
এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া বিদেশে বিনিয়োগ ও অর্থ স্থানান্তরের বিষয়ে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে দেশের বাইরে অর্থ পাঠানো হয়েছিল কি না, অর্থ পাচার হয়েছে কি না, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও সিআইডিকে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছে আদালত।
এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে গতকাল রবিবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেয়। আগামী ৮ অক্টোবর এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হবে।
গত ৪ আগস্ট ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এস আলম গ্রুপ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া সাইপ্রাস, সিঙ্গাপুর ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে অর্থ স্থানান্তর করেছে। সেখানে এস আলম গ্রুপের কর্ণধার এস আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের সন্ধান পাওয়া গেছে।
ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূমধ্য সাগরীয় ছোট দেশ সাইপ্রাস ২০০৭ সালে তাদের ‘গোল্ডেন পাসপোর্ট’ কর্মসূচি চালু করে। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক পরামর্শদাতা সংস্থার মতে, এ প্রকল্পের আওতায় দেশটির আবাসন খাতে প্রায় ২ মিলিয়ন ইউরো (২ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বিনিয়োগ এবং সাইপ্রাস সরকারের গবেষণা ও ভূমি উন্নয়ন তহবিলে আরও ২ লাখ ইউরো অনুদানের বিনিময়ে ধনী বিদেশিদের সাইপ্রাসের নাগরিকত্বের সুযোগ দেওয়া হয়।
সিঙ্গাপুরের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড করপোরেট রেগুলেটরি অথরিটি (এসিআরএ) থেকে পাওয়া প্রতিষ্ঠানের প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, এর দুই বছর পর ২০০৯ সালের ২৭ আগস্ট সাইফুল আলম ও ফারজানা পারভীন নিজেদের সাইপ্রাসের নাগরিক এবং সিঙ্গাপুরের বাসিন্দা দেখিয়ে সিঙ্গাপুরে ক্যানালি লজিস্টিকস প্রাইভেট লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময় কোম্পানিটির ইস্যু করা ও পরিশোধিত শেয়ার মূলধনের পরিমাণ ছিল ২২ দশমিক ৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৩০ মিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলার)। এস আলম ও তার স্ত্রী একমাত্র শেয়ারহোল্ডার ছিলেন। আলম ৩০ মিলিয়ন শেয়ারের ৭০ শতাংশ এবং তার স্ত্রী বাকি ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন।
সিঙ্গাপুরে বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশটিতে রেসিডেন্স পারমিট বা বিদেশিদের থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া এস আলম ও তার স্ত্রী ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জের আরও একটি অফশোর শেল কোম্পানি পিকক প্রপার্টি লিমিটেডের সঙ্গেও যুক্ত। সিঙ্গাপুর থেকে ১৭ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরের ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস এমন এক ট্যাক্স হ্যাভেন বা কর স্বর্গ, যেখানে আয়কর, করপোরেট কর বা মূলধনী কর নেই।
আরেক কর স্বর্গ সাইপ্রাসে ২০১৬ সালে এস আলম অ্যাকলেয়ার ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান কেনেন। সাইপ্রাসের কোম্পানির রেজিস্ট্রার বিভাগ এবং অফিশিয়াল রিসিভারের নথি অনুসারে, পরবর্তীকালে কোম্পানিটির নাম পরিবর্তন করে অ্যাকলেয়ার ইন্টারন্যাশনাল রাখা হয়।
গতকাল হাইকোর্টের এ বেঞ্চে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করে এস আলমের অর্থ স্থানান্তরের বিষয়ে অনুসন্ধানের নির্দেশনা চান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। রুলে অভিযোগ ওঠা অর্থ পাচার রোধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত হবে না জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে অভিযোগ অনুসন্ধানে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না রুলে তাও জানতে চেয়েছে আদালত। দুদক ও বাংলাদেশ ব্যাংককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ।
অ্যাডভোকেট খুরশীদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠান বিএফআইইউ, দুদক ও সিআইডি প্রতিবেদন দেবে। আমাদের ওপর রুল হয়েছে।’
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুদ্দিন খালেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশের অনুলিপি পেলে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুসন্ধানের বিষয়ে অবহিত করা হবে।’
দেশে এখন ডেঙ্গুর পাশাপাশি আরও দুই ধরনের জ্বর নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। এর মধ্যে বেশি পাওয়া যাচ্ছে ভাইরাসজনিত জ্বর। বিভিন্ন হাসপাতালের বহির্বিভাগে ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে আসা জ্বরের রোগীর অর্ধেক ডেঙ্গু ও অর্ধেক সাধারণ ভাইরাসজনিত জ্বরের রোগী। এ দুই জ্বরের পাশাপাশি ঢাকা শহরে উদ্বেগজনকসংখ্যক টাইফয়েড জ্বরের রোগীও পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকরা বলছেন, কিছু নির্দিষ্ট উপসর্গের ভিত্তিতে ডেঙ্গু ও সাধারণ ভাইরাসজনিত জ্বরের রোগীদের আলাদা করা যাচ্ছে। কিন্তু টাইফয়েড জ্বরের উপসর্গ ডেঙ্গুজ¦রের সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়। সে কারণে এ মৌসুমে যে কারও জ্বর হলেই তাকেই ডেঙ্গু এনএস১ পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা গতকাল রবিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখন দেশে তিন ধরনের জ্বর দেখা যাচ্ছে ও এ তিন ধরনের রোগীর সংখ্যাও অনেক। এগুলো হলো ডেঙ্গুজ্বর, সাধারণ ভাইরাসজনিত জ্বর বা ভাইরাল ফিভার ও টাইফয়েড জ্বর। পরীক্ষার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, কারও জ্বর হলেই ডেঙ্গু এনএস১ পরীক্ষা করে বাকি দুটি জ¦রকে আলাদা করে ফেলতে হবে। এতে চিকিৎসা সহজ হবে ও রোগীও দ্রুত সুস্থ হবে।
অর্ধেক ডেঙ্গ, অর্ধেক ভাইরাল ফিভারের রোগী : গত দুদিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বহির্বিভাগে গিয়ে ভাইরাল ফিভার রোগীদের লম্বা লাইন দেখা গেছে। গতকাল দুপুরে ঢামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগে কথা হয় যাত্রাবাড়ী থেকে আসা আবদুল কুদ্দুসের সঙ্গে। তার পাঁচ বছরের শিশু তামান্নার গত তিন দিন ধরে জ্বর। স্থানীয় এক চিকিৎসককে দেখিয়েছেন ও চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু জ্বর কমছে না। বাধ্য হয়ে তিনি গতকাল শিশুকে নিয়ে এসেছেন হাসপাতালে। তামান্নার বাবা বলেন, ডাক্তার দেখেছে। রক্ত পরীক্ষা করেছে। বলেছে সাধারণ জ্বর। এটা এখন হচ্ছে। তিনি ওষুধ দিয়েছেন। বলেছেন ভালো হয়ে যাবে।
কথা হয় এই হাসপাতালের বহির্বিভাগের অ্যাডমিশন ইনচার্জ আবদুল মামুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, গতকাল বহির্বিভাগে মেডিসিন ও শিশু বিভাগে সাড়ে সাতশর মতো রোগী এসেছে। এর মধ্যে শিশু বিভাগে আড়াইশ ও মেডিসিন বিভাগে পাঁচশর মতো। এ দুই বিভাগের সাধারণ জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছে ৪০ জন রোগী। তাদের মধ্যে শিশু ১০ জন। বাকিদের পরীক্ষা করে ও চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, গত ১৫ দিনে বহির্বিভাগে সাধারণ ভাইরাসজনিত জ্বরের রোগী বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান দেশ রূপান্তরকে জানান, প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৭০০-৮০০ জন জ¦রের রোগী আসছে। গত ১৫ দিনের তুলনায় এ সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি। এসব জ¦রের রোগীর মধ্যে ২৫-৩০ শতাংশ ডেঙ্গুজ্বর, বাকি রোগীরা সাধারণ ভাইরাসজনিত জ¦র বা সাধারণ ঠান্ডাজ্বরের রোগী।
এ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাজমুল আহসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ল্যাবএইড হাসপাতালে আমার ব্যক্তিগত চেম্বারে এখন আসা মোট জ্বরের রোগীর অর্ধেক ডেঙ্গু ও অর্ধেক ঠান্ডাজ্বর। এ ছাড়া কিছু হেপাটাইটিস-এ রোগীও পাওয়া যাচ্ছে। তবে বেশি পাওয়া যাচ্ছে ঠান্ডাজ্বরের রোগী।’
ভাইরাল ফিভারের উপসর্গ : অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা বলেন, ভাইরাল ফিভার এক ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো, শ্বাসনালির সংক্রমিত হয়। নাকে, গলায়, এমনকি ফুসফুসে এক ধরনের ভাইরাস সংক্রমণের কারণে জ¦র হয়। এটাতে গায়ে ব্যথাও হয়। সেজন্য অনেক সময় সংশয় দেখা দেয় এটা ডেঙ্গু, নাকি অন্য ভাইরাল ফিভার। ভাইরাল ফিভারের লক্ষণ হলো সাধারণত নাকে পানি পড়ে ও কাশি থাকে। কিন্তু ডেঙ্গুজ্বরের রোগীদের এ দুটি উপসর্গ থাকে না। এ ভাইরাল ফিভারে পাতলা পায়খানা হয় না, কিন্তু ডেঙ্গুজ্বরে অনেকের পাতলা পায়খানা হয়।
এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ডেঙ্গুজ্বর ও ভাইরাল ফিভার চার-পাঁচ দিনের মধ্যেই চলে যায়। কিন্তু ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে জ্বর চলে যাওয়ার পর কিছু জটিলতা দেখা দেয়। ভাইরাল ফিভার ভালো হওয়ার পর তেমন কোনো জটিলতা থাকে না, একটু দুর্বলতা থাকে। ভাইরাল ফিভার রোগীদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার নেই। শুধু প্যারাসিটামল ও কাশির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ দিলেই হয়।
দেখা দিচ্ছে টাইফয়েড জ্বর : অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা বলেন, আরেকটা জ্বর ঢাকা শহরে বেশি দেখা যাচ্ছে। সেটা টাইফয়েড জ্বর। এটা টাইফয়েডের মৌসুম। এ ধরনের জ্বরের রোগীর সংখ্যাও একেবারে কম নয়, উদ্বেগজনকসংখ্যকই।
এ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বলেন, টাইফয়েড জ¦র যখন বেশি থাকে, তখন শুরুতে পাতলা পায়খানা থাকে। ডেঙ্গু ও টাইফয়েড জ্বর পরীক্ষা ছাড়া আলাদা করা কঠিন। তবে ডেঙ্গু হলে এনএস১ পরীক্ষা করে নির্ণয় করা যায়। সেজন্য যাদের চার-পাঁচ দিন পরও জ¦র থাকে, তাদের ক্ষেত্রে টাইফয়েড ধরে নেওয়া হয়। তাদের রক্ত পরীক্ষা করা হয়। এভাবে দ্রুত টাইফয়েড শনাক্ত করা যায়। তিনি জানান, এখন নিউমোনিয়া জ্বরের রোগীও পাওয়া যাচ্ছে। তবে বছর জুড়ে যে পরিমাণ থাকে, তার চেয়ে বেশি না।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাজমুল আহসান বলেন, ভাইরাল ফিভারের বেশিরভাগ রোগী আক্রান্তের তিন-চার দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। নিজে নিজে চিকিৎসা নেওয়া যাবে না। যেকোনো সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগে দেখালেই হবে। সেখানেই শনাক্ত করা যায় কোন ধরনের জ্বর। এমন নয় যে এ জ্বরের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে হবে।
এ চিকিৎসক আরও বলেন, যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে এ জ্বরের মৌসুমটা আগস্ট পর্যন্ত চলবে। তবে সেপ্টেম্বরেও থাকতে পারে। যতদিন বৃষ্টি থাকবে, ততদিন এ ধরনের জ¦র থাকবে।
“সব শালা কবি হবে/পিঁপড়ে গোঁ ধরেছে, উড়বেই;/বন থেকে দাঁতাল শুয়োর/রাজাসনে বসবেই” আদমজীর সামনে ২০ হাজার শ্রমিকের সমাবেশে এ কবিতা পড়ে এক কবি তার নাম রটিয়ে দিলেন মুখে মুখে। কবিতার নাম খোলা কবিতা। স্বৈরাচার এরশাদ তখন রাজাসনে। মানুষের মুক্তির জন্য পঞ্চাশের দশকের পর খুব কম আধুনিক কবিই কবিতা লিখেছেন, মোহাম্মদ রফিক তার মাটিবর্তী গাওদিয়া, কীর্তিনাশা থেকে বসবাস করা সত্ত্বেও এ শহরে ফিরে আসেননি। এবার চলে গেলেন একেবারে শেষবারের মতো।
তার অনুজ সাবেক অর্থ সচিব মোহাম্মদ তারেকের কাছেই শুনলাম মাথায় আকাশ ভেঙে পড়া খবরটি। শিমুল, তোমার রফিক স্যার তো নাই। বরিশালে গিয়েছিলেন গতকাল রবিবার সকালে, বোনের বাড়ি থেকে ঢাকা আসার পথে মাদারীপুরের রাজৈরের কাছে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে সেখানকার স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাকে নেওয়া হয়। চিকিৎসক সেখানেই তাকে রাত ১০টা ৩০ মিনিটের দিকে মৃত ঘোষণা করেন। কবির প্রবাসী বড় ছেলে শুভব্রত রফিক তখন ছিলেন কবির সঙ্গেই, গাড়িতে। তাকে সেখান থেকে দ্রুত বাগেরহাটে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানান সাবেক অর্থ সচিব মোহাম্মদ তারেক। তার মানে রফিক স্যারের কথামতোই ঢাকায় তাকে আর আনা হচ্ছে না। কীর্তিনাশা, কপিলা, গাওদিয়ার কবি, কাটাখালী হয়ে ফিরে যাচ্ছেন বাগেরহাটে, মায়ের কবরের পাশেই সমাহিত হবেন তিনি।
বাংলা কবিতার আরেকটা বড় অধ্যায় শেষ হলো। ২২ শে শ্রাবণে।
সামান্য থিতু হয়ে যখন লিখছি, তখন সবার আগে মনে পড়ছে কপিলার কথা, তা ছাপিয়ে গাওদিয়া কথা, তা ছাপিয়ে আসছে কালাপানি দরিয়ার ঘ্রাণ ‘মাঠে-মাঠে ছড়িয়ে মেঘের লাশ,/রক্ত বন্যা, উজিয়ে নক্ষত্ররাজি, ফুটে ওঠে ঘাসফুল;/তাই বলে, আকাশ বলেনি পৃথিবীকে, চল বাঁধি ঘর!’// (কালাপানি, ২০০৬)
বাংলা কবিতার মনোযোগী পাঠককে স্বীকার করতেই হবে, ষাটের দশকে ‘সমকাল’ ও ‘কণ্ঠস্বরে’ লেখালেখি শুরু করা কবি মোহাম্মদ রফিক জীবনভর নদী, জল, কাদামাটির সঙ্গে যুক্ত জীবনযাপনের চিত্র তুলে এনে তার স্বাদু কবিতার মধ্য দিয়ে বাংলা কবিতার ভাণ্ডার মণিরত্নে ভরে দিয়েছেন। কীর্তিনাশা, কপিলা, গাওদিয়া, খোলা কবিতা, বিষখালী সন্ধ্যা বা কালাপানি, অশ্রুময়ীর শব বা নোনাঝাউ তার এসব কাব্য বাংলা কবিতায় অনন্য সংযোজন বলে স্বীকার করবেন কবিতার পাঠক পদবাচ্যের যে কেউ। সামরিক শাসন ও শাসকের তথাকথিত কবি হওয়ার অভিলাষের বিরুদ্ধে তার রচিত বহুবিশ্রুত পঙ্ক্তি ‘সব শালা কবি হবে’। আধুনিক বাংলা কাব্যসম্ভারে তার ‘কপিলা’ (১৯৮৩) মহাকাব্যোপম এক সৃষ্টি।
অরুণ সেন বলতেন তাকে সর্বমানুষের মুক্তি-চেতনার কবি। মোহাম্মদ রফিকের জন্ম ১৯৪৩ সালে ২৩ অক্টোবর বাগেরহাট জেলার বেমরতা ইউনিয়নের বৈটপুর (বর্তমান চিতলী) গ্রামে। পিতা সামছুদ্দীন আহমদ এবং মাতা রেশাতুন নাহার। আট ভাইবোনের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা মোহাম্মদ রফিক ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলনে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে এবং স্বাধীন বাংলাদেশে আশির দশকের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছেন। খুলনার বাগেরহাটেই কেটেছে কবির শৈশব। স্থানীয় বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু করলেও পরে পিরোজপুর জেলা স্কুল, বরিশাল ও খুলনা জেলা স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। খুলনা জেলা স্কুল থেকে ১৯৫৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশন (মাধ্যমিক) পাস করেন তিনি। এরপর ঢাকার নটর ডেম কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন, কিন্তু পরে ঢাকা কলেজে মানবিক বিভাগে চলে যান। এ সময় কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়, যা তার সাহিত্যিক চেতনায় প্রগাঢ় ছাপ ফেলে। ১৯৬১ সালে ইন্টার মিডিয়েট (উচ্চ মাধ্যমিক) পাস করেন। সে বছরই রাজশাহী সরকারি কলেজে ইংরেজিতে অনার্সসহ স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন কবি মোহাম্মদ রফিক। এরপর অংশ নেন সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে। সামরিক আইনে তাকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় সামরিক আদালত। এ সময় দিনের পর দিন পালিয়ে বেড়ান। তবুও জেল এড়াতে পারেননি। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকায় তাকে বহিষ্কার করা হয় রাজশাহী কলেজ থেকে। পরে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে মামলায় জয়লাভ করে পাসকোর্সে বিএ পাস করেন ১৯৬৫ সালে। একই বছর ইংরেজি বিষয়ে এমএতে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
১৯৬৭ সালে মোহাম্মদ রফিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। কবি যুক্ত হন ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে, আইয়ুব শাহির আমলে খুলনা, যশোর, বাগেরহাট এবং পরবর্তী সময়ে বগুড়া ও রাজশাহী অঞ্চলে ছাত্র ইউনিয়নকে সংগঠিত করেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ বৈশাখী পূর্ণিমায় প্রকাশিত হয় ১৯৭০ সালে। ১৯৭১ সালে সক্রিয়ভাবে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন ১ নম্বর সেক্টরের হয়ে। স্মরণীয় ভূমিকা রেখেছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রকে সংগঠিত করে তুলতে। ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত হয় মোহাম্মদ রফিকের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ধুলোর সংসারে এই মাটি। আশির দশকের শুরুতে স্বৈরাচার এরশাদের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের প্রেক্ষাপটে দেশে সাম্প্রদায়িকতা, দারিদ্র্য ও একনায়কতন্ত্রের যে ভয়াল থাবা বিস্তৃত হয়, তারই প্রেক্ষাপটে লেখেন খোলা কবিতা (১৯৮৩)। যার লাখ লাখ কপি বিলি করেছে স্বৈরাচারের পতনপ্রত্যাশী, গণতন্ত্রকামী বাংলাদেশের মানুষ।
কীর্তিনাশা (১৯৭৯), খোলা কবিতা ও কপিলা (১৯৮৩), গাওদিয়া (১৯৮৬), স্বদেশী নিঃশ্বাস তুমিময় (১৯৮৮), মেঘে এবং কাদায় (১৯৯১), রূপকথা কিংবদন্তি (১৯৯৮), মৎস্যগন্ধা (১৯৯৯), মাতি কিসকু (২০০০), বিষখালী সন্ধ্যা (২০০৩), নির্বাচিত কবিতা (২০০৩), কালাপানি (২০০৬), নির্বাচিত কবিতা (২০০৭), নোনাঝাউ (২০০৮), দোমাটির মুখ (২০০৯), অশ্রুময়ীর শব (২০১১), কালের মান্দাস (২০১২), ঘোরলাগা অপরাহ্ণ (২০১৩), বন্ধু তুমি প্রসন্ন অবেলায় (২০১৫) এসবই মোহাম্মদ রফিকের কবিতাগ্রন্থ। ঐতিহ্য প্রকাশ করেছে কীর্তিনাশা, গাওদিয়া ও কপিলা নিয়ে কাব্যসংকলন ত্রয়ী (২০০৯)। ঐতিহ্য আরও প্রকাশ করেছে মোহাম্মদ রফিক রচনাবলি-১ (২০০৯) মোহাম্মদ রফিক রচনাবলি-২ (২০১০)। ১৯৯৩ সালে অরুণ সেনের সম্পাদনায় কলকাতার প্রতিক্ষণ থেকে প্রকাশিত হয়েছে মোহাম্মদ রফিকের নির্বাচিত কবিতা। কবিতার পাশাপাশি তার রয়েছে বেশ কয়েকটি গদ্যগ্রন্থ। এর মধ্য ভালোবাসার জীবনানন্দ (২০০৩), আত্মরক্ষার প্রতিবেদন (২০০১, ২০১৫) ও স্মৃতি বিস্মৃতির অন্তরালে (২০০২) অন্যতম। কবি মোহাম্মদ রফিক আইওয়াতে ইন্টারন্যাশনাল রাইটিং প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন ১৯৯৩ সালে। মার্কিনিদের আইওয়া শহরের অভিজ্ঞতা, ভিনদেশের লেখকদের সঙ্গে কবির মতবিনিময়, দেশ-বিদেশের সাহিত্যের খবর ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ২০০৩ সালে প্রকাশিত হয় তার ‘দূরের দেশ নয় আয়ওয়া’ বইটি। নব্বইয়ের দশকে বেশ কিছু ছোটগল্প লেখেন কবি।
বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান মোহাম্মদ রফিক। এ ছাড়া আলাওল পুরস্কারসহ (১৯৮১) বিভিন্ন পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।
রাজধানী ঢাকা লাগোয়া নারায়ণগঞ্জ জেলার শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত রূপগঞ্জ উপজেলা। এ উপজেলায় পড়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ দুটি মহাসড়কের বড় একটি অংশ। মহাসড়ক দুটি হলো ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এবং এশিয়ান বাইপাস সড়ক। মহাসড়ক দুটিতে চাঁদাবাজ চক্র দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এখানে চাঁদা ছাড়া যেন ঘোরে না কোনো গাড়ির চাকা। মহাসড়ক দুটিতে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহন থেকে মাসে প্রায় অর্ধকোটি টাকার চাঁদা আদায় হয়। চাঁদার টাকা যায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের পকেটে। নেতাকর্মীদের পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশকেও প্রতি মাসে চাঁদা দিতে হয়।
হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে বেপরোয়া চাঁদাবাজির অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও মালিকরা। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এ মহাসড়ক থেকে হাইওয়ে পুলিশ প্রতি মাসে চাঁদা হিসেবে অন্তত ১০ লাখ টাকা আদায় করে। হাইওয়ে পুলিশের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে পরিবহন চালক ও পরিবহন মালিকরা।
রূপগঞ্জ উপজেলায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যাত্রামুড়া এলাকা থেকে আধুরিয়া পর্যন্ত পড়েছে ১৪ কিলোমিটার ও এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়কের ১৫ কিলোমিটার অংশ রয়েছে। আর এ দুটি মহাসড়ক কাঁচপুর হাইওয়ে থানা, ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্প ও বিশ্বরোড পুলিশ বক্সের অধীনে রয়েছে। কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসির দায়িত্বে রয়েছেন পরিদর্শক রেজাউল হক, ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের দায়িত্বে আছেন আবু নাঈম ও বিশ্বরোড পুলিশ বক্সের দায়িত্বে আছেন পরিদর্শক শরফ উদ্দিন। এ তিনজনের নেতৃত্বে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান বাইপাস সড়কে হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজি চলে বলে অভিযোগ স্থানীয় পরিবহন মালিক এবং চালক-শ্রমিকদের। এ দুটি মহাসড়ক ঘিরে গড়ে উঠেছে দেশের অন্যতম কাপড়ের বাজার গাউছিয়া মার্কেট, পাইকারি কাঁচামালের আড়তসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানা। এ ছাড়া রয়েছে পূর্বাচল উপশহর। এসব কারণে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এখানে আসে। এ সবকিছুকে ঘিরে গড়ে উঠেছে দূরপাল্লার বাস, ট্রাক ও পিকআপ স্ট্যান্ড। একই সঙ্গে বেড়েছে পরিবহন খাতে চাঁদাবাজিও। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজারো গাড়ি চলাচল করে। রূপগঞ্জের ভুলতা থেকে কাঁচপুর, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, কুড়িল বিশ্বরোড, সায়েদাবাদ, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন রুটে চলাচল করা বাস, ট্রাক, লেগুনা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার ও ট্রাকের বেশিরভাগই ফিটনেসবিহীন ও কাগজপত্র ছাড়া চলছে। এসব ফিটনেসবিহীন যানগুলো হাইওয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করে চলছে বলে অভিযোগ। পরিবহন খাতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও রয়েছে বেপরোয়া চাঁদাবাজির অভিযোগ।
পরিবহন মালিক ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভুলতা থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত লেগুনা চলাচল করে ৭০-৮০টি। লেগুনাগুলোর কোনো বৈধ কাগজপত্র না থাকায় কাঁচপুর লেগুনাস্ট্যান্ড থেকে পুলিশ পায় মাসে ৬০ হাজার টাকা। এ ছাড়া কাঁচপুর অটোরিকশা, সিএনজি স্টেশন থেকে হাইওয়ে পুলিশ মাসে পায় ২০ হাজার টাকা। বরপা থেকে যাত্রাবাড়ী লেগুনাস্ট্যান্ড থেকে প্রতি মাসে ৬০ হাজার টাকা হাইওয়ে পুলিশ পায়। মহাসড়কের পাশের চোরাই তেলের দোকানগুলো থেকে কামাল নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে মাসে ১০ হাজার ও মাসুম নামে আরেকজনের মাধ্যমে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা পায় হাইওয়ে পুলিশ। এ ছাড়া আরও কিছু চোরাই তেলের দোকান থেকে মাসিক ২০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় হয়। গোলাকান্দাইল গোলচত্বরের ভেতরে অবৈধ দোকানপাট থেকে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার মাধ্যমে হাইওয়ে পুলিশ পায় মাসে ১০ হাজার টাকা। গোলাকান্দাইল বাসস্টেশনের পশ্চিমপাড় থেকে সোহাগের মাধ্যমে পায় মাসে ২০ হাজার টাকা। গোলাকান্দাইল ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় প্রাইভেট কার স্ট্যান্ড থেকে মাসুমের মাধ্যমে হাইওয়ে পুলিশ পায় ২০ হাজার টাকা। ভুলতা থেকে কুড়িল বিশ্বরোড, মীরের বাজার, কাঞ্চন সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে তালালের মাধ্যমে হাইওয়ে পুলিশ পায় ২০ হাজার টাকা। ভুলতা থেকে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত বিআরটিসি বাস স্টেশন থেকে যুবলীগের এক স্থানীয় প্রভাবশালী নেতার মাধ্যমে হাইওয়ে পুলিশ পায় ২০ হাজার টাকা। ভুলতা থেকে গুলিস্তানগামী গ্লোরী, আসিয়ান, গাউছিয়া এক্সপ্রেস বাসস্টেশন থেকে পায় ৩০ হাজার টাকা। ভুলতার প্রাইভেট কার, হাইএস স্ট্যান্ড থেকে এক আওয়ামী লীগ নেতার মাধ্যমে পায় ৩০ হাজার টাকা। ভুলতা ফাঁড়ির সামনের অটোস্ট্যান্ড থেকে জাহিদের মাধ্যমে পায় মাসে ২০ হাজার টাকা। ভুলতায় আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে নসিমনস্ট্যান্ড থেকে ১০ হাজার, নূর ম্যানশনের সামনে নসিমনস্ট্যান্ড থেকে মিজানের মাধ্যমে ১০ হাজার, মহাসড়কের ফুটপাত দখল করে বসা দোকানপাট থেকে স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের মাধ্যমে ৭০-৮০ হাজার, রেদোয়ান টাওয়ারের সামনে বাসস্ট্যান্ড থেকে ২০ হাজার, মেঘলা বাস কাউন্টার থেকে ২০ হাজার, যুবকল্যাণ বেকার পরিবহন থেকে ১০ হাজার, যুবকল্যাণ এক্সপ্রেস থেকে ১০ হাজার, মদিনার পথে পরিবহন থেকে ১০ হাজার, মুক্তিযোদ্ধা পরিবহন থেকে ১০ হাজার এবং সততার পথে পরিবহন থেকে যুবরাজের মাধ্যমে হাইওয়ে পুলিশ পায় মাসে ২৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া দূরপাল্লার বাসগুলো থেকে মাসে প্রায় ১ লাখ টাকার মতো চাঁদা আদায় হয়। ভুলতায় অটোরিকশাস্ট্যান্ড থেকে ২০ হাজার, গোলাকান্দাইল পিকআপ স্ট্যান্ড থেকে খালেকের মাধ্যমে ২০ হাজার, সাওঘাট এলাকায় অটোরিকশা স্টেশন থেকে দেলোয়ারের মাধ্যমে ১০ হাজার, গোলাকান্দাইল পূর্বপাড়ে অটোরিকশা, সিএনজিস্ট্যান্ড থেকে ৪০ হাজার এবং গার্মেন্টেসের শ্রমিকদের আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত বাসগুলো থেকে হাইওয়ে পুলিশ পায় ৫০ হাজার টাকা। এ ছাড়া গোলাকান্দাইল, ভুলতা, রূপসী, বরপা এলাকার অটোরিকশা গ্যারেজগুলো থেকেও প্রতি মাসে টাকা পায় হাইওয়ে পুলিশ। রূপসী বাসস্টেশন, বরপা, বরাব, ভুলতা, বিশ্বরোড থেকে প্রাইভেট কার, পিকআপ, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান থেকে কাগজপত্র যাচাইয়ে নামে চাঁদা আদায় হয়। প্রতিটি গাড়ি থেকে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয়। এ সময় হাইওয়ে পুলিশের কারও পোশাকে নেমপ্লেট থাকে না বলে জানান পরিবহনচালকরা। হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে রয়েছে রেকার বাণিজ্যেরও অভিযোগ। বনিবনা না হলেই রেকার লাগিয়ে থানায় নেওয়া হয় গাড়ি।
হাইওয়ে পুলিশকে নিয়মিত চাঁদা দেওয়া কয়েকজন বলেন, চাঁদা না দিলেই কয়েক দিন পরপর লোকদেখানো অভিযান পরিচালনা করে। চাঁদা দিলে আবার সব ঠিকঠাক থাকে। প্রতি মাসে ১-৫ তারিখের মধ্যে হাইওয়ে পুলিশ বক্সে গিয়ে চাঁদা দিয়ে আসতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক লেগুনাচালক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘গাড়ির জমা দিই ৯০০ টাকা। প্রতিদিন চাঁদা দিতে হয় ৩০০ টাকা। যা টাকা ইনকাম করি তা গাড়ির জমা আর চান্দা দিতেই চইলা যায়। লেগুনার কাগজপত্র না থাকায় প্রতি মাসে কাঁচপুরে হাইওয়ে পুলিশকে ৮০০ টাকা কইরা দিতে অয়। আবার ভুলতার হাইওয়ে পুলিশরে দিতে অয় ৬০০ টাকা। চাঁদা না দিলে লেগুনা রাস্তায় চলাচল করতে দেয় না।’
