
চট্টগ্রাম মহানগরীর সাম্প্রতিক জলাবদ্ধতার জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) দায়ী করে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। প্রতিবাদে সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ সংবাদ সম্মেলন ডেকে জলাবদ্ধতার জন্য উল্টো সিটি করপোরেশনকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, করপোরেশনের সক্ষমতা ছিল না বলেই সিডিএকে জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগা প্রকল্পটি দেওয়া হয়। এর জবাবে মেয়র আরেক দফা সংবাদ সম্মেলন করে তার প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা আছে বলে দাবি করেন।
দুই সংস্থার বাগ্যুদ্ধে বন্যা-জলাবদ্ধতায় নাকানিচুবানি খাওয়া চট্টগ্রামবাসী দারুণ ক্ষুব্ধ। কারণ এ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে; ক্ষোভ-বিক্ষোভ হয়েছে; লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু নগরীর জলাবদ্ধতার সমাধান কোনো কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি। তবু প্রাসঙ্গিক হিসেবে পাঠকদের কাছে বিষয়টি তুলে ধরা হলো।
কার কাজ কে বাগায়
দুই সংস্থার বিরোধের শুরু জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প নেওয়ার সময়। বিধি অনুযায়ী নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ সিটি করপোরেশনের। তারাই নালা ও খালের মাটি অপসারণের কাজের পাশাপাশি সংস্কারকাজ করছিল। জলাবদ্ধতার ইস্যুতে চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন মেয়র গদি হারিয়েছেন। মেয়র আ জ ম নাছিরের সময় ২০১৬ সালে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগা প্রকল্পের অনুমোদন নিয়ে নেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। এ নিয়ে কম বিরোধ হয়নি। ওই সময় ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার প্রকল্প মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য সিডিএ সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করে। ওই প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফায় বাড়ানোর পর এ বছরের জুনে শেষ হলেও কাজ হয়েছে ৭৬ শতাংশ। ফলে এখনো পানিতে ডুবছে চট্টগ্রাম।
প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘৭৬ শতাংশ কাজ হওয়ার পরও চট্টগ্রাম নগর যেভাবে ডুবছে, শতভাগ শেষ হলেও কি নগরবাসী জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে? প্রকল্প শতভাগ শেষ হলেও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলবে না।’
খালেই খেয়েছে সব
১৯৯৫ সালের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৭০টি খাল ছিল। চট্টগ্রাম ওয়াসা ২০১৬ সালে ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করার সময় ৫৭টি খালের কথা উল্লেখ করে। তার ভিত্তিতেই সিডিএর তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম জলাবদ্ধতার মেগা প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন করিয়ে প্রকল্পটি একনেক থেকে পাস করিয়েছিলেন। প্রকল্পে ৩৬টি খালের সংস্কার ও উন্নয়নের কথা বলা হয়। বাকি ২১টি খাল গেল কোথায়?
চট্টগ্রাম মহানগরীর নদী-খাল রক্ষা নিয়ে আন্দোলনকারী পরিবেশকর্মী আলিউর রহমান বলেন, ‘আরএসশিটের ৭০টি খাল উদ্ধার করতে হবে। খালগুলোর কোথাও মার্কেট, কোথাও ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। খালের জায়গা খালকে ফেরত দিতে হবে।’
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ্ আলী বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হলেও জলাবদ্ধতা পুরোপুরি যাবে না। আমরা ৩৬টি খালে কাজ করছি। বাকি খালগুলোর যদি সংস্কার না হয়, তাহলে প্রকল্পে সুফল আসবে না। নগরীর রাস্তার পাশের নালাগুলো যদি পরিষ্কার না থাকে এবং নালা দিয়ে পানি খালে না আসে, তাহলে রাস্তায় পানি থেকেই যাবে।’
কর্নেল শাহ্ আলীর বক্তব্যে প্রমাণ পাওয়া গেছে ৪, ৫ ও ৬ আগস্ট বন্দরনগরী পানিবন্দি থাকার সময়। তখন রাস্তায় পানি জমে ছিল। চাক্তাই খালে পানির প্রবাহ না থাকলেও রাস্তায় পানি ছিল।
একে পুঁজি করে সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের প্রকল্পের কারণে পানি জমছে না। খালে তো পানি নেই। রাস্তা থেকে নালা হয়ে খালে পানি আসছে না। রাস্তা ও নালা সিটি করপোরেশনের আওতায়। জলাবদ্ধতার জন্য সিডিএ দায়ী নয়।’
লে. কর্নেল শাহ্ আলী বলেন,‘জলাবদ্ধতা নিরসনে দুই সংস্থার ৪০টি খালের মুখে রেগুলেটর বা সøুইসগেট বসানোর কথা। সব খালে রেগুলেটর না বসানো পর্যন্ত জোয়ারের পানি ঢুকবে এবং জলাবদ্ধতা যাবে না।’
অপূর্ণ চার প্রকল্প
সিডিএর ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প, সিটি করপোরেশনে ৩২৬ কোটি ৮৪ লাখ ১১ হাজার টাকার খাল খননের প্রকল্প (যথাসময়ে কাজ শুরু করতে না পারায় প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ১ হাজার ২৫৬ কোটি টাকায় গিয়ে পৌঁছে, এখনো কাজ শেষ হয়নি), সিডিএর চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প, যার আওতায় ১২টি খালের মুখে রেগুলেটর বসানোর কথা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প, যার আওতায় কর্ণফুলীর মোহনা থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত আরও ২৩টি খালের মুখে রেগুলেটর বসানোর কথাÑ এসব প্রকল্পের একটিও পুরোপুরি শেষ হয়নি।
পাহাড় কাটাও দায়ী : মেয়র
জলাবদ্ধতার জন্য পাহাড় কাটাকেও দায়ী করেন চট্টগ্রামের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, নগরীর পাহাড় কাটার অনুমোদন দিচ্ছে সিডিএ। পাহাড় কাটা মাটি বৃষ্টির পানিতে মিশে নালা ও খাল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
