
আগামী পাঁচ মাসের জন্য চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং, হালিশহর, ষোলশহর) আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু। গতকাল রবিবার অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে ৫২ হাজার ৯২৩ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন তিনি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির সামসুল আলম (লাঙল) পেয়েছেন ১ হাজার ৫৭২ ভোট। নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের হার ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ।
গতকাল রাতে চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বেসরকারিভাবে এ ফলাফল ঘোষণা করেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রাম-১০ আসনের ১৫৬টি কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে এ ভোট হয়। এসব কেন্দ্রে ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৬৩৩ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে ৫৭ হাজার ১৫৩টি। নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের হার ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ।
অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে তৃণমূল বিএনপির দীপক কুমার পালিত (সোনালী আঁশ) ১ হাজার ২৩০ ভোট, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের রশীদ মিয়া (ছড়ি) ৫৭৯ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আরমান আলী (বেলুন) ৪৮০ ভোট ও মনজুরুল ইসলাম ভূঁইয়া (রকেট) ৩৬৯ ভোট পেয়েছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভোট বর্জন : এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আরমান আলী আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মীদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। বেলা ১টার দিকে তিনি এ ঘোষণা দেন। আরমান আলী অভিযোগ করে বলেছেন, প্রাণহরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ফজলুল হাজেরা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে তার ওপর দুই দফা হামলা করা হয়েছে।
শান্তিপূর্ণ ভোট, উপস্থিতি কম : রবিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে চট্টগ্রাম-১০ আসনের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়। ভোট চলাকালে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল একেবারে কম। যে কারণে দিনভর বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। তবে মহিউদ্দিন বাচ্চুর কর্মী-সমর্থকদের দিনভর ভোটকেন্দ্রে ভোটার নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা দেখা গেছে।
মসজিদের মাইকে ভোট দিতে যাওয়ার আহ্বান : এই নির্বাচনে দিনভর বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল একেবারে নগণ্য। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অন্য প্রার্থীদের তৎপরতা না থাকলেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির জন্য তৎপর ছিলেন নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। তারপরও খুব কমসংখ্যক ভোটার ভোটকেন্দ্রে গেছেন। ভোটকেন্দ্রগুলোর ভোটের খরা মেটাতে মসজিদের মাইকে ভোটার ডাকার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন বাদুরতলা জঙ্গী শাহ মাজার মসজিদের মাইক থেকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ ভোটারদের ভোট দিতে যাওয়ার এ আহ্বান শোনা যায়। এ সময় মাইকে বলা হয়, ‘সম্মানিত এলাকাবাসী, আপনাদের মূল্যবান ভোটটি কেন্দ্রে গিয়ে দিয়ে আসার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।’ এ ভিডিও নিয়ে ফেসবুকে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
গত ২ জুন এই আসনের এমপি ডা. আফছারুল আমীনের মৃত্যুর কারণে চট্টগ্রাম-১০ আসনটি শূন্য হলে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
মহানগর আ.লীগের অভিনন্দন : চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু নির্বাচিত হওয়ায় ভোটারদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) ঢাকা মেট্রো সার্কেল-৩ দিয়াবাড়ীর উত্তরা কার্যালয়ে গ্রাহকের ভোগান্তির শেষ নেই। অনিয়মই সেখানে নিয়ম। সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে কোনো কাজই সেখানে সম্ভব নয়।
কার্যালয়টির সামনেই সক্রিয় থাকে কয়েকটি দালাল চক্র। তাদের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স করালে অদক্ষ চালকরাও শুধু হাজিরা দিলেই পাস। তাদের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স করাতে ৯ হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা খরচ হয়। যদিও সরকারি হিসাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে পেশাদারের জন্য ৩ হাজার ৮০০ আর অপেশাদারের জন্য ৫ হাজার ৫০০ টাকা লাগে।
বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ যদিও বলে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মাঝেমধ্যেই দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
সম্প্রতি কয়েক দফায় বিআরটিএর উত্তরা কার্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান ফটক থেকে শুরু করে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কক্ষের সামনেও সক্রিয় দালাল চক্রের সদস্যরা। অন্য সার্কেল অফিসে নিরাপত্তার দায়িত্বে আনসার সদস্য থাকলেও এ জায়গায় কোনো আনসার সদস্য দেখা যায়নি। আনসার এখনো নিয়োগ হয়নি। পরীক্ষা দিতে যাওয়া লাইসেন্স-গ্রাহকদের বসার সুব্যবস্থা নেই। তীব্র গরমের মধ্যে ফিল্ড পরীক্ষা দিতে হয়। ভাড়া করা জায়াগায় হ-য-ব-র-ল অবস্থায় ড্রাইভিং করতে দেখা গেছে। কোনো সেবাই বাড়তি টাকা ছাড়া মেলে না।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভবন-১-এর নিচে দালাল ফরহাদের নিয়ন্ত্রণ। ব্যাংকের টাকা জমার দেওয়ার জায়গার পাশে তাকে দেখা যায়। আর মাঠে সানী নামে আরেক দালাল থাকে। বাবুল নামে এক প্রভাবশালী দালাল আছে। সে বিআরটিএ হেড অফিসের বড় এক কর্মকর্তার ব্যক্তিগত ড্রাইভার। ফিল্ড পরীক্ষা দিতে যাওয়াদের অনেকের ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার থাকলেও তাদের কাছ থেকে বাড়তি ৪০০ টাকা আদায় করা হয়। লাইনম্যানরা এ টাকা দিতে বাধ্য করে। কর্মকর্তাদের সামনেই তা হয়ে থাকে।
ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষার সময় দালালদের মাধ্যমে যারা পরীক্ষা দেয় তাদের নাম-ঠিকানা লিখলেই পাস। আর ফিল্ড পরীক্ষার সময় গাড়িতে উঠে বসলেই পাস। যারা মাধ্যমের সন্ধান করে না তাদের পাস হওয়া কঠিন।
উত্তরায় একটি বেসরকারি কলেজে পড়া মো. রাকিব প্রাইভেট কার চালাতে পারেন, কিন্তু মোটরসাইকেল চালাতে পারেন না। তিনি ২৩ জুলাই এসেছিলেন পরীক্ষা দিতে। রাকিব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফিল্ড পরীক্ষা মানে অগ্নিপরীক্ষা। এখানে দালাল দিয়ে কাজ না করালে পাস হবে না। দালালরাই এ পরীক্ষাকে বলে অগ্নিপরীক্ষা। শুধু এ পরীক্ষায় পাস হতে ৩ হাজার টাকা লাগে। আর সংশ্লিষ্ট অন্য কাজে ৯ হাজার লাগে। আমি ছাত্র মানুষ, তাই ৩ হাজার টাকা দিয়ে পরীক্ষা পার হচ্ছি। বাকি কাজ কষ্ট করে আমি করব।’
মো. শরীফ নামে এক প্রাইভেট কারচালক সিরাজগঞ্জ থেকে তিন মাস আগে ঢাকার উত্তরায় এক সরকারি কর্মকর্তার গাড়ি চালানোর কাজ পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গ্রামে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল। সেটি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ওই লাইসেন্সের ফটোকপিও হাতে নেই। দ্রুত যেন নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে পারি, সেজন্য এখানে আবেদন করা। এখানে দালাল ছাড়া কোনো কাজই হয় না। ১৩ হাজার টাকায় চুক্তি করে এক দালাল ধরলাম। দ্রুত লাইসেন্স না পেলে চাকরিটাই থাকবে না।’
গত সোমবার গাড়ির মালিকানা বদলানোর জন্য এক বন্ধুকে নিয়ে উত্তরায় হাজির মো. সোহাগ নামে এক শিক্ষার্থী। তিনি বললেন, ‘প্রথমে মালিকানা বদলানোর রুমে গেলে জানানো হয়, মূল মালিক না এলে মালিকানা বদলানো যাবে না। কিন্তু মূল মালিক দেশের বাইরে। অফিসের নিচে নামার পর সানী নামে এক দালাল বলল, সরকারি ফি বাদে ৫ হাজার টাকা দিলে সব হবে।’
পরে এ দালালকে টাকা দিয়ে কাজ করাতে দেখা যায় তাকে। দেশ রূপান্তরের এ প্রতিবেদকের পরিচয় গোপন করে সানীর কাছে প্রাইভেট কার চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্স করে দিতে কত টাকা লাগবে জানতে চাইলে সানী বলেন, ‘আপনি হাজিরা দিলেই পাস। আর ফিল্ড পরীক্ষায় গাড়িতে একবার বসবেন, তাহলেই হবে। ওপরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের সরাসরি যোগাযোগ আছে। যদি বিশ্বাস না হয় আমার বাসা এ অফিসের পেছনেই। আমার বাসায় এসে চা খেয়ে যান। আপনার টাকা মার যাবে না। ১২ হাজার টাকা দিলে হবে। প্রথমে ৩ হাজার। তারপর পরীক্ষার দিন ৬ হাজার। বাকিটা কার্ড হাতে পাওয়ার পর দিলে হবে।’
অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ঢাকা মেট্রো-৩ সার্কেলের উপপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) কাজী মো. মোরছালীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব জায়গা নেই। ভাড়া করা ভবনে সেবা কার্যক্রম চালাতে হয়। দালালদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এখানকার কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান সড়ক পরিবহন সচিব ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যুর ক্ষেত্রে ভোগান্তি কমানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে বিআরটিএর বিভিন্ন সার্কেলে ২ থেকে ৩ ঘণ্টায় ৩০০-৪০০ লাইসেন্সপ্রার্থী চালকের পরীক্ষা নেওয়া হয়। স্বল্প পরিসরের মাঠে পরীক্ষা নেওয়ায় চালকের যোগ্যতা যাচাইয়ে ত্রুটি থাকে। সংস্কার করে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চালকের দক্ষতা যাচাইয়ের পরীক্ষায় পরিবর্তন আনা জরুরি। অযোগ্য চালকরাও এখন ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে, যা সড়ক নিরাপত্তায় ঝুঁকি তৈরি করে।’
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিআরটিএ যে পদ্ধতিতে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়, তা আন্তর্জাতিক মানদন্ডের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। অদক্ষ চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার ফলে সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। সংস্কার লাগবে বিআরটিএর। সংস্কার ছাড়া এ পদ্ধতি থেকে বেরোনো যাবে না। যেভাবে পরীক্ষা নেওয়া হয় তাতে দক্ষ চালক পাওয়া যাবে না।’
অভাবের সংসারে একসেট বই দিয়েই পড়াশোনা করেছে যমজ তিন ভাইবোন। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় তিনজনই পেয়েছেন জিপিএ ৫। এমন কৃতিত্ব স্থাপন করেছেন দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার চণ্ডীপুর গ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর যমজ তিন ভাইবোন লাসার সৌরভ মুর্মু, মেরি মৌমিতা মুর্মু ও মারথা জেনিভা মুর্মু। এই তিন ভাইবোনকে গতকাল রবিবার সংবর্ধনা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এদিন উপস্থিত ছিলেন কৃতী শিক্ষার্থীদের বাবা জোহানেশ মুর্মু ও মা সোহাগিনী হাঁসদা। দরিদ্র পরিবারের এই তিন শিক্ষার্থীকে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয় এবং ভবিষ্যতে তাদের পড়ালেখার খরচ বহনসহ যাবতীয় বিষয়ে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক।
জানা যায়, বিরামপুর পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসির ফলাফলে তিন ভাইবোন জিপিএ ৫ পায়। একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করা তার বাবার স্বল্প আয়। এমন অবস্থাতেও তাদের এ সাফল্যে খুশি পরিবারসহ সবাই। বড় হয়ে দুই বোন চিকিৎসক হতে চায় আর ভাইয়ের স্বপ্ন প্রকৌশলী হওয়া।
ভাই লাসার সৌরভ মুর্মু বলে, ‘আমরা তিন ভাইবোন একসঙ্গে পড়ালেখা করি। পাঠ্যবই স্কুল থেকে দেওয়া হলেও নোটবই, গাইড, টেস্ট পেপার, সাজেসনসহ যাবতীয় বই একসঙ্গে তিনজনকে কিনে দেওয়ার সামর্থ্য আমাদের বাবার নেই। আমরা একসেট বই নিয়ে পড়ালেখা করেছি। বাড়ির পাশের বড় দাদা ও দিদিদের বই নিয়ে এসে পড়তাম।’
বোন মেরি মৌমিতা মুর্মু বলে, ‘আমার বাবা বলত যে পানির মতো তরল হয়ে ভাসো, কিন্তু ভেসে যেও না। আমরা বাবা-মায়ের কথামতো পড়ালেখা করেছি। তাদের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পেরেছি। এর চেয়ে বড় আনন্দের আর কী হতে পারে।’
তাদের মা সোহাগিনী হাঁসদা বলেন, ‘আমরা তাদের বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছি। এখন ভালো ফলাফল করেছে এতে আনন্দিত। তবে এখন হিমশিম খাচ্ছি। তাদের বাবার একজনের উপার্জনের সংসারে পাঁচজন সদস্য। তারপর তাদের পড়ালেখার খরচ, এটি নিয়ে একটু দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি।’
বাবা জোহানেশ মুর্মু বলেন, ‘অনেক ছেলেমেয়েই ভালো জামাকাপড়, ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যায়। কিন্তু আমার বাচ্চাদের তা দেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই। এর মধ্যেই আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি।’
জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ বলেন, ‘আমরা তাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য এই সংবর্ধনা প্রদান করলাম। আগামীতে তাদের পড়ালেখার জন্য যথাসাধ্য সহযোগিতা করা হবে।’
দেশ রূপান্তরের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক অমিত হাবিব মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন এক বছর আগে। চিরবিদায় নিয়ে চলে গেলেও দেশ রূপান্তর তার আদর্শকেই ধারণ করে চলেছে। তাই চলে গেলেও তিনি দায়িত্বশীলদের দৈনিকের সঙ্গেই আছেন। দেশ রূপান্তরের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক অমিত হাবিবের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল রবিবার স্মরণসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যলয়ে এ সভা হয়। এ সময় ‘অমিত আলোকসজ্জা : অমিত হাবিবের সংবাদচিন্তা’ নামে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়।
