
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) আয়োজনে খাদ্য সম্মেলনে যোগ দিতে তিন দিনের সফরে আগামী রবিবার ইতালি যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোম সফরে দেশটির সঙ্গে দুটি সমঝোতা স্মারক সই করবে বাংলাদেশ। এ ছাড়া ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গেও বৈঠক হবে সরকারপ্রধানের।
গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রীর ইতালির সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আগামী ২৪-২৬ জুলাই ইতালির রোমে এফএওর আয়োজনে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। জাতিসংঘের মহাসচিবের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল এ ফোরামে যোগ দেবেন। সফর শেষে আগামী ২৬ জুলাই শেখ হাসিনা ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন।
ড. মোমেন বলেন, ২৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী এফএওর সদর দপ্তরে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে তিনি বক্তব্য রাখবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী ‘ফুড সিস্টেম অ্যান্ড ক্লাইমেট অ্যাকশন’ শীর্ষক প্লেনারি সেশনে অংশগ্রহণ করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। ইতালিতে অবৈধ বাংলাদেশিদের বৈধ করার বিষয়টি আলোচনায় আমরা তুলে ধরব। ড. মোমেন জানান, কৃষিমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা ও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২৪ জুলাই রোমে ইউরোপে নিযুক্ত বাংলাদেশের দূতদের নিয়ে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী। এতে ইউরোপের ১৫টি দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে আয়োজিত ‘আঞ্চলিক দূত সম্মেলন’-এ অংশ নেবেন।
দূতদের প্রধানমন্ত্রী কী বার্তা দেবেন এমন প্রশ্নে ড. মোমেন বলেন, এটা রুটিন ওয়ার্ক। প্রধানমন্ত্রী তাদের দিকনির্দেশনা দেবেন। তারাও তাদের ডে টু যে কাজের বর্ণনা দেবেন, সমস্যার কথা বলবেন। এর আগে আমরা সবাইকে নিয়ে ঢাকায় বৈঠক করতাম। কিন্তু সবাইকে একসঙ্গে করতে গেলে কিছু ঝামেলা হয়। তাই প্রধানমন্ত্রী কোনো দেশ সফরে গেলে দূতদের নিয়ে ডায়ালগে বসেন।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, এই বৈঠকে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী দূতদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেবেন।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানান, ইতালির সঙ্গে জ্বালানি সহযোগিতা বাড়াতেই চাই। এ নিয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হবে। আরেক প্রশ্নে সচিব বলেন, ইতালির সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা নিয়ে আমরা আগ্রহী। এ নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচন চলছে। আমরা নিজেদের সেফগার্ড রেখেই এ বিষয়ে সহযোগিতা বাড়াতে চাই। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলি সাবরীন উপস্থিত ছিলেন।
দেশের আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলো দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৭০ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করে। যাত্রীর চাপ ক্রমেই বাড়ছে। যাত্রী বহন করছে বিভিন্ন এয়ারলাইনস। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ছাড়াও তিনটি বেসরকারি এয়ারলাইনস ও রাষ্ট্রায়ত্ত উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস দেশের অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালকেই তারা হাব হিসেবে ব্যবহার করছে।
প্রতি যাত্রীর কাছ থেকে নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ আদায় করছে এয়ারলাইনসগুলো। কিন্তু ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা পড়ছে না। একাধিক চক্র কৌশলে টাকা মেরে দিচ্ছে বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি সামলাতে সফটওয়্যার ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। কানাডা বা যুক্তরাজ্য থেকে সফটওয়্যার কেনা হবে। সূত্র জানিয়েছে, সফটওয়্যারটি আগামী তিন মাসের মধ্যে দেশে আসবে।
আগামী বছরের মার্চ বা এপ্রিল মাসে আরও দুটি বেসরকারি এয়ারলাইনস অভ্যন্তরীণ রুটে পরিবহন কার্যক্রম চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু যাত্রীর সংখ্যা বাড়লেও টাকার হিসাব মেলাতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। ২৬টি এয়ারলাইনসের কাছে বেবিচকের পাওনা ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। একাধিক চিঠি দিয়েও এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষকে পাওনা মেটাতে রাজি করানো যাচ্ছে না বলে বেবিচক কর্মকর্তারা বলেছেন। কয়েক মাস দেখার পর আইনের সাহায্য নেবেন তারা। এ বিষয়েও নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে যাত্রীদের কাছ থেকে ফি আদায় করে এয়ারলাইনসগুলো। কিন্তু এ ফিয়ের নির্ধারিত ভাগ পাচ্ছে না বেবিচক। এ টাকা কোথায় যাচ্ছে তাও তারা জানে না। এ নিয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান ও ঊর্ধ্বতনরা কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। বৈঠক হয়েছে এয়ারলাইনসগুলোর সঙ্গেও। ফির টাকা টাকা কীভাবে সরকারের কোষাগারে আনা যায় সে কৌশল ঠিক করা হয়েছে।
