
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আশরাফুল আলমের (হিরো আলম) ওপর হামলার ঘটনায় নির্বাচন কমিশন অসন্তুষ্ট বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর। তিনি বলেন, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়েছে। কোনো অশান্তি হয়নি। সোয়া ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে একটা ঘটনা ঘটল। এটা নিয়ে আমরা অসন্তুষ্ট। এজন্য ডিএমপি কমিশনারকে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে যাচাই করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইসি এসব কথা বলেন। মো. আলমগীর বলেছেন, কারও না কারও দায়িত্বে অবহেলা ছিল। একজন প্রার্থীর নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব ইসিসহ সবার। পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, কে দায়ী তা বের হয়ে আসুক তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কে দায়ী তদন্ত হওয়ার আগে বললে তদন্তেপ্রভাবিত হতে পারে। তিনি বলেন, পরবর্তী নির্বাচনের জন্য যে বার্তা থাকবে তা হলো, ভবিষ্যতে যেন এমন না ঘটে সেজন্য যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা সবই যেন নেওয়া হয়। প্রত্যেক প্রার্থীকে বলা হয়েছে, তারা প্রচারে গেলে যেন আমাদের জানানো হয়। কিন্তু একজন প্রার্থী জানাননি। তারা বলেছেন, এতে প্রচার কৌশলের গোপনীয়তা থাকবে। তো এ ধরনের সহায়তা দেওয়ার নির্দেশনা ছিল, আমাদের পক্ষ থেকে আমাদের কোনো দুর্বলতা ছিল না। দুঃখজনক ঘটনা নিয়ে তারা বিবৃতি দিয়েছে, এটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়। তবে আমাদের আইনের ব্যত্যয় হয়েছে।
ইসি বলেন, বিদেশিরা যদি আমাদের নিয়ে বলত তাহলে আমাদের ব্যাখ্যা থাকত ১২৪টি কেন্দ্রের বাকিগুলোতে ঝামেলা হয়নি। স্থানীয় সরকারের আরও নির্বাচন ছিল। সেখানে তো এমন হয়নি। পুলিশ, আনসার ও বিজিবিকে নিয়ে নির্বাচন করেছি। তাহলে আপনারা কীভাবে বলছেন যে, পুলিশ আমাদের কথা শুনছে না। যেহেতু আইনের ব্যত্যয় হয়েছে। আইনে সংশ্লিষ্ট ধারায় ব্যবস্থা নিচ্ছি। নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকায় অবশ্যই সন্তুষ্ট। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কতিপয় জায়গায় হয়তো কারও অবহেলা থাকতে পারে, সেক্ষেত্রে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রসঙ্গে এ কমিশনার বলেন, যেসব দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল তাদের মধ্যে ১২টি প্রাথমিক দল বাছাইয়ে টিকেছিল। তার মধ্যে চার দলের মাঠ পর্যায়ের তথ্য যাচাইয়ে সঠিক পাওয়া গিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে চারটি দলের জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়। তারা তদন্ত করলে দুটি তালিকা চূড়ান্তভাবে বাছাই প্রক্রিয়ায় টিকে যায়। আমরা তাদের নিবন্ধন দেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে অভিযোগ আহ্বান করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। আইনে শর্ত হচ্ছে কেন্দ্রীয় অফিস, ২২ জেলা অফিস ও ১০০টি উপজেলা অফিস থাকতে হবে। এই শর্ত যারা পূরণ করেছে তারাই বাছাইয়ে টিকেছে।
ইসির তালিকায় থাকা দুটি দলের মধ্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) প্রধানের বিরুদ্ধে সম্পত্তি দখল করে অফিস নির্মাণের অভিযোগ আনা হয়েছে, এ নিয়ে ইসির বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি দেওয়ানি আদালতের বিষয়, এটা তারাই দেখবেন। আমাদের আইন অনুযায়ী নিজস্ব বা ভাড়া অফিস হলেও চলবে। যে অভিযোগ আছে, আরও যদি অভিযোগ আসে, সে অভিযোগ আবার তদন্ত করব। দুপক্ষের বক্তব্য শুনব তারপর সিদ্ধান্ত নেব। এখন আমরা তো চূড়ান্তভাবে কাউকে নিবন্ধন দিইনি। যেসব অভিযোগ আসছে, বা আরও আসবে সেগুলো আমরা গণশুনানি করব। অভিযোগ দেওয়ার জন্য ২৬ জুলাই পর্যন্ত সময় আছে। শুনানিতে যদি দেখা যায় শর্ত পূরণ করেনি বা অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে তো নিবন্ধন পাবে না। এছাড়া যদি কমিটি উদ্দেশ্যমূলক রিপোর্ট দিয়ে থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগ সত্যি হলে নিবন্ধন পাবে না। এজন্য আরেকটা তদন্ত না করে তো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।
কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম নেই এমন দলকে নিবন্ধন দেওয়া তালিকা রাখা হয়েছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে, এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইসি আলমগীর বলেন, একটি পারসেপশনাল সমস্যা আছে আপনাদের মধ্যে। মনে করেন একটা দলের অনেক পলিটিক্যাল অ্যাক্টিভিটিজ আছে, কিন্তু অফিস নেই, তাহলে তো নিবন্ধন পাওয়ার সুযোগ নেই। আইনে যদি থাকত কতটা সভা করেছে, আন্দোলন করেছে, কতটা পোস্টার করেছে, কতটা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে তাহলে বলা যেত। কিন্তু আইনে তো আছে একটা কেন্দ্রীয় কমিটি, ২২ জেলা ও ১০০টি উপজেলা কার্যালয় থাকতে হবে।
দেশের আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলো দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৭০ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করে। যাত্রীর চাপ ক্রমেই বাড়ছে। যাত্রী বহন করছে বিভিন্ন এয়ারলাইনস। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ছাড়াও তিনটি বেসরকারি এয়ারলাইনস ও রাষ্ট্রায়ত্ত উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস দেশের অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালকেই তারা হাব হিসেবে ব্যবহার করছে।
প্রতি যাত্রীর কাছ থেকে নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ আদায় করছে এয়ারলাইনসগুলো। কিন্তু ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা পড়ছে না। একাধিক চক্র কৌশলে টাকা মেরে দিচ্ছে বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি সামলাতে সফটওয়্যার ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। কানাডা বা যুক্তরাজ্য থেকে সফটওয়্যার কেনা হবে। সূত্র জানিয়েছে, সফটওয়্যারটি আগামী তিন মাসের মধ্যে দেশে আসবে।
আগামী বছরের মার্চ বা এপ্রিল মাসে আরও দুটি বেসরকারি এয়ারলাইনস অভ্যন্তরীণ রুটে পরিবহন কার্যক্রম চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু যাত্রীর সংখ্যা বাড়লেও টাকার হিসাব মেলাতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। ২৬টি এয়ারলাইনসের কাছে বেবিচকের পাওনা ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। একাধিক চিঠি দিয়েও এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষকে পাওনা মেটাতে রাজি করানো যাচ্ছে না বলে বেবিচক কর্মকর্তারা বলেছেন। কয়েক মাস দেখার পর আইনের সাহায্য নেবেন তারা। এ বিষয়েও নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে যাত্রীদের কাছ থেকে ফি আদায় করে এয়ারলাইনসগুলো। কিন্তু এ ফিয়ের নির্ধারিত ভাগ পাচ্ছে না বেবিচক। এ টাকা কোথায় যাচ্ছে তাও তারা জানে না। এ নিয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান ও ঊর্ধ্বতনরা কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। বৈঠক হয়েছে এয়ারলাইনসগুলোর সঙ্গেও। ফির টাকা টাকা কীভাবে সরকারের কোষাগারে আনা যায় সে কৌশল ঠিক করা হয়েছে।
সম্প্রতি একটি বৈঠকে বেবিচক চেয়ারম্যান গত দুই বছর ধরে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হলেও কেন তা সরকারের কোষাগারে আসছে না সে বিষয়ে তদন্ত করতে বলেন। যারা এ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন। উন্নতমানের সফটওয়্যার কিনতেও বলেছেন তিনি।
বেবিচকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে টিকিট কেনার সময় যাত্রীদের কাছ থেকে নিদিষ্ট অঙ্কের অর্থ আদায় করে তা মেরে দিচ্ছে। এ অর্থ বেবিচকের কোষাগারে আসার কথা। ২০২০ সালের ২২ জুলাই মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে আসা-যাওয়া করা স্বদেশি যাত্রীদের প্রত্যেকের কাছ থেকে বিমানবন্দরের উন্নয়ন ফি বাবদ ৫ ডলার, যাত্রীনিরাপত্তার জন্য ৬ ডলার; ভিনদেশি যাত্রীদের কাছ থেকে বিমানবন্দর উন্নয়ন ও নিরাপত্তা ফি নেওয়া হয় ১০ ডলার এবং অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীদের কাছ থেকে বিমানবন্দর উন্নয়ন ও নিরাপত্তা ফি আদায় করা হয় ১৭০ টাকা। এয়ারলাইনসগুলো নিয়মিত যাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে। প্রতিদিন অন্তত ৭০ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করে।’
