
এক সপ্তাহ পার হলেও কক্সবাজারের চকরিয়ার সেই অস্ত্রধারীদের এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদন্ড পাওয়া দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা পড়াকে কেন্দ্র করে গত ১৫ আগস্ট পৌর শহরে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এ সময় পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লায়ন আলমগীর চৌধুরী নেতৃত্বে যুবলীগ-ছাত্রলীগের একটি মিছিল থেকে কয়েকজন অস্ত্রধারীকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। ওই মিছিলে ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য জাফর আলমও। ওই দিন গুলিতে মারা যান ফোরকানুর রহমান নামে জামায়াতের এক কর্মী। পুলিশের দাবি, তাদের গুলিতে মারা যাননি ফোরকানুর।
কার গুলিতে ফোরকানুর মারা গেছে, অস্ত্রধারীদের সাত দিনেও কেন খুঁজে বের করতে পারেনি পুলিশ, সেদিন অস্ত্রধারীরা কী ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছিলÑ গতকাল সোমবার বিকেলে ফোনে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জবাব এড়িয়ে যান কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অভিযান) শাকিল আহমেদ। এ বিষয়ে সরাসরি দপ্তরে গিয়ে কথা বলার জন্য এই প্রতিবেদককে পরামর্শও দেন তিনি।
এদিকে স্থানীয় সূত্র বলছে, সে দিনের অস্ত্রধারীরা এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ঘটনার দিন অস্ত্র বহন এবং গুলি বর্ষণের ঘটনায় কেউ মুখ খুললে তাদের মামলায় জড়ানোর হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্যের নেতৃত্বে তার অনুসারী চকরিয়া উপজেলা যুবলীগের কতিপয় নেতার সেদিন গুলিবর্ষণের সিসিটিভি ফুটেজ ফেসবুকে ঘুরছে। কিন্তু ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও আলামত হিসেবে সেসব ফুটেজ সংগ্রহও করেনি পুলিশ। তবে পুলিশ সূত্রের দাবি, তদন্তের স্বার্থে তারা ঘটনাস্থলের একটি সিসিটিভির হার্ডডিস্ক জব্দ করেছে।
অভিযোগ উঠেছে, যে জায়গায় জামায়াত কর্মী ফোরকানুর গুলিবিদ্ধ হয়েছেন সেখানকার তিনটি সিসিটিভির ফুটেজ মুছে ফেলেছেন সংসদ সদস্য জাফর আলমের ছেলে তানভির আহমেদ ছিদ্দিকী তুহিন এবং পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে তানভির আহমেদ ছিদ্দিকী তুহিন বলেন, ‘সিসিটিভির ফুটেজ ডিলিটের অভিযোগ সত্য নয়।’
এর আগে গত শনিবার চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী ঘটনাস্থলের বাসাবাড়ি ও দোকানে গিয়ে সিসিটিভির ফুটেজ খোঁজাখুঁজি করেন এবং বাসিন্দাদের ভয়ভীতি দেখান বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা বলছেন, এ সময় তারা কয়েকজনের সিসিটিভির হার্ডডিস্কও খুলে নিয়ে যান। বাড়াবাড়ি করলে তাদের মামলায় জড়ানোর হুমকিও দেন।
এদিকে ঘটনার দিন লাল হেলমেট পরিহিত গুলিবর্ষণকারীকে খোঁজা হচ্ছে দাবি করে চকরিয়া থানার ওসি জাবেদ মাহমুদ বলেন, ‘গুলিবর্ষণকারী কয়েকজনের নাম পেয়েছি। তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করছি।’
প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সূত্র সাংবাদিকদের জানান, ওই দিন সংঘর্ষের শুরুতে বায়তুশ শরফ রোডে অবস্থান নেন সংসদ সদস্য জাফর আলমের ভাতিজা জিয়াবুল হক এবং তার ব্যক্তিগত সহকারী আমিন চৌধুরী। মূলত তাদের গুলিতেই প্রাণ হারান ফোরকানুর। মিছিলে লাল হেলমেট পরা অস্ত্রধারী যুবলীগ নেতা বেলাল বলে গণমাধ্যমে প্রচার হলেও মূলত তিনি চিরিঙ্গা ইউনিয়নের পশ্চিম সওদাগর ঘোনার বাসিন্দা আব্দুল জলিল। এখন তিনি সংসদ সদস্য জাফর আলমের দেহরক্ষী হিসেবে পরিচিত। আর সাদা গেঞ্জি পরিহিত ব্যক্তিও একই এলাকার বাসিন্দা ইউছুপ। জানা গেছে, সেদিনের মিছিলে নেতৃত্ব দেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লায়ন আলমগীর চৌধুরী। তার সঙ্গে অস্ত্র হাতে পৌর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমানকেও দেখা গেছে। গামছা মোড়ানো অস্ত্র হাতে হাঁটছিলেন এমপি জাফর আলমের ভাগনে মিজানুর রহমান। অস্ত্র হাতে ছিলেন জালাল নামে আরেক ব্যক্তি।
