
বর্ষার প্রায় শেষের দিকে এসেও ভারী বৃষ্টির দেখা নেই। দেশে গড়ে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় জুলাই মাসে। অথচ এ মাসেই স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৫১ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। ফলে একদিকে যেমন আমন উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ মানুষ।
বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আমনচাষিরা। আমন ধান উৎপাদনের অন্যতম বড় এলাকা নওগাঁ। প্রায় এক মাস ধরেই তপ্ত রোদে ব্যাহত হচ্ছে আমন চাষাবাদ। বৃষ্টি কম হওয়ায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকট মেটাতে নির্ভর করতে হচ্ছে সেচযন্ত্রের ওপর। এতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
নওগাঁর মান্দা উপজেলার কৃষক আব্দুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি না থাকায় সেচযন্ত্র দিয়ে সেচ দিতে হচ্ছে। এতে করে বিঘাপ্রতি প্রায় ৬০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি খরচ হচ্ছে। ঠিকমতো বিদ্যুৎ না থাকায় সেচযন্ত্র ব্যবহারেও লাভ হচ্ছে না। মাটি ফেটে যাচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বরেন্দ্র বহুমুখী কর্তৃপক্ষ ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা যায়, নওগাঁয় চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১ লাখ ১২ হাজার হেক্টর জমিতে ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে; যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৬০ শতাংশ। সেচের জন্য মাঠে ৪ হাজার ৮৬৮টি গভীর নলকূপ, ৪৮ হাজার ৭৯টি অভীর নলকূপ ও ২ হাজার ২২৭টি এলএলপি (লো লিফট পাম্প) রয়েছে। সব মিলিয়ে জেলায় ৫৫ হাজার ১৭৪টি সেচযন্ত্র রয়েছে। এর মধ্যে ১৭ হাজার ৪৯৫টি বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্র। বাকি ৩৭ হাজার ৬৭৯টি সেচযন্ত্র ডিজেলচালিত। সেচযন্ত্রের প্রায় সবগুলোই চালু রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০২২ সালের জুলাই মাসে বৃষ্টিপাত হয়েছিল ৭৯ মিলিমিটার। চলতি বছরের জুলাই মাসে বৃষ্টি হয়েছিল ১১৪ মিলিমিটার। এবছর ১৬ জুলাইয়ের পর আর তেমন বৃষ্টি হয়নি। বর্তমানে সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে পুরো সেচ কার্যক্রম চলছে।’
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, দেশে গড়ে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় জুলাই মাসে। তবে গত মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৫১ শতাংশ বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। এ ছাড়া গড় তাপমাত্রাও ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। চলতি মাসেও আশানুরূপ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই বলে জানায় আবহাওয়া অধিদপ্তর।
চলতি আগস্ট মাসের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, স্বাভাবিক বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এ সময় এক থেকে দুটি বর্ষাকালীন লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। তা মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এ ছাড়া চলতি মাসেও মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ বছর জুলাইয়ে ৫১ শতাংশ বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। গত বছর কিন্তু আরও বেশি, মানে ৫৮ শতাংশ কম হয়েছিল। সাধারণভাবে জুলাই মাসে আমাদের দেশে বৃষ্টি বেশি হয়। এ সময়টায় মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হয়। বিভিন্ন কারণে এবার মৌসুমি বায়ু সক্রিয় ছিল না। দেখা গেছে যখন মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হয়, তখন সাগর থেকে প্রচুর পরিমাণ জলীয়বাষ্প সংগ্রহ করে বৃষ্টি হয়। ভারতে কিছু জায়গায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। যখন এসব জায়গায় কোনো একটা সিস্টেম পরিবর্তন করে স্বাভাবিকভাবে আমাদের এখানে বৃষ্টি কমে যায়।’ তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের এখানে বৃষ্টিপাত বেশি না হলেও মোটামুটি যেটা স্বাভাবিক বৃষ্টি সেটা হয়েছে। এখন যে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, সেটা হয়তো আরও এক দিন থাকবে, তারপর আবার কমে যাবে। মৌসুমি বায়ু কিছুটা সক্রিয় হচ্ছে। তাতে দেখা যাচ্ছে মাঝখানে কিছুটা বিরতি দিয়ে আবার বৃষ্টিপাত হবে।’