আইয়ুব নামে সিএনজিচালিত অটোরিকশার এক চালক বলেন, ‘সরকার মহাসড়কে সিএনজি বন্ধ করলে আমার কি! আমি হাইওয়ে পুলিশকে প্রতি মাসে টাকা দিই, এ কারণে তারা আমার সিএনজি ধরে না।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি রেজাউল হক ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রূপগঞ্জ অংশ তার দায়িত্বাধীন এলাকার মধ্যে পড়ে না বলে দায় এড়িয়ে যান। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্প ও বিশ্বরোড পুলিশ বক্সের অধীনে বলে জানান তিনি। অথচ পুলিশ ক্যাম্প ও পুলিশ বক্স থানার অধীনেই বলে জানা গেছে।
চাঁদা আদায়ের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ আবু নাঈম বলেন, ‘আপনি নিউজ করেন, নিউজ করলে আমার কিছু আসবে যাবে না। নিউজ করলে আমার চাকরি যাবে না। হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে। এ ছাড়া হাইওয়ের পাশে ফুটপাত আমরা উঠিয়ে দিলে তারা আবার বসালে আমাদের কী করার আছে?’
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে বিশ্বরোড পুলিশ বক্সের পরিদর্শক শরফ উদ্দিনের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের খিদিরপাড়া ইউনিয়নের ডহরী তালতলা খালে গত শনিবার রাতে বালুবাহী নৌযানের (বাল্কহেড) ধাক্কায় ট্রলারডুবিতে গতকাল রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সাতজনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। তবে প্রশাসন বলছে, এই নৌপথে বাল্কহেড চলাচলে ছিল নিষেধাজ্ঞা। ডুবে যাওয়া ট্রলারটি গতকাল বেলা পৌনে ১২টার দিকে ক্রেন দিয়ে টেনে ওপরে তোলা হয়। ট্রলারডুবিতে এখনো তিনজন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাদের স্বজনরা।
এদিকে ট্রলারডুবির ঘটনায় মামলা হয়েছে। নিহত দুই তরুণী হ্যাপি আক্তার ও পপি আক্তারের ভাই রুবেল বাদী হয়ে গতকাল দুপুরে বাল্কহেডটির মালিক ও চালকের বিরুদ্ধে লৌহজং থানায় মামলা করেন। এ ছাড়া ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছেন মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক। জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শারমিন আরাকে প্রধান করে গঠিত পাঁচ সদস্যের এই কমিটি গতকাল সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
পরিদর্শন শেষে কমিটির সদস্যরা বলেন, মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় এখনো তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালু বহনকারী বাল্কহেড চলাচলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া ট্রলারডুবির ঘটনায় তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে থানায় মামলা হয়েছে। জব্দ করা বাল্কহেডটি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
লৌহজং ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আব্দুল মতিন জানান, গত শনিবার রাত ২টা পর্যন্ত তাদের উদ্ধার অভিযান চলমান ছিল। পরে কিছু সময় বন্ধ রেখে গতকাল ভোর থেকে আবার উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়। বেলা পৌনে ১২টার দিকে ট্রলারটি উদ্ধার করা হয়। তবে তাতে নিখোঁজ থাকা কারও সন্ধান পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও জানান, শনিবার রাতে সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তারা সবাই সিরাজদিখান উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের বাসিন্দা। তবে শনিবার রাতে ফায়ার সার্ভিস আটজনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছিল। নিখোঁজের সংখ্যা বলেছিল পাঁচজন। পরে তারা সংশোধন করে নিহত সাত এবং নিখোঁজ তিনজন বলে জানায়।
লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ডা. মো. আব্দুল আউয়াল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে খালটি দিয়ে বালু বহনকারী বাল্কহেড চলাচল করেছে। আমরা গত বছর বালিগাঁও ব্রিজের নিচে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড দিয়েছিলাম। নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এসব নৌযান চলাচল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কঠোর নজরদারি রাখব, সেই সঙ্গে যদি কেউ এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে খালটি দিয়ে বালু বহনকারী বাল্কহেড চালায়, তাহলে তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসব।’
লৌহজং থানার ওসি খন্দকার ঈমাম হোসেন জানান, নিহত দুই তরুণীর ভাইয়ের করা মামলায় পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ চলমান রয়েছে।
কাঁদছে লতব্দীবাসী : মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের খিদিরপুর ও লতব্দী গ্রামের কয়েকটি পরিবারের ৪৬ জন সদস্য ট্রলারে করে পদ্মা সেতু দেখার জন্য পিকনিকে বের হন শনিবার। লৌহজংয়ের মাওয়ায় পদ্মা সেতু স্বচক্ষে দেখার পর ওই দিন রাতে ফিরছিলেন নিজ নিজ বাড়িতে। পদ্মা সেতু দেখার আনন্দে মাতোয়ারা পরিবারগুলোর নারী, পুরুষ ও শিশুদের সেই আনন্দ মুহূর্তেই পরিণত হয়েছে বিষাদে। উত্তাল পদ্মা পেরিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ডহরী খালে বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় পিকনিকের সেই ট্রলার ডুবে নারী ও শিশুসহ সাতজনের সলিলসমাধি হয়েছে। এ ঘটনায় লতব্দী ইউনিয়নের লতব্দী ও খিদিরপুর গ্রামের ঘরে ঘরে চলছে কান্নার রোল। প্রিয়জন হারানোর বেদনায় যেন ভারী হয়ে উঠেছে লতব্দীর আকাশ-বাতাস। ট্রলারডুবিতে খিদিরপুর গ্রামের দুই বোন পপি আক্তার ও হ্যাপি আক্তার এবং হ্যাপি আক্তারের দুই ছেলে সাকিবুল (১০) ও সাজিবুল (৪) নিহত হয়েছে। ওই গ্রামের আব্দুল হাকিমের মেয়ে ও নাতি তারা। একই পরিবারের ৪ জনের এ বিদায়ে কান্না আর আহাজারিতে বুক ভারী হয়ে উঠেছে স্বজনদের। আব্দুল হাকিম এখন অনেকটা বাকরুদ্ধ। স্ত্রী হ্যাপি ও দুই ছেলে সাকিবুল ও সাজিবুলকে হারিয়ে কথা বলতে গিয়ে কেবলই কান্নায় ভেঙে পড়ছেন রাজমিস্ত্রি মো. জাহাঙ্গীর। স্ত্রী, দুই সন্তান ও স্ত্রীর বড় বোনকে নিয়ে তিনিও গিয়েছিলেন পিকনিকে। পদ্মা সেতু দেখার আনন্দময় সময় কাটানোর পর বাড়ি ফেরার পথে ট্রলারডুবিতে নিজে সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও বেঁচে নেই তার স্ত্রী, দুই সন্তান ও স্ত্রীর বড় বোন। ছেলে সাকিবুল ও সাজিবুল আর স্ত্রী হ্যাপি আক্তারের চিরবিদায়ে এখন কান্নার লোনাজলে ভাসছে জাহাঙ্গীরের দুই চোখ। কিছু বলতে গেলেই কেঁদে ওঠেন, যেন অধিক শোকে পাথর হয়ে গেছেন তিনি।
লতব্দী ইউনিয়নের অন্য নিহতরা হচ্ছে লতব্দী গ্রামের মো. শাজাহানের স্ত্রী মোকছেদা বেগম (৪০), খিদিরপুর গ্রামের শাহাদাত হোসেনের মেয়ে রোজা মনি (৪ মাস) ও ফিরোজ সরকারের ছেলে ফারিয়ান (৮)।
স্বজনদের দাবি, ট্রলারডুবির ঘটনায় এখনো ৩ জন নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজ ৩ জনই শিশু। মামা আরিফ খান মাহিন, নাফা ও তুরান নামে ৩ শিশুর নিখোঁজের তথ্য জানান।
সকালের বৃষ্টিতেই ডুবছে চট্টগ্রাম। তিন দিন ধরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সারা দিন থেমে থেমে বৃষ্টি হলেও সকালের ভারী বৃষ্টিতেই নগরী জলমগ্ন হচ্ছে। দুপুর পর্যন্ত পানিবন্দি থাকছে নগরবাসী। আবার বিকেলের দিকে বৃষ্টির তীব্রতা কমে আসছে এবং রাতেও এই কম থাকার ধারা অব্যাহত থাকছে। কিন্তু সকাল হলেই যেন আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে। গত কয়েক দিনে নগরীতে জলাবদ্ধতার সময় ও বর্ষণের পরিমাণের উপাত্ত মিলিয়ে দেখলেই তা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত উপাত্তে দেখা যায়, গতকাল রবিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নগরীর আমবাগান আবহাওয়া কেন্দ্র ১৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। এর মধ্যে গতকাল সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টায় রেকর্ড হয়েছে ৭৩ মিলিমিটার। বাকি বৃষ্টি অবশিষ্ট ২১ ঘণ্টায় হয়েছে। শুধু গতকালই নয়, গত শনিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আমবাগান কেন্দ্র ৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করলেও সকালের ৩ ঘণ্টায় হয়েছে ৪৩ মিলিমিটার। এর আগের দিন শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলেও সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত সময়ে হয়েছে ৫৫ মিলিমিটার।
সকালে এত বেশি বৃষ্টি কেন হয়? অনেকের সহজ উত্তর মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার কারণে বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু আবহাওয়াবিজ্ঞান কী বলে? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে কথা হয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ কামরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় সকালে বেশি বৃষ্টিপাত হয় এবং সমুদ্র থেকে যত দূরে স্থলভাগের দিকে অগ্রসর হওয়া যাবে সেসব এলাকায় দুপুরের পর থেকে বৃষ্টিপাত বেশি হয়ে থাকে।’
