকে রেললাইন নির্মাণের কাজ শুরু হবে।’
প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জমি অধিগ্রহণ জটিলতা ও এ সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে প্রায় দেড় বছর লেগেছে। করোনা মহামারীর কারণেও কিছুটা সময় নষ্ট হয়েছে। ফলে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। নতুন লাইন নির্মাণের পাশাপাশি পুরনো মিটারগেজ লাইন উঠিয়ে সেখানে ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণের কাজ যুক্ত হওয়ায় ব্যয় বেড়েছে।’
অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, ‘রেলের প্রকল্পে অন্যান্য প্রকল্পের মতো জমি অধিগ্রহণের ঝামেলা নেই। রেলওয়ে যদি নিজেদের জমি রক্ষা করতে না পারে তার চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে? ব্রিটিশরা রেলওয়ের এত জমি রেখে যাওয়ার পরও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাবে সেগুলো নিজেদের দখলে রাখতে পারেনি তারা। এখন নিজেদের জমিই অধিগ্রহণ করতে হচ্ছে।’ প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দুটি প্যাকেজে এ প্রকল্পে ঠিকাদার হিসেবে চীনের পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না (পিসিসিসি) লিমিটেড ও কোরিয়ার এলএস ইলেকট্রিক কোম্পানি লিমিটেডকে নিয়োগ দেওয়া হয়। রেললাইন স্থাপন ও অবকাঠামো নির্মাণসহ বেশিরভাগ কাজের দায়িত্বে রয়েছে পিসিসিসি। তারা অবকাঠামো নির্মাণের কাজ করেছে। কিন্তু রেললাইন নির্মাণের আগেই তারা কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে চুক্তি সমাপ্তের চিঠি দিয়েছে রেলওয়েকে।
গত ১৫ মার্চ প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে দেওয়া চিঠিতে তারা বলেছে, সময়মতো প্রকল্পের অর্থ না পাওয়া ও নির্ধারিত জায়গা বুঝিয়ে না দেওয়ার কারণে তাদের কাজে অনেক দেরি হয়েছে। এতে তারা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক বলেছেন, ‘সর্বশেষ প্রকল্প রিভিশনের সময় ঠিকাদারকে পেমেন্ট দেওয়া সম্ভব হয়নি কিছু নিয়মনীতির কারণে। এখন যেহেতু রিভিশন হয়েছে তাই পেমেন্ট দিতে সমস্যা নেই। এ কথা তাদের জানানো হয়েছে। আশা করছি, তারা কাজ করবে।’
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, এখন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ যে রেললাইন আছে তাতে সারা দিনে ৩২টি ট্রেন চলাচল করতে পারে। ট্রেনের গতিসীমা ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৪৫ কিলোমিটার। ব্রডগেজ ডাবল লাইন চালু হলে গতি হবে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার। অনেক বেশি যাত্রীও পরিবহন করা যাবে। কোনো ধরনের ক্রসিং করার প্রয়োজন হবে না বলে যাতায়াতে সময় কম লাগবে।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলের ভাড়া মাত্র ১৫ টাকা। এ পথে যাত্রীদের বাসভাড়া গুনতে হয় অন্তত ৫০ টাকা। সাশ্রয়ে ও নিরাপদে দ্রুত যাতায়াতের জন্য এ রেলরুটটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। অনেকেই প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জ থেকে ট্রেনে করে ঢাকায় অফিস, ব্যবসা ও অন্যান্য কাজ করেন।
মাগুরা জেলার মহম্মদপুরের রাজাপুর গ্রামের নয়ন মোল্যা, ইকতিয়ার মোল্যা, রেহেনা বেগম ও আজিজ মোল্যারা সবাই পেশায় দিনমজুর ও ভ্যানচালক। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির (ইজিপিপি) দ্বিতীয় পর্যায়ের মজুরির টাকার অপেক্ষায় ছিলেন এসব শ্রমজীবী। সেই টাকা এলো মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। বিস্ময়করভাবে সেই প্রাপ্য টাকার সঙ্গে অনেকে ১০ গুণ টাকাও পেলেন। আনন্দে শ্রমজীবী মানুষগুলো টাকা তুলেও ফেলেছেন। এখন সেই টাকাই গলার কাঁটা হয়ে গেছে। কারণ, বাড়তি এ টাকা আদায়ের জন্য এখন তাদের ধড়পাকড় করা হচ্ছে। এটা শুধু মাগুরার চিত্র নয়; এ ঘটনা ঘটেছে দেশের বিভিন্ন জেলার ১০টি ভিন্ন ভিন্ন উপজেলায়।