তিনি বলেন, ‘অথচ টাকা আমরা পাই না। এর পেছনের চোরদের ধরতেই উন্নতমানের সফটওয়্যার কেনা হচ্ছে। কানাডা বা যুক্তরাজ্যে থেকে সফটওয়্যার আনার চিন্তা চলছে। তখন সরকারের কোষাগারে টাকা আসবে নিয়মিত। ফিয়ের টাকা মেরে দেওয়ার বিষয়ে চেয়ারম্যান ক্ষুব্ধ। সফটওয়্যার বসানো হলে হিসাব-নিকাশ পাল্টে যাবে। এখন কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে বিমান-আরোহীদের সঠিক পরিচয় ও সংখ্যা নিয়ে আইনি জটিলতার বাধে। নিরাপত্তা ও আর্থিক সংশ্লিষ্টতা দুই বিষয়ই সফটওয়্যার ব্যবহার করলে নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেবিচক বিপুল পরিমাণ টাকা পায় এয়ারলাইনসগুলোর কাছে। তারা ঠিক সময়ে টাকা পরিশোধ করছে না। আবার এয়ারলাইনসগুলো রাজস্ব আদায় করেও যাত্রীসংখ্যা কম দেখিয়ে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব জালিয়াতি ঠেকাতে সফটওয়্যার বসাচ্ছি। ফলে বিমানের টিকিট কাটার সঙ্গে সঙ্গেই নির্ধারিত ফি বেবিচকের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়ে যাবে। বিপুল রাজস্ব পাবে সরকার।’
বেবিচক সূত্র জানায়, যাত্রীসেবার মান বাড়াতে বিমানবন্দরগুলোতে বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল ভবনের আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়েছে। ২০১৩ সালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী ছিল বছরে সাড়ে ছয় লাখ। ২০১৭ সালে বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে ১২ লাখে। ২০১৯ সালে ১৮ লাখের বেশি। এখন আরও কিছু বেড়েছে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে যাত্রীর সংখ্যা আরও বেশি। দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনসের কাছে কয়েক হাজার কোটি টাকা পাওনা বেবিচকের। অর্থ পরিশোধ করতে তাদের নিয়মিত চিঠি দেওয়াসহ বৈঠক করছেন বেবিচক কর্মকর্তারা। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। ২৬টি এয়ারলাইনসের কাছে পাওনা ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। নভোএয়ারের কাছে পাওনা ২৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। বন্ধ হয়ে যাওয়া রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কাছে পাওনা ৪০৮ কোটি টাকা। বন্ধ হয়ে যাওয়া ইউনাইটেড এয়ারের কাছে পাওনা ৩৮৯ কোটি ২২ লাখ টাকা। জিএমজি এয়ারলাইনসের কাছে পাওনা ৩৯৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। বিমান এবং ইউএস-বাংলার কাছে টাকা পাওয়ার কথাও জানিয়েছে বেবিচক।
লোকসাহিত্য আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির অঙ্গ। গুণ এবং পরিমাণ উভয় দিক থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেয়েলি গীত আমাদের লোকসাহিত্যের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ গানের প্রধান প্রচারক এবং পৃষ্ঠপোষক নারীসমাজ। দেশের মাটির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় এবং মনের দিক থেকে তারা প্রায় সর্বাংশে রক্ষণশীল। তবে ভাব সম্পদের দিক থেকে উচ্ছ্বাসপ্রবণ।
বাংলাদেশ গ্রামপ্রধান। আর গ্রামীণ বাংলাদেশের সর্বত্র উৎসব-আনন্দে বহু মেয়েলি গীত হয়ে থাকে। উৎসব-উপলক্ষগুলোর কোনো কোনোটি সামাজিক এবং কোনো কোনোটি শুধু মেয়েদের পারিবারিক এমনকি, কিছু অংশ ব্যক্তিগত-জীবনের সঙ্গে জড়িত। গবেষণা করে দেখা গেছে, উপলক্ষের প্রয়োজনে বাংলাদেশের প্রত্যেক অঞ্চলেই বহু মেয়েলি গীত জন্মলাভ করেছে।
নিঃসন্দেহে বলা যায়, বাংলাদেশের মেয়েলি গীতের চরিত্রগত অকৃত্রিমতা আর সংখ্যার বিপুলতা তার সম্পর্কে সুধীজনের আগ্রহের অন্যতম প্রধান কারণ। বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন মনীষীর সংগ্রহে ও আলোচনায় মেয়েলি গানের যে রূপ আজ বিদগ্ধ পাঠক-শ্রোতাদের কাছে প্রতিভাত ও সমাদৃত, তাও এ কথারই প্রমাণ। বাংলা একাডেমির সংগ্রহশালায় এসব মেয়েলি গীতি রক্ষিত আছে এবং গবেষকরা এখনো বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তা সংগ্রহ করছেন।
