
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, ‘কোথাও ফকিরকে পান্তভাত দিলে তারা খেতে চান না। উল্টো ইংরেজি শোনায়, বলে আমার তো গ্যাস্ট্রিক। এসব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেষ্টায় হয়েছে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ফলে দেশে পুরাতন কাপড় বিক্রির জন্য ক্রেতাও পাওয়া যায় না।’
গতকাল শনিবার সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর প্রাঙ্গণে শোক দিবস ও গ্রেনেড হামলা স্মরণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপকমিটির আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ, আমেরিকান, কানাডা, চীন, অস্ট্রেলিয়ান, নেপাল, ভিয়েতনাম, কসোভো, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূতসহ ৩০ দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
মতিয়া চৌধুরী আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা অন্ন-বস্ত্র ও সর্বজনীন শিক্ষার জন্য বিনাপয়সা বই ও লেখাপড়ার ব্যবস্থা করেছেন। শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করছেন। দেশকে আরও উন্নতপর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অবিরাম কাজ করছেন।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপকমিটির চেয়ারম্যান মো. জমির বলেন, ‘করোনাকালে আমেরিকা ও ভারতের মতো দেশে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা আমরা করোনাকে জয় করেছি।’
দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, বিদেশি দূতাবাসের রাজনৈতিক উইংয়ের সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাদের জানানো হয়েছে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড নিয়ে, বঙ্গবন্ধুর সন্তানদের নিয়ে ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে যে অপপ্রচার চালানো হয় সেটা তুলে ধরা হয়েছে। তাদের যখন জানানো হয় তখন তারা আমাদের থেকেও বেশি শকড হয়ে যান। তারা বলেন, এত নির্মম হত্যাকান্ড কেন চালানো হয়েছে, এমনকি গর্ভধারী নারীদেরও হত্যা করেছে।
১৫ আগস্টের কালরাতের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আবদুর রহমান শেখ রমা বলেন, শাহাদাতবরণের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে ঘাতকদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু উচ্চস্বরে বললেন, অ্যাই বেয়াদবি করছিস কেন? বাড়ির দোতলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে নিচতলায় নামতে নামতে বঙ্গবন্ধু আরও বলেছিলেন, তোরা কী চাস? এর মধ্যেই গুলির শব্দে কেঁপে উঠেছে ধানমন্ডি। রক্তাক্ত অবস্থায় সিঁড়িতেই বঙ্গবন্ধুর নিথর দেহ পড়ে রইল।
জাতির জনকের ব্যক্তিগত সহকারী আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগে ঘাতকদের হাতে নিহত হন শেখ কামাল ভাই। সর্বশেষ শেখ রাসেল ভাইকে হত্যার মাধ্যমে খুনিদের তান্ডব শেষ হয়। সেদিন রেহাই পায়নি বঙ্গবন্ধুর আদরের সন্তান ছোট্ট শিশু রাসেলও। তারা বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলেকে দিয়ে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে আর শেষ করে ঐতিহাসিক ওই বাড়িটি সারা দিন যে মাতিয়ে রাখত, সেই দিয়ে।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য জাকিয়া নূর লিপি। এতে ১৫ আগস্টের সেই ভয়াল রাতের লোমহর্ষক বর্ণনা দেন প্রত্যক্ষদর্শী বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রহমান শেখ আবদুর রহমান রমা।
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান অ্যাম্বাসাডর মোহাম্মদ জমিরের সভাপতিত্বে শোকসভায় অন্যদের উপস্থিত ছিলেন দলের সভাপতিম-লীর সদস্য আবদুর রহমান, কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী প্রমুখ।
জাল বা ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে একটি পণ্যও রপ্তানি না করে কাগজে-কলমে রপ্তানি দেখিয়ে গত ছয় মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে ৫৯ কোটি ৪ লাখ ৩১ হাজার ৮৮৫ টাকা দেশে এনে সাদা করা হয়েছে। এ অর্থ নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রবেশ করেছে, যা পরে উত্তোলন করা হয়েছে। এ রপ্তানির বিপরীতে ১২ কোটি ৮২ লাখ ৭৬ হাজার ১৬৩ টাকা প্রণোদনা হিসেবে নিয়ে আত্মসাৎ করেছে। এ ক্ষেত্রে গত ছয় মাসে ২৩৯টি ভুয়া বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা হয়েছে। এভাবে ৭১ কোটি ৮৭ লাখ ৮ হাজার ৪৮ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। অবৈধ এ লেনদেনে কে বা কারা জড়িত তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কী উদ্দেশ্যে এ অর্থ দেশে আনা হয়েছে তাও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর থেকে এনবিআর চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে পাঠানো প্রতিবেদন থেকে এসব জানা গেছে। সম্প্রতি এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
