
‘টাকার শোকে আমার বাবা মারা গেছেন। সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলে চেয়ারম্যান যে টাকা নিয়েছেন তার সাক্ষী আছে। বিষয়টি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও জানেন। টাকা ফেরত নিতে চেয়ারম্যানের কাছে চার-পাঁচ মাস ঘুরতে ঘুরতে অবশেষে টাকার শোকে আমার বাবা মারা যান।’ বিলাপ করতে করতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ময়মনসিংহের ঈশ^রগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের কুমড়া শাসন গ্রামের মৃত চাঁন মিয়ার মেয়ে সেলিনা আক্তার।
সেলিনার দাবি, তার মা হতদরিদ্রদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বরাদ্দ পেতে মাইজবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইদুল ইসলাম বাবুলকে ১৯ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের পরিবার সেই ঘর বা ঘুষ হিসেবে দেওয়া টাকার কোনোটাই পায়নি। আর এই শোকে তার বাবা গত বছরের ১৬ অক্টোবর অসুস্থ হয়ে মারা যান। গতকাল সোমবার এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাইদুল ইসলাম বাবুলের বিরুদ্ধে ঈশ^রগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন সেলিনা আক্তার।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, কুমড়া শাসন গ্রামের চাঁন মিয়ার স্ত্রী মোছা. রাহেলা খাতুনের (৬০) কাছ থেকে ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাইদুল ইসলাম বাবুল (৪৩) প্রায় এক বছর আগে সরকারি ঘর পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ১৯ হাজার টাকা নেন। কিন্তু ঘর না দিয়ে বিভিন্ন বাহানায় ঘোরাতে থাকলে ভুক্তভোগী রাহেলা চেয়ারম্যানের কাছে টাকা ফেরত চান। চেয়ারম্যান টাকা দিই-দিচ্ছি করে দীর্ঘদিন ধরে ঘোরাতে থাকেন। টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য মৃত চাঁন মিয়াও দীর্ঘদিন ধরে ঘুরেছেন। এ নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় ছিলেন।
মাইজবাগ ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘টাকা দেওয়ার বিষয়ে প্রথমে আমার জানা ছিল না। পরে বিষয়টি জেনে চেয়ারম্যান সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে জানান।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম বাবুল বলেন, ‘সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলে আমি কারও কাছ থেকে কোনো টাকা নিইনি।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঈশ্বরগঞ্জের ইউএনও মোসা. হাফিজা জেসমিন বলেন, ‘ঘর হচ্ছে যারা ভূমিহীন ও গৃহহীন তাদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার। আর যেহেতু অভিযোগ জমা পড়েছে, তাই অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) প্রধান নাথান বম রাজধানীর বাসাবো এলাকার একটি বাসায় গত বছর আট মাস অবস্থান করেন। ওই বাসাটি তাকে ঠিক করে দেন নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার আল ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আমির মো. আনিসুর রহমান মাহমুদ। নাথান বমের মাধ্যমেই তিনি কেএনএফ থেকে ১৭ লাখ টাকায় বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র কেনেন। গত রবিবার রাত ৩টার দিকে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থেকে দুই দেহরক্ষীসহ মাহমুদকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানতে পেরেছে র্যাব। পুলিশের বিশেষায়িত এ ইউনিটটি বলছে, দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে শক্তিশালী জঙ্গি সংগঠন বানাতে চেয়েছিলেন এই আনিসুর রহমান মাহমুদ।
তার গ্রেপ্তার দুই দেহরক্ষী হলেন কাজী সরাজ উদ্দিন ওরফে সিরাজ ও মাহফুজুর রহমান বিজয় ওরফে বাবুল ওরফে জাম্বুলি। তাদের কাছ থেকে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, উগ্রবাদী বই ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়। গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, গত বছরের শুরু থেকে টানা আট মাস রাজধানী ঢাকার বাসাবোর একটি ভাড়া বাসায় ছিলেন কেএনএফ প্রধান নাথান বম। গত বছর অক্টোবরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে অভিযান শুরু করলে তিনি (নাথান) আত্মগোপনে চলে যান। ওই বাসাটি তাকে ভাড়া করে দেন আমির মাহমুদ। তার সঙ্গে নাথান বমের যোগাযোগ ছিল। ‘ক্লোজ গ্রুপের’ মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করেছিলেন তারা। নাথান বম বর্তমানে প্রতিবেশী দেশের মিজোরামে অবস্থান করছেন বলে র্যাবকে জানিয়েছে মাহমুদ।
