
কট্টর ‘সরকারবিরোধী’ নেতাদের কমিটিতে রাখা নিয়ে দোটানায় পড়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সর্বশেষ কাউন্সিলে গঠিত কমিটির সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে খসড়া তালিকা তৈরির তিন সপ্তাহেও ঘোষণা দিতে পারেনি কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটির দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা।
একাধিক সূত্র বলেছে, চলতি মাসের শুরুতে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় আগের কমিটি থেকে বাদপড়া সবাইকে নিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়। কমিটিতে পদবিন্যাসের জন্য একটি উপ-কমিটিও করে দেওয়া হয়। কিন্তু কমিটি থেকে বাদ দেওয়া সরকারবিরোধী নেতাদের আবার অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবে দেখছে না সরকার। এ নিয়ে চাপে রয়েছেন নেতারা। আবার কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় সিদ্ধান্তের তিন সপ্তাহেও তা কার্যকর করতে গড়িমসিতে সংগঠনে অসন্তোষ বাড়ছে। হেফাজতের এখন ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’ অবস্থা।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগের কমিটিতে যারা ছিল তাদের সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন কমিটি গঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তাদের পদবিন্যাসের বিষয়টি নিয়ে আমরা একবার বসেছিলাম; আরও বসতে হবে। আশা করছি আগামী সপ্তাহে কমিটি ঘোষণা করা সম্ভব হবে।’ কমিটি ঘোষণার বিষয়ে চাপ বা প্রতিবন্ধকতার কথা অস্বীকার করেন তিনি।
হেফাজতের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করতে গিয়ে ২০২১ সালের মার্চে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ওই সংঘাতে বেশ কিছু প্রাণহানি ঘটে। মামলায় জড়ান বিভিন্ন এলাকার প্রচুর নেতাকর্মী। গ্রেপ্তার হন সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ অনেকে। পরে সরকারের চাপের মুখে ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল রাতে হেফাজতের ১৫১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করতে বাধ্য হন তৎকালীন আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। ওই বছরের ৭ জুন সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত নেতাদের বাদ দিয়ে ৩৩ সদস্যের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। সরকারের প্রেসক্রিপশনেই তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে সংগঠনে।
বাদপড়া নেতাদের মধ্যে যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, নাছির উদ্দিন মুনির, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, জাকারিয়া নোমান, খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, হাসান জামিল, মুফতি হারুন ইজহার, মুফতি মুনির হোসাইন কাশেমী ও হাফেজ মুহাম্মদ রয়েছেন।
সংগঠন সূত্র জানায়, নেতাদের বাদ পড়ার বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে নেয়নি সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরাট অংশ। তারা ক্ষুব্ধ। ক্ষোভ বাড়তে থাকার পরিপ্রেক্ষিতে বাদপড়াদের ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয় বর্তমান নেতৃত্ব। কিন্তু তা কার্যকর করতে গিয়ে সরকারের চাপের মুখে পড়েছেন তারা। কট্টর সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন রাজি, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী, মাওলানা হারুন ইজহার প্রমুখকে কমিটিতে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সরকারের আপত্তির কথা ইতিমধ্যে জেনেছেন সংগঠনের বর্তমান নেতৃত্ব। এদের কমিটিভুক্ত করা হলে সরকার কঠোর অবস্থানে যেতে পারে।
কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত কার্যকরে গড়িমসিতে সংগঠনে অসন্তোষ বাড়ছে। বাদপড়া নেতাদের অনুসারীরা এটিকে বর্তমান নেতৃত্বের দুর্বলতা হিসেবে দেখছে।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১২ সদস্যের উপ-কমিটি এ নিয়ে কাজ করছেন। আমরা আশা করছি, দ্রুত সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি ঘোষণা করা হবে।’ কমিটি ঘোষণায় গড়িমসির বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিচালক আল্লামা আহমদ শফির নেতৃত্বে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ গঠিত হয়। তার মৃত্যুর পর ২০২১ সালের জুন মাসে মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির নির্বাচিত করা হয়। ওই বছর ২১ আগস্ট মারা যান জুনায়েদ বাবুনগরী। বর্তমানে মাওলানা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী হেফাজতের আমির ও মাওলানা সাজিদুর রহমান মহাসচিব।
পরিবারের সচ্ছলতার আশায় সৌদি আরব গিয়ে এখন জীবন নিয়ে ফেরায় দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে ঢাকার কেরানীগঞ্জের স্মৃতি বেগমের (২৭)। যে বাসায় কাজে গিয়েছিলেন সেখানে প্রতিনিয়ত শারীরিক নির্যাতন, খাবার না দেওয়া ও যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়েছে তাকে। এ কারণে বাসা ছেড়ে বর্তমানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তার কাছে পাসপোর্ট না থাকায় দেশে ফিরতে চাইলেও পারছেন না। স্মৃতি বেগমের অভিযোগ, সৌদির বাংলাদেশ দূতাবাসে গিয়েও দেশে ফেরার পথ পাননি। আর তার স্বামী রাসেল হোসাইনের অভিযোগ, খাজা পরিবহন সংস্থা নামে এক এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি গেছেন তার স্ত্রী। রাজধানীর মতিঝিলের টয়েনবি সার্কুলার রোডে অবস্থিত ওই এজেন্সির ম্যানেজার ইউনুস সরকারসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা করতে থানায় গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি।
