
বিরোধপূর্ণ সীমান্তে উত্তেজনা হ্রাসে একমত হয়েছে এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও চীন। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ব্রিকসের সম্মেলনে সাইডলাইন বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সীমান্ত উত্তেজনা হ্রাসের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে একমত হন।
গতকাল শুক্রবার ভারতের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে বিবিসি। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মোদির অনুরোধে ওই বৈঠক হয় বলে বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির এ দুই পরাশক্তি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে হিমালয় অঞ্চলে প্রায় ৩৪৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। যে সীমান্তের বেশিরভাগ অংশ নির্ধারিত নয় এবং যেটি দ্য লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) নামে পরিচিত। গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে এলএসি নিয়ে দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা তীব্র হয়েছে।
বিবিসি বলছে, এলএসি বরাবর দুই দেশের সেনাদের মধ্যে উত্তেজনা হ্রাসে পদক্ষেপ গ্রহণে উভয়পক্ষ রাজি হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার জানান ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারত-চীন সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণে সীমান্ত এলাকায় শান্তি এবং স্থিতিশীল অবস্থা বজায় রাখা এবং এলএসি পর্যবেক্ষণ করা ও এ ব্যবস্থার সম্মান করা জরুরি বলে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। বিনয় কোয়াত্রা আরও বলেন, এ বিষয়ে দুই নেতা নিজ নিজ কর্মকর্তাদের দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন।
বৈঠকের বিষয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমান চীন-ভারত সম্পর্ক এবং দুই দেশের যৌথ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দুই নেতাই খোলাখুলি ও গভীরভাবে মতবিনিময় করেছেন।
এ দুই নেতা এর আগে ২০২২ সালে জি২০ সম্মেলনের ফাঁকে সর্বশেষ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছিলেন। আগামী ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর ভারতের রাজধানী দিল্লিতে জি২০-এর পরবর্তী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। যে সম্মেলনে অংশ নিতে শি ভারতে যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বিএনপির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা কেন দেয় না সেই প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘দেশটি ঘোষণা করেছে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যারা বাধা দেবে, তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেবে।’
গতকাল শুক্রবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত শান্তি সমাবেশে এ প্রশ্ন তোলেন ওবায়দুল কাদের।
একই দিন এক দফা দাবিতে রাজধানীতে কালো পতাকা ও গণমিছিল কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে শান্তি সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ।
বৃষ্টির দিনে জুমার নামাজের পরে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে শান্তি সমাবেশে আসেন। তবে জমায়েত শুধু বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতেই সীমাবদ্ধ ছিল।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, বিএনপি বসে বসে স্বপ্ন দেখে, নিষেধাজ্ঞার আতঙ্ক ছড়ায়। ভিসানীতির আতঙ্ক ছড়ায়। বিএনপি রাস্তা বন্ধ করে ঢাকার প্রবেশপথে (২৯ জুলাই) অবস্থান করেছে। এর জন্য তো ভিসানীতির প্রয়োগ হওয়া দরকার, নিষেধাজ্ঞা আসা দরকার।
ঢাকার প্রবেশমুখে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘সেই অবস্থানে আমানউল্লাহ আমান ফলের রস পান করে বুঁদ হয়ে গেছেন। সেই অবস্থানের পরিণতি গয়েশ্বর.. পুলিশ অফিসার হারুন নাকি কিশোরগঞ্জ থেকে কোরাল মাছ এনেছেন, কোরাল মাছের ঝোল খেতে খেতে গয়েশ্বর দিশেহারা। আন্দোলনের বারোটা বেজে গেছে। যারা অতিরিক্ত কাপড় নিয়ে এসেছিল, তারাও ধানক্ষেত, এখান দিয়ে, ওখান দিয়ে পালিয়ে যার যার বাড়িঘরে চলে গেছে। এই মানুষগুলো আর আসবে ঢাকায়?’
বিএনপির কালো পতাকা মিছিল ও গণমিছিলের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এটা দেখে আমি ভাবলাম, তাদের আবার কে মারা গেল? তাহলে কালো পতাকা কেন? কালো পতাকা মিছিল করে কেন? কেউ মারা গেছে? কালো পতাকা মিছিল মানেই হলো শোকের মিছিল। বিএনপি শোক করছে কেন? আন্দোলনের বারোটা বেজে গেছে। এখন নেতারা নিজেদের অজান্তে শোকের মিছিল করছেন। আমরা আগস্ট মাসে কালো পতাকা ব্যবহার করি। আন্দোলনের পতাকা হচ্ছে লাল।’
আগামী ২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পুরনো বাণিজ্যমেলা মাঠে আওয়ামী লীগের সমাবেশের কথা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যে মিছিলে জনগণ নাই, সেই মিছিল গণমিছিল হয় কেমন করে? মিছিল দেখবেন? মিছিল দেখাব। একপ্রান্ত ঢাকার যাত্রাবাড়ী, আরেক প্রান্ত... এদিকে মিরপুর, ওদিকে সবুজবাগ। আওয়ামী লীগের মিছিল মানে সারা শহরে ঢল নামে। দেখবেন ২ তারিখে (২ সেপ্টেম্বর), দেখবেন ১ তারিখে তারুণ্যের সমাবেশ। ওই দিন লক্ষ তরুণের হাতে আমরা দেখাব বিজয়ের পতাকা, শোকের কালো পতাকা নয়।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা আমাদের বোঝা হয়ে আছে। জাতিসংঘ আগে মাথাপিছু ১২ ডলার দিত, এখন সাহায্য কমে ৮ ডলার দেয়। কীভাবে চলবে? কেউ সাহায্য করে না, শুধু মুখে সুন্দর সুন্দর কথা বলে। রোহিঙ্গাদের জন্য মায়া কান্না কাঁদে। তারা তাদের দেশে অন্য দেশের মাইগ্রেটকারীদের জায়গা দিতে পারে, কিন্তু রোহিঙ্গাদের জায়গা হয় না।’
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে দেশের বড় সমদ্রসৈকত এবং সেখানকার জীবন বিপন্ন, অর্থনীতি ও পর্যটন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে মুখে সুন্দর সুন্দর বাণী উচ্চারণ করে, আমাদের নেত্রীর (শেখ হাসিনা) প্রশংসা করে। কিন্তু বাস্তবে সাহায্য করার জন্য কেউ আসে না।’
দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে বাংলাদেশে এমন কোনো রাজনৈতিক শক্তি নেই তাদের পরাজিত করতে পারে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আবারও ক্ষমতায় আসবে বলে তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
বিএনপি দেশকে আবারও অস্থিতিশীল করতে চায় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘আন্দোলনের নামে দেশে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে। বিএনপির মতো সন্ত্রাসী দলের হাতে এ দেশের হাল আমরা ছেড়ে দিতে পারি না। ছেড়ে দেব না।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীরের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন প্রমুখ।
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই সরকারের পদত্যাগের এক দফার দাবি আদায়ে গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকায় কালো পতাকা গণমিছিল করেছে বিএনপি। এ কর্মসূচিতে দলটির নেতারা ব্রিকসের সদস্য পদ না পাওয়া, দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে নৌকায় ভোট চাওয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের সমালোচনা করেছেন। বিএনপি নেতারা বলেছেন, বহির্বিশ্ব আজ দেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে।
রাজধানীর শ্যামলীতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে কালো পতাকা গণমিছিল-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। অন্যদিকে দক্ষিণের মিছিল-পূর্ব সমাবেশ হয় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে।
ঢাকা উত্তর বিএনপি : মিছিলের আগের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘ঢাকঢোল পিটিয়ে জনগণের টাকা খরচ করে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে ব্রিকসের সদস্য হতে না পেরে তার ক্ষোভ ঝেড়েছেন বিএনপিকে গালিগালাজ করে ও প্রবাসীদের কাছে নৌকায় ভোট চেয়ে।’
এদিকে দিক ঘুরে কোনো লাভ হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তৃতীয় কোনো দেশে গিয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয় না।’
সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘এক দফার আন্দোলন সামনে রেখে সরকার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। নেতাকর্মীদের খালি হাতে তুলে নিয়ে অস্ত্র ধরিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। এরপর আবার নতুন করে জঙ্গি খেলা খেলছে। আওয়ামী লীগের চেয়ে বড় জঙ্গি কোনো দল নেই।’
প্রশাসনকে ঘিরে সরকারের পরিকল্পনা নিয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘আগামীতে ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার প্রশাসন এবং বিচারকদের দিয়ে শাসনব্যবস্থা তৈরি করেছে। বিচারকদের দিয়ে বিরোধীদলীয় নেতাদের সাজা দিচ্ছে, পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। এসব করে কোনো লাভ হবে না।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল প্রমুখ।
ঢাকা দক্ষিণ বিএনপি : বেলা ৩টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে গণমিছিল হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে মিছিল শুরু হয় বিকেল সাড়ে ৪টায়। মিছিল-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়।
অস্থায়ী মঞ্চে দেওয়া সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ভারতকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘বহির্বিশ্ব আজ দেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে। একটি দেশ বলছে এ সরকারকে আবার লাগবে। আমি বলতে চাই, সরকার নয়, দেশের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন। আজ এ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেশের জনগণ মানে না। বিনা ভোটের নির্বাচনের স্বপ্ন আর বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।’
তিনি বলেন, ‘দেশে তিনটি শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে। সেগুলো হলো অশিক্ষা, কুশিক্ষা আর সুশিক্ষা। আজকে জনগণের টাকায় বেতন নিয়ে কুশিক্ষিতরা বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালাচ্ছে। এই কুশিক্ষিতরা বিচারের নামে প্রহসন করছে। তারা জেলখানায় বিরোধী নেতাকর্মীদের পিটিয়ে হত্যা করছে। এই কুশিক্ষিত লোকগুলো দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তারা দেশকে ভালোবাসে না, টাকাকে ভালোবাসে।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে দ্রব্যমূল্য, তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। সরকার কানে শোনে না। আজকে প্রতিটি ডিমের দাম ১৫ টাকা। এদের দুর্নীতির কারণে টাকার মান কমে গেছে। যারা ব্যাংকে টাকা রেখেছেন, তারা লাভের পরিবর্তে ১৪ শতাংশ টাকা কম পাবেন। আজকে বিদ্যুতের কার্ড থেকেও হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হচ্ছে। আজকে বর্তমান সরকার ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিদের চেয়ে বেশি লুট করেছে। কারণ তাদের মধ্যে দেশপ্রেম নেই।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক লিটন মাহমুদ ও আ ন ম সাইফুল ইসলামের পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ।
বিএনপির কালো পতাকা মিছিলের অগ্রভাগে অংশ নেন মহিলা দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এরপর পর্যায়ক্রমে স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল, কৃষক দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, তাঁতী দল ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নেতাকর্মীরা ছিলেন। নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে কালো পতাকা গণমিছিল মতিঝিল, ইত্তেফাক মোড়, টিকাটুলী, দয়াগঞ্জ মোড় ঘুরে নারিন্দায় গিয়ে শেষ হয়।