লোকসাহিত্যে যেহেতু মেয়েলি গীত উৎসব উপলক্ষে তথা সামাজিক-পারিবারিক অনুষ্ঠানে গীত হয়ে থাকে, সুতরাং এগুলোও লোকসাহিত্যের বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যবহারিক গীতের অন্তর্ভুক্ত। তবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো না কোনো সামাজিক-পারিবারিক অনুষ্ঠান বা উপলক্ষ কিংবা নারী জীবনের সুখ-দুঃখের সঙ্গে জড়িত এবং প্রধানত, মেয়েদের দ্বারা রচিত আর গীত লৌকিক গানের নামই মেয়েলি গীত।
মেয়েলি গীত বেশ প্রাচীন। সুরের ওপর বাধা-নিষেধের কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেয়েলি গীত কিছুটা ব্যতিক্রম। ব্যবহারিক গীতের মধ্যে বিবাহ-সম্পর্কিত কিছু গান এখানে প্রচলিত আছে। যেমন : কনের মায়ের বাড়িতে বেড়াতে আসছে বেওয়াই অর্থাৎ জামাইয়ের বাবা, পুত্রা অর্থাৎ জামাইয়ের ভাই এবং জামাই। তাদের কী দিয়ে আপ্যায়ন করা হবে ও কী কী উপহার দেওয়া হবে তারই সরল বর্ণনার একটি গীত প্রচলিত আছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সর্বত্র। আঞ্চলিক আটপৌরে ভাষায় রচিত এ গীতে বাঙালির চিরায়ত আতিথেয়তা ও জামাই আদরের চিত্র ফুটে উঠেছে বর্ণিত গীতে।
ক্ষেতে দিয়ে হাইট্রা যায় বেওয়াই-রে
আইলে দিয়া হাইট্রা যায় পুত্রা-রে
সড়ক দিয়া হাইট্রা যায় সোনার
আইকেল দামান-রে ।
কি দিয়া খাওয়াইবো বেওয়াই-রে
কি দিয়া হাওয়াইবো পুত্রা-রে
কি দিয়া হাওয়াইবো সোনার
আইকেল দামান-রে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেয়েলি গীতে আমাদের সামাজিক-পারিবারিক বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। মেয়েলি গীতগুলোতেই তা প্রকাশ পায়। যেমন বিয়ের পর স্বামী শহরে বাণিজ্য করতে যায়। বিবাহিত বউ একা ঘরে থাকছে। গানের কথায় তার একা থাকার দুঃখ প্রকাশ পায়। স্বামী প্রবোধ দেওয়ার জন্য নিজের মা, বোন, ভাইকে স্ত্রীর সঙ্গে রেখে যাওয়ার কথা বলছে। কিন্তু বাস্তবতা এইযে, শেষ পর্যন্ত ‘অবুঝ লীলার’ সঙ্গে কেউ-ই থাকবে না। তাকে থাকতে হবে ‘শুধা’ ঘরে। নিদারুণভাবে আলোচ্য গীতে তার প্রকাশ
তুমি যে যাইবা সাধুরে-ওরে-সাধু
শহরে বাণিজ্যে-রে
আমি-ও না অবুঝ লীলা
থাকমু শুধা ঘ-অ-রে-
আমি যে বেবুজ লীলা
থাকমু শুধা ঘ-অ-রে
থাইক্য না থাইক্য না কন্যাগো-ওগো কন্যা
থাইক্য না শুধা ঘরে...
অবশ্য মেয়েলি গীত আমাদের সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও তার সমকালীন সংস্কৃতির অন্যান্য অঙ্গের সঙ্গে তা নিষ্করুণভাবে স্বল্পবাক। তবে স্বল্প ভাষণের মধ্যেও মেয়েলি গীত থেকে অতীতের বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জগতের নিদর্শন মেলে। এদিক দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেয়েলি গীত বাংলা লোকসাহিত্যে উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করে আছে। যাতে ফুটে উঠেছে লোকায়ত বাংলার পরিচয়।
জায়েদুল আলম, শিক্ষাবিদ ও লেখক
দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই রেকর্ড ভাঙছে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুতে। এতে আতঙ্কে দিন কাটছে নগরবাসীর। নালা, ডোবা, ড্রেন বা জমে থাকা পানি এডিস মশার উৎপত্তিস্থল। এসব আবাসস্থল নষ্ট করতে নানা কথা বলা হলেও রাজধানীর বাসস্ট্যান্ড ও গণপরিবহনগুলো উপেক্ষিতই রয়ে গেছে। এতে নগরীর গণপরিবহনে যাতায়াতকারী লোকজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকছে।
প্রতিদিন নগরীতে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো রাতে ডিপোতে পার্ক করে রাখা হয়। ডিপোগুলোতে মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় না। এতে সকালে যখন পরিবহনগুলো রাস্তায় নামে, তখন পরিবহনে মশা থাকে। এসব মশা এডিসবাহিত মশাও হতে পারে। যা যাত্রী, বাসের চালক ও হেলপারের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে।
গণপরিবহনে যারা প্রথম দিকে যাওয়া-আসা করেন, তারা এ মশার কামড়ের আতঙ্কে রয়েছেন। এ বিষয়ে গণপরিবহনে চলাচল করা একাধিক বাসযাত্রী দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের সিটির গণপরিবহনের বাসমালিকরা বাস রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে আর কোনো খোঁজ রাখে না। এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা যাচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে। অথচ এ বিষয়ে সেভাবে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বাসে উঠলে এখন মশার কামড়ের আতঙ্ক থাকতে হয়।