আরেক ভুক্তভোগী ঢাকার কুলসুম বেগম (ছদ্মনাম)। মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতনে চাকরির লোভ দেখিয়ে তাকে গত বছরের ১১ নভেম্বর সৌদি আরব নেয় একটি চক্র। কিন্তু চাকরি না দিয়ে সৌদির রিয়াদের হামজা তানু তায়ফাতে আটকে রেখে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়। বিষয়টি দেশে স্বজনদের জানালে কুলসুমের ছেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ওই এজেন্সি অফিসে গিয়ে মাকে দেশে ফেরানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু উল্টো এজেন্সির লোকরা তাকে বেদম মারধর করেন। তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও থানায় মায়ের ওপর নির্যাতনের ঘটনা উল্লেখ করে মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
পরিবারের সচ্ছলতা আনতে প্রতি বছর হাজার হাজার নারী কাজের সন্ধানে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে বিনা খরচে সৌদি আরব যাচ্ছেন। বাসায় কাজের জন্য মোটা অঙ্কের টাকায় তাদের একপ্রকার কিনে নিচ্ছে সৌদির বিভিন্ন গৃহকর্তা। এই টাকা পাচ্ছে রিক্রুটিং এজেন্সি। পরে এজেন্সি সেই টাকা থেকে বিমানভাড়া খরচ করে কর্মী পাঠায় সৌদি আরবে। জানা যায়, সৌদি গৃহকর্তা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য টাকা দিয়ে গৃহকর্মী কিনে নেয় বলে চুক্তি শেষ হওয়ার আগে চাইলেও নির্যাতনের শিকার নারীরা ফিরতে পারেন না।
পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাওয়া নারীকর্মীদের ৪৪ দশমিক ৮০ ভাগের গন্তব্যই থাকছে সৌদি আরব। আর এরই সুযোগ নিচ্ছে মানব পাচারকারী চক্রগুলো। সৌদি পৌঁছে কিছুদিনের মধ্যে তাদের জীবন হয়ে উঠছে দুর্বিষহ। অনেকে নির্যাতন সইতে না পেরে এজেন্সি ক্যাম্প বা বাসাবাড়ি থেকে পালিয়ে পড়ছেন আরেক বিপদে। নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে তাদের দেশে ফিরতে হচ্ছে। অনেকে ফিরছেন লাশ হয়ে। সর্বশেষ গত ৩ জুন সৌদি আরব থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফেরেন ১২ নারীকর্মী।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্যমতে, সৌদি আরবে নারীকর্মী যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে ২০১৫ সাল থেকে। এ বছর ২০ হাজার ৯৫২ জন নারী সৌদি আরব যান। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৬৮ হাজার ২৮৬, ৮৩ হাজার ৩৫৪, ৭৩ হাজার ৭১৩, ৬২ হাজার ৫৭৮, ১২ হাজার ৭৩৫, ৫৩ হাজার ৮২ এবং ৭০ হাজার ২৭৯ নারীকর্মী সৌদি আরবে গিয়েছেন। আর চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত যান ৩০ হাজার ১৮১ জন।
জানতে চাইলে অভিবাসনকারীদের নিয়ে কাজ করা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কেউ নির্যাতনের শিকার হলে তাহলে সেখানেই (সৌদি) তাকে মামলা করতে হবে। প্রমাণ হলে তার নিয়োগকর্তার শাস্তি হয়ে যাবে।
অনেকে অভিযোগ করেছেন, কর্মীদের সৌদি আবর পাঠানোর আগে সেখানে নিয়োগকর্তার হাতে নির্যাতনের শিকার হলে কী করতে হবে সে সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া হয় না। এ কারণে অনেক নির্যাতিত নারী সেখানে আইনগত সহায়তা পান না।
তবে নারীকর্মীরা সৌদি আরব যাওয়ার পর কোনো সমস্যায় পড়লে কী করবেন সে বিষয়ে দুই মাসের ট্রেনিং দেওয়া হয় বলে দাবি করছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, মূল সমস্যা অনেক নারী মনোযোগ দিয়ে ট্রেনিং করেন না। ফলে সেখানে গিয়ে কোনো বিপদে পড়লে বুঝতে পারেন না কোথায় যাবেন, কী করবেন। নারীকর্মীরা সৌদির ভাষা না জানাও সমস্যার অন্যতম বলে মনে করছেন তারা।
নাম প্রকাশ না করে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরে থেকে যেমন মনে হচ্ছে সৌদিতে সব মেয়ে কষ্টে আছে বিষয়টি কিন্তু এমন না। সৌদি আরবে যাওয়া নারীকর্মীদের মধ্যে ২০ ভাগ সমস্যায় পড়ছেন। তাদের মধ্যে ১০ ভাগের সমস্যা গুরুতর।’
যৌন নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যারা এ ধরনের সমস্যায় পড়ছেন তাদের জন্য আমাদের সেফ হোম রয়েছে। সেখানে এলে আমরা তাদের দেশে আনার ব্যবস্থা করি।’
নারীকর্মীদের মূল সমস্যা ভাষা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাদের কোনো কর্মঘণ্টা নেই। বাসায় সকাল থেকে রাত ১০টা বা ১১টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। অনেকে বিষয়টি মেনে নিতে পারেন না। এ ছাড়া সেখানকার খাবারেও তাদের সমস্যা।’
গত ৩ জুন নির্যাতনের শিকার হয়ে সৌদি থেকে দেশে ফেরেন ১২ নারীকর্মী। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহায়তায় দেশে ফেরেন তারা। বিমানবন্দরেই গণমাধ্যমকে ভয়াবহ সেই নির্যাতনের বর্ণনা দেন। এ সময় তাদের বুক, পেটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন দেখায়। লোহার রড দিয়ে মারা হতো তাদের। কখনো আবার চাবুক দিয়ে মারতেন গৃহকর্তারা।’
নির্যাতনের শিকার হয়ে আটকে আছেন কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন ভাগনা এলাকার বাসিন্দা স্মৃতি বেগম। তিনি দেশ রূপান্তরকে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। স্বামী অটোরিকশা চালান। সংসারে আর্থিক সংকট লেগেই থাকত। পরিবারের সচ্ছলতার আশায় দালালের মাধ্যমে গত ২৩ মে সৌদি আরব যান। তাকে শুধু পাসপোর্ট করার টাকা দিতে হয়েছিল। বলা হয়েছিল ভালো কাজ দেওয়া হবে। মোটা অঙ্কের বেতনও পাবেন। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পরই তার জীবনে নেমে আসে দুর্বিষহ যন্ত্রণা।’
