
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় বিদ্যানন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনে ত্রুটি খুঁজে পেয়ে তা ভাঙার নির্দেশ দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীকে বদলি করার অভিযোগ উঠেছে। বদলি হওয়া মো. আশরাফুজ্জামান স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডির) ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী।
তার বদলি নিয়ে এলজিইডি ময়মনসিংহ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ ঠিকাদারদের মাঝে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
জানা গেছে, স্কুল ভবন নির্মাণে ঠিকাদারের কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, অনিয়মের অভিযোগসহ নির্মাণকাজে ত্রুটি ধরা পড়ায় ২৬ জুলাই সরেজমিন তদন্ত করে তা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান। পরে ওই দিন সকালে স্কুল ভবন ভাঙার কাজ শুরু হলে বিকেলেই তাকে অন্যত্র বদলির আদেশ জারি করা হয়।
ময়মনসিংহে মাত্র এক বছর কর্মরত আশরাফুজ্জামানকে বদলির আদেশ জারির পেছনে ক্ষমতাধর ঠিকাদারের কারসাজি, নাকি কর্র্তৃপক্ষের বদলি বাণিজ্যের সমীকরণ কাজ করেছেÑ তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ মোহসিনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রাইমারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় দাতা সংস্থা ও সরকারের ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ৭০ নম্বর বিদ্যানন্দ সরকারি প্রাথমিক স্কুল ভবনের নির্মাণকাজ চলছিল। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হৃদয় এন্টারপ্রাইজ ভবনটি নির্মাণের কার্যাদেশ পায়। এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া কাজের ইতিমধ্যে নিচতলার তিন রুম, ছাদ নির্মাণ সম্পন্নসহ দোতলায় কাজ চলছিল। ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী এই নির্মাণকাজের তদারকি কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্কুল ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজার রহমান এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামানকে ডেকে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ জুলাই নির্মাণাধীন ভবনটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান।
আকস্মিক এই বদলির বিষয়ে এলজিইডির ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) ঢাকা মেট্রো সার্কেল-৩ দিয়াবাড়ীর উত্তরা কার্যালয়ে গ্রাহকের ভোগান্তির শেষ নেই। অনিয়মই সেখানে নিয়ম। সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে কোনো কাজই সেখানে সম্ভব নয়।
কার্যালয়টির সামনেই সক্রিয় থাকে কয়েকটি দালাল চক্র। তাদের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স করালে অদক্ষ চালকরাও শুধু হাজিরা দিলেই পাস। তাদের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স করাতে ৯ হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা খরচ হয়। যদিও সরকারি হিসাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে পেশাদারের জন্য ৩ হাজার ৮০০ আর অপেশাদারের জন্য ৫ হাজার ৫০০ টাকা লাগে।
বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ যদিও বলে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মাঝেমধ্যেই দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