তার বিষয়ে র্যাবের মুখপাত্র বলেন, আমির মাহমুদ মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করে কুমিল্লা সদরের একটি সিএনজি রিফুয়েলিং পাম্পে ম্যানেজারের চাকরি নেন। তিনি এর আগে আরেক জঙ্গি সংগঠন হুজির সদস্য ছিলেন। পরে তার সঙ্গে কুমিল্লার একটি রেস্টুরেন্টে আনসার আল ইসলামের রক্সি ও ফেলানীর পরিচয় হয়। পরে তারা রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বৈঠক করে নতুন একটি সংগঠন তৈরির পরিকল্পনার মাধ্যমে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র কার্যক্রম শুরু করেন। বর্তমানে এ জঙ্গি সংগঠনের আমির তিনি।
কে এই আমির মাহমুদ : কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মাহমুদ কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গি সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকেন। ২০১৬ সালের বিভিন্ন সময় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে সংগঠনের পক্ষে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। ২০২০ সালে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে বান্দরবানের গহিন এলাকায় যান। সেখানে আসলাম নামে এক ব্যক্তির কাছে প্রায় এক মাস সামরিক বিভিন্ন কৌশল, অস্ত্র চালনা ও প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ নেন। আমির মাহমুদ কুমিল্লার প্রতাপপুরের বাড়িসহ তার জমি ৫০ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন। জমি বিক্রির কিছু টাকা সংগঠনে দেন। বাকি টাকা দিয়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে সাড়ে তিন বিঘা জমি কিনে পরিবার নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তিনি পোলট্রি ফার্ম, চাষাবাদ ও গবাদি পশুর খামার পরিচালনা করতেন।
মাহমুদকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আগে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আমির ছিলেন মাইনুল ইসলাম ওরফে রক্সি। ২০২১ সালে রক্সি গ্রেপ্তার হলে সংগঠনের অন্যান্য সদস্যের সিদ্ধান্তে মাহমুদকে আমির করা হয়। পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থানের সময় তার সঙ্গে কেএনএফ সদস্যদের পরিচয় হয় এবং কেএনএফ প্রধান নাথান বম ও সেকেন্ড ইন কমান্ড বাংচুংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় তার। পরে ২০২১ সালে কেএনএফের ছত্রছায়ায় বান্দরবানের গহিন পাহাড়ে জামাতুল আনসারের সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণের বিষয়ে চুক্তি হয় তাদের মধ্যে। চুক্তি অনুযায়ী ২০২৩ সাল পর্যন্ত শারক্বীয়ার সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেবে কেএনএফ। এজন্য প্রতি মাসে কেএনএফকে প্রশিক্ষণ ও খাবার খরচ বাবদ ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা দিতেন আমির মাহমুদ। এ অর্থ দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে সংগ্রহ করা হতো। এ ছাড়া আমির মাহমুদের নির্দেশনায় কেএনএফ থেকে ১৭ লাখ টাকায় বিভিন্ন ধরনের ভারী অস্ত্র ও বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র কেনা হয়, যা প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, কেউ যদি প্রশিক্ষণ নিতে অসম্মতি জানাত বা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করত তাহলে তাকে জঙ্গি সংগঠনটির বানানো জেলখানায় বন্দি করে রাখা হতো। এ ছাড়া কেউ পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা বা বিদ্রোহ করলে তাকে গুলি করে হত্যার ঘোষণা দেন আমির মাহমুদ।
কমান্ডার আল মঈনের ভাষ্য অনুযায়ী, গত বছর কিশোরগঞ্জে আনসার আল ইসলামের সঙ্গে একটি বৈঠকে আমির মাহমুদের সঙ্গে আনসার আল ইসলামের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। আনসার আল ইসলাম আমির মাহমুদকে ১৫ লাখ টাকা দেয় এবং পরবর্তী সময়ে আরও টাকা দেবে বলে জানায়। চুক্তি অনুযায়ী জামাতুল আনসারের সদস্যদের আনসার আল ইসলাম আইটি ও নিরাপত্তাবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেবে। বিনিময়ে আনসার আল ইসলামের সদস্যদের জামাতুল আনসার পার্বত্য অঞ্চলে অস্ত্র প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ করবে। এ বিষয়ে আমির মাহমুদ কেএনএফ প্রধান নাথান বম ও সেকেন্ড ইন কমান্ড বাংচুংয়ের সঙ্গে বৈঠক করে আনসার আল ইসলামের সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি জানান ও প্রয়োজনীয় সমন্বয় করেন।
পাহাড়ে অভিযান শুরু হলে আত্মগোপনে যান আমির মাহমুদ : র্যাবের মুখপাত্র বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে র্যাবসহ অন্যান্য বাহিনীর অভিযান শুরু হলে আমির মাহমুদ পাহাড় থেকে পালিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে থাকতে শুরু করেন। সংগঠনকে পুনরায় সংগঠিত করার জন্য পালানো ও অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করছিলেন আমির মাহমুদ।
