
বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বর্তমান পরিস্থিতিতে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া নিরাপদ নয় বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে মিয়ানমারের পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা।
গতকাল শুক্রবার ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংসতা, ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ছয় বছর পূর্তি উপলক্ষে দূতাবাসের ওয়েবসাইটে ওই বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।
‘গণহত্যার ষষ্ঠ বার্ষিকী’ শিরোনামের ওই বিবৃতিতে বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলা হয়, ‘সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গাকে বহনযোগ্য অল্প কিছু জিনিস নিয়ে পালাতে বাধ্য করেছিল (মিয়ানমারের) শাসকদের এ গণহত্যা। বাংলাদেশের জনগণ সহানুভূতি এবং মানবতার হাত বাড়িয়ে তাদের স্বাগত জানিয়েছিল। প্রায় এক মিলিয়ন (১০ লাখ) উদ্বাস্তুর প্রতি আতিথেয়তা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশের জনগণ। আমরা এই উদারতার প্রশংসা করি।’
বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশে আশ্রয় খুঁজে ফেরা রোহিঙ্গারা দীর্ঘকাল ধরে ভুগছে উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মর্যাদার সঙ্গে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যাওয়া, সপরিবারে শান্তিতে বাস করা এবং অর্থ ও উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবনযাপনের সুযোগ পাওয়া তাদের অধিকার। সেই লক্ষ্যে নিষেধাজ্ঞা জারি, আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আদালতের সমর্থনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার, নৃশংস অপরাধীদের জন্য জবাবদিহিতা এবং সংকটের সমাধান খুঁজে পেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘বার্মার অবস্থার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রান্তিক এ জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাই। আমাদের অবশ্যই বাংলাদেশ সরকার এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানকারী বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে হবে।’
বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া অনিরাপদ উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘তাই আমরা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে পুনর্বাসনের মাধ্যমে দায়িত্ব ভাগ করে নিয়ে রোহিঙ্গাদের দুর্দশার সর্বাঙ্গীণ সমাধানে অবদান রাখছি। আন্তর্জাতিক পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় অবদান রাখা অন্য দেশগুলোর উদারতাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আশা করি, পুনর্বাসন দেওয়া দেশগুলোর বাইরেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টায় যোগ দেবে। ২০০৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশসহ এ অঞ্চল থেকে প্রায় ১৩ হাজার রোহিঙ্গাকে স্বাগত জানিয়েছে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘আমেরিকার জনগণ ২০১৭ সাল থেকে এ অঞ্চল জুড়ে উদ্ভূত মানবিক সংকটের প্রতিক্রিয়ায় ২.১ বিলিয়নের ডলারেরও বেশি অবদান রেখেছে। এর ভেতর রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং তাদের আশ্রয়দাতা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য ১.৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। আমাদের এ সমর্থন অবিচল রয়েছে। আমরা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য টেকসই সমাধান নিশ্চিত করতে সর্বোত্তম চর্চা, ধ্যান-ধারণা এবং সংস্থান বিনিময়ে উন্মুখ।’
পুরো অঞ্চল জুড়ে রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ কমাতে বা শেষ করতে সম্ভাব্য সব বিকল্প খুঁজতে অবিচল থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
বিএনপির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা কেন দেয় না সেই প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘দেশটি ঘোষণা করেছে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যারা বাধা দেবে, তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেবে।’
গতকাল শুক্রবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত শান্তি সমাবেশে এ প্রশ্ন তোলেন ওবায়দুল কাদের।
একই দিন এক দফা দাবিতে রাজধানীতে কালো পতাকা ও গণমিছিল কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে শান্তি সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ।
বৃষ্টির দিনে জুমার নামাজের পরে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে শান্তি সমাবেশে আসেন। তবে জমায়েত শুধু বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতেই সীমাবদ্ধ ছিল।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, বিএনপি বসে বসে স্বপ্ন দেখে, নিষেধাজ্ঞার আতঙ্ক ছড়ায়। ভিসানীতির আতঙ্ক ছড়ায়। বিএনপি রাস্তা বন্ধ করে ঢাকার প্রবেশপথে (২৯ জুলাই) অবস্থান করেছে। এর জন্য তো ভিসানীতির প্রয়োগ হওয়া দরকার, নিষেধাজ্ঞা আসা দরকার।
ঢাকার প্রবেশমুখে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘সেই অবস্থানে আমানউল্লাহ আমান ফলের রস পান করে বুঁদ হয়ে গেছেন। সেই অবস্থানের পরিণতি গয়েশ্বর.. পুলিশ অফিসার হারুন নাকি কিশোরগঞ্জ থেকে কোরাল মাছ এনেছেন, কোরাল মাছের ঝোল খেতে খেতে গয়েশ্বর দিশেহারা। আন্দোলনের বারোটা বেজে গেছে। যারা অতিরিক্ত কাপড় নিয়ে এসেছিল, তারাও ধানক্ষেত, এখান দিয়ে, ওখান দিয়ে পালিয়ে যার যার বাড়িঘরে চলে গেছে। এই মানুষগুলো আর আসবে ঢাকায়?’
বিএনপির কালো পতাকা মিছিল ও গণমিছিলের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এটা দেখে আমি ভাবলাম, তাদের আবার কে মারা গেল? তাহলে কালো পতাকা কেন? কালো পতাকা মিছিল করে কেন? কেউ মারা গেছে? কালো পতাকা মিছিল মানেই হলো শোকের মিছিল। বিএনপি শোক করছে কেন? আন্দোলনের বারোটা বেজে গেছে। এখন নেতারা নিজেদের অজান্তে শোকের মিছিল করছেন। আমরা আগস্ট মাসে কালো পতাকা ব্যবহার করি। আন্দোলনের পতাকা হচ্ছে লাল।’
আগামী ২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পুরনো বাণিজ্যমেলা মাঠে আওয়ামী লীগের সমাবেশের কথা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যে মিছিলে জনগণ নাই, সেই মিছিল গণমিছিল হয় কেমন করে? মিছিল দেখবেন? মিছিল দেখাব। একপ্রান্ত ঢাকার যাত্রাবাড়ী, আরেক প্রান্ত... এদিকে মিরপুর, ওদিকে সবুজবাগ। আওয়ামী লীগের মিছিল মানে সারা শহরে ঢল নামে। দেখবেন ২ তারিখে (২ সেপ্টেম্বর), দেখবেন ১ তারিখে তারুণ্যের সমাবেশ। ওই দিন লক্ষ তরুণের হাতে আমরা দেখাব বিজয়ের পতাকা, শোকের কালো পতাকা নয়।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা আমাদের বোঝা হয়ে আছে। জাতিসংঘ আগে মাথাপিছু ১২ ডলার দিত, এখন সাহায্য কমে ৮ ডলার দেয়। কীভাবে চলবে? কেউ সাহায্য করে না, শুধু মুখে সুন্দর সুন্দর কথা বলে। রোহিঙ্গাদের জন্য মায়া কান্না কাঁদে। তারা তাদের দেশে অন্য দেশের মাইগ্রেটকারীদের জায়গা দিতে পারে, কিন্তু রোহিঙ্গাদের জায়গা হয় না।’
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে দেশের বড় সমদ্রসৈকত এবং সেখানকার জীবন বিপন্ন, অর্থনীতি ও পর্যটন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে মুখে সুন্দর সুন্দর বাণী উচ্চারণ করে, আমাদের নেত্রীর (শেখ হাসিনা) প্রশংসা করে। কিন্তু বাস্তবে সাহায্য করার জন্য কেউ আসে না।’
দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে বাংলাদেশে এমন কোনো রাজনৈতিক শক্তি নেই তাদের পরাজিত করতে পারে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আবারও ক্ষমতায় আসবে বলে তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
বিএনপি দেশকে আবারও অস্থিতিশীল করতে চায় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘আন্দোলনের নামে দেশে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে। বিএনপির মতো সন্ত্রাসী দলের হাতে এ দেশের হাল আমরা ছেড়ে দিতে পারি না। ছেড়ে দেব না।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীরের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন প্রমুখ।
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই সরকারের পদত্যাগের এক দফার দাবি আদায়ে গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকায় কালো পতাকা গণমিছিল করেছে বিএনপি। এ কর্মসূচিতে দলটির নেতারা ব্রিকসের সদস্য পদ না পাওয়া, দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে নৌকায় ভোট চাওয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের সমালোচনা করেছেন। বিএনপি নেতারা বলেছেন, বহির্বিশ্ব আজ দেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে।
রাজধানীর শ্যামলীতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে কালো পতাকা গণমিছিল-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। অন্যদিকে দক্ষিণের মিছিল-পূর্ব সমাবেশ হয় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে।
ঢাকা উত্তর বিএনপি : মিছিলের আগের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘ঢাকঢোল পিটিয়ে জনগণের টাকা খরচ করে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে ব্রিকসের সদস্য হতে না পেরে তার ক্ষোভ ঝেড়েছেন বিএনপিকে গালিগালাজ করে ও প্রবাসীদের কাছে নৌকায় ভোট চেয়ে।’
এদিকে দিক ঘুরে কোনো লাভ হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তৃতীয় কোনো দেশে গিয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয় না।’
সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘এক দফার আন্দোলন সামনে রেখে সরকার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। নেতাকর্মীদের খালি হাতে তুলে নিয়ে অস্ত্র ধরিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। এরপর আবার নতুন করে জঙ্গি খেলা খেলছে। আওয়ামী লীগের চেয়ে বড় জঙ্গি কোনো দল নেই।’
প্রশাসনকে ঘিরে সরকারের পরিকল্পনা নিয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘আগামীতে ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার প্রশাসন এবং বিচারকদের দিয়ে শাসনব্যবস্থা তৈরি করেছে। বিচারকদের দিয়ে বিরোধীদলীয় নেতাদের সাজা দিচ্ছে, পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। এসব করে কোনো লাভ হবে না।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল প্রমুখ।
ঢাকা দক্ষিণ বিএনপি : বেলা ৩টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে গণমিছিল হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে মিছিল শুরু হয় বিকেল সাড়ে ৪টায়। মিছিল-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়।
অস্থায়ী মঞ্চে দেওয়া সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ভারতকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘বহির্বিশ্ব আজ দেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে। একটি দেশ বলছে এ সরকারকে আবার লাগবে। আমি বলতে চাই, সরকার নয়, দেশের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন। আজ এ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেশের জনগণ মানে না। বিনা ভোটের নির্বাচনের স্বপ্ন আর বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।’
