
নেত্রকোনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীর প্রতীককে অপহরণের অভিযোগে পূর্বধলা থানায় মামলা হয়েছে। গত বুধবার এমপির স্ত্রী রওশন হোসেন বাদী হয়ে নয়জনের নাম উল্লেখ করে এই মামলা করেন। গতকাল শুক্রবার এ তথ্য জানান পূর্বধলা থানার ওসি মো. সাইফুল ইসলাম।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে নিজ বাড়ি কাজলা থেকে ঢাকা যাওয়ার সময় অপহরণের শিকার হন এমপি ওয়ারেসাত। পরে ২৭ মার্চ বিকেলে তাকে রাজধানীর ধানম-ির একটি বাসা থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে নিজ বাড়ি কাজলা থেকে আসামিরা এমপিকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে তাকে বাসভবনে না নিয়ে আরেক জায়গায় আটকে রাখে। আসামিরা এমপির স্ত্রীকে জানান, তিনি বিদেশ চলে গেছেন। কিন্তু এমপির স্ত্রী তাদের কথা বিশ্বাস না করে খোঁজা অব্যাহত রাখেন। পরে আসামিরা এমপির স্বাক্ষর জাল করে জাল তালাকনামার ফটোকপি মামলার বাদীর (এমপির স্ত্রী) কাছে পাঠান। এমপি ও এমপির পরিবারকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য আসামিরা জাল কাবিননামা ডাকযোগে বিভিন্ন অফিসে পাঠায়। বিভিন্নভাবে খোঁজার একপর্যায়ে ২৭ মার্চ বিকেলে এমপিকে ধানম-ির একটি বাসা থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া এমপি ও মামলার সাক্ষীদের মাধ্যমে জানা যায়, আসামিরা আটক অবস্থায় এমপির ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চাকরি দেবে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্নজনের কাছ থেকে দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। ২৮ মার্চ এমপিকে চিকিৎসার জন্য মালয়েশিয়া নিয়ে গিয়ে সুস্থ করে ১১ আগস্ট দেশে এসে মামলা করা হয়। তবে মামলার এক আসামি নাদীয়া আক্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঘটনার এত দিন পর একজন এমপিকে অপহরণ করার অভিযোগ দায়ের হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই নয়। আর যাদের আসামি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকে ছাত্রলীগের পদধারী নেতা ও সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।’
পূর্বধলা থানার ওসি মো. সাইফুল ইসলাম মামলা হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টির তদন্ত চলছে।
বিএনপির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা কেন দেয় না সেই প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘দেশটি ঘোষণা করেছে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যারা বাধা দেবে, তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেবে।’
গতকাল শুক্রবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত শান্তি সমাবেশে এ প্রশ্ন তোলেন ওবায়দুল কাদের।
একই দিন এক দফা দাবিতে রাজধানীতে কালো পতাকা ও গণমিছিল কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে শান্তি সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ।
বৃষ্টির দিনে জুমার নামাজের পরে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে শান্তি সমাবেশে আসেন। তবে জমায়েত শুধু বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতেই সীমাবদ্ধ ছিল।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, বিএনপি বসে বসে স্বপ্ন দেখে, নিষেধাজ্ঞার আতঙ্ক ছড়ায়। ভিসানীতির আতঙ্ক ছড়ায়। বিএনপি রাস্তা বন্ধ করে ঢাকার প্রবেশপথে (২৯ জুলাই) অবস্থান করেছে। এর জন্য তো ভিসানীতির প্রয়োগ হওয়া দরকার, নিষেধাজ্ঞা আসা দরকার।
ঢাকার প্রবেশমুখে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘সেই অবস্থানে আমানউল্লাহ আমান ফলের রস পান করে বুঁদ হয়ে গেছেন। সেই অবস্থানের পরিণতি গয়েশ্বর.. পুলিশ অফিসার হারুন নাকি কিশোরগঞ্জ থেকে কোরাল মাছ এনেছেন, কোরাল মাছের ঝোল খেতে খেতে গয়েশ্বর দিশেহারা। আন্দোলনের বারোটা বেজে গেছে। যারা অতিরিক্ত কাপড় নিয়ে এসেছিল, তারাও ধানক্ষেত, এখান দিয়ে, ওখান দিয়ে পালিয়ে যার যার বাড়িঘরে চলে গেছে। এই মানুষগুলো আর আসবে ঢাকায়?’