এনবিআরের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ফকরুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমদানি-রপ্তানি-সংক্রান্ত কার্যক্রম কঠোরভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু ভুয়া বা জাল কাগজপত্র দিয়ে রপ্তানি করে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেশে এনে প্রদর্শন করার ঘটনা ধরা পড়েছে। ভুয়া বা জাল কাগজপত্র দিয়ে অর্থ পাচারের ঘটনাও ধরা পড়েছে। একইভাবে প্রণোদনা নিয়ে অর্থ আত্মসাতের ঘটনাও শুল্ক গোয়েন্দারা উদঘাটন করেছে। ভবিষ্যতে আরও গুরুত্ব দিয়ে আমদানি-রপ্তানিতে ভুয়া তথ্য দিয়ে অবৈধ অর্থের লেনদেন বন্ধ করতে কাজ চলছে। আশা করি, এ অপকর্ম কমানো সম্ভব হবে। এ অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনের আগে দেশে অবৈধ অর্থের লেনদেন বাড়ে। এ কাজে বিদেশ থেকেও অর্থ আসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিদেশ থেকে দুভাবে অর্থ আসতে পারে। এক হুন্ডিতে। অন্যভাবে জাল কাগজপত্রে ব্যাংকিং চ্যানেলে। এনবিআর কঠোর নজরদারি করছে জাল কাগজপত্র দিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে কোনোভাবেই যেন অবৈধভাবে বিদেশ থেকে অর্থ আনতে না পারে।
প্রতিবেদনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ‘কাগজে-কলমে যেসব পণ্য রপ্তানির কথা বলা হয়েছে তার একটি চালানও বন্দরে প্রবেশ করানো হয়নি। রপ্তানি দেখাতে ভুয়া বিল অব এন্ট্রি, এলসি, ইনভয়েস, প্যাকেটজাত করার তালিকা সবই জাল করা হয়েছে। কাগজে-কলমে দুই প্রতিষ্ঠানের নাম দেখিয়ে এ অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বাস্তবে অস্তিত্বই নেই। শতভাগ রপ্তানি করা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এরা কাঁচামাল আমদানি শুল্কমুক্ত (বন্ড) সুুবিধাও নিয়েছে। এ অপকর্ম ধরা পড়ার পর সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাবে রপ্তানি মূল্য হিসেবে অর্থ প্রবেশ করেছে। প্রতিষ্ঠানের নামে জমাকৃত অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে। অর্থ উত্তোলনকারীদের সন্ধান করা হচ্ছে। তারা ঘটনার কিছুই জানে না এবং বড় অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তারা এ কাজ করেছে বলে ধারণা করা হয়েছে। এ অপকর্মের মূলহোতাদের চিহ্নিত করতে কাজ চলছে। ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তা ও এনবিআরের অসাধু কর্মকর্তারা এ কাজে জড়িত আছে কি না তাও দেখা হচ্ছে।’
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমদানি-রপ্তানিতে জাল, ভুয়া বা মিথ্যা তথ্য কারও একার পক্ষে দেওয়া সম্ভব না। এ কাজে প্রদানকারী ব্যবসায়ী নামধারী অসাধু ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন। তবে এ কাজে ব্যাংক ও এনবিআরের অসাধু ব্যক্তিরা জড়িত কি না তাও খতিয়ে দেখে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘অনেক অসাধু ব্যক্তি দেশে ও বিদেশে ব্যবসা করলেও বিদেশেই অর্থ গচ্ছিত রাখে। দেশে কোনো প্রয়োজন হুন্ডিতে অর্থ আনলে পরে ব্যয়ের সময় তা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন ওঠে। বিশেষভাবে হুন্ডিতে দেশে আনা অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে ব্যয় করলে তার তথ্য থেকে যায়। এ ক্ষেত্রে ব্যয়ের অর্থ কোনো উৎস থেকে আয় করা হয়েছে, তা নিয়ে সরকারি সংস্থার প্রশ্ন করার সুযোগ থাকে। কিন্তু ধরা না পড়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে জাল, ভুয়া বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে অর্থ দেশে আনলেও তা ব্যাংকিং চ্যানেলে ব্যয় করা হলে তার উৎস নিয়ে কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ থাকে না।’
দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং জানমালের নিরাপত্তায়, নির্বাচনে নিজের বা নিজের দলের প্রভাব বাড়াতে বা নির্বাচন ঘিরে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতে অবৈধভাবে কোনো ব্যক্তি আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে বিদেশ থেকে অর্থ এনে ব্যবহার করছে কি না তা খতিয়ে দেখতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে এরই মধ্যে এনবিআর নজরদারি বাড়িয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণ নির্বাচনের আগে দেশে অর্থের অবৈধ লেনদেন বাড়ে। সরকারি সংস্থাগুলো নজরদারি বাড়ালে অবৈধ লেনদেন কমানো সম্ভব। বিশেষভাবে আমদানি-রপ্তানিতে জাল তথ্য দিয়ে লেনদেন কমানো যাবে।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর থানার ওসি মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলামকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে জেলার পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। আর বিদায়ের সময় ফরিদুল ইসলাম সঙ্গে নিয়ে গেছেন থানায় লাগানো শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি), টেলিভিশন, আইপিএস ও সোফা। এভাবে থানার জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ায় বিষয়টি সম্বন্ধে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে থানার সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য যারা এসব জিনিস উপহার দিয়েছিলেন তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
জানা গেছে, গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে থানার পুলিশ সদস্য উদয় ও আরিফ নামে একজন লোক এবং ভ্যানচালকের সহায়তায় থানার জিনিসপত্রগুলো খোলা হয়। এরপর সেগুলো ভ্যানে করে ওসির কোয়ার্টারে নেওয়া হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার জেলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার স্বাক্ষরিত স্মারক নম্বর ৫১৭০/১(৪৯) (আরওআই) আদেশে ভূঞাপুর থানার ওসি ফরিদুল ইসলামকে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়। এই বদলির আদেশের পরদিন রাতে থানার এসি, টেলিভিশন, সোফা ও আইপিএস খুলে ওসির কোয়ার্টারে নেওয়া হয়।
থানায় উপহার দেওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই জিনিসপত্র ব্যক্তিগতভাবে কাউকে দেওয়া হয়নি। থানায় যে ওসি আসবেন তিনি ব্যবহার করবেন, এজন্যই জিনিসপত্রগুলো কেনার জন্য টাকা দেওয়া হয়েছিল। তিনি এত নীচু মনমানসিকতার ওসি সেটা জানা ছিল না।’ থানার পুলিশ সদস্য উদয় বলেন, ‘ওসি স্যারের নির্দেশে জিনিসপত্রগুলো খুলে নেওয়া হয়েছে। এরপর সেগুলো ভ্যানে করে ওসির কোয়ার্টারে রাখা হয়েছে।’
নিকরাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জুরান মণ্ডল বলেন, ‘থানার সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য এবং থানায় যেই ওসি আসুক তারা যেন সুবিধাটা ভোগ করতে পারেন সেজন্য বালুমহালের টাকা দিয়ে জিনিসপত্রগুলো কিনে দেওয়া হয়েছিল। এটা থানার স্বার্থে দেওয়া হয়েছে, কারও ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নয়। শুনেছি তিনি (বদলি হওয়া ওসি ফরিদুল) সেগুলো খুলে নিয়ে যাচ্ছেন, এটা ঠিক না। তাকে ব্যক্তিগতভাবে দেওয়া হয়নি, ওসির চেয়ারটাকে সম্মান করে দেওয়া হয়েছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভূঞাপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘ওসির টাকায় কেনা জিনিসপত্র হলে তিনি নিতেই পারেন। এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’
তবে বদলি হওয়া ওসি ফরিদুল ইসলামের দাবি খুলে নেওয়া জিনিসপত্র তার নিজের টাকায় কেনা। তিনি বলেন, ‘যেগুলো থানা থেকে খোলা হয়েছে সেগুলো ব্যক্তিগত টাকা দিয়ে কেনা। সুতরাং সেগুলো আমি নিতেই পারি।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কালিহাতী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরফুদ্দীন শরিফ বলেন, ‘জিনিসপত্রগুলো ওসির ব্যক্তিগত টাকায় কেনা হলে নিতে পারবে। তবে থানায় দেওয়া অন্যের জিনিসপত্র তিনি নিতে পারবেন না। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
আর জেলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, ‘কারও অনুদানের টাকায় কিনে থাকলে সেগুলো ওসি নিতে পারেন না। যদি ব্যক্তিগত টাকায় কেনা হয় তাহলে নিতে পারবেন। যদিও এ বিষয়ে কিছুই জানি না।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মূল্যছাড়ের প্রচারণা চালিয়ে একটি অস্তিত্বহীন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অ্যামাসবিডি নামে অস্তিত্বহীন এই প্রতিষ্ঠানটির কোনো অফিস কিংবা লাইসেন্সও ছিল না। তারা ঘণ্টা চুক্তিতে ডেস্ক ভাড়া নিয়ে ভার্চুয়াল মাধ্যমে এই প্রতারণার ফাঁদে ফেলে ঠকিয়েছে প্রায় ৩০০ গ্রাহককে।
