
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের কালাপাহাড় এলাকায় জঙ্গিদের নতুন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ছয় কেজি বিস্ফোরক ও ১৪ রাউন্ড পিস্তলের গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিসিটিসি) ইউনিট। গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান। এ ছাড়া গত সোমবার কর্মধায় স্থানীয় জনতার হাতে আটক হওয়া জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলার’ ১৭ সদস্যের পরিচয় প্রকাশ করেছে সিটিটিসি ইউনিট। তাদের মধ্যে চিকিৎসক ও প্রকৌশলীও রয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার পুলিশ লাইনসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন ‘অপারেশন হিলসাইডের’ সমাপ্তি ঘোষণা করেন সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, সোমবার সকালে কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের আছকরাবাদ বাজারে স্থানীয়রা ১৭ ব্যক্তিকে আটক করে।
এ খবর পাওয়ার পরপরই আমরা ঘটনাস্থলে যাই। আমাদের টিম গত শনিবার তাদের যে আস্তানায় অভিযান চালায়, আটক ব্যক্তিরা তাদের সহযোগী বলে আমরা নিশ্চিত হই। এরপর কর্মধা ইউনিয়নের কার্যালয় থেকে তাদের আমাদের হেফাজতে নিয়ে আসি। এরপর রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করে এক্সক্লুসিভ কিছু তথ্য পাই। এই কালাপাহাড়ে তাদের আরেকটি আস্তানা আছে বলে আমাদের জানায় তারা।
সিটিটিসি প্রধান আরও বলেন, আমরা ভোরে ওই আস্তানা সন্ধানের জন্য বের হই। দুর্গম প্রায় ২০টি পাহাড় পাড়ি দিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে সক্ষম হই। সেখানে গিয়ে বিশেষায়িত ফোর্স অনুসন্ধান চালিয়ে দুটি ঘর থেকে ছয় কেজি এক্সক্লুসিভ (বিস্ফোরক), ১৪ রাউন্ড পিস্তলের গুলি উদ্ধার করে। এর আগে আটক হওয়া ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলার’ সদস্যদের সঙ্গে ছিল নগদ ২ লাখ টাকা, দুটি বড় দা, ৯৫টি ডেটোনেটর।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, আমরা ধারণা করছি এখানে ওই সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্ররা রয়েছে। তাদের মধ্যে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারও আছেন। যেহেতু তাদের জিজ্ঞাসাবাদে অনেক সময় ও কৌশলের প্রয়োজন হয়, তাই এই মুহূর্তে তাদের মূল পরিকল্পনা সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।
গত সোমবার আটক ১৭ জন হলেনথ নাটোরের গাঁওপাড়ার জুয়েল মাহমুদ (২৮), সিরাজগঞ্জের পুরাবাড়ির সোহেল তানভীর রানা (৩০), কক্সবাজারের রামুর সাদমান আরেফিন ফাহিম (২১) মো. ইমতেজার হাসসাত নাবীব (১৯), যশোরের মোল্লাপাড়ার ফাহিম খান (১৭), পাবনার আতাইকোলার মো. মামুন ইসলাম (১৯), গাইবান্ধার চাদপাড়ার রাহাত ম-ল (২৪), জামালপুরের সোলাইমান মিয়া (২১), নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের আরিফুল ইসলাম (৩৪), বগুড়ার হাটশিপুরের মো. আশিকুল ইসলাম (২৯), পাবনার আতাইকুলার মামুন ইসলাম (২৬), ঝিনাইদহের ছয়াইলের তানভীর রানা (২৪), সাতক্ষীরার তালার জুয়েল শেখ (২৫), পাবনার আতাইকুলার রফিকুল ইসলাম (৩৮), পাবনার সাঁথিয়ার মো. আবির হোসেন (২০), মাদারীপুরের মেহেদী হাসান মুন্না (২৩) ও টাঙ্গাইলের কোয়েল (২৫)।
এর আগে ১২ আগস্ট সিসিটিসি ও সোয়াত কর্মধার পূর্ব টাট্রিউলি এলাকায় একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ইমাম মাহমুদের কাফেলার ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।
ঢাকার বিএমসি গার্মেন্টসে কাজ করেন ইশাম আহমেদ। মাসে আয় ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু বাসা ভাড়া, খাওয়া খরচ, যাতায়াতসহ অন্য খরচ মিলিয়ে ব্যয় হয় প্রায় ১৮ হাজার টাকা। বাড়তি খরচের টাকা পরিবার কিংবা বন্ধুদের কাছ থেকে ঋণ করে চালাতে হয়। গত ছয় মাসে এভাবেই চলছে ইশামের। এ দুর্বিষহ অবস্থা শুধু ঢাকার ইশামেরই নয়, চট্টগ্রামসহ অন্য কয়েকটি বিভাগের শ্রমিকদেরও একই অবস্থা।
সরকারি হিসাবেই শ্রমিকদের মজুরির সঙ্গে ব্যয়ের ফারাক অনেক বেশি। ঢাকা বিভাগের একজন শ্রমিকের গড় আয় ১০৬ টাকা, তার গড় ব্যয় ১১০ টাকা। একই অবস্থা চট্টগ্রামের শ্রমিকদেরও।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত মাসিক ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এ তথ্য পাওয়া গেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের অনেক শিল্প খাতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের বেতন কমাতে হচ্ছে, নতুবা শ্রমিক ছাঁটাই করতে হচ্ছে।
অর্থনীতির পরিভাষায়, মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধির হার বেশি হলে কারও কাছে হাত পাততে হয় না। নিজেদের ক্রয়ক্ষমতা দিয়েই বাজার থেকে বেশি দামে পণ্য কেনা যায়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট একটু উল্টো। মূল্যস্ফীতি যে হারে বাড়ছে, সে হারে মজুরি বাড়ছে না। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ, বিপরীতে শ্রমমজুরি বৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি থেকে পিছিয়ে আছে শ্রমিকদের গড় মজুরি হার।
মজুরির চেয়ে মূল্যস্ফীতি বেশি হওয়ায় ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছে শ্রমিকরা। আয়-ব্যয়ের পর ঋণের টাকা দিতে না পেরে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে শ্রমিকদের মধ্যে। গত ৯ আগস্ট গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে খোকন আকন্দ (৩৫) নামে এক শ্রমিক আত্মহত্যা করেছেন বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা হয় বিএমসি গার্মেন্টসের শ্রমিক ইশাম আহমেদের। তিনি বলেন, ‘গত ছয় মাস আগেও যে বেতন পেতাম তাতে নিজের খরচ বহন করেও পরিবারকেও দিতে পারতাম। এখন বাসা ভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুৎসহ সামগ্রিক খরচ আরও এক হাজার টাকা বেড়েছে। এখন ঢাকায় টিকে থাকাই মুশকিল হয়ে পড়েছে।’
বিবিএসের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুলাইয়ে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। অর্থাৎ আগের বছরের জুলাই মাসে যে পণ্য ১০০ টাকায় কেনা গেছে, এ বছরের জুলাইয়ে তা কিনতে হয়েছে ১০৯ টাকা ৬৯ পয়সায়। বিপরীতে দেশের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে মজুরির তফাত আরও বাড়ছে। বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রামের শ্রমিকদের তফাত অনেক বেশি।
জানতে চাইলে পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এর মূল কারণ মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে। কিন্তু সে হারে কোম্পানিগুলোর আয় তেমন বাড়েনি। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। একটা রেস্টুরেন্টে মানুষ কী কিনতে পারে। সেখানে গিয়ে মানুষ বেশি খরচ করবে সেটাও সম্ভব নয়। একই দাম দিয়ে অল্প একটু জিনিস কিনতে হচ্ছে।’
ঢাকা ও চট্টগ্রামে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে মজুরির ব্যবধান বাড়ার ব্যাখ্যায় এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘এই মুহূর্তে শিল্পমালিকদের পক্ষে আর বেতন বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। বাড়ালেও মাত্র ৫ শতাংশ বাড়ায়। ইন্টারেস্ট রেট বেড়ে যাওয়াও একটা কারণ।
গার্মেন্টস খাত অনেক বড় খাত। সেখানেও মজুরি বেড়েছে ৫ শতাংশ।’ আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, ‘যেকোনো উপায়ে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে হবে। সরকার এ ক্ষেত্রে কঠোর হস্তক্ষেপ করতে হবে। অন্য দেশগুলো পারলে আমরা কেন পারব না।’
মজুরি সূচকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই মাসে ঢাকা বিভাগের শ্রমিকদের গড় মজুরি হার পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে ৫ দশমিক ২২ শতাংশ। অথচ আগের মাস জুনেও তা ছিল ৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ঢাকার শ্রমিকদের আগের মাসের তুলনায় মজুরি কমেছে দশমিক ৫৯ শতাংশ। এ ছাড়া একই সময়ে চট্টগ্রাম বিভাগের শ্রমিকদের মজুরি হার ৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ। জুন মাসেও এ বিভাগের শ্রমিকদের গড় মজুরি ছিল ৭ দশমিক ০৬ শতাংশ। চট্টগ্রামের শ্রমিকদের বেতন কমেছে দশমিক ৯৪ শতাংশ।
মজুরি ৫ দশমিক ৯৫ শতাংশের অর্থ হলো গত বছর জুলাইয়ে যে শ্রমিক গড়ে ১০০ টাকা মজুরি পেতেন, এ বছরের জুলাই ওই শ্রমিকের বেতন হয়েছে ১০৫ টাকা ৯৫ পয়সা। অথচ তাকে গড়ে খরচ করতে হচ্ছে প্রায় ১১০ টাকা করে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, জুলাইয়ে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ নিয়ে শুরু হয়েছে চলতি বছরের মূল্যস্ফীতি। যদি গড় মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশ। শুরুতেই উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে লক্ষ্যমাত্রা ধরে রাখাটা কঠিন হয়ে পড়তে পারে সরকারের জন্য।