অন্যান্য দলের কর্মসূচি : বিএনপির পাশাপাশি সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও কালো পতাকা গণমিছিল কর্মসূচি পালন করেছে। গণতন্ত্র মঞ্চ শাহবাগ মোড়ে, ১২ দলীয় জোট বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট পুরানা পল্টন মোড়সংলগ্ন আলরাজী কমপ্লেক্সে সামনে, গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি) যৌথভাবে আরামবাগে, এলডিপি পূর্ব পান্থপথ দলীয় কার্যালয়ের সামনে, লেবার পার্টি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে, একই স্থানে গণ অধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া) ও সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, গণ অধিকার পরিষদ (নুর) পুরানা পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচি পালন করে। এ ছাড়া এনডিএম মালিবাগ মোড়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য সেগুনবাগিচা হাই স্কুলের সামনে, এবি পার্টি বিজয়নগর শ্রমভবনের সামনে, এনডিপি পুরানা পল্টনে আলরাজী কমপ্লেক্সের সামনে, জনতার অধিকার পার্টি বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে এবং সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে ‘কালো পতাকা গণমিছিল’ করে।
গত ১২ জুলাই এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার পর এ পর্যন্ত ঢাকায় পদযাত্রা, মহাসমাবেশ, ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি, ঢাকায় গণমিছিল, মহানগরে গণমিছিলের কর্মসূচি করে। সর্বশেষ গত ১৮ আগস্ট ঢাকাসহ সারা দেশের মহানগরে গণমিছিল করে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশের অব্যাহত উন্নয়নে বিদেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে আগামী সাধারণ নির্বাচনে তার দলের নির্বাচনী প্রতীক ‘নৌকা’র পক্ষে ভোট চেয়েছেন। কোনো লুটেরা যাতে দেশকে ধ্বংস করার জন্য আবার ক্ষমতায় আসতে না পারে, সেজন্য বাংলাদেশের জনগণকে সজাগ থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ব্রিকস সম্মেলন উপলক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা সফররত শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে নৌকায় ভোট চাওয়ার পাশাপাশি আমরা আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই।’ দেশের উন্নয়নের অদম্য গতি যাতে কোনোক্রমেই ব্যাহত না হয়, সেজন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিষয়টি খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘দেশকে লুটেরাদের হাতে ছেড়ে দেবেন না, অন্যথায় দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে এবং নিশ্চিত করুন যে, দেশের উন্নয়নের যাত্রা কোনো বাধা বিপত্তি ছাড়াই অব্যাহত থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘দেশবাসী নৌকায় ভোট দিয়ে দেশের স্বাধীনতা পেয়েছে এবং অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হয়েছে। অথচ বিএনপিকে ভোট দিয়ে লুটপাট, দুর্নীতি ও হত্যা পেয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জনগণের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করছি, তাদের দুঃসময়ে পাশে থাকি এবং তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘উল্টো বিএনপি-জামায়াত জোট মানুষকে পুড়িয়ে মারার রাজনীতি করছে, টাকা কামাচ্ছে। দুর্নীতি, আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান, অর্থ পাচার, লুটপাট ও সারা দেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।’
তিনি বলেন, সরকার ইতিমধ্যে কিছু টাকা ফেরত এনেছে, যা খালেদা জিয়ার দুই ছেলে চুরি করে বিদেশে পাচার করেছিল এবং অবশিষ্ট টাকাও জব্দ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি জানেন না কোথা থেকে তারা অর্থ পাচ্ছেন, যা ব্যবহার করে আবার পুলিশের গাড়ি ও যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়ে তারা ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এবার বাড়াবাড়ি করলে দেশের মানুষ তাদের রেহাই দেবে না। বিএনপি-জামায়াত চক্র ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়ে ৫০০ জনকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছিল। কিন্তু জনগণের প্রতিবাদের মুখে তারা অগ্নিসন্ত্রাস বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতিমের টাকা আত্মসাতের কারণে খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া হয়েছে, তার ছেলে তারেক রহমান ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা এবং দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত এবং তারেকের স্ত্রী দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। তিনি বলেন, দণ্ডপ্রাপ্তরা বিএনপির শীর্ষ নেতা এবং তাদের সামনে রেখে রাজনীতি করছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণ তাদের ভোট দেবে না। জনগণ বিএনপিকে ক্ষমতায় আসার জন্য ভোট দেবে না। জনগণ অগ্নিসন্ত্রাসীদের আর ক্ষমতায় আনবে না।’
সরকারপ্রধান বলেন, একসময় বাংলাদেশকে দরিদ্র ও প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হলেও এখন তার সরকারের অক্লান্ত পরিশ্রমে বিশ্ব বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে ডিজিটাল দেশে রূপান্তরিত করেছে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে।
দেশের সার্বিক আর্থসামাজিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে তার সরকারের পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তারা বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
তিনি জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরির জন্য বিদেশে না যাওয়ার অনুরোধের পাশাপাশি ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানোর জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান, যা চাকরিপ্রার্থী এবং সরকার উভয়কেই ক্ষতিগ্রস্ত করে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে কোনো গ্যারান্টি ছাড়াই ঋণ নিয়ে দেশে ফিরে প্রবাসীরা বাংলাদেশে ব্যবসা করতে পারবেন। এ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চাকরির জন্য বিদেশেও যেতে পারেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. লুৎফর রহমান রূপকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাধারণ সম্পাদক আবদুল আউয়াল তানসেন। বাসস
