
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত ঘোষণার ১৩ ঘণ্টা পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র ও স্থানীয়রা জানান, ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার কানিহারী ইউনিয়নের বাড়মা গ্রামের মাদ্রাসাশিক্ষক সাইফুল ইসলামের স্ত্রী হালিমা খাতুন গত রবিবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসবে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। নবজাতকের ওজন ছিল ৯০০ গ্রাম। সাত মাসের মাথায় জন্ম নেওয়া শিশুকে নবজাতক পরিচর্যা ইউনিটে (এনআইসিইউ) ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় নবজাতকটিকে মৃত ঘোষণা দিয়ে মৃত্যুসনদ দেন নিউনেটোলজি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার। ওই মৃত্যুসনদে উল্লেখ করা হয়, কম ওজন ও সময়ের আগে জন্ম নেওয়ায় মৃত্যু হয়েছে নবজাতকের।
এরপর দুপুর ১টার দিকে নবজাতকের মরদেহ নিয়ে অটোরিকশায় করে বাড়ির পথে রওনা দেন বাবা সাইফুল। পথে ময়মনসিংহের চুরখাই এলাকায় যেতেই নবজাতক হঠাৎ নড়ে ওঠে এবং নিঃশ্বাস নিতে শুরু করে। এ সময় অটোরিকশা ঘুরিয়ে বিকেল ৩টার দিকে নবজাতককে ফের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে অক্সিজেনসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে এনআইসিইউতে রেফার করেন জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক।
সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘অনেকটা সময় অক্সিজেনের বাইরে ছিল বাচ্চা। দ্বিতীয়বার ভর্তির পর নবজাতককে এনআইসিইউতে চিকিৎসকরা খুব গুরুত্বসহকারে চিকিৎসা দেন। মঙ্গলবার রাত সোয়া ১২টায় নবজাতককে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। রাতেই ত্রিশালের নিজ বাড়িতে নিয়ে মরদেহ দাফন করা হয়েছে।
হাসপাতালের নিউনেটোলজি বিভাগের প্রধান ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অতিরিক্ত কম ওজনের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় শ্বাস বন্ধ থাকার ঘটনা আগেও ঘটেছে। এই নবজাতকের বিষয়ে কারও গাফিলতি ছিল কি না, তা তদন্ত করা হবে।’
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. জাকিউল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তদন্তের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। চিকিৎসকের গাফিলতি থাকলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত এক যুগ ধরে বরিশালের জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো উদ্যোগ নেই। সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরনের সময়ে নগরীতে কিছু ড্রেন স্থাপন করা হয়। সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করতে পরবর্তী সময়ে সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব গ্রহণকারীদের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। স্থাপন হয় না নতুন কোনো ড্রেন। পুনঃখনন হয়নি খালগুলো। নগরীর মধ্যে যে কয়টি এলাকায় ড্রেন ব্যবস্থা রয়েছে তাও নদী ও খালের নিচের স্তরে হওয়ায় জোয়ার আর বৃষ্টি হলেই পানিতে প্লাবিত হয় পুরো নগরী। ২০২০ সালে ৪২টি খাল পুনরুদ্ধার এবং সৌন্দর্যবর্ধনসহ আনুষঙ্গিক উন্নয়নে ২ হাজার ৬৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠায় সিটি করপোরেশন। কিন্তু এর অনুমোদন মেলেনি। এতে গত ৫ থেকে ৭ আগস্ট একটানা বৃষ্টিতে বরিশালে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পরের দুদিন বৃষ্টি কম হলেও নগরীতে জলাবদ্ধতা এখনো রয়ে গেছে।