
মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর সদ্য প্রয়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস ও মন্তব্য করায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের আরও ২১ নেতাকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে লালমনিরহাটে ১৩ ও ভোলায় ছাত্রলীগের চার নেতাকর্মী, খুলনায় যুবলীগের দুই নেতা এবং কুমিল্লায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সাঈদী ইস্যুতে দেশজুড়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন তিনটির বিভিন্ন ইউনিটের শতাধিক নেতাকে বহিষ্কার করা হলো।
সংগঠনবিরোধী ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে লালমনিরহাটে ১৩ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রাশেদ জামান ও সাধারণ সম্পাদক আরিফ ইসলাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। বহিষ্কৃতরা হলেন জেলা শাখার সহসভাপতি হুমায়ুন কবীর হিরু, কালীগঞ্জের চলবলা ইউনিয়ন শাখার সভাপতি সাইদুল ইসলাম সুমন, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক হাসান ভূঁইয়া, হাতীবান্ধার গোতামারী ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোনাবেরুল হক মিশেল, কালীগঞ্জের উত্তরণ ডিগ্রি কলেজের কর্মী মামুনুর রশিদ লিওন খান, হাতীবান্ধার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন হোসেন সাগর, সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম রানা, একই ইউনিয়নের আইনবিষয়ক সম্পাদক রবিউল ইসলাম রবিন, লালমনিরহাট পৌর শাখার ৪ নম্বর ওয়ার্ড সহসভাপতি শ্রাবণ হোসেন, মোগলহাট ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম ইসলাম, লালমনিরহাট পৌর শাখার সদস্য ইসমাইল হোসেন আদর, পাটগ্রামের জোংড়া ইউনিয়নের সদস্য সহিদ ও পাটগ্রাম পৌর শাখার ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ইবনে রসিদ। একই সঙ্গে তাদের স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।
এ ছাড়া একই ইস্যুতে ভোলার দৌলতখান উপজেলা ছাত্রলীগের চার নেতাকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। শনিবার রাতে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রায়হান আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক হাসিব মাহমুদ হিমেল স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। অব্যাহতি পাওয়ারা হলেন দৌলতখান উপজেলা শাখার সহসভাপতি নাবিউর রহমান রাফি, মেহেরাব হোসেন মিরাজ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাশরাফি চৌধুরী ও প্রচার সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রাজ।
একই কারণে খুলনার রূপসা উপজেলার নৈহাটী ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি মো. তারেক আজিজ ও জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. আশিক ইকবালকে যুবলীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গত শনিবার সন্ধ্যায় রূপসা উপজেলা যুবলীগের এক জরুরি সভায় তাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রূপসা উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক এ বি এম কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তাদের বহিষ্কারের কথা জানানো হয়।
এ ছাড়া সাঈদীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই নেতাকে সংগঠন থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন নাঙ্গলকোট উপজেলা শাখার সহসভাপতি মো. জসিম উদ্দিন ও আদ্রা দক্ষিণ ইউনিয়ন শাখার সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুর রহমান ভুট্টু। গত শনিবার উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের দপ্তর সম্পাদক আল-আমিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
সংশ্লিষ্ট জেলা, উপজেলা ও অঞ্চলের প্রতিনিধি এবং সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যে প্রতিবেদনটি তৈরি
