
কেরানীগঞ্জের গদাবাগ এলাকায় রাসায়নিক গুদামে বিস্ফোরণে একই পরিবারের ৫ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আশপাশে আরও এমন গুদাম থাকতে পারে, আবারও ঘটতে পারে ভয়াবহ এমন দুর্ঘটনা সেই আশঙ্কায় তটস্থ স্থানীয়রা। তারা বলছেন, নিরাপত্তার খাতিরে পুরান ঢাকার কেমিক্যালপল্লী কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর করার চাপ থাকায় এখানে কোনো নিয়ম না মেনে যত্রতত্র মজুদ করা হচ্ছে নানা ধরনের রাসায়নিক। তারা অনেকেই জানেন না তাদের আশপাশেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ভয়াবহ সব রাসায়নিকের গুদাম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে রাসায়নিক গুদামে বিস্ফোরণে ১২৪ জন নিহত হওয়ার পরে পুরান ঢাকার সব রাসায়নিক গুদাম কেরানীগঞ্জে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। কিন্তু সেই পরিকল্পনা তখন আর আলোর মুখ দেখেনি। এরপরে ২০১৯ সালে চকবাজারে চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির পরে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয় পুরান ঢাকার সব রাসায়নিক গুদাম কেরানীগঞ্জের নির্দিষ্ট একটি স্থানে স্থানান্তর করে গড়ে তোলা হবে কেমিক্যালপল্লী। সরকারের সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলেও চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির পরে পুরান ঢাকার অনেক কেমিক্যাল ব্যবসায়ী তাদের গুদামগুলো কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে স্থানান্তর করেন।
নিমতলী ট্র্যাজেডির পর পরই পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গুদামগুলো সরিয়ে কেরানীগঞ্জের সোনাকান্দা মৌজায় ২০ একর জায়গা নির্বাচন করা হয়েছিল কেমিক্যালপল্লী গড়ে তোলার জন্য। ২০১৫ সালে ১ হাজার ৪১৮ কোটি টাকার প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছিল। ব্যবসায়ীদের আপত্তির মুখে তখন আর এ প্রকল্পটি সামনে এগোয়নি।
চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির পর কালন্দি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণকিত্তা মৌজায় ৫০ একর জায়গা প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হয় কেমিক্যালপল্লী করতে। সেখানে গুদামের জন্য প্রায় ৯০০টির বেশি প্লট তৈরির পরিকল্পনার কথাও জানান শিল্পমন্ত্রী। তবে সে বছর কেরানীগঞ্জে চুনকুটিয়া এলাকায় একটি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটলে আবারও মুখ থুবড়ে পরে কেমিক্যালপল্লীর প্রকল্প। অবশ্য সরকারি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলেও পুরান ঢাকার অনেক ব্যবসায়ী কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় কোনো নিয়মনীতি না মেনেই গড়ে তোলেন কেমিক্যাল গোডাউন। কেরানীগঞ্জের অনেক ভবন ও জমির মালিক মোটা অঙ্কের অর্থের লোভে গোপনে কেমিক্যাল গোডাউন ভাড়া দিয়েছেন।
কালিন্দী ইউনিয়নের গদাবাগে যেখানে বিস্ফোরণ ঘটেছে ওই এলাকার বাসিন্দা মো. মেহেদী বলেন, নিরাপত্তার খাতিরে পুরান ঢাকার কেমিক্যালপল্লী কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর করা হয়েছে। এতে পুরান ঢাকার ঝুঁকি হয়তো কমেছে কিন্তু আমরা পড়েছি চরম ঝুঁকিতে। আমরা জানিও না কোথায় লুকিয়ে আছে রাসায়নিকের ভা-ার।
তিনি বলেন, গত পরশু দিনের দুর্ঘটনা তার একটা প্রমাণ। আমরা কেউই জানতাম না আমাদের পাশেই এমন একটা গুদাম আছে।
মো. আবুল হাসান নামে এক ব্যক্তি বলেন, এভাবে ঘিঞ্জি এলাকায় বা আবাসিক এলাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরিয়ে নেওয়া উচিত। যেসব বাড়ির মালিক টাকার লোভে এলাকাবাসীকে ঝুঁকিতে ফেলছেন তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত।
কেরানীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র ফায়ার স্টেশন অফিসার কাজল মিয়া জানান, কেরানীগঞ্জে বিভিন্ন স্থানে অনুমোদন ছাড়াই গড়ে উঠেছে কেমিক্যাল গোডাউন। এসব গোডাউন বন্ধে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে থাকি। উপজেলা প্রশাসন এ বিষয়ে কাজ করলে আমরা তাদের সহযোগিতা করব।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সল বিন করিম বলেন, আমরা কেমিক্যাল গোডাউন কোথায় কোথায় আছে খোঁজ করছি। অভিযান চালাচ্ছি, নিয়মনীতির বাইরে যারা আছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পাঁচ জনের দাফন গতকাল বুধবার কেরানীগঞ্জের গদাবাগ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দুর্ঘটনাকবলিত জায়গায় নিহতদের পরিবারের সদস্যরা শোকে কান্নাকাটি করছেন। আশপাশের লোকজন দুর্ঘটনাকবলিত স্থান দেখতে আসছে। ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। তিনদিন আগেও যেখানে ছিল ৮ জনের একটি সাজানো গোছানো পরিবার। ভয়াবহ বিস্ফোরণে এখন সেই বাড়িটি মৃত্যুপুরী।
পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোররাতের বিস্ফোরণে নিহত ৫ জনের লাশ তাদের পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে সোহাগ (২৫), সোহাগের স্ত্রী মিনা (২২) ও সোহাগের ছোট মেয়ে শিশু তাইয়েবাকে স্থানীয় গদাবাগ কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। আর জেসমিন আক্তার (৩০) ও তার মেয়ে ইশাকে (১৬) লৌহজং থানার শিমুলিয়া গ্রামে দাফন করা হয়েছে।
কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাব উদ্দীন কবির জানান, নিহতের পরিবার লাশ দাফনে ব্যস্ত থাকায় এখন পর্যন্ত থানায় অভিযোগ জানাতে আসেনি। তারা এলে আমরা ব্যবস্থা নেব। আর যদি না আসে তাহলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দেবে।
বিহ্বলতার এক মাস আগস্ট। বাংলা কবিতার দুই প্রধান পুরুষ রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল এ মাসেই বিদায় নিয়েছেন। বিদায় নিয়েছেন কবি শামসুর রাহমানও। আর বাঙালির জন্য স্বতন্ত্র স্বাধীন আবাসভূমির যিনি স্থপতি, বাংলাদেশের সেই অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবের প্রস্থানও এ মাসেই। তার বিদায় এতটাই ট্র্যাজিক, সে কথা স্মরণে আনলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়। একদিকে শোক পাথরের মতো বুকের ওপর চেপে বসে; অন্যদিকে ক্ষোভে, ক্রোধে ফেটে পড়তে ইচ্ছে হয়। যাই হোক, মৃত্যু দিবসকে সামনে রেখে ব্যক্তিত্বের স্মরণ স্বাভাবিক এক আনুষ্ঠানিকতা। এই সুবাদে নতুন প্রজন্মের কাছে প্রয়াত ব্যক্তির নব জন্মলাভ ঘটে; অন্যদিকে তাকে পুনর্মূল্যায়ন ও পুনর্বিবেচনার একটি সুযোগও মেলে। কালের ক্যানভাসে রেখে ব্যক্তির সৃষ্টি বা অর্জনকে নতুন করে বুঝে নেওয়ার এই সংগত সংস্কৃতিতে এক ধরনের মেলবন্ধনের সুযোগও তৈরি হয়।
জীবদ্দশায় কিংবদন্তিতুল্য কবি হতে পারেন কবিতার এমন বরপুত্র বাংলায় খুব বেশি নেই; আর প্রয়াণের পর অমরত্বের গৌরব ছুঁয়ে চিরকালীন কবি হিসেবে বিবেচিত হওয়ার মতো কবিও অঙ্গুলিমেয়। বলা নিষ্প্রয়োজন, ‘আমাদের কালেই আমরা এমন একজন উজ্জ্বল কবিকে পেয়েছি, তিনি শামসুর রাহমান। বাংলা কবিতার জগতে দুটি বহু উচ্চারিত নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং শামসুর রাহমান। বাঙালির এ দুই চিরকালীন কবিই দীর্ঘ আয়ু পেয়েছিলেন, পরিণত বয়সেই তারা বিদায় নেন। তবু বড় কবির প্রস্থান সব সময়ের জন্যই আমাদের কাছে অকালমৃত্যু বলে বিবেচিত হয়। বিশেষ করে যারা সার্বক্ষণিক কবি, যাদের হৃৎস্পন্দনের সঙ্গে একটি দেশের একটি ভাষার হৃৎস্পন্দন মেশে এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে অনূদিত হতে থাকে বহুমাত্রিক কবিতায়। রবীন্দ্রনাথের পর সংখ্যার বিচারে শামসুর রাহমানের চেয়ে আর কে বেশি লিখেছেন? রীতিমতো কবিতা-সাগর!
