
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের ওষুধের দোকানিদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। গত সোমবার রাত ৯টার দিকে দফায় দফায় হামলা-পাল্টা হামলার সময় ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও এতে জড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন তাদের সাতজন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে দোকানদারদের দাবি, তাদের ১৫ জন আহত হয়েছেন।
হামলাকারীদের গ্রেপ্তার দাবিতে সোমবার রাত ১০টা থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীরা। দাবি না মানলে আজ বুধবার থেকে কঠোর কর্মসূচি দেবে বলে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।
অন্যদিকে, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ওষুধের দোকানগুলো সোমবার রাত থেকে বন্ধ।
জানা গেছে, কলেজের ৩২তম ব্যাচের একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ওষুধের দোকানদার ১০ শতাংশ হারে কম না রাখার জের ধরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী, ওষুধের দোকানদার ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যায় হাসপাতালের সামনের মেসার্স বিপ্লব মেডিসিন কর্নারে সবুজ সরকার নামে মেডিকেল শিক্ষার্থী কিছু ওষুধ কিনতে যান। ওষুধের দাম আসে ৭০ টাকা। ১০ শতাংশ কমিশন দিয়ে ৬৩ টাকা রাখার অনুরোধ জানান ওই শিক্ষার্থী। দোকানদার কমিশন দিতে অস্বীকার করলে এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বাগবিত-া হয়। এর কিছুক্ষণ পর আরও কিছু মেডিকেল শিক্ষার্থীকে নিয়ে ওই দোকানে এসে কেন ওষুধের দাম কম রাখা হলো না এজন্য চাপ দেওয়া হয়। একপর্যায়ে আশপাশের ওষুধের দোকানদাররা এগিয়ে এলে উভয় পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। মেডিকেলের তিন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর ক্যাম্পাসে পৌঁছালে আরও শিক্ষার্থী এসে দোকানে হামলা চালান। খবর পেয়ে সেখানে সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ওসির নেতৃত্বে একদল পুলিশ যায়। তারপরও দফায় দফায় হামলা চালান মেডিকেল শিক্ষার্থীরা। পরে ওষুধের দোকানদারদের সঙ্গে এলাকাবাসী একত্র হয়ে পাল্টা হামলা করলে সংঘর্ষ তুমুল আকার ধারণ করে।
হামলা-পাল্টা হামলার একপর্যায়ে সেখানে যান খুলনা সিটি করপোরেশনের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর হাসান ইফতেখার চালু, খুলনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দ্বীন-উল ইসলাম, উপাধ্যক্ষ ও খুলনা বিএমএর সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মেহেদী নেওয়াজ, বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এস এম কবির উদ্দিন বাবলুসহ চিকিৎসক ও বিসিডিএস নেতারা।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি সাইফুল ইসলাম অন্তর ও সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জোহা সজিব বলেন, ওষুধের দোকানদারদের হামলায় একজন চিকিৎসক ও ছয়জন মেডিকেল শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তারা হলেন ডা. হাসিব, সবুজ সরকার, হাসান ফেরদৌস, মেহেদী, আসিফ, তাহসিন ও নাসির ফুয়াদ। তাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজন বলে দাবি করেন অন্তর।
অন্যদিকে বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির পরিচালক মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের হামলায় ওষুধের দোকানের মালিক-কর্মচারীদের মধ্যে প্রায় ১৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন আল-আমিন, বিপ্লব, শাওন, ইসরাফিল, হৃদয়, সোহাগ, মোস্তফা ও মাসুদুর রহমান মাসুদ।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি সাইফুল ইসলাম অন্তর বলেন, ‘যারা আমাদের মেডিকেল শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মেরে আহত করেছেন, তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি।’ তবে তারা গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা করেননি বলে জানান।
সোনাডাঙ্গা থানার ওসি মমতাজুল হক বলেন, ‘আমরা দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু কোনো সমাধানে আসতে পারিনি। এখনো পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।’
ঢাকার বিএমসি গার্মেন্টসে কাজ করেন ইশাম আহমেদ। মাসে আয় ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু বাসা ভাড়া, খাওয়া খরচ, যাতায়াতসহ অন্য খরচ মিলিয়ে ব্যয় হয় প্রায় ১৮ হাজার টাকা। বাড়তি খরচের টাকা পরিবার কিংবা বন্ধুদের কাছ থেকে ঋণ করে চালাতে হয়। গত ছয় মাসে এভাবেই চলছে ইশামের। এ দুর্বিষহ অবস্থা শুধু ঢাকার ইশামেরই নয়, চট্টগ্রামসহ অন্য কয়েকটি বিভাগের শ্রমিকদেরও একই অবস্থা।
সরকারি হিসাবেই শ্রমিকদের মজুরির সঙ্গে ব্যয়ের ফারাক অনেক বেশি। ঢাকা বিভাগের একজন শ্রমিকের গড় আয় ১০৬ টাকা, তার গড় ব্যয় ১১০ টাকা। একই অবস্থা চট্টগ্রামের শ্রমিকদেরও।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত মাসিক ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এ তথ্য পাওয়া গেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের অনেক শিল্প খাতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের বেতন কমাতে হচ্ছে, নতুবা শ্রমিক ছাঁটাই করতে হচ্ছে।
