
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিচার বিভাগের সার্বিক উন্নয়নে তার সরকারের গৃহীত উদ্যোগের ফলে ন্যায়বিচার পাওয়ার ব্যাপারে জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘মানুষের বিশ্বাস এবং আস্থা আছে যে, তারা অবশ্যই ন্যায়বিচার পাবেন।’
সুপ্রিম কোর্টের প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত গতকাল শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট (এসসি) প্রাঙ্গণে ‘স্মৃতি চিরঞ্জীব’ স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধন করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর দেশের সর্বোচ্চ আদালতের কার্যক্রম উদ্বোধনের পর যেখান থেকে ভাষণ দিয়েছিলেন সেই স্থানটিকে সংরক্ষণের লক্ষ্যে স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মিত হয়েছে। ১৯৭১ সালে দেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া ৬৯ জন আইনজীবীর নাম স্মৃতিস্তম্ভে খোদাই করা আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত ইতিমধ্যে তার কার্যক্রমকে ডিজিটালাইজড করেছে এবং অনলাইনে মামলার কার্যতালিকা, রায় এবং মামলার বিবরণ রয়েছে। যার মাধ্যমে কেউ বিদেশে অবস্থান করেও তার মামলার বর্তমান পরিস্থিতি সহজেই জানতে পারবে।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট দেশে পরিণত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বিচার বিভাগকে স্মার্ট করার পথে বেশ এগিয়ে থাকায় তিনি সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষকে বিশেষ করে প্রধান বিচারপতিকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ভার্চুয়াল আদালত স্থাপন করেছে; যা উল্লেখযোগ্য হারে মামলার বিশাল জট কমাতে সহায়তা করে।
তিনি বলেন, সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে তারা দেশের সব আদালতে দরিদ্র ও অসচ্ছল বাদী-বিবাদীদের জন্য আইনি সহায়তা চালু করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি এই সমস্ত ব্যবস্থা ন্যায়বিচার পাওয়ার পথকে সহজ করেছে।’
একই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের ‘রেকর্ড ভবন’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি সুপ্রিম কোর্টের একটি প্রকাশনা ‘আমাদের বিচারালয়’-এর মোড়কও উন্মোচন করেন।
একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের যাত্রার ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান স্বাগত বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মমতাজউদ্দিন ফকির।
শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধাপরাধী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের হত্যার বিচার করার মাধ্যমে তার সরকার অপরাধীদের রেহাই দেওয়ার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসেছে।
সামরিক একনায়ক জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রেহাই দিতেই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে এবং তাদের বিদেশি মিশনে চাকরি দেয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতির পিতার শুরু করা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যও তিনি বন্ধ করেছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ন্যায়বিচার পেতে আমার ৩৫ বছর লেগেছে এবং ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর আমি এটি পেয়েছি।’ যারা এই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলে তাকে সহায়তা করে বিচার শুরুর পথ খুলে দেয় তিনি সেই বিচারক ও আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
সরকারপ্রধান বলেন, ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই তার সরকার সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সংবিধানের ১৫তম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ের জন্যও প্রধানমন্ত্রী বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ জানান, যার ফলে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ হয় এবং গণতন্ত্রের পথ হয় মসৃণ। সেনানিবাসের দখলকৃত ক্ষমতা এই রায়ের মাধ্যমে জনগণের হাতে তুলে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
তিনি বলেন, ‘এটি গণতন্ত্রকে শক্তিশালী এবং অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করেছে, ফলে এই রায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে স্বাধীনভাবে দেশের বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ ও প্রশাসন পরিচালনা অব্যাহত রাখতে কাজ করে যাচ্ছে।
‘স্মৃতি চিরঞ্জীব’ স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধন সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার কন্যা হিসেবে আমি সত্যিই খুব আনন্দিত যে সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে স্মৃতিসৌধ উদ্বোধন করতে সেখানে (এসসি প্রাঙ্গণ) উপস্থিত হতে পেরেছি। এটা আমার জন্য অনেক বড় অর্জন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন স্নাতকদের জন্য বিশ্বমানের শিক্ষা নিশ্চিত করতে তারা বাংলাদেশে একটি আইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করবেন। তার সরকার ইতিমধ্যে আইনজীবীদের অফিসের জন্য এসসি প্রাঙ্গণে ১৫তলা বার কাউন্সিল ভবন নির্মাণ করেছে। আইনজীবীদের সংখ্যা বাড়ার কারণে আরেকটি ভবন নির্মাণ করা হবে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, কভিড-১৯ মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং এটি বাংলাদেশকেও আঘাত করছে, এ কারণে কিছুটা সময় লাগবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকারের নিরন্তর প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘অর্থনীতির চাকা যেন কখনই থেমে না যায়, তা নিশ্চিত করতে আমাদের সবার সমর্থন দরকার।’
তিনি বলেন, গত সাড়ে ১৪ বছরে অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের মডেলে পরিণত হয়েছে।
আগামী দিনে বাংলাদেশে ন্যায়বিচার, গণতান্ত্রিক অধিকার, আর্থসামাজিক অধিকার ও সাংস্কৃতিক অধিকার প্রাধান্য পাবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ তার নিজস্ব গতিতে এগিয়ে যাবে। বাসস
সুন্দরবনে বাঘের জন্য দুই ধরনের বিপদ বেশি বাড়ছে। প্রথমত, চোরা শিকারির উৎপাত। আর অন্যটি হলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। পরিসংখ্যানে উঠে আসা এমন চিত্রের পাশাপাশি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল যে ক্রমেই মানুষের দখলে চলে যাচ্ছে, সেটাও বড় কারণ বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ এবং ভারতের ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারজুড়ে অবস্থিত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন, যার ৬০ শতাংশই বাংলাদেশে।
বন বিভাগের তথ্য বলছে, ২০০৪ সালে এই অঞ্চলে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৪০। তবে ২০১৮ সালে এ সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ১১৪; অর্থাৎ গত ১৪ বছরে বাঘের সংখ্যা কমেছে ৭৪ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সুন্দরবনের দীর্ঘমেয়াদি জলবায়ু পরিবর্তন ও মানুষের উৎপাত বাঘের জন্য বড় হুমকি। জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুসংস্থানের টেকসই পুনরুদ্ধারে নতুন সুনির্দিষ্ট পথনকশা নির্ধারণ না করলে সুন্দরবনের বাঘ বিলুপ্ত হতে পারে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ববাঘ দিবস। এবারের বাঘ দিসের প্রতিপাদ্য : বাঘ করি সংরক্ষণ, সমৃদ্ধ হবে সুন্দরবন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০০১ থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সুন্দরবনে বাঘ মারা গেছে কমপক্ষে ৪৬টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাঘ মারা গেছে মানুষের হাতে। অন্যদিক
