
থাইল্যান্ডের সাবেক নেতা থাকসিন সিনাওয়াত্রা ১৫ বছরের স্বেচ্ছা নির্বাসন শেষে দেশে ফিরেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় ব্যাংককের ডন মুয়াং বিমানবন্দরে অবতরণ করেন থাকসিন। গান গেয়ে, উল্লাস প্রকাশ করে ও ঐতিহ্যবাহী ‘লাল শার্ট’ পরে তাকে স্বাগত জানান বিমানবন্দরে আগত শত শত ভক্ত ও সমর্থক।
বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, থাকসিন টার্মিনাল ভবন থেকে অল্প সময়ের জন্য বের হয়ে আসেন। তিনি রাজা মহা ভাজিরালংকর্নের একটি ছবিতে ফুলের মালা পরিয়ে দেন ও মাথা নিচু করে সম্মান প্রদর্শন করেন। এরপর তিনি সমর্থকদের অভিবাদন জানান। এরপরই থাকসিনকে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। যুক্তরাজ্যের ফুটবল দল ম্যানচেস্টার সিটির সাবেক মালিক থাকসিনকে আদালতে নেওয়ার সময় সড়কের ২ পাশে সমবেত হন লাল শার্ট পরিহিত ভক্তরা।
আদালতে তাকে ৩টি অভিযোগে ৮ বছরের কারাদণ্ড ভোগের আদেশ দেওয়া হয়। থাকসিনের অনুপস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে সাবেক শিন কর্প প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট মামলা এবং ১টি ব্যাংকঋণ ও ১টি লটারির মামলার বিচারের রায়ে এই শাস্তি দেওয়া হয়। তবে আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও, থাকসিন কতদিন কারাগারে থাকবেন তা নিশ্চিত নয়। কারণ তার দল ক্ষমতায় আসার মুহূর্তে থাকসিনের দেশে প্রত্যাবর্তনে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, তার শাস্তি কমিয়ে দেওয়ার বা স্থগিত রাখার কোনো একটি ‘পেছনের দরজার চুক্তি’ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকলেও থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন থাকসিন। তিনি আধুনিক যুগে দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং একই সঙ্গে সবচেয়ে বিতর্কিত রাজনীতিক। পল্লী অঞ্চলে তিনি সহজলভ্য স্বাস্থ্যসেবা ও ন্যূনতম বেতন সুবিধা চালুর জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়। অপরদিকে, সামরিক বাহিনী ও রাজার প্রতি অনুগত জনগোষ্ঠী তাকে দুর্নীতিগ্রস্ত, কর্তৃত্বপরায়ণ ও থাই সামাজিক ব্যবস্থার প্রতি হুমকি হিসেবে দেখে।
২০০১ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত থাইল্যান্ডের সব নির্বাচনে থাকসিনের দল বা তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দলগুলো আধিপত্য বিস্তার করেছে। তবে এবারই প্রথম বিকল্প দল হিসেবে পার্লামেন্টে সর্বাধিক আসন জিতে নেয় মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি (এমএফপি)। ফেউ থাই দল মে মাসের নির্বাচনে প্রগতিশীল এমএফপি দলের কাছে পরাজিত হয়।
কিন্তু এমএফপি’র নেতা পিটা লিমজারোয়েনরাত প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে বড় আকারের বাধার শিকার হন। তিনি রাজকীয় পরিবারকে রক্ষার জন্য ও ব্যবসা-বাণিজ্যে একচেটিয়া সুবিধা দেওয়ার জন্য প্রণীত আইনের সংস্কারের ঘোষণা দিলে এ বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান রক্ষণশীল সিনেটররা। যার ফলে দৌড়ে পিছিয়ে যান তিনি।
তারপর গতকালই দেশটির আইনপ্রণেতারা নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শীর্ষ আবাসন ব্যবসায়ী স্রেথা থাভিসিনকে নির্ধারণ করেন। এর মাধ্যমে দেশটির তিন মাসের রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান ঘটল।
৩৭৪ জনেরও বেশি আইনপ্রণেতা পার্লামেন্টে স্রেথার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। আর প্রধানমন্ত্রী হতে তার ৩৭৪টি ভোটই প্রয়োজন ছিল। পার্লামেন্টের উভয় কক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন ফেউ থাই পার্টির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী স্রেথা। এর মাধ্যমে থাইল্যান্ডের ৩০তম প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন তিনি।
সড়কে চলা অ্যাম্বুলেন্সের আলাদা করে কোনো নীতিমালা নেই। এতে অনেকটা লাগামহীনভাবেই চলছে জরুরি চিকিৎসার কাজে নিয়োজিত এই বাহন। অনেক ফিটনেসবিহীন মাইক্রোবাসও অ্যাম্বুলেন্সের রূপান্তরিত হচ্ছে। ফলে সড়কে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। রোগীর জীবন বাঁচানোর জন্য যে পরিবহন মানুষের ভরসা হিসেবে কাজ করে, সেই বাহনই এখন মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তাই এবার অ্যাম্বুলেন্সকে নীতিমালায় আনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্র্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