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বরিশালে গত বছর ২৪ আগস্টের ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে যে জলাবদ্ধতা হয়েছিল, ঠিক আবারও সেই দুর্ভোগে পড়েছে বরিশাল নগরবাসী। অথচ সিত্রাংয়ের সময় বরিশাল কীর্তনখোলা নদীর পানি জোয়ারের সময় বিপদসীমার সর্বোচ্চ ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। এদিন সকাল ৯টা থেকে পরদিন সকাল ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছিল ২৪১ মিলিমিটার। কিন্তু এবার ৭ আগস্ট কীর্তনখোলা নদীর পানি জোয়ারের সময় বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। আর ৭ আগস্ট সকাল ৯টা থেকে ৮ আগস্ট সকাল ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছিল ১৭৭ মিলিমিটার। কিন্তু তারপরও জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই পায়নি নগরবাসী।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মাসুম বলেন, ‘বরিশালের নদনদীর নাব্য কমে যাওয়ায় জল ধারণক্ষমতাও স্বাভাবিকভাবে দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এ ছাড়া নগরীর এলাকার মধ্যে যেসব ছোট নদী বা খাল রয়েছে সেগুলো বিভিন্ন জটিলতার কারণে এখন পর্যন্ত খননকাজ শুরু করা যায়নি। নগরবাসীকে জলাবদ্ধতার মধ্য থেকে রেহাই দিতে দরকার হলে ‘জলাধার’ উপায় গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রয়োজনে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ করে জলাধার সৃষ্টি করা যেতে পারে। কিন্তু বর্তমানে বরিশালে ব্যক্তিমালিকানাধীন জলাধারগুলোও গণহারে ভরাট হচ্ছে। পাশাপাশি খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠানও জলাধার ভরাট করে অবকাঠামো নির্মাণে পিছিয়ে নেই। ছোট নদী-খাল পুনঃখনন না করায় বরিশালের অধিকাংশ নদনদীর নাব্য কমে গেছে। এ ছাড়া নগরীর ময়লাগুলো নির্দিষ্ট স্থানে সরানো হলেও আশপাশের এলাকার খালগুলো ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। এতে প্রবাহমান লিংক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আগামীতে এ কারণগুলো যদি আরও বৃদ্ধি পায় তবে বরিশালে ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাতেই ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। তাই এখনই এ বিষয়ে সমন্বিত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।’
বরিশালের ‘নদী খাল বাঁচাও’ আন্দোলন কমিটির সাবেক সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগে খালকেন্দ্রিক যোগাযোগব্যবস্থা ছিল। কিন্তু সামাজিক শক্তিকে হারিয়ে ফেলার কারণে বর্তমানে খালগুলোকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। তবে শহরের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী খালগুলোকে চ্যানেলিং করার পরিকল্পনা চলছে। এ ক্ষেত্রে খালগুলোতে আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা প্রয়োজন। জলাধার এবং খালগুলোকে পরিচ্ছন্ন রাখতে সবার মধ্যে দায়িত্ববোধ সৃষ্টি করতে হবে।’
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমানে বিভিন্ন খালে আবর্জনা জমে নগরীতে যে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসনের জন্য পরিকল্পনা চলছে। গত চার বছর ধরে একটা প্রকল্পে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে ৪২টি খাল খননের কথা চলছিল।
কিন্তু এখনো সেটি অনুমোদন পায়নি। আজকেও মন্ত্রণালয়কে ফোন করা হয়েছে। আশা করি শিগগিরই অনুমোদন মিলবে।’ তবে বর্তমানে যে খালগুলোতে ময়লা-আবর্জনায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে সেগুলো পরিষ্কার করার জন্য আলোচনা চলছে।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের উচ্চপর্যবেক্ষক মাসুদ রানা রুবেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বুধবার গত ২৪ ঘণ্টায় বেলা ৩টা পর্যন্ত বরিশালে ২১.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর আগস্ট মাস জুড়ে বরিশাল বিভাগে বৃষ্টি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।’