প্রাকৃতিক কারণে মরেছে মাত্র ৮টি বাঘ। এ ছাড়া অবৈধভাবে গাছ কাটার ফলে ঝোপ-ঝাড় কমে যাচ্ছে। ঝোপ-ঝাড় কমে গেলে হরিণ শিকার করা বাঘের জন্য খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি ঢুকছে সুন্দরবনে। এতে করে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় মিঠা পানির অভাব হচ্ছে। ফলে বাঘের আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ওয়াটার্স কিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক ও সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য শরীফ জামিল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাঘের বিচরণ ছিল এমন জঙ্গলের অধিকাংশই এখন মানুষের দখলে। বাঘের একটা টেরিটরি থাকে। বাঘের যে খাদ্যাভ্যাস, থাকার জায়গা, এটা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে বাঘ লোকালয়ে আসে। এটা শুধু বাঘ না বনের অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। ফলে দেখা যায়, এটা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে এরা লোকালয়ে আসে এবং মানুষের সঙ্গে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হয়। এটা হচ্ছে সুন্দরবন ধ্বংসের বহিঃপ্রকাশ।
তিনি বলেন, ‘আমাদের টাইগার অ্যাকশন প্ল্যানে বাঘকে ডাবল করার কথা ছিল। সুন্দরবনকে সংরক্ষণ এবং উন্নয়ন না করলে বৃদ্ধি তো দূরে থাক, বাঘ আরও হারিয়ে যাবে। কাজেই সরকারের যে সুযোগগুলো আছে, সেটা তারা ব্যবহার করতে পারত। সরকার কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা করেছে, সেটা যথাযথভাবে হলে সেখানে মানুষের অংশগ্রহণ থাকত। তখন সরকারের ভুলগুলো শোধরানোর সুযোগ হতো। এখন তো স্পটতই বলা যায়, সুন্দরবন ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। আর বাঘ না থাকলে সুন্দরবন থাকবে না। একটা আরেকটার সঙ্গে সম্পর্কিত।’
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প পরিচালক আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, ‘সুন্দরবনে বাঘের আবাসস্থলে ৮০ হাজারের বেশি হরিণ রয়েছে। সুতরাং বাঘের খাদ্যের অভাব হওয়ার কোনো কারণ নেই। এ ছাড়া বাঘের আবাসস্থলের জায়গা ২৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫২ শতাংশ হয়েছে। তবে যেসব বাঘের মৃত্যু বা হত্যার তথ্য আমাদের কাছে আসে, সেটা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এসব বাঘের বয়স ১৫ বছরের বেশি। বাঘ বৃদ্ধ হয়ে গেলে শিকার করতে পারে না। তখন তারা দলছুট হয়ে যায়। এসব বাঘ খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে চলে আসে। তখন মানুষের সঙ্গে তাদের সংঘাত তৈরি হয়। এ ছাড়া চোরা শিকারিও পাঁচ বছরে অনেক কমে গেছে।’
২০১০ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে প্রথম বাঘ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ১৩টি দেশ নিজ নিজ দেশে বাঘের সংখ্যা ১২ বছরের মধ্যে দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নিয়েছিল। এর মধ্যে নেপাল বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করেছে। ভারত এবং ভুটানও দ্বিগুণের কাছাকাছি নিয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে কয়েক বছরে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে সামান্য। এ ছাড়া এই সংখ্যা নিয়েও রয়েছে বিতর্ক।
বন বিভাগের তথ্যে জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৩৫০টি। এরপর ১৯৮২ সালের জরিপে ৪২৫টি এবং এর দুই বছর পর ১৯৮৪ সালে সুন্দরবন দক্ষিণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ১১০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় জরিপ চালিয়ে ৪৩০ থেকে ৪৫০টি বাঘ থাকার কথা জানানো হয়। এরপর ১৯৯২ সালে ৩৫৯টি বাঘ থাকার তথ্য জানায় বন বিভাগ। পরের বছর ১৯৯৩ সালে সুন্দরবনের ৩৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্যাগমার্ক পদ্ধতিতে জরিপ চালিয়ে ধন বাহাদুর তামাং ৩৬২টি বাঘ রয়েছে বলে জানান। ২০০৪ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায় ৪৪০। ২০১৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে দাঁড়ায় ১০৬টি। হঠাৎ করে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ৪০০ থেকে ১০৬টিতে এসে দাঁড়ালে সারা বিশ্বে হইচই পড়ে যায়। সর্বশেষ ২০১৮ সালে বাঘশুমারিতে বাঘের সংখ্যা দাঁড়ায় ১১৪।
বিশ্লেষকদের মতে, ১১৪টি বাঘের মধ্যে যদি ২০টি প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী বাঘও থাকে, তাদের থেকে প্রতি বছর কমপক্ষে ২০-৪০টি বাঘ বাড়ার কথা। কিন্তু সেভাবে বাঘের সংখ্যা বাড়ছে না। বাঘ না বাড়ার কারণ চিহ্নিত করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ তাদের।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বাঘ বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খান বলেন, বাঘ বেড়েছে না কমেছে, এটা দেখতে হবে আপেক্ষিকভাবে। যেমন বাঘের বৃদ্ধির হার কত শতাংশ, মৃত্যুর হার কত শতাংশ। এখন বাঘ মারা যেতেই পারে, সেটা চোরা শিকারিদের হাতেই হোক কিংবা লোকালয়ের মানুষের হাতেই হোক। বাঘের জন্ম নেওয়ার হারটা অনেক বেশি, কিন্তু সেগুলো টিকে থাকতে পারছে কি না, সেটাও বড় বিষয়। বাঘের সংখ্যাটা নির্ভর করে শিকার প্রাণীর সংখ্যার ওপর। শিকার প্রাণীর সংখ্যা বেশি থাকলে, সেখানে অল্প জায়গার মধ্যেও দেখা যায় বাঘের সংখ্যা বাড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে সুন্দরবনে যথেষ্ট বাঘের খাবার রয়েছে। এখন চোরা শিকারটা বন্ধ করতে পারলেই বাঘের সংখ্যা এমনিতেই বাড়বে।
তিনি বলেন, বাঘ সংরক্ষণ নিয়ে বেশ কিছু প্রকল্প আছে। এসব প্রকল্পের কিছু সুফল থাকে। তবে প্রকল্পনির্ভর কাজ যেটা বাস্তবে দেখা যায় প্রকল্প চলাকালে যে অর্জন, প্রকল্প শেষ হয়ে গেলেই সেটা আর থাকে না। এ জন্য মৌলিক কিছু কাজ নিয়মিত ভিত্তিতে হওয়া উচিত। যেমন দুই বছর পরপর বাঘের সংখ্যা গণনা। দেখা গেল, যেকোনো একটা প্রকল্প এলে এই গণনা হয়। প্রকল্প শেষ হয়ে গেলে গণনাও স্থগিত হয়ে যায়।
বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, সুন্দরবনে বাঘ ও হরিণের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের (ফাঁদ) মাধ্যমে বাঘ গণনা কার্যক্রম চলছে। ইতিমধ্যে খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরেই পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের কাজ শুরু হবে। এরপর পর্যালোচনার মাধ্যমে দুই অংশে কত বাঘ রয়েছে, সে বিষয়ে তথ্য দেওয়া যাবে। এ জন্য আগামী বছরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
আজ ১০ মহররম। বিশ্বজুড়ে মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও শোকাবহ এক দিন আজ। হিজরি বর্ষের প্রথম মাস মহররমের ১০ তারিখ পবিত্র আশুরা হিসেবেও পরিচিত। মহান আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা পাওয়ার আশায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নফল রোজা, নামাজ, দান-খয়রাত ও জিকির-আসকারের মধ্য দিয়ে এ দিনটি পালন করবেন।
আরবি ‘আশারা’ শব্দের অর্থ ১০। আর আশুরা মানে দশম। আর মহররম অর্থ সম্মানিত। হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) এবং তার পরিবারের সদস্যরা কারবালার ময়দানে ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে শহীদ হন।
শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের মহান আদর্শ সমুন্নত রাখতে হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। কারবালার এই শোকাবহ ঘটনা অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং সত্য ও সুন্দরের পথে চলতে প্রেরণা জোগায়।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আজ শনিবার বাদ জোহর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘পবিত্র আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মো. আনিছুর রহমান সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্থার মহাপরিচালক ড. মহা. বশিরুল আলম। আলোচক থাকবেন উপপরিচালক ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন, পবিত্র আশুরার মহান শিক্ষা আমাদের সবার জীবনে প্রতিফলিত হোক। কারবালার শোকাবহ ঘটনার স্মৃতিতে ভাস্বর পবিত্র আশুরার শাশ্বত বাণী আমাদের অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে উদ্বুদ্ধ করে, প্রেরণা জোগায় সত্য ও সুন্দরের পথে চলার।
