
সৌদি আরবের দাম্মামে সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশি একটি পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। মক্কা থেকে ওমরাহ পালন শেষে দাম্মামে ফেরার পথে গত শনিবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে আল কাসিম এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে বলে জানিয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন পরিবারটির আরও দুই সদস্য।
হতাহতদের সবার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে। তাদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম।
নিহতরা হলেন মোবারক হোসেন (৪৮), তার ছেলে তানজিল আব্দুল্লাহ মাহি (১৫) ও মেয়ে মাহিয়া (১৩)। মাহি সৌদি আরবের একটি বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে ও মাহিয়া সপ্তম শ্রেণিতে পড়ালেখা করত।
আহতরা হলেন মোবারক হোসেনের স্ত্রী শিখা আক্তার (৪০) ও বড় মেয়ে মিথিলা ফারজানা মীম (১৯)। উচ্চশিক্ষার জন্য চলতি মাসের ২৩ তারিখ মীমের কানাডা যাওয়ার কথা ছিল। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুর শহরের দক্ষিণ ঝিলটুলিতে ২০০৬ সাল থেকে বসবাস করে আসছেন শেখ মোহাম্মদ আলী। তার ৫ ছেলে ও ৩ মেয়ে। মোহাম্মদ আলীর দ্বিতীয় সন্তান মোবারক হোসেন। মোবারক হোসেন উন্নত জীবনের আশায় ২০ বছর আগে পাড়ি জমান সৌদি আরবে। এরপর দুই ভাইকে নিয়েছেন দেশটিতে এবং এক ভাইকে পাঠিয়েছেন দুবাইয়ে। মোবারক হোসেন স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে বসবাস করতেন। সেখানে তার গাড়ির ওয়ার্কশপ রয়েছে।
গতকাল রবিবার নিহত মোবারক হোসেনের ফরিদপুর শহরের দক্ষিণ ঝিলটুলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সন্তান, নাতি-নাতনিকে হারিয়ে মোবারক হোসেনের বৃদ্ধ মা আলেয়া বেগম অঝোরে কাঁদছেন। অসুস্থ আলেয়া বেগম কোনো কথাই বলতে পারছিলেন না। মোবাইল ফোনে ছেলে, নাতি-নাতনিদের ছবির দিকে অপলক তাকিয়ে ছিলেন। বড় ভাইকে হারিয়ে ভাই-বোনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ।
মোবারক হোসেনের ছোট ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘৬ মাস আগে বড় ভাই ও তার স্ত্রী-সন্তান দেশে এসে কিছুদিন থেকে আবার চলে যান। ভাইয়ের বড় মেয়ে মিথিলা ফারজানা মীমের ২৩ আগস্ট উচ্চশিক্ষার জন্য কানাডায় যাওয়ার কথা ছিল। এ কারণে স্ত্রী, ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে ওমরাহ করতে যান তিনি। ফেরার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এক সময় নদীভাঙনে আমাদের বসতভিটা বিলীন হয়ে যায়। ভাই সংসার টেনে ওঠাতে চলে যান সৌদি। অনেক কষ্ট করে আমাদের ভাই-বোনদের লেখাপড়া শিখিয়েছেন। দুই ভাইকে সৌদি নিয়েছেন, আরেক ভাইকে দুবাই পাঠিয়েছেন। বোনদের বিয়ে দিয়েছেন। আমাদের বাড়ি করে দিয়েছেন। ভাই শুধু আমাদের দিয়েই গেছেন, আমরা ভাইয়ের জন্য কিছুই করতে পারিনি।’
মোবারক হোসেনের ছোট বোন নাজিয়া আফরোজ রিক্তা বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। ভাই বললেন, আমি ওমরাহ করতে যাচ্ছি আমার জন্য দোয়া করিস। বড় ভাই ছিলেন আমাদের বটগাছ। সব সময় আমাদের সব আবদার পূরণ করতেন।’
মোবারক হোসেনের বাবা শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমার মোবারকের জন্যই আজ আমাদের অবস্থার উন্নতি। কী করলে আমরা একটু ভালো থাকব, সব সময় ওর মাথায় এই চিন্তাই থাকত। বলত আব্বা আপনি কোনো চিন্তা করবেন না, যখন যা লাগবে আমাকে জানাবেন। আমার কোনো কিছুই চাওয়া লাগত না ওর কাছে।’
মোহাম্মদ আলী কথা বলছিলেন আর চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছিল। এক সময় ছেলের কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার ছোট ছোট নাতি-নাতনি আমাকে কত ভালোবাসত। কিছুদিন আগেই ওরা এসেছিল। আমাকে কী পরলে ভালো লাগে, কী খেতে ভালো লাগে সব সময় শুনত। ওদের ভুলব কী করে। এই বৃদ্ধ বয়সে আমি সহ্য করতে পারছি না। বাবা বেঁচে থাকতে ছেলের মৃত্যু কীভাবে মেনে নেব। আমার সব শেষ হয়ে গেল। ও শুধু আমাদের জন্য করেই গেল; আমরা ওর জন্য কিছুই করতে পারলাম না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংবাদ পাওয়ার পর আমার ছেলের শ্যালক সৌদি চলে গেছেন। আমার ছেলে, নাতি-নাতনিদের মরদেহ দেশে আনার কথা বলেছি। ওদের এক নজর শেষ দেখা দেখতে চাই।’