বিআরটিএর একটি সূত্র থেকে জানা যায়, ভাড়া নির্ধারণ, অ্যাম্বুলেন্সের প্রকৃত গঠন, মালিকানা এবং রোগীবান্ধব অ্যাম্বুলেন্সসহ বেশ কয়েকটি শর্ত দিয়ে নতুন নীতিমালা করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে খুব দ্রুত একটি প্রস্তাবনা পাঠানোর জন্য বিআরটিএ থেকে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটি কাজ শেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেলেই অ্যাম্বুলেন্সের নীতিমালা প্রকাশ করবে বিআরটিএ।
সরেজমিন পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বেশ কয়েকটি জায়গা ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ অ্যাম্বুলেন্স মাইক্রোবাস থেকে রূপান্তর করা। বিআরটিএ থেকে নির্ধারিত কোনো ভাড়া ঠিক না থাকায় একেক জনকে একেক রকম ভাড়া আদায় করতে দেখা যায়। অনেক অ্যাম্বুলেন্সে অক্সিজেন, নেবুলাইজার ঠিকমতো দেখা যায় না। অনেকগুলো দায়সারাভাবেই চলছে।
পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় ‘মা বাবার দোয়া’ নামের এক অ্যাম্বুলেন্সের চালক মো. শরীফুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি শুধু অ্যাম্বুলেন্সের চালক। এর ভালো-খারাপ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। মালিক নতুন গাড়ি নামালে নতুনটা চালাব। এখন এই গাড়ি আছে, এটা দিয়ে রোগী বহন করি।’
শাওন নামের এক শিক্ষার্থী বারডেম হাসপাতাল থেকে তার বাবাকে হবিগঞ্জ সদর এলাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স খুঁজছেন। তিনি বলেন, দেশে রোগীবান্ধব অ্যাম্বুলেন্স থাকার কথা। কিন্তু অনেক অ্যাম্বুলেন্সে অক্সিজেন নেই। আর যেগুলোতে আছে, সেগুলোর ভাড়া বেশি চাওয়া হচ্ছে। এখন বাধ্য হয়ে বেশি টাকা দিয়ে যেতে হচ্ছে বাবাকে নিয়ে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, জীবন রক্ষার এই অ্যাম্বুলেন্স অনেক সময় জীবন কেড়ে নেয়। ব্যক্তিগত গাড়ির দুর্ঘটনায় অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। অ্যাম্বুলেন্সের জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে নতুন নীতিমালা করার দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. গোলাম মোস্তফা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরাও চাই অ্যাম্বুলেন্সের জন্য একটি নীতিমালা হোক। কিন্তু সেই নীতিমালা করার সময় আমাদের রাখলে ভালো হয়। এখন সারা দেশে নিবন্ধিত অ্যাম্বুলেন্স আছে প্রায় ৮ হাজার ২৮৭টির মতো। অ্যাম্বুলেন্স নিবন্ধনের এই সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। আর বিআরটিএর নিবন্ধন ছাড়াও অনেক অ্যাম্বুলেন্স সড়কে চলছে। তাই নীতিমালা হলো অনেকটাই শৃঙ্খলায় ফিরবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআরটিএর এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সড়কে রোগীবান্ধব অ্যাম্বুলেন্স দেখতে চায় বিআরটিএ। তাই নীতিমালা হলে অ্যাম্বুলেন্সের যেসব বিশৃঙ্খলা আছে, সেটি আর থাকবে না। ২১ আগস্ট নীতিমালার কমিটির একটি বৈঠক হয়েছে। সেই কমিটি সব কাজ শেষ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। সেখান থেকে অনুমোদন হলে সেটি প্রকাশ করা হবে।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, রোগীদের জিম্মি করে ভাড়া নৈরাজ্য চলে অ্যাম্বুলেন্সে। বর্তমানে যেসব অ্যাম্বুলেন্স সড়কে আছে, সেগুলোর নীতিমালা হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সেরবেশিরভাগের প্রকৃত গঠন কাঠামো ঠিক নেই। মূলত মাইক্রোবাসগুলোই অ্যাম্বুলেন্সে রূপান্তরিত হচ্ছে। একটি অ্যাম্বুলেন্সে রোগীর জরুরি অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার জন্য যেসব প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম থাকা প্রয়োজন, সেগুলো অনেক সময় থাকে না। তাই নতুন করে নীতিমালা হলে সবকিছুরই পরিবর্তন আসবে। তা ছাড়া, অনেক আগেই অ্যাম্বুলেন্সের নীতিমালা আনার দরকার ছিল।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্র্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারকে দেশ রূপান্তর থেকে একাধিকবার ফোন করে তাকে পাওয়া যায়নি।
ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা-ইসরো চাঁদের আরও কিছু ছবি শেয়ার করেছে। এ ছবিগুলো চন্দ্রপৃষ্ঠের মাত্র ৭০ কিলোমিটার দূর থেকে তুলেছে দেশটির চন্দ্রযান-৩। পরিকল্পনা অনুযায়ী আজ বুধবার ভারতের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করবে চন্দ্রযানটির ল্যান্ডার বিক্রম। ৫টা ২০ মিনিট থেকে ইসরো বিক্রমের চাঁদে নামার প্রক্রিয়া সরাসরি সম্প্রচার করা শুরু করবে।