সম্প্রতি একটি বৈঠকে বেবিচক চেয়ারম্যান গত দুই বছর ধরে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হলেও কেন তা সরকারের কোষাগারে আসছে না সে বিষয়ে তদন্ত করতে বলেন। যারা এ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন। উন্নতমানের সফটওয়্যার কিনতেও বলেছেন তিনি।
বেবিচকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে টিকিট কেনার সময় যাত্রীদের কাছ থেকে নিদিষ্ট অঙ্কের অর্থ আদায় করে তা মেরে দিচ্ছে। এ অর্থ বেবিচকের কোষাগারে আসার কথা। ২০২০ সালের ২২ জুলাই মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে আসা-যাওয়া করা স্বদেশি যাত্রীদের প্রত্যেকের কাছ থেকে বিমানবন্দরের উন্নয়ন ফি বাবদ ৫ ডলার, যাত্রীনিরাপত্তার জন্য ৬ ডলার; ভিনদেশি যাত্রীদের কাছ থেকে বিমানবন্দর উন্নয়ন ও নিরাপত্তা ফি নেওয়া হয় ১০ ডলার এবং অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীদের কাছ থেকে বিমানবন্দর উন্নয়ন ও নিরাপত্তা ফি আদায় করা হয় ১৭০ টাকা। এয়ারলাইনসগুলো নিয়মিত যাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে। প্রতিদিন অন্তত ৭০ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করে।’
তিনি বলেন, ‘অথচ টাকা আমরা পাই না। এর পেছনের চোরদের ধরতেই উন্নতমানের সফটওয়্যার কেনা হচ্ছে। কানাডা বা যুক্তরাজ্যে থেকে সফটওয়্যার আনার চিন্তা চলছে। তখন সরকারের কোষাগারে টাকা আসবে নিয়মিত। ফিয়ের টাকা মেরে দেওয়ার বিষয়ে চেয়ারম্যান ক্ষুব্ধ। সফটওয়্যার বসানো হলে হিসাব-নিকাশ পাল্টে যাবে। এখন কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে বিমান-আরোহীদের সঠিক পরিচয় ও সংখ্যা নিয়ে আইনি জটিলতার বাধে। নিরাপত্তা ও আর্থিক সংশ্লিষ্টতা দুই বিষয়ই সফটওয়্যার ব্যবহার করলে নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেবিচক বিপুল পরিমাণ টাকা পায় এয়ারলাইনসগুলোর কাছে। তারা ঠিক সময়ে টাকা পরিশোধ করছে না। আবার এয়ারলাইনসগুলো রাজস্ব আদায় করেও যাত্রীসংখ্যা কম দেখিয়ে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব জালিয়াতি ঠেকাতে সফটওয়্যার বসাচ্ছি। ফলে বিমানের টিকিট কাটার সঙ্গে সঙ্গেই নির্ধারিত ফি বেবিচকের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়ে যাবে। বিপুল রাজস্ব পাবে সরকার।’
বেবিচক সূত্র জানায়, যাত্রীসেবার মান বাড়াতে বিমানবন্দরগুলোতে বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল ভবনের আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়েছে। ২০১৩ সালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী ছিল বছরে সাড়ে ছয় লাখ। ২০১৭ সালে বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে ১২ লাখে। ২০১৯ সালে ১৮ লাখের বেশি। এখন আরও কিছু বেড়েছে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে যাত্রীর সংখ্যা আরও বেশি। দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনসের কাছে কয়েক হাজার কোটি টাকা পাওনা বেবিচকের। অর্থ পরিশোধ করতে তাদের নিয়মিত চিঠি দেওয়াসহ বৈঠক করছেন বেবিচক কর্মকর্তারা। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। ২৬টি এয়ারলাইনসের কাছে পাওনা ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। নভোএয়ারের কাছে পাওনা ২৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। বন্ধ হয়ে যাওয়া রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কাছে পাওনা ৪০৮ কোটি টাকা। বন্ধ হয়ে যাওয়া ইউনাইটেড এয়ারের কাছে পাওনা ৩৮৯ কোটি ২২ লাখ টাকা। জিএমজি এয়ারলাইনসের কাছে পাওনা ৩৯৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। বিমান এবং ইউএস-বাংলার কাছে টাকা পাওয়ার কথাও জানিয়েছে বেবিচক।
লোকসাহিত্য আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির অঙ্গ। গুণ এবং পরিমাণ উভয় দিক থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেয়েলি গীত আমাদের লোকসাহিত্যের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ গানের প্রধান প্রচারক এবং পৃষ্ঠপোষক নারীসমাজ। দেশের মাটির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় এবং মনের দিক থেকে তারা প্রায় সর্বাংশে রক্ষণশীল। তবে ভাব সম্পদের দিক থেকে উচ্ছ্বাসপ্রবণ।
বাংলাদেশ গ্রামপ্রধান। আর গ্রামীণ বাংলাদেশের সর্বত্র উৎসব-আনন্দে বহু মেয়েলি গীত হয়ে থাকে। উৎসব-উপলক্ষগুলোর কোনো কোনোটি সামাজিক এবং কোনো কোনোটি শুধু মেয়েদের পারিবারিক এমনকি, কিছু অংশ ব্যক্তিগত-জীবনের সঙ্গে জড়িত। গবেষণা করে দেখা গেছে, উপলক্ষের প্রয়োজনে বাংলাদেশের প্রত্যেক অঞ্চলেই বহু মেয়েলি গীত জন্মলাভ করেছে।
নিঃসন্দেহে বলা যায়, বাংলাদেশের মেয়েলি গীতের চরিত্রগত অকৃত্রিমতা আর সংখ্যার বিপুলতা তার সম্পর্কে সুধীজনের আগ্রহের অন্যতম প্রধান কারণ। বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন মনীষীর সংগ্রহে ও আলোচনায় মেয়েলি গানের যে রূপ আজ বিদগ্ধ পাঠক-শ্রোতাদের কাছে প্রতিভাত ও সমাদৃত, তাও এ কথারই প্রমাণ। বাংলা একাডেমির সংগ্রহশালায় এসব মেয়েলি গীতি রক্ষিত আছে এবং গবেষকরা এখনো বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তা সংগ্রহ করছেন।