বিএনপির কালো পতাকা মিছিল ও গণমিছিলের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এটা দেখে আমি ভাবলাম, তাদের আবার কে মারা গেল? তাহলে কালো পতাকা কেন? কালো পতাকা মিছিল করে কেন? কেউ মারা গেছে? কালো পতাকা মিছিল মানেই হলো শোকের মিছিল। বিএনপি শোক করছে কেন? আন্দোলনের বারোটা বেজে গেছে। এখন নেতারা নিজেদের অজান্তে শোকের মিছিল করছেন। আমরা আগস্ট মাসে কালো পতাকা ব্যবহার করি। আন্দোলনের পতাকা হচ্ছে লাল।’
আগামী ২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পুরনো বাণিজ্যমেলা মাঠে আওয়ামী লীগের সমাবেশের কথা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যে মিছিলে জনগণ নাই, সেই মিছিল গণমিছিল হয় কেমন করে? মিছিল দেখবেন? মিছিল দেখাব। একপ্রান্ত ঢাকার যাত্রাবাড়ী, আরেক প্রান্ত... এদিকে মিরপুর, ওদিকে সবুজবাগ। আওয়ামী লীগের মিছিল মানে সারা শহরে ঢল নামে। দেখবেন ২ তারিখে (২ সেপ্টেম্বর), দেখবেন ১ তারিখে তারুণ্যের সমাবেশ। ওই দিন লক্ষ তরুণের হাতে আমরা দেখাব বিজয়ের পতাকা, শোকের কালো পতাকা নয়।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা আমাদের বোঝা হয়ে আছে। জাতিসংঘ আগে মাথাপিছু ১২ ডলার দিত, এখন সাহায্য কমে ৮ ডলার দেয়। কীভাবে চলবে? কেউ সাহায্য করে না, শুধু মুখে সুন্দর সুন্দর কথা বলে। রোহিঙ্গাদের জন্য মায়া কান্না কাঁদে। তারা তাদের দেশে অন্য দেশের মাইগ্রেটকারীদের জায়গা দিতে পারে, কিন্তু রোহিঙ্গাদের জায়গা হয় না।’
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে দেশের বড় সমদ্রসৈকত এবং সেখানকার জীবন বিপন্ন, অর্থনীতি ও পর্যটন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে মুখে সুন্দর সুন্দর বাণী উচ্চারণ করে, আমাদের নেত্রীর (শেখ হাসিনা) প্রশংসা করে। কিন্তু বাস্তবে সাহায্য করার জন্য কেউ আসে না।’
দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে বাংলাদেশে এমন কোনো রাজনৈতিক শক্তি নেই তাদের পরাজিত করতে পারে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আবারও ক্ষমতায় আসবে বলে তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
বিএনপি দেশকে আবারও অস্থিতিশীল করতে চায় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘আন্দোলনের নামে দেশে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে। বিএনপির মতো সন্ত্রাসী দলের হাতে এ দেশের হাল আমরা ছেড়ে দিতে পারি না। ছেড়ে দেব না।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীরের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন প্রমুখ।
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই সরকারের পদত্যাগের এক দফার দাবি আদায়ে গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকায় কালো পতাকা গণমিছিল করেছে বিএনপি। এ কর্মসূচিতে দলটির নেতারা ব্রিকসের সদস্য পদ না পাওয়া, দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে নৌকায় ভোট চাওয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের সমালোচনা করেছেন। বিএনপি নেতারা বলেছেন, বহির্বিশ্ব আজ দেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে।
রাজধানীর শ্যামলীতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে কালো পতাকা গণমিছিল-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। অন্যদিকে দক্ষিণের মিছিল-পূর্ব সমাবেশ হয় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে।
ঢাকা উত্তর বিএনপি : মিছিলের আগের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘ঢাকঢোল পিটিয়ে জনগণের টাকা খরচ করে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে ব্রিকসের সদস্য হতে না পেরে তার ক্ষোভ ঝেড়েছেন বিএনপিকে গালিগালাজ করে ও প্রবাসীদের কাছে নৌকায় ভোট চেয়ে।’
এদিকে দিক ঘুরে কোনো লাভ হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তৃতীয় কোনো দেশে গিয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয় না।’
সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘এক দফার আন্দোলন সামনে রেখে সরকার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। নেতাকর্মীদের খালি হাতে তুলে নিয়ে অস্ত্র ধরিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। এরপর আবার নতুন করে জঙ্গি খেলা খেলছে। আওয়ামী লীগের চেয়ে বড় জঙ্গি কোনো দল নেই।’
প্রশাসনকে ঘিরে সরকারের পরিকল্পনা নিয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘আগামীতে ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার প্রশাসন এবং বিচারকদের দিয়ে শাসনব্যবস্থা তৈরি করেছে। বিচারকদের দিয়ে বিরোধীদলীয় নেতাদের সাজা দিচ্ছে, পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। এসব করে কোনো লাভ হবে না।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল প্রমুখ।
ঢাকা দক্ষিণ বিএনপি : বেলা ৩টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে গণমিছিল হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে মিছিল শুরু হয় বিকেল সাড়ে ৪টায়। মিছিল-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়।
অস্থায়ী মঞ্চে দেওয়া সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ভারতকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘বহির্বিশ্ব আজ দেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে। একটি দেশ বলছে এ সরকারকে আবার লাগবে। আমি বলতে চাই, সরকার নয়, দেশের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন। আজ এ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেশের জনগণ মানে না। বিনা ভোটের নির্বাচনের স্বপ্ন আর বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।’
তিনি বলেন, ‘দেশে তিনটি শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে। সেগুলো হলো অশিক্ষা, কুশিক্ষা আর সুশিক্ষা। আজকে জনগণের টাকায় বেতন নিয়ে কুশিক্ষিতরা বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালাচ্ছে। এই কুশিক্ষিতরা বিচারের নামে প্রহসন করছে। তারা জেলখানায় বিরোধী নেতাকর্মীদের পিটিয়ে হত্যা করছে। এই কুশিক্ষিত লোকগুলো দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তারা দেশকে ভালোবাসে না, টাকাকে ভালোবাসে।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে দ্রব্যমূল্য, তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। সরকার কানে শোনে না। আজকে প্রতিটি ডিমের দাম ১৫ টাকা। এদের দুর্নীতির কারণে টাকার মান কমে গেছে। যারা ব্যাংকে টাকা রেখেছেন, তারা লাভের পরিবর্তে ১৪ শতাংশ টাকা কম পাবেন। আজকে বিদ্যুতের কার্ড থেকেও হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হচ্ছে। আজকে বর্তমান সরকার ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিদের চেয়ে বেশি লুট করেছে। কারণ তাদের মধ্যে দেশপ্রেম নেই।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক লিটন মাহমুদ ও আ ন ম সাইফুল ইসলামের পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ।
