
অর্থ ও পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পাঠানো হবে। সেখানে পৌঁছানোর পর ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। এমন সহজ শর্তে মালয়েশিয়া গিয়ে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে উন্নত জীবনের কথা প্রচার করত একটি মানবপাচার চক্র। তাদের টার্গেট ছিল বিভিন্ন এলাকার তরুণ ও যুবক। মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সংঘবদ্ধ এই আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে মিয়ানমারের কোস্টগার্ড কর্র্তৃক আটক ১৯ যুবক। এছাড়াও নির্যাতনের ফলে মারা যাওয়া আরেক যুবকের লাশ পেয়েছে পরিবার।
চক্রটির তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব বলছে, গ্রেপ্তারকৃত মো. ইসমাইল (৪৫) ২০০১-২০০৫ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়া থাকাকালীন মিয়ানমারের আরাকানের নাগরিক (রোহিঙ্গা) রশিদুল ও জামালের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। এরপর ইসমাইল দেশে ফিরে রশিদুল এবং জামালসহ অন্তত ১২ জনের আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্র গড়ে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করেন। এরপর নানাভাবে মালয়েশিয়া পাঠানোর ফাঁদ পেতে মিয়ানমার নিয়ে নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায় করতেন।
গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন মো. জসিম (৩৫) ও মো. এলাহী (৫০)। নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাব। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে এই তিন ব্যক্তি এর আগেও মানবপাচারের মামলায় কারাভোগ করেছেন। গতকাল শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বাহিনীটির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
র্যাব জানায়, ১৯ মার্চ আড়াইহাজার এলাকার ১৯ জন তরুণ অবৈধভাবে চক্রের মাধ্যমে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় মিয়ানমারের কোস্টগার্ডের হাতে আটক হয়। এ ঘটনায় তাদের পরিবার আড়াইহাজার ইউএনও কার্যালয়ে গিয়ে স্বজনদের ফিরে পেতে আবেদন করে। এরপর থানায় মামলা করা হয়।
র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, এই চক্রটি গত ১৯ মার্চ ২২ জনকে নিয়ে একটি ট্রলারে যাত্রা শুরু করে মিয়ানমার উপকূলে পৌঁছালে সেখানকার কোস্টগার্ড ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করে। অন্য তিনজনকে চক্রের সদস্য জামাল কৌশলে ছাড়িয়ে তার ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখানে আটকে রেখে মুক্তিপণের জন্য নির্যাতন করেন। তার মধ্যে জহিরুলের পরিবারের কাছে তারা ছয় লাখ টাকা দাবি করেন। তার পরিবার গত ১০ মে চার লাখ ২০ হাজার টাকা দেয় এবং এক লাখ ৮০ হাজার টাকা মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর দেওয়ার কথা জানায়।
এরপর জহিরুলকে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মিয়ানমার থেকে থাইল্যান্ডের সমুদ্রসীমা হয়ে সিঙ্গাপুরের পাশ দিয়ে মালয়েশিয়ার জোহার বারুতে পাঠায় পাচারকারীরা। নির্যাতনের কারণে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে মালয়েশিয়া পুলিশ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। ২৪ মে সেখানকার হাসপাতালে মারা যান জহিরুল। গত ২৮ মে শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় তার লাশ দেশে আনা হয়।
গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে কমান্ডার মঈন জানান, মালয়েশিয়া পৌঁছানোর পরে জনপ্রতি তিন লাখ ২০ হাজার টাকা করে দিতে হবে জানিয়ে তরুণ ও যুবকদের ফাঁদে ফেলত চক্রটি। এরপর গ্রেপ্তারকৃত জসিম ও এলাহীসহ চক্রের অন্য সদস্যরা তাদের ইসমাইলের কাছে নিয়ে আসতেন। তাদের নারায়ণগঞ্জ থেকে বাসে টেকনাফের মানবপাচার চক্রের আরেক সদস্য আলমের কাছে হস্তান্তর করা হতো।