এই আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘আমাদের এখানে বৃষ্টিপাতের প্যাটার্নে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত কমে গেছে। আগে যেভাবে টানা বৃষ্টি দুই-তিন দিন হতো সেটা কিন্তু হচ্ছে না; অর্থাৎ মৌসুমি বায়ুর যে ধরনের বৈশিষ্ট্য থাকার কথা, সেখানে পরিবর্তন হয়েছে। একটা নিম্ন চাপ গেল, এই সময় প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা, কিন্তু সে রকম দেখা যাচ্ছে না।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু সিলেট বাদ দিয়ে দেশের বাকি সাত বিভাগে জুলাই মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। এই বিভাগে প্রায় ৬৬ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। এরপর বরিশাল বিভাগ। সেখানে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫৮ শতাংশ কম বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। সিলেটে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। তবে এটাকে স্বাভাবিক হিসেবেই তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। ঢাকা বিভাগে ৪৮ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে। জুলাই মাসে দেশে গড়ে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় ৫২৩ মিলিমিটার।
এ ছাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে তাপমাত্রা বেশি ছিল জুলাই মাসে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাইয়ে দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা যথাক্রমে ২ দশমিক ৪ এবং ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। আর দেশের গড় তাপমাত্রা বেশি ছিল ১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেনসিং অ্যান্ড জিআইএসের পরিচালক অধ্যাপক শেখ তৌহিদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের যে লোকাল ক্লাইমেট (স্থানীয় আবহাওয়া) বা মাইক্রো ক্লাইমেটের সঙ্গে রিজিওনাল ক্লাইমেটের (আঞ্চলিক আবহাওয়া) সম্পর্ক আছে। আবার রিজিওনালের সঙ্গে গ্লোবাল ক্লাইমেটের (বৈশ্বিক আবহাওয়া) সম্পর্ক আছে। একটা আরেকটাকে প্রভাবিত করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণভাবে দেশে যে বৃষ্টিপাত কমেছে, সেটা কিন্তু না। হয়তো বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। আসাম বা দিল্লিতে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে তারা তা দেখেনি। এখন যে বৃষ্টিপাতের প্যাটার্ন দেখা যাচ্ছে, সেটা কিন্তু এখানকার প্যাটার্নের অংশ।
বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণ হিসেবে অধ্যাপক শেখ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, যদি গাছপালা কমে যায়, নগরায়ণ যদি বেশি হয় তাহলে এ সময় এলাকাগুলো তপ্ত হয়ে যায়। অতিরিক্ত গরমে মেঘ পুঞ্জীভূত হতে পারছে না। গরম বাতাসের কারণে মেঘে যে পানি থাকে তা বৃষ্টি হয়ে নামার আগেই বাষ্প হয়ে যাচ্ছে।। তখন আর বৃষ্টিটা ওভাবে হয় না।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের এই সংকট দেশে দীর্ঘমেয়াদি হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। তাতে করে যেখানে বৃষ্টিপাত দরকার, সেখানে হবে না। আবার কখনো অতিরিক্ত বৃষ্টি হবে। দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুব কমেছে বা বেড়েছেÑ এমনটা কিন্তু না। কিন্তু যে সময়টায় বৃষ্টি দরকার, সেটা কিন্তু হচ্ছে না। ফলে বৃষ্টিপাতের যে পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে, সেটা কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি হবে। এই সংকটকে মাথায় নিয়ে কৃষি পরিকল্পনা করতে হবে এবং তথ্য সরবরাহ বাড়াতে হবে।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা গ্রামের জাফর আলম (৪০) নামের এক চিহ্নিত ইয়াবা কারবারিকে ২০ হাজার ইয়াবাসহ আটক করে নিয়ে আসার পথে গ্রামবাসীর সঙ্গে বিজিবির সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ওই সময় বিজিবির গুলিতে মৌলবি মোহাম্মদ রফিক (৩২) নামের এক রোহিঙ্গা নিহত হওয়ার পাশপাশি আহত হয়েছেন আরও ৫-৬ জন গ্রামবাসী। এ ছাড়া গ্রামবাসীর হামলায় আব্দুল মালেক নামের এক বিজিবি সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। তবে বিজিবি বলছে, মাইকিং করে জাফর আলমের সহযোগীরা বিজিবির ওপর হামলা করেছে। এতে বিজিবির সাত সদস্য আহত হয়েছেন।