বিএনপির কালো পতাকা মিছিলের অগ্রভাগে অংশ নেন মহিলা দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এরপর পর্যায়ক্রমে স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল, কৃষক দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, তাঁতী দল ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নেতাকর্মীরা ছিলেন। নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে কালো পতাকা গণমিছিল মতিঝিল, ইত্তেফাক মোড়, টিকাটুলী, দয়াগঞ্জ মোড় ঘুরে নারিন্দায় গিয়ে শেষ হয়।
অন্যান্য দলের কর্মসূচি : বিএনপির পাশাপাশি সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও কালো পতাকা গণমিছিল কর্মসূচি পালন করেছে। গণতন্ত্র মঞ্চ শাহবাগ মোড়ে, ১২ দলীয় জোট বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট পুরানা পল্টন মোড়সংলগ্ন আলরাজী কমপ্লেক্সে সামনে, গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি) যৌথভাবে আরামবাগে, এলডিপি পূর্ব পান্থপথ দলীয় কার্যালয়ের সামনে, লেবার পার্টি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে, একই স্থানে গণ অধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া) ও সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, গণ অধিকার পরিষদ (নুর) পুরানা পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচি পালন করে। এ ছাড়া এনডিএম মালিবাগ মোড়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য সেগুনবাগিচা হাই স্কুলের সামনে, এবি পার্টি বিজয়নগর শ্রমভবনের সামনে, এনডিপি পুরানা পল্টনে আলরাজী কমপ্লেক্সের সামনে, জনতার অধিকার পার্টি বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে এবং সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে ‘কালো পতাকা গণমিছিল’ করে।
গত ১২ জুলাই এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার পর এ পর্যন্ত ঢাকায় পদযাত্রা, মহাসমাবেশ, ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি, ঢাকায় গণমিছিল, মহানগরে গণমিছিলের কর্মসূচি করে। সর্বশেষ গত ১৮ আগস্ট ঢাকাসহ সারা দেশের মহানগরে গণমিছিল করে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশের অব্যাহত উন্নয়নে বিদেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে আগামী সাধারণ নির্বাচনে তার দলের নির্বাচনী প্রতীক ‘নৌকা’র পক্ষে ভোট চেয়েছেন। কোনো লুটেরা যাতে দেশকে ধ্বংস করার জন্য আবার ক্ষমতায় আসতে না পারে, সেজন্য বাংলাদেশের জনগণকে সজাগ থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ব্রিকস সম্মেলন উপলক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা সফররত শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে নৌকায় ভোট চাওয়ার পাশাপাশি আমরা আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই।’ দেশের উন্নয়নের অদম্য গতি যাতে কোনোক্রমেই ব্যাহত না হয়, সেজন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিষয়টি খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘দেশকে লুটেরাদের হাতে ছেড়ে দেবেন না, অন্যথায় দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে এবং নিশ্চিত করুন যে, দেশের উন্নয়নের যাত্রা কোনো বাধা বিপত্তি ছাড়াই অব্যাহত থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘দেশবাসী নৌকায় ভোট দিয়ে দেশের স্বাধীনতা পেয়েছে এবং অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হয়েছে। অথচ বিএনপিকে ভোট দিয়ে লুটপাট, দুর্নীতি ও হত্যা পেয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জনগণের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করছি, তাদের দুঃসময়ে পাশে থাকি এবং তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘উল্টো বিএনপি-জামায়াত জোট মানুষকে পুড়িয়ে মারার রাজনীতি করছে, টাকা কামাচ্ছে। দুর্নীতি, আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান, অর্থ পাচার, লুটপাট ও সারা দেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।’
তিনি বলেন, সরকার ইতিমধ্যে কিছু টাকা ফেরত এনেছে, যা খালেদা জিয়ার দুই ছেলে চুরি করে বিদেশে পাচার করেছিল এবং অবশিষ্ট টাকাও জব্দ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি জানেন না কোথা থেকে তারা অর্থ পাচ্ছেন, যা ব্যবহার করে আবার পুলিশের গাড়ি ও যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়ে তারা ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এবার বাড়াবাড়ি করলে দেশের মানুষ তাদের রেহাই দেবে না। বিএনপি-জামায়াত চক্র ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়ে ৫০০ জনকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছিল। কিন্তু জনগণের প্রতিবাদের মুখে তারা অগ্নিসন্ত্রাস বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতিমের টাকা আত্মসাতের কারণে খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া হয়েছে, তার ছেলে তারেক রহমান ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা এবং দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত এবং তারেকের স্ত্রী দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। তিনি বলেন, দণ্ডপ্রাপ্তরা বিএনপির শীর্ষ নেতা এবং তাদের সামনে রেখে রাজনীতি করছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণ তাদের ভোট দেবে না। জনগণ বিএনপিকে ক্ষমতায় আসার জন্য ভোট দেবে না। জনগণ অগ্নিসন্ত্রাসীদের আর ক্ষমতায় আনবে না।’
সরকারপ্রধান বলেন, একসময় বাংলাদেশকে দরিদ্র ও প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হলেও এখন তার সরকারের অক্লান্ত পরিশ্রমে বিশ্ব বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে ডিজিটাল দেশে রূপান্তরিত করেছে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে।
দেশের সার্বিক আর্থসামাজিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে তার সরকারের পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তারা বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