সম্প্রতি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় এ মজুরির টাকা বিতরণ করা হয়। উপকারভোগীদের শ্রম মজুরি গভর্নমেন্ট টু পারসন (জিটুপি) পদ্ধতিতে পরিশোধ করা হয়। মজুরিভোগীরা সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে মোবাইল আর্থিক সেবা নগদের মাধ্যমে ৭ থেকে ৪০ দিন পর্যন্ত কাজের মজুরি পাওয়ার কথা। আর এখানেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ডেটা এন্ট্রির ভুলে মোবাইল অ্যাকাউন্টে চলে গেছে প্রায় ১০ গুণ টাকা।
যদিও মন্ত্রণালয় বলছে, ভুলটা তাদেরই। আইবাস সিস্টেমের ভুলের কারণে দশমিক বাদ পড়ায় এমনটি ঘটেছে। যে শ্রমিক ৩১৭২.০৫ টাকা পেতেন, মন্ত্রণালয়ের ভুলে দশমিক বাদ পড়ায় নগদ অ্যাকাউন্টে পৌঁছেছে ৩ লাখ ১৭ হাজার ২০৫ টাকা। এদিকে শ্রমজীবীদের মধ্যে যারা অর্থ উত্তোলন করেছেন, অধিকাংশই তা খরচ করে ফেলেছেন। এখন তাদের টাকা ফেরত দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মোটা অঙ্কের এ টাকা খরচ করে ফেরত দিতে গিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন হতদরিদ্র সুবিধাভোগীরা। তারা জানিয়েছেন, তারা আয় করে কিস্তিতে শোধ করবেন। একসঙ্গে তারা এত টাকা দিতে পারবেন না।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমানের কাছে এ ভুলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত ২৫ জুন আমার কাছে তথ্য আসে, আইবাস সিস্টেমে সমস্যা হয়েছিল। জানার সঙ্গে সঙ্গে সেটি বন্ধ করে দিয়েছি। যে পরিমাণ টাকা চলে গেছে তার ৮৫ শতাংশ ইউএনও, চেয়ারম্যান বা জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এগুলো সমন্বয় করা হচ্ছে। আশা করি শতভাগ সমন্বয় হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, যেহেতু তারা (উপকারভোগীরা) নিয়মিত সুবিধাপ্রাপ্ত। তাদের কাছ থেকে সহজেই টাকা উত্তোলন করা গেছে। একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। মূল ঘটনা তারা বের করে আমাকে রিপোর্ট দেবে। আগামীতে যাতে এ ধরনের ভুল না হয় সেটি নিশ্চিত করা হবে।
১০ উপজেলায় ৯ হাজার ৮৪৬ জন শ্রমিকের বিপরীতে চাহিদা এসেছিল ৮ কোটি ৫৩ লাখ ১০ হাজার টাকা। এ চাহিদাপত্রের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে আছে। এরপর সরকারের দিক থেকে প্রতি এক হাজারে ৭ টাকা ক্যাশআউট চার্জ যোগ করা হয়। ফলে এ অঙ্ক দাঁড়ায় ৮ কোটি ৫৯ লাখ ৭ হাজার ৪৭২ টাকা। কিন্তু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ভুলের কারণে আসলে শ্রমিকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ৮২ কোটি ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার ৪২৭ টাকা।
চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপচিালক মো. মিজানুর রহমানের স্বাক্ষরে ৮২ কোটি ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার ৪২৭ টাকার কথা উল্লেখ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দেওয়া হয়। এ চিঠির কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। পরে এই একই অঙ্ক উল্লেখ করে তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাগুলোর কাছে টাকা ছাড় করার জন্য চিঠি পায়।
অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, ডেটা এন্ট্রির গড়বড়ের কারণেই সরকারের এত বেশি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের একাধিক উপপরিচালক এবং পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে এক্সেল ফাইলে ডেটা এন্ট্রি দেওয়া হয়, সেখানে দশমিকের পরও দুই ঘর ছিল। কিন্তু যে এক্সেল ফাইলসহ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর সরকারের অনুমোদনের জন্য তোলে সেখানে কোনো দশমিকের ঘর ছিল না। অনেক শ্রমিকের মূল পাওনা ছিল ২ হাজার ৮১৯ দশমিক ৬ টাকা। কিন্তু তিনি পেয়ে গেছেন ২৮ হাজার ১৯৬ টাকা।