বিবিএসের ভোক্তা মূল্যসূচকের হিসাবে, জুলাইয়ে দেশের গড় মজুরি ৭ দমশিক ৫২ শতাংশ। অর্থাৎ গত জুলাই মাসে দেশের বিভিন্ন খাতের দিনমজুর ও শ্রমিকদের সার্বিক মজুরি বেড়েছে ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ। এর অর্থ হলো, ২০২২ সালের জুনে শ্রমিক ও দিনমজুররা ১০০ টাকা মজুরি পেলে চলতি বছরের জুলাই মাসে পেয়েছেন ১০৭ টাকা ৫২ পয়সা।
বিবিএসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গড় মজুরি সূচক ছিল ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা খানিকটা কমে ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশে নেমে আসে। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা আরও কমে ৬ দশমিক ১২ শতাংশে নেমে আসে।
অর্থনীতির পরিভাষায়, মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধির হার বেশি হলে কারও কাছে হাত পাততে হয় না। নিজেদের ক্রয়ক্ষমতা দিয়েই বাজার থেকে বেশি দামে পণ্য কেনা যায়। সে হিসাবে সার্বিক মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি সূচক ২ দশমিক ১৭ শতাংশ কম হওয়ায় দিনমজুর ও শ্রমিকদের আয় বা মজুরি বাড়লেও তাতে কোনো লাভ হয়নি। অর্থাৎ বাড়তি যে আয় হচ্ছে, তা দিয়ে বাজারে গিয়ে আগের মতো জিনিসপত্র কিনতে পারছেন না। কারণ মজুরি সূচকের চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশ বেশি।
তবে পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য সঠিক হলে রংপুর বিভাগের দিনমজুর ও শ্রমিকরা যে আয় করছেন বা মজুরি পাচ্ছেন, তা দিয়ে চলে যাচ্ছে। কেননা, ওই এলাকায় মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধির হার বেশ বেশি, ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ মাস জুনেও মূল্যস্ফীতির হার জাতীয় পর্যায়ে মজুরি বৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি ছিল। তার আগের চার মাসেও একই চিত্র ছিল দেশে। সাধারণ সময়ে মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির কিছুটা বেশি থাকে। তবে অর্থনীতির এ পরিচিত প্রবণতায় ছেদ ঘটে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে। অর্থাৎ গত দেড় বছর ধরে দেশে সার্বিক মজুরি সূচক মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৬-১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের কর্মসংস্থানের বড় অংশই হচ্ছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। মোট শ্রমশক্তির ৮৫ দশমিক ১ শতাংশই এ খাতে নিয়োজিত। আর ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে।
অন্যদিকে কৃষি ক্ষেত্রে নিয়োজিত মোট শ্রমশক্তির ৯৫ দশমিক ৪ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। শিল্প খাতের ৮৯ দশমিক ৯ শতাংশ, সেবা খাতের ৭১ দশমিক ৮ শতাংশ শ্রমিক অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত।
কোন বিভাগে মজুরি কত বাড়ল : বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে জুলাই মাসে ঢাকা বিভাগে মজুরি বেড়েছে ৫ দশমিক ২২ শতাংশ। মে ও জুন মাসে এই হার ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৮৫ ও ৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। জুলাই মাসে চট্টগ্রামে মজুরি বাড়ার হার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ। মে ও জুন মাসে এই হার ছিল যথাক্রমে ৬ দশমিক ৮৫ ও ৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।
রাজশাহীতে জুলাইয়ে মজুরি বাড়ার হার ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। মে ও জুন মাসে এ হার ছিল যথাক্রমে ৭ দশমিক ১৬ ও ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। রংপুর বিভাগে জুলাই মাসে দিনমজুর-শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। মে ও জুন মাসে এই হার ছিল যথাক্রমে ১১ দশমিক ৩৯ ও ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে জুলাই মাসে মজুরি সূচকের হার ছিল ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। খুলনায় ছিল ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। আর সিলেট বিভাগে জুলাই মাসে মজুরি সূচকের হার ছিল ৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
আইয়ুব বাচ্চু অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্যে স্বপ্ন ও অপ্রতিরোধ্য হিম্মত নিয়ে বিকশিত হওয়া এক অপূর্ব জীবনযোদ্ধার নাম। বিস্ময়কর এক সংগীতযোদ্ধা। বাংলাদেশে তো বটেই, এই উপমহাদেশেও গিটারিস্ট ও রকসংগীতশিল্পী হিসেবে তিনি ছিলেন উজ্জ্বলতম অ্যাভাঁগার্দ। গণমানুষের শিল্পী আজম খানের পরে সব থেকে শক্তিমান ঢেউয়ের নাম আইয়ুব বাচ্চু। সত্যি বলতে কি, দেশের সর্বস্তরের মানুষের তথা আমজনতার হৃদয় তার মতো এত বেশি আর কেউ ছুঁতে পারেননি। জীবৎকালেই তিনি প্রবাদপ্রতিম হয়ে ওঠেন। দেশে বাংলা গান এবং সামগ্রিকভাবে রকসংগীত প্রতিষ্ঠায় তার প্রণিধানযোগ্য অবদান রয়েছে। বলা উচিত, বাংলা রকগানকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে একক কৃতিত্ব তারই। বাংলা গানকে আন্তর্জাতিক অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার নিরলস প্রচেষ্টা ছিল আমৃত্যু। এক্ষেত্রে তার অনেক উল্লেখযোগ্য সৃষ্টিকর্ম রয়েছে। বহুমাত্রিক কাজ রয়েছে। তিনি স্বপ্ন দেখতেন এমন পাশ্চাত্যের কোনো খ্যাতিমান শিল্পীর গান যেমন তামাম দুনিয়ার মানুষ শোনেন, একইভাবে বাঙালি শিল্পীর বাংলা গানও তারা অনুরাগ নিয়ে শুনবেন। অভিভূত হবেন। জন্যভূমি ও বাংলা গানের প্রতি প্রচণ্ডরকম দরদ ছিল তার। আদতে তিনি ছিলেন একাই একশো। ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ বলতে যা বোঝায়, সংগীতের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন তা-ই। মস্ত বড় বাহাদুর।
এই লেখাটিতে শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর সংগীতের চেয়ে তার একান্ত ব্যক্তিগত কিছু অনুরাগের দিকে ফোকাস করতে চাই। যা একেবারেই অনালোচিত। অপ্রকাশিত। বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বিবেচনায় একটি নোকতা দিয়ে রাখতে চাই। আধ্যাত্মিক জগতের প্রতি আইয়ুব বাচ্চুর গভীর দরদ ছিল। তিনি সুফিবাদের আশিক ছিলেন। অনেকে হয়তো ভাবছেন, তিনি তো রকস্টার; হুট করে এ আমি কী লিখছি! হ্যাঁ, ঠিকই লিখছি। সুফিবাদের প্রতি তার প্রবল অনুরাগ ছিল। বহুভাবে তা গানেও এসেছে। ‘কাফেলা’ অ্যালবাম তার সেই অনুরাগের একটি উজ্জ্বল নমুনা। একদিন সন্ধ্যেবেলা ভাইজানকে (আইয়ুব বাচ্চুকে আমি ‘ভাইজান’ সম্বোধন করতাম) প্রশ্ন করেছিলাম, অধ্যাত্মবাদ নিয়ে। তিনি বলেছিলেন খুব অল্প কথায় ‘বুঝলে, আমি খুব খোদাভক্ত মানুষ। স্রেফ আল্লাহর গোলাম আমি। মানুষই আমার সবটুকু ভালোবাসা।
ওই ওপরওয়ালা সবই জানেন। মাঝেমধ্যে আমি পীর-আউলিয়ার মাজারে চলে যাই। চুপচাপ। রাতের বেলা...।’ বললাম, ‘আপনাকে সেই সমস্ত পাবলিক প্লেসে লোকজন তো ঘিরে ধরার কথা! কীভাবে ম্যানেজ করেন?’ তার জবাব ‘... না, তেমন অসুবিধা হয় না। রাতের বেলা তো। অন্ধকারে পৌঁছে যাই...।’ হ্যাঁ, তিনি সুফি সাধক-আউলিয়াদের দরগাহে যেতেন। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট অঞ্চল উল্লেখযোগ্য। নামাজ, জিয়ারত, এবাদত-বন্দেগি ভালোবাসতেন। তার অনুজ সহোদর ইরফান চৌধুরীর সঙ্গেও এ ব্যাপারে আমার বিশদ আলাপ হয়েছে। তো, যা বলতে চেয়েছি তিনি সংগীত সাধনার বাইরেও সুফি ভাবধারার ভেতরে একটি আধ্যাত্মিক জগতের অনুসন্ধানে পরিব্যাপ্ত ছিলেন। মানুষকে নিয়েই ছিল তার সংগীত, প্রেম, এবাদত সবকিছু। নবীনদের অগ্রযাত্রা দেখতে চাইতেন। নিজেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অসংখ্য মানুষের জন্য। তপন চৌধুরীর প্রথম ক্যাসেটের সবগুলো গান তারই সুর ও সংগীত পরিচালনায় সৃষ্টি হয়। অনেক শিল্পীকে তিনি যতœ করে গড়ে তুলেছেন। তারা সংখ্যায় এত বেশি যে, সবার নাম বলা প্রায় অসম্ভব। তথাপি দুজনের নাম বলতে চাই। একজন পার্থ বড়ুয়া। অন্যজন হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল। নিজের সম্বন্ধে তার বিশ্বাস ছিল এটুকুই যে, তিনি মাছ-ভাতপ্রিয় একজন সাদামাটা বাঙালি এবং বাংলাদেশের সংগীতশিল্পের একজন ক্ষুদ্র কর্মী। এমন বিনয়, বিশ্বাস ও চর্চার ফলে পাশ্চাত্যের প্রথাগত রকস্টার এবং তার আদবকেতা কখনোই একই ধাঁচের ছিল না। একই রকম হওয়ার কথাও নয়। রকস্টার হওয়া সত্ত্বেও তিনি অত্যন্ত বিনয়ী ও সমাজসচেতন মানুষ ছিলেন। শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ বিভিন্ন কর্মকা-ের সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা যেমন সামাজিক দায়বোধসম্পন্ন পেশাজীবী; একইভাবে তিনিও তা-ই। বস্তুত এরূপ বিশ্বাস ও দায়বদ্ধতা নিয়েই তিনি সারা জীবন কাজ করেছেন। অবশ্য এইসব সূক্ষ্ম ব্যাপার সর্বস্তরের মানুষের বোঝার কথা নয়। ফলত, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তাকে একজন মায়েস্ত্রো গিটারিস্ট এবং সংগীতশিল্পী হিসেবেই বেশি ভালোবাসেন। কার্যত এটিই স্বাভাবিক।