তিনি জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরির জন্য বিদেশে না যাওয়ার অনুরোধের পাশাপাশি ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানোর জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান, যা চাকরিপ্রার্থী এবং সরকার উভয়কেই ক্ষতিগ্রস্ত করে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে কোনো গ্যারান্টি ছাড়াই ঋণ নিয়ে দেশে ফিরে প্রবাসীরা বাংলাদেশে ব্যবসা করতে পারবেন। এ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চাকরির জন্য বিদেশেও যেতে পারেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. লুৎফর রহমান রূপকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাধারণ সম্পাদক আবদুল আউয়াল তানসেন। বাসস
চট্টগ্রাম মহানগরীর সাম্প্রতিক জলাবদ্ধতার জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) দায়ী করে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। প্রতিবাদে সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ সংবাদ সম্মেলন ডেকে জলাবদ্ধতার জন্য উল্টো সিটি করপোরেশনকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, করপোরেশনের সক্ষমতা ছিল না বলেই সিডিএকে জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগা প্রকল্পটি দেওয়া হয়। এর জবাবে মেয়র আরেক দফা সংবাদ সম্মেলন করে তার প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা আছে বলে দাবি করেন।
দুই সংস্থার বাগ্যুদ্ধে বন্যা-জলাবদ্ধতায় নাকানিচুবানি খাওয়া চট্টগ্রামবাসী দারুণ ক্ষুব্ধ। কারণ এ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে; ক্ষোভ-বিক্ষোভ হয়েছে; লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু নগরীর জলাবদ্ধতার সমাধান কোনো কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি। তবু প্রাসঙ্গিক হিসেবে পাঠকদের কাছে বিষয়টি তুলে ধরা হলো।
কার কাজ কে বাগায়
দুই সংস্থার বিরোধের শুরু জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প নেওয়ার সময়। বিধি অনুযায়ী নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ সিটি করপোরেশনের। তারাই নালা ও খালের মাটি অপসারণের কাজের পাশাপাশি সংস্কারকাজ করছিল। জলাবদ্ধতার ইস্যুতে চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন মেয়র গদি হারিয়েছেন। মেয়র আ জ ম নাছিরের সময় ২০১৬ সালে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগা প্রকল্পের অনুমোদন নিয়ে নেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। এ নিয়ে কম বিরোধ হয়নি। ওই সময় ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার প্রকল্প মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য সিডিএ সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করে। ওই প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফায় বাড়ানোর পর এ বছরের জুনে শেষ হলেও কাজ হয়েছে ৭৬ শতাংশ। ফলে এখনো পানিতে ডুবছে চট্টগ্রাম।
প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘৭৬ শতাংশ কাজ হওয়ার পরও চট্টগ্রাম নগর যেভাবে ডুবছে, শতভাগ শেষ হলেও কি নগরবাসী জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে? প্রকল্প শতভাগ শেষ হলেও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলবে না।’
খালেই খেয়েছে সব
১৯৯৫ সালের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৭০টি খাল ছিল। চট্টগ্রাম ওয়াসা ২০১৬ সালে ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করার সময় ৫৭টি খালের কথা উল্লেখ করে। তার ভিত্তিতেই সিডিএর তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম জলাবদ্ধতার মেগা প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন করিয়ে প্রকল্পটি একনেক থেকে পাস করিয়েছিলেন। প্রকল্পে ৩৬টি খালের সংস্কার ও উন্নয়নের কথা বলা হয়। বাকি ২১টি খাল গেল কোথায়?
চট্টগ্রাম মহানগরীর নদী-খাল রক্ষা নিয়ে আন্দোলনকারী পরিবেশকর্মী আলিউর রহমান বলেন, ‘আরএসশিটের ৭০টি খাল উদ্ধার করতে হবে। খালগুলোর কোথাও মার্কেট, কোথাও ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। খালের জায়গা খালকে ফেরত দিতে হবে।’
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ্ আলী বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হলেও জলাবদ্ধতা পুরোপুরি যাবে না। আমরা ৩৬টি খালে কাজ করছি। বাকি খালগুলোর যদি সংস্কার না হয়, তাহলে প্রকল্পে সুফল আসবে না। নগরীর রাস্তার পাশের নালাগুলো যদি পরিষ্কার না থাকে এবং নালা দিয়ে পানি খালে না আসে, তাহলে রাস্তায় পানি থেকেই যাবে।’
কর্নেল শাহ্ আলীর বক্তব্যে প্রমাণ পাওয়া গেছে ৪, ৫ ও ৬ আগস্ট বন্দরনগরী পানিবন্দি থাকার সময়। তখন রাস্তায় পানি জমে ছিল। চাক্তাই খালে পানির প্রবাহ না থাকলেও রাস্তায় পানি ছিল।
একে পুঁজি করে সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের প্রকল্পের কারণে পানি জমছে না। খালে তো পানি নেই। রাস্তা থেকে নালা হয়ে খালে পানি আসছে না। রাস্তা ও নালা সিটি করপোরেশনের আওতায়। জলাবদ্ধতার জন্য সিডিএ দায়ী নয়।’
লে. কর্নেল শাহ্ আলী বলেন,‘জলাবদ্ধতা নিরসনে দুই সংস্থার ৪০টি খালের মুখে রেগুলেটর বা সøুইসগেট বসানোর কথা। সব খালে রেগুলেটর না বসানো পর্যন্ত জোয়ারের পানি ঢুকবে এবং জলাবদ্ধতা যাবে না।’
অপূর্ণ চার প্রকল্প
সিডিএর ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প, সিটি করপোরেশনে ৩২৬ কোটি ৮৪ লাখ ১১ হাজার টাকার খাল খননের প্রকল্প (যথাসময়ে কাজ শুরু করতে না পারায় প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ১ হাজার ২৫৬ কোটি টাকায় গিয়ে পৌঁছে, এখনো কাজ শেষ হয়নি), সিডিএর চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প, যার আওতায় ১২টি খালের মুখে রেগুলেটর বসানোর কথা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প, যার আওতায় কর্ণফুলীর মোহনা থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত আরও ২৩টি খালের মুখে রেগুলেটর বসানোর কথাÑ এসব প্রকল্পের একটিও পুরোপুরি শেষ হয়নি।
পাহাড় কাটাও দায়ী : মেয়র
জলাবদ্ধতার জন্য পাহাড় কাটাকেও দায়ী করেন চট্টগ্রামের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, নগরীর পাহাড় কাটার অনুমোদন দিচ্ছে সিডিএ। পাহাড় কাটা মাটি বৃষ্টির পানিতে মিশে নালা ও খাল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