সম্প্রতি কয়েক দফায় বিআরটিএর উত্তরা কার্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান ফটক থেকে শুরু করে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কক্ষের সামনেও সক্রিয় দালাল চক্রের সদস্যরা। অন্য সার্কেল অফিসে নিরাপত্তার দায়িত্বে আনসার সদস্য থাকলেও এ জায়গায় কোনো আনসার সদস্য দেখা যায়নি। আনসার এখনো নিয়োগ হয়নি। পরীক্ষা দিতে যাওয়া লাইসেন্স-গ্রাহকদের বসার সুব্যবস্থা নেই। তীব্র গরমের মধ্যে ফিল্ড পরীক্ষা দিতে হয়। ভাড়া করা জায়াগায় হ-য-ব-র-ল অবস্থায় ড্রাইভিং করতে দেখা গেছে। কোনো সেবাই বাড়তি টাকা ছাড়া মেলে না।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভবন-১-এর নিচে দালাল ফরহাদের নিয়ন্ত্রণ। ব্যাংকের টাকা জমার দেওয়ার জায়গার পাশে তাকে দেখা যায়। আর মাঠে সানী নামে আরেক দালাল থাকে। বাবুল নামে এক প্রভাবশালী দালাল আছে। সে বিআরটিএ হেড অফিসের বড় এক কর্মকর্তার ব্যক্তিগত ড্রাইভার। ফিল্ড পরীক্ষা দিতে যাওয়াদের অনেকের ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার থাকলেও তাদের কাছ থেকে বাড়তি ৪০০ টাকা আদায় করা হয়। লাইনম্যানরা এ টাকা দিতে বাধ্য করে। কর্মকর্তাদের সামনেই তা হয়ে থাকে।
ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষার সময় দালালদের মাধ্যমে যারা পরীক্ষা দেয় তাদের নাম-ঠিকানা লিখলেই পাস। আর ফিল্ড পরীক্ষার সময় গাড়িতে উঠে বসলেই পাস। যারা মাধ্যমের সন্ধান করে না তাদের পাস হওয়া কঠিন।
উত্তরায় একটি বেসরকারি কলেজে পড়া মো. রাকিব প্রাইভেট কার চালাতে পারেন, কিন্তু মোটরসাইকেল চালাতে পারেন না। তিনি ২৩ জুলাই এসেছিলেন পরীক্ষা দিতে। রাকিব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফিল্ড পরীক্ষা মানে অগ্নিপরীক্ষা। এখানে দালাল দিয়ে কাজ না করালে পাস হবে না। দালালরাই এ পরীক্ষাকে বলে অগ্নিপরীক্ষা। শুধু এ পরীক্ষায় পাস হতে ৩ হাজার টাকা লাগে। আর সংশ্লিষ্ট অন্য কাজে ৯ হাজার লাগে। আমি ছাত্র মানুষ, তাই ৩ হাজার টাকা দিয়ে পরীক্ষা পার হচ্ছি। বাকি কাজ কষ্ট করে আমি করব।’
মো. শরীফ নামে এক প্রাইভেট কারচালক সিরাজগঞ্জ থেকে তিন মাস আগে ঢাকার উত্তরায় এক সরকারি কর্মকর্তার গাড়ি চালানোর কাজ পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গ্রামে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল। সেটি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ওই লাইসেন্সের ফটোকপিও হাতে নেই। দ্রুত যেন নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে পারি, সেজন্য এখানে আবেদন করা। এখানে দালাল ছাড়া কোনো কাজই হয় না। ১৩ হাজার টাকায় চুক্তি করে এক দালাল ধরলাম। দ্রুত লাইসেন্স না পেলে চাকরিটাই থাকবে না।’
গত সোমবার গাড়ির মালিকানা বদলানোর জন্য এক বন্ধুকে নিয়ে উত্তরায় হাজির মো. সোহাগ নামে এক শিক্ষার্থী। তিনি বললেন, ‘প্রথমে মালিকানা বদলানোর রুমে গেলে জানানো হয়, মূল মালিক না এলে মালিকানা বদলানো যাবে না। কিন্তু মূল মালিক দেশের বাইরে। অফিসের নিচে নামার পর সানী নামে এক দালাল বলল, সরকারি ফি বাদে ৫ হাজার টাকা দিলে সব হবে।’
পরে এ দালালকে টাকা দিয়ে কাজ করাতে দেখা যায় তাকে। দেশ রূপান্তরের এ প্রতিবেদকের পরিচয় গোপন করে সানীর কাছে প্রাইভেট কার চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্স করে দিতে কত টাকা লাগবে জানতে চাইলে সানী বলেন, ‘আপনি হাজিরা দিলেই পাস। আর ফিল্ড পরীক্ষায় গাড়িতে একবার বসবেন, তাহলেই হবে। ওপরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের সরাসরি যোগাযোগ আছে। যদি বিশ্বাস না হয় আমার বাসা এ অফিসের পেছনেই। আমার বাসায় এসে চা খেয়ে যান। আপনার টাকা মার যাবে না। ১২ হাজার টাকা দিলে হবে। প্রথমে ৩ হাজার। তারপর পরীক্ষার দিন ৬ হাজার। বাকিটা কার্ড হাতে পাওয়ার পর দিলে হবে।’
অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ঢাকা মেট্রো-৩ সার্কেলের উপপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) কাজী মো. মোরছালীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব জায়গা নেই। ভাড়া করা ভবনে সেবা কার্যক্রম চালাতে হয়। দালালদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এখানকার কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান সড়ক পরিবহন সচিব ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যুর ক্ষেত্রে ভোগান্তি কমানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে বিআরটিএর বিভিন্ন সার্কেলে ২ থেকে ৩ ঘণ্টায় ৩০০-৪০০ লাইসেন্সপ্রার্থী চালকের পরীক্ষা নেওয়া হয়। স্বল্প পরিসরের মাঠে পরীক্ষা নেওয়ায় চালকের যোগ্যতা যাচাইয়ে ত্রুটি থাকে। সংস্কার করে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চালকের দক্ষতা যাচাইয়ের পরীক্ষায় পরিবর্তন আনা জরুরি। অযোগ্য চালকরাও এখন ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে, যা সড়ক নিরাপত্তায় ঝুঁকি তৈরি করে।’
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিআরটিএ যে পদ্ধতিতে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়, তা আন্তর্জাতিক মানদন্ডের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। অদক্ষ চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার ফলে সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। সংস্কার লাগবে বিআরটিএর। সংস্কার ছাড়া এ পদ্ধতি থেকে বেরোনো যাবে না। যেভাবে পরীক্ষা নেওয়া হয় তাতে দক্ষ চালক পাওয়া যাবে না।’
অভাবের সংসারে একসেট বই দিয়েই পড়াশোনা করেছে যমজ তিন ভাইবোন। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় তিনজনই পেয়েছেন জিপিএ ৫। এমন কৃতিত্ব স্থাপন করেছেন দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার চণ্ডীপুর গ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর যমজ তিন ভাইবোন লাসার সৌরভ মুর্মু, মেরি মৌমিতা মুর্মু ও মারথা জেনিভা মুর্মু। এই তিন ভাইবোনকে গতকাল রবিবার সংবর্ধনা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এদিন উপস্থিত ছিলেন কৃতী শিক্ষার্থীদের বাবা জোহানেশ মুর্মু ও মা সোহাগিনী হাঁসদা। দরিদ্র পরিবারের এই তিন শিক্ষার্থীকে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয় এবং ভবিষ্যতে তাদের পড়ালেখার খরচ বহনসহ যাবতীয় বিষয়ে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক।
জানা যায়, বিরামপুর পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসির ফলাফলে তিন ভাইবোন জিপিএ ৫ পায়। একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করা তার বাবার স্বল্প আয়। এমন অবস্থাতেও তাদের এ সাফল্যে খুশি পরিবারসহ সবাই। বড় হয়ে দুই বোন চিকিৎসক হতে চায় আর ভাইয়ের স্বপ্ন প্রকৌশলী হওয়া।
ভাই লাসার সৌরভ মুর্মু বলে, ‘আমরা তিন ভাইবোন একসঙ্গে পড়ালেখা করি। পাঠ্যবই স্কুল থেকে দেওয়া হলেও নোটবই, গাইড, টেস্ট পেপার, সাজেসনসহ যাবতীয় বই একসঙ্গে তিনজনকে কিনে দেওয়ার সামর্থ্য আমাদের বাবার নেই। আমরা একসেট বই নিয়ে পড়ালেখা করেছি। বাড়ির পাশের বড় দাদা ও দিদিদের বই নিয়ে এসে পড়তাম।’
বোন মেরি মৌমিতা মুর্মু বলে, ‘আমার বাবা বলত যে পানির মতো তরল হয়ে ভাসো, কিন্তু ভেসে যেও না। আমরা বাবা-মায়ের কথামতো পড়ালেখা করেছি। তাদের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পেরেছি। এর চেয়ে বড় আনন্দের আর কী হতে পারে।’