এর কারণ কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাগরের ওপরে থাকা ঘনীভূত মেঘগুলো উপকূলীয় এলাকার দিকে সকালে অগ্রসর হয়। তাই সকালে উপকূলের কাছাকাছি বেশি বৃষ্টিপাত হয়। পরে ধীরে ধীরে স্থলভাগের ভেতরের দিকে (দেশের অভ্যন্তরে) প্রবেশ করে এবং বৃষ্টিপাত ঘটায়। এ জন্যই দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সকালে বেশি বৃষ্টি হয় এবং উত্তরাঞ্চল কিংবা মধ্যাঞ্চলে অন্য সময়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়।’
শুধু কি সকাল? ভোররাতেও কিন্তু চট্টগ্রাম এলাকায় বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। এর আগে ভোরের বৃষ্টিতেই চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে মৃত্যু হয়েছিল। ২০০৭ সালের ১১ জুন রাতে প্রবল বৃষ্টিতে পাহাড় ও দেয়াল ধসে ১২৮ জনের প্রাণহানি হয়েছিল। ২০০৮ সালে ভোরের প্রবল বর্ষণে মতিঝর্ণায় একই পরিবারের ৫ জন, ২০১১ সালে বাটালি হিলে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এ ছাড়া প্রতি বছরই নগরীতে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে।
এদিকে গত দুই দিনের মতো গতকালের বৃষ্টিতেও চট্টগ্রাম মহানগরীর পূর্বাংশের ষোলশহর, মুরাদপুর, বহদ্দরহাট, শুলকবহর, মোহাম্মদপুর, বাদুরতলা, কাপাসগোলা, চকবাজার, কেবি আমান আলী রোড, ফুলতলা, বাকলিয়া সৈয়দ শাহ রোড, ডিসি রোড, চান্দগাঁও প্রভৃতি এলাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতা তীব্র আকার ধারণ করে। এ ছাড়া বিক্ষিপ্তভাবে ওয়াসা মোড়, জিইসি মোড়, জাকির হোসেন রোডের ঝাউতলা রেলগেট, ওয়ার্লেস মোড়, অলংকার মোড়, পশ্চিম ফিরোজশাহ কলোনি, সাগরিকা, নয়াবাজার মোড়, পোর্ট কানেকটিং রোডের তাসপিয়া থেকে ওয়াপদা পর্যন্ত রাস্তায় পানি জমেছে। অপরদিকে রামপুরা ওয়ার্ডের নয়াবাজার, উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ডের বসুন্ধরা, হালিশহর কে-ব্লক, এল-ব্লকসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি জমেছে।
বৃষ্টি আরও কত দিন থাকতে পারে জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পতেঙ্গা কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াদি উজ্জ্বল কান্তি পাল বলেন, ‘মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার কারণে চট্টগ্রামসহ দেশের উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টিপাত বেশি হচ্ছে। তবে এমন মুষলধারে বৃষ্টি আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এ ছাড়া এই সময়ে ভারী বর্ষণের সতর্কতা থাকায় পাহাড়ধস হতে পারে বলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।’
এদিকে জানমালের ক্ষতি কমাতে পাহাড় থেকে অবৈধ বসতিদের সরিয়ে নিয়ে আসছে জেলা প্রশাসন। পাহাড়ি এলাকায় মাইকিং করে এবং প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় তাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। কয়েক দিন ধরে জেলা প্রশাসনের একাধিক টিম পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের সরিয়ে আনতে কাজ করছে।
অভিষেকে ২৬ মিনিট খেলে দুই অ্যাসিস্টের অবদান রাখতে পেরেছিলেন নেইমার। আল হিলাল জিতেছিল। কিন্তু পর পর দুম্যাচ খেললেন পুরো সময়। তেমন কিছুই করতে পারলেন না। ড্র করেছে আল হিলাল আবার।
এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে শেষ দিকের গোলে ১-১ ড্র করে পরাজয় বাঁচিয়েছিল আল হিলাল। আজ সৌদি প্রো লিগে দামাক এফসির বিপক্ষে ম্যালকমের গোলে ৯ মিনিটে এগিয়ে গেলেও শেষপর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারেনি।
সাত ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে তবুও শীর্ষেই রইলো আল হিলাল।
বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস আজ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে দিবসটি পালিত হবে। এ উপলক্ষে ২১টি বেসরকারি সংস্থা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘স্বল্প দূরত্বে হেঁটে ও সাইকেলে চলি, ব্যক্তিগত গাড়ি পরিহার করি’।
দিবসটি উপলক্ষে আজ শুক্রবার সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে ২১টি আয়োজক সংস্থার সম্মিলিত উদ্যোগে ধানমন্ডি-২৭-এর মোড় থেকে আবাহনী খেলার মাঠ পর্যন্ত ‘স্বল্প দূরত্বে হেঁটে ও সাইকেলে চলি, ব্যক্তিগত গাড়ি পরিহার করি’ শীর্ষক র্যালি আয়োজন করা হয়েছে।
২০০৬ সাল থেকে দেশে বেসরকারি উদ্যোগে দিনটি উদযাপন করা হচ্ছে। তবে ২০১৬ সাল থেকে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে এটি পালন শুরু হয়, যেখানে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্র্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) মুখ্য সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে এসেছে। কিন্তু বিশ্বের অন্যতম যানজটপ্রবণ ঢাকা শহরে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা থাকা সত্ত্বেও সরকারিভাবে এ দিবসটি পালনের উদ্যোগ এই বছর নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশে দিবসটি পালনের প্রায় দেড় যুগ পার হতে চললেও ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ও ফলপ্রসূ পরিকল্পনা ও নীতির বাস্তবায়ন এখনো দেখা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, যানজটের বড় কারণ হলো এই ব্যক্তিগত গাড়ি। দেশে মেগা প্রকল্পগুলো ব্যক্তিগত গাড়িকে প্রাধান্য না দিয়ে গণপরিবহনকে প্রাধান্য দিয়ে করা উচিত। এখন গণপরিবহনের দিকে জোর না দেওয়ায় অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে ব্যক্তিগত গাড়ি, যা সড়কে বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিআরটিএ একটি সূত্র থেকে জানা যায়, দিন দিন ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। চলতি বছর আগস্ট পর্যন্ত মোট যানবাহন নিবন্ধন আছে ৫৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮টি মতো। এর মধ্যে গণপরিবহনের সংখ্যা মাত্র ২ শতাংশের কম। আর বেশিরভাগই ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা গাড়ি।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বায়ুদূষণে বিশ্বে দুই বিলিয়ন শিশু প্রতিদিন বিষাক্ত বাতাসের সংস্পর্শে আসছে। এদের মধ্যে পাঁচ লাখের বেশি প্রতিবছর মারা যাচ্ছে। তবুও দেশে গণপরিবহনকে প্রাধান্য না দিয়ে বড় বড় অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। যার জন্য দেশে দিনের পর দিন ব্যক্তিগত গাড়ি বাড়ছে। এ অবস্থায় ভবিষ্যতে সড়কে নানারকম বিশৃঙ্খলার শঙ্কা থেকেই যাবে।
এদিকে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানান, প্রতি মাসের প্রথম রবিবার সব ধরনের ব্যক্তিগত গাড়ি বন্ধ করার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ প্রয়োজন। নীতিনির্ধারকরা গণপরিবহন ব্যবহার করলেই সাধারণ মানুষের যাতায়াতের দুর্ভোগ উপলব্ধি করতে পারবেন, ফলে গণপরিবহনের মান বাড়তে পারে। টেকসই পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নগর এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়াস সারা বিশ্বে বেগবান হলেও বাংলাদেশে এ প্রয়াস সীমিত। তাছাড়া ঢাকা শহরে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ব্যক্তিগত গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দিয়ে চলছে বিআরটিএ। নগর পরিকল্পনা ও পরিবহন পরিকল্পনার মধ্যে সমন্বয় নেই, কর্র্তৃপক্ষগুলোর মধ্যেও নেই কার্যক্রমের সমন্বয়। ফলে নগরে গাড়ির চাপ বাড়ছে, মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়েছে যানজট।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনা কখন যাবি জনগণ এখন আর এই কথা বলে না। বলে, এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনা এখন যাবি। আর যাবেনইবা কোথায়? এখন সেটাই দেখার বিষয়। সর্বশেষ গতকাল ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাফ বলে দিয়েছে, তারা শেখ হাসিনার অধীনে হওয়া নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবেন না। কারণ তাদের যে প্রতিনিধিরা দেশে এসেছিলেন, তারা গিয়ে বলেছেন, নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই।’ গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিএনপি আয়োজিত ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-সিলেট অভিমুখী ‘রোডমার্চ’ কর্মসূচির শুরুতে ভৈরবের বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সকালে অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির এক দফা দাবি আদায়ে এই রোডমার্চ শুরু হয়। কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রোডমার্চ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন গয়েশ^র চন্দ্র রায়।
এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওয়ারেস আলী মামুন, নির্বাহী কমিটির সদস্য লায়লা বেগম ও মজিবুর রহমান ইকবাল।