পবিত্র আশুরার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে জাতীয় জীবনে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘পবিত্র আশুরা অত্যন্ত শোকাবহ, তাৎপর্যপূর্ণ মহিমান্বিত একটি দিন। বিভিন্ন কারণে দিনটি বিশ্বের মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, পবিত্র ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ।’
পবিত্র আশুরা উদযাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত তাজিয়া মিছিলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার বিভিন্ন স্থানে তাজিয়া মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তাজিয়া মিছিলে দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি ইত্যাদি বহন এবং আঁতশবাজি ও পটকা ফোটানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ । এই আদেশ তাজিয়া মিছিল শুরু হতে শেষ সময় পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
তিরিশ বছর আগে এক শ্রাবণের সন্ধ্যা। এই শহরের সেই সময়ে নানান কারণে বিখ্যাত হয়ে ওঠা এক পানশালার ক্রমেই সংহত হতে থাকা ভিড়ের মধ্যে একা একটা টেবিলে বসে আছি। জানালার কাচে বৃষ্টির ছাট লেগে ছোট ছোট জটিল নকশা তৈরি করছে। হঠাৎ পানশালার নিয়মিত পরিবেশক জামান কাছে এসে নিচু গলায় বলে, ‘আজ তো ফ্লোর হাউজফুল, আপনার টেবিলে একজন গেস্ট দিই?’ সেদিন জামানের প্রস্তাবে রাজি না হলে ভুল করতাম বলে এখন মনে হয়। একটু পরেই সেই অজানা অতিথি এসে উপস্থিত। হাতে একটা বেঢপ আকৃতির ব্রিফকেস। পানশালার নিয়ন্ত্রিত অন্ধকারে তাকে প্রথমে চিনতে পারিনি। সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরা ভদ্রলোক ব্রিফকেসটা পাশের চেয়ারে রেখে ধপ করে বসে পড়লেন আমার সামনে। সেই স্বল্প আলোয় বোঝা যাচ্ছিল বৃষ্টিতে খানিক ভিজে গেছেন। দেয়ালঘড়ির পেন্ডুলামের মতো তার শরীরটা তখনো দুলছে। ভদ্রলোক আমার দিকে ডান হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘ভাই, আমি আব্দুল জব্বার, গান গাই। আপনাকে একটু বিরক্ত করলাম।’
সেদিন সেই বৃষ্টি-আচ্ছন্ন সন্ধ্যাটা চমকে উঠেছিল আমার চারপাশে। কিশোর বয়স থেকেই আমি আব্দুল জব্বারের গানের অনুরাগী। মনে আছে, বিস্ময় কাটিয়ে বলেছিলাম, ‘আপনাকে আমি চিনি। আপনি বসেন।’
তিনি হেসেছিলেন বেশ একটু শব্দ করে। আমি জামানকে ডেকে তিনি কী খেতে চান জানতে বলি। প্রথমে না বললেও পরে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি সেদিন বেশিক্ষণ বসেননি। প্রয়োজনীয় পানীয় চলে আসতেই আনন্দিত হয়ে যে কাজটা করেছিলেন তা আজও স্মৃতির ভেতরে উজ্জ্বল হয়ে রয়ে গেছে। তিনি ব্রিফকেসটা তুলে টেবিলে রেখে হারমোনিয়াম বাজানোর ভঙ্গি করে গান গেয়ে উঠেছিলেন নিচু গলায়, ‘এই আমি তো পুরনো আমি, একটি মৃতের ছায়া...’। বার কয়েক ওই একটা চরণই গুনগুন করেছিলেন সেদিন আব্দুল জব্বার। আমার মনে হয়েছিল এক অলৌকিক পরিস্থিতির মধ্যে বসে আছি। জানালার কাচে তখনো বৃষ্টি অচেনা নকশা তৈরি করে চলেছিল।
খুব দ্রুত প্রয়োজনীয় তরল গলায় ঢেলে তিনি আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে গিয়েছিলেন। পেছনে আজও আমার মনের মধ্যে তার ছায়াটা দেখতে পাই। আব্দুল জব্বারের সঙ্গে তার মৃত্যুর আগে আমার আর কখনো মুখোমুখি দেখা হয়নি।
সেই পানশালায় এমনি অনেক মানুষের ছায়া আজও স্মৃতির দরজায় আচ্ছন্ন হয়ে দাঁড়ায়। সেই শহরের বহু কবি, গল্পকার, সাংবাদিক, মাস্তান আর অবসরে যাওয়া গুটিকয় সরকারি আমলা নিয়মিত হাজির হতেন সেই বিখ্যাত পানশালায়। সাহিত্য, রাজনীতি, পরচর্চা, তখন সেই পানশালার টেবিলে টেবিলে ঘুরে আলোড়ন তুলত। গান, সিগারেটের ধোঁয়া আর এক বিশেষ সুগন্ধির ঘ্রাণ আচ্ছন্ন করে রাখত গোটা ঘরকে। মাঝে মাঝে ভাবি, পানশালার গদি আটা চেয়ারগুলোতে যদি আবার কোনো জাদুমন্ত্রে এসে বসত সেই সব মানুষ। কোনো বৃষ্টির রাতে কবি রফিক আজাদ আদর করে পিঠে চাপড় মেরে বলতেন তাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে। পানশালায় ঢোকার মুখে গল্পকার ফিউরি খন্দকার জানতে চাইতেন, ‘আজ কী খাবেন?’ যদি দেখতে পেতাম কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ বসে আছেন টেবিলে অনেকগুলো প্রজ¦ালিত মোমবাতি আর গ্লাস সাজিয়ে! সংগীতশিল্পী, সাংবাদিক সঞ্জীব চৌধুরী নিমগ্ন হয়ে তখনকার ল্যান্ডফোনে কারও সঙ্গে আলাপে ব্যস্ত, কাচের জানালায় একটা বড় টিকটিকি দেখে কবি শিকদার আমিনুল হক জানতে চাইছেন, টিকটিকিটাও কি কবিতা লেখে?
সেই সব নিভৃতি আর নিঃসরিত অনুভূতিপ্রবণ সময়ের বাইরে সেই পানশালার আবহ কখনো মারমুখীও হয়ে উঠত। পানশালায় ব্যবহৃত ভাষায় যাকে ‘ঝামেলা’ বলা হতো তখন। ক্ষিপ্ত আর দুর্ধর্ষ কিছু তরুণের আগমনে সচকিত হয়ে উঠত সেখানকার বাতাস। সংঘাত গ্লাস ভাঙার শব্দে তীব্র হয়ে বাজত পানশালার চার দেয়াল; কারও কারও কোমর থেকে ক্ষিপ্ত বাঘের মতো লাফিয়ে বের হতো আগ্নেয়াস্ত্র। কয়েকবার সেই তুলকালাম পরিস্থিতির ফাঁক গলে পালাতে হয়েছে পানশালার পেছনের সরু গলি দিয়ে। বহুদিন সেই তরুণদের সঙ্গেই আমি কোনো কোনো তীব্র গরমের অবসন্ন দুপুরে বন্ধ পানশালায় ঘুমিয়ে থেকেছি লম্বা সোফায় শুয়ে। তখন অবশ্য সব শান্ত; অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট।
একটা সময়ে সেই শহরে কারও কারও কাছে সন্ধ্যা অথবা দুপুরে যাওয়ার জায়গা হয়ে উঠেছিল সেই পানশালা। প্রায় শহরেই এমন একটা ঠিকানা তৈরি হয়ে যায়। শহুরে জীবনের বিমুখ প্রান্তরে সেই ঠিকানাটাই হয়ে উঠেছিল অনেকের কাছে এক ওয়েসিস। আজকাল ছায়াছবির মতো মনে হয় সেই দৃশ্যগুলো। কালের যাত্রায় হারিয়ে ফেলা সেই মানুষগুলোকেও মনে হয় কাল্পনিক। এ রকম সত্যি ঘটেছিল একদিন? এত গল্প, এত চিন্তার বিনিময়, এত অসংলগ্ন সংলাপ কি একদিন ছড়িয়ে পড়েছিল আমার চারপাশে! সেই পানশালার পাশ দিয়ে আজ বয়ে চলেছে উদভ্রান্ত এক শহরের জীবন। পাল্টে গেছে রাস্তার ভূগোল, উধাও হয়েছে চেনা গাছগুলোও। তবুও কখনো কোনো শ্রাবণ সন্ধ্যায় হাওয়া দিলে, বৃষ্টি এলে মনে পড়ে, আমার মনে পড়ে।
মেহেরপুরের গাংনীতে মামলা জটিলতায় চার বছর ধরে আটকে আছে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঘর উপহার প্রকল্পের ২৩টি ঘর হস্তান্তর। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার দীর্ঘদিন পরও বরাদ্দপ্রাপ্তরা ঘরগুলো বুঝে না পাওয়ায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান সামগ্রী।
ঘর বরাদ্দ পাওয়া পরিবারগুলোর বলছে, আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে পুনর্বাসনের জন্য নির্মিত ২০টি ঘর প্রশাসন তাদের বুঝিয়ে দেয়নি। আর গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ভাষ্য, আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সুরাহা না হলে তাদের কিছুই করার নেই।
সরেজমিনে গাংনীর মোহাম্মদপুর গ্রামে দেখা যায়, গ্রামের পশ্চিম পাশে মরা নদীর পাড়ে একটি মাঠের মধ্যে সারিবদ্ধভাবে নির্মিত ২০টি চারচালা নতুন ঘর অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। বুঝে না পেয়ে বরাদ্দপ্রাপ্তরা ঘরগুলোতে উঠতে না পারায় ঘরগুলোর জানালা, দরজা খোলা। ভেতর নতুন রঙ করা দেয়ালে নানান কিছু লেখা দেখে বোঝা যায়, ঘরগুলো এখন মাদকসেবীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন ঘরের পানিনিষ্কাশন এবং আবর্জনা পরিষ্কারকাজের জন্য লাগানো প্লাস্টিকের সব পাইপ চুরি হয়ে গেছে। গৃহহীনদের থাকার জন্য তৈরি এসব ঘরের অনেকগুলো এখন গবাদিপশুর আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে সরকারের ব্যয় হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টাকা করে। অথচ অব্যবহৃত পড়ে থাকা ঘরগুলো দেখভালের জন্য কোনো লোক নেই বলে জানায় গ্রামবাসী।