চট্টগ্রাম মহানগরীর সাম্প্রতিক জলাবদ্ধতার জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) দায়ী করে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। প্রতিবাদে সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ সংবাদ সম্মেলন ডেকে জলাবদ্ধতার জন্য উল্টো সিটি করপোরেশনকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, করপোরেশনের সক্ষমতা ছিল না বলেই সিডিএকে জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগা প্রকল্পটি দেওয়া হয়। এর জবাবে মেয়র আরেক দফা সংবাদ সম্মেলন করে তার প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা আছে বলে দাবি করেন।
দুই সংস্থার বাগ্যুদ্ধে বন্যা-জলাবদ্ধতায় নাকানিচুবানি খাওয়া চট্টগ্রামবাসী দারুণ ক্ষুব্ধ। কারণ এ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে; ক্ষোভ-বিক্ষোভ হয়েছে; লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু নগরীর জলাবদ্ধতার সমাধান কোনো কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি। তবু প্রাসঙ্গিক হিসেবে পাঠকদের কাছে বিষয়টি তুলে ধরা হলো।
কার কাজ কে বাগায়
দুই সংস্থার বিরোধের শুরু জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প নেওয়ার সময়। বিধি অনুযায়ী নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ সিটি করপোরেশনের। তারাই নালা ও খালের মাটি অপসারণের কাজের পাশাপাশি সংস্কারকাজ করছিল। জলাবদ্ধতার ইস্যুতে চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন মেয়র গদি হারিয়েছেন। মেয়র আ জ ম নাছিরের সময় ২০১৬ সালে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগা প্রকল্পের অনুমোদন নিয়ে নেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। এ নিয়ে কম বিরোধ হয়নি। ওই সময় ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার প্রকল্প মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য সিডিএ সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করে। ওই প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফায় বাড়ানোর পর এ বছরের জুনে শেষ হলেও কাজ হয়েছে ৭৬ শতাংশ। ফলে এখনো পানিতে ডুবছে চট্টগ্রাম।
প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘৭৬ শতাংশ কাজ হওয়ার পরও চট্টগ্রাম নগর যেভাবে ডুবছে, শতভাগ শেষ হলেও কি নগরবাসী জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে? প্রকল্প শতভাগ শেষ হলেও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলবে না।’
খালেই খেয়েছে সব
১৯৯৫ সালের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৭০টি খাল ছিল। চট্টগ্রাম ওয়াসা ২০১৬ সালে ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করার সময় ৫৭টি খালের কথা উল্লেখ করে। তার ভিত্তিতেই সিডিএর তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম জলাবদ্ধতার মেগা প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন করিয়ে প্রকল্পটি একনেক থেকে পাস করিয়েছিলেন। প্রকল্পে ৩৬টি খালের সংস্কার ও উন্নয়নের কথা বলা হয়। বাকি ২১টি খাল গেল কোথায়?
চট্টগ্রাম মহানগরীর নদী-খাল রক্ষা নিয়ে আন্দোলনকারী পরিবেশকর্মী আলিউর রহমান বলেন, ‘আরএসশিটের ৭০টি খাল উদ্ধার করতে হবে। খালগুলোর কোথাও মার্কেট, কোথাও ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। খালের জায়গা খালকে ফেরত দিতে হবে।’
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ্ আলী বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হলেও জলাবদ্ধতা পুরোপুরি যাবে না। আমরা ৩৬টি খালে কাজ করছি। বাকি খালগুলোর যদি সংস্কার না হয়, তাহলে প্রকল্পে সুফল আসবে না। নগরীর রাস্তার পাশের নালাগুলো যদি পরিষ্কার না থাকে এবং নালা দিয়ে পানি খালে না আসে, তাহলে রাস্তায় পানি থেকেই যাবে।’
কর্নেল শাহ্ আলীর বক্তব্যে প্রমাণ পাওয়া গেছে ৪, ৫ ও ৬ আগস্ট বন্দরনগরী পানিবন্দি থাকার সময়। তখন রাস্তায় পানি জমে ছিল। চাক্তাই খালে পানির প্রবাহ না থাকলেও রাস্তায় পানি ছিল।
একে পুঁজি করে সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের প্রকল্পের কারণে পানি জমছে না। খালে তো পানি নেই। রাস্তা থেকে নালা হয়ে খালে পানি আসছে না। রাস্তা ও নালা সিটি করপোরেশনের আওতায়। জলাবদ্ধতার জন্য সিডিএ দায়ী নয়।’
লে. কর্নেল শাহ্ আলী বলেন,‘জলাবদ্ধতা নিরসনে দুই সংস্থার ৪০টি খালের মুখে রেগুলেটর বা সøুইসগেট বসানোর কথা। সব খালে রেগুলেটর না বসানো পর্যন্ত জোয়ারের পানি ঢুকবে এবং জলাবদ্ধতা যাবে না।’
অপূর্ণ চার প্রকল্প
সিডিএর ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প, সিটি করপোরেশনে ৩২৬ কোটি ৮৪ লাখ ১১ হাজার টাকার খাল খননের প্রকল্প (যথাসময়ে কাজ শুরু করতে না পারায় প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ১ হাজার ২৫৬ কোটি টাকায় গিয়ে পৌঁছে, এখনো কাজ শেষ হয়নি), সিডিএর চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প, যার আওতায় ১২টি খালের মুখে রেগুলেটর বসানোর কথা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প, যার আওতায় কর্ণফুলীর মোহনা থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত আরও ২৩টি খালের মুখে রেগুলেটর বসানোর কথাÑ এসব প্রকল্পের একটিও পুরোপুরি শেষ হয়নি।
পাহাড় কাটাও দায়ী : মেয়র
জলাবদ্ধতার জন্য পাহাড় কাটাকেও দায়ী করেন চট্টগ্রামের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, নগরীর পাহাড় কাটার অনুমোদন দিচ্ছে সিডিএ। পাহাড় কাটা মাটি বৃষ্টির পানিতে মিশে নালা ও খাল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