রাজধানীর বাসস্ট্যান্ডগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সেভাবে কোনো উদ্যোগ নেই বাসমালিকদের। সিটির গণপরিবহনে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখা যায়নি। যার জন্য যাত্রীদের আতঙ্কের মধ্যেই যাতায়াত করতে হচ্ছে। তানজিল পরিবহনের এক যাত্রী দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমার বাসা মিরপুর-১০ নম্বরে। সকালে যখন মতিঝিল অফিস করতে আসি তখন বাসে মশার কামড়ের আতঙ্ক থাকতে হয়। শিকড় পরিবহনে চলাচল করা আরেক যাত্রী শাহ আলম বলেন, গণপরিবহনের মতো এত বড় একটি সেক্টরের দিকে কারও নজর নেই। এ গণপরিবহনে চলাচল করে কতজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। সরকারের উচিত গণপরিবহনে যেন ডেঙ্গুর বিস্তার না করতে পারে সেদিকে নজর রাখা।
‘বাসমালিক যদি মশার ওষুধ বাসে না দেয় তাহলে আমরা কী করব’ জানিয়ে দিশারী পরিবহনের এক হেলপার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরাও আতঙ্কের মধ্যে থাকি। কারণ রাতে বাস বিভিন্ন জায়গায় থাকে। সকালের দিকে যখন বাস নিয়ে বের হই, তখন রাতে সেই বাসে মশা থাকে। তাই শুধু যাত্রীরা নয়, আমরা পরিবহন শ্রমিকরাও আতঙ্কের মধ্যে থাকি।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গণপরিবহনে প্রথম দিকে যারা যাতায়াত করে তারা মূলত সবচেয়ে বেশি আতঙ্কের মধ্যে থাকে। এখন বাসের ভেতরে মশা মারার ওষুধ ছিটানো না হয়, তাহলে ডেঙ্গু গণপরিবহনে উর্বর জায়গা হিসেবে পরিণত হবে। আর দিনের পর দিন গণপরিবহনে ডেঙ্গুর আক্রান্ত রোগীও বাড়তে থাকবে। তাই যেসব জায়গা মশার উপদ্রব থাকতে পারে সেসব জায়গা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বাসস্ট্যান্ডগুলোতেও ভালোভাবে নজর দিতে হবে। আর কোনো বাসমালিক যদি এ ব্যাপারে অনীহা দেখায় তাহলে তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। তা না হলে সামনে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকারে ছড়াবে গণপরিবহনে।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, বাসমালিকদের নির্দেশনা দেওয়া আছে, যেন সবাই তাদের বাসে মশার ওষুধ ছিটায়। তাছাড়া আমার সব গাড়িতে প্রতিদিন মশার ওষুধ ছিটাতে বলা হয়েছে। বাসস্ট্যান্ডগুলোতে সিটি করপোরেশন থেকে মশার ওষুধ দিয়ে থাকে।
ভারতের অগ্নিগর্ভ মণিপুরে দুজন কুকি নারীকে প্রকাশ্য রাস্তায় নগ্ন করে ঘোরানোর একটি ভিডিও সামনে আসার পর সারা দেশ শোকে-দুঃখে-রাগে স্তম্ভিত হয়ে পড়েছে। প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে পার্লামেন্ট, সাংস্কৃতিক অঙ্গন, বিরোধী শিবির থেকে শুরু করে সর্বত্র। মণিপুরে শুরু হয়েছে নতুন সংঘাত। দেশটির সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, এ ‘চরম সাংবিধানিক ব্যর্থতা’র বিরুদ্ধে সরকার যদি কোনো ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে তারা নিজে থেকেই পদক্ষেপ নেবে। এর কিছু সময় পর অবশ্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরুর আগে দেওয়া এক ভাষণে বলেছেন, ওই দৃশ্য দেখে তার হৃদয় দুঃখে ও ক্রোধে ফুঁসছে। তবে পার্লামেন্টের অধিবেশনে আর সব কার্যক্রম স্থগিত করে মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি আলোচনার জন্য বিরোধী দলের অন্তত ১৫ জন এমপি মুলতবি প্রস্তাবও এনেছেন।
বিবিসি বলছে, গত ৩ মে থেকে মণিপুরে সংখ্যাগুরু মেইতেই ও সংখ্যালঘু কুকিদের মধ্যে যে রক্তাক্ত জাতি-সংঘাত এবং অবাধ হত্যা-লুণ্ঠন-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগ শুরু হয়েছে, দুই নারীকে নগ্ন করার ওই ঘটনা ছিল ঠিক তার দ্বিতীয় দিনেরই। তবে এ ঘটনার বীভৎসতা ও নৃশংসতা ঠিক কতখানি ছিল, তা সারা দেশ জানতে পারল ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার আড়াই মাস পর। আড়াই মাস আগের ভিডিওটি কে বা কারা গত বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।
সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মণিপুরের রাস্তায় কুকি-জোমি সম্প্রদায়ের দুজন নারীকে নগ্ন করে একদল লোক রাস্তায় হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের ক্রমাগত যৌন লাঞ্ছনা করা হচ্ছে। দুজন নারীর একজনের বয়স ছিল মাত্র বিশ-বাইশ, অন্যজনের চল্লিশের আশপাশে। ভিডিওতে দেখা যায়, জনতার মধ্যে অনেকেই ওই নারীদের শরীরের বিভিন্ন অংশ খামচে ধরছে। এরপর তাদের জোর করে একটি চাষের ক্ষেতের দিকে টেনে নিয়ে যেতেও দেখা যায়।
বিবিসি বলছে, ১৮ মে ওই ঘটনার যে এফআইআর করা হয়েছে, তাতে ভিকটিমরা অভিযোগ করেছেন, কমবয়সী মেয়েটিকে প্রকাশ্য দিবালোকে অত্যন্ত নৃশংসভাবে দল বেঁধে ধর্ষণ করা হয়েছিল।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ঘটনার দিন কাংপোকপি জেলায় তাদের গ্রাম যখন জ¦ালিয়ে দেওয়া হচ্ছিল, তখন প্রাণে বাঁচতে তারা পরিবারের কয়েকজন মিলে কাছের জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পথে থৌবাল জেলার একটি পুলিশ ভ্যান তাদের উদ্ধার করে গাড়িতে তুলে নেয়। তবে পুলিশ যখন তাদের থানায় নিয়ে যাচ্ছিল, তখন থানা থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে একদল উত্তেজিত জনতা তাদের ঘিরে ধরে। ক্ষুব্ধ জনতা তাদের পুলিশের হেফাজত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
মণিপুর পুলিশও স্বীকার করেছে, সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওটি জাল নয়, সত্যি। তবে ওই ঘটনা গত ৪ মে তারিখের এবং তাতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অপহরণ, দল বেঁধে ধর্ষণ ও হত্যার মামলাও হয়েছিল।
ভারতের সংবাদমাধ্যম এএনআই জানিয়েছে, গতকাল এ ঘটনার হোতাদের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং বলেছেন, এ ঘটনায় যারা দোষী, তারা যাতে ফাঁসির সাজা পায়, তিনি সেই চেষ্টাই চালাবেন। কিন্তু ভিকটিম দুজন নারীর একজন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকাকে জানিয়েছেন, পুলিশ আসলে হামলাকারীদের সঙ্গেই ছিল। ওরা বাড়ির বেশ কাছেই প্রথমে তাদের গাড়িতে তুলে নেয়, তারপর গ্রামের একটু বাইরে গিয়েই রাস্তায় ছেড়ে দেয়। পুলিশই ওই জনতার হাতে তাদের তুলে দিয়েছিল। ওই জনতা এরপর জোর করে তাদের সব জামাকাপড় খুলতে বাধ্য করে। তাদের রাস্তা দিয়ে নগ্ন করে হাঁটানো হয়, এরপর পাশের ধানক্ষেতে নিয়ে গিয়ে যৌন নির্যাতন চালানো হয়।
অভিযোগপত্রে লেখা হয়েছে, তিনজন নারী ও দুজন পুরুষসহ তারা দলে পাঁচজন ছিলেন, যারা গ্রাম থেকে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। বছর পঞ্চাশের যে তৃতীয় নারী ছিলেন, তাকেও নগ্ন করে ঘোরানো হয়েছিল। দলের দুজন পুরুষ ছিলেন সবচেয়ে কমবয়সী নারীটির বাবা ও ভাই। ধর্ষণে বাধা দেওয়ায় তাদের দুজনকেই হামলাকারীরা হত্যা করেছে বলেও এফআইআরে জানানো হয়েছে।
গত মে মাস থেকে বিজেপি-শাসিত মণিপুরে অন্তত ১২০ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছে সহস্রাধিক। অসংখ্য ঘরবাড়ি, গির্জা, মন্দির ধূলিসাৎ হয়েছে। ৬০ হাজার মণিপুরি এখনো শরণার্থীশিবিরে বন্দি।
মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে এতদিন একবারের জন্যও প্রধানমন্ত্রী মোদি মুখ খোলেননি। বিরোধীদের সমস্বর প্রতিবাদের মধ্যেই ভাইরাল হয় ভিডিওটি। যেদিন তা জনসমক্ষে ছড়িয়ে পড়ে, তার পরদিন থেকেই শুরু সংসদের অধিবেশন। সেই অধিবেশনে যোগ দেওয়ার মুখে প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রথমবারের মতো সরব হলেন। ওই ঘটনায় যারা দোষী, তাদের কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হবে বলে অঙ্গীকার করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী সকালে বলেছেন, মণিপুরের দুহিতাদের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা কিছুতেই ক্ষমা করা যায় না।
এর কিছুক্ষণ আগেই মণিপুর সংকট নিয়ে মুখ না খোলার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি আক্রমণ করে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে মন্তব্য করেন, ‘নরেন্দ্র মোদিজি, মণিপুর নিয়ে আপনার নীরবতার জন্য দেশ কিছুতেই আপনাকে ক্ষমা করবে না।’