গত ২৫ জুন ডাক বিভাগের মোবাইল আর্থিক সেবা নগদের মাধ্যমে এ টাকা বিতরণ করা হয়। এ বিতরণের কিছুক্ষণের মধ্যেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর তাদের ভুলের বিষয়টি বুঝতে পারে এবং মজুরি বিতরণ হওয়া অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করার জন্য নগদকে নির্দেশ দেয়। তারপর থেকে ওই অ্যাকাউন্ট বন্ধ রয়েছে। তবে এরই মধ্যে অনেক অ্যাকাউন্ট থেকে বেশ কিছু টাকা ক্যাশআউট হয়ে গেছে।
মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রামানন্দ পাল বলেন, ‘টাকা ফেরত আনার বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর চিঠি দিয়েছে। সেই আলোকে আমরা ইউপি চেয়ারম্যানদের চিঠি দিয়েছি। অতিরিক্ত টাকা ফেরত আনতে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছি। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সহযোগিতায় টাকা ফেরত আনার কাজ চলছে।’
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে নগদের পাবলিক কমিউনিকেশনস বিভাগের প্রধান জাহিদুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের সরকারি বিতরণে কোনো মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানই বিতরণ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট থাকে না। ফলে কাকে কত টাকা দেওয়া হচ্ছে, তা প্রতিষ্ঠানটি আগে জানতে পারে না। বিতরণ সম্পন্ন হলে তারা এসব তথ্য জানতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, এ ভুলের কোনো পর্যায়েই আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। প্রয়োজনে সরকার উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি করে বিষয়টি যাচাই করতে পারে।’ নগদ একই সঙ্গেও বলছে যে, প্রায় ১০ গুণ বরাদ্দের ফাইলে মহাপরিচালকের স্বাক্ষর রয়েছে, ফলে তিনিই বলতে পারবেন কোথায় কীভাবে টাকার অঙ্ক এত বেশি হয়েছে।
থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বদলের ডাক দিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির নেতা পিটা লিমজারোয়েনরাট। জনমত জরিপের ফলাফলকে টেক্কা দিয়ে দেশটির যেকোনো দলের তুলনায় পিটার দল আসন ও ভোট দুটোই বেশি পেয়েছিল। সেনাবাহিনীর মদদপুষ্ট দলগুলোর ভরাডুবি হওয়ায় ভোটে দ্বিতীয় হওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার মেয়ে পেতোংতার্ন সিনাওয়াত্রার
নেতৃত্বাধীন পুয়ে থাই পার্টিও তার সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গঠন করবে বলে আশাও করা হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল রাজতন্ত্র আর সেনাবাহিনীর প্রভাব বলয়ে থাকা রাজনীতির মাঠে দারুণ নৈপুণ্য দেখানো পিটা লিমজারোয়েনরাটের হাত ধরেই থাই রাজনীতিতে আসবে নতুন সকাল। কিন্তু শেষ অবধি সেটা হলো না। খুব কাছে গিয়েও দেশটির সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হতে পারছেন না থাই রাজনীতির তরুণ তুর্কি পিটা।
বিবিসি জানাচ্ছে, জন রায় পেলেও পার্লামেন্টের সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের ভোট না পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী হতে পারছেন না পিটা লিমজারোয়েনরাট। দেশটির নিয়ম অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীকে অবশ্যই ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির উচ্চ ও নিম্ন দুটো কক্ষেরই সম্মিলিত ভোটে জিততে হয়। উচ্চ ও নিম্ন দুটো কক্ষেরই সম্মিলিত ভোট ৭৫০ (৫০০ এমপি ও ২৫০ সিনেটর)। প্রধানমন্ত্রী হতে এর মধ্যে কমপক্ষে ৩৭৬ জনের সমর্থন পেতে হতো পিটাকে। কিন্তু উচ্চকক্ষ সিনেটের ২৫০ সদস্য সেনাবাহিনীতে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ায় সেটা পাননি। ফলে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি ও পুয়ে থাই পার্টি দুই দল মিলে প্রতিনিধি পরিষদের ৫০০টির মধ্যে ২৯৩টি আসন পেলেও প্রধানমন্ত্রী হওয়া হলো না পিটার।
বিবিসি বলছে, সিনেটের ভোটে হারের পাশাপাশি পিটার বিরুদ্ধে ছিল ভোটের নিয়ম ভাঙার অভিযোগও। যদিও পিটা তা অস্বীকার করেছেন। তবে সিনেটের ভোটের ফলাফল মেনে নিয়েছেন তিনি। বলেছেন, প্রথম দফার এ ফল আমি মেনে নিচ্ছি। তবে আমি সব কিছু ছেড়ে দিচ্ছি না এখনই। কারণ আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। আমি আমার লক্ষ্য অর্জনে সামনের দিনগুলোতে লড়ে যাব।
