
১৯৯৫ সালের আজকের দিনে (২৪ আগস্ট) দিনাজপুরে কয়েকজন বিপথগামী পুলিশের হাতে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হন কিশোরী ইয়াসমিন। এ ঘটনায় দোষীদের বিচার দাবিতে আন্দোলনে ফুঁসে ওঠেন দিনাজপুরের সর্বস্তরের জনগণ। এরপর থেকে এই দিনটিকে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু যাকে ঘিরে দিবসটি সেই ইয়াসমিনের পরিবারের কেউ খোঁজ রাখে না। শুধু দিনটি এলে কেউ কেউ কিছু কর্মসূচি পালন করে মাত্র।
ইয়াসমিন ট্র্যাজেডি দিবস উপলক্ষে আজ দশমাইল মোড়ে অবস্থিত ইয়াসমিনের স্মৃতিসৌধে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করা কয়েকটি সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, ইয়াসমিনের কবর জিয়ারত ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া ইয়াসমিনের মা শরীফা বেগম তার বাড়িতে কোরআন খতম ও দোয়ার আয়োজন করেছেন।
জানা গেছে, চিকিৎসার অভাবে ধুঁকছে কিশোরী ইয়াসমিনের বড় ভাই সাহিদার রহমান সোহাগ। মেরুদন্ডের হাড় বেড়ে যাওয়ায় ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারছেন না তিনি। ইয়াসমিনের বাবা দিন হাজিরার ভিত্তিতে কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালান। অভাবের সংসারে ছেলের চিকিৎসাও করাতে পারছেন না।
নিহত কিশোরী ইয়াসমিনের মা শরিফা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে কয়েকজন কুলাঙ্গারের হাতে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছে। কিন্তু এত দিন পার হলেও এখন সেই কুলাঙ্গারদের মতো অনেক কুলাঙ্গার রয়ে গেছে। এখনো প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গায় ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটছে। এই দিনটি এলে কেউ কেউ আমাদের খোঁজ নেন। পরে আর কেউ খোঁজ নেন না। আমার ছেলে সাহিদার রহমান সোহাগের মেরুদন্ডের হাড় বেড়ে যাচ্ছে। সে ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারছে না। অর্থের অভাবে ঠিকমতো তার চিকিৎসা করাতে পারছি না আমরা’
দিনাজপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত ২৩৪ দিনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা, নির্যাতনের মামলা হয়েছে ৯১১টি, যা গড়ে দিনে প্রায় চারটি করে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের মামলা হয়েছে ১৮৭টি ও ধর্ষণচেষ্টার মামলা হয়েছে ৫৫টি। ২০২২ সালে এই আদালতে মামলা হয়েছে ১ হাজার ৩৭৫টি। ২০২১ সালে মামলা হয়েছে ১ হাজার ২৭৬টি।
ইয়াসমিন আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল বলেন, ‘আজকের দিনটি দিনাজপুরবাসীর জন্য ঐতিহাসিক দিন। দিনাজপুরে সম্মান, সম্ভ্রম ও মর্যাদাকে রক্ষা করার জন্য দিনাজপুরের মানুষ দলমত-নির্বিশেষে রাজপথে নেমে এসেছিল। দিনাজপুরের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণের কারণে ইয়াসমিনের ধর্ষণ ও হত্যাকারীদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। তবে এই দীর্ঘদিনেও নারী নির্যাতন বন্ধ হয়নি।’
কী ঘটেছিল সেদিন : ১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট দিনাজপুরের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক ঘটনা ঘটে। আজকের এই দিনে জেলার কাহারোল উপজেলার দশমাইলের অদূরে কিছু বিপথগামী পুলিশ সদস্যের হাতে ধর্ষণ ও হত্যা শিকার হয় কিশোরী ইয়াসমিন। পরদিন মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ বলতে থাকে ‘মরদেহটি একজন পতিতার’। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়ে দিনাজপুরের সাধারণ মানুষ। শুরু হয় তীব্রতর আন্দোলন। আন্দোলনের একপর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ বিনা উসকানিতে গুলি চালিয়ে সামু, কাদের, সিরাজসহ সাতজনকে হত্যা করে। আহত হন তিন শতাধিক আন্দোলনকারী ও সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শহরে ১৪৪ ধারা (কারফিউ) জারি করা হয়। নামানো হয় বিডিআর। এরপর দিনাজপুর থেকে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ ১৩ উপজেলার সব পুলিশকে একযোগে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যার বিচার : ওই ঘটনায় করা মামলাটি তিন আদালতে ১২৩ দিন বিচারকাজ শেষে ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট রংপুরের জেলা ও দায়রা জজ আবদুল মতিন মামলার রায় ঘোষণা করেন। মামলার রায়ে আসামি এএসআই মঈনুল, কনস্টেবল আবদুস সাত্তার ও পুলিশের পিকআপ ভ্যানচালক অমৃত লাল বর্মণের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ বিধান ৯৫-এর ৬(৪) ধারায় ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুর আদেশ দেওয়া হয়। আলামত নষ্ট, সত্য গোপন ও অসহযোগিতার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এএসআই মঈনুলকে আরও পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদ-ে দ-িত করা হয়। পরে আদালতের দেওয়া রায়গুলো রংপুর কারাগারে বাস্তবায়ন করা হয়।
