
বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক (ট্রেনিং ও সার্টিফিকেশন) রাশিদা সুলতানার বিরুদ্ধে অধীনস্ত কর্মচারীদের কাছ থেকে নিয়মিত উপহার নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত ৮ আগস্ট সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক ও সহকারী পরিচালক (এটিএম) সুপ্লব কুমার ঘোষ বেবিচক চেয়ারম্যানের কাছে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
রাশিদা সুলতানার বিরুদ্ধে সুপ্লবের অভিযোগে উপহার পেতে আলটিমেটামও দেন তিনি। সময়মতো উপহার দিতে না পারলে অপদস্থ করেন কাউকে কাউকে। চাকরি থেকে বরখাস্ত করার পাশাপাশি বদলি করারও হুমকি দেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এসব কর্মকা- করছেন। টেলিফোনে নানা কথাবার্তার রেকর্ডের পাশাপাশি হুমকি দেওয়ার অডিও রেকর্ড জমা দেওয়া হয়েছে। এই অভিযোগের পর এ নিয়ে বেবিচকে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কঠোর পদক্ষেপ নিতে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছেন।
তবে দীর্ঘদিন ধরে হযরত শাহজালালসহ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন সেকশনে দায়িত্ব পালন করা রাশিদা সুলতানা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এদিকে বিভিন্ন সময়ে নানা বিষয়ে রাশিদা সুলতানার বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছে বেবিচক। গত ১২ জুন সংস্থার সদস্য (নিরাপত্তা) আবু সালেহ মাহমুদ মান্নাফি স্বাক্ষরিত একটি তদন্ত প্রতিবেদন সংস্থাটির চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিদা বেশির ভাগ সময় অফিসে অনুপস্থিত থাকেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। অনেকের বিরুদ্ধে তিনি আপত্তিকর মন্তব্য করেন। এমনকি কাওলায় তিনি বেবিচকের দুটি বাসা দখলে রেখেছেন। তাছাড়া আরও বেশ কয়েকটি অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়াসহ কম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বদলি করার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সদস্য (প্রশাসন) মাহবুব আলম তালুকদার গত মঙ্গলবার রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাশিদা সুলতানার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক। তার অভিযোগ, রাশিদা অনৈতিক আবদার করেছেন তার কাছে। তিনি ব্যবস্থাপকসহ অন্যদের কাছেও উপহার সামগ্রী দাবি করেন। অভিযোগের বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি।’
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘রাশিদা সুলতানার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ উঠেছে। ওইসব অভিযোগ তদন্ত করে তার সত্যতা পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেকোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী কোনো ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাশিদা সুলতানার বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি ট্রেনিং ও সার্টিফিকেশন সেকশনে যোগ দিয়ে কর্মচারীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করেন। অন্যদের দিয়ে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক ও সহকারী পরিচালক (এটিএম) সুপ্লব কুমার ঘোষকে ‘ঘায়েল করার’ চেষ্টা করছেন। তিনিসহ অন্যান্য কর্মচারীর কাছ থেকে আম, লিচুসহ মৌসুমি ফল, উৎকৃষ্টমানের চাল, মসলাসহ মূল্যবান উপঢৌকন দাবি করেন। এসব সামগ্রী পাঠাতে অপারগতা প্রকাশ করলে রাশিদা সুলতানা নানা রকম কূটকৌশলের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত করার হুমকি দিয়ে আসছেন। তিনি (রাশিদা) মনে করেন বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক অনেক টাকা উপার্জন করেন। এবং সেই টাকার তিনিও একজন ‘হকদার’। চাহিদার সামান্যতম কমবেশি হলে তিনি ফোনে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। এবং অন্যত্র বদলি করার হুমকি দেন। মাঝেমধ্যে তিনি এটাও বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যানকে বলে তোমাকে এখানে বদলি করিয়েছি। এবং চেয়ারম্যান সারের মাধ্যমে তোমাকে এখনো এখানে টিকিয়ে রেখেছি। আজ আমি মন্ত্রী মহোদয়ের বাসায় যাব। আমাকে ১০০০ চায়না-থ্রি লিচু পাঠিয়ে দাও।’
সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সুপ্লব কুমার ঘোষ অভিযোগ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিখিত অভিযোগে যা বলা হয়েছে তাই আমার বক্তব্য।’
এর আগে অভ্যন্তরীণ যে তদন্ত হয়েছে তার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘২০২০ সালের ২২ জুন থেকে রাশিদা উপপরিচালক (ট্রেনিং ও সার্টিফিকেশন) পদে কর্মরত আছেন। এখানে যোগদানের পর থেকে তার দাপ্তরিক আচার-আচরণ, কর্মকান্ড ও পেশাদারিত্বের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সময়ানুবর্তিতা, সহকর্মী ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও কর্মচারীদের সঙ্গে আচরণ, দাপ্তরিক শৃঙ্খলা, পেশাগত দায়িত্ব ও দক্ষতা, দাপ্তরিক কর্মসম্পাদনের সক্ষমতা, বিচার ও মাত্রাজ্ঞান, দলগতভাবে কাজ করার ক্ষমতা, শারীরিক ক্ষমতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবস্থান অতিমাত্রায় অসন্তোষজনক। যোগদানের পর থেকে অদ্যাবধি তিনি আচরণগত ঘাটতি, শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করেছেন।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অফিসে অনুপস্থিত থাকলেও তিনি ছুটির আবেদন করেন না। বেশিরভাগ সময় তিনি কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকেন। বারবার তাকে সতর্ক করা হলেও তিনি শোধরাননি। তার কর্মকা-ের উন্নতি না হলে রাশিদাকে শোকজ করা হয়। কিন্তু শোকজের কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। গত ১৮ মাসে তিনি যখন কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকেন তখন তিনি অফিসের কাউকে কাউকে মোবাইলে এসএমএম করে নিজেকে অসুস্থ আছেন বলে জানান। তখন কর্তৃপক্ষ ডাক্তারি সার্টিফিকেট জমা দিতে বললেও তা তিনি করেননি। রাশিদা প্রায়ই অভিযোগ করেন তাকে কেন দায়িত্ব দেওয়া হয় না। তিনি নিজের অবস্থান মূল্যায়ন না করে অন্যকে দোষারোপ করেন। তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করেন। মিলন নামের তার এক নিকটাত্মীয়কে বেবিচকে চাকরি না দেওয়ায় তার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সদস্যকে (নিরাপত্তা) মেসেজ দিয়ে আজেবাজে কথা বলেন। একটি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে মিলনের মোবাইল নম্বর শনাক্ত করা হয়। মিলন রাশিদার নির্দেশে এসব করেছেন বলে স্বীকার করেন। মিলনের বিষয়ে রাশিদাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি তার আত্মীয় বলে অস্বীকার করেন। এই নিয়ে তিনি সদস্য নিরাপত্তার সঙ্গে খারাপ ভাষায় কথা বলেন। এবং তার কেউ কিছু করতে পারবে না বলে জানিয়ে দেন।
