
আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার হাতে ইয়েমেনে অপহৃত জাতিসংঘের কর্মকর্তা বাংলাদেশি নাগরিক লে. কর্নেল (অব.) এ কে এম সুফিউল আনামকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে তাকে বহনকারী একটি বিশেষ ফ্লাইট।
সুফিউল শারীরিকভাবে সুস্থ রয়েছেন। দেশে পৌঁছে তিনি আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায় করেন। এ ছাড়া তাকে একটি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে উদ্ধার করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে কাজ করার সময় তিনিসহ আরও চারজন অপহরণের শিকার হন। দেশটির মুদিয়াহ প্রদেশ থেকে আল-কায়েদার সদস্যরা তাদের অপহরণ করে। বিমানবন্দরে নেমে সুফিউল আনাম গণমাধ্যমের কাছে অপহরণের পর গত দেড় বছরে তার জীবনে ঘটে যাওয়া দুর্বিষহ পরিস্থিতির বর্ণনা তুলে ধরেন।
তিনি ভেবেছিলেন হয়তো আর বেঁচে ফিরতে পারবেন না। তাকে যেকোনো মুহূর্তে হত্যা করা হতে পারে।
নিজের অপহরণের ঘটনা অ্যাকশন সিনেমার চিত্রনাট্যের সঙ্গে তুলনা করে সুফিউল বলেন, ‘এটা সিনেমায় বা কোনো অ্যাকশন মুভিতে দেখা যায়, আমি আসলে কী অবস্থায় ছিলাম। আমি ছিলাম পাহাড়ে, মরুভূমির মধ্যে। আকাশ বাতাস দেখতে পারিনি মাসের পর মাস।’
অপহরণের দিন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি যখন পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে ফিরছিলাম, তখন আমার সঙ্গে দুটি গাড়ি ছিল, দুজন চালকসহ ছয়জন লোকও ছিল। আমাদের রাস্তার মাঝখানে একটা চেকপোস্টে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করা হয়। সেখান থেকে একটি পাহাড়ের শেল্টারে নিয়ে রাখা হয়। ভাগ্য ভালো যে, সেখানে আমাদের নিয়ে কোনো ধরনের নির্যাতন বা দুর্ব্যবহার করা হয়নি। শুধু চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল। সেখানে যতদিন সম্ভব তারা রেখেছে। এরপর সেখান থেকে আমাদের চোখ-মুখ বেঁধে একটি মরুভূমিতে নিয়ে রেখে দেয়। এভাবে আমরা গত দেড় বছর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি। এই সময়ে আমাদের অন্তত ১৮ বার জায়গায় বদল করা হয়েছে।’
জিম্মি করার পর অপহরণকারীরা অর্থ চেয়েছিল কি না তা জানা নেই উল্লেখ করে সুফিউল বলেন, ‘তারা শুধু বলেছিল আমি জাতিসংঘের কর্মকর্তা। তারা যেসব ভিডিও ক্লিপ তৈরি করেছে সেখানে তারা স্পষ্ট বলেছে, তারা তাদের কিছু দাবি-দাওয়া পূরণ চায়। কিন্তু তাদের দাবিগুলো কী, সে ব্যাপারে আমার ধারণা নেই।’
এক প্রশ্নের জবাবে সুফিউল আনাম বলেন, ‘আমাকে উদ্ধার করার জন্য প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ যে প্রয়োজন, সেটা আমি গতকাল (মঙ্গলবার) পর্যন্ত বুঝতে পারিনি এবং গতকাল পর্যন্ত আমি এটাও জানতাম না যে, বাংলাদেশ থেকে আমাকে উদ্ধার করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আপনারা জানেন আমি একটা ভয়ংকর সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে অপহরণের শিকার হয়েছিলাম এবং বিষয়টা ছিল খুবই স্পর্শকাতর। আমি নিরাপত্তার স্বার্থে এ বিষয়ে বিশদ বর্ণনা করতে অপারগ। কারণ আমার কোনো বক্তব্য যদি তাদের অপছন্দ হয়, তবে আবারও আমাকে চেজ করতে পারে। আমি আসলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে চাই না।’
গত এক যুগ ধরে বরিশালের জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো উদ্যোগ নেই। সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরনের সময়ে নগরীতে কিছু ড্রেন স্থাপন করা হয়। সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করতে পরবর্তী সময়ে সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব গ্রহণকারীদের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। স্থাপন হয় না নতুন কোনো ড্রেন। পুনঃখনন হয়নি খালগুলো। নগরীর মধ্যে যে কয়টি এলাকায় ড্রেন ব্যবস্থা রয়েছে তাও নদী ও খালের নিচের স্তরে হওয়ায় জোয়ার আর বৃষ্টি হলেই পানিতে প্লাবিত হয় পুরো নগরী। ২০২০ সালে ৪২টি খাল পুনরুদ্ধার এবং সৌন্দর্যবর্ধনসহ আনুষঙ্গিক উন্নয়নে ২ হাজার ৬৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠায় সিটি করপোরেশন। কিন্তু এর অনুমোদন মেলেনি। এতে গত ৫ থেকে ৭ আগস্ট একটানা বৃষ্টিতে বরিশালে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পরের দুদিন বৃষ্টি কম হলেও নগরীতে জলাবদ্ধতা এখনো রয়ে গেছে।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বরিশালে গত বছর ২৪ আগস্টের ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে যে জলাবদ্ধতা হয়েছিল, ঠিক আবারও সেই দুর্ভোগে পড়েছে বরিশাল নগরবাসী। অথচ সিত্রাংয়ের সময় বরিশাল কীর্তনখোলা নদীর পানি জোয়ারের সময় বিপদসীমার সর্বোচ্চ ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। এদিন সকাল ৯টা থেকে পরদিন সকাল ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছিল ২৪১ মিলিমিটার। কিন্তু এবার ৭ আগস্ট কীর্তনখোলা নদীর পানি জোয়ারের সময় বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। আর ৭ আগস্ট সকাল ৯টা থেকে ৮ আগস্ট সকাল ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছিল ১৭৭ মিলিমিটার। কিন্তু তারপরও জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই পায়নি নগরবাসী।