তারা আরও জানায়, চার বছর আগে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে গৃহ ও ভূমিহীন পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য গাংনীর মটমুড়া ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের ১ নম্বর খতিয়ানের ৫৯২০ নম্বর দাগে ২০টি এবং ষোলটাকা ইউনিয়নের কাষ্টদহ গ্রামের তিনটি ভূমিহীন ছিন্নমূল পরিবারের জন্য তিনটি ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। কাষ্টদহ গ্রামের তিনটি ঘর নির্মাণের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হওয়ার পর স্থানীয় প্রভাবশালী আবুল কাশেম আদালতে জমির মালিকানা দাবি করে মামলা করলে নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে মোহাম্মদপুর গ্রামের ২০টি ঘরের নির্মাণকাজ শেষ হলে প্রশাসন বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। ঠিক তখন বাধার মুখে পড়তে হয়। গ্রামের প্রভাবশালী বাসিন্দা সাবেক সেনাসদস্য আবুল হোসেন ১ নম্বর খতিয়ানের ৫৯২০ দাগের ওই জমি তার নিজের দাবি করে মামলা করলে আদালত স্থগিতাদেশ দেয়। এতে করে নির্মাণ শেষ হওয়ার পরও ২০টি ঘর গৃহহীনদের মাঝে হস্তান্তর প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।
বরাদ্দ পেয়েও ঘরে উঠতে না পারা মোহাম্মদপুর গ্রামের মেহেরুন নেছা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। জমিজমা নেই। ঘরগুলো পেলে ছেলিপেলি নিয়ে একটু শান্তিতে বাস করতি পারতাম।’
আরেক ভুক্তভোগী আলফাতুন খাতুন বলেন, ‘সরকার আমাদের জন্য ঘর করছে ঠিকই। এখন প্রশাসনের লোকজন বুঝে দিতে না পারায় ঘরে উঠতে পারছি না। ফলে ভাড়া ঘরের ভাড়া দিতে গিয়ে এখন মুখে ভাত উঠছে না। ঘরগুলো পড়ে থেকে এমনি এমনি নষ্ট হচ্ছে। অনেক কিছু চুরি হয়ে যাচ্ছে। ঘরগুলোতে এখন মাদকসেবীদের আড্ডা বসে প্রতিদিন।’
বরাদ্দ পেয়েও ঘরে উঠতে না পেরে হতাশা প্রকাশ করেন একই গ্রামের আরেক বাসিন্দা তকলিমা বেওয়া। তিনি বলেন, ‘ঘর নাকি সরকারি জায়গায় না করে মানুষের জায়গায় করছে। তাই জমি মালিকরা মামলা করছে। এ কারণে এখন চোখে ঘর দেখলেও সেখানে যাতি পারছি না।’
মামলার জটিলতা নিরসন করে দ্রুত বরাদ্দপ্রাপ্তদের মধ্যে ঘর হস্তান্তরের দাবি জানান মোহাম্মদপুর গ্রামের বাসিন্দা সাব্বির সারোয়ার। তিনি বলেন, ‘ঘর নির্মাণ শেষ হলো। ঠিক যখন বিদ্যুতের সংযোগ দিতে লোক এলো ওই দিন বাধা এলো। তখন জানা গেল জমি সরকারের না, পাবলিকের। জমির মালিকানা দাবি করে মামলা করায় এখন ঘরে যেতে পারছে না কেউই। আমরা দ্রুত এর প্রতিকার চাই।’
মামলা করার কারণ জানতে চাইলে সাবেক সেনাসদস্য আবুল হোসেন বলেন, ‘আমার বাপ-দাদার পৈতৃক সম্পত্তি ওটা। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফসল ফলিয়েছি। লকডাউনের সময় জোর করে আমার জায়গা দখল করে ঘর তৈরি করার চেষ্টা করে। পরে আমরা ওই ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ লাগাতে দিইনি। পরে মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করি। আদালত দলিলপত্র দেখে ২০টি ঘরের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে।’
আরেক মামলার বাদী কাষ্টদাহ গ্রামের আবুল কাসেম বলেন, ‘জমির একাংশের মালিক আমি। আমার জমিতে অবৈধভাবে ঘর নির্মাণ করায় আদালতে মামলা করি। আদালত তিনটি ঘরের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে। সরকার অর্পিত সম্পত্তিতে ঘর না করে মানুষের সম্পত্তিতে ঘর করলে মানুষ কি ছেড়ে দেবে? স্থানীয় প্রশাসনের ভুলের কারণে গৃহহীনদের জন্য নির্মিত সরকারি ঘর আজ নির্মাণ শেষ হওয়ার পরও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গাংনীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিয়া সিদ্দিকা সেতু বলেন, ‘আমরা জমির সপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আদালতে জমা দিয়েছি। জমির মালিকানা নিয়ে স্থানীয় দুজন আদালতে মামলা করেছেন। তাই গৃহ হস্তান্তর প্রক্রিয়া আটকে গেছে। খুব শিগগির আদালতের রায় হওয়ার কথা রয়েছে। আদালতে বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ২৩টি ঘর হস্তান্তর নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কিছুই করার ক্ষমতা নেই।’
চলতি বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, পাসের হার এবং জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক থেকে ছাত্রীরা এগিয়ে। পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৮০ দশমিক ৩৯। এর মধ্যে ছাত্রীদের পাসের হার ৮১ দশমিক ৮৮। আর ছাত্রদের পাসের হার ৭৮ দশমিক ৮৭। পরীক্ষায় মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮। এর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ৯৮ হাজার ৬১৪। জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রের সংখ্যা ৮৪ হাজার ৯৬৪, অর্থাৎ ছাত্রদের চেয়ে ১৩ হাজার ৬৫০ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
গতকাল শুক্রবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। বেলা ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফলের
বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অনলাইনে একযোগে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। আর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল প্রকাশের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
এবারের পরীক্ষায় মোট ২০ লাখ ৪১ হাজার ৪৫০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে ছাত্রী ছিল ১০ লাখ ৩১ হাজার ৬৪৭ এবং ছাত্র ১০ লাখ ৯ হাজার ৮০৩ জন। মোট পাস করেছে ১৬ লাখ ৪১ হাজার ১৪০ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ৮ লাখ ৪৪ হাজার ৭৩৬ এবং ছাত্র ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৪০৪ জন; অর্থাৎ ৪৮ হাজার ৩৩২ জন ছাত্রী বেশি।
গত বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করে ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২। ছয় বছর ধরেই মাধ্যমিকে পাসের হারের দিক থেকে ছাত্রীরা এগিয়ে। ২০২২ সালে ৮৭ দশমিক ৭১ শতাংশ ছাত্রী মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করে, যেখানে ছাত্রদের পাসের হার ছিল ৮৭ দশমিক ১৬ শতাংশ।
গতবার জিপিএ-৫ পাওয়া ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১ লাখ ২১ জন ১৫৬ ছাত্র; আর ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪৬ জন ছিল ছাত্রী।
৪৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করেনি : চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ৪৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেনি। গত বছর এমন প্রতিষ্ঠান ছিল ৫০টি। গতকাল সংবাদ সম্মেলন এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, দেখা গেছে শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশেই হয়তো পরীক্ষা দিয়েছে দুজন বা তিনজন। এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই আবার নন-এমপিওভুক্ত। এমপিওভুক্ত হওয়ার জন্য কাম্য শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থী থাকতে হয়। তারপরও এসব প্রতিষ্ঠান থেকে একজন বা পাঁচজন পরীক্ষা দিক, তারা যেন পাস করার জায়গায় যেতে পারে, সেটা নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সহযোগিতা করার প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের কারণে চলমান রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে নতুন করে উত্তাপ তৈরি হয়েছে। দুই দলের এ পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের মূল টার্গেট ঢাকা দখলে নেওয়া। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসা নিতে বিদেশ পাঠাতে রবিবার বিএনপি ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে। পাল্টা জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও একই পথে হেঁটেছে। বিএনপিকে ‘আগুন সন্ত্রাস, অপরাজনীতি ও নাশকতার রাজনীতি’ ছাড়ার জন্য সোমবার ৩৬ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এরপর পাল্টা ৩৬ ঘণ্টার হুঁশিয়ারি এসেছে বিএনপির কাছ থেকে।