স্মৃতি বেগম কান্না করতে করতে বলেন, ‘আমি অনেক অসুবিধায় আছি। যদি পারেন এখান থেকে আমাকে উদ্ধার করেন, আমার জীবনটা বাঁচান।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাসাবাড়িতে কাজের কথা বলে আমাকে প্রথমে সৌদির রিয়াদে নিয়ে একটি ক্যাম্পে রাখে। সেখান থেকে পাঠায় আভা শহরে (আবহা সৌদি আরবের আছির প্রদেশের রাজধানী) পরে ২৮ মে কফিলের বাসায় পাঠায়। (কোনো এক ব্যক্তির অধীনে বিদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ দেওয়াই হলো কাফালা পদ্ধতি। যেখানে একজন কফিল কোনো বিদেশি কর্মীকে স্পনসর করলে সে কর্মী সৌদি আরবে যেতে পারেন এবং সেখানে যাওয়ার পর ওই নিয়োগকর্তার অধীনে কাজ করতে হয় তাকে। এ ক্ষেত্রে ওই কর্মীর কাজ পরিবর্তনসহ সার্বিক সব বিষয় নির্ভর করে নিয়োগকর্তার ওপর)। সেখানে কাজ শুরু করার পাঁচ দিন পর থেকে আমাকে খাবার দেওয়া বন্ধ করে দেয়। সারা দিন পর কখনো দুই পিস রুটি ও কলা দেয়। আবার কখনো কিছুই দেয় না শুধু পানি খেয়ে থাকতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘বাসার ম্যাডামের স্বামীর স্বভাবচরিত্র খারাপ। বিষয়টি নিয়ে ম্যাডামের কাছে বিচার দেওয়ার পর থেকে আমার ওপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। এতে আমার অনেক জ্বর আসে। চার দিন ধরে না খাইয়ে রাখে। এ সময় ওনারা এক পার্টিতে যান, সেখানে আমাকে কাজের জন্য নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে এক বাঙালি নারী ডাক্তারের কাছে নেন। কিছুটা সুস্থ হলে আমাকে এজেন্সি ক্যাম্পে নিয়ে রেখে আসেন তিনি। এজেন্সি ক্যাম্পে গেলে সেখানেও মারধর করা হয়। তারা আমার কথা বিশ্বাস করে না। শরীরে গরম পানি ঢেলে নির্যাতন করে।’
স্মৃতি বেগম বলেন, ‘সেখান থেকে ঈদের দিন সুযোগ মতন সব ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। রাস্তায় এক বাঙালি ছেলের সঙ্গে দেখা হয়। তিনি একটি ফ্যামিলি বাসায় রাখেন আমাকে। সেখানে ১১ দিন পর্যন্ত আমাকে রাখছে। পরে আমার স্বামী বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যায়। সেখান থেকে স্যাররা বলেন, তোমার স্ত্রী জেদ্দা অ্যাম্বাসির ভেতর যেতে পারলে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব। পরে ঘরের জিনিসপত্র বিক্রি করে আমার স্বামী টাকা পাঠালে অনেক কষ্ট করে জেদ্দা অ্যাম্বাসিতে গিয়েছিলাম। যাওয়ার দুই ঘণ্টা পর আমাকে আবার সেই এজেন্সির লোকদের হাতেই তুলে দিছে। এজেন্সির লোক আমাকে আভার অফিসে নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ি থেকে ফের পালিয়ে আসছি। এরপর দুদিন না খেয়ে থাকছি। খারাপ ছেলের হাতে পড়ে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে পালিয়ে রাস্তার পাশে পড়েছিলাম। সেখান থেকে এক বাঙালি ভাই আমাকে উদ্ধার করে আভা শহরে তার পরিবারের সঙ্গে বাসায় রাখছে। এখানে কত দিন আর থাকব।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে এজেন্সি আমাকে এখানে আনছে তারা দেশে পাঠাবে না। তারা আমাকে বলতেছে, তোরে টাকা দিয়ে আনছি কাজ করার জন্য, তোরে কাজ করতে হইবো। কিন্তু আমার উপর যে নির্যাতন করতেছে আমার পক্ষে সেখানে কাজ করা সম্ভব না।’
স্মৃতি বেগম যখন সৌদিতে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন তখন তার স্বামী রাসেল হোসাইন দেশে এজেন্সি অফিস, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দৌড়ঝাঁপ করেও স্ত্রীকে দেশে ফেরাতে পারছেন না। রাসেল হোসাইন অভিযোগ করে বলেন, ‘এজেন্সির কাছে গেলে সেখান থেকে হুমকি দেওয়া হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে মাসখানেক আগে মতিঝিল থানায় মামলা করতে যায়। অভিযোগ লিখিত আকারে জমা দিয়েছি থানায়। পরে থানার এক এসআই আমাকে নিয়ে এজেন্সি অফিসে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলে আসছেন। এরপর মাস পেরিয়ে গেলেও মামলা রেকর্ড হয়নি। আমার স্ত্রী দেশে ফিরতে পারছে না।’
মতিঝিল থানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযোগটির তদন্ত করতে যান এসআই হাসান মিয়া। মামলা রেকর্ড না করার কারণ জানতে চাইলে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে তারা ওই নারীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিল। বিষয়টি অভিযোগকারী মেনে নেয়। পরে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। আর খোঁজ নিতে পারিনি। এখন থানায় এলে মামলা নেওয়া হবে।’
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অরক্ষিত একটি রেলক্রসিংয়ে আটকেপড়া পিকআপ ভ্যানে ট্রেনের ধাক্কায় তিন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন পুলিশের আরও দুই সদস্য এবং ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্য (মেম্বার)। গতকাল রবিবার দুপুরে সলিমপুর ইউনিয়নের ফকিরহাট এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
এদিকে গতকাল বগুড়ায় কাভার্ডভ্যানের চাপায় এক মোটরসাইকেল আরোহী, ময়মনসিংহের নান্দাইলে অটোরিকশার ধাক্কায় শিশু এবং রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলা ব্রিজে গাড়ি চাপায় অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রামে নিহতরা হলেন সীতাকুণ্ড থানার কনস্টেবল মোহাম্মদ হোসাইন, মিজানুর রহমান ও এসকান্দার আলী মোল্লা। আহত হয়েছেন একই থানার এসআই সুজন শর্মা, কনস্টেবল সমর চন্দ্র সূত্রধর ও স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহাদাত হোসেন।
জানা গেছে, দুপুর সোয়া ১২টার দিকে সীতাকুণ্ড থানা পুলিশের একটি টহল দল স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহাদাত হোসেনকে নিয়ে একটি চুরির মামলার আসামি ধরতে যাচ্ছিল। তাদের বহনকারী পিকআপ ভ্যানটি পশ্চিম থেকে পূর্ব পাশে পার হওয়ার সময় রেলক্রসিংয়ে আটকে যায়। এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী একটি ট্রেন পিকআপ ভ্যানটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই কনস্টেবল মিজানুর রহমান নিহত হন। আর আহত চার পুলিশ সদস্য ও ইউপি সদস্য শাহাদাত হোসেনকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার শামীম আহসান জানান, আহত দুই পুলিশ সদস্যের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহত আরেক পুলিশ সদস্য এবং ইউপি সদস্য শাহাদাতের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত। এই দুজনের চিকিৎসা চলছে চমেক হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগে।