প্রথমবারের মতো সাগরে নেমেছে শক্ত পালযুক্ত এক কার্গো জাহাজ। জাহাজটির প্রথম যাত্রায় চীন থেকে ব্রাজিল যাবে। জাহাজের একেকটি পালের উচ্চতা ১০ তলা বাড়ির সমান। এর লক্ষ্য হলো, জাহাজ শিল্পে ব্যবহৃত কার্বনের নিঃসরণ কমিয়ে আনা। পিক্সিস ওশান নামের ওই জাহাজে উইন্ডউইংস শ্রেণির পালগুলো এমনভাবে নকশা করা যাতে প্রচলিত বায়ু শক্তির সহায়তায় জ¦ালানির পাশাপাশি জাহাজ শিল্প থেকে নির্গত কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়।
প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট এনগ্যাজেটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন কার্গো জাহাজ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ডিকার্বনাইজ করা সম্ভব। পাশাপাশি, ২০৫০ সাল নাগাদ সামুদ্রিক খাত থেকে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার ক্ষেত্রেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে এ জাহাজ। এ ছাড়া, কোনো বিকল্প জ¦ালানি যুক্ত হলে এই আনুমানিক হ্রাস আরও বেশি হতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে এনগ্যাজেট।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ওই জাহাজে যুক্ত করা হয়েছে দুটি উইন্ডউইং। এদের উচ্চতা ১২৩ ফিট করে। এই দৃঢ় পালগুলোতে যে পদার্থ ব্যবহৃত হয়েছে, তা উইন্ড টারবাইন তৈরির ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়। আর এগুলো কার্গো জাহাজের ডেকের সঙ্গে যোগ হয়ে যায়। এর ফলে, তুলনামূলক পুরনো জাহাজ থেকে ঘটিত পরিবেশগত প্রভাব কমিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে।
এই প্রকল্পে একজোট হয়ে কাজ করেছে যুক্তরাজ্যের পাল নির্মাতা কোম্পানি বার টেকনোলজিস, সিঙ্গাপুরের কারগিল ওশান ট্রান্সপোর্টেশন, জাপানের মিতসুবিশি করপোরেশন ও নরওয়েভিত্তিক ইয়ারা মেরিন। কারগিলের প্রেসিডেন্ট জ্যান ডিলেম্যান বলেন, সামুদ্রিক শিল্প থেকে ডিকার্বনাইজ করা খুবই জটিল। আর এতে ব্যবহার করার মতো তেমন প্রযুক্তিও নেই। তাই জাহাজ শিল্পের সুবিধাভোগী হিসেবে আমাদেরও সাধ্যমতো উদ্ভাবনে ভূমিকা রাখতে হবে, যাতে করে এ শিল্পকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারি।
২০৫০ সাল নাগাদ গ্রিনহাউজ গ্যাসের মাত্রা শূন্যের কাছাকাছি নামিয়ে আনার লক্ষ্যে জুলাই মাসে একমত হয়েছিল জাহাজ শিল্প। নিউ ইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুসারে, এই নন-বাইন্ডিং চুক্তি মূলত ফাঁপা বুলি। তবে বিভিন্ন দেশের সরকারের নিজস্ব মাপদণ্ড তৈরির বেলায় এটি সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারে। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাপমাত্রা কমিয়ে আনার এই লক্ষ্য জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারে।
এনগ্যাজেট বলছে, বায়ু শক্তির সহায়তায় ওই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোয় সহায়তা করতে পারে। তবে, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করা চ্যালেঞ্জের বিষয়।
হজের খরচ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছর নির্ধারিত কোটা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। এ অবস্থায় হজের খরচ কমানোর দাবি ওঠে সব মহল থেকে। গতকাল বুধবার মন্ত্রণালয়ের নিজ কক্ষে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহমন্ত্রী তৌফিক বিন ফাউজানের কাছে সেই দাবির বিষয়টি তুলে ধরেছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। জবাবে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন সৌদির মন্ত্রী।
সচিবালয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সৌদির মন্ত্রী তৌফিক বিন ফাউজান আল রাবিয়াহর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। বৈঠকে হজের খরচ কমানোর বিষয়টি তোলেন প্রতিমন্ত্রী। জবাবে সৌদি সরকারের মন্ত্রী বলেন, ‘যদি খরচ কমানো সম্ভব হয়, আমরা কমাব।’
এ সময় তৌফিক আল-রাবিয়াহ বলেন, ‘বাংলাদেশিদের সৌদি আরবের মক্কা ও মদিনায় স্বাগত জানাতে আমরা এখানে এসেছি। ওমরাহ ভিসার মেয়াদ ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৯০ দিন করা হয়েছে। যে কেউ মক্কা, মদিনাসহ বিভিন্ন শহর ঘুরতে পারবেন।’ তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিটি বাংলাদেশি নাগরিককে নিশ্চিত করতে চাই, তারা ওমরাহ করতে গিয়ে সেখানে যেকোনো জায়গায় যেতে পারবেন। এখন নারীরাও মাহরাম ছাড়া মক্কা ও মদিনায় যেতে পারবেন।’
তিনি বলেন, সৌদি আরবে বাস করা যেকোনো বাংলাদেশি তাদের আত্মীয়-স্বজনদের ভিজিট ভিসায় সৌদি আরবে আমন্ত্রণ জানাতে পারবেন। এ ছাড়া হজের খরচ কমানো নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকে সৌদি সরকারের কাছে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হজ এজেন্সিদের সংগঠন হাব। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে হজের সময় মিনা-মুজদালিফায় বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা, সুশৃঙ্খল লাগেজ ব্যবস্থাপনা, মুজদালিফা থেকে আসার পর বয়স্ক হাজিদের বিশ্রাম নেওয়ার পর শয়তানকে পাথর মারার সুযোগ দেওয়া। এ ছাড়া হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের সার্বিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়।
ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এবার হাজিদের ৬৫টি লাগেজ (ট্রলি) পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়কে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। অন্যদিকে মুজদালিফা থেকে মিনায় আসার পর হাজিদের জামারায় (শয়তানকে পাথর মারার স্থান) পাঠানো হয়। সৌদি পুলিশ হাজিদের তাঁবু আটকে রাখে। এতে ৪০ থেকে ৪৫ ডিগ্রি রোদে কয়েক কিলোমিটার হাঁটার পর বয়স্ক হাজিরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনেবে মারাও গেছেন। এ বিষয়গুলো সৌদি হজমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরে সমাধান চাওয়া হয়।
গত মঙ্গলবার রাতে দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে আসে সৌদি সরকারের হজ ও ওমরাহমন্ত্রীর নেতৃত্বে ৬১ সদস্যের প্রতিনিধিদল।
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সহযোগিতা করবে ঢাকা-রিয়াদ : সফররত সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহমন্ত্রী ড. তাওফিক আল-রাবিয়া বলেছেন, বাংলাদেশ-সৌদি সম্পর্কে কোনো চ্যালেঞ্জ নেই, তবে সুযোগ রয়েছে। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বৈঠক শেষে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, এশিয়ায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ঢাকা-রিয়াদ একসঙ্গে কাজ করছে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও তারা পরস্পরকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। গত ১৪ বছরে বিভিন্ন কৌশলগত ইস্যুতে সৌদি আরবের পাশে থেকেছে বাংলাদেশ। এ অঞ্চলে এবং এশিয়ায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। হজ ব্যবস্থাপনা কীভাবে আরও ভালো করা যায়, ঝামেলাবিহীন করা যায়, সেই আলোচনা করেছি।
শাহরিয়ার আলম বলেন, দেশটিতে প্রায় ৩০ লাখ বাংলাদেশি রয়েছেন। তবে দেশটির পর্যটন, সবুজায়ন ইত্যাদি খাতে আমাদের দেশের আরও মানবসম্পদ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ব্যবসায়ীদেরও আরও ব্যবসা বাড়ানোর সুযোগ আছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করে যাব। আর সৌদি মন্ত্রী মন্তব্য করেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে।
এ সময় সৌদি মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে সফরে আসতে পেরে আমি খুব খুশি। তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, এটিই বাংলাদেশে সৌদি হজ ও ওমরাহমন্ত্রীর প্রথম কোনো সফর। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশের দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতি চিত্তাকর্ষক। আর অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে আমি আশাবাদী।
তাওফিক আল-রাবিয়া বলেন, বাংলাদেশিরা সৌদি আরবে হজ আরও সহজে কীভাবে করতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
সৌদি আরবে অনেক বাংলাদেশি কোম্পানি বিনিয়োগ করছে, বাংলাদেশেও সৌদি কোম্পানি বিনিয়োগ করছে। তিনি বলেন, দেশটির বিনিয়োগমন্ত্রী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশে আসবেন। উভয় দেশে বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে আলোচনা করবেন। আমাদের উভয় পক্ষের অনেক সুযোগ রয়েছে।
সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহমন্ত্রী ড. তাওফিক আল-রাবিয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গত ২২ আগস্ট থেকে ঢাকা সফরে রয়েছে।
‘জাল নোট বিক্রি করি’, ‘জাল টাকা সেল’, ‘জাল টাকা বেচি’ এমন নামে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় একটি চক্র এক বছরে প্রায় দুই কোটি টাকার সমমূল্যের জাল নোট ছড়িয়েছে। সংঘবদ্ধ এই চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব এ তথ্য জানিয়েছে।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জাল নোট সরবরাহ করতেন; বিশেষ করে মাছ বাজার, লঞ্চঘাট, বাসটার্মিনালসহ বিভিন্ন মার্কেটে দিতেন। এ ছাড়া বিভিন্ন উৎসবের সময় বিপুল পরিমাণ জাল নোট ছাপতেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে চক্রটি জাল নোট ছাপার পর অব্যবহৃত কাগজসহ অন্যান্য অংশ পুড়িয়ে ফেলত।