পিটা লিমজারোয়েনরাট এক ধনী পরিবারের সদস্য। তার পরিবারের সঙ্গে রাজনীতির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। পিটার বাবা ছিলেন থাইল্যান্ডের কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। পাশাপাশি তার চাচা ছিলেন দেশটির ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার ঘনিষ্ঠ সহযোগী। পিটা নিউজিল্যান্ডে স্কুলের ছাত্র থাকাকালেই রাজনীতিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। থাইল্যান্ডের থামাসাট বিশ^বিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়া পিটা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক পলিসিতে স্নাতকোত্তর করেন। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে এমবিএ করেছেন পিটা।
ছাত্রজীবনে রাজনীতিতে ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগে পিটা তার বাবার ব্যবসায় যোগ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। ২০১৯ সালে ফিউচার ফরোয়ার্ড পার্টির এমপি হিসেবে পার্লামেন্টে যাওয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল পিটার। ধনকুবের ও সেনাবাহিনীর কট্টর সমালোচক থানাথর্ন জুয়ানগ্রুনগ্রুয়াংকির প্রতিষ্ঠিত এ দলটি সেবারের নির্বাচনে বেশ ভালো ফল করেছিল; পরিবর্তনের দাবি তুলে নাড়িয়ে দিয়েছিল থাই রাজনৈতিক অঙ্গনকে। বিতর্কিত সব অভিযোগে পরের বছর বিলুপ্ত করে দেওয়া হয় ফিউচার ফরোয়ার্ড পার্টিকে। তবে এর প্রতিবাদে হাজার হাজার তরুণ সে বছর থাইল্যান্ডের সড়কগুলোতে নেমে এসেছিল। দাবি তুলেছিল, সংবিধান সংশোধন, নতুন নির্বাচন এবং মানবাধিকারকর্মী ও রাষ্ট্রের সমালোচকদের হয়রানি বন্ধের। সেই তারুণ্যের শক্তি নিয়েই গঠিত হয় মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি। পিটা হন দলটির নেতা। ক্ষুরধার বক্তব্যের জন্য আগেই থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে উদীয়মান তারকা খ্যাতি পেয়েছিলেন তিনি। রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর প্রভাব কমানো এবং রাজতন্ত্র সংশ্লিষ্ট আইনের সংস্কারের মতো দলের সাহসী সব প্রতিশ্রুতি তার জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়ে দেয়।
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে তোলা ছবি পাঠানোর প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গত বুধবার নতুন একটি ছবি প্রকাশ করেছে নাসা। নক্ষত্র সৃষ্টির সময়ের এ ছবি রো অফিউচি নামের ক্লাউড কমপ্লেক্স থেকে তোলা। ছবির নিচের অংশে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের স্টেলার নার্সারি বা আঁতুড়ঘরে (নতুন নক্ষত্র গঠনের স্থান) নবগঠিত একটি নক্ষত্র জ্বলজ্বল করছে
এ বছর ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে তরুণ বয়সী এবং শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা। এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে তরুণ বয়সী ছেলে-মেয়ে, যা মোট আক্রান্তের ৪৬ শতাংশ বা ৭ হাজার ৪২৬ জন। এরপর সবচেয়ে বেশি ভর্তি হয়েছে শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা, যা মোট আক্রান্তের ৩২ শতাংশ বা ৫ হাজার ১৬৬ জন।
অন্যদিকে নারী-পুরুষের মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে পুরুষ, যা মোট ভর্তির ৫৯ শতাংশ এবং নারী ভর্তি হয়েছে ৪১ শতাংশ। অর্থাৎ ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি পুরুষের সংখ্যা ৯ হাজার ৫২৪ জন ও নারী ৬ হাজার ৬১৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ গত বুধবার পর্যন্ত সারা দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পেয়েছে। সেদিন পর্যন্ত এ বছরের মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ১৪৩ জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ভর্তি হয়েছে ১১ হাজার ১ জন ও ঢাকার বাইরে ৫ হাজার ১৪২ জন। সেদিন পর্যন্ত মোট মারা গেছে ৮৮ জন।