ওই জনসভায় গয়েশ্বর চন্দ্র আরও বলেন, ‘বিএনপির দাবি দেশে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন, যা হতে হবে নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। যার যার ভোট সে সে দেবে। সকালের ভোট রাতে হবে না।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ব্যবসার পরিবেশ পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগের লোকেরা ধ্বংস করছে। ফলে এতে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দেশের মানুষ আজ অসহায় দ্রব্যমূল্য নিয়ে। চালের দাম, তেলের দাম, আলুর দাম, বিদ্যুতের দাম হু হু করে বেড়েছে। আজকে ব্যাংকগুলোতে টাকা চুরি করে আওয়ামী লীগের লোকেরা পাচার করছে বিদেশে। রিজার্ভ কমে গেছে। সরকারদলীয় লোকের দুর্নীতির কারণে আজ রিজার্ভ কমছে, দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হচ্ছে।’
দুপুরে সিলেট অভিমুখে তারুণ্যের রোডমার্চে যাত্রাপথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে পথসভা হয়। এ সময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তৃতাকালে গয়েশ্বর বলেন, ‘তারুণ্যের যে রোডমার্চ শুরু হয়েছে, তা সরকার পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। দেশ বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে তরুণ সমাজ আজ জেগে উঠেছে। শেখ হাসিনা সরকারকে আর কোনো অশুভ শক্তিই রক্ষা করতে পারবে না।’ এ আন্দোলন ডু আর ডাই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
রোডমার্চটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমানায় পৌঁছলে দলের কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম খোকন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মোহাম্মদ শামীম ও যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা এসএন তরুণ দেসহ দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নেতৃত্বে রোডমার্চকে স্বাগত জানিয়ে শোডাউন করা হয়।
পরে দুপুরে হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ এলাকায় পথসভা করা হয়। পথসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মালিক জনগণ। সেই মালিকানা আমরা ফেরত দিতে চাই। ক্ষমতায় আসার জন্য আমরা আন্দোলন করছি না। জনগণের অধিকার আর মানুষের ভোটাধিকার ফেরাতে আমরা রাজপথে নেমেছি।’
রোডমার্চটি বিকেল ৪টায় সিলেটে এসে সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই রোডমার্চ সিলেটে পৌঁছে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। এরপর সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ নেতারা।
এদিকে বৃষ্টি হওয়ায় সমাবেশস্থল আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নেতাকর্মীরা সেভাবে অবস্থান নিতে পারেননি। খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে অনেকে সমাবেশস্থলে এলেও বৃষ্টির কারণে তারা আশপাশের বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নেন। অবশ্য বেশ কিছু নেতাকর্মী ছাতা, ব্যানার-ফেস্টুন ইত্যাদি মাথায় দিয়ে মাঠেই অবস্থান করছিলেন। বৃষ্টিতে ভিজে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী সরকারবিরোধী স্লোগান দেন।
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন জানান, রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে যোগ দিতে দুপুর থেকেই সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলা, পৌরসভা ও সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মী মিছিল সহকারে এসে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জড়ো হতে থাকেন। তবে বৃষ্টির কারণে মাঠে অবস্থান কষ্টকর হয়ে পড়ে। এরপরও বৃষ্টিতে ভিজে শত শত নেতাকর্মী সেখানে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ সফল করেছেন। সভা শেষে রোডমার্চ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
* প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ও নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
রাজধানীর পল্টনে ব্যাংক থেকে ব্যবসায়ীর ২০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুই পুলিশসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
জানা গেছে, আবদুল্লাহ আল মামুন নামে একজন ব্যবসায়ীর কর্মচারী আইএফআইসি ব্যাংকের পল্টন শাখায় ২০ লাখ টাকা জমা দিতে আসেন। তিনি এসে টাকা জমা দেওয়ার লাইনে দাঁড়ান। এ সময় পুলিশের ইউনিফর্ম পরা দুই ব্যক্তি তাকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে যান। পরে তার কাছে থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যান তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। পরে সিটিটিভি ফুটেজ দেখে দুজন হকারকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ধারাবাহিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয় অন্যদের। এ ঘটনায় পল্টন থানায় একটি মামলা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের (ডিএমপি) উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ছিনতাইয়ের সঙ্গে দুজন পুলিশ কনস্টেবল জড়িত ছিল। তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিভিলে থাকা তিন ব্যক্তি টাকার বিষয়ে ওই দুই পুলিশকে তথ্য দেয়। এরপর ইউনিফর্ম পরা দুই পুলিশ কনস্টেবল ব্যাংকে ঢুকে ওই ব্যক্তিকে বাইরে নিয়ে আসে। তার কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। দুই পুলিশ কনস্টেবল বরখাস্ত ছিল।
জানা গেছে, পল্টন থানা-পুলিশ ও ডিবির মতিঝিল জোনাল টিম সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ব্যাংকের সামনের ফুটপাতের হকার হৃদয় ও তার সহযোগী মঞ্জুকে আটক করে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের দেওয়া তথ্যে ডেমরা পুলিশ লাইনসে ক্লোজড হয়ে থাকা পুলিশের দুই সদস্য কনস্টেবল মাহাবুব ও কনস্টেবল আসিফকে ১০ লাখ টাকাসহ আটক করা হয়। এরপর বাসাবো থেকে ছিনতাইয়ের আরও ১০ লাখ টাকা ও মোটরসাইকেলসহ সোহেলকে আটক করে পুলিশ।
এ ঘটনার ভুক্তভোগী আবদুল্লাহ আল মামুন করপোরেট আইডিয়াসের মালিক। তিনি বলেন, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই মার্কেটিং অফিসারের মাধ্যমে টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্য পাঠানো হয়। টাকা নিয়ে ব্যাংকের ওই শাখায় যাওয়ার পর এ ঘটনা ঘটে। এরপর দ্রুত পুলিশকে জানাই।
এ ব্যবসায়ী আরও বলেন, পুলিশের পোশাক পরিহিত দুই লোক এসে আমাদের কর্মীকে ভয় দেখিয়ে টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে এটি শুনে বিস্মিত হয়েছিলাম। এখন জানলাম এ ছিনতাইকাণ্ডে শাহজাহানসহ আরও তিনজন রয়েছে। শাহজাহান আমার দীর্ঘদিনের কর্মী। আমাদের প্রতিষ্ঠান ঠিকাদারিতে জড়িত।
পুলিশ বলছে, পুরানা পল্টনে করপোরেট আইডিয়াসের অফিস থেকে টাকা জমা দেওয়া জন্য ব্যাংকের উদ্দেশ্যে যাত্রার পরপরই শাহজাহান, হৃদয় ও রাসেল পুলিশের দুই সদস্যকে খবর দেন। তারা পল্টনের আইএফআইসি ব্যাংকে গিয়ে টাকার ব্যাগসহ আজিমকে তুলে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে দুই পুলিশ সদস্য পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিনতাইয়ে অংশ নেন। এ সময় বাকি তিনজন আশপাশে পাহারায় ছিলেন।
পল্টন থানার ওসি সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরই ব্যাংকের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়। এরপর পুলিশের দুই সদস্যকে শনাক্তের পর অন্য তিনজনের বিষয়েও তথ্য বেরিয়ে আসে।
জানা গেছে, ব্যাংকের ওই শাখায় গিয়ে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা একটি হিসাব নম্বরে জমা দেওয়ার পরই ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ব্যাংকের বাইরে নিয়ে আসা হয়। তারা আজিমের টাকার উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। ব্যাগে থাকা টাকা হুন্ডির অর্থ বলে দাবি করেন পুলিশ সদস্যরা। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে আজিমকে ব্যাংকের বাইরে নিয়ে যান। রাস্তায় এনে তাকে মোটরসাইকেলে তুলে দ্রুত মুগদা এলাকায় নেন। সেখানে টাকার ব্যাগ রেখে ছেড়ে দেওয়া হয় আজিমকে। এরপর ঘটনা ওই প্রতিষ্ঠানের মালিককে জানানোর পর পুলিশের একাধিক দল কাজ শুরু করে।
নিউ ইয়র্কের চারপাশেই বাঙালি পাবেন। ব্রুকলিন, জ্যামাইকা, কুইন্স সর্বত্রই। কিন্তু জ্যাকসন হাইটস যেন বাংলাদেশেরই কোনো এক অঞ্চল। কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকায় ঘোরাঘুরি করলেই যেমন মনে হয় পাবনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, রাজশাহী অথবা অন্য কোনো জনপদে আপনি হাঁটছেন, ঠিক তেমনি নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস পুরোপুরি এক বাংলাদেশ। আপনা বাজার ও অন্যান্য দু-একটি বিপণি সর্বভারতীয় অস্তিত্বের জানান দেয় বটে, কিন্তু বাংলাদেশের দাপটের কাছে তা কিছুই নয়। একপা, দুপা অন্তর ছোট-বড় অজস্র দোকান। একের পর এক রেস্টুরেন্ট। সাগর, বৈশাখী ও নবান্ন। ফুটপাত জুড়ে সবজি, বঙ্গসন্তানদের ফুচকা খাবার উৎসাহ দেখে বেশ মন ভালো হয়ে যায়।