মানুষটি নেই। দেখতে দেখতে প্রায় পাঁচ বছর হতে চলল। তার গিটারগুলো স্তব্ধ, নির্বাক ̶ যেন সারি করে রাখা একেকটি শোকের স্মারক। যেন সুখ-দুঃখে মোড়ানো একেকটি সহস্র গল্পের মনুমেন্ট। ব্যাখ্যাতীত। তবু রোজকার ‘ঘুম ভাঙা শহরে’ (গীতিকার: শহীদ মাহমুদ জঙ্গী) কত শত ঘরে তিনি ঠিকই বেজে ওঠেন। একটি গানের মধ্যে তিনি ব্যক্ত করেছেন:
“যে মানুষটি হারিয়ে যায়,
বের করা যায় না তাকে খুঁজে...”
(গীতিকার: বাপ্পী খান)
এরও আগেই তিনি গেয়েছেন:
“এই রুপালি গিটার ফেলে
একদিন চলে যাব দূরে, বহুদূরে...
সেদিন চোখে অশ্রু তুমি রেখো
গোপন করে...”
(গীতিকার : কাওসার আহমেদ চৌধুরী)
আইয়ুব বাচ্চুর গানের মধ্যে গভীর কষ্ট নিয়ে অনেক দূরে চলে যাওয়া বা হারিয়ে যাওয়ার যে রকম দুর্নিবার আকুতি আমরা উপলব্ধি করি, তদ্রƒপ মর্মন্তুদ অভিব্যক্তি দেশের অপরাপর সংগীতশিল্পীর মধ্যে বিরল। শিল্পে ট্র্যাজেডি বা বিরহ-ব্যঞ্জনার শক্তি অপরিসীম।
আইয়ুব বাচ্চুর পুরো জীবনজুড়েই ছিল এক গভীর আবেগমথিত সংগীত-সাধনা। তিনি গিটার এবং গানের সঙ্গে নিজেকে একীভূত করে রেখেছিলেন আমৃত্যু। আমাদের জেনারেশনের কিশোরবেলার সমান্তরালে তার সংগীতজীবনের নিজস্ব পথ রচিত হয়। ফলত, আমাদের কৈশোর আর প্রথম যৌবনে বেড়ে ওঠার নানা বাঁকে, যাপিত জীবনে, স্মৃতির গহিনে তিনি মিশে আছেন, থাকবেন। এগুলো সহজ ব্যাপার নয়। সব শিল্পীর তকদিরে এমন রুহানি আলোর দেখা মেলে না। আইয়ুব বাচ্চুর এ এক অসামান্য অর্জন, বলাই বাহুল্য। বাংলাদেশে তো বটেই এ উপমহাদেশের মানুষের কাছে গিটার নামক ইন্সট্রুমেন্টের মোজেজা বোঝানোর ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন প্রকৃত অ্যাভাঁগার্দ শিল্পী। আমরা সবাই তার গান এবং গিটারবাদন শুনেছি। নানাভাবে দেখেছি। কিন্তু কেউ সেভাবে হয়তো ভাবিনি।
এই ভূখণ্ডে ক্ষণজন্মা একজন আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন। প্রবলভাবে ছিলেন। সবটুকু হিম্মত নিয়েই বেঁচে ছিলেন। এখন তিনি নেই। তার মতো আর কেউই নেই...। আইয়ুব বাচ্চুর গীতিকবিতা, গান, গিটারের সুর, সংগীত ̶ সবকিছুই আছে, থাকবে। তার সৃষ্টিকর্মের মধ্য দিয়ে কোটি কোটি শ্রোতাদের মধ্যে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তিনি অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার বহুমাত্রিক গানের ভাণ্ডারের দিকে মনোযোগ দিলে বিস্ময় জাগে। মানুষটি কী পরিমাণ কাজ করেছেন! এখন যে ধরনের হাইব্রিড-সময় চলছে বা যেরকম ‘শর্টকাটের যুগ’ এসেছে, তাতে আইয়ুব বাচ্চুর মতো বহুমাত্রিক প্রতিভাসম্পন্ন কালজয়ী সংগীত-সাধক তৈরি হওয়া প্রায় অসম্ভব।
১৯৯৬ সাল। তখন আইয়ুব বাচ্চুর যুগান্তকারী ক্যাসেট ‘কষ্ট’ রিলিজ হয়েছে। নাম-যশ ও খ্যাতির চূড়ায় তিনি। এলআরবি এবং সলো ক্যারিয়ার দুটোতেই বিস্ময়কর সাফল্য লাভ করেছেন। তো, একদিন পূর্বনির্ধারিত দিন মোতাবেক আমি বেইলি রোডের অডিও আর্ট স্টুডিওতে যাই। বাড়ন্ত দুপুর। ভাইজান বেশ খোশমেজাজে, ফুরফুরে আছেন। তার পরিধানে রয়েছে চিরদিনের প্রিয় কালো টি-শার্ট আর নীল জিন্স। মাথায় কালো হ্যাট। স্টুডিওতে কাজ করছেন। কাজ মানে, চেয়ারে বসে তিনি গিটার বাজাচ্ছেন। আমাকে বললেন : ‘বসো, কাজটা সেরে নিই’। আমি বসে মুগ্ধ হয়ে শুনতে থাকি তার গিটারের যন্ত্রণাদগ্ধ সুর (১৯৯৩ সালে আইয়ুব বাচ্চু’র সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ঘটে তার মৌচাকের বাসায়। কিন্তু কনসার্ট ছাড়া তার সান্নিধ্যে এসে কোনোদিন গিটার শোনার সুযোগ মেলেনি। সেদিনই প্রথম)। আইয়ুব বাচ্চুর ‘কষ্ট’ নিয়ে সেদিন বেশিরভাগ আলাপ হয়। তিনি শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলেন। জন্মভূমি বীর চট্টলার কয়েকজন প্রিয় মানুষের খবর নিলেন। তারপর এক ফাঁকে স্টুডিওর খিদমতগার মারফত ফাস্টফুড আনালেন। দুজনে খেলাম। আমার ব্যাকপ্যাকে স্কেচবুক, পেন্সিল, কালিকলম, ইরেজার ইত্যাদি শিল্প-সরঞ্জাম ছিল। যথারীতি থাকে। আমি ভাইজানের একটি রেখাচিত্র আঁকতে চাইলাম। তিনি বললেন : ‘আজ না রে, আরেকদিন’। তারপর তিনি নিজেই স্কেচবুক চেয়ে নিয়ে দারুণ ক’টা কথা লেখেন। দেখি, চমৎকার হস্তাক্ষরে লেখা একটি মায়াময় চিঠি হয়ে গেল তা।
লেখাটির ভেতর একটি শব্দ আছে ‘এতদূর’। শব্দটি বুকের ভেতর হু হু করে। উড়ে যায় দূর অজানায়...। আইয়ুব বাচ্চু একজীবন ‘কষ্ট’ নিয়ে ‘এতদূর’ চলে গিয়েছেন যে, এ জীবনে আর কোনোদিন তার সঙ্গে মোলাকাত হবে না...।
লেখক : চিত্রশিল্পী, শিক্ষক ও গবেষক- বঙ্গীয় শিল্পকলা চর্চার অন্তর্জাতিক কেন্দ্র।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদন্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর রাজধানীর শাহবাগ ও বায়তুল মোকাররমে এবং কক্সবাজারের চকরিয়া ও চট্টগ্রামে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় চকরিয়ায় একজন নিহত ও পুলিশসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় চট্টগ্রামে ৩০ জনসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ।
এদিকে সাঈদীর মরদেহ গতকাল মঙ্গলবার পিরোজপুর বাইপাস সড়কে সাঈদী ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণে অবস্থিত বায়তুল হামদ জামে মসজিদের পাশে দাফন করা হয়েছে। সকাল ১০টার দিকে সাঈদীর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স পুলিশি পাহারায় সাঈদী ফাউন্ডেশন মাঠে পৌঁছায়। সাঈদীর ছোট ছেলে মাসুদ সাঈদী ঢাকা থেকে পিরোজপুরে পৌঁছতে দেরি হওয়ায় জানাজা দুপুর ১টার দিকে শুরু হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারির মধ্যে অনুষ্ঠিত জানাজায় বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের প্রিজন সেলে মারা যান তিনি।
শাহবাগ রণক্ষেত্র : প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, সোমবার রাতে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশের আগ থেকেই বিএসএমএমইউ হাসপাতালের বাইরে জামায়াত ও শিবিরের শত শত সমর্থক জড়ো হতে থাকেন। রাত পৌনে ৯টার দিকে তার মৃত্যুর খবর জানাজানি হলে হাসপাতালে জামায়াত সমর্থক জড়ো হন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভ করে ‘সাঈদীকে মেরে ফেলা হয়েছে’ জানিয়ে শাহবাগে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানায়। এরপর সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী উপস্থিত সমর্থকদের শান্ত থাকতে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সহায়তা করার অনুরোধ করেন।
মাসুদ সাঈদী জানান, প্রশাসনের কিছু বাধ্যবাধকতা থাকায় ঢাকায় জানাজা করতে অনুমতি দেওয়া হয়নি। তার বাবার লাশ পিরোজপুর নেওয়া হবে এবং সেখানেই জানাজা হবে। এরপর রাত ৩টার সময় সাঈদীর মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতাল থেকে বের হতে চেষ্টা করলে উপস্থিত থাকা জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা বাধা দেন। সমর্থকরা দাবি করেন, সাঈদীর জানাজা ঢাকায় করতে হবে। এ সময় পুলিশ কর্মকর্তারা সমর্থকদের বুঝিয়ে লাশবাহী গাড়িটি বের করার চেষ্টা করেন। পুলিশের সঙ্গে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে সমর্থকরা সাঈদীকে বহন করা গাড়ির কাচ ভেঙে ও চাকা নষ্ট করে দেন। ভোর ৫টার দিকে পুলিশ হাসপাতালে ক্ষতিগ্রস্ত লাশবাহী গাড়িটি রেখেই ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যায়। তখনো হাসপাতাল ও রাস্তার দুইপাশে হাজার হাজার জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এর কিছুক্ষণ পরেই পুলিশ হাসপাতালের বাইরে থেকে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। হাসপাতালের ভেতরে থাকা নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে পুলিশ ক্ষতিগ্রস্ত অ্যাম্বুলেন্সটি বাইরে নিয়ে আসে ও আরেকটি অ্যাম্বুলেন্সে সাঈদীর মরদেহ স্থানান্তর করে। জামায়াত সমর্থকরা হাসপাতালের বাইরে ইটপাটকেল ছুড়ে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন এবং রাস্তায় থাকা পুলিশের দুটি মোটরসাইকেলে আগুন দেন। ভোর ৬টার দিকে পুলিশি পাহারায় পিরোজপুরের উদ্দেশে যাত্রা করে সাঈদীর মরদেহ বহন করা গাড়িটি।
বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষ : সাঈদীর লাশ পিরোজপুরে নিয়ে যাওয়ার পর সমর্থকদের একটি অংশ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে অবস্থান নেয়। গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে তারা শোক দিবসের দোয়া চলাকালে সাঈদীর গায়েবানা জানাজার চেষ্টা করে। এ নিয়ে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। পরে সাঈদী সমর্থকরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করে বেশ কয়েকজনকে আটক করে।
ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান জানান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জাতীয় শোক দিবসের দোয়া মাহফিল হচ্ছিল। এমন সময় সাঈদীর অনুসারী ও জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরা হট্টগোল শুরু করেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে জামায়াতের অনুসারীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ।
জোহর নামাজে অংশগ্রহণ করেছেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নামাজ শেষে শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়ার ঘোষণা দেন মসজিদের ইমাম। তখন জামায়াতের নেতাকর্মীরা এ ঘোষণার প্রতিবাদ করেন। তারা দাবি তোলেন, সাঈদীর আত্মার শান্তি কামনা করেও দোয়া করতে হবে। এখান থেকেই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার সূত্রপাত হয়।
পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দীন মিয়া বলেন, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বায়তুল মোকাররম মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে ১২ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে তদের যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চকরিয়া-পেকুয়ায় গায়েবানা জানাজা শেষে পুলিশের ওপর হামলা : আমাদের পেকুয়া-কুতুবদিয়া সংবাদদাতা জানান, কক্সবাজার জেলার চকরিয়ায় সাঈদীর গায়েবানা জানাজা কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে মুসল্লিদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় একজন নিহত হয়েছে এবং চকরিয়া থানার পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ জানাজায় অংশ নেওয়া অর্ধশত জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ ছাড়া পুলিশভ্যান ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার গাড়িও ভাঙচুর করেছেন তারা। সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তি চকরিয়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল ফজলের পুত্র জামায়াতকর্মী ফোরকান আহমেদ বলে জানা গেছে।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাবেদ জানান, চকরিয়ায় সাঈদীর গায়েবানা জানাজা শেষে একদল লোক বিনা উসকানিতে উত্তেজনামূলক সেøাগান দিয়ে পুলিশের ওপর বেপরোয়া হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীরা একটি গাড়িও ভাঙচুর করেছে। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ পুলিশ সদস্য। আহতদের পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
চট্টগ্রামে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ : গায়েবানা জানাজা কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম নগরে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের কয়েক দফা সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল ওয়াসা মোড়ে জমিউতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজার চেষ্টা করেন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিত-ায় জড়িয়ে পড়েন এবং বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা।
একপর্যায়ে জানাজার জন্য মসজিদে ঢুকতে বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলাকালে আশপাশের এলাকায় মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জামায়াত-শিবিরকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ঘটনাস্থল থেকে ৩০ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ওসি জাহিদুল কবীর। যাচাই-বাছাই শেষে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান ওসি।
নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পুলিশের অনুমতি ছাড়া জমিউতুল ফালাহ মসজিদ মাঠে তারা সাঈদীর গায়েবানা জানাজার পড়ার ঘোষণা দেয় জামায়াত। কিন্তু এ ব্যাপারে তারা সিএমপি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি। অনুমতি না দিয়ে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। জামায়াত-শিবিরের লোকজন সমবেত হয়ে নাশকতা করার চেষ্টা করেছে। নিরীহ মানুষ ও দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের পর হামলা চালিয়েছে। সেটা আমরা তাদের করতে দিইনি।’
জামায়াতের তান্ডবের বিষয়ে ডিএমপির সংবাদ সম্মেলন : ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, জামায়াত-শিবির যে তাদের চরিত্রটা পাল্টায়নি, ভোররাতে তা-ব চালিয়ে এটা তারা আবারও প্রমাণ করল। বিএসএমএমইউ ও শাহবাগে অবস্থান নেওয়া কয়েক হাজার জামায়াত-শিবিরকর্মী দাবি তোলে যে, তারা জানাজা পড়ে তারপর মরদেহ নিতে চায়। তখন আমরা তাদের বলি, আপনারা এখানে জানাজা পড়তে পারেন, কারণ জাতীয় শোক দিবস, আমাদের ব্যস্ততা আছে, আপনারা এখন জানাজা পড়ে মরদেহ নিয়ে যেতে পারেন। রাত সোয়া ২টার দিকে তারা জানাজার পরিবর্তে মোনাজাত করে আধা ঘণ্টা। তারা বলে, আমরা জানাজা পড়ব না মোনাজাত করেছি, পরে আমরা গায়েবানা জানাজা পড়ব। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা মোনাজাত করে। এরপর যখন মরদেহ গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়, তখন হাজার হাজার জামায়াত-শিবির লাশবাহী গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। তারা কোনোমতে এই মরদেহ পিরোজপুরে নিয়ে যেতে দেবে না। এ সময় লাশবাহী গাড়ির সঙ্গে থাকা পুলিশ অফিসার ও পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে জামায়াত-শিবির। হামলায় ডিসি রমনাসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র অফিসার আহত হন। তারা পুলিশের চার থেকে পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং দুটি মোটরসাইকেল আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপরও আমরা ধৈর্যসহকারে এ তা-ব সহ্য করি এটা ভেবে, স্বজনরা একটা মরদেহ নিয়ে যেতে চাচ্ছে নিয়ে যাক। ফজরের নামাজের পর আবারও অনুমতি দেওয়া হলো জানাজা পড়ার। কিন্তু ফজরের নামাজের পরে তারা আমাদের অফিসারদের বের করে বিএসএমএমইউ দখলে নিয়ে নিল। তারা মরদেহ পিরোজপুর নিতে দেবে না। তারা ফেসবুকে প্রচার করতে শুরু করল সারা দেশ থেকে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের শাহবাগে আসার জন্য। তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় তাদের ওপর আমরা অত্যন্ত সীমিত আকারে শক্তি প্রয়োগ করে ছত্রভঙ্গ করে দিই।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের ওষুধের দোকানিদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। গত সোমবার রাত ৯টার দিকে দফায় দফায় হামলা-পাল্টা হামলার সময় ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও এতে জড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন তাদের সাতজন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে দোকানদারদের দাবি, তাদের ১৫ জন আহত হয়েছেন।
হামলাকারীদের গ্রেপ্তার দাবিতে সোমবার রাত ১০টা থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীরা। দাবি না মানলে আজ বুধবার থেকে কঠোর কর্মসূচি দেবে বলে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।
অন্যদিকে, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ওষুধের দোকানগুলো সোমবার রাত থেকে বন্ধ।
জানা গেছে, কলেজের ৩২তম ব্যাচের একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ওষুধের দোকানদার ১০ শতাংশ হারে কম না রাখার জের ধরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী, ওষুধের দোকানদার ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যায় হাসপাতালের সামনের মেসার্স বিপ্লব মেডিসিন কর্নারে সবুজ সরকার নামে মেডিকেল শিক্ষার্থী কিছু ওষুধ কিনতে যান। ওষুধের দাম আসে ৭০ টাকা। ১০ শতাংশ কমিশন দিয়ে ৬৩ টাকা রাখার অনুরোধ জানান ওই শিক্ষার্থী। দোকানদার কমিশন দিতে অস্বীকার করলে এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বাগবিত-া হয়। এর কিছুক্ষণ পর আরও কিছু মেডিকেল শিক্ষার্থীকে নিয়ে ওই দোকানে এসে কেন ওষুধের দাম কম রাখা হলো না এজন্য চাপ দেওয়া হয়। একপর্যায়ে আশপাশের ওষুধের দোকানদাররা এগিয়ে এলে উভয় পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। মেডিকেলের তিন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর ক্যাম্পাসে পৌঁছালে আরও শিক্ষার্থী এসে দোকানে হামলা চালান। খবর পেয়ে সেখানে সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ওসির নেতৃত্বে একদল পুলিশ যায়। তারপরও দফায় দফায় হামলা চালান মেডিকেল শিক্ষার্থীরা। পরে ওষুধের দোকানদারদের সঙ্গে এলাকাবাসী একত্র হয়ে পাল্টা হামলা করলে সংঘর্ষ তুমুল আকার ধারণ করে।