লোকসাহিত্যে যেহেতু মেয়েলি গীত উৎসব উপলক্ষে তথা সামাজিক-পারিবারিক অনুষ্ঠানে গীত হয়ে থাকে, সুতরাং এগুলোও লোকসাহিত্যের বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যবহারিক গীতের অন্তর্ভুক্ত। তবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো না কোনো সামাজিক-পারিবারিক অনুষ্ঠান বা উপলক্ষ কিংবা নারী জীবনের সুখ-দুঃখের সঙ্গে জড়িত এবং প্রধানত, মেয়েদের দ্বারা রচিত আর গীত লৌকিক গানের নামই মেয়েলি গীত।
মেয়েলি গীত বেশ প্রাচীন। সুরের ওপর বাধা-নিষেধের কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেয়েলি গীত কিছুটা ব্যতিক্রম। ব্যবহারিক গীতের মধ্যে বিবাহ-সম্পর্কিত কিছু গান এখানে প্রচলিত আছে। যেমন : কনের মায়ের বাড়িতে বেড়াতে আসছে বেওয়াই অর্থাৎ জামাইয়ের বাবা, পুত্রা অর্থাৎ জামাইয়ের ভাই এবং জামাই। তাদের কী দিয়ে আপ্যায়ন করা হবে ও কী কী উপহার দেওয়া হবে তারই সরল বর্ণনার একটি গীত প্রচলিত আছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সর্বত্র। আঞ্চলিক আটপৌরে ভাষায় রচিত এ গীতে বাঙালির চিরায়ত আতিথেয়তা ও জামাই আদরের চিত্র ফুটে উঠেছে বর্ণিত গীতে।
ক্ষেতে দিয়ে হাইট্রা যায় বেওয়াই-রে
আইলে দিয়া হাইট্রা যায় পুত্রা-রে
সড়ক দিয়া হাইট্রা যায় সোনার
আইকেল দামান-রে ।
কি দিয়া খাওয়াইবো বেওয়াই-রে
কি দিয়া হাওয়াইবো পুত্রা-রে
কি দিয়া হাওয়াইবো সোনার
আইকেল দামান-রে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেয়েলি গীতে আমাদের সামাজিক-পারিবারিক বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। মেয়েলি গীতগুলোতেই তা প্রকাশ পায়। যেমন বিয়ের পর স্বামী শহরে বাণিজ্য করতে যায়। বিবাহিত বউ একা ঘরে থাকছে। গানের কথায় তার একা থাকার দুঃখ প্রকাশ পায়। স্বামী প্রবোধ দেওয়ার জন্য নিজের মা, বোন, ভাইকে স্ত্রীর সঙ্গে রেখে যাওয়ার কথা বলছে। কিন্তু বাস্তবতা এইযে, শেষ পর্যন্ত ‘অবুঝ লীলার’ সঙ্গে কেউ-ই থাকবে না। তাকে থাকতে হবে ‘শুধা’ ঘরে। নিদারুণভাবে আলোচ্য গীতে তার প্রকাশ
তুমি যে যাইবা সাধুরে-ওরে-সাধু
শহরে বাণিজ্যে-রে
আমি-ও না অবুঝ লীলা
থাকমু শুধা ঘ-অ-রে-
আমি যে বেবুজ লীলা
থাকমু শুধা ঘ-অ-রে
থাইক্য না থাইক্য না কন্যাগো-ওগো কন্যা
থাইক্য না শুধা ঘরে...
অবশ্য মেয়েলি গীত আমাদের সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও তার সমকালীন সংস্কৃতির অন্যান্য অঙ্গের সঙ্গে তা নিষ্করুণভাবে স্বল্পবাক। তবে স্বল্প ভাষণের মধ্যেও মেয়েলি গীত থেকে অতীতের বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জগতের নিদর্শন মেলে। এদিক দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেয়েলি গীত বাংলা লোকসাহিত্যে উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করে আছে। যাতে ফুটে উঠেছে লোকায়ত বাংলার পরিচয়।
জায়েদুল আলম, শিক্ষাবিদ ও লেখক
দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই রেকর্ড ভাঙছে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুতে। এতে আতঙ্কে দিন কাটছে নগরবাসীর। নালা, ডোবা, ড্রেন বা জমে থাকা পানি এডিস মশার উৎপত্তিস্থল। এসব আবাসস্থল নষ্ট করতে নানা কথা বলা হলেও রাজধানীর বাসস্ট্যান্ড ও গণপরিবহনগুলো উপেক্ষিতই রয়ে গেছে। এতে নগরীর গণপরিবহনে যাতায়াতকারী লোকজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকছে।
প্রতিদিন নগরীতে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো রাতে ডিপোতে পার্ক করে রাখা হয়। ডিপোগুলোতে মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় না। এতে সকালে যখন পরিবহনগুলো রাস্তায় নামে, তখন পরিবহনে মশা থাকে। এসব মশা এডিসবাহিত মশাও হতে পারে। যা যাত্রী, বাসের চালক ও হেলপারের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে।
গণপরিবহনে যারা প্রথম দিকে যাওয়া-আসা করেন, তারা এ মশার কামড়ের আতঙ্কে রয়েছেন। এ বিষয়ে গণপরিবহনে চলাচল করা একাধিক বাসযাত্রী দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের সিটির গণপরিবহনের বাসমালিকরা বাস রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে আর কোনো খোঁজ রাখে না। এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা যাচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে। অথচ এ বিষয়ে সেভাবে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বাসে উঠলে এখন মশার কামড়ের আতঙ্ক থাকতে হয়।
রাজধানীর বাসস্ট্যান্ডগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সেভাবে কোনো উদ্যোগ নেই বাসমালিকদের। সিটির গণপরিবহনে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখা যায়নি। যার জন্য যাত্রীদের আতঙ্কের মধ্যেই যাতায়াত করতে হচ্ছে। তানজিল পরিবহনের এক যাত্রী দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমার বাসা মিরপুর-১০ নম্বরে। সকালে যখন মতিঝিল অফিস করতে আসি তখন বাসে মশার কামড়ের আতঙ্ক থাকতে হয়। শিকড় পরিবহনে চলাচল করা আরেক যাত্রী শাহ আলম বলেন, গণপরিবহনের মতো এত বড় একটি সেক্টরের দিকে কারও নজর নেই। এ গণপরিবহনে চলাচল করে কতজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। সরকারের উচিত গণপরিবহনে যেন ডেঙ্গুর বিস্তার না করতে পারে সেদিকে নজর রাখা।