এদিকে অপরিকল্পিত নগর উন্নয়ন ও জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নিলে নগরবাসী ক্ষিপ্ত হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে। এদিকে গতকাল বেলা ১১টায় সরকারি ব্রজমোহন কলেজ জীবনানন্দ দাশ মুক্ত মঞ্চের সামনে হাঁটুসমান পানিতে দাঁড়িয়ে ক্যাম্পাসে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে সরকারি ব্রজমোহন কলেজে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট সরকারি ব্রজমোহন কলেজ শাখার সভাপতি হাফিজুর রহমান রাকিব, সাধারণ সম্পাদক বিজন সিকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য মিনহাজুল ইসলাম ফারহান প্রমুখ।
গতকাল দুপুরে বরিশাল নগরীর বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে দেখা যায়, বরিশাল নগরীতে গত তিন দিন আগে অতি বৃষ্টি হওয়ায় নগরীর অধিকাংশ সড়কগুলোতে এখনো পানি জমে আছে। নগরীর বটতলা থেকে হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা সড়ক, বটতলা আদম আলী হাজির গলি, অক্সফোর্ড মিশন রোড, করিম কুটির, কলেজ অ্যাভিনিউ, গোরস্তান রোড, বগুড়া রোড, বিএম স্কুল সড়ক, রূপাতলী হাউজিং, ধান গবেষণা সড়কের খ্রিস্টান কলোনি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদা কলোনি, পার্শ্ববর্তী শেবাচিম হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণি স্টাফ কোয়ার্টার, কালুশাহ সড়ক, কাজিপাড়া এবং কাউনিয়া এলাকার বেশ কিছু সড়কে এখনো পানি জমে আছে। এর মধ্যে বগুড়া রোড, বটতলা, কলেজ অ্যাভিনিউ এবং গোরস্তান রোড এলাকার সড়কগুলোতে হাঁটু পানি রয়েছে। বটতলা দুই লেন সড়কের এক লেনে যানবাহন চললেও অন্য লেনে বেশি পানি জমাট হলে যানবাহন চলাচল করতে পারছেন না। এরপর আবার গতকালও বৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে নগরবাসীসহ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ বাড়ছে। অন্যদিকে বাড়ছে মশার উৎপাত, ছড়াচ্ছে ভয়ংকর ডেঙ্গু। বরিশাল জেলার নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ টিনের ঘর, অর্ধপাকা এবং পাকা ভবনের নিচতলা পানিতে তলিয়ে থাকায় দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনার ছোট্ট শহর ওয়ালনাট কোভ। শহরের এক পাশের একটি বাড়িতে বাস করেন অ্যারন ও আলিনা এডওয়ার্ডস দম্পতি। সম্প্রতি তারা বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন তাদের ১০ বছর বয়সী মেয়ের ‘বিয়ে’ দিয়ে! দেশটিতে আইনত বাল্যবিয়ে নিষিদ্ধ হলেও তারা পাচ্ছেন বাহবা। কারণ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে তাদের মেয়ে এমার শেষ ইচ্ছাপূরণ করতেই ‘নকল’ বিয়ের আয়োজন করেছিলেন তারা। বিয়ের ১২ দিন পর এমার মৃত্যু হলে বিষয়টি সামনে আসে সবার।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, গত বছর এপ্রিলে এমার তীব্র লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া (এএলএল) ধরা পড়ে। কিন্তু সে তার অসুস্থতাকে পরাজিত করতে পারবে বলে তার মা আলিনা ও বাবা অ্যারন এডওয়ার্ডস আশবাদী ছিলেন। কিন্তু চলতি বছর জুনে তাদের জানানো হয়, এমার ক্যানসার নিরাময়যোগ্য নয় এবং সে আর কয়েক দিন মাত্র বাঁচবে। এরপরই বিবাহিত হওয়ার বাসনার কথা জানায় এমা। পরে এমার শৈশবের প্রিয় বন্ধু ড্যানিয়েল মার্শাল ক্রিস্টোফার ‘ডিজে’ উইলিয়ামসের সঙ্গে বিয়ের আয়োজন করা হয়। গত ২৯ জুন জাঁকালো একটি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাদের বিয়েও হয়। কিন্তু বিয়ের মাত্র ১২ দিন পর মারা যায় এমা এডওয়ার্ডস।