একপাশে বিশাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র। দিনরাত বিকট দুর্গন্ধ ছড়ায় আশপাশে। কয়েক বছর আগে পার্ক ও খেলার মাঠ নির্মাণের উন্নয়ন প্রকল্প কাজের উদ্যোগ নেওয়া হলেও ছয় মাস ধরে তা বন্ধ। সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি মাদকসেবী ও ভবঘুরেদের আড্ডা। নোংরা ও স্যাঁতসেঁতে ফুটপাত ঘিরে মাইক্রোবাসস্ট্যান্ড। একসময় রাজনৈতিক আন্দোলন ও মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের অন্যতম অনুষঙ্গ মুক্তাঙ্গনের এখন এমনই পরিবেশ। এটি এখন কেবলই বিস্মৃত। আশির দশক থেকে পরবর্তী তিন দশক প্রায় প্রতিদিন এ স্থানটি মিছিল, সেøাগান আর ভাষণে মুহুর্মুহু কেঁপে উঠত। কিন্তু সেই মুক্তাঙ্গন এখন আর নেই।
দেশের ইতিহাস আর ঐতিহ্যের স্মৃতিবিজড়িত এ স্থানটিকে রক্ষা কিংবা ঐতিহ্য ও ঐতিহাসিক হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি সরকারিভাবে। পুরানা পল্টন থেকে জিরো পয়েন্ট যেতে এবং জিরো পয়েন্ট থেকে পুরানা পল্টনে যাওয়া-আসা করা কৌতূহলী মানুষেরা এখনো উৎসুক হয়ে মুক্তাঙ্গনকে খুঁজে ফেরেন। কিন্তু তাদের হতাশই হতে হয় এমন পরিস্থিতি দেখে। হতাশা ব্যক্ত করেন একসময় মুক্তাঙ্গনে পদচারণা করা রাজনীতিবিদেরাও। মুক্তাঙ্গন নামটি থাকলেও এর অস্তিত্ব আর এখন নেই বললেই চলে। এ নিয়ে আক্ষেপ রয়েছে রাজনীতিক ও সাধারণ মানুষের।
বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধের পর ওই দশকের শেষ দিকে রাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য মুক্তাঙ্গনকে নির্ধারণ করে দেয় সরকার। এরপর থেকে জিরো পয়েন্ট, গুলিস্তান, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, পুরানা পল্টনের আশপাশের এলাকা পরিচিত হয়ে ওঠে এই একটি এলাকা ঘিরে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে সব রাজনৈতিক ও অধিকার আদায়ের সংগ্রামের কেন্দ্র হয়ে ওঠে মুক্তাঙ্গন; যা বহাল ছিল ২০১০ সাল পর্যন্ত।
প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন হতাশা কণ্ঠে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ জায়গাটিকে নির্ধারণই করা হয়েছিল সভা-সমাবেশের জন্য। এখানে আমার মতো আরও অনেকের রাজনৈতিক জীবনের বহু স্মৃতি আছে। বহু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হয়েছে এখান থেকে। এটা খুবই দুঃখজনক যে এ জায়গাটা কখনো কখনো মাইক্রোবাসস্ট্যান্ড হয়েছে। এখন এখানে ময়লার ভাগাড় করা হয়েছে। উন্মুক্ত জায়গা রাখতে সিটি করপোরেশনের যে কথা, সেটা বিবেচনায় নিলে এটি ঠিক হয়নি। অন্তত ঐতিহাসিক বিবেচনাতেও এ স্থানটিকে সংরক্ষণ করাই ছিল সমীচীন।’
তিনি বলেন, ঢাকায় উন্মুক্ত স্থান এমনিতেই কমে গেছে। একসময় পল্টনে সমাবেশ হতো। মুক্তাঙ্গনও ছিল, সেটিও এখন নেই। ঢাকায় এখন রাস্তায় কর্মসূচি পালন ছাড়া আর কোনো জায়গা নেই।
দীর্ঘ দিন অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার পর তিন বছর আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের আওতায় মুক্তাঙ্গন পার্ক ও খেলার মাঠের উন্নয়নকাজ শুরুর উদ্যোগ নেয়। তবে কাজ শুরু হলেও ছয় মাস ধরে তা বন্ধ রয়েছে। শিশুদের জন্য বিভিন্ন রাইড স্থাপন ও খেলার মাঠ তৈরির কথা শোনা গেলেও তা থমকে আছে। প্রকল্পের অগ্রগতির সার্বিক বিষয়ে জানতে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছেরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
গত শনিবার দুপুরে মুক্তাঙ্গনের ভেতর ও আশপাশ সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সামনের ফুটপাতের পুরোটাই ভ্রাম্যমাণ দোকান, মাইক্রোবাস ও কার স্ট্যান্ডের দখলে। ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ায় পুরানা পল্টন থেকে হেঁটে জিপিও মোড় পর্যন্ত যেতে হয় মূল সড়ক দিয়ে। স্বস্তি নেই তাতেও। ময়লা, বর্জ্য আর প্রস্রাবের দুর্গন্ধে টেকা দায়। ফুটপাত ঘেঁষে টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। ভেতরে গিয়ে দেখা যায় মাদক সেবনের প্রস্তুতি নিচ্ছে মাদকসেবীরা। প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় এখানে-সেখানে পড়ে রয়েছে ইট, বালি, পাথরের স্তূপ। এখানে-সেখানে গজিয়ে উঠেছে হাঁটুসমান ঘাস। ভরদুপুরেও সেখানে অনেকটা গা ছমছমে পরিবেশ। আশপাশটা প্রায় পুরোটা মাইক্রোস্ট্যান্ডের দখলে। মুক্তাঙ্গনের বাম দিকে বিশাল ভবনে ‘অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র’। এখানে আবর্জনা ও বর্জ্য রাখা শুরু হয় দুই বছর আগে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বর্জ্য সংগ্রহের পর রাতে সেগুলো নিয়ে যাওয়া হয় মাতুয়াইলে। দিনভর বর্জ্য ও ময়লা পানির দুর্গন্ধ আশপাশে। মুক্তাঙ্গনের পাশ দিয়ে গেলে অনেকেই অস্বস্তিবোধ করেন। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কেন্দ্রের পাশেই পার্ক ও শিশুদের খেলার মাঠ নির্মাণ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে সচেতন মহলের।