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মাসুম বলেন, ‘বরিশালের নদনদীর নাব্য কমে যাওয়ায় জল ধারণক্ষমতাও স্বাভাবিকভাবে দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এ ছাড়া নগরীর এলাকার মধ্যে যেসব ছোট নদী বা খাল রয়েছে সেগুলো বিভিন্ন জটিলতার কারণে এখন পর্যন্ত খননকাজ শুরু করা যায়নি। নগরবাসীকে জলাবদ্ধতার মধ্য থেকে রেহাই দিতে দরকার হলে ‘জলাধার’ উপায় গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রয়োজনে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ করে জলাধার সৃষ্টি করা যেতে পারে। কিন্তু বর্তমানে বরিশালে ব্যক্তিমালিকানাধীন জলাধারগুলোও গণহারে ভরাট হচ্ছে। পাশাপাশি খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠানও জলাধার ভরাট করে অবকাঠামো নির্মাণে পিছিয়ে নেই। ছোট নদী-খাল পুনঃখনন না করায় বরিশালের অধিকাংশ নদনদীর নাব্য কমে গেছে। এ ছাড়া নগরীর ময়লাগুলো নির্দিষ্ট স্থানে সরানো হলেও আশপাশের এলাকার খালগুলো ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। এতে প্রবাহমান লিংক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আগামীতে এ কারণগুলো যদি আরও বৃদ্ধি পায় তবে বরিশালে ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাতেই ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। তাই এখনই এ বিষয়ে সমন্বিত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।’
বরিশালের ‘নদী খাল বাঁচাও’ আন্দোলন কমিটির সাবেক সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগে খালকেন্দ্রিক যোগাযোগব্যবস্থা ছিল। কিন্তু সামাজিক শক্তিকে হারিয়ে ফেলার কারণে বর্তমানে খালগুলোকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। তবে শহরের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী খালগুলোকে চ্যানেলিং করার পরিকল্পনা চলছে। এ ক্ষেত্রে খালগুলোতে আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা প্রয়োজন। জলাধার এবং খালগুলোকে পরিচ্ছন্ন রাখতে সবার মধ্যে দায়িত্ববোধ সৃষ্টি করতে হবে।’
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমানে বিভিন্ন খালে আবর্জনা জমে নগরীতে যে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসনের জন্য পরিকল্পনা চলছে। গত চার বছর ধরে একটা প্রকল্পে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে ৪২টি খাল খননের কথা চলছিল।
কিন্তু এখনো সেটি অনুমোদন পায়নি। আজকেও মন্ত্রণালয়কে ফোন করা হয়েছে। আশা করি শিগগিরই অনুমোদন মিলবে।’ তবে বর্তমানে যে খালগুলোতে ময়লা-আবর্জনায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে সেগুলো পরিষ্কার করার জন্য আলোচনা চলছে।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের উচ্চপর্যবেক্ষক মাসুদ রানা রুবেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বুধবার গত ২৪ ঘণ্টায় বেলা ৩টা পর্যন্ত বরিশালে ২১.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর আগস্ট মাস জুড়ে বরিশাল বিভাগে বৃষ্টি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।’
এদিকে অপরিকল্পিত নগর উন্নয়ন ও জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নিলে নগরবাসী ক্ষিপ্ত হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে। এদিকে গতকাল বেলা ১১টায় সরকারি ব্রজমোহন কলেজ জীবনানন্দ দাশ মুক্ত মঞ্চের সামনে হাঁটুসমান পানিতে দাঁড়িয়ে ক্যাম্পাসে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে সরকারি ব্রজমোহন কলেজে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট সরকারি ব্রজমোহন কলেজ শাখার সভাপতি হাফিজুর রহমান রাকিব, সাধারণ সম্পাদক বিজন সিকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য মিনহাজুল ইসলাম ফারহান প্রমুখ।
গতকাল দুপুরে বরিশাল নগরীর বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে দেখা যায়, বরিশাল নগরীতে গত তিন দিন আগে অতি বৃষ্টি হওয়ায় নগরীর অধিকাংশ সড়কগুলোতে এখনো পানি জমে আছে। নগরীর বটতলা থেকে হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা সড়ক, বটতলা আদম আলী হাজির গলি, অক্সফোর্ড মিশন রোড, করিম কুটির, কলেজ অ্যাভিনিউ, গোরস্তান রোড, বগুড়া রোড, বিএম স্কুল সড়ক, রূপাতলী হাউজিং, ধান গবেষণা সড়কের খ্রিস্টান কলোনি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদা কলোনি, পার্শ্ববর্তী শেবাচিম হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণি স্টাফ কোয়ার্টার, কালুশাহ সড়ক, কাজিপাড়া এবং কাউনিয়া এলাকার বেশ কিছু সড়কে এখনো পানি জমে আছে। এর মধ্যে বগুড়া রোড, বটতলা, কলেজ অ্যাভিনিউ এবং গোরস্তান রোড এলাকার সড়কগুলোতে হাঁটু পানি রয়েছে। বটতলা দুই লেন সড়কের এক লেনে যানবাহন চললেও অন্য লেনে বেশি পানি জমাট হলে যানবাহন চলাচল করতে পারছেন না। এরপর আবার গতকালও বৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে নগরবাসীসহ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ বাড়ছে। অন্যদিকে বাড়ছে মশার উৎপাত, ছড়াচ্ছে ভয়ংকর ডেঙ্গু। বরিশাল জেলার নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ টিনের ঘর, অর্ধপাকা এবং পাকা ভবনের নিচতলা পানিতে তলিয়ে থাকায় দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনার ছোট্ট শহর ওয়ালনাট কোভ। শহরের এক পাশের একটি বাড়িতে বাস করেন অ্যারন ও আলিনা এডওয়ার্ডস দম্পতি। সম্প্রতি তারা বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন তাদের ১০ বছর বয়সী মেয়ের ‘বিয়ে’ দিয়ে! দেশটিতে আইনত বাল্যবিয়ে নিষিদ্ধ হলেও তারা পাচ্ছেন বাহবা। কারণ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে তাদের মেয়ে এমার শেষ ইচ্ছাপূরণ করতেই ‘নকল’ বিয়ের আয়োজন করেছিলেন তারা। বিয়ের ১২ দিন পর এমার মৃত্যু হলে বিষয়টি সামনে আসে সবার।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, গত বছর এপ্রিলে এমার তীব্র লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া (এএলএল) ধরা পড়ে। কিন্তু সে তার অসুস্থতাকে পরাজিত করতে পারবে বলে তার মা আলিনা ও বাবা অ্যারন এডওয়ার্ডস আশবাদী ছিলেন। কিন্তু চলতি বছর জুনে তাদের জানানো হয়, এমার ক্যানসার নিরাময়যোগ্য নয় এবং সে আর কয়েক দিন মাত্র বাঁচবে। এরপরই বিবাহিত হওয়ার বাসনার কথা জানায় এমা। পরে এমার শৈশবের প্রিয় বন্ধু ড্যানিয়েল মার্শাল ক্রিস্টোফার ‘ডিজে’ উইলিয়ামসের সঙ্গে বিয়ের আয়োজন করা হয়। গত ২৯ জুন জাঁকালো একটি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাদের বিয়েও হয়। কিন্তু বিয়ের মাত্র ১২ দিন পর মারা যায় এমা এডওয়ার্ডস।