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ট্রেজারার পদে আবেদন না করলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের নামে গায়েবি আবেদন জমা পড়েছে। সবশেষে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থাকে লিখিত দিয়ে মুক্তি মিলেছে এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে।
জানা যায়, সম্প্রতি মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ ট্রেজারার পদে নিয়োগ আবেদন করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুস সবুর খান আবেদন করেন। তবে একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহসীন উদ্দীন মিয়া নিজে আবেদন না করলেও তার নামে আরেকটি আবেদনপত্র জমা পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও গোয়েন্দা সংস্থা থেকে মূল কাগজপত্র চাইলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন এই অধ্যাপক। পরে ‘আমি আবেদন করিনি’ এই মর্মে গোয়েন্দা সংস্থাকে লিখিত দিতে হয়েছে ওই অধ্যাপককে।
এই জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকের কাগজপত্র ও স্বাক্ষর জালিয়াতি করে কে বা কারা আবেদনপত্র জমা দিয়েছে এ নিয়ে বিভাগে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিভাগের একাধিক শিক্ষকের দাবি, চেয়ারম্যান ছাড়া এ কাজ করা অন্যদের পক্ষে সম্ভব নয়। অন্য প্রার্থীকে সুবিধা দিতে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দীন এমন কাজ করতে পারেন বলে ধারণা তাদের। এ ঘটনা ঘটার পর অধ্যাপক ড. মুহসীন উদ্দীন মিয়া বিভাগের কম্পিউটারে সংরক্ষিত তার সব কাগজপত্র সরিয়ে নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অধ্যাপক বাহাউদ্দীন। এদিকে লিখিতভাবে জানালে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
অধ্যাপক ড. মো. মুহসীন উদ্দীন মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ট্রেজারার পদে আমি নিজে আবেদন করিনি। হঠাৎ আমার কাছে মূল কাগজপত্র চাওয়া হচ্ছে। আমি বিষয়টি নিয়ে খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যাই। সর্বশেষ গোয়েন্দা সংস্থাকে (এনএসআই) লিখিত দিয়েছি যে আমি আবেদন করিনি। তবে কে বা কারা এ কাজ করেছে তা আমার জানা নেই। এ ঘটনায় সিনিয়র অধ্যাপক হিসেবে আমি বেশ বিব্রতবোধ করছি। এমন পরিস্থিতির জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগের এক শিক্ষক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সিনিয়র একজন অধ্যাপকের সঙ্গে এমনটি কখনই কাম্য নয়। অধ্যাপক আবদুস সবুর খান চেয়ারম্যানের কাছের লোক হওয়ায় এমনটি করতে পারেন। কারণ চেয়ারম্যান ছাড়া কারও পক্ষে এ কাজ সম্ভব নয়। অন্য কোনো ক্যান্ডিডেট না থাকলে ভাইভা বোর্ড বসবে না এ কারণে তার অজান্তে এমন মানহানিকর কাজ করা হয়েছে।’
বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার বলেন, ‘এ বিষয়টি বিভাগে ওপেন সিক্রেট। একজনের কাগজপত্র তার অনুমতি ছাড়া অন্যজন আবেদন করা নৈতিক স্খলন ও প্রতারণার শামিল বলে আমি মনে করি। আশাকরি বিষয়টির তদন্ত হবে এবং কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তার নামে আবেদন অন্য কেউ করেছে কি না বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি নিজেই সাক্ষী তার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের লোকজন এসে কথা বলেছে। এরপর কী হয়েছে আমি জানি না। তারা কাকে নেবে না নেবে এটা তাদের বিষয়। আমার সঙ্গে এর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিষয়টি খুবই বিব্রতকর। তার সম্মান নষ্ট করার জন্য কেউ এ কাজটি করেছে কি না সে বিষয়ে তদন্ত করা যাবে যদি তিনি লিখিত অভিযোগ দেন। উপাচার্য বরাবর লিখিতভাবে বিষয়টি জানালেই নিশ্চয়ই তদন্ত হবে এবং যেই করুক তাকে বিচারের আওতায় আনা যাবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একজনের আবেদন আরেকজন জমা দেওয়া খুবই অপ্রত্যাশিত। কেউ তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে এমন কাজ করেছে কি না তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তবে অধ্যাপক মুহসীন সততার পরিচয় দিয়েছেন।’