স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সন্ধ্যা হলেই ছিনতাইকারী ও মাদকসেবীদের কারণে অনেকটা অপরাধপ্রবণ এলাকা হয়ে ওঠে। একসময় মুক্তাঙ্গনের ভেতরে রাখা হতো মাইক্রোবাস ও কার। তবে ডিএসসিসির উন্নয়নমূলক কাজের তাগিদে সেটিকে উচ্ছেদ করা হলেও ফুটপাতের পাশে সাইনবোর্ডে ‘ঢাকা মুক্তাঙ্গন মাইক্রোবাস কার মালিক সমিতি’র ব্যানারে এখনো ভাড়ায়চালিত মাইক্রোবাসের ব্যবসা চলছে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক দাবি করে আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, একসময় এটি খালি ছিল। তারা গাড়ি রাখতেন। আশপাশে আর জায়গা নেই। প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে বাইরে গাড়ি ভাড়ার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ফুটপাত দিয়ে যেতে না পেরে মূল সড়ক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি। একটু পর পর বাম দিকে উঁকি দিচ্ছেন। মো. আশরাফুল ইসলাম নামে ওই ব্যক্তি জানান, মাগুরার একটি মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকতা করেন তিনি। নানা কাজে মাঝেমধ্যে ঢাকায় আসেন। মুক্তাঙ্গনের সামনে দিয়ে যাওয়া-আসা করতে হয়। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই ঢাকায় আসি। এই মুক্তাঙ্গনকে চিনতে কষ্ট হয়। কিন্তু এখন হতাশ হই। আমাদের আশা ছিল, নতুন প্রজন্মের জন্য ঐতিহাসিক এই জায়গা সংরক্ষণ করা হবে। কিন্তু এখন মনে হয় এটি স্মৃতি হয়েই থাকবে।’
পায়রার পর পটুয়াখালীতে বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরেকটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ চলছে পুরোদমে। এ বছরই কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের নির্মাণকাজ শেষ হবে। আগামী বছর কেন্দ্রটির দুটি ইউনিট থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে বলে আশা করছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি এ কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় এক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। পাশাপাশি উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ৩ পয়সা হারে জমা দিয়ে একটি তহবিল গঠন করা হবে। তহবিলের টাকা খরচ করা হবে শিক্ষা ও চিকিৎসার উন্নয়নে, বনায়নে, অবকাঠামো নির্মাণে, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রশিক্ষণে ও কর্মসংস্থানে। আরও অনেক সমাজসেবার কাজে। প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৯০ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে কেন্দ্রটিতে। সে হিসাবে মাসে প্রায় পৌনে ৩ কোটি ও বছর শেষে ৩২ কোটির বেশি টাকা জমা হবে ওই তহবিলে।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল) এবং চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নরিনকো ইন্টারন্যাশনালের যৌথ উদ্যোগে গঠিত কোম্পানি আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার লিমিটেড (আরএনপিএল) কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীতে দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ও অন্যান্য জনবল মিলে প্রায় ১০ হাজার মানুষ এটি নির্মাণে নিয়োজিত রয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণে, পুনর্বাসনে, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে এ প্রকল্পে খরচ হবে প্রায় আড়াই বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ২৬ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা)।
আরপিসিএলের নির্বাহী পরিচালক (প্রকৌশল) প্রকৌশলী মোহাম্মদ সেলিম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে প্রায় ৭৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এ বছরের মধ্যে প্রথম ইউনিটের নির্মাণ শেষ হবে এবং আগামী বছর থেকে কমিশনিং শুরু হবে। দ্বিতীয় ইউনিটের কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর জুন মাসে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিট এবং অক্টোবরে একই ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রথম ইউনিটের বেশিরভাগ যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে। দ্বিতীয় ইউনিটের অনেক সরঞ্জাম ইতিমধ্যে প্রকল্প এলাকায় পৌঁছেছে। কিছু যন্ত্রপাতির শিপমেন্ট হয়ে গেছে। শিগগির সেসবও দেশে এসে পৌঁছবে।’