এছাড়া এভসেক বিভাগে রাশিদা সুলতানা তার কনিষ্ঠ সহকর্মীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন। তাদের মধ্যে সহকারী পরিচালক (সিনিয়র এভসেক ইন্সপেক্টর) মোহাম্মদ আলমগীর, সিনিয়র কনসালটেন্ট গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.) মোহাম্মদ আলমগীর, সহকারী পরিচালক (অ্যাডমিন অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন) ইফতেকার জাহান হোসেন, সহকারী পরিচালক (ট্রেনিং) শারমিন খানম, সহকারী পরিচালক (সার্টিফিকেশন) নাসিমা আখতার, সিনিয়র কনসালটেন্ট উইং কমান্ডার (অব.) এম সাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন। তারা বিএনপি মতাদর্শের কর্মকর্তা বলে তিনি প্রকাশ্যে অভিযোগ করে আসছেন। এবং সদস্য নিরাপত্তাকে বলেন, ‘আপনি বিএনপির লোকদের নিয়ে চলেন’। তার এই মন্তব্য অত্যন্ত অপেশাদার, বাস্তবতা বিবর্জিত ও অমর্যাদাকর। তাছাড়া গাড়ির চালকদের সঙ্গেও তিনি খারাপ আচরণ করেন। ইতিমধ্যে একজন চালক তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। যে বিভাগে দায়িত্ব পালন করেছেন সেখানেই তিনি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেননি। শাহজালালেও তিনি ভিভিআইপিদের নিরাপত্তা দেওয়া একটি সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এমনকি প্রভাব খাটিয়ে রাশিদা কাওলায় আবাসিক এলাকায় সি-২/১ ও সি-২/৩ বাসা নিজের দখলে রেখেছেন। বারবার নোটিস দিয়ে বাসাগুলো অন্যদের দেওয়া যায়নি।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে রাশিদা সুলতানা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক একজন দুর্নীতিবাজ। সেখানে তিনি দোকানপাটসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। বেবিচকের একটি চক্র তাকে ব্যবহার করে আমার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেছে। কোনো ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত না।’
উপহার বিষয়ক অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপককে ৩শ লিচু পাঠানোর জন্য ১৫শ টাকা দিয়েছিলাম। অথচ এখন তিনি বলছেন আমি উপহার চেয়েছি। আমি কারোর কাছে কোনো উপহার সামগ্রী চাইনি। এসব প্রপাগান্ডা। আমি কারোর কাছ থেকে এককাপ চা পর্যন্ত খাই না। আর উপহার নেব! এসব হাস্যকর।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে রাশিদা সুলতানা বলেন, ‘আমি নিয়মিত অফিস করছি। কাজে কখনো ফাঁকি দিইনি। একটি গ্রুপ আমার পেছনে লেগেছে।’
জাল বা ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে একটি পণ্যও রপ্তানি না করে কাগজে-কলমে রপ্তানি দেখিয়ে গত ছয় মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে ৫৯ কোটি ৪ লাখ ৩১ হাজার ৮৮৫ টাকা দেশে এনে সাদা করা হয়েছে। এ অর্থ নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রবেশ করেছে, যা পরে উত্তোলন করা হয়েছে। এ রপ্তানির বিপরীতে ১২ কোটি ৮২ লাখ ৭৬ হাজার ১৬৩ টাকা প্রণোদনা হিসেবে নিয়ে আত্মসাৎ করেছে। এ ক্ষেত্রে গত ছয় মাসে ২৩৯টি ভুয়া বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা হয়েছে। এভাবে ৭১ কোটি ৮৭ লাখ ৮ হাজার ৪৮ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। অবৈধ এ লেনদেনে কে বা কারা জড়িত তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কী উদ্দেশ্যে এ অর্থ দেশে আনা হয়েছে তাও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর থেকে এনবিআর চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে পাঠানো প্রতিবেদন থেকে এসব জানা গেছে। সম্প্রতি এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
এনবিআরের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ফকরুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমদানি-রপ্তানি-সংক্রান্ত কার্যক্রম কঠোরভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু ভুয়া বা জাল কাগজপত্র দিয়ে রপ্তানি করে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেশে এনে প্রদর্শন করার ঘটনা ধরা পড়েছে। ভুয়া বা জাল কাগজপত্র দিয়ে অর্থ পাচারের ঘটনাও ধরা পড়েছে। একইভাবে প্রণোদনা নিয়ে অর্থ আত্মসাতের ঘটনাও শুল্ক গোয়েন্দারা উদঘাটন করেছে। ভবিষ্যতে আরও গুরুত্ব দিয়ে আমদানি-রপ্তানিতে ভুয়া তথ্য দিয়ে অবৈধ অর্থের লেনদেন বন্ধ করতে কাজ চলছে। আশা করি, এ অপকর্ম কমানো সম্ভব হবে। এ অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনের আগে দেশে অবৈধ অর্থের লেনদেন বাড়ে। এ কাজে বিদেশ থেকেও অর্থ আসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিদেশ থেকে দুভাবে অর্থ আসতে পারে। এক হুন্ডিতে। অন্যভাবে জাল কাগজপত্রে ব্যাংকিং চ্যানেলে। এনবিআর কঠোর নজরদারি করছে জাল কাগজপত্র দিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে কোনোভাবেই যেন অবৈধভাবে বিদেশ থেকে অর্থ আনতে না পারে।
প্রতিবেদনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ‘কাগজে-কলমে যেসব পণ্য রপ্তানির কথা বলা হয়েছে তার একটি চালানও বন্দরে প্রবেশ করানো হয়নি। রপ্তানি দেখাতে ভুয়া বিল অব এন্ট্রি, এলসি, ইনভয়েস, প্যাকেটজাত করার তালিকা সবই জাল করা হয়েছে। কাগজে-কলমে দুই প্রতিষ্ঠানের নাম দেখিয়ে এ অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বাস্তবে অস্তিত্বই নেই। শতভাগ রপ্তানি করা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এরা কাঁচামাল আমদানি শুল্কমুক্ত (বন্ড) সুুবিধাও নিয়েছে। এ অপকর্ম ধরা পড়ার পর সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাবে রপ্তানি মূল্য হিসেবে অর্থ প্রবেশ করেছে। প্রতিষ্ঠানের নামে জমাকৃত অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে। অর্থ উত্তোলনকারীদের সন্ধান করা হচ্ছে। তারা ঘটনার কিছুই জানে না এবং বড় অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তারা এ কাজ করেছে বলে ধারণা করা হয়েছে। এ অপকর্মের মূলহোতাদের চিহ্নিত করতে কাজ চলছে। ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তা ও এনবিআরের অসাধু কর্মকর্তারা এ কাজে জড়িত আছে কি না তাও দেখা হচ্ছে।’
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমদানি-রপ্তানিতে জাল, ভুয়া বা মিথ্যা তথ্য কারও একার পক্ষে দেওয়া সম্ভব না। এ কাজে প্রদানকারী ব্যবসায়ী নামধারী অসাধু ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন। তবে এ কাজে ব্যাংক ও এনবিআরের অসাধু ব্যক্তিরা জড়িত কি না তাও খতিয়ে দেখে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘অনেক অসাধু ব্যক্তি দেশে ও বিদেশে ব্যবসা করলেও বিদেশেই অর্থ গচ্ছিত রাখে। দেশে কোনো প্রয়োজন হুন্ডিতে অর্থ আনলে পরে ব্যয়ের সময় তা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন ওঠে। বিশেষভাবে হুন্ডিতে দেশে আনা অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে ব্যয় করলে তার তথ্য থেকে যায়। এ ক্ষেত্রে ব্যয়ের অর্থ কোনো উৎস থেকে আয় করা হয়েছে, তা নিয়ে সরকারি সংস্থার প্রশ্ন করার সুযোগ থাকে। কিন্তু ধরা না পড়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে জাল, ভুয়া বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে অর্থ দেশে আনলেও তা ব্যাংকিং চ্যানেলে ব্যয় করা হলে তার উৎস নিয়ে কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ থাকে না।’
দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং জানমালের নিরাপত্তায়, নির্বাচনে নিজের বা নিজের দলের প্রভাব বাড়াতে বা নির্বাচন ঘিরে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতে অবৈধভাবে কোনো ব্যক্তি আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে বিদেশ থেকে অর্থ এনে ব্যবহার করছে কি না তা খতিয়ে দেখতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে এরই মধ্যে এনবিআর নজরদারি বাড়িয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণ নির্বাচনের আগে দেশে অর্থের অবৈধ লেনদেন বাড়ে। সরকারি সংস্থাগুলো নজরদারি বাড়ালে অবৈধ লেনদেন কমানো সম্ভব। বিশেষভাবে আমদানি-রপ্তানিতে জাল তথ্য দিয়ে লেনদেন কমানো যাবে।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর থানার ওসি মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলামকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে জেলার পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। আর বিদায়ের সময় ফরিদুল ইসলাম সঙ্গে নিয়ে গেছেন থানায় লাগানো শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি), টেলিভিশন, আইপিএস ও সোফা। এভাবে থানার জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ায় বিষয়টি সম্বন্ধে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে থানার সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য যারা এসব জিনিস উপহার দিয়েছিলেন তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
জানা গেছে, গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে থানার পুলিশ সদস্য উদয় ও আরিফ নামে একজন লোক এবং ভ্যানচালকের সহায়তায় থানার জিনিসপত্রগুলো খোলা হয়। এরপর সেগুলো ভ্যানে করে ওসির কোয়ার্টারে নেওয়া হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার জেলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার স্বাক্ষরিত স্মারক নম্বর ৫১৭০/১(৪৯) (আরওআই) আদেশে ভূঞাপুর থানার ওসি ফরিদুল ইসলামকে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়। এই বদলির আদেশের পরদিন রাতে থানার এসি, টেলিভিশন, সোফা ও আইপিএস খুলে ওসির কোয়ার্টারে নেওয়া হয়।
থানায় উপহার দেওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই জিনিসপত্র ব্যক্তিগতভাবে কাউকে দেওয়া হয়নি। থানায় যে ওসি আসবেন তিনি ব্যবহার করবেন, এজন্যই জিনিসপত্রগুলো কেনার জন্য টাকা দেওয়া হয়েছিল। তিনি এত নীচু মনমানসিকতার ওসি সেটা জানা ছিল না।’ থানার পুলিশ সদস্য উদয় বলেন, ‘ওসি স্যারের নির্দেশে জিনিসপত্রগুলো খুলে নেওয়া হয়েছে। এরপর সেগুলো ভ্যানে করে ওসির কোয়ার্টারে রাখা হয়েছে।’
নিকরাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জুরান মণ্ডল বলেন, ‘থানার সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য এবং থানায় যেই ওসি আসুক তারা যেন সুবিধাটা ভোগ করতে পারেন সেজন্য বালুমহালের টাকা দিয়ে জিনিসপত্রগুলো কিনে দেওয়া হয়েছিল। এটা থানার স্বার্থে দেওয়া হয়েছে, কারও ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নয়। শুনেছি তিনি (বদলি হওয়া ওসি ফরিদুল) সেগুলো খুলে নিয়ে যাচ্ছেন, এটা ঠিক না। তাকে ব্যক্তিগতভাবে দেওয়া হয়নি, ওসির চেয়ারটাকে সম্মান করে দেওয়া হয়েছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভূঞাপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘ওসির টাকায় কেনা জিনিসপত্র হলে তিনি নিতেই পারেন। এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’
তবে বদলি হওয়া ওসি ফরিদুল ইসলামের দাবি খুলে নেওয়া জিনিসপত্র তার নিজের টাকায় কেনা। তিনি বলেন, ‘যেগুলো থানা থেকে খোলা হয়েছে সেগুলো ব্যক্তিগত টাকা দিয়ে কেনা। সুতরাং সেগুলো আমি নিতেই পারি।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কালিহাতী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরফুদ্দীন শরিফ বলেন, ‘জিনিসপত্রগুলো ওসির ব্যক্তিগত টাকায় কেনা হলে নিতে পারবে। তবে থানায় দেওয়া অন্যের জিনিসপত্র তিনি নিতে পারবেন না। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
আর জেলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, ‘কারও অনুদানের টাকায় কিনে থাকলে সেগুলো ওসি নিতে পারেন না। যদি ব্যক্তিগত টাকায় কেনা হয় তাহলে নিতে পারবেন। যদিও এ বিষয়ে কিছুই জানি না।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মূল্যছাড়ের প্রচারণা চালিয়ে একটি অস্তিত্বহীন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অ্যামাসবিডি নামে অস্তিত্বহীন এই প্রতিষ্ঠানটির কোনো অফিস কিংবা লাইসেন্সও ছিল না। তারা ঘণ্টা চুক্তিতে ডেস্ক ভাড়া নিয়ে ভার্চুয়াল মাধ্যমে এই প্রতারণার ফাঁদে ফেলে ঠকিয়েছে প্রায় ৩০০ গ্রাহককে।
জানা গেছে, ২০২০ সালে অ্যামাসবিডি ডটকম নামে একটি ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ খুলে নিজেদের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রচার করে। তারা মোটরসাইকেল, ফ্রিজ ও মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন পণ্য স্বল্পমূল্যে বিক্রির প্রলোভনে ফেলে গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নেয়। ব্যাংক হিসাব এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা গ্রহণ করেও গ্রাহকদের পণ্য বুঝিয়ে দেয়নি। অবশ্য, বিশ্বাস অর্জনের জন্য প্রথমদিকে কিছু গ্রাহকের পণ্য যথাসময়ে দিয়েছিল।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে নামসর্বস্ব এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বুধবার রাজধানীর ধানম-ি থানায় অর্থ পাচার আইনে এই মামলাটি করা হয়।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন ধানমন্ডি থানার ওসি মো. পারভেজ ইসলাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, অবৈধ এই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট বাদী হয়ে মামলা করেছে। অর্থ পাচার আইনে করা এই মামলাটির তদন্ত তারাই করছেন।
তবে এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার সিআইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
সিআইডির করা ওই মামলায় যে চারজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, তার হলেন কায়সার হাবিব, মো. আশেকুল ইসলাম, মো. আবদুর রউফ বারেক ও মো. তানজিম হাসান মিথুন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, অ্যামাসবিডি একটি অস্তিত্বহীন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির ট্রেড লাইসেন্স বা নিবন্ধন-সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তারা ধানম-ির মাইডাস সেন্টারে ঘণ্টা চুক্তিতে ডেস্ক ভাড়া নিয়ে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। বিভিন্ন পণ্যে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড়ের ঘোষণায় প্রায় ৩০০ গ্রাহকের টাকা নিয়ে পণ্য দেয়নি। পণ্য দেওয়ার নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া ৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা নিয়ে নিজেদের নামে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে ও ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেছে।