অর্থনীতির পরিভাষায়, মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধির হার বেশি হলে কারও কাছে হাত পাততে হয় না। নিজেদের ক্রয়ক্ষমতা দিয়েই বাজার থেকে বেশি দামে পণ্য কেনা যায়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট একটু উল্টো। মূল্যস্ফীতি যে হারে বাড়ছে, সে হারে মজুরি বাড়ছে না। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ, বিপরীতে শ্রমমজুরি বৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি থেকে পিছিয়ে আছে শ্রমিকদের গড় মজুরি হার।
মজুরির চেয়ে মূল্যস্ফীতি বেশি হওয়ায় ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছে শ্রমিকরা। আয়-ব্যয়ের পর ঋণের টাকা দিতে না পেরে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে শ্রমিকদের মধ্যে। গত ৯ আগস্ট গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে খোকন আকন্দ (৩৫) নামে এক শ্রমিক আত্মহত্যা করেছেন বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা হয় বিএমসি গার্মেন্টসের শ্রমিক ইশাম আহমেদের। তিনি বলেন, ‘গত ছয় মাস আগেও যে বেতন পেতাম তাতে নিজের খরচ বহন করেও পরিবারকেও দিতে পারতাম। এখন বাসা ভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুৎসহ সামগ্রিক খরচ আরও এক হাজার টাকা বেড়েছে। এখন ঢাকায় টিকে থাকাই মুশকিল হয়ে পড়েছে।’
বিবিএসের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুলাইয়ে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। অর্থাৎ আগের বছরের জুলাই মাসে যে পণ্য ১০০ টাকায় কেনা গেছে, এ বছরের জুলাইয়ে তা কিনতে হয়েছে ১০৯ টাকা ৬৯ পয়সায়। বিপরীতে দেশের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে মজুরির তফাত আরও বাড়ছে। বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রামের শ্রমিকদের তফাত অনেক বেশি।
জানতে চাইলে পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এর মূল কারণ মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে। কিন্তু সে হারে কোম্পানিগুলোর আয় তেমন বাড়েনি। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। একটা রেস্টুরেন্টে মানুষ কী কিনতে পারে। সেখানে গিয়ে মানুষ বেশি খরচ করবে সেটাও সম্ভব নয়। একই দাম দিয়ে অল্প একটু জিনিস কিনতে হচ্ছে।’
ঢাকা ও চট্টগ্রামে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে মজুরির ব্যবধান বাড়ার ব্যাখ্যায় এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘এই মুহূর্তে শিল্পমালিকদের পক্ষে আর বেতন বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। বাড়ালেও মাত্র ৫ শতাংশ বাড়ায়। ইন্টারেস্ট রেট বেড়ে যাওয়াও একটা কারণ।
গার্মেন্টস খাত অনেক বড় খাত। সেখানেও মজুরি বেড়েছে ৫ শতাংশ।’ আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, ‘যেকোনো উপায়ে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে হবে। সরকার এ ক্ষেত্রে কঠোর হস্তক্ষেপ করতে হবে। অন্য দেশগুলো পারলে আমরা কেন পারব না।’
মজুরি সূচকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই মাসে ঢাকা বিভাগের শ্রমিকদের গড় মজুরি হার পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে ৫ দশমিক ২২ শতাংশ। অথচ আগের মাস জুনেও তা ছিল ৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ঢাকার শ্রমিকদের আগের মাসের তুলনায় মজুরি কমেছে দশমিক ৫৯ শতাংশ। এ ছাড়া একই সময়ে চট্টগ্রাম বিভাগের শ্রমিকদের মজুরি হার ৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ। জুন মাসেও এ বিভাগের শ্রমিকদের গড় মজুরি ছিল ৭ দশমিক ০৬ শতাংশ। চট্টগ্রামের শ্রমিকদের বেতন কমেছে দশমিক ৯৪ শতাংশ।
মজুরি ৫ দশমিক ৯৫ শতাংশের অর্থ হলো গত বছর জুলাইয়ে যে শ্রমিক গড়ে ১০০ টাকা মজুরি পেতেন, এ বছরের জুলাই ওই শ্রমিকের বেতন হয়েছে ১০৫ টাকা ৯৫ পয়সা। অথচ তাকে গড়ে খরচ করতে হচ্ছে প্রায় ১১০ টাকা করে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, জুলাইয়ে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ নিয়ে শুরু হয়েছে চলতি বছরের মূল্যস্ফীতি। যদি গড় মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশ। শুরুতেই উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে লক্ষ্যমাত্রা ধরে রাখাটা কঠিন হয়ে পড়তে পারে সরকারের জন্য।
বিবিএসের ভোক্তা মূল্যসূচকের হিসাবে, জুলাইয়ে দেশের গড় মজুরি ৭ দমশিক ৫২ শতাংশ। অর্থাৎ গত জুলাই মাসে দেশের বিভিন্ন খাতের দিনমজুর ও শ্রমিকদের সার্বিক মজুরি বেড়েছে ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ। এর অর্থ হলো, ২০২২ সালের জুনে শ্রমিক ও দিনমজুররা ১০০ টাকা মজুরি পেলে চলতি বছরের জুলাই মাসে পেয়েছেন ১০৭ টাকা ৫২ পয়সা।
বিবিএসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গড় মজুরি সূচক ছিল ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা খানিকটা কমে ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশে নেমে আসে। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা আরও কমে ৬ দশমিক ১২ শতাংশে নেমে আসে।