এই দুর্ঘটনার বিষয়ে সীতাকুণ্ড থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘ইউপি সদস্য শাহাদাত হোসেনকে নিয়ে একটি মোবাইল ফোন উদ্ধারে যাচ্ছিল থানা পুলিশের টিম। ঘটনাস্থল ছলিমপুর রেলক্রসিংয়ে কোনো ব্যারিয়ার ছিল না। ফলে পুলিশ বহনকারী ভ্যানটি রেললাইন পার হচ্ছিল। এ সময় ট্রেন আসার বিষয়টি চালক টের পাননি। ওই রেলক্রসিংয়ে ছিল না কোনো গার্ড। দায়িত্বে গার্ডের অবহেলার কারণে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।’
গেটম্যান বরখাস্ত : চট্টগ্রামের সীতাকু-ের ফকিরহাট রেল ক্রসিংয়ের দুর্ঘটনায় রেলের গেটম্যানের গাফিলতির প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় গেটম্যান শাহরিয়ার মাহমুদ দীপুকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া বিস্তারিত জানতে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ।
তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) আনিসুর রহমান, বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (লোকো) সাজিদ হাসান ও বিভাগীয় প্রকৌশলী (ডিএন-১) রফিকুল ইসলাম এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ড্যাট রেজাউনুর রহমান।
সড়কে নিহত আরও ৩ : বগুড়ায় কাভার্ডভ্যানের চাপায় নজরুল ইসলাম (৪৫) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল বেলা ১২টার দিকে শিবগঞ্জের মহাস্থান হাতিবান্ধা এলাকায় বগুড়া-রংপুর মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত নজরুল ইসলাম বগুড়ার গাবতলী উপজেলার কাগইল ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পেশায় পরিবহন ও ইটভাটা ব্যবসায়ী ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মোবাইল ফোনে কথা বলা অবস্থায় মোটরসাইকেলে গ্রামের বাড়ি ফিরছিলেন নজরুল ইসলাম। পথে রংপুরগামী একটি কাভার্ডভ্যান মোটরসাইকেলটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে ছিটকে গিয়ে কাভার্ড ভ্যানের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান নজরুল ইসলাম। গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, কাভার্ডভ্যানটি আটক করে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তবে এর চালক ও তার সহকারী পালিয়ে গেছে।
ময়মনসিংহের নান্দাইলে দাদার সঙ্গে বাজারে গিয়ে অটোরিকশার ধাক্কায় মুসা (৩) নামে এক শিশু নিহত হয়েছে। সে উপজেলার সিংরইল ইউনিয়নের মধ্যনগর গ্রামের আলম মিয়ার ছেলে। জানা গেছে, শিশুটি দাদা জিল্লু মিয়ার সঙ্গে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে স্থানীয় ফকিরেরবাজারে যায়। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় হঠাৎ শিশুটি দাদার হাত ছেড়ে রাস্তায় চলে যায়। এ সময় চলমান একটি অটোরিকশার সঙ্গে সে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
অন্যদিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলা ব্রিজে সড়ক দুর্ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবক নিহত হয়েছেন। তার বয়স আনুমানিক ২৭ বছর। গত শনিবার রাত ১২টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে যাত্রাবাড়ী থানার এসআই ওসমান আলী উল্লেখ করেন, মধ্যরাতে যাত্রাবাড়ী কাজলা ব্রিজের পাকা রাস্তার ওপর বেপরোয়া গতির কোনো যানবাহন ওই যুবককে চাপা দিয়ে চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। নিহতের পরনে ছিল নীল রঙের ফুলহাতা শার্ট ও আকাশি রঙের থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট।
টাঙ্গাইলের গোপালপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে শিশুটি (১০)। স্কুলপর্যায়ে ক্রিকেট আর ফুটবল খেলে সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে। এবার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে স্ট্রাইকার হিসেবে ইউনিয়ন পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পুরস্কারও পেয়েছে। কিন্তু ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়ে মুষড়ে পড়েছে শিশুটি।
এরই মধ্যে তাকে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় হওয়া মামলার একমাত্র আসামি আলেপ শেখ (৬০) গত বৃহস্পতিবার আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। আর জামিনে কারামুক্ত হয়েই গলায় মালা ঝুলিয়ে ব্যান্ডপার্টি বাজিয়ে পুরো গ্রামে উল্লাস করেছেন। এতেই শেষ নয়, ধর্ষণচেষ্টার শিকার শিশুটির মা এবং মামলার বাদীর বাড়ির আঙিনায় গিয়েও আসামি ও তার লোকজন নেচে-গেয়ে আনন্দ প্রকাশ করে। এ ঘটনার পর শিশুটিকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার কথা জানিয়ে তার মা গত শনিবার থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। অন্যদিকে এমন ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন এলাকার অনেকেই। তারা ধর্ষণচেষ্টা মামলার আসামি আলেপ শেখের কঠিন শাস্তি দাবি করেন।
ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় হওয়া মামলার এজাহার অনুযায়ী, চতুর্থ শ্রেণির ওই শিশুছাত্রীকে গত ২৪ জুলাই দুপুরে কাঁঠাল খাওয়ার লোভ দেখিয়ে নির্জন বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালান গ্রামের মুদিদোকানি আলেপ শেখ। তখন শিশুটির কান্নাকাটির শব্দে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে আলেপ শেখ পালিয়ে যান। এ ঘটনায় ওই দিন বিকেলে থানায় মামলা হলে পুলিশ আলেপ শেখকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়।