সিআইডির অনুসন্ধানে জানা যায়, কায়সার হাবিব, আশেকুল ইসলাম তানজিল এবং আবদুর রউফ বারেক পূর্বপরিচিত। তারা তিনজন মিলে অ্যামাসবিডি নামের অস্তিত্বহীন এই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে কায়সার হাবিব ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান, আশেকুল ইসলাম তানজিল সিইও এবং মো. আবদুর রউফ বারেক প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ছিলেন। এ ছাড়া অন্য অভিযুক্ত তানজিম হাসানকে এই প্রতিষ্ঠানটির হেড অব সেলস এক্সিকিউটিভ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
জানা গেছে, অভিযুক্ত কায়সার হাবিব আগে আইটি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ ছাড়া তিনি ওয়ার্ল্ড ট্রাক, ওয়ার্ল্ড টেকনোলজি লিমিটেডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। আশেকুল ইসলাম তানজিল ওয়ার্ল্ড ট্রেক কনসালট্যান্সি লিমিটেড নামের কোম্পানির স্বত্বাধিকারী।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, আসামির গ্রহণকৃত অর্ডারের বিপরীতে পণ্যের মূল্য বাবদ অগ্রিম অর্থ গ্রহণ করতেন তাদের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে বা নগদে। গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য গ্রহণকৃত অর্ডারের বিপরীতে তাদের চেয়ারম্যান ও সিইও স্বাক্ষরিত ইনভয়েস প্রদান করতেন। কায়সার হাবিবের মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে তার নামে থাকা হিসাবে এবং তার প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ট্রেকের নামে একই ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাবে অ্যামাসবিডির গ্রাহকের টাকা গ্রহণ করেছে।
এ ছাড়া অভিযুক্ত আশেকুল ইসলাম তানজিলের নামে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ট্রেক কনসালট্যান্সির মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাবে অ্যামাসবিডির গ্রাহকদের টাকা গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে অ্যামাসবিডির পরিচালক আবদুর রউফের নামে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের গুলশান শাখা ও দি সিটি ব্যাংকের বনানী শাখার হিসাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্ডারকৃত পণ্যের টাকা গ্রহণ করেছেন।
সিআইডি জানিয়েছে, ওয়ার্ল্ড ট্রেক নামের প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে লাইসেন্স নিয়েছে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে, যার লাইসেন্স নম্বর ১১৫৫৩২। সেখানে প্রতিষ্ঠানটি আইটি ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে অনুসন্ধানে উল্লেখ করা ঠিকানায় গিয়ে এ ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। একইভাবে ওয়ার্ল্ড ট্রেক কনসালট্যান্সি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে লাইসেন্স নিয়েছে, যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ০৪৮৩৪৬। তবে তাদের দেওয়া ঠিকানা রাজধানীর কলাবাগানের লেক সাকাস এলাকায় গিয়ে এ ধরনের কোনো অফিসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
পুলিশের এই তদন্ত সংস্থাটির প্রাথমিক তদন্তে আরও উঠে এসেছে অস্তিত্বহীন এই প্রতিষ্ঠানটির হেড অব সেলস এক্সিকিউটিভ তানজিম হাসান মিথুনের অনিয়মের প্রমাণ।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, তানজিম বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রির কথা বলে টাকা নিয়েছেন। অ্যামাসবিডির গ্রাহকদের কাছ থেকে এভাবে হাতিয়ে নেওয়া টাকার ওপর ৩ শতাংশ কমিশন নিয়েছেন তিনি।
তৃতীয় দফায় টানা বৃষ্টি আর ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফের বেড়েছে তিস্তা নদীর পানি; বিশেষ করে ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের সবগুলো ফটক খুলে দেওয়ায় উজান থেকে বাংলাদেশ অভিমুখে ধেয়ে আসছে পানি। এর মধ্যেই আবার দেশে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। অবিরাম বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের মতো নেমে আসা উজানের পানিতে বিপদসীমা ছুঁয়েছে দেশের উত্তরাঞ্চলের অনেক নদ-নদী; বিশেষ করে তিস্তা, ঘাঘট, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, করতোয়াসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে বেড়েছে পানি। এমন পরিস্থিতিতে নদীর অববাহিকা, চর, দ্বীপচরের মানুষদের সতর্ক থাকাসহ প্রয়োজনে আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যাওয়ার কথা বলেছে স্থানীয় প্রশাসন।
এদিকে পানি বাড়ায় নদী তীরবর্তী অনেক এলাকায় সদ্য রোপণ করা আমনের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। উপচে গেছে পুকুর। এ ছাড়া পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। যাদের অনেকের খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।
গতকাল শনিবার সকাল ৬টায় তিস্তার ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১০ ও রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে করে প্লাবিত হয় নিম্নাঞ্চল।
বৃষ্টি ও উজানের ঢলে চতুর্থ দফায় বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীগুলোর পানি। অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমারসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও তা বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদ-নদীর অববাহিকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় বন্যার আশঙ্কায় দিন পার করছেন নদীপারের মানুষজন। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী গতকাল সকাল ৯টায় তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চল ও নিচু চরাঞ্চলগুলোতে বন্যার পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের নতুন জেগে ওঠা মুসার চর ও বালাডোবার চরের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। তবে এখনো অন্যান্য চরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।
নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াসাম, চর খিতাবখা, বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুড়া, রামহরি ও কালিরহাট এলাকায় দেখা দিয়েছে তিস্তা নদীর ভাঙন। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের কয়েকটি পয়েন্টে এবং ধরলার অববাহিকার মোগলবাসা ইউনিয়নের চরসিতাইঝাড় এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ফ্লাড অথরিটি সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার সকাল ১০টায় গজলডোবা ব্যারাজ পয়েন্ট থেকে পানি একসঙ্গে ভাটির দিকে ছেড়েছে। ফলে ওই দিন সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২ লাখ ১ হাজার ৬৪৭ কিউসেক এবং সর্বনিম্ন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮৪৮ কিউসেক পানি বাংলাদেশের দিকে ছেড়েছে ভারত।