এমার মা আলিনা বলেন, আমরা অন্য ধরনের চিকিৎসা নিতে গেলাম আর তারা জানাল, সে কয়েক সপ্তাহ নয়, সে সম্ভবত কয়েক দিন বা বড়জোর এক সপ্তাহ বাঁচবে। আমরা কোনোভাবেই এটা শোনার আশা করিনি। আমরা ভাবলাম, অন্য ধরনের চিকিৎসা নেব ও সেটি কাজ করবে। এটা পেটে সজোরে ঘুসি মারার মতো। আমরা কল্পনাও করতে পারিনি তারা বলবে, তারা ওর জন্য আর কিছু করতে পারবে না।
নিউ ইয়র্ক পোস্ট বলছে, এ দুঃখজনক খবর জানার পর আলিনা ও ডিজের মা কাজে নেমে পড়েন, তারা একটি নকল ‘বিয়ের’ পরিকল্পনা করেন। আলিনা বলেন, এটা অতি দ্রুত করা দরকার ছিল। দুদিনেরও কম সময়ের মধ্যে আমরা সবকিছুর আয়োজন করে ফেলি। সবকিছু দানের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়।
এমার ইচ্ছায় তার স্কুলে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হওয়ার কথা ছিল। তবে স্কুল কর্র্তৃপক্ষ অনুমতি না দেওয়ায় একটি বাগানে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছিল। প্রায় ১০০ জন অতিথি এতে উপস্থিত ছিলেন।
আলিনা বলেন, এটি মহামূল্যবান অনুষ্ঠান ছিল আর সবকিছু এত ভালোভাবে হয়েছে। ওর বাবা বলেছে, সে তাকে তুলে দিয়েছে। আমাদের এক বন্ধু প্রতিনিধিত্ব করেছে, আরেক বন্ধু বাইবেল থেকে ত্রোস্ত পাঠ করেছে আর তার প্রিয় বন্ধু সাম্মানিক দাসীর ভূমিকা পালন করেছে। আলিনা তার নতুন জামাইয়েরও প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, ডিজে সবচেয়ে মিষ্টি মনের ছেলে। সোনার তৈরি একটি হৃদয় আছে ওর আর ও সত্যিই এমাকে ভালোবাসত।
নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের প্রথম ব্যাচের জ্বালানি উৎপাদন শেষ হয়েছে। রাশিয়ার সাইবেরিয়ায় উৎপাদিত এই পারমাণবিক জ্বালানি রাশিয়া থেকে দেশে আনতে গতকাল বুধবার চূড়ান্ত প্রটোকল সই হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে জ্বালানি আমদানির সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে আরেকটি মাইলফলক অর্জন করল দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি।
সাইবেরিয়া থেকে টেলিফোনে প্রটোকল সইয়ের বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক ও আন্তর্জাতিক পরমাণু বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ শৌকত আকবর। তিনি বলেন, কারখানায় পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদন ও গ্রহণের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য এই জ্বালানি এখন কারখানায় প্রস্তুত রয়েছে। প্রথম তিন বছর রাশিয়া থেকে এই জ্বালানি আমদানির জন্য বাংলাদেশকে কোনো অর্থ পরিশোধ করতে হবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রসাটমের জ্বালানি কোম্পানি টেভেলের একটি প্রতিষ্ঠান নভোসিবিরস্ক কেমিক্যাল কন্সেন্ট্রেটস প্ল্যান্টে (এনসিসিপি) জ্বালানি উৎপাদন দেখেছেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। এরপর প্রটোকলে স্বাক্ষর করেন রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক ড. শৌকত আকবর এবং এএসই ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং নির্মাণ প্রকল্পের অপর প্রকল্প পরিচালক আলেক্সি দেইরি।
প্রটোকল সইয়ের মধ্য দিয়ে পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদনকারী কারখানা থেকে বাংলাদেশে শিপমেন্টের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন পেল। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরেই এই জ্বালানি বিশেষ বিমানে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে বাংলাদেশ পৌঁছবে বলে আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ড. মোহাম্মদ শৌকত আকবর দেশ রূপান্তরকে বলেন, পরমাণুর শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিতে বাংলাদেশ প্রতিটি ধাপে আইএইএ’র নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করে নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কমিশনিং কাজ শেষে উৎপাদন শুরু করতে পরিকল্পনা মোতাবেক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জ্বালানি হ্যান্ডেলিং করতে প্রয়োজনীয় জনবল তৈরিতে কোনো সমস্যা নেই। সময়বদ্ধ কর্মপরিকল্পনা অনুয়ায়ী দেশের এবং আইএইএ’র সব ধরনের নিয়মকানুন মেনে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। আইএইএর প্রতিনিধিদল নিরাপত্তাসহ অন্যান্য বিষয় সরেজমিনে পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছে। প্রকল্পের অগ্রগতি এবং দেশের পারমাণবিক অবকাঠামো উন্নয়নে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছে তারা।
টেভেলের কোয়ালিটি ডিরেক্টর আলেক্সান্দার বুখালভ বলেন, টেভেল ফুয়েল কোম্পানি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য উন্নত এবং কার্যকরী পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদন করেছে। এই জ্বালানি আবারও রুশ পারমাণবিক প্রযুক্তির শ্রেষ্ঠত্ব ও সর্বোচ্চ নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণ করবে।
রূপপুর প্রকল্পের জেনারেল কন্ট্রাকটর এএসই ভাইস-প্রেসিডেন্ট আলেক্সি দেইরি জানান, প্রকল্প এলাকায় জ্বালানি পৌঁছানোর আগেই প্রথম ইউনিটটি জ্বালানি লোডিং-এর জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বর্তমানে প্রথম ইউনিটের কমিশনিংয়ের প্রথম ধাপের কার্যক্রম চলমান আছে। এজন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে পারমাণবিক চুল্লিতে নিরাপদে পারমাণবিক জ্বালানি লোড করা, সুষ্ঠুভাবে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের ‘ফিজিক্যাল স্টার্টআপ’ কার্যক্রম সম্পন্ন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে গ্রিড লাইনের সিনক্রোনাইজেন বা যুক্ত করা, পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সর্বশেষে বাণিজ্যিক উৎপাদনের মাধ্যমে এই বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডের সাহায্যে গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করা।
রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতায় পরমাণু শক্তি কমিশন বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের জেনারেল ডিজাইনার ও কন্ট্রাক্টর রাশিয়ার রসাটম করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা।
বাংলাদেশের একক প্রকল্প হিসেবে সবচেয়ে বড় অবকাঠামো এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে ২০২৪ সালে এবং এর পরের বছর দ্বিতীয় ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট করে মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হওয়ার কথা রয়েছে। এজন্য পিছিয়ে পড়া বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে শেষ করার জন্য পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশকে (পিজিসিবি) তাগিদ দেওয়া হচ্ছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
সরকারবিরোধী এক দফার আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ২৯ জুলাই রাজধানীর প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি ছিল বিএনপির। কিন্তু ওই কর্মসূচি পুরোপুরি সফল করতে পারেননি দলটির নেতাকর্মীরা। এ ব্যর্থতার জন্য সমন্বয়হীনতাকেই অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করছে দলটির স্থায়ী কমিটি। গত সোমবার রাতে হওয়া স্থায়ী কমিটির ওই বৈঠকে কর্মসূচি মূল্যায়ন করতে গিয়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকজন নেতা এখন ‘তোপের মুখে আছেন’ রয়েছেন। দলীয় রাজনীতিতেও এখন আলোচনা ওই কর্মসূচির জেরেই ছাত্রদলের সভাপতি রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওইদিনের ভিডিও ফুটেজ দেখে দায়িত্বপ্রাপ্ত কারা ছিলেন আর কারা উপস্থিত ছিলেন সেই তালিকা করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতাও এমন কথা জানিয়ে বলেন, যার যার অবস্থান অনুযায়ী কাউকে পদ থেকে বাদ দেওয়া, কাউকে মৌখিকভাবে ‘তিরস্কার’ করাসহ বিভিন্ন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, গণঅবস্থান কর্মসূচি সফল করতে নেতাকর্মীদের সদিচ্ছার অভাব ছিল না। তবে সমন্বয়হীনতা ছিল। নানা বাস্তব কারণেই অনেকেই যথাসময়ে নির্ধারিত স্পটে আসতে পারেননি। কিন্তু একজনের পর আরেকজন যে দায়িত্ব নিয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন সেটি ওইদিন ছিল না।
জানা গেছে, এক দফা আন্দোলন সফল করতে সাংগঠনিকভাবে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়েছে দলটি। কর্মসূচি বাস্তবায়নে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সর্বত্রই মাঠে থাকতে হবে পদধারী নেতাদের। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে ধারাবাহিক কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। এ অবস্থায় পদপদবি নিয়ে ঘরে বসে থাকার কোনো সুযোগ নেই। সিনিয়র-জুনিয়র যারাই শতভাগ দিতে ব্যর্থ হবেন, তাদেরই কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থার মুখে পড়তে হবে। রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে অব্যাহতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে যেটা শুরু হয়েছে। নিষ্ক্রিয় নেতাদের জন্য ‘কঠোর বার্তা’ বলে মনে করছেন অনেকে।
সূত্রগুলো বলছে, স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরও কর্মসূচি সফল করার জন্য মাঠে নামার পরামর্শ এসেছে নীতিনির্ধারণী বৈঠক থেকে। বৈঠকে এক নেতা যুক্তি দিয়ে বলেন, সিনিয়র নেতারা কর্মসূচিতে থাকলে জুনিয়র নেতারা মাঠে থাকতে সাহস পান।
জানা গেছে, পুলিশের অনুমতি ছাড়া অবস্থান কর্মসূচিকে ঢাকায় দলের সাংগঠনিক সক্ষমতা যাচাইয়ে ‘টেস্ট কেস’ হিসেবে নিয়েছিল বিএনপি। ২৮ জুলাইয়ের জনসভার ঠিক পরদিন ২৯ জুলাই অবস্থানের কর্মসূচি দেওয়ার মূল উদ্দেশ্যই ছিল ‘বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতিতে আরেকটি বড় ধরনের শোডাউন’ করা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়নি। কর্মসূচি সফল করতে না পারায় দলের সাংগঠনিক দুর্বলতার বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে।
পুরো কর্মসূচি সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন ভারতের শিলংয়ে থাকা স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
ওইদিন কে কোথায় অবস্থান করবেন এবং প্রথম দিকে কেউ বাধাপ্রাপ্ত হলে পরবর্তী সময়ে কারা এগিয়ে যাবেন, দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী, দলের সিনিয়র নেতারা মূল পয়েন্টগুলোতে থাকবেন কিন্তু জমায়েত সফল করা ও প্রয়োজনে ‘বাধার মুখে টিকে থাকার’ জন্য সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা এবং ঢাকা মহানগরের নেতাদের ওপর ভরসা করা হলেও সেই পরিকল্পনা সফল হয়নি।
পরে সহযোগী সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এর আগে কর্মসূচির দিনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কে কোথায় ছিলেন সে সম্পর্কিত ভিডিওগুলো সংগ্রহ করেন ও খোঁজখবর নেন। দেখা গেছে, ছাত্রদল সভাপতির ওইদিন ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের উত্তরা এলাকায় থাকার কথা ছিল। তিনি সেখানে যাননি। বিকেলের দিকে তিনি খিলক্ষেত এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেন। ফলে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