গত মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের এই চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মোহাম্মদ আমিনুল হক ওরফে দুলাল (৪৩), আবদুর রাজ্জাক ওরফে দিদার (৩০), সুজন আলী (৪০) ও মোহাম্মদ সাকিবুল হাসান (২১)। গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর খিলগাঁও, সবুজবাগ ও ডেমরা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা সমমূল্যের জাল নোট উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া জাল নোট তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার আমিনুল চক্রটির মূলহোতা। তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতেন। অনলাইনে জাল নোট তৈরি করা শিখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয় হওয়া কয়েক ব্যক্তিকে নিয়ে জাল নোট তৈরি ও বিক্রির চক্র গড়ে তোলেন। আমিনুল নিজে জাল নোটের ডিজাইন ও ছাপার কাজ করতেন। তিনি জাল নোট ছেপে তার সহযোগী দিদারকে দিতেন। দিদার চক্রের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে নোট কাটিং ও বান্ডিল করতেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, চক্রটি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে গ্রাহক তৈরি করতেন। তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিতেন। পরে তাদের সুবিধাজনক স্থানে জাল নোট সরবরাহ করতেন। যখন ব্যবসা রমরমা থাকত, তখন চক্রটি দিনে দুই থেকে তিন লাখের বেশি টাকার জাল নোট তৈরি করত। ১ লাখ টাকার জাল নোট ২০-২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করত।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার দিদার হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন। তিনি তৈরি পোশাকের ব্যবসা করতেন। ব্যবসায় লোকসান হওয়ার পর অল্প সময়ে বেশি লাভের আশায় জাল নোট তৈরি ও বিক্রির চক্রে যুক্ত হন। চক্রের সদস্য সুজন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তিনি এলাকায় জুতার দোকান করতেন। ব্যবসায় ক্ষতির পাশাপাশি তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। পরে ঢাকায় চলে আসেন। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই চক্রের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। জাল নোট ছাপার পর দিদারের সঙ্গে তা কাটিং ও বান্ডিল করতেন তিনি। পরে গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করতেন। চক্রের সদস্য সাকিবুল রাজধানীর একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করতেন। তিনি মেসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন।
রাশিয়ার ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে মারা গেছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি। গতকাল বুধবার রাতে বিবিসির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ায় ওই উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। যাতে প্রিগোজিনের সঙ্গে আরও নয়জন ছিলেন।
বিবিসি লিখেছে, এর আগে ওয়াগনার সংশ্লিষ্ট টেলিগ্রাম চ্যানেল গ্রে জোনে বলা হয়, মস্কোর উত্তরে তিভের অঞ্চলে বিমানটিকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে রুশ প্রতিরক্ষা বাহিনী।
ওয়াগনার সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যম ‘গ্রে জোন’র বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, স্থানীয়রা দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পায়। তারা দুটি ধোঁয়ার কু-লী দেখতে পান। রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা ‘তাস’র বরাত দিয়ে বলা হয়, মাটিতে বিধ্বস্ত হওয়ার পর উড়োজাহাজটিতে আগুন ধরে যায়। ইতিমধ্যে মরদেহও উদ্ধার হয়েছে। উড়োজাহাজটি অন্তত আধঘণ্টা আকাশে অবস্থান করছিল।
তাস জানায়, ওই উড়োজাহাজের ১০ যাত্রীর মধ্যে ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের নামও ছিল। তিনি পুতিনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দেশটিতে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করছিল ওয়াগনার সেনারা। তবে রুশ সামরিক নেতৃত্বের প্রতি অসন্তোষ ছিল প্রিগোজিনের। যার প্রকাশ ঘটে গত ২৩ জুন। বিদ্রোহ করে বসেন প্রিগোজিন। রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বকে উৎখাতের জন্য ইউক্রেন সীমান্ত থেকে মস্কোর দিকে অভিযান শুরু করেন তিনি। পথে কয়েকটি শহর নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেন ওয়াগনারের যোদ্ধারা। ওয়াগনারের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় গুরুত্বপূর্ণ একটি রুশ সেনাঘাঁটি।
প্রিগোজিনের বিদ্রোহে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন সাম্প্রতিককালের মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন। পরবর্তী সময়ে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় অভিযান বন্ধের ঘোষণা দেন প্রিগোজিন। তখন বলা হয়, প্রিগোজিনসহ ওয়াগনার সেনারা রাশিয়া ছেড়ে বেলারুশে চলে যাবেন। সে অনুযায়ী বিদ্রোহের পর ওয়াগনার সেনারা বেলারুশে চলে যান। তবে প্রিগোজিনের অবস্থান নিয়ে জল্পনা-কল্পনা রয়ে যায়। সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, তিনি বেলারুশে আছেন। এমনকি তার রাশিয়া সফর এবং পুতিনের সঙ্গে দেখা করার খবরও প্রকাশ হয়। কিন্তু এরপর কখনই প্রকাশ্যে দেখা যায়নি তাকে।