দেশে এখন ডেঙ্গুর পাশাপাশি আরও দুই ধরনের জ্বর নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। এর মধ্যে বেশি পাওয়া যাচ্ছে ভাইরাসজনিত জ্বর। বিভিন্ন হাসপাতালের বহির্বিভাগে ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে আসা জ্বরের রোগীর অর্ধেক ডেঙ্গু ও অর্ধেক সাধারণ ভাইরাসজনিত জ্বরের রোগী। এ দুই জ্বরের পাশাপাশি ঢাকা শহরে উদ্বেগজনকসংখ্যক টাইফয়েড জ্বরের রোগীও পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকরা বলছেন, কিছু নির্দিষ্ট উপসর্গের ভিত্তিতে ডেঙ্গু ও সাধারণ ভাইরাসজনিত জ্বরের রোগীদের আলাদা করা যাচ্ছে। কিন্তু টাইফয়েড জ্বরের উপসর্গ ডেঙ্গুজ¦রের সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়। সে কারণে এ মৌসুমে যে কারও জ্বর হলেই তাকেই ডেঙ্গু এনএস১ পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা গতকাল রবিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখন দেশে তিন ধরনের জ্বর দেখা যাচ্ছে ও এ তিন ধরনের রোগীর সংখ্যাও অনেক। এগুলো হলো ডেঙ্গুজ্বর, সাধারণ ভাইরাসজনিত জ্বর বা ভাইরাল ফিভার ও টাইফয়েড জ্বর। পরীক্ষার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, কারও জ্বর হলেই ডেঙ্গু এনএস১ পরীক্ষা করে বাকি দুটি জ¦রকে আলাদা করে ফেলতে হবে। এতে চিকিৎসা সহজ হবে ও রোগীও দ্রুত সুস্থ হবে।
অর্ধেক ডেঙ্গ, অর্ধেক ভাইরাল ফিভারের রোগী : গত দুদিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বহির্বিভাগে গিয়ে ভাইরাল ফিভার রোগীদের লম্বা লাইন দেখা গেছে। গতকাল দুপুরে ঢামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগে কথা হয় যাত্রাবাড়ী থেকে আসা আবদুল কুদ্দুসের সঙ্গে। তার পাঁচ বছরের শিশু তামান্নার গত তিন দিন ধরে জ্বর। স্থানীয় এক চিকিৎসককে দেখিয়েছেন ও চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু জ্বর কমছে না। বাধ্য হয়ে তিনি গতকাল শিশুকে নিয়ে এসেছেন হাসপাতালে। তামান্নার বাবা বলেন, ডাক্তার দেখেছে। রক্ত পরীক্ষা করেছে। বলেছে সাধারণ জ্বর। এটা এখন হচ্ছে। তিনি ওষুধ দিয়েছেন। বলেছেন ভালো হয়ে যাবে।
কথা হয় এই হাসপাতালের বহির্বিভাগের অ্যাডমিশন ইনচার্জ আবদুল মামুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, গতকাল বহির্বিভাগে মেডিসিন ও শিশু বিভাগে সাড়ে সাতশর মতো রোগী এসেছে। এর মধ্যে শিশু বিভাগে আড়াইশ ও মেডিসিন বিভাগে পাঁচশর মতো। এ দুই বিভাগের সাধারণ জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছে ৪০ জন রোগী। তাদের মধ্যে শিশু ১০ জন। বাকিদের পরীক্ষা করে ও চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, গত ১৫ দিনে বহির্বিভাগে সাধারণ ভাইরাসজনিত জ্বরের রোগী বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান দেশ রূপান্তরকে জানান, প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৭০০-৮০০ জন জ¦রের রোগী আসছে। গত ১৫ দিনের তুলনায় এ সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি। এসব জ¦রের রোগীর মধ্যে ২৫-৩০ শতাংশ ডেঙ্গুজ্বর, বাকি রোগীরা সাধারণ ভাইরাসজনিত জ¦র বা সাধারণ ঠান্ডাজ্বরের রোগী।
এ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাজমুল আহসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ল্যাবএইড হাসপাতালে আমার ব্যক্তিগত চেম্বারে এখন আসা মোট জ্বরের রোগীর অর্ধেক ডেঙ্গু ও অর্ধেক ঠান্ডাজ্বর। এ ছাড়া কিছু হেপাটাইটিস-এ রোগীও পাওয়া যাচ্ছে। তবে বেশি পাওয়া যাচ্ছে ঠান্ডাজ্বরের রোগী।’
ভাইরাল ফিভারের উপসর্গ : অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা বলেন, ভাইরাল ফিভার এক ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো, শ্বাসনালির সংক্রমিত হয়। নাকে, গলায়, এমনকি ফুসফুসে এক ধরনের ভাইরাস সংক্রমণের কারণে জ¦র হয়। এটাতে গায়ে ব্যথাও হয়। সেজন্য অনেক সময় সংশয় দেখা দেয় এটা ডেঙ্গু, নাকি অন্য ভাইরাল ফিভার। ভাইরাল ফিভারের লক্ষণ হলো সাধারণত নাকে পানি পড়ে ও কাশি থাকে। কিন্তু ডেঙ্গুজ্বরের রোগীদের এ দুটি উপসর্গ থাকে না। এ ভাইরাল ফিভারে পাতলা পায়খানা হয় না, কিন্তু ডেঙ্গুজ্বরে অনেকের পাতলা পায়খানা হয়।
এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ডেঙ্গুজ্বর ও ভাইরাল ফিভার চার-পাঁচ দিনের মধ্যেই চলে যায়। কিন্তু ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে জ্বর চলে যাওয়ার পর কিছু জটিলতা দেখা দেয়। ভাইরাল ফিভার ভালো হওয়ার পর তেমন কোনো জটিলতা থাকে না, একটু দুর্বলতা থাকে। ভাইরাল ফিভার রোগীদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার নেই। শুধু প্যারাসিটামল ও কাশির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ দিলেই হয়।