এমার মা আলিনা বলেন, আমরা অন্য ধরনের চিকিৎসা নিতে গেলাম আর তারা জানাল, সে কয়েক সপ্তাহ নয়, সে সম্ভবত কয়েক দিন বা বড়জোর এক সপ্তাহ বাঁচবে। আমরা কোনোভাবেই এটা শোনার আশা করিনি। আমরা ভাবলাম, অন্য ধরনের চিকিৎসা নেব ও সেটি কাজ করবে। এটা পেটে সজোরে ঘুসি মারার মতো। আমরা কল্পনাও করতে পারিনি তারা বলবে, তারা ওর জন্য আর কিছু করতে পারবে না।
নিউ ইয়র্ক পোস্ট বলছে, এ দুঃখজনক খবর জানার পর আলিনা ও ডিজের মা কাজে নেমে পড়েন, তারা একটি নকল ‘বিয়ের’ পরিকল্পনা করেন। আলিনা বলেন, এটা অতি দ্রুত করা দরকার ছিল। দুদিনেরও কম সময়ের মধ্যে আমরা সবকিছুর আয়োজন করে ফেলি। সবকিছু দানের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়।
এমার ইচ্ছায় তার স্কুলে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হওয়ার কথা ছিল। তবে স্কুল কর্র্তৃপক্ষ অনুমতি না দেওয়ায় একটি বাগানে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছিল। প্রায় ১০০ জন অতিথি এতে উপস্থিত ছিলেন।
আলিনা বলেন, এটি মহামূল্যবান অনুষ্ঠান ছিল আর সবকিছু এত ভালোভাবে হয়েছে। ওর বাবা বলেছে, সে তাকে তুলে দিয়েছে। আমাদের এক বন্ধু প্রতিনিধিত্ব করেছে, আরেক বন্ধু বাইবেল থেকে ত্রোস্ত পাঠ করেছে আর তার প্রিয় বন্ধু সাম্মানিক দাসীর ভূমিকা পালন করেছে। আলিনা তার নতুন জামাইয়েরও প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, ডিজে সবচেয়ে মিষ্টি মনের ছেলে। সোনার তৈরি একটি হৃদয় আছে ওর আর ও সত্যিই এমাকে ভালোবাসত।
নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের প্রথম ব্যাচের জ্বালানি উৎপাদন শেষ হয়েছে। রাশিয়ার সাইবেরিয়ায় উৎপাদিত এই পারমাণবিক জ্বালানি রাশিয়া থেকে দেশে আনতে গতকাল বুধবার চূড়ান্ত প্রটোকল সই হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে জ্বালানি আমদানির সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে আরেকটি মাইলফলক অর্জন করল দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি।
সাইবেরিয়া থেকে টেলিফোনে প্রটোকল সইয়ের বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক ও আন্তর্জাতিক পরমাণু বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ শৌকত আকবর। তিনি বলেন, কারখানায় পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদন ও গ্রহণের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য এই জ্বালানি এখন কারখানায় প্রস্তুত রয়েছে। প্রথম তিন বছর রাশিয়া থেকে এই জ্বালানি আমদানির জন্য বাংলাদেশকে কোনো অর্থ পরিশোধ করতে হবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রসাটমের জ্বালানি কোম্পানি টেভেলের একটি প্রতিষ্ঠান নভোসিবিরস্ক কেমিক্যাল কন্সেন্ট্রেটস প্ল্যান্টে (এনসিসিপি) জ্বালানি উৎপাদন দেখেছেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। এরপর প্রটোকলে স্বাক্ষর করেন রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক ড. শৌকত আকবর এবং এএসই ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং নির্মাণ প্রকল্পের অপর প্রকল্প পরিচালক আলেক্সি দেইরি।