বাংলাদেশের জনগণ থাকবে আর রাজনীতি নিয়ে তর্কাতর্কি থাকবে না, এ হতে পারে না। ফুটবল ওয়ার্ল্ড কাপের সময় যেমন পাড়া ভাগাভাগি হয়ে যায়, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স ও ব্রাজিলে, এখানেও তেমনি এখন তুমুল উত্তেজনা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে। কান পাততে হবে না, জ্যাকসন হাইটসের চারদিকে দু-তিন দিন হাঁটাচলা করলেই বুঝতে পারবেন যে পুরো বাংলাদেশ ভাগ হয়ে আছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে। এরশাদের জাতীয় পার্টিও যৎসামান্য আছে, কিন্তু বামদের উপস্থিতি সেভাবে চোখে পড়েনি। শুনেছি সিপিবির কালচারাল ফ্রন্টের মজবুত সংগঠন আছে। আমি এখনো টের পাইনি। পুরো আমেরিকাতেই ভারত ও অন্যান্য দেশের ইমিগ্র্যান্ট প্রচুর। কিন্তু কেউই বাংলাদেশিদের মতো রাজনীতি নিয়ে মাতামাতি করেন বলে মনে হয়নি। এখানে অনেক বাংলা ম্যাগাজিন বের হয়। সাপ্তাহিক, ত্রৈমাসিক সব। সেখানেও রাজনৈতিক বিশ্লেষণের গুরুত্ব যথেষ্ট প্রাধান্য পায়। সাধারণভাবে বাংলাদেশের জনগণ আমেরিকান মূলধারার রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামান না। ব্যতিক্রম যে নেই, বলব না। মওলানা ভাসানী অনুসারী তরুণী কাজি ফৌজিয়ার সঙ্গে আলাপ হলো। লড়াকু মেয়েটি আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ, বাংলাদেশি, লাতিন ইমিগ্র্যান্ট ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর জন্য বছরের পর বছর মাটি কামড়ে লড়াই করে চলেছেন।
শেখ হাসিনার আমেরিকা ভ্রমণ নিয়ে জ্যাকসন হাইটস সরগরম। বিকেল হতে না হতেই ছোট ছোট মিছিল চারপাশে ঘুরছে। বঙ্গদেশের কমিউনিটির মধ্যে আওয়ামী লীগের শক্তি যথেষ্ট। মহিলা লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ সব পাবেন। প্রত্যেকটি স্টেটেই আওয়ামী লীগের শাখা সংগঠনের উপস্থিতি ভালোই। পাশাপাশি বিএনপি সমর্থকদের সংখ্যাও কম নয়।
বিকেলে ছোটখাটো দোকানে খেতে খেতে সুষ্ঠু নির্বাচন, রাতের ভোট, ভারতের সঙ্গে পানি চুক্তি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে তর্কবিতর্ক, উত্তেজনা শুনতে শুনতে মনে হয় যেন ঢাকা বা বাংলাদেশের কোনো অন্য শহরে বসে আছি। এই রাজনৈতিক চাপানো উতরে এটা স্পষ্ট, কয়েক হাজার মাইল দূরে থাকলেও দেশের ভালোমন্দ নিয়ে চিন্তা কম নেই অভিবাসীদের। বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম জোগানদার কিন্তু এই অভিবাসীরাই। রেমিট্যান্স দেশের আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এ নিয়ে সরকারি-বেসরকারি মহলে কোনো সন্দেহ নেই। লক্ষ করছিলাম যে এক-একজন বাংলাদেশি কত কত বছর ধরে এখানে আছেন। নিজেরা খেটে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। বাড়ি করেছেন। গাড়ি কিনেছেন। কিন্তু মন আজও পড়ে থাকে দেশের মাটিতে।
বাংলাদেশে কয়েক মাস আগে যখন গেলাম, তখন সেখানে আমেরিকান ভিসানীতি নিয়ে বিতর্ক প্রবল। শেখ হাসিনার সরকারকে আমেরিকা নাকি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, আগামী বছর বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ না হলে এবং দেশের মধ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ যদি না থাকে তাহলে তারা বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না। আমেরিকা নিজের দেশে কতটা গণতন্ত্রকে সম্মান করে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। দিন-দুই আগে ম্যানহাটনের লাইব্রেরি চত্বরে গিয়ে দেখি জনা-পঁচিশ-তিরিশ নারী-পুরুষ বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, কুড়ি বছর, তেইশ বছর ধরে বিনাবিচারে আমেরিকার বিভিন্ন জেলে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবিতে।
তাও আমেরিকা যেহেতু অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এগিয়ে, ফলে সেখানে যাওয়ার আগ্রহ অস্বাভাবিক নয়। এ ছাড়া পুঁজি যেভাবে ভোগবাদী মননকে লালন করে, সেখানে ভোগবাদের স্বর্গরাজ্যে যাওয়ার আকাক্সক্ষা বাড়বে, বাড়ছেও। গ্রিন কার্ড পেতে সক্রিয় অনেক তরুণের সঙ্গে আলাপ হলো। যারা রয়েছেন, তারাও অধিকাংশ দেশের হালচালে বিরক্ত, হতাশ। বিরাটসংখ্যক বিএনপি সমর্থকের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, তারা নিরাপত্তার অভাবেই দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তবে সরকার পরিবর্তন হলেও তারা সবাই দেশে ফিরবেন, এমন কিন্তু মনে হয়নি। ঢাকায় যত আমেরিকান ভিসানীতি নিয়ে উৎকণ্ঠা বা আলোচনা শুনেছি, তার ছিটেফোঁটাও জ্যাকসন হাইটসে শুনবেন না। এখানকার বাসিন্দাদের ধারণা, এসব বাইডেনের রাজনৈতিক হুমকি, যা আদতেই ফাঁপা। বিষয়টির কোনো সারবত্তা নেই।
সারা নিউ ইয়র্কে যত অভিবাসী আছে, তাদের সাহায্য ছাড়া আমেরিকা একপাও এগোতে পারবে না। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় ইমিগ্র্যান্টবিরোধী কিছু তৎপরতা ছিল। এখন সেসব নেই। নিউ ইয়র্ক মোটের ওপর ডেমোক্র্যাটদের ঘাঁটি। যত মানবতার পক্ষে, ইমিগ্র্যান্ট সমর্থন, অধিকার রক্ষা আন্দোলনÑ সব আজও এ শহরের অলংকার। কাজেই আমেরিকার ভিসা পলিসি নিয়ে আদৌও কেউ চিন্তিত নন। এই, অন্তত একটা ব্যাপারে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে কোথাও কোনো মতপার্থক্য নেই। আমেরিকান প্রশাসনের সত্যিই ক্ষমতা নেই লাখ লাখ অভিবাসীকে চটিয়ে সে কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়।
বাংলাদেশিদের আরও কিছু বৈশিষ্ট্য চট করে চোখে পড়ে। আর তার প্রশংসা না করে উপায় নেই। নিজেদের মধ্যে দলাদলি, গোষ্ঠী কলহ থাকলেও তারা অনেক মিশুকে, সামাজিক ও উষ্ণ। সহজেই অন্যকে আপন করে নিতে পারেন। বিপদে পড়লে বাংলাদেশের মানুষ যত ঝাঁপিয়ে পড়ে আপনার পাশে থাকবে, তত অন্য কাউকে পাবেন না। ভারতীয়দের মধ্যে বাসিন্দা হিসেবে বাঙালি যেমন আছেন, তেমনি রয়েছেন পাঞ্জাবি ও দক্ষিণ ভারতীয়রা। তাদের সম্পর্কে বিশদে পরে কোথাও লেখার ইচ্ছে থাকল।
ব্রুকলিনে পাকিস্তানি এক দোকানে চমৎকার জিলাপি ও শিঙাড়া খেলাম। দেশে থাকলে মনে হয় ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান পরস্পরের শত্রু। মুখে মিঠে মিঠে করে, যত, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি গাই না কেন, পশ্চিমবঙ্গেও হালে রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ নিয়ে বিদ্বেষ বাড়ছে। অনুপ্রবেশ, সীমান্ত হত্যা নিয়ে সত্যি-মিথ্যা মিলিয়ে দুদেশেই জনমনে অসন্তোষ বাড়ছে। বিদেশের মাটিতে আপাত শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান দেখতে বেশ লাগে। আসলে দিনভর পরিশ্রম ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হতে পারে, এখানে ধর্মীয় বিদ্বেষকে মাথা তুলতে দেয় না। জ্যাকসন হাইটসে সন্ধ্যা নামছে। আওয়ামী সমর্থকরা বলে চলেছেনÑ হাসিনার সরকার চিরকাল দরকার... পাশের সেলুনের দরজায় মওলানা ভাসানীর হাসিমুখ। আমেরিকার পক্ষ-বিপক্ষ প্রশ্নেই আওয়ামী লীগ ভেঙে আলাদা হয়ে জন্ম নিয়েছিল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বা ন্যাপ। সেসব তো ইতিহাসের পাঠ। এমন সুন্দর আবহাওয়ায় ইতিহাস চর্চা নিশ্চিত বিরক্তিকর।
লেখক : ভারতীয় প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ও লেখক
ব্যাংকপাড়াখ্যাত মতিঝিল এখন মৃতপ্রায়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে না পারায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র সরে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা ঘোরানো মতিঝিলে আবাসিক ভবন, শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান তৈরি না হলে দেশের প্রধান এই বাণিজ্যিক অঞ্চল প্রাণ হারাবে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাদের মতে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় অবদান রয়েছে মতিঝিলের টাকার। শুধু তা-ই নয়, মতিঝিলে উপার্জিত অর্থে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, কানাডাসহ আরও অনেক দেশে। এখানকার উপার্জিত টাকা অনেকে জমা রেখেছেন সুইস ব্যাংকেও। শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মতিঝিলে। এ যেন মা কাঁকড়ার আত্মত্যাগের গল্প। মা কাঁকড়া বাচ্চাদের আগলে রাখে বুকের ভেতর; যেদিন বাচ্চাগুলো বের হয়ে আসে, সেদিন খোলস ছাড়া মা কাঁকড়ার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। মা কাঁকড়ার মতো দুঃখী ও ত্যাগী বাণিজ্যিক মতিঝিল।