মেয়রের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, ‘চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো বালির পাহাড়। পাহাড় না কেটে ভবন নির্মাণ করা গেলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না।’ তিনি বলেন, ‘নগরীর পুকুর-দীঘি ভরাট করে মানুষ বাড়ি নির্মাণ করায় জলাধার কমে গেছে। এ কারণেও জলাবদ্ধতা বাড়ছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিডিএর একজন পরিকল্পনাবিদ জানান, ‘সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের সময়ের আদেশটি এ নগরকে ধ্বংস করেছে। যেখানে ২০০০ সালের জলাধার সংরক্ষণ আইনে পুকুর ও জলাশয় ভরাট নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেখানে ওই আদেশের বদৌলতে আধা একর (৩০ কাঠা) থেকে ১৫ কাঠা পর্যন্ত পুকুর ও জলাশয়গুলোতে পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ছাড়পত্র নিয়ে ভবনের অনুমোদন দেওয়া যাবে। ১৫ কাঠার নিচের জলাশয়গুলোতে সিডিএ নিজেই ভবনের নকশার অনুমোদন দিতে পারবে।’
সিসিসির প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছে সিডিএ। তারা কাজ শেষ করে আমাদের মুক্তি দিলে জলাবদ্ধতা থেকে আমরা মুক্তি পাই কি না, দেখা যাক।’
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের একটি খাল খনন প্রকল্প ছিল। এটি বাস্তবায়ন করতে পারলে জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসী কিছুটা হলেও মুক্তি পেত।’
মাঠ-জলাধারের অভাব
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘একটি নগরে কী পরিমাণ খালি জায়গা রাখতে হবে, এর একটি অনুপাত রয়েছে ৩০ : ৭০। সেই অনুযায়ী খালি জায়গা রাখতে হবে। একই সঙ্গে নগরীর নালা ও খাল ভরাট বন্ধের পাশাপাশি সঠিক ড্রেনেজ পরিকল্পনা করতে হবে। পানি ধরে রাখার জন্য পুকুর ও জলাধার রাখতে হবে। পানি পরিবহনের জন্য খালগুলো সক্রিয় রাখতে হবে। সøুইসগেট থাকলে সেগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা লাগবে।’
কিন্তু সিডিএ কী করেছে? প্রাকৃতিক জলাধারখ্যাত বাকলিয়া এলাকায় কল্পলোক নামে একটি আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলেছে। নগরীর চান্দগাঁও ও অক্সিজেন এলাকার জমি ভরাট করে গড়ে তুলেছে অনন্যা আবাসিক এলাকা। আরেকটি বড় প্রাকৃতিক জলাধার বগারবিলেও ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে সিডিএ।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রাশিদুল হাসান বলেন, ‘চট্টগ্রামে নালা ও খাল ভরাটের হাত থেকে রক্ষা করে স্থানীয়ভাবে পুকুর, দীঘি ও নগরের চারপাশের নিচু জমিকে রক্ষা করতে হবে। এগুলো প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে কাজ করে।’
সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের পুর ও পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মুশতাক আহমদ বলেন, ‘শোষণ, সংরক্ষণ ও পরিবহন এই তিন ধাপে পানির সঠিক ব্যবস্থাপনা হলে জলাবদ্ধতা হওয়ার কথা নয়। রাস্তা যেভাবে কার্পেটিং হয়, তাতে মাটি পানি শোষণ করতে পারছে না। পুকুর, দীঘি, বিল যদি ভরাট করে ফেলি, তাহলে পানি কোথায় জমা হবে? পানি পরিবহনের জন্য যদি নালা, খাল ও নদী সচল না থাকে তাহলে জলাবদ্ধতা হবেই।’
উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সমন্বয় খুব জরুরি। না হলে নগরে জলাবদ্ধতা বাড়বে।’
বুয়েটের ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নগরগুলো সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাবে জলাবদ্ধতা হচ্ছে।’
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘সমন্বয়ের বিকল্প নেই। সমন্বয়ের মাধ্যমেই নগরীর জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধান করতে হবে। নালা-খালে পলিথিন ফেলা বন্ধ করতে হবে, পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে।’
সমন্বয়ের উদ্যোগ তার পক্ষ থেকেই সবার আগে নেওয়া হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ।
সিলেটের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরতে যাচ্ছিলেন নয়জন সহকর্মী। সঙ্গে এক নিকটাত্মীয় ও মাইক্রোবাসের চালক। আনন্দের এই যাত্রাই যে শেষ যাত্রা হবে, তা কে জানত। সিলেট আর ঘুরে দেখা হলো না তাদের, মাঝপথেই তাদের কাউকে কাউকে পরিণত হতে হলো প্যাকেটবন্দি লাশে। আবার কেউবা হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন।
এই হতাহতদের সবাই ঢাকার সাভারের বাইপাল নতুনপাড়া এলাকার এসবি নিটিং লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারী। গত বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নরসিংদীর শিবপুরের ঘাসিরদিয়া এলাকায় দুর্ঘটনায় পড়ে তাদের বহনকারী মাইক্রোবাস। সাভার থেকে সিলেটগামী মাইক্রোবাসটি দ্রুতগতির আরেকটি গাড়িকে পাশ কাটানোর সময় (ওভারটেক) সিলেট থেকে ঢাকাগামী পাথরবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে দুমড়ে-মুচড়ে যায় মাইক্রোবাসটি, নিহত হন এর সাত আরোহী। গুরুতর আহত হন আরও চারজন। তাদের মধ্যে তিনজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে এবং একজনকে বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সড়ক দুর্ঘটনায় আরও নয়জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
নরসিংদীর দুর্ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে, তা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের একটি বিপজ্জনক বাঁক। এর আগে একই স্থানে ২০১১ সালের ১৫ জানুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনায় বেলাব থানার ১০ পুলিশ সদস্য নিহত হয়। সেখানে বৃহস্পতিবার গভীর রাতের দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেনÑ গাজীপুরের কালিয়াকৈরের লতিফপুর গ্রামের আইয়ুব খানের ছেলে আল আমীন (২৭), ঝালকাঠির রাজাপুরের পারগোপালপুর গ্রামের আবদুল গনি হাওলাদারের ছেলে আল আমীন হাওলাদার (২৯), টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের মীর কুমুল্লী গ্রামের মোতাহের হোসেনের ছেলে মীর নাজমুল হক ওরফে সবুজ (৩০), জামালপুরের সরিষাবাড়ীর ধারাবর্ষা গ্রামের দুদু মিয়ার ছেলে রাজু আহাম্মেদ (৩৬), মাদারীপুরের কালকিনির উত্তর কৃষ্ণনগর গ্রামের তোফায়েল হাওলাদারের ছেলে আব্দুল আউয়াল (৩৭), বরিশালের মুলাদি থানার মুলাদি গ্রামের মো. মজিবর সিকদারের ছেলে রায়হান সিকদার ওরফে আরিয়ান (২৪) ও কুষ্টিয়া সদরের খাজানগর গ্রামের নুরু মোল্লার ছেলে বাবুল মোল্লা (৪০)। এদের মধ্যে বাবুল মোল্লা বাদে সবাই এসবি নিটিং লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারী। আহত চারজন হলেন কারখানাটির মার্চেন্টাইজার সাকি, পারভেজ, দোয়েল ও মিঠুন। দুর্ঘটনার পর থেকে মাইক্রোবাস চালকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, রাত ৩টার কাছাকাছি সময়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই মাইক্রোবাসের পাঁচ যাত্রী নিহত হন। খবর পেয়ে ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত ছয়জনকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে পাঠান এবং নিহত পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করেন।