‘বাসমালিক যদি মশার ওষুধ বাসে না দেয় তাহলে আমরা কী করব’ জানিয়ে দিশারী পরিবহনের এক হেলপার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরাও আতঙ্কের মধ্যে থাকি। কারণ রাতে বাস বিভিন্ন জায়গায় থাকে। সকালের দিকে যখন বাস নিয়ে বের হই, তখন রাতে সেই বাসে মশা থাকে। তাই শুধু যাত্রীরা নয়, আমরা পরিবহন শ্রমিকরাও আতঙ্কের মধ্যে থাকি।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গণপরিবহনে প্রথম দিকে যারা যাতায়াত করে তারা মূলত সবচেয়ে বেশি আতঙ্কের মধ্যে থাকে। এখন বাসের ভেতরে মশা মারার ওষুধ ছিটানো না হয়, তাহলে ডেঙ্গু গণপরিবহনে উর্বর জায়গা হিসেবে পরিণত হবে। আর দিনের পর দিন গণপরিবহনে ডেঙ্গুর আক্রান্ত রোগীও বাড়তে থাকবে। তাই যেসব জায়গা মশার উপদ্রব থাকতে পারে সেসব জায়গা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বাসস্ট্যান্ডগুলোতেও ভালোভাবে নজর দিতে হবে। আর কোনো বাসমালিক যদি এ ব্যাপারে অনীহা দেখায় তাহলে তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। তা না হলে সামনে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকারে ছড়াবে গণপরিবহনে।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, বাসমালিকদের নির্দেশনা দেওয়া আছে, যেন সবাই তাদের বাসে মশার ওষুধ ছিটায়। তাছাড়া আমার সব গাড়িতে প্রতিদিন মশার ওষুধ ছিটাতে বলা হয়েছে। বাসস্ট্যান্ডগুলোতে সিটি করপোরেশন থেকে মশার ওষুধ দিয়ে থাকে।
ভারতের অগ্নিগর্ভ মণিপুরে দুজন কুকি নারীকে প্রকাশ্য রাস্তায় নগ্ন করে ঘোরানোর একটি ভিডিও সামনে আসার পর সারা দেশ শোকে-দুঃখে-রাগে স্তম্ভিত হয়ে পড়েছে। প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে পার্লামেন্ট, সাংস্কৃতিক অঙ্গন, বিরোধী শিবির থেকে শুরু করে সর্বত্র। মণিপুরে শুরু হয়েছে নতুন সংঘাত। দেশটির সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, এ ‘চরম সাংবিধানিক ব্যর্থতা’র বিরুদ্ধে সরকার যদি কোনো ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে তারা নিজে থেকেই পদক্ষেপ নেবে। এর কিছু সময় পর অবশ্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরুর আগে দেওয়া এক ভাষণে বলেছেন, ওই দৃশ্য দেখে তার হৃদয় দুঃখে ও ক্রোধে ফুঁসছে। তবে পার্লামেন্টের অধিবেশনে আর সব কার্যক্রম স্থগিত করে মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি আলোচনার জন্য বিরোধী দলের অন্তত ১৫ জন এমপি মুলতবি প্রস্তাবও এনেছেন।
বিবিসি বলছে, গত ৩ মে থেকে মণিপুরে সংখ্যাগুরু মেইতেই ও সংখ্যালঘু কুকিদের মধ্যে যে রক্তাক্ত জাতি-সংঘাত এবং অবাধ হত্যা-লুণ্ঠন-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগ শুরু হয়েছে, দুই নারীকে নগ্ন করার ওই ঘটনা ছিল ঠিক তার দ্বিতীয় দিনেরই। তবে এ ঘটনার বীভৎসতা ও নৃশংসতা ঠিক কতখানি ছিল, তা সারা দেশ জানতে পারল ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার আড়াই মাস পর। আড়াই মাস আগের ভিডিওটি কে বা কারা গত বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।
সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মণিপুরের রাস্তায় কুকি-জোমি সম্প্রদায়ের দুজন নারীকে নগ্ন করে একদল লোক রাস্তায় হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের ক্রমাগত যৌন লাঞ্ছনা করা হচ্ছে। দুজন নারীর একজনের বয়স ছিল মাত্র বিশ-বাইশ, অন্যজনের চল্লিশের আশপাশে। ভিডিওতে দেখা যায়, জনতার মধ্যে অনেকেই ওই নারীদের শরীরের বিভিন্ন অংশ খামচে ধরছে। এরপর তাদের জোর করে একটি চাষের ক্ষেতের দিকে টেনে নিয়ে যেতেও দেখা যায়।
বিবিসি বলছে, ১৮ মে ওই ঘটনার যে এফআইআর করা হয়েছে, তাতে ভিকটিমরা অভিযোগ করেছেন, কমবয়সী মেয়েটিকে প্রকাশ্য দিবালোকে অত্যন্ত নৃশংসভাবে দল বেঁধে ধর্ষণ করা হয়েছিল।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ঘটনার দিন কাংপোকপি জেলায় তাদের গ্রাম যখন জ¦ালিয়ে দেওয়া হচ্ছিল, তখন প্রাণে বাঁচতে তারা পরিবারের কয়েকজন মিলে কাছের জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পথে থৌবাল জেলার একটি পুলিশ ভ্যান তাদের উদ্ধার করে গাড়িতে তুলে নেয়। তবে পুলিশ যখন তাদের থানায় নিয়ে যাচ্ছিল, তখন থানা থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে একদল উত্তেজিত জনতা তাদের ঘিরে ধরে। ক্ষুব্ধ জনতা তাদের পুলিশের হেফাজত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
মণিপুর পুলিশও স্বীকার করেছে, সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওটি জাল নয়, সত্যি। তবে ওই ঘটনা গত ৪ মে তারিখের এবং তাতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অপহরণ, দল বেঁধে ধর্ষণ ও হত্যার মামলাও হয়েছিল।