কবিকে বিচার করতে গেলে তার সমগ্র কবিতাকর্ম বিবেচনায় নেওয়াই সমীচীন। যদিও আজকের প্রজন্মের পাঠক তো বটেই, সমসাময়িক অধিকাংশ পাঠকের কাছেও শামসুর রাহমানের কবি জন্মকালীন সময়ে পরিচয় ম্লান হয়ে গেছে। এখন ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ বা ‘রৌদ্র করোটিতে’-র কবিতাগুচ্ছ নয়; শামসুর রাহমানের কবিতার উল্লেখ করতে গেলে প্রথমেই উচ্চারিত হয় ‘স্বাধীনতা তুমি’ বা ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’, কিংবা ‘সুধাংশু যাবে না’-র প্রসঙ্গ। রাজনৈতিক-সামাজিক-স্বাদেশিক শামসুর রাহমানের উচ্চকিত পরিচয়ের নিচে চাপা পড়ে গেছেন শিল্পসন্ধানী, নান্দনিক, শুদ্ধতাবাদী শামসুর রাহমান। সন্দেহ নেই, বাংলাদেশের মানুষের কাছে ‘স্বাধীনতা তুমি’ বা ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’ কবিতা দুটি মহামূল্যবান; তেমনি শাশ্বত বাঙালি পাঠকের কাছে ‘রূপালি স্নান’ কিংবা ‘আমার মা’কে রত্নসম কবিতা।
এ ভাষ্য আগেও দিয়েছি কবিতায় শামসুর রাহমানের সামগ্রিক অর্জনের কথা সংক্ষেপে বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হবে যে তিনি এই অঞ্চলে প্রভাব সৃষ্টিকারী প্রাচীনত্বগন্ধী রিক্ত কাব্যভাষাকে হটিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন সুমার্জিত, আধুনিক, মুখের ভাষার কাছাকাছি নাগরিক কবিতার ভাষা। এ তাৎপর্যপূর্ণ কাজে তার আগেও দু-তিনজন কবি বাংলাদেশে সক্রিয় হয়েছিলেন, তবে সফল পদরেখা চিহ্নিত করেন তিনিই প্রথম। অনুগামী পেয়েছেন অনেক, অনুসারী প্রচুর। ১৯৬০ সালে প্রকাশিত তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ স্পষ্টতই বদলে দেয় বাংলা কবিতাবিশ্বকে। ভাষা, চেতনা, বোধ, আবেগ, বৈশিষ্ট্য সর্ববিচারে বাংলা কবিতার ঘটে পালাবদল। তবে পরে আমরা নতুন এক শামসুর রাহমানকে আবিষ্কার করি। এ শামসুর রাহমানের বর্ণনামূলক বাকভঙ্গি এমনই অবিকল্প হয়ে উঠেছিল যে, তা স্বচ্ছন্দভাবে কবিতায় ধারণে সক্ষম ছিল বাংলার আধুনিক মানুষের যেকোনো বিষয় বা বক্তব্য। কবিতা যেন হয়ে উঠেছিল দিনানুদৈনিক ঘটনা, অনুভূতি কিংবা অনুষঙ্গের সহযাত্রী।
শামসুর রাহমানের সমতুল্য ভাবমূর্তি, কবি-ব্যক্তিত্ব কিংবা সামাজিক প্রগতিশীল আইকন যেটাই বলি, আর কোনো কবির পক্ষে অর্জন এখন অসম্ভব ব্যাপার বলেই মনে হয়। কবি-অভিধাটির ওপর অপরাজনীতি ও কালের অবক্ষয় নেতিবাচক আস্তর ফেলে চললেও আমরা জেনে গেছি, কবিরও এক ধরনের সামাজিক অনিবার্যতা এবং গ্রহণযোগ্যতা থাকে। গজদন্তমিনারবাসী আখ্যা দিয়ে অর্বাচীনরা কবিদের যতই দূরবর্তী করে তোলার কসরত করুক না কেন, একজন সার্থক কবি পান অতিসাধারণ মানুষেরও ভালোবাসা ও সমীহ। কবিতার মর্মার্থ না-বোঝা গড়পড়তা সাধারণ লোকের হৃদয়েও কবির জন্য থাকে ‘পরম’ আসন। রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি, জীবনযাপনে হিপোক্র্যাসি এবং সংকীর্ণ গোষ্ঠীমনস্কতা কবিকে না দেয় কবিখ্যাতি, না পান তিনি মানুষের সত্যিকারের শ্রদ্ধা। ধ্যানী অচঞ্চল স্রষ্টা ও দ্রষ্টার মতো কবি একাগ্র থাকেন তার নিজস্ব ভুবনে; কাব্যসৃজনই তার আরাধ্য।
‘গাছ, কফিন এবং নৌকা’, যেটি তিনি লিখেছিলেন তার চলে যাওয়ার এক দশক আগে, বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে। কপট বঙ্গবন্ধুপ্রেমী নিন্দুকেরা বলে থাকেন শামসুর রাহমান অনেক রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীকে নিয়ে কবিতা লিখলেও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে তিনি নীরব। তাদের এই কবিতা এবং অন্তত ‘ইলেকট্রার গান’ (ইকারুসের আকাশ কাব্যের) পড়তে বলি। এ দুটি কবিতাই ঠিক সাধারণ মানুষের বোধগম্য কবিতা নয়, যেমনটা কবির স্বাধীনতাবিষয়ক অতিবিখ্যাত দুটি কবিতা। তাই বোধকরি বঙ্গবন্ধুকে আপন সত্তায় গভীর অনুভব করে লেখা এই চমৎকার দুটি কবিতা ১৫ আগস্টে ব্যাপকভাবে পঠিত হয় না। বিশেষ করে ঘাতকের বুলেটে ঝাঁজরা জাতির পিতার মরদেহ অবহেলায় অতিসাধারণ কফিনে রাখার ইতিহাসখচিত সত্যের এমন প্রতীকী ও ব্যঞ্জনাঋদ্ধ ‘গাছ, কফিন এবং নৌকা’ কবিতাকে আমাদের মাথায় তুলে রাখার কথা ছিল। একটি কফিন কীভাবে দেশব্যাপী সন্তরণশীল একটি নৌকা হয়ে ওঠে এবং তার আড়ালে জাগরূক থাকে একটি সুদীর্ঘ গাছ তারই শিল্পিত এবং অবশ্যই শামসুর রাহমানীয় বয়ান আমরা শুনি এই কবিতায়। আমাদের দুর্ভাগ্য আর আগের মতো আমাদের দেশে কবি ও কবিতার কদর নেই, নেই তেমন সংবেদনশীল বোদ্ধাপাঠক এবং সত্যিকারের কবিতার ব্যাখ্যাদাতা, বিশ্লেষক বা সমালোচক।