নদ-নদীর পানি বাড়ায় রংপুরের কাউনিয়া ও গঙ্গাচড়া উপজেলার ২০টি চরাঞ্চলের গ্রামে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। ফলে এসব এলাকার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একই সঙ্গে দুই মাসে তৃতীয় দফা বন্যার কারণে আমন ধানসহ শস্যক্ষেতগুলো তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় আছেন ওই সব এলাকার কৃষকরা।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, তিস্তার পানি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম হয়ে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুর পর্যন্ত নদী তীরবর্তী এলাকার চর ও নিচু এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করেছে। প্রবল স্রোতের কারণে নদী তীরবর্তী আশপাশের গ্রামগুলোতে পানি প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।
গঙ্গাচড়ার মর্নেয়া, লক্ষ্মীটারী, আলমবিদিতরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চরাঞ্চলসহ নদী তীরবর্তী মানুষের বাড়িসহ রাস্তা-ঘাটে পানি ঢুকে গেছে। পানিবন্দি পরিবারগুলো বয়স্ক ব্যক্তি, শিশু ও গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। রান্নার সমস্যা প্রকোট আকার ধারণ করায় শুকনা খাবার খাচ্ছেন তারা। তবে বিশুদ্ধ পানির সমস্যা থাকায় শুকনা খাবার খেতেও সমস্যা হচ্ছে। তলিয়ে গেছে ধানের চারা, বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল ও সবজির ক্ষেত। ভেসে গেছে পুকুর, জলাশয় ও মৎস্য খামারের মাছ। ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে ওই সব এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, বাড়ি-ঘর, আবাদি জমি, গাছ-পালা, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ও বেড়িবাঁধ।
উজানের পাহাড়ি ঢল ও দুদিনের ভারী বর্ষণে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় যমুনা নদীসহ সবগুলো নদীর পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। খুকনি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম ও আরকান্দির অন্তত ১৫ বাড়িঘর বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এ ছাড়া উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের অধিকাংশ নিচু গ্রাম এখন বন্যার পানিতে ভাসছে। অনেক রাস্তাঘট বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদীপারের মানুষ।
লালমনিরহাটের তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে গতকাল সকাল ৬টায় পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর। (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। সকাল ৯টায় বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর। ফলে প্লাবিত হয় ভাটিতে থাকা এলাকাগুলো। পানির চাপে ডালিয়া ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে কর্র্তৃপক্ষ। ফলে জেলার পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। নিম্নাঞ্চলে ইতিমধ্যে পানি ঢুকে গেছে। চরাঞ্চলেও পানিতে ডুবেছে বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট। তিস্তার পানি পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, ফকিরপাড়া ইউপির রমণীগঞ্জ, সিঙ্গামারী ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না ইউপির পাটিকাপাড়া, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, কালমাটি, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, বড়বাড়ি, রাজপুর ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
নীলফামারীতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গতকাল বিকেল ৩টায় ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। সকালে ওই পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও দুপুর ১২টায় ১০ সেন্টিমিটার নিচে নামে। জেলার ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী, গয়াবাড়ি, খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের ১৫টি চর গ্রামের তিন হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। গতকাল পানি কমায় স্বস্তি ফেরে এসব পরিবারের মাঝে।
সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে প্রতিবেদনটি তৈরি
আজ ১২ ভাদ্র জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৬ সালের এ দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় হাসপাতালে (তৎকালীন পিজি হাসপাতাল) তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে সমধিক পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিণী সৃষ্টি করে বাংলা সংগীতজগৎকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।
কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদসংলগ্ন কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, দোয়া মাহফিল এবং আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে।
কাজী নজরুল ইসলাম ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন। প্রেম, দ্রোহ, সাম্যবাদ ও জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। নজরুলের কবিতা, গান ও সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তার লেখনী জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে।
নজরুল ছিলেন চির প্রেমের কবি। তিনি যৌবনের দূত। তিনি প্রেম নিয়েছিলেন, প্রেম চেয়েছিলেন। মূলত তিনি বিদ্রোহী, কিন্তু তার প্রেমিক রূপটিও প্রবাদপ্রতিম। তাই মানুষটি অনায়াসেই বলতে পারেন, ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। তিনি রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন এবং ধানমণ্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি বরাদ্দ দেন। জাতীয় কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। এখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে চলতি বছর মে মাসে। গত শুক্রবার ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে দেশটি। নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে এ নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করার ঘোষণার তিন দিন পার হলেও কারও নাম প্রকাশ হয়নি। তবে বিভিন্ন মহলে নানা দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের নামে আলোচনা এখন সর্বত্র।
কারা যুক্তরাষ্ট্রের এ ভিসা নিষেধাজ্ঞায় পড়েছেন বা পড়তে যাচ্ছেন তা নিয়ে রাজনৈতিক, কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ ও ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্বকারী একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, যেহেতু নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে এর লক্ষ্য নির্বাচনী ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারাই। তারাই ভিসানীতির আওতায় পড়বেন, এটাই স্পষ্ট।
তারা আরও বলেন, ভিসানীতি প্রয়োগের কথা জানালেও যুক্তরাষ্ট্র কারও নাম প্রকাশ করেনি। তবুও বলা যেতে পারে, কাদের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ করবে পশ্চিমা এ প্রভাবশালী দেশটি।
এ ব্যক্তিরা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়ই একটা তালিকার বেশিরভাগ নামই চূড়ান্ত করে ফেলেছে। অল্পসংখ্যক বাকি থাকতে পারে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে সেগুলোরও চূড়ান্ত করা হবে। যেখানে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জড়িত প্রতিষ্ঠান, দপ্তর, অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা থাকতে পারেন।
বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে ধারণা পাওয়া গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির উদ্দেশ্যই যেহেতু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে, ফলে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা যারা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকবেন তারাই ভিসানীতির আওতায় আসবেন। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারাও থাকতে পারেন। থাকতে পারেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রাজনৈতিক নেতা, তারা যেকোনো দলের হতে পারেন। অল্পসংখ্যক ব্যবসায়ীও থাকতে পারেন।
জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন,‘ভিসানীতির বিষয়টি আমেরিকা প্রশাসন পরিষ্কার করে ঘোষণা না করলেও বুঝিয়ে দিয়েছে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারেন, এমন যে কেউ এ ভিসানীতির আওতায় পড়তে পারেন। যেমন রাজনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাহী প্রশাসন, জুডিশিয়ারি অর্থাৎ যারাই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট থাকবেন, অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যাহত করবেন তারাই এর আওতায় আসবেন।’ তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের এর আওতায় পড়ার সুযোগ নেই। তবে হ্যাঁ, নির্বাচন ব্যাহত করার ছোট্ট সুযোগ তাদের হাতেও থাকে, তারা যদি জড়িত হন, ভিসানীতির আওতায় পড়বেন।’
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ভিসানীতির চেয়েও আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে নেগোশিয়েশন জরুরি। কে ভিসানীতির আওতায় পড়ল, কে পড়ল না এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঐক্য।’ তিনি বলেন, ‘ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়ায় কারা রয়েছেন সেটা আমেরিকা প্রশাসন ঘোষণা না করলেও বোঝা খুব জটিল কিছু নয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘আমেরিকা যেহেতু ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে তাদের ভিসানীতি, ফলে পরিষ্কার হয়ে গেছে কারা পড়তে পারেন এর আওতায়। যারা নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, নিশ্চয়ই তারাই এর আওতায়।’
বিভিন্ন পর্যায়ের ও পেশার নিয়োজিত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজনৈতিক নেতারা ভিসানীতিকে তেমন আমলে না নিলেও বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা ও সিভিল প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ভেতরে আমেরিকার ভিসানীতি ভীষণ ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে এর নানা কারণ জানা গেছে। এর মধ্যে বিদেশে টাকা পাচার, ব্যবসাবাণিজ্য, পরিবারের সদস্যদের বিদেশে থাকা এসব কারণে বেশি ভীতিতে ফেলেছে তাদের। আবার একটা অংশ বিদেশে কিছু না থাকলেও ভিসানীতির আওতায় পড়লে ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়ার ভয় পাচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করায় যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে পারেন এমন দুুশ্চিন্তা যেমন কারও কারও মনে ভর করেছে, তেমনি ভিসানীতিতে পড়ার সুযোগ নেই তারাও দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। কারণ এই শ্রেণির লোকজন মনে করছেন, কখনো যদি যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান, তখন যদি ভিসা না হয়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন এমন নামের তালিকাও চারদিকে ঘুরপাক খাচ্ছে। আরও অগ্রসর হয়ে কোনো কোনো মহল লম্বা তালিকা হাতে নিয়ে ঘুরছে। তবে এসব নামের তালিকার উৎস বা সূত্র নিশ্চিত নয় বলে কেউ কেউ বিষয়টি গুজব মনে করছেন। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের বাইরে প্রায় সবাই ভিসানীতি আতঙ্কে ভুগছেন।
একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ভিসানীতিকে জয়-পরাজয় হিসেবে প্রচার করে এলেও ভেতরে ভীতি সবারই রয়েছে। কারণ পশ্চিমা দেশে তাদের অনেকেই ইতিমধ্যে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলেছেন। ফলে রাজনীতির বাইরেও ব্যক্তিজীবনের প্রয়োজনে ভিসানীতি তাদের ওপর যদি প্রভাব ফেলে, সে আশঙ্কা তো আছেই।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সব বিষয়ে আমি কথা বলি না। আমি একটাই কথা বলব, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আওয়ামী লীগ সে কাজই করছে।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘ভিসানীতি আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এর সঙ্গে গণতন্ত্র ও নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।’ তিনি বলেন, গণতন্ত্রের বিষয়ে বলতে হলে আরও অনেক বিষয় রয়েছে। এ ভিসানীতি কারা লক্ষ্যবস্তু জানতে চাইলে ইনু বলেন, ‘এটি নিয়ে মাথাব্যথা নেই আমাদের। তারাই বলতে পারবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কারও পরামর্শে সরকার কোনো প্রতিষ্ঠান অদলবদল করবে না, পরিবর্তনও আনবে না।’
ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের উদ্যোগে আজ রাজধানীর উত্তরা ও যাত্রাবাড়ীতে দুটি শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটায় সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে যাত্রাবাড়ী মোড়সংলগ্ন শহীদ ফারুক সড়কে শান্তি সমাবেশ শুরু হবে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুরুল আমিন রুহুল এমপির সভাপতিত্বে সমাবেশে কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
বিকেল ৩টায় উত্তরা আজমপুর আমির কমপ্লেক্সের সামনে শুরু হবে আরেকটি শান্তি সমাবেশ। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের এ সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন।
এতে সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। সঞ্চালনা করবেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি।
থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় সোংখলা প্রদেশে গতকাল রবিবার বৌদ্ধ ভিক্ষু ছদ্মবেশে সাত বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ। তাঁরা অভিবাসন সংক্রান্ত অভিযান এড়াতে বৌদ্ধভিক্ষুর ছদ্মবেশ ধরেছিলেন।
থাইল্যান্ডের গণমাধ্যম দ্য থাইগার সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য জানায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বেনামি তথ্যের ভিত্তিতে থাইল্যান্ডের সোংখলা ইমিগ্রেশন ও হাট ইয়াই ট্যুরিস্ট পুলিশ অভিবাসন সক্রান্ত একটি যৌথ অভিযান চালায়, যেখানে এই সাত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
থাই কর্তৃপক্ষ জানায়, গ্রেপ্তারকৃত সাত ব্যক্তির সবাই পুরুষ। তাঁরা অবৈধ উপায়ে মালয়েশিয়া যেতে চেয়েছিলেন। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে মিশে যেতে ও গ্রেপ্তার এড়াতে তারা মাথা কামানোসহ বৌদ্ধভিক্ষুর পোশাক পরিধান করেছিলেন।
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে রূপদা নামের ৪৬ বছর বয়সী একজন এই দলের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