ইসরো বলেছে, বিক্রমের চাঁদে নামার এই ঐতিহাসিক পর্যায়টিতে পথনির্দেশকের দায়িত্ব পালন করবে যে ক্যামেরাটি, সেই ল্যান্ডার পজিশন ডিটেকশন ক্যামেরা (এলপিবিসি) ছবিগুলো তুলেছে।
ইসরো জানিয়েছে, গত শনিবার চন্দ্রপৃষ্ঠের প্রায় ৭০ কিলোমিটার ওপর থেকে ছবিগুলো তুলেছে এলপিবিসি। বিক্রম এর ডিভাইসে থাকা চাঁদের রেফারেন্স ম্যাপের সঙ্গে এলপিবিসির তোলা ছবিগুলো যাচাই করে নিজের অবস্থান নির্ধারণ করবে। আর এভাবেই ধাপে ধাপে চাঁদের বুকে নামবে ভারতীয় এই ল্যান্ডারটি।
চাঁদের এসব ছবির পাশাপাশি চন্দ্রাভিযানের সর্বশেষ তথ্যও শেয়ার করেছে ইসরো। তারা বলেছে, চন্দ্রযান-৩-এর অভিযান পরিকল্পনা অনুযায়ীই চলছে। সবকিছু নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। মসৃণ অগ্রযাত্রা অব্যাহত আছে।
গত সোমবার ইসরো চাঁদের দূরবর্তী অংশের বেশ কিছু ছবি প্রকাশ করেছে। ছবিগুলোতে ওই অংশের কিছু পরিচিত খানাখন্দ দেখা গেছে। এ ছবিগুলোও তুলেছে এলপিবিসি। বিক্রমের জন্য খানাখন্দ ও বোল্ডার এড়িয়ে নিরাপদ অবতরণ এলাকা খুঁজে বের করতে সহায়তা করা এলপিবিসির প্রধান কাজ।
বিক্রম যদি ঠিকঠাক অবতরণ করতে পারে তবে ভারতই হবে চাঁদের রহস্যঘেরা দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছানো প্রথম এবং চাঁদের বুকে সফলভাবে নামতে পারা চতুর্থ দেশ। এর আগে শুধু যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের মহাকাশযান নিরাপদে চাঁদের মাটিতে নামতে পেরেছে।
চাঁদের দক্ষিণ মেরু নিয়ে মানুষের গবেষণা খুব বেশি এগোয়নি। ছায়ায় ঢাকা ওই অঞ্চল চাঁদের উত্তর মেরুর চেয়ে অনেকটা বড়। ধারণা করা হয়, সবসময় অন্ধকারে থাকা ওই অঞ্চলে বরফ বা পানির অস্তিত্ব থাকলেও থাকতে পারে। এই বরফ বা পানি খোঁজাই ভারতের এবারের চন্দ্রাভিযানের মূল লক্ষ্য।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার প্রায় সব মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ ছিল। ছাত্ররা বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। প্রশ্ন করলে তারা বলল, স্যাররা শিক্ষক সমিতির জমি থেকে দখলদারকে উচ্ছেদ করতে গেছেন। তাই ক্লাস হলো না। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, প্রায় সব স্কুলই বন্ধ।
গতকাল মঙ্গলবার এভাবেই স্কুল ফাঁকি দিয়ে ৭০০-৮০০ শিক্ষক মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের বাঁশবাড়িয়া গ্রামে জড়ো হয়ে সেখানে গাংনী বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষক সমিতির জমির ওপর দীর্ঘদিন ধরে বসবাসরত একটি পরিবারকে উচ্ছেদ করতে যান। পূর্ব ঘোষণা দিয়ে বেলা ১১টার দিকে শিক্ষকরা ওই বাড়ির ওপর চড়াও হন। তখন পরিবারের লোকজন স্থানীয়দের সহায়তায় শিক্ষকদের ওপর চড়াও হলে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে ১৫ শিক্ষকসহ ৫০ জন আহত হন। যদিও এ জমি নিয়ে পাল্টাপাল্টি মামলা চলমান।
সংঘর্ষে গাংনী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও গাংনী উপজেলা বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষক সমিতির সভাপতি আফজাল হোসেনসহ একই স্কুলের রহিদুল ইসলাম, হিজলবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আলমগীর হোসেন মিঠু, মিকুশিশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদিউজ্জামান ও শাহিনুর রহমান, আরবিজিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইমরান হোসেনসহ ১৫ শিক্ষক আহত হয়েছেন। অন্যপক্ষের আহতরা হলেন বাঁশবাড়িয়া গ্রামের ইয়াদ আলীর ছেলে শহিদুল ইসলাম, হাবিবুর রহমানের ছেলে মোজাম্মেল হক, ছাবদার আলীর মেয়ে সুমাইয়া খাতুন, হাবিবুর রহমানের ছেলে নিজাম উদ্দীন, হাবিবা খাতুন, সোহেলী খাতুন, মাছুরা খাতুনসহ ৩৫ জন। গুরুতর জখম হওয়ায় আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী বাঁশবাড়িয়া গ্রামের আকরাম হোসেন জানান, বেলা ১১টার দিকে শিক্ষকরা লাঠিসোটা নিয়ে জমির দখলে বাড়িঘরের ওপর হামলা চালালে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশকে খবর দেওয়া সত্ত্বেও পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যায়নি। শিক্ষকরা ঘরবাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয়পক্ষকে নিবৃত্ত করে পরিস্থিতি শান্ত করে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাঁশবাড়িয়া ২৭২৭ খতিয়ানের ৪৭৮ নং দাগের ৪২ শতক জমির মধ্যে ১৫ শতক জমির ওপর টিনের বেড়া দিয়ে নির্মিত দুটি কক্ষে বসবাসরতরা প্রাণভয়ে পালিয়ে গেছে। ঘর দুটি ভাঙচুর করে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। আঘাতে ঝাঁজরা হয়ে যাওয়া টিনগুলো অন্যত্র পড়ে আছে। ভেঙে ধ্বংস করা বাড়ির হাঁড়িপাতিল, আসবাবপত্রসহ ভাতের চাল পড়ে আছে মাটিতে। গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল খালেক, গাংনী মেয়র আহম্মদ আলী এবং গাংনী থানার ওসি আবদুর রাজ্জাক ঘটনাস্থলে পৌঁছে তখন শিক্ষক নেতাদের শান্ত করার চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে-শিক্ষকরা দখলদার হাবিবুর রহমানসহ শিক্ষকদের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কে অবস্থান নিয়ে আছেন। পরে সবার আশ্বাসে শিক্ষকরা দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অবস্থান ত্যাগ করেন।