দেশে বর্তমানে ৭৫ শতাংশ ডেঙ্গু রোগী ডেন-২ ও ১৮ শতাংশ রোগী ডেন-৩ দ্বারা আক্রান্ত। বাকি ৬ শতাংশ রোগী ডেন-২ ও ডেন-৩ এই দুই ধরনের ডেঙ্গু দ্বারাই আক্রান্ত। সরকারের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার ডেঙ্গু রোগীর ২০০ নমুনা পরীক্ষা করে এমন চিত্র পেয়েছে। সেন্টারের ভাইরোলজি বিভাগ গত সপ্তাহে এসব নমুনা পরীক্ষা করে।
রোগতত্ত্ববিদরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গুর চারটি ধরন : ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ এবং ডেন-৪। ডেঙ্গুর একটি ধরনে আক্রান্ত হলে সেই নির্দিষ্ট ধরনের প্রতিরোধক্ষমতা শরীরে গড়ে ওঠে, পরবর্তী সময়ে সেই ধরনটিতে মানুষ আর আক্রান্ত হয় না। তবে অন্য ধরনে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। এভাবে মোট চারবার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। প্রথমবার আক্রান্ত হওয়ার চেয়ে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে রোগের তীব্রতা ও জটিলতা দুটিই বাড়ে।
এ ব্যাপারে সেন্টারের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মনিরা পারভীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা বেশিরভাগই নমুনায় ডেন-২ ও ডেন-৩ পেয়েছি। কয়েকটা নমুনায় ডেন-২ ও ডেন-৩ দুটোই পেয়েছি। নমুনাগুলোর বেশিরভাগই ডেঙ্গু নেগেটিভ ছিল। এসব রোগীর এনএস১ পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়েনি।’ এই ভাইরোলজিস্ট বলেন, ‘২০০০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আমার অভিজ্ঞতা বলে, ডেন-৩ হেমোরেজিক বা রক্তক্ষরণের সঙ্গে সম্পর্কিত। আর ডেন-২ ধরনে বমি ও ডায়রিয়াসহ শারীরিক কিছু ডিজঅর্ডার দেখা দেয়। শক সিনড্রোম হয়।’
এ ব্যাপারে সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শাহেদ আলী জিন্নাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরে যেসব রোগীর এনএস১ পরীক্ষা করে ডেঙ্গু নেগেটিভ ও পজিটিভ এসেছে, তাদের নমুনা পরীক্ষা করে এমন ফল পাওয়া গেছে। এখন হয়তো আরও কিছু মিউটেশন থাকলেও থাকতে পারে বা নতুন কোনো মিউটেশন এসেছে কি না, সেটি এ মুহূর্তে বোঝা যাচ্ছে না। যদি আমরা ডেঙ্গু ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স করতে পারি, তাহলে নতুন কোনো মিউটেশন দেশে আছে কি না, সেগুলো চিহ্নিত করতে পারব।’
সেন্টারের ভাইরোলজি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০টি নমুনার মধ্যে ১৫১টি নমুনায় সেরোটাইপ-২, ৩৭টি নমুনায় সেরোটাইপ-৩ এবং ১২টি নমুনায় সেরোটাইপ-২ ও ৩ দুটি সেরোটাইপের একত্রে উপস্থিতি পাওয়া গেছে। শিগগিরই ডেঙ্গু সিকোয়েন্সিংয়ের কাজ শুরু হবে।
ডেঙ্গুর এমন ধরনকেই এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি জটিল হওয়ার কারণ হিসেবে মনে করছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাইফ উলাহ মুন্সী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২০১৬ সাল থেকে ডেঙ্গুর সেরোটাইপের ডেটা লক্ষ করলে দেখা যাবে, ঘুরেফিরে ডেন-২ ও ডেন-৩-এর প্রকোপ বেশি ছিল। এবার যারা ডেন-৩ দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে, তারা আগামীতে ডেন-৩ দ্বারা হলে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাবে। এই যে একের পর এক ধরন আসা, এটাই ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আরেকটা কারণ। ধারাবাহিকভাবে ভিন্ন ভিন্ন সেরোটাইপ আসছে। ২০১৬-১৭ সালে ডেন-৩ পরিমাণ বেশি ছিল। এবারের চিত্র বিপরীত। সে সময় যারা ডেন-৩ দ্বারা আক্রান্ত ছিল, তারা যদি এবার ডেন-২ দ্বারা আক্রান্ত হয়, তাহলে পরিস্থিতি জটিল হবে। ঠিক তেমনি সে সময় যারা ডেন-২ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে, তারা যদি এবার ডেন-৩ দ্বারা আক্রান্ত হয়, তাহলে তাদের পরিস্থিতিও জটিল হবে।
এর আগে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানিয়েছিল, এ বছর ৬২ শতাংশ রোগী ডেঙ্গুর ধরন ডেন-২-এ আক্রান্ত হয়েছে। বাকি ৩৮ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছে, অন্য ধরন ডেন-৩-এ।
দেশের ইতিহাসে ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল। তখন ৯০ শতাংশ মানুষ ডেন-৩-এ আক্রান্ত হয়েছিল। ২০২২ সালে নমুনা বিশ্লেষণে প্রাধান্য ছিল ডেন-৩-এর। ৯০ শতাংশ রোগী আক্রান্ত হয়েছিল ডেন-৩-এ। বাকি প্রায় ১০ শতাংশ ছিল ডেন-৪। ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ডেন-১ ও ডেন-২ বেশি ছিল। প্রায় সাত বছর পর ডেন-২ বেশি দেখা যাচ্ছে।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৫০০ ছাড়াল : দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে আরও ১৩ জন মারা গেছে। এর মধ্য দিয়ে গতকাল বছরের প্রথম মৃত্যু ৫০০ ছাড়িয়ে ৫০৬ জনে পৌঁছাল। তাদের মধ্যে ঢাকায় মারা গেছে ৩৭৪ জন ও ঢাকার বাইরে ১৩২ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৭০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর দেশে আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়াল ১ লাখ ৬ হাজার ৪২৯ জনে। এ সময় ডেঙ্গুতে মারা গেছে ১৩ জন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৫০৬ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২ হাজার ৭০ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮৫৭ জন ও ঢাকার বাইরের ১ হাজার ২১৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গুতে যে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে আটজন ঢাকার এবং পাঁচজন ঢাকার বাইরের বাসিন্দা।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
