
আইয়ুব বাচ্চু অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্যে স্বপ্ন ও অপ্রতিরোধ্য হিম্মত নিয়ে বিকশিত হওয়া এক অপূর্ব জীবনযোদ্ধার নাম। বিস্ময়কর এক সংগীতযোদ্ধা। বাংলাদেশে তো বটেই, এই উপমহাদেশেও গিটারিস্ট ও রকসংগীতশিল্পী হিসেবে তিনি ছিলেন উজ্জ্বলতম অ্যাভাঁগার্দ। গণমানুষের শিল্পী আজম খানের পরে সব থেকে শক্তিমান ঢেউয়ের নাম আইয়ুব বাচ্চু। সত্যি বলতে কি, দেশের সর্বস্তরের মানুষের তথা আমজনতার হৃদয় তার মতো এত বেশি আর কেউ ছুঁতে পারেননি। জীবৎকালেই তিনি প্রবাদপ্রতিম হয়ে ওঠেন। দেশে বাংলা গান এবং সামগ্রিকভাবে রকসংগীত প্রতিষ্ঠায় তার প্রণিধানযোগ্য অবদান রয়েছে। বলা উচিত, বাংলা রকগানকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে একক কৃতিত্ব তারই। বাংলা গানকে আন্তর্জাতিক অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার নিরলস প্রচেষ্টা ছিল আমৃত্যু। এক্ষেত্রে তার অনেক উল্লেখযোগ্য সৃষ্টিকর্ম রয়েছে। বহুমাত্রিক কাজ রয়েছে। তিনি স্বপ্ন দেখতেন এমন পাশ্চাত্যের কোনো খ্যাতিমান শিল্পীর গান যেমন তামাম দুনিয়ার মানুষ শোনেন, একইভাবে বাঙালি শিল্পীর বাংলা গানও তারা অনুরাগ নিয়ে শুনবেন। অভিভূত হবেন। জন্যভূমি ও বাংলা গানের প্রতি প্রচণ্ডরকম দরদ ছিল তার। আদতে তিনি ছিলেন একাই একশো। ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ বলতে যা বোঝায়, সংগীতের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন তা-ই। মস্ত বড় বাহাদুর।
এই লেখাটিতে শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর সংগীতের চেয়ে তার একান্ত ব্যক্তিগত কিছু অনুরাগের দিকে ফোকাস করতে চাই। যা একেবারেই অনালোচিত। অপ্রকাশিত। বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বিবেচনায় একটি নোকতা দিয়ে রাখতে চাই। আধ্যাত্মিক জগতের প্রতি আইয়ুব বাচ্চুর গভীর দরদ ছিল। তিনি সুফিবাদের আশিক ছিলেন। অনেকে হয়তো ভাবছেন, তিনি তো রকস্টার; হুট করে এ আমি কী লিখছি! হ্যাঁ, ঠিকই লিখছি। সুফিবাদের প্রতি তার প্রবল অনুরাগ ছিল। বহুভাবে তা গানেও এসেছে। ‘কাফেলা’ অ্যালবাম তার সেই অনুরাগের একটি উজ্জ্বল নমুনা। একদিন সন্ধ্যেবেলা ভাইজানকে (আইয়ুব বাচ্চুকে আমি ‘ভাইজান’ সম্বোধন করতাম) প্রশ্ন করেছিলাম, অধ্যাত্মবাদ নিয়ে। তিনি বলেছিলেন খুব অল্প কথায় ‘বুঝলে, আমি খুব খোদাভক্ত মানুষ। স্রেফ আল্লাহর গোলাম আমি। মানুষই আমার সবটুকু ভালোবাসা।
ওই ওপরওয়ালা সবই জানেন। মাঝেমধ্যে আমি পীর-আউলিয়ার মাজারে চলে যাই। চুপচাপ। রাতের বেলা...।’ বললাম, ‘আপনাকে সেই সমস্ত পাবলিক প্লেসে লোকজন তো ঘিরে ধরার কথা! কীভাবে ম্যানেজ করেন?’ তার জবাব ‘... না, তেমন অসুবিধা হয় না। রাতের বেলা তো। অন্ধকারে পৌঁছে যাই...।’ হ্যাঁ, তিনি সুফি সাধক-আউলিয়াদের দরগাহে যেতেন। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট অঞ্চল উল্লেখযোগ্য। নামাজ, জিয়ারত, এবাদত-বন্দেগি ভালোবাসতেন। তার অনুজ সহোদর ইরফান চৌধুরীর সঙ্গেও এ ব্যাপারে আমার বিশদ আলাপ হয়েছে। তো, যা বলতে চেয়েছি তিনি সংগীত সাধনার বাইরেও সুফি ভাবধারার ভেতরে একটি আধ্যাত্মিক জগতের অনুসন্ধানে পরিব্যাপ্ত ছিলেন। মানুষকে নিয়েই ছিল তার সংগীত, প্রেম, এবাদত সবকিছু। নবীনদের অগ্রযাত্রা দেখতে চাইতেন। নিজেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অসংখ্য মানুষের জন্য। তপন চৌধুরীর প্রথম ক্যাসেটের সবগুলো গান তারই সুর ও সংগীত পরিচালনায় সৃষ্টি হয়। অনেক শিল্পীকে তিনি যতœ করে গড়ে তুলেছেন। তারা সংখ্যায় এত বেশি যে, সবার নাম বলা প্রায় অসম্ভব। তথাপি দুজনের নাম বলতে চাই। একজন পার্থ বড়ুয়া। অন্যজন হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল। নিজের সম্বন্ধে তার বিশ্বাস ছিল এটুকুই যে, তিনি মাছ-ভাতপ্রিয় একজন সাদামাটা বাঙালি এবং বাংলাদেশের সংগীতশিল্পের একজন ক্ষুদ্র কর্মী। এমন বিনয়, বিশ্বাস ও চর্চার ফলে পাশ্চাত্যের প্রথাগত রকস্টার এবং তার আদবকেতা কখনোই একই ধাঁচের ছিল না। একই রকম হওয়ার কথাও নয়। রকস্টার হওয়া সত্ত্বেও তিনি অত্যন্ত বিনয়ী ও সমাজসচেতন মানুষ ছিলেন। শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ বিভিন্ন কর্মকা-ের সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা যেমন সামাজিক দায়বোধসম্পন্ন পেশাজীবী; একইভাবে তিনিও তা-ই। বস্তুত এরূপ বিশ্বাস ও দায়বদ্ধতা নিয়েই তিনি সারা জীবন কাজ করেছেন। অবশ্য এইসব সূক্ষ্ম ব্যাপার সর্বস্তরের মানুষের বোঝার কথা নয়। ফলত, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তাকে একজন মায়েস্ত্রো গিটারিস্ট এবং সংগীতশিল্পী হিসেবেই বেশি ভালোবাসেন। কার্যত এটিই স্বাভাবিক।
মানুষটি নেই। দেখতে দেখতে প্রায় পাঁচ বছর হতে চলল। তার গিটারগুলো স্তব্ধ, নির্বাক ̶ যেন সারি করে রাখা একেকটি শোকের স্মারক। যেন সুখ-দুঃখে মোড়ানো একেকটি সহস্র গল্পের মনুমেন্ট। ব্যাখ্যাতীত। তবু রোজকার ‘ঘুম ভাঙা শহরে’ (গীতিকার: শহীদ মাহমুদ জঙ্গী) কত শত ঘরে তিনি ঠিকই বেজে ওঠেন। একটি গানের মধ্যে তিনি ব্যক্ত করেছেন:
“যে মানুষটি হারিয়ে যায়,
বের করা যায় না তাকে খুঁজে...”
(গীতিকার: বাপ্পী খান)
এরও আগেই তিনি গেয়েছেন:
“এই রুপালি গিটার ফেলে
একদিন চলে যাব দূরে, বহুদূরে...
সেদিন চোখে অশ্রু তুমি রেখো
গোপন করে...”