এরপর আলম সুবিধাজনক সময়ে তাদের ট্রলারে করে মিয়ানমারে জামালের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। পরবর্তী সময়ে জামাল তার মিয়ানমারের ক্যাম্পে তাদের আটকে রেখে নির্যাতন করে তা ভিডিও করতেন। পরে সেই ভিডিও আড়াইহাজারের ইসমাইলের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছে পাঠিয়ে ছয় লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করা হতো। যাদের মুক্তিপণের টাকা পাওয়া যেত, তাদের মিয়ানমার থেকে থাইল্যান্ডের সমুদ্রসীমা হয়ে মালয়েশিয়ায় রশিদুলের কাছে পাঠিয়ে দিতেন তারা।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার ইসমাইল নিজের ও অন্য সদস্যদের অংশের টাকা রেখে অবশিষ্ট টাকা মালয়েশিয়ায় রশিদুলের কাছে মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিতেন। পরবর্তী সময়ে রশিদুল ও মিয়ানমারের জামাল মুক্তিপণের টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতেন। রশিদুল প্রায় ২৫ বছর ধরে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করে মানবপাচার চক্র চালাচ্ছেন।
এদিকে মিয়ানমার কোস্টগার্ডের হাতে আটক ১৯ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন।
বর্তমান সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিরোধী দল বিএনপি আয়োজিত পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল শনিবার রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। বেশিরভাগ জায়গায় শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালিত হলেও অনেক জায়গায় বিএনপির পদযাত্রায় হামলা করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। কোথাও কোথাও হামলার পর তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। পরে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ এবং লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসব সহিসংসতায় বিএনপি নেতাকর্মী, পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মীসহ অন্তত ১৪৫ জন আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
নাটোরে পদযাত্রায় আসা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপরে শহরের বিভিন্ন স্থানে হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটে। সকালের দিকে এসব ঘটনা ঘটে। এতে সদরের কাফুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদসহ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে চারজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে ও পাশে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীরা অবস্থান করায় পরে দুপুর ১টার দিকে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে পদযাত্রা শুরু করা হয়। স্থানীয় ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৮টার দিকে ভিন্ন পথে পদযাত্রায় অংশ নিতে আসছিলেন সদরের কাফুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদসহ তার অনুসারীরা। এ সময় নাটোর চিনিকল উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে দুটি কালো রঙের মাইক্রোবাস থেকে মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে। হামলায় চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন ও ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি তুহিনসহ পাঁচজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতরভাবে আহত করে।
নেত্রকোনায় বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি শেষে ককটেল বিস্ফোরণ ও ভাঙচুরের ঘটনায় ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটক হওয়া প্রত্যেকেই বিএনপি নেতাকর্মী বলে জানিয়েছে পুলিশ। এর আগে সকালে জেলা বিএনপির উদ্যোগে শহরের বনোয়াপাড়া এলাকা থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে আবু আব্বাছ ডিগ্রি কলেজের সামনে গিয়ে শেষ হয়। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. আনোয়ারুল হক বলেন, ‘পদযাত্রা শেষে নেতাকর্মীরা ফেরার পথে কুরপাড় সিএনজি স্ট্যান্ড এলাকায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের লোকজন হামলা করে। হামলার পর আমাদের ছয়জন নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। এ ছাড়া আমাদের অঙ্গসংগঠনের অন্তত ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।’