এক দিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে আবারও বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। ১০ টাকা বেড়ে দেশি পেঁয়াজের কেজি হয়েছে ৯৫ টাকা, যা গতকাল ছিল ৮৫ টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৮-৮০ টাকা। অথচ এক দিন আগেই কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ভারতের রপ্তানি মূল্য বাড়ানোর প্রভাব দেশের বাজারে পড়বে না। কিন্তু বাজারে মন্ত্রীর কথার কোনো বাস্তব প্রমাণ দেখা যায়নি।
গতকাল সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মালিবাগ, শান্তিনগর বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকারিতে প্রতি পাল্লা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৩০-৪৩৫ টাকায় ও ভারত থেকে আসা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৩৬০ টাকায়, যা খুচরা বাজারে গিয়ে ৭৮-৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত দুদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০-৩৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এরই মধ্যে দেশি পেঁয়াজের দাম সব থেকে বেশি বেড়েছে। তুলনামূলক কম বেড়েছে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মাখদুম দেশ রূপান্তরকে বলেন, পেঁয়াজের ওপর বাড়তি শুল্ক এখনো কার্যকর হয়নি। তবে, তার আগেই হিলি পেঁয়াজ পয়েন্টে দাম বেড়ে গেছে। ফলে, আমাদেরও বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে।
মহাখালী কাঁচাবাজার এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী জামিল আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা বাজারে বিক্রি করি বলে সাধারণ মানুষ ভাবে আমরাই দাম বাড়াচ্ছি। কিন্তু না। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণেই রাতারাতি দাম বাড়ে যেকোনো পণ্যের।’
তবে ভোক্তারা বলছেন, ‘বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি না থাকলেও মজুদ কারবারে সক্রিয় সিন্ডিকেট সদস্যরা। ইতিমধ্যে দেশের পেঁয়াজের বাজার অস্থির করে তাদের সাধারণ মানুষের পকেট লুটছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এভাবে মসলাজাতীয় এই পণ্যের দাম বাড়তে থাকলে ক্রয়ক্ষমতা হারাবেন তারা।’
মালিবাগ বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা মোশাররফ গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এক দিন আগেই ৮০ টাকায় দেশি পেঁয়াজ কিনেছি। কিন্তু আজ পেঁয়াজ কিনতে এসে কিছুটা অবাক হয়েছি। এতে করে পেঁয়াজ কেনার ক্ষমতা অন্তত হারিয়েছি।’
শান্তিনগর বাজারে হানিফ নামে এক ক্রেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বাজার কার ইশায় চলে সেটা বোঝা বড় দায়। তবে ভোগ্যপণ্যের দামের কাছে আমরা অসহায়। প্রতিনিয়ত বাড়ছে পণ্যের দাম। বর্তমানে পেঁয়াজ যে দামে বিক্রি হচ্ছে তার কোনো যুক্তি নেই। পর্যাপ্ত পেঁয়াজ থাকা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা এর দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এর জন্য সরকারের উচিত ছিল তাদের থামিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া। অথচ তারাও দেখছি চুপ থাকতে পারলেই মনে হয় বাঁচে। তবে রাতের ব্যবধানে দাম বাড়ার মতো আমাদের আয় বাড়েনি।’