আরপিসিএল সূত্র জানায়, কেন্দ্র নির্মাণে ৯১৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। একই ক্ষমতার আরও একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সেখানে। তবে পরিবেশের কথা বিবেচনা করে সরকার আপাতত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসায় দ্বিতীয় প্রকল্পটি স্থগিত রয়েছে। পরে সরকার অনুমোদন দিলে দ্বিতীয় প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। অথবা কয়লার পরিবর্তে অন্য জ্বালানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎকেন্দ্র করবে আরপিসিএল। এর জন্য জায়গা রাখা হয়েছে ৫০০ একর। অবশিষ্ট জমিতে সৌর অথবা বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
ভূমি অধিগ্রহণের সব পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য সেখানে নির্মিত হয়েছে আধুনিক শহর। বাস্তুচ্যুত ২৮১টি পরিবারের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মসজিদ, খেলার মাঠ, বাজারÑ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
সেলিম ভূঁইয়া জানান, কৃষিকাজ ও মাছ ধরা ওই এলাকার মানুষের প্রধান জীবিকা ছিল। নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রে বহু মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকাতেও মানুষ বাসাভাড়া দিচ্ছে, ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ বেড়েছে। সাশ্রয়ী দামে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করার পাশাপাশি ব্যাপক সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে।’
ঠিকাদার হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চীনের তিয়ানজিন ইলেকট্রিক পাওয়ার কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড, চায়না হুয়াডিয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড ও চায়না ওয়ানবাও ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম।
কেন্দ্র নির্মাণে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহারের ফলে তুলনামূলকভাবে কম কয়লা পুড়িয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। দূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হবে আধুনিক প্রযুক্তি। প্রতিদিন কেন্দ্রটিতে প্রায় ১২ হাজার টন কয়লা লাগবে। এ কেন্দ্রে ব্যবহার্য কয়লা ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা হবে। কেন্দ্রটির স্বাভাবিক আয়ুষ্কাল ২৫ বছর। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তবে নিয়মিত মেইনটেইন ও কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করা হলে এর থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে ৪০-৫০ বছর।
পটুয়াখালীর পায়রায় দেশের প্রথম বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন শুরু হয় ২০২০ সালে। বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগের এ কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শেষ হয় সবচেয়ে কম সময়ে। তুলনামূলক কম দামে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎসেবা দেওয়ার কারণে কয়লাভিত্তিক এ কেন্দ্রটিকে মডেল বিদ্যুৎকেন্দ্র হিসেবে ধরা হয়। এর মতোই পটুয়াখালী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সাশ্রয়ী দামে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, মান বিবেচনায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে পায়রার চেয়েও উন্নত করার চেষ্টা করা হচ্ছে এটিকে।
নাটোরে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জেরে কুপিয়ে এক যুবলীগ নেতার হাতের কবজি কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এ সময় তাকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছেন তার আরও ছয় সমর্থক। গত রবিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নাটোর পৌরসভার বলারীপাড়া এলাকায় হামলার ওই ঘটনা ঘটে।
কবজি কেটে ফেলা মিঠুন আলী নাটোর শহরের ভবানীগঞ্জ মহল্লার মৃত শাহাবুদ্দিন আলীর ছেলে ও পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। আহত অন্যরা হলেন- আরমান আলী, আব্দুলাহ আল রাব্বি, বকুল মিয়া, সবুজ মিয়া, স্বপ্ন ও জাহিদুল।