জ্যাতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র সাজ্জাদ হোসেন, হিজলবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র শফিকুল ইসলাম জানায়, স্কুলে ক্লাস হয়নি। সরকারি ছুটি নয়, তারপরও স্কুল বন্ধ ছিল। ছাত্ররা বলল, স্যাররা শিক্ষক সমিতির সম্পত্তি দখল নিতে গেছেন। তাই প্রায় সব বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মঙ্গলবার ক্লাস হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে মেহেরপুর জেলা শিক্ষা অফিসার আব্বাস উদ্দিনকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের জন্য ফোন করা হয়। গাংনী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদ শূন্য থাকায় তিনি দায়িত্বে আছেন। কিন্তু শিক্ষা অফিসার আব্বাস উদ্দিনকে না পাওয়ায় স্কুল ফাঁকি দিয়ে শিক্ষকদের জমি দখল এবং ১৫ শিক্ষক আহত সম্পর্কে তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
জমির মালিকানা দাবি করে হাবিবুর রহমানের ছেলে কুতুবউদ্দিন জানান, গাংনী পৌর এলাকার বাঁশবাড়িয়া-৪৭ মৌজার ২৭২৭ খতিয়ানের ৪৭৮ দাগের ১৫ দশমিক ৭৫ শতক জমির মধ্যে তার বাবা ১০ দশমিক ৫০ জমির ক্রয় করেন এবং পৈতৃক সূত্রে ৫ দশমিক ২৫ শতক জমি পান। খাজনা খারিজ দলিল মূলে জমির স্বত্বদখলীয় তারা। ১৯৯৬ সালে জমিটি বিক্রির জন্য জনৈক ইব্রাহিম ম-লের কাছে বায়না করলেও জমিটি বিক্রি করেননি। অথচ সেই বায়নানামা ধরে ইব্রাহিম ম-ল ভুয়া দলিল করে শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ সমিতির কাছে ১৯৯৭ সালে জমিটি বিক্রি করেন। সেই দলিলের সূত্র ধরে শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ সমিতি জমিটি নিজেদের বলে দাবি করছে। এ নিয়ে আদালতে পাল্টাপাল্টি মামলা আছে। অথচ শিক্ষকরা মামলার রায়ের অপেক্ষা না করে পূর্বঘোষণা দিয়ে জোরপূর্বক জমির দখল নিতে তাদের উচ্ছেদ করতে আসেন। এমন ঘটনা আশঙ্কায় তারা পুলিশকে আগে থেকেই বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন।
অন্যদিকে শিক্ষক সমিতির নেতা হিজলবাড়িয়া মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক, গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, গাংনী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মুনতাছির জামান মৃদুলের বাবা মনিরুজ্জামান জানান, ৩৫ বছরের সম্পত্তি ওটা। সেখানে সীমানা প্রাচীর আছে। পাকা স্থাপনা আছে। এর মধ্যে টিনের ঘর বানিয়ে হাবিবুর জমির দখল নিয়েছে। সেই দখল উচ্ছেদ করে জমির দখলস্বত্ব নিতে ৭০০-৮০০ শিক্ষক জড়ো হয়েছিলেন সেখানে। তখন হাবিবুরের লোকজনরা শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ১৫ শিক্ষক জখম হয়েছেন। তিনি জানান, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে গাংনী থানায় মামলা করা হবে।
গাংনী থানার ওসি আবদুর রাজ্জাক জানান, সংঘর্ষের সংবাদ পেয়ে তিনিসহ পুলিশ দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। জমিজমার বিষয়টি আদালত ফয়সালা করবে। কেউ আইন হাতে তুলে নেবেন না। সংঘর্ষের ঘটনায় অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল খালেক বলেন, ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিক্ষকদের শান্ত করা হয়। শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। তারা আইন হাতে তুলে নেবে এটা কাম্য নয়। উভয়পক্ষকে জমির বৈধ সব কাগজ নিয়ে উপজেলায় এলে আমরা জমির বৈধ মালিক চিহ্নিত করে এর স্থায়ী সমাধান দেব।
যৌন নির্যাতনের প্রতিশোধ নিতে কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের নেতা সাইফ উদ্দিন আহমদকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আশরাফুল ইসলাম (১৮) নামে এক মাদ্রাসাছাত্রকে গ্রেপ্তারের পর তার স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে এমনটি জানিয়েছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহফুজুল ইসলাম।