অমিত হাবিব গত বছর ২৮ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।
স্মরণসভায় দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুন বলেন, অমিত হাবিবের সঙ্গে মৃত্যু জিনিসটি যায় না। তিনি আমাদের কাজের মধ্যেই বেঁচে থাকবেন। তিনি সবসময় ভালো দল নিয়ে কাজ করতেন। কাজের ক্ষেত্রে অনেক লড়াই করতেন। কোন জায়গায় কোন জিনিসটি আলোচনার মূল বিষয়বস্তু সেটি তিনি ভালো করে বুঝতে পারতেন। গত এক বছরে তার উপস্থিতি আরও তীব্র হয়েছে। তাছাড়া অমিতদাকে ধারণ করেনÑ এরকম লোকজনই দেশ রূপান্তরের নেতৃত্বে রয়েছেন। অন্য কোনো খবরের কাগজ তাদের প্রয়াত একজন সম্পাদককে এভাবে ধারণ করে না।
মোস্তফা মামুন আরও বলেন, অমিত হাবিবকে দেখে অনেকেই দেশ রূপান্তরে এসেছেন। এখানে প্রায় সবাই অমিতদার চিন্তার ধারক ও বাহক। আমরা পত্রিকায় সবসময় অমিত হাবিবকে ধারণ করি। আমরা অমিত হাবিবকে নিয়ে একটি ছোট আকারে ম্যাগাজিন করেছি। কিন্তু এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ম্যাগাজিন। বাংলাদেশে আর কোনো সাংবাদিকের সংবাদচিন্তা নিয়ে এভাবে সাজানো-গোছানো ম্যাগাজিন সম্ভবত করা হয়নি। আগামী বইমেলায় সংবাদচিন্তা এবং অসীমে অমিত এ দুই ম্যাগাজিন একসঙ্গে করে বই প্রকাশ করা হবে। বইয়ে আরও কিছু নতুন বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বইটি সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীদের সহপাঠ্য বই হিসেবে ব্যবহার হতে পারে।
রূপায়ণ গ্রুপের উপদেষ্টা আব্দুল গাফফার বলেন, অমিত হাবিবের সঙ্গে দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাজ করেছি। অনেক গুণে গুণান্বিত ছিলেন তিনি। দেশ রূপান্তরের যেদিকে তাকাই, সেদিকেই আমরা অমিত হাবিবকে খুঁজে পাই। দেশ রূপান্তর অত্যন্ত খারাপ সময়ে বাজারে এসেছে। প্রকাশের কিছুদিন পরই শুরু হয় করোনা মহামারী। অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও তিনি সবাইকে নিয়ে সুন্দরভাবে পত্রিকাটি চালিয়েছিলেন। তরুণ সাংবাদিকদের আইকন ছিলেন অমিত হাবিব। আমরা সবসময় অমিতদাকে স্মরণ করব। মৃত্যুর মাধ্যমে বুঝিয়ে গেছেন তিনি কত বড় সাংবাদিক ছিলেন। তার মারা যাওয়ার পর তা প্রকাশ পেয়েছে।
সাংবাদিক সৌমিত্র দস্তিদার বলেন, আমি কলকাতার লোক। তবে দেশ রূপান্তরে শুরু থেকেই আমি এখানে লেখালেখি করি। অমিত হাবিব খুব সহজে জটিল সমস্যাগুলো সমাধান করে দিতেন। তার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।
বার্তা সম্পাদক শাহ আলম বাবুল বলেন, অমিতদার সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছাটা সবসময় ছিল। সেটি তিনি বুঝতেও পারতেন। তার সঙ্গে বাংলা মোটর থেকে শুরু করে আবার বাংলা মোটরে এসে শেষ করি। অর্থাৎ অমিতদাকে ভোরের কাগজে পাই। তখন ভোরের কাগজের অফিস ছিল বাংলা মোটরে। মাঝখানে কালের কণ্ঠেও অমিতদার সঙ্গে কাজ করেছি। অমিতদার শেষ দিনগুলো কেটেছে দেশ রূপান্তরে। বাংলা মোটরের এ অফিসেও অমিতদার সঙ্গী হয়েছি। সবকিছুর জন্য অমিতদার প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা।
দেশ রূপান্তরের বিশেষ প্রতিনিধি সরোয়ার আলম বলেন, অমিতদা ভালো টিম নিয়ে কাজ করতেন। যাকে তিনি পছন্দ করতেন তাকে তিনি দলে নিতেন। নানা কৌশলে দলে ভেড়াতেন। সোজা পথে না হলে ইমোশনালি কথা বলতেন। দেশ রূপান্তর প্রকাশের প্রথম দিকে প্রচার-প্রচারণার কাজও আমাকে করতে হয়েছে। এগুলো করে আমি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এতসব কাজ করেছি শুধু অমিতদাকে ভালোবেসে। তিনি সেই ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য ছিলেন। তিনি যাকে ভালোবাসতেন, তাকে ভালোই বাসতেন। কাজের প্রতি তিনি খুব পাগল ছিলেন। অমিতদার স্বপ্নপূরণের জন্য আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করব।
বিশেষ প্রতিনিধি পাভেল হায়দার চৌধুরী বলেন, অমিতদাকে ছেড়ে আমি একটি অনলাইনে যোগ দিই। আবার দেশ রূপান্তরে ফিরে আসি। যখন অমিতদার সঙ্গে ছিলাম না, তখন প্রতিদিন এক ধরনের কষ্ট পেতাম। সেই কষ্টটা বলে বোঝানো যাবে না। ওই সময় আমি অমিতদা থেকে পালিয়ে পালিয়ে কাজ করেছি। অমিতদার এত গল্প, যা সহস্র এক আরব্য রজনীকে হার মানায়। অমিতদার গল্প বলে শেষ করা যাবে না।
স্মরণসভায় দেশ রূপান্তরের অতিরিক্ত বার্তা সম্পাদক জুয়েল মোস্তাফিজ বলেন, আমাদের প্রতিটি কাজেই অমিতদা থাকেন। তাকে আলাদাভাবে স্মরণ করতে হয় না। কারণ হচ্ছে, তিনি যেভাবে নির্দেশনা দিতেন এখনো আমরা সেভাবেই কাজগুলো করি। তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন আমাদের মাঝে।