নেত্রকোনা মডেল থানার ওসি মো. লুৎফুল হক বলেন, ‘বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচি শেষ করে ফিরে যাওয়ার সময় কিছু উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মী শহরের কুড়পাড় এলাকায় দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে নাশকতার জন্য মজুদ রাখা অবিস্ফোরিত চারটি ককটেল ও ধারালো অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে।’ নারায়ণগঞ্জে পদযাত্রার সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুলিশসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। পরে পুলিশ টিয়ার শেল ও কয়েক রাউন্ড ফাঁকা রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গতকাল বিকেলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুরে জেলা বিএনপি আয়োজিত পদযাত্রা কর্মসূচির সময় এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, বিকেল থেকে কাঁচপুরে অবস্থান নেয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। তবে আগে থেকে সেখানে মোতায়েন থাকা পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করে। এ নিয়ে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করলে নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়। পরে বিএনপি নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে জড়ো হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ টিয়ার শেল ও ফাঁকা রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ছাড়া জেলার রূপগঞ্জে যুবদলের নেতাকর্মীদের ওপর যুবলীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সময় যুবদলের ১০ জন নেতাকর্মী আহত হন। বিকেলে ভুলতা গাউছিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
হবিগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অর্ধশত আহত হয়েছে। বিকেলে হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, পদযাত্রা উপলক্ষে জেলার ৯টি উপজেলা থেকে সংগঠনের নেতার্মীরা দুপুর থেকেই জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক পৌর মেয়র জি কে গউসের বাসভবনের আশপাশে জড়ো হতে থাকেন। বিকেল ৫টায় শায়েস্তানগর বাজার এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা পদযাত্রা শুরু করেন। পদযাত্রা পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসের কাছে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এ নিয়ে দুপক্ষের তর্কবিতর্ক চলে কিছুক্ষণ। পরে শুরু হয় পুলিশের ধাওয়া। এ সময় উভয় পক্ষকেই একে অন্যদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে দেখা যায়। প্রায় আধঘণ্টা পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষ চলাকালে হবিগঞ্জ থানার ওসি অজয় দেবসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন।
বাগেরহাটে কড়া পুলিশি প্রহরায় সংক্ষিপ্ত পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। বিকেলে বাগেরহাট শহরের মেইন রোডের বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে দলের নেতাকর্মীরা এই কর্মসূচি পালন করে। কর্মসূচি শুরুর আগেই দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
মানিকগঞ্জে পুলিশের বাধার মুখে সংক্ষিপ্ত পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। দুপুরে রোদ-বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে বেউথা ব্রিজ পার হয়ে পদযাত্রাটি শহরের এলজিইডি অফিসের সামনে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে সেখানেই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পদযাত্রায় এসে নেতার মৃত্যু : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপির পদযাত্রায় এসে মোহাম্মদ মিয়া চান (৫৫) নামে এক নেতার মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুরে পৌর শহরের কাউতুলি স্টেডিয়াম মার্কেটের সামনে স্ট্রোক করে মৃত্যু হয় তার। মৃত মিয়া চান বিজয়নগর উপজেলার চরইসলামপুর ইউনিয়নের মৃত মালু মিয়ার ছেলে। তিনি চরইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান সদস্য (মেম্বার) ও তিনবারের ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। বিজয়নগর উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব লিটন মুনশি বলেন, কাউতুলি থেকে ২০০ লোকের একটি পদযাত্রা সরকারি কলেজের সামনে আসার পথে কাউতুলি স্টেডিয়াম মার্কেটের সামনে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন মিয়া চান। পরে তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক স্ট্রোক করে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান।
সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলার প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যে প্রতিবেদনটি তৈরি
