
‘রূপায়ণ সিটি উত্তরায় এসে দেখলাম, বাতাসের গতিপ্রবাহ ঠিকমতো হচ্ছে। সূর্যের আলো ঠিকমতো দেখা যাচ্ছে। এ যেন শহরের মধ্যে গ্রামীণ পরিবেশ।’ গতকাল রবিবার রূপায়ণ সিটি উত্তরা পরিদর্শনে এসে এ মন্তব্য করেন হেলথ রেভল্যুশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ডা. জাহাঙ্গীর কবির।
রূপায়ণ গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান মাহির আলী খাঁন রাতুল গতকাল ডা. জাহাঙ্গীরকে রূপায়ণ সিটি উত্তরার মেইন অ্যাভিনিউ, পায়রা চত্বর, স্কাই ভিলা, রেইন ফরেস্ট, সান ডেক, রিডিং লাউঞ্জ, মুভি থিয়েটার, জিমনেশিয়াম, সুইমিংপুল সাইট, কমিউনিটি হল, কমিউনিটি ক্লাব, জগিং ট্র্যাকসহ পুরো প্রকল্প ঘুরিয়ে দেখান।
এ সময় ডা. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘অনেক রোগী আছেন যারা আমাকে জানান, ঢাকায় অনেক জায়গা আছে সেখানে ঘাস নেই। কিন্তু এখানে এসে ঘাস দেখা গেল। ভালোভাবে হাঁটার জায়গাও আছে। তাছাড়া এখানে সান ডেক, জিমনেশিয়াম, সুইমিংপুল সাইট, জগিং ট্র্যাকসহ অনেক কিছুই আছে। যেগুলোর জন্য আলাদা করে কোনো টাকা দিতে হচ্ছে না। তবে যারা ঢাকা শহরে ফ্ল্যাট কিনছেন, তারা কিন্তু এখানে যেরকম পরিবেশ, সেরকম পাচ্ছেন না। তবে আমি এখানে স্বাস্থ্যকর কিছু খাবারের পরামর্শ দেব। যেন সবসময় এখানে হেলথি খাবারের ব্যবস্থা থাকে ফুড শপগুলোতে। কারণ যখন একটা মানুষের খাবার ঠিক থাকবে, ঘুম ঠিক থাকবে, বাতাস ঠিক থাকবে, আলো ঠিক থাকবে তখন কিন্তু এখানের লোকগুলো সবসময় সুস্থ থাকবে।’
‘আমার কাছে এটা স্বপ্নের মতো একটি প্রজেক্ট মনে হচ্ছে’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এখানে এসে আমি ভাবলাম এখানের কমিউনিটি যখন পুরো ভরে যাবে তখন তাদের স্বাস্থ্য বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করব। তারা যদি আমাদের স্বাস্থ্যবিষয়ক নির্দেশনাগুলো মেনে চলে। সেই সঙ্গে তাদের কেউ যদি কোনো রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে তাদের আমরা পরামর্শ দেব কীভাবে চললে সুস্থ থাকতে পারবে। তাছাড়া এই এলাকাটা একসময় হেলথ জোন হয়ে যাবে। এখন সবার তো আর এখানে থাকার মতো জায়গা হবে না। তবে এখানের আইডিয়াটা যদি সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তারা যদি একবার এখানে এসে সবকিছু দেখে যায়, তাহলে এখানের পরিবেশের মতো তারাও বানাতে পারবে।’
রূপায়ণ গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান মাহির আলী খাঁন রাতুল বলেন, ‘হেলথ রেভল্যুশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ডা. জাহাঙ্গীর কবির রূপায়ণ সিটি উত্তরা ভিজিট করায় আমরা খুবই আনন্দিত। তাছাড়া রূপায়ণ অনেক দিন ধরে আবাসন খাতে একটি সুস্থ জাতি গড়ার ক্ষেত্রে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আজকে এই কাজে ওনার (ডা. জাহাঙ্গীর কবির) উপস্থিতি আমাদের অন্যমাত্রায় নিয়ে গেছে। আসলে উনি মানুষের সুস্বাস্থ্য নিয়ে বাংলাদেশে একটি বিপ্লব ঘটিয়েছেন। নতুন একটি ধারাবাহিকতা নিয়ে এসেছেন, মানুষ কীভাবে স্বাভাবিকভাবে ভালো থাকতে পারে। সেই স্বপ্ন থেকে আমাদের লক্ষ্য যেহেতু এক, আমরা চাই জাতি সুস্থ থাকুক। সেখান থেকে ওনার এ ভিজিট ও চিকিৎসা পরামর্শ; সেগুলো আমাদের কমিউনিটিগুলো কীভাবে আরও ভালো করতে পারব সেটি নিয়ে আমরা কাজ করব। তখন আমরাও হেলথ রেভল্যুশনের সামনে একটি বিপ্লব ঘটাব।’