উল্লেখ্য, অভিযুক্ত ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দীন ও আবেদনকারী অধ্যাপক ড. মো. আবদুস সবুর খান দুজনই গত বছরের ১৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কর্তৃক তিন বছরের জন্য বিভাগের পরীক্ষা-সংক্রান্ত সব কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার হন।
বহিষ্কৃত শিক্ষককে ট্রেজারার পদে নিয়োগ দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, অনেকের নাম আসতে পারে। সবকিছু বিবেচনা করেই নিয়োগ দেওয়া হবে।
ইলিশের ভরা মৌসুমে মন্দাভাব থাকলেও হঠাৎ করেই বঙ্গোপসাগর খুলে দিয়েছে রুপালি ইলিশের ডালি। হাসির ঝিলিক ফুটেছে বরগুনার জেলেদের মুখে। সরবরাহ বেড়েছে চাঁদপুরের মোকাম ও বাজারগুলোতে। কিন্তু বরিশালের বাজারগুলোতে নেই পর্যাপ্ত সরবরাহ। লাখ লাখ টাকার দাদন দিয়েও মাঝিদের খুঁজে পাচ্ছে না পাইকারি বিক্রেতারা। এতে বিপাকে পড়ছেন খুচরা বিক্রেতা ও ঘাটের শ্রমিকরা। তবে দীর্ঘ সময়ের পর পটুয়াখালীর জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরছে গভীর সমুদ্রের জেলেরা। ইলিশের দেখা পেয়ে খুশি জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। তবে জেলেদের জালে ইলিশ ভরপুর হলেও বাজারে দাম আগের মতোই আছে। আমাদের বরগুনা প্রতিনিধি সুমন সিকদার, চাঁদপুর প্রতিনিধি তালহা জুবায়ের, বরিশাল প্রতিনিধি সুকান্ত অপি এবং কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি মো. বাাচ্চু খলিফা জানিয়েছেন ইলিশের চালচিত্র।
বঙ্গোপসাগর খুলে দিয়েছে রুপালি ইলিশের ডালি : ইলিশের ভরা মৌসুমে ইলিশের মন্দাভাব থাকলেও হঠাৎ করেই বঙ্গোপসাগর খুলে দিয়েছে রুপালি ইলিশের ডালি। হাসির ঝিলিক ফুটেছে জেলেদের মুখে। ইলিশের আনাগোনায় দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্যঘাট জেলে ও মৎস্যজীবীদের পদচারণা সরগরম হয়ে উঠেছে। মৎস্য বন্দরে এসে ভিড়ছে মাছবোঝাই ফিশিং ট্রলার, কেউ মাছ তুলছে তীরে, আবার কেউ দর হাঁকাচ্ছে বিক্রির উদ্দেশ্য। কারও যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এভাবেই সরগরম বাংলাদেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য ঘাট। পর্যাপ্ত ইলিশের দেখা মিললেও দাম আকাশছোঁয়া।
গতকাল সকালে বরগুনার পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্যঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, ঘাটের পাশের খালে নোঙর করে আছে সারি সারি ফিশিং ট্রলার। ভরা মৌসুম থাকা সত্ত্বেও যেখানে গত সপ্তাহেও ঘাটে কোনো ট্রলার ছিল না, সেখানে এখন ট্রলার নোঙর করার জায়গা পাচ্ছে না। জেলেরা বলছে, গত তিন-চার দিন ধরে বঙ্গোপসাগরে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ছে। অন্যদিকে এসব মাছ পরিবহনের জন্য বিএফডিসি ঘাটে অপেক্ষা করছে মাছবাহী ট্রাক। ইতিমধ্যেই অনেক ট্রাক মাছ নিয়ে চলে গেছে রাজধানী শহর ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাগুলোতে।
সাগর থেকে মাছবোঝাই ট্রলার নিয়ে ঘাটে এসেছে এফবি মায়ের দোয়া। মাঝি জয়নাল বলেন, সাত দিন আগে সাগরে গেছি। প্রথম দিন মাছ না পেলেও তার পরদিন থেকে পর্যাপ্ত মাছ পেয়েছি। ট্রলারবোঝাই ইলিশ নিয়ে আমরা মৎস্যঘাটে এসেছি। মাছ বিক্রি করে আমরা বাগেরহাট চলে যাব। বঙ্গোপসাগর থেকে ফিরে আসা মো. কাদের, সগির, রুস্তমসহ একাধিক জেলেরা বলেন, এখন সাগরে প্রচুর পরিমাণে মাছ ধরা পড়ছে।
জেলেদের জালে পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়লেও দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। বরং বাড়তি মাছ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এর দাম। বিএফডিসি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মৎস্য ব্যবসায়ী ও জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাইকারি বাজারে এক কেজির ওপরে গ্রেড সাইজের প্রতিমণ সামুদ্রিক ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ হাজার টাকা, একই সাইজের নদীর ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭২-৭৫ হাজার টাকা দরে। ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি সাইজের প্রতিমণ সামুদ্রিক মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪২-৪৫ হাজার টাকা, একই সাইজের নদীর ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ হাজার টাকা মণ। ৭০০ গ্রাম ওজনের সামুদ্রিক মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৪-৩৬ হাজার টাকা দরে, একই সাইজের নদীর মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৮ হাজারে। ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রামের ছোট সাইজের সামুদ্রিক মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫-২৮ হাজার আর একই সাইজের নদীর মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৬-৪০ হাজার টাকা দরে। তবে খুচরা বাজারে এ মাছের দাম আরও বেশি।
দক্ষিণাঞ্চলের ইলিশে চাঙ্গা বড়স্টেশন মাছঘাট : দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সরবরাহকৃত ইলিশে চাঙ্গা হয়ে উঠছে চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাট। গেল তিন-চার দিন ধরে দেড় থেকে দুই হাজার মণ ইলিশ সরবরাহ হচ্ছে বাজারে। সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দামও কমেছে কিছুটা। তবে ইলিশ ধরা কম পড়ায় চাঁদপুরের স্থানীয় পদ্মা-মেঘনার মাছের দাম কিছুটা বেশি।
চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাটে সকাল থেকেই কর্মব্যস্ত সময় কাটছে শ্রমিকদের। উপকূলীয় অঞ্চলের জেলা থেকে ট্রলার ও পিকআপ ভ্যানে করে নিয়ে আসা ইলিশ তোলা হচ্ছে বাজারে। পাইকারের হাঁকডাকে এসব মাছ কেনাবেচায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত সরকার বলেন, এ বছর মৌসুম জুড়ে ইলিশ সংকট ছিল বাজারে। দামও ছিল অনেক বেশি। এ কারণে আমরা ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তবে গেল তিন-চার দিন ধরে ইলিশের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে। তবে স্থানীয় পদ্মা-মেঘনায় ইলিশের খরা কাটেনি। বর্তমানে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার মণ ইলিশ উঠছে বাজারে। আগামী মা ইলিশের অবরোধের আগপর্যন্ত যদি তা অব্যাহত থাকে, তবে ক্রেতারা অল্প দামে ইলিশ কিনতে পারবেন এবং আমরাও ক্ষতি পুষিয়ে লাভের মুখ দেখতে পাব।
চাঁদপুর সদরের আনন্দ বাজার এলাকার জেলে ইদ্রিস মিয়া বলেন, ইলিশের মৌসুম শেষ হওয়ার পথে। কিন্তু নদীতে মাছ পাচ্ছি না। মাছ বেঁচে কোনো দিন দুই-চারশো টাকা পেলেও অধিকাংশ সময়ই নৌকার জ¦ালানি খরচ তুলতে কষ্ট হয়ে যায়।
মাছ ব্যবসায়ী বিপ্লব বলেন, গত তিন-চার দিন অনেক ইলিশ বাজারে উঠেছে। তবে এখন সেই তুলনায় কিছুটা কম। এই সময়ে অন্তত দেড় থেকে দুই হাজার মণ মাছের সরবরাহ হয়েছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০০-৬০০ মণ। মাছের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দামও কমেছে। তিনি বলেন, আকারভদে কেজি প্রতি ইলিশের দাম কমেছে ২০০-৩০০ টাকা। বর্তমানে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। ৭০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১১০০ থেকে ১২৫০ দরে এবং ছোট সাইজের ইলিশ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকায়। তবে স্থানীয় ইলিশের দাম আকারভেদে ২০০-৩০০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ভরা মৌসুমে মিলছে না ইলিশ : দক্ষিণাঞ্চলের স্থানীয় বাজারগুলোতে দেখা মিলছে না রুপালি ইলিশের। তাই চাহিদা অনুযায়ী ক্রেতারা বাজারে ইলিশ পাচ্ছেন না। অন্যদিকে লাখ লাখ টাকার দাদন দিয়েও মাঝিদের খুঁজে পাচ্ছে না পাইকারি বিক্রেতারা। এতে বিপাকে পড়ছেন খুচরা বিক্রেতা ও ঘাটের শ্রমিকরা।
স্থানীয় বাজারের আড়তদারদের অভিযোগ, নদী ও সাগরে ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়ে চাপিলা নামে ধরা পড়ছে ব্যাপক ইলিশের পোনা। ফলে জাটকা ধরা বন্ধ থাকলেও মিলছে না কোনো সুফল। তাই দুষছেন মৎস্য কর্মকর্তারসহ সংশ্লিষ্টদের। এ ছাড়া পদ্মা সেতু হওয়ায় ঢাকার দাদনরা সরাসরি ইলিশের মাঝি, বোটমালিকের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। তাই তারা স্থানীয় বাজারে ইলিশ না উঠিয়ে সরাসরি ঢাকাসহ অন্যান্য স্থানে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এ কারণে স্থানীয় বাজারে এখন ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না।