গতকাল বুধবার দুপুর ১টায় হ্নীলা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব লেদা বাজারে ওই ঘটনা ঘটে। নিহত রোহিঙ্গা লেদা ২৪ নম্বর ক্যাম্পের ব্লক/১৩-এর সিরাজুল ইসলামের ছেলে। আহতরা হলেন, হ্নীলার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের লেদার জালাল আহমদের ছেলে তৌহিদুল ইসলাম রাজু, একই এলাকার নুর হোছেনের ছেলে মো. ইসমাঈল, মো. উসমান, হ্নীলার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জাদিমুড়া এলাকার নজির আহমদের ছেলে টমটম চালক ওসমান।
স্থানীয়দের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, হ্নীলা ইউপির মৃত লাল মিয়ার ছেলে ও সাবেক ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলমের ভাই জাফর আলম টেকনাফের ক্ষমতাশালী চিহ্নিত ইয়াবা কারবারি। তাকে ইয়াবাসহ আটক করে বিজিবি ক্যাম্পে আনার পথে তার স্বজন ও প্রতিবেশীরা বিজিবি সদস্যদের বাধা দেয়। উভয়পক্ষের কথা কাটাকাটি শুরু হলে বিজিবিকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়তে শুরু করে গ্রামবাসী। একপর্যায়ে বিজিবি গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই এক রোহিঙ্গা নিহত হন ও আহত হয়েছেন বিজিবির এক সদস্যসহ কয়েকজন গ্রামবাসী।
তবে জাফর আলমের শ্যালক ফাহাদ বলেন, আমার দুলাভাই জাফর আলম ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কিছুদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। চিকিৎসা শেষে তিনি মঙ্গলবার বাড়ি ফিরেছেন। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে জাফর ইনজেকশন দেওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে লেদা যাওয়ার পথে শুনতে পান তার ভাই রবিউল আলমকে বিজিবি সদস্যরা আটক করে মারধর করছেন। কেন তাকে মারধর করছেন জানতে তিনি সেখানে গেলে রবিউলকে ছেড়ে দিয়ে তাকে বেধড়ক পেটান বিজিবি সদস্যরা। এ সময় জাফর আলমের প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে কেন তাকে আটক করা হয় তা জানতে চান। একপর্যায়ে ঘটনাটি বাগ্বিতন্ডায় রূপ নেয়। স্থানীয় জনতা জড়ো হলে হইচই সৃষ্টি হয়। পরে বিজিবি সদস্যরা অকস্মাৎ গুলি ছুড়তে শুরু করলে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করেন। গুলিবিদ্ধ হন আরও বেশ কয়েকজন।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুর হুদা বলেন, জাফর আলমকে লেদা বাজার থেকে বিজিবির সদস্যরা আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় পূর্ব লেদা বাজারে তার আত্মীয়-স্বজনসহ স্থানীয়রা হাইওয়ে সড়কের ওপর বাধা দেয়। এ সময় জাফরের স্বজন ও স্থানীয়দের সঙ্গে বিজিবির বাগ্বিতন্ডার একপর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। আত্মরক্ষার্থে বিজিবির সদস্যরা প্রায় অর্ধশত রাউন্ড গুলি ছুড়েছে।
নিহত মৌলবি রফিকের বড় ভাই মো. ইউসুফ বলেন, আমার ভাই লেদা বাজার থেকে ক্যাম্পে ফেরার পথে গুলিতে মারা গেছেন।
এদিকে হ্নীলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, শুনেছি লেদার সাবেক ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলমের ভাই জাফর আলমের বাড়িতে বিজিবির একটি দল অভিযান চালায়। এ সময় ইয়াবাসহ জাফরকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় সংঘবদ্ধ মাদক কারবারিসহ রোহিঙ্গা ও স্থানীয়রা বিজিবির ওপর হামলা চালিয়েছে। বিজিবি পাল্টা গুলি করলে একজন নিহতসহ ৫-৬ জন আহত হয়েছে।
ঘটনাটি শুনেছেন উল্লেখ করে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, বিজিবির সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষের খবর শুনেছি। কেন এই ঘটনা ঘটেছে তা জানার চেষ্টা চলছে।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ জোবাইর সৈয়দ জানান, হ্নীলার লেদা বাজারে বিজিবি-স্থানীয়দের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে শুনলাম। তবে কী কারণে ঘটনা ঘটেছে তা বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি।
টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মহিউদ্দিন বলেন, লেদা বিওপির একটি দল ২০ হাজার ইয়াবাসহ জাফরকে আটক করে। পরে জাফরকে নিয়ে ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে আসার পথে লেদা বাজারে জাফরের সহচররা মাইকিং করে তাদের আত্মীয়-স্বজন দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে। এ সময় জাফর আলমের ভগ্নিপতি ডাকাত হারুন তার দলবল নিয়ে দেশীয় অস্ত্রসহ বিজিবির ওপর হামলা করে। তাদের এলোপাতাড়ি হামলায় বিজিবির সাত সদস্যসহ কয়েকজন গ্রামবাসী আহত হয়। সে সময় বিজিবিও পাল্টা গুলি চালায়। বিজিবি ও ইয়াবা কারবারিদের সংঘর্ষে একজন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। তবে ইয়াবা কারবারিরা জাফরকে ছিনিয়ে নিতে পারেননি। তিনি আরও বলেন, আহতরা সকলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের শরীরের ছররা গুলি বা দেশীয় বন্দুকের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অধিনায়ক আরও বলেন, ধৃত জাফরকে ইয়াবাসহ টেকনাফ থানায় সোপর্দ করা এবং মাদক আইনের মামলার প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া বিজিবি ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়াও চলছে।
নেকড়েসহ বন্যপ্রাণীদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখার কাজটি সহজ নয়। তবে বিষয়টি আরেকটু সহজ করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগানোর উপায় বের করেছেন সুইজারল্যান্ডের একদল তরুণ। এর ফলে নেকড়ের হামলা ঠেকাতে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নেকড়ের পরিবারের ওপর নজর রাখা সহজ হবে।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে বলছে, সুইজারল্যান্ডের লোজান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী একটি বাক্স আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে নেকড়েদের আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণে রাখতে বিশেষ এক ডিভাইস তৈরি করেছেন। ওই চার শিক্ষার্থীর একজন অলিভিয়ে স্ট্যালি। তিনি বলেন, ওয়াইল্ড-লাইফ-বক্স স্বয়ংক্রিয়ভাবে নেকড়ের অবস্থান নির্ধারণ করতে পারে। নেকড়ের গর্জনের কারণে এটা সম্ভব হয়। তিন কিলোমিটারের বেশি দূর থেকে নেকড়ের গর্জন শোনা যায়। এভাবে আমরা একটা বড় এলাকার অবস্থা জানতে পারি। নেকড়ে গর্জন করলে এই বাক্স রিয়েল টাইমে রেঞ্জারকে তা জানিয়ে দেয়।
তিনি বলেন, বর্তমানে ক্যামেরা ট্র্যাপের মতো পদ্ধতি ব্যবহার করে নেকড়ে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কিন্তু নেকড়েরা এই পদ্ধতি এড়ানো শিখে গেছে। তারা ফ্ল্যাশ আর শব্দ পছন্দ করে না, তাই ক্যামেরা ট্র্যাপ কোথায় আছে, তা মনে রাখে এবং সেগুলো এড়িয়ে চলে। আমাদের পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা নেকড়েদের যোগাযোগ শনাক্ত করে তাদের ফাঁদে ফেলতে চাই।
তিনি জানান, ডিভাইস দিয়ে ৫০০ মিটারের মধ্যে নেকড়ের অবস্থান শনাক্ত করা যায়। পরে মোবাইল যোগাযোগের মাধ্যমে শব্দগুলো সার্ভারে পাঠানো হয়। আর অডিও ফাইলগুলো ইমেজে পরিণত করা হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইমেজগুলো পরীক্ষা করে সেগুলো নেকড়ের গর্জন কি না, বোঝার চেষ্টা করে।
স্ট্যালি বলছেন, সুইজারল্যান্ডের কয়েকটি এলাকার কর্র্তৃপক্ষ ও ডব্লিউডব্লিউএফ তাদের ডিভাইসের বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে এটি শুধু ইউরোপের মধ্যে ব্যবহার করতে হবে, এমন নয়। তিনি বলেন, আমাদের মনে হয়েছে, শুধু নেকড়ের মধ্যে থাকলেই চলবে না। তাই দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়ে হাতি, সিংহ ও হায়েনাদের ক্ষেত্রে আমরা এই ডিভাইস পরীক্ষা করে দেখেছি। দেখেছি, এটা সফল। নভেম্বরে আমরা ভারত যাব। সেখানে বাঘ, চিতাবাঘ আর বন্য কুকুরের ক্ষেত্রে এটি পরীক্ষা করে দেখব।
সুইস রেঞ্জার মার্কো বানসার বলেন, এই ডিভাইসের কারণে নেকড়ের হামলা ঠেকাতে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নেকড়ের পরিবারের ওপর নজর রাখা যেতে পারে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে বন্যপ্রাণী রক্ষার কাজটি অনেক সহজ করে দিতে পারে।