সন্দেহভাজন হিসেবে আটক আশরাফুল তার ওপর যৌন নির্যাতনের প্রতিশোধ নিতেই আওয়ামী লীগের ওই নেতাকে হত্যা করেন। গতকাল মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহফুজুল ইসলাম।
এর আগে গত সোমবার সকালে কক্সবাজার শহরের হলিডে মোড় এলাকার আবাসিক হোটেল সানমুনের একটি কক্ষ থেকে উদ্ধার হয় পৌর আওয়ামী লীগ নেতা সাইফ উদ্দিনের মরদেহ। তাকে হত্যার পর আত্মগোপনে যাওয়ার সময় ওই দিন রাতে টেকনাফের হোয়াইক্যং থেকে হত্যাকারী হিসেবে সন্দেহভাজন আশরাফুলকে আটক করে পুলিশ। এরপর তার দেখানো স্থান থেকে নিহতের মোটরসাইকেল, মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। জব্দ করা হয় হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিও।
আশরাফুল ইসলাম কক্সবাজার পৌর শহরের ইসলামপুরের দক্ষিণ পাহাড়তলী এলাকার বাসিন্দা। তারা পুরনো রোহিঙ্গা বলে পরিচিত।
পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহফুজুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘হোটেল কক্ষ থেকে সাইফ উদ্দিনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধারের পর সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ওই কক্ষ থেকে বের হওয়া তরুণকে শনাক্তে সব পদ্ধতি ব্যবহার করে পুলিশ। সন্দেহজনক সবাইকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুত হত্যাকারী এবং হত্যার কারণ উদ্ঘাটনে চেষ্টা চালানো হয়। কয়েকটি চৌকস টিমকে বিভিন্নভাবে কাজে নামানো হয়। আমাদের কাছে খবর আসে, আত্মগোপনে যেতে হত্যাকারী আশরাফুল একটি বাসে টেকনাফ চলে যাচ্ছিল। হোয়াইক্যং পুলিশকে বিষয়টি জানানোর পর তারা চেকপোস্ট বসায়। অবশেষে পালকি নামে এক বাসে তল্লাশি চালিয়ে হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. রোকনুজ্জামান গাড়ি থেকে আশরাফকে আটক করে।’
আশরাফকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাতে এসপি আরও বলেন, নিহত সাইফউদ্দিনের দূরসম্পর্কের শ্যালক হিসেবে পরিচিত কায়সার হামিদ নয়ন ও আরেক বন্ধুর মাধ্যমে সাইফউদ্দিনের সঙ্গে পরিচয় হয় আশরাফুলের। ঘটনার দিন (২০ আগস্ট) সাইফউদ্দিন তার মোটরসাইকেলে আশরাফুলকে নিয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গা ঘোরেন। বিকেল ৪টার দিকে শহরের বড়বাজার থেকে বাংলা মদ (চোলাই মদ) ও পেয়ারা কিনে হোটেল সানমুনে যান সাইফউদ্দিন ও আশরাফ। তা পান করে একান্তে সময় কাটানোর পর আশরাফকে নিজের মোটরসাইকেলে গোলদীঘিপাড় এলাকায় নামিয়ে দেন সাইফউদ্দিন। ঘণ্টা দুয়েক পর আবার সাইফউদ্দিন একান্তে সময় কাটানোর আগ্রহ প্রকাশ করে আশরাফকে হোটেলে ডাকেন। এতে আপত্তি জানালে আশরাফের সঙ্গে মোবাইলে ধারণ করা অনৈতিক কাজের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখান সাইফউদ্দিন। অনাগ্রহ নিয়ে ওই হোটেল কক্ষে এসে অনৈতিক কাজের ভিডিও মুছে দিতে জোরাজুরি শুরু করে আশরাফ। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হলে একপর্যায়ে আশরাফের গলা চেপে ধরেন সাইফউদ্দিন। তার হাত থেকে রক্ষা পেতে পকেটে থাকা ছুরি বের করে সাইফউদ্দিনকে উপর্যুপরি আঘাত করে আশরাফুল। এতে সাইফউদ্দিন বিছানায় পড়ে যান। এরপর তার মাথা, পাসহ শরীরের নানা স্থানে ছুরিকাঘাত করা হয়। একপর্যায়ে সাইফউদ্দিনের গোঙানি বন্ধ করতে বিছানার চাদর গলায় পেঁচিয়ে ধরে আশরাফ। আবার উঠে যেন আক্রমণ করতে না পারে, সে জন্য প্যান্টের বেল্ট খুলে হাত দুটি বেঁধে ফেলে। মৃত্যু নিশ্চিত হলে জামায় লেগে থাকা রক্ত পরিষ্কার করে সাইফউদ্দিনের ফোন ভেঙে ফেলে আশরাফ। এরপর মানিব্যাগ ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে সুবিধামতো সময়ে হোটেল থেকে বের হয়ে সাইফউদ্দিনের মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যায়।
এসপি জানান, আটকের পর আশরাফের দেখানো নালা থেকে মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ, হত্যায় ব্যবহার করা ছুরিসহ অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সদর উপজেলার খুরুশকুল থেকে উদ্ধার হয় মোটরসাইকেলটিও।
এসপি মাহফুজ বলেন, ‘এ ঘটনার পেছনে আর কী আছে, কারা সাইফউদ্দিনের এসব কাজে সহযোগী ছিল, তাদের এবং কারা কারা আশরাফের মতো এমন নৈতিক স্খলনে জড়িত, তাদের শনাক্তে কাজ চলছে।’
গত সোমবার সকালে কক্সবাজার শহরের হলিডে মোড়ের হোটেল সানমুনের দোতলার ২০৮ নম্বর কক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ নেতা সাইফউদ্দিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সাইফউদ্দিন কক্সবাজার পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ ঘোনারপাড়ার বাসিন্দা। তিনি এলাকার কাদেদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া তিনি কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের গত কমিটির তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের মাধ্যমে ভর্তি হওয়ায় এক শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি অর্থের বিনিময়ে অসদুপায়ে ভর্তি হতে সহায়তা করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।