আলোকচিত্র সম্পাদক সাহাদাত পারভেজ বলেন, দেশ রূপান্তরের জন্য ক্যামেরা কিনে এনে প্রথম দিন অমিতদার কিছু ছবি তুলেছিলাম। কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে নিয়ে সেসব ছবি তুলিনি। উদ্দেশ্যবিহীনভাবে তোলা সেসব ছবির একটি হয়ে উঠেছে তার প্রধান ছবি। ছবিটি এমনভাবে তোলা হয়েছে, যেকোনো দিক থেকে তাকালে মনে হয় তিনি তার দিকেই তাকিয়ে আছেন। ফটোগ্রাফি বিষয়টিকে ধারণ করতেন অমিতদা।
সিনিয়র সহসম্পাদক মোহসীনা লাইজু বলেন, অমিতদা খাবার সম্পর্কে খুব আগ্রহ ছিল। লাইফ স্টাইল বিষয়েও খুব সচেতন ছিলেন। সাংবাদিকতা জীবনে তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি।
উপমহাব্যবস্থাপক মো. মিজানুর রহমান বলেন, অমিতদা আমাদের ওপর আস্থা রেখেছিলেন। আমরা সেই আস্থার প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করছি। দেশ রূপান্তরকে সামনে এগিয়ে নিয়ে আমরা তার স্বপ্নপূরণ করব।
এ ছাড়া স্মৃতিচারণ করেন দেশ রূপান্তরের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ইউসুফ কবীর। স্মরণ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশেষ প্রতিনিধি আশরাফুল হক।
স্মৃতিচারণ শেষে অমিত হাবিবের জন্য দোয়া করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন মুফতি এনায়েতুল্লাহ। অনুষ্ঠানে দেশ রূপান্তরের সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় বিদ্যানন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনে ত্রুটি খুঁজে পেয়ে তা ভাঙার নির্দেশ দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীকে বদলি করার অভিযোগ উঠেছে। বদলি হওয়া মো. আশরাফুজ্জামান স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডির) ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী।
তার বদলি নিয়ে এলজিইডি ময়মনসিংহ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ ঠিকাদারদের মাঝে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
জানা গেছে, স্কুল ভবন নির্মাণে ঠিকাদারের কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, অনিয়মের অভিযোগসহ নির্মাণকাজে ত্রুটি ধরা পড়ায় ২৬ জুলাই সরেজমিন তদন্ত করে তা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান। পরে ওই দিন সকালে স্কুল ভবন ভাঙার কাজ শুরু হলে বিকেলেই তাকে অন্যত্র বদলির আদেশ জারি করা হয়।
ময়মনসিংহে মাত্র এক বছর কর্মরত আশরাফুজ্জামানকে বদলির আদেশ জারির পেছনে ক্ষমতাধর ঠিকাদারের কারসাজি, নাকি কর্র্তৃপক্ষের বদলি বাণিজ্যের সমীকরণ কাজ করেছেÑ তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ মোহসিনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রাইমারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় দাতা সংস্থা ও সরকারের ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ৭০ নম্বর বিদ্যানন্দ সরকারি প্রাথমিক স্কুল ভবনের নির্মাণকাজ চলছিল। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হৃদয় এন্টারপ্রাইজ ভবনটি নির্মাণের কার্যাদেশ পায়। এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া কাজের ইতিমধ্যে নিচতলার তিন রুম, ছাদ নির্মাণ সম্পন্নসহ দোতলায় কাজ চলছিল। ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী এই নির্মাণকাজের তদারকি কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্কুল ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজার রহমান এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামানকে ডেকে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ জুলাই নির্মাণাধীন ভবনটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান।
আকস্মিক এই বদলির বিষয়ে এলজিইডির ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জামালপুরের মেলান্দহ পৌরসভার একটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়েছে। গতকাল রবিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনের সময় একটি ভোটকেন্দ্রে বেশ কিছু সময় ভোটগ্রহণ বন্ধ রেখে এক প্রার্থীর পাঠানো খাবার খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ভোটগ্রহণকারীরা। পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের শাহজাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
দেড়টার দিকে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারসহ পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন দুপুরের খাবার খেতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন বলে জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা।