হামলা-পাল্টা হামলার একপর্যায়ে সেখানে যান খুলনা সিটি করপোরেশনের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর হাসান ইফতেখার চালু, খুলনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দ্বীন-উল ইসলাম, উপাধ্যক্ষ ও খুলনা বিএমএর সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মেহেদী নেওয়াজ, বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এস এম কবির উদ্দিন বাবলুসহ চিকিৎসক ও বিসিডিএস নেতারা।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি সাইফুল ইসলাম অন্তর ও সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জোহা সজিব বলেন, ওষুধের দোকানদারদের হামলায় একজন চিকিৎসক ও ছয়জন মেডিকেল শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তারা হলেন ডা. হাসিব, সবুজ সরকার, হাসান ফেরদৌস, মেহেদী, আসিফ, তাহসিন ও নাসির ফুয়াদ। তাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজন বলে দাবি করেন অন্তর।
অন্যদিকে বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির পরিচালক মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের হামলায় ওষুধের দোকানের মালিক-কর্মচারীদের মধ্যে প্রায় ১৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন আল-আমিন, বিপ্লব, শাওন, ইসরাফিল, হৃদয়, সোহাগ, মোস্তফা ও মাসুদুর রহমান মাসুদ।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি সাইফুল ইসলাম অন্তর বলেন, ‘যারা আমাদের মেডিকেল শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মেরে আহত করেছেন, তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি।’ তবে তারা গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা করেননি বলে জানান।
সোনাডাঙ্গা থানার ওসি মমতাজুল হক বলেন, ‘আমরা দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু কোনো সমাধানে আসতে পারিনি। এখনো পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।’
অর্থমন্ত্রী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল বলছেন, আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে পৃথিবীর শীর্ষ ২০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দায়িত্ব নিয়েছেন তখন অর্থনীতিতে আমাদের দেশের অবস্থান ছিল ৬০ নম্বর। আর এখন বাংলাদেশ সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে ৩৫ নম্বর। যা সম্ভব হয়েছে এ বঙ্গবন্ধুকন্যার জন্য। সেই সঙ্গে বাজেটে আকার বৃদ্ধি পেয়েছে দশগুণ। বঙ্গবন্ধু শুধু একটি নাম নয়, তিনি ছিলেন, আছেন এবং তিনি থাকবেন। তিনি আমাদের অহংকার। আমাদের মধ্যেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থাকবেন আজীবন। আমরা সবাই মিলে তার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করব।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় শোক দিবসে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সব শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের সবার মধ্যেই বেঁচে আছেন। আমরা সবাই মিলে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত থাকব।
এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন দক্ষিণ জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথি, সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন চৌধুরী, সহসভাপতি ইলিয়াস মিয়া, সহসভাপতি নাঙ্গলকোট উপজেলা চেয়ারম্যান সামছুউদ্দিন কালু, সহসভাপতি এজেডএম শফিউদ্দিন শামীম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু তাহের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ করিম মজুমদার ও শিল্প-বাণিজ্য সম্পাদক এনামুল হক মিয়াজী প্রমুখ।
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের জামালপুর ইউনিয়নের শ্রীকলা গ্রামে মায়ের সঙ্গে নানার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল দেড় বছরের রুহান। গত মঙ্গলবার বাড়ির উঠানে খেলা করছিল শিশুটি। পরে বাড়িতে না দেখে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে তাকে পাশের পুকুরে ভাসতে দেখেন স্বজনরা। পুকুর থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রুহানকে মৃত ঘোষণা করেন।
একইদিন হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের আউশকান্দি ইউনিয়নের সদরাবাদ গ্রামে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তারা হলো সদরাবা গ্রামের মালেক মিয়ার ছেলে ইকবাল হোসেন, বাবুল হোসেনের ছেলে রাফি আহমেদ। পরিবারের সদস্যদের অগোচরে বাড়ির পাশের পুকুরে গোসল করতে নেমে তলিয়ে যায় ইকবাল ও রাফি। খোঁজখুঁজির একপর্যায়ে পুকুরে তাদের লাশ দেখতে পান স্বজনরা।
দেশে কোনো না কোনো প্রান্তে প্রতিদিনই এরকম ঘটনা ঘটছে। গত এক মাসে তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা একশর বেশি। চলতি বছর জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬১।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো দুর্ঘটনার মধ্যে পানিতে ডুবে মৃত্যু তালিকার প্রথম দিকেই থাকবে। এটি একটি অবহেলাজনিত জাতীয় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাস্থ্য ও তথ্য জরিপ ২০১৬ অনুযায়ী, বছরে ১ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১৪ হাজার ৪৩৮ শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এ সংখ্যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। এসব মৃত্যুর ৮৮ শতাংশই বাড়ি থেকে ২০ মিটারের মধ্যে ঘটে। পানিতে ডোবার ঘটনা বেশি ঘটে মিঠাপানিতে, যেমন বাড়ির পাশের পুকুর-দীঘি-ডোবায়। খেলতে খেলতে কিংবা গ্রামাঞ্চলে হাত-মুখ ধুতে গিয়েও পানিতে ডুবে মৃত্যুর অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। আবার কখন ডুবে যাওয়া শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে একই সঙ্গে দুজন বা তারও বেশি মৃত্যুর ঘটনাও আছে। এ ছাড়া নদী বা খালে ডুবেও মৃত্যুর ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে।
দেশে দীর্ঘদিন ধরে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু নিয়ে কাজ করছে গণমাধ্যম উন্নয়ন ও যোগাযোগবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘সমষ্টি’। সংবাদপত্রে প্রকাশিত পানিতে ডুবে মৃত্যুর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তারা। সংগঠনটির হিসাবে, ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত পানিতে ডুবে ৩ হাজার ৮৪৬ জন মারা গেছে। এর ৮৮ শতাংশই ৫-৯ বছর বয়সী শিশু।
প্রতিষ্ঠানটির তথ্য বলছে, ২০২০ সালে মৃত্যু হয়েছিল ৮০৭ জনের। এর মধ্যে ৫ বছরের শিশু রয়েছে ২৬০টি। এর পরেই আছে ৫-৯ বছর বয়সী ২৮৭, ১০-১৪ বছর বয়সী ১০৬, ১৫-১৮ বছর বয়সী ৩০ জন। আর ১৮ বছরের বেশি বয়সী ১৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০২১ সালে মৃত্যু ছিল প্রায় দ্বিগুণ। ওই বছর পানিতে ডুবে মারা গেছে ১ হাজার ৩৪৮ জন। এর মধ্যে অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সী শিশুমৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৫৯৭। তার পরেই আছে ৫-৯ বয়সী ৩৮৭, ১০-১৪ বছর বয়সী ১০৬ ও ১৫-১৮ বছর বয়সী ৪৩ জন। এ ছাড়া ১৮ বছরের বেশি বয়সী তরুণ মারা গেছে ২১৫ জন।
২০২২ সালে মারা গেছে ১ হাজার ১৩০ জন। এ সময় অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সী শিশু মারা গেছে ৫৬৬ জন, যা মোট মৃত্যুর প্রায় অর্ধেক। অন্যদিকে ৫-৯ বছর বয়সী শিশু মারা গেছে ৩৬৩ জন। এরপরই ১০-১৪ বছর বয়সী ৯৩, ১৫-১৮ বছর বয়সী ৩৮ ও ১৮ বছরের বেশি বয়সী ৬৭ জন মারা গেছে।
২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে দেশে পানিতে ডুবে মারা গেছে ৫৬১ জন। এর মধ্যে ২৯০ জনের বয়স ছিল ৫ বছরের মধ্যে। ৫-৯ বছর বয়সী শিশু মারা গেছে ১৯৪ জন। ১০-১৪ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা ৪৮। ১৫-১৮ বছর বয়সী রয়েছে ৯ জন। এ ছাড়া ১৮ বছরের বেশি বয়সী মারা গেছে ১৩ জন।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের সব বিভাগেই পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার প্রায় কাছাকাছি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় চট্টগ্রাম বিভাগে। এরপরের অবস্থান ঢাকা বিভাগের। এ বিভাগে রাজধানী ঢাকাসহ প্রতিটি জেলায় গড়ে ৪০ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
বছর জুড়ে পানিতে ডুবে শিশু মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটলেও সাধারণত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যায়। এ সময় বর্ষার কারণে পুকুর, খাল-বিল ও নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার ফলে শিশুমৃত্যুর ঘটনা বেশি ঘটে। পানির উৎস বাড়ির যত কাছাকাছি থাকে, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি ততই বেড়ে যায়।
পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু নিয়ে ‘সমষ্টি’র পরিচালক মীর মাসরুর জামান রনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় আমরা যে তথ্য পাই সেখান থেকে এ প্রতিবেদন তৈরি করা। বাস্তবে চিত্র আরও ভয়াবহ। মাত্র ২৫ শতাংশ মৃত্যুর সংবাদ আমরা পেয়ে থাকি।’
তিনি বলেন, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর একটি বড় কারণ হচ্ছে পারিবারিক অসচেতনতা ও অবহেলা। শুধু বড় জলাশয় বা পুকুরে ডুবে মৃত্যু হয় বিষয়টা এমন নয়। অনেক সময় বালতির পানিতে ডুবেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ দুর্ঘটনাগুলো ঘটে থাকে পরিবার বা বাবা-মায়ের অসচেতনতার কারণে। ছয় বছরের বেশি বয়সী একটি শিশুর মৃত্যু হয় পানিতে ডুবে। অথচ এ বয়সের শিশুদের সাঁতার শেখানোর কথা। যদি তারা সাঁতার জানত তাহলে এ মৃত্যু অনেকাংশে কমে আসত।
বাংলাদেশ সরকার ২০১১ সালের স্বাস্থ্যনীতিতে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুকে একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। শিশু নিরাপত্তায় পাইলট প্রকল্পে পানিতে ডুবে মৃত্যুও বিবেচনা করলেও সরকারের বাস্তবায়িত প্রকল্প এখনো সীমিত। গত বছর সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশুযতœ কেন্দ্রের মাধ্যমে ‘শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং শিশুর সাঁতার সুবিধা প্রদান’ নামে কর্মসূচি নিয়েছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে ২৭১ কোটি ৮২ লাখ ৫৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘ইনটেগ্রেটেড কমিউনিটি বেইজড সেন্টার ফর চাইল্ড কেয়ার, প্রটেকশন অ্যান্ড সুইম-সেইফ ফ্যাসিলিটিজ’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সারা দেশে ১৬টি জেলার ৪৫টি উপজেলায় আট হাজার শিশুযত্ন কেন্দ্র পরিচালনা করা হবে। এসব যতœকেন্দ্রে কাজ পাবে ১৬ হাজার গ্রামীণ নারী। প্রতিটি যতœকেন্দ্রে ২৫ শিশুকে ভর্তি করা হবে। একই সঙ্গে ৬-১০ বছর বয়সী শিশুদের সাঁতার শেখানো হবে।
মীর মাসরুর জামান বলেন, ‘শিশুমৃত্যু ঠেকাতে হলে শহর থেকে গ্রামপর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সেখানে প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি অথবা কমিউনিটির নেতাদেরও কাজে লাগানো যেতে পারে।’
তিনি বলেন, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু কমানোকে গুরুত্ব দিয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমির অধীনে প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। যদিও এসব প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে বেশিদিন হয়নি। প্রয়োজনে এ ধরনের প্রকল্পকে সরকারীকরণ করতে হবে।
শিশু-কিশোর সংগঠক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদীর বাইরেও খাল-বিল, জলা, ডোবা-পুকুর এখন যথেষ্ট রয়েছে। ফলে পানির সঙ্গে এ দেশের মানুষের মিলেমিশে বসবাস করতে হবে। এজন্য সাঁতার শেখার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে স্কুলের কারিকুলামের মধ্যেই থাকবে সাঁতার শেখা।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার একটা কথা বলি, আনন্দের মধ্যে এবং চারপাশের চেনা প্রতিবেশ ও পরিবেশের মধ্যে দিয়েই শিশুকে শিক্ষা দিতে হবে।’
ডা. লেলিন বলেন, ‘একটি শিশু যখন স্কুলে গেল সেখানেই সাঁতার শেখানো সম্ভব। কারণ দেশের সব জায়াগায় সাঁতার শেখানোর যথেষ্ট উপকরণ রয়েছে। এ ছাড়া যেসব মহানগর বা শহরে সাঁতার শেখানোর জায়গার অপ্রতুলতা রয়েছে, সেসব জায়গায়ও বিশেষ ব্যবস্থায় সাঁতার শেখানোর ব্যবস্থা করতে পারে। প্রাথমিক জীবনের অঙ্গ হিসেবে শিক্ষার শুরু থেকেই সাঁতার শেখানোটা বাধ্যতামূলক করলে এ সমস্যার বড় অংশ সমাধান করা যাবে। দ্বিতীয়ত অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। যেসব জায়গায় ছোট শিশু রয়েছে সেখানে জলাধারগুলোকে চারপাশে ঘেরাও দিতে হবে। যেন শিশু বাইরে থাকলেও সুরক্ষিত থাকে। এ ছাড়া সরকারকে এ বিষয়ে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। যে প্রকল্পগুলো রয়েছে, সেগুলো যেন কার্যকর ভূমিকা রাখে সেটা নজরদারিতে রাখতে হবে।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেই হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি দেবে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি। এক দফার যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে থাকা দলগুলোও এই কর্মসূচি পালন করবে। চলতি মাসে অনুষ্ঠিত দলটির স্থায়ী কমিটির দুটি বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বিএনপি সূত্রের দাবি। যার প্রতিফলন দেখা গেছে গতকাল বৃহস্পতিবার বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতেও।
সূত্রের দাবি, দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অন্তত তিন নেতা হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন নেতাকর্মীদের।
সূত্রগুলো বলছে, নভেম্বরের যেকোনো সময় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে ওই তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। বিএনপি চাচ্ছে তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক ফয়সালা নিশ্চিত করতে। এ লক্ষ্যে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বড় ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণার চিন্তা রয়েছে তাদের। এসব কর্মসূচির মধ্যে ঢাকা ঘেরাও, সচিবালয় ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘিরে কর্মসূচিসহ নানা ধরনের কর্মসূচি নিয়ে দলটির অভ্যন্তরে আলোচনা রয়েছে।
জানা গেছে, এসব কর্মসূচিতে সরকার পক্ষ বাধা দিলে ‘যদি পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠে’ তাহলে এক পর্যায়ে অসহযোগ আন্দোলনের দিকেও যেতে পারে দলটি। বিএনপি নেতারা বলছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে দুই ধাপে কর্মসূচি সাজিয়েছে বিএনপি। প্রতিটি ধাপের শেষ দিনের কর্মসূচি হবে শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক। সরকার কঠোর হলে কর্মসূচিও কঠোর হবে। তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত যতটুকু সম্ভব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ রাখতে চাইবে দলটি। পরিস্থিতি বিবেচনায় তফসিলের আগেই হরতালের কর্মসূচি আসতে পারে। তবে দলটির এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হচ্ছে, তফসিল ঘোষণা হলেই তারা হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
এই কর্মসূচি ঘোষণার আগে আন্দোলনে থাকা সমমনা দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করা হবে। কীভাবে কর্মসূচি সফল করা যায় তা নিয়ে নতুন করে ছক সাজানো হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে হরতালের মতো কর্মসূচির ইঙ্গিত দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যতদিন আপনি (শেখ হাসিনা) থাকবেন দেশ আরও সংঘাতের দিকে যাবে, খারাপের দিকে যাবে এবং সংঘাত আরও বাড়তে থাকবে। এখনো তো সংঘাত শুরু হয়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগ যেভাবে এগোচ্ছে তাতে এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে জনগণ রুখে দাঁড়াবে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘শত প্ররোচনার মুখেও আমরা একেবারে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। এটার শেষ পরিণতি কী হবে তা নির্ভর করবে সরকারের আচরণ কী হচ্ছে তার ওপর।’
একই দিন পৃথক কর্মসূচিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী হরতাল কর্মসূচি ঘোষণার কথা বলেন। ভৈরব বাসস্ট্যান্ডে সিলেট অভিমুখী রোডমার্চ কর্মসূচির প্রথম পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমরা হরতাল করিনি, কিন্তু করব না সেই প্রতিজ্ঞাও করিনি। জনগণের চাপের কারণে হরতাল অবরোধ যা যা করা দরকার, গণতান্ত্রিক পন্থায় এই অবৈধ সরকারকে মাটিতে বসিয়ে দেওয়ার জন্য দল, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে সব ধরনের কর্মসূচি হবে। সেই জন্য আপনারা প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। আমাদের এবারের আন্দোলন ডু অর ডাই। হয় মরব, নয়তো লড়ব।’
আর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের উদ্যোগে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সম্মেলনে প্রধান অতিথির বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘জনগণকে সম্পৃক্ত করে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছি। হরতাল অবরোধ শান্তির প্রবক্তারাই চালু করেছে। সরকার যদি আমাদের রোডমার্চ, মিছিলে জনগণের সম্পৃক্ততায় কোনো বার্তা না পায় বা না বোঝে তাহলে দিনের পর দিন হরতাল অবরোধ করে দেশ অচল করে দেওয়া হবে। সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।’