মেয়রের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, ‘চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো বালির পাহাড়। পাহাড় না কেটে ভবন নির্মাণ করা গেলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না।’ তিনি বলেন, ‘নগরীর পুকুর-দীঘি ভরাট করে মানুষ বাড়ি নির্মাণ করায় জলাধার কমে গেছে। এ কারণেও জলাবদ্ধতা বাড়ছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিডিএর একজন পরিকল্পনাবিদ জানান, ‘সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের সময়ের আদেশটি এ নগরকে ধ্বংস করেছে। যেখানে ২০০০ সালের জলাধার সংরক্ষণ আইনে পুকুর ও জলাশয় ভরাট নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেখানে ওই আদেশের বদৌলতে আধা একর (৩০ কাঠা) থেকে ১৫ কাঠা পর্যন্ত পুকুর ও জলাশয়গুলোতে পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ছাড়পত্র নিয়ে ভবনের অনুমোদন দেওয়া যাবে। ১৫ কাঠার নিচের জলাশয়গুলোতে সিডিএ নিজেই ভবনের নকশার অনুমোদন দিতে পারবে।’
সিসিসির প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছে সিডিএ। তারা কাজ শেষ করে আমাদের মুক্তি দিলে জলাবদ্ধতা থেকে আমরা মুক্তি পাই কি না, দেখা যাক।’
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের একটি খাল খনন প্রকল্প ছিল। এটি বাস্তবায়ন করতে পারলে জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসী কিছুটা হলেও মুক্তি পেত।’
মাঠ-জলাধারের অভাব
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘একটি নগরে কী পরিমাণ খালি জায়গা রাখতে হবে, এর একটি অনুপাত রয়েছে ৩০ : ৭০। সেই অনুযায়ী খালি জায়গা রাখতে হবে। একই সঙ্গে নগরীর নালা ও খাল ভরাট বন্ধের পাশাপাশি সঠিক ড্রেনেজ পরিকল্পনা করতে হবে। পানি ধরে রাখার জন্য পুকুর ও জলাধার রাখতে হবে। পানি পরিবহনের জন্য খালগুলো সক্রিয় রাখতে হবে। সøুইসগেট থাকলে সেগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা লাগবে।’
কিন্তু সিডিএ কী করেছে? প্রাকৃতিক জলাধারখ্যাত বাকলিয়া এলাকায় কল্পলোক নামে একটি আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলেছে। নগরীর চান্দগাঁও ও অক্সিজেন এলাকার জমি ভরাট করে গড়ে তুলেছে অনন্যা আবাসিক এলাকা। আরেকটি বড় প্রাকৃতিক জলাধার বগারবিলেও ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে সিডিএ।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রাশিদুল হাসান বলেন, ‘চট্টগ্রামে নালা ও খাল ভরাটের হাত থেকে রক্ষা করে স্থানীয়ভাবে পুকুর, দীঘি ও নগরের চারপাশের নিচু জমিকে রক্ষা করতে হবে। এগুলো প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে কাজ করে।’
সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের পুর ও পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মুশতাক আহমদ বলেন, ‘শোষণ, সংরক্ষণ ও পরিবহন এই তিন ধাপে পানির সঠিক ব্যবস্থাপনা হলে জলাবদ্ধতা হওয়ার কথা নয়। রাস্তা যেভাবে কার্পেটিং হয়, তাতে মাটি পানি শোষণ করতে পারছে না। পুকুর, দীঘি, বিল যদি ভরাট করে ফেলি, তাহলে পানি কোথায় জমা হবে? পানি পরিবহনের জন্য যদি নালা, খাল ও নদী সচল না থাকে তাহলে জলাবদ্ধতা হবেই।’
উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সমন্বয় খুব জরুরি। না হলে নগরে জলাবদ্ধতা বাড়বে।’
বুয়েটের ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নগরগুলো সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাবে জলাবদ্ধতা হচ্ছে।’
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘সমন্বয়ের বিকল্প নেই। সমন্বয়ের মাধ্যমেই নগরীর জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধান করতে হবে। নালা-খালে পলিথিন ফেলা বন্ধ করতে হবে, পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে।’
সমন্বয়ের উদ্যোগ তার পক্ষ থেকেই সবার আগে নেওয়া হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ।
সিলেটের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরতে যাচ্ছিলেন নয়জন সহকর্মী। সঙ্গে এক নিকটাত্মীয় ও মাইক্রোবাসের চালক। আনন্দের এই যাত্রাই যে শেষ যাত্রা হবে, তা কে জানত। সিলেট আর ঘুরে দেখা হলো না তাদের, মাঝপথেই তাদের কাউকে কাউকে পরিণত হতে হলো প্যাকেটবন্দি লাশে। আবার কেউবা হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন।
এই হতাহতদের সবাই ঢাকার সাভারের বাইপাল নতুনপাড়া এলাকার এসবি নিটিং লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারী। গত বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নরসিংদীর শিবপুরের ঘাসিরদিয়া এলাকায় দুর্ঘটনায় পড়ে তাদের বহনকারী মাইক্রোবাস। সাভার থেকে সিলেটগামী মাইক্রোবাসটি দ্রুতগতির আরেকটি গাড়িকে পাশ কাটানোর সময় (ওভারটেক) সিলেট থেকে ঢাকাগামী পাথরবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে দুমড়ে-মুচড়ে যায় মাইক্রোবাসটি, নিহত হন এর সাত আরোহী। গুরুতর আহত হন আরও চারজন। তাদের মধ্যে তিনজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে এবং একজনকে বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সড়ক দুর্ঘটনায় আরও নয়জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
নরসিংদীর দুর্ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে, তা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের একটি বিপজ্জনক বাঁক। এর আগে একই স্থানে ২০১১ সালের ১৫ জানুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনায় বেলাব থানার ১০ পুলিশ সদস্য নিহত হয়। সেখানে বৃহস্পতিবার গভীর রাতের দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেনÑ গাজীপুরের কালিয়াকৈরের লতিফপুর গ্রামের আইয়ুব খানের ছেলে আল আমীন (২৭), ঝালকাঠির রাজাপুরের পারগোপালপুর গ্রামের আবদুল গনি হাওলাদারের ছেলে আল আমীন হাওলাদার (২৯), টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের মীর কুমুল্লী গ্রামের মোতাহের হোসেনের ছেলে মীর নাজমুল হক ওরফে সবুজ (৩০), জামালপুরের সরিষাবাড়ীর ধারাবর্ষা গ্রামের দুদু মিয়ার ছেলে রাজু আহাম্মেদ (৩৬), মাদারীপুরের কালকিনির উত্তর কৃষ্ণনগর গ্রামের তোফায়েল হাওলাদারের ছেলে আব্দুল আউয়াল (৩৭), বরিশালের মুলাদি থানার মুলাদি গ্রামের মো. মজিবর সিকদারের ছেলে রায়হান সিকদার ওরফে আরিয়ান (২৪) ও কুষ্টিয়া সদরের খাজানগর গ্রামের নুরু মোল্লার ছেলে বাবুল মোল্লা (৪০)। এদের মধ্যে বাবুল মোল্লা বাদে সবাই এসবি নিটিং লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারী। আহত চারজন হলেন কারখানাটির মার্চেন্টাইজার সাকি, পারভেজ, দোয়েল ও মিঠুন। দুর্ঘটনার পর থেকে মাইক্রোবাস চালকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, রাত ৩টার কাছাকাছি সময়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই মাইক্রোবাসের পাঁচ যাত্রী নিহত হন। খবর পেয়ে ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত ছয়জনকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে পাঠান এবং নিহত পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করেন।