ষাটের দশকে মতিঝিলে গড়ে ওঠে দেশের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট-সিবিডি)। সেই থেকে এখনো দেশের প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল মতিঝিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে সরকারি ৮টি, বেসরকারি ৪৫টি এবং বিদেশি ব্যাংক রয়েছে ৮টি। এ ছাড়া ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৮১টি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের বেশির প্রধান কার্যালয় চলে গেছে কারওয়ান বাজার, গুলশান-বনানী ও উত্তরায়। নতুন করে যেসব ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাচ্ছে, সেগুলোর প্রধান কার্যালয় মতিঝিলের বাইরে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মতিঝিলের আশপাশে পরিকল্পিত কোনো আবাসিক এলাকা, অভিজাত হোটেল, কাজের ফাঁকে অবসর কাটানোর মতো উন্মুক্ত স্থান, শপিং কমপ্লেক্স না থাকায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সুবিধার জন্য অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়গুলোও মতিঝিলের বাইরের এলাকা, অর্থাৎ কারওয়ান বাজার, গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে গড়ে উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর, মধুমিতা সিনেমা হল এবং ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এবং দিলকুশা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবন এবং বঙ্গভবনের পাশের এলাকাজুড়ে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল। বিশ্বের বাণিজ্যিক অঞ্চলের ভবনগুলো সুউচ্চ হয়ে থাকে। কিন্তু মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের পাশেই বঙ্গভবন। নিরাপত্তার কারণে বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর কোনো বহুতল ভবন করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, মতিঝিলের প্লটগুলোর ‘নন-রেসট্রিকটেড’ উচ্চতা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর সাড়ে চারতলার বেশি উচ্চতার ভবনের অনুমোদন মেলে না। ফলে মূল্যবান ওই প্লটগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারছেন না মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ জরাজীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণও রয়েছে কয়েকটি ভবন। একটির সঙ্গে অন্যটি লাগানো। দুটি ভবনের মাঝখানে উন্মুক্ত জায়গা নেই বেশিরভাগ ভবনের। দিলকুশা এলাকার বঙ্গভবন লাগানো ভবনগুলোর মাঝখানেও কোনো ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, মতিঝিল এলাকার ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে। ভাঙাচোরা এবড়োখেবড়ো সড়ক। সড়ক বিভাজকগুলো শ্রীহীন। এগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হয়নি। প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলে মতিঝিলের আরও করুণ দশা চোখে পড়ে। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার সড়কের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে চটের ছালা দিয়ে ঘেরা খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান এবং নানা পণ্যের অস্থায়ী দোকান। সামান্য বৃষ্টিতে মতিঝিল এলাকার সড়কগুলো তলিয়ে থাকে পানির নিচে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত। ডিএসসিসি এলাকার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে। খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে মূল্যায়ন করলে মতিঝিল ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। যদিও এটা মানতে নারাজ ডিএসসিসির কারিগরি কমিটি।
মতিঝিল এলাকার বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিল এলাকার সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে ডিএসসিসি। পরিত্যক্ত প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মতিঝিলের সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত ও সড়ক বিভাজকের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা দরকার। পর্যায়ক্রমে এ এলাকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কাজ করবে ডিএসসিসি। তবে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের মূল সংস্কার ও আধুনিকায়নের দায়িত্ব রাজউকের। রাজউককে সেসব বিষয় পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব কাজে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা লাগলে করপোরেশন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলে রাজউক। রাজউক সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশক থেকেই মতিঝিলের পুরোপুরি বাণিজ্যিক বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্যিক অঞ্চলে শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান থাকে। আর কাছাকাছি এলাকায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা থাকে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে সেটা ছিল না। অভিজাত মানের হোটেল পূর্বাণী গড়ে উঠলেও আশপাশে সময় কাটানোর মতো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লোকজন গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় থাকেন। মতিঝিলের সৌন্দর্য নিশ্চিত করতে ও আধুনিকায়নে যেসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখা দরকার ছিল রাজউক ও সিটি করপোরেশন সেটা করেনি।
রাজউক সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধরা, উত্তরা। সেই সব এলাকা থেকে মানুষ মতিঝিলে আসেন। শহরের জনসংখ্যা বাড়ায় দিন দিন যানজট বাড়ছে। ওই সব এলাকা থেকে মতিঝিলে আসতে সড়কে এক থেকে দেড় ঘণ্টা চলে যায়। দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কর্মঘণ্টার মধ্যে ৩০ শতাংশ সময় সড়কে নষ্ট হচ্ছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে চিন্তা করেছে, তার কর্মস্থল এমন একটা জায়গায় হবে যা তার আবাসনের কাছাকাছি। মতিঝিল থেকে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও ভূমিকা রেখেছে।
কালের বিবর্তনে গুলশান হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক এলাকা। কারওয়ান বাজার, উত্তরায়ও গেছে কিছু। এসব জায়গায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমও সেখানে চলে গেছে। এসব এলাকার আশপাশে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় তাদের বসবাস। আবাসিক এলাকা ছাড়া, পৃথিবীর কোথাও শতভাগ জায়গা শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা অথবা একই শ্রেণির কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার হয় না।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, নগর পরিকল্পনায় ভূমির ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়, যেকোনো জায়গার ব্যবহার হবে ২৪ ঘণ্টা। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল কর্মচঞ্চল থাকে মাত্র ১২ ঘণ্টা। এরপর ওই জায়গার ব্যবহার হয় না। রাতে নীরব ও ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়।
তিনি বলেন, যে মতিঝিলে দিনের বেলায় হাঁটা যায় না; গাড়ির কারণে, যানজটে; সেই মতিঝিলে রাত ৮টার পরে আবার একাও হাঁটা যায় না; অনিরাপদ বোধ হয়। এ জন্য যারা দিনে বাণিজ্য করতে আসেন, তারা মতিঝিল এলাকার হোটেলগুলোতে থাকেন না। অন্যদিকে গুলশান-বনানী এলাকায় থাকলে তারা শপিংয়ে যেতে পারেন, কফি শপে যেতে পারেন। এসব কারণে সারা বিশ্বে ভূমির মিশ্র ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, মতিঝিল এলাকা যেহেতু ইতিমধ্যে তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলেছে, এ জন্য মতিঝিলের জমির শ্রেণিকে মিশ্র ব্যবহার হিসেবে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি নিয়েছে রাজউক। সংশোধিত ড্যাপে সে বিষয়ে নির্দেশনা রাখা হয়েছে। পৃথিবীর নগর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৫০, ৬০ বা ১০০ বছর অন্তর সেসব ঢেলে সাজানো হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়েই মতিঝিল এলাকাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে আবাসিকের বৈশিষ্ট্য দিতে হবে; কনডোমিনিয়াম গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে রাজউক বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ১৬ একর জায়গা নিয়ে একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে লাইব্রেরি, ওয়াকওয়ে থাকবে। বসার ব্যবস্থা থাকবে। মতিঝিল এলাকায় ঝিল ছিল, ওই ঝিলকে প্রাধান্য দিয়ে পার্কটি তৈরি করা হবে। বহুমুখী ব্যবহার ছাড়া মতিঝিলকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিলের আধুনিকায়ন ও ভূমির মিশ্র ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। তাহলে মতিঝিল সচল থাকবে; তবে ঢাকা শহর বড় হওয়ায় আরও বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে ওঠা ইতিবাচক। এসব পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দরকার ছিল; কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে সে রকম হয়নি। এটা দুঃখজনক। এ জন্য শহরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ঢাকায় এখন অনেকগুলো বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সব অঞ্চলে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় বড় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় মতিঝিলে রয়েছে। তবে ব্যবসা গুলশান, বনানী, উত্তরা, গাজীপুরে সরে যাওয়ায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ব্যবসা কেন্দ্রের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।