(গীতিকার : কাওসার আহমেদ চৌধুরী)
আইয়ুব বাচ্চুর গানের মধ্যে গভীর কষ্ট নিয়ে অনেক দূরে চলে যাওয়া বা হারিয়ে যাওয়ার যে রকম দুর্নিবার আকুতি আমরা উপলব্ধি করি, তদ্রƒপ মর্মন্তুদ অভিব্যক্তি দেশের অপরাপর সংগীতশিল্পীর মধ্যে বিরল। শিল্পে ট্র্যাজেডি বা বিরহ-ব্যঞ্জনার শক্তি অপরিসীম।
আইয়ুব বাচ্চুর পুরো জীবনজুড়েই ছিল এক গভীর আবেগমথিত সংগীত-সাধনা। তিনি গিটার এবং গানের সঙ্গে নিজেকে একীভূত করে রেখেছিলেন আমৃত্যু। আমাদের জেনারেশনের কিশোরবেলার সমান্তরালে তার সংগীতজীবনের নিজস্ব পথ রচিত হয়। ফলত, আমাদের কৈশোর আর প্রথম যৌবনে বেড়ে ওঠার নানা বাঁকে, যাপিত জীবনে, স্মৃতির গহিনে তিনি মিশে আছেন, থাকবেন। এগুলো সহজ ব্যাপার নয়। সব শিল্পীর তকদিরে এমন রুহানি আলোর দেখা মেলে না। আইয়ুব বাচ্চুর এ এক অসামান্য অর্জন, বলাই বাহুল্য। বাংলাদেশে তো বটেই এ উপমহাদেশের মানুষের কাছে গিটার নামক ইন্সট্রুমেন্টের মোজেজা বোঝানোর ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন প্রকৃত অ্যাভাঁগার্দ শিল্পী। আমরা সবাই তার গান এবং গিটারবাদন শুনেছি। নানাভাবে দেখেছি। কিন্তু কেউ সেভাবে হয়তো ভাবিনি।
এই ভূখণ্ডে ক্ষণজন্মা একজন আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন। প্রবলভাবে ছিলেন। সবটুকু হিম্মত নিয়েই বেঁচে ছিলেন। এখন তিনি নেই। তার মতো আর কেউই নেই...। আইয়ুব বাচ্চুর গীতিকবিতা, গান, গিটারের সুর, সংগীত ̶ সবকিছুই আছে, থাকবে। তার সৃষ্টিকর্মের মধ্য দিয়ে কোটি কোটি শ্রোতাদের মধ্যে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তিনি অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার বহুমাত্রিক গানের ভাণ্ডারের দিকে মনোযোগ দিলে বিস্ময় জাগে। মানুষটি কী পরিমাণ কাজ করেছেন! এখন যে ধরনের হাইব্রিড-সময় চলছে বা যেরকম ‘শর্টকাটের যুগ’ এসেছে, তাতে আইয়ুব বাচ্চুর মতো বহুমাত্রিক প্রতিভাসম্পন্ন কালজয়ী সংগীত-সাধক তৈরি হওয়া প্রায় অসম্ভব।
১৯৯৬ সাল। তখন আইয়ুব বাচ্চুর যুগান্তকারী ক্যাসেট ‘কষ্ট’ রিলিজ হয়েছে। নাম-যশ ও খ্যাতির চূড়ায় তিনি। এলআরবি এবং সলো ক্যারিয়ার দুটোতেই বিস্ময়কর সাফল্য লাভ করেছেন। তো, একদিন পূর্বনির্ধারিত দিন মোতাবেক আমি বেইলি রোডের অডিও আর্ট স্টুডিওতে যাই। বাড়ন্ত দুপুর। ভাইজান বেশ খোশমেজাজে, ফুরফুরে আছেন। তার পরিধানে রয়েছে চিরদিনের প্রিয় কালো টি-শার্ট আর নীল জিন্স। মাথায় কালো হ্যাট। স্টুডিওতে কাজ করছেন। কাজ মানে, চেয়ারে বসে তিনি গিটার বাজাচ্ছেন। আমাকে বললেন : ‘বসো, কাজটা সেরে নিই’। আমি বসে মুগ্ধ হয়ে শুনতে থাকি তার গিটারের যন্ত্রণাদগ্ধ সুর (১৯৯৩ সালে আইয়ুব বাচ্চু’র সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ঘটে তার মৌচাকের বাসায়। কিন্তু কনসার্ট ছাড়া তার সান্নিধ্যে এসে কোনোদিন গিটার শোনার সুযোগ মেলেনি। সেদিনই প্রথম)। আইয়ুব বাচ্চুর ‘কষ্ট’ নিয়ে সেদিন বেশিরভাগ আলাপ হয়। তিনি শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলেন। জন্মভূমি বীর চট্টলার কয়েকজন প্রিয় মানুষের খবর নিলেন। তারপর এক ফাঁকে স্টুডিওর খিদমতগার মারফত ফাস্টফুড আনালেন। দুজনে খেলাম। আমার ব্যাকপ্যাকে স্কেচবুক, পেন্সিল, কালিকলম, ইরেজার ইত্যাদি শিল্প-সরঞ্জাম ছিল। যথারীতি থাকে। আমি ভাইজানের একটি রেখাচিত্র আঁকতে চাইলাম। তিনি বললেন : ‘আজ না রে, আরেকদিন’। তারপর তিনি নিজেই স্কেচবুক চেয়ে নিয়ে দারুণ ক’টা কথা লেখেন। দেখি, চমৎকার হস্তাক্ষরে লেখা একটি মায়াময় চিঠি হয়ে গেল তা।
লেখাটির ভেতর একটি শব্দ আছে ‘এতদূর’। শব্দটি বুকের ভেতর হু হু করে। উড়ে যায় দূর অজানায়...। আইয়ুব বাচ্চু একজীবন ‘কষ্ট’ নিয়ে ‘এতদূর’ চলে গিয়েছেন যে, এ জীবনে আর কোনোদিন তার সঙ্গে মোলাকাত হবে না...।
লেখক : চিত্রশিল্পী, শিক্ষক ও গবেষক- বঙ্গীয় শিল্পকলা চর্চার অন্তর্জাতিক কেন্দ্র।
ঢাকার বিএমসি গার্মেন্টসে কাজ করেন ইশাম আহমেদ। মাসে আয় ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু বাসা ভাড়া, খাওয়া খরচ, যাতায়াতসহ অন্য খরচ মিলিয়ে ব্যয় হয় প্রায় ১৮ হাজার টাকা। বাড়তি খরচের টাকা পরিবার কিংবা বন্ধুদের কাছ থেকে ঋণ করে চালাতে হয়। গত ছয় মাসে এভাবেই চলছে ইশামের। এ দুর্বিষহ অবস্থা শুধু ঢাকার ইশামেরই নয়, চট্টগ্রামসহ অন্য কয়েকটি বিভাগের শ্রমিকদেরও একই অবস্থা।
সরকারি হিসাবেই শ্রমিকদের মজুরির সঙ্গে ব্যয়ের ফারাক অনেক বেশি। ঢাকা বিভাগের একজন শ্রমিকের গড় আয় ১০৬ টাকা, তার গড় ব্যয় ১১০ টাকা। একই অবস্থা চট্টগ্রামের শ্রমিকদেরও।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত মাসিক ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এ তথ্য পাওয়া গেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের অনেক শিল্প খাতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের বেতন কমাতে হচ্ছে, নতুবা শ্রমিক ছাঁটাই করতে হচ্ছে।
অর্থনীতির পরিভাষায়, মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধির হার বেশি হলে কারও কাছে হাত পাততে হয় না। নিজেদের ক্রয়ক্ষমতা দিয়েই বাজার থেকে বেশি দামে পণ্য কেনা যায়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট একটু উল্টো। মূল্যস্ফীতি যে হারে বাড়ছে, সে হারে মজুরি বাড়ছে না। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ, বিপরীতে শ্রমমজুরি বৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি থেকে পিছিয়ে আছে শ্রমিকদের গড় মজুরি হার।
মজুরির চেয়ে মূল্যস্ফীতি বেশি হওয়ায় ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছে শ্রমিকরা। আয়-ব্যয়ের পর ঋণের টাকা দিতে না পেরে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে শ্রমিকদের মধ্যে। গত ৯ আগস্ট গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে খোকন আকন্দ (৩৫) নামে এক শ্রমিক আত্মহত্যা করেছেন বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা হয় বিএমসি গার্মেন্টসের শ্রমিক ইশাম আহমেদের। তিনি বলেন, ‘গত ছয় মাস আগেও যে বেতন পেতাম তাতে নিজের খরচ বহন করেও পরিবারকেও দিতে পারতাম। এখন বাসা ভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুৎসহ সামগ্রিক খরচ আরও এক হাজার টাকা বেড়েছে। এখন ঢাকায় টিকে থাকাই মুশকিল হয়ে পড়েছে।’
বিবিএসের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুলাইয়ে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। অর্থাৎ আগের বছরের জুলাই মাসে যে পণ্য ১০০ টাকায় কেনা গেছে, এ বছরের জুলাইয়ে তা কিনতে হয়েছে ১০৯ টাকা ৬৯ পয়সায়। বিপরীতে দেশের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে মজুরির তফাত আরও বাড়ছে। বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রামের শ্রমিকদের তফাত অনেক বেশি।
জানতে চাইলে পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এর মূল কারণ মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে। কিন্তু সে হারে কোম্পানিগুলোর আয় তেমন বাড়েনি। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। একটা রেস্টুরেন্টে মানুষ কী কিনতে পারে। সেখানে গিয়ে মানুষ বেশি খরচ করবে সেটাও সম্ভব নয়। একই দাম দিয়ে অল্প একটু জিনিস কিনতে হচ্ছে।’
ঢাকা ও চট্টগ্রামে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে মজুরির ব্যবধান বাড়ার ব্যাখ্যায় এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘এই মুহূর্তে শিল্পমালিকদের পক্ষে আর বেতন বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। বাড়ালেও মাত্র ৫ শতাংশ বাড়ায়। ইন্টারেস্ট রেট বেড়ে যাওয়াও একটা কারণ।
গার্মেন্টস খাত অনেক বড় খাত। সেখানেও মজুরি বেড়েছে ৫ শতাংশ।’ আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, ‘যেকোনো উপায়ে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে হবে। সরকার এ ক্ষেত্রে কঠোর হস্তক্ষেপ করতে হবে। অন্য দেশগুলো পারলে আমরা কেন পারব না।’
মজুরি সূচকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই মাসে ঢাকা বিভাগের শ্রমিকদের গড় মজুরি হার পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে ৫ দশমিক ২২ শতাংশ। অথচ আগের মাস জুনেও তা ছিল ৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ঢাকার শ্রমিকদের আগের মাসের তুলনায় মজুরি কমেছে দশমিক ৫৯ শতাংশ। এ ছাড়া একই সময়ে চট্টগ্রাম বিভাগের শ্রমিকদের মজুরি হার ৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ। জুন মাসেও এ বিভাগের শ্রমিকদের গড় মজুরি ছিল ৭ দশমিক ০৬ শতাংশ। চট্টগ্রামের শ্রমিকদের বেতন কমেছে দশমিক ৯৪ শতাংশ।
মজুরি ৫ দশমিক ৯৫ শতাংশের অর্থ হলো গত বছর জুলাইয়ে যে শ্রমিক গড়ে ১০০ টাকা মজুরি পেতেন, এ বছরের জুলাই ওই শ্রমিকের বেতন হয়েছে ১০৫ টাকা ৯৫ পয়সা। অথচ তাকে গড়ে খরচ করতে হচ্ছে প্রায় ১১০ টাকা করে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, জুলাইয়ে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ নিয়ে শুরু হয়েছে চলতি বছরের মূল্যস্ফীতি। যদি গড় মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশ। শুরুতেই উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে লক্ষ্যমাত্রা ধরে রাখাটা কঠিন হয়ে পড়তে পারে সরকারের জন্য।
বিবিএসের ভোক্তা মূল্যসূচকের হিসাবে, জুলাইয়ে দেশের গড় মজুরি ৭ দমশিক ৫২ শতাংশ। অর্থাৎ গত জুলাই মাসে দেশের বিভিন্ন খাতের দিনমজুর ও শ্রমিকদের সার্বিক মজুরি বেড়েছে ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ। এর অর্থ হলো, ২০২২ সালের জুনে শ্রমিক ও দিনমজুররা ১০০ টাকা মজুরি পেলে চলতি বছরের জুলাই মাসে পেয়েছেন ১০৭ টাকা ৫২ পয়সা।
বিবিএসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গড় মজুরি সূচক ছিল ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা খানিকটা কমে ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশে নেমে আসে। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা আরও কমে ৬ দশমিক ১২ শতাংশে নেমে আসে।