গতকাল সকালে বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড মোকামে সরেজমিনে দেখা যায়, অনন্য বছরে তুলনায় অর্ধেক ইলিশও উঠছে না বাজারে। এর আগে দুপুর ২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত মোকাম থাকত ইলিশে ভরপুর। কিন্তু এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। সকাল ৯ থেকে ১০টার মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে ইলিশ বেচাকেনা। আগের মতো ব্যস্ত নেই শ্রমিকদেরও। ঘাটে ইলিশ না পাওয়ায় শ্রমিকদের সময় কাটছে হা-হুতাশ করে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সময় কাটাচ্ছেন চায়ের দোকানে বসে। অন্যদিকে পদ্মা সেতুর কারণে এখন বরিশাল মোকামেও আসে না আগের মতো বোট। খরচ কমাতেই এখন সড়ক পথে ইলিশ এক মোকাম থেকে অন্য মোকামে পাঠানো হয়। তেমনি ট্রাক ভরে ইলিশ নামতে দেখা যায় বরিশালের এই মোকামে।
বাজারে চাহিদা অনুযায়ী ইলিশ না থাকায় অন্যান্য বছরের তুলনায় পাইকারি ও খুচরা বাজের দ্বিগুণ দাম বেড়েছে। পাইকারি বাজারে আকারভেদে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামের সাইজের ইলিশের প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯৮২ টাকায়, ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০৭ টাকায়, ১ কেজি সাইজ ১ হাজার ৫০০, ১২০০ গ্রাম থেকে ১৩০০ গ্রাম বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৭৫৭ এবং দেড় কেজি সাইজে ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৭ টাকায়।
পোর্ট রোডের মেসার্স মনু অ্যান্ড ব্রাদার্সের আড়তদার অঞ্জন দাস দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রতি বছরের তুলনায় আমাদের বরিশাল মোকামে অর্ধেক ইলিশও পাচ্ছি না। ইলিশের চাহিদা পূরণ করতে পারছি না। লাখ লাখ টাকা দাদন দেওয়া আছে; কিন্তু ইলিশ নেই। যেখানে এক হাজার মণের জায়গায় এখন প্রতিদিন ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৪০০-৫০০ মণ। ইলিশ কম হওয়ায় এখন অনেক ব্যবসায়ী মাছ কিনতে পারছেন না। বরিশাল মোকামে প্রায় ১৬০ আড়তদার আছে। তারা অনেকেই আড়ত এখন বন্ধ করে দিয়েছে। মাছ নেই, আড়ত দিয়া কী করবে? স্থানীয় নদীগুলোতেও কোনো ইলিশ ধরা পড়ছে না। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এমনটা হতে পারে।’
কলাপাড়া উপজেলা মাঝি সমিতির সভাপতি নুরু মাঝি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমানে আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন আমরা লক্ষ করছি। তাই উপকূলীয় নদী বন্দরগুলোয় এখন ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। গভীর সমুদ্রে প্রচুর ইলিশ আছে। কিছুদিন আগে বৃষ্টির সময়ে কিছু মাছ উপকূলীয় নদীতে ধরা পড়েছিল। কিন্তু বর্তমানে মোটেই পাওয়া যাচ্ছে না। সেজন্যও স্থানীয় বাজারে নদীর মাছগুলো উঠে না। আর গভীর সমুদ্রে বর্তমানে অনেক বড় বড় সাইজের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলো বাজারে দেখা যাচ্ছে।’
মৎস্য অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগ অফিসের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমানে ইলিশ সাগর থেকে নদীর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তাই ইলিশ একটু কম ধরা পড়ছে। কিন্তু চলতি মৌসুমের আগামী অক্টোবর থেকে বরিশাল অঞ্চলের নদীতে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়বে। নদীতে পানির স্রোত, বৃষ্টি এবং পানির গভীরতা যদি ঠিকমতো না থাকে, তাহলে ইলিশ চলাচলে বাধা পায়। এ ছাড়া কোথাও যদি ডুবোচর থাকে সেখানে ইলিশ চলাচলে বাধা পায়। তাই ইলিশ চলাচলে দিক পরিবর্তন করে থাকে। আর আমাদের এ অঞ্চলে চলতি বছরে আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিও কম হয়েছে। ঝড়বৃষ্টির সময়ই প্রচুর পরিমাণে ইলিশ পাওয়া যায়। তখন ইলিশ চলাচলে আবহাওয়া তাদের অনুকূলে থাকে। আমাদের আশা অক্টোবরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ জেলেদের জালে ধরা পড়বে।