ব্যর্থতার কারণে জাতীয়তাবাদী যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার পুরনো কমিটি বাতিল করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি দিয়েছে গতকাল বুধবার। সংগঠনের দপ্তরের দায়িত্বে থাকা কামরুজ্জামান দুলাল স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ঢাকা মহানগর উত্তরে আহ্বায়ক হিসেবে শরীফ উদ্দিন জুয়েল, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম স্বপন, তাসলিম আহসান মাসুম, আবুল হাসান টিটু ও সদস্য সচিব হিসেবে সাজ্জাদুল মিরাজকে এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণে আহ্বায়ক হিসেবে খন্দকার এনামুল হক এনাম, যুগ্ম আহ্বায়ক এমএ গাফফার, ইকবাল হোসেন, মুকিত হোসেন এবং সদস্য সচিব হিসেবে রবিউল ইসলাম নয়নকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর হঠাৎ প্রস্থান এবং ব্যাপক নেতাকর্মী ছাড়া মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকেও ভালোভাবে নেয়নি হাইকমান্ড। উত্তর মহানগর বিএনপির শীর্ষ আরেক নেতা, স্বেচ্ছাসেক দলের শীর্ষ এক নেতাসহ বেশ কয়েকজনকে সতর্ক করে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে শ্রাবণের ঘটনায় পদ হারানোর আতঙ্ক তৈরি হয়েছে অনেকের মধ্যে। অবশ্য অনেকেই মনে করেন, ‘একটি কর্মসূচির ব্যর্থতা’ বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত যুক্তিসংগত হবে না। এতে করে দলে ভিন্ন বার্তা যাবে। তাছাড়া ঢাকা মহানগরসহ অঙ্গসংগঠনের শীর্ষপদ থেকে নেতাদের সরিয়ে এখনই যোগ্য বিকল্প পাওয়াও কঠিন। কেননা এই মুহূর্তে বিকল্প যাকে দায়িত্বে আনা হবে, তাকে ঘিরেই আন্দোলনের ছক সাজাতে হবে। এর জন্য যথেষ্ট সময় নেই।
জানতে চাইলে যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কড়া সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার এই ইঙ্গিত সামনের কর্মসূচিগুলোকে আরও সুসংগঠিত করতে সহায়ক হবে এবং তাতে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের অংশগ্রহণ বাড়বে বলে আমি মনে করি।’
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় প্রতিপক্ষের হামলায় আহত পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক সঞ্জয় কুমার প্রামাণিক (৩৫) ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। হামলায় আহত হওয়ার এক সপ্তাহ পর গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৭টায় দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। নিহত সঞ্জয় ভেড়ামারা শহরের গোডাউন মোড় এলাকার দুলাল প্রামাণিকের ছেলে।
এদিকে সঞ্জয়ের মৃত্যুর খবরে উত্তাল হয়ে ওঠে ভেড়ামারা শহর। তার ওপর হামলার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবিতে কুষ্টিয়া-দৌলতপুর আঞ্চলিক সড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় কয়েকটি বাড়ি ও দোকানে আগুন দেওয়ার পাশাপাশি বাজারের সব দোকানপাটও বন্ধ করে দেন উত্তেজিত কর্মীরা। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় চার পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
গত ২ আগস্ট রাত সাড়ে ১১টার দিকে সঞ্জয় দলীয় সভা শেষে কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ভেড়ামারা শহরের গোডাউন মোড় এলাকায় হামলার শিকার হন। ওই হামলায় বেলাল হোসেন ও শ্যামল সরদার নামে সঞ্জয়ের সঙ্গে থাকা তার আরও দুই সহকর্মী আহত হন।
আহতরা অভিযোগ করেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) অঙ্গসংগঠন যুবজোটের জেলা ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান শোভনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী তাদের ওপর হামলা চালায়। হামলার পরপরই ভেড়ামারা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে শোভনকে গ্রেপ্তার করে। হামলার পরদিন সঞ্জয়ের স্ত্রী বীথি রানী দে বাদী হয়ে ভেড়ামারা থানায় শোভনসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
হামলায় সঞ্জয়ের পায়ে ও মাথায় গুরুতর জখম হয়। পরে আহতদের উদ্ধার করে ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসকরা তাদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠান। সেখান থেকে গত ৪ আগস্ট উন্নত চিকিৎসার জন্য সঞ্জয়কে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্থানীয় একটি মন্দিরের কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধের জেরে তার ওপর হামলা হয় বলে জানা গেছে।
গতকাল সকালে সঞ্জয়ের মৃত্যুর খবর ভেড়ামারা শহরে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। শহরের সব দোকানপাট বন্ধ করে দেয় যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। তারা জাসদ সমর্থকদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটসহ ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিপেটা করে। এ ছাড়া বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় চার পুলিশ সদস্যসহ বিভিন্ন জায়গায় কমপক্ষে ৫০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ইনচার্জ শরিফুল ইসলাম জানান, সকাল পৌনে ১১টা থেকে শুরু করে বিকেল পর্যন্ত চারটি বাড়ি এবং একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। বাড়িগুলো পুরোপুরি পুড়ে গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গা থেকে পাঁচজনকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বলা যাচ্ছে না।