অর্থনীতির পরিভাষায়, মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধির হার বেশি হলে কারও কাছে হাত পাততে হয় না। নিজেদের ক্রয়ক্ষমতা দিয়েই বাজার থেকে বেশি দামে পণ্য কেনা যায়। সে হিসাবে সার্বিক মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি সূচক ২ দশমিক ১৭ শতাংশ কম হওয়ায় দিনমজুর ও শ্রমিকদের আয় বা মজুরি বাড়লেও তাতে কোনো লাভ হয়নি। অর্থাৎ বাড়তি যে আয় হচ্ছে, তা দিয়ে বাজারে গিয়ে আগের মতো জিনিসপত্র কিনতে পারছেন না। কারণ মজুরি সূচকের চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশ বেশি।
তবে পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য সঠিক হলে রংপুর বিভাগের দিনমজুর ও শ্রমিকরা যে আয় করছেন বা মজুরি পাচ্ছেন, তা দিয়ে চলে যাচ্ছে। কেননা, ওই এলাকায় মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধির হার বেশ বেশি, ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ মাস জুনেও মূল্যস্ফীতির হার জাতীয় পর্যায়ে মজুরি বৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি ছিল। তার আগের চার মাসেও একই চিত্র ছিল দেশে। সাধারণ সময়ে মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির কিছুটা বেশি থাকে। তবে অর্থনীতির এ পরিচিত প্রবণতায় ছেদ ঘটে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে। অর্থাৎ গত দেড় বছর ধরে দেশে সার্বিক মজুরি সূচক মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৬-১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের কর্মসংস্থানের বড় অংশই হচ্ছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। মোট শ্রমশক্তির ৮৫ দশমিক ১ শতাংশই এ খাতে নিয়োজিত। আর ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে।
অন্যদিকে কৃষি ক্ষেত্রে নিয়োজিত মোট শ্রমশক্তির ৯৫ দশমিক ৪ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। শিল্প খাতের ৮৯ দশমিক ৯ শতাংশ, সেবা খাতের ৭১ দশমিক ৮ শতাংশ শ্রমিক অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত।
কোন বিভাগে মজুরি কত বাড়ল : বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে জুলাই মাসে ঢাকা বিভাগে মজুরি বেড়েছে ৫ দশমিক ২২ শতাংশ। মে ও জুন মাসে এই হার ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৮৫ ও ৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। জুলাই মাসে চট্টগ্রামে মজুরি বাড়ার হার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ। মে ও জুন মাসে এই হার ছিল যথাক্রমে ৬ দশমিক ৮৫ ও ৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।
রাজশাহীতে জুলাইয়ে মজুরি বাড়ার হার ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। মে ও জুন মাসে এ হার ছিল যথাক্রমে ৭ দশমিক ১৬ ও ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। রংপুর বিভাগে জুলাই মাসে দিনমজুর-শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। মে ও জুন মাসে এই হার ছিল যথাক্রমে ১১ দশমিক ৩৯ ও ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে জুলাই মাসে মজুরি সূচকের হার ছিল ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। খুলনায় ছিল ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। আর সিলেট বিভাগে জুলাই মাসে মজুরি সূচকের হার ছিল ৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদন্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর রাজধানীর শাহবাগ ও বায়তুল মোকাররমে এবং কক্সবাজারের চকরিয়া ও চট্টগ্রামে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় চকরিয়ায় একজন নিহত ও পুলিশসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় চট্টগ্রামে ৩০ জনসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ।
এদিকে সাঈদীর মরদেহ গতকাল মঙ্গলবার পিরোজপুর বাইপাস সড়কে সাঈদী ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণে অবস্থিত বায়তুল হামদ জামে মসজিদের পাশে দাফন করা হয়েছে। সকাল ১০টার দিকে সাঈদীর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স পুলিশি পাহারায় সাঈদী ফাউন্ডেশন মাঠে পৌঁছায়। সাঈদীর ছোট ছেলে মাসুদ সাঈদী ঢাকা থেকে পিরোজপুরে পৌঁছতে দেরি হওয়ায় জানাজা দুপুর ১টার দিকে শুরু হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারির মধ্যে অনুষ্ঠিত জানাজায় বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের প্রিজন সেলে মারা যান তিনি।
শাহবাগ রণক্ষেত্র : প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, সোমবার রাতে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশের আগ থেকেই বিএসএমএমইউ হাসপাতালের বাইরে জামায়াত ও শিবিরের শত শত সমর্থক জড়ো হতে থাকেন। রাত পৌনে ৯টার দিকে তার মৃত্যুর খবর জানাজানি হলে হাসপাতালে জামায়াত সমর্থক জড়ো হন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভ করে ‘সাঈদীকে মেরে ফেলা হয়েছে’ জানিয়ে শাহবাগে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানায়। এরপর সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী উপস্থিত সমর্থকদের শান্ত থাকতে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সহায়তা করার অনুরোধ করেন।
মাসুদ সাঈদী জানান, প্রশাসনের কিছু বাধ্যবাধকতা থাকায় ঢাকায় জানাজা করতে অনুমতি দেওয়া হয়নি। তার বাবার লাশ পিরোজপুর নেওয়া হবে এবং সেখানেই জানাজা হবে। এরপর রাত ৩টার সময় সাঈদীর মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতাল থেকে বের হতে চেষ্টা করলে উপস্থিত থাকা জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা বাধা দেন। সমর্থকরা দাবি করেন, সাঈদীর জানাজা ঢাকায় করতে হবে। এ সময় পুলিশ কর্মকর্তারা সমর্থকদের বুঝিয়ে লাশবাহী গাড়িটি বের করার চেষ্টা করেন। পুলিশের সঙ্গে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে সমর্থকরা সাঈদীকে বহন করা গাড়ির কাচ ভেঙে ও চাকা নষ্ট করে দেন। ভোর ৫টার দিকে পুলিশ হাসপাতালে ক্ষতিগ্রস্ত লাশবাহী গাড়িটি রেখেই ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যায়। তখনো হাসপাতাল ও রাস্তার দুইপাশে হাজার হাজার জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এর কিছুক্ষণ পরেই পুলিশ হাসপাতালের বাইরে থেকে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। হাসপাতালের ভেতরে থাকা নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে পুলিশ ক্ষতিগ্রস্ত অ্যাম্বুলেন্সটি বাইরে নিয়ে আসে ও আরেকটি অ্যাম্বুলেন্সে সাঈদীর মরদেহ স্থানান্তর করে। জামায়াত সমর্থকরা হাসপাতালের বাইরে ইটপাটকেল ছুড়ে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন এবং রাস্তায় থাকা পুলিশের দুটি মোটরসাইকেলে আগুন দেন। ভোর ৬টার দিকে পুলিশি পাহারায় পিরোজপুরের উদ্দেশে যাত্রা করে সাঈদীর মরদেহ বহন করা গাড়িটি।
বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষ : সাঈদীর লাশ পিরোজপুরে নিয়ে যাওয়ার পর সমর্থকদের একটি অংশ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে অবস্থান নেয়। গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে তারা শোক দিবসের দোয়া চলাকালে সাঈদীর গায়েবানা জানাজার চেষ্টা করে। এ নিয়ে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। পরে সাঈদী সমর্থকরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করে বেশ কয়েকজনকে আটক করে।
ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান জানান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জাতীয় শোক দিবসের দোয়া মাহফিল হচ্ছিল। এমন সময় সাঈদীর অনুসারী ও জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরা হট্টগোল শুরু করেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে জামায়াতের অনুসারীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ।
জোহর নামাজে অংশগ্রহণ করেছেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নামাজ শেষে শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়ার ঘোষণা দেন মসজিদের ইমাম। তখন জামায়াতের নেতাকর্মীরা এ ঘোষণার প্রতিবাদ করেন। তারা দাবি তোলেন, সাঈদীর আত্মার শান্তি কামনা করেও দোয়া করতে হবে। এখান থেকেই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার সূত্রপাত হয়।
পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দীন মিয়া বলেন, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বায়তুল মোকাররম মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে ১২ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে তদের যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চকরিয়া-পেকুয়ায় গায়েবানা জানাজা শেষে পুলিশের ওপর হামলা : আমাদের পেকুয়া-কুতুবদিয়া সংবাদদাতা জানান, কক্সবাজার জেলার চকরিয়ায় সাঈদীর গায়েবানা জানাজা কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে মুসল্লিদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় একজন নিহত হয়েছে এবং চকরিয়া থানার পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ জানাজায় অংশ নেওয়া অর্ধশত জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ ছাড়া পুলিশভ্যান ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার গাড়িও ভাঙচুর করেছেন তারা। সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তি চকরিয়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল ফজলের পুত্র জামায়াতকর্মী ফোরকান আহমেদ বলে জানা গেছে।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাবেদ জানান, চকরিয়ায় সাঈদীর গায়েবানা জানাজা শেষে একদল লোক বিনা উসকানিতে উত্তেজনামূলক সেøাগান দিয়ে পুলিশের ওপর বেপরোয়া হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীরা একটি গাড়িও ভাঙচুর করেছে। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ পুলিশ সদস্য। আহতদের পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