আদেশে বলা হয়, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের মাধ্যমে ভর্তি হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হলো এবং ওই শিক্ষার্থীকে অর্থের বিনিময়ে অসদুপায় অবলম্বনের মাধ্যমে ভর্তি হতে সহায়তাকারী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার হরা হলো।
ওই আদেশে, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে বিশ^বিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী আহসান হাবীবের ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০২০-২১ শিক্ষা বর্ষের শিক্ষার্থী শাকোয়ান সিদ্দিক প্রাঙ্গণ, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাহিবুল মমিন সনেট ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাজু আহমেদকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিশ^বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত এই তিন শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গত শনিবার ছাত্রলীগ থেকেও ওই তিন শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
গত ২৯ মে বিজ্ঞান ইউনিটের তৃতীয় শিফটের পরীক্ষায় আহসান হাবীবের হয়ে প্রক্সি দিয়ে উত্তীর্ণ হন। প্রক্সির জন্য একটি জালিয়াত চক্রের সঙ্গে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার চুক্তির ৬০ হাজার টাকা বাকি রাখায় গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে এলে তাকে আটকে রাখে অভিযুক্তরা। কিন্তু আহসান টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে অপহরণ করে ওই চক্রটি তার বাবার কাছে মোবাইল ফোনে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। এ সময় তারা আহসান হাবীবকে মারধরও করেন। পরে ওই শিক্ষার্থীর খোঁজ না পেয়ে তার মা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শরণাপন্ন হন। পরে প্রশাসনের সহযোগিতায় ওই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একপর্যায়ে তিনি প্রক্সির মাধ্যমে ভর্তি হয়েছেন বলে স্বীকার করেন। এরপর বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন ওই শিক্ষার্থীকে পুলিশে সোপর্দ করে। এ ঘটনায় নগরীর মতিহার থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।
পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করায় যবিপ্রবির ৯ শিক্ষার্থী বহিষ্কার : পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ৯ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বহিষ্কৃতদের মধ্যে চারজনকে দুই বছর, দুজনকে এক বছর (দুই সেমিস্টার) বহিষ্কার এবং তিনজনের অসদুপায়কৃত কোর্সটি বাতিলের আদেশ দেওয়া হয়েছে। গত ৩১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম রিজেন্ট বোর্ডের ৯৩তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছে। দুই বছর করে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের (২০১৯-২০) শিক্ষাবর্ষের মোছা. ফৌজিয়া তাবাসসুম, একই বিভাগের (২০১৯-২০) শিক্ষাবর্ষের মো. সৈকত হাসান, (২০১৮-১৯) শিক্ষাবর্ষের বৃষ্টি রাণী পাল এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের (২০১৬-১৭) শিক্ষাবর্ষের অমিয় দাস। এক বছর করে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন ইংরেজি বিভাগের (২০১৯-২০) শিক্ষাবর্ষের এস এম নাঈম হোসেন ও ক্লাইমেট অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের (২০২১-২২) শিক্ষাবর্ষের সুমন কুমার মন্ডল। এ ছাড়া অসদুপায়কৃত কোর্সটি বাতিল হয়েছে ইংরেজি বিভাগের (২০১৯-২০) শিক্ষাবর্ষের সাদিয়া তাসনিম, একই বিভাগের (২০১৮-১৯) শিক্ষাবর্ষের হাসান মাহমুদ এবং পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের (২০১৯-২০) শিক্ষাবর্ষের মোছা. রাবেয়া সুলতানার।
তামিম ইকবাল দলে না থাকাতে যেন অনেকেরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে! আবার বিশ্বকাপের দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অন্তর্ভুক্তিতেও অনেকের চোখ কপালে! দল ঘোষণার পর যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা এলেন সংবাদ সম্মেলনে, তখন আলোচনায় শুধু ছিলেন এই দুজনেই। তাদের এই বিরহ বেদনায় চাপা পড়ে যায় অনেক প্রশ্ন। লিটন দাসকে বাদ দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত কেন সহ-অধিনায়ক! বাড়তি কোনো ওপেনার ছাড়া কিংবা পাঁচ পেসারকে নিয়ে কেন দল গড়া?