পরিবারের সচ্ছলতার আশায় সৌদি আরব গিয়ে এখন জীবন নিয়ে ফেরায় দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে ঢাকার কেরানীগঞ্জের স্মৃতি বেগমের (২৭)। যে বাসায় কাজে গিয়েছিলেন সেখানে প্রতিনিয়ত শারীরিক নির্যাতন, খাবার না দেওয়া ও যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়েছে তাকে। এ কারণে বাসা ছেড়ে বর্তমানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তার কাছে পাসপোর্ট না থাকায় দেশে ফিরতে চাইলেও পারছেন না। স্মৃতি বেগমের অভিযোগ, সৌদির বাংলাদেশ দূতাবাসে গিয়েও দেশে ফেরার পথ পাননি। আর তার স্বামী রাসেল হোসাইনের অভিযোগ, খাজা পরিবহন সংস্থা নামে এক এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি গেছেন তার স্ত্রী। রাজধানীর মতিঝিলের টয়েনবি সার্কুলার রোডে অবস্থিত ওই এজেন্সির ম্যানেজার ইউনুস সরকারসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা করতে থানায় গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি।
আরেক ভুক্তভোগী ঢাকার কুলসুম বেগম (ছদ্মনাম)। মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতনে চাকরির লোভ দেখিয়ে তাকে গত বছরের ১১ নভেম্বর সৌদি আরব নেয় একটি চক্র। কিন্তু চাকরি না দিয়ে সৌদির রিয়াদের হামজা তানু তায়ফাতে আটকে রেখে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়। বিষয়টি দেশে স্বজনদের জানালে কুলসুমের ছেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ওই এজেন্সি অফিসে গিয়ে মাকে দেশে ফেরানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু উল্টো এজেন্সির লোকরা তাকে বেদম মারধর করেন। তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও থানায় মায়ের ওপর নির্যাতনের ঘটনা উল্লেখ করে মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
পরিবারের সচ্ছলতা আনতে প্রতি বছর হাজার হাজার নারী কাজের সন্ধানে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে বিনা খরচে সৌদি আরব যাচ্ছেন। বাসায় কাজের জন্য মোটা অঙ্কের টাকায় তাদের একপ্রকার কিনে নিচ্ছে সৌদির বিভিন্ন গৃহকর্তা। এই টাকা পাচ্ছে রিক্রুটিং এজেন্সি। পরে এজেন্সি সেই টাকা থেকে বিমানভাড়া খরচ করে কর্মী পাঠায় সৌদি আরবে। জানা যায়, সৌদি গৃহকর্তা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য টাকা দিয়ে গৃহকর্মী কিনে নেয় বলে চুক্তি শেষ হওয়ার আগে চাইলেও নির্যাতনের শিকার নারীরা ফিরতে পারেন না।
পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাওয়া নারীকর্মীদের ৪৪ দশমিক ৮০ ভাগের গন্তব্যই থাকছে সৌদি আরব। আর এরই সুযোগ নিচ্ছে মানব পাচারকারী চক্রগুলো। সৌদি পৌঁছে কিছুদিনের মধ্যে তাদের জীবন হয়ে উঠছে দুর্বিষহ। অনেকে নির্যাতন সইতে না পেরে এজেন্সি ক্যাম্প বা বাসাবাড়ি থেকে পালিয়ে পড়ছেন আরেক বিপদে। নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে তাদের দেশে ফিরতে হচ্ছে। অনেকে ফিরছেন লাশ হয়ে। সর্বশেষ গত ৩ জুন সৌদি আরব থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফেরেন ১২ নারীকর্মী।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্যমতে, সৌদি আরবে নারীকর্মী যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে ২০১৫ সাল থেকে। এ বছর ২০ হাজার ৯৫২ জন নারী সৌদি আরব যান। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৬৮ হাজার ২৮৬, ৮৩ হাজার ৩৫৪, ৭৩ হাজার ৭১৩, ৬২ হাজার ৫৭৮, ১২ হাজার ৭৩৫, ৫৩ হাজার ৮২ এবং ৭০ হাজার ২৭৯ নারীকর্মী সৌদি আরবে গিয়েছেন। আর চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত যান ৩০ হাজার ১৮১ জন।
জানতে চাইলে অভিবাসনকারীদের নিয়ে কাজ করা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কেউ নির্যাতনের শিকার হলে তাহলে সেখানেই (সৌদি) তাকে মামলা করতে হবে। প্রমাণ হলে তার নিয়োগকর্তার শাস্তি হয়ে যাবে।
অনেকে অভিযোগ করেছেন, কর্মীদের সৌদি আবর পাঠানোর আগে সেখানে নিয়োগকর্তার হাতে নির্যাতনের শিকার হলে কী করতে হবে সে সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া হয় না। এ কারণে অনেক নির্যাতিত নারী সেখানে আইনগত সহায়তা পান না।
তবে নারীকর্মীরা সৌদি আরব যাওয়ার পর কোনো সমস্যায় পড়লে কী করবেন সে বিষয়ে দুই মাসের ট্রেনিং দেওয়া হয় বলে দাবি করছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, মূল সমস্যা অনেক নারী মনোযোগ দিয়ে ট্রেনিং করেন না। ফলে সেখানে গিয়ে কোনো বিপদে পড়লে বুঝতে পারেন না কোথায় যাবেন, কী করবেন। নারীকর্মীরা সৌদির ভাষা না জানাও সমস্যার অন্যতম বলে মনে করছেন তারা।
নাম প্রকাশ না করে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরে থেকে যেমন মনে হচ্ছে সৌদিতে সব মেয়ে কষ্টে আছে বিষয়টি কিন্তু এমন না। সৌদি আরবে যাওয়া নারীকর্মীদের মধ্যে ২০ ভাগ সমস্যায় পড়ছেন। তাদের মধ্যে ১০ ভাগের সমস্যা গুরুতর।’
যৌন নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যারা এ ধরনের সমস্যায় পড়ছেন তাদের জন্য আমাদের সেফ হোম রয়েছে। সেখানে এলে আমরা তাদের দেশে আনার ব্যবস্থা করি।’
নারীকর্মীদের মূল সমস্যা ভাষা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাদের কোনো কর্মঘণ্টা নেই। বাসায় সকাল থেকে রাত ১০টা বা ১১টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। অনেকে বিষয়টি মেনে নিতে পারেন না। এ ছাড়া সেখানকার খাবারেও তাদের সমস্যা।’
গত ৩ জুন নির্যাতনের শিকার হয়ে সৌদি থেকে দেশে ফেরেন ১২ নারীকর্মী। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহায়তায় দেশে ফেরেন তারা। বিমানবন্দরেই গণমাধ্যমকে ভয়াবহ সেই নির্যাতনের বর্ণনা দেন। এ সময় তাদের বুক, পেটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন দেখায়। লোহার রড দিয়ে মারা হতো তাদের। কখনো আবার চাবুক দিয়ে মারতেন গৃহকর্তারা।’