তাদের মা সোহাগিনী হাঁসদা বলেন, ‘আমরা তাদের বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছি। এখন ভালো ফলাফল করেছে এতে আনন্দিত। তবে এখন হিমশিম খাচ্ছি। তাদের বাবার একজনের উপার্জনের সংসারে পাঁচজন সদস্য। তারপর তাদের পড়ালেখার খরচ, এটি নিয়ে একটু দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি।’
বাবা জোহানেশ মুর্মু বলেন, ‘অনেক ছেলেমেয়েই ভালো জামাকাপড়, ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যায়। কিন্তু আমার বাচ্চাদের তা দেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই। এর মধ্যেই আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি।’
জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ বলেন, ‘আমরা তাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য এই সংবর্ধনা প্রদান করলাম। আগামীতে তাদের পড়ালেখার জন্য যথাসাধ্য সহযোগিতা করা হবে।’
দেশ রূপান্তরের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক অমিত হাবিব মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন এক বছর আগে। চিরবিদায় নিয়ে চলে গেলেও দেশ রূপান্তর তার আদর্শকেই ধারণ করে চলেছে। তাই চলে গেলেও তিনি দায়িত্বশীলদের দৈনিকের সঙ্গেই আছেন। দেশ রূপান্তরের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক অমিত হাবিবের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল রবিবার স্মরণসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যলয়ে এ সভা হয়। এ সময় ‘অমিত আলোকসজ্জা : অমিত হাবিবের সংবাদচিন্তা’ নামে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়।
অমিত হাবিব গত বছর ২৮ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।
স্মরণসভায় দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুন বলেন, অমিত হাবিবের সঙ্গে মৃত্যু জিনিসটি যায় না। তিনি আমাদের কাজের মধ্যেই বেঁচে থাকবেন। তিনি সবসময় ভালো দল নিয়ে কাজ করতেন। কাজের ক্ষেত্রে অনেক লড়াই করতেন। কোন জায়গায় কোন জিনিসটি আলোচনার মূল বিষয়বস্তু সেটি তিনি ভালো করে বুঝতে পারতেন। গত এক বছরে তার উপস্থিতি আরও তীব্র হয়েছে। তাছাড়া অমিতদাকে ধারণ করেনÑ এরকম লোকজনই দেশ রূপান্তরের নেতৃত্বে রয়েছেন। অন্য কোনো খবরের কাগজ তাদের প্রয়াত একজন সম্পাদককে এভাবে ধারণ করে না।
মোস্তফা মামুন আরও বলেন, অমিত হাবিবকে দেখে অনেকেই দেশ রূপান্তরে এসেছেন। এখানে প্রায় সবাই অমিতদার চিন্তার ধারক ও বাহক। আমরা পত্রিকায় সবসময় অমিত হাবিবকে ধারণ করি। আমরা অমিত হাবিবকে নিয়ে একটি ছোট আকারে ম্যাগাজিন করেছি। কিন্তু এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ম্যাগাজিন। বাংলাদেশে আর কোনো সাংবাদিকের সংবাদচিন্তা নিয়ে এভাবে সাজানো-গোছানো ম্যাগাজিন সম্ভবত করা হয়নি। আগামী বইমেলায় সংবাদচিন্তা এবং অসীমে অমিত এ দুই ম্যাগাজিন একসঙ্গে করে বই প্রকাশ করা হবে। বইয়ে আরও কিছু নতুন বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বইটি সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীদের সহপাঠ্য বই হিসেবে ব্যবহার হতে পারে।
রূপায়ণ গ্রুপের উপদেষ্টা আব্দুল গাফফার বলেন, অমিত হাবিবের সঙ্গে দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাজ করেছি। অনেক গুণে গুণান্বিত ছিলেন তিনি। দেশ রূপান্তরের যেদিকে তাকাই, সেদিকেই আমরা অমিত হাবিবকে খুঁজে পাই। দেশ রূপান্তর অত্যন্ত খারাপ সময়ে বাজারে এসেছে। প্রকাশের কিছুদিন পরই শুরু হয় করোনা মহামারী। অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও তিনি সবাইকে নিয়ে সুন্দরভাবে পত্রিকাটি চালিয়েছিলেন। তরুণ সাংবাদিকদের আইকন ছিলেন অমিত হাবিব। আমরা সবসময় অমিতদাকে স্মরণ করব। মৃত্যুর মাধ্যমে বুঝিয়ে গেছেন তিনি কত বড় সাংবাদিক ছিলেন। তার মারা যাওয়ার পর তা প্রকাশ পেয়েছে।