এদিকে গত ১৯ আগস্ট ভারত নিজেদের মার্কেটের স্মৃতিশীলতার জন্য পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য ৪০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এর প্রভাবে স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এদিন এক সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক নিত্যপণ্যের বাজারে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙা কঠিন বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে দেশের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। তার থেকে বড় বিষয়, ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়ানো শুরু করে দিয়েছেন। এটা মোকাবিলার জন্য পৃথিবীর যেকোনো দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি (আইপি) দেওয়া হবে। মিসর, তুরস্ক, চীন থেকে এটা আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। এটা (পেঁয়াজ আমদানি) প্রত্যক্ষভাবে আমাদের দায়িত্ব নয়। মন্ত্রী হিসেবে আমি দায়িত্ব এড়াতে পারব না। এটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় করবে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, বাণিজ্যমন্ত্রী, সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলছি। কীভাবে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়। এরই মধ্যে আমরা ঘোষণা দিয়েছি অন্যান্য দেশ থেকে আমরা যাতে পেঁয়াজ আনতে পারি।’
হিলি থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে জানা গেছে, পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক আরোপের খবরে পাইকারি ও খুচরায় বেড়েই চলেছে। বন্দরে ইন্দোর জাতের পেঁয়াজ ৫৫ আর নগর জাতের পেঁয়াজ ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল, যা এক দিন আগে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এ ছাড়া নতুন নির্দেশনায় এক দিন পর দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আবার ভারত থেকে নতুন শুল্কের পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। এদিন বিকেল সোয়া ৪টা পর্যন্ত বন্দর দিয়ে ২০ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হয়। এর আগের দিন আগের দামে কেনা সাত ট্রাকে ২১১ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল।
পশ্চিম ভারতের রাজস্থান প্রদেশের মরুভূমিতে সম্প্রতি আবিষ্কার হয়েছে এক ডাইনোসরের ফসিল। ডাইক্রিয়োসোরিড উপগোত্রের ডাইনোসরের জীবাশ্মটি ১৬ কোটি ৭০ লাখ বছর পুরনো। দীর্ঘ ঘাড় বিশিষ্ট এই প্রাণী ছিল উদ্ভিদভোজী। অবশ্য প্রজাতিটির ঘাড় এ উপগোত্রের অন্যান্য প্রজাতির মতোন ততটা লম্বা নয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় বিজ্ঞানীদের একটি দল এ ফসিল আবিষ্কার করেছেন। থর মরুভূমির নামানুসারে তারা প্রজাতিটির নাম দিয়েছেন থরোসরাস ইন্ডিকাস।
আনন্দবাজার বলছে, জার্নাল সায়েন্টিফিক রিপোর্টস নামের বৈজ্ঞানিক জার্নালে সম্প্রতি এই আবিষ্কারের বর্ণনা দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর প্রাগৈতিহাসিক যুগ সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতেÑ ভারতীয় উপমহাদেশে পাওয়া ফসিল নিয়ে গবেষণার গুরুত্ব তুলে ধরেন তারা।
থরোসরাসসহ ডাইক্রিয়োসোরিড উপগোত্রটি বৃহত্তর ডিপলোডোকয়েড সরোপড গোত্রভুক্ত। দীর্ঘ শরীর ও ঘাড় যাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। জুরাসিক থেকে ক্রিটেশাস যুগের শুরু পর্যন্ত সময়ের ফসিল বেডে সরোপডদের জীবাশ্ম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পাওয়া গেছে।
ঘাড়ে ও পিঠে লম্বা কাঁটার মতো ফলার থাকায়ুডাইক্রিয়োসোরিডদের অন্যান্য সরোপডদের থেকে আলাদা করে শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। বিভিন্ন সময় এই ডাইনোসরের ফসিল পাওয়া গেছে আফ্রিকা, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং চীনে।
কিন্তু ভারতে এর আগে কখনোই সরোপডদের সন্ধান মেলেনি বলে জানিয়েছেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি রোর্কের মেরুদণ্ডী প্রাণীর জীবাশ্মবিজ্ঞানী সুনীল বাজপেয়ি। জার্নাল সায়েন্টিফিক রিপোর্টসে প্রকাশিত নিবন্ধের এই লেখক জানান, আগে ধারণা করা হয়েছিল, ভারতে শুধু ডিপলোডোকয়েড নামের ডাইনোসরের পূর্ব পুরুষরা থাকত।
ভারতে পাওয়া সরোপড গোত্রের ডাইনোসরটির বাঁকানো ঘাড় ও লেজের হাড়ে আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেছে। এতে ভারতে সরোপডরা কীভাবে বাস করত তার এক ভিন্ন চিত্র উঠে এসেছে।