শিশুটির মা শনিবার থানায় করা লিখিত অভিযোগে জানান, গত বৃহস্পতিবার আদালত থেকে জামিন নিয়ে রাত ৯টায় আলেপ শেখ গলায় মালা পরা অবস্থায় ব্যান্ডপার্টি নিয়ে গ্রামে প্রবেশ করেন। ব্যান্ডপার্টির সঙ্গে তার আত্মীয়সহ বেশ কয়েকজন উৎসুক মানুষ যোগ দেয়। তারা নেচে-গেয়ে পুরো গ্রামে উল্লাস করে। একপর্যায়ে আলেপ শেখ দলবল নিয়ে বাদীর বাড়ির আঙিনায় প্রবেশ করে নাচানাচি শুরু করে। পাশাপশি গালিগালাজ ও মারধরের হুমকি দেয়।
হেমনগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) আলীম হোসেন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় ব্যান্ডপার্টি এবং কিছু মানুষের কোলাহলের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। শিশুটির পরিবার খুবই নিরীহ। তারা এখন আতঙ্কে আছে। আসামি খারাপ প্রকৃতির লোক।’
একই গ্রামের বাসিন্দা সাহার আলী, ইব্রাহীম খলিল ও মকবুল হোসেন বলেন, শিশু নির্যাতনের মামলায় আদালত থেকে জামিন পেয়ে গলায় মালা জড়িয়ে ব্যান্ডপার্টির বাদ্যের তালে নেচে-গেয়ে এমনভাবে আনন্দ প্রকাশ কোনো সভ্যতার পর্যায়ে পড়ে না। তবে প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ আলেপ শেখের অপকর্মের প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।
উড়িয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আছিয়া বেগম বলেন, ‘শিশুটি (ধর্ষণচেষ্টার শিকার) খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বেশ ভালো। এমন ঘটনায় সে চুপসে গেছে। কয়েক দিন স্কুলে আসেনি। ব্যান্ডপার্টির ঘটনায় ওই শিশু আর তার অসহায় পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আমরা এর কঠিন শাস্তি চাই। যাতে ভবিষ্যতে এমন অপরাধ করার সাহস কেউ না পায়।’
আলেপ শেখের সঙ্গে যাওয়া ব্যান্ডপার্টির প্রধান কালিহাতী উপজেলার নারান্দিয়া গ্রামের বাসিন্দা অনিক মিয়া বলেন, ‘অ্যাডভোকেট রবিউল হাসান রতন আমাদের ব্যান্ডপার্টিকে ৩ হাজার ৪০০ টাকায় ভাড়া করেন। রাত ৯টায় আমরা ওই গ্রামে যাই। রাত ১২টা পর্যন্ত সারা গ্রাম ঘুরে বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে সবাইকে আনন্দ দিই। জেলখানা থেকে আসামি বের হলে যে বাজনা বাজায়, এ কাজ প্রথম করলাম।’
হেমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান তালুকদার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘ধর্ষণচেষ্টা মামলায় জামিন পেয়ে কোনো আসামি এভাবে আনন্দ উৎসব করে বলে আমার জানা নেই। এতে ভুক্তভোগী শিশুটি আরও নিরাপত্তাহীনতা এবং সম্মানহানির অবস্থায় আছে। আমরা অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
মুক্তিযোদ্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আঞ্জুয়ারা ময়না বলেন, ‘তালিকাভুক্ত শিশু ফুটবলার ও ক্রিকেটার এই শিশু মানসিকভাবে শকড হওয়ায় (আঘাত পাওয়ায়) আমরা তাকে হয়তো হারাতে বসেছি। এ ঘটনার তদন্ত এবং শাস্তি দাবি করছি।’
শিশুটির মামা বলেন, ‘আমার বোনটি অসহায়। আসামিরা অত্যন্ত প্রভাবশালী। জামিনে বের হয়ে যে কাণ্ড করেছে, এটা কেউ করে না। আমরা যথাযথ বিচার চাই।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আসামি আলেপ শেখের ছেলে জীবন মিয়া বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে তাদের (শিশুটির পরিবার) বাপ-দাদার আমল থেকে বিরোধ। মামলাটি মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক। আমার বাবা এক মাস জেল খাটার পর অ্যাডভোকেট রবিউল হাসান রতনের উদ্যোগে ব্যান্ডপার্টি বাজানো হয়েছে।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও হেমনগর পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের এসআই বশির আহমেদ বলেন, ‘জামিন পাওয়ার পর বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গ্রামে আনন্দ-উৎসব করার ঘটনা সত্য। ধর্ষণচেষ্টায় হওয়া মামলার অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। দ্রুতই আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেওয়া হবে।’
গোপালপুর থানার ওসি মোশারফ হোসেন জানান, বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে আসামি দলবল নিয়ে বাদী ও ভুক্তভোগীর বাড়িতে গিয়ে গালিগালাজ ও হুমকির অভিযোগে থানায় জিডি করা হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করবে।
‘রূপায়ণ সিটি উত্তরায় এসে দেখলাম, বাতাসের গতিপ্রবাহ ঠিকমতো হচ্ছে। সূর্যের আলো ঠিকমতো দেখা যাচ্ছে। এ যেন শহরের মধ্যে গ্রামীণ পরিবেশ।’ গতকাল রবিবার রূপায়ণ সিটি উত্তরা পরিদর্শনে এসে এ মন্তব্য করেন হেলথ রেভল্যুশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ডা. জাহাঙ্গীর কবির।
রূপায়ণ গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান মাহির আলী খাঁন রাতুল গতকাল ডা. জাহাঙ্গীরকে রূপায়ণ সিটি উত্তরার মেইন অ্যাভিনিউ, পায়রা চত্বর, স্কাই ভিলা, রেইন ফরেস্ট, সান ডেক, রিডিং লাউঞ্জ, মুভি থিয়েটার, জিমনেশিয়াম, সুইমিংপুল সাইট, কমিউনিটি হল, কমিউনিটি ক্লাব, জগিং ট্র্যাকসহ পুরো প্রকল্প ঘুরিয়ে দেখান।
এ সময় ডা. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘অনেক রোগী আছেন যারা আমাকে জানান, ঢাকায় অনেক জায়গা আছে সেখানে ঘাস নেই। কিন্তু এখানে এসে ঘাস দেখা গেল। ভালোভাবে হাঁটার জায়গাও আছে। তাছাড়া এখানে সান ডেক, জিমনেশিয়াম, সুইমিংপুল সাইট, জগিং ট্র্যাকসহ অনেক কিছুই আছে। যেগুলোর জন্য আলাদা করে কোনো টাকা দিতে হচ্ছে না। তবে যারা ঢাকা শহরে ফ্ল্যাট কিনছেন, তারা কিন্তু এখানে যেরকম পরিবেশ, সেরকম পাচ্ছেন না। তবে আমি এখানে স্বাস্থ্যকর কিছু খাবারের পরামর্শ দেব। যেন সবসময় এখানে হেলথি খাবারের ব্যবস্থা থাকে ফুড শপগুলোতে। কারণ যখন একটা মানুষের খাবার ঠিক থাকবে, ঘুম ঠিক থাকবে, বাতাস ঠিক থাকবে, আলো ঠিক থাকবে তখন কিন্তু এখানের লোকগুলো সবসময় সুস্থ থাকবে।’