সেকালে কবি ও কবিতার সম্মান ছিল এই নষ্টভ্রষ্ট সমাজে; দুর্নীতিতে মহাসৃজনশীল এ রাষ্ট্রে। খবরের কাগজের যেকোনো বিশেষ দিবসের ক্রোড়পত্রে পাতাজুড়ে সাজানো থাকত কবিতা, যার শীর্ষে জ্বলজ্বল করত শামসুর রাহমানেরই কবিতা। তখন কালেভদ্রে কোনো কোনো কাগজের ওই পাতার একেবারে নিচের দিকে থাকত এই নগণ্য লেখকের লেখা। শামসুর রাহমানের বিরল একটি গুণ ছিল তিনি প্রত্যেকের কবিতা পড়তেন। আমার নিজের চোখেই তো দেখা আশির দশকের একেবারে শেষ দিকে দৈনিক বাংলা ভবন পরিত্যাগের পর সাপ্তাহিক মূলধারার প্রধান সম্পাদকের চাকরি করার সময় বিশেষ সংখ্যার জন্য কবিতা বাছাইয়ের অধিবেশনে বসতাম দুজনে। তিনি নবীনতম কবির কবিতাটিও মনোযোগ সহকারে পড়তেন। কবিতা পড়ার বেলায় তিনি রুচির ধার ধারতেন না বটে কিন্তু গুরুত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে তার নিজের বিশেষ একটি হিসাব ছিল, যার তল আমি পাইনি। তখন ফরহাদ মজহার এক দিন নিজে সবগুলো কবিতার বই তাকে উপহার দেওয়ার জন্য নিয়ে এসেছিলেন। অনেকেই আসতেন, তবু এই একটি নাম উচ্চারণ করলাম এটি বোঝাতে যে শামসুর রাহমান ছেপেছেন ফরহাদ মজহারের কবিতা, কিন্তু বিশেষ গুরুত্ব দেননি কখনই।
কবি শামসুর রাহমানের রচনার সংখ্যা এত বিপুল যেকোনো একটি দিক নিয়ে কথা বলতে গেলেও যথেষ্ট সময় ও পরিসরের প্রয়োজন। গবেষণাপত্রে লেখাপড়া আর কম্পিউটারের পর্দায় রচনাপাঠের ভেতর বৈশিষ্ট্য ও চারিত্র্য বিচারেই রয়েছে দুস্তর ব্যবধান। এখানে বিন্দুর ভেতর সিন্ধু তুলে ধরার এক অসম্ভব কসরত করা লাগে।
শুধু কবিতার কথা আমরা বলি না। ব্যক্তির প্রয়াণের পর আমরা ব্যক্তিত্বকে পূর্ণতায় বুঝে নিতে চাই। কবি-ভাবমূর্তির সঙ্গে সে-অবয়ব সংযুক্ত হয়ে ব্যক্তিকে বিরাট ব্যাপ্তি দেয়। দেশের প্রধান কবির সম্মান আমরা দিয়েছি শামসুর রাহমানকে। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে, আরও স্পষ্ট করে বললে পঁচাত্তর-পরবর্তী বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যে সেনাশাসন দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে, সেই বাংলাদেশে জাতির বিবেকের কণ্ঠস্বর আমরা শুনেছি শামসুর রাহমানের কবিতায়। দেশের প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলনকে অনুসরণ করেছে তার পঙ্ক্তিমালা, জুগিয়েছে শক্তি ও প্রেরণা। মৌলবাদ ও স্বৈরাচারের সমান্তরাল উত্থানে বিপন্ন বিপর্যস্ত বাংলাদেশে আন্দোলনে-সংগ্রামে শামসুর রাহমান গর্জে ওঠা শব্দে ও শারীরিক উপস্থিতির মাধ্যমে এমন একটি পর্যায়ে নিজেকে উত্তীর্ণ করতে সক্ষম হন, যেখানে পৌঁছাতে পারেন শতাব্দীতে একজন কি দুজন। তার উজ্জ্বল অংশগ্রহণ নান্দনিক কবিতায় ও তীক্ষè প্রতিবাদে নিবিষ্ট পাঠক ছাড়াও গণমানুষের হৃদয় স্পর্শ করে। তিনি হয়ে ওঠেন আইকন। সমৃদ্ধ শানিত শৈল্পিক আইকন। বৃহত্তর সাংস্কৃতিক জগতের এক অসামান্য প্রতিভূ।
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে হাসপাতালের সামনের ওষুধ ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের জের ধরে গতকাল বুধবারও পরিস্থিতি ছিল উত্তপ্ত। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে তিন দফা দাবিতে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেননি।
অন্যদিকে, হামলাকারীদের গ্রেপ্তার, নিরাপত্তা ও দোকান ভাঙচুরের ক্ষতিপূরণের দাবিতে ধর্মঘট পালন করছেন হাসপাতালের সামনের মার্কেটের ওষুধ ব্যবসায়ীরা।
দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা।
গতকাল বেলা পৌনে ১১টায় ক্লাস বর্জন করে তিন দফা দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা কলেজের প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে রয়েছে, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুটি মডেল ফার্মেসি ও পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি সাইফুল ইসলাম অন্তর বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে তারা কলেজ কর্তৃপক্ষকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেটা করতে পারেননি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মবিরতি চলবে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির পরিচালক মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ওষুধের দোকান ভাঙচুর ও ব্যবসায়ীদের মারধর করেছেন। তাদের গ্রেপ্তার ও দোকান ভাঙচুরের ক্ষতিপূরণ না পাওয়া পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।