চট্টগ্রামে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ : গায়েবানা জানাজা কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম নগরে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের কয়েক দফা সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল ওয়াসা মোড়ে জমিউতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজার চেষ্টা করেন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিত-ায় জড়িয়ে পড়েন এবং বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা।
একপর্যায়ে জানাজার জন্য মসজিদে ঢুকতে বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলাকালে আশপাশের এলাকায় মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জামায়াত-শিবিরকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ঘটনাস্থল থেকে ৩০ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ওসি জাহিদুল কবীর। যাচাই-বাছাই শেষে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান ওসি।
নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পুলিশের অনুমতি ছাড়া জমিউতুল ফালাহ মসজিদ মাঠে তারা সাঈদীর গায়েবানা জানাজার পড়ার ঘোষণা দেয় জামায়াত। কিন্তু এ ব্যাপারে তারা সিএমপি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি। অনুমতি না দিয়ে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। জামায়াত-শিবিরের লোকজন সমবেত হয়ে নাশকতা করার চেষ্টা করেছে। নিরীহ মানুষ ও দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের পর হামলা চালিয়েছে। সেটা আমরা তাদের করতে দিইনি।’
জামায়াতের তান্ডবের বিষয়ে ডিএমপির সংবাদ সম্মেলন : ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, জামায়াত-শিবির যে তাদের চরিত্রটা পাল্টায়নি, ভোররাতে তা-ব চালিয়ে এটা তারা আবারও প্রমাণ করল। বিএসএমএমইউ ও শাহবাগে অবস্থান নেওয়া কয়েক হাজার জামায়াত-শিবিরকর্মী দাবি তোলে যে, তারা জানাজা পড়ে তারপর মরদেহ নিতে চায়। তখন আমরা তাদের বলি, আপনারা এখানে জানাজা পড়তে পারেন, কারণ জাতীয় শোক দিবস, আমাদের ব্যস্ততা আছে, আপনারা এখন জানাজা পড়ে মরদেহ নিয়ে যেতে পারেন। রাত সোয়া ২টার দিকে তারা জানাজার পরিবর্তে মোনাজাত করে আধা ঘণ্টা। তারা বলে, আমরা জানাজা পড়ব না মোনাজাত করেছি, পরে আমরা গায়েবানা জানাজা পড়ব। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা মোনাজাত করে। এরপর যখন মরদেহ গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়, তখন হাজার হাজার জামায়াত-শিবির লাশবাহী গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। তারা কোনোমতে এই মরদেহ পিরোজপুরে নিয়ে যেতে দেবে না। এ সময় লাশবাহী গাড়ির সঙ্গে থাকা পুলিশ অফিসার ও পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে জামায়াত-শিবির। হামলায় ডিসি রমনাসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র অফিসার আহত হন। তারা পুলিশের চার থেকে পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং দুটি মোটরসাইকেল আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপরও আমরা ধৈর্যসহকারে এ তা-ব সহ্য করি এটা ভেবে, স্বজনরা একটা মরদেহ নিয়ে যেতে চাচ্ছে নিয়ে যাক। ফজরের নামাজের পর আবারও অনুমতি দেওয়া হলো জানাজা পড়ার। কিন্তু ফজরের নামাজের পরে তারা আমাদের অফিসারদের বের করে বিএসএমএমইউ দখলে নিয়ে নিল। তারা মরদেহ পিরোজপুর নিতে দেবে না। তারা ফেসবুকে প্রচার করতে শুরু করল সারা দেশ থেকে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের শাহবাগে আসার জন্য। তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় তাদের ওপর আমরা অত্যন্ত সীমিত আকারে শক্তি প্রয়োগ করে ছত্রভঙ্গ করে দিই।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের ওষুধের দোকানিদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। গত সোমবার রাত ৯টার দিকে দফায় দফায় হামলা-পাল্টা হামলার সময় ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও এতে জড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন তাদের সাতজন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে দোকানদারদের দাবি, তাদের ১৫ জন আহত হয়েছেন।
হামলাকারীদের গ্রেপ্তার দাবিতে সোমবার রাত ১০টা থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীরা। দাবি না মানলে আজ বুধবার থেকে কঠোর কর্মসূচি দেবে বলে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।
অন্যদিকে, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ওষুধের দোকানগুলো সোমবার রাত থেকে বন্ধ।
জানা গেছে, কলেজের ৩২তম ব্যাচের একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ওষুধের দোকানদার ১০ শতাংশ হারে কম না রাখার জের ধরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী, ওষুধের দোকানদার ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যায় হাসপাতালের সামনের মেসার্স বিপ্লব মেডিসিন কর্নারে সবুজ সরকার নামে মেডিকেল শিক্ষার্থী কিছু ওষুধ কিনতে যান। ওষুধের দাম আসে ৭০ টাকা। ১০ শতাংশ কমিশন দিয়ে ৬৩ টাকা রাখার অনুরোধ জানান ওই শিক্ষার্থী। দোকানদার কমিশন দিতে অস্বীকার করলে এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বাগবিত-া হয়। এর কিছুক্ষণ পর আরও কিছু মেডিকেল শিক্ষার্থীকে নিয়ে ওই দোকানে এসে কেন ওষুধের দাম কম রাখা হলো না এজন্য চাপ দেওয়া হয়। একপর্যায়ে আশপাশের ওষুধের দোকানদাররা এগিয়ে এলে উভয় পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। মেডিকেলের তিন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর ক্যাম্পাসে পৌঁছালে আরও শিক্ষার্থী এসে দোকানে হামলা চালান। খবর পেয়ে সেখানে সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ওসির নেতৃত্বে একদল পুলিশ যায়। তারপরও দফায় দফায় হামলা চালান মেডিকেল শিক্ষার্থীরা। পরে ওষুধের দোকানদারদের সঙ্গে এলাকাবাসী একত্র হয়ে পাল্টা হামলা করলে সংঘর্ষ তুমুল আকার ধারণ করে।
হামলা-পাল্টা হামলার একপর্যায়ে সেখানে যান খুলনা সিটি করপোরেশনের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর হাসান ইফতেখার চালু, খুলনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দ্বীন-উল ইসলাম, উপাধ্যক্ষ ও খুলনা বিএমএর সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মেহেদী নেওয়াজ, বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এস এম কবির উদ্দিন বাবলুসহ চিকিৎসক ও বিসিডিএস নেতারা।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি সাইফুল ইসলাম অন্তর ও সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জোহা সজিব বলেন, ওষুধের দোকানদারদের হামলায় একজন চিকিৎসক ও ছয়জন মেডিকেল শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তারা হলেন ডা. হাসিব, সবুজ সরকার, হাসান ফেরদৌস, মেহেদী, আসিফ, তাহসিন ও নাসির ফুয়াদ। তাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজন বলে দাবি করেন অন্তর।
অন্যদিকে বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির পরিচালক মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের হামলায় ওষুধের দোকানের মালিক-কর্মচারীদের মধ্যে প্রায় ১৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন আল-আমিন, বিপ্লব, শাওন, ইসরাফিল, হৃদয়, সোহাগ, মোস্তফা ও মাসুদুর রহমান মাসুদ।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি সাইফুল ইসলাম অন্তর বলেন, ‘যারা আমাদের মেডিকেল শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মেরে আহত করেছেন, তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি।’ তবে তারা গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা করেননি বলে জানান।
সোনাডাঙ্গা থানার ওসি মমতাজুল হক বলেন, ‘আমরা দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু কোনো সমাধানে আসতে পারিনি। এখনো পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।’
অর্থমন্ত্রী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল বলছেন, আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে পৃথিবীর শীর্ষ ২০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দায়িত্ব নিয়েছেন তখন অর্থনীতিতে আমাদের দেশের অবস্থান ছিল ৬০ নম্বর। আর এখন বাংলাদেশ সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে ৩৫ নম্বর। যা সম্ভব হয়েছে এ বঙ্গবন্ধুকন্যার জন্য। সেই সঙ্গে বাজেটে আকার বৃদ্ধি পেয়েছে দশগুণ। বঙ্গবন্ধু শুধু একটি নাম নয়, তিনি ছিলেন, আছেন এবং তিনি থাকবেন। তিনি আমাদের অহংকার। আমাদের মধ্যেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থাকবেন আজীবন। আমরা সবাই মিলে তার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করব।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় শোক দিবসে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সব শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের সবার মধ্যেই বেঁচে আছেন। আমরা সবাই মিলে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত থাকব।
এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন দক্ষিণ জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথি, সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন চৌধুরী, সহসভাপতি ইলিয়াস মিয়া, সহসভাপতি নাঙ্গলকোট উপজেলা চেয়ারম্যান সামছুউদ্দিন কালু, সহসভাপতি এজেডএম শফিউদ্দিন শামীম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু তাহের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ করিম মজুমদার ও শিল্প-বাণিজ্য সম্পাদক এনামুল হক মিয়াজী প্রমুখ।
দেশে গত ১৫ দিনে ডেঙ্গু পরিস্থিতির সবগুলো সূচকেই অবনতি হয়েছে। এ সময় রোগী ও মৃত্যু বেড়েছে দেড় গুণের বেশি। ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি ছাড়িয়ে গেছে ঢাকাকে। ঢাকার বাইরে প্রায় দ্বিগুণ মৃত্যু ও রোগী বেড়েছে।
এমন অবস্থায় গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) দেশে ডেঙ্গুতে নতুন করে আরও ১০ জন মারা গেছে ও ১ হাজার ৯৮৪ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৮৯ হাজার ৮৭৫ জনে ও মৃত্যু ৪২৬ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যবিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ১৫ দিনে দেশে দেড় গুণের বেশি রোগী ও মৃত্যু বেড়েছে। ৩১ জুলাই রোগীর সংখ্যা ছিল ৫১ হাজার ৮৩২ জন। গত ১৫ দিনে বেড়েছে ৩৪ হাজার ৪৩ জন, যা এ সময়ের রোগীর ৩৮ শতাংশ বা দেড় গুণ।
একইভাবে গত ৩১ জুলাই মৃত্যু ছিল ২৫১ জন, যা বেড়ে এখন ৪২৬ হয়েছে। অর্থাৎ গত ১৫ দিনে মারা গেছে ১৭৫ জন, যা এ সময়ের মৃত্যুর ৪১ শতাংশ বা দেড় গুণের বেশি।
অন্যদিকে, এই ১৫ দিনে ঢাকার বাইরে রোগী বেড়েছে ৫০ শতাংশ বা দ্বিগুণ। ১৫ দিন আগে ঢাকার বাইরে রোগী ছিল ২২ হাজার ৬৩২ জন, যা ২২ হাজার ৮৪৭ জন বেড়ে এখন ৪৫ হাজার ৪৭৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
একইভাবে গত ১৫ দিনে ঢাকার বাইরে মৃত্যু বেড়েছে ৪৭ শতাংশ বা প্রায় দ্বিগুণ। ৩১ জুলাই ঢাকার বাইরে মৃত্যু ছিল ৫৫ জন, যা এখন বেড়ে ১০৩ জন হয়েছে। অর্থাৎ এ সময় ৪৮ জন মারা গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৭৩১ জন ঢাকার এবং ১২৫৩ জন ঢাকার বাইরের। বর্তমানে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৯ হাজার ১১৭ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৪ হাজার ১০ জন এবং বাইরের বিভিন্ন জেলায় ৫ হাজার ১০৭ জন রয়েছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের কারণে চলমান রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে নতুন করে উত্তাপ তৈরি হয়েছে। দুই দলের এ পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের মূল টার্গেট ঢাকা দখলে নেওয়া। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসা নিতে বিদেশ পাঠাতে রবিবার বিএনপি ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে। পাল্টা জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও একই পথে হেঁটেছে। বিএনপিকে ‘আগুন সন্ত্রাস, অপরাজনীতি ও নাশকতার রাজনীতি’ ছাড়ার জন্য সোমবার ৩৬ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এরপর পাল্টা ৩৬ ঘণ্টার হুঁশিয়ারি এসেছে বিএনপির কাছ থেকে।
তার আগে গত শনিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে আবেদন করলে অনুমতির বিষয়টি দেখা যাবে। তবে তার কাছে এরকম কোনো কাগজপত্র আসেনি। ওইদিনই খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার বলেছেন, সরকারের মনোভাব ইতিবাচক হলে তারা আবারও আবেদন করবেন।
পরদিন রবিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আলটিমেটাম দেন। ওইদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে বিএনপি বলছে, সরকার চাইলে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে পারে।
দুই দলের রাজনীতি ও ঘোষিত আলটিমেটাম মাঠের রাজনীতিতে কোনো পরিবর্তন আনবে কি না, সে সম্পর্কে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। বিএনপির আলটিমেটামের ফল কী হবে আর আওয়ামী লীগেরও দীর্ঘ ৩৬ দিনের আলটিমেটাম কেন এ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভেতর বেশ কৌতূহল দেখা দিয়েছে।
দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত রাজধানী ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এমন পাল্টাপাল্টি আলটিমেটাম। ঢাকায় বিএনপির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার কৌশলের অংশ হিসেবেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইস্যুতে দলটি আলটিমেটাম দিয়েছে। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতেই তার পাল্টা জবাব দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
দুই দলের ওই নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির রাজনীতির মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা। ঢাকার রাজনীতি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে বের করে আনতে না পারলে রাজনীতিতে জুতসই অবস্থান সৃষ্টি করতে পারবে না বিএনপি।
সারা দেশের নিয়ন্ত্রণে রাখা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেয়ে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রাজনৈতিক জয়-পরাজয় নির্ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিএনপির ওই শীর্ষসারির নেতারা। তাই বিএনপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসাকে ইস্যু করে নেতাকর্মীদের ঢাকায় ডেকে পাঠানোর কৌশল গ্রহণ করেছে। পর্যাপ্ত নেতাকর্মী ঢাকায় ঢুকে গেলে অবস্থা বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তাই ইস্যু খালেদার চিকিৎসা, কিন্তু লক্ষ্য ঢাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ৩৬ দিনের আলটিমেটামের পেছনে রয়েছে নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার আগপর্যন্ত ঢাকায় নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখা। সেই সঙ্গে নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে নির্দেশনা দিয়ে রাখা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে ততই ষড়যন্ত্রের নীল নকশা আঁকছে।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের শান্তি যেন বিঘিœত না হয়, সেজন্যই আমরা বিএনপির কর্মসূচির দিন মাঠে থাকি। বিএনপিকে জনগণ বিশ্বাস করে না। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে সত্যিই নিতে চাইলে আলটিমেটাম কেন দেবে বিএনপি? আইনি জটিলতা নিরসন করে বিদেশ নেওয়ার চেষ্টা করবে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘বিএনপি সন্ত্রাস-সহিংসতানির্ভর রাজনীতি করে, বিশ্বাস করে। তারা পাকিস্তানের প্রেতাত্মা।’ তিনি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করাতে চাইলে কেন বিএনপি আইনি প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে না? তার কিছু হলে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দায় নিতে হবে।’
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দুই দলের ঘোষিত আলটিমেটামকে কথার বাকযুদ্ধ হিসেবে নিয়েছেন। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এগুলো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের অবস্থান ধরে নেওয়া যায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে তাদের কোনো গা নেই। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিভিন্ন বক্তব্যে সেটাই স্পষ্ট করেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে হলে আইনগতভাবে যেতে হবে। নির্বাহী কোনো সিদ্ধান্তে এ সুযোগ দেওয়া হবে না। ফলে আলটিমেটাম মূলত নিষ্ফল হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দাবি আদায় করার জন্য জনগণ থেকে দাবি উঠতে হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণকে রাস্তায় নামাতে পারবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘এখন যেসব বক্তব্য এগুলো মঞ্চের বাকযুদ্ধ।’
বিএনপির আলটিমেটাম নিয়ে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারব না। আমি (গতকাল মঙ্গলবার) সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষ করে এসেছি।’ আলটিমেটামের পেছনে ঢাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় তো আমরা সভা-সমাবেশ করছিই।’
জানতে চাইলে বিএনপির আরেক নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আলটিমেটাম সম্পর্কে ক্লিয়ার কিছু জানি না।’
বিএনপিকে ‘অপরাজনীতি’ ছাড়তে ৩৬ দিন সময় বেঁধে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ সময়ের মধ্যে ‘সঠিক পথে’ না এলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির ‘অপরাজনীতির কালো হাত’ গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে আলটিমেটাম দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এটি বিএনপির জন্য শেষ বার্তা।’ গত সোমবার রাজধানীর উত্তরায় এবং যাত্রাবাড়ীতে পৃথক সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। উত্তরার সমাবেশে ওবায়দুল কাদের এ আলটিমেটাম দেন।
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপি দুই সপ্তাহের কর্মসূচি নিয়ে এখন রাজপথে আছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগও ২১ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ঢাকায় গত সোমবার দুটি সমাবেশ হয়।
এর আগে থেকেই ঢাকায় বিএনপির কর্মসূচির দিন শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীনরা বিএনপির সভা-সমাবেশের বিষয়ে নমনীয়তা প্রদর্শন করলেও মাঠের নিয়ন্ত্রণ ছাড়েনি।
ভারতের বিপক্ষেই খেলেছিলেন বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। এবার বিশ্বকাপটাই ভারতে, যে ধর্মশালা দিয়ে শুরু হবে বিশ্বকাপ অভিযান, সেখানেই আছে বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির কৃতিত্ব। হিমালয়ের কোলে, ছবির মতো সুন্দর সেই মাঠে আবারও খেলবে বাংলাদেশ, কিন্তু খেলবেন না তামিম ইকবাল।