সাংবাদিক সৌমিত্র দস্তিদার বলেন, আমি কলকাতার লোক। তবে দেশ রূপান্তরে শুরু থেকেই আমি এখানে লেখালেখি করি। অমিত হাবিব খুব সহজে জটিল সমস্যাগুলো সমাধান করে দিতেন। তার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।
বার্তা সম্পাদক শাহ আলম বাবুল বলেন, অমিতদার সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছাটা সবসময় ছিল। সেটি তিনি বুঝতেও পারতেন। তার সঙ্গে বাংলা মোটর থেকে শুরু করে আবার বাংলা মোটরে এসে শেষ করি। অর্থাৎ অমিতদাকে ভোরের কাগজে পাই। তখন ভোরের কাগজের অফিস ছিল বাংলা মোটরে। মাঝখানে কালের কণ্ঠেও অমিতদার সঙ্গে কাজ করেছি। অমিতদার শেষ দিনগুলো কেটেছে দেশ রূপান্তরে। বাংলা মোটরের এ অফিসেও অমিতদার সঙ্গী হয়েছি। সবকিছুর জন্য অমিতদার প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা।
দেশ রূপান্তরের বিশেষ প্রতিনিধি সরোয়ার আলম বলেন, অমিতদা ভালো টিম নিয়ে কাজ করতেন। যাকে তিনি পছন্দ করতেন তাকে তিনি দলে নিতেন। নানা কৌশলে দলে ভেড়াতেন। সোজা পথে না হলে ইমোশনালি কথা বলতেন। দেশ রূপান্তর প্রকাশের প্রথম দিকে প্রচার-প্রচারণার কাজও আমাকে করতে হয়েছে। এগুলো করে আমি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এতসব কাজ করেছি শুধু অমিতদাকে ভালোবেসে। তিনি সেই ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য ছিলেন। তিনি যাকে ভালোবাসতেন, তাকে ভালোই বাসতেন। কাজের প্রতি তিনি খুব পাগল ছিলেন। অমিতদার স্বপ্নপূরণের জন্য আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করব।
বিশেষ প্রতিনিধি পাভেল হায়দার চৌধুরী বলেন, অমিতদাকে ছেড়ে আমি একটি অনলাইনে যোগ দিই। আবার দেশ রূপান্তরে ফিরে আসি। যখন অমিতদার সঙ্গে ছিলাম না, তখন প্রতিদিন এক ধরনের কষ্ট পেতাম। সেই কষ্টটা বলে বোঝানো যাবে না। ওই সময় আমি অমিতদা থেকে পালিয়ে পালিয়ে কাজ করেছি। অমিতদার এত গল্প, যা সহস্র এক আরব্য রজনীকে হার মানায়। অমিতদার গল্প বলে শেষ করা যাবে না।
স্মরণসভায় দেশ রূপান্তরের অতিরিক্ত বার্তা সম্পাদক জুয়েল মোস্তাফিজ বলেন, আমাদের প্রতিটি কাজেই অমিতদা থাকেন। তাকে আলাদাভাবে স্মরণ করতে হয় না। কারণ হচ্ছে, তিনি যেভাবে নির্দেশনা দিতেন এখনো আমরা সেভাবেই কাজগুলো করি। তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন আমাদের মাঝে।
আলোকচিত্র সম্পাদক সাহাদাত পারভেজ বলেন, দেশ রূপান্তরের জন্য ক্যামেরা কিনে এনে প্রথম দিন অমিতদার কিছু ছবি তুলেছিলাম। কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে নিয়ে সেসব ছবি তুলিনি। উদ্দেশ্যবিহীনভাবে তোলা সেসব ছবির একটি হয়ে উঠেছে তার প্রধান ছবি। ছবিটি এমনভাবে তোলা হয়েছে, যেকোনো দিক থেকে তাকালে মনে হয় তিনি তার দিকেই তাকিয়ে আছেন। ফটোগ্রাফি বিষয়টিকে ধারণ করতেন অমিতদা।
সিনিয়র সহসম্পাদক মোহসীনা লাইজু বলেন, অমিতদা খাবার সম্পর্কে খুব আগ্রহ ছিল। লাইফ স্টাইল বিষয়েও খুব সচেতন ছিলেন। সাংবাদিকতা জীবনে তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি।
উপমহাব্যবস্থাপক মো. মিজানুর রহমান বলেন, অমিতদা আমাদের ওপর আস্থা রেখেছিলেন। আমরা সেই আস্থার প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করছি। দেশ রূপান্তরকে সামনে এগিয়ে নিয়ে আমরা তার স্বপ্নপূরণ করব।