হাসপাতালের রোগী ও তাদের স্বজনরা অভিযোগ করেন, দুই পক্ষের বিরোধের বলি হচ্ছেন তারা। গত সোমবার রাত থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রোগী দেখছেন না। আগে দিনে দু-তিনবার রোগী দেখতেন তারা। এ ছাড়া মেডিকেলের সামনের দোকান বন্ধ থাকায় রোগীর স্বজনদের ওষুধ কিনতে যেতে হচ্ছে অনেক দূরে। এতে অতিরিক্ত সময়ের পাশাপাশি অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার জামসেদ আকতার (৬৭) খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের সামনের ওষুধের মার্কেট বন্ধ থাকার কারণে আমার স্ত্রী রিয়া বেগমকে শহরের মধ্যে ওষুধ কিনতে যেতে হচ্ছে। শহর ঠিকমতো না চেনার কারণে ওষুধ কিনতে গিয়ে তাকে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। দূরে যাতায়াতের কারণে টাকাও বেশি খরচ হচ্ছে।’
ফুলতলা উপজেলার গাড়াখোলা গ্রামের শহীদুল ইসলাম বলেন, তার মা ফারহানা বেগম ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তার মার জন্য জরুরিভাবে ওষুধের প্রয়োজন হয়। কিন্তু হাসপাতালের সামনের ওষুধের মার্কেট বন্ধ থাকায় তাকে ওষুধ কিনতে যেতে হয় শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের পাশের ওষুধের মার্কেটে। সেখানে গিয়ে দেখতে পান দোকানগুলোতে দীর্ঘ লাইন পড়েছে। ওষুধ কিনতে কিনতে রাত ১২টা বেজে যায়। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, একটি তুচ্ছ ঘটনার জেরে রোগী ও তাদের স্বজনদের কেন ভোগান্তিতে পড়তে হবে?
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক ডা. নিয়াজ মুস্তাফী বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি অব্যাহত থাকলে রোগীদের দুর্ভোগে পড়তে হবে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দীন উল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনা দুঃখজনক। কলেজের পক্ষ থেকে সোনাডাঙা থানায় পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করছি, শিগগির এ ঘটনার সমাধান হয়ে যাবে।’
নগরীর সোনাডাঙ্গা ওসি মমতাজুল হক বলেন, হামলার সঙ্গে জড়িতদের আটকের চেষ্টা চলছে।
গত সোমবার রাতে ওষুধ কেনাকে কেন্দ্র করে হাসপাতালের সামনে শিক্ষার্থী ও ওষুধ ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
প্রতিবেশী দেশ ভারতের আদালতে একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ও মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম। তিনি দাবি করেছেন, তাকে হয়রানি ও টাকা হাতিয়ে নেওয়াই ছিল মামলার বাদীর মূল উদ্দেশ্য। গতকাল বুধবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এমনটি দাবি করেন মমতাজ।
ওই পোস্টে মমতাজ বলেন, ‘আমার প্রিয় এলাকাবাসী ও সারা দেশে আমার গানের ভক্ত আশেকান এবং আমার শুভাকাক্সক্ষী যারা রয়েছেন, তারা কয়দিন যাবৎ একটা নিউজের পরিপ্রেক্ষিতে খুব মন খারাপ করে আছেন। এটার সত্যতা কতটুকু, জানতে চাচ্ছেন। আমি বিদেশ ছিলাম ১৪ আগস্ট পর্যন্ত। দেশে ফিরেই ১৫ আগস্টের জাতীয় শোক দিবস নিয়ে খুব ব্যস্ত সময় কাটাই। এ জন্য এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। হ্যাঁ, এ কথা সত্য যে বেশ অনেক বছর আগে ভারতের বহরমপুর কোর্টে আমার বিরুদ্ধে এক ব্যক্তি একটা মিথ্যা বানোয়াট মামলা দায়ের করেন। যার মূল উদ্দেশ্য ছিল আমাকে ভয় দেখিয়ে কিছু টাকা হাতিয়ে নেওয়া। আর ওই ব্যক্তি ছাড়া আমি যেন কারও মাধ্যমে ভারতে কোনো কনসার্ট করতে না পারি। কোনো ডকুমেন্ট ছাড়া ১৪ লক্ষ টাকা নেওয়ার একটি মিথ্যা মামলা উনি সাজিয়েছেন, যার কোনো প্রমাণ এই ১৪ থেকে ১৫ বছরে কোর্টে দাখিল করতে পারেনি।’
মমতাজ আরও বলেন, ‘এই বছরও আমি দুইবার কোর্টে হাজির হই। কিন্তু দুঃখের বিষয় মামলার বাদী দুইবার অসুস্থ বলে কোর্টে অনুপস্থিত থাকেন। তার মূল উদ্দেশ্য হলো আমাকে হয়রানি করা। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে দ্রুত মামলাটি যাতে শেষ হয় বিজ্ঞ আদালতকে অনুরোধ করি। কিন্তু আদালত শেষ যে তারিখ দিয়েছিল, ওই সময় আমার আগে থেকেই কানাডায় একটা প্রোগ্রাম নেওয়া ছিল বিধায় আমি উপস্থিত থাকতে পারিনি। তবে আমি আদালতকে এ বিষয়ে অবহিত করি। পরে একটা সময় চাইলে বিজ্ঞ আদালত সেটা গ্রহণ করে আমাকে সেপ্টেম্বরের ৮ তারিখ পুনরায় ডেট দেন। আশা করি আমি ৮ তারিখে হাজির হলে বিজ্ঞ আদালত একটা সিদ্ধান্ত নেবেন এবং পরবর্তী কী করণীয় তা জানতে পারব। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আমার বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আপনারা সবাই আমার ওপর আল্লাহর ওয়াস্তে এই আস্থা ও বিশ্বাস রাখবেন এবং আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেন কারও ক্ষতি না করি। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।’