মেয়রের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, ‘চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো বালির পাহাড়। পাহাড় না কেটে ভবন নির্মাণ করা গেলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না।’ তিনি বলেন, ‘নগরীর পুকুর-দীঘি ভরাট করে মানুষ বাড়ি নির্মাণ করায় জলাধার কমে গেছে। এ কারণেও জলাবদ্ধতা বাড়ছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিডিএর একজন পরিকল্পনাবিদ জানান, ‘সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের সময়ের আদেশটি এ নগরকে ধ্বংস করেছে। যেখানে ২০০০ সালের জলাধার সংরক্ষণ আইনে পুকুর ও জলাশয় ভরাট নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেখানে ওই আদেশের বদৌলতে আধা একর (৩০ কাঠা) থেকে ১৫ কাঠা পর্যন্ত পুকুর ও জলাশয়গুলোতে পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ছাড়পত্র নিয়ে ভবনের অনুমোদন দেওয়া যাবে। ১৫ কাঠার নিচের জলাশয়গুলোতে সিডিএ নিজেই ভবনের নকশার অনুমোদন দিতে পারবে।’
সিসিসির প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছে সিডিএ। তারা কাজ শেষ করে আমাদের মুক্তি দিলে জলাবদ্ধতা থেকে আমরা মুক্তি পাই কি না, দেখা যাক।’
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের একটি খাল খনন প্রকল্প ছিল। এটি বাস্তবায়ন করতে পারলে জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসী কিছুটা হলেও মুক্তি পেত।’
মাঠ-জলাধারের অভাব
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘একটি নগরে কী পরিমাণ খালি জায়গা রাখতে হবে, এর একটি অনুপাত রয়েছে ৩০ : ৭০। সেই অনুযায়ী খালি জায়গা রাখতে হবে। একই সঙ্গে নগরীর নালা ও খাল ভরাট বন্ধের পাশাপাশি সঠিক ড্রেনেজ পরিকল্পনা করতে হবে। পানি ধরে রাখার জন্য পুকুর ও জলাধার রাখতে হবে। পানি পরিবহনের জন্য খালগুলো সক্রিয় রাখতে হবে। সøুইসগেট থাকলে সেগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা লাগবে।’
কিন্তু সিডিএ কী করেছে? প্রাকৃতিক জলাধারখ্যাত বাকলিয়া এলাকায় কল্পলোক নামে একটি আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলেছে। নগরীর চান্দগাঁও ও অক্সিজেন এলাকার জমি ভরাট করে গড়ে তুলেছে অনন্যা আবাসিক এলাকা। আরেকটি বড় প্রাকৃতিক জলাধার বগারবিলেও ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে সিডিএ।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রাশিদুল হাসান বলেন, ‘চট্টগ্রামে নালা ও খাল ভরাটের হাত থেকে রক্ষা করে স্থানীয়ভাবে পুকুর, দীঘি ও নগরের চারপাশের নিচু জমিকে রক্ষা করতে হবে। এগুলো প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে কাজ করে।’
সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের পুর ও পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মুশতাক আহমদ বলেন, ‘শোষণ, সংরক্ষণ ও পরিবহন এই তিন ধাপে পানির সঠিক ব্যবস্থাপনা হলে জলাবদ্ধতা হওয়ার কথা নয়। রাস্তা যেভাবে কার্পেটিং হয়, তাতে মাটি পানি শোষণ করতে পারছে না। পুকুর, দীঘি, বিল যদি ভরাট করে ফেলি, তাহলে পানি কোথায় জমা হবে? পানি পরিবহনের জন্য যদি নালা, খাল ও নদী সচল না থাকে তাহলে জলাবদ্ধতা হবেই।’
উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সমন্বয় খুব জরুরি। না হলে নগরে জলাবদ্ধতা বাড়বে।’
বুয়েটের ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নগরগুলো সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাবে জলাবদ্ধতা হচ্ছে।’
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘সমন্বয়ের বিকল্প নেই। সমন্বয়ের মাধ্যমেই নগরীর জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধান করতে হবে। নালা-খালে পলিথিন ফেলা বন্ধ করতে হবে, পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে।’
সমন্বয়ের উদ্যোগ তার পক্ষ থেকেই সবার আগে নেওয়া হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ।
বিএনপির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা কেন দেয় না সেই প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘দেশটি ঘোষণা করেছে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যারা বাধা দেবে, তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেবে।’
গতকাল শুক্রবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত শান্তি সমাবেশে এ প্রশ্ন তোলেন ওবায়দুল কাদের।
একই দিন এক দফা দাবিতে রাজধানীতে কালো পতাকা ও গণমিছিল কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে শান্তি সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ।
বৃষ্টির দিনে জুমার নামাজের পরে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে শান্তি সমাবেশে আসেন। তবে জমায়েত শুধু বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতেই সীমাবদ্ধ ছিল।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, বিএনপি বসে বসে স্বপ্ন দেখে, নিষেধাজ্ঞার আতঙ্ক ছড়ায়। ভিসানীতির আতঙ্ক ছড়ায়। বিএনপি রাস্তা বন্ধ করে ঢাকার প্রবেশপথে (২৯ জুলাই) অবস্থান করেছে। এর জন্য তো ভিসানীতির প্রয়োগ হওয়া দরকার, নিষেধাজ্ঞা আসা দরকার।
ঢাকার প্রবেশমুখে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘সেই অবস্থানে আমানউল্লাহ আমান ফলের রস পান করে বুঁদ হয়ে গেছেন। সেই অবস্থানের পরিণতি গয়েশ্বর.. পুলিশ অফিসার হারুন নাকি কিশোরগঞ্জ থেকে কোরাল মাছ এনেছেন, কোরাল মাছের ঝোল খেতে খেতে গয়েশ্বর দিশেহারা। আন্দোলনের বারোটা বেজে গেছে। যারা অতিরিক্ত কাপড় নিয়ে এসেছিল, তারাও ধানক্ষেত, এখান দিয়ে, ওখান দিয়ে পালিয়ে যার যার বাড়িঘরে চলে গেছে। এই মানুষগুলো আর আসবে ঢাকায়?’