তার আগে গত শনিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে আবেদন করলে অনুমতির বিষয়টি দেখা যাবে। তবে তার কাছে এরকম কোনো কাগজপত্র আসেনি। ওইদিনই খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার বলেছেন, সরকারের মনোভাব ইতিবাচক হলে তারা আবারও আবেদন করবেন।
পরদিন রবিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আলটিমেটাম দেন। ওইদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে বিএনপি বলছে, সরকার চাইলে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে পারে।
দুই দলের রাজনীতি ও ঘোষিত আলটিমেটাম মাঠের রাজনীতিতে কোনো পরিবর্তন আনবে কি না, সে সম্পর্কে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। বিএনপির আলটিমেটামের ফল কী হবে আর আওয়ামী লীগেরও দীর্ঘ ৩৬ দিনের আলটিমেটাম কেন এ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভেতর বেশ কৌতূহল দেখা দিয়েছে।
দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত রাজধানী ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এমন পাল্টাপাল্টি আলটিমেটাম। ঢাকায় বিএনপির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার কৌশলের অংশ হিসেবেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইস্যুতে দলটি আলটিমেটাম দিয়েছে। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতেই তার পাল্টা জবাব দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
দুই দলের ওই নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির রাজনীতির মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা। ঢাকার রাজনীতি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে বের করে আনতে না পারলে রাজনীতিতে জুতসই অবস্থান সৃষ্টি করতে পারবে না বিএনপি।
সারা দেশের নিয়ন্ত্রণে রাখা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেয়ে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রাজনৈতিক জয়-পরাজয় নির্ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিএনপির ওই শীর্ষসারির নেতারা। তাই বিএনপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসাকে ইস্যু করে নেতাকর্মীদের ঢাকায় ডেকে পাঠানোর কৌশল গ্রহণ করেছে। পর্যাপ্ত নেতাকর্মী ঢাকায় ঢুকে গেলে অবস্থা বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তাই ইস্যু খালেদার চিকিৎসা, কিন্তু লক্ষ্য ঢাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ৩৬ দিনের আলটিমেটামের পেছনে রয়েছে নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার আগপর্যন্ত ঢাকায় নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখা। সেই সঙ্গে নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে নির্দেশনা দিয়ে রাখা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে ততই ষড়যন্ত্রের নীল নকশা আঁকছে।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের শান্তি যেন বিঘিœত না হয়, সেজন্যই আমরা বিএনপির কর্মসূচির দিন মাঠে থাকি। বিএনপিকে জনগণ বিশ্বাস করে না। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে সত্যিই নিতে চাইলে আলটিমেটাম কেন দেবে বিএনপি? আইনি জটিলতা নিরসন করে বিদেশ নেওয়ার চেষ্টা করবে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘বিএনপি সন্ত্রাস-সহিংসতানির্ভর রাজনীতি করে, বিশ্বাস করে। তারা পাকিস্তানের প্রেতাত্মা।’ তিনি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করাতে চাইলে কেন বিএনপি আইনি প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে না? তার কিছু হলে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দায় নিতে হবে।’
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দুই দলের ঘোষিত আলটিমেটামকে কথার বাকযুদ্ধ হিসেবে নিয়েছেন। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এগুলো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের অবস্থান ধরে নেওয়া যায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে তাদের কোনো গা নেই। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিভিন্ন বক্তব্যে সেটাই স্পষ্ট করেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে হলে আইনগতভাবে যেতে হবে। নির্বাহী কোনো সিদ্ধান্তে এ সুযোগ দেওয়া হবে না। ফলে আলটিমেটাম মূলত নিষ্ফল হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দাবি আদায় করার জন্য জনগণ থেকে দাবি উঠতে হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণকে রাস্তায় নামাতে পারবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘এখন যেসব বক্তব্য এগুলো মঞ্চের বাকযুদ্ধ।’
বিএনপির আলটিমেটাম নিয়ে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারব না। আমি (গতকাল মঙ্গলবার) সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষ করে এসেছি।’ আলটিমেটামের পেছনে ঢাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় তো আমরা সভা-সমাবেশ করছিই।’
জানতে চাইলে বিএনপির আরেক নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আলটিমেটাম সম্পর্কে ক্লিয়ার কিছু জানি না।’
বিএনপিকে ‘অপরাজনীতি’ ছাড়তে ৩৬ দিন সময় বেঁধে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ সময়ের মধ্যে ‘সঠিক পথে’ না এলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির ‘অপরাজনীতির কালো হাত’ গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে আলটিমেটাম দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এটি বিএনপির জন্য শেষ বার্তা।’ গত সোমবার রাজধানীর উত্তরায় এবং যাত্রাবাড়ীতে পৃথক সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। উত্তরার সমাবেশে ওবায়দুল কাদের এ আলটিমেটাম দেন।
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপি দুই সপ্তাহের কর্মসূচি নিয়ে এখন রাজপথে আছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগও ২১ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ঢাকায় গত সোমবার দুটি সমাবেশ হয়।
এর আগে থেকেই ঢাকায় বিএনপির কর্মসূচির দিন শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীনরা বিএনপির সভা-সমাবেশের বিষয়ে নমনীয়তা প্রদর্শন করলেও মাঠের নিয়ন্ত্রণ ছাড়েনি।
ভারতের বিপক্ষেই খেলেছিলেন বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। এবার বিশ্বকাপটাই ভারতে, যে ধর্মশালা দিয়ে শুরু হবে বিশ্বকাপ অভিযান, সেখানেই আছে বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির কৃতিত্ব। হিমালয়ের কোলে, ছবির মতো সুন্দর সেই মাঠে আবারও খেলবে বাংলাদেশ, কিন্তু খেলবেন না তামিম ইকবাল।
অনেক নাটকীয়তার পর অবশেষে বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বরাবরের মতো সংবাদ সম্মেলনে নিরাবেগ কণ্ঠে একের পর এক নাম পড়ে শোনাননি প্রধান নির্বাচক, গভীর রাতে কোনো ইমেইলেও আসেনি খেলোয়াড় তালিকা। বিশ্বকাপগামী ১৫ ক্রিকেটারের প্রত্যেকের হাতে হাতে সুন্দর করে বাক্সবন্দি বিশ্বকাপ জার্সি তুলে দেওয়ার ভিডিও নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে ২০২৩ বিশ্বকাপের জন্য নির্বাচিতদের পরিচিত করেছে বিসিবি। এজন্য বিসিবির সংশ্লিষ্টরা বাহবা পেতেই পারেন, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড যেমনটা হৃদয় জিতে নিয়েছে ক্রিকেটারদের পরিবারের আপনজনদের দিয়ে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করিয়ে।
কারা থাকছেন আর কারা থাকছেন না, তা নিয়ে খুব বড় কোনো চমক ছিল না বিশ্বকাপ দলে। সবাই শুধু একটাই কোটি টাকার প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলেন। তামিম ইকবাল শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ দলে আছেন নাকি নেই। অবসর, প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে প্রত্যাবর্তন, ব্যক্তিগত কাজে দুবাই ভ্রমণ, ইংল্যান্ডে ইনজেকশন, দেশে অনুশীলন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এক ইনিংসে ব্যাট করে ৪৪ রান এবং পরে নিজেকে আবারও পুরোপুরি ফিট নয় বলে পরের ম্যাচে বিশ্রাম। স্বভাবতই এই তামিম ইকবালকে বিশ্বকাপে দেখতে চাইবেন না কোনো কোচ এবং অধিনায়ক। সোমবার গভীর রাতে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসায় সাকিবের ছুটে যাওয়া এবং সিডনি থেকে নেমে তড়িঘড়ি করে বোর্ড সভাপতির বাসায় কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের পা রাখাই প্রমাণ করে, বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করতেই তাদের এ তৎপরতা।