চুক্তিভঙ্গ এবং প্রতারণার অভিযোগে করা মামলায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট অলক দাস ৯ আগস্ট লোকগানের জনপ্রিয় শিল্পী ও সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এই মামলায় তার বিরুদ্ধে এর আগে আরও তিনবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। এরপর মমতাজ উচ্চ আদালতের শরণাপন্নও হয়েছিলেন। ৯ আগস্ট মুর্শিদাবাদের মুখ্য বিচার বিভাগীয় আদালতে হাজির হওয়ার কথা ছিল মমতাজের। এর আগে এক নোটিসে জানানো হয়, সেদিন মুর্শিদাবাদের বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মমতাজ বেগমের মামলার অভিযোগ গঠন করা হবে। আর সেদিন মমতাজ উপস্থিত না হলে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হবে।
জামায়াত নেতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এলাকায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তার ছেলে মাসুদ সাঈদীসহ অজ্ঞাতনামা পাঁচ হাজার ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে মামলা করেছে পুলিশ। এ ছাড়া সাঈদীর গায়েবানা জানাজা কেন্দ্র করে রাজধানীর পল্টন ও চট্টগ্রামের তিন থানায় চারটি মামলায় অভিযুক্ত পাঁচ শতাধিক। এদিকে সাঈদীকে চিকিৎসা দেওয়া চিকিৎসককে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ধানম-ি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
বিএসএমএমইউ এলাকা এবং শাহবাগ মোড়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় করা মামলার এজাহারে মাসুদ সাঈদী ছাড়াও আরও তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন জামায়াতের সহকারী মহাসচিব হামিদুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ওরফে মাসুদ ও ঢাকা মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার কে এন রায় নিয়তি দেশ রূপান্তরকে জানান, গত মঙ্গলবার রাতে শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জব্বার বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগও আনা হয়েছে। তবে এ মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
শাহবাগ থানায় করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী গত সোমবার রাতে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সেই খবরে জামায়াত-শিবিরের হাজারো নেতাকর্মী রাতেই বিএসএমএমইউ ও শাহবাগ এলাকায় ভিড় করেন। তারা বিভিন্ন ধরনের উসকানিমূলক সেøাগান দেন। একপর্যায়ে মিছিল করে তারা শাহবাগ থেকে বাংলামোটর ও শাহবাগ মৎস্য ভবনের মোড় পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এ সময় শাহবাগের বারডেম ও বিএসএমএমইউতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী আটকা পড়েন।
পুলিশ তাদের রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলে পুলিশের সঙ্গে মারমুখী আচরণ করেন তারা। সড়ক না ছেড়ে তারা সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী সোগান দিতে থাকেন। গতকাল ভোরের দিকে সাঈদীর মরদেহ পিরোজপুরে তার নিজ বাড়িতে নেওয়ার সময় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা ইটের টুকরো, লাঠিসোটা ও রড নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালান এবং সরকারি কাজে বাধা দেন। তারা বিএসএমএমইউর ভেতরে সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করে ক্ষতি করেন। পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেলও ছোড়েন এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। এ সময় পুলিশের গাড়ি, মোটরসাইকেল, সাঁজোয়া যানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। একপর্যায়ে পুলিশ সাঈদীর মরদেহ বহনকারী ফ্রিজিং ভ্যান বের করে আনে। এ সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
সাঈদীর গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষের ঘটনায় ১১৬ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় মামলা করে পুলিশ। পল্টন থানার ওসি সালাহউদ্দিন জানান, বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় একটি মামলা করা হয়েছে। ঘটনার সময় আটক ১৬ নেতাকর্মীকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এই ১৬ জনসহ মামলায় অজ্ঞাত আরও ১০০ জামায়াত নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, সাঈদীর মৃত্যুর ঘটনায় মঙ্গলবার বাদ জোহর জামায়াতের নেতাকর্মীরা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের ভেতরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। একপর্যায়ে তারা বায়তুল মোকাররমের উত্তর ফটকে বেরিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। পরে তারা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের কাছে শোক দিবসে অংশ নিতে আসা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালান।