জানা গেছে, ২০২০ সালে অ্যামাসবিডি ডটকম নামে একটি ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ খুলে নিজেদের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রচার করে। তারা মোটরসাইকেল, ফ্রিজ ও মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন পণ্য স্বল্পমূল্যে বিক্রির প্রলোভনে ফেলে গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নেয়। ব্যাংক হিসাব এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা গ্রহণ করেও গ্রাহকদের পণ্য বুঝিয়ে দেয়নি। অবশ্য, বিশ্বাস অর্জনের জন্য প্রথমদিকে কিছু গ্রাহকের পণ্য যথাসময়ে দিয়েছিল।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে নামসর্বস্ব এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বুধবার রাজধানীর ধানম-ি থানায় অর্থ পাচার আইনে এই মামলাটি করা হয়।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন ধানমন্ডি থানার ওসি মো. পারভেজ ইসলাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, অবৈধ এই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট বাদী হয়ে মামলা করেছে। অর্থ পাচার আইনে করা এই মামলাটির তদন্ত তারাই করছেন।
তবে এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার সিআইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
সিআইডির করা ওই মামলায় যে চারজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, তার হলেন কায়সার হাবিব, মো. আশেকুল ইসলাম, মো. আবদুর রউফ বারেক ও মো. তানজিম হাসান মিথুন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, অ্যামাসবিডি একটি অস্তিত্বহীন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির ট্রেড লাইসেন্স বা নিবন্ধন-সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তারা ধানম-ির মাইডাস সেন্টারে ঘণ্টা চুক্তিতে ডেস্ক ভাড়া নিয়ে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। বিভিন্ন পণ্যে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড়ের ঘোষণায় প্রায় ৩০০ গ্রাহকের টাকা নিয়ে পণ্য দেয়নি। পণ্য দেওয়ার নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া ৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা নিয়ে নিজেদের নামে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে ও ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেছে।
সিআইডির অনুসন্ধানে জানা যায়, কায়সার হাবিব, আশেকুল ইসলাম তানজিল এবং আবদুর রউফ বারেক পূর্বপরিচিত। তারা তিনজন মিলে অ্যামাসবিডি নামের অস্তিত্বহীন এই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে কায়সার হাবিব ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান, আশেকুল ইসলাম তানজিল সিইও এবং মো. আবদুর রউফ বারেক প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ছিলেন। এ ছাড়া অন্য অভিযুক্ত তানজিম হাসানকে এই প্রতিষ্ঠানটির হেড অব সেলস এক্সিকিউটিভ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
জানা গেছে, অভিযুক্ত কায়সার হাবিব আগে আইটি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ ছাড়া তিনি ওয়ার্ল্ড ট্রাক, ওয়ার্ল্ড টেকনোলজি লিমিটেডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। আশেকুল ইসলাম তানজিল ওয়ার্ল্ড ট্রেক কনসালট্যান্সি লিমিটেড নামের কোম্পানির স্বত্বাধিকারী।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, আসামির গ্রহণকৃত অর্ডারের বিপরীতে পণ্যের মূল্য বাবদ অগ্রিম অর্থ গ্রহণ করতেন তাদের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে বা নগদে। গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য গ্রহণকৃত অর্ডারের বিপরীতে তাদের চেয়ারম্যান ও সিইও স্বাক্ষরিত ইনভয়েস প্রদান করতেন। কায়সার হাবিবের মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে তার নামে থাকা হিসাবে এবং তার প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ট্রেকের নামে একই ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাবে অ্যামাসবিডির গ্রাহকের টাকা গ্রহণ করেছে।