ভেড়ামারা থানার ওসি জহিরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছে। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সঞ্জয়ের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলার এজাহারনামীয় প্রধান আসামি শোভনসহ পাঁচজনকে ঘটনার দিন রাতেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজকের (গতকাল) অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখনো কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ১৮ আগস্ট ৯ বছরের শিশু আরাফাতের মৃত্যু হয়। সপ্তাহ না যেতেই ২৫ আগস্ট মারা যায় আরাফাতের ছোট বোন ৬ বছরের রাইদা। রাজধানীর মধ্যপাইকপাড়ার ছাপাখানা মোড়ের একটি বাসায় দুই সন্তান আরাফাত ও রাইদাকে নিয়ে থাকতেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও রাবেয়া আক্তার দম্পতি। সন্তানদের মৃত্যুর পর জীবনটাই বদলে গেছে তাদের। তছনছ হয়ে গেছে সাজানো সংসার। ইব্রাহিম ও রাবেয়া দম্পতির মতো বহু পরিবার এবার সর্বস্বান্ত হয়েছে ডেঙ্গুজ¦রের থাবায়। সন্তান হারানো এমন বাবা-মায়েরা পাগলপ্রায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর ডেঙ্গুতে শূন্য থেকে ২০ বছর বয়সী ১৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ১৮ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ ৮৬ এবং নারী ৯১ জন। এবার শুধু শহর নয়, গ্রামেও ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। সেখানেও মারা গেছে অনেক শিশু। এ বছর ডেঙ্গুতে শিশুমৃত্যু নিয়মিত ঘটনা হয়ে দেখা দিয়েছে। এই রোগে এত শিশুর মৃত্যু আগে কখনো হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এ বছর শূন্য থেকে ২০ বছর বয়সীরা আক্রান্ত হয়েছে ৬৩ হাজার ৯১৯ জন; যা মোট আক্রান্তের ৩২ শতাংশ। এর মধ্যে নারী ২৩ হাজার ৬১৭ এবং পুরুষ ৪০ হাজার ৩০২ জন। ডেঙ্গুতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। তথ্য বলছে, ডেঙ্গুতে শিশুদের আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার কম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া শিশুদের যারা সুস্থ হয়ে উঠছে, তাদের মধ্যে ভবিষ্যতে শারীরিক জটিলতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ডেঙ্গুর বর্তমান সংক্রমণের মধ্য দিয়ে শিশুদের জন্য নতুন ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তাদের মানসিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ডেঙ্গুর এই পরিস্থিতি শিশুদের নতুন বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার বিরূপ প্রভাব শিশুদের মধ্যে ভবিষ্যতে দেখা যেতে পারে। মস্তিষ্ক ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে এর প্রভাব থাকতে পারে। এতে তাদের মেধাবিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাদের যদি কিডনি কিংবা লিভারের মতো অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে সেই ভার সারা জীবন বহন করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শিশুদের মৃত্যু নিয়ে ভালোভাবে অ্যানালাইসিস করতে পারছি না। এসব মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে অটোপসি করতে পারলে ভালো হতো। বিভিন্ন দেশে মৃত্যু নিয়ে ডেথ রিভিউ বা অটোপসি করা হয়। এটি করতে পারলে বাংলাদেশে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যেত।’
এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। কোনো শিশুর শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হলে পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে, ১ মাস থেকে ১২ বছর বয়সী মুমূর্ষু শিশু রোগীদের পৃথক পিআইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দিতে হয়। তবে দেশে পিআইসিইউ সংকট রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে পিআইসিইউর জন্য স্বজনদের হাহাকার করতে দেখা গেছে। হাসপাতালগুলোতে দেখা গেছে ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ শিশুকে সেবা দিতে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যেমন বেশি, সেখানে শিশু রোগীও উল্লেখযোগ্য। এই দুটি হাসপাতালে একেকটি শয্যায় একাধিক শিশু রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। ঢামেক হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড খুলেছে কর্তৃপক্ষ। ৭০ থেকে ৮০ জনের সেবা পাওয়ার কথা, কিন্তু সেখানে প্রতিদিন সেবা নিচ্ছে প্রায় ৩০০ শিশু। ঢামেক হাসপাতালের ২৫ শিশুকে একসঙ্গে পিআইসিইউতে সেবা দেওয়ার সক্ষমতা আছে। কিন্তু মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোনো পিআইসিইউ নেই।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখানে শিশুদের ওয়ার্ডেই ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পিআইসিইউ নেই, তবে এনআইসিইউ (নিউনেটাল আইসিইউ বা নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) আছে।
এদিকে শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের শরীরে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু শনাক্তে পরীক্ষা করা প্রয়োজন। শিশুদের ডেঙ্গুর চিকিৎসা প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামীমা ইয়াসমীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিশুদের জ্বর আসার তিন দিনের মধ্যে পরীক্ষা করাতে হবে। এবার অনেকের মধ্যে হঠাৎ করে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। ফলে তারা দেরিতে চিকিৎসা নিতে আসছে। দেখা গেছে, ডেঙ্গুজ্বরে যেসব শিশু মারা গেছে, তারা বাড়ি থেকেই জটিলতা নিয়ে এসেছে। এখানে একটি বিষয় লক্ষ রাখতে হবে, শুধু প্লাটিলেট কমা আশঙ্কার নয়, রক্তচাপ কমে যাওয়া প্লাটিলেট কমার চেয়ে ভয়ের। তাই আমাদের শিশুদের রক্তচাপ নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে।’
স্যাংশন নিয়ে ভয় না পাওয়ার বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার মেথডিস্ট সেন্ট্রাল হলে নাগরিক সংবর্ধনায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি পাল্টা স্যাংশন দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
সংবিধান অনুযায়ী সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে জানান তিনি। খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা ইস্যু সম্পর্কে প্রশ্ন রাখেন, সাজাপ্রাপ্ত কাউকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠায় কোন দেশ?