ভারতের সংবাদমাধ্যম এএনআই জানিয়েছে, গতকাল এ ঘটনার হোতাদের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং বলেছেন, এ ঘটনায় যারা দোষী, তারা যাতে ফাঁসির সাজা পায়, তিনি সেই চেষ্টাই চালাবেন। কিন্তু ভিকটিম দুজন নারীর একজন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকাকে জানিয়েছেন, পুলিশ আসলে হামলাকারীদের সঙ্গেই ছিল। ওরা বাড়ির বেশ কাছেই প্রথমে তাদের গাড়িতে তুলে নেয়, তারপর গ্রামের একটু বাইরে গিয়েই রাস্তায় ছেড়ে দেয়। পুলিশই ওই জনতার হাতে তাদের তুলে দিয়েছিল। ওই জনতা এরপর জোর করে তাদের সব জামাকাপড় খুলতে বাধ্য করে। তাদের রাস্তা দিয়ে নগ্ন করে হাঁটানো হয়, এরপর পাশের ধানক্ষেতে নিয়ে গিয়ে যৌন নির্যাতন চালানো হয়।
অভিযোগপত্রে লেখা হয়েছে, তিনজন নারী ও দুজন পুরুষসহ তারা দলে পাঁচজন ছিলেন, যারা গ্রাম থেকে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। বছর পঞ্চাশের যে তৃতীয় নারী ছিলেন, তাকেও নগ্ন করে ঘোরানো হয়েছিল। দলের দুজন পুরুষ ছিলেন সবচেয়ে কমবয়সী নারীটির বাবা ও ভাই। ধর্ষণে বাধা দেওয়ায় তাদের দুজনকেই হামলাকারীরা হত্যা করেছে বলেও এফআইআরে জানানো হয়েছে।
গত মে মাস থেকে বিজেপি-শাসিত মণিপুরে অন্তত ১২০ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছে সহস্রাধিক। অসংখ্য ঘরবাড়ি, গির্জা, মন্দির ধূলিসাৎ হয়েছে। ৬০ হাজার মণিপুরি এখনো শরণার্থীশিবিরে বন্দি।
মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে এতদিন একবারের জন্যও প্রধানমন্ত্রী মোদি মুখ খোলেননি। বিরোধীদের সমস্বর প্রতিবাদের মধ্যেই ভাইরাল হয় ভিডিওটি। যেদিন তা জনসমক্ষে ছড়িয়ে পড়ে, তার পরদিন থেকেই শুরু সংসদের অধিবেশন। সেই অধিবেশনে যোগ দেওয়ার মুখে প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রথমবারের মতো সরব হলেন। ওই ঘটনায় যারা দোষী, তাদের কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হবে বলে অঙ্গীকার করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী সকালে বলেছেন, মণিপুরের দুহিতাদের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা কিছুতেই ক্ষমা করা যায় না।
এর কিছুক্ষণ আগেই মণিপুর সংকট নিয়ে মুখ না খোলার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি আক্রমণ করে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে মন্তব্য করেন, ‘নরেন্দ্র মোদিজি, মণিপুর নিয়ে আপনার নীরবতার জন্য দেশ কিছুতেই আপনাকে ক্ষমা করবে না।’
অধিবেশনের শুরুতেই বিরোধীদলীয় এমপিরাও একসুরে দাবি জানাতে থাকেন, পার্লামেন্টে বাকি সব কাজ ফেলে অবিলম্বে মণিপুর নিয়ে আলোচনা শুরু করতে হবে। এর একটু পরেই পার্লামেন্টের বাইরে অধিবেশন শুরুর আগে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদি অবশেষে মণিপুর নিয়ে তার নীরবতা ভঙ্গ করেন। ওই ভাষণে পার্লামেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘আজ আমি যখন গণতন্ত্রের মন্দিরের ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে, আমার হৃদয় গভীর যন্ত্রণা আর ক্রোধে ভরে উঠেছে। মণিপুরের ঘটনা যেকোনো সভ্য রাষ্ট্রের জন্য কলঙ্ক, আমাদের গোটা দেশ এর জন্য লজ্জিত।’ তিনি বলেন, ‘আমি দেশকে কথা দিচ্ছি, এ ঘটনায় দোষীরা কেউ পার পাবে না। আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মণিপুরের দুহিতাদের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা ক্ষমার অযোগ্য।’
তার আগে ভারতের শীর্ষ আদালতও স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মণিপুরের ওই ঘটনাটি ‘কগনিজেন্সে’ নিয়ে এটিকে ‘চরম সাংবিধানিক ব্যর্থতা’ বলে বর্ণনা করে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেছেন, গতকাল থেকে যে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে, সেটি দেখে আমরা অত্যন্ত বিচলিত বোধ করছি এবং গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। সরকার আপনা থেকে এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে সুপ্রিম কোর্ট ২৮ জুলাই থেকে নিজেরাই এ মামলার শুনানি শুরু করবে।
এ সময়ের মধ্যে সরকার দোষীদের বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, তার প্রতিটি পদক্ষেপও সুপ্রিম কোর্টকে নিয়মিত অবহিত করতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতি এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগে নিকারাগুয়া, গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস ও এল সালভাদরের ৩৯ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বুধবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে এ নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি উঠে আসে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় নিকারাগুয়ার ১৩, গুয়াতেমালার ১০, হন্ডুরাসের ১০ ও এল সালভাদরের ৬ জনের নাম রয়েছে। আর ‘সেকশন ৩৫৩ করাপশন অ্যান্ড আনডেমোক্রেটিক অ্যাক্টরস রিপোর্ট ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি দেওয়া হয়েছে মার্কিন কংগ্রেসে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, নিষেধাজ্ঞার তালিকায় এমন সব ব্যক্তি রয়েছেন, যারা জেনেশুনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বা প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্ত করেন। শুধু তা-ই নয়, তারা উল্লেখযোগ্য দুর্নীতি করেছেন বা দুর্নীতির তদন্তে বাধা সৃষ্টির কাজেও লিপ্ত হয়েছেন।