‘আমার কাছে এটা স্বপ্নের মতো একটি প্রজেক্ট মনে হচ্ছে’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এখানে এসে আমি ভাবলাম এখানের কমিউনিটি যখন পুরো ভরে যাবে তখন তাদের স্বাস্থ্য বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করব। তারা যদি আমাদের স্বাস্থ্যবিষয়ক নির্দেশনাগুলো মেনে চলে। সেই সঙ্গে তাদের কেউ যদি কোনো রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে তাদের আমরা পরামর্শ দেব কীভাবে চললে সুস্থ থাকতে পারবে। তাছাড়া এই এলাকাটা একসময় হেলথ জোন হয়ে যাবে। এখন সবার তো আর এখানে থাকার মতো জায়গা হবে না। তবে এখানের আইডিয়াটা যদি সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তারা যদি একবার এখানে এসে সবকিছু দেখে যায়, তাহলে এখানের পরিবেশের মতো তারাও বানাতে পারবে।’
রূপায়ণ গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান মাহির আলী খাঁন রাতুল বলেন, ‘হেলথ রেভল্যুশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ডা. জাহাঙ্গীর কবির রূপায়ণ সিটি উত্তরা ভিজিট করায় আমরা খুবই আনন্দিত। তাছাড়া রূপায়ণ অনেক দিন ধরে আবাসন খাতে একটি সুস্থ জাতি গড়ার ক্ষেত্রে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আজকে এই কাজে ওনার (ডা. জাহাঙ্গীর কবির) উপস্থিতি আমাদের অন্যমাত্রায় নিয়ে গেছে। আসলে উনি মানুষের সুস্বাস্থ্য নিয়ে বাংলাদেশে একটি বিপ্লব ঘটিয়েছেন। নতুন একটি ধারাবাহিকতা নিয়ে এসেছেন, মানুষ কীভাবে স্বাভাবিকভাবে ভালো থাকতে পারে। সেই স্বপ্ন থেকে আমাদের লক্ষ্য যেহেতু এক, আমরা চাই জাতি সুস্থ থাকুক। সেখান থেকে ওনার এ ভিজিট ও চিকিৎসা পরামর্শ; সেগুলো আমাদের কমিউনিটিগুলো কীভাবে আরও ভালো করতে পারব সেটি নিয়ে আমরা কাজ করব। তখন আমরাও হেলথ রেভল্যুশনের সামনে একটি বিপ্লব ঘটাব।’
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, আঞ্চলিক ভারসাম্য রক্ষার কারণেই বাংলাদেশ এবার অর্থনৈতিক জোট ব্রিকসের সদস্য হতে পারেনি। এতে আশাহতের তেমন কিছু দেখছি না। আমাদের আরও সময় আছে। আগামীতে জোটের সদস্যপদ পাওয়া যাবে। গতকাল রবিবার রাতে সাংবাদিকদের ব্রিকসে বাংলাদেশের যুক্ত হতে না পারা নিয়ে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
ইথিওপিয়ার মতো একটি দেশ আমন্ত্রণ পেল অথচ বাংলাদেশ পেল না এ নিয়ে সরকারের মূল্যায়ন কী, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র সচিব মোমেন বলেন, এখানে রাজনৈতিক এবং আঞ্চলিক অনেক ইস্যু আছে। এটা সদস্যপদগুলো খেয়াল করলেই দেখা যায়। লাতিন আমেরিকা থেকে এক দেশ, নর্থ আফ্রিকা থেকে একটা, আবার মধ্যপ্রাচ্য থেকেও নিয়েছে। সুতরাং তারাও জিওগ্রাফিক্যাল একটা ব্যালান্স করার চেষ্টা করেছে।
তিনি বলেন, আমাদের পাশে আরও দেশ ছিল এবং তারা বেশ আগ্রহী ছিল, কিন্তু পায়নি। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। এখানে রাজনৈতিক পর্যায়ে বলতে পারেন, আমরা ছয়জনের মধ্যে এবার ছিলাম না। কিন্তু আমরা ব্রিকসের রিয়েল যে আউটরিচটা (নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) আছে, ওটার মাধ্যমে আমাদের লাভবান হওয়ার সুযোগটা আছে। সেটাতে আমরা আছি।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আগামীতে ব্রিকসে সদস্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবার ব্রিকস সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট তার বক্তব্যে বলেছেন, এটা প্রথম ধাপ। পরে আরও ধাপ আসবে। আমরা আশা করছি যে, পরবর্তী ধাপে হবে। ইতিমধ্যে আমরা একটু সময় পেলাম।
ব্রিকসকে পশ্চিমা অর্থনীতির বিকল্প প্ল্যাটফর্ম বলা হচ্ছেÑ এ প্রসঙ্গে মাসুদ বিন মোমেনের মন্তব্য, সবাই যেভাবে বলছিলÑ ব্রিকস জি-৭ বা পশ্চিমা অর্থনীতির বিকল্প প্ল্যাটফর্ম হবে, বিষয়টি এত সহজ নয়। এবার কিন্তু আমরা সে ধরনের কিছু দেখিনি। ব্রিকসের তো ১৫ বছর হয়ে গেল। সুতরাং ট্যানজিবল আউটকামের দিকে যদি আপনারা দেখেন, একমাত্র এনডিবি ছাড়া তেমন একটা চোখে পড়েনি। সুতরাং আমরা এনডিবির পার্ট আছি, এখানে আশাহতের তেমন কিছু দেখছি না। সুতরাং আমাদের আরও সময় আছে।
তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ সফরে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আগামী বছরের মার্চ মাসে হয়তো আসবেন। আমাদের সঙ্গে অনেক প্রজেক্ট তিনি করবেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের বাংলাদেশ সফরের সম্ভাবনা রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়েছে; কিন্তু আনুষ্ঠানিক আলোচনার প্রেক্ষাপটে নয়। তার আসার একটা সম্ভাবনা তো আছে। টাইমিং নিয়ে আমরা কাজ করছি।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।
প্রাচীন সময় থেকে মানুষের খাদ্যতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে চীজ বা পনির। গরুর দুধের তৈরি পনিরে শরীরকে সুস্থ রাখার প্রয়োজনীয় সব উপাদান পাওয়া যায়।
বর্তমানে সময়ের সাথে সাথে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পনিরের ব্যবহার। আর তাই বিস্কিট থেকে শুরু করে পাউরুটি, পাস্তা, পিৎজা অনেক কিছুতেই পনির ব্যবহার হয়।
পনিরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের মতে, ১০০ গ্রাম পনিরের মধ্যে রয়েছে:
শক্তি - ৩৬২ কিলোক্যালরি
প্রোটিন – ৫.১৭ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট - ৫০ গ্রাম
ক্যালসিয়াম - ৬৯ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম - ১৮১ মিলিগ্রাম
স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড – ৩.৪৫ গ্রাম
কোলেস্টেরল - ৩৪ মিলিগ্রাম
এটি প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস। পনিরের বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে।