দীর্ঘদিন পর হলেও ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ইলিশ : দীর্ঘ সময়ের পর জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরছে গভীর সমুদ্রের জেলেরা। দীর্ঘদিন পর ইলিশের দেখা পেয়ে খুশি জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। তবে গভীর সমুদ্রের জেলেরা কাক্সিক্ষত ইলিশের দেখা পেলেও উপকূলবর্তী জেলেরা হতাশ। গতকাল পটুয়াখালীর বড় দুটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আলীপুর-মহিপুর ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন আড়তগুলোতে স্থানীয় ছাড়াও চট্টগ্রাম, ভোলা, বাঁশখালী, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার থেকে অনেক ট্রলার এখানে বিক্রি করতে এসেছে। ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ায় সরগরম পুরো মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। বিভিন্ন সাইজের ইলিশের ক্রয়-বিক্রয় খুশি জেলেরা।
মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে মাছ বিক্রি করতে আসা ভোলার ট্রলার এফবি সাথীর মাঝি নুরু মিয়া বলেন, ‘অনেক মাস পরে এত মাছের দেখা পেলাম। এবার প্রায় ৮ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করলাম। এভাবে মাছ পেলে আমরা আগের দেনা পরিশোধ করতে পারব।’
আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ভাই ভাই ফিশের পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, গভীর সমুদ্রের জেলেরা ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ নিয়ে আসছে এবং ভালো দামও পাচ্ছে। জাটকা ১৯ হাজার, ৬০০-৭০০ গ্রামের ইলিশ ২৫ হাজার, ৮০০-৯০০ গ্রামের ইলিশ ৩৩ হাজার এবং এক কেজি ওপরের ইলিশ ৪৫ থেকে ৬৫ হাজার টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। তবে এ দামে জেলেরা খুশি থাকলেও পাইকারি ক্রেতারা প্রায়ই লোকসান গুনছেন।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, গত কয়েক দিন ধরে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারকারী ট্রলারগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ নিয়ে ফিরছে। তবে কাক্সিক্ষত ইলিশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপকূলবর্তী জেলেরা। এর প্রধান কারণ হলো আন্দারমানিক ও রামনাবাদ চ্যানেলসংলগ্ন বেশ কয়েকটি ডুবোচর সৃষ্টি হয়েছে, যে কারণে ইলিশ তার গতিপথ পরিবর্তন করেছে। ৬৫ দিনের অবরোধের সুফল পাচ্ছে জেলেরা। তাই উপকূলে জেলেদের জন্য পরামর্শ থাকবে তারা যেন গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারের সরঞ্জামাদি তৈরি করে।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বাধায় প্রায় দুই বছর ধরে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় নির্মাণাধীন নদী প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ বন্ধ রয়েছে। বিএসএফের বাধার মুখে নদীর তীর রক্ষা প্রকল্পের এ কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। যার ফলে ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে নদী তীরবর্তী হাজারও পরিবার। এ ছাড়া সীমান্তে ভারত-বাংলাদেশের চাতলা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টও ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
পাউবোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মনু নদীর ভাঙনে ভয়াবহ বন্যা হতে জেলার কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলাকে রক্ষা করতে নদীর তীর রক্ষা প্রকল্প হাতে নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। ২০২১ সালে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ পায় মেসার্স হাসান অ্যান্ড ব্রাদার্স নামে ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের আওতায় কুলাউড়া উপজেলার তেলিবিল, বাগজোড়, দত্তগ্রাম ও নিশ্চিন্তপুর এ চারটি পয়েন্টের বাঁধে জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লকের