এলাকাবাসী জানায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা নান্নু শেখের সঙ্গে যুবলীগ নেতা মিঠুন আলীর দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এর জেরে গত ১৬ এপ্রিল মিঠুনের নেতৃত্বে তার সমর্থকরা নান্নু শেখকে কুপিয়ে জখম করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এরপর থেকেই এলাকায় ওই দুই পক্ষের মধ্যে চাপা উত্তেজনা চলছিল। রবিবার রাতে মিঠুন তার সমর্থকদের নিয়ে বলারীপাড়া এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় রাজার পুকুর পাড়ে মুখোশধারী কিছু ব্যক্তি মিঠুনের চোখেমুখে মরিচের গুঁড়ো ছিটিয়ে দেয়। পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তার ডান হাতের কবজি কেটে দেয়। তখন মিঠুনকে বাঁচাতে গিয়ে তার ছয় সমর্থক আহত হন। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়া হয় মিঠুনকে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরে পাঠানো হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আহত অন্যদের নাটোর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। আহতদের অভিযোগ সাবেক কাউন্সিলর নান্নু এই হামলা চালিয়েছে।
নাটোর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, হামলায় জড়িতদের ধরতে পুলিশ অভিযানে নেমেছে।
মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলে অননুমোদিতভাবে অনুপস্থিত শিক্ষকদের তালিকা প্রতিদিন জানানোর নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর। গতকাল সোমবার মাউশি অধিদপ্তর দেশের নয়টি আঞ্চলিক কার্যালয়ে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছে। গতকালই আবার আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে এক নির্দেশনায় শিক্ষকদের অনুপস্থিতির তালিকা পাঠাতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে।
গতকাল মাউশির ঢাকা অঞ্চলের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এএসএম আবদুল খালেকের সই করা এক আদেশে বলা হয়, অননুমোদিতভাবে শিক্ষক অনুপস্থিত থাকলে তার তালিকা প্রতিদিন পাঠাতে হবে। আরও বলা হয়, শিক্ষকদের যারা কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে রবিবার অননুমোদিতভাবে অনুপস্থিত ছিল তাদের নামের তালিকা পাঠাতে হবে। প্রত্যেক আঞ্চলিক কার্যালয় থেকেই আদেশ জারি করা হয়েছে। গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘আন্দোলন থেকে অনেকেই চলে গেছেন, যারা আছেন তারাও কিছুদিন থেকে চলে যাবেন।’ তিনি আন্দোলনরত শিক্ষকদের আবারও ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
দীপু মনি বলেন, ‘শিক্ষকদের আন্দোলনের পেছনে অবশ্যই উসকানি আছে। কারণ যারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে, তারা জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না। তারা একেক সময়, একেক গোষ্ঠীর ওপর সওয়ার হয়। তারা এখন শিক্ষকদের আন্দোলনের ওপর সওয়ার হয়ে তাদের আন্দোলন একটা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই পারে। শিক্ষকদের বলব, এরকম কোনো ফাঁদে পা দেবেন না।’
তিনি বলেন, জাতীয়করণের বিষয়ে যেসব কমিটি হচ্ছে, তারা রিপোর্ট দিলে সরকার সেগুলো বিবেচনায় নেবে। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে এ ধরনের কর্মসূচি কাম্য নয়। আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি, শিক্ষকদের বলব তারা যেন শ্রেণিকক্ষে ফিরে যান।
মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে টানা ১৪ দিন আন্দোলনে রয়েছেন শিক্ষকরা। তারা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে জাতীয়করণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত এলেই তারা শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাবেন। স্কুলে অননুমোদিতভাবে অনুপস্থিত শিক্ষকদের তালিকা তৈরির কথা বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের টালবাহানা বন্ধের দাবিও জানান তারা।
তামিম ইকবাল দলে না থাকাতে যেন অনেকেরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে! আবার বিশ্বকাপের দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অন্তর্ভুক্তিতেও অনেকের চোখ কপালে! দল ঘোষণার পর যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা এলেন সংবাদ সম্মেলনে, তখন আলোচনায় শুধু ছিলেন এই দুজনেই। তাদের এই বিরহ বেদনায় চাপা পড়ে যায় অনেক প্রশ্ন। লিটন দাসকে বাদ দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত কেন সহ-অধিনায়ক! বাড়তি কোনো ওপেনার ছাড়া কিংবা পাঁচ পেসারকে নিয়ে কেন দল গড়া?