বিচার ব্যবস্থায় লিঙ্গ সচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। দেশটির প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে ‘হ্যান্ডবুক অন কমব্যাটিং জেন্ডার স্টিরিওটাইপস’ শীর্ষক পুস্তিকা প্রকাশ করেছেন। তাতে আইনসংক্রান্ত বিভিন্ন নথি এবং রায়ের কপিতে লেখা যাবে না এমন ৪০টি শব্দের উল্লেখ করা হয়েছে।
ইন্ডিয়া টুডে জানায়, এ তালিকায় রয়েছে ‘প্রস্টিটিউট’, ‘লেডিলাইক’, ‘কেরিয়ার উইম্যান’, ‘ইভটিজিং’-এর মতো শব্দ। বৈষম্যমূলক এসব শব্দের বিকল্প শব্দও বলে দেওয়া হয়েছে পুস্তিকায়। যেমন ‘পতিতা’ শব্দটি ব্যবহার করা যাবে না। লিখতে বা বলতে হবে ‘সেক্স ওয়ার্কার’ বা ‘যৌনকর্মী। ‘হাউজওয়াইফ’-এর বদলে ‘হোমমেকার’ ব্যবহার করতে হবে।
তালিকা অনুযায়ী ‘অ্যাফেয়ার’ কথাটিও লেখা বা বলা যাবে না। পরিবর্তে ব্যবহার করতে হবে ‘রিলেশনশিপ আউটসাইড অফ ম্যারেজ’। একইভাবে ‘ইভটিজিং’ শব্দের পরিবর্তে লিখতে হবে ‘স্ট্রিট সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট’ বা ‘পথে যৌন হেনস্থা’। ‘আনওয়েড মাদার’ বা ‘অবিবাহিত মা’ লেখা বা বলা যাবে না। এক্ষেত্রে শুধু ‘মা’ কথাটিই ব্যবহার করতে হবে।
হ্যান্ডবুক অন কমব্যাটিং জেন্ডার স্টিরিওটাইপস পুস্তিকায় বলা হয়েছে, এখন থেকে এমন বিকল্প শব্দগুলোই ব্যবহার করতে হবে এবং এর ব্যবহারও বাড়াতে হবে।
‘কর্তব্যপরায়ণ স্ত্রী’ এবং ‘আজ্ঞাবহ স্ত্রী’-এর মতো শব্দগুলো উচ্চারণ এড়িয়ে চলা উচিত বলে পুস্তিকায় উল্লেখ করা হয়। সেইসঙ্গে ধর্ষণের ক্ষেত্রেও নারীদের সম্পর্কে কোনো অসম্মানজনক উক্তি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলছেন, এই বদলের উদ্দেশ্য, লিঙ্গ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা। যাতে আগামী দিনে আদালতের দেওয়া বিভিন্ন রায়ে এর প্রতিফলন ঘটে। লিঙ্গ সম্পর্কিত গতানুগতিকতা ভাঙতেই এমন উদ্যোগ।
ফেনীর সোনাগাজীতে প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তিন এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে পিটিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। তাদের মধ্যে আহত শিক্ষার্থী সায়মা সুলতানা বাদী হয়ে গতকাল শনিবার ওই ছাত্রলীগ নেতাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সোনাগাজী মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের কাজিরহাট বাজারের পাশে কালিমন্দিরের সামনে হামলার ওই ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আহত অন্য দুই শিক্ষার্থী হলেন ইসরাত জাহান প্রেমা ও তাসলিমা আক্তার শান্তা। আর যার বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তিনি হলেন বগাদানা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সমাজসেবা সম্পাদক রবিউল হাসান। শিক্ষার্থীর করা মামলায় তার সহযোগী মো. তুষার ও মো. মুরাদকে আসামি করা হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে সায়মা সুলতানা বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার বক্তারমুন্সী কলেজে বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা শেষে ডাকবাংলো মধুমেলা নামে মিষ্টি দোকানের ভেতর কিছু খাওয়ার জন্য যাই। সে সময় অভিযুক্তরা আমাদের পেছনে মিষ্টির দোকানে প্রবেশ করে। সেখানে তারা আমাদের উদ্দেশে বিভিন্ন কটূক্তিমূলক কথাবার্তা বলে। একপর্যায়ে রবিউল হাসান আমাকে বলে, “তোর ফেসবুকে আমি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাইছি, দ্রুত ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাক্সেপ্ট করবি।” তখন আমি তার অনুরোধে সাড়া না দিলে রবিউল হাসান দোকানদারের সামনে আমার বোরকা ও হিজাব ধরে টানাটানি করে। আমি প্রতিবাদ করলে সে আমাকে লাথি মারে। কিছুক্ষণ পর আমি ও আমার বান্ধবীসহ ডাকবাংলো সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে একটি সিএনজিযোগে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলে তারা আমাদের অনুসরণ করে। সিএনজি থেকে নেমে দরবেশ ইউনিয়নের কালীবাড়ির সামনে রাস্তার ওপর দাঁড়ালে তারা আমাদের দেখে সিএনজি থেকে নামতে বলে। তারা আমাকে সিএনজি থেকে হাত ধরে টান দিয়ে নামায়। এ সময় তারা আমার অন্য দুই বান্ধবীকে টানাটানি করে শ্লীলতাহানি করে। আমরা চিৎকার দিলে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে তারা দ্রুত পালিয়ে যায়।’