অধিবেশনের শুরুতেই বিরোধীদলীয় এমপিরাও একসুরে দাবি জানাতে থাকেন, পার্লামেন্টে বাকি সব কাজ ফেলে অবিলম্বে মণিপুর নিয়ে আলোচনা শুরু করতে হবে। এর একটু পরেই পার্লামেন্টের বাইরে অধিবেশন শুরুর আগে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদি অবশেষে মণিপুর নিয়ে তার নীরবতা ভঙ্গ করেন। ওই ভাষণে পার্লামেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘আজ আমি যখন গণতন্ত্রের মন্দিরের ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে, আমার হৃদয় গভীর যন্ত্রণা আর ক্রোধে ভরে উঠেছে। মণিপুরের ঘটনা যেকোনো সভ্য রাষ্ট্রের জন্য কলঙ্ক, আমাদের গোটা দেশ এর জন্য লজ্জিত।’ তিনি বলেন, ‘আমি দেশকে কথা দিচ্ছি, এ ঘটনায় দোষীরা কেউ পার পাবে না। আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মণিপুরের দুহিতাদের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা ক্ষমার অযোগ্য।’
তার আগে ভারতের শীর্ষ আদালতও স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মণিপুরের ওই ঘটনাটি ‘কগনিজেন্সে’ নিয়ে এটিকে ‘চরম সাংবিধানিক ব্যর্থতা’ বলে বর্ণনা করে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেছেন, গতকাল থেকে যে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে, সেটি দেখে আমরা অত্যন্ত বিচলিত বোধ করছি এবং গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। সরকার আপনা থেকে এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে সুপ্রিম কোর্ট ২৮ জুলাই থেকে নিজেরাই এ মামলার শুনানি শুরু করবে।
এ সময়ের মধ্যে সরকার দোষীদের বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, তার প্রতিটি পদক্ষেপও সুপ্রিম কোর্টকে নিয়মিত অবহিত করতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতি এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগে নিকারাগুয়া, গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস ও এল সালভাদরের ৩৯ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বুধবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে এ নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি উঠে আসে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় নিকারাগুয়ার ১৩, গুয়াতেমালার ১০, হন্ডুরাসের ১০ ও এল সালভাদরের ৬ জনের নাম রয়েছে। আর ‘সেকশন ৩৫৩ করাপশন অ্যান্ড আনডেমোক্রেটিক অ্যাক্টরস রিপোর্ট ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি দেওয়া হয়েছে মার্কিন কংগ্রেসে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, নিষেধাজ্ঞার তালিকায় এমন সব ব্যক্তি রয়েছেন, যারা জেনেশুনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বা প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্ত করেন। শুধু তা-ই নয়, তারা উল্লেখযোগ্য দুর্নীতি করেছেন বা দুর্নীতির তদন্তে বাধা সৃষ্টির কাজেও লিপ্ত হয়েছেন।
নিষেধাজ্ঞায় পড়া ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। তাদের মধ্যে কারও কারও মার্কিন ভিসা থাকলেও তা বাতিল করা হবে। নিষেধাজ্ঞার তালিকায় এল সালভাদরের সাবেক দুই প্রেসিডেন্ট মাউরিসিও ফুনেস ও সালভাদর সানচেজ আছেন। এ ছাড়া রয়েছেন বেশ কয়েকজন বিচারক এবং সাবেক ও বর্তমান প্রসিকিউটর।
নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে গুয়াতেমালা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপরও। অন্যদিকে হন্ডুরাসে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন একজন সংসদ সদস্য এবং প্রধান রাজনৈতিক দলের সভাপতি। এ ছাড়া নিকারাগুয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল, জাতীয় পরিষদের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট, সেকেন্ড ভাইস প্রেসিডেন্ট, ফার্স্ট সেক্রেটারি, থার্ড সেক্রেটারি, আপিল কোর্টের বিচারকসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংস্থার কর্মকর্তাদের ওপর।
অপেক্ষা আর মাত্র ৩ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই।
শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে। কিং খানের ‘জাওয়ান’ কাঁপাচ্ছে পর্দা, কাটতি বাড়ছে বক্স অফিসে; বিশ্বকাপে আইসিসির পকেট ভরবে তো?