অনেক নাটকীয়তার পর অবশেষে বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বরাবরের মতো সংবাদ সম্মেলনে নিরাবেগ কণ্ঠে একের পর এক নাম পড়ে শোনাননি প্রধান নির্বাচক, গভীর রাতে কোনো ইমেইলেও আসেনি খেলোয়াড় তালিকা। বিশ্বকাপগামী ১৫ ক্রিকেটারের প্রত্যেকের হাতে হাতে সুন্দর করে বাক্সবন্দি বিশ্বকাপ জার্সি তুলে দেওয়ার ভিডিও নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে ২০২৩ বিশ্বকাপের জন্য নির্বাচিতদের পরিচিত করেছে বিসিবি। এজন্য বিসিবির সংশ্লিষ্টরা বাহবা পেতেই পারেন, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড যেমনটা হৃদয় জিতে নিয়েছে ক্রিকেটারদের পরিবারের আপনজনদের দিয়ে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করিয়ে।
কারা থাকছেন আর কারা থাকছেন না, তা নিয়ে খুব বড় কোনো চমক ছিল না বিশ্বকাপ দলে। সবাই শুধু একটাই কোটি টাকার প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলেন। তামিম ইকবাল শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ দলে আছেন নাকি নেই। অবসর, প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে প্রত্যাবর্তন, ব্যক্তিগত কাজে দুবাই ভ্রমণ, ইংল্যান্ডে ইনজেকশন, দেশে অনুশীলন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এক ইনিংসে ব্যাট করে ৪৪ রান এবং পরে নিজেকে আবারও পুরোপুরি ফিট নয় বলে পরের ম্যাচে বিশ্রাম। স্বভাবতই এই তামিম ইকবালকে বিশ্বকাপে দেখতে চাইবেন না কোনো কোচ এবং অধিনায়ক। সোমবার গভীর রাতে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসায় সাকিবের ছুটে যাওয়া এবং সিডনি থেকে নেমে তড়িঘড়ি করে বোর্ড সভাপতির বাসায় কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের পা রাখাই প্রমাণ করে, বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করতেই তাদের এ তৎপরতা।
তামিমের মতো ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা সহজ নয়। নিঃসন্দেহে দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান, ওয়ানডেতে ১৪টা সেঞ্চুরি। হুট করে অবসর নিলে যাকে ফিরিয়ে আনেন স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী। সাক্ষাৎকারেও তামিম বলেছেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগের কথাও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেশাদারির কাছে হার মেনেছে আবেগ, যুক্তির কাছে হেরে গেছে অতীত। তামিম নামটা আছে বিশ্বকাপ দলে, তবে পদবিটা ইকবাল নয়। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তানজিদ হাসান তামিমকে নিয়েই বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান, যার বয়স আর তামিম ইকবালের ক্যারিয়ারের বয়স প্রায় কাছাকাছি।
২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিবের পারফরম্যান্স ছিল অতিমানবীয়। ৬০৬ রান আর ১১ উইকেট। তবু দল হলো অষ্টম। গোটা আসর চোটজর্জর অধিনায়ককে বইল দল। প্রতিটি সকাল শুরু হতো এক অনিশ্চয়তা নিয়ে, খেলতে পারবেন তো মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা? শুরুর দিকে নতুন বলে কোনো উইকেট ফেলতে পারেনি বাংলাদেশ, প্রতিপক্ষ গড়েছে রানের পাহাড়। সেই অভিজ্ঞতা কী করে ভুলবেন সাকিব। অস্ট্রেলিয়ান জেমি সিডন্স আর অধিনায়ক সাকিব এজন্যই ২০১১ সালের বিশ্বকাপে দলে রাখেননি চোটগ্রস্ত মাশরাফীকে। হাথুরুসিংহে জাতীয়তায় শ্রীলঙ্কান হলেও অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে থাকতে হয়ে গেছেন তাদের মতোই পেশাদার। তাই তো কঠিন সিদ্ধান্তটা নেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন।
কাল বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডের পর সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন জাতীয় নির্বাচকরা। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন এবং দুই নির্বাচক হাবিবুল বাশার ও আবদুর রাজ্জাক। তামিমকে বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে মিনহাজুল শুনিয়েছেন মুখস্থ কথাই, ‘আপনারা তো এবারের বিশ্বকাপের দলটা এরই মধ্যে পেয়ে গেছেন। তামিম ইকবালের তো অনেক দিন ধরেই ইনজুরি নিয়ে চিন্তা আছে। নিউজিল্যান্ড সিরিজের পর... সবকিছু বিবেচনা করেই, সবাই আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া। বিশ্বকাপে অনেক দিনের ব্যাপার। অনেক ম্যাচ আছে।’
তামিমের চোটটা তো নতুন নয়। অনেক দিন ধরেই এ চোট নিয়ে তিনি ভুগছেন, নিজের ইচ্ছামতো ভারতের বিপক্ষে সিরিজ, আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ এসব থেকে নিজেকে সরিয়েও রেখেছিলেন। চিকিৎসাও করিয়ে আনা হয়েছে। সবকিছু জেনেশুনে কেন তাকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে সুযোগ দেওয়া এবং ম্যাচ খেলিয়ে বাদ দেওয়া এ প্রসঙ্গে মিনহাজুলের উত্তর, ‘দেখুন, কিছু কিছু ইনজুরি আছে আপনি ঝুঁকি নিতে পারেন না। টিম ম্যানেজমেন্ট কিন্তু বেকায়দায় পড়বে। আপনি দেখুন, নিউজিল্যান্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলার পর দ্বিতীয় ম্যাচে... প্রথম ম্যাচ খেলেছে, দ্বিতীয় ম্যাচটা খেলেছে... এরপর কিন্তু শেষ ম্যাচে বিশ্রাম দিতে হয়েছে।’
‘তামিম অন্যতম সেরা। কিন্তু চোটের দুশ্চিন্তা থাকলে নিজেকে মেলে ধরা কঠিন। মেডিকেলের সঙ্গে আলোচনা করেছি, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। এটা আগেই বলেছি, এখন দল ঘোষণা করা হয়েছে’বলছিলেন প্রধান নির্বাচক। বিসিবি সভাপতি বা সাকিব ও কোচের সঙ্গে আলাপ হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কী আলাপ হয়েছে সেটা তো এখানে প্রকাশ করব না।’
১০ দলের বিশ্বকাপে দশম দল হিসেবে বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। কেন এত দেরি, ফ্লাইটে ওঠার ২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে বিশ্বকাপের দল দেওয়া হলো কেন এ নিয়ে হাবিবুল বাশারের ব্যাখ্যা, ‘আমাদের সঙ্গে কী হয়েছে সেটা তো আমাদের সঙ্গের ব্যাপার। দল নির্বাচন করতে যখন বসি... খেলোয়াড় হিসেবে তামিমের... আমরা সুস্থ-সবল তামিমকে পেতে... এটা নিয়ে আমাদের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত ভাবতে হয়েছে। তাই দেরি হয়েছে।’
তামিমের বাদ পড়ার ডামাডোলে হারিয়ে গেছে মাহমুদউল্লাহর ফেরাটাও। সেই ইংল্যান্ড সিরিজের পর বিশ্রামের মোড়কে বাদ পড়েছিলেন। তার বদলে অনেক বিকল্প খুঁজেও শেষ পর্যন্ত ঘুরেফিরে আবার তার কাছেই ফিরলেন নির্বাচকরা। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ৪৯ আর ২১ রানের দুটো ইনিংসেই হয়ে গেছে বিশ্বকাপের টিকিট। প্রধান নির্বাচক বললেন, ‘আগেই বলেছি, বিশ্বকাপের আগে যেকোনো খেলোয়াড়কে যেকোনো সিরিজে দেখব। ও পরিকল্পনাতেই ছিল। নিউজিল্যান্ড সিরিজে দেখেছি।’
২০১৫ সালের বিশ্বকাপের আগে, মাত্র দুই ম্যাচ দেখে সৌম্য সরকারকে দলে নিয়েছিলেন হাথুরুসিংহে। তানজিদ তামিম আর তানজিম সাকিব নিজেদের ভাগ্যবান ভাবতে পারেন। যথাক্রমে মাত্র পাঁচ আর দুই ম্যাচ খেলে তারা বিশ্বকাপ যাত্রার সঙ্গী হয়েছেন। এমন নয় যে, এ স্বল্প সময়ে দারুণ কিছু করে দেখিয়েছেন, প্রধান কারণ বিকল্পের অভাব।
শুধু তামিম ইকবালই নয়, দলের লজিস্টিক ম্যানেজারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তার বড় ভাই ও সাবেক খেলোয়াড় নাফিস ইকবালকেও। তামিমের অবসর-কা-ে তিনি বিসিবি সভাপতির মেসেজের জবাব দেননি, যা পাপন নিজে বলেছেন গণমাধ্যমে। হয়তো তারই প্রতিশোধ, সেই সঙ্গে ড্রেসিংরুমের সঙ্গে তামিমের সব সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া।
অবসর ভেঙে ফিরেছিলেন তামিম, দুটি ম্যাচ খেললেন। কিন্তু যেভাবে বাদ পড়লেন, তাতে মনে হতে পারে অবসরের সিদ্ধান্তটাই ছিল সঠিক। বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগামীতেও তামিমের দলে ফেরাটা বোধহয় অনিশ্চিতই হয়ে গেল।
তামিম প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে দলটা কেমন হয়েছে দেখা যাক। পাঁচ পেসার, দুই অফ স্পিনার, দুই বাঁহাতি স্পিনার মিলিয়ে বোলিং আক্রমণটা নেহায়েত খারাপ নয়। লিটন দাসের সঙ্গে তানজিদ তামিম অথবা মেকশিফট ওপেনার মিরাজ। সহঅধিনায়কের পদ থেকে বাদ পড়েছেন লিটন, সেটা করা হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তকে। সাকিব, মুশফিক, তাওহীদ হৃদয়দের নিয়ে মিডল অর্ডারের পর ফিনিশার রোলে মাহমুদউল্লাহ। এ নিয়েই ধর্মশালায় আফগানদের বিপক্ষে লড়াইয়ের শুরু। প্রত্যাশা অনেক বড়, প্রস্তুতি গোলমেলে। ভরসা একটাই, শুরুর আগে পরিস্থিতি এমন গোলমেলে হলেই কেন যেন ভালো করে বাংলাদেশ!
বিশ্বকাপ দল : সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন (সহঅধিনায়ক), তাওহীদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, শরীফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, মেহেদি হাসান, তানজিদ হাসান, তানজিম হাসান ও মাহমুদউল্লাহ।
তামিম ইকবাল দলে না থাকাতে যেন অনেকেরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে! আবার বিশ্বকাপের দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অন্তর্ভুক্তিতেও অনেকের চোখ কপালে! দল ঘোষণার পর যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা এলেন সংবাদ সম্মেলনে, তখন আলোচনায় শুধু ছিলেন এই দুজনেই। তাদের এই বিরহ বেদনায় চাপা পড়ে যায় অনেক প্রশ্ন। লিটন দাসকে বাদ দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত কেন সহ-অধিনায়ক! বাড়তি কোনো ওপেনার ছাড়া কিংবা পাঁচ পেসারকে নিয়ে কেন দল গড়া?
প্রায় মিনিট পনেরোর সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে এসেছে একই প্রশ্ন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও ঘুরেফিরে বন্দী ছিলেন একই কথার বৃত্তে। প্রশ্নোত্তর শেষে বেরিয়ে যান তিন নির্বাচক। যেতে যেতে কথা হয় তাদেরই একজন হাবিবুল বাশারের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল চাপা পড়া সেইসব প্রশ্নের উত্তর।