প্রটোকল সইয়ের মধ্য দিয়ে পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদনকারী কারখানা থেকে বাংলাদেশে শিপমেন্টের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন পেল। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরেই এই জ্বালানি বিশেষ বিমানে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে বাংলাদেশ পৌঁছবে বলে আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ড. মোহাম্মদ শৌকত আকবর দেশ রূপান্তরকে বলেন, পরমাণুর শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিতে বাংলাদেশ প্রতিটি ধাপে আইএইএ’র নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করে নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কমিশনিং কাজ শেষে উৎপাদন শুরু করতে পরিকল্পনা মোতাবেক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জ্বালানি হ্যান্ডেলিং করতে প্রয়োজনীয় জনবল তৈরিতে কোনো সমস্যা নেই। সময়বদ্ধ কর্মপরিকল্পনা অনুয়ায়ী দেশের এবং আইএইএ’র সব ধরনের নিয়মকানুন মেনে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। আইএইএর প্রতিনিধিদল নিরাপত্তাসহ অন্যান্য বিষয় সরেজমিনে পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছে। প্রকল্পের অগ্রগতি এবং দেশের পারমাণবিক অবকাঠামো উন্নয়নে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছে তারা।
টেভেলের কোয়ালিটি ডিরেক্টর আলেক্সান্দার বুখালভ বলেন, টেভেল ফুয়েল কোম্পানি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য উন্নত এবং কার্যকরী পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদন করেছে। এই জ্বালানি আবারও রুশ পারমাণবিক প্রযুক্তির শ্রেষ্ঠত্ব ও সর্বোচ্চ নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণ করবে।
রূপপুর প্রকল্পের জেনারেল কন্ট্রাকটর এএসই ভাইস-প্রেসিডেন্ট আলেক্সি দেইরি জানান, প্রকল্প এলাকায় জ্বালানি পৌঁছানোর আগেই প্রথম ইউনিটটি জ্বালানি লোডিং-এর জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বর্তমানে প্রথম ইউনিটের কমিশনিংয়ের প্রথম ধাপের কার্যক্রম চলমান আছে। এজন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে পারমাণবিক চুল্লিতে নিরাপদে পারমাণবিক জ্বালানি লোড করা, সুষ্ঠুভাবে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের ‘ফিজিক্যাল স্টার্টআপ’ কার্যক্রম সম্পন্ন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে গ্রিড লাইনের সিনক্রোনাইজেন বা যুক্ত করা, পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সর্বশেষে বাণিজ্যিক উৎপাদনের মাধ্যমে এই বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডের সাহায্যে গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করা।
রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতায় পরমাণু শক্তি কমিশন বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের জেনারেল ডিজাইনার ও কন্ট্রাক্টর রাশিয়ার রসাটম করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা।
বাংলাদেশের একক প্রকল্প হিসেবে সবচেয়ে বড় অবকাঠামো এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে ২০২৪ সালে এবং এর পরের বছর দ্বিতীয় ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট করে মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হওয়ার কথা রয়েছে। এজন্য পিছিয়ে পড়া বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে শেষ করার জন্য পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশকে (পিজিসিবি) তাগিদ দেওয়া হচ্ছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