মূল লড়াইয়ের আগে গা গরমের খেলা। সেখানে ব্যাটসম্যানরা ছিলেন আগ্রাসী। তাতে পাকিস্তান পায় ৩৪৫ রানের বড় সংগ্রহ। তারপরও জিততে পারল না। নিউজিল্যান্ড জয় তুলে নিয়েছে ৩৮ বল হাতে রেখেই।
পাকিস্তানের ব্যাটারদের মধ্যে সেঞ্চুরি পেয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৯৪ বলে ১০৩ রান করে অবসর নেন তিনি। এছাড়া বাবর আজম ৮০ ও সৌদ শাকিল ৭৫ রান সংগ্রহ করেছেন।
পাকিস্তানের দেয়া ৩৪৬ রানের জবাব দিতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে নিউজিল্যান্ড।
কিউই ব্যাটারদের মধ্যে ওপেনিংয়ে নামা রাচিন রবীন্দ্র ৭২ বলে ৯৭ রান সংগ্রহ করে দলের জয়ে বড় অবদান রাখেন। এছাড়া দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা কেন উইলিয়ামসন ৫৪, ড্যারেল মিচেল ৫৯ আর মার্ক চাপম্যান ৬৫ রান করে দলকে ৫ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
গোটা দেশ এখন দুই ভাগে বিভক্ত। একদল সাকিব আল হাসানকে শূলে চড়াচ্ছে, অন্যরা তামিম ইকবালকে। অথচ জাতীয় ক্রিকেট দল ভারতে গেছে বিশ্বকাপ খেলতে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে খোঁচাখুঁচি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে। যে উদ্বোধনী জুটি নিয়ে এত দ্বিধা আর সংকোচ, যে কারণে তামিম না থাকায় এত হাহাকার, সেখানেই কিনা বাজিমাত করে পুরো জাতিকে অন্য এক বার্তা দিলেন তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস।
বিশ্বকাপের দলে যে তামিম ইকবাল থাকছেন না, সেটা জানা গিয়েছিল আগের দিনেই। তবু ক্রিকেট ভক্তদের মনের এক কোণে ক্ষীণ আশা ছিল। ওপেনারদের টানা ব্যর্থতার কথা বিবেচনায় হলেও এই ব্যাটসম্যান থাকবেন বলে ছিল তাদের। কিন্তু সেই আশার গুড়ে বালি। তাকে দলে না রাখায় অবশ্য রাস্তায় জনতার ঢল নামেনি, রাজপথে হয়নি কোনো সভা-সমাবেশ। তবে নতুন যুগের দেয়ালে দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদী নিন্দার বাণী। হাল জামানায় যাকে ‘টাইমলাইন’ বলে সম্বোধন করা হয়।
সেই সব প্রতিবাদী স্ট্যাটাসও দুই ভাগে বিভক্ত। কেউ সাকিব আল হাসানের পক্ষে, কেউবা তামিম ইকবালের। একদল পরিসংখ্যান-পর্যালোচনা দিয়ে বোঝাতে ব্যস্ত যে এই যুগে তামিমের কৌশল ‘ওল্ড স্কুল’। ওসব এখন আর চলে না। অন্য দল ১৭ বছরের ইতিহাস আর আবেগ নিয়ে হাজির। তাদের কাছেও আছে পরিসংখ্যান। সেটা গত কয়েক বছরের তামিমের ওপেনার সঙ্গীদের একটা তালিকা। তারাই শূলে চড়াচ্ছেন সাকিব-হাথুরু থেকে শুরু করে বিসিবির শীর্ষ কর্তাদের।
বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে সাকিব ক্রীড়াভিত্তিক একটি টিভি চ্যানেলকে দিয়ে গেছেন সাক্ষাৎকার। সেখানে তিনি সরাসরি তামিমের সমালোচনা করেছেন। এই ওপেনার যে দলের প্রয়োজনে পজিশন পরিবর্তনে রাজি হতে চান না, সেই মানসিকতা বাচ্চাদের মতো বলে সমালোচনা করেছেন টাইগার অধিনায়ক। এমনকি তার স্পোর্টসম্যানশিপ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তার আগে তামিম নিজে একটা ভিডিও বার্তায় বলেছেন তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা। মাশারফী বিন মোর্ত্তজাও ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। তাতে করে ক্রিকেটাঙ্গনে এখন যেন ভিডিও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ক্রিকেট নিয়ে জাতির অবস্থা যখন এমন, তখন ভারতের গোয়াহাটিতে বাংলাদেশের ক্রিকেট দল। আসাম রাজ্যের রাজধানীর বরষাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম উদ্বোধনী ম্যাচ খেলতে নেমেছিল তারা। ছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, নাজমুল হোসেন শান্তও ছিলেন না থাকার মতো করেই। প্রথম গা গরমের ম্যাচে তাই নেতৃত্ব দেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
টসভাগ্যে মিরাজের পরাজয়ের পর বল হাতে নামে বাংলাদেশ। টানা ৪০ ওভার টাইগারদের বোলারদের যেন শাসন করছিলেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। ঐ সময় পর্যন্ত ৫ উইকেট হারালেও তারা করে ২০২ রান। তারপরই যেন ঘুরে দাঁড়ান টাইগার বোলাররা। শেষ ১০ ওভারের ৫ বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় লঙ্কানরা। ২৬৩ রানের বেশি তারা করতে পারেনি।
২৬৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নামা বাংলাদেশের হালটা যে সুখকর হবে না, মুহূর্তেই ধসে পড়বে ব্যাটিং লাইনআপ। সিনিয়রদের কাউকে এসে হাল ধরে নিয়ে টেনে নিয়ে যেতে হবে দলকে। খাঁদের কিনারা থেকে টেনে তুলে হয় জয়, নয়তো সম্মানজনক হার! এমনটাই ছিল অনুমিত। আমরা যে এতেই অভ্যস্ত।