নিষেধাজ্ঞায় পড়া ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। তাদের মধ্যে কারও কারও মার্কিন ভিসা থাকলেও তা বাতিল করা হবে। নিষেধাজ্ঞার তালিকায় এল সালভাদরের সাবেক দুই প্রেসিডেন্ট মাউরিসিও ফুনেস ও সালভাদর সানচেজ আছেন। এ ছাড়া রয়েছেন বেশ কয়েকজন বিচারক এবং সাবেক ও বর্তমান প্রসিকিউটর।
নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে গুয়াতেমালা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপরও। অন্যদিকে হন্ডুরাসে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন একজন সংসদ সদস্য এবং প্রধান রাজনৈতিক দলের সভাপতি। এ ছাড়া নিকারাগুয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল, জাতীয় পরিষদের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট, সেকেন্ড ভাইস প্রেসিডেন্ট, ফার্স্ট সেক্রেটারি, থার্ড সেক্রেটারি, আপিল কোর্টের বিচারকসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংস্থার কর্মকর্তাদের ওপর।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
মূল লড়াইয়ের আগে গা গরমের খেলা। সেখানে ব্যাটসম্যানরা ছিলেন আগ্রাসী। তাতে পাকিস্তান পায় ৩৪৫ রানের বড় সংগ্রহ। তারপরও জিততে পারল না। নিউজিল্যান্ড জয় তুলে নিয়েছে ৩৮ বল হাতে রেখেই।
পাকিস্তানের ব্যাটারদের মধ্যে সেঞ্চুরি পেয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৯৪ বলে ১০৩ রান করে অবসর নেন তিনি। এছাড়া বাবর আজম ৮০ ও সৌদ শাকিল ৭৫ রান সংগ্রহ করেছেন।
পাকিস্তানের দেয়া ৩৪৬ রানের জবাব দিতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে নিউজিল্যান্ড।
কিউই ব্যাটারদের মধ্যে ওপেনিংয়ে নামা রাচিন রবীন্দ্র ৭২ বলে ৯৭ রান সংগ্রহ করে দলের জয়ে বড় অবদান রাখেন। এছাড়া দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা কেন উইলিয়ামসন ৫৪, ড্যারেল মিচেল ৫৯ আর মার্ক চাপম্যান ৬৫ রান করে দলকে ৫ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
গোটা দেশ এখন দুই ভাগে বিভক্ত। একদল সাকিব আল হাসানকে শূলে চড়াচ্ছে, অন্যরা তামিম ইকবালকে। অথচ জাতীয় ক্রিকেট দল ভারতে গেছে বিশ্বকাপ খেলতে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে খোঁচাখুঁচি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে। যে উদ্বোধনী জুটি নিয়ে এত দ্বিধা আর সংকোচ, যে কারণে তামিম না থাকায় এত হাহাকার, সেখানেই কিনা বাজিমাত করে পুরো জাতিকে অন্য এক বার্তা দিলেন তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস।
বিশ্বকাপের দলে যে তামিম ইকবাল থাকছেন না, সেটা জানা গিয়েছিল আগের দিনেই। তবু ক্রিকেট ভক্তদের মনের এক কোণে ক্ষীণ আশা ছিল। ওপেনারদের টানা ব্যর্থতার কথা বিবেচনায় হলেও এই ব্যাটসম্যান থাকবেন বলে ছিল তাদের। কিন্তু সেই আশার গুড়ে বালি। তাকে দলে না রাখায় অবশ্য রাস্তায় জনতার ঢল নামেনি, রাজপথে হয়নি কোনো সভা-সমাবেশ। তবে নতুন যুগের দেয়ালে দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদী নিন্দার বাণী। হাল জামানায় যাকে ‘টাইমলাইন’ বলে সম্বোধন করা হয়।
সেই সব প্রতিবাদী স্ট্যাটাসও দুই ভাগে বিভক্ত। কেউ সাকিব আল হাসানের পক্ষে, কেউবা তামিম ইকবালের। একদল পরিসংখ্যান-পর্যালোচনা দিয়ে বোঝাতে ব্যস্ত যে এই যুগে তামিমের কৌশল ‘ওল্ড স্কুল’। ওসব এখন আর চলে না। অন্য দল ১৭ বছরের ইতিহাস আর আবেগ নিয়ে হাজির। তাদের কাছেও আছে পরিসংখ্যান। সেটা গত কয়েক বছরের তামিমের ওপেনার সঙ্গীদের একটা তালিকা। তারাই শূলে চড়াচ্ছেন সাকিব-হাথুরু থেকে শুরু করে বিসিবির শীর্ষ কর্তাদের।
বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে সাকিব ক্রীড়াভিত্তিক একটি টিভি চ্যানেলকে দিয়ে গেছেন সাক্ষাৎকার। সেখানে তিনি সরাসরি তামিমের সমালোচনা করেছেন। এই ওপেনার যে দলের প্রয়োজনে পজিশন পরিবর্তনে রাজি হতে চান না, সেই মানসিকতা বাচ্চাদের মতো বলে সমালোচনা করেছেন টাইগার অধিনায়ক। এমনকি তার স্পোর্টসম্যানশিপ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তার আগে তামিম নিজে একটা ভিডিও বার্তায় বলেছেন তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা। মাশারফী বিন মোর্ত্তজাও ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। তাতে করে ক্রিকেটাঙ্গনে এখন যেন ভিডিও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ক্রিকেট নিয়ে জাতির অবস্থা যখন এমন, তখন ভারতের গোয়াহাটিতে বাংলাদেশের ক্রিকেট দল। আসাম রাজ্যের রাজধানীর বরষাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম উদ্বোধনী ম্যাচ খেলতে নেমেছিল তারা। ছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, নাজমুল হোসেন শান্তও ছিলেন না থাকার মতো করেই। প্রথম গা গরমের ম্যাচে তাই নেতৃত্ব দেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
টসভাগ্যে মিরাজের পরাজয়ের পর বল হাতে নামে বাংলাদেশ। টানা ৪০ ওভার টাইগারদের বোলারদের যেন শাসন করছিলেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। ঐ সময় পর্যন্ত ৫ উইকেট হারালেও তারা করে ২০২ রান। তারপরই যেন ঘুরে দাঁড়ান টাইগার বোলাররা। শেষ ১০ ওভারের ৫ বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় লঙ্কানরা। ২৬৩ রানের বেশি তারা করতে পারেনি।