সরকারবিরোধী এক দফার আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ২৯ জুলাই রাজধানীর প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি ছিল বিএনপির। কিন্তু ওই কর্মসূচি পুরোপুরি সফল করতে পারেননি দলটির নেতাকর্মীরা। এ ব্যর্থতার জন্য সমন্বয়হীনতাকেই অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করছে দলটির স্থায়ী কমিটি। গত সোমবার রাতে হওয়া স্থায়ী কমিটির ওই বৈঠকে কর্মসূচি মূল্যায়ন করতে গিয়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকজন নেতা এখন ‘তোপের মুখে আছেন’ রয়েছেন। দলীয় রাজনীতিতেও এখন আলোচনা ওই কর্মসূচির জেরেই ছাত্রদলের সভাপতি রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওইদিনের ভিডিও ফুটেজ দেখে দায়িত্বপ্রাপ্ত কারা ছিলেন আর কারা উপস্থিত ছিলেন সেই তালিকা করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতাও এমন কথা জানিয়ে বলেন, যার যার অবস্থান অনুযায়ী কাউকে পদ থেকে বাদ দেওয়া, কাউকে মৌখিকভাবে ‘তিরস্কার’ করাসহ বিভিন্ন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, গণঅবস্থান কর্মসূচি সফল করতে নেতাকর্মীদের সদিচ্ছার অভাব ছিল না। তবে সমন্বয়হীনতা ছিল। নানা বাস্তব কারণেই অনেকেই যথাসময়ে নির্ধারিত স্পটে আসতে পারেননি। কিন্তু একজনের পর আরেকজন যে দায়িত্ব নিয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন সেটি ওইদিন ছিল না।
জানা গেছে, এক দফা আন্দোলন সফল করতে সাংগঠনিকভাবে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়েছে দলটি। কর্মসূচি বাস্তবায়নে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সর্বত্রই মাঠে থাকতে হবে পদধারী নেতাদের। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে ধারাবাহিক কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। এ অবস্থায় পদপদবি নিয়ে ঘরে বসে থাকার কোনো সুযোগ নেই। সিনিয়র-জুনিয়র যারাই শতভাগ দিতে ব্যর্থ হবেন, তাদেরই কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থার মুখে পড়তে হবে। রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে অব্যাহতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে যেটা শুরু হয়েছে। নিষ্ক্রিয় নেতাদের জন্য ‘কঠোর বার্তা’ বলে মনে করছেন অনেকে।
সূত্রগুলো বলছে, স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরও কর্মসূচি সফল করার জন্য মাঠে নামার পরামর্শ এসেছে নীতিনির্ধারণী বৈঠক থেকে। বৈঠকে এক নেতা যুক্তি দিয়ে বলেন, সিনিয়র নেতারা কর্মসূচিতে থাকলে জুনিয়র নেতারা মাঠে থাকতে সাহস পান।
জানা গেছে, পুলিশের অনুমতি ছাড়া অবস্থান কর্মসূচিকে ঢাকায় দলের সাংগঠনিক সক্ষমতা যাচাইয়ে ‘টেস্ট কেস’ হিসেবে নিয়েছিল বিএনপি। ২৮ জুলাইয়ের জনসভার ঠিক পরদিন ২৯ জুলাই অবস্থানের কর্মসূচি দেওয়ার মূল উদ্দেশ্যই ছিল ‘বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতিতে আরেকটি বড় ধরনের শোডাউন’ করা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়নি। কর্মসূচি সফল করতে না পারায় দলের সাংগঠনিক দুর্বলতার বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে।
পুরো কর্মসূচি সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন ভারতের শিলংয়ে থাকা স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
ওইদিন কে কোথায় অবস্থান করবেন এবং প্রথম দিকে কেউ বাধাপ্রাপ্ত হলে পরবর্তী সময়ে কারা এগিয়ে যাবেন, দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী, দলের সিনিয়র নেতারা মূল পয়েন্টগুলোতে থাকবেন কিন্তু জমায়েত সফল করা ও প্রয়োজনে ‘বাধার মুখে টিকে থাকার’ জন্য সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা এবং ঢাকা মহানগরের নেতাদের ওপর ভরসা করা হলেও সেই পরিকল্পনা সফল হয়নি।