তিনি বলেন, ‘দেশে তিনটি শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে। সেগুলো হলো অশিক্ষা, কুশিক্ষা আর সুশিক্ষা। আজকে জনগণের টাকায় বেতন নিয়ে কুশিক্ষিতরা বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালাচ্ছে। এই কুশিক্ষিতরা বিচারের নামে প্রহসন করছে। তারা জেলখানায় বিরোধী নেতাকর্মীদের পিটিয়ে হত্যা করছে। এই কুশিক্ষিত লোকগুলো দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তারা দেশকে ভালোবাসে না, টাকাকে ভালোবাসে।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে দ্রব্যমূল্য, তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। সরকার কানে শোনে না। আজকে প্রতিটি ডিমের দাম ১৫ টাকা। এদের দুর্নীতির কারণে টাকার মান কমে গেছে। যারা ব্যাংকে টাকা রেখেছেন, তারা লাভের পরিবর্তে ১৪ শতাংশ টাকা কম পাবেন। আজকে বিদ্যুতের কার্ড থেকেও হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হচ্ছে। আজকে বর্তমান সরকার ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিদের চেয়ে বেশি লুট করেছে। কারণ তাদের মধ্যে দেশপ্রেম নেই।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক লিটন মাহমুদ ও আ ন ম সাইফুল ইসলামের পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ।
বিএনপির কালো পতাকা মিছিলের অগ্রভাগে অংশ নেন মহিলা দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এরপর পর্যায়ক্রমে স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল, কৃষক দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, তাঁতী দল ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নেতাকর্মীরা ছিলেন। নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে কালো পতাকা গণমিছিল মতিঝিল, ইত্তেফাক মোড়, টিকাটুলী, দয়াগঞ্জ মোড় ঘুরে নারিন্দায় গিয়ে শেষ হয়।
অন্যান্য দলের কর্মসূচি : বিএনপির পাশাপাশি সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও কালো পতাকা গণমিছিল কর্মসূচি পালন করেছে। গণতন্ত্র মঞ্চ শাহবাগ মোড়ে, ১২ দলীয় জোট বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট পুরানা পল্টন মোড়সংলগ্ন আলরাজী কমপ্লেক্সে সামনে, গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি) যৌথভাবে আরামবাগে, এলডিপি পূর্ব পান্থপথ দলীয় কার্যালয়ের সামনে, লেবার পার্টি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে, একই স্থানে গণ অধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া) ও সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, গণ অধিকার পরিষদ (নুর) পুরানা পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচি পালন করে। এ ছাড়া এনডিএম মালিবাগ মোড়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য সেগুনবাগিচা হাই স্কুলের সামনে, এবি পার্টি বিজয়নগর শ্রমভবনের সামনে, এনডিপি পুরানা পল্টনে আলরাজী কমপ্লেক্সের সামনে, জনতার অধিকার পার্টি বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে এবং সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে ‘কালো পতাকা গণমিছিল’ করে।
গত ১২ জুলাই এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার পর এ পর্যন্ত ঢাকায় পদযাত্রা, মহাসমাবেশ, ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি, ঢাকায় গণমিছিল, মহানগরে গণমিছিলের কর্মসূচি করে। সর্বশেষ গত ১৮ আগস্ট ঢাকাসহ সারা দেশের মহানগরে গণমিছিল করে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশের অব্যাহত উন্নয়নে বিদেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে আগামী সাধারণ নির্বাচনে তার দলের নির্বাচনী প্রতীক ‘নৌকা’র পক্ষে ভোট চেয়েছেন। কোনো লুটেরা যাতে দেশকে ধ্বংস করার জন্য আবার ক্ষমতায় আসতে না পারে, সেজন্য বাংলাদেশের জনগণকে সজাগ থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ব্রিকস সম্মেলন উপলক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা সফররত শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে নৌকায় ভোট চাওয়ার পাশাপাশি আমরা আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই।’ দেশের উন্নয়নের অদম্য গতি যাতে কোনোক্রমেই ব্যাহত না হয়, সেজন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিষয়টি খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘দেশকে লুটেরাদের হাতে ছেড়ে দেবেন না, অন্যথায় দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে এবং নিশ্চিত করুন যে, দেশের উন্নয়নের যাত্রা কোনো বাধা বিপত্তি ছাড়াই অব্যাহত থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘দেশবাসী নৌকায় ভোট দিয়ে দেশের স্বাধীনতা পেয়েছে এবং অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হয়েছে। অথচ বিএনপিকে ভোট দিয়ে লুটপাট, দুর্নীতি ও হত্যা পেয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জনগণের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করছি, তাদের দুঃসময়ে পাশে থাকি এবং তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘উল্টো বিএনপি-জামায়াত জোট মানুষকে পুড়িয়ে মারার রাজনীতি করছে, টাকা কামাচ্ছে। দুর্নীতি, আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান, অর্থ পাচার, লুটপাট ও সারা দেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।’
তিনি বলেন, সরকার ইতিমধ্যে কিছু টাকা ফেরত এনেছে, যা খালেদা জিয়ার দুই ছেলে চুরি করে বিদেশে পাচার করেছিল এবং অবশিষ্ট টাকাও জব্দ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি জানেন না কোথা থেকে তারা অর্থ পাচ্ছেন, যা ব্যবহার করে আবার পুলিশের গাড়ি ও যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়ে তারা ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এবার বাড়াবাড়ি করলে দেশের মানুষ তাদের রেহাই দেবে না। বিএনপি-জামায়াত চক্র ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়ে ৫০০ জনকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছিল। কিন্তু জনগণের প্রতিবাদের মুখে তারা অগ্নিসন্ত্রাস বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতিমের টাকা আত্মসাতের কারণে খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া হয়েছে, তার ছেলে তারেক রহমান ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা এবং দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত এবং তারেকের স্ত্রী দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। তিনি বলেন, দণ্ডপ্রাপ্তরা বিএনপির শীর্ষ নেতা এবং তাদের সামনে রেখে রাজনীতি করছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণ তাদের ভোট দেবে না। জনগণ বিএনপিকে ক্ষমতায় আসার জন্য ভোট দেবে না। জনগণ অগ্নিসন্ত্রাসীদের আর ক্ষমতায় আনবে না।’
সরকারপ্রধান বলেন, একসময় বাংলাদেশকে দরিদ্র ও প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হলেও এখন তার সরকারের অক্লান্ত পরিশ্রমে বিশ্ব বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে ডিজিটাল দেশে রূপান্তরিত করেছে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে।
দেশের সার্বিক আর্থসামাজিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে তার সরকারের পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তারা বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
তিনি জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরির জন্য বিদেশে না যাওয়ার অনুরোধের পাশাপাশি ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানোর জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান, যা চাকরিপ্রার্থী এবং সরকার উভয়কেই ক্ষতিগ্রস্ত করে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে কোনো গ্যারান্টি ছাড়াই ঋণ নিয়ে দেশে ফিরে প্রবাসীরা বাংলাদেশে ব্যবসা করতে পারবেন। এ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চাকরির জন্য বিদেশেও যেতে পারেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. লুৎফর রহমান রূপকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাধারণ সম্পাদক আবদুল আউয়াল তানসেন। বাসস
চট্টগ্রাম মহানগরীর সাম্প্রতিক জলাবদ্ধতার জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) দায়ী করে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। প্রতিবাদে সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ সংবাদ সম্মেলন ডেকে জলাবদ্ধতার জন্য উল্টো সিটি করপোরেশনকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, করপোরেশনের সক্ষমতা ছিল না বলেই সিডিএকে জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগা প্রকল্পটি দেওয়া হয়। এর জবাবে মেয়র আরেক দফা সংবাদ সম্মেলন করে তার প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা আছে বলে দাবি করেন।
দুই সংস্থার বাগ্যুদ্ধে বন্যা-জলাবদ্ধতায় নাকানিচুবানি খাওয়া চট্টগ্রামবাসী দারুণ ক্ষুব্ধ। কারণ এ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে; ক্ষোভ-বিক্ষোভ হয়েছে; লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু নগরীর জলাবদ্ধতার সমাধান কোনো কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি। তবু প্রাসঙ্গিক হিসেবে পাঠকদের কাছে বিষয়টি তুলে ধরা হলো।
কার কাজ কে বাগায়
দুই সংস্থার বিরোধের শুরু জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প নেওয়ার সময়। বিধি অনুযায়ী নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ সিটি করপোরেশনের। তারাই নালা ও খালের মাটি অপসারণের কাজের পাশাপাশি সংস্কারকাজ করছিল। জলাবদ্ধতার ইস্যুতে চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন মেয়র গদি হারিয়েছেন। মেয়র আ জ ম নাছিরের সময় ২০১৬ সালে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগা প্রকল্পের অনুমোদন নিয়ে নেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। এ নিয়ে কম বিরোধ হয়নি। ওই সময় ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার প্রকল্প মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য সিডিএ সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করে। ওই প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফায় বাড়ানোর পর এ বছরের জুনে শেষ হলেও কাজ হয়েছে ৭৬ শতাংশ। ফলে এখনো পানিতে ডুবছে চট্টগ্রাম।
প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘৭৬ শতাংশ কাজ হওয়ার পরও চট্টগ্রাম নগর যেভাবে ডুবছে, শতভাগ শেষ হলেও কি নগরবাসী জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে? প্রকল্প শতভাগ শেষ হলেও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলবে না।’
খালেই খেয়েছে সব
১৯৯৫ সালের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৭০টি খাল ছিল। চট্টগ্রাম ওয়াসা ২০১৬ সালে ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করার সময় ৫৭টি খালের কথা উল্লেখ করে। তার ভিত্তিতেই সিডিএর তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম জলাবদ্ধতার মেগা প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন করিয়ে প্রকল্পটি একনেক থেকে পাস করিয়েছিলেন। প্রকল্পে ৩৬টি খালের সংস্কার ও উন্নয়নের কথা বলা হয়। বাকি ২১টি খাল গেল কোথায়?