জাতীয় সংসদের পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে। চলতি সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হবে আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি। এর আগের ৯০ দিন; অর্থাৎ আগামী ১ নভেম্বর থেকে ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করতে হবে। সাধারণত নির্বাচনের ৪০ থেকে ৪৫ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করা হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর। মাঝখানে ৪৫ দিন সময় রেখে ভোটের তারিখ ছিল ২৩ ডিসেম্বর। তবে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির মুখে ভোটের তারিখ এক সপ্তাহ পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর করা হয়েছিল। দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর। ভোটগ্রহণ করা হয়েছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। তফসিল ঘোষণা ও ভোট গ্রহণের মধ্যে সময় ছিল ৪০ দিন।০
আশ্বিন মাসের সন্ধ্যায় ঢাকায় নামল শ্রাবণের বৃষ্টি। আকাশ ভেঙে পড়া বর্ষণে তলিয়ে গেছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তা। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে টানা কয়েক ঘণ্টার মুষলধারে বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকার রাস্তা তলিয়ে যায়। কোথাও কোথাও বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। মাঝরাত পর্যন্ত ওইসব সড়কে থমকে থাকে গাড়ি। অনেকেই যেমন বৃষ্টির কারণে কর্মস্থলেই আটকা পড়েন তেমনি অনেকের অপেক্ষার প্রহর কেটেছে জলমগ্ন সড়কে গাড়িতে বসেই।
এদিকে মিরপুরে সড়কের পাশে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও কয়েকজন। নিহতদের মধ্যে তিনজন একই পরিবারের। তাদের মধ্যে এক শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে মিরপুর মডেল থানার পুলিশ। গতকাল দিনভর মেঘলা আকাশ ও থেকে থেকে বৃষ্টির পর সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি বাড়তে শুরু করে। সঙ্গে থেমে থেমে শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ঢাকায় সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, এদিন সন্ধ্যার পর ঢাকা ছাড়াও রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে বৃষ্টি হয়েছে। আর ঢাকায় বৃষ্টি হতে পারে আজও।
গতকাল রাতের বৃষ্টিতে ঢাকার ফার্মগেট, ধানমন্ডি, এলিফ্যান্ট রোড, নিউ মার্কেট, মিরপুর, বনানী এলাকার সড়ক পানিতে ডুবে যায়। রাজধানীর প্রায় সব সড়কে দেখা দেয় তীব্র যানজট। দীর্ঘ সময় স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় যানবাহনকে। অনেকে জানান, তাদের ব্যক্তিগত গাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। রাতে কখন তারা বাসায় ফিরতে পারবেন তা অনিশ্চিত।
জানা গেছে, মিরপুর ১০ নম্বরে প্রধান সড়কসহ অলিগলিতে কোমরসমান পানি জমেছে। পানি প্রধান সড়কে চলাচলরত প্রাইভেট গাড়ির ভেতরেও ঢুকে গেছে।
গ্রিন রোড, নর্থ ধানমন্ডিসহ আশপাশের সব গলিতে পানি জমেছে। সেখানকার গ্রিন লাইফ হাসপাতাল, সেন্ট্রাল হাসপাতাল এবং ল্যাবএইডে আসা রোগীরা পড়েছেন বিপদে। একই অবস্থা রাজধানীর মগবাজার, মালিবাগ, সিদ্ধেশ্বরী, বেইলি রোড এবং শান্তিনগরেও। মতিঝিলে রাতে লোক কম থাকলেও পানি হাঁটুর ওপরে উঠে গেছে।
হঠাৎ ভারী বৃষ্টির জন্য পথচারী ও ঘরমুখো মানুষরা মোটেও তৈরি ছিলেন না। এ সময় অনেকেই কাকভেজা হয়ে বাসায় ফেরেন আবার কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন যাত্রীছাউনি বা দোকানের নিচে। গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাংলা মোটর মোড়ে বাসে ৩০ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলেন ফাহাদ হোসাইন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, বৃষ্টি শুরু হলে একটি উঁচু ভবনের নিচে দাঁড়িয়েছিলাম। বৃষ্টি কিছুটা কমলে বাসে উঠি। আধা ঘণ্টা হলো বাস একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।
সরকার সৌরভ নামের একজন জানান, তার মোহাম্মদপুর থেকে শাহবাগ আসতে ৩ ঘণ্টার বেশি লেগেছে। ফেরার পথে বাংলা মোটর মোড়েই আটকে আছেন এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে।
গতকাল রাত সাড়ে ১২টার সময়ও গুগল ম্যাপে দেখা যায় রাজধানী জুড়ে তীব্র যানজটের সংকেত। বেশিরভাগ সড়ক রেড মার্ক ছিল সে সময়। গ্রিন রোড, মিরপুর রোডের ধানমন্ডি ২৭, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউসহ বেশ কয়েকটি সড়কেই ছিল যান চলাচল বন্ধের সংকেত। গুগলের তথ্য বলছিল, ওইসব এলাকায় সে সময় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ ছিল।
আহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ শুক্রবারও রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের বেশিরভাগ জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। এ সময় বজ্রপাতও হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
মিরপুরে চারজনের মৃত্যু : মিরপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও কয়েকজন। নিহতদের মধ্যে তিনজন একই পরিবারের। তাদের মধ্যে এক শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে মিরপুর মডেল থানার পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে মিরপুর-১ নম্বর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে আহতদের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এ দুর্ঘটনার বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেন মিরপুর থানার এসআই রুহুল আমিন। তিনি বলেন, বৃষ্টির মধ্যে রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন মিজান, তার স্ত্রী মুক্তা, তাদের মেয়ে লিমা এবং এই তিনজনকে বাঁচাতে যাওয়া যুবক অনিক। মৃত মিজান পেশায় সিএনজি অটোরিকশাচালক ছিলেন বলে জানা গেছে।
অভিষেকে ২৬ মিনিট খেলে দুই অ্যাসিস্টের অবদান রাখতে পেরেছিলেন নেইমার। আল হিলাল জিতেছিল। কিন্তু পর পর দুম্যাচ খেললেন পুরো সময়। তেমন কিছুই করতে পারলেন না। ড্র করেছে আল হিলাল আবার।
এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে শেষ দিকের গোলে ১-১ ড্র করে পরাজয় বাঁচিয়েছিল আল হিলাল। আজ সৌদি প্রো লিগে দামাক এফসির বিপক্ষে ম্যালকমের গোলে ৯ মিনিটে এগিয়ে গেলেও শেষপর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারেনি।
সাত ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে তবুও শীর্ষেই রইলো আল হিলাল।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক যাত্রীর কাছ থেকে মূল্য দেড় কোটি টাকা মূল্যের ১৭০০ গ্রাম স্বর্ণ উদ্ধার করেছে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টা ২৪ মিনিটে শারজাহ থেকে এয়ার অ্যারাবিয়ার ফ্লাইটে আসা মোহাম্মদ আলী নামের এক যাত্রীর রাইস কুকারে এসব স্বর্ণ পাওয়া যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার মো. আহসান উল্লাহ বলেন, আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ব্যাংকপাড়াখ্যাত মতিঝিল এখন মৃতপ্রায়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে না পারায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র সরে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা ঘোরানো মতিঝিলে আবাসিক ভবন, শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান তৈরি না হলে দেশের প্রধান এই বাণিজ্যিক অঞ্চল প্রাণ হারাবে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাদের মতে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় অবদান রয়েছে মতিঝিলের টাকার। শুধু তা-ই নয়, মতিঝিলে উপার্জিত অর্থে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, কানাডাসহ আরও অনেক দেশে। এখানকার উপার্জিত টাকা অনেকে জমা রেখেছেন সুইস ব্যাংকেও। শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মতিঝিলে। এ যেন মা কাঁকড়ার আত্মত্যাগের গল্প। মা কাঁকড়া বাচ্চাদের আগলে রাখে বুকের ভেতর; যেদিন বাচ্চাগুলো বের হয়ে আসে, সেদিন খোলস ছাড়া মা কাঁকড়ার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। মা কাঁকড়ার মতো দুঃখী ও ত্যাগী বাণিজ্যিক মতিঝিল।