জানা গেছে, মেলান্দহ পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আব্দুল্লাহ আল ফারুক ৬টি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় এবং পলাতক থাকায় গত ১৮ জুন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদ থেকে তাকে অপসরণ করে। পরে ওয়ার্ডটির কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হয়।
ওই ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে কাউন্সিলর পদে মো. আমজাদ হোসেন কালু (টেবিল ল্যাম্প), মো. নজরুল ইসলাম খান (উটপাখি) এবং মো. মহির উদ্দিন (পানির বোতল) প্রার্থী হন। কেন্দ্রটিতে ২ হাজার ৫২১ জন ভোটার রয়েছেন।
শাহজাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১টা ১৪ মিনিটে গিয়ে দেখা যায়, হঠাৎ করে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে একটি অটোরিকশায় করে খাবার আসে। এ সময় প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারসহ পুলিশের কিছু সদস্য খাবারগুলো সংগ্রহ করেন। পরে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে সবাই খাবার খাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এ সময় কিছু ভোটার ভোট দিতে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে ২টার দিকে খাবার শেষ হলে আবার ভোটগ্রহণ শুরু করেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুপুর ১টা ১৪ মিনিটের দিকে ভোটকেন্দ্রে অটোরিকশা করে খাবার পাঠিয়েছেন কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আমজাদ হোসেন কালু। অটোরিকশায় যতগুলো খাবারের প্যাকেট ছিল তা শেষ হয়ে যায়। পরে আবার খাবার নিয়ে আসেন ওই প্রার্থী।
লিপি আক্তার নামে এক ভোটার অভিযোগ করে বলেন, ‘এখানে ওনারা যা করতাছে, সবাই একসঙ্গে খাচ্ছে, ভোটাররা এখানে এসে বসে আছে। কেউ ভোট দিতে পারছে না। নিয়ম হলো দুজন ভোট নিবে। দুজন খাইতে যাবে। এখানে সবাই একসঙ্গে খাইতে গেছে। এখন ভোটাররা সবাই এসে বসে আছে। কিন্তু এটা কোনো নিয়ম না। এটা হতে পারে না, কিন্তু এরা নিয়ম ভঙ্গ করতেছে।’
প্রিসাইডিং অফিসার নাসির উদ্দিনের কাছে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে খাবার খাওয়ার নিয়ম আছে কি নাÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনিও মানুষ, আমিও মানুষ! সারা দিন কাজ করার পর তো আমাদের শরীরেরও চাহিদা থাকে। একেবারে তো বন্ধ হয়নি। আমাদের ভোটগ্রহণ চলছে।’
এ প্রসঙ্গে জামালপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে সবাই খাবে এবং নামাজ পড়বে। তবে ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকতে পারে না।’
অভিষেকে ২৬ মিনিট খেলে দুই অ্যাসিস্টের অবদান রাখতে পেরেছিলেন নেইমার। আল হিলাল জিতেছিল। কিন্তু পর পর দুম্যাচ খেললেন পুরো সময়। তেমন কিছুই করতে পারলেন না। ড্র করেছে আল হিলাল আবার।
এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে শেষ দিকের গোলে ১-১ ড্র করে পরাজয় বাঁচিয়েছিল আল হিলাল। আজ সৌদি প্রো লিগে দামাক এফসির বিপক্ষে ম্যালকমের গোলে ৯ মিনিটে এগিয়ে গেলেও শেষপর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারেনি।
সাত ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে তবুও শীর্ষেই রইলো আল হিলাল।
ব্যাংকপাড়াখ্যাত মতিঝিল এখন মৃতপ্রায়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে না পারায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র সরে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা ঘোরানো মতিঝিলে আবাসিক ভবন, শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান তৈরি না হলে দেশের প্রধান এই বাণিজ্যিক অঞ্চল প্রাণ হারাবে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাদের মতে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় অবদান রয়েছে মতিঝিলের টাকার। শুধু তা-ই নয়, মতিঝিলে উপার্জিত অর্থে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, কানাডাসহ আরও অনেক দেশে। এখানকার উপার্জিত টাকা অনেকে জমা রেখেছেন সুইস ব্যাংকেও। শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মতিঝিলে। এ যেন মা কাঁকড়ার আত্মত্যাগের গল্প। মা কাঁকড়া বাচ্চাদের আগলে রাখে বুকের ভেতর; যেদিন বাচ্চাগুলো বের হয়ে আসে, সেদিন খোলস ছাড়া মা কাঁকড়ার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। মা কাঁকড়ার মতো দুঃখী ও ত্যাগী বাণিজ্যিক মতিঝিল।