হাসপাতালে নেওয়ার পর জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আরও দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এদের মধ্যে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই একজন ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় অন্যজনের মৃত্যু হয়। আহত চারজনের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে একজনকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঘাসিরদিয়া গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কের এ অংশে একটি বাঁক রয়েছে। সে কারণে দ্রুতগতির গাড়িচালকদের বাঁকের অন্য পাশের গাড়ি দেখতে সমস্যা হয়। সেখানে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা খালেক মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রাতে বাড়িতে শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। মহাসড়কে এসে দেখি ট্রাকটা একপাশে পড়ে আছে আর মাইক্রোবাসটি চিত হয়ে উপুড় হয়ে আছে। মানুষ কান্নাকাটি করছে। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
খবর পেয়ে সকালে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে দেখতে পেয়েছি ট্রাকটি নিজের লেনেই ছিল আর মাইক্রোবাসটি অন্য একটি লেনে পড়ে ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মাইক্রোবাসটি অন্য কোনো যানবাহনকে ওভারটেক করতে গিয়ে ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। আমরা ট্রাকের চালককে আটক করেছি, তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে আমরা তদন্ত করছি।’
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সকালে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ছুটে আসেন এসবি নিটিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) শিহাব উদ্দিন জাকি। তিনি নিহতদের পরিচয় সনাক্ত করে স্বজনদের খবর দেন। ওই সময় শিহাব উদ্দিন জাকি সাংবাদিকদের বলেন, চালক ও আরেকজন ছাড়া মাইক্রোবাসটিতে অবস্থান করা নয়জনই তাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মী। এর মধ্যে আটজনই প্রতিষ্ঠানের মার্চেন্ডাইজার ও একজন ফেব্রিকস সেকশনের স্টোর কিপার। কিছুদিন ধরেই তারা সিলেটে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে আশুলিয়া থেকে চালকসহ ১১ জন ওই মাইক্রোবাসে চড়ে সিলেটের দিকে রওনা হন।
খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন নিহত আল আমিন খানের ছোট ভাই আসিফ খান। তিনি বলেন, ‘আমি শ্রীমঙ্গলে চাকরি করি। ভাইয়ের সিলেট ঘুরে আমার কাছে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ফোনে খবর পাই ভাই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে।’
তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘সকালে কারখানা থেকে ম্যানেজার কল করে আম্মুকে দুর্ঘটনার খবর জানান। এরপর ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদে বাবা-মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।’
ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কবির হোসেন ভূঁইয়া জানান, নিহতদের স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতিতে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
একসঙ্গে ছয় কর্মকর্তাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ সহকর্মীরা : সাভারে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার নতুন জোনের দক্ষিণ পাশের দেয়াল ঘেঁষা বাইপাইল নতুনপাড়া এলাকায় এসবি নিটিং লিমিটেড কারখানা ও এর আশপাশের এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। একসঙ্গে কারখানাটির ছয় কর্মকর্তাকে হারিয়ে শোকে কাতর সহকর্মীরা। কারখানার মূল ফটকে ছয় কর্মকর্তার মৃত্যুতে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে ছবি সংবলিত ব্যানার সাঁটানো হয়েছে।
এসবি নিটিং লিমিটেডের এইচআর ম্যানেজার (প্রশাসন) জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের মৃত্যুতে (নিহত ছয় সহকর্মী) প্রতিষ্ঠানের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। আমরা হয়তো তাদের জায়গায় নতুন লোক নিতে পারব, কিন্তু তাদের মতো কর্মকর্তা আর পাব না।’
দেশের বিভিন্ন জায়গায় সড়কে নিহত আরও ৯ : বাগেরহাটের রামপালে ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে তিন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে খুলনা-মোংলা মহাসড়কে তেঁতুলিয়া ব্রিজের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন বাগেরহাটের রামপালের শংকরনগর গ্রামের এনামুল (২৬), পাশের বেলাই গ্রামের আরিফ (২৭) এবং ফকিরহাট উপজেলার লখপুর গ্রামের সাইদুল (২৮)। তারা তিনজনই মাছের ঘেরের কর্মচারী।
ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে মাদারীপুরের শিবচরে ঢাকাগামী বাসের চাপায় আকাশ আলী (২৪) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আরও চার মোটরসাইকেল আরোহী গুরুতর আহত ও বাসটির ১০-১২ জন যাত্রী আহত হন। গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে কুতুবপুর ইউনিয়নের মুন্সীরবাজারসংলগ্ন সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে আহতদের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
যশোরের মনিরামপুরে আলমসাধু (যন্ত্রচালিত তিন চাকার যান) ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে সুব্রত দাস (২২) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও চারজন। বৃহস্পতিবার মনিরামপুর-ঢাকুরিয়া সড়কের কাচারিবাড়ি বাজারে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে বাসের ধাক্কায় জাহানারা বেগম (৪০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কের বারৈয়ারহাট সৈয়দা মেমোরিয়াল স্কুলসংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত জাহানারা বেগম উপজেলার ফটিকছড়ি পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের তুফান আলী পল্লান বাড়ির জাকির হোসেনের স্ত্রী।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় জাবের হোসেন (৪৬) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে কুড়িল ফ্লাইওভারে নিহত হয়েছেন অজ্ঞাতপরিচয় (৬৫) এক ব্যক্তি। গতকাল বিকেল পৌনে ৪টার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় পথচারীরা জাবের হোসেনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ছাড়া রাজধানীর বনানীতে কাভার্ড ভ্যানের পেছনে রডবোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় ট্রাকটির চালক নিহত হয়েছেন। তার নাম শাহজাহান (৩৫)। গতকাল ভোর সাড়ে ৪টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হলে সকাল ৬টায় চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢামেক এবং সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে প্রতিবেদনটি তৈরি