চট্টগ্রাম মহানগরীর নদী-খাল রক্ষা নিয়ে আন্দোলনকারী পরিবেশকর্মী আলিউর রহমান বলেন, ‘আরএসশিটের ৭০টি খাল উদ্ধার করতে হবে। খালগুলোর কোথাও মার্কেট, কোথাও ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। খালের জায়গা খালকে ফেরত দিতে হবে।’
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ্ আলী বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হলেও জলাবদ্ধতা পুরোপুরি যাবে না। আমরা ৩৬টি খালে কাজ করছি। বাকি খালগুলোর যদি সংস্কার না হয়, তাহলে প্রকল্পে সুফল আসবে না। নগরীর রাস্তার পাশের নালাগুলো যদি পরিষ্কার না থাকে এবং নালা দিয়ে পানি খালে না আসে, তাহলে রাস্তায় পানি থেকেই যাবে।’
কর্নেল শাহ্ আলীর বক্তব্যে প্রমাণ পাওয়া গেছে ৪, ৫ ও ৬ আগস্ট বন্দরনগরী পানিবন্দি থাকার সময়। তখন রাস্তায় পানি জমে ছিল। চাক্তাই খালে পানির প্রবাহ না থাকলেও রাস্তায় পানি ছিল।
একে পুঁজি করে সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের প্রকল্পের কারণে পানি জমছে না। খালে তো পানি নেই। রাস্তা থেকে নালা হয়ে খালে পানি আসছে না। রাস্তা ও নালা সিটি করপোরেশনের আওতায়। জলাবদ্ধতার জন্য সিডিএ দায়ী নয়।’
লে. কর্নেল শাহ্ আলী বলেন,‘জলাবদ্ধতা নিরসনে দুই সংস্থার ৪০টি খালের মুখে রেগুলেটর বা সøুইসগেট বসানোর কথা। সব খালে রেগুলেটর না বসানো পর্যন্ত জোয়ারের পানি ঢুকবে এবং জলাবদ্ধতা যাবে না।’
অপূর্ণ চার প্রকল্প
সিডিএর ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প, সিটি করপোরেশনে ৩২৬ কোটি ৮৪ লাখ ১১ হাজার টাকার খাল খননের প্রকল্প (যথাসময়ে কাজ শুরু করতে না পারায় প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ১ হাজার ২৫৬ কোটি টাকায় গিয়ে পৌঁছে, এখনো কাজ শেষ হয়নি), সিডিএর চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প, যার আওতায় ১২টি খালের মুখে রেগুলেটর বসানোর কথা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প, যার আওতায় কর্ণফুলীর মোহনা থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত আরও ২৩টি খালের মুখে রেগুলেটর বসানোর কথাÑ এসব প্রকল্পের একটিও পুরোপুরি শেষ হয়নি।
পাহাড় কাটাও দায়ী : মেয়র
জলাবদ্ধতার জন্য পাহাড় কাটাকেও দায়ী করেন চট্টগ্রামের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, নগরীর পাহাড় কাটার অনুমোদন দিচ্ছে সিডিএ। পাহাড় কাটা মাটি বৃষ্টির পানিতে মিশে নালা ও খাল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
মেয়রের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, ‘চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো বালির পাহাড়। পাহাড় না কেটে ভবন নির্মাণ করা গেলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না।’ তিনি বলেন, ‘নগরীর পুকুর-দীঘি ভরাট করে মানুষ বাড়ি নির্মাণ করায় জলাধার কমে গেছে। এ কারণেও জলাবদ্ধতা বাড়ছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিডিএর একজন পরিকল্পনাবিদ জানান, ‘সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের সময়ের আদেশটি এ নগরকে ধ্বংস করেছে। যেখানে ২০০০ সালের জলাধার সংরক্ষণ আইনে পুকুর ও জলাশয় ভরাট নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেখানে ওই আদেশের বদৌলতে আধা একর (৩০ কাঠা) থেকে ১৫ কাঠা পর্যন্ত পুকুর ও জলাশয়গুলোতে পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ছাড়পত্র নিয়ে ভবনের অনুমোদন দেওয়া যাবে। ১৫ কাঠার নিচের জলাশয়গুলোতে সিডিএ নিজেই ভবনের নকশার অনুমোদন দিতে পারবে।’
সিসিসির প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছে সিডিএ। তারা কাজ শেষ করে আমাদের মুক্তি দিলে জলাবদ্ধতা থেকে আমরা মুক্তি পাই কি না, দেখা যাক।’
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের একটি খাল খনন প্রকল্প ছিল। এটি বাস্তবায়ন করতে পারলে জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসী কিছুটা হলেও মুক্তি পেত।’
মাঠ-জলাধারের অভাব
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘একটি নগরে কী পরিমাণ খালি জায়গা রাখতে হবে, এর একটি অনুপাত রয়েছে ৩০ : ৭০। সেই অনুযায়ী খালি জায়গা রাখতে হবে। একই সঙ্গে নগরীর নালা ও খাল ভরাট বন্ধের পাশাপাশি সঠিক ড্রেনেজ পরিকল্পনা করতে হবে। পানি ধরে রাখার জন্য পুকুর ও জলাধার রাখতে হবে। পানি পরিবহনের জন্য খালগুলো সক্রিয় রাখতে হবে। সøুইসগেট থাকলে সেগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা লাগবে।’
কিন্তু সিডিএ কী করেছে? প্রাকৃতিক জলাধারখ্যাত বাকলিয়া এলাকায় কল্পলোক নামে একটি আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলেছে। নগরীর চান্দগাঁও ও অক্সিজেন এলাকার জমি ভরাট করে গড়ে তুলেছে অনন্যা আবাসিক এলাকা। আরেকটি বড় প্রাকৃতিক জলাধার বগারবিলেও ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে সিডিএ।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রাশিদুল হাসান বলেন, ‘চট্টগ্রামে নালা ও খাল ভরাটের হাত থেকে রক্ষা করে স্থানীয়ভাবে পুকুর, দীঘি ও নগরের চারপাশের নিচু জমিকে রক্ষা করতে হবে। এগুলো প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে কাজ করে।’
সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের পুর ও পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মুশতাক আহমদ বলেন, ‘শোষণ, সংরক্ষণ ও পরিবহন এই তিন ধাপে পানির সঠিক ব্যবস্থাপনা হলে জলাবদ্ধতা হওয়ার কথা নয়। রাস্তা যেভাবে কার্পেটিং হয়, তাতে মাটি পানি শোষণ করতে পারছে না। পুকুর, দীঘি, বিল যদি ভরাট করে ফেলি, তাহলে পানি কোথায় জমা হবে? পানি পরিবহনের জন্য যদি নালা, খাল ও নদী সচল না থাকে তাহলে জলাবদ্ধতা হবেই।’
উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সমন্বয় খুব জরুরি। না হলে নগরে জলাবদ্ধতা বাড়বে।’
বুয়েটের ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নগরগুলো সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাবে জলাবদ্ধতা হচ্ছে।’
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘সমন্বয়ের বিকল্প নেই। সমন্বয়ের মাধ্যমেই নগরীর জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধান করতে হবে। নালা-খালে পলিথিন ফেলা বন্ধ করতে হবে, পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে।’
সমন্বয়ের উদ্যোগ তার পক্ষ থেকেই সবার আগে নেওয়া হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ।
সিলেটের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরতে যাচ্ছিলেন নয়জন সহকর্মী। সঙ্গে এক নিকটাত্মীয় ও মাইক্রোবাসের চালক। আনন্দের এই যাত্রাই যে শেষ যাত্রা হবে, তা কে জানত। সিলেট আর ঘুরে দেখা হলো না তাদের, মাঝপথেই তাদের কাউকে কাউকে পরিণত হতে হলো প্যাকেটবন্দি লাশে। আবার কেউবা হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন।
এই হতাহতদের সবাই ঢাকার সাভারের বাইপাল নতুনপাড়া এলাকার এসবি নিটিং লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারী। গত বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নরসিংদীর শিবপুরের ঘাসিরদিয়া এলাকায় দুর্ঘটনায় পড়ে তাদের বহনকারী মাইক্রোবাস। সাভার থেকে সিলেটগামী মাইক্রোবাসটি দ্রুতগতির আরেকটি গাড়িকে পাশ কাটানোর সময় (ওভারটেক) সিলেট থেকে ঢাকাগামী পাথরবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে দুমড়ে-মুচড়ে যায় মাইক্রোবাসটি, নিহত হন এর সাত আরোহী। গুরুতর আহত হন আরও চারজন। তাদের মধ্যে তিনজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে এবং একজনকে বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সড়ক দুর্ঘটনায় আরও নয়জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