২৬৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নামা বাংলাদেশের হালটা যে সুখকর হবে না, মুহূর্তেই ধসে পড়বে ব্যাটিং লাইনআপ। সিনিয়রদের কাউকে এসে হাল ধরে নিয়ে টেনে নিয়ে যেতে হবে দলকে। খাঁদের কিনারা থেকে টেনে তুলে হয় জয়, নয়তো সম্মানজনক হার! এমনটাই ছিল অনুমিত। আমরা যে এতেই অভ্যস্ত।
কিন্তু তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস সব অনুমান ভুল প্রমাণ করে দেন। যে ওপেনিং জুটি বাংলাদেশকে ভোগাচ্ছিল, যে সমস্যার কারণে চোট প্রবণ তামিম ইকবালকেও সবাই চাইছিলেন দলে। সেটাই কিনা তারা প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে ভুলিয়ে দিলেন! উদ্বোধনীতে তারা গড়েন ১৩১ রানের জুটি। তাতে ১৩ ম্যাচ পর বাংলাদেশ ওপেনিংয়ে শতরানের জুটি দেখতে পেয়েছে। হোক সেটা প্রস্তুতি ম্যাচ, তবুও তো লড়াই!
সবচেয়ে বড় স্বস্তি লিটন-তানজিদের রানে ফেরা। এশিয়া কাপের আগে জ্বরে ভুগছিলেন লিটন। সেই জ্বরের ধকল কাটিয়ে উঠতে তার সময় লেগেছে। মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে যেতে হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর চোটের কারণে। কিন্তু নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। এই টুর্নামেন্টে ২ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তানজিদ। কিন্তু তিনিও প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজেও।
তাই বিশ্বকাপের দলে তামিম ইকবালকে বাদ দেওয়াতে ঝড় উঠেছিল। সেই ঝড় চলমান ছিল আজ দুপুর অবধি। অনেকেই ভেবে রেখেছিলেন, এই জুটি ব্যর্থ হবে। যা ধারাবাহিক থাকবে টুর্নামেন্টের শুরুতেও। তারপর বিশ্বকাপের মাঝপথে আচমকা ডাক পেয়ে তামিম ইকবাল উড়াল দেবেন ভারতে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলে। সেবার জাভেদ মিয়াঁদাদকে ছাড়াই তারা বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল। কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতার কারণে তাকে মাঝপথে উড়িয়ে নেওয়া হয়েছিল, এবং বিশ্বকাপ জিতেছিল।
এমন স্বপ্ন বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটভক্তরাও দেখতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তানজিদ তামিম আর লিটনের জুটি বদলে দিয়েছে সব হিসেব-নিকেশ। তামিমের ফেরার প্রত্যাশায় যারা গুনছিলেন প্রহর, তাদের মাথায় যেন এবার আকাশ ভেঙে পড়েছে। কারণ তারা যে রানে ফিরেছেন। যুববিশ্বকাপজয়ী তামিম খেলেছেন ৮৪ রানের একটি ইনিংস। ৮৮ বলে যা সাজানো ছিল ১০টি চার ও ২টি ছক্কায়। অন্যপ্রান্তে লিটন ৫৬ বলে ১০ চারে খেলেছেন ৬১ রানের ইনিংস। শুধু কি তাই! এদিন তিনে নেমেছিলেন মিরাজ। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬৭ রান। ৬৪ বলের হার না মানা ইনিংসটি সাজানো ছিল ৫ চার ও ২ ছক্কায়।
পঞ্চপান্ডবের পরের প্রজন্ম তো তারাই। যাদের ব্যাটে শুক্রবার বরষাপাড়ায় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তাদের রানে ফেরা যেন নতুন দিনের বার্তা দেয়। যে বার্তা আগামীর পথচলার। যেখানে পুরনোকে আকড়ে ধরে রাখার প্রবণতা ক্ষীণ হয়ে আসার বার্তা। সহজ কথায়, তরুণদের রানে ফেরাতে মিয়াঁদাদ হওয়ার সুযোগ আর হচ্ছে না তামিম ইকবালের।
আল নাসরে প্রথম মৌসুমটা ভালো না কাটলেও দ্বিতীয় মৌসুমের শুরু থেকেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আছেন দারুণ ছন্দে। নিজে গোল করে দলকে জেতাচ্ছেন, সতীর্থদের দিয়ে গোল করাচ্ছেন।
শুক্রবারও সৌদি প্রো লিগে আল তা’য়ির বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতেছে আল নাসর। এ ম্যাচেও রোনালদো গোল করেছেন এবং করিয়েছেন। তবে তাঁকে নিয়ে বেশি আলোচনা তালিসকার গোলটিতে অসাধারণ এক অ্যাসিস্টের জন্য। অ্যাসিস্টটিতে যে সবার মন ভরিয়ে দিয়েছেন রোনালদো।
তা’য়ির মাঠে আল নাসর গতকাল শুরুটা করেছে দারুণ। একের পর এক আক্রমণে স্বাগতিক দলের রক্ষণ করে দিয়েছে এলোমেলো। ম্যাচের শুরুর দিকেই রোনালদোর দুর্দান্ত একটি প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে দেন তা’য়ির গোলকিপার। এ ছাড়া রোনালদোও খুব কাছ থেকে পাওয়া একটি সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি।
তবে ৩২ মিনিটে এগিয়ে যায় আল নাসর। গোলটি করেছেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার অ্যান্ডারসন তালিসকা। গোলটিতে রোনালদো অ্যাসিস্ট করেছেন অসাধারণ এক বাই-সাইকেল কিকে। সৌদি প্রো লিগে এ মৌসুমে এটা রোনালদোর পঞ্চম অ্যাসিস্ট।
খেলার স্রোতের বিপরীতে ৭৯ মিনিটে সমতায় ফেরে তা’য়ি। কিন্তু সমতা বেশিক্ষণ থাকেনি। ৩ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে আল নাসরের জয়সূচক গোলটি করেছেন রোনালদো। সৌদি প্রো লিগে এ মৌসুমে এটা ৭ ম্যাচে তার ১০ নম্বর গোল। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৫ ম্যাচ খেলে করেছেন ১৬ গোল।