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।
প্রাচীন সময় থেকে মানুষের খাদ্যতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে চীজ বা পনির। গরুর দুধের তৈরি পনিরে শরীরকে সুস্থ রাখার প্রয়োজনীয় সব উপাদান পাওয়া যায়।
বর্তমানে সময়ের সাথে সাথে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পনিরের ব্যবহার। আর তাই বিস্কিট থেকে শুরু করে পাউরুটি, পাস্তা, পিৎজা অনেক কিছুতেই পনির ব্যবহার হয়।
পনিরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের মতে, ১০০ গ্রাম পনিরের মধ্যে রয়েছে:
শক্তি - ৩৬২ কিলোক্যালরি
প্রোটিন – ৫.১৭ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট - ৫০ গ্রাম
ক্যালসিয়াম - ৬৯ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম - ১৮১ মিলিগ্রাম
স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড – ৩.৪৫ গ্রাম
কোলেস্টেরল - ৩৪ মিলিগ্রাম
এটি প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস। পনিরের বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে।
পনির ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এবং প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এটি বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অনেক উপকারি। পনিরে থাকা ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পনির খেলে অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করা যায়।
পনির ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা শক্তিশালী ও মজবুত দাঁত তৈরিতে অবদান রাখে। পনিরে থাকা কেসিন ফসফোপেপটাইড উপাদান দাঁতের গহ্বর কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া চিউইং চিজ মুখের পিএইচ মাত্রা বাড়াতে পারে এবং সামগ্রিক মৌখিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
পনিরে অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড যেমন কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস। কোরিয়া ইউনিভার্সিটি এবং ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ফ্যাটি অ্যাসিডে ক্যান্সার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ ছাড়া এই ফ্যাটি অ্যাসিড এথেরোস্ক্লেরোসিস এর বিকাশ রোধ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে।
পনিরে কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড এবং স্ফিংগোলিপিড রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে স্ফিংগোলিপিড মানুষের কোলন ক্যান্সারকে বাধা দিতে পারে।
এ ছাড়া পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে খাদ্যতালিকাগত ক্যালসিয়াম কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ উপকারি।
পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই উপকারি। এটি প্রসবের সময় সংকোচনকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া উকের দুধ পান করানোর সময় ক্যালসিয়াম পুষ্টির ঘাটতিও পূরণ করে পনির। এটি গর্ভবতী মহিলাদের ভ্রূণের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে।
কিছু ধরণের পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যকারিতা বাড়াতে পরিচিত। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে পনির শরীরের প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটি অসুস্থতা এবং রোগ কমাতে পারে।
প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সুরক্ষিত পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। এটি বয়স্কদেরমধ্যে ইমিউনোসেনেসেন্স (প্রতিরোধ ব্যবস্থার ধীরে ধীরে দুর্বল হওয়া) প্রতিরোধ করতে পারে।
পনির সেলেনিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা থাইরয়েড ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সেলেনিয়ামের থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করে ভাইরাসের বিকাশকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে।
চেডার পনির হল এক ধরনের হার্ড পনির। এটি খাদ্যতালিকায় যোগ করলে তা থাইরয়েড রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
পনিরের আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলির মধ্যে একটি হল মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করা। বিশেষ করে ক্যামেমবার্ট জাতের পনির এই ধরনের কাজ করে থাকে। ক্যামেমবার্ট পনির প্রদাহজনক সাইটোকাইনের মাত্রা কমাতে পারে। এটি আলঝাইমার রোগের ঝুঁকি কমায় এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।
পনির ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। এতে থাকা ভিটামিন বি কোষের বিপাক এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে এটি উজ্জ্বল ত্বকের পাশাপাশি ত্বকের দাগ কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
যাদের গরুর দুধে অ্যালার্জি আছে তাদের পনির এড়ানো উচিত। এটি অ্যালার্জি, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথার কারণ ও হতে পারে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (অতিরিক্ত পনির খাওয়া) কার্ডিওভাসকুলার রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
পনিরের স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ও রয়েছে। যেমন,
কিছু লোকের দুধের প্রোটিন যেমন কেসিনে অ্যালার্জি থাকে। এটি সারা শরীর জুড়ে একটি প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং ত্বকে ফুসকুড়ি, সাইনাস কনজেশন এবং ব্রণ জ্বলতে পারে।
অনেকের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা থাকে। সেক্ষেত্রে তাদের পনির না খাওয়াই শ্রেয়। কারণ ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা গ্যাস, পেট ফোলাভাব এবং ডায়রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। অনেক সময় এর কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে।