শুরুতেই জানতে চাওয়া হয় লিটনকে বাদ দিয়ে শান্তকে কেন সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ একটা কারণ। আর লিটনের অনাগ্রহও তাকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর একটি কারণ। লিটন নিজেও চায় না নেতৃত্বের চাপ নিতে। সে একটু ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগ দিতে চায়।’
বিশ্বকাপ দলে বিকল্প ওপেনার না থাকার কারণও জানা গেল এই নির্বাচকের কথায়। তিনি জানালেন, ‘আমরা ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে মিরাজকে ভাবছি।’
বিকল্প ওপেনার হিসেবে বিশেষজ্ঞ কাউকে না নেওয়ায় একজন বাড়তি বোলার দলে রাখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে শেখ মেহেদি হাসান সুযোগ পেয়েছেন সে কারণে। পাশাপাশি জায়গা হয়েছে পাঁচ পেসারেরও। এর পেছনে বাশার ভারতের কন্ডিশনের কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারতে এখন আর্লি সিজন। উইকেট সতেজ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই পাঁচজন পেসার দরকার হবে।’
যেতে যেতে আরও বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক মুখোমুখি হলেন, এই দলটা বিশ্বকাপে কেমন করবে? এই প্রশ্নটা শুনেই ঘুরে দাঁড়ালেন হাবিবুল। উত্তরে মজা করে বললেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হবে এই দল।’ এরপর একটু গাম্ভীর্য ফিরিয়ে এনে যোগ করলেন, ‘আমি এদের অনেক দিন ধরে দেখছি। ওরা কয়টা ম্যাচ জিতবে জানি না। তবে বিশ্বকাপে প্রতিটি দলকে ভোগাবে, এটা জানি।’
নাজিবা হুসাইনি মারা যান ২০১৭ সালে জুলাই তালেবানের আত্মঘাতী বোমা হামলায়। ক’দিন পরেই তার বিয়ে হওয়ার কথা। বাগদত্তা হোসাইন রেজাই ভাবছিলেন নাজিবার স্মৃতির প্রতি কীভাবে সম্মান জানানো যায়। তিনি একটি গ্রন্থাগার করলেন দাইকুন্ডির প্রদেশের নিলি শহরে, যে-শহরে ২৮ বছর বয়সী নাজিবার জন্ম ও শৈশব কেটেছে। ‘নাজিবা হুসাইনি মেমোরিয়াল লাইব্রেরি’ দিনে দিনে ১২ হাজারেরও বেশি ভলিউমের সংগ্রহশালা এবং একটি কম্পিউটার ল্যাবে পরিণত হয়। সেখানে শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়। আফগানিস্তানের প্রতিটি প্রদেশে আরও গ্রন্থাগার তৈরির পরিকল্পনা ছিল রেজাইয়ের। কিন্তু তালেবান দেশের ওপর পুনরায় দখল সুসংহত করার পর ‘নাজিবা হুসাইনি মেমোরিয়াল লাইব্রেরি’তে আক্রমণ হয়। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় ভবনের ভেতরে ভাঙচুর চলছে এবং সংগ্রহগুলো নষ্ট করা হচ্ছে। রেজাই এখন ইতালি প্রবাসী। তার মতে, যা ঘটেছে তাতে তিনি ‘বিধ্বস্ত’। তিনি বলেছেন, ‘আমরা যা কিছু তৈরি করেছি সব একটা দুঃস্বপ্নের মতো শেষ হয়ে গেছে।’ লাইব্রেরি বললে আমাদের কল্পনায় ভেসে ওঠে, নিরাপদ ও নির্মল একটি ঘর, যেখানে শান্ত ও সুস্থির পরিবেশে অধ্যয়ন চলছে। আফগানিস্তানে সেই লাইব্রেরি ও আর্কাইভ হামলার শিকার হয়েছে। গ্রন্থাগারিকরা ফিরে আসতে পারছেন না পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে।
কাবুলের পাবলিক লাইব্রেরি এবং সেখানকার ন্যাশনাল আর্কাইভ চলমান রয়েছে বটে। তবে কর্মীসংখ্যা সীমিত এবং কোনো পরিষেবা নেই বললেই চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারগুলো বন্ধ। কাবুলের বাইরেও অনেক লাইব্রেরি নাই হয়ে গেছে। লাইব্রেরির অনেক সরকারি কর্মচারী তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায়। নারী কর্মচারীদের কাজ করার অনুমতি নেই। সরকারের উপ-সংস্কৃতিমন্ত্রী জাবিউল্লাহ মুজাহিদ সম্প্রতি তার মন্ত্রণালয়কে লাইব্রেরি ভবনগুলো আবার খুলতে বলেছেন। তবে লাইব্রেরিতে নারী কর্মজীবীদের সংখ্যা ছিল বেশি, তারা আবার আগের ভূমিকায় ফিরতে পারবেন কি না জানা যায়নি। নারী গ্রন্থাগারিক থাকলে নারীরা লাইব্রেরিতে আসতে উৎসাহিত হন। কারণ গ্রন্থাগার তাদের অধ্যয়নের একটি নিরাপদ জায়গা। ন্যাশনাল আর্কাইভসের প্রাক্তন পরিচালক মাসুমা নাজারি বলেছেন, ‘আফগানিস্তানের পাঠাগারগুলো মেয়েদের জন্য নিরাপদ ও ভালো জায়গা। পরিবারের সদস্যরা তাদের মেয়েদের সহপাঠী ও বন্ধুদের সঙ্গে লাইব্রেরিতে পড়তে, দেখা করতে এবং কথা বলতে যেতে বাধা দেয় না। লাইব্রেরিতে পড়ার ফাঁকে তারা নতুন নতুন শিক্ষার খোঁজ পায়, হাসতে, কাঁদতে এবং জীবনের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ পায়। যদি তালেবান নারীদের এখানেও নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাহলে তারা এই নিরাপদ জায়গাটি হারাবে। আফগান মেয়েদের থেকে লাইব্রেরি কেড়ে নেওয়া উচিত নয়।’
তালেবান শাসনের প্রথম সময়েও দেশটিতে সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ হয়েছিল। লাইব্রেরি এবং আর্কাইভগুলোও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অ-পশতু ভাষায়, বিশেষ করে ফার্সি ভাষায় উপকরণ পড়া নিষিদ্ধ ছিল। কাবুলের ১৮টি গ্রন্থাগারের মধ্যে ৮টি তখন ধ্বংস হয়ে গেছে, আরও ৭টি ধর্মীয় ভবনে রূপান্তরিত হয়েছে। ১৯৯৮ সালের ১২ আগস্ট তালেবান ‘হাকিম নাসের খোসরো বলখি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’ হাতে নিয়ে নেয়, যার কেন্দ্রস্থলে একটি গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক লাইব্রেরি ছিল। কেন্দ্রের দরজায় তারা রকেট লঞ্চার ও মেশিনগানের মতো ভারী অস্ত্রশস্ত্র স্থাপন করে। লতিফ পেদ্রাম ছিলেন গ্রন্থাগারিক, প্রধানত ফার্সি পা-ুলিপির ৫৫ হাজার ভলিউমের সংগ্রহশালা সেই লাইব্রেরিটি ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর মতো শক্তি তার ছিল না। তালেবানের পতনের পর ন্যাশনাল লাইব্রেরির পরিচালক ফজলুল্লাহ কোদসি বলেছেন, ‘‘আফগানিস্তানের আইনি কোডের প্রতিটি কপি ধ্বংস হয়ে গেছে। ফার্সি ভাষার মহাকাব্য ‘শাহনামা’ পড়া থামাতে কিংবা এ-জাতীয় নিষিদ্ধ বই আছে কি না, তার জন্য ঘরে ঘরে অনুসন্ধান চালিয়েছিল তালেবান।” পেদ্রাম সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করে জানান, ‘যদি তারা আমাকে ধরে ফেলতে পারত, ঘটনাস্থলেই মৃত্যুদণ্ড দিত।’ পরবর্তী সময়ে বাইরের তহবিল ও অভ্যন্তরীণ উদ্যোগের ফলে গ্রন্থাগার ও আর্কাইভ সেক্টর পুনরুজ্জীবিত হতে থাকে। রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাই জাতীয় আর্কাইভগুলো পুনরায় চালু করেছিলেন, ফলে যথাযথ রেকর্ড রাখার অনুশীলন শুরু হয়। তালেবান ক্ষমতায় আরোহণের সময় আবারও আর্কাইভটি আক্রান্ত হয়। এমনকি লুটপাটও করা হয়। পরিচালককে আফগানিস্তানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য ফেসবুকে তালেবানের কাছে একটি অনুরোধ পোস্ট করতে দেখা যায়। পরে আফগানিস্তানের জাতীয় জাদুঘরের পরিচালক মোহাম্মদ ফাহিম রহিমি একটি বিবৃতি জারি করেন যে, তিনি ও তার কর্মীরা প্রতিষ্ঠান রক্ষা করতে তালেবান-সরকারের সমর্থন পেয়েছেন।
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার ছিল সমগ্র অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম। ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯২ সাল নাগাদ ২ লাখেরও বেশি ভলিউম সংগৃহীত হয়। প্রায় ৫০ জন গ্রন্থাগারিক নিয়োগ করা হয়েছিল। ইরান, তাজিকিস্তান, পাকিস্তান, ভারত এবং অন্যান্য জায়গা থেকেও পণ্ডিতরা সংগ্রহগুলো ব্যবহার করতে আসতেন। আফগানিস্তানে সোভিয়েত যুদ্ধের সময় এটি জাতীয় গ্রন্থাগারে পরিণত হয়। সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের পরে গ্রন্থাগারটি ধ্বংসের মুখে পড়ে এবং পুনর্নির্মাণের কাজও শুরু হয়। নব্বইয়ের শেষের দিকে তালেবান তা বন্ধ করে দেয়। গ্রন্থাগার চত্বরে গোলাগুলিও হয়েছে। অনেক ঐতিহাসিক নথি, প্রাচীন বই ও পা-ুলিপির অবৈধ পথে পাচার হয়ে যায়। গ্রন্থাগারটি গত বছর আগস্টের মাঝামাঝি থেকে বন্ধ রয়েছে। কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র লাইব্রেরি ব্যবহারে তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেছেন, ‘সেখানে বই পড়তাম, লিখতামও। মাঝে মাঝে বন্ধুরা মিলে টেবিলের চারপাশে বসে আফগানিস্তানের উন্নয়ন ও বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে কথা বলতাম। এখন সব স্বপ্নের মতো মনে হয়।’ অনেক তরুণ এখন বিভিন্ন নথি ও ফুটেজ সংগ্রহ করে পশ্চিমাদের বিভিন্ন অনলাইন লাইব্রেরি ও ইন্টারনেট আর্কাইভে রাখছে। তারা আফগান ওয়েবসাইটেও আর্কাইভ করার চেষ্টা করছে, যাতে দেশের ডিজিটাল উপায়ে হলেও নথিগুলো রক্ষা করা যায়।
তথ্যের সহজলভ্যতা থেকে শুধু নাগরিকরাই উপকৃত হয় না, নিপীড়ক শাসককেও তার সুবিধা দেয়। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায় কর বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তথ্য-সংগ্রহের কাজটি ছিল সম্ভবত জনগণের ওপর ব্যাপক নজরদারির প্রথম উদাহরণ। নাৎসি জার্মানি ও স্টালিনবাদী রাশিয়াও নাগরিকদের ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করত এবং বিস্তারিতভাবে নথিভুক্ত করে রাখত। অথচ আফগানিস্তানে নাগরিকদের স্কুলের রেকর্ড ধ্বংস করার খবর প্রকাশ পেয়েছে যেন, ডকুমেন্টেশন বর্তমান সরকারের হাতে না পড়ে, কেননা, তাতে তারা শাস্তির মুখে পড়তে পারে। অনেক বইয়ের দোকানি নিজেরা তাদের স্টক ধ্বংস করেছে, কেননা, তা ধর্মবিরোধী বিবেচিত হতে পারে। গ্রন্থাগার কেবল আক্রমণের মাধ্যমেই ধ্বংস হয় না, তহবিলের অভাবেও হতে পারে। অক্সফোর্ডের ওরিয়েন্টাল ইনস্টিটিউটের পরিচালক আরেজু আজাদ বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আফগানিস্তানে গ্রন্থাগার ও সংরক্ষণাগার রক্ষায় সমর্থন দিতে হবে। আফগানিস্তানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং এর সাংস্কৃতিক ইতিহাসের জ্ঞান সংরক্ষণ দেশের শান্তির ও রাষ্ট্র গঠনের একটি মৌলিক ভিত্তি।’
লেখক : বোডলির গ্রন্থাগারিক এবং ‘বার্নিং দ্য বুকস : অ্যা হিস্ট্রি অব নলেজ আন্ডার অ্যাটাক’ গ্রন্থের লেখক।
ফাইনান্সিয়াল টাইমস থেকে ভাষান্তর : মনযূরুল হক