হাসপাতালে নেওয়ার পর জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আরও দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এদের মধ্যে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই একজন ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় অন্যজনের মৃত্যু হয়। আহত চারজনের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে একজনকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঘাসিরদিয়া গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কের এ অংশে একটি বাঁক রয়েছে। সে কারণে দ্রুতগতির গাড়িচালকদের বাঁকের অন্য পাশের গাড়ি দেখতে সমস্যা হয়। সেখানে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা খালেক মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রাতে বাড়িতে শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। মহাসড়কে এসে দেখি ট্রাকটা একপাশে পড়ে আছে আর মাইক্রোবাসটি চিত হয়ে উপুড় হয়ে আছে। মানুষ কান্নাকাটি করছে। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
খবর পেয়ে সকালে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে দেখতে পেয়েছি ট্রাকটি নিজের লেনেই ছিল আর মাইক্রোবাসটি অন্য একটি লেনে পড়ে ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মাইক্রোবাসটি অন্য কোনো যানবাহনকে ওভারটেক করতে গিয়ে ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। আমরা ট্রাকের চালককে আটক করেছি, তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে আমরা তদন্ত করছি।’
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সকালে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ছুটে আসেন এসবি নিটিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) শিহাব উদ্দিন জাকি। তিনি নিহতদের পরিচয় সনাক্ত করে স্বজনদের খবর দেন। ওই সময় শিহাব উদ্দিন জাকি সাংবাদিকদের বলেন, চালক ও আরেকজন ছাড়া মাইক্রোবাসটিতে অবস্থান করা নয়জনই তাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মী। এর মধ্যে আটজনই প্রতিষ্ঠানের মার্চেন্ডাইজার ও একজন ফেব্রিকস সেকশনের স্টোর কিপার। কিছুদিন ধরেই তারা সিলেটে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে আশুলিয়া থেকে চালকসহ ১১ জন ওই মাইক্রোবাসে চড়ে সিলেটের দিকে রওনা হন।
খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন নিহত আল আমিন খানের ছোট ভাই আসিফ খান। তিনি বলেন, ‘আমি শ্রীমঙ্গলে চাকরি করি। ভাইয়ের সিলেট ঘুরে আমার কাছে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ফোনে খবর পাই ভাই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে।’
তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘সকালে কারখানা থেকে ম্যানেজার কল করে আম্মুকে দুর্ঘটনার খবর জানান। এরপর ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদে বাবা-মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।’
ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কবির হোসেন ভূঁইয়া জানান, নিহতদের স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতিতে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
একসঙ্গে ছয় কর্মকর্তাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ সহকর্মীরা : সাভারে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার নতুন জোনের দক্ষিণ পাশের দেয়াল ঘেঁষা বাইপাইল নতুনপাড়া এলাকায় এসবি নিটিং লিমিটেড কারখানা ও এর আশপাশের এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। একসঙ্গে কারখানাটির ছয় কর্মকর্তাকে হারিয়ে শোকে কাতর সহকর্মীরা। কারখানার মূল ফটকে ছয় কর্মকর্তার মৃত্যুতে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে ছবি সংবলিত ব্যানার সাঁটানো হয়েছে।
এসবি নিটিং লিমিটেডের এইচআর ম্যানেজার (প্রশাসন) জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের মৃত্যুতে (নিহত ছয় সহকর্মী) প্রতিষ্ঠানের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। আমরা হয়তো তাদের জায়গায় নতুন লোক নিতে পারব, কিন্তু তাদের মতো কর্মকর্তা আর পাব না।’
দেশের বিভিন্ন জায়গায় সড়কে নিহত আরও ৯ : বাগেরহাটের রামপালে ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে তিন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে খুলনা-মোংলা মহাসড়কে তেঁতুলিয়া ব্রিজের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন বাগেরহাটের রামপালের শংকরনগর গ্রামের এনামুল (২৬), পাশের বেলাই গ্রামের আরিফ (২৭) এবং ফকিরহাট উপজেলার লখপুর গ্রামের সাইদুল (২৮)। তারা তিনজনই মাছের ঘেরের কর্মচারী।
ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে মাদারীপুরের শিবচরে ঢাকাগামী বাসের চাপায় আকাশ আলী (২৪) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আরও চার মোটরসাইকেল আরোহী গুরুতর আহত ও বাসটির ১০-১২ জন যাত্রী আহত হন। গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে কুতুবপুর ইউনিয়নের মুন্সীরবাজারসংলগ্ন সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে আহতদের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