দেখা দিচ্ছে টাইফয়েড জ্বর : অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা বলেন, আরেকটা জ্বর ঢাকা শহরে বেশি দেখা যাচ্ছে। সেটা টাইফয়েড জ্বর। এটা টাইফয়েডের মৌসুম। এ ধরনের জ্বরের রোগীর সংখ্যাও একেবারে কম নয়, উদ্বেগজনকসংখ্যকই।
এ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বলেন, টাইফয়েড জ¦র যখন বেশি থাকে, তখন শুরুতে পাতলা পায়খানা থাকে। ডেঙ্গু ও টাইফয়েড জ্বর পরীক্ষা ছাড়া আলাদা করা কঠিন। তবে ডেঙ্গু হলে এনএস১ পরীক্ষা করে নির্ণয় করা যায়। সেজন্য যাদের চার-পাঁচ দিন পরও জ¦র থাকে, তাদের ক্ষেত্রে টাইফয়েড ধরে নেওয়া হয়। তাদের রক্ত পরীক্ষা করা হয়। এভাবে দ্রুত টাইফয়েড শনাক্ত করা যায়। তিনি জানান, এখন নিউমোনিয়া জ্বরের রোগীও পাওয়া যাচ্ছে। তবে বছর জুড়ে যে পরিমাণ থাকে, তার চেয়ে বেশি না।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাজমুল আহসান বলেন, ভাইরাল ফিভারের বেশিরভাগ রোগী আক্রান্তের তিন-চার দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। নিজে নিজে চিকিৎসা নেওয়া যাবে না। যেকোনো সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগে দেখালেই হবে। সেখানেই শনাক্ত করা যায় কোন ধরনের জ্বর। এমন নয় যে এ জ্বরের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে হবে।
এ চিকিৎসক আরও বলেন, যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে এ জ্বরের মৌসুমটা আগস্ট পর্যন্ত চলবে। তবে সেপ্টেম্বরেও থাকতে পারে। যতদিন বৃষ্টি থাকবে, ততদিন এ ধরনের জ¦র থাকবে।
“সব শালা কবি হবে/পিঁপড়ে গোঁ ধরেছে, উড়বেই;/বন থেকে দাঁতাল শুয়োর/রাজাসনে বসবেই” আদমজীর সামনে ২০ হাজার শ্রমিকের সমাবেশে এ কবিতা পড়ে এক কবি তার নাম রটিয়ে দিলেন মুখে মুখে। কবিতার নাম খোলা কবিতা। স্বৈরাচার এরশাদ তখন রাজাসনে। মানুষের মুক্তির জন্য পঞ্চাশের দশকের পর খুব কম আধুনিক কবিই কবিতা লিখেছেন, মোহাম্মদ রফিক তার মাটিবর্তী গাওদিয়া, কীর্তিনাশা থেকে বসবাস করা সত্ত্বেও এ শহরে ফিরে আসেননি। এবার চলে গেলেন একেবারে শেষবারের মতো।
তার অনুজ সাবেক অর্থ সচিব মোহাম্মদ তারেকের কাছেই শুনলাম মাথায় আকাশ ভেঙে পড়া খবরটি। শিমুল, তোমার রফিক স্যার তো নাই। বরিশালে গিয়েছিলেন গতকাল রবিবার সকালে, বোনের বাড়ি থেকে ঢাকা আসার পথে মাদারীপুরের রাজৈরের কাছে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে সেখানকার স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাকে নেওয়া হয়। চিকিৎসক সেখানেই তাকে রাত ১০টা ৩০ মিনিটের দিকে মৃত ঘোষণা করেন। কবির প্রবাসী বড় ছেলে শুভব্রত রফিক তখন ছিলেন কবির সঙ্গেই, গাড়িতে। তাকে সেখান থেকে দ্রুত বাগেরহাটে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানান সাবেক অর্থ সচিব মোহাম্মদ তারেক। তার মানে রফিক স্যারের কথামতোই ঢাকায় তাকে আর আনা হচ্ছে না। কীর্তিনাশা, কপিলা, গাওদিয়ার কবি, কাটাখালী হয়ে ফিরে যাচ্ছেন বাগেরহাটে, মায়ের কবরের পাশেই সমাহিত হবেন তিনি।
বাংলা কবিতার আরেকটা বড় অধ্যায় শেষ হলো। ২২ শে শ্রাবণে।
সামান্য থিতু হয়ে যখন লিখছি, তখন সবার আগে মনে পড়ছে কপিলার কথা, তা ছাপিয়ে গাওদিয়া কথা, তা ছাপিয়ে আসছে কালাপানি দরিয়ার ঘ্রাণ ‘মাঠে-মাঠে ছড়িয়ে মেঘের লাশ,/রক্ত বন্যা, উজিয়ে নক্ষত্ররাজি, ফুটে ওঠে ঘাসফুল;/তাই বলে, আকাশ বলেনি পৃথিবীকে, চল বাঁধি ঘর!’// (কালাপানি, ২০০৬)
বাংলা কবিতার মনোযোগী পাঠককে স্বীকার করতেই হবে, ষাটের দশকে ‘সমকাল’ ও ‘কণ্ঠস্বরে’ লেখালেখি শুরু করা কবি মোহাম্মদ রফিক জীবনভর নদী, জল, কাদামাটির সঙ্গে যুক্ত জীবনযাপনের চিত্র তুলে এনে তার স্বাদু কবিতার মধ্য দিয়ে বাংলা কবিতার ভাণ্ডার মণিরত্নে ভরে দিয়েছেন। কীর্তিনাশা, কপিলা, গাওদিয়া, খোলা কবিতা, বিষখালী সন্ধ্যা বা কালাপানি, অশ্রুময়ীর শব বা নোনাঝাউ তার এসব কাব্য বাংলা কবিতায় অনন্য সংযোজন বলে স্বীকার করবেন কবিতার পাঠক পদবাচ্যের যে কেউ। সামরিক শাসন ও শাসকের তথাকথিত কবি হওয়ার অভিলাষের বিরুদ্ধে তার রচিত বহুবিশ্রুত পঙ্ক্তি ‘সব শালা কবি হবে’। আধুনিক বাংলা কাব্যসম্ভারে তার ‘কপিলা’ (১৯৮৩) মহাকাব্যোপম এক সৃষ্টি।