আইইটি রোর্কের পৃথিবী-বিজ্ঞানের গবেষক এবং নিবন্ধের সহ-লেখক দেবজিত দত্ত বলেন, এটি কেবল ডাইক্রিয়োসোরিডদের সবচেয়ে প্রাচীন ফসিলের বৈশ্বিক রেকর্ড নয়, একইসঙ্গে ডিপলোডোকয়েড সরোপডদের সবচেয়ে পুরনো ফসিল।’
এর আগে মধ্য ভারতে সরোপডদের পূর্ব পুরুষ বরাপসরাস ও কোটাসরাস প্রজাতির জীবাশ্ম মেলে। এর সঙ্গে থরোসরাসের সাম্প্রতিক আবিষ্কার মিলে ইঙ্গিত দিচ্ছে যেÑ ভারতীয় উপমহাদেশ নতুন ধরনের সরোপডদের বিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
সুমাইয়া আক্তার রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সহপাঠীর সঙ্গে কলাবাগান এলাকায় থাকার জন্য বাসা খুঁজছিলেন। অলিগলি ঘুরে বিজ্ঞপ্তি দেখে বাসা খোঁজা ঝামেলাপূর্ণ মনে হলো তার। বিকল্প হিসেবে অনলাইনকে বেছে নেন। ফলে ফেসবুকের একটি গ্রুপের মাধ্যমে বাসা খোঁজা শুরু করেন। ওই গ্রুপে একটি বাসার ছবি দেখেন। পছন্দ হলে সেখানে দেওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করেন। বাসাভাড়ার জন্য অগ্রিম টাকা পরিশোধ করতে বলা হয় তাকে। এরপর তিনি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়েও দেন। এরপর ওই নম্বরটি বন্ধ হয়ে যায়। প্রতারণরার শিকার হন সুমাইয়া।
সুমাইয়ার মতো রাজধানীর ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য মানুষ এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উন্মুক্ত এসব গ্রুপের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অনেকে। সংঘবদ্ধ এসব চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা।
ভুক্তভোগী সুমাইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কলাবাগানে বাসা নেওয়ার জন্য ‘টু-লেট ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর’ নামের গ্রুপের মাধ্যমে এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করি। পরে ১২ হাজার টাকায় বাসাভাড়ার বিষয়ে কথা হয়। এরপর আমার কাছে অগ্রিম এক মাসের ভাড়া পাঠিয়ে বাসা কনফার্ম করতে বলা হয়। আমি ১২ হাজার টাকা পাঠালে ওই নম্বর বন্ধ পাই। এরপর কলাবাগান থানায় জিডি করি।’
জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা কলাবাগান থানার এএসআই মো. শরীফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভুক্তভোগীর অভিযোগের বিষয়টি আমরা পর্যালোচনা করেছি। এ ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে দ্রুতই আইনের আওতায় আনা হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কলাবাগানের মতো রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসা খোঁজার জন্য ফেসবুকে পৃথক গ্রুপ রয়েছে। এসব গ্রুপে সহজেই যুক্ত হয়ে বাসা খোঁজা কিংবা ভাড়ার তথ্য প্রচার করা হয়।
মেহেদী আহমেদ নামে প্রতারণার শিকার এক ব্যক্তি তার ফেসবুকে কিছু স্ক্রিনশট দিয়ে লিখেছেন, ‘গত ২৯ জুলাই রাত ৮টার দিকে একজনের সঙ্গে বাসাভাড়ার বিষয়ে আমার কথা হয় ফোনে। আমি তাকে বললাম ছবি দেখে আমার বাসা পছন্দ হয়েছে। আগামীকাল সকালে বাসা দেখতে আসি। তখন ভাড়া অ্যাডভান্স করব। তিনি বললেন, সেটা সম্ভব হবে না। কারণ আরেকজন একটু পরেই অ্যাডভান্স করবে। আমি বললাম, তাহলে উপায়? তিনি বললেন, আপনি এখন আমাকে ৩ হাজার টাকা অ্যাডভান্স করুন, তাহলে বাসাটা কনফার্ম থাকবে। সেই মুহূর্তে আমি ২ হাজার টাকা পাঠাই। এরপর থেকে তাকে ফোন দিলে সে ধরে না।’
আদ্রিতা নামে একজন লিখেছেন, ‘এই আইডি পোস্ট করে লাভ নেই। কারণ যে টাকা নিয়েছে, সেই ছেলেটা ঢাকার সব টু-লেট গ্রুপেই বিভিন্ন আইডি দিয়ে পোস্ট করে। ভিন্ন ভিন্ন ফোন নম্বর দিয়ে কথা বলে এবং টাকা নিয়ে ফোন অফ করে দেয়। সবাইকে সেইম কথা বলেই টাকা হাতিয়ে নেয়।’
শারমিন সুলতানা রেখা লিখেছেন, ‘আমাকে ও ফাঁদে ফেলতে চেয়েছিল। আমাকেও বিকাশ করতে বলেছিল। আমি বলেছিলাম আমার বোনের মেয়ে বাসা দেখার পর অ্যাডভান্স করবে। পরে সে রাজি হয়নি। এতে বুঝেছি লোকটি ফেইক। এমন অনেক প্রতারক ঘাপটি মেরে আছে ঢাকা শহরে।’