যশোরের মনিরামপুরে আলমসাধু (যন্ত্রচালিত তিন চাকার যান) ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে সুব্রত দাস (২২) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও চারজন। বৃহস্পতিবার মনিরামপুর-ঢাকুরিয়া সড়কের কাচারিবাড়ি বাজারে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে বাসের ধাক্কায় জাহানারা বেগম (৪০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কের বারৈয়ারহাট সৈয়দা মেমোরিয়াল স্কুলসংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত জাহানারা বেগম উপজেলার ফটিকছড়ি পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের তুফান আলী পল্লান বাড়ির জাকির হোসেনের স্ত্রী।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় জাবের হোসেন (৪৬) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে কুড়িল ফ্লাইওভারে নিহত হয়েছেন অজ্ঞাতপরিচয় (৬৫) এক ব্যক্তি। গতকাল বিকেল পৌনে ৪টার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় পথচারীরা জাবের হোসেনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ছাড়া রাজধানীর বনানীতে কাভার্ড ভ্যানের পেছনে রডবোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় ট্রাকটির চালক নিহত হয়েছেন। তার নাম শাহজাহান (৩৫)। গতকাল ভোর সাড়ে ৪টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হলে সকাল ৬টায় চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢামেক এবং সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে প্রতিবেদনটি তৈরি
ব্যাংকপাড়াখ্যাত মতিঝিল এখন মৃতপ্রায়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে না পারায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র সরে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা ঘোরানো মতিঝিলে আবাসিক ভবন, শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান তৈরি না হলে দেশের প্রধান এই বাণিজ্যিক অঞ্চল প্রাণ হারাবে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাদের মতে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় অবদান রয়েছে মতিঝিলের টাকার। শুধু তা-ই নয়, মতিঝিলে উপার্জিত অর্থে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, কানাডাসহ আরও অনেক দেশে। এখানকার উপার্জিত টাকা অনেকে জমা রেখেছেন সুইস ব্যাংকেও। শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মতিঝিলে। এ যেন মা কাঁকড়ার আত্মত্যাগের গল্প। মা কাঁকড়া বাচ্চাদের আগলে রাখে বুকের ভেতর; যেদিন বাচ্চাগুলো বের হয়ে আসে, সেদিন খোলস ছাড়া মা কাঁকড়ার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। মা কাঁকড়ার মতো দুঃখী ও ত্যাগী বাণিজ্যিক মতিঝিল।
ষাটের দশকে মতিঝিলে গড়ে ওঠে দেশের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট-সিবিডি)। সেই থেকে এখনো দেশের প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল মতিঝিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে সরকারি ৮টি, বেসরকারি ৪৫টি এবং বিদেশি ব্যাংক রয়েছে ৮টি। এ ছাড়া ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৮১টি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের বেশির প্রধান কার্যালয় চলে গেছে কারওয়ান বাজার, গুলশান-বনানী ও উত্তরায়। নতুন করে যেসব ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাচ্ছে, সেগুলোর প্রধান কার্যালয় মতিঝিলের বাইরে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মতিঝিলের আশপাশে পরিকল্পিত কোনো আবাসিক এলাকা, অভিজাত হোটেল, কাজের ফাঁকে অবসর কাটানোর মতো উন্মুক্ত স্থান, শপিং কমপ্লেক্স না থাকায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সুবিধার জন্য অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়গুলোও মতিঝিলের বাইরের এলাকা, অর্থাৎ কারওয়ান বাজার, গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে গড়ে উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর, মধুমিতা সিনেমা হল এবং ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এবং দিলকুশা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবন এবং বঙ্গভবনের পাশের এলাকাজুড়ে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল। বিশ্বের বাণিজ্যিক অঞ্চলের ভবনগুলো সুউচ্চ হয়ে থাকে। কিন্তু মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের পাশেই বঙ্গভবন। নিরাপত্তার কারণে বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর কোনো বহুতল ভবন করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, মতিঝিলের প্লটগুলোর ‘নন-রেসট্রিকটেড’ উচ্চতা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর সাড়ে চারতলার বেশি উচ্চতার ভবনের অনুমোদন মেলে না। ফলে মূল্যবান ওই প্লটগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারছেন না মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ জরাজীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণও রয়েছে কয়েকটি ভবন। একটির সঙ্গে অন্যটি লাগানো। দুটি ভবনের মাঝখানে উন্মুক্ত জায়গা নেই বেশিরভাগ ভবনের। দিলকুশা এলাকার বঙ্গভবন লাগানো ভবনগুলোর মাঝখানেও কোনো ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, মতিঝিল এলাকার ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে। ভাঙাচোরা এবড়োখেবড়ো সড়ক। সড়ক বিভাজকগুলো শ্রীহীন। এগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হয়নি। প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলে মতিঝিলের আরও করুণ দশা চোখে পড়ে। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার সড়কের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে চটের ছালা দিয়ে ঘেরা খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান এবং নানা পণ্যের অস্থায়ী দোকান। সামান্য বৃষ্টিতে মতিঝিল এলাকার সড়কগুলো তলিয়ে থাকে পানির নিচে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত। ডিএসসিসি এলাকার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে। খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে মূল্যায়ন করলে মতিঝিল ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। যদিও এটা মানতে নারাজ ডিএসসিসির কারিগরি কমিটি।