এ ছাড়া অভিযুক্ত আশেকুল ইসলাম তানজিলের নামে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ট্রেক কনসালট্যান্সির মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাবে অ্যামাসবিডির গ্রাহকদের টাকা গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে অ্যামাসবিডির পরিচালক আবদুর রউফের নামে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের গুলশান শাখা ও দি সিটি ব্যাংকের বনানী শাখার হিসাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্ডারকৃত পণ্যের টাকা গ্রহণ করেছেন।
সিআইডি জানিয়েছে, ওয়ার্ল্ড ট্রেক নামের প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে লাইসেন্স নিয়েছে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে, যার লাইসেন্স নম্বর ১১৫৫৩২। সেখানে প্রতিষ্ঠানটি আইটি ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে অনুসন্ধানে উল্লেখ করা ঠিকানায় গিয়ে এ ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। একইভাবে ওয়ার্ল্ড ট্রেক কনসালট্যান্সি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে লাইসেন্স নিয়েছে, যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ০৪৮৩৪৬। তবে তাদের দেওয়া ঠিকানা রাজধানীর কলাবাগানের লেক সাকাস এলাকায় গিয়ে এ ধরনের কোনো অফিসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
পুলিশের এই তদন্ত সংস্থাটির প্রাথমিক তদন্তে আরও উঠে এসেছে অস্তিত্বহীন এই প্রতিষ্ঠানটির হেড অব সেলস এক্সিকিউটিভ তানজিম হাসান মিথুনের অনিয়মের প্রমাণ।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, তানজিম বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রির কথা বলে টাকা নিয়েছেন। অ্যামাসবিডির গ্রাহকদের কাছ থেকে এভাবে হাতিয়ে নেওয়া টাকার ওপর ৩ শতাংশ কমিশন নিয়েছেন তিনি।
তৃতীয় দফায় টানা বৃষ্টি আর ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফের বেড়েছে তিস্তা নদীর পানি; বিশেষ করে ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের সবগুলো ফটক খুলে দেওয়ায় উজান থেকে বাংলাদেশ অভিমুখে ধেয়ে আসছে পানি। এর মধ্যেই আবার দেশে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। অবিরাম বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের মতো নেমে আসা উজানের পানিতে বিপদসীমা ছুঁয়েছে দেশের উত্তরাঞ্চলের অনেক নদ-নদী; বিশেষ করে তিস্তা, ঘাঘট, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, করতোয়াসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে বেড়েছে পানি। এমন পরিস্থিতিতে নদীর অববাহিকা, চর, দ্বীপচরের মানুষদের সতর্ক থাকাসহ প্রয়োজনে আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যাওয়ার কথা বলেছে স্থানীয় প্রশাসন।
এদিকে পানি বাড়ায় নদী তীরবর্তী অনেক এলাকায় সদ্য রোপণ করা আমনের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। উপচে গেছে পুকুর। এ ছাড়া পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। যাদের অনেকের খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।
গতকাল শনিবার সকাল ৬টায় তিস্তার ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১০ ও রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে করে প্লাবিত হয় নিম্নাঞ্চল।
বৃষ্টি ও উজানের ঢলে চতুর্থ দফায় বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীগুলোর পানি। অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমারসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও তা বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদ-নদীর অববাহিকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় বন্যার আশঙ্কায় দিন পার করছেন নদীপারের মানুষজন। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী গতকাল সকাল ৯টায় তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চল ও নিচু চরাঞ্চলগুলোতে বন্যার পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের নতুন জেগে ওঠা মুসার চর ও বালাডোবার চরের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। তবে এখনো অন্যান্য চরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।
নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াসাম, চর খিতাবখা, বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুড়া, রামহরি ও কালিরহাট এলাকায় দেখা দিয়েছে তিস্তা নদীর ভাঙন। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের কয়েকটি পয়েন্টে এবং ধরলার অববাহিকার মোগলবাসা ইউনিয়নের চরসিতাইঝাড় এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ফ্লাড অথরিটি সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার সকাল ১০টায় গজলডোবা ব্যারাজ পয়েন্ট থেকে পানি একসঙ্গে ভাটির দিকে ছেড়েছে। ফলে ওই দিন সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২ লাখ ১ হাজার ৬৪৭ কিউসেক এবং সর্বনিম্ন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮৪৮ কিউসেক পানি বাংলাদেশের দিকে ছেড়েছে ভারত।
নদ-নদীর পানি বাড়ায় রংপুরের কাউনিয়া ও গঙ্গাচড়া উপজেলার ২০টি চরাঞ্চলের গ্রামে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। ফলে এসব এলাকার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একই সঙ্গে দুই মাসে তৃতীয় দফা বন্যার কারণে আমন ধানসহ শস্যক্ষেতগুলো তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় আছেন ওই সব এলাকার কৃষকরা।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, তিস্তার পানি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম হয়ে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুর পর্যন্ত নদী তীরবর্তী এলাকার চর ও নিচু এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করেছে। প্রবল স্রোতের কারণে নদী তীরবর্তী আশপাশের গ্রামগুলোতে পানি প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।
গঙ্গাচড়ার মর্নেয়া, লক্ষ্মীটারী, আলমবিদিতরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চরাঞ্চলসহ নদী তীরবর্তী মানুষের বাড়িসহ রাস্তা-ঘাটে পানি ঢুকে গেছে। পানিবন্দি পরিবারগুলো বয়স্ক ব্যক্তি, শিশু ও গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। রান্নার সমস্যা প্রকোট আকার ধারণ করায় শুকনা খাবার খাচ্ছেন তারা। তবে বিশুদ্ধ পানির সমস্যা থাকায় শুকনা খাবার খেতেও সমস্যা হচ্ছে। তলিয়ে গেছে ধানের চারা, বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল ও সবজির ক্ষেত। ভেসে গেছে পুকুর, জলাশয় ও মৎস্য খামারের মাছ। ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে ওই সব এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, বাড়ি-ঘর, আবাদি জমি, গাছ-পালা, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ও বেড়িবাঁধ।
উজানের পাহাড়ি ঢল ও দুদিনের ভারী বর্ষণে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় যমুনা নদীসহ সবগুলো নদীর পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। খুকনি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম ও আরকান্দির অন্তত ১৫ বাড়িঘর বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এ ছাড়া উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের অধিকাংশ নিচু গ্রাম এখন বন্যার পানিতে ভাসছে। অনেক রাস্তাঘট বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদীপারের মানুষ।
লালমনিরহাটের তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে গতকাল সকাল ৬টায় পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর। (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। সকাল ৯টায় বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর। ফলে প্লাবিত হয় ভাটিতে থাকা এলাকাগুলো। পানির চাপে ডালিয়া ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে কর্র্তৃপক্ষ। ফলে জেলার পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। নিম্নাঞ্চলে ইতিমধ্যে পানি ঢুকে গেছে। চরাঞ্চলেও পানিতে ডুবেছে বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট। তিস্তার পানি পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, ফকিরপাড়া ইউপির রমণীগঞ্জ, সিঙ্গামারী ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না ইউপির পাটিকাপাড়া, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, কালমাটি, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, বড়বাড়ি, রাজপুর ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
নীলফামারীতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গতকাল বিকেল ৩টায় ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। সকালে ওই পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও দুপুর ১২টায় ১০ সেন্টিমিটার নিচে নামে। জেলার ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী, গয়াবাড়ি, খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের ১৫টি চর গ্রামের তিন হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। গতকাল পানি কমায় স্বস্তি ফেরে এসব পরিবারের মাঝে।
সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে প্রতিবেদনটি তৈরি
আজ ১২ ভাদ্র জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৬ সালের এ দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় হাসপাতালে (তৎকালীন পিজি হাসপাতাল) তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে সমধিক পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিণী সৃষ্টি করে বাংলা সংগীতজগৎকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।
কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদসংলগ্ন কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, দোয়া মাহফিল এবং আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে।
কাজী নজরুল ইসলাম ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন। প্রেম, দ্রোহ, সাম্যবাদ ও জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। নজরুলের কবিতা, গান ও সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তার লেখনী জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে।
নজরুল ছিলেন চির প্রেমের কবি। তিনি যৌবনের দূত। তিনি প্রেম নিয়েছিলেন, প্রেম চেয়েছিলেন। মূলত তিনি বিদ্রোহী, কিন্তু তার প্রেমিক রূপটিও প্রবাদপ্রতিম। তাই মানুষটি অনায়াসেই বলতে পারেন, ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। তিনি রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন এবং ধানমণ্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি বরাদ্দ দেন। জাতীয় কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। এখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন।
সাত বছর পর ভারতের মাটিতে অবতরণ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে তারা গিয়েছিল সেখানে। তারপর এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে। টুর্নামেন্ট শুরুর এক সপ্তাহ আগে তারা পৌঁছালেন দেশটিতে। সেখানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হোটেলে।
বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বাবর আজমরা সেখানে পৌঁছানো মাত্রই উচ্ছ্বসিত জনতা ভিড় করেন। হায়দ্রবাদের বিমানবন্দরের বাইরে তাদের দেখে অনেকেই চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। বাবরের নাম উচ্চারণ করতও শোনা গেছে এসময়। পুলিশ উৎসুক জনতাকে আটকে রেখেছিল।
রাজনৈতিক বৈরি সম্পর্কের কারণে দুই দলের দেখা হয় না দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজে। বিশ্ব মাতানো ক্রিকেটার থাকলেও পাকিস্তানিরা খেলতে পারে না আইপিএলে। কারণ ঐ একটাই। তবে বৈশ্বিক বা মহাদেশীয় ইভেন্টে তাদের ঘিরে আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। সেটা দেখা গেছে এশিয়া কাপেও।
বিশ্বকাপ খেলতে আজ বাংলাদেশ উড়াল দিয়েছে ভারতে। সেই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখে টাইগাররা। তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছাড়ার পর সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের ভার। আর আজই জানা গেল, বিশ্বকাপের পর একদিনও তিনি অধিনায়কত্ব করবেন না।
গত ১১ আগস্ট তৃতীয় দফায় ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান। তখনই বলা হয়েছিল, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ ও ভারত বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
দেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এই বিশ্বকাপই শেষ। এরপর একদিনও (অধিনায়কত্ব) করবো না। যে কারণে আমি এশিয়া কাপের আগে নিতে চাইনি। এরপরও এটা না। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি হাসতে চাই, খেলতে চাই, পারফর্ম করতে চাই। এই একটা কারণে আমি করতে চাইনি।’