অর্থনীতির পরিভাষায়, মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধির হার বেশি হলে কারও কাছে হাত পাততে হয় না। নিজেদের ক্রয়ক্ষমতা দিয়েই বাজার থেকে বেশি দামে পণ্য কেনা যায়। সে হিসাবে সার্বিক মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি সূচক ২ দশমিক ১৭ শতাংশ কম হওয়ায় দিনমজুর ও শ্রমিকদের আয় বা মজুরি বাড়লেও তাতে কোনো লাভ হয়নি। অর্থাৎ বাড়তি যে আয় হচ্ছে, তা দিয়ে বাজারে গিয়ে আগের মতো জিনিসপত্র কিনতে পারছেন না। কারণ মজুরি সূচকের চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশ বেশি।
তবে পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য সঠিক হলে রংপুর বিভাগের দিনমজুর ও শ্রমিকরা যে আয় করছেন বা মজুরি পাচ্ছেন, তা দিয়ে চলে যাচ্ছে। কেননা, ওই এলাকায় মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধির হার বেশ বেশি, ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ মাস জুনেও মূল্যস্ফীতির হার জাতীয় পর্যায়ে মজুরি বৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি ছিল। তার আগের চার মাসেও একই চিত্র ছিল দেশে। সাধারণ সময়ে মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির কিছুটা বেশি থাকে। তবে অর্থনীতির এ পরিচিত প্রবণতায় ছেদ ঘটে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে। অর্থাৎ গত দেড় বছর ধরে দেশে সার্বিক মজুরি সূচক মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৬-১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের কর্মসংস্থানের বড় অংশই হচ্ছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। মোট শ্রমশক্তির ৮৫ দশমিক ১ শতাংশই এ খাতে নিয়োজিত। আর ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে।
অন্যদিকে কৃষি ক্ষেত্রে নিয়োজিত মোট শ্রমশক্তির ৯৫ দশমিক ৪ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। শিল্প খাতের ৮৯ দশমিক ৯ শতাংশ, সেবা খাতের ৭১ দশমিক ৮ শতাংশ শ্রমিক অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত।
কোন বিভাগে মজুরি কত বাড়ল : বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে জুলাই মাসে ঢাকা বিভাগে মজুরি বেড়েছে ৫ দশমিক ২২ শতাংশ। মে ও জুন মাসে এই হার ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৮৫ ও ৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। জুলাই মাসে চট্টগ্রামে মজুরি বাড়ার হার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ। মে ও জুন মাসে এই হার ছিল যথাক্রমে ৬ দশমিক ৮৫ ও ৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।
রাজশাহীতে জুলাইয়ে মজুরি বাড়ার হার ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। মে ও জুন মাসে এ হার ছিল যথাক্রমে ৭ দশমিক ১৬ ও ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। রংপুর বিভাগে জুলাই মাসে দিনমজুর-শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। মে ও জুন মাসে এই হার ছিল যথাক্রমে ১১ দশমিক ৩৯ ও ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে জুলাই মাসে মজুরি সূচকের হার ছিল ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। খুলনায় ছিল ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। আর সিলেট বিভাগে জুলাই মাসে মজুরি সূচকের হার ছিল ৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
আইয়ুব বাচ্চু অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্যে স্বপ্ন ও অপ্রতিরোধ্য হিম্মত নিয়ে বিকশিত হওয়া এক অপূর্ব জীবনযোদ্ধার নাম। বিস্ময়কর এক সংগীতযোদ্ধা। বাংলাদেশে তো বটেই, এই উপমহাদেশেও গিটারিস্ট ও রকসংগীতশিল্পী হিসেবে তিনি ছিলেন উজ্জ্বলতম অ্যাভাঁগার্দ। গণমানুষের শিল্পী আজম খানের পরে সব থেকে শক্তিমান ঢেউয়ের নাম আইয়ুব বাচ্চু। সত্যি বলতে কি, দেশের সর্বস্তরের মানুষের তথা আমজনতার হৃদয় তার মতো এত বেশি আর কেউ ছুঁতে পারেননি। জীবৎকালেই তিনি প্রবাদপ্রতিম হয়ে ওঠেন। দেশে বাংলা গান এবং সামগ্রিকভাবে রকসংগীত প্রতিষ্ঠায় তার প্রণিধানযোগ্য অবদান রয়েছে। বলা উচিত, বাংলা রকগানকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে একক কৃতিত্ব তারই। বাংলা গানকে আন্তর্জাতিক অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার নিরলস প্রচেষ্টা ছিল আমৃত্যু। এক্ষেত্রে তার অনেক উল্লেখযোগ্য সৃষ্টিকর্ম রয়েছে। বহুমাত্রিক কাজ রয়েছে। তিনি স্বপ্ন দেখতেন এমন পাশ্চাত্যের কোনো খ্যাতিমান শিল্পীর গান যেমন তামাম দুনিয়ার মানুষ শোনেন, একইভাবে বাঙালি শিল্পীর বাংলা গানও তারা অনুরাগ নিয়ে শুনবেন। অভিভূত হবেন। জন্যভূমি ও বাংলা গানের প্রতি প্রচণ্ডরকম দরদ ছিল তার। আদতে তিনি ছিলেন একাই একশো। ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ বলতে যা বোঝায়, সংগীতের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন তা-ই। মস্ত বড় বাহাদুর।
এই লেখাটিতে শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর সংগীতের চেয়ে তার একান্ত ব্যক্তিগত কিছু অনুরাগের দিকে ফোকাস করতে চাই। যা একেবারেই অনালোচিত। অপ্রকাশিত। বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বিবেচনায় একটি নোকতা দিয়ে রাখতে চাই। আধ্যাত্মিক জগতের প্রতি আইয়ুব বাচ্চুর গভীর দরদ ছিল। তিনি সুফিবাদের আশিক ছিলেন। অনেকে হয়তো ভাবছেন, তিনি তো রকস্টার; হুট করে এ আমি কী লিখছি! হ্যাঁ, ঠিকই লিখছি। সুফিবাদের প্রতি তার প্রবল অনুরাগ ছিল। বহুভাবে তা গানেও এসেছে। ‘কাফেলা’ অ্যালবাম তার সেই অনুরাগের একটি উজ্জ্বল নমুনা। একদিন সন্ধ্যেবেলা ভাইজানকে (আইয়ুব বাচ্চুকে আমি ‘ভাইজান’ সম্বোধন করতাম) প্রশ্ন করেছিলাম, অধ্যাত্মবাদ নিয়ে। তিনি বলেছিলেন খুব অল্প কথায় ‘বুঝলে, আমি খুব খোদাভক্ত মানুষ। স্রেফ আল্লাহর গোলাম আমি। মানুষই আমার সবটুকু ভালোবাসা।