ষাটের দশকে মতিঝিলে গড়ে ওঠে দেশের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট-সিবিডি)। সেই থেকে এখনো দেশের প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল মতিঝিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে সরকারি ৮টি, বেসরকারি ৪৫টি এবং বিদেশি ব্যাংক রয়েছে ৮টি। এ ছাড়া ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৮১টি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের বেশির প্রধান কার্যালয় চলে গেছে কারওয়ান বাজার, গুলশান-বনানী ও উত্তরায়। নতুন করে যেসব ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাচ্ছে, সেগুলোর প্রধান কার্যালয় মতিঝিলের বাইরে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মতিঝিলের আশপাশে পরিকল্পিত কোনো আবাসিক এলাকা, অভিজাত হোটেল, কাজের ফাঁকে অবসর কাটানোর মতো উন্মুক্ত স্থান, শপিং কমপ্লেক্স না থাকায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সুবিধার জন্য অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়গুলোও মতিঝিলের বাইরের এলাকা, অর্থাৎ কারওয়ান বাজার, গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে গড়ে উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর, মধুমিতা সিনেমা হল এবং ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এবং দিলকুশা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবন এবং বঙ্গভবনের পাশের এলাকাজুড়ে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল। বিশ্বের বাণিজ্যিক অঞ্চলের ভবনগুলো সুউচ্চ হয়ে থাকে। কিন্তু মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের পাশেই বঙ্গভবন। নিরাপত্তার কারণে বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর কোনো বহুতল ভবন করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, মতিঝিলের প্লটগুলোর ‘নন-রেসট্রিকটেড’ উচ্চতা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর সাড়ে চারতলার বেশি উচ্চতার ভবনের অনুমোদন মেলে না। ফলে মূল্যবান ওই প্লটগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারছেন না মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ জরাজীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণও রয়েছে কয়েকটি ভবন। একটির সঙ্গে অন্যটি লাগানো। দুটি ভবনের মাঝখানে উন্মুক্ত জায়গা নেই বেশিরভাগ ভবনের। দিলকুশা এলাকার বঙ্গভবন লাগানো ভবনগুলোর মাঝখানেও কোনো ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, মতিঝিল এলাকার ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে। ভাঙাচোরা এবড়োখেবড়ো সড়ক। সড়ক বিভাজকগুলো শ্রীহীন। এগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হয়নি। প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলে মতিঝিলের আরও করুণ দশা চোখে পড়ে। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার সড়কের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে চটের ছালা দিয়ে ঘেরা খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান এবং নানা পণ্যের অস্থায়ী দোকান। সামান্য বৃষ্টিতে মতিঝিল এলাকার সড়কগুলো তলিয়ে থাকে পানির নিচে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত। ডিএসসিসি এলাকার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে। খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে মূল্যায়ন করলে মতিঝিল ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। যদিও এটা মানতে নারাজ ডিএসসিসির কারিগরি কমিটি।
মতিঝিল এলাকার বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিল এলাকার সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে ডিএসসিসি। পরিত্যক্ত প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মতিঝিলের সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত ও সড়ক বিভাজকের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা দরকার। পর্যায়ক্রমে এ এলাকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কাজ করবে ডিএসসিসি। তবে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের মূল সংস্কার ও আধুনিকায়নের দায়িত্ব রাজউকের। রাজউককে সেসব বিষয় পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব কাজে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা লাগলে করপোরেশন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলে রাজউক। রাজউক সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশক থেকেই মতিঝিলের পুরোপুরি বাণিজ্যিক বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্যিক অঞ্চলে শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান থাকে। আর কাছাকাছি এলাকায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা থাকে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে সেটা ছিল না। অভিজাত মানের হোটেল পূর্বাণী গড়ে উঠলেও আশপাশে সময় কাটানোর মতো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লোকজন গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় থাকেন। মতিঝিলের সৌন্দর্য নিশ্চিত করতে ও আধুনিকায়নে যেসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখা দরকার ছিল রাজউক ও সিটি করপোরেশন সেটা করেনি।
রাজউক সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধরা, উত্তরা। সেই সব এলাকা থেকে মানুষ মতিঝিলে আসেন। শহরের জনসংখ্যা বাড়ায় দিন দিন যানজট বাড়ছে। ওই সব এলাকা থেকে মতিঝিলে আসতে সড়কে এক থেকে দেড় ঘণ্টা চলে যায়। দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কর্মঘণ্টার মধ্যে ৩০ শতাংশ সময় সড়কে নষ্ট হচ্ছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে চিন্তা করেছে, তার কর্মস্থল এমন একটা জায়গায় হবে যা তার আবাসনের কাছাকাছি। মতিঝিল থেকে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও ভূমিকা রেখেছে।
কালের বিবর্তনে গুলশান হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক এলাকা। কারওয়ান বাজার, উত্তরায়ও গেছে কিছু। এসব জায়গায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমও সেখানে চলে গেছে। এসব এলাকার আশপাশে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় তাদের বসবাস। আবাসিক এলাকা ছাড়া, পৃথিবীর কোথাও শতভাগ জায়গা শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা অথবা একই শ্রেণির কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার হয় না।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, নগর পরিকল্পনায় ভূমির ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়, যেকোনো জায়গার ব্যবহার হবে ২৪ ঘণ্টা। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল কর্মচঞ্চল থাকে মাত্র ১২ ঘণ্টা। এরপর ওই জায়গার ব্যবহার হয় না। রাতে নীরব ও ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়।
তিনি বলেন, যে মতিঝিলে দিনের বেলায় হাঁটা যায় না; গাড়ির কারণে, যানজটে; সেই মতিঝিলে রাত ৮টার পরে আবার একাও হাঁটা যায় না; অনিরাপদ বোধ হয়। এ জন্য যারা দিনে বাণিজ্য করতে আসেন, তারা মতিঝিল এলাকার হোটেলগুলোতে থাকেন না। অন্যদিকে গুলশান-বনানী এলাকায় থাকলে তারা শপিংয়ে যেতে পারেন, কফি শপে যেতে পারেন। এসব কারণে সারা বিশ্বে ভূমির মিশ্র ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, মতিঝিল এলাকা যেহেতু ইতিমধ্যে তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলেছে, এ জন্য মতিঝিলের জমির শ্রেণিকে মিশ্র ব্যবহার হিসেবে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি নিয়েছে রাজউক। সংশোধিত ড্যাপে সে বিষয়ে নির্দেশনা রাখা হয়েছে। পৃথিবীর নগর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৫০, ৬০ বা ১০০ বছর অন্তর সেসব ঢেলে সাজানো হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়েই মতিঝিল এলাকাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে আবাসিকের বৈশিষ্ট্য দিতে হবে; কনডোমিনিয়াম গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে রাজউক বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ১৬ একর জায়গা নিয়ে একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে লাইব্রেরি, ওয়াকওয়ে থাকবে। বসার ব্যবস্থা থাকবে। মতিঝিল এলাকায় ঝিল ছিল, ওই ঝিলকে প্রাধান্য দিয়ে পার্কটি তৈরি করা হবে। বহুমুখী ব্যবহার ছাড়া মতিঝিলকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিলের আধুনিকায়ন ও ভূমির মিশ্র ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। তাহলে মতিঝিল সচল থাকবে; তবে ঢাকা শহর বড় হওয়ায় আরও বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে ওঠা ইতিবাচক। এসব পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দরকার ছিল; কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে সে রকম হয়নি। এটা দুঃখজনক। এ জন্য শহরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ঢাকায় এখন অনেকগুলো বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সব অঞ্চলে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় বড় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় মতিঝিলে রয়েছে। তবে ব্যবসা গুলশান, বনানী, উত্তরা, গাজীপুরে সরে যাওয়ায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ব্যবসা কেন্দ্রের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।