কিন্তু তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস সব অনুমান ভুল প্রমাণ করে দেন। যে ওপেনিং জুটি বাংলাদেশকে ভোগাচ্ছিল, যে সমস্যার কারণে চোট প্রবণ তামিম ইকবালকেও সবাই চাইছিলেন দলে। সেটাই কিনা তারা প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে ভুলিয়ে দিলেন! উদ্বোধনীতে তারা গড়েন ১৩১ রানের জুটি। তাতে ১৩ ম্যাচ পর বাংলাদেশ ওপেনিংয়ে শতরানের জুটি দেখতে পেয়েছে। হোক সেটা প্রস্তুতি ম্যাচ, তবুও তো লড়াই!
সবচেয়ে বড় স্বস্তি লিটন-তানজিদের রানে ফেরা। এশিয়া কাপের আগে জ্বরে ভুগছিলেন লিটন। সেই জ্বরের ধকল কাটিয়ে উঠতে তার সময় লেগেছে। মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে যেতে হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর চোটের কারণে। কিন্তু নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। এই টুর্নামেন্টে ২ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তানজিদ। কিন্তু তিনিও প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজেও।
তাই বিশ্বকাপের দলে তামিম ইকবালকে বাদ দেওয়াতে ঝড় উঠেছিল। সেই ঝড় চলমান ছিল আজ দুপুর অবধি। অনেকেই ভেবে রেখেছিলেন, এই জুটি ব্যর্থ হবে। যা ধারাবাহিক থাকবে টুর্নামেন্টের শুরুতেও। তারপর বিশ্বকাপের মাঝপথে আচমকা ডাক পেয়ে তামিম ইকবাল উড়াল দেবেন ভারতে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলে। সেবার জাভেদ মিয়াঁদাদকে ছাড়াই তারা বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল। কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতার কারণে তাকে মাঝপথে উড়িয়ে নেওয়া হয়েছিল, এবং বিশ্বকাপ জিতেছিল।
এমন স্বপ্ন বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটভক্তরাও দেখতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তানজিদ তামিম আর লিটনের জুটি বদলে দিয়েছে সব হিসেব-নিকেশ। তামিমের ফেরার প্রত্যাশায় যারা গুনছিলেন প্রহর, তাদের মাথায় যেন এবার আকাশ ভেঙে পড়েছে। কারণ তারা যে রানে ফিরেছেন। যুববিশ্বকাপজয়ী তামিম খেলেছেন ৮৪ রানের একটি ইনিংস। ৮৮ বলে যা সাজানো ছিল ১০টি চার ও ২টি ছক্কায়। অন্যপ্রান্তে লিটন ৫৬ বলে ১০ চারে খেলেছেন ৬১ রানের ইনিংস। শুধু কি তাই! এদিন তিনে নেমেছিলেন মিরাজ। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬৭ রান। ৬৪ বলের হার না মানা ইনিংসটি সাজানো ছিল ৫ চার ও ২ ছক্কায়।
পঞ্চপান্ডবের পরের প্রজন্ম তো তারাই। যাদের ব্যাটে শুক্রবার বরষাপাড়ায় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তাদের রানে ফেরা যেন নতুন দিনের বার্তা দেয়। যে বার্তা আগামীর পথচলার। যেখানে পুরনোকে আকড়ে ধরে রাখার প্রবণতা ক্ষীণ হয়ে আসার বার্তা। সহজ কথায়, তরুণদের রানে ফেরাতে মিয়াঁদাদ হওয়ার সুযোগ আর হচ্ছে না তামিম ইকবালের।
আল নাসরে প্রথম মৌসুমটা ভালো না কাটলেও দ্বিতীয় মৌসুমের শুরু থেকেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আছেন দারুণ ছন্দে। নিজে গোল করে দলকে জেতাচ্ছেন, সতীর্থদের দিয়ে গোল করাচ্ছেন।
শুক্রবারও সৌদি প্রো লিগে আল তা’য়ির বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতেছে আল নাসর। এ ম্যাচেও রোনালদো গোল করেছেন এবং করিয়েছেন। তবে তাঁকে নিয়ে বেশি আলোচনা তালিসকার গোলটিতে অসাধারণ এক অ্যাসিস্টের জন্য। অ্যাসিস্টটিতে যে সবার মন ভরিয়ে দিয়েছেন রোনালদো।
তা’য়ির মাঠে আল নাসর গতকাল শুরুটা করেছে দারুণ। একের পর এক আক্রমণে স্বাগতিক দলের রক্ষণ করে দিয়েছে এলোমেলো। ম্যাচের শুরুর দিকেই রোনালদোর দুর্দান্ত একটি প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে দেন তা’য়ির গোলকিপার। এ ছাড়া রোনালদোও খুব কাছ থেকে পাওয়া একটি সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি।
তবে ৩২ মিনিটে এগিয়ে যায় আল নাসর। গোলটি করেছেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার অ্যান্ডারসন তালিসকা। গোলটিতে রোনালদো অ্যাসিস্ট করেছেন অসাধারণ এক বাই-সাইকেল কিকে। সৌদি প্রো লিগে এ মৌসুমে এটা রোনালদোর পঞ্চম অ্যাসিস্ট।
খেলার স্রোতের বিপরীতে ৭৯ মিনিটে সমতায় ফেরে তা’য়ি। কিন্তু সমতা বেশিক্ষণ থাকেনি। ৩ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে আল নাসরের জয়সূচক গোলটি করেছেন রোনালদো। সৌদি প্রো লিগে এ মৌসুমে এটা ৭ ম্যাচে তার ১০ নম্বর গোল। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৫ ম্যাচ খেলে করেছেন ১৬ গোল।