ওই ওপরওয়ালা সবই জানেন। মাঝেমধ্যে আমি পীর-আউলিয়ার মাজারে চলে যাই। চুপচাপ। রাতের বেলা...।’ বললাম, ‘আপনাকে সেই সমস্ত পাবলিক প্লেসে লোকজন তো ঘিরে ধরার কথা! কীভাবে ম্যানেজ করেন?’ তার জবাব ‘... না, তেমন অসুবিধা হয় না। রাতের বেলা তো। অন্ধকারে পৌঁছে যাই...।’ হ্যাঁ, তিনি সুফি সাধক-আউলিয়াদের দরগাহে যেতেন। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট অঞ্চল উল্লেখযোগ্য। নামাজ, জিয়ারত, এবাদত-বন্দেগি ভালোবাসতেন। তার অনুজ সহোদর ইরফান চৌধুরীর সঙ্গেও এ ব্যাপারে আমার বিশদ আলাপ হয়েছে। তো, যা বলতে চেয়েছি তিনি সংগীত সাধনার বাইরেও সুফি ভাবধারার ভেতরে একটি আধ্যাত্মিক জগতের অনুসন্ধানে পরিব্যাপ্ত ছিলেন। মানুষকে নিয়েই ছিল তার সংগীত, প্রেম, এবাদত সবকিছু। নবীনদের অগ্রযাত্রা দেখতে চাইতেন। নিজেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অসংখ্য মানুষের জন্য। তপন চৌধুরীর প্রথম ক্যাসেটের সবগুলো গান তারই সুর ও সংগীত পরিচালনায় সৃষ্টি হয়। অনেক শিল্পীকে তিনি যতœ করে গড়ে তুলেছেন। তারা সংখ্যায় এত বেশি যে, সবার নাম বলা প্রায় অসম্ভব। তথাপি দুজনের নাম বলতে চাই। একজন পার্থ বড়ুয়া। অন্যজন হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল। নিজের সম্বন্ধে তার বিশ্বাস ছিল এটুকুই যে, তিনি মাছ-ভাতপ্রিয় একজন সাদামাটা বাঙালি এবং বাংলাদেশের সংগীতশিল্পের একজন ক্ষুদ্র কর্মী। এমন বিনয়, বিশ্বাস ও চর্চার ফলে পাশ্চাত্যের প্রথাগত রকস্টার এবং তার আদবকেতা কখনোই একই ধাঁচের ছিল না। একই রকম হওয়ার কথাও নয়। রকস্টার হওয়া সত্ত্বেও তিনি অত্যন্ত বিনয়ী ও সমাজসচেতন মানুষ ছিলেন। শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ বিভিন্ন কর্মকা-ের সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা যেমন সামাজিক দায়বোধসম্পন্ন পেশাজীবী; একইভাবে তিনিও তা-ই। বস্তুত এরূপ বিশ্বাস ও দায়বদ্ধতা নিয়েই তিনি সারা জীবন কাজ করেছেন। অবশ্য এইসব সূক্ষ্ম ব্যাপার সর্বস্তরের মানুষের বোঝার কথা নয়। ফলত, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তাকে একজন মায়েস্ত্রো গিটারিস্ট এবং সংগীতশিল্পী হিসেবেই বেশি ভালোবাসেন। কার্যত এটিই স্বাভাবিক।
মানুষটি নেই। দেখতে দেখতে প্রায় পাঁচ বছর হতে চলল। তার গিটারগুলো স্তব্ধ, নির্বাক ̶ যেন সারি করে রাখা একেকটি শোকের স্মারক। যেন সুখ-দুঃখে মোড়ানো একেকটি সহস্র গল্পের মনুমেন্ট। ব্যাখ্যাতীত। তবু রোজকার ‘ঘুম ভাঙা শহরে’ (গীতিকার: শহীদ মাহমুদ জঙ্গী) কত শত ঘরে তিনি ঠিকই বেজে ওঠেন। একটি গানের মধ্যে তিনি ব্যক্ত করেছেন:
“যে মানুষটি হারিয়ে যায়,
বের করা যায় না তাকে খুঁজে...”
(গীতিকার: বাপ্পী খান)
এরও আগেই তিনি গেয়েছেন:
“এই রুপালি গিটার ফেলে
একদিন চলে যাব দূরে, বহুদূরে...
সেদিন চোখে অশ্রু তুমি রেখো
গোপন করে...”
(গীতিকার : কাওসার আহমেদ চৌধুরী)
আইয়ুব বাচ্চুর গানের মধ্যে গভীর কষ্ট নিয়ে অনেক দূরে চলে যাওয়া বা হারিয়ে যাওয়ার যে রকম দুর্নিবার আকুতি আমরা উপলব্ধি করি, তদ্রƒপ মর্মন্তুদ অভিব্যক্তি দেশের অপরাপর সংগীতশিল্পীর মধ্যে বিরল। শিল্পে ট্র্যাজেডি বা বিরহ-ব্যঞ্জনার শক্তি অপরিসীম।
আইয়ুব বাচ্চুর পুরো জীবনজুড়েই ছিল এক গভীর আবেগমথিত সংগীত-সাধনা। তিনি গিটার এবং গানের সঙ্গে নিজেকে একীভূত করে রেখেছিলেন আমৃত্যু। আমাদের জেনারেশনের কিশোরবেলার সমান্তরালে তার সংগীতজীবনের নিজস্ব পথ রচিত হয়। ফলত, আমাদের কৈশোর আর প্রথম যৌবনে বেড়ে ওঠার নানা বাঁকে, যাপিত জীবনে, স্মৃতির গহিনে তিনি মিশে আছেন, থাকবেন। এগুলো সহজ ব্যাপার নয়। সব শিল্পীর তকদিরে এমন রুহানি আলোর দেখা মেলে না। আইয়ুব বাচ্চুর এ এক অসামান্য অর্জন, বলাই বাহুল্য। বাংলাদেশে তো বটেই এ উপমহাদেশের মানুষের কাছে গিটার নামক ইন্সট্রুমেন্টের মোজেজা বোঝানোর ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন প্রকৃত অ্যাভাঁগার্দ শিল্পী। আমরা সবাই তার গান এবং গিটারবাদন শুনেছি। নানাভাবে দেখেছি। কিন্তু কেউ সেভাবে হয়তো ভাবিনি।
এই ভূখণ্ডে ক্ষণজন্মা একজন আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন। প্রবলভাবে ছিলেন। সবটুকু হিম্মত নিয়েই বেঁচে ছিলেন। এখন তিনি নেই। তার মতো আর কেউই নেই...। আইয়ুব বাচ্চুর গীতিকবিতা, গান, গিটারের সুর, সংগীত ̶ সবকিছুই আছে, থাকবে। তার সৃষ্টিকর্মের মধ্য দিয়ে কোটি কোটি শ্রোতাদের মধ্যে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তিনি অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার বহুমাত্রিক গানের ভাণ্ডারের দিকে মনোযোগ দিলে বিস্ময় জাগে। মানুষটি কী পরিমাণ কাজ করেছেন! এখন যে ধরনের হাইব্রিড-সময় চলছে বা যেরকম ‘শর্টকাটের যুগ’ এসেছে, তাতে আইয়ুব বাচ্চুর মতো বহুমাত্রিক প্রতিভাসম্পন্ন কালজয়ী সংগীত-সাধক তৈরি হওয়া প্রায় অসম্ভব।