নরসিংদীর দুর্ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে, তা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের একটি বিপজ্জনক বাঁক। এর আগে একই স্থানে ২০১১ সালের ১৫ জানুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনায় বেলাব থানার ১০ পুলিশ সদস্য নিহত হয়। সেখানে বৃহস্পতিবার গভীর রাতের দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেনÑ গাজীপুরের কালিয়াকৈরের লতিফপুর গ্রামের আইয়ুব খানের ছেলে আল আমীন (২৭), ঝালকাঠির রাজাপুরের পারগোপালপুর গ্রামের আবদুল গনি হাওলাদারের ছেলে আল আমীন হাওলাদার (২৯), টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের মীর কুমুল্লী গ্রামের মোতাহের হোসেনের ছেলে মীর নাজমুল হক ওরফে সবুজ (৩০), জামালপুরের সরিষাবাড়ীর ধারাবর্ষা গ্রামের দুদু মিয়ার ছেলে রাজু আহাম্মেদ (৩৬), মাদারীপুরের কালকিনির উত্তর কৃষ্ণনগর গ্রামের তোফায়েল হাওলাদারের ছেলে আব্দুল আউয়াল (৩৭), বরিশালের মুলাদি থানার মুলাদি গ্রামের মো. মজিবর সিকদারের ছেলে রায়হান সিকদার ওরফে আরিয়ান (২৪) ও কুষ্টিয়া সদরের খাজানগর গ্রামের নুরু মোল্লার ছেলে বাবুল মোল্লা (৪০)। এদের মধ্যে বাবুল মোল্লা বাদে সবাই এসবি নিটিং লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারী। আহত চারজন হলেন কারখানাটির মার্চেন্টাইজার সাকি, পারভেজ, দোয়েল ও মিঠুন। দুর্ঘটনার পর থেকে মাইক্রোবাস চালকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, রাত ৩টার কাছাকাছি সময়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই মাইক্রোবাসের পাঁচ যাত্রী নিহত হন। খবর পেয়ে ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত ছয়জনকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে পাঠান এবং নিহত পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করেন।
হাসপাতালে নেওয়ার পর জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আরও দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এদের মধ্যে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই একজন ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় অন্যজনের মৃত্যু হয়। আহত চারজনের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে একজনকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঘাসিরদিয়া গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কের এ অংশে একটি বাঁক রয়েছে। সে কারণে দ্রুতগতির গাড়িচালকদের বাঁকের অন্য পাশের গাড়ি দেখতে সমস্যা হয়। সেখানে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা খালেক মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রাতে বাড়িতে শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। মহাসড়কে এসে দেখি ট্রাকটা একপাশে পড়ে আছে আর মাইক্রোবাসটি চিত হয়ে উপুড় হয়ে আছে। মানুষ কান্নাকাটি করছে। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
খবর পেয়ে সকালে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে দেখতে পেয়েছি ট্রাকটি নিজের লেনেই ছিল আর মাইক্রোবাসটি অন্য একটি লেনে পড়ে ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মাইক্রোবাসটি অন্য কোনো যানবাহনকে ওভারটেক করতে গিয়ে ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। আমরা ট্রাকের চালককে আটক করেছি, তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে আমরা তদন্ত করছি।’
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সকালে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ছুটে আসেন এসবি নিটিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) শিহাব উদ্দিন জাকি। তিনি নিহতদের পরিচয় সনাক্ত করে স্বজনদের খবর দেন। ওই সময় শিহাব উদ্দিন জাকি সাংবাদিকদের বলেন, চালক ও আরেকজন ছাড়া মাইক্রোবাসটিতে অবস্থান করা নয়জনই তাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মী। এর মধ্যে আটজনই প্রতিষ্ঠানের মার্চেন্ডাইজার ও একজন ফেব্রিকস সেকশনের স্টোর কিপার। কিছুদিন ধরেই তারা সিলেটে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে আশুলিয়া থেকে চালকসহ ১১ জন ওই মাইক্রোবাসে চড়ে সিলেটের দিকে রওনা হন।
খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন নিহত আল আমিন খানের ছোট ভাই আসিফ খান। তিনি বলেন, ‘আমি শ্রীমঙ্গলে চাকরি করি। ভাইয়ের সিলেট ঘুরে আমার কাছে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ফোনে খবর পাই ভাই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে।’
তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘সকালে কারখানা থেকে ম্যানেজার কল করে আম্মুকে দুর্ঘটনার খবর জানান। এরপর ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদে বাবা-মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।’
ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কবির হোসেন ভূঁইয়া জানান, নিহতদের স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতিতে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
একসঙ্গে ছয় কর্মকর্তাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ সহকর্মীরা : সাভারে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার নতুন জোনের দক্ষিণ পাশের দেয়াল ঘেঁষা বাইপাইল নতুনপাড়া এলাকায় এসবি নিটিং লিমিটেড কারখানা ও এর আশপাশের এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। একসঙ্গে কারখানাটির ছয় কর্মকর্তাকে হারিয়ে শোকে কাতর সহকর্মীরা। কারখানার মূল ফটকে ছয় কর্মকর্তার মৃত্যুতে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে ছবি সংবলিত ব্যানার সাঁটানো হয়েছে।
এসবি নিটিং লিমিটেডের এইচআর ম্যানেজার (প্রশাসন) জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের মৃত্যুতে (নিহত ছয় সহকর্মী) প্রতিষ্ঠানের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। আমরা হয়তো তাদের জায়গায় নতুন লোক নিতে পারব, কিন্তু তাদের মতো কর্মকর্তা আর পাব না।’
দেশের বিভিন্ন জায়গায় সড়কে নিহত আরও ৯ : বাগেরহাটের রামপালে ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে তিন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে খুলনা-মোংলা মহাসড়কে তেঁতুলিয়া ব্রিজের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন বাগেরহাটের রামপালের শংকরনগর গ্রামের এনামুল (২৬), পাশের বেলাই গ্রামের আরিফ (২৭) এবং ফকিরহাট উপজেলার লখপুর গ্রামের সাইদুল (২৮)। তারা তিনজনই মাছের ঘেরের কর্মচারী।
ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে মাদারীপুরের শিবচরে ঢাকাগামী বাসের চাপায় আকাশ আলী (২৪) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আরও চার মোটরসাইকেল আরোহী গুরুতর আহত ও বাসটির ১০-১২ জন যাত্রী আহত হন। গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে কুতুবপুর ইউনিয়নের মুন্সীরবাজারসংলগ্ন সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে আহতদের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
যশোরের মনিরামপুরে আলমসাধু (যন্ত্রচালিত তিন চাকার যান) ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে সুব্রত দাস (২২) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও চারজন। বৃহস্পতিবার মনিরামপুর-ঢাকুরিয়া সড়কের কাচারিবাড়ি বাজারে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে বাসের ধাক্কায় জাহানারা বেগম (৪০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কের বারৈয়ারহাট সৈয়দা মেমোরিয়াল স্কুলসংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত জাহানারা বেগম উপজেলার ফটিকছড়ি পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের তুফান আলী পল্লান বাড়ির জাকির হোসেনের স্ত্রী।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় জাবের হোসেন (৪৬) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে কুড়িল ফ্লাইওভারে নিহত হয়েছেন অজ্ঞাতপরিচয় (৬৫) এক ব্যক্তি। গতকাল বিকেল পৌনে ৪টার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় পথচারীরা জাবের হোসেনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ছাড়া রাজধানীর বনানীতে কাভার্ড ভ্যানের পেছনে রডবোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় ট্রাকটির চালক নিহত হয়েছেন। তার নাম শাহজাহান (৩৫)। গতকাল ভোর সাড়ে ৪টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হলে সকাল ৬টায় চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢামেক এবং সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে প্রতিবেদনটি তৈরি