অরুণ সেন বলতেন তাকে সর্বমানুষের মুক্তি-চেতনার কবি। মোহাম্মদ রফিকের জন্ম ১৯৪৩ সালে ২৩ অক্টোবর বাগেরহাট জেলার বেমরতা ইউনিয়নের বৈটপুর (বর্তমান চিতলী) গ্রামে। পিতা সামছুদ্দীন আহমদ এবং মাতা রেশাতুন নাহার। আট ভাইবোনের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা মোহাম্মদ রফিক ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলনে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে এবং স্বাধীন বাংলাদেশে আশির দশকের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছেন। খুলনার বাগেরহাটেই কেটেছে কবির শৈশব। স্থানীয় বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু করলেও পরে পিরোজপুর জেলা স্কুল, বরিশাল ও খুলনা জেলা স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। খুলনা জেলা স্কুল থেকে ১৯৫৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশন (মাধ্যমিক) পাস করেন তিনি। এরপর ঢাকার নটর ডেম কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন, কিন্তু পরে ঢাকা কলেজে মানবিক বিভাগে চলে যান। এ সময় কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়, যা তার সাহিত্যিক চেতনায় প্রগাঢ় ছাপ ফেলে। ১৯৬১ সালে ইন্টার মিডিয়েট (উচ্চ মাধ্যমিক) পাস করেন। সে বছরই রাজশাহী সরকারি কলেজে ইংরেজিতে অনার্সসহ স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন কবি মোহাম্মদ রফিক। এরপর অংশ নেন সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে। সামরিক আইনে তাকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় সামরিক আদালত। এ সময় দিনের পর দিন পালিয়ে বেড়ান। তবুও জেল এড়াতে পারেননি। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকায় তাকে বহিষ্কার করা হয় রাজশাহী কলেজ থেকে। পরে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে মামলায় জয়লাভ করে পাসকোর্সে বিএ পাস করেন ১৯৬৫ সালে। একই বছর ইংরেজি বিষয়ে এমএতে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
১৯৬৭ সালে মোহাম্মদ রফিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। কবি যুক্ত হন ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে, আইয়ুব শাহির আমলে খুলনা, যশোর, বাগেরহাট এবং পরবর্তী সময়ে বগুড়া ও রাজশাহী অঞ্চলে ছাত্র ইউনিয়নকে সংগঠিত করেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ বৈশাখী পূর্ণিমায় প্রকাশিত হয় ১৯৭০ সালে। ১৯৭১ সালে সক্রিয়ভাবে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন ১ নম্বর সেক্টরের হয়ে। স্মরণীয় ভূমিকা রেখেছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রকে সংগঠিত করে তুলতে। ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত হয় মোহাম্মদ রফিকের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ধুলোর সংসারে এই মাটি। আশির দশকের শুরুতে স্বৈরাচার এরশাদের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের প্রেক্ষাপটে দেশে সাম্প্রদায়িকতা, দারিদ্র্য ও একনায়কতন্ত্রের যে ভয়াল থাবা বিস্তৃত হয়, তারই প্রেক্ষাপটে লেখেন খোলা কবিতা (১৯৮৩)। যার লাখ লাখ কপি বিলি করেছে স্বৈরাচারের পতনপ্রত্যাশী, গণতন্ত্রকামী বাংলাদেশের মানুষ।
কীর্তিনাশা (১৯৭৯), খোলা কবিতা ও কপিলা (১৯৮৩), গাওদিয়া (১৯৮৬), স্বদেশী নিঃশ্বাস তুমিময় (১৯৮৮), মেঘে এবং কাদায় (১৯৯১), রূপকথা কিংবদন্তি (১৯৯৮), মৎস্যগন্ধা (১৯৯৯), মাতি কিসকু (২০০০), বিষখালী সন্ধ্যা (২০০৩), নির্বাচিত কবিতা (২০০৩), কালাপানি (২০০৬), নির্বাচিত কবিতা (২০০৭), নোনাঝাউ (২০০৮), দোমাটির মুখ (২০০৯), অশ্রুময়ীর শব (২০১১), কালের মান্দাস (২০১২), ঘোরলাগা অপরাহ্ণ (২০১৩), বন্ধু তুমি প্রসন্ন অবেলায় (২০১৫) এসবই মোহাম্মদ রফিকের কবিতাগ্রন্থ। ঐতিহ্য প্রকাশ করেছে কীর্তিনাশা, গাওদিয়া ও কপিলা নিয়ে কাব্যসংকলন ত্রয়ী (২০০৯)। ঐতিহ্য আরও প্রকাশ করেছে মোহাম্মদ রফিক রচনাবলি-১ (২০০৯) মোহাম্মদ রফিক রচনাবলি-২ (২০১০)। ১৯৯৩ সালে অরুণ সেনের সম্পাদনায় কলকাতার প্রতিক্ষণ থেকে প্রকাশিত হয়েছে মোহাম্মদ রফিকের নির্বাচিত কবিতা। কবিতার পাশাপাশি তার রয়েছে বেশ কয়েকটি গদ্যগ্রন্থ। এর মধ্য ভালোবাসার জীবনানন্দ (২০০৩), আত্মরক্ষার প্রতিবেদন (২০০১, ২০১৫) ও স্মৃতি বিস্মৃতির অন্তরালে (২০০২) অন্যতম। কবি মোহাম্মদ রফিক আইওয়াতে ইন্টারন্যাশনাল রাইটিং প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন ১৯৯৩ সালে। মার্কিনিদের আইওয়া শহরের অভিজ্ঞতা, ভিনদেশের লেখকদের সঙ্গে কবির মতবিনিময়, দেশ-বিদেশের সাহিত্যের খবর ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ২০০৩ সালে প্রকাশিত হয় তার ‘দূরের দেশ নয় আয়ওয়া’ বইটি। নব্বইয়ের দশকে বেশ কিছু ছোটগল্প লেখেন কবি।
বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান মোহাম্মদ রফিক। এ ছাড়া আলাওল পুরস্কারসহ (১৯৮১) বিভিন্ন পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।