পরে সহযোগী সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এর আগে কর্মসূচির দিনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কে কোথায় ছিলেন সে সম্পর্কিত ভিডিওগুলো সংগ্রহ করেন ও খোঁজখবর নেন। দেখা গেছে, ছাত্রদল সভাপতির ওইদিন ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের উত্তরা এলাকায় থাকার কথা ছিল। তিনি সেখানে যাননি। বিকেলের দিকে তিনি খিলক্ষেত এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেন। ফলে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
ব্যর্থতার কারণে জাতীয়তাবাদী যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার পুরনো কমিটি বাতিল করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি দিয়েছে গতকাল বুধবার। সংগঠনের দপ্তরের দায়িত্বে থাকা কামরুজ্জামান দুলাল স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ঢাকা মহানগর উত্তরে আহ্বায়ক হিসেবে শরীফ উদ্দিন জুয়েল, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম স্বপন, তাসলিম আহসান মাসুম, আবুল হাসান টিটু ও সদস্য সচিব হিসেবে সাজ্জাদুল মিরাজকে এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণে আহ্বায়ক হিসেবে খন্দকার এনামুল হক এনাম, যুগ্ম আহ্বায়ক এমএ গাফফার, ইকবাল হোসেন, মুকিত হোসেন এবং সদস্য সচিব হিসেবে রবিউল ইসলাম নয়নকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর হঠাৎ প্রস্থান এবং ব্যাপক নেতাকর্মী ছাড়া মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকেও ভালোভাবে নেয়নি হাইকমান্ড। উত্তর মহানগর বিএনপির শীর্ষ আরেক নেতা, স্বেচ্ছাসেক দলের শীর্ষ এক নেতাসহ বেশ কয়েকজনকে সতর্ক করে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে শ্রাবণের ঘটনায় পদ হারানোর আতঙ্ক তৈরি হয়েছে অনেকের মধ্যে। অবশ্য অনেকেই মনে করেন, ‘একটি কর্মসূচির ব্যর্থতা’ বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত যুক্তিসংগত হবে না। এতে করে দলে ভিন্ন বার্তা যাবে। তাছাড়া ঢাকা মহানগরসহ অঙ্গসংগঠনের শীর্ষপদ থেকে নেতাদের সরিয়ে এখনই যোগ্য বিকল্প পাওয়াও কঠিন। কেননা এই মুহূর্তে বিকল্প যাকে দায়িত্বে আনা হবে, তাকে ঘিরেই আন্দোলনের ছক সাজাতে হবে। এর জন্য যথেষ্ট সময় নেই।
জানতে চাইলে যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কড়া সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার এই ইঙ্গিত সামনের কর্মসূচিগুলোকে আরও সুসংগঠিত করতে সহায়ক হবে এবং তাতে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের অংশগ্রহণ বাড়বে বলে আমি মনে করি।’
আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার হাতে ইয়েমেনে অপহৃত জাতিসংঘের কর্মকর্তা বাংলাদেশি নাগরিক লে. কর্নেল (অব.) এ কে এম সুফিউল আনামকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে তাকে বহনকারী একটি বিশেষ ফ্লাইট।
সুফিউল শারীরিকভাবে সুস্থ রয়েছেন। দেশে পৌঁছে তিনি আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায় করেন। এ ছাড়া তাকে একটি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে উদ্ধার করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে কাজ করার সময় তিনিসহ আরও চারজন অপহরণের শিকার হন। দেশটির মুদিয়াহ প্রদেশ থেকে আল-কায়েদার সদস্যরা তাদের অপহরণ করে। বিমানবন্দরে নেমে সুফিউল আনাম গণমাধ্যমের কাছে অপহরণের পর গত দেড় বছরে তার জীবনে ঘটে যাওয়া দুর্বিষহ পরিস্থিতির বর্ণনা তুলে ধরেন।
তিনি ভেবেছিলেন হয়তো আর বেঁচে ফিরতে পারবেন না। তাকে যেকোনো মুহূর্তে হত্যা করা হতে পারে।