এই জয়ের পর ৮ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে আল নাসর। আল ফেইহার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করা আল ইত্তিহাদ সমান ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে শীর্ষে। ৮ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে আল তা’য়ি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুলিশ। নির্বাচনে কী উপায়ে নিরাপত্তা দেওয়া হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। তবে সরকারের হাইকমান্ড থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে তথ্য এসেছে, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও সদস্য সরকারবিরোধীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছে। পুলিশের একটি প্রতিবেদনেও তথ্য এসেছে সারা দেশে অন্তত আড়াইশো কর্মকর্তা আছেন তারা সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাদের পুরো কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এদিকে, চলতি মাস ও আগামী মাসের মধ্যে পুলিশে আরও বড় ধরনের রদবদল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তালিকাও করা হয়েছে। পাশাপাশি উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদিও কেনার চেষ্টা করছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, সামনের দিনগুলোতে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এ নিয়ে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা আগাম সতর্কবার্তাও দিয়েছে। যেকোনো বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করতে কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিট প্রধান ও জেলার এসপিদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের মধ্যে কোনো সদস্য সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার তথ্য পেলে জানাতে বলা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশেই সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনকালীন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পেশাদার সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু সদস্যের কর্মকান্ড নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এই সংখ্যা প্রায় আড়াইশো মতো হবে। সংখ্যা আরও বাড়তেও পারে। ইতিমধ্যে তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিতও করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশে উদ্বেগ আছে। বৈধ অস্ত্রের সংখ্যার খোঁজ নেওয়া, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্র কারবারিদের গ্রেপ্তার করতে বিশেষ অভিযান চালাতে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযানের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। হুট করেই আমরা বিশেষ অভিযান শুরু করব। কেপিআই স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন যথাসময়ে হবে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো মহল বা চক্র নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাতে না পারে সে জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সতর্ক আছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের সবধরনের প্রস্তুতি আছে। দাগি সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বড় ধরনের অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের।
পুলিশ সূত্র জানায়, আড়াইশো পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকান্ড নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাদের মোবাইল নম্বর সার্বক্ষণিক ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও খোঁজ রাখা হচ্ছে। নজরদারির মধ্যে থাকা বেশ কয়েকজন পুলিশ সুপার, অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর আছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতাদের সাপোর্ট দেওয়া আমাদের কাজ না। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের জন্য উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্র ও যানবাহন ক্রয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৫০ লাখের মতো রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড কেনা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে এসব সরঞ্জাম বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করছি। ডিএমপি, সিএমপি, কেএমপি, আরএমপি, বিএমপি, এসএমপি, আরপিএমপি, জিএমপি কমিশনার, বিশেষ শাখা (এসবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), অপরাধ তদন্ত বিভাগ, পিবিআই, টুরিস্ট পুলিশ, এটিইউ, রেলওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ, এপিবিএন, হাইওয়ে, শিল্পাঞ্চল পুলিশ প্রধান, সব অ্যাডিশনাল আইজিপি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও রংপুর রেঞ্জে নতুন আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে ইউনিট প্রধানরা পুলিশ সদর দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন। বিষয়টি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্র করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। বিএনপি আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা করছে। যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। আর এসব মোকাবিলা করতে পুলিশকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুলিশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।