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের কারণে চলমান রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে নতুন করে উত্তাপ তৈরি হয়েছে। দুই দলের এ পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের মূল টার্গেট ঢাকা দখলে নেওয়া। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসা নিতে বিদেশ পাঠাতে রবিবার বিএনপি ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে। পাল্টা জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও একই পথে হেঁটেছে। বিএনপিকে ‘আগুন সন্ত্রাস, অপরাজনীতি ও নাশকতার রাজনীতি’ ছাড়ার জন্য সোমবার ৩৬ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এরপর পাল্টা ৩৬ ঘণ্টার হুঁশিয়ারি এসেছে বিএনপির কাছ থেকে।
তার আগে গত শনিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে আবেদন করলে অনুমতির বিষয়টি দেখা যাবে। তবে তার কাছে এরকম কোনো কাগজপত্র আসেনি। ওইদিনই খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার বলেছেন, সরকারের মনোভাব ইতিবাচক হলে তারা আবারও আবেদন করবেন।
পরদিন রবিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আলটিমেটাম দেন। ওইদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে বিএনপি বলছে, সরকার চাইলে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে পারে।
দুই দলের রাজনীতি ও ঘোষিত আলটিমেটাম মাঠের রাজনীতিতে কোনো পরিবর্তন আনবে কি না, সে সম্পর্কে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। বিএনপির আলটিমেটামের ফল কী হবে আর আওয়ামী লীগেরও দীর্ঘ ৩৬ দিনের আলটিমেটাম কেন এ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভেতর বেশ কৌতূহল দেখা দিয়েছে।
দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত রাজধানী ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এমন পাল্টাপাল্টি আলটিমেটাম। ঢাকায় বিএনপির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার কৌশলের অংশ হিসেবেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইস্যুতে দলটি আলটিমেটাম দিয়েছে। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতেই তার পাল্টা জবাব দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
দুই দলের ওই নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির রাজনীতির মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা। ঢাকার রাজনীতি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে বের করে আনতে না পারলে রাজনীতিতে জুতসই অবস্থান সৃষ্টি করতে পারবে না বিএনপি।
সারা দেশের নিয়ন্ত্রণে রাখা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেয়ে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রাজনৈতিক জয়-পরাজয় নির্ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিএনপির ওই শীর্ষসারির নেতারা। তাই বিএনপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসাকে ইস্যু করে নেতাকর্মীদের ঢাকায় ডেকে পাঠানোর কৌশল গ্রহণ করেছে। পর্যাপ্ত নেতাকর্মী ঢাকায় ঢুকে গেলে অবস্থা বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তাই ইস্যু খালেদার চিকিৎসা, কিন্তু লক্ষ্য ঢাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ৩৬ দিনের আলটিমেটামের পেছনে রয়েছে নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার আগপর্যন্ত ঢাকায় নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখা। সেই সঙ্গে নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে নির্দেশনা দিয়ে রাখা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে ততই ষড়যন্ত্রের নীল নকশা আঁকছে।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের শান্তি যেন বিঘিœত না হয়, সেজন্যই আমরা বিএনপির কর্মসূচির দিন মাঠে থাকি। বিএনপিকে জনগণ বিশ্বাস করে না। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে সত্যিই নিতে চাইলে আলটিমেটাম কেন দেবে বিএনপি? আইনি জটিলতা নিরসন করে বিদেশ নেওয়ার চেষ্টা করবে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘বিএনপি সন্ত্রাস-সহিংসতানির্ভর রাজনীতি করে, বিশ্বাস করে। তারা পাকিস্তানের প্রেতাত্মা।’ তিনি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করাতে চাইলে কেন বিএনপি আইনি প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে না? তার কিছু হলে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দায় নিতে হবে।’
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দুই দলের ঘোষিত আলটিমেটামকে কথার বাকযুদ্ধ হিসেবে নিয়েছেন। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এগুলো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের অবস্থান ধরে নেওয়া যায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে তাদের কোনো গা নেই। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিভিন্ন বক্তব্যে সেটাই স্পষ্ট করেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে হলে আইনগতভাবে যেতে হবে। নির্বাহী কোনো সিদ্ধান্তে এ সুযোগ দেওয়া হবে না। ফলে আলটিমেটাম মূলত নিষ্ফল হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দাবি আদায় করার জন্য জনগণ থেকে দাবি উঠতে হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণকে রাস্তায় নামাতে পারবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘এখন যেসব বক্তব্য এগুলো মঞ্চের বাকযুদ্ধ।’
বিএনপির আলটিমেটাম নিয়ে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারব না। আমি (গতকাল মঙ্গলবার) সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষ করে এসেছি।’ আলটিমেটামের পেছনে ঢাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় তো আমরা সভা-সমাবেশ করছিই।’
জানতে চাইলে বিএনপির আরেক নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আলটিমেটাম সম্পর্কে ক্লিয়ার কিছু জানি না।’
বিএনপিকে ‘অপরাজনীতি’ ছাড়তে ৩৬ দিন সময় বেঁধে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ সময়ের মধ্যে ‘সঠিক পথে’ না এলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির ‘অপরাজনীতির কালো হাত’ গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে আলটিমেটাম দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এটি বিএনপির জন্য শেষ বার্তা।’ গত সোমবার রাজধানীর উত্তরায় এবং যাত্রাবাড়ীতে পৃথক সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। উত্তরার সমাবেশে ওবায়দুল কাদের এ আলটিমেটাম দেন।
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপি দুই সপ্তাহের কর্মসূচি নিয়ে এখন রাজপথে আছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগও ২১ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ঢাকায় গত সোমবার দুটি সমাবেশ হয়।
এর আগে থেকেই ঢাকায় বিএনপির কর্মসূচির দিন শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীনরা বিএনপির সভা-সমাবেশের বিষয়ে নমনীয়তা প্রদর্শন করলেও মাঠের নিয়ন্ত্রণ ছাড়েনি।
ভারতের বিপক্ষেই খেলেছিলেন বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। এবার বিশ্বকাপটাই ভারতে, যে ধর্মশালা দিয়ে শুরু হবে বিশ্বকাপ অভিযান, সেখানেই আছে বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির কৃতিত্ব। হিমালয়ের কোলে, ছবির মতো সুন্দর সেই মাঠে আবারও খেলবে বাংলাদেশ, কিন্তু খেলবেন না তামিম ইকবাল।
অনেক নাটকীয়তার পর অবশেষে বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বরাবরের মতো সংবাদ সম্মেলনে নিরাবেগ কণ্ঠে একের পর এক নাম পড়ে শোনাননি প্রধান নির্বাচক, গভীর রাতে কোনো ইমেইলেও আসেনি খেলোয়াড় তালিকা। বিশ্বকাপগামী ১৫ ক্রিকেটারের প্রত্যেকের হাতে হাতে সুন্দর করে বাক্সবন্দি বিশ্বকাপ জার্সি তুলে দেওয়ার ভিডিও নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে ২০২৩ বিশ্বকাপের জন্য নির্বাচিতদের পরিচিত করেছে বিসিবি। এজন্য বিসিবির সংশ্লিষ্টরা বাহবা পেতেই পারেন, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড যেমনটা হৃদয় জিতে নিয়েছে ক্রিকেটারদের পরিবারের আপনজনদের দিয়ে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করিয়ে।