রাজধানী ঢাকা লাগোয়া নারায়ণগঞ্জ জেলার শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত রূপগঞ্জ উপজেলা। এ উপজেলায় পড়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ দুটি মহাসড়কের বড় একটি অংশ। মহাসড়ক দুটি হলো ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এবং এশিয়ান বাইপাস সড়ক। মহাসড়ক দুটিতে চাঁদাবাজ চক্র দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এখানে চাঁদা ছাড়া যেন ঘোরে না কোনো গাড়ির চাকা। মহাসড়ক দুটিতে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহন থেকে মাসে প্রায় অর্ধকোটি টাকার চাঁদা আদায় হয়। চাঁদার টাকা যায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের পকেটে। নেতাকর্মীদের পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশকেও প্রতি মাসে চাঁদা দিতে হয়।
হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে বেপরোয়া চাঁদাবাজির অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও মালিকরা। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এ মহাসড়ক থেকে হাইওয়ে পুলিশ প্রতি মাসে চাঁদা হিসেবে অন্তত ১০ লাখ টাকা আদায় করে। হাইওয়ে পুলিশের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে পরিবহন চালক ও পরিবহন মালিকরা।
রূপগঞ্জ উপজেলায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যাত্রামুড়া এলাকা থেকে আধুরিয়া পর্যন্ত পড়েছে ১৪ কিলোমিটার ও এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়কের ১৫ কিলোমিটার অংশ রয়েছে। আর এ দুটি মহাসড়ক কাঁচপুর হাইওয়ে থানা, ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্প ও বিশ্বরোড পুলিশ বক্সের অধীনে রয়েছে। কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসির দায়িত্বে রয়েছেন পরিদর্শক রেজাউল হক, ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের দায়িত্বে আছেন আবু নাঈম ও বিশ্বরোড পুলিশ বক্সের দায়িত্বে আছেন পরিদর্শক শরফ উদ্দিন। এ তিনজনের নেতৃত্বে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান বাইপাস সড়কে হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজি চলে বলে অভিযোগ স্থানীয় পরিবহন মালিক এবং চালক-শ্রমিকদের। এ দুটি মহাসড়ক ঘিরে গড়ে উঠেছে দেশের অন্যতম কাপড়ের বাজার গাউছিয়া মার্কেট, পাইকারি কাঁচামালের আড়তসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানা। এ ছাড়া রয়েছে পূর্বাচল উপশহর। এসব কারণে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এখানে আসে। এ সবকিছুকে ঘিরে গড়ে উঠেছে দূরপাল্লার বাস, ট্রাক ও পিকআপ স্ট্যান্ড। একই সঙ্গে বেড়েছে পরিবহন খাতে চাঁদাবাজিও। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজারো গাড়ি চলাচল করে। রূপগঞ্জের ভুলতা থেকে কাঁচপুর, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, কুড়িল বিশ্বরোড, সায়েদাবাদ, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন রুটে চলাচল করা বাস, ট্রাক, লেগুনা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার ও ট্রাকের বেশিরভাগই ফিটনেসবিহীন ও কাগজপত্র ছাড়া চলছে। এসব ফিটনেসবিহীন যানগুলো হাইওয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করে চলছে বলে অভিযোগ। পরিবহন খাতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও রয়েছে বেপরোয়া চাঁদাবাজির অভিযোগ।
পরিবহন মালিক ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভুলতা থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত লেগুনা চলাচল করে ৭০-৮০টি। লেগুনাগুলোর কোনো বৈধ কাগজপত্র না থাকায় কাঁচপুর লেগুনাস্ট্যান্ড থেকে পুলিশ পায় মাসে ৬০ হাজার টাকা। এ ছাড়া কাঁচপুর অটোরিকশা, সিএনজি স্টেশন থেকে হাইওয়ে পুলিশ মাসে পায় ২০ হাজার টাকা। বরপা থেকে যাত্রাবাড়ী লেগুনাস্ট্যান্ড থেকে প্রতি মাসে ৬০ হাজার টাকা হাইওয়ে পুলিশ পায়। মহাসড়কের পাশের চোরাই তেলের দোকানগুলো থেকে কামাল নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে মাসে ১০ হাজার ও মাসুম নামে আরেকজনের মাধ্যমে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা পায় হাইওয়ে পুলিশ। এ ছাড়া আরও কিছু চোরাই তেলের দোকান থেকে মাসিক ২০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় হয়। গোলাকান্দাইল গোলচত্বরের ভেতরে অবৈধ দোকানপাট থেকে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার মাধ্যমে হাইওয়ে পুলিশ পায় মাসে ১০ হাজার টাকা। গোলাকান্দাইল বাসস্টেশনের পশ্চিমপাড় থেকে সোহাগের মাধ্যমে পায় মাসে ২০ হাজার টাকা। গোলাকান্দাইল ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় প্রাইভেট কার স্ট্যান্ড থেকে মাসুমের মাধ্যমে হাইওয়ে পুলিশ পায় ২০ হাজার টাকা। ভুলতা থেকে কুড়িল বিশ্বরোড, মীরের বাজার, কাঞ্চন সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে তালালের মাধ্যমে হাইওয়ে পুলিশ পায় ২০ হাজার টাকা। ভুলতা থেকে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত বিআরটিসি বাস স্টেশন থেকে যুবলীগের এক স্থানীয় প্রভাবশালী নেতার মাধ্যমে হাইওয়ে পুলিশ পায় ২০ হাজার টাকা। ভুলতা থেকে গুলিস্তানগামী গ্লোরী, আসিয়ান, গাউছিয়া এক্সপ্রেস বাসস্টেশন থেকে পায় ৩০ হাজার টাকা। ভুলতার প্রাইভেট কার, হাইএস স্ট্যান্ড থেকে এক আওয়ামী লীগ নেতার মাধ্যমে পায় ৩০ হাজার টাকা। ভুলতা ফাঁড়ির সামনের অটোস্ট্যান্ড থেকে জাহিদের মাধ্যমে পায় মাসে ২০ হাজার টাকা। ভুলতায় আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে নসিমনস্ট্যান্ড থেকে ১০ হাজার, নূর ম্যানশনের সামনে নসিমনস্ট্যান্ড থেকে মিজানের মাধ্যমে ১০ হাজার, মহাসড়কের ফুটপাত দখল করে বসা দোকানপাট থেকে স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের মাধ্যমে ৭০-৮০ হাজার, রেদোয়ান টাওয়ারের সামনে বাসস্ট্যান্ড থেকে ২০ হাজার, মেঘলা বাস কাউন্টার থেকে ২০ হাজার, যুবকল্যাণ বেকার পরিবহন থেকে ১০ হাজার, যুবকল্যাণ এক্সপ্রেস থেকে ১০ হাজার, মদিনার পথে পরিবহন থেকে ১০ হাজার, মুক্তিযোদ্ধা পরিবহন থেকে ১০ হাজার এবং সততার পথে পরিবহন থেকে যুবরাজের মাধ্যমে হাইওয়ে পুলিশ পায় মাসে ২৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া দূরপাল্লার বাসগুলো থেকে মাসে প্রায় ১ লাখ টাকার মতো চাঁদা আদায় হয়। ভুলতায় অটোরিকশাস্ট্যান্ড থেকে ২০ হাজার, গোলাকান্দাইল পিকআপ স্ট্যান্ড থেকে খালেকের মাধ্যমে ২০ হাজার, সাওঘাট এলাকায় অটোরিকশা স্টেশন থেকে দেলোয়ারের মাধ্যমে ১০ হাজার, গোলাকান্দাইল পূর্বপাড়ে অটোরিকশা, সিএনজিস্ট্যান্ড থেকে ৪০ হাজার এবং গার্মেন্টেসের শ্রমিকদের আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত বাসগুলো থেকে হাইওয়ে পুলিশ পায় ৫০ হাজার টাকা। এ ছাড়া গোলাকান্দাইল, ভুলতা, রূপসী, বরপা এলাকার অটোরিকশা গ্যারেজগুলো থেকেও প্রতি মাসে টাকা পায় হাইওয়ে পুলিশ। রূপসী বাসস্টেশন, বরপা, বরাব, ভুলতা, বিশ্বরোড থেকে প্রাইভেট কার, পিকআপ, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান থেকে কাগজপত্র যাচাইয়ে নামে চাঁদা আদায় হয়। প্রতিটি গাড়ি থেকে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয়। এ সময় হাইওয়ে পুলিশের কারও পোশাকে নেমপ্লেট থাকে না বলে জানান পরিবহনচালকরা। হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে রয়েছে রেকার বাণিজ্যেরও অভিযোগ। বনিবনা না হলেই রেকার লাগিয়ে থানায় নেওয়া হয় গাড়ি।
হাইওয়ে পুলিশকে নিয়মিত চাঁদা দেওয়া কয়েকজন বলেন, চাঁদা না দিলেই কয়েক দিন পরপর লোকদেখানো অভিযান পরিচালনা করে। চাঁদা দিলে আবার সব ঠিকঠাক থাকে। প্রতি মাসে ১-৫ তারিখের মধ্যে হাইওয়ে পুলিশ বক্সে গিয়ে চাঁদা দিয়ে আসতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক লেগুনাচালক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘গাড়ির জমা দিই ৯০০ টাকা। প্রতিদিন চাঁদা দিতে হয় ৩০০ টাকা। যা টাকা ইনকাম করি তা গাড়ির জমা আর চান্দা দিতেই চইলা যায়। লেগুনার কাগজপত্র না থাকায় প্রতি মাসে কাঁচপুরে হাইওয়ে পুলিশকে ৮০০ টাকা কইরা দিতে অয়। আবার ভুলতার হাইওয়ে পুলিশরে দিতে অয় ৬০০ টাকা। চাঁদা না দিলে লেগুনা রাস্তায় চলাচল করতে দেয় না।’
আইয়ুব নামে সিএনজিচালিত অটোরিকশার এক চালক বলেন, ‘সরকার মহাসড়কে সিএনজি বন্ধ করলে আমার কি! আমি হাইওয়ে পুলিশকে প্রতি মাসে টাকা দিই, এ কারণে তারা আমার সিএনজি ধরে না।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি রেজাউল হক ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রূপগঞ্জ অংশ তার দায়িত্বাধীন এলাকার মধ্যে পড়ে না বলে দায় এড়িয়ে যান। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্প ও বিশ্বরোড পুলিশ বক্সের অধীনে বলে জানান তিনি। অথচ পুলিশ ক্যাম্প ও পুলিশ বক্স থানার অধীনেই বলে জানা গেছে।
চাঁদা আদায়ের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ আবু নাঈম বলেন, ‘আপনি নিউজ করেন, নিউজ করলে আমার কিছু আসবে যাবে না। নিউজ করলে আমার চাকরি যাবে না। হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে। এ ছাড়া হাইওয়ের পাশে ফুটপাত আমরা উঠিয়ে দিলে তারা আবার বসালে আমাদের কী করার আছে?’