তবে এলাকাবাসী জানায়, ‘সায়মা সুলতানার সঙ্গে রবিউল হাসানের দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কয়েক মাস ধরে রবিউল এলাকায় মাদক কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। তাকে সুপথে ফেরাতে না পেরে সায়মা তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিন্ন করেন। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে সায়মাকে মারধর করে রবিউল। তার বান্ধবীরা এগিয়ে গেলে তাদেরও শ্লীলতাহানি করে। পরে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বসে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টাও করেন।’
এদিকে ঘটনাটি জানতে পেরে স্থানীয় সাংবাদিক গিয়াস উদ্দিন মামুন তার ফেসবুক আইডি থেকে গত শুক্রবার বিকেলে এ বিষয়ে একটি পোস্ট দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রলীগ নেতা রবিউল ও তার সহযোগীরা রাতেই সাংবাদিক মামুনের ওপর হামলার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে তিনি গতকাল বিকেলে সোনাগাজী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
তবে ছাত্রলীগ নেতা রবিউল হাসান তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের (মামলার বাদী ছাত্রী) তর্কাতর্কি হয়েছে, তবে কোনো মারধরের ঘটনা ঘটেনি।’
আর সাংবাদিক মামুনের ওপর হামলার চেষ্টার বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো উত্তর দেননি রবিউল।
এ বিষয়ে সোনাগাজী মডেল থানার ওসি হাসান ইমাম বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সাংবাদিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ কাজ করছে।’
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা থেকে ভাঙ্গা অংশে পরীক্ষামূলক রেল ট্র্যাক কার চলাচল করেছে। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ট্র্যাক কারটি ঢাকার গে-ারিয়া রেল স্টেশন থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এটি মাওয়ায় এসে পৌঁছায়। পরে এখান থেকে ট্র্যাকটি ভাঙ্গার উদ্দেশে রওনা হয়। গে-ারিয়া থেকে শুরু করে চলতি পথে রেল ট্র্যাকটিতে থাকা পর্যবেক্ষক দল ঢাকা-মাওয়া অংশে স্থাপিত রেল লাইনের বিভিন্ন পয়েন্টে ও স্টেশনের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো পর্যবেক্ষণ করে। পরে মাওয়া থেকে দুপুর ১২টার দিকে রেল ট্র্যাকটি ভাঙ্গার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮১ কিলোমিটার যাত্রীবাহী রেল চলাচলের জন্য পরীক্ষামূলক এই কার্যক্রম চালানো হয়।
পদ্মা রেলওয়ে প্রকল্পের ব্যবস্থাপক-২ ব্রিগেডিয়ার আহমেদ জামিউল ইসলাম বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই রেল চলাচল শুরু হবে। তার প্রস্তুতি হিসেবেই শনিবার রেলওয়ের পরিদর্শক দল আনঅফিশিয়ালি রেলওয়ে ট্র্যাক চালিয়ে ঢাকা থেকে ভাঙা পর্যন্ত পরিদর্শন করে। এটি সন্তোষজনক পরিদর্শন ছিল। সকাল সোয়া ৯টার দিকে ঢাকার গে-ারিয়া থেকে ট্র্যাক কারটি যাত্রা শুরু করে। বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী সেতুসহ চারটি সেতু পারি দেয় ট্র্যাক কারটি। পথিমধ্যে কেরানীগঞ্জে কিছু সময় অপেক্ষা করা হয়। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিমতলা দিয়ে মাওয়া স্টেশনে আসে। সেখানে থেকে আবার ভাঙ্গা যায়।
তিনি আরও বলেন, সেপ্টেম্বরেই ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হবে। তবে তারিখ নির্দিষ্ট হয়নি। আগামী সোমবার আবারও পরিদর্শনের সম্ভাবনা রয়েছে।
পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্প সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের দুটি ফেস ভাগ করা হয়েছে। একটি ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮১.৮৭৫ কিলোমিটার, আরেক ফেজে ভাঙ্গা জংশন থেকে যশোর পর্যন্ত ৭৯ কিলোমিটার। দুটি ফেজকে কাজের সুবিধার জন্য তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে ঢাকা থেকে মাওয়া, মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও ভাঙ্গা থেকে যশোর। গত জুলাই পর্যন্ত ঢাকা থেকে মাওয়া অংশের নির্মাণকাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮০ শতাংশ। একইভাবে মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের ৯৬ শতাংশ ও ভাঙ্গা-যশোর অংশের নির্মাণকাজের অগ্রগতি ৭৬ শতাংশ। জুলাই পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮১ শতাংশ।
রাজধানীর আজিমপুর থেকে অস্ত্র, গুলিসহ ছাত্রদলের ছয় নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার রাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তরফ থেকে পাঠানো এক খুদে বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। আজ রবিবার ডিএমপি সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