সাকিব যোগ করেন, ‘আর কোনে কারণ নেই। বেস্ট হয় যদি অধিনায়ক না থাকি। অধিনায়কত্ব কি আমার কোনো ভেল্যু এড করতেছে ক্যারিয়ারে এই স্টেজে এসে? আমি তো মনে করি না।’
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
বিশ্বকাপে তামিম ইকবালকে ওপেন থেকে সরিয়ে মিডল অর্ডারে ব্যাট করার প্রস্তাব দিয়ে ফোন করেছিলেন, তামিমের ভাষায় 'বোর্ডের টপ লেভেল' এবং 'ক্রিকেটের সাথে বেশ ইনভলভড' একজন।
তিনি তামিমকে বলেন, ''তুমি তো বিশ্বকাপে যাবা, তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলতে হবে। তুমি এক কাজ করো। তুমি প্রথম ম্যাচ খেলো না আফগানিস্তানের সঙ্গে।'
তিনি আবার বলেন, আচ্ছা তুমি যদি খেলোও, আমরা এমন একটা পরিকল্পনা করছি, তুমি যদি খেলোও, তাহলে নিচে ব্যাট করবে।''
তামিমের এমন বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠেছে, কেই সেই বোর্ড কর্মকর্তা? এক টিভি সাক্ষাৎকারে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'আমি এটা জানিনা।'
পরক্ষণেই তিনি বলেন, 'তবে যদি কেউ বলে থাকে, আমি সিউর তিনি অথোরাইজড পার্সন। আর এরকম কিছু বলে থাকলে আমি খারাপ কিছু বলেছে বলে আমি মনে করিনা। টিমের কথা চিন্তা করেই বলেছে। টিম কম্বিনেশন নিয়ে কথা বলে থাকলে দোষের কি আছে। আমার তো মনে হয় না দোষের কিছু আছে। নাকি এরকম কোনো প্রস্তাব দেয়া যাবে না। নাকি আপনি যা চাইবেন তাই করতে পারবেন?।'
বিশ্বমঞ্চে দেশের ক্রিকেটের দূত বলা যায় সাকিব আল হাসানকে। বর্ণিল এক ক্যারিয়ার গড়েছেন তিনি। তিন ফরম্যাটেই তিনি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। দেশের এই তারকা ক্রিকেটার নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপে যাচ্ছেন দলের অধিনায়ক হিসেবে। সেই টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই জানা গেল কবে তিনি অবসর নিচ্ছেন।
দেশের একটি ক্রীড়াভিত্তিক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের অবসরের সময় জানিয়েছেন। তার ইচ্ছে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর অবসর ঘোষণা করার। একইসঙ্গে তিন ফরম্যাটকে বিদায় জানাতে চান দেশের ক্রিকেটের এই তারা।
নেতৃত্ব ছাড়া ও অবসরের প্রসঙ্গ টেনে সাকিব বলেন, ‘আজকে এখন এই অবস্থায় বলছি, ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত ওয়ানডে খেলবো। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে টি-টোয়েন্টিকে বিদায় দেবো। টেস্টের অবসর শিগগিরই। তবে একেক ফরমেট একেক সময় ছাড়লেও আনুষ্ঠানিক অবসর ঘোষণা করবো ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর।’
অধিনায়কত্ব নিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপের আগে একাধিক সিরিজে বিশ্রামের কথা বলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দলের বাইরে রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত এশিয়া কাপেও দলে ফেরানো হয়নি তাকে। যেহেতু সাকিবের নেতৃত্বে সেই আসরে খেলেছে বাংলাদেশ, তাই অনেকের ধারণা সাকিবের চাওয়াতেই দলের বাইরে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
তবে সাকিব এসব কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়ক ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দল পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলারও ছিল না! কারন পরের দিন সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকি রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা!'
দলের ভেতরের কথা ভালোভাবে না জেনেই মানুষ যেভাবে সমালোচনা করে সেটাকে হাস্যকর বলেছেন সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়ক সমালোচকদের মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, 'মানুষের সাইলকোলজি এমন কেন! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!'
অধিনায়ক একা যে দল নির্বাচন করেন না সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন সাকিব। তিনি বলেন, 'রিয়াদ ভাইয়ের যে ডেডিকেশন ছিল তার দলের প্রতি যে অবদান ছিল। দলের হয়ে খেলার যে ইচ্ছে ছিল, সবকিছু সবাই দেখতে পেরেছে। আমার দায়িত্বতো পুরো দলটা নির্বাচন করার না। এমনটা হলে এশিয়া কাপের একদিন পরেই এনাউন্স করে দল দিয়ে দিতে পারতাম। এটা অনেক প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। অনেক বিষয় চিন্তা করতে হয়। অনেক কিছু চিন্তা করে দলটা গড়তে হয়।'
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।