কারা থাকছেন আর কারা থাকছেন না, তা নিয়ে খুব বড় কোনো চমক ছিল না বিশ্বকাপ দলে। সবাই শুধু একটাই কোটি টাকার প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলেন। তামিম ইকবাল শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ দলে আছেন নাকি নেই। অবসর, প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে প্রত্যাবর্তন, ব্যক্তিগত কাজে দুবাই ভ্রমণ, ইংল্যান্ডে ইনজেকশন, দেশে অনুশীলন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এক ইনিংসে ব্যাট করে ৪৪ রান এবং পরে নিজেকে আবারও পুরোপুরি ফিট নয় বলে পরের ম্যাচে বিশ্রাম। স্বভাবতই এই তামিম ইকবালকে বিশ্বকাপে দেখতে চাইবেন না কোনো কোচ এবং অধিনায়ক। সোমবার গভীর রাতে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসায় সাকিবের ছুটে যাওয়া এবং সিডনি থেকে নেমে তড়িঘড়ি করে বোর্ড সভাপতির বাসায় কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের পা রাখাই প্রমাণ করে, বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করতেই তাদের এ তৎপরতা।
তামিমের মতো ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা সহজ নয়। নিঃসন্দেহে দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান, ওয়ানডেতে ১৪টা সেঞ্চুরি। হুট করে অবসর নিলে যাকে ফিরিয়ে আনেন স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী। সাক্ষাৎকারেও তামিম বলেছেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগের কথাও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেশাদারির কাছে হার মেনেছে আবেগ, যুক্তির কাছে হেরে গেছে অতীত। তামিম নামটা আছে বিশ্বকাপ দলে, তবে পদবিটা ইকবাল নয়। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তানজিদ হাসান তামিমকে নিয়েই বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান, যার বয়স আর তামিম ইকবালের ক্যারিয়ারের বয়স প্রায় কাছাকাছি।
২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিবের পারফরম্যান্স ছিল অতিমানবীয়। ৬০৬ রান আর ১১ উইকেট। তবু দল হলো অষ্টম। গোটা আসর চোটজর্জর অধিনায়ককে বইল দল। প্রতিটি সকাল শুরু হতো এক অনিশ্চয়তা নিয়ে, খেলতে পারবেন তো মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা? শুরুর দিকে নতুন বলে কোনো উইকেট ফেলতে পারেনি বাংলাদেশ, প্রতিপক্ষ গড়েছে রানের পাহাড়। সেই অভিজ্ঞতা কী করে ভুলবেন সাকিব। অস্ট্রেলিয়ান জেমি সিডন্স আর অধিনায়ক সাকিব এজন্যই ২০১১ সালের বিশ্বকাপে দলে রাখেননি চোটগ্রস্ত মাশরাফীকে। হাথুরুসিংহে জাতীয়তায় শ্রীলঙ্কান হলেও অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে থাকতে হয়ে গেছেন তাদের মতোই পেশাদার। তাই তো কঠিন সিদ্ধান্তটা নেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন।
কাল বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডের পর সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন জাতীয় নির্বাচকরা। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন এবং দুই নির্বাচক হাবিবুল বাশার ও আবদুর রাজ্জাক। তামিমকে বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে মিনহাজুল শুনিয়েছেন মুখস্থ কথাই, ‘আপনারা তো এবারের বিশ্বকাপের দলটা এরই মধ্যে পেয়ে গেছেন। তামিম ইকবালের তো অনেক দিন ধরেই ইনজুরি নিয়ে চিন্তা আছে। নিউজিল্যান্ড সিরিজের পর... সবকিছু বিবেচনা করেই, সবাই আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া। বিশ্বকাপে অনেক দিনের ব্যাপার। অনেক ম্যাচ আছে।’
তামিমের চোটটা তো নতুন নয়। অনেক দিন ধরেই এ চোট নিয়ে তিনি ভুগছেন, নিজের ইচ্ছামতো ভারতের বিপক্ষে সিরিজ, আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ এসব থেকে নিজেকে সরিয়েও রেখেছিলেন। চিকিৎসাও করিয়ে আনা হয়েছে। সবকিছু জেনেশুনে কেন তাকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে সুযোগ দেওয়া এবং ম্যাচ খেলিয়ে বাদ দেওয়া এ প্রসঙ্গে মিনহাজুলের উত্তর, ‘দেখুন, কিছু কিছু ইনজুরি আছে আপনি ঝুঁকি নিতে পারেন না। টিম ম্যানেজমেন্ট কিন্তু বেকায়দায় পড়বে। আপনি দেখুন, নিউজিল্যান্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলার পর দ্বিতীয় ম্যাচে... প্রথম ম্যাচ খেলেছে, দ্বিতীয় ম্যাচটা খেলেছে... এরপর কিন্তু শেষ ম্যাচে বিশ্রাম দিতে হয়েছে।’
‘তামিম অন্যতম সেরা। কিন্তু চোটের দুশ্চিন্তা থাকলে নিজেকে মেলে ধরা কঠিন। মেডিকেলের সঙ্গে আলোচনা করেছি, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। এটা আগেই বলেছি, এখন দল ঘোষণা করা হয়েছে’বলছিলেন প্রধান নির্বাচক। বিসিবি সভাপতি বা সাকিব ও কোচের সঙ্গে আলাপ হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কী আলাপ হয়েছে সেটা তো এখানে প্রকাশ করব না।’
১০ দলের বিশ্বকাপে দশম দল হিসেবে বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। কেন এত দেরি, ফ্লাইটে ওঠার ২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে বিশ্বকাপের দল দেওয়া হলো কেন এ নিয়ে হাবিবুল বাশারের ব্যাখ্যা, ‘আমাদের সঙ্গে কী হয়েছে সেটা তো আমাদের সঙ্গের ব্যাপার। দল নির্বাচন করতে যখন বসি... খেলোয়াড় হিসেবে তামিমের... আমরা সুস্থ-সবল তামিমকে পেতে... এটা নিয়ে আমাদের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত ভাবতে হয়েছে। তাই দেরি হয়েছে।’
তামিমের বাদ পড়ার ডামাডোলে হারিয়ে গেছে মাহমুদউল্লাহর ফেরাটাও। সেই ইংল্যান্ড সিরিজের পর বিশ্রামের মোড়কে বাদ পড়েছিলেন। তার বদলে অনেক বিকল্প খুঁজেও শেষ পর্যন্ত ঘুরেফিরে আবার তার কাছেই ফিরলেন নির্বাচকরা। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ৪৯ আর ২১ রানের দুটো ইনিংসেই হয়ে গেছে বিশ্বকাপের টিকিট। প্রধান নির্বাচক বললেন, ‘আগেই বলেছি, বিশ্বকাপের আগে যেকোনো খেলোয়াড়কে যেকোনো সিরিজে দেখব। ও পরিকল্পনাতেই ছিল। নিউজিল্যান্ড সিরিজে দেখেছি।’
২০১৫ সালের বিশ্বকাপের আগে, মাত্র দুই ম্যাচ দেখে সৌম্য সরকারকে দলে নিয়েছিলেন হাথুরুসিংহে। তানজিদ তামিম আর তানজিম সাকিব নিজেদের ভাগ্যবান ভাবতে পারেন। যথাক্রমে মাত্র পাঁচ আর দুই ম্যাচ খেলে তারা বিশ্বকাপ যাত্রার সঙ্গী হয়েছেন। এমন নয় যে, এ স্বল্প সময়ে দারুণ কিছু করে দেখিয়েছেন, প্রধান কারণ বিকল্পের অভাব।
শুধু তামিম ইকবালই নয়, দলের লজিস্টিক ম্যানেজারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তার বড় ভাই ও সাবেক খেলোয়াড় নাফিস ইকবালকেও। তামিমের অবসর-কা-ে তিনি বিসিবি সভাপতির মেসেজের জবাব দেননি, যা পাপন নিজে বলেছেন গণমাধ্যমে। হয়তো তারই প্রতিশোধ, সেই সঙ্গে ড্রেসিংরুমের সঙ্গে তামিমের সব সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া।
অবসর ভেঙে ফিরেছিলেন তামিম, দুটি ম্যাচ খেললেন। কিন্তু যেভাবে বাদ পড়লেন, তাতে মনে হতে পারে অবসরের সিদ্ধান্তটাই ছিল সঠিক। বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগামীতেও তামিমের দলে ফেরাটা বোধহয় অনিশ্চিতই হয়ে গেল।
তামিম প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে দলটা কেমন হয়েছে দেখা যাক। পাঁচ পেসার, দুই অফ স্পিনার, দুই বাঁহাতি স্পিনার মিলিয়ে বোলিং আক্রমণটা নেহায়েত খারাপ নয়। লিটন দাসের সঙ্গে তানজিদ তামিম অথবা মেকশিফট ওপেনার মিরাজ। সহঅধিনায়কের পদ থেকে বাদ পড়েছেন লিটন, সেটা করা হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তকে। সাকিব, মুশফিক, তাওহীদ হৃদয়দের নিয়ে মিডল অর্ডারের পর ফিনিশার রোলে মাহমুদউল্লাহ। এ নিয়েই ধর্মশালায় আফগানদের বিপক্ষে লড়াইয়ের শুরু। প্রত্যাশা অনেক বড়, প্রস্তুতি গোলমেলে। ভরসা একটাই, শুরুর আগে পরিস্থিতি এমন গোলমেলে হলেই কেন যেন ভালো করে বাংলাদেশ!
বিশ্বকাপ দল : সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন (সহঅধিনায়ক), তাওহীদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, শরীফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, মেহেদি হাসান, তানজিদ হাসান, তানজিম হাসান ও মাহমুদউল্লাহ।
তামিম ইকবাল দলে না থাকাতে যেন অনেকেরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে! আবার বিশ্বকাপের দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অন্তর্ভুক্তিতেও অনেকের চোখ কপালে! দল ঘোষণার পর যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা এলেন সংবাদ সম্মেলনে, তখন আলোচনায় শুধু ছিলেন এই দুজনেই। তাদের এই বিরহ বেদনায় চাপা পড়ে যায় অনেক প্রশ্ন। লিটন দাসকে বাদ দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত কেন সহ-অধিনায়ক! বাড়তি কোনো ওপেনার ছাড়া কিংবা পাঁচ পেসারকে নিয়ে কেন দল গড়া?