১৯৯৬ সাল। তখন আইয়ুব বাচ্চুর যুগান্তকারী ক্যাসেট ‘কষ্ট’ রিলিজ হয়েছে। নাম-যশ ও খ্যাতির চূড়ায় তিনি। এলআরবি এবং সলো ক্যারিয়ার দুটোতেই বিস্ময়কর সাফল্য লাভ করেছেন। তো, একদিন পূর্বনির্ধারিত দিন মোতাবেক আমি বেইলি রোডের অডিও আর্ট স্টুডিওতে যাই। বাড়ন্ত দুপুর। ভাইজান বেশ খোশমেজাজে, ফুরফুরে আছেন। তার পরিধানে রয়েছে চিরদিনের প্রিয় কালো টি-শার্ট আর নীল জিন্স। মাথায় কালো হ্যাট। স্টুডিওতে কাজ করছেন। কাজ মানে, চেয়ারে বসে তিনি গিটার বাজাচ্ছেন। আমাকে বললেন : ‘বসো, কাজটা সেরে নিই’। আমি বসে মুগ্ধ হয়ে শুনতে থাকি তার গিটারের যন্ত্রণাদগ্ধ সুর (১৯৯৩ সালে আইয়ুব বাচ্চু’র সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ঘটে তার মৌচাকের বাসায়। কিন্তু কনসার্ট ছাড়া তার সান্নিধ্যে এসে কোনোদিন গিটার শোনার সুযোগ মেলেনি। সেদিনই প্রথম)। আইয়ুব বাচ্চুর ‘কষ্ট’ নিয়ে সেদিন বেশিরভাগ আলাপ হয়। তিনি শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলেন। জন্মভূমি বীর চট্টলার কয়েকজন প্রিয় মানুষের খবর নিলেন। তারপর এক ফাঁকে স্টুডিওর খিদমতগার মারফত ফাস্টফুড আনালেন। দুজনে খেলাম। আমার ব্যাকপ্যাকে স্কেচবুক, পেন্সিল, কালিকলম, ইরেজার ইত্যাদি শিল্প-সরঞ্জাম ছিল। যথারীতি থাকে। আমি ভাইজানের একটি রেখাচিত্র আঁকতে চাইলাম। তিনি বললেন : ‘আজ না রে, আরেকদিন’। তারপর তিনি নিজেই স্কেচবুক চেয়ে নিয়ে দারুণ ক’টা কথা লেখেন। দেখি, চমৎকার হস্তাক্ষরে লেখা একটি মায়াময় চিঠি হয়ে গেল তা।
লেখাটির ভেতর একটি শব্দ আছে ‘এতদূর’। শব্দটি বুকের ভেতর হু হু করে। উড়ে যায় দূর অজানায়...। আইয়ুব বাচ্চু একজীবন ‘কষ্ট’ নিয়ে ‘এতদূর’ চলে গিয়েছেন যে, এ জীবনে আর কোনোদিন তার সঙ্গে মোলাকাত হবে না...।
লেখক : চিত্রশিল্পী, শিক্ষক ও গবেষক- বঙ্গীয় শিল্পকলা চর্চার অন্তর্জাতিক কেন্দ্র।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদন্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর রাজধানীর শাহবাগ ও বায়তুল মোকাররমে এবং কক্সবাজারের চকরিয়া ও চট্টগ্রামে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় চকরিয়ায় একজন নিহত ও পুলিশসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় চট্টগ্রামে ৩০ জনসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ।
এদিকে সাঈদীর মরদেহ গতকাল মঙ্গলবার পিরোজপুর বাইপাস সড়কে সাঈদী ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণে অবস্থিত বায়তুল হামদ জামে মসজিদের পাশে দাফন করা হয়েছে। সকাল ১০টার দিকে সাঈদীর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স পুলিশি পাহারায় সাঈদী ফাউন্ডেশন মাঠে পৌঁছায়। সাঈদীর ছোট ছেলে মাসুদ সাঈদী ঢাকা থেকে পিরোজপুরে পৌঁছতে দেরি হওয়ায় জানাজা দুপুর ১টার দিকে শুরু হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারির মধ্যে অনুষ্ঠিত জানাজায় বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের প্রিজন সেলে মারা যান তিনি।
শাহবাগ রণক্ষেত্র : প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, সোমবার রাতে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশের আগ থেকেই বিএসএমএমইউ হাসপাতালের বাইরে জামায়াত ও শিবিরের শত শত সমর্থক জড়ো হতে থাকেন। রাত পৌনে ৯টার দিকে তার মৃত্যুর খবর জানাজানি হলে হাসপাতালে জামায়াত সমর্থক জড়ো হন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভ করে ‘সাঈদীকে মেরে ফেলা হয়েছে’ জানিয়ে শাহবাগে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানায়। এরপর সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী উপস্থিত সমর্থকদের শান্ত থাকতে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সহায়তা করার অনুরোধ করেন।
মাসুদ সাঈদী জানান, প্রশাসনের কিছু বাধ্যবাধকতা থাকায় ঢাকায় জানাজা করতে অনুমতি দেওয়া হয়নি। তার বাবার লাশ পিরোজপুর নেওয়া হবে এবং সেখানেই জানাজা হবে। এরপর রাত ৩টার সময় সাঈদীর মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতাল থেকে বের হতে চেষ্টা করলে উপস্থিত থাকা জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা বাধা দেন। সমর্থকরা দাবি করেন, সাঈদীর জানাজা ঢাকায় করতে হবে। এ সময় পুলিশ কর্মকর্তারা সমর্থকদের বুঝিয়ে লাশবাহী গাড়িটি বের করার চেষ্টা করেন। পুলিশের সঙ্গে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে সমর্থকরা সাঈদীকে বহন করা গাড়ির কাচ ভেঙে ও চাকা নষ্ট করে দেন। ভোর ৫টার দিকে পুলিশ হাসপাতালে ক্ষতিগ্রস্ত লাশবাহী গাড়িটি রেখেই ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যায়। তখনো হাসপাতাল ও রাস্তার দুইপাশে হাজার হাজার জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এর কিছুক্ষণ পরেই পুলিশ হাসপাতালের বাইরে থেকে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। হাসপাতালের ভেতরে থাকা নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে পুলিশ ক্ষতিগ্রস্ত অ্যাম্বুলেন্সটি বাইরে নিয়ে আসে ও আরেকটি অ্যাম্বুলেন্সে সাঈদীর মরদেহ স্থানান্তর করে। জামায়াত সমর্থকরা হাসপাতালের বাইরে ইটপাটকেল ছুড়ে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন এবং রাস্তায় থাকা পুলিশের দুটি মোটরসাইকেলে আগুন দেন। ভোর ৬টার দিকে পুলিশি পাহারায় পিরোজপুরের উদ্দেশে যাত্রা করে সাঈদীর মরদেহ বহন করা গাড়িটি।
বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষ : সাঈদীর লাশ পিরোজপুরে নিয়ে যাওয়ার পর সমর্থকদের একটি অংশ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে অবস্থান নেয়। গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে তারা শোক দিবসের দোয়া চলাকালে সাঈদীর গায়েবানা জানাজার চেষ্টা করে। এ নিয়ে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। পরে সাঈদী সমর্থকরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করে বেশ কয়েকজনকে আটক করে।
ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান জানান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জাতীয় শোক দিবসের দোয়া মাহফিল হচ্ছিল। এমন সময় সাঈদীর অনুসারী ও জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরা হট্টগোল শুরু করেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে জামায়াতের অনুসারীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ।
জোহর নামাজে অংশগ্রহণ করেছেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নামাজ শেষে শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়ার ঘোষণা দেন মসজিদের ইমাম। তখন জামায়াতের নেতাকর্মীরা এ ঘোষণার প্রতিবাদ করেন। তারা দাবি তোলেন, সাঈদীর আত্মার শান্তি কামনা করেও দোয়া করতে হবে। এখান থেকেই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার সূত্রপাত হয়।
পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দীন মিয়া বলেন, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বায়তুল মোকাররম মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে ১২ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে তদের যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চকরিয়া-পেকুয়ায় গায়েবানা জানাজা শেষে পুলিশের ওপর হামলা : আমাদের পেকুয়া-কুতুবদিয়া সংবাদদাতা জানান, কক্সবাজার জেলার চকরিয়ায় সাঈদীর গায়েবানা জানাজা কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে মুসল্লিদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় একজন নিহত হয়েছে এবং চকরিয়া থানার পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ জানাজায় অংশ নেওয়া অর্ধশত জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ ছাড়া পুলিশভ্যান ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার গাড়িও ভাঙচুর করেছেন তারা। সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তি চকরিয়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল ফজলের পুত্র জামায়াতকর্মী ফোরকান আহমেদ বলে জানা গেছে।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাবেদ জানান, চকরিয়ায় সাঈদীর গায়েবানা জানাজা শেষে একদল লোক বিনা উসকানিতে উত্তেজনামূলক সেøাগান দিয়ে পুলিশের ওপর বেপরোয়া হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীরা একটি গাড়িও ভাঙচুর করেছে। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ পুলিশ সদস্য। আহতদের পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
চট্টগ্রামে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ : গায়েবানা জানাজা কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম নগরে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের কয়েক দফা সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল ওয়াসা মোড়ে জমিউতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজার চেষ্টা করেন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিত-ায় জড়িয়ে পড়েন এবং বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা।
একপর্যায়ে জানাজার জন্য মসজিদে ঢুকতে বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলাকালে আশপাশের এলাকায় মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জামায়াত-শিবিরকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ঘটনাস্থল থেকে ৩০ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ওসি জাহিদুল কবীর। যাচাই-বাছাই শেষে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান ওসি।
নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পুলিশের অনুমতি ছাড়া জমিউতুল ফালাহ মসজিদ মাঠে তারা সাঈদীর গায়েবানা জানাজার পড়ার ঘোষণা দেয় জামায়াত। কিন্তু এ ব্যাপারে তারা সিএমপি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি। অনুমতি না দিয়ে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। জামায়াত-শিবিরের লোকজন সমবেত হয়ে নাশকতা করার চেষ্টা করেছে। নিরীহ মানুষ ও দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের পর হামলা চালিয়েছে। সেটা আমরা তাদের করতে দিইনি।’