গতকাল বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর দেওয়া এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়, গত শুক্রবার গভীর রাতে ছাত্রদল নেতা মমিনুল ইসলাম জিসান তার আজিমপুরের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন। মমিনুল ইসলামের খোঁজ নেওয়ার জন্য আজিমপুরে তার বাসার সামনে গেলে বাকি পাঁচজনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। রিজভী বলেন, ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মমিনুল ইসলাম বেলা ১১টায় তার আজিমপুরের বাসা থেকে বের হন। তখন থেকে খবর পাওয়া যাচ্ছে না। তার খোঁজ নেওয়ার জন্য মমিনুল ইসলামের বাসার সামনে গেলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক শাহাদত হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহসভাপতি মো. হাসানুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল রিয়াদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হল শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দীন মোহাম্মদ বাবরকে সাদাপোশাকধারী লোকেরা তুলে নিয়ে যায়।
বিবৃতিতে রিজভী বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বেআইনিভাবে আটকের পর তা অস্বীকার করা এখন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এ ধরনের অমানবিক ঘটনা প্রতিদিন ঘটছে। আটকের পর অস্বীকার করাটা অবৈধ আওয়ামী সরকার বিরোধী দল নিধনে মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
তবে গতকাল এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলে ছিলেন, তারা ছাত্রদলের কাউকে গ্রেপ্তার করেননি। অবশ্য গতকাল রাতে লালবাগ থানার ওসি খোন্দকার হেলালউদ্দীন ওই ছয়জনকে আটকের কথা জানান। তিনি জানান, তারা ডিবি হেফাজতে আছেন। তাদের আজ রাতেই থানায় নিয়ে আসা হবে।
এর আগে বিএনপির পক্ষ থেকে ছাত্রদলের ওই ছয় নেতাকে ‘তুলে নেওয়ার’ অভিযোগ করা হলেও তা অস্বীকার করেছিল পুলিশ। পরে বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পদযাত্রা অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, আগামী ছয় ঘণ্টার মধ্যে তাদের জনগণের সামনে হাজির না করলে, মুক্তি না দিলে সব দায় সরকারকে নিতে হবে। পরে গতকাল রাতে ডিএমপি ও লালবাগ থানা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারের তথ্য জানায়।
এদিকে গতকাল রাতে সাড়ে ১১টার দিকে রিজভী দাবি করেছেন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় ডিবি স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি ডা. জাহেদুল কবীর, ছাত্রদলের সহসাংগঠনিক আরিফ সরকারসহ ছয়-সাতজনকে ধরে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, অফিসের নিচে এখনো ডিবি ও থানা পুলিশ আছে। তবে ডিবির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, তারা পল্টন থেকে কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করেনি।
জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। যে সিরিজে চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। আর এই সিরিজে পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল! এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। একদিন পরে অবশ্য অবসর ভাঙলেও সেই সিরিজ আর খেলেননি তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে সাকিব সেই সিরিজ হারের দায় দিলেন তামিমের ওপরই।
'আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হারটা আমি পুরোপুরি একজনকে দায় দেব, অধিনায়ক। এক ম্যাচ পরে আমাদের হাতে আরও দুই ম্যাচ ছিল। আমরা তৃতীয় ম্যাচে ঠিকই কামব্যাক করেছি কিন্তু একটা ম্যাচ সময় লেগেছে আমাদের। সুতরাং এটা আর কারো দায় নয়, পুরো সিরিজটায় দায় একজনের ওপর। বিশ্বের কোথাও অন্তত দেখিনি যে এক ম্যাচ পরেই এরকম অধিনায়ক এসে ইমোশনালি বলে ফেলেন যে আমি ভাই খেলব না আর ক্রিকেট।’
সাকিব বলেন, 'আমার ধারণা যদি কোনো অধিনায়কের দায়িত্ববোধ থাকত, সে এটা করতে পারত না। আমার কাছে মনে হয়, এটা দলকে অনেক বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে এবং আমার মনে হয় ওইটাই এখনো রিকভার করতে সময় লাগছে, যেটা আমি অনুভব করি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।