বিএনপির কালো পতাকা মিছিল ও গণমিছিলের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এটা দেখে আমি ভাবলাম, তাদের আবার কে মারা গেল? তাহলে কালো পতাকা কেন? কালো পতাকা মিছিল করে কেন? কেউ মারা গেছে? কালো পতাকা মিছিল মানেই হলো শোকের মিছিল। বিএনপি শোক করছে কেন? আন্দোলনের বারোটা বেজে গেছে। এখন নেতারা নিজেদের অজান্তে শোকের মিছিল করছেন। আমরা আগস্ট মাসে কালো পতাকা ব্যবহার করি। আন্দোলনের পতাকা হচ্ছে লাল।’
আগামী ২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পুরনো বাণিজ্যমেলা মাঠে আওয়ামী লীগের সমাবেশের কথা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যে মিছিলে জনগণ নাই, সেই মিছিল গণমিছিল হয় কেমন করে? মিছিল দেখবেন? মিছিল দেখাব। একপ্রান্ত ঢাকার যাত্রাবাড়ী, আরেক প্রান্ত... এদিকে মিরপুর, ওদিকে সবুজবাগ। আওয়ামী লীগের মিছিল মানে সারা শহরে ঢল নামে। দেখবেন ২ তারিখে (২ সেপ্টেম্বর), দেখবেন ১ তারিখে তারুণ্যের সমাবেশ। ওই দিন লক্ষ তরুণের হাতে আমরা দেখাব বিজয়ের পতাকা, শোকের কালো পতাকা নয়।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা আমাদের বোঝা হয়ে আছে। জাতিসংঘ আগে মাথাপিছু ১২ ডলার দিত, এখন সাহায্য কমে ৮ ডলার দেয়। কীভাবে চলবে? কেউ সাহায্য করে না, শুধু মুখে সুন্দর সুন্দর কথা বলে। রোহিঙ্গাদের জন্য মায়া কান্না কাঁদে। তারা তাদের দেশে অন্য দেশের মাইগ্রেটকারীদের জায়গা দিতে পারে, কিন্তু রোহিঙ্গাদের জায়গা হয় না।’
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে দেশের বড় সমদ্রসৈকত এবং সেখানকার জীবন বিপন্ন, অর্থনীতি ও পর্যটন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে মুখে সুন্দর সুন্দর বাণী উচ্চারণ করে, আমাদের নেত্রীর (শেখ হাসিনা) প্রশংসা করে। কিন্তু বাস্তবে সাহায্য করার জন্য কেউ আসে না।’
দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে বাংলাদেশে এমন কোনো রাজনৈতিক শক্তি নেই তাদের পরাজিত করতে পারে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আবারও ক্ষমতায় আসবে বলে তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
বিএনপি দেশকে আবারও অস্থিতিশীল করতে চায় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘আন্দোলনের নামে দেশে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে। বিএনপির মতো সন্ত্রাসী দলের হাতে এ দেশের হাল আমরা ছেড়ে দিতে পারি না। ছেড়ে দেব না।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীরের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন প্রমুখ।
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই সরকারের পদত্যাগের এক দফার দাবি আদায়ে গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকায় কালো পতাকা গণমিছিল করেছে বিএনপি। এ কর্মসূচিতে দলটির নেতারা ব্রিকসের সদস্য পদ না পাওয়া, দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে নৌকায় ভোট চাওয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের সমালোচনা করেছেন। বিএনপি নেতারা বলেছেন, বহির্বিশ্ব আজ দেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে।
রাজধানীর শ্যামলীতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে কালো পতাকা গণমিছিল-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। অন্যদিকে দক্ষিণের মিছিল-পূর্ব সমাবেশ হয় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে।
ঢাকা উত্তর বিএনপি : মিছিলের আগের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘ঢাকঢোল পিটিয়ে জনগণের টাকা খরচ করে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে ব্রিকসের সদস্য হতে না পেরে তার ক্ষোভ ঝেড়েছেন বিএনপিকে গালিগালাজ করে ও প্রবাসীদের কাছে নৌকায় ভোট চেয়ে।’
এদিকে দিক ঘুরে কোনো লাভ হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তৃতীয় কোনো দেশে গিয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয় না।’
সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘এক দফার আন্দোলন সামনে রেখে সরকার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। নেতাকর্মীদের খালি হাতে তুলে নিয়ে অস্ত্র ধরিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। এরপর আবার নতুন করে জঙ্গি খেলা খেলছে। আওয়ামী লীগের চেয়ে বড় জঙ্গি কোনো দল নেই।’
প্রশাসনকে ঘিরে সরকারের পরিকল্পনা নিয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘আগামীতে ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার প্রশাসন এবং বিচারকদের দিয়ে শাসনব্যবস্থা তৈরি করেছে। বিচারকদের দিয়ে বিরোধীদলীয় নেতাদের সাজা দিচ্ছে, পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। এসব করে কোনো লাভ হবে না।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল প্রমুখ।
ঢাকা দক্ষিণ বিএনপি : বেলা ৩টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে গণমিছিল হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে মিছিল শুরু হয় বিকেল সাড়ে ৪টায়। মিছিল-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়।
অস্থায়ী মঞ্চে দেওয়া সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ভারতকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘বহির্বিশ্ব আজ দেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে। একটি দেশ বলছে এ সরকারকে আবার লাগবে। আমি বলতে চাই, সরকার নয়, দেশের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন। আজ এ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেশের জনগণ মানে না। বিনা ভোটের নির্বাচনের স্বপ্ন আর বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।’
তিনি বলেন, ‘দেশে তিনটি শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে। সেগুলো হলো অশিক্ষা, কুশিক্ষা আর সুশিক্ষা। আজকে জনগণের টাকায় বেতন নিয়ে কুশিক্ষিতরা বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালাচ্ছে। এই কুশিক্ষিতরা বিচারের নামে প্রহসন করছে। তারা জেলখানায় বিরোধী নেতাকর্মীদের পিটিয়ে হত্যা করছে। এই কুশিক্ষিত লোকগুলো দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তারা দেশকে ভালোবাসে না, টাকাকে ভালোবাসে।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে দ্রব্যমূল্য, তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। সরকার কানে শোনে না। আজকে প্রতিটি ডিমের দাম ১৫ টাকা। এদের দুর্নীতির কারণে টাকার মান কমে গেছে। যারা ব্যাংকে টাকা রেখেছেন, তারা লাভের পরিবর্তে ১৪ শতাংশ টাকা কম পাবেন। আজকে বিদ্যুতের কার্ড থেকেও হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হচ্ছে। আজকে বর্তমান সরকার ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিদের চেয়ে বেশি লুট করেছে। কারণ তাদের মধ্যে দেশপ্রেম নেই।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক লিটন মাহমুদ ও আ ন ম সাইফুল ইসলামের পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ।
বিএনপির কালো পতাকা মিছিলের অগ্রভাগে অংশ নেন মহিলা দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এরপর পর্যায়ক্রমে স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল, কৃষক দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, তাঁতী দল ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নেতাকর্মীরা ছিলেন। নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে কালো পতাকা গণমিছিল মতিঝিল, ইত্তেফাক মোড়, টিকাটুলী, দয়াগঞ্জ মোড় ঘুরে নারিন্দায় গিয়ে শেষ হয়।