ডাম্পিংয়ের কাজসহ নদীর বাঁধ উঁচুকরণের কাজ হাতে নেওয়া হয়। ৫৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ তৈরির কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব পাওয়ার পর ২০২২ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু হলে এতে বাধা দেয় বিএসএফ। পরে আরও কয়েকবার ঠিকাদরি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করতে চাইলে আবারও বাধার মুখে পড়ে প্রকল্পের কাজ। এতে প্রায় দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে এ প্রকল্পের কাজ। কাজ শুরু করতে ভারতের কাছে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
এলাকাবাসী জানায়, ২০১৮ সালে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে তলিয়ে যায় শত শত বাড়িঘর। বন্যায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে হাজারও পরিবার। মনু নদীর পানি বিপদসীমার ১৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ সময় উদ্ধারকাজে অংশ নেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে মনু নদীর পানি বাড়লে আতঙ্কে দিন কাটাতে হয়। নদীর পানির উচ্চতা বাড়লে ভয় ধরে মনে। পানির তীব্র স্রোতের সময় নদীভাঙনের সম্ভাবনা থাকে। নদী ভাঙলে হাজারও পরিবারকে ঘরছাড়া হতে হবে। নদীভাঙনের সময় প্রাণ বাঁচাতে প্রাথমিক অবস্থায় আশ্রয় নিতে হয় নদীর বাঁধে। ফলে বাঁধরক্ষা না হলে বিপদের সময় আশ্রয় নেওয়ারও জায়গা থাকবে না বলে জানান তারা।
মিসবাহ উদ্দিন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গেল বন্যায় নদী ভাঙলে চাতলাপুর চেকপোস্ট এলাকার ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখন নদীরক্ষা বাঁধ না হলে আগামীতে বন্যায় পুরো এলাকা বিপর্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘কাজ শুরু করতে ভারতের কাছে চিঠি পাঠালেও তারা কোনো সাড়া দেয়নি। সম্প্রতি আবার কাজ শুরু করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। যদি সমাধান হয় তাহলে কাজ শুরু করা হবে।’
তাকে প্রায় একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। পরনে সাদা গেঞ্জি আর সাদা প্যান্ট; ডান কাঁধে ঝোলানো কাপড়ের ব্যাগ। প্রখর রোদের মধ্যেও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্ল্যাকার্ডে লেখাÑ ‘অসৎ সঙ্গ চাই না।’ চলার পথে আমি সাধারণত বিরল চরিত্রের মানুষ দেখলে ছবি তুলি। কিন্তু সাম্প্রতিক ব্যস্ততায় তার ছবি তোলা হয়নি।
গত শুক্রবার ফেসবুক ওয়ালে হঠাৎ তার একটি ছবি চোখে পড়ে। ছবিটি পোস্ট করেন বন্ধুজন আনোয়ার হোসেন। ছবিটার দিকে তাকিয়ে আমার চোখ আটকে যায়; ভাবনার পরিধি প্রসারিত হতে থাকে। ভাবি তিনি এর মাধ্যমে কী প্রচার করতে চান? নিজের ভেতর নানা প্রশ্নের ভিড়ে মনে হলো, সাধারণ একজন মানুষ; কিন্তু তার উদ্দেশ্য তো মহান। আমাদের সমাজে তো এমন মানুষ খুব একটা চোখে পড়ে না।
গতকাল রবিবার দুপুরে টিএসসিতে গিয়ে আবারও তার দেখা পাই। ক্যাম্পাসের প্রশস্ত রাস্তায় যানবাহনের ব্যস্ততা। সেদিকে তার খেয়াল নেই। রাজু ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে দূর থেকে তার কয়েকটা ছবি তুললাম। আমাকে দেখে একগাল হাসলেন। হাসিতে সারল্য ঝরল। পরিচয় দিয়ে আমার ছবি তোলার উদ্দেশ্য জানালাম। তিনি আমার সঙ্গে সোহরাওয়ার্দীর গেটে বিশাল বটরাজির ছায়ায় যে উন্মুক্ত লাইব্রেরি সেখানে এসে বসেন। জানলাম তার নাম অমর গোয়ালা। তিনি অনুকূল ঠাকুরের সৎসঙ্গে দীক্ষিত। ছয় মাস ধরে প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে তিনি এই বাণী প্রচার করছেন। মানুষের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্যই তিনি এই বাণী প্রচারের সিদ্ধান্ত নেন। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর এলাকায়ও যান বাণী প্রচারের জন্য।
এত জায়গায় যেতে তো পয়সা লাগে; অর্থ কোথায় পান প্রশ্ন করতেই তিনি জানান, নারায়ণগঞ্জে তাদের একটা ছয়তলা বাড়ি আছে। তার বড় ভাই সেটি দেখাশোনা করেন। বাড়ি ভাড়া থেকে যে অর্থ আসে, সেখান থেকে বড় ভাই প্রতি মাসে তাকে খরচের টাকা দেন। নিজের অর্থেই তিনি বাণী প্রচার করে থাকেন।