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখে বলেন, পৃথিবীর কোন দেশের সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠায় বলতে পারেন? কোনো দেশে পাঠায়? তারা এটা দাবি করে। আমাদের কেউ কেউ আঁতেল আছে। তারা বলে, একটু কী সহানুভূতি দেখাতে পারেন না! সে এভারকেয়ার, বাংলাদেশের সবথেকে দামি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। আর রোজই শুনি এই মরে মরে, এই যায় যায়। বয়সতো আশির ওপর। মৃত্যুর সময় তো হয়ে গেছে। তার মধ্যে অসুস্থ। এখানে এত কান্নাকাটি করে লাভ নাই।
স্যাংশনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। আপনাদেরও বলব, স্যাংশন নিয়ে মাথা ঘামাবেন না।
বিএনপি চেয়ারপারসন ‘অসুস্থ’ খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে শর্ত দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সেই শর্তের অন্যতম ইস্যু হচ্ছে, বিএনপিকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। এমন ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিদেশে যাওয়ার অনুমতি মিলবে। কিন্তু সরকারের সেই শর্তে রাজি নন খালেদা জিয়া। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কোনো শর্তের বিনিময়ে তিনি মুক্তি চান না। ফলে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার সরকারের যে চেষ্টা, সেটা এ দফায় সফল হচ্ছে না বলে মনে করছেন আন্দোলনে থাকা নেতারা। তাদের মতে, সরকার ফাঁদ পাতলেও এতে পা না দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে বেগম জিয়ার। বরং আন্দোলনে এ সরকারকে বিদায় করে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলতে চান তারা। একই সঙ্গে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করেই আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন। এ লক্ষ্যে প্রায় অর্ধশত দল নিয়ে গত প্রায় এক বছর ধরে আন্দোলনে রয়েছেন তারা।
শর্তের বিনিময়ে মুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে গত রবিবার রাতে কিশোরগঞ্জে বিএনপির রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে দলটির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে শর্ত দেওয়া হয়েছিল তিনি যদি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চান, তাহলে বিএনপিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আসতে হবে। বিএনপি থেকে উত্তর দেওয়ার আগেই অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতাল থেকে খালেদা জিয়া বিদ্রোহ করে বলেছেন, তার জীবনে গণতন্ত্রের জন্য কোনো শর্ত নেই। ভোটের অধিকারের জন্য, এই দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য কোনো শর্ত নেই। কোনো শর্ত খালেদা জিয়ার নামের সঙ্গে যায় না এবং আমরাও তা মানি না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খালেদা জিয়া ৫৪ দিন ধরে টানা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিতই খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। এ সময় বেশ কয়েকবার শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়লে দলের কয়েকজন নেতার মাধ্যমে মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের দেওয়ার বক্তব্যের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি দলের মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির কয়েকজন সম্পাদক ও সদস্য খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন। সূত্রগুলো বলছে, একজন ভাইস চেয়ারম্যান ও স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য কথা প্রসঙ্গে এ ধরনের প্রসঙ্গেও ইঙ্গিত দিলে খালেদা জিয়ার শর্ত দিয়ে মুক্ত হতে চান না বলে পুনর্ব্যক্ত করেন। যদিও এর আগে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথা নেতাদের আগেই বলে রেখেছিলেন একসময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া এ নেত্রী। কোনো অবস্থায় শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়া যাবে না এবং এ ব্যাপারে কোনো ধরনের সমঝোতাও নয়Ñ এ ব্যাপারেও খালেদা জিয়ার স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে হাসপাতালে দেখা করেন। সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে এসে মঞ্চের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের এ আন্দোলনে উনার সমর্থন আছে। আমাদের একজন নেতা (ওই বৈঠকে) বলেছেন, সরকার একটা নির্বাচনের জাল বিছানোর চেষ্টা করছে। উনি (খালেদা জিয়া) বলেছেন, কোনো অবস্থায় এ সরকারের অধীনে নির্বাচনী ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।’
এর আগে ৮ মে রাতে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় সাক্ষাৎ শেষে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছিলেন, কেউ কেউ বলছেন আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাওয়া উচিত। এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া তাদের বলেছেন, প্রশ্নই আসে না। এ বিষয়ে আমি কোনো অনুমতি দেব না।
এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি মনে করছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনে এ সরকারকে বিদায় করতে না পারলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমে এ ইস্যুর সমাধান করবে তারা। এজন্য চলমান এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে এখন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসা ইস্যুটি জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে চান তারা। এতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নিতে পারে বলে তাদের বিশ্বাস।