তামিমের মতো ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা সহজ নয়। নিঃসন্দেহে দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান, ওয়ানডেতে ১৪টা সেঞ্চুরি। হুট করে অবসর নিলে যাকে ফিরিয়ে আনেন স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী। সাক্ষাৎকারেও তামিম বলেছেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগের কথাও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেশাদারির কাছে হার মেনেছে আবেগ, যুক্তির কাছে হেরে গেছে অতীত। তামিম নামটা আছে বিশ্বকাপ দলে, তবে পদবিটা ইকবাল নয়। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তানজিদ হাসান তামিমকে নিয়েই বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান, যার বয়স আর তামিম ইকবালের ক্যারিয়ারের বয়স প্রায় কাছাকাছি।
২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিবের পারফরম্যান্স ছিল অতিমানবীয়। ৬০৬ রান আর ১১ উইকেট। তবু দল হলো অষ্টম। গোটা আসর চোটজর্জর অধিনায়ককে বইল দল। প্রতিটি সকাল শুরু হতো এক অনিশ্চয়তা নিয়ে, খেলতে পারবেন তো মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা? শুরুর দিকে নতুন বলে কোনো উইকেট ফেলতে পারেনি বাংলাদেশ, প্রতিপক্ষ গড়েছে রানের পাহাড়। সেই অভিজ্ঞতা কী করে ভুলবেন সাকিব। অস্ট্রেলিয়ান জেমি সিডন্স আর অধিনায়ক সাকিব এজন্যই ২০১১ সালের বিশ্বকাপে দলে রাখেননি চোটগ্রস্ত মাশরাফীকে। হাথুরুসিংহে জাতীয়তায় শ্রীলঙ্কান হলেও অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে থাকতে হয়ে গেছেন তাদের মতোই পেশাদার। তাই তো কঠিন সিদ্ধান্তটা নেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন।
কাল বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডের পর সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন জাতীয় নির্বাচকরা। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন এবং দুই নির্বাচক হাবিবুল বাশার ও আবদুর রাজ্জাক। তামিমকে বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে মিনহাজুল শুনিয়েছেন মুখস্থ কথাই, ‘আপনারা তো এবারের বিশ্বকাপের দলটা এরই মধ্যে পেয়ে গেছেন। তামিম ইকবালের তো অনেক দিন ধরেই ইনজুরি নিয়ে চিন্তা আছে। নিউজিল্যান্ড সিরিজের পর... সবকিছু বিবেচনা করেই, সবাই আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া। বিশ্বকাপে অনেক দিনের ব্যাপার। অনেক ম্যাচ আছে।’
তামিমের চোটটা তো নতুন নয়। অনেক দিন ধরেই এ চোট নিয়ে তিনি ভুগছেন, নিজের ইচ্ছামতো ভারতের বিপক্ষে সিরিজ, আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ এসব থেকে নিজেকে সরিয়েও রেখেছিলেন। চিকিৎসাও করিয়ে আনা হয়েছে। সবকিছু জেনেশুনে কেন তাকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে সুযোগ দেওয়া এবং ম্যাচ খেলিয়ে বাদ দেওয়া এ প্রসঙ্গে মিনহাজুলের উত্তর, ‘দেখুন, কিছু কিছু ইনজুরি আছে আপনি ঝুঁকি নিতে পারেন না। টিম ম্যানেজমেন্ট কিন্তু বেকায়দায় পড়বে। আপনি দেখুন, নিউজিল্যান্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলার পর দ্বিতীয় ম্যাচে... প্রথম ম্যাচ খেলেছে, দ্বিতীয় ম্যাচটা খেলেছে... এরপর কিন্তু শেষ ম্যাচে বিশ্রাম দিতে হয়েছে।’
‘তামিম অন্যতম সেরা। কিন্তু চোটের দুশ্চিন্তা থাকলে নিজেকে মেলে ধরা কঠিন। মেডিকেলের সঙ্গে আলোচনা করেছি, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। এটা আগেই বলেছি, এখন দল ঘোষণা করা হয়েছে’বলছিলেন প্রধান নির্বাচক। বিসিবি সভাপতি বা সাকিব ও কোচের সঙ্গে আলাপ হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কী আলাপ হয়েছে সেটা তো এখানে প্রকাশ করব না।’
১০ দলের বিশ্বকাপে দশম দল হিসেবে বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। কেন এত দেরি, ফ্লাইটে ওঠার ২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে বিশ্বকাপের দল দেওয়া হলো কেন এ নিয়ে হাবিবুল বাশারের ব্যাখ্যা, ‘আমাদের সঙ্গে কী হয়েছে সেটা তো আমাদের সঙ্গের ব্যাপার। দল নির্বাচন করতে যখন বসি... খেলোয়াড় হিসেবে তামিমের... আমরা সুস্থ-সবল তামিমকে পেতে... এটা নিয়ে আমাদের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত ভাবতে হয়েছে। তাই দেরি হয়েছে।’
তামিমের বাদ পড়ার ডামাডোলে হারিয়ে গেছে মাহমুদউল্লাহর ফেরাটাও। সেই ইংল্যান্ড সিরিজের পর বিশ্রামের মোড়কে বাদ পড়েছিলেন। তার বদলে অনেক বিকল্প খুঁজেও শেষ পর্যন্ত ঘুরেফিরে আবার তার কাছেই ফিরলেন নির্বাচকরা। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ৪৯ আর ২১ রানের দুটো ইনিংসেই হয়ে গেছে বিশ্বকাপের টিকিট। প্রধান নির্বাচক বললেন, ‘আগেই বলেছি, বিশ্বকাপের আগে যেকোনো খেলোয়াড়কে যেকোনো সিরিজে দেখব। ও পরিকল্পনাতেই ছিল। নিউজিল্যান্ড সিরিজে দেখেছি।’
২০১৫ সালের বিশ্বকাপের আগে, মাত্র দুই ম্যাচ দেখে সৌম্য সরকারকে দলে নিয়েছিলেন হাথুরুসিংহে। তানজিদ তামিম আর তানজিম সাকিব নিজেদের ভাগ্যবান ভাবতে পারেন। যথাক্রমে মাত্র পাঁচ আর দুই ম্যাচ খেলে তারা বিশ্বকাপ যাত্রার সঙ্গী হয়েছেন। এমন নয় যে, এ স্বল্প সময়ে দারুণ কিছু করে দেখিয়েছেন, প্রধান কারণ বিকল্পের অভাব।
শুধু তামিম ইকবালই নয়, দলের লজিস্টিক ম্যানেজারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তার বড় ভাই ও সাবেক খেলোয়াড় নাফিস ইকবালকেও। তামিমের অবসর-কা-ে তিনি বিসিবি সভাপতির মেসেজের জবাব দেননি, যা পাপন নিজে বলেছেন গণমাধ্যমে। হয়তো তারই প্রতিশোধ, সেই সঙ্গে ড্রেসিংরুমের সঙ্গে তামিমের সব সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া।
অবসর ভেঙে ফিরেছিলেন তামিম, দুটি ম্যাচ খেললেন। কিন্তু যেভাবে বাদ পড়লেন, তাতে মনে হতে পারে অবসরের সিদ্ধান্তটাই ছিল সঠিক। বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগামীতেও তামিমের দলে ফেরাটা বোধহয় অনিশ্চিতই হয়ে গেল।
তামিম প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে দলটা কেমন হয়েছে দেখা যাক। পাঁচ পেসার, দুই অফ স্পিনার, দুই বাঁহাতি স্পিনার মিলিয়ে বোলিং আক্রমণটা নেহায়েত খারাপ নয়। লিটন দাসের সঙ্গে তানজিদ তামিম অথবা মেকশিফট ওপেনার মিরাজ। সহঅধিনায়কের পদ থেকে বাদ পড়েছেন লিটন, সেটা করা হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তকে। সাকিব, মুশফিক, তাওহীদ হৃদয়দের নিয়ে মিডল অর্ডারের পর ফিনিশার রোলে মাহমুদউল্লাহ। এ নিয়েই ধর্মশালায় আফগানদের বিপক্ষে লড়াইয়ের শুরু। প্রত্যাশা অনেক বড়, প্রস্তুতি গোলমেলে। ভরসা একটাই, শুরুর আগে পরিস্থিতি এমন গোলমেলে হলেই কেন যেন ভালো করে বাংলাদেশ!
বিশ্বকাপ দল : সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন (সহঅধিনায়ক), তাওহীদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, শরীফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, মেহেদি হাসান, তানজিদ হাসান, তানজিম হাসান ও মাহমুদউল্লাহ।
তামিম ইকবাল দলে না থাকাতে যেন অনেকেরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে! আবার বিশ্বকাপের দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অন্তর্ভুক্তিতেও অনেকের চোখ কপালে! দল ঘোষণার পর যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা এলেন সংবাদ সম্মেলনে, তখন আলোচনায় শুধু ছিলেন এই দুজনেই। তাদের এই বিরহ বেদনায় চাপা পড়ে যায় অনেক প্রশ্ন। লিটন দাসকে বাদ দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত কেন সহ-অধিনায়ক! বাড়তি কোনো ওপেনার ছাড়া কিংবা পাঁচ পেসারকে নিয়ে কেন দল গড়া?