আনিসুর রহমান বায়েজিদ লিখেছেন, ‘এই লোকের কাজই প্রতারণা করা। আড়াই বছর আগে আমি ১ হাজার ৫০০ টাকা ধরা খাইছিলাম একইভাবে।’
এভাবে প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীদের থানায় গিয়ে অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যারা এভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন, তারা আমাদের কাছে এসে অভিযোগ জানালে আমরা চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
সাতক্ষীরায় স্কুল থেকে ফেরার পথে ট্রাকের ধাক্কায় ভ্যান থেকে পড়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রী নিহত হয়েছে। তার নাম ওহি সুলতানা (৭)। গতকাল সোমবার দুপুরে সাতক্ষীরা-ভোমরা স্থলবন্দর সড়কের মাহমুদপুর বাজারের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
শিশুটি সদর উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের মিতুল সরদারের মেয়ে। সে মাহমুদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত।
প্রত্যক্ষদর্শী মাহমুদপুর কামরুল গাজী জানান, ওহি স্কুল ছুটির পর মায়ের সঙ্গে ভ্যানে করে বাড়ি ফিরছিল। পথে মাহমুদপুর বাজারে পৌঁছলে সাতক্ষীরা থেকে ভোমরা অভিমুখী একটি মালবাহী ট্রাক ভ্যানটিকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে দাঁড়িয়ে থাকা অটোরিকশায় কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় চারজন নিহত হয়েছে। জয়পুরহাটে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে এক ভ্যানচালকের নিহত হয়। বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে
আশুগঞ্জে অটোরিকশায় কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় নিহত ৪ : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে দাঁড়িয়ে থাকা অটোরিকশায় কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় শিশুসহ চারজন নিহত হয়েছে। গতকাল দুপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সোহাগপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ দুর্ঘটনায় শিশুটির মা ও বাবাও আহত হয়েছেন।
নিহতরা হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার বলিবাড়িয়া গ্রামের ফরিদ মিয়ার ছেলে সোহেল মিয়া (৩০), নাজমুল মিয়ার শিশু সন্তান জিলানী (৮), পানিশ^র গ্রামের জাফর আলীর ছেলে আশকর মিয়া (৬০) ও কিশোরগঞ্জের পগারকান্দা গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে উজ্জল (৩৫)।
খাটিহাতা হাইওয়ে থানা পুলিশের ওসি আকুল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, সোমবার দুপুর ১২টার দিকে সোহাগপুর বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে একটি অটোরিকশা যাত্রী নিচ্ছিল। এ সময় ঢাকাগামী একটি কাভার্ড ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অটোরিকশাটিকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে দুজন পুরুষ ও এক শিশু নিহত হয়। আহত দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে আরও একজন মারা যায়। জিলানির মা শাহনাজ বেগম ও বাবা নাজমুল মিয়াসহ আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, কাভার্ড ভ্যানটি আটক করা গেলেও চালক পালিয়ে গেছে।
জয়পুরহাটে বাস-ভ্যান সংঘর্ষে নিহত ১ : জয়পুরহাটে বাস ও ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে হাফিজুল ইসলাম (৪২) নামে এক ভ্যানচালকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুরে সদর উপজেলার শিমুলতলী এলাকায় জয়পুরহাট-হিলি সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। জয়পুরহাট সদর থানার ওসি (তদন্ত) গোলাম সারওয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত ভ্যানচালক হাফিজুল ইসলাম জেলার পাঁচবিবি উপজেলার হরেন্দা গ্রামের সাত্তার হোসেনের ছেলে।