প্রচুর পরিমাণে পনির খাওয়ার ফলে মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথা হতে পারে। পুরনো পনিরে থাকা টাইরামিন উপাদান কিছু ব্যক্তির মধ্যে মাইগ্রেনকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
যারা মোনোমাইন অক্সিডেস ইনহিবিটরস (MOIs) গ্রহণ করছেন তাদের পনির খাওয়া এড়ানো উচিত। এই ওষুধগুলি হতাশার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এসব ওষুধ পুরনো বা বয়স্ক পনিরে থাকা উপাদান টাইরামিনের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হবে ২ নভেম্বর। পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন তা নিয়ে এখন চলছে আলোচনা, কানাঘুষা; শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ।
বর্তমান উপাচার্যই আবার দায়িত্ব পাবেন নাকি নতুন কাউকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে এ আলোচনাই চলছে এখন। আলোচিত হচ্ছে কয়েকজন শিক্ষকের নামও। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন কানাঘুষারও অবসান হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ পদে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের মধ্য থেকেই কাউকে বাছাই করার বিষয়টি একপ্রকার নিশ্চিত। বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের এ বিষয়ে আগ্রহ নেই। গুণী কোনো শিক্ষক উপাচার্যবিষয়ক আলোচনার মধ্যে নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা হবে কি না, এ বিষয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের ১১(১) ধারা অনুযায়ী, উপাচার্য নিয়োগে তিন সদস্যবিশিষ্ট প্যানেল নির্বাচনের দায়িত্ব সিনেটের। সিনেট নির্বাচিত তিনজনের মধ্য থেকে একজনকে উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এবং রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। রাষ্ট্রপতি তাকে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেন।
রীতি অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের জন্য সিনেটের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করা হয়। কিন্তু এবার সিনেট অধিবেশন হওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। উপাচার্য অধিবেশন ডাকবেন কি ডাকবেন না; ওপর মহলের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কেউ কিছু জানেন না। উপাচার্য নিজেও বিষয়টি খোলাসা করছেন না।
অধ্যাদেশের ১১(২) ধারা অনুযায়ী, কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যেমন অসুস্থতা, ছুটি, অপসারণ বা অন্য কোনো কারণে উপাচার্যের পদ শূন্য হলে একজনকে অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা বলছেন, অধ্যাদেশের নিয়ম অনুসরণ করে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করা হোক। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং আগামী নির্বাচনেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। নতুন উপাচার্যের গ্রহণযোগ্যতাও বাড়বে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, ‘ভিসি প্যানেল নিয়ে আলোচনা নেই। উপাচার্যও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে আমাদের জানা নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট সদস্য ও শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল সবচেয়ে বেশি আলোচিত। তাদের মধ্য থেকেই কারোর পরবর্তী উপাচার্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম এ বিষয়ক আলোচনায় রয়েছেন।
অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পান। পরে প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর উপাচার্য পদে পুনর্নিয়োগ পান তিনি। সাত বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সামলাচ্ছেন তিনি। দুই মেয়াদের বেশি উপাচার্য থাকার নজির নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই তার দায়িত্ব পালনের শেষ দেখছেন অনেকে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষকদের মধ্যেও তাকে নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে পুনরায় নিয়োগ পেতে পারেন তিনি।
ইমেরিটাস অধ্যাপক বা অন্য কোনো গুণী শিক্ষক নেই উপাচার্য নিয়োগের আলোচনায়। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গুণী শিক্ষকদের সামনে আনার যে ধরনের কাঠামো থাকা উচিত তা নেই। যারা তোশামোদ করতে পারে, অন্ধ আনুগত্য প্রকাশ করতে পারে, তাদেরই প্রশাসনের শীর্ষ পদে নিয়ে আসা হয়। সত্যিকারের গুণী শিক্ষক এবং অনেক ভালো গবেষক আছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারা কখনো প্রশাসনের দায়িত্বে আসতে পারেন না। তারা ব্যক্তিত্বের জলাঞ্জলি দিতেও রাজি নন।’
অতীতে উপাচার্যদের মধ্যে অ্যাকাডেমিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে একটা ভারসাম্য ছিল। এখন তা নেই। এখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও আনুগত্যের ভিত্তিতে প্রশাসনিক পদগুলো দেওয়া হয়।
পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন বা ভিসি প্যানেল নিয়ে আগ্রহ নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের। বিএনপিঘোষিত এক দফাতেই তারা মগ্ন। যদিও সিনেটে তিনজন প্রতিনিধি থাকায় সুযোগ তাদেরও রয়েছে। সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার পরিবর্তন না হলে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিষয়ে ভাবছি না। এ বিষয়ে আমাদের ফোকাস নেই। আমাদের ফোকাস হচ্ছে এ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। জাতীয় রাজনীতিতে পরিবর্তন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও পরিবর্তন আসবে।’
শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও সাংগঠনিকভাবে আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমরা নীল দল এখনো এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করিনি। যথাসময়ে দলের সভায় এ নিয়ে কথা হবে। মনোনয়ন কে পাবেন, তার আলোচনাও সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে। বর্তমান প্রশাসনের শীর্ষ তিনজন বিশেষভাবে আলোচনায় থাকবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই দায়িত্ব দেবেন। আমরা উনাদের সমর্থন করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ীই সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।’
বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইনের গতি অনুযায়ীই সব চলবে। এ বিষয়ে যাদের ভাবা প্রয়োজন তারা অবশ্যই ভাববেন।’ সিনেটের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশেষ অধিবেশন ডাকার প্রয়োজন হলে আমরা ডাকি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।