প্রায় ৩২ বছর আগে ২০ বছর বয়সে সৎসঙ্গে দীক্ষা নেন অমর গোয়ালা। তিনি বললেন, ‘বাবা অনুকূল ঠাকুর যখন পাবনাতে সৎসঙ্গের প্রচার চালাতে শুরু করলেন, তখন কিছু কিছু লোক এ ভাবধারার বিরোধিতা করেন। তারা বাবাকে খুব অত্যাচার করলেন। বাবা ভারতের ঝাড়খন্ডের দেওঘরে চলে যেতে বাধ্য হলেন। পরবর্তী সময়ে দেওঘর থেকে পূজ্যপাদ আচার্যদেব দাদা ও অশোক দাদা বাংলাদেশে আবার সৎসঙ্গের প্রচারের ব্যবস্থা করেন। তখন আমি তাদের কাছে সৎসঙ্গে দীক্ষা নেওয়ার সুযোগ পাই।’
অমর গোয়ালা ৩৫ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জে থাকেন। দেশের বাড়ি বিক্রমপুরের সিরাজদীখান উপজেলার সন্তোষপাড়ায়। পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। তার বাবা দীনেশচন্দ্র ঘোষ আর মা ভানুরানী ঘোষও ছিলেন অনুকূল ঠাকুরের ভক্ত। অকৃতদার এই মানুষটি প্রতিদিন ভোর ৫টায় ঘুম থেকে ওঠেন। হাতমুখ ধুয়ে ইষ্টভৃতি করেন। ৫টা ৩৫ মিনিটে বসেন প্রার্থনায়। প্রার্থনা শেষে খালি পেটে একটা থানকুনি পাতা চিবিয়ে খান। এরপর এক গ্লাস জল। আর সকালে আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে পড়েন বাণী প্রচারের উদ্দেশ্যে। সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফেরেন। শুয়ে পড়েন রাত ১১টার মধ্যে।
এ বাণী প্রচারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসছেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে অমর গোয়ালা বললেন, ‘আমার তো মনে হয় আসছে।’
লেখক : দেশ রূপান্তরের আলোকচিত্র সম্পাদক
হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংঘর্ষে উভয় পক্ষের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গতকাল রবিবার বিকেলে এ সংঘর্ষ হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত শনিবার বিকেলে হবিগঞ্জ বিএনপি আয়োজিত পদযাত্রা শেষে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশসহ শতাধিক লোক আহত হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে জেলা আওয়ামী লীগ গতকাল শায়েস্তানগর এলাকায় পথসভা ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে। এতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতার্মীরা অংশ নেন। প্রতিবাদ সভা শেষে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে পৌঁছালে কিছু লোক ‘জয়বাংলা’ সেøাগান দিতে দিতে বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে হামলা চালায়। অফিসের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জি কে গউছের বাসায় হামলার চেষ্টা করলে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এগিয়ে এলে সংঘর্ষ বেধে যায়। উভয় পক্ষ একে অন্যকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এতে আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে রাত পৌনে ৭টার দিকে অ্যাপাচি নিয়ে বিপুলসংখ্যক দাঙ্গা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তারা সংঘর্ষ থামাতে টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ছোড়ে সংঘর্ষকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান এ সংঘর্ষের জন্য বিএনপিকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা হামলা করেছে। আমাদের নেতাকর্মীরা তা প্রতিহত করতে গিয়ে সংঘর্ষের রূপ নেয়। শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।’
এদিকে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সৈয়দ মুশফিক আহমেদ ও জেলা ছাত্রদল সভাপতি শাহ রাজিব আহমেদ রিংগন বলেন, ‘লগি-বইঠা নিয়ে আওয়ামী লীগের মিছিল থেকেই জেলা বিএনপির কার্যালয় ও বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক মেয়র জি কে গউছের বাসায় হামলা চালানো হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই সংঘর্ষে প্রায় ১০০ নেতাকর্মী আহত করেছেন তারা।’
হবিগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) বদিউজ্জামানের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।