প্রায় মিনিট পনেরোর সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে এসেছে একই প্রশ্ন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও ঘুরেফিরে বন্দী ছিলেন একই কথার বৃত্তে। প্রশ্নোত্তর শেষে বেরিয়ে যান তিন নির্বাচক। যেতে যেতে কথা হয় তাদেরই একজন হাবিবুল বাশারের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল চাপা পড়া সেইসব প্রশ্নের উত্তর।
শুরুতেই জানতে চাওয়া হয় লিটনকে বাদ দিয়ে শান্তকে কেন সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ একটা কারণ। আর লিটনের অনাগ্রহও তাকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর একটি কারণ। লিটন নিজেও চায় না নেতৃত্বের চাপ নিতে। সে একটু ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগ দিতে চায়।’
বিশ্বকাপ দলে বিকল্প ওপেনার না থাকার কারণও জানা গেল এই নির্বাচকের কথায়। তিনি জানালেন, ‘আমরা ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে মিরাজকে ভাবছি।’
বিকল্প ওপেনার হিসেবে বিশেষজ্ঞ কাউকে না নেওয়ায় একজন বাড়তি বোলার দলে রাখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে শেখ মেহেদি হাসান সুযোগ পেয়েছেন সে কারণে। পাশাপাশি জায়গা হয়েছে পাঁচ পেসারেরও। এর পেছনে বাশার ভারতের কন্ডিশনের কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারতে এখন আর্লি সিজন। উইকেট সতেজ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই পাঁচজন পেসার দরকার হবে।’
যেতে যেতে আরও বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক মুখোমুখি হলেন, এই দলটা বিশ্বকাপে কেমন করবে? এই প্রশ্নটা শুনেই ঘুরে দাঁড়ালেন হাবিবুল। উত্তরে মজা করে বললেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হবে এই দল।’ এরপর একটু গাম্ভীর্য ফিরিয়ে এনে যোগ করলেন, ‘আমি এদের অনেক দিন ধরে দেখছি। ওরা কয়টা ম্যাচ জিতবে জানি না। তবে বিশ্বকাপে প্রতিটি দলকে ভোগাবে, এটা জানি।’
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনে রদবদলের সুযোগ নেই সরকারের। তাই এর আগেই নির্বাচনী প্রশাসনে ধাপে ধাপে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রশাসনে চলছে পদোন্নতি ও রদবদল। ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রশাসন সাজাতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে বদলি-পদায়ন হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে বড় পদোন্নতি হয়েছে। নির্বাচনের আগে অবসরে যাওয়া কয়েকজন সচিবেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২০ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৮ জন ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিসিএসের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৫ সালে, ২৫তম ব্যাচ ২০০৬ সালে এবং ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৮ সালে।
জানা যায়, নির্বাচনের সময় ডিসিরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকেন। তাদের যে কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে বাতিলের ক্ষমতাও থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও থাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা ডিসির অধীনে। নির্বাচনের সময় সমন্বয়কারীর ভূমিকায়ও থাকেন ডিসিরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন তাদের দুটি ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে। আর সে সময় বিসিএস নিয়ে বেশ বিতর্ক ছিল। বিসিএসে ছিল নানা ধরনের তদবির। ২৪ ও ২৫তম ব্যাচ দুটি বিএনপির সময়ে নিয়োগ পেলেও ২৭তম ব্যাচ নিয়োগ পেয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। কারণ বিএনপির শেষ সময়ে ২৭তম ব্যাচের নিয়োগে বড় ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকায় তা বাতিল হয়। পরে ফের পরীক্ষা নিয়ে ২০০৮ সালে এ ব্যাচের নিয়োগ দেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল ২৪তম ব্যাচের নিয়োগ নিয়ে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২৪তম ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডিসির পদ থেকে তুলে আনা হতে পারে। নির্বাচনের সময় যারা ডিসির দায়িত্বে থাকবেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তাদের সবার ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে পরিবার ও নিকট আত্মীয়স্বজনদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো যাচাই করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে আর ডিসির পদে রাখা হবে না।