প্রায় মিনিট পনেরোর সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে এসেছে একই প্রশ্ন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও ঘুরেফিরে বন্দী ছিলেন একই কথার বৃত্তে। প্রশ্নোত্তর শেষে বেরিয়ে যান তিন নির্বাচক। যেতে যেতে কথা হয় তাদেরই একজন হাবিবুল বাশারের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল চাপা পড়া সেইসব প্রশ্নের উত্তর।
শুরুতেই জানতে চাওয়া হয় লিটনকে বাদ দিয়ে শান্তকে কেন সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ একটা কারণ। আর লিটনের অনাগ্রহও তাকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর একটি কারণ। লিটন নিজেও চায় না নেতৃত্বের চাপ নিতে। সে একটু ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগ দিতে চায়।’
বিশ্বকাপ দলে বিকল্প ওপেনার না থাকার কারণও জানা গেল এই নির্বাচকের কথায়। তিনি জানালেন, ‘আমরা ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে মিরাজকে ভাবছি।’
বিকল্প ওপেনার হিসেবে বিশেষজ্ঞ কাউকে না নেওয়ায় একজন বাড়তি বোলার দলে রাখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে শেখ মেহেদি হাসান সুযোগ পেয়েছেন সে কারণে। পাশাপাশি জায়গা হয়েছে পাঁচ পেসারেরও। এর পেছনে বাশার ভারতের কন্ডিশনের কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারতে এখন আর্লি সিজন। উইকেট সতেজ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই পাঁচজন পেসার দরকার হবে।’
যেতে যেতে আরও বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক মুখোমুখি হলেন, এই দলটা বিশ্বকাপে কেমন করবে? এই প্রশ্নটা শুনেই ঘুরে দাঁড়ালেন হাবিবুল। উত্তরে মজা করে বললেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হবে এই দল।’ এরপর একটু গাম্ভীর্য ফিরিয়ে এনে যোগ করলেন, ‘আমি এদের অনেক দিন ধরে দেখছি। ওরা কয়টা ম্যাচ জিতবে জানি না। তবে বিশ্বকাপে প্রতিটি দলকে ভোগাবে, এটা জানি।’
স্থায়ীভাবে ঢাকা বসবাসের আমার ষাট বছর পূর্ণ হলো। এই ষাট বছরে প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকা, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ঢাকার উত্থান-পতন, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, আন্দোলন-অভ্যুত্থানসহ অনেক কিছু দেখার সুযোগ পেয়েছি। যখন ঢাকায় প্রথম এসেছিলাম তখন মনে হতো ঢাকা একটি বড় গ্রাম। এখানে গ্রামের মতোই বৃষ্টি হয়, অমাবস্যা পূর্ণিমা হয়, শীত-গ্রীষ্ম হয়। ভারী থেকে লঘু বর্ষণ হয়। ঢাকার চারদিক বর্ষার পানিতে প্লাবিত হয়। সদরঘাট, চকবাজার, সোয়ারীঘাট, ইসলামপুর এসব ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের এলাকা। গুলিস্তানকে ঘিরে বিপণি কেন্দ্রগুলো বিকশিত হতে শুরু করে। মতিঝিল গড়ে উঠছে। ঢাকার উন্নয়নের জন্য ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট সংক্ষেপে (ডিআইটি)’র কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তখনো ধোলাইখাল অতিক্রম করে কোর্টকাচারি, জগন্নাথ কলেজ, সদরঘাটের দিকে যেতে হতো। ঢাকা শহরের আবর্জনা নিষ্কাশনের জন্য আর্মেনিয়ানদের উদ্যোগে ধোলাইখাল চালু হয়েছিল।
ঢাকা শহরের ১৬১০ সালের আগে ও পরের মানচিত্র দেখলে বোঝা যায় যে শহরটা কী রকম খাল-বিল-নালা দিয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। যে কারণে শহরটি কখনোই ডুবে যাওয়ার কোনো ইতিহাস পাওয়া যায় না। সেই সময়ে একমাত্র যাতায়াতের উপায় ছিল নৌকা। এর মধ্যেই ১৬১০ সালে ইসলাম খাঁ রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তর করেন। বহুকষ্টে ঘোড়া, হাতি এবং পদাতিক বাহিনীকে রাজমহল থেকে বাংলায় আসতে হয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনক পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধীনে ঢাকার পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। স্থানিক বিবেচনাকে অগ্রাহ্য করে যখন বিদেশিরা নানা ধরনের শহর উন্নয়নের উদ্যোগ নেয় তার পরিণতি যে কত ভয়াবহ হয় তার প্রমাণ ঢাকা শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। ধোলাইখাল বন্ধ করে সেখানে মাটির নিচে বড় বড় পাইপ বসিয়ে নারিন্দাতে একটি পাম্প মেশিন বসিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়।
বিদেশিদের পরামর্শে এই ব্যবস্থার ফলে ঢাকায় গুরুতরভাবে পানি নিষ্কাশনের সংকট দেখা দেয়। একই পদ্ধতিতে বিভিন্ন জায়গায় পাইপ বসানো হয় এবং পানি নিষ্কাশনের গুরুতর সংকট দেখা দেয়। এরপর ঢাকা রাজধানী হলো, বিপুল পরিমাণ মানুষের আগমন ঘটল এই শহরে। বিভিন্ন জলাভূমি, ফাঁকা জায়গা যে যেখানে পারে বাড়িঘর তৈরি করতে শুরু করল। সরকারও প্রথমে ডিআইটি এবং পরে রাজউকের মাধ্যমে নানা জায়গায় আবাসনের ব্যবস্থা করতে শুরু করল। সেই ব্যবস্থা শুরু করতে গিয়ে ধানম-ি, গুলশান, বনানী, উত্তরা এসব জায়গায়ও জলাভূমিগুলো ভরাট করে শহরের আবাসিক এলাকা বৃদ্ধির কার্যক্রম শুরু করা হয়। এখন বৃষ্টিপাত মানেই সর্বত্রই জলাবদ্ধতা এবং মানুষের অন্তহীন দুর্ভোগ।
আশির দশকের পর থেকে গত চল্লিশ বছরে শহরটি কংক্রিটের জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। সেই ষাটের দশকের গাছপালাগুলো নেই, ফাঁকা জায়গা নেই, বৈচিত্র্যহীন অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে শহরটি কিছু ম্যাচ বাক্সের মতো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা একটা আবর্জনার স্তূপ মনে হয়। শহরটায় এত পরিমাণ গাড়ি, বিশেষ করে প্রাইভেট গাড়ি একেবারেই পরিকল্পনাহীন নগরীতে চেপে বসেছে। মাত্র গত দশ পনের বছরে কিছু ফ্লাইওভার এবং সম্প্রতি মেট্রোরেলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বটে কিন্তু সেগুলোর অধিকাংশ পরিকল্পনাহীন হওয়ায় যানজট কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এর মধ্যে সেবা সংস্থাসমূহ একজন আরেকজনের প্রতি দোষ চাপিয়ে আপাতত নিজেদের গা বাঁচিয়ে চলছে।
আমার এই ষাট বছরের ঢাকা বসবাসের ইতিহাসে গত তিনদিন আগে যখন আমি মগবাজার থেকে ধানম-ির বাসায় এসেছি তখন সময় লেগেছে চার ঘণ্টা! এই চার ঘণ্টার মধ্যে সাড়ে তিন ঘণ্টাই ছিলাম আমি পানির মধ্যে। কিন্তু চলাচলের কোনো উপায় ছিল না। এক জায়গাতেই এক থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকেছি। সামনে পেছনে গাড়ির চাপ, কোনো কোনো গাড়ি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। তার সামনে বা পেছনে যাওয়ারও কোনো উপায় ছিল না। শহরে কোনো ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায়নি। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোনো ধরনের সরকারি উদ্যোগ দেখা যায়নি। খবরে প্রায়ই দেখে থাকি কোনো দেশে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের বাহিনীগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে মানুষের সাহায্যে সরকারের প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে। যা ভেবেছিলাম তাই, এই দুর্যোগের মধ্যে কিছু প্রাণ যাবে, কিছু লোক আহত হবে এবং সত্যিই দেখলাম যে ওই রাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের তিনজনসহ চারজন মারা গেছে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত এক শিশুকে নিয়ে উদ্ধারকারীরা বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসার জন্য গিয়েছে কিন্তু চিকিৎসা পায়নি। এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয় না এই কারণে যে, একবার আমার ছেলে স্কুল থেকে ফেরার সময়ে বেবিট্যাক্সিতে দুর্ঘটনায় পড়ে তার শরীর রক্তাক্ত হয়। সেই সময়ে তার কাছে পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না, চিকিৎসার জন্য কাছের একটি চিকিৎসাকেন্দ্রে গেলে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। রক্তাক্ত অবস্থাতেই সে ঘরে ফিরে আসে।