গতকাল সোমবার স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে সভায় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। আগামী ৫ অক্টোবর বিএনপি ঘোষিত রোডমার্চ কর্মসূচি শেষ হবে। এর আগেই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি।
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু বলেন, ‘দাবার ঘুঁটি হিসেবে খালেদা জিয়াকে ব্যবহারের চিন্তা তারা কীভাবে করে সেটাই বোধগম্য নয়। সরকারের এ ধরনের চিন্তা বা পরিকল্পনা কোনো কাজে আসবে না।’
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে বিএনপিপ্রধানের পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদনের ওপর গত রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই। যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আবার গতকাল নিজ কার্যালয়ে সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি কিংবা আপিল বিভাগে আবেদন করতে পারেন। তবে তার আগে তাকে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জেলে যেতে হবে। রাষ্ট্রপতি বা আপিল বিভাগের খালেদা জিয়ার পরিবার আবেদন করবে না বলে দলীয় আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন নেই বলেই বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে ভয়ংকর তামাশা করা হয়েছে। যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। এর বাইরে দলের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেই।’
এদিকে চিকিৎসক সূত্র জানা গেছে, বর্তমানে খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। গতকাল তার আলট্রাসনোগ্রাম ও ইকো করা হয়েছে।
তিনি জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য প্রণীত আইনের অধীনে ধানমন্ডিতে যে বাড়ি পেয়েছিলেন শেখ রেহানা, বিএনপি ক্ষমতায় এসে সে বাড়ি উচ্ছেদ করে। সেখানে পুলিশ ফাঁড়ি করছে আর ‘লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে’ সেই পুলিশ ফাঁড়ি উদ্বোধন করেছে খালেদা জিয়া। ছেলে কোকোর মৃত্যুর পর তাকে (শেখ হাসিনা) খালেদা জিয়ার বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা কীভাবে খালেদা জিয়ার জন্য আমার কাছ থেকে আরও সহানুভূতি আশা করে।’
লন্ডনের মেথোডিস্ট সেন্ট্রাল হল ওয়েস্টমিনস্টারে তার সম্মানে আয়োজিত একটি কমিউনিটি সংবর্ধনায় তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলা বিএনপির পক্ষে শোভা পায় না কারণ তারা জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে ধোকাবাজি খেলেছে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি একটি প্রহসনমূলক নির্বাচন করে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার দেড় মাসের মধ্যেই দেশের জনগণ তাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে। তিনি বলেন, দেশের জনগণ কখনই ভোট কারচুপিকারীদের ক্ষমতায় বসতে দেয় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রধান হিসেবে তার ওপর ন্যস্ত নির্বাহী ক্ষমতা দিয়ে এতিমদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড স্থগিত করার পর খালেদা জিয়াকে তিনি বাড়িতে থাকতে দিয়েছেন। খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে তার কিছুই করার নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি আইন অনুযায়ী যা করতে পারেন তাই করেছেন। অনেকেই এখন যুক্তি দিচ্ছেন, ‘আইন নিজের গতিতে চললেও খালেদা জিয়ার প্রতি আমি বেশি সহানুভূতি দেখাতে পারি’।
অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজেদুর রহমান ফারুক।
উত্তর-পূর্ব পাকিস্তানে একটি অঙ্গ পাচারকারী চক্রের আট সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, পুলিশ বলছে। চক্রটির নেতা ফাওয়াদ মুখতারের বিরুদ্ধে ৩০০ জনেরও বেশি মানুষের কিডনি চুরি করে বের করে ধনী গ্রাহকদের মধ্যে প্রতিস্থাপন করার অভিযোগ রয়েছে।
মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা বিবিসি নিউজ।
বিবিসি জানায়, অস্ত্রোপচারের সময় রোগীর দেহ থেকে কিডনি সরিয়ে ফেলা এবং ধনী গ্রাহকদের কাছে বিক্রির অভিযোগে ফাওয়াদ মুখতার নামের এক চিকিৎসক ও তার দলের আট সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছে পাকিস্তান পুলিশ। ফাওয়াদ এ পর্যন্ত তিন শতাধিক রোগীর কিডনি চুরি করেছেন।
এমনকি অস্ত্রোপচারকালে কিডনি চুরির সময় তার হাতে অন্তত তিনজন রোগী মারা গেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ফাওয়াদ এর আগে পাঁচবার অসদাচরণের জন্য গ্রেপ্তার হলেও প্রতিবারই জামিন নিয়ে মুক্তি পেয়ে যান। রোববার (১ অক্টোবর) পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানায় পাকিস্তান পুলিশ। চক্রটি পূর্ব পাঞ্জাব প্রদেশের পাশাপাশি পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরে কাজ করছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মহসিন নকভি রবিবার একটি সংবাদ সম্মেলনে জানান, “কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টগুলি বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবনকে ক্লিনিক আকারে সাজিয়ে সেখানে রোগীদের অস্ত্রোপচার করার সময় রোগীদের অজান্তেই কিডনি সরিয়ে নেয়া হত।“
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফাওয়াদ মুখতার জানিয়েছেন, তার নেতৃত্বাধীন চক্র এখন পর্যন্ত মোট ৩২৮ রোগীর দেহ থেকে কিডনি চুরি করেছে। প্রতিটি কিডনি বিক্রি হয়েছে ১ কোটি রুপি করে।
২০১০ সালে মানবদেহের প্রত্যঙ্গ ব্যবসা নিষিদ্ধ করে পাকিস্তান। এ অপরাধের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও মোটা অঙ্কের জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।