এ ছাড়া নির্বাচনে অন্যতম ভূমিকা পালন করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। বর্তমানে ৩৩, ৩৪ ও ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা রয়েছেন ইউএনও পদে, যারা আসন্ন নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এখন ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ইউএনওর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে; এ ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারের ২৯১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
জানতে চাইলে সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ইকরাম আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষা হয় যোগ্যতা, মেধা ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে। সেখানে ছাত্রজীবনে কে কোন পার্টি করেছিলেন, কোন দল ক্ষমতায় আছে তা বিবেচনা করা হয় না। বিসিএস কর্মকর্তাদের যে ফাউন্ডেশন ট্রেনিং হয়, তাতে তাকে একজন অফিসার হিসেবেই গড়ে তোলা হয়। এরপর এসিআর, সুপিরিয়রের মতামত, সুনাম, দক্ষতা, যোগ্যতার ভিত্তিতেই একজন কর্মকর্তাকে উচ্চতর পদে দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তবে সরকার যে দল পরিচালনা করে তাদের কিছু নীতিমালা ও উদ্দেশ্য থাকে। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সরকারের নেওয়া বৈধ ও জনকল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা। তিনি প্রলুব্ধ হবেন না, নিরপেক্ষ থেকে তার দায়িত্ব পালন করবেন। যদি কোনো নির্বাচনী দায়িত্বও দেওয়া হয়, সেটাও নিরপেক্ষভাবে তিনি পালন করবেন।’
গত মে মাসে অতিরিক্ত সচিব পদে ১১৪ জনের পদোন্নতি হয়। জুলাই মাসে পাঁচ বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার দেওয়া হয়েছে। গত জুলাই মাসেই বদলি ও নতুন মিলিয়ে ৩০টি জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উপসচিব পদমর্যাদার এই ডিসি পদে এবারও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আটজন পিএসকে পদায়ন দেওয়া হয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ২২১ কর্মকর্তা। এ পদোন্নতিতে মূল বিবেচনায় এসেছে ২২তম ব্যাচ। বর্তমানে যুগ্ম সচিবের স্থায়ী পদ ৫০২টি। এর বিপরীতে পদোন্নতি পাওয়ার পর যুগ্ম সচিবের সংখ্যা হলো ৯৪৬ জন। এর আগে সর্বশেষ গত বছর ২ নভেম্বর ১৭৫ জন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। আর গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২৭০ জন সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই অন্তত ১০ জন সচিবের স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার কথা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন আগামী ১৩ অক্টোবর অবসরে যেতে পারেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান ১৪ সেপ্টেম্বর, সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আবদুস সালামের ২৬ সেপ্টেম্বর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে আবদুস সালামের চাকরি এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ৯ অক্টোবর, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক ৩০ অক্টোবর, ইআরডি সচিব শরিফা খান ২৪ নভেম্বর, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহসানে এলাহী ২৫ নভেম্বর এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সিনিয়র সচিব কামাল হোসেন ২৯ নভেম্বর অবসরে যাবেন। ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোছাম্মৎ নাসিমা বেগম এবং ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম। এ ১০ জনের মধ্যে কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন।
গত কয়েক বছরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মুখ্য সচিব পদে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই স্বাভাবিক অবসরের মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। সর্বশেষ সাবেক চার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মধ্যে একমাত্র কবির বিন আনোয়ার ছাড়া বাকি তিনজনই স্বাভাবিক মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। তারা হলেন মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, মোহাম্মদ শফিউল আলম ও খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।