লেগুনা মালিকদের কাছ থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ছাত্রলীগের এক নেতার চাঁদা আদায়ের ভিডিও ফাঁস হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ও লেগুনা মালিকদের ভাষ্য, সাভার থেকে আশুলিয়াগামী লেগুনা চলাচলে বাধা না দেওয়ার শর্তে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তিন বান্ডিল টাকা নিয়েছেন শাখা ছাত্রলীগের এক নম্বর সহসভাপতি সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ। চাঁদা আদায়ের ভিডিও ফুটেজটি দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে। তাতে দেখা গেছে, সাজ্জাদ প্রথমে লুঙ্গির ভাঁজে টাকাগুলো রাখার চেষ্টা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সূত্র জানিয়েছে, অভিযুক্ত সাজ্জাদুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের (৪৩তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন। এখন মওলানা ভাসানী হলে অবস্থানরত এই ছাত্রলীগ নেতা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী।
ছাত্রলীগ ও লেগুনা মালিকদের সূত্রে জানা গেছে, সাভার থেকে আশুলিয়াগামী লেগুনা চলাচলে বাধা না দেওয়ার শর্তে প্রতিটি লেগুনা বাবদ দিনপ্রতি ২৫ টাকা করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে চাঁদা দেওয়া হতো। তবে বিগত দুই মাস সেই চাঁদা দেওয়া বন্ধ ছিল। ছাত্রলীগের নেতারা এবার প্রতিটি লেগুনার জন্য দিনপ্রতি ১০০ টাকা করে চাঁদা দাবি করেন। লেগুনা থেকে চাঁদা আদায়ের নতুন চুক্তি করতে গত ২৫ জুলাই ২৪টি লেগুনা আটকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে রাখা হয়। চারদিন আলোচনার পর এক লাখ ২০ হাজার টাকায় লেগুনাগুলো ছেড়ে দেওয়ার চুক্তি হয়।
দেশ রূপান্তরের হাতে আসা দুই মিনিট ১৫ সেকেন্ডের ভিডিও ফুটেজটিতে দেখা যায়, মাওলানা ভাসানী হলের দুই তলায় মসজিদের সামনে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন সাজ্জাদুল ইসলাম। সেখানে চাঁদার টাকা নিয়ে আসেন লেগুনা চলাচল নিয়ন্ত্রণকারীদের মধ্যে মিন্টু গাজী ও ফজা। সেখানে আরও এক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মিন্টু গাজী সাজ্জাদের হাতে তিন বান্ডিল টাকা তুলে দেন। প্রথমে সাজ্জাদ লুঙ্গির ভাঁজে টাকাগুলো রাখার চেষ্টা করেন। পরে সিঁড়ির কোনা থেকে একটি ব্যাগ নিয়ে তাতে টাকা মুড়িয়ে চলে যান।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানায়, সাজ্জাদের হাতে মিন্টু গাজী ও ফজা মোট ১ লাখ ২০ হাজার টাকা তুলে দেন। পরে চাঁদার একটি অংশ (২০ হাজার টাকা) মীর মশাররফ হোসেন হলে অবস্থানকারী ছাত্রলীগ নেতাদের দেওয়া হয়। চাঁদা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে লেগুনা মালিক ফজা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ এমনকি পুলিশ এবং আরও মানুষকেও টাকা দিতে হয়। এভাবে লেগুনা চালানো যায় না। তবে সাজ্জাদকে কত টাকা দিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি। এদিকে ভিডিওটি গত বছরের দাবি করে সাজ্জাদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, মিন্টু গাজীর সঙ্গে আমার ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। সেই হিসেবে তিনি আমাকে টাকা দেন। যার তথ্য-প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে। আমাকে ফাঁসানোর জন্য এসব করা হচ্ছে।
টাকার ভাগ নেওয়া কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক কার্যকরী সদস্য এস এম দিদারুল আলম দ্বীপ বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটা মিথ্যা। আমি জড়িত থাকলে তো আমারও ভিডিও ফাঁস হতো। যেহেতু সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক। তাই আমাকে বিতর্কিত করতেই হয়তো মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, সাজ্জাদ জানিয়েছে, তাদের সঙ্গে সাজ্জাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে তারা পাওনা টাকা দিতে এসেছিল। ভিডিওটি গত বছরের নভেম্বর মাসের বলে শুনেছি। তবুও আমরা খোঁজ নিয়ে দেখব। চাঁদাবাজির সঙ্গে ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে ফোন করেও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম। দীর্ঘ ৩৪ বছর পর বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে তৃতীয় ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি নির্বাচিত হলেন মাহবুবুল আলম।
এ ছাড়া সিনিয়র সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিপণন সমিতির ও এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী। এর বাইরে সহসভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ছয়জন পরিচালক। এর মধ্যে চেম্বার গ্রুপ থেকে সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খায়রুল হুদা চপল, গাজীপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোহাম্মদ আনোয়ার সাদাত সরকার, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি যশোদা জীবন দেবনাথ।