প্রস্তুতি বলছে, ভরবে। উইকেটে হবে রান উৎসব, লড়াই হবে ধুন্ধুমার। তাতেই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হবে এক ব্লকবাস্টার মেগা হিট।
মাস তিনেক আগে, বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচগুলো যে ১০ ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে সেই ভেন্যুগুলোর কিউরেটরদের সঙ্গে বসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কিউরেটর। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের একটাই মন্ত্র, রান চাই।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে, ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলেছে সেই ম্যাচগুলো যদিও বিশ্বকাপের ভেন্যুতে হয়নি তবে সেই সব ম্যাচেও রানের বন্যা বয়েছে।
প্রথম দুটো ওয়ানডেতে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার করা ২৭৬ রান অনায়াসে তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে ভারত। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ঠেঙিয়ে তুলেছেন ৩৯৯ রান। তিন নম্বর ম্যাচে আবার অস্ট্রেলিয়া করেছে ৩৫২ রান, যা তাড়া করে ভারতও গিয়েছিল ২৮৬ অবধি।
উদ্বোধনী ম্যাচ হবে গুজরাতের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এখানে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। ম্যাচে শুভমান গিল করেন সেঞ্চুরি, ভারত করে ৪ উইকেটে ২৩৪ রান আর জবাবে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ৬৬ রানে।
বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের ধরন বুঝে ব্যাট করতে পারলে ৫০ ওভারে এখানে রানবন্যা হবে। বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দুই দল এখানে মুখোমুখি হয়েছে বহুবার, পোশাকের রঙ কখনো রঙিন কিংবা কখনো সাদা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ কমেনি। এই মাঠে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রান করে ভারতকে ২১ রানে হারিয়েছে সবশেষ ম্যাচে।
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ঘরের মাঠে সবশেষ মৌসুমে ধোনির ‘ইয়েলো আর্মি’ ৮ ম্যাচ খেলে ২০০ রানের ওপরে করেছে দুইবার, একবার জিতেছে অন্যবার হেরেছে। তবে দুই ইনিংসেই ২০০’র বেশি রান হয়েছে দুটো ম্যাচেই। অর্থাৎ চাইলে চেন্নাইকেও ব্যাটিং স্বর্গে পরিণত করা সম্ভব।
বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর টানা তিন ওয়ানডে জিতে সিরিজ তো নিশ্চিত করেছেই, টানা তিন ম্যাচে ৩০০’র ওপর রান করেছে। চতুর্থ ওয়ানডেতে তো ৪০০ পার করেছে প্রোটিয়ারা। ব্যাটিং উইকেটে তারাও যে কোনো প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। হেনরিক ক্লাসেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৮৩ বলে খেলেছেন ১৭৪ রানের ইনিংস। বিধ্বংসী রূপে ফিরছেন ডেভিড মিলারও।
প্রোটিয়ারা প্রথম ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে। সেখানে অবশ্য সবশেষ হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচেও খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে তারা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯৯ রানে। দিল্লির মাঠটা হয়তো খানিকটা স্পিনারদের দিকেই ঝুঁকবে, তবে অন্য মাঠগুলোতে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবে মেতে উঠতে দেখার সম্ভাবনা জোরালো। তাই অনেক সাবেক ক্রিকেটারই প্রোটিয়াদের দেখছেন শেষ চারে।
বিশ্বকাপের আগে ক্লাসেন ছাড়াও ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস খেলেছেন ১৮২ রানের ইনিংস, দারুণ ছন্দে ইংল্যান্ডের ডাভিড মালানও। তবে সেরা ছন্দে নিঃসন্দেহে শুভমান গিল। সবশেষ ৫ ইনিংসে দুটো শতরান আর একটা হাফসেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেলও আছেন দারুণ ছন্দে। দুটো হাফসেঞ্চুরি আর একটা সেঞ্চুরি সবশেষ ৫ ইনিংসে। হায়দ্রাবাদে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের ৩৪৫ রান কিউইরা তাড়া করেছে ৩৮ বল হাতে রেখে।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, এই বারের বিশ্বকাপে রানবন্যায় বোলারদের জন্য কাজটা হবে কঠিন। দেশ রূপান্তরকে আশরাফুল বলেন, ‘আমাদের পেসাররা গত এক দেড় বছর ধরে খুবই ভালো করছে। তবে যেহেতু ভারতের মাটিতে খেলা, আমরা দেখেছি যে সাড়ে ৩০০’র বেশি রান হচ্ছে প্রতিটা ম্যাচে। কেউ যদি ভালো না করে, তাকে মনে রাখতে হবে যে টুর্নামেন্টে পরের ম্যাচে ফিরে আসতে হবে। একজনের দিন খারাপ যেতেই পারে, কোনো ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান উঠেই যেতে পারে। ৯টা ম্যাচের ভেতর ৪-৫টা ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান হতে পারে। তাই বোলারদের ফিরে আসার মানসিকতা থাকতে হবে।’
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমও বলেছেন যে দেড় মাসের আসরে প্রস্তুত থাকতে হবে যে কোনো কিছুর জন্যই, ‘দেড় মাসের আসর, ৯টা ম্যাচ এই সময়ে খেলতে হবে বা তারও বেশি। অনেক উত্থান-পতন হবে। যে কোনো কিছুর জন্যই তৈরি থাকতে হবে।’
রান উৎসবের বিশ্বকাপ যে হতে যাচ্ছে, তার সব রসদই মজুদ। মাঠগুলোকে করা হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গ, বিশ্বকাপে আসার আগে সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরাও আছেন ছন্দে। শুধু প্রশ্ন এটাই, রান উৎসবের এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রান করবেন কে? সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাটিংয়ের ছবিটা যে মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।