অন্যান্য দলের কর্মসূচি : বিএনপির পাশাপাশি সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও কালো পতাকা গণমিছিল কর্মসূচি পালন করেছে। গণতন্ত্র মঞ্চ শাহবাগ মোড়ে, ১২ দলীয় জোট বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট পুরানা পল্টন মোড়সংলগ্ন আলরাজী কমপ্লেক্সে সামনে, গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি) যৌথভাবে আরামবাগে, এলডিপি পূর্ব পান্থপথ দলীয় কার্যালয়ের সামনে, লেবার পার্টি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে, একই স্থানে গণ অধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া) ও সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, গণ অধিকার পরিষদ (নুর) পুরানা পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচি পালন করে। এ ছাড়া এনডিএম মালিবাগ মোড়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য সেগুনবাগিচা হাই স্কুলের সামনে, এবি পার্টি বিজয়নগর শ্রমভবনের সামনে, এনডিপি পুরানা পল্টনে আলরাজী কমপ্লেক্সের সামনে, জনতার অধিকার পার্টি বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে এবং সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে ‘কালো পতাকা গণমিছিল’ করে।
গত ১২ জুলাই এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার পর এ পর্যন্ত ঢাকায় পদযাত্রা, মহাসমাবেশ, ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি, ঢাকায় গণমিছিল, মহানগরে গণমিছিলের কর্মসূচি করে। সর্বশেষ গত ১৮ আগস্ট ঢাকাসহ সারা দেশের মহানগরে গণমিছিল করে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশের অব্যাহত উন্নয়নে বিদেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে আগামী সাধারণ নির্বাচনে তার দলের নির্বাচনী প্রতীক ‘নৌকা’র পক্ষে ভোট চেয়েছেন। কোনো লুটেরা যাতে দেশকে ধ্বংস করার জন্য আবার ক্ষমতায় আসতে না পারে, সেজন্য বাংলাদেশের জনগণকে সজাগ থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ব্রিকস সম্মেলন উপলক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা সফররত শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে নৌকায় ভোট চাওয়ার পাশাপাশি আমরা আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই।’ দেশের উন্নয়নের অদম্য গতি যাতে কোনোক্রমেই ব্যাহত না হয়, সেজন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিষয়টি খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘দেশকে লুটেরাদের হাতে ছেড়ে দেবেন না, অন্যথায় দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে এবং নিশ্চিত করুন যে, দেশের উন্নয়নের যাত্রা কোনো বাধা বিপত্তি ছাড়াই অব্যাহত থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘দেশবাসী নৌকায় ভোট দিয়ে দেশের স্বাধীনতা পেয়েছে এবং অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হয়েছে। অথচ বিএনপিকে ভোট দিয়ে লুটপাট, দুর্নীতি ও হত্যা পেয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জনগণের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করছি, তাদের দুঃসময়ে পাশে থাকি এবং তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘উল্টো বিএনপি-জামায়াত জোট মানুষকে পুড়িয়ে মারার রাজনীতি করছে, টাকা কামাচ্ছে। দুর্নীতি, আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান, অর্থ পাচার, লুটপাট ও সারা দেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।’
তিনি বলেন, সরকার ইতিমধ্যে কিছু টাকা ফেরত এনেছে, যা খালেদা জিয়ার দুই ছেলে চুরি করে বিদেশে পাচার করেছিল এবং অবশিষ্ট টাকাও জব্দ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি জানেন না কোথা থেকে তারা অর্থ পাচ্ছেন, যা ব্যবহার করে আবার পুলিশের গাড়ি ও যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়ে তারা ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এবার বাড়াবাড়ি করলে দেশের মানুষ তাদের রেহাই দেবে না। বিএনপি-জামায়াত চক্র ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়ে ৫০০ জনকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছিল। কিন্তু জনগণের প্রতিবাদের মুখে তারা অগ্নিসন্ত্রাস বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতিমের টাকা আত্মসাতের কারণে খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া হয়েছে, তার ছেলে তারেক রহমান ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা এবং দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত এবং তারেকের স্ত্রী দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। তিনি বলেন, দণ্ডপ্রাপ্তরা বিএনপির শীর্ষ নেতা এবং তাদের সামনে রেখে রাজনীতি করছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণ তাদের ভোট দেবে না। জনগণ বিএনপিকে ক্ষমতায় আসার জন্য ভোট দেবে না। জনগণ অগ্নিসন্ত্রাসীদের আর ক্ষমতায় আনবে না।’
সরকারপ্রধান বলেন, একসময় বাংলাদেশকে দরিদ্র ও প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হলেও এখন তার সরকারের অক্লান্ত পরিশ্রমে বিশ্ব বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে ডিজিটাল দেশে রূপান্তরিত করেছে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে।
দেশের সার্বিক আর্থসামাজিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে তার সরকারের পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তারা বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
তিনি জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরির জন্য বিদেশে না যাওয়ার অনুরোধের পাশাপাশি ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানোর জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান, যা চাকরিপ্রার্থী এবং সরকার উভয়কেই ক্ষতিগ্রস্ত করে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে কোনো গ্যারান্টি ছাড়াই ঋণ নিয়ে দেশে ফিরে প্রবাসীরা বাংলাদেশে ব্যবসা করতে পারবেন। এ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চাকরির জন্য বিদেশেও যেতে পারেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. লুৎফর রহমান রূপকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাধারণ সম্পাদক আবদুল আউয়াল তানসেন। বাসস
সিলেটের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরতে যাচ্ছিলেন নয়জন সহকর্মী। সঙ্গে এক নিকটাত্মীয় ও মাইক্রোবাসের চালক। আনন্দের এই যাত্রাই যে শেষ যাত্রা হবে, তা কে জানত। সিলেট আর ঘুরে দেখা হলো না তাদের, মাঝপথেই তাদের কাউকে কাউকে পরিণত হতে হলো প্যাকেটবন্দি লাশে। আবার কেউবা হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন।
এই হতাহতদের সবাই ঢাকার সাভারের বাইপাল নতুনপাড়া এলাকার এসবি নিটিং লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারী। গত বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নরসিংদীর শিবপুরের ঘাসিরদিয়া এলাকায় দুর্ঘটনায় পড়ে তাদের বহনকারী মাইক্রোবাস। সাভার থেকে সিলেটগামী মাইক্রোবাসটি দ্রুতগতির আরেকটি গাড়িকে পাশ কাটানোর সময় (ওভারটেক) সিলেট থেকে ঢাকাগামী পাথরবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে দুমড়ে-মুচড়ে যায় মাইক্রোবাসটি, নিহত হন এর সাত আরোহী। গুরুতর আহত হন আরও চারজন। তাদের মধ্যে তিনজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে এবং একজনকে বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সড়ক দুর্ঘটনায় আরও নয়জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