ষাটের দশকে মতিঝিলে গড়ে ওঠে দেশের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট-সিবিডি)। সেই থেকে এখনো দেশের প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল মতিঝিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে সরকারি ৮টি, বেসরকারি ৪৫টি এবং বিদেশি ব্যাংক রয়েছে ৮টি। এ ছাড়া ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৮১টি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের বেশির প্রধান কার্যালয় চলে গেছে কারওয়ান বাজার, গুলশান-বনানী ও উত্তরায়। নতুন করে যেসব ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাচ্ছে, সেগুলোর প্রধান কার্যালয় মতিঝিলের বাইরে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মতিঝিলের আশপাশে পরিকল্পিত কোনো আবাসিক এলাকা, অভিজাত হোটেল, কাজের ফাঁকে অবসর কাটানোর মতো উন্মুক্ত স্থান, শপিং কমপ্লেক্স না থাকায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সুবিধার জন্য অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়গুলোও মতিঝিলের বাইরের এলাকা, অর্থাৎ কারওয়ান বাজার, গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে গড়ে উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর, মধুমিতা সিনেমা হল এবং ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এবং দিলকুশা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবন এবং বঙ্গভবনের পাশের এলাকাজুড়ে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল। বিশ্বের বাণিজ্যিক অঞ্চলের ভবনগুলো সুউচ্চ হয়ে থাকে। কিন্তু মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের পাশেই বঙ্গভবন। নিরাপত্তার কারণে বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর কোনো বহুতল ভবন করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, মতিঝিলের প্লটগুলোর ‘নন-রেসট্রিকটেড’ উচ্চতা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর সাড়ে চারতলার বেশি উচ্চতার ভবনের অনুমোদন মেলে না। ফলে মূল্যবান ওই প্লটগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারছেন না মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ জরাজীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণও রয়েছে কয়েকটি ভবন। একটির সঙ্গে অন্যটি লাগানো। দুটি ভবনের মাঝখানে উন্মুক্ত জায়গা নেই বেশিরভাগ ভবনের। দিলকুশা এলাকার বঙ্গভবন লাগানো ভবনগুলোর মাঝখানেও কোনো ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, মতিঝিল এলাকার ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে। ভাঙাচোরা এবড়োখেবড়ো সড়ক। সড়ক বিভাজকগুলো শ্রীহীন। এগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হয়নি। প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলে মতিঝিলের আরও করুণ দশা চোখে পড়ে। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার সড়কের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে চটের ছালা দিয়ে ঘেরা খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান এবং নানা পণ্যের অস্থায়ী দোকান। সামান্য বৃষ্টিতে মতিঝিল এলাকার সড়কগুলো তলিয়ে থাকে পানির নিচে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত। ডিএসসিসি এলাকার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে। খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে মূল্যায়ন করলে মতিঝিল ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। যদিও এটা মানতে নারাজ ডিএসসিসির কারিগরি কমিটি।
মতিঝিল এলাকার বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিল এলাকার সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে ডিএসসিসি। পরিত্যক্ত প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মতিঝিলের সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত ও সড়ক বিভাজকের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা দরকার। পর্যায়ক্রমে এ এলাকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কাজ করবে ডিএসসিসি। তবে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের মূল সংস্কার ও আধুনিকায়নের দায়িত্ব রাজউকের। রাজউককে সেসব বিষয় পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব কাজে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা লাগলে করপোরেশন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলে রাজউক। রাজউক সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশক থেকেই মতিঝিলের পুরোপুরি বাণিজ্যিক বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্যিক অঞ্চলে শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান থাকে। আর কাছাকাছি এলাকায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা থাকে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে সেটা ছিল না। অভিজাত মানের হোটেল পূর্বাণী গড়ে উঠলেও আশপাশে সময় কাটানোর মতো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লোকজন গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় থাকেন। মতিঝিলের সৌন্দর্য নিশ্চিত করতে ও আধুনিকায়নে যেসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখা দরকার ছিল রাজউক ও সিটি করপোরেশন সেটা করেনি।