পনির ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এবং প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এটি বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অনেক উপকারি। পনিরে থাকা ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পনির খেলে অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করা যায়।
পনির ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা শক্তিশালী ও মজবুত দাঁত তৈরিতে অবদান রাখে। পনিরে থাকা কেসিন ফসফোপেপটাইড উপাদান দাঁতের গহ্বর কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া চিউইং চিজ মুখের পিএইচ মাত্রা বাড়াতে পারে এবং সামগ্রিক মৌখিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
পনিরে অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড যেমন কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস। কোরিয়া ইউনিভার্সিটি এবং ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ফ্যাটি অ্যাসিডে ক্যান্সার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ ছাড়া এই ফ্যাটি অ্যাসিড এথেরোস্ক্লেরোসিস এর বিকাশ রোধ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে।
পনিরে কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড এবং স্ফিংগোলিপিড রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে স্ফিংগোলিপিড মানুষের কোলন ক্যান্সারকে বাধা দিতে পারে।
এ ছাড়া পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে খাদ্যতালিকাগত ক্যালসিয়াম কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ উপকারি।
পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই উপকারি। এটি প্রসবের সময় সংকোচনকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া উকের দুধ পান করানোর সময় ক্যালসিয়াম পুষ্টির ঘাটতিও পূরণ করে পনির। এটি গর্ভবতী মহিলাদের ভ্রূণের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে।
কিছু ধরণের পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যকারিতা বাড়াতে পরিচিত। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে পনির শরীরের প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটি অসুস্থতা এবং রোগ কমাতে পারে।
প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সুরক্ষিত পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। এটি বয়স্কদেরমধ্যে ইমিউনোসেনেসেন্স (প্রতিরোধ ব্যবস্থার ধীরে ধীরে দুর্বল হওয়া) প্রতিরোধ করতে পারে।
পনির সেলেনিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা থাইরয়েড ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সেলেনিয়ামের থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করে ভাইরাসের বিকাশকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে।
চেডার পনির হল এক ধরনের হার্ড পনির। এটি খাদ্যতালিকায় যোগ করলে তা থাইরয়েড রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
পনিরের আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলির মধ্যে একটি হল মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করা। বিশেষ করে ক্যামেমবার্ট জাতের পনির এই ধরনের কাজ করে থাকে। ক্যামেমবার্ট পনির প্রদাহজনক সাইটোকাইনের মাত্রা কমাতে পারে। এটি আলঝাইমার রোগের ঝুঁকি কমায় এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।
পনির ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। এতে থাকা ভিটামিন বি কোষের বিপাক এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে এটি উজ্জ্বল ত্বকের পাশাপাশি ত্বকের দাগ কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
যাদের গরুর দুধে অ্যালার্জি আছে তাদের পনির এড়ানো উচিত। এটি অ্যালার্জি, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথার কারণ ও হতে পারে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (অতিরিক্ত পনির খাওয়া) কার্ডিওভাসকুলার রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
পনিরের স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ও রয়েছে। যেমন,
কিছু লোকের দুধের প্রোটিন যেমন কেসিনে অ্যালার্জি থাকে। এটি সারা শরীর জুড়ে একটি প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং ত্বকে ফুসকুড়ি, সাইনাস কনজেশন এবং ব্রণ জ্বলতে পারে।
অনেকের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা থাকে। সেক্ষেত্রে তাদের পনির না খাওয়াই শ্রেয়। কারণ ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা গ্যাস, পেট ফোলাভাব এবং ডায়রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। অনেক সময় এর কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে।
প্রচুর পরিমাণে পনির খাওয়ার ফলে মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথা হতে পারে। পুরনো পনিরে থাকা টাইরামিন উপাদান কিছু ব্যক্তির মধ্যে মাইগ্রেনকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
যারা মোনোমাইন অক্সিডেস ইনহিবিটরস (MOIs) গ্রহণ করছেন তাদের পনির খাওয়া এড়ানো উচিত। এই ওষুধগুলি হতাশার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এসব ওষুধ পুরনো বা বয়স্ক পনিরে থাকা উপাদান টাইরামিনের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হবে ২ নভেম্বর। পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন তা নিয়ে এখন চলছে আলোচনা, কানাঘুষা; শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ।