নরসিংদীর দুর্ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে, তা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের একটি বিপজ্জনক বাঁক। এর আগে একই স্থানে ২০১১ সালের ১৫ জানুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনায় বেলাব থানার ১০ পুলিশ সদস্য নিহত হয়। সেখানে বৃহস্পতিবার গভীর রাতের দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেনÑ গাজীপুরের কালিয়াকৈরের লতিফপুর গ্রামের আইয়ুব খানের ছেলে আল আমীন (২৭), ঝালকাঠির রাজাপুরের পারগোপালপুর গ্রামের আবদুল গনি হাওলাদারের ছেলে আল আমীন হাওলাদার (২৯), টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের মীর কুমুল্লী গ্রামের মোতাহের হোসেনের ছেলে মীর নাজমুল হক ওরফে সবুজ (৩০), জামালপুরের সরিষাবাড়ীর ধারাবর্ষা গ্রামের দুদু মিয়ার ছেলে রাজু আহাম্মেদ (৩৬), মাদারীপুরের কালকিনির উত্তর কৃষ্ণনগর গ্রামের তোফায়েল হাওলাদারের ছেলে আব্দুল আউয়াল (৩৭), বরিশালের মুলাদি থানার মুলাদি গ্রামের মো. মজিবর সিকদারের ছেলে রায়হান সিকদার ওরফে আরিয়ান (২৪) ও কুষ্টিয়া সদরের খাজানগর গ্রামের নুরু মোল্লার ছেলে বাবুল মোল্লা (৪০)। এদের মধ্যে বাবুল মোল্লা বাদে সবাই এসবি নিটিং লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারী। আহত চারজন হলেন কারখানাটির মার্চেন্টাইজার সাকি, পারভেজ, দোয়েল ও মিঠুন। দুর্ঘটনার পর থেকে মাইক্রোবাস চালকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, রাত ৩টার কাছাকাছি সময়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই মাইক্রোবাসের পাঁচ যাত্রী নিহত হন। খবর পেয়ে ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত ছয়জনকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে পাঠান এবং নিহত পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করেন।
হাসপাতালে নেওয়ার পর জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আরও দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এদের মধ্যে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই একজন ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় অন্যজনের মৃত্যু হয়। আহত চারজনের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে একজনকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঘাসিরদিয়া গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কের এ অংশে একটি বাঁক রয়েছে। সে কারণে দ্রুতগতির গাড়িচালকদের বাঁকের অন্য পাশের গাড়ি দেখতে সমস্যা হয়। সেখানে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা খালেক মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রাতে বাড়িতে শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। মহাসড়কে এসে দেখি ট্রাকটা একপাশে পড়ে আছে আর মাইক্রোবাসটি চিত হয়ে উপুড় হয়ে আছে। মানুষ কান্নাকাটি করছে। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
খবর পেয়ে সকালে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে দেখতে পেয়েছি ট্রাকটি নিজের লেনেই ছিল আর মাইক্রোবাসটি অন্য একটি লেনে পড়ে ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মাইক্রোবাসটি অন্য কোনো যানবাহনকে ওভারটেক করতে গিয়ে ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। আমরা ট্রাকের চালককে আটক করেছি, তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে আমরা তদন্ত করছি।’
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সকালে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ছুটে আসেন এসবি নিটিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) শিহাব উদ্দিন জাকি। তিনি নিহতদের পরিচয় সনাক্ত করে স্বজনদের খবর দেন। ওই সময় শিহাব উদ্দিন জাকি সাংবাদিকদের বলেন, চালক ও আরেকজন ছাড়া মাইক্রোবাসটিতে অবস্থান করা নয়জনই তাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মী। এর মধ্যে আটজনই প্রতিষ্ঠানের মার্চেন্ডাইজার ও একজন ফেব্রিকস সেকশনের স্টোর কিপার। কিছুদিন ধরেই তারা সিলেটে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে আশুলিয়া থেকে চালকসহ ১১ জন ওই মাইক্রোবাসে চড়ে সিলেটের দিকে রওনা হন।
খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন নিহত আল আমিন খানের ছোট ভাই আসিফ খান। তিনি বলেন, ‘আমি শ্রীমঙ্গলে চাকরি করি। ভাইয়ের সিলেট ঘুরে আমার কাছে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ফোনে খবর পাই ভাই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে।’
তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘সকালে কারখানা থেকে ম্যানেজার কল করে আম্মুকে দুর্ঘটনার খবর জানান। এরপর ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদে বাবা-মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।’
ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কবির হোসেন ভূঁইয়া জানান, নিহতদের স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতিতে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
একসঙ্গে ছয় কর্মকর্তাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ সহকর্মীরা : সাভারে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার নতুন জোনের দক্ষিণ পাশের দেয়াল ঘেঁষা বাইপাইল নতুনপাড়া এলাকায় এসবি নিটিং লিমিটেড কারখানা ও এর আশপাশের এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। একসঙ্গে কারখানাটির ছয় কর্মকর্তাকে হারিয়ে শোকে কাতর সহকর্মীরা। কারখানার মূল ফটকে ছয় কর্মকর্তার মৃত্যুতে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে ছবি সংবলিত ব্যানার সাঁটানো হয়েছে।
এসবি নিটিং লিমিটেডের এইচআর ম্যানেজার (প্রশাসন) জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের মৃত্যুতে (নিহত ছয় সহকর্মী) প্রতিষ্ঠানের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। আমরা হয়তো তাদের জায়গায় নতুন লোক নিতে পারব, কিন্তু তাদের মতো কর্মকর্তা আর পাব না।’
দেশের বিভিন্ন জায়গায় সড়কে নিহত আরও ৯ : বাগেরহাটের রামপালে ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে তিন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে খুলনা-মোংলা মহাসড়কে তেঁতুলিয়া ব্রিজের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন বাগেরহাটের রামপালের শংকরনগর গ্রামের এনামুল (২৬), পাশের বেলাই গ্রামের আরিফ (২৭) এবং ফকিরহাট উপজেলার লখপুর গ্রামের সাইদুল (২৮)। তারা তিনজনই মাছের ঘেরের কর্মচারী।
ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে মাদারীপুরের শিবচরে ঢাকাগামী বাসের চাপায় আকাশ আলী (২৪) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আরও চার মোটরসাইকেল আরোহী গুরুতর আহত ও বাসটির ১০-১২ জন যাত্রী আহত হন। গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে কুতুবপুর ইউনিয়নের মুন্সীরবাজারসংলগ্ন সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে আহতদের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
যশোরের মনিরামপুরে আলমসাধু (যন্ত্রচালিত তিন চাকার যান) ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে সুব্রত দাস (২২) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও চারজন। বৃহস্পতিবার মনিরামপুর-ঢাকুরিয়া সড়কের কাচারিবাড়ি বাজারে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে বাসের ধাক্কায় জাহানারা বেগম (৪০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কের বারৈয়ারহাট সৈয়দা মেমোরিয়াল স্কুলসংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত জাহানারা বেগম উপজেলার ফটিকছড়ি পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের তুফান আলী পল্লান বাড়ির জাকির হোসেনের স্ত্রী।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় জাবের হোসেন (৪৬) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে কুড়িল ফ্লাইওভারে নিহত হয়েছেন অজ্ঞাতপরিচয় (৬৫) এক ব্যক্তি। গতকাল বিকেল পৌনে ৪টার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় পথচারীরা জাবের হোসেনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ছাড়া রাজধানীর বনানীতে কাভার্ড ভ্যানের পেছনে রডবোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় ট্রাকটির চালক নিহত হয়েছেন। তার নাম শাহজাহান (৩৫)। গতকাল ভোর সাড়ে ৪টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হলে সকাল ৬টায় চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢামেক এবং সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে প্রতিবেদনটি তৈরি