বয়সভেদে আক্রান্তের কারণ ব্যাখ্যা করে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাচ্চারা দিনে ঘুমায় বেশি, মশারি ছাড়া ঘুমায়। কিশোর-কিশোরীরা বাসার নিচে খেলাধুলা করে, বিভিন্ন জায়গায় ঘোরে। এ কারণে এই বয়সীরা আক্রান্ত বেশি হচ্ছে। আর ১৯-৩৯ বছরের তরুণ-তরুণীরা সবচেয়ে সক্রিয়। এরা বিভিন্ন জায়গায় আসছে, যাচ্ছে। তারা অন্য এলাকা থেকে ডেঙ্গু নিয়ে আসছে। এ কারণে এই বয়সীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত। বয়স্করা অতটা সক্রিয় না। বাসায় থাকে, মশারি ব্যবহার করে না। ফলে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে নারীদের মধ্যে তরুণ বয়সী নারীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
এই পরিচালক বলেন, তরুণরা আক্রান্ত হওয়ার একটা ভালো দিক হলো তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি ও মৃত্যুহার কম। এই গ্রুপের ছেলে-মেয়েরা সঠিক সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে মৃত্যু একেবারেই হবে না। তবে ভয় শিশু ও বয়স্কদের নিয়ে। এই শ্রেণির আক্রান্তের মৃত্যুহার বেশি। কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। বিশেষ করে বয়স্কদের ডেঙ্গুর পাশাপাশি অন্য রোগও থাকে। এই গ্রুপ বেশি আক্রান্ত হলে খারাপ বেশি। এ ছাড়া ৫ বছরের নিচের বয়সী বাচ্চারাও ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে শিশু ও বয়স্কদের ব্যাপারে আমাদের নজর বেশি দিতে হবে। এরা দিনে ঘুমালেও যেন মশারি ব্যবহার করে, সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) দেশে ডেঙ্গুতে নতুন করে আরও ১ হাজার ২৩৯ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ও মারা গেছে ৫ জন। ভর্তির সংখ্যা আগের দিন বুধবারের চেয়ে ৭ জন কম। তবে আগের দিন মৃত্যু ছিল ৫। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত এ বছর ডেঙ্গু নিয়ে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১৭ হাজার ৩৮২ জন ও মৃত্যু ৯৩ জন। নতুন রোগীদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭৫৬ জন ও ঢাকার বাইরে ৪৮৩ জন।
১৯-২৯ বছর বয়সীরা আক্রান্তের শীর্ষে : গত বুধবার পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে যত ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে তাদের মধ্যে ১৯-২৯ বছর বয়সীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, ২৮ শতাংশ। অর্থাৎ মোট ভর্তি রোগীর মধ্যে ৪ হাজার ৪২০ জনই এই বয়সী। এরপর আক্রান্তের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ৩০-৩৯ বছর বয়সী মানুষ। তাদের সংখ্যা ২ হাজার ৯০৬ জন, যা মোট ভর্তি রোগীর ১৮ শতাংশ। অর্থাৎ ১৯-৩৯ বছর বয়সী তরুণরাই এবার এখন পর্যন্ত আক্রান্তের শীর্ষে রয়েছে, যা মোট ভর্তি রোগীর ৪৬ শতাংশ।
দ্বিতীয় অবস্থানে শিশুরা : বয়স বিবেচনায় মোট ভর্তি রোগীদের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ১০-১৮ বছরের শিশুরা। এই বয়সী ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৭৪৪ জন, যা মোট রোগীর ১৭ শতাংশ। শিশুদের মধ্যে ৫-৯ বছর বয়সী ১ হাজার ৪৫৩ জন, যা মোট ভর্তি রোগীর ৯ শতাংশ ও ১-৪ বছরের মধ্যে ৯৬৯ জন বা ৬ শতাংশ। সে হিসাবে ১-১৮ বছর বয়সী শিশুরা আক্রান্তের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে, যা মোট ভর্তি রোগীর ৩২ শতাংশ। ১ বছরের নিচে শিশু ভর্তি হয়েছে ১ শতাংশ বা ১৬১ জন।
এ ছাড়া বয়স বিবেচনায় সর্বোচ্চ আক্রান্তের চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ৪০-৪৯ বছর বয়সী মানুষ। হাসপাতালে ভর্তিদের মধ্যে এই বয়সীর সংখ্যা ১ হাজার ৬১৪ জন, যা মোট ভর্তি রোগীর ১০ শতাংশ।