নিজের অপহরণের ঘটনা অ্যাকশন সিনেমার চিত্রনাট্যের সঙ্গে তুলনা করে সুফিউল বলেন, ‘এটা সিনেমায় বা কোনো অ্যাকশন মুভিতে দেখা যায়, আমি আসলে কী অবস্থায় ছিলাম। আমি ছিলাম পাহাড়ে, মরুভূমির মধ্যে। আকাশ বাতাস দেখতে পারিনি মাসের পর মাস।’
অপহরণের দিন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি যখন পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে ফিরছিলাম, তখন আমার সঙ্গে দুটি গাড়ি ছিল, দুজন চালকসহ ছয়জন লোকও ছিল। আমাদের রাস্তার মাঝখানে একটা চেকপোস্টে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করা হয়। সেখান থেকে একটি পাহাড়ের শেল্টারে নিয়ে রাখা হয়। ভাগ্য ভালো যে, সেখানে আমাদের নিয়ে কোনো ধরনের নির্যাতন বা দুর্ব্যবহার করা হয়নি। শুধু চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল। সেখানে যতদিন সম্ভব তারা রেখেছে। এরপর সেখান থেকে আমাদের চোখ-মুখ বেঁধে একটি মরুভূমিতে নিয়ে রেখে দেয়। এভাবে আমরা গত দেড় বছর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি। এই সময়ে আমাদের অন্তত ১৮ বার জায়গায় বদল করা হয়েছে।’
জিম্মি করার পর অপহরণকারীরা অর্থ চেয়েছিল কি না তা জানা নেই উল্লেখ করে সুফিউল বলেন, ‘তারা শুধু বলেছিল আমি জাতিসংঘের কর্মকর্তা। তারা যেসব ভিডিও ক্লিপ তৈরি করেছে সেখানে তারা স্পষ্ট বলেছে, তারা তাদের কিছু দাবি-দাওয়া পূরণ চায়। কিন্তু তাদের দাবিগুলো কী, সে ব্যাপারে আমার ধারণা নেই।’
এক প্রশ্নের জবাবে সুফিউল আনাম বলেন, ‘আমাকে উদ্ধার করার জন্য প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ যে প্রয়োজন, সেটা আমি গতকাল (মঙ্গলবার) পর্যন্ত বুঝতে পারিনি এবং গতকাল পর্যন্ত আমি এটাও জানতাম না যে, বাংলাদেশ থেকে আমাকে উদ্ধার করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আপনারা জানেন আমি একটা ভয়ংকর সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে অপহরণের শিকার হয়েছিলাম এবং বিষয়টা ছিল খুবই স্পর্শকাতর। আমি নিরাপত্তার স্বার্থে এ বিষয়ে বিশদ বর্ণনা করতে অপারগ। কারণ আমার কোনো বক্তব্য যদি তাদের অপছন্দ হয়, তবে আবারও আমাকে চেজ করতে পারে। আমি আসলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে চাই না।’
জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। যে সিরিজে চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। আর এই সিরিজে পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল! এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। একদিন পরে অবশ্য অবসর ভাঙলেও সেই সিরিজ আর খেলেননি তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে সাকিব সেই সিরিজ হারের দায় দিলেন তামিমের ওপরই।
'আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হারটা আমি পুরোপুরি একজনকে দায় দেব, অধিনায়ক। এক ম্যাচ পরে আমাদের হাতে আরও দুই ম্যাচ ছিল। আমরা তৃতীয় ম্যাচে ঠিকই কামব্যাক করেছি কিন্তু একটা ম্যাচ সময় লেগেছে আমাদের। সুতরাং এটা আর কারো দায় নয়, পুরো সিরিজটায় দায় একজনের ওপর। বিশ্বের কোথাও অন্তত দেখিনি যে এক ম্যাচ পরেই এরকম অধিনায়ক এসে ইমোশনালি বলে ফেলেন যে আমি ভাই খেলব না আর ক্রিকেট।’
সাকিব বলেন, 'আমার ধারণা যদি কোনো অধিনায়কের দায়িত্ববোধ থাকত, সে এটা করতে পারত না। আমার কাছে মনে হয়, এটা দলকে অনেক বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে এবং আমার মনে হয় ওইটাই এখনো রিকভার করতে সময় লাগছে, যেটা আমি অনুভব করি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।