প্রায় মিনিট পনেরোর সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে এসেছে একই প্রশ্ন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও ঘুরেফিরে বন্দী ছিলেন একই কথার বৃত্তে। প্রশ্নোত্তর শেষে বেরিয়ে যান তিন নির্বাচক। যেতে যেতে কথা হয় তাদেরই একজন হাবিবুল বাশারের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল চাপা পড়া সেইসব প্রশ্নের উত্তর।
শুরুতেই জানতে চাওয়া হয় লিটনকে বাদ দিয়ে শান্তকে কেন সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ একটা কারণ। আর লিটনের অনাগ্রহও তাকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর একটি কারণ। লিটন নিজেও চায় না নেতৃত্বের চাপ নিতে। সে একটু ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগ দিতে চায়।’
বিশ্বকাপ দলে বিকল্প ওপেনার না থাকার কারণও জানা গেল এই নির্বাচকের কথায়। তিনি জানালেন, ‘আমরা ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে মিরাজকে ভাবছি।’
বিকল্প ওপেনার হিসেবে বিশেষজ্ঞ কাউকে না নেওয়ায় একজন বাড়তি বোলার দলে রাখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে শেখ মেহেদি হাসান সুযোগ পেয়েছেন সে কারণে। পাশাপাশি জায়গা হয়েছে পাঁচ পেসারেরও। এর পেছনে বাশার ভারতের কন্ডিশনের কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারতে এখন আর্লি সিজন। উইকেট সতেজ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই পাঁচজন পেসার দরকার হবে।’
যেতে যেতে আরও বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক মুখোমুখি হলেন, এই দলটা বিশ্বকাপে কেমন করবে? এই প্রশ্নটা শুনেই ঘুরে দাঁড়ালেন হাবিবুল। উত্তরে মজা করে বললেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হবে এই দল।’ এরপর একটু গাম্ভীর্য ফিরিয়ে এনে যোগ করলেন, ‘আমি এদের অনেক দিন ধরে দেখছি। ওরা কয়টা ম্যাচ জিতবে জানি না। তবে বিশ্বকাপে প্রতিটি দলকে ভোগাবে, এটা জানি।’
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনে রদবদলের সুযোগ নেই সরকারের। তাই এর আগেই নির্বাচনী প্রশাসনে ধাপে ধাপে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রশাসনে চলছে পদোন্নতি ও রদবদল। ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রশাসন সাজাতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে বদলি-পদায়ন হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে বড় পদোন্নতি হয়েছে। নির্বাচনের আগে অবসরে যাওয়া কয়েকজন সচিবেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২০ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৮ জন ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিসিএসের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৫ সালে, ২৫তম ব্যাচ ২০০৬ সালে এবং ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৮ সালে।
জানা যায়, নির্বাচনের সময় ডিসিরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকেন। তাদের যে কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে বাতিলের ক্ষমতাও থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও থাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা ডিসির অধীনে। নির্বাচনের সময় সমন্বয়কারীর ভূমিকায়ও থাকেন ডিসিরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন তাদের দুটি ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে। আর সে সময় বিসিএস নিয়ে বেশ বিতর্ক ছিল। বিসিএসে ছিল নানা ধরনের তদবির। ২৪ ও ২৫তম ব্যাচ দুটি বিএনপির সময়ে নিয়োগ পেলেও ২৭তম ব্যাচ নিয়োগ পেয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। কারণ বিএনপির শেষ সময়ে ২৭তম ব্যাচের নিয়োগে বড় ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকায় তা বাতিল হয়। পরে ফের পরীক্ষা নিয়ে ২০০৮ সালে এ ব্যাচের নিয়োগ দেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল ২৪তম ব্যাচের নিয়োগ নিয়ে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২৪তম ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডিসির পদ থেকে তুলে আনা হতে পারে। নির্বাচনের সময় যারা ডিসির দায়িত্বে থাকবেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তাদের সবার ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে পরিবার ও নিকট আত্মীয়স্বজনদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো যাচাই করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে আর ডিসির পদে রাখা হবে না।