জামায়াতের তান্ডবের বিষয়ে ডিএমপির সংবাদ সম্মেলন : ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, জামায়াত-শিবির যে তাদের চরিত্রটা পাল্টায়নি, ভোররাতে তা-ব চালিয়ে এটা তারা আবারও প্রমাণ করল। বিএসএমএমইউ ও শাহবাগে অবস্থান নেওয়া কয়েক হাজার জামায়াত-শিবিরকর্মী দাবি তোলে যে, তারা জানাজা পড়ে তারপর মরদেহ নিতে চায়। তখন আমরা তাদের বলি, আপনারা এখানে জানাজা পড়তে পারেন, কারণ জাতীয় শোক দিবস, আমাদের ব্যস্ততা আছে, আপনারা এখন জানাজা পড়ে মরদেহ নিয়ে যেতে পারেন। রাত সোয়া ২টার দিকে তারা জানাজার পরিবর্তে মোনাজাত করে আধা ঘণ্টা। তারা বলে, আমরা জানাজা পড়ব না মোনাজাত করেছি, পরে আমরা গায়েবানা জানাজা পড়ব। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা মোনাজাত করে। এরপর যখন মরদেহ গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়, তখন হাজার হাজার জামায়াত-শিবির লাশবাহী গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। তারা কোনোমতে এই মরদেহ পিরোজপুরে নিয়ে যেতে দেবে না। এ সময় লাশবাহী গাড়ির সঙ্গে থাকা পুলিশ অফিসার ও পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে জামায়াত-শিবির। হামলায় ডিসি রমনাসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র অফিসার আহত হন। তারা পুলিশের চার থেকে পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং দুটি মোটরসাইকেল আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপরও আমরা ধৈর্যসহকারে এ তা-ব সহ্য করি এটা ভেবে, স্বজনরা একটা মরদেহ নিয়ে যেতে চাচ্ছে নিয়ে যাক। ফজরের নামাজের পর আবারও অনুমতি দেওয়া হলো জানাজা পড়ার। কিন্তু ফজরের নামাজের পরে তারা আমাদের অফিসারদের বের করে বিএসএমএমইউ দখলে নিয়ে নিল। তারা মরদেহ পিরোজপুর নিতে দেবে না। তারা ফেসবুকে প্রচার করতে শুরু করল সারা দেশ থেকে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের শাহবাগে আসার জন্য। তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় তাদের ওপর আমরা অত্যন্ত সীমিত আকারে শক্তি প্রয়োগ করে ছত্রভঙ্গ করে দিই।
অর্থমন্ত্রী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল বলছেন, আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে পৃথিবীর শীর্ষ ২০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দায়িত্ব নিয়েছেন তখন অর্থনীতিতে আমাদের দেশের অবস্থান ছিল ৬০ নম্বর। আর এখন বাংলাদেশ সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে ৩৫ নম্বর। যা সম্ভব হয়েছে এ বঙ্গবন্ধুকন্যার জন্য। সেই সঙ্গে বাজেটে আকার বৃদ্ধি পেয়েছে দশগুণ। বঙ্গবন্ধু শুধু একটি নাম নয়, তিনি ছিলেন, আছেন এবং তিনি থাকবেন। তিনি আমাদের অহংকার। আমাদের মধ্যেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থাকবেন আজীবন। আমরা সবাই মিলে তার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করব।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় শোক দিবসে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সব শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের সবার মধ্যেই বেঁচে আছেন। আমরা সবাই মিলে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত থাকব।
এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন দক্ষিণ জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথি, সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন চৌধুরী, সহসভাপতি ইলিয়াস মিয়া, সহসভাপতি নাঙ্গলকোট উপজেলা চেয়ারম্যান সামছুউদ্দিন কালু, সহসভাপতি এজেডএম শফিউদ্দিন শামীম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু তাহের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ করিম মজুমদার ও শিল্প-বাণিজ্য সম্পাদক এনামুল হক মিয়াজী প্রমুখ।
দেশে গত ১৫ দিনে ডেঙ্গু পরিস্থিতির সবগুলো সূচকেই অবনতি হয়েছে। এ সময় রোগী ও মৃত্যু বেড়েছে দেড় গুণের বেশি। ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি ছাড়িয়ে গেছে ঢাকাকে। ঢাকার বাইরে প্রায় দ্বিগুণ মৃত্যু ও রোগী বেড়েছে।
এমন অবস্থায় গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) দেশে ডেঙ্গুতে নতুন করে আরও ১০ জন মারা গেছে ও ১ হাজার ৯৮৪ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৮৯ হাজার ৮৭৫ জনে ও মৃত্যু ৪২৬ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যবিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ১৫ দিনে দেশে দেড় গুণের বেশি রোগী ও মৃত্যু বেড়েছে। ৩১ জুলাই রোগীর সংখ্যা ছিল ৫১ হাজার ৮৩২ জন। গত ১৫ দিনে বেড়েছে ৩৪ হাজার ৪৩ জন, যা এ সময়ের রোগীর ৩৮ শতাংশ বা দেড় গুণ।
একইভাবে গত ৩১ জুলাই মৃত্যু ছিল ২৫১ জন, যা বেড়ে এখন ৪২৬ হয়েছে। অর্থাৎ গত ১৫ দিনে মারা গেছে ১৭৫ জন, যা এ সময়ের মৃত্যুর ৪১ শতাংশ বা দেড় গুণের বেশি।
অন্যদিকে, এই ১৫ দিনে ঢাকার বাইরে রোগী বেড়েছে ৫০ শতাংশ বা দ্বিগুণ। ১৫ দিন আগে ঢাকার বাইরে রোগী ছিল ২২ হাজার ৬৩২ জন, যা ২২ হাজার ৮৪৭ জন বেড়ে এখন ৪৫ হাজার ৪৭৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
একইভাবে গত ১৫ দিনে ঢাকার বাইরে মৃত্যু বেড়েছে ৪৭ শতাংশ বা প্রায় দ্বিগুণ। ৩১ জুলাই ঢাকার বাইরে মৃত্যু ছিল ৫৫ জন, যা এখন বেড়ে ১০৩ জন হয়েছে। অর্থাৎ এ সময় ৪৮ জন মারা গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৭৩১ জন ঢাকার এবং ১২৫৩ জন ঢাকার বাইরের। বর্তমানে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৯ হাজার ১১৭ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৪ হাজার ১০ জন এবং বাইরের বিভিন্ন জেলায় ৫ হাজার ১০৭ জন রয়েছে।
অপেক্ষা আর মাত্র ৩ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই।
শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে। কিং খানের ‘জাওয়ান’ কাঁপাচ্ছে পর্দা, কাটতি বাড়ছে বক্স অফিসে; বিশ্বকাপে আইসিসির পকেট ভরবে তো?