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে গণহত্যার বিচার ও নিজ দেশে ফেরার আকুতি জানিয়ে সমাবেশ করেছে রোহিঙ্গারা। সমাবেশ থেকে তারা বলেছে, যত দ্রুত সম্ভব নিজ দেশে ফিরতে চান তারা। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এর মধ্যে লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইস্ট-১-এর সমাবেশে বক্তব্য দেন রোহিঙ্গা নেতা ডা. জুবাইর, সৈয়দুল আমিন, মাস্টার মুসা, সৈয়দ উল্লাহ, মিয়ানমারে সামরিক জান্তার নির্যাতনের শিকার মাস্টার রফিক, মাস্টার কামাল উদ্দিন, মাস্টার শোয়াইব ও রোহিঙ্গা নারী শাহিদা। রোহিঙ্গা অধিকারকর্মী মাস্টার সৈয়দউল্লাহ বলেন, মিয়ানমার আমাদের দেশ, অনতিবিলম্বে আমাদের নিজ দেশে ফেরত নিতে হবে। আন্তর্জাতিক কমিউনিটিকে প্রত্যাবাসন সফল করতে বাংলাদেশের পাশে থাকতে হবে। সমাবেশে বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্যও দোয়া করেন।
সমাবেশে রোহিঙ্গারা বলেছেন, আমরা মিয়ানমারের অত্যাচারিত রোহিঙ্গা নাগরিক। মিয়ানমার আমাদের মাতৃভূমি হওয়া সত্ত্বেও আমরা যুগ যুগ ধরে নির্যাতনের শিকার হয়ে এদেশে পালিয়ে আসি। ১৯৭৮ সাল থেকে নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যাসহ আমাদের গ্রাম ও ঘরগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭৮, ১৯৯২, ২০১২, ২০১৬, ২০১৭ সালে মিয়ানমার সরকার আমাদের ওপর একই ধরনের অত্যাচার-নিপীড়ন করে বিতাড়িত করে। ১১ লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, আমাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। আমাদের খাদ্য, আশ্রয় এবং অন্যান্য সমর্থন প্রদানের জন্য জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে কৃতজ্ঞতা। কিন্তু বাংলাদেশ আমাদের দেশ নয়। আমরা আমাদের হোমল্যান্ড মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই।
রোহিঙ্গা গণহত্যার আজ ছয় বছর পূর্তি উপলক্ষে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ দিবসটি পালন করা হয়। তারা সেখানে মিয়ানমারে গণহত্যার বিচার, দ্রুত প্রত্যাবাসনসহ কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো মিয়ানমারে পার্লামেন্টে রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান, সীমিত সময় রাখা যাবে মিয়ানমার ট্রানজিট ক্যাম্পে, সব রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করতে হবে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নিজস্ব সহায়-সম্বল ফেরত, প্রত্যাবাসনের সময় বেঁধে দেওয়া, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন, একসঙ্গে গ্রামের সব মানুষকে প্রত্যাবাসন করা ও রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী হিসেবে উত্থাপন না করা। এ ছাড়া প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ওআইসি, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও বাংলাদেশসহ দাতা সংস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করা।
সমাবেশে ইংরেজিতে লেখা একটি লিফলেট প্রচার করা হয়। সেখানে তারা উল্লেখ করেছেন আজ, যখন আমরা রোহিঙ্গা গণহত্যা স্মরণ দিবসের ষষ্ঠ বার্ষিকী স্মরণে জড়ো হয়েছি, তখন আমাদের সেই ট্র্যাজেডির ক্ষণগুলো খুব বেশি তাড়িত করে চলেছে। এ দিনটি রোহিঙ্গাদের দ্বারা সহ্য করা ক্ষতি, দুর্ভোগ এবং অকল্পনীয় নৃশংসতার বেদনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা ও নারী নেতা শাহিদা বলেন, যত তাড়াতাড়ি ফিরে যেতে চাই। নিজেদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে। একই কথা বলেন লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা মাস্টার শোয়াইব।
১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। শান্তিপূর্ণভাবে রোহিঙ্গাদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পুরো ক্যাম্প জুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর নেতৃত্বে একটি মহাসমাবেশ হয়। কিন্তু ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন স্বপ্ন দেখানো নেতা মুহিবুল্লাহ।
একদিকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানির দিকে হাঁটছে, অন্যদিকে রপ্তানি আয় স্বাভাবিক থাকলেও প্রবাসী আয় গত সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যেই বিদেশি ঋণে বড় ধাক্কার মুখে বাংলাদেশ। সরকারি কর্মকর্তাদের অদক্ষতায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারায় একদিকে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমে গেছে, অন্যদিকে ঋণ পরিশোধের চাপ ক্রমেই বাড়ছে। আগস্ট শেষে ঋণ পরিশোধ করতে গত বছরের তুলনায় ৩৮ শতাংশ বেশি, বিপরীতে অর্থছাড় কম হয়েছে ১৭ শতাংশ। অর্থাৎ এ বছর ঋণ পাওয়ার চেয়ে ঋণ পরিশোধের চাপ গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমে দাঁড়িয়েছে ৭৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারে। গত বছর একই সময়ে তা ছিল ৮৬ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমেছে ১৭ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের দুর্বলতার কারণে অর্থছাড় কমেছে। তাছাড়া ঋণ পরিশোধে আরও বেশি চাপের মুখে পড়তে হবে বলেও মনে করেন তারা।
ইআরডির হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছর আগস্ট শেষে সুদসহ ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ৪০ কোটি ডলার বা ৪ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। অথচ গত বছর একই সময়ে সুদসহ ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ২৮ কোটি ৯৭ লাখ ডলার বা ২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বছর বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ৩৮ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। ঋণ থেকে সুদকে আলাদা করলে দেখা যায়, সুদের চাপও দ্বিগুণ হয়েছে। আগস্ট শেষে সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ১৪ কোটি ৬৩ লাখ ডলার বা ১ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের শুরু থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে উন্নয়ন প্রকল্পে বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়েছে। উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রীর মূল্য ঊর্ধ্বমুখী ছিল। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও এলসি ওপেনিং নিয়ে অনেক প্রকল্পে জটিলতায় পড়তে হয়েছে। এ কারণে ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন হার কম ছিল। এ ছাড়া সক্ষমতার অভাবে এডিপিতে বৈদেশিক ঋণের বরাদ্দের ব্যবহার এর আগের অর্থবছরের চেয়ে কিছুটা কম ছিল।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগে আমরা বড় বড় প্রকল্পের যেসব ঋণ নিয়েছিলাম, অধিকাংশ ঋণের ম্যাচিউরিটি শেষ হয়েছে। এ ঋণগুলোর সুদহারও বেশি আবার গ্রেস পিরিয়ডও কম। গ্রেস পিরিয়ড কম অর্থাৎ আমাদের ঋণ পরিশোধের সময় দ্রুততর হয়ে আসছে।’
সংস্থাগুলো সুদের হার বাড়াচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটা সময় ছিল গ্রেস পিরিয়ড ১০ বছর দেওয়া হতো, এখন বেশিরভাগ ঋণেই ৫ বছর দেওয়া হয়। সুদের হার বাড়াচ্ছে ঋণদাতা সংস্থাগুলো। ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাংক ৫ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে কথা বলেছে, অথচ তারা আমাদের শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ ঋণ দিত।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঋণদাতা সংস্থাগুলোর মধ্যে এ দুই মাসে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে জাপান। এ দেশের কাছ থেকে ছাড় হয়েছে ৩০ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা এডিবির কাছ থেকে। এ সংস্থার কাছ থেকে ঋণের অর্থছাড় হয়েছে ১৫ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। তৃতীয় সর্বোচ্চ করেছে বিশ^ব্যাংক। এ সংস্থার আইডিএ প্রোগ্রামের অর্থছাড় হয়েছে ১৩ কোটি ২৯ লাখ ডলার।
চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে অর্থছাড় কম হলেও এ সময়ে ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে প্রায় চারগুণ। আগস্ট শেষে অনুদানসহ বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে ১১৪ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। গত বছর একই সময়ে প্রতিশ্রুতি ছিল ৩০ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের। এ সময়ে পাইপলাইনে থাকা সম্ভাব্য ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৭০ কোটি ডলারের বেশি।
ইআরডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সুদের হার বৃদ্ধির ফলে সরকারের বৈদেশিক ঋণের পরিশোধের চাপ বেড়েছে। এর ফলে ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।
ইআরডির হিসাবে, সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের সুদ ও আসল মিলিয়ে ২ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে। এর মধ্যে সুদ হিসাবে পরিশোধ করেছে ৯৩৫ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ডলার আর আসল পরিশোধ করেছে ১ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকার আসল ও সুদ বাবদ পরিশোধ করেছে ২ দশমিক ০১৭ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে আসল ১ দশমিক ৫২ বিলিয়ন এবং সুদ ৪৯১ মিলিয়ন ডলার।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) রেট বেড়ে ৫ শতাংশের বেশি হয়েছে। এ কারণে বাজারভিত্তিক ঋণের জন্য বাংলাদেশকে এখন ৫ শতাংশের বেশি সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের আগে এই রেট ছিল ১ শতাংশের কম।
ঋণের চাপ আরও বাড়বে বলে মনে করেন ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের ঋণ পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে। যদিও এখন পর্যন্ত রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের শতাংশ হিসাবে বা জিডিপির শতাংশ হিসাবে এটি কম। কিন্তু তারপরও এটি ধীরে ধীরে বেড়ে এখন ৩৮ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। এমন সময়ে ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে যখন আমাদের রিজার্ভও চাপে আছে।’ তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের প্রতিবছর প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স মিলিয়ে আমাদের আয় ৮০ বিলিয়ন ডলার। এ অর্থ আবার আমদানির জন্য ব্যয় করতে হচ্ছে। রিজার্ভের নিরিখে এটি এখন অবশ্যই চাপ। যখন রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছিল তখন এ চাপ অনুভূত হয়নি। এখন রিজার্ভ কমতির দিকে আর ঋণ পরিশোধের দায়ভার বৃদ্ধির দিকে।’
বর্তমানে চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য সরকার যে ঋণ নিয়েছে, সেসব ঋণের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হলে ঋণ পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে বলে ধারণা করছে ইআরডি।
সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রের প্রভাব পড়েছে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে। এডিপি বাস্তবায়নও চলছে ঢিমেতালে। অর্থ সংকট ছিল না, এমন প্রকল্পের অগ্রগতিও আশানুরূপ হয়নি। অগ্রাধিকার পাওয়া মেগা প্রকল্পের কাজও চলছে ঢিমেতালে। আর ব্যয় করতে না পারায় বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমে গেছে।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণের সিংহভাগই এসেছে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির মতো বড় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে পাইপলাইনে বৈদেশিক ঋণ রয়েছে ৪৪.৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এ ঋণের জন্য সরকার ইতিমধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে।
ফরিদপুরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। গত এক মাসে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ৪৫ ডেঙ্গু রোগীর। আর গত এক সপ্তাহেই মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। চলতি বছর সব মিলিয়ে জেলাটিতে এ নিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ৬১ জন। জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে এবার ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ৬৩২। এর আগে এক বছরে এত আক্রান্ত আর মৃত্যু দেখেনি জেলাটি। রোগীর চাপে বিভিন্ন হাসপাতালে দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। ডেঙ্গু রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছে হাসপাতালের বারান্দা ও সিঁড়িতে। তাতে ব্যাহত হচ্ছে অন্য রোগীদের চিকিৎসাসেবাও।
ডেঙ্গুতে জেলার এমন পরিস্থিতির জন্য সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে জেলা প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সব কার্যক্রম চলমান। সরকারি সংস্থাগুলোর পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিভিন্ন এলাকায় মশা নিধন কার্যক্রম চলছে। বিভিন্ন হাসপাতালে বিনামূল্যে স্যালাইন বিতরণ করা হচ্ছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসাবে এ বছর জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ১২ হাজার ৬৩২ রোগী। বর্তমানে ফরিদপুরে ভর্তি হয়ে ৮২৪ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে সেবা নিচ্ছে। ডেঙ্গু আক্রান্তের সঙ্গে যেন পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে মৃত্যুও। এদের অধিকাংশই নারী। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, গত এক মাসে এ জেলার হাসপাতালগুলোতে মৃত্যু হয়েছে ৪৫ জনের। এর মধ্যে ফরিদপুরের ৩১ এবং অন্যান্য জেলার ১৪ জন। আর এ বছর জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ৬১ জন। এর মধ্যে ফরিদপুরে ৪১ জন, বাকি ২০ জন রাজবাড়ী, মাগুরা, গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরের।
হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় শয্যা সংকটের পাশাপাশি তীব্র গরমে অনেকটাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা। তবে ডেঙ্গু রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে দিন-রাত চেষ্টা করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সব স্কুল-কলেজ, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থানে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার আশা প্রকাশ করেন, শিগগিরই সবার সমন্বয়ে ডেঙ্গু মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
সিভিল সার্জন অফিস বলছে, বিভিন্ন হাসপাতালে দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে জেলার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ২ হাজারের অধিক রোগী। ফলে রোগীদের চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এনামুল হক বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের চিকিৎসকসহ সব বিভাগের কর্মীরা দিন-রাত কাজ করছেন। তবে শুধু সেবা দিলেই চলবে না। এর প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে মৃত্যুর মিছিল থামানো যাবে না। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শুধু ফরিদপুর নয়, এ অঞ্চলের ৫ থেকে ৬টি জেলার রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
ডেঙ্গু রোগীদের বিষয়ে জেলার সিভিল সার্জন ডা. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘গত এক মাসে এ জেলায় অতিরিক্ত ডেঙ্গু রোগীর চাপ লক্ষ করা গেছে। আমরা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জেলার সব হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে বলেছি। তিনি জানান, ফরিদপুরে এ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১২ হাজার ৬৩২ ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছে ১১ হাজার ৭৪৭ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৬১ জনের। গতকাল সোমবার জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল ৮২৪ জন।
ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেছেন, মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ, নীতি ও দর্শন বর্তমান বিশ্বের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ বন্ধে মহাত্মা গান্ধীর শান্তি ও সম্প্রীতিকে ছড়িয়ে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু ও মহাত্মা গান্ধী উভয়ে অসাম্প্রদায়িক নেতা। তাদের মতাদর্শ বিশ্বের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। গতকাল সোমবার দুপুরে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট ক্যাম্পাসে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক যুব পিস ক্যাম্পের শেষ দিন ও মহাত্মা গান্ধীর ১৫৫তম জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) জীবন কানাই দাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন নোয়াখালী-১ আসনের সাংসদ এইচ এম ইব্রাহিম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবিব, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেন, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুল আনম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক সহিদ উল্যাহ খান সোহেল প্রমুখ। অনুষ্ঠান শুরুর আগে গান্ধীর ম্যুরালের সামনে প্রভাত প্রার্থনা ও ম্যুরালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। শেষে গান্ধী আশ্রম প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকী এবং মহাত্মা গান্ধীর ১৫৫তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক যুব পিস ক্যাম্পের সমাপনী ঘোষণা করা হয়। ক্যাম্পে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ১২টি দেশের দেড় শতাধিক প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজ দেশের মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। কারণ এ সরকার খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রেখেছে। তার মুক্তির বিষয়ে ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে। এরা কাপুরুষ। এরা জানে খালেদা জিয়া সুস্থ হলে তাদের ক্ষমতার মসনদ ভেঙে পড়বে। বন্দি রেখে খালেদা জিয়াকে এরা হত্যা করতে চায়।
গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তির’ দাবিতে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল আয়োজিত কৃষক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও সকাল থেকে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন নেতাকর্মীরা। কাকরাইল থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত সড়কে হলুদ-সবুজ রঙের টুপি মাথায় দিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী ‘খালেদা জিয়ার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’, ‘এক দফা এক দাবি শেখ হাসিনা কবে যাবি’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য তারা (সরকার) বিভিন্ন রকম আইনকানুন দেখাচ্ছে। যখন আপনার (শেখ হাসিনার) কানের সমস্যা হয়েছিল তখন আপনি আমেরিকা চলে গিয়েছিলেন। যান নাই? আজকে খালেদা জিয়ার যখন জীবন-মরণের সমস্যা তখন এইসব কথা বলছেন কেন? কারণ রাজনৈতিকভাবেই তারা বেগম জিয়াকে হিংসা করে, তাকে সুস্থ করতে চায় না। বেগম জিয়াকে রাজনীতি করতে দিচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সম্পূর্ণ লক্ষ্য একটাই, এ দেশে কোনো বিরোধী দল থাকবে না, তারাই সরকার চালাবে, সরকারে থাকবে। তাদের কথাবার্তা শুনলে মনে হবে তারাই শুধু এ দেশের মালিক আর আমরা সব প্রজা।’
তিনি আরও বলেন, ‘পিটার হাসকে (মার্কিন রাষ্ট্রদূত) নিয়ে তারা (সরকার) খুব রেগেছে। তাদের নেতা-মন্ত্রীরা সমস্ত ডিপ্লোমেটিক নর্মসকে উপেক্ষা করে তার বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলছে। তাদের বংশবদ টেলিভিশন চ্যানেলগুলো মিথ্যাচার করছে। এরা এত দায়িত্বজ্ঞানহীন। যে দেশটাতে আমরা সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করি, সেই দেশের সঙ্গে সমস্যা তৈরি করেছে। আরেকটা খবর আছে, সেপ্টেম্বর মাসে সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে। এর অর্থ বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর তাদের আস্থা নেই। সেজন্য তারা অর্থ পাঠাচ্ছে না।’
দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা খালেদা জিয়া উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ নেতারা) তো মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। তারা পাকিস্তানের সরকারের ভাতা খেয়েছিলেন।’
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে কেনো বিকল্প নেই। একটাই পথ। সরকারকে সরাসরি বলতে চাই, এখনো সময় আছে মানে মানে পদত্যাগ করে একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিন, সংসদ বিলুপ্ত করুন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় দেশের মানুষ জানে কীভাবে স্বৈরাচারকে, ফ্যাসিবাদকে দূর করতে হয়।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখানে আমাদের রংপুর-দিনাজপুরের মানুষ আছেন। এক কৃষক নেতা ব্রিটিশ পিরিয়ডে বিদ্রোহ করেছিলেন। কৃষককে ডাক দিয়েছিলেন, কোনঠে বাহে জাগো সবাই। এই হচ্ছে ডাক। কোথায় আছেন, সবাই জাগেন, জেগে ওঠেন। প্রতিরোধ গড়ে তুলি, সমস্ত নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই।’
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, ‘সরকারের দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে দেশের কৃষকরা পণ্যের ন্যায্যমূল্য, সার-কীটনাশক-বীজ কোনো কিছুই পাচ্ছেন না। মেগা প্রকল্পের নামে সরকার লুটপাট করে বিদেশে অর্থ পাচার ও বাড়িঘর করে আখের গোছাচ্ছে।’
কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির শাহজাহান ওমর, বরকতউল্লা বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, ফরহাদ হালিম ডোনার, রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ বক্তব্য দেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রস্তুত থাকার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশর (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান। গতকাল সোমবার বিজিবির সিলেট সেক্টর সদর দপ্তরে সব পর্যায়ের বিজিবি কর্মকর্তা ও সৈনিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ নির্দেশনা দেন। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে বিজিবির প্রতিটি সদস্যকে সর্বোচ্চ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনেরও আহ্বান জানান।
এর আগে ডিজি বিজিবির বিভিন্ন ইউনিটের অপারেশনাল, প্রশিক্ষণ ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিদর্শনের অংশ হিসেবে গত রবিবার ও গতকাল সোমবার বিজিবির সিলেট সেক্টর সদর দপ্তর এবং আওতাধীন সিলেট ব্যাটালিয়ন (৪৮ বিজিবি) এবং অধীনস্থ ১০ নম্বর পোস্ট ও পাথরকোয়ারি বিওপি, সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (২৮ বিজিবি) এবং অধীনস্থ দুর্গম ডুলুরা বিওপি এবং জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (১৯ বিজিবি) অধীনস্থ আমলশিদ বিওপি ও রহিমপুর খাল পরিদর্শন করেন।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে জকিগঞ্জে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে রহিমপুর খালের সংযোগস্থল বন্ধ রয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশি কৃষকরা সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ বিষয়ে গত জুন মাসে বিজিবি-বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলনে বিজিবির পক্ষ থেকে বিষয়টি অত্যন্ত জোরালোভাবে উত্থাপন করা হয়। বিএসএফ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য বিজিবিকে আশ্বাস দেন। এরই ধারাবাহিকতায় রহিমপুর খালের সংযোগস্থল পুনঃউন্মুক্তকরণ কাজের অগ্রগতি সরেজমিনে পরিদর্শনের জন্য বিজিবি মহাপরিচালক গতকাল রহিমপুর খাল পরিদর্শন করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।