এ ছাড়া স্মৃতিচারণ করেন দেশ রূপান্তরের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ইউসুফ কবীর। স্মরণ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশেষ প্রতিনিধি আশরাফুল হক।
স্মৃতিচারণ শেষে অমিত হাবিবের জন্য দোয়া করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন মুফতি এনায়েতুল্লাহ। অনুষ্ঠানে দেশ রূপান্তরের সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন।
জামালপুরের মেলান্দহ পৌরসভার একটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়েছে। গতকাল রবিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনের সময় একটি ভোটকেন্দ্রে বেশ কিছু সময় ভোটগ্রহণ বন্ধ রেখে এক প্রার্থীর পাঠানো খাবার খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ভোটগ্রহণকারীরা। পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের শাহজাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
দেড়টার দিকে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারসহ পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন দুপুরের খাবার খেতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন বলে জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা।
জানা গেছে, মেলান্দহ পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আব্দুল্লাহ আল ফারুক ৬টি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় এবং পলাতক থাকায় গত ১৮ জুন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদ থেকে তাকে অপসরণ করে। পরে ওয়ার্ডটির কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হয়।
ওই ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে কাউন্সিলর পদে মো. আমজাদ হোসেন কালু (টেবিল ল্যাম্প), মো. নজরুল ইসলাম খান (উটপাখি) এবং মো. মহির উদ্দিন (পানির বোতল) প্রার্থী হন। কেন্দ্রটিতে ২ হাজার ৫২১ জন ভোটার রয়েছেন।
শাহজাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১টা ১৪ মিনিটে গিয়ে দেখা যায়, হঠাৎ করে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে একটি অটোরিকশায় করে খাবার আসে। এ সময় প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারসহ পুলিশের কিছু সদস্য খাবারগুলো সংগ্রহ করেন। পরে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে সবাই খাবার খাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এ সময় কিছু ভোটার ভোট দিতে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে ২টার দিকে খাবার শেষ হলে আবার ভোটগ্রহণ শুরু করেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুপুর ১টা ১৪ মিনিটের দিকে ভোটকেন্দ্রে অটোরিকশা করে খাবার পাঠিয়েছেন কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আমজাদ হোসেন কালু। অটোরিকশায় যতগুলো খাবারের প্যাকেট ছিল তা শেষ হয়ে যায়। পরে আবার খাবার নিয়ে আসেন ওই প্রার্থী।
লিপি আক্তার নামে এক ভোটার অভিযোগ করে বলেন, ‘এখানে ওনারা যা করতাছে, সবাই একসঙ্গে খাচ্ছে, ভোটাররা এখানে এসে বসে আছে। কেউ ভোট দিতে পারছে না। নিয়ম হলো দুজন ভোট নিবে। দুজন খাইতে যাবে। এখানে সবাই একসঙ্গে খাইতে গেছে। এখন ভোটাররা সবাই এসে বসে আছে। কিন্তু এটা কোনো নিয়ম না। এটা হতে পারে না, কিন্তু এরা নিয়ম ভঙ্গ করতেছে।’
প্রিসাইডিং অফিসার নাসির উদ্দিনের কাছে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে খাবার খাওয়ার নিয়ম আছে কি নাÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনিও মানুষ, আমিও মানুষ! সারা দিন কাজ করার পর তো আমাদের শরীরেরও চাহিদা থাকে। একেবারে তো বন্ধ হয়নি। আমাদের ভোটগ্রহণ চলছে।’