মতিঝিল এলাকার বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিল এলাকার সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে ডিএসসিসি। পরিত্যক্ত প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মতিঝিলের সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত ও সড়ক বিভাজকের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা দরকার। পর্যায়ক্রমে এ এলাকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কাজ করবে ডিএসসিসি। তবে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের মূল সংস্কার ও আধুনিকায়নের দায়িত্ব রাজউকের। রাজউককে সেসব বিষয় পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব কাজে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা লাগলে করপোরেশন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলে রাজউক। রাজউক সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশক থেকেই মতিঝিলের পুরোপুরি বাণিজ্যিক বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্যিক অঞ্চলে শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান থাকে। আর কাছাকাছি এলাকায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা থাকে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে সেটা ছিল না। অভিজাত মানের হোটেল পূর্বাণী গড়ে উঠলেও আশপাশে সময় কাটানোর মতো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লোকজন গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় থাকেন। মতিঝিলের সৌন্দর্য নিশ্চিত করতে ও আধুনিকায়নে যেসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখা দরকার ছিল রাজউক ও সিটি করপোরেশন সেটা করেনি।
রাজউক সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধরা, উত্তরা। সেই সব এলাকা থেকে মানুষ মতিঝিলে আসেন। শহরের জনসংখ্যা বাড়ায় দিন দিন যানজট বাড়ছে। ওই সব এলাকা থেকে মতিঝিলে আসতে সড়কে এক থেকে দেড় ঘণ্টা চলে যায়। দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কর্মঘণ্টার মধ্যে ৩০ শতাংশ সময় সড়কে নষ্ট হচ্ছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে চিন্তা করেছে, তার কর্মস্থল এমন একটা জায়গায় হবে যা তার আবাসনের কাছাকাছি। মতিঝিল থেকে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও ভূমিকা রেখেছে।
কালের বিবর্তনে গুলশান হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক এলাকা। কারওয়ান বাজার, উত্তরায়ও গেছে কিছু। এসব জায়গায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমও সেখানে চলে গেছে। এসব এলাকার আশপাশে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় তাদের বসবাস। আবাসিক এলাকা ছাড়া, পৃথিবীর কোথাও শতভাগ জায়গা শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা অথবা একই শ্রেণির কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার হয় না।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, নগর পরিকল্পনায় ভূমির ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়, যেকোনো জায়গার ব্যবহার হবে ২৪ ঘণ্টা। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল কর্মচঞ্চল থাকে মাত্র ১২ ঘণ্টা। এরপর ওই জায়গার ব্যবহার হয় না। রাতে নীরব ও ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়।
তিনি বলেন, যে মতিঝিলে দিনের বেলায় হাঁটা যায় না; গাড়ির কারণে, যানজটে; সেই মতিঝিলে রাত ৮টার পরে আবার একাও হাঁটা যায় না; অনিরাপদ বোধ হয়। এ জন্য যারা দিনে বাণিজ্য করতে আসেন, তারা মতিঝিল এলাকার হোটেলগুলোতে থাকেন না। অন্যদিকে গুলশান-বনানী এলাকায় থাকলে তারা শপিংয়ে যেতে পারেন, কফি শপে যেতে পারেন। এসব কারণে সারা বিশ্বে ভূমির মিশ্র ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, মতিঝিল এলাকা যেহেতু ইতিমধ্যে তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলেছে, এ জন্য মতিঝিলের জমির শ্রেণিকে মিশ্র ব্যবহার হিসেবে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি নিয়েছে রাজউক। সংশোধিত ড্যাপে সে বিষয়ে নির্দেশনা রাখা হয়েছে। পৃথিবীর নগর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৫০, ৬০ বা ১০০ বছর অন্তর সেসব ঢেলে সাজানো হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়েই মতিঝিল এলাকাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে আবাসিকের বৈশিষ্ট্য দিতে হবে; কনডোমিনিয়াম গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে রাজউক বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ১৬ একর জায়গা নিয়ে একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে লাইব্রেরি, ওয়াকওয়ে থাকবে। বসার ব্যবস্থা থাকবে। মতিঝিল এলাকায় ঝিল ছিল, ওই ঝিলকে প্রাধান্য দিয়ে পার্কটি তৈরি করা হবে। বহুমুখী ব্যবহার ছাড়া মতিঝিলকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিলের আধুনিকায়ন ও ভূমির মিশ্র ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। তাহলে মতিঝিল সচল থাকবে; তবে ঢাকা শহর বড় হওয়ায় আরও বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে ওঠা ইতিবাচক। এসব পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দরকার ছিল; কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে সে রকম হয়নি। এটা দুঃখজনক। এ জন্য শহরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ঢাকায় এখন অনেকগুলো বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সব অঞ্চলে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় বড় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় মতিঝিলে রয়েছে। তবে ব্যবসা গুলশান, বনানী, উত্তরা, গাজীপুরে সরে যাওয়ায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ব্যবসা কেন্দ্রের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।