রাজউক সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধরা, উত্তরা। সেই সব এলাকা থেকে মানুষ মতিঝিলে আসেন। শহরের জনসংখ্যা বাড়ায় দিন দিন যানজট বাড়ছে। ওই সব এলাকা থেকে মতিঝিলে আসতে সড়কে এক থেকে দেড় ঘণ্টা চলে যায়। দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কর্মঘণ্টার মধ্যে ৩০ শতাংশ সময় সড়কে নষ্ট হচ্ছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে চিন্তা করেছে, তার কর্মস্থল এমন একটা জায়গায় হবে যা তার আবাসনের কাছাকাছি। মতিঝিল থেকে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও ভূমিকা রেখেছে।
কালের বিবর্তনে গুলশান হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক এলাকা। কারওয়ান বাজার, উত্তরায়ও গেছে কিছু। এসব জায়গায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমও সেখানে চলে গেছে। এসব এলাকার আশপাশে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় তাদের বসবাস। আবাসিক এলাকা ছাড়া, পৃথিবীর কোথাও শতভাগ জায়গা শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা অথবা একই শ্রেণির কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার হয় না।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, নগর পরিকল্পনায় ভূমির ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়, যেকোনো জায়গার ব্যবহার হবে ২৪ ঘণ্টা। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল কর্মচঞ্চল থাকে মাত্র ১২ ঘণ্টা। এরপর ওই জায়গার ব্যবহার হয় না। রাতে নীরব ও ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়।
তিনি বলেন, যে মতিঝিলে দিনের বেলায় হাঁটা যায় না; গাড়ির কারণে, যানজটে; সেই মতিঝিলে রাত ৮টার পরে আবার একাও হাঁটা যায় না; অনিরাপদ বোধ হয়। এ জন্য যারা দিনে বাণিজ্য করতে আসেন, তারা মতিঝিল এলাকার হোটেলগুলোতে থাকেন না। অন্যদিকে গুলশান-বনানী এলাকায় থাকলে তারা শপিংয়ে যেতে পারেন, কফি শপে যেতে পারেন। এসব কারণে সারা বিশ্বে ভূমির মিশ্র ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, মতিঝিল এলাকা যেহেতু ইতিমধ্যে তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলেছে, এ জন্য মতিঝিলের জমির শ্রেণিকে মিশ্র ব্যবহার হিসেবে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি নিয়েছে রাজউক। সংশোধিত ড্যাপে সে বিষয়ে নির্দেশনা রাখা হয়েছে। পৃথিবীর নগর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৫০, ৬০ বা ১০০ বছর অন্তর সেসব ঢেলে সাজানো হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়েই মতিঝিল এলাকাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে আবাসিকের বৈশিষ্ট্য দিতে হবে; কনডোমিনিয়াম গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে রাজউক বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ১৬ একর জায়গা নিয়ে একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে লাইব্রেরি, ওয়াকওয়ে থাকবে। বসার ব্যবস্থা থাকবে। মতিঝিল এলাকায় ঝিল ছিল, ওই ঝিলকে প্রাধান্য দিয়ে পার্কটি তৈরি করা হবে। বহুমুখী ব্যবহার ছাড়া মতিঝিলকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিলের আধুনিকায়ন ও ভূমির মিশ্র ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। তাহলে মতিঝিল সচল থাকবে; তবে ঢাকা শহর বড় হওয়ায় আরও বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে ওঠা ইতিবাচক। এসব পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দরকার ছিল; কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে সে রকম হয়নি। এটা দুঃখজনক। এ জন্য শহরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ঢাকায় এখন অনেকগুলো বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সব অঞ্চলে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় বড় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় মতিঝিলে রয়েছে। তবে ব্যবসা গুলশান, বনানী, উত্তরা, গাজীপুরে সরে যাওয়ায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ব্যবসা কেন্দ্রের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।