দ্য পাটায়া নিউজের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, অনুসন্ধানে কর্তৃপক্ষ জানতে পেরেছে, দলটি বাংলাদেশ থেকে ভ্রমণ শুরু করে মিয়ানমারের তাক প্রদেশের মায়ে সোট জেলার একটি অচিহ্নিত পথ দিয়ে থাইল্যান্ডে প্রবেশ করেছিল। তাদের চূড়ান্ত গন্তব্য ছিল মালয়েশিয়া।
খবরে বলা হয়, সাত ব্যক্তির সঙ্গে সাধারণ পোশাক ছিল। তা ছাড়া তাঁরা যে বৌদ্ধভিক্ষু, তার সপক্ষে কোনো প্রমাণ তাঁদের কাছে ছিল না। এই বিষয় উদ্ঘাটনের পর তাঁদের প্রকৃত পরিচয় নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়।
পরে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে তাঁরা তাঁদের দাবি অনুযায়ী, বৌদ্ধভিক্ষু নয়। গ্রেপ্তার সাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে থাইল্যান্ডে অবৈধ প্রবেশের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মৌলভীবাজার জেলার তাঁত ডিজাইনার রাধাবতী দেবী কলাগাছের তন্তু থেকে মণিপুরি ডিজাইনের শাড়ি তৈরি করেছেন। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেওয়া হয়েছে তিনটি শাড়ি। যদিও ভারতের আগ্রা, মধ্যপ্রদেশসহ বিভিন্ন জায়গায় এই ধরনের শাড়ি তৈরি হচ্ছে কিন্তু আমাদের দেশে এই প্রথম তৈরি হলো, কলাগাছের সুতার শাড়ি। বান্দরবান জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি কলাগাছের তন্তু থেকে শাড়ি বানিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন রাধাবতী দেবীকে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে চলতি বছর মে মাসে। গত শুক্রবার ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে দেশটি। নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে এ নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করার ঘোষণার তিন দিন পার হলেও কারও নাম প্রকাশ হয়নি। তবে বিভিন্ন মহলে নানা দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের নামে আলোচনা এখন সর্বত্র।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
সরকারি দল, বিরোধী দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর আগামীতে গণমাধ্যমও ভিসানীতিতে যুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। গতকাল রবিবার চ্যানেল ২৪ কার্যালয়ে এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন। এর আগে গত শুক্রবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট এক বিবৃতিতে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া যারা বাধাগ্রস্ত করবে তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানায়।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর আলটিমেটাম দিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়া এত অসুস্থ যে, এখন তার চিকিৎসকরা বলছেন, বাংলাদেশে তার চিকিৎসা সম্ভব নয়। বিদেশে পাঠাতে না পারলে তাকে বাঁচানো দুস্কর হয়ে যাবে। আমি চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা বলেছেন, আপনাদের যদি কিছু করার থাকে তাহলে করেন।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
বিএনপি নেতারা বরাবরের মতো তাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে রাজনীতি করার অপচেষ্টা করছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করতে গিয়ে আইনবিরোধী কথাবার্তা বলছেন বিএনপি নেতারা। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা না রেখে গায়ের জোরে ফ্যাসিস্ট কায়দায় দাবি আদায়ের জন্য তারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে অকার্যকর করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।’
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
ইউরিয়া, ডিএপি, টিএসপি ও এমওপি প্রভৃতি প্রধান প্রধান রাসায়নিক সারে ভর্তুকি দেয় সরকার। এ পর্যন্ত সারের ভর্তুকিতে বকেয়া পড়েছে প্রায় সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা। দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছে বকেয়ার এ অর্থ পায়। বকেয়ার অর্থছাড়ে ধীরগতি অর্থ বিভাগের। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) পাওনা ৭ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) পাওনা ৯ হাজার ১৭২ কোটি টাকা এবং বেসরকারি খাতের পাওনা ৫ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে রাজধানীসহ সারা দেশে দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলছেন, রাস্তাঘাট, বাসা-বাড়ি, মসজিদ, মার্কেটসহ যেখানে পাচ্ছে, সেখান থেকেই নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের পরিমাণ বাড়ছে। গত জুলাই মাসে এক দফার আন্দোলন শুরুর পর থেকে নেতাকর্মীরা নিজ বাসা-বাড়িতে থাকতে পারছেন না। পাশাপাশি জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর জামিনের মেয়াদ বাড়াতে আদালতে গেলে জামিন বাতিল করে তাদের কারাগারে পাঠানো হচ্ছে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর বিষয়টি জানিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেওয়া চিঠির জবাব দিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। চিঠিতে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ছোট পরিসরে হলেও ইইউ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত আন্তঃনগর ট্রেনে প্রতি কেজি মালামাল পরিবহনে এখন খরচ হবে মাত্র ১ টাকা ৪৬ পয়সা। একইভাবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ২ টাকা ৩৬ পয়সা, সিলেট পর্যন্ত ২ টাকা ২২ পয়সা, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট পর্যন্ত যথাক্রমে ৩ টাকা ১২ পয়সা ও ২ টাকা ৯৪ পয়সা ব্যয় হবে প্রতি কেজি পণ্য পরিবহনে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, মিরপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা খুবই দুঃখজনক। ডিএনসিসির নেতৃত্বে একবার ওই এলাকার অবৈধ বিদ্যুৎ লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল; জানতে পেরেছি একটি মাদ্রাসা অবৈধভাবে এই বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছিল। যারা অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মৃত্যুর ঘটনার দায় তাদের।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
ভারত ও কানাডার বিরোধের সূচনা খালিস্তান ইস্যুতে যা জাস্ট্রিন ট্রুডোর জি-২০ সম্মেলনে অংশ নিতে এবারের সফরের সময় ফের প্রকাশ্যে এসেছে। ভারতে খালিস্তানপন্থিদের প্রভাব অবশিষ্ট না থাকলেও কানাডা ও আরও কিছু পশ্চিমা দেশে শিখদের খালিস্তান আন্দোলন বেশ শক্তিশালী। ভারতের অভিযোগ উগ্রপন্থি খালিস্তানিরা কানাডায় বসে ভারতে নাশকতার পরিকল্পনা করছে এবং বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