প্রায় মিনিট পনেরোর সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে এসেছে একই প্রশ্ন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও ঘুরেফিরে বন্দী ছিলেন একই কথার বৃত্তে। প্রশ্নোত্তর শেষে বেরিয়ে যান তিন নির্বাচক। যেতে যেতে কথা হয় তাদেরই একজন হাবিবুল বাশারের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল চাপা পড়া সেইসব প্রশ্নের উত্তর।
শুরুতেই জানতে চাওয়া হয় লিটনকে বাদ দিয়ে শান্তকে কেন সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ একটা কারণ। আর লিটনের অনাগ্রহও তাকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর একটি কারণ। লিটন নিজেও চায় না নেতৃত্বের চাপ নিতে। সে একটু ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগ দিতে চায়।’
বিশ্বকাপ দলে বিকল্প ওপেনার না থাকার কারণও জানা গেল এই নির্বাচকের কথায়। তিনি জানালেন, ‘আমরা ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে মিরাজকে ভাবছি।’
বিকল্প ওপেনার হিসেবে বিশেষজ্ঞ কাউকে না নেওয়ায় একজন বাড়তি বোলার দলে রাখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে শেখ মেহেদি হাসান সুযোগ পেয়েছেন সে কারণে। পাশাপাশি জায়গা হয়েছে পাঁচ পেসারেরও। এর পেছনে বাশার ভারতের কন্ডিশনের কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারতে এখন আর্লি সিজন। উইকেট সতেজ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই পাঁচজন পেসার দরকার হবে।’
যেতে যেতে আরও বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক মুখোমুখি হলেন, এই দলটা বিশ্বকাপে কেমন করবে? এই প্রশ্নটা শুনেই ঘুরে দাঁড়ালেন হাবিবুল। উত্তরে মজা করে বললেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হবে এই দল।’ এরপর একটু গাম্ভীর্য ফিরিয়ে এনে যোগ করলেন, ‘আমি এদের অনেক দিন ধরে দেখছি। ওরা কয়টা ম্যাচ জিতবে জানি না। তবে বিশ্বকাপে প্রতিটি দলকে ভোগাবে, এটা জানি।’
স্থায়ীভাবে ঢাকা বসবাসের আমার ষাট বছর পূর্ণ হলো। এই ষাট বছরে প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকা, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ঢাকার উত্থান-পতন, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, আন্দোলন-অভ্যুত্থানসহ অনেক কিছু দেখার সুযোগ পেয়েছি। যখন ঢাকায় প্রথম এসেছিলাম তখন মনে হতো ঢাকা একটি বড় গ্রাম। এখানে গ্রামের মতোই বৃষ্টি হয়, অমাবস্যা পূর্ণিমা হয়, শীত-গ্রীষ্ম হয়। ভারী থেকে লঘু বর্ষণ হয়। ঢাকার চারদিক বর্ষার পানিতে প্লাবিত হয়। সদরঘাট, চকবাজার, সোয়ারীঘাট, ইসলামপুর এসব ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের এলাকা। গুলিস্তানকে ঘিরে বিপণি কেন্দ্রগুলো বিকশিত হতে শুরু করে। মতিঝিল গড়ে উঠছে। ঢাকার উন্নয়নের জন্য ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট সংক্ষেপে (ডিআইটি)’র কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তখনো ধোলাইখাল অতিক্রম করে কোর্টকাচারি, জগন্নাথ কলেজ, সদরঘাটের দিকে যেতে হতো। ঢাকা শহরের আবর্জনা নিষ্কাশনের জন্য আর্মেনিয়ানদের উদ্যোগে ধোলাইখাল চালু হয়েছিল।
ঢাকা শহরের ১৬১০ সালের আগে ও পরের মানচিত্র দেখলে বোঝা যায় যে শহরটা কী রকম খাল-বিল-নালা দিয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। যে কারণে শহরটি কখনোই ডুবে যাওয়ার কোনো ইতিহাস পাওয়া যায় না। সেই সময়ে একমাত্র যাতায়াতের উপায় ছিল নৌকা। এর মধ্যেই ১৬১০ সালে ইসলাম খাঁ রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তর করেন। বহুকষ্টে ঘোড়া, হাতি এবং পদাতিক বাহিনীকে রাজমহল থেকে বাংলায় আসতে হয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনক পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধীনে ঢাকার পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। স্থানিক বিবেচনাকে অগ্রাহ্য করে যখন বিদেশিরা নানা ধরনের শহর উন্নয়নের উদ্যোগ নেয় তার পরিণতি যে কত ভয়াবহ হয় তার প্রমাণ ঢাকা শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। ধোলাইখাল বন্ধ করে সেখানে মাটির নিচে বড় বড় পাইপ বসিয়ে নারিন্দাতে একটি পাম্প মেশিন বসিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়।
বিদেশিদের পরামর্শে এই ব্যবস্থার ফলে ঢাকায় গুরুতরভাবে পানি নিষ্কাশনের সংকট দেখা দেয়। একই পদ্ধতিতে বিভিন্ন জায়গায় পাইপ বসানো হয় এবং পানি নিষ্কাশনের গুরুতর সংকট দেখা দেয়। এরপর ঢাকা রাজধানী হলো, বিপুল পরিমাণ মানুষের আগমন ঘটল এই শহরে। বিভিন্ন জলাভূমি, ফাঁকা জায়গা যে যেখানে পারে বাড়িঘর তৈরি করতে শুরু করল। সরকারও প্রথমে ডিআইটি এবং পরে রাজউকের মাধ্যমে নানা জায়গায় আবাসনের ব্যবস্থা করতে শুরু করল। সেই ব্যবস্থা শুরু করতে গিয়ে ধানম-ি, গুলশান, বনানী, উত্তরা এসব জায়গায়ও জলাভূমিগুলো ভরাট করে শহরের আবাসিক এলাকা বৃদ্ধির কার্যক্রম শুরু করা হয়। এখন বৃষ্টিপাত মানেই সর্বত্রই জলাবদ্ধতা এবং মানুষের অন্তহীন দুর্ভোগ।
আশির দশকের পর থেকে গত চল্লিশ বছরে শহরটি কংক্রিটের জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। সেই ষাটের দশকের গাছপালাগুলো নেই, ফাঁকা জায়গা নেই, বৈচিত্র্যহীন অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে শহরটি কিছু ম্যাচ বাক্সের মতো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা একটা আবর্জনার স্তূপ মনে হয়। শহরটায় এত পরিমাণ গাড়ি, বিশেষ করে প্রাইভেট গাড়ি একেবারেই পরিকল্পনাহীন নগরীতে চেপে বসেছে। মাত্র গত দশ পনের বছরে কিছু ফ্লাইওভার এবং সম্প্রতি মেট্রোরেলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বটে কিন্তু সেগুলোর অধিকাংশ পরিকল্পনাহীন হওয়ায় যানজট কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এর মধ্যে সেবা সংস্থাসমূহ একজন আরেকজনের প্রতি দোষ চাপিয়ে আপাতত নিজেদের গা বাঁচিয়ে চলছে।
আমার এই ষাট বছরের ঢাকা বসবাসের ইতিহাসে গত তিনদিন আগে যখন আমি মগবাজার থেকে ধানম-ির বাসায় এসেছি তখন সময় লেগেছে চার ঘণ্টা! এই চার ঘণ্টার মধ্যে সাড়ে তিন ঘণ্টাই ছিলাম আমি পানির মধ্যে। কিন্তু চলাচলের কোনো উপায় ছিল না। এক জায়গাতেই এক থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকেছি। সামনে পেছনে গাড়ির চাপ, কোনো কোনো গাড়ি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। তার সামনে বা পেছনে যাওয়ারও কোনো উপায় ছিল না। শহরে কোনো ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায়নি। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোনো ধরনের সরকারি উদ্যোগ দেখা যায়নি। খবরে প্রায়ই দেখে থাকি কোনো দেশে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের বাহিনীগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে মানুষের সাহায্যে সরকারের প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে। যা ভেবেছিলাম তাই, এই দুর্যোগের মধ্যে কিছু প্রাণ যাবে, কিছু লোক আহত হবে এবং সত্যিই দেখলাম যে ওই রাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের তিনজনসহ চারজন মারা গেছে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত এক শিশুকে নিয়ে উদ্ধারকারীরা বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসার জন্য গিয়েছে কিন্তু চিকিৎসা পায়নি। এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয় না এই কারণে যে, একবার আমার ছেলে স্কুল থেকে ফেরার সময়ে বেবিট্যাক্সিতে দুর্ঘটনায় পড়ে তার শরীর রক্তাক্ত হয়। সেই সময়ে তার কাছে পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না, চিকিৎসার জন্য কাছের একটি চিকিৎসাকেন্দ্রে গেলে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। রক্তাক্ত অবস্থাতেই সে ঘরে ফিরে আসে।