এদিকে চট্টগ্রামে গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষের ঘটনায় নগরের কোতোয়ালি থানায় দুটি ও খুলশী থানায় একটি মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে করা এসব মামলার মধ্যে কোতোয়ালি থানার দুই মামলায় চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির মো. শাহাজাহানসহ ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২০০ থেকে ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। খুলশী থানার মামলায় আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১০০ থেকে ১২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তিন মামলায় মঙ্গলবার ঘটনাস্থল থেকে আটক হওয়া ৪০ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি থানার ওসি জাহিদুল কবির এবং খুলশী থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা।
চিকিৎসককে হত্যার হুমকি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চিকিৎসা দেওয়া বিএসএমএমইউ চিকিৎসক অধ্যাপক এস এম মোস্তফা জামানকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার রাতে ধানমন্ডি থানায় জিডি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার কে এন রায় নিয়তি।
জিডিতে বলা হয়েছে, সাঈদী অসুস্থ অবস্থায় বিএসএমএমইউয়ের হৃদরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক চৌধুরী মেশকাত আহমেদের অধীন চিকিৎসাধীন ছিলেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের একজন সদস্য হিসেবে অধ্যাপক মোস্তফা জামান তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু কতিপয় ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইউটিউবের বিভিন্ন আইডি থেকে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন এবং হত্যার হুমকি দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, তিনি (মোস্তফা জামান) কাল রাতে আমার কাছে এসেছিলেন। তিনি সমস্ত ঘটনা বলেছেন। আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, যিনি চিকিৎসক, যিনি সেবাদান করেন, তাকে চিকিৎসা দিয়েছেন, তাকেও তারা হত্যার হুমকি দিচ্ছে। এটা আমার কাছে আশ্চর্য লাগে!
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, তারা যে নোংরা চিন্তা করে, তারা যে সব সময় সন্ত্রাসী চিন্তা করে, তারা যে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সব সময় চিন্তা করে তারই প্রতিফলন; হুমকির মাধ্যমে তারা জানান দিয়েছে।
গতকাল রাতে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানিয়েছেন, ঝিনাইদহের মহেশপুর থেকে তফসিরুল ইসলাম নামের এক হুমকিদাতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকার উত্তরা থেকে হাফিজা মাহবুবা বৃষ্টি নামের একজনকে আটক করার কথা জানিয়েছে সিটিটিসি।
সাঈদীকে বিধিসম্মতভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে : বিএসএমএমইউ দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আন্তর্জাতিক প্র্যাকটিস অনুসরণ করে সব ধরনের চিকিৎসা বিধিসম্মতভাবে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্র্তৃপক্ষ। কর্র্তৃপক্ষ আরও বলেছে, সাঈদীর রোগের গতিপ্রকৃতি, চিকিৎসা ও সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ পরিণতি সম্পর্কে তার ছেলে মাসুদ সাঈদী অবগত ছিলেন। গতকাল বিকেলে বিএসএমএমইউ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায়। বিএসএমএমইউ কর্র্তৃপক্ষ গতকাল বিকেল ৩টায় সাঈদীর চিকিৎসা বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকে। কিন্তু তার আগেই অনিবার্য কারণে সেই সংবাদ সম্মেলন বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ সাঈদীর চিকিৎসা বিষয়ে এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়।
কক্সবাজারে ৫ মামলায় আসামি ৭ হাজার : দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা ঘিরে কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়ায় পুলিশের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচটি মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় চকরিয়া ও পেকুয়া থানায় করা এসব মামলায় ৪৫২ জনের নাম উল্লেখসহ সাড়ে ৭ হাজার জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে চকরিয়া থানায় হত্যা মামলা, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে তিনটি এবং পেকুয়া থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে দুটি মামলা করা হয়। চকরিয়া থানার ওসি জাবেদ মাহমুদ এবং পেকুয়া থানার ওসি ওমর হায়দার মামলাগুলো নথিভুক্তের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছে চট্টগ্রাম ব্যুরো ও কক্সবাজার প্রতিনিধি