এ ছাড়া অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি শমী কায়সার, মেইজি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি রাশেদুল হোসেন চৌধুরী রনি এবং এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মো. মুনির হোসেন।
গতকাল বুধবার বিকেলে এফবিসিসিআইয়ের অডিটোরিয়ামে সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি ও সহসভাপতিদের নাম ঘোষণা করেন এফবিসিসিআই নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান এ মতিন চৌধুরী। এ সময় এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন ও সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, ইলেকশন বোর্ডের সদস্য কে এম এন মঞ্জুরুল হক, মো. শামসুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মাহবুবুল আলম ১৯৫৮ সালে চট্টগ্রামের রাউজানে জন্মগ্রহণকারী মাহবুবুল আলম ভোগ্যপণ্য আমদানি ছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায় নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তিনি আলম ট্রেডিং করপোরেশন, এম আলম গ্যাস স্টেশনের স্বত্বাধিকারী, সার্জিস্কোপ হাসপাতাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক ও স্টার এলাইড ভেঞ্চারের ভাইস চেয়ারম্যান, সি-বে লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডায়মন্ড ইন্স্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান ও এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান।
গতকাল এফবিসিসিআইয়ের নবনির্বাচিত সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে কাজ করব। এ জন্য সবার সহযোগিতা চাই। আজ থেকে আমরা সবাই এক। আমাদের কথা এবং দাবিও হবে এক। দিন শেষে আমাদের একটাই পরিচয় আমরা ব্যবসায়ী।’
এ বছর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বিজনেস সামিট বিশে^র বুকে বাংলাদেশকে নতুন করে তুলে ধরেছে। তিনি আরও বলেন, এ বছর বিজনেস সামিট আয়োজন ছিল অনবদ্য একটি আয়োজন। ২০২৪ সালে একটি বিজনেস সামিট করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। এ জন্য বোর্ডের সবার সহযোগিতা চাই।’
মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সামনে নির্বাচন, আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। এফবিসিসিআই বোর্ড একটি ফ্যামিলির মতো করে চালাবে। সবাইকে আপন করে নেবে। নিজেদের মধ্যে যাতে কোনো ভেদাভেদ না থাকে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারলে অনেক সমস্যা সমাধান করতে পারব।’
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, এফবিসিসিআই হলো ব্যবসায়ীদের অনেক বড় একটি পরিবার। সাবেকরা ফেডারেশনের দায়িত্ব পালন শেষ করলেও এখনো ফেডারেশনকে ধারণ করেন উল্লেখ করে প্রয়োজনে যেকোনো সময় ব্যবসায়ীদের পাশে থাকার কথা জানান তিনি।
এর আগে গত ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিত নির্বাচনে খাতভিত্তিক অ্যাসোসিয়েশনের ২৩টি পদের মধ্যে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ ১৫ এবং ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ ৮ জন পরিচালক পদে নির্বাচিত হয়েছে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিক্ষোভকারীদের ওপর অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। গতকাল বুধবার নিউ ইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে।
সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক মহলকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। সেখানে বিরোধীদের ওপর নিপীড়নমূলক হামলা চালানো হচ্ছে। এটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওই প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ছাড়া বিরোধী নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে উল্লেখ করে এইচআরডব্লিউ বলেছে, এতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিবৃতিতে এইচআরডব্লিউর এশিয়াবিষয়ক উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেছেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর পরিচালিত বর্বরোচিত দমন অভিযানকে নির্বাচন গণতান্ত্রিক না হওয়ার সতর্কসংকেত হিসেবে দেখা উচিত হবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের। জুলাইয়ের শেষদিকে বিরোধীদলীয় সমর্থকদের ওপর বাংলাদেশ পুলিশ নির্বিচার রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করেছে। এ সময় বিরোধী সমর্থকদের পিটুনিও দেওয়া হয়েছে। গত ২৯ জুলাইয়ের কর্মসূচি ঘিরে কয়েক দিনে কর্র্তৃপক্ষ প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) আট শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। এটা দৃশ্যত রাজনৈতিক বিরোধীদের নিশানা করে আটকের চেষ্টা।