বর্তমান উপাচার্যই আবার দায়িত্ব পাবেন নাকি নতুন কাউকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে এ আলোচনাই চলছে এখন। আলোচিত হচ্ছে কয়েকজন শিক্ষকের নামও। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন কানাঘুষারও অবসান হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ পদে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের মধ্য থেকেই কাউকে বাছাই করার বিষয়টি একপ্রকার নিশ্চিত। বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের এ বিষয়ে আগ্রহ নেই। গুণী কোনো শিক্ষক উপাচার্যবিষয়ক আলোচনার মধ্যে নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা হবে কি না, এ বিষয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের ১১(১) ধারা অনুযায়ী, উপাচার্য নিয়োগে তিন সদস্যবিশিষ্ট প্যানেল নির্বাচনের দায়িত্ব সিনেটের। সিনেট নির্বাচিত তিনজনের মধ্য থেকে একজনকে উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এবং রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। রাষ্ট্রপতি তাকে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেন।
রীতি অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের জন্য সিনেটের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করা হয়। কিন্তু এবার সিনেট অধিবেশন হওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। উপাচার্য অধিবেশন ডাকবেন কি ডাকবেন না; ওপর মহলের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কেউ কিছু জানেন না। উপাচার্য নিজেও বিষয়টি খোলাসা করছেন না।
অধ্যাদেশের ১১(২) ধারা অনুযায়ী, কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যেমন অসুস্থতা, ছুটি, অপসারণ বা অন্য কোনো কারণে উপাচার্যের পদ শূন্য হলে একজনকে অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা বলছেন, অধ্যাদেশের নিয়ম অনুসরণ করে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করা হোক। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং আগামী নির্বাচনেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। নতুন উপাচার্যের গ্রহণযোগ্যতাও বাড়বে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, ‘ভিসি প্যানেল নিয়ে আলোচনা নেই। উপাচার্যও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে আমাদের জানা নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট সদস্য ও শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল সবচেয়ে বেশি আলোচিত। তাদের মধ্য থেকেই কারোর পরবর্তী উপাচার্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম এ বিষয়ক আলোচনায় রয়েছেন।
অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পান। পরে প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর উপাচার্য পদে পুনর্নিয়োগ পান তিনি। সাত বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সামলাচ্ছেন তিনি। দুই মেয়াদের বেশি উপাচার্য থাকার নজির নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই তার দায়িত্ব পালনের শেষ দেখছেন অনেকে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষকদের মধ্যেও তাকে নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে পুনরায় নিয়োগ পেতে পারেন তিনি।
ইমেরিটাস অধ্যাপক বা অন্য কোনো গুণী শিক্ষক নেই উপাচার্য নিয়োগের আলোচনায়। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গুণী শিক্ষকদের সামনে আনার যে ধরনের কাঠামো থাকা উচিত তা নেই। যারা তোশামোদ করতে পারে, অন্ধ আনুগত্য প্রকাশ করতে পারে, তাদেরই প্রশাসনের শীর্ষ পদে নিয়ে আসা হয়। সত্যিকারের গুণী শিক্ষক এবং অনেক ভালো গবেষক আছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারা কখনো প্রশাসনের দায়িত্বে আসতে পারেন না। তারা ব্যক্তিত্বের জলাঞ্জলি দিতেও রাজি নন।’
অতীতে উপাচার্যদের মধ্যে অ্যাকাডেমিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে একটা ভারসাম্য ছিল। এখন তা নেই। এখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও আনুগত্যের ভিত্তিতে প্রশাসনিক পদগুলো দেওয়া হয়।
পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন বা ভিসি প্যানেল নিয়ে আগ্রহ নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের। বিএনপিঘোষিত এক দফাতেই তারা মগ্ন। যদিও সিনেটে তিনজন প্রতিনিধি থাকায় সুযোগ তাদেরও রয়েছে। সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার পরিবর্তন না হলে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিষয়ে ভাবছি না। এ বিষয়ে আমাদের ফোকাস নেই। আমাদের ফোকাস হচ্ছে এ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। জাতীয় রাজনীতিতে পরিবর্তন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও পরিবর্তন আসবে।’
শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও সাংগঠনিকভাবে আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমরা নীল দল এখনো এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করিনি। যথাসময়ে দলের সভায় এ নিয়ে কথা হবে। মনোনয়ন কে পাবেন, তার আলোচনাও সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে। বর্তমান প্রশাসনের শীর্ষ তিনজন বিশেষভাবে আলোচনায় থাকবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই দায়িত্ব দেবেন। আমরা উনাদের সমর্থন করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ীই সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।’
বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইনের গতি অনুযায়ীই সব চলবে। এ বিষয়ে যাদের ভাবা প্রয়োজন তারা অবশ্যই ভাববেন।’ সিনেটের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশেষ অধিবেশন ডাকার প্রয়োজন হলে আমরা ডাকি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।