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় স্ত্রীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে এক বিচারককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেফরি ফার্গুসন নামক ৭২ বছর বয়সী ওই বিচারক অঙ্গরাজ্যটির অরেঞ্জ কাউন্টির সুপিরিয়র কোর্টে বসতেন। হত্যাকাণ্ডের পর নিজেই পুলিশে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধারের পাশাপাশি তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ৪৭টি বন্দুক ও ২৬ হাজার রাউন্ড গোলাবারুদও উদ্ধার করেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, ঘটনাটি গত ৩ আগস্টের। গত মঙ্গলবার লস অ্যাঞ্জেলেসের আদালতে ওই ঘটনায় শুনানির পর সেটি প্রকাশ্যে আসে।
আদালতের শুনানিতে বলা হয়, অ্যানাহেম শহরের একটি বাড়িতে থাকতেন ফার্গুসন এবং তার স্ত্রী শেরিল। গত ৩ আগস্ট এ দম্পতি বাড়ির কাছের একটি রেস্তোরাঁয় নৈশভোজে গিয়েছিলেন। সে সময় তাদের মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হয়। অরেঞ্জ কাউন্টির ডেপুটি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি ক্রিস্টোফার অ্যালেক্স আদালতে বলেন, বাদানুবাদের একপর্যায়ে ফার্গুসন তার স্ত্রীর দিকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করার মতো করে আঙুল তোলেন। তারা বাড়িতে ফেরার পরও ঝগড়া চলতে থাকে। ৬৫ বছর বয়সী শেরিল একপর্যায়ে তার স্বামীকে বলে ওঠেন ‘আমার দিকে সত্যিকারের বন্দুক তাক করছ না কেন?’ তখন ফার্গুসন তার গোড়ালিতে পিস্তল রাখার খাপ থেকে পিস্তল বের করে খুব কাছ থেকে স্ত্রীর বুকে গুলি করেন।
অ্যালেক্স আরও বলেন, এ ঘটনার পর ফার্গুসন নিজেই জরুরি সহায়তা নম্বর ৯১১-এ ফোন করে বলেন, তার স্ত্রী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বাড়িতে একজন চিকিৎসাকর্মী পাঠানোর অনুরোধ জানান তিনি। তখন ফোনের ওপাশ থেকে একজন জানতে চান ফার্গুসন নিজেই গুলি করেছেন কি না। তখন এ বিচারক বলেন, ওই সময় তিনি এ বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছেন না। ফোন রাখার পর বিচারক ফার্গুসন আদালতে তার ক্লার্কের মোবাইল ফোনে খুদেবার্তা পাঠান। সেখানে তিনি লিখেন, আমি মেজাজ ধরে রাখতে পারিনি। মাত্রই আমার স্ত্রীকে গুলি করেছি। কাল আসতে পারব না। আমাকে নিরাপত্তা হেফাজতে চলে যেতে হবে। আমি দুঃখিত।
এএফপি বলছে, পরে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ও ওই বিচারককে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের সময় ফার্গুসনের মুখ দিয়ে মদের তীব্র গন্ধ বের হচ্ছিল। সে সময় তিনি পুলিশকে বলেন, ‘আমার ধারণা, কিছু সময়ের জন্য আমার কোনো হুঁশজ্ঞান ছিল না।’
মঙ্গলবার শুনানির সময় তিনি হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার আইনজীবী বলেছেন, আমরা এটা পরিষ্কার করতে চাই যে ঘটনাটি অনিচ্ছাকৃত এবং অনাকাক্সিক্ষত। এটা কোনো অপরাধের ঘটনা নয়।
আদালত ফার্গুসনকে জামিন দিয়েছে। তবে তাকে মদ পান না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩০ অক্টোবর তার আবারও আদালতে হাজিরা দেওয়ার কথা।
জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। যে সিরিজে চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। আর এই সিরিজে পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল! এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। একদিন পরে অবশ্য অবসর ভাঙলেও সেই সিরিজ আর খেলেননি তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে সাকিব সেই সিরিজ হারের দায় দিলেন তামিমের ওপরই।
'আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হারটা আমি পুরোপুরি একজনকে দায় দেব, অধিনায়ক। এক ম্যাচ পরে আমাদের হাতে আরও দুই ম্যাচ ছিল। আমরা তৃতীয় ম্যাচে ঠিকই কামব্যাক করেছি কিন্তু একটা ম্যাচ সময় লেগেছে আমাদের। সুতরাং এটা আর কারো দায় নয়, পুরো সিরিজটায় দায় একজনের ওপর। বিশ্বের কোথাও অন্তত দেখিনি যে এক ম্যাচ পরেই এরকম অধিনায়ক এসে ইমোশনালি বলে ফেলেন যে আমি ভাই খেলব না আর ক্রিকেট।’
সাকিব বলেন, 'আমার ধারণা যদি কোনো অধিনায়কের দায়িত্ববোধ থাকত, সে এটা করতে পারত না। আমার কাছে মনে হয়, এটা দলকে অনেক বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে এবং আমার মনে হয় ওইটাই এখনো রিকভার করতে সময় লাগছে, যেটা আমি অনুভব করি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।