বিএনপির নেতারা বলেছেন, বিক্ষোভে সহিংসতায় তাদের অন্তত ১০০ সমর্থক আহত হয়েছেন। পুলিশ ও বিরোধী দলের সমর্থকদের সংঘর্ষের ভিডিওতে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা লোকজনকে পিটুনি ও লাথি মারার মধ্য দিয়ে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিরস্ত্র মনে হয়েছে। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং পুলিশের গাড়িতে আক্রমণ করেছেন। এতে অন্তত ৩২ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।
নির্বাচনকেন্দ্রিক নিপীড়নের এসব ঘটনা ঘটেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমোন গিলমোরের সফর চলাকালে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সফর শেষে।
পুলিশ বলেছে, ২৯ জুলাই কর্মসূচি পালনে বিএনপিকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সভা-সমাবেশের অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। তাছাড়া বিক্ষোভ আইনগতভাবে নিষিদ্ধ না হলে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে বলপ্রয়োগের ক্ষেত্রে মানবাধিকারের মানদণ্ডও মেনে চলতে হবে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় বাংলাদেশ কর্র্তৃপক্ষকে জরুরিভাবে পুলিশকে বলতে হবে বলপ্রয়োগের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিধিবিধান মেনে চলার জন্য। পাশাপাশি এটা স্পষ্ট করতে হবে যে, যারা এ ক্ষেত্রে বিধিবিধান মেনে চলবেন না, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বাংলাদেশ সরকারের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের প্রকাশ্যে জোরালোভাবে বলতে হবে যে, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে গুরুতর অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় কঠোর ও সময়োচিত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে বাণিজ্য-সুবিধাসহ সহযোগিতার অন্যান্য ক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়বে।
মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেছেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মহলের কঠোর নজরদারির মধ্যে থাকার বিষয়টি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ভালোভাবে অবগত। তাই নিবর্তনমূলক গণগ্রেপ্তার ও সহিংস দমনাভিযানের মধ্য দিয়ে বিরোধীদের অকার্যকর করলে বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে বলে মনে করার মতো বোকা কোনো ব্যক্তি নেই।
জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। যে সিরিজে চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। আর এই সিরিজে পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল! এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। একদিন পরে অবশ্য অবসর ভাঙলেও সেই সিরিজ আর খেলেননি তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে সাকিব সেই সিরিজ হারের দায় দিলেন তামিমের ওপরই।
'আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হারটা আমি পুরোপুরি একজনকে দায় দেব, অধিনায়ক। এক ম্যাচ পরে আমাদের হাতে আরও দুই ম্যাচ ছিল। আমরা তৃতীয় ম্যাচে ঠিকই কামব্যাক করেছি কিন্তু একটা ম্যাচ সময় লেগেছে আমাদের। সুতরাং এটা আর কারো দায় নয়, পুরো সিরিজটায় দায় একজনের ওপর। বিশ্বের কোথাও অন্তত দেখিনি যে এক ম্যাচ পরেই এরকম অধিনায়ক এসে ইমোশনালি বলে ফেলেন যে আমি ভাই খেলব না আর ক্রিকেট।’
সাকিব বলেন, 'আমার ধারণা যদি কোনো অধিনায়কের দায়িত্ববোধ থাকত, সে এটা করতে পারত না। আমার কাছে মনে হয়, এটা দলকে অনেক বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে এবং আমার মনে হয় ওইটাই এখনো রিকভার করতে সময় লাগছে, যেটা আমি অনুভব করি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।