এ ছাড়া নির্বাচনে অন্যতম ভূমিকা পালন করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। বর্তমানে ৩৩, ৩৪ ও ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা রয়েছেন ইউএনও পদে, যারা আসন্ন নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এখন ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ইউএনওর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে; এ ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারের ২৯১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
জানতে চাইলে সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ইকরাম আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষা হয় যোগ্যতা, মেধা ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে। সেখানে ছাত্রজীবনে কে কোন পার্টি করেছিলেন, কোন দল ক্ষমতায় আছে তা বিবেচনা করা হয় না। বিসিএস কর্মকর্তাদের যে ফাউন্ডেশন ট্রেনিং হয়, তাতে তাকে একজন অফিসার হিসেবেই গড়ে তোলা হয়। এরপর এসিআর, সুপিরিয়রের মতামত, সুনাম, দক্ষতা, যোগ্যতার ভিত্তিতেই একজন কর্মকর্তাকে উচ্চতর পদে দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তবে সরকার যে দল পরিচালনা করে তাদের কিছু নীতিমালা ও উদ্দেশ্য থাকে। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সরকারের নেওয়া বৈধ ও জনকল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা। তিনি প্রলুব্ধ হবেন না, নিরপেক্ষ থেকে তার দায়িত্ব পালন করবেন। যদি কোনো নির্বাচনী দায়িত্বও দেওয়া হয়, সেটাও নিরপেক্ষভাবে তিনি পালন করবেন।’
গত মে মাসে অতিরিক্ত সচিব পদে ১১৪ জনের পদোন্নতি হয়। জুলাই মাসে পাঁচ বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার দেওয়া হয়েছে। গত জুলাই মাসেই বদলি ও নতুন মিলিয়ে ৩০টি জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উপসচিব পদমর্যাদার এই ডিসি পদে এবারও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আটজন পিএসকে পদায়ন দেওয়া হয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ২২১ কর্মকর্তা। এ পদোন্নতিতে মূল বিবেচনায় এসেছে ২২তম ব্যাচ। বর্তমানে যুগ্ম সচিবের স্থায়ী পদ ৫০২টি। এর বিপরীতে পদোন্নতি পাওয়ার পর যুগ্ম সচিবের সংখ্যা হলো ৯৪৬ জন। এর আগে সর্বশেষ গত বছর ২ নভেম্বর ১৭৫ জন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। আর গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২৭০ জন সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই অন্তত ১০ জন সচিবের স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার কথা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন আগামী ১৩ অক্টোবর অবসরে যেতে পারেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান ১৪ সেপ্টেম্বর, সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আবদুস সালামের ২৬ সেপ্টেম্বর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে আবদুস সালামের চাকরি এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ৯ অক্টোবর, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক ৩০ অক্টোবর, ইআরডি সচিব শরিফা খান ২৪ নভেম্বর, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহসানে এলাহী ২৫ নভেম্বর এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সিনিয়র সচিব কামাল হোসেন ২৯ নভেম্বর অবসরে যাবেন। ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোছাম্মৎ নাসিমা বেগম এবং ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম। এ ১০ জনের মধ্যে কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন।
গত কয়েক বছরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মুখ্য সচিব পদে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই স্বাভাবিক অবসরের মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। সর্বশেষ সাবেক চার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মধ্যে একমাত্র কবির বিন আনোয়ার ছাড়া বাকি তিনজনই স্বাভাবিক মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। তারা হলেন মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, মোহাম্মদ শফিউল আলম ও খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।