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে বিশ্বরোড পুলিশ বক্সের পরিদর্শক শরফ উদ্দিনের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের খিদিরপাড়া ইউনিয়নের ডহরী তালতলা খালে গত শনিবার রাতে বালুবাহী নৌযানের (বাল্কহেড) ধাক্কায় ট্রলারডুবিতে গতকাল রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সাতজনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। তবে প্রশাসন বলছে, এই নৌপথে বাল্কহেড চলাচলে ছিল নিষেধাজ্ঞা। ডুবে যাওয়া ট্রলারটি গতকাল বেলা পৌনে ১২টার দিকে ক্রেন দিয়ে টেনে ওপরে তোলা হয়। ট্রলারডুবিতে এখনো তিনজন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাদের স্বজনরা।
এদিকে ট্রলারডুবির ঘটনায় মামলা হয়েছে। নিহত দুই তরুণী হ্যাপি আক্তার ও পপি আক্তারের ভাই রুবেল বাদী হয়ে গতকাল দুপুরে বাল্কহেডটির মালিক ও চালকের বিরুদ্ধে লৌহজং থানায় মামলা করেন। এ ছাড়া ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছেন মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক। জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শারমিন আরাকে প্রধান করে গঠিত পাঁচ সদস্যের এই কমিটি গতকাল সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
পরিদর্শন শেষে কমিটির সদস্যরা বলেন, মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় এখনো তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালু বহনকারী বাল্কহেড চলাচলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া ট্রলারডুবির ঘটনায় তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে থানায় মামলা হয়েছে। জব্দ করা বাল্কহেডটি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
লৌহজং ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আব্দুল মতিন জানান, গত শনিবার রাত ২টা পর্যন্ত তাদের উদ্ধার অভিযান চলমান ছিল। পরে কিছু সময় বন্ধ রেখে গতকাল ভোর থেকে আবার উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়। বেলা পৌনে ১২টার দিকে ট্রলারটি উদ্ধার করা হয়। তবে তাতে নিখোঁজ থাকা কারও সন্ধান পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও জানান, শনিবার রাতে সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তারা সবাই সিরাজদিখান উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের বাসিন্দা। তবে শনিবার রাতে ফায়ার সার্ভিস আটজনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছিল। নিখোঁজের সংখ্যা বলেছিল পাঁচজন। পরে তারা সংশোধন করে নিহত সাত এবং নিখোঁজ তিনজন বলে জানায়।
লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ডা. মো. আব্দুল আউয়াল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে খালটি দিয়ে বালু বহনকারী বাল্কহেড চলাচল করেছে। আমরা গত বছর বালিগাঁও ব্রিজের নিচে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড দিয়েছিলাম। নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এসব নৌযান চলাচল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কঠোর নজরদারি রাখব, সেই সঙ্গে যদি কেউ এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে খালটি দিয়ে বালু বহনকারী বাল্কহেড চালায়, তাহলে তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসব।’
লৌহজং থানার ওসি খন্দকার ঈমাম হোসেন জানান, নিহত দুই তরুণীর ভাইয়ের করা মামলায় পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ চলমান রয়েছে।
কাঁদছে লতব্দীবাসী : মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের খিদিরপুর ও লতব্দী গ্রামের কয়েকটি পরিবারের ৪৬ জন সদস্য ট্রলারে করে পদ্মা সেতু দেখার জন্য পিকনিকে বের হন শনিবার। লৌহজংয়ের মাওয়ায় পদ্মা সেতু স্বচক্ষে দেখার পর ওই দিন রাতে ফিরছিলেন নিজ নিজ বাড়িতে। পদ্মা সেতু দেখার আনন্দে মাতোয়ারা পরিবারগুলোর নারী, পুরুষ ও শিশুদের সেই আনন্দ মুহূর্তেই পরিণত হয়েছে বিষাদে। উত্তাল পদ্মা পেরিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ডহরী খালে বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় পিকনিকের সেই ট্রলার ডুবে নারী ও শিশুসহ সাতজনের সলিলসমাধি হয়েছে। এ ঘটনায় লতব্দী ইউনিয়নের লতব্দী ও খিদিরপুর গ্রামের ঘরে ঘরে চলছে কান্নার রোল। প্রিয়জন হারানোর বেদনায় যেন ভারী হয়ে উঠেছে লতব্দীর আকাশ-বাতাস। ট্রলারডুবিতে খিদিরপুর গ্রামের দুই বোন পপি আক্তার ও হ্যাপি আক্তার এবং হ্যাপি আক্তারের দুই ছেলে সাকিবুল (১০) ও সাজিবুল (৪) নিহত হয়েছে। ওই গ্রামের আব্দুল হাকিমের মেয়ে ও নাতি তারা। একই পরিবারের ৪ জনের এ বিদায়ে কান্না আর আহাজারিতে বুক ভারী হয়ে উঠেছে স্বজনদের। আব্দুল হাকিম এখন অনেকটা বাকরুদ্ধ। স্ত্রী হ্যাপি ও দুই ছেলে সাকিবুল ও সাজিবুলকে হারিয়ে কথা বলতে গিয়ে কেবলই কান্নায় ভেঙে পড়ছেন রাজমিস্ত্রি মো. জাহাঙ্গীর। স্ত্রী, দুই সন্তান ও স্ত্রীর বড় বোনকে নিয়ে তিনিও গিয়েছিলেন পিকনিকে। পদ্মা সেতু দেখার আনন্দময় সময় কাটানোর পর বাড়ি ফেরার পথে ট্রলারডুবিতে নিজে সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও বেঁচে নেই তার স্ত্রী, দুই সন্তান ও স্ত্রীর বড় বোন। ছেলে সাকিবুল ও সাজিবুল আর স্ত্রী হ্যাপি আক্তারের চিরবিদায়ে এখন কান্নার লোনাজলে ভাসছে জাহাঙ্গীরের দুই চোখ। কিছু বলতে গেলেই কেঁদে ওঠেন, যেন অধিক শোকে পাথর হয়ে গেছেন তিনি।
লতব্দী ইউনিয়নের অন্য নিহতরা হচ্ছে লতব্দী গ্রামের মো. শাজাহানের স্ত্রী মোকছেদা বেগম (৪০), খিদিরপুর গ্রামের শাহাদাত হোসেনের মেয়ে রোজা মনি (৪ মাস) ও ফিরোজ সরকারের ছেলে ফারিয়ান (৮)।
স্বজনদের দাবি, ট্রলারডুবির ঘটনায় এখনো ৩ জন নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজ ৩ জনই শিশু। মামা আরিফ খান মাহিন, নাফা ও তুরান নামে ৩ শিশুর নিখোঁজের তথ্য জানান।
এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া বিদেশে বিনিয়োগ ও অর্থ স্থানান্তরের বিষয়ে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে দেশের বাইরে অর্থ পাঠানো হয়েছিল কি না, অর্থ পাচার হয়েছে কি না, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও সিআইডিকে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছে আদালত।
এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে গতকাল রবিবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেয়। আগামী ৮ অক্টোবর এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হবে।
গত ৪ আগস্ট ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এস আলম গ্রুপ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া সাইপ্রাস, সিঙ্গাপুর ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে অর্থ স্থানান্তর করেছে। সেখানে এস আলম গ্রুপের কর্ণধার এস আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের সন্ধান পাওয়া গেছে।
ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূমধ্য সাগরীয় ছোট দেশ সাইপ্রাস ২০০৭ সালে তাদের ‘গোল্ডেন পাসপোর্ট’ কর্মসূচি চালু করে। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক পরামর্শদাতা সংস্থার মতে, এ প্রকল্পের আওতায় দেশটির আবাসন খাতে প্রায় ২ মিলিয়ন ইউরো (২ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বিনিয়োগ এবং সাইপ্রাস সরকারের গবেষণা ও ভূমি উন্নয়ন তহবিলে আরও ২ লাখ ইউরো অনুদানের বিনিময়ে ধনী বিদেশিদের সাইপ্রাসের নাগরিকত্বের সুযোগ দেওয়া হয়।
সিঙ্গাপুরের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড করপোরেট রেগুলেটরি অথরিটি (এসিআরএ) থেকে পাওয়া প্রতিষ্ঠানের প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, এর দুই বছর পর ২০০৯ সালের ২৭ আগস্ট সাইফুল আলম ও ফারজানা পারভীন নিজেদের সাইপ্রাসের নাগরিক এবং সিঙ্গাপুরের বাসিন্দা দেখিয়ে সিঙ্গাপুরে ক্যানালি লজিস্টিকস প্রাইভেট লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময় কোম্পানিটির ইস্যু করা ও পরিশোধিত শেয়ার মূলধনের পরিমাণ ছিল ২২ দশমিক ৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৩০ মিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলার)। এস আলম ও তার স্ত্রী একমাত্র শেয়ারহোল্ডার ছিলেন। আলম ৩০ মিলিয়ন শেয়ারের ৭০ শতাংশ এবং তার স্ত্রী বাকি ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন।
সিঙ্গাপুরে বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশটিতে রেসিডেন্স পারমিট বা বিদেশিদের থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া এস আলম ও তার স্ত্রী ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জের আরও একটি অফশোর শেল কোম্পানি পিকক প্রপার্টি লিমিটেডের সঙ্গেও যুক্ত। সিঙ্গাপুর থেকে ১৭ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরের ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস এমন এক ট্যাক্স হ্যাভেন বা কর স্বর্গ, যেখানে আয়কর, করপোরেট কর বা মূলধনী কর নেই।
আরেক কর স্বর্গ সাইপ্রাসে ২০১৬ সালে এস আলম অ্যাকলেয়ার ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান কেনেন। সাইপ্রাসের কোম্পানির রেজিস্ট্রার বিভাগ এবং অফিশিয়াল রিসিভারের নথি অনুসারে, পরবর্তীকালে কোম্পানিটির নাম পরিবর্তন করে অ্যাকলেয়ার ইন্টারন্যাশনাল রাখা হয়।
গতকাল হাইকোর্টের এ বেঞ্চে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করে এস আলমের অর্থ স্থানান্তরের বিষয়ে অনুসন্ধানের নির্দেশনা চান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। রুলে অভিযোগ ওঠা অর্থ পাচার রোধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত হবে না জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে অভিযোগ অনুসন্ধানে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না রুলে তাও জানতে চেয়েছে আদালত। দুদক ও বাংলাদেশ ব্যাংককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ।
অ্যাডভোকেট খুরশীদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠান বিএফআইইউ, দুদক ও সিআইডি প্রতিবেদন দেবে। আমাদের ওপর রুল হয়েছে।’
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুদ্দিন খালেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশের অনুলিপি পেলে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুসন্ধানের বিষয়ে অবহিত করা হবে।’
জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। যে সিরিজে চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। আর এই সিরিজে পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল! এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। একদিন পরে অবশ্য অবসর ভাঙলেও সেই সিরিজ আর খেলেননি তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে সাকিব সেই সিরিজ হারের দায় দিলেন তামিমের ওপরই।
'আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হারটা আমি পুরোপুরি একজনকে দায় দেব, অধিনায়ক। এক ম্যাচ পরে আমাদের হাতে আরও দুই ম্যাচ ছিল। আমরা তৃতীয় ম্যাচে ঠিকই কামব্যাক করেছি কিন্তু একটা ম্যাচ সময় লেগেছে আমাদের। সুতরাং এটা আর কারো দায় নয়, পুরো সিরিজটায় দায় একজনের ওপর। বিশ্বের কোথাও অন্তত দেখিনি যে এক ম্যাচ পরেই এরকম অধিনায়ক এসে ইমোশনালি বলে ফেলেন যে আমি ভাই খেলব না আর ক্রিকেট।’
সাকিব বলেন, 'আমার ধারণা যদি কোনো অধিনায়কের দায়িত্ববোধ থাকত, সে এটা করতে পারত না। আমার কাছে মনে হয়, এটা দলকে অনেক বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে এবং আমার মনে হয় ওইটাই এখনো রিকভার করতে সময় লাগছে, যেটা আমি অনুভব করি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।