আমার কাছে প্রশ্নটি অন্য জায়গায়, আমরা নিয়তিতে বিশ্বাস করতে শুরু করেছি। দ্রব্যমূল্য বাড়বে, বেকারত্বের সৃষ্টি হবে, মানুষ চিকিৎসা পাবে না এটাই যেন স্বাভাবিক। আর এর বিনিময়ে কোটি কোটি ডিমের দাম পাঁচ টাকা করে বাড়িয়ে একদিনে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কোটিপতি হয়ে যায়। রাষ্ট্রীয় অমাত্যরা এর সমাধানে বিনিদ্র রজনী পার করবেন না, আমলারা নিজের সন্তানদের পৃথিবীর নিরাপদ কোনো জায়গায় পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত থাকবেন। সাংসদ-ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে ব্যবহার করে আরও কোটি কোটি টাকার মালিক হবে। আমরা কি এমনটি দেখতে পাব কোনোদিন দেশ যারা চালায় তাদের ঘুম নেই, সারা রাত পথে পথে ঘুরছেন কোথায় কী হলো সেসব দেখে পরদিনই মানুষকে জানানো যে এই ব্যবস্থা এইভাবে পরিবর্তন করা সম্ভব। সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ! রাজনীতিবিদরা শুধুই বোঝেন ক্ষমতা। মার্কিন ভিসা নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই, কিন্তু পাঁচজন মানুষ যে অতিবর্ষণের ফলে পানিতে তলিয়ে যাওয়া রাস্তায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অকালে মারা গেল তাতে তাদের কপালে একটুও ভাঁজ পড়ে না।
ক’দিন পরে পরে রাস্তার পাশে বিরাট বিরাট কংক্রিটের পাইপ দেখা যায়। বহুদিন মানুষকে ভুগিয়ে একদিন সেই পাইপগুলো মাটির নিচে চাপা পড়ে। কিন্তু এই পাইপের কাজগুলো কী? তারা কি পানি নিষ্কাশনের কাজ করে? নাকি মাটির নিচে গিয়ে নানা রকম ময়লা-আবর্জনায় বন্ধ হয়ে নিচের দিকের পানিকে ওপরের দিকে ঠেলে দেয়? আমাদের এক নাট্যকর্মীর বা অভিনেতা বন্ধু উবারে করে তার কল্যাণপুরের বাসায় যাচ্ছিলেন। কল্যাণপুর যাওয়ার পর উবারের ড্রাইভার আর যেতে রাজি হলেন না। বুক সমান পানি ভেঙে সেই বন্ধু বাড়ি যাওয়ার পথে ম্যানহোলের মধ্যে পড়ে যান। তার একটি পা ক্ষতবিক্ষত হয় এবং মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে এখনো ট্রমায় ভুগছেন।
এটা সত্য, বাংলাদেশ বানভাসি ও ঝড়-ঝঞ্ঝার দেশ। মানুষ এসবের বিরুদ্ধে লড়াই করে বহু শতাব্দী ধরে বেঁচে আছেন। মানুষের কোনো অভিজ্ঞতা আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র কিছুতেই নেবে না। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গৃহে কিছু অনভিজ্ঞ লোক নকশাঁ বানাবে এবং বিপুল পরিমাণে অর্থ ব্যয়ে একটি প্রকল্প সাজাবে, তার মধ্য থেকে কোটি কোটি টাকা চলে যাবে ক্ষমতাসীনদের পকেটে। আজই পত্রিকায় দেখলাম প্রমাণসহ একজন লিখেছেন ভাঙ্গা থেকে খুলনার রেললাইন আপাতত এখন প্রয়োজন নেই। এতে বিশাল অর্থের অপচয় হবে। কিন্তু দেখা যাবে প্রকল্পটি হলো ঠিকই, কিন্তু এটা কারও কাজে লাগছে না। এমনি অনেক অকেজো প্রকল্প হরহামেশাই হয়। আমাদের সংস্কৃতিতে ষাটের দশক পর্যন্ত দেশপ্রেমের বিষয়টি বড়ই প্রবল ছিল। হয়তো সেটা পরাধীনতার কারণে। সবাই যার যার মতো দেশের জন্য কাজ করতে ছুটত। সত্তরের দশকের পর যে চায়নি তা নয়। কিন্তু সম্পূর্ণ বিষয়টি চলে গেছে শাসকের হাতে। জনগণের মেধাকে কখনোই গ্রহণ করার চেষ্টা করা হয়নি। গত ষাট বছরে এবং আমার এই বয়সে আমাদের কাজে লাগানোর রাষ্ট্রীয় কোনো ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়নি। সব কিছু সরকারি বেতনভুক্ত লোকদের কাছে এবং রাজনীতিবিদদের হাতে। তারা যাই করবেন তাই হবে। তবে সবচেয়ে বেদনার বিষয় এই পরিস্থিতির কোনো উন্নতিরও আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। একমাত্র গণজাগরণ এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লবই সমাজকে আবার কর্মময় করে তুলতে পারে। অন্যথায় খবরের কাগজের প্রথম পৃষ্ঠায় নির্বাচন আর ভিসার খবরই আমরা দেখতে পাব। ওই পাঁচজন হতভাগ্য মানুষ যে রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলার শিকার তার সত্যতা কখনোই ভুলবার নয়। এসব ভেবেই হয়তো আলেকজান্ডার পাঞ্জাব থেকে ফিরে গিয়েছিলেন এবং সেনাপতিকে বলেছিলেন ‘সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ’।
লেখক: অভিনেতা, নাট্যকার ও কলামিস্ট
নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আখেরি নবী ও রাসুল। তিনি মানবজাতির জন্য আল্লাহতায়ালার সর্বশেষ দূত। তার প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্য ছাড়া আল্লাহকে বিশ্বাস ও আনুগত্যের দাবি অর্থহীন। কোরআন মাজিদের বিভিন্ন জায়গায় এ বিষয়টি ঘোষিত হয়েছে। আল্লাহকে পাওয়ার একমাত্র পথ খাতামুন্নাবিয়ীন হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর অনুসরণ। তাই তার জন্য হৃদয়ে গভীর ভালোবাসা পোষণ করা এবং তার জন্য আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে দোয়া করা প্রত্যেক উম্মতের ইমানি কর্তব্য।
কোরআন মাজিদে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা নবী কারিম (সা.)-এর জন্য দরুদ পাঠের তথা আল্লাহর দরবারে তার জন্য দোয়া করার আদেশ করেছেন। এটা একদিকে যেমন আল্লাহর কাছে তার রাসুলের মর্যাদার প্রমাণ অন্যদিকে মুমিন বান্দার রহমত ও বরকত লাভের অন্যতম উপায়। আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানকে এই সহজ ও মূল্যবান আমলটি বেশি বেশি করার তৌফিক দান করুন। নিম্নে দরুদ ও সালামের কিছু ফজিলত উল্লেখ করা হলো-
গোনাহ মাফের আমল : দরুদ রহমত, মাগফিরাত ও দরজা বুলন্দির আমল। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, যে আমার ওপর একবার দরুদ পড়বে, বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা তার ওপর দশটি রহমত নাজিল করবেন। -সহিহ মুসলিম : ১/১৬৬
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে আমার ওপর একবার দরুদ পড়বে আল্লাহ তার ওপর দশটি রহমত নাজিল করবেন, তার দশটি গোনাহ ক্ষমা করা হবে এবং দশটি দরজা বুলন্দ হবে। -সুনানে নাসায়ি : ১/১৪৫
ফেরেশতাদের দোয়া লাভ : দরুদ পাঠকারীর জন্য ফেরেশতারা মাগফিরাতের দোয়া করেন। হজরত আমের ইবনে রবিয়া (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে খুতবার মধ্যে বলতে শুনেছি, আমার ওপর দরুদ পাঠকারী যতক্ষণ দরুদ পড়ে ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। সুতরাং বান্দার ইচ্ছা, সে দরুদ বেশি পড়বে না কম। -মুসনাদে আহমদ : ৩/৪৪৫
কিয়ামতের দিন নবীর নিকটবর্তী থাকার সুযোগ : কিয়ামতের দিন দরুদ পাঠকারী নবীজির সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন ওই ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে, যে আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পড়েছে। - জামে তিরমিজি : ১/১১০
দুনিয়া ও আখেরাতের মকসুদ হাসিল : দুনিয়া ও আখেরাতের সব মকসুদ হাসিল হবে দরুদ পাঠকারীর। হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, একবার আল্লাহর রাসুল (সা.) জিকরুল্লাহর (আল্লাহর জিকিরের) খুব তাকিদ করলেন। আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি আপনার প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করে থাকি। আমি আমার দোয়ার কতভাগ আপনার জন্য নির্ধারণ করব? তিনি বললেন, তোমার যে পরিমাণ ইচ্ছা।
আমি বললাম, চার ভাগের এক ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরও ভালো। আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরও ভালো। আমি বললাম, তাহলে তিন ভাগের দুই ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা হয়। তবে বেশি করলে আরও ভালো। আমি বললাম, তাহলে কি আমার দোয়ার পুরোটাই হবে আপনার প্রতি দরুদ? তিনি বললেন, তবে তো তোমার মকসুদ হাসিল হবে, তোমার গোনাহ মাফ করা হবে। -জামে তিরমিজি : ২/৭২
দরুদ গরিবের সদকা : দরুদের আমলের মাধ্যমে গরিব পাবে সদকার সওয়াব। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে মুসলমানের দান করার সামর্থ্য নেই, সে যেন দোয়ায় বলে- এটা তার জন্য জাকাত (সদকা) হিসেবে গণ্য হবে। -ইবনে হিব্বান : ৩/১৮৫
সালাম নবীর কাছে পৌঁছানো হয় : উম্মতের সালাম নবীজির কাছে পৌঁছানো হয়। রাসুলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহতায়ালার জমিনে বিচরণকারী কিছু ফেরেশতা আছেন, তারা আমার কাছে উম্মতের পক্ষ থেকে প্রেরিত সালাম পৌঁছিয়ে থাকেন। -মুসনাদে আহমদ : ১/৪৪১
দরুদ ছাড়া দোয়া ঝুলন্ত থাকে : দরুদবিহীন দোয়া আসমান-জমিনের মধ্যে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, যে পর্যন্ত তুমি তোমার নবীর (সা.) ওপর দরুদ না পড়বে ততক্ষণ দোয়া আসমানে যাবে না, আসমান-জমিনের মধ্যে থেমে থাকবে।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।