৫০-৬০ বছর ঊর্ধ্ব ১১% : শ্রেণি বিবেচনায় মধ্যবয়সী থেকে বয়স্ক মানুষ সর্বোচ্চ আক্রান্তের চতুর্থ নম্বরে রয়েছে। এই শ্রেণির মানুষ মোট ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৭৭৬ জন, যা মোট ভর্তি রোগীর ১১ শতাংশ। তবে এই বয়সী মানুষের মধ্যে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ৫০-৬০ বছরের মধ্যে ১ হাজার ১৩০ জন, যা মোট ভর্তি রোগীর ৭ শতাংশ এবং ষাটোর্ধ্ব বয়সী মানুষ আক্রান্ত হয়েছে ৪ শতাংশ, যা মোট ভর্তি রোগীর মধ্যে ৬৪৬ জন।
৭৯% মৃত্যু ভর্তির ১-৩ দিনের মধ্যে : স্বাস্থ্য অধিপ্তরের পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৭৯ শতাংশই মারা গেছে হাসপাতালে ভর্তির এক থেকে তিন দিনের মধ্যে। এ পর্যন্ত মোট ৮৮ জনের মৃত্যুর মধ্যে (গত বুধবার পর্যন্ত) সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ বা ২২ জন মারা গেছে রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এই হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, এবার রোগীরা দেরিতে হাসপাতালে আসছে। ডেঙ্গু শনাক্তের আগে তারা বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিচ্ছে। হাসপাতালে আসছে একেবারে শেষদিকে খুব জটিল অবস্থা নিয়ে। তখন আর আমাদের কিছু করার থাকে না। রোগীরা মারা যায়। আর যারা বেঁচে যায় তাদের দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকতে হয়।
ব্যাংকপাড়াখ্যাত মতিঝিল এখন মৃতপ্রায়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে না পারায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র সরে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা ঘোরানো মতিঝিলে আবাসিক ভবন, শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান তৈরি না হলে দেশের প্রধান এই বাণিজ্যিক অঞ্চল প্রাণ হারাবে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাদের মতে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় অবদান রয়েছে মতিঝিলের টাকার। শুধু তা-ই নয়, মতিঝিলে উপার্জিত অর্থে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, কানাডাসহ আরও অনেক দেশে। এখানকার উপার্জিত টাকা অনেকে জমা রেখেছেন সুইস ব্যাংকেও। শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মতিঝিলে। এ যেন মা কাঁকড়ার আত্মত্যাগের গল্প। মা কাঁকড়া বাচ্চাদের আগলে রাখে বুকের ভেতর; যেদিন বাচ্চাগুলো বের হয়ে আসে, সেদিন খোলস ছাড়া মা কাঁকড়ার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। মা কাঁকড়ার মতো দুঃখী ও ত্যাগী বাণিজ্যিক মতিঝিল।
ষাটের দশকে মতিঝিলে গড়ে ওঠে দেশের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট-সিবিডি)। সেই থেকে এখনো দেশের প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল মতিঝিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে সরকারি ৮টি, বেসরকারি ৪৫টি এবং বিদেশি ব্যাংক রয়েছে ৮টি। এ ছাড়া ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৮১টি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের বেশির প্রধান কার্যালয় চলে গেছে কারওয়ান বাজার, গুলশান-বনানী ও উত্তরায়। নতুন করে যেসব ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাচ্ছে, সেগুলোর প্রধান কার্যালয় মতিঝিলের বাইরে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মতিঝিলের আশপাশে পরিকল্পিত কোনো আবাসিক এলাকা, অভিজাত হোটেল, কাজের ফাঁকে অবসর কাটানোর মতো উন্মুক্ত স্থান, শপিং কমপ্লেক্স না থাকায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সুবিধার জন্য অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়গুলোও মতিঝিলের বাইরের এলাকা, অর্থাৎ কারওয়ান বাজার, গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে গড়ে উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর, মধুমিতা সিনেমা হল এবং ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এবং দিলকুশা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবন এবং বঙ্গভবনের পাশের এলাকাজুড়ে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল। বিশ্বের বাণিজ্যিক অঞ্চলের ভবনগুলো সুউচ্চ হয়ে থাকে। কিন্তু মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের পাশেই বঙ্গভবন। নিরাপত্তার কারণে বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর কোনো বহুতল ভবন করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, মতিঝিলের প্লটগুলোর ‘নন-রেসট্রিকটেড’ উচ্চতা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর সাড়ে চারতলার বেশি উচ্চতার ভবনের অনুমোদন মেলে না। ফলে মূল্যবান ওই প্লটগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারছেন না মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ জরাজীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণও রয়েছে কয়েকটি ভবন। একটির সঙ্গে অন্যটি লাগানো। দুটি ভবনের মাঝখানে উন্মুক্ত জায়গা নেই বেশিরভাগ ভবনের। দিলকুশা এলাকার বঙ্গভবন লাগানো ভবনগুলোর মাঝখানেও কোনো ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, মতিঝিল এলাকার ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে। ভাঙাচোরা এবড়োখেবড়ো সড়ক। সড়ক বিভাজকগুলো শ্রীহীন। এগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হয়নি। প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলে মতিঝিলের আরও করুণ দশা চোখে পড়ে। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার সড়কের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে চটের ছালা দিয়ে ঘেরা খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান এবং নানা পণ্যের অস্থায়ী দোকান। সামান্য বৃষ্টিতে মতিঝিল এলাকার সড়কগুলো তলিয়ে থাকে পানির নিচে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত। ডিএসসিসি এলাকার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে। খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে মূল্যায়ন করলে মতিঝিল ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। যদিও এটা মানতে নারাজ ডিএসসিসির কারিগরি কমিটি।
মতিঝিল এলাকার বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিল এলাকার সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে ডিএসসিসি। পরিত্যক্ত প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মতিঝিলের সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত ও সড়ক বিভাজকের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা দরকার। পর্যায়ক্রমে এ এলাকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কাজ করবে ডিএসসিসি। তবে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের মূল সংস্কার ও আধুনিকায়নের দায়িত্ব রাজউকের। রাজউককে সেসব বিষয় পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব কাজে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা লাগলে করপোরেশন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলে রাজউক। রাজউক সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশক থেকেই মতিঝিলের পুরোপুরি বাণিজ্যিক বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্যিক অঞ্চলে শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান থাকে। আর কাছাকাছি এলাকায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা থাকে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে সেটা ছিল না। অভিজাত মানের হোটেল পূর্বাণী গড়ে উঠলেও আশপাশে সময় কাটানোর মতো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লোকজন গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় থাকেন। মতিঝিলের সৌন্দর্য নিশ্চিত করতে ও আধুনিকায়নে যেসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখা দরকার ছিল রাজউক ও সিটি করপোরেশন সেটা করেনি।