এ প্রসঙ্গে জামালপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে সবাই খাবে এবং নামাজ পড়বে। তবে ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকতে পারে না।’
বর্তমান পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি অসাংবিধানিক ও বেআইনি বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলের সদস্যরা। তাদের মতে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাংলাদেশের সংবিধান সমর্থন করে না। এটি করতে হলে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। তবে সংবিধান অনুযায়ী ইসি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে।
গতকাল রবিবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল ও চার নির্বাচন কমিশনার উপস্থিত ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক টেরি এল ইসলে বলেন, আপনাদের সংবিধান তত্ত্বাবধায়ক সরকার সমর্থন করে না। এটি করতে হলে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। যদি এটি ভালো আইডিয়া হয়ে থাকে, যদি তারা (ইসি) এটা করতেও চায়, তারা এটা করতে পারবে না। কারণ এটি করার কোনো আইনি কাঠামো নেই। এই মুহূর্তে এটা করা সম্ভব নয়।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলের সদস্য হিসেবে আমরা মনে করি, এ সরকারের অধীনে কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে।
আয়ারল্যান্ডের সিনিয়র সাংবাদিক নিক পউল বলেন, আমরা আশা করছি সংবিধান অনুযায়ী তারা (ইসি) অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে।
ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের চেয়ারম্যান আবেদ আলী বলেন, আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি ও সাম্প্রতিক সময়ের নির্বাচন সম্পর্কে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা জানতে চেয়েছেন। আগামী নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা আসতে চাইছেন। এ বিষয়ে ইসির বিধিমালা জানতে চেয়েছেন। ইসি আশ্বস্ত করেছে, পর্যবেক্ষকরা ভোটের আগে ও পরে আসতে পারবেন। কমিশন থেকে কোনো বাধা নেই। তিনি বলেন, প্রতিনিধিরা ঢাকা-১৭ আসনে হিরো আলমের ওপরে হামলার ঘটনায় ইসি কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা জানতে চেয়েছেন। কমিশন এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যারা হামলা করেছে তাদের গ্রেপ্তারে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে কমিশন জানিয়েছে।
আবেদ আলী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেহেতু অসাংবিধানিক, ‘সে বিষয়ে (প্রতিনিধি) উনাদের কোনো আগ্রহ নেই। উনারা বলেছেন সংবিধানে যেটা আছে সেটার আলোকেই সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। উনারা বলছেন, কমিশনের যে আইন আছে, সেটার যেন সঠিক প্রয়োগ হয়। রাজনৈতিক দলগুলো ও সরকার যেন ইসিকে সাপোর্ট দেয় এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করলে কমিশনের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। এটা উনারা আশা প্রকাশ করেছেন।’
নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, এটি একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসবেন কি না আসতে হলে তাদের কী করণীয় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মূলত আলোচনা হয়েছে যে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন কীভাবে সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন আয়োজন করবে, কীভাবে কাজ করবে, অতি সম্প্রতি একটি সিটি করপোরেশন ও একটি সংসদের উপনির্বাচনে ছোটখাটো যে সমস্যা দেখা দিয়েছিল, বিশেষ করে প্রার্থীদের আক্রমণ করা হয়েছিল, সে বিষয়ে সরকার এবং নির্বাচন কমিশন কী ব্যবস্থা নিয়েছে এ বিষয়গুলো তারা জানতে চেয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে যদি আসতে চান তাহলে স্বাগত জানানো হবে। তবে অবশ্যই তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসতে হবে।