এই জয়ের পর ৮ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে আল নাসর। আল ফেইহার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করা আল ইত্তিহাদ সমান ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে শীর্ষে। ৮ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে আল তা’য়ি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুলিশ। নির্বাচনে কী উপায়ে নিরাপত্তা দেওয়া হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। তবে সরকারের হাইকমান্ড থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে তথ্য এসেছে, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও সদস্য সরকারবিরোধীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছে। পুলিশের একটি প্রতিবেদনেও তথ্য এসেছে সারা দেশে অন্তত আড়াইশো কর্মকর্তা আছেন তারা সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাদের পুরো কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এদিকে, চলতি মাস ও আগামী মাসের মধ্যে পুলিশে আরও বড় ধরনের রদবদল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তালিকাও করা হয়েছে। পাশাপাশি উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদিও কেনার চেষ্টা করছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, সামনের দিনগুলোতে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এ নিয়ে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা আগাম সতর্কবার্তাও দিয়েছে। যেকোনো বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করতে কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিট প্রধান ও জেলার এসপিদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের মধ্যে কোনো সদস্য সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার তথ্য পেলে জানাতে বলা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশেই সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনকালীন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পেশাদার সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু সদস্যের কর্মকান্ড নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এই সংখ্যা প্রায় আড়াইশো মতো হবে। সংখ্যা আরও বাড়তেও পারে। ইতিমধ্যে তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিতও করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশে উদ্বেগ আছে। বৈধ অস্ত্রের সংখ্যার খোঁজ নেওয়া, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্র কারবারিদের গ্রেপ্তার করতে বিশেষ অভিযান চালাতে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযানের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। হুট করেই আমরা বিশেষ অভিযান শুরু করব। কেপিআই স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন যথাসময়ে হবে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো মহল বা চক্র নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাতে না পারে সে জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সতর্ক আছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের সবধরনের প্রস্তুতি আছে। দাগি সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বড় ধরনের অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের।
পুলিশ সূত্র জানায়, আড়াইশো পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকান্ড নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাদের মোবাইল নম্বর সার্বক্ষণিক ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও খোঁজ রাখা হচ্ছে। নজরদারির মধ্যে থাকা বেশ কয়েকজন পুলিশ সুপার, অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর আছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতাদের সাপোর্ট দেওয়া আমাদের কাজ না। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের জন্য উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্র ও যানবাহন ক্রয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৫০ লাখের মতো রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড কেনা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে এসব সরঞ্জাম বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করছি। ডিএমপি, সিএমপি, কেএমপি, আরএমপি, বিএমপি, এসএমপি, আরপিএমপি, জিএমপি কমিশনার, বিশেষ শাখা (এসবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), অপরাধ তদন্ত বিভাগ, পিবিআই, টুরিস্ট পুলিশ, এটিইউ, রেলওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ, এপিবিএন, হাইওয়ে, শিল্পাঞ্চল পুলিশ প্রধান, সব অ্যাডিশনাল আইজিপি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও রংপুর রেঞ্জে নতুন আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে ইউনিট প্রধানরা পুলিশ সদর দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন। বিষয়টি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্র করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। বিএনপি আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা করছে। যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। আর এসব মোকাবিলা করতে পুলিশকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুলিশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।