রাজউক সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধরা, উত্তরা। সেই সব এলাকা থেকে মানুষ মতিঝিলে আসেন। শহরের জনসংখ্যা বাড়ায় দিন দিন যানজট বাড়ছে। ওই সব এলাকা থেকে মতিঝিলে আসতে সড়কে এক থেকে দেড় ঘণ্টা চলে যায়। দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কর্মঘণ্টার মধ্যে ৩০ শতাংশ সময় সড়কে নষ্ট হচ্ছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে চিন্তা করেছে, তার কর্মস্থল এমন একটা জায়গায় হবে যা তার আবাসনের কাছাকাছি। মতিঝিল থেকে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও ভূমিকা রেখেছে।
কালের বিবর্তনে গুলশান হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক এলাকা। কারওয়ান বাজার, উত্তরায়ও গেছে কিছু। এসব জায়গায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমও সেখানে চলে গেছে। এসব এলাকার আশপাশে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় তাদের বসবাস। আবাসিক এলাকা ছাড়া, পৃথিবীর কোথাও শতভাগ জায়গা শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা অথবা একই শ্রেণির কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার হয় না।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, নগর পরিকল্পনায় ভূমির ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়, যেকোনো জায়গার ব্যবহার হবে ২৪ ঘণ্টা। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল কর্মচঞ্চল থাকে মাত্র ১২ ঘণ্টা। এরপর ওই জায়গার ব্যবহার হয় না। রাতে নীরব ও ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়।
তিনি বলেন, যে মতিঝিলে দিনের বেলায় হাঁটা যায় না; গাড়ির কারণে, যানজটে; সেই মতিঝিলে রাত ৮টার পরে আবার একাও হাঁটা যায় না; অনিরাপদ বোধ হয়। এ জন্য যারা দিনে বাণিজ্য করতে আসেন, তারা মতিঝিল এলাকার হোটেলগুলোতে থাকেন না। অন্যদিকে গুলশান-বনানী এলাকায় থাকলে তারা শপিংয়ে যেতে পারেন, কফি শপে যেতে পারেন। এসব কারণে সারা বিশ্বে ভূমির মিশ্র ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, মতিঝিল এলাকা যেহেতু ইতিমধ্যে তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলেছে, এ জন্য মতিঝিলের জমির শ্রেণিকে মিশ্র ব্যবহার হিসেবে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি নিয়েছে রাজউক। সংশোধিত ড্যাপে সে বিষয়ে নির্দেশনা রাখা হয়েছে। পৃথিবীর নগর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৫০, ৬০ বা ১০০ বছর অন্তর সেসব ঢেলে সাজানো হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়েই মতিঝিল এলাকাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে আবাসিকের বৈশিষ্ট্য দিতে হবে; কনডোমিনিয়াম গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে রাজউক বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ১৬ একর জায়গা নিয়ে একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে লাইব্রেরি, ওয়াকওয়ে থাকবে। বসার ব্যবস্থা থাকবে। মতিঝিল এলাকায় ঝিল ছিল, ওই ঝিলকে প্রাধান্য দিয়ে পার্কটি তৈরি করা হবে। বহুমুখী ব্যবহার ছাড়া মতিঝিলকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিলের আধুনিকায়ন ও ভূমির মিশ্র ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। তাহলে মতিঝিল সচল থাকবে; তবে ঢাকা শহর বড় হওয়ায় আরও বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে ওঠা ইতিবাচক। এসব পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দরকার ছিল; কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে সে রকম হয়নি। এটা দুঃখজনক। এ জন্য শহরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ঢাকায় এখন অনেকগুলো বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সব অঞ্চলে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় বড় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় মতিঝিলে রয়েছে। তবে ব্যবসা গুলশান, বনানী, উত্তরা, গাজীপুরে সরে যাওয়ায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ব্যবসা কেন্দ্রের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।