প্রতিনিধিদলে জাপানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমাজকর্মী ইউসুকি সুগু ও চীনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমাজকর্মী এনডি লিন উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহফুজুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ ও সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের সহসভাপতি মিজানুর রহমান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
আগামী চেস গিল্ড স্কুল দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আইয়ান রহমান ও মনন রেজা নীড়। একক ইভেন্টের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে আইয়ান ও ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নীড়। ৭ রাউন্ডের খেলায় আইয়ান ও নীড় দুজনই পেয়েছে সাড়ে ছয় পয়েন্ট করে।
বিটজ দলগত বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এলিগেন্ট চেস একাডেমি। এই দলে খেলেছে জারিফ হক আফনান, তাসরিক সায়হান, সিয়াম চৌধুরী ও নীলাভা চৌধুরী। আজ শনিবার দাবা ফেডারেশন কার্যালয়ে শেষ হয়েছে এই প্রতিযোগিতা।
আগামী চেস গিল্ডের আয়োজনে গত ২৮ সেপ্টেম্বর শুরু হয় ‘আমরা ৯২’ আগামী চেস গিল্ড স্কুল রেটিং টুর্নামেন্ট। সুইস লিগ পদ্ধতিতে হয়েছে খেলা। একক ও দলগত দুই বিভাগে অংশ নেয় ১৪৫ জন দাবাড়ু। টুর্নামেন্টে বিজয়ীরা ট্রফি, মেডেল ও সার্টিফিকেটের পাশাপাশি পেয়েছে ৭০ হাজার টাকা।
টুর্নামেন্ট শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন গ্র্যান্ডমাস্টার রিফাত বিন সাত্তার, আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার রানী হামিদ। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম।
টানা ৬ ম্যাচ জিতে লা লিগার শীর্ষে উঠে এসেছিল জিরোনা। আগের রাতে সেভিয়াকে হারানো বার্সেলোনা সেই জিরোনাকে পেছনে ফেলে। আর রিয়াল মাদ্রিদ এবার উড়তে থাকা জিরোনাকে হারিয়ে লা লিগার কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার করেছে।
শনিবার মন্তিলিভি স্টেডিয়ামে জিরোনাকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে কার্লো আনচেলত্তির দল। রিয়ালের হয়ে গোল তিনটি করেছেন জোসেলু, অঁরেলিয়ে চুয়ামেনি ও জুড বেলিংহাম।
আট ম্যাচের সাতটিতে জিতে রিয়ালের পয়েন্ট এখন ২১। সমান ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে বার্সেলোনা। আর টানা ছয় জয়ের পর রিয়ালের কাছে হেরে যাওয়া জিরোনা ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে তিনে।
সপ্তাহ খানেক আগেই আতলেতিকো মাদ্রিদে গিয়ে ৩-১ গোলে হেরেছিল রিয়াল। এবার জিরোনায় গিয়ে
প্রথমার্ধেই ২ গোলে এগিয়ে যায় আনচেলোত্তির শিষ্যরা। এর মধ্যে ১৭ মিনিটে বেলিংহামের ক্রস থেকে বল জালে পাঠান জোসেলু। আর ২২ মিনিটে টনি ক্রুসের কর্নার থেকে হেডে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন চুয়ামেনি।
রিয়াল ব্যবধান ৩-০ করে ৭১ মিনিটে। জোসেলুর শট জিরোনা গোলরক্ষক প্রতিহত করলেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি। নাগালে বল পেয়ে দারুণভাবে বল জালে পাঠান বেলিংহাম। এটি রিয়ালের হয়ে ৭ ম্যাচে তার অষ্টম গোল।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।