স্থায়ীভাবে ঢাকা বসবাসের আমার ষাট বছর পূর্ণ হলো। এই ষাট বছরে প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকা, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ঢাকার উত্থান-পতন, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, আন্দোলন-অভ্যুত্থানসহ অনেক কিছু দেখার সুযোগ পেয়েছি। যখন ঢাকায় প্রথম এসেছিলাম তখন মনে হতো ঢাকা একটি বড় গ্রাম। এখানে গ্রামের মতোই বৃষ্টি হয়, অমাবস্যা পূর্ণিমা হয়, শীত-গ্রীষ্ম হয়। ভারী থেকে লঘু বর্ষণ হয়। ঢাকার চারদিক বর্ষার পানিতে প্লাবিত হয়। সদরঘাট, চকবাজার, সোয়ারীঘাট, ইসলামপুর এসব ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের এলাকা। গুলিস্তানকে ঘিরে বিপণি কেন্দ্রগুলো বিকশিত হতে শুরু করে। মতিঝিল গড়ে উঠছে। ঢাকার উন্নয়নের জন্য ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট সংক্ষেপে (ডিআইটি)’র কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তখনো ধোলাইখাল অতিক্রম করে কোর্টকাচারি, জগন্নাথ কলেজ, সদরঘাটের দিকে যেতে হতো। ঢাকা শহরের আবর্জনা নিষ্কাশনের জন্য আর্মেনিয়ানদের উদ্যোগে ধোলাইখাল চালু হয়েছিল।
ঢাকা শহরের ১৬১০ সালের আগে ও পরের মানচিত্র দেখলে বোঝা যায় যে শহরটা কী রকম খাল-বিল-নালা দিয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। যে কারণে শহরটি কখনোই ডুবে যাওয়ার কোনো ইতিহাস পাওয়া যায় না। সেই সময়ে একমাত্র যাতায়াতের উপায় ছিল নৌকা। এর মধ্যেই ১৬১০ সালে ইসলাম খাঁ রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তর করেন। বহুকষ্টে ঘোড়া, হাতি এবং পদাতিক বাহিনীকে রাজমহল থেকে বাংলায় আসতে হয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনক পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধীনে ঢাকার পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। স্থানিক বিবেচনাকে অগ্রাহ্য করে যখন বিদেশিরা নানা ধরনের শহর উন্নয়নের উদ্যোগ নেয় তার পরিণতি যে কত ভয়াবহ হয় তার প্রমাণ ঢাকা শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। ধোলাইখাল বন্ধ করে সেখানে মাটির নিচে বড় বড় পাইপ বসিয়ে নারিন্দাতে একটি পাম্প মেশিন বসিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়।
বিদেশিদের পরামর্শে এই ব্যবস্থার ফলে ঢাকায় গুরুতরভাবে পানি নিষ্কাশনের সংকট দেখা দেয়। একই পদ্ধতিতে বিভিন্ন জায়গায় পাইপ বসানো হয় এবং পানি নিষ্কাশনের গুরুতর সংকট দেখা দেয়। এরপর ঢাকা রাজধানী হলো, বিপুল পরিমাণ মানুষের আগমন ঘটল এই শহরে। বিভিন্ন জলাভূমি, ফাঁকা জায়গা যে যেখানে পারে বাড়িঘর তৈরি করতে শুরু করল। সরকারও প্রথমে ডিআইটি এবং পরে রাজউকের মাধ্যমে নানা জায়গায় আবাসনের ব্যবস্থা করতে শুরু করল। সেই ব্যবস্থা শুরু করতে গিয়ে ধানম-ি, গুলশান, বনানী, উত্তরা এসব জায়গায়ও জলাভূমিগুলো ভরাট করে শহরের আবাসিক এলাকা বৃদ্ধির কার্যক্রম শুরু করা হয়। এখন বৃষ্টিপাত মানেই সর্বত্রই জলাবদ্ধতা এবং মানুষের অন্তহীন দুর্ভোগ।
আশির দশকের পর থেকে গত চল্লিশ বছরে শহরটি কংক্রিটের জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। সেই ষাটের দশকের গাছপালাগুলো নেই, ফাঁকা জায়গা নেই, বৈচিত্র্যহীন অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে শহরটি কিছু ম্যাচ বাক্সের মতো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা একটা আবর্জনার স্তূপ মনে হয়। শহরটায় এত পরিমাণ গাড়ি, বিশেষ করে প্রাইভেট গাড়ি একেবারেই পরিকল্পনাহীন নগরীতে চেপে বসেছে। মাত্র গত দশ পনের বছরে কিছু ফ্লাইওভার এবং সম্প্রতি মেট্রোরেলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বটে কিন্তু সেগুলোর অধিকাংশ পরিকল্পনাহীন হওয়ায় যানজট কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এর মধ্যে সেবা সংস্থাসমূহ একজন আরেকজনের প্রতি দোষ চাপিয়ে আপাতত নিজেদের গা বাঁচিয়ে চলছে।
আমার এই ষাট বছরের ঢাকা বসবাসের ইতিহাসে গত তিনদিন আগে যখন আমি মগবাজার থেকে ধানম-ির বাসায় এসেছি তখন সময় লেগেছে চার ঘণ্টা! এই চার ঘণ্টার মধ্যে সাড়ে তিন ঘণ্টাই ছিলাম আমি পানির মধ্যে। কিন্তু চলাচলের কোনো উপায় ছিল না। এক জায়গাতেই এক থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকেছি। সামনে পেছনে গাড়ির চাপ, কোনো কোনো গাড়ি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। তার সামনে বা পেছনে যাওয়ারও কোনো উপায় ছিল না। শহরে কোনো ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায়নি। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোনো ধরনের সরকারি উদ্যোগ দেখা যায়নি। খবরে প্রায়ই দেখে থাকি কোনো দেশে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের বাহিনীগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে মানুষের সাহায্যে সরকারের প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে। যা ভেবেছিলাম তাই, এই দুর্যোগের মধ্যে কিছু প্রাণ যাবে, কিছু লোক আহত হবে এবং সত্যিই দেখলাম যে ওই রাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের তিনজনসহ চারজন মারা গেছে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত এক শিশুকে নিয়ে উদ্ধারকারীরা বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসার জন্য গিয়েছে কিন্তু চিকিৎসা পায়নি। এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয় না এই কারণে যে, একবার আমার ছেলে স্কুল থেকে ফেরার সময়ে বেবিট্যাক্সিতে দুর্ঘটনায় পড়ে তার শরীর রক্তাক্ত হয়। সেই সময়ে তার কাছে পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না, চিকিৎসার জন্য কাছের একটি চিকিৎসাকেন্দ্রে গেলে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। রক্তাক্ত অবস্থাতেই সে ঘরে ফিরে আসে।
আমার কাছে প্রশ্নটি অন্য জায়গায়, আমরা নিয়তিতে বিশ্বাস করতে শুরু করেছি। দ্রব্যমূল্য বাড়বে, বেকারত্বের সৃষ্টি হবে, মানুষ চিকিৎসা পাবে না এটাই যেন স্বাভাবিক। আর এর বিনিময়ে কোটি কোটি ডিমের দাম পাঁচ টাকা করে বাড়িয়ে একদিনে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কোটিপতি হয়ে যায়। রাষ্ট্রীয় অমাত্যরা এর সমাধানে বিনিদ্র রজনী পার করবেন না, আমলারা নিজের সন্তানদের পৃথিবীর নিরাপদ কোনো জায়গায় পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত থাকবেন। সাংসদ-ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে ব্যবহার করে আরও কোটি কোটি টাকার মালিক হবে। আমরা কি এমনটি দেখতে পাব কোনোদিন দেশ যারা চালায় তাদের ঘুম নেই, সারা রাত পথে পথে ঘুরছেন কোথায় কী হলো সেসব দেখে পরদিনই মানুষকে জানানো যে এই ব্যবস্থা এইভাবে পরিবর্তন করা সম্ভব। সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ! রাজনীতিবিদরা শুধুই বোঝেন ক্ষমতা। মার্কিন ভিসা নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই, কিন্তু পাঁচজন মানুষ যে অতিবর্ষণের ফলে পানিতে তলিয়ে যাওয়া রাস্তায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অকালে মারা গেল তাতে তাদের কপালে একটুও ভাঁজ পড়ে না।
ক’দিন পরে পরে রাস্তার পাশে বিরাট বিরাট কংক্রিটের পাইপ দেখা যায়। বহুদিন মানুষকে ভুগিয়ে একদিন সেই পাইপগুলো মাটির নিচে চাপা পড়ে। কিন্তু এই পাইপের কাজগুলো কী? তারা কি পানি নিষ্কাশনের কাজ করে? নাকি মাটির নিচে গিয়ে নানা রকম ময়লা-আবর্জনায় বন্ধ হয়ে নিচের দিকের পানিকে ওপরের দিকে ঠেলে দেয়? আমাদের এক নাট্যকর্মীর বা অভিনেতা বন্ধু উবারে করে তার কল্যাণপুরের বাসায় যাচ্ছিলেন। কল্যাণপুর যাওয়ার পর উবারের ড্রাইভার আর যেতে রাজি হলেন না। বুক সমান পানি ভেঙে সেই বন্ধু বাড়ি যাওয়ার পথে ম্যানহোলের মধ্যে পড়ে যান। তার একটি পা ক্ষতবিক্ষত হয় এবং মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে এখনো ট্রমায় ভুগছেন।
এটা সত্য, বাংলাদেশ বানভাসি ও ঝড়-ঝঞ্ঝার দেশ। মানুষ এসবের বিরুদ্ধে লড়াই করে বহু শতাব্দী ধরে বেঁচে আছেন। মানুষের কোনো অভিজ্ঞতা আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র কিছুতেই নেবে না। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গৃহে কিছু অনভিজ্ঞ লোক নকশাঁ বানাবে এবং বিপুল পরিমাণে অর্থ ব্যয়ে একটি প্রকল্প সাজাবে, তার মধ্য থেকে কোটি কোটি টাকা চলে যাবে ক্ষমতাসীনদের পকেটে। আজই পত্রিকায় দেখলাম প্রমাণসহ একজন লিখেছেন ভাঙ্গা থেকে খুলনার রেললাইন আপাতত এখন প্রয়োজন নেই। এতে বিশাল অর্থের অপচয় হবে। কিন্তু দেখা যাবে প্রকল্পটি হলো ঠিকই, কিন্তু এটা কারও কাজে লাগছে না। এমনি অনেক অকেজো প্রকল্প হরহামেশাই হয়। আমাদের সংস্কৃতিতে ষাটের দশক পর্যন্ত দেশপ্রেমের বিষয়টি বড়ই প্রবল ছিল। হয়তো সেটা পরাধীনতার কারণে। সবাই যার যার মতো দেশের জন্য কাজ করতে ছুটত। সত্তরের দশকের পর যে চায়নি তা নয়। কিন্তু সম্পূর্ণ বিষয়টি চলে গেছে শাসকের হাতে। জনগণের মেধাকে কখনোই গ্রহণ করার চেষ্টা করা হয়নি। গত ষাট বছরে এবং আমার এই বয়সে আমাদের কাজে লাগানোর রাষ্ট্রীয় কোনো ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়নি। সব কিছু সরকারি বেতনভুক্ত লোকদের কাছে এবং রাজনীতিবিদদের হাতে। তারা যাই করবেন তাই হবে। তবে সবচেয়ে বেদনার বিষয় এই পরিস্থিতির কোনো উন্নতিরও আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। একমাত্র গণজাগরণ এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লবই সমাজকে আবার কর্মময় করে তুলতে পারে। অন্যথায় খবরের কাগজের প্রথম পৃষ্ঠায় নির্বাচন আর ভিসার খবরই আমরা দেখতে পাব। ওই পাঁচজন হতভাগ্য মানুষ যে রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলার শিকার তার সত্যতা কখনোই ভুলবার নয়। এসব ভেবেই হয়তো আলেকজান্ডার পাঞ্জাব থেকে ফিরে গিয়েছিলেন এবং সেনাপতিকে বলেছিলেন ‘সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ’।
লেখক: অভিনেতা, নাট্যকার ও কলামিস্ট
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।