দেশে মুদ্রাস্ফীতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস চলছে। অথচ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে মূল্যস্ফীতি বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধ-পূর্ববর্তী পর্যায়ে ফিরে এসেছে। এমন কি শ্রীলঙ্কার মতো ভুঁইফোড় মুদ্রাস্ফীতির দেশেও বিগত আগস্ট মাসে এর সূচক ৪ শতাংশে নেমে আসে। আর আমাদের দেশে খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠান বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী ওই মাসে দেশের সার্বিক মুদ্রাস্ফীতি (৯.৯২ শতাংশ) প্রায় দুই অঙ্কের ঘর স্পর্শ করে ফেলেছে, খাদ্যপণ্যের সূচক ইতিমধ্যেই ১২ শতাংশের ঘর অতিক্রম করেছে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। প্রথম দিকে ইউক্রেন হামলা প্রতিরোধে সক্রিয় থাকলেও চলতি বছরের জুন মাস থেকে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে। এ পরিস্থিতিতে নিজের সামরিক শক্তি বাড়াতে রাশিয়াও নানা পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন দাবি করেছে, এরই মধ্যে রাশিয়াতে স্কুলে পড়–য়া শিশুদের দেওয়া হচ্ছে অস্ত্র সম্পর্কে ধারণা।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সম্প্রতি খালিস্তান আন্দোলনের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে ভারতের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছেন তা দুই দেশের মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়েই চলেছে। কূটনৈতিক উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে দুই দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যেও। গত সপ্তাহে অটোয়া ও নয়াদিল্লি পাল্টাপাল্টি কূটনীতিক বহিষ্কারও করেছে। বাড়তি পদক্ষেপ হিসেবে ভারত তার দেশের নাগরিকদের কানাডা ভ্রমণের বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে বড় দরপতন হয়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। গতকাল প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইতে ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা কোম্পানি ছাড়া লেনদেন হওয়া অন্যান্য শেয়ারগুলোর মধ্যে ৯২ শতাংশের দরপতন হয়েছে। বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি কার্যকরের কারণে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ অবস্থানে ফিরে যাওয়ায় ক্রেতাসংকট তৈরি হয়েছে। ফলে বেশিরভাগ শেয়ারের দরপতনে মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। একই সঙ্গে কমে গেছে লেনদেনের পরিমাণও।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
দেশের সংকটকালীন বহু সূচক উল্টোমুখী হলেও কৃষিঋণ বিতরণ বাড়ছে। এর বিপরীতে আদায়ের হারও সন্তোষজনক। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে পাঁচ হাজার ৩০৮ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে পাঁচ হাজার ২৫১ কোটি টাকা।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
জনপ্রিয় নির্মাতা মিজানুর রহমান আরিয়ান পরিচালিত ওয়েব ফিল্ম ‘পুনর্মিলনে’ সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে চরকিতে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাজটি নিয়ে বেশ প্রশংসা শোনা যাচ্ছে। এ নিয়ে আরিয়ানের সঙ্গে কথা বলেছেন মাসিদ রণ
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
নামটা ‘দুর্দান্ত’ হলেও বিপিএল ২০২৪’র খেলোয়াড় ড্রাফট শেষে নবাগত ঢাকা ফ্র্যাঞ্চাইজিকে মোটেও দুর্দান্ত বলা যাচ্ছে না। দেশি অথবা বিদেশি, কোনো বিভাগেই দুর্দান্ত কোনো ক্রিকেটারকে তারা দলে নেয়নি। ‘ভিক্টোরিয়ানস’ শব্দটির বাংলা হচ্ছে বিজয়ী, বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ড্রাফটের টেবিলে বসার আগেই একঝাঁক বিদেশি তারকাকে সই করিয়ে দলের শক্তি বাড়িয়েছিল।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
৮০ মিনিট পর্যন্ত ২-০ গোলে এগিয়ে সেলতা ভিগো। মৌসুমের প্রথম হারটা নিশ্চিত মনে হচ্ছিল। তাও ঘরের মাঠে। কিন্তু ৮ মিনিটের টর্নেডো চালাল বার্সা ৮১-৮৯ মিনিট। লেভানডফস্কির জোড়ার পর কানসেলোর গোলে জয় তুলে নিল ৩-২ ব্যবধানে। জাভি এর বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে, ‘এটা নৃশংস প্রত্যাবর্তন। আমরা বিশ্বাস, সাহস নিয়ে খেলেছি। দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও তারা হাল ছেড়ে দেয়নি।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) চলতি মেয়াদ আর দেড় বছর। ইতিমধ্যে অন্তত ২ পুলিশ কর্মকর্তা (ওসি) ও এক জেলা প্রশাসক (ডিসি) দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটারদের কাছে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়েছেন। ইসি এসব কর্মকর্তার শাস্তির সুপারিশ করেছে এবং প্রাপ্য দ- নিশ্চিত করতে বলেছে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
সৌরজগতের সবচেয়ে ভয়ংকর গ্রহাণু হিসেবে পরিচিত বেন্নু। প্রতি ছয় বছরে একবার করে এটি ঢুকে পড়ে পৃথিবীর কক্ষপথে। কখনো কখনো পৃথিবীর বিপজ্জনক দূরত্বেও চলে আসে। গবেষকদের আশঙ্কা, আগামী ২০০ বছরের মধ্যে সেটি আছড়ে পড়তে পারে পৃথিবীতে। তাই এই গ্রহাণু ঘিরে বিজ্ঞানীদের আগ্রহও ছিল তুমুল। গ্রহাণুটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে তাই ২০১৬ সালে সেখানে পাঠানো হয়েছিল নাসার মহাকাশযান ওসিরিস রেক্সকে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে আসাদুর রহমান কিরণের বিরুদ্ধে অনুমোদন ছাড়াই সহস্রাধিক প্রকল্প গ্রহণ, পদোন্নতি এবং কেনাকাটায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রায় ২১ মাস দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে কাউন্সিলরদের নিয়ে মাসিক না করে এসব অনুমোদন দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে। আর এসব অনিয়মের তদন্ত দাবি করেছেন সিটি করপোরেশনের একাধিক কাউন্সিলর।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারজানা শশী ফেসবুকে লাইভে এসে ভিসি-প্রোভিসিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘আপনারা যদি আমাদের পাশে না থাকেন তাহলে আপনাদের আওয়ামী পরিষদের শিক্ষক হিসেবে তো নিয়োগ দেওয়াটাই শেখ হাসিনার ভুল সিদ্ধান্ত।’
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
ব্যাংকগুলো ঘোষিত দামের চেয়ে বেশি দামে ডলার কেনাবেচার অভিযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই ব্যাংকারদের ঘোষিত দর ধরে ডলার বিক্রি করতে একসঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। নির্বাচনের আগে ডলার বাজার বা বিদেশি মুদ্রার নীতি বিষয়ে কোনো পরিবর্তন আসবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকে গতকাল রবিবার ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এমন নির্দেশনা দেন গভর্নর।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রবিবার দুপুরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের জরুরি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চবি শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) শেষ নবী। তারপর আর কোনো নবী আসবেন না। সুতরাং পরবর্তী উম্মতরা কীভাবে সত্যের দিশা পাবে এবং তার ওপর টিকে থাকতে পারবে সে প্রশ্নটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নবী কারিম (সা.) বিদায় হজের ভাষণে উম্মতকে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি তোমাদের কাছে দুটি জিনিস রেখে গেলাম। কোরআন ও সুন্নাহ। যতক্ষণ তোমরা এই দুটি বিষয় ধরে রাখবে ততক্ষণ পথভ্রষ্ট হবে না।’ -মুয়াত্তায়ে মালিক : ১৬২৮
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’