আমার কাছে প্রশ্নটি অন্য জায়গায়, আমরা নিয়তিতে বিশ্বাস করতে শুরু করেছি। দ্রব্যমূল্য বাড়বে, বেকারত্বের সৃষ্টি হবে, মানুষ চিকিৎসা পাবে না এটাই যেন স্বাভাবিক। আর এর বিনিময়ে কোটি কোটি ডিমের দাম পাঁচ টাকা করে বাড়িয়ে একদিনে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কোটিপতি হয়ে যায়। রাষ্ট্রীয় অমাত্যরা এর সমাধানে বিনিদ্র রজনী পার করবেন না, আমলারা নিজের সন্তানদের পৃথিবীর নিরাপদ কোনো জায়গায় পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত থাকবেন। সাংসদ-ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে ব্যবহার করে আরও কোটি কোটি টাকার মালিক হবে। আমরা কি এমনটি দেখতে পাব কোনোদিন দেশ যারা চালায় তাদের ঘুম নেই, সারা রাত পথে পথে ঘুরছেন কোথায় কী হলো সেসব দেখে পরদিনই মানুষকে জানানো যে এই ব্যবস্থা এইভাবে পরিবর্তন করা সম্ভব। সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ! রাজনীতিবিদরা শুধুই বোঝেন ক্ষমতা। মার্কিন ভিসা নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই, কিন্তু পাঁচজন মানুষ যে অতিবর্ষণের ফলে পানিতে তলিয়ে যাওয়া রাস্তায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অকালে মারা গেল তাতে তাদের কপালে একটুও ভাঁজ পড়ে না।
ক’দিন পরে পরে রাস্তার পাশে বিরাট বিরাট কংক্রিটের পাইপ দেখা যায়। বহুদিন মানুষকে ভুগিয়ে একদিন সেই পাইপগুলো মাটির নিচে চাপা পড়ে। কিন্তু এই পাইপের কাজগুলো কী? তারা কি পানি নিষ্কাশনের কাজ করে? নাকি মাটির নিচে গিয়ে নানা রকম ময়লা-আবর্জনায় বন্ধ হয়ে নিচের দিকের পানিকে ওপরের দিকে ঠেলে দেয়? আমাদের এক নাট্যকর্মীর বা অভিনেতা বন্ধু উবারে করে তার কল্যাণপুরের বাসায় যাচ্ছিলেন। কল্যাণপুর যাওয়ার পর উবারের ড্রাইভার আর যেতে রাজি হলেন না। বুক সমান পানি ভেঙে সেই বন্ধু বাড়ি যাওয়ার পথে ম্যানহোলের মধ্যে পড়ে যান। তার একটি পা ক্ষতবিক্ষত হয় এবং মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে এখনো ট্রমায় ভুগছেন।
এটা সত্য, বাংলাদেশ বানভাসি ও ঝড়-ঝঞ্ঝার দেশ। মানুষ এসবের বিরুদ্ধে লড়াই করে বহু শতাব্দী ধরে বেঁচে আছেন। মানুষের কোনো অভিজ্ঞতা আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র কিছুতেই নেবে না। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গৃহে কিছু অনভিজ্ঞ লোক নকশাঁ বানাবে এবং বিপুল পরিমাণে অর্থ ব্যয়ে একটি প্রকল্প সাজাবে, তার মধ্য থেকে কোটি কোটি টাকা চলে যাবে ক্ষমতাসীনদের পকেটে। আজই পত্রিকায় দেখলাম প্রমাণসহ একজন লিখেছেন ভাঙ্গা থেকে খুলনার রেললাইন আপাতত এখন প্রয়োজন নেই। এতে বিশাল অর্থের অপচয় হবে। কিন্তু দেখা যাবে প্রকল্পটি হলো ঠিকই, কিন্তু এটা কারও কাজে লাগছে না। এমনি অনেক অকেজো প্রকল্প হরহামেশাই হয়। আমাদের সংস্কৃতিতে ষাটের দশক পর্যন্ত দেশপ্রেমের বিষয়টি বড়ই প্রবল ছিল। হয়তো সেটা পরাধীনতার কারণে। সবাই যার যার মতো দেশের জন্য কাজ করতে ছুটত। সত্তরের দশকের পর যে চায়নি তা নয়। কিন্তু সম্পূর্ণ বিষয়টি চলে গেছে শাসকের হাতে। জনগণের মেধাকে কখনোই গ্রহণ করার চেষ্টা করা হয়নি। গত ষাট বছরে এবং আমার এই বয়সে আমাদের কাজে লাগানোর রাষ্ট্রীয় কোনো ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়নি। সব কিছু সরকারি বেতনভুক্ত লোকদের কাছে এবং রাজনীতিবিদদের হাতে। তারা যাই করবেন তাই হবে। তবে সবচেয়ে বেদনার বিষয় এই পরিস্থিতির কোনো উন্নতিরও আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। একমাত্র গণজাগরণ এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লবই সমাজকে আবার কর্মময় করে তুলতে পারে। অন্যথায় খবরের কাগজের প্রথম পৃষ্ঠায় নির্বাচন আর ভিসার খবরই আমরা দেখতে পাব। ওই পাঁচজন হতভাগ্য মানুষ যে রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলার শিকার তার সত্যতা কখনোই ভুলবার নয়। এসব ভেবেই হয়তো আলেকজান্ডার পাঞ্জাব থেকে ফিরে গিয়েছিলেন এবং সেনাপতিকে বলেছিলেন ‘সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ’।
লেখক: অভিনেতা, নাট্যকার ও কলামিস্ট
নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আখেরি নবী ও রাসুল। তিনি মানবজাতির জন্য আল্লাহতায়ালার সর্বশেষ দূত। তার প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্য ছাড়া আল্লাহকে বিশ্বাস ও আনুগত্যের দাবি অর্থহীন। কোরআন মাজিদের বিভিন্ন জায়গায় এ বিষয়টি ঘোষিত হয়েছে। আল্লাহকে পাওয়ার একমাত্র পথ খাতামুন্নাবিয়ীন হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর অনুসরণ। তাই তার জন্য হৃদয়ে গভীর ভালোবাসা পোষণ করা এবং তার জন্য আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে দোয়া করা প্রত্যেক উম্মতের ইমানি কর্তব্য।
কোরআন মাজিদে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা নবী কারিম (সা.)-এর জন্য দরুদ পাঠের তথা আল্লাহর দরবারে তার জন্য দোয়া করার আদেশ করেছেন। এটা একদিকে যেমন আল্লাহর কাছে তার রাসুলের মর্যাদার প্রমাণ অন্যদিকে মুমিন বান্দার রহমত ও বরকত লাভের অন্যতম উপায়। আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানকে এই সহজ ও মূল্যবান আমলটি বেশি বেশি করার তৌফিক দান করুন। নিম্নে দরুদ ও সালামের কিছু ফজিলত উল্লেখ করা হলো-
গোনাহ মাফের আমল : দরুদ রহমত, মাগফিরাত ও দরজা বুলন্দির আমল। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, যে আমার ওপর একবার দরুদ পড়বে, বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা তার ওপর দশটি রহমত নাজিল করবেন। -সহিহ মুসলিম : ১/১৬৬
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে আমার ওপর একবার দরুদ পড়বে আল্লাহ তার ওপর দশটি রহমত নাজিল করবেন, তার দশটি গোনাহ ক্ষমা করা হবে এবং দশটি দরজা বুলন্দ হবে। -সুনানে নাসায়ি : ১/১৪৫
ফেরেশতাদের দোয়া লাভ : দরুদ পাঠকারীর জন্য ফেরেশতারা মাগফিরাতের দোয়া করেন। হজরত আমের ইবনে রবিয়া (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে খুতবার মধ্যে বলতে শুনেছি, আমার ওপর দরুদ পাঠকারী যতক্ষণ দরুদ পড়ে ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। সুতরাং বান্দার ইচ্ছা, সে দরুদ বেশি পড়বে না কম। -মুসনাদে আহমদ : ৩/৪৪৫
কিয়ামতের দিন নবীর নিকটবর্তী থাকার সুযোগ : কিয়ামতের দিন দরুদ পাঠকারী নবীজির সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন ওই ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে, যে আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পড়েছে। - জামে তিরমিজি : ১/১১০
দুনিয়া ও আখেরাতের মকসুদ হাসিল : দুনিয়া ও আখেরাতের সব মকসুদ হাসিল হবে দরুদ পাঠকারীর। হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, একবার আল্লাহর রাসুল (সা.) জিকরুল্লাহর (আল্লাহর জিকিরের) খুব তাকিদ করলেন। আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি আপনার প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করে থাকি। আমি আমার দোয়ার কতভাগ আপনার জন্য নির্ধারণ করব? তিনি বললেন, তোমার যে পরিমাণ ইচ্ছা।
আমি বললাম, চার ভাগের এক ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরও ভালো। আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরও ভালো। আমি বললাম, তাহলে তিন ভাগের দুই ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা হয়। তবে বেশি করলে আরও ভালো। আমি বললাম, তাহলে কি আমার দোয়ার পুরোটাই হবে আপনার প্রতি দরুদ? তিনি বললেন, তবে তো তোমার মকসুদ হাসিল হবে, তোমার গোনাহ মাফ করা হবে। -জামে তিরমিজি : ২/৭২
দরুদ গরিবের সদকা : দরুদের আমলের মাধ্যমে গরিব পাবে সদকার সওয়াব। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে মুসলমানের দান করার সামর্থ্য নেই, সে যেন দোয়ায় বলে- এটা তার জন্য জাকাত (সদকা) হিসেবে গণ্য হবে। -ইবনে হিব্বান : ৩/১৮৫
সালাম নবীর কাছে পৌঁছানো হয় : উম্মতের সালাম নবীজির কাছে পৌঁছানো হয়। রাসুলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহতায়ালার জমিনে বিচরণকারী কিছু ফেরেশতা আছেন, তারা আমার কাছে উম্মতের পক্ষ থেকে প্রেরিত সালাম পৌঁছিয়ে থাকেন। -মুসনাদে আহমদ : ১/৪৪১
দরুদ ছাড়া দোয়া ঝুলন্ত থাকে : দরুদবিহীন দোয়া আসমান-জমিনের মধ্যে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, যে পর্যন্ত তুমি তোমার নবীর (সা.) ওপর দরুদ না পড়বে ততক্ষণ দোয়া আসমানে যাবে না, আসমান-জমিনের মধ্যে থেমে থাকবে।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।