জয়পুরহাট থানার ওসি তদন্ত সারওয়ার হোসেন জানান, ভ্যানচালক হাফিজুল ইসলাম অসুস্থ স্ত্রীকে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে তার মেয়েকে নিয়ে নিজ বাড়ি হরেন্দা গ্রামে ফিরছিলেন। পথে শিমুলতলী এলাকায় পৌঁছলে একটি বাস ভ্যানটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই হাফিজুল ইসলাম মারা যান।
তিনি আরও জানান, বাসটি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় চালক লিটনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ মঙ্গলবার তাদের জন্মদিন। জোড়া লাগানো সেই যমজ দুই বোন মণি-মুক্তা এখন ১৪ বছরে পা দিয়েছে। জন্মদিনে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে মণি-মুক্তা বলে, ‘আমরা চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই। মণি-মুক্তার জোড়া লাগানো অবস্থায় জন্মগ্রহণকে মানুষ সৃষ্টিকর্তার অভিশাপ হিসেবে অপবাদ দিলেও বর্তমানে পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে মণি-মুক্তার প্রতিভা পাল্টে দিয়েছে সব মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি। নৃত্য এবং সংগীতে উপজেলার বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বেশ কিছু পুরস্কারও পেয়েছে। পাশাপাশি লেখাপড়ায় তারা বেশ সাফল্য অর্জন করেছে। দুজনে স্থানীয় ঝাড়বাড়ী দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। দুই বোনকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছে বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. গোলাম মোস্তফা জানান, লেখাপড়ায় তারা ভালো। মনোযোগ দিয়ে নিয়মিত ক্লাস করে। ভবিষ্যতে ভালো মানুষ হয়ে দেশসেবা করবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মণি-মুক্তার মা কৃষ্ণা রানী পাল বলেন, ‘২০০৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে প্রথমে বাবার বাড়ি পার্বতীপুর উপজেলার হাবড়া ইউনিয়নের রামরায়পুর চৌধুরীপাড়ায় আসি। কিছুদিন সেখানে থাকার পর নিজ গ্রাম বীরগঞ্জ উপজেলার পালপাড়ায় মণি-মুক্তাকে নিয়ে আসি।’
বিদেশিদের দ্বারা পরিচালিত মিশনারি ল্যাম্ব হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা এনোস সরেন জানান, ২০০৯ সালের ২২ আগস্ট পার্বতীপুর ল্যাম্ব হাসপাতালে সিজারিয়ান সেকশনে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মণি এবং মুক্তা জোড়া লাগা অবস্থায় জন্ম নেয়। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের জয় প্রকাশ পালের স্ত্রী কৃষ্ণা রানী পাল। পরে রংপুরের চিকিৎসকরা ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে যমজ বোনকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পৃথক করার পরামর্শ দেন। তাদের পরামর্শে ২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকা শিশু হাসপাতালে মণি-মুক্তাকে ভর্তি করা হয়। ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শিশু হাসপাতালে শিশুবিশেষজ্ঞ ডা. এ আর খানের সফল অপারেশনের মাধ্যমে মণি-মুক্তা ভিন্ন সত্তা লাভ করে। বলা যায়, বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে সৃষ্টি হয় এক নতুন ইতিহাস।
মণি-মুক্তার বড় বোন দিশা রানী পাল বলেন, ‘তারা আমাদের পরিবারের মধ্যমণি। সারা দিন ধরে মণি-মুক্তা পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখে।’
বড় ভাই সজল পাল বলেন, ‘ওরা বেশ চঞ্চল ও মিশুক টাইপের।’
মণি-মুক্তার বাবা জয় প্রকাশ পাল বলেন, ‘বিভিন্ন চিকিৎসকের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকি তাদের স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাওয়ার জন্য। সমাজের নানা কুসংস্কারে প্রায় এক ঘরে হয়ে পড়ি। হতাশার মধ্যে স্বপ্ন দেখি মণি-মুক্তাকে নিয়ে। আমাদের স্বপ্ন বাস্তব হয় ডা. এ আর খানের কারণে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।