প্রস্তুতি বলছে, ভরবে। উইকেটে হবে রান উৎসব, লড়াই হবে ধুন্ধুমার। তাতেই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হবে এক ব্লকবাস্টার মেগা হিট।
মাস তিনেক আগে, বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচগুলো যে ১০ ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে সেই ভেন্যুগুলোর কিউরেটরদের সঙ্গে বসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কিউরেটর। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের একটাই মন্ত্র, রান চাই।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে, ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলেছে সেই ম্যাচগুলো যদিও বিশ্বকাপের ভেন্যুতে হয়নি তবে সেই সব ম্যাচেও রানের বন্যা বয়েছে।
প্রথম দুটো ওয়ানডেতে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার করা ২৭৬ রান অনায়াসে তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে ভারত। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ঠেঙিয়ে তুলেছেন ৩৯৯ রান। তিন নম্বর ম্যাচে আবার অস্ট্রেলিয়া করেছে ৩৫২ রান, যা তাড়া করে ভারতও গিয়েছিল ২৮৬ অবধি।
উদ্বোধনী ম্যাচ হবে গুজরাতের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এখানে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। ম্যাচে শুভমান গিল করেন সেঞ্চুরি, ভারত করে ৪ উইকেটে ২৩৪ রান আর জবাবে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ৬৬ রানে।
বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের ধরন বুঝে ব্যাট করতে পারলে ৫০ ওভারে এখানে রানবন্যা হবে। বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দুই দল এখানে মুখোমুখি হয়েছে বহুবার, পোশাকের রঙ কখনো রঙিন কিংবা কখনো সাদা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ কমেনি। এই মাঠে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রান করে ভারতকে ২১ রানে হারিয়েছে সবশেষ ম্যাচে।
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ঘরের মাঠে সবশেষ মৌসুমে ধোনির ‘ইয়েলো আর্মি’ ৮ ম্যাচ খেলে ২০০ রানের ওপরে করেছে দুইবার, একবার জিতেছে অন্যবার হেরেছে। তবে দুই ইনিংসেই ২০০’র বেশি রান হয়েছে দুটো ম্যাচেই। অর্থাৎ চাইলে চেন্নাইকেও ব্যাটিং স্বর্গে পরিণত করা সম্ভব।
বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর টানা তিন ওয়ানডে জিতে সিরিজ তো নিশ্চিত করেছেই, টানা তিন ম্যাচে ৩০০’র ওপর রান করেছে। চতুর্থ ওয়ানডেতে তো ৪০০ পার করেছে প্রোটিয়ারা। ব্যাটিং উইকেটে তারাও যে কোনো প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। হেনরিক ক্লাসেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৮৩ বলে খেলেছেন ১৭৪ রানের ইনিংস। বিধ্বংসী রূপে ফিরছেন ডেভিড মিলারও।
প্রোটিয়ারা প্রথম ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে। সেখানে অবশ্য সবশেষ হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচেও খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে তারা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯৯ রানে। দিল্লির মাঠটা হয়তো খানিকটা স্পিনারদের দিকেই ঝুঁকবে, তবে অন্য মাঠগুলোতে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবে মেতে উঠতে দেখার সম্ভাবনা জোরালো। তাই অনেক সাবেক ক্রিকেটারই প্রোটিয়াদের দেখছেন শেষ চারে।
বিশ্বকাপের আগে ক্লাসেন ছাড়াও ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস খেলেছেন ১৮২ রানের ইনিংস, দারুণ ছন্দে ইংল্যান্ডের ডাভিড মালানও। তবে সেরা ছন্দে নিঃসন্দেহে শুভমান গিল। সবশেষ ৫ ইনিংসে দুটো শতরান আর একটা হাফসেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেলও আছেন দারুণ ছন্দে। দুটো হাফসেঞ্চুরি আর একটা সেঞ্চুরি সবশেষ ৫ ইনিংসে। হায়দ্রাবাদে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের ৩৪৫ রান কিউইরা তাড়া করেছে ৩৮ বল হাতে রেখে।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, এই বারের বিশ্বকাপে রানবন্যায় বোলারদের জন্য কাজটা হবে কঠিন। দেশ রূপান্তরকে আশরাফুল বলেন, ‘আমাদের পেসাররা গত এক দেড় বছর ধরে খুবই ভালো করছে। তবে যেহেতু ভারতের মাটিতে খেলা, আমরা দেখেছি যে সাড়ে ৩০০’র বেশি রান হচ্ছে প্রতিটা ম্যাচে। কেউ যদি ভালো না করে, তাকে মনে রাখতে হবে যে টুর্নামেন্টে পরের ম্যাচে ফিরে আসতে হবে। একজনের দিন খারাপ যেতেই পারে, কোনো ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান উঠেই যেতে পারে। ৯টা ম্যাচের ভেতর ৪-৫টা ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান হতে পারে। তাই বোলারদের ফিরে আসার মানসিকতা থাকতে হবে।’
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমও বলেছেন যে দেড় মাসের আসরে প্রস্তুত থাকতে হবে যে কোনো কিছুর জন্যই, ‘দেড় মাসের আসর, ৯টা ম্যাচ এই সময়ে খেলতে হবে বা তারও বেশি। অনেক উত্থান-পতন হবে। যে কোনো কিছুর জন্যই তৈরি থাকতে হবে।’
রান উৎসবের বিশ্বকাপ যে হতে যাচ্ছে, তার সব রসদই মজুদ। মাঠগুলোকে করা হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গ, বিশ্বকাপে আসার আগে সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরাও আছেন ছন্দে। শুধু প্রশ্ন এটাই, রান উৎসবের এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রান করবেন কে? সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাটিংয়ের ছবিটা যে মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।