নির্যাতনের শিকার হয়ে আটকে আছেন কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন ভাগনা এলাকার বাসিন্দা স্মৃতি বেগম। তিনি দেশ রূপান্তরকে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। স্বামী অটোরিকশা চালান। সংসারে আর্থিক সংকট লেগেই থাকত। পরিবারের সচ্ছলতার আশায় দালালের মাধ্যমে গত ২৩ মে সৌদি আরব যান। তাকে শুধু পাসপোর্ট করার টাকা দিতে হয়েছিল। বলা হয়েছিল ভালো কাজ দেওয়া হবে। মোটা অঙ্কের বেতনও পাবেন। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পরই তার জীবনে নেমে আসে দুর্বিষহ যন্ত্রণা।’
স্মৃতি বেগম কান্না করতে করতে বলেন, ‘আমি অনেক অসুবিধায় আছি। যদি পারেন এখান থেকে আমাকে উদ্ধার করেন, আমার জীবনটা বাঁচান।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাসাবাড়িতে কাজের কথা বলে আমাকে প্রথমে সৌদির রিয়াদে নিয়ে একটি ক্যাম্পে রাখে। সেখান থেকে পাঠায় আভা শহরে (আবহা সৌদি আরবের আছির প্রদেশের রাজধানী) পরে ২৮ মে কফিলের বাসায় পাঠায়। (কোনো এক ব্যক্তির অধীনে বিদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ দেওয়াই হলো কাফালা পদ্ধতি। যেখানে একজন কফিল কোনো বিদেশি কর্মীকে স্পনসর করলে সে কর্মী সৌদি আরবে যেতে পারেন এবং সেখানে যাওয়ার পর ওই নিয়োগকর্তার অধীনে কাজ করতে হয় তাকে। এ ক্ষেত্রে ওই কর্মীর কাজ পরিবর্তনসহ সার্বিক সব বিষয় নির্ভর করে নিয়োগকর্তার ওপর)। সেখানে কাজ শুরু করার পাঁচ দিন পর থেকে আমাকে খাবার দেওয়া বন্ধ করে দেয়। সারা দিন পর কখনো দুই পিস রুটি ও কলা দেয়। আবার কখনো কিছুই দেয় না শুধু পানি খেয়ে থাকতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘বাসার ম্যাডামের স্বামীর স্বভাবচরিত্র খারাপ। বিষয়টি নিয়ে ম্যাডামের কাছে বিচার দেওয়ার পর থেকে আমার ওপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। এতে আমার অনেক জ্বর আসে। চার দিন ধরে না খাইয়ে রাখে। এ সময় ওনারা এক পার্টিতে যান, সেখানে আমাকে কাজের জন্য নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে এক বাঙালি নারী ডাক্তারের কাছে নেন। কিছুটা সুস্থ হলে আমাকে এজেন্সি ক্যাম্পে নিয়ে রেখে আসেন তিনি। এজেন্সি ক্যাম্পে গেলে সেখানেও মারধর করা হয়। তারা আমার কথা বিশ্বাস করে না। শরীরে গরম পানি ঢেলে নির্যাতন করে।’
স্মৃতি বেগম বলেন, ‘সেখান থেকে ঈদের দিন সুযোগ মতন সব ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। রাস্তায় এক বাঙালি ছেলের সঙ্গে দেখা হয়। তিনি একটি ফ্যামিলি বাসায় রাখেন আমাকে। সেখানে ১১ দিন পর্যন্ত আমাকে রাখছে। পরে আমার স্বামী বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যায়। সেখান থেকে স্যাররা বলেন, তোমার স্ত্রী জেদ্দা অ্যাম্বাসির ভেতর যেতে পারলে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব। পরে ঘরের জিনিসপত্র বিক্রি করে আমার স্বামী টাকা পাঠালে অনেক কষ্ট করে জেদ্দা অ্যাম্বাসিতে গিয়েছিলাম। যাওয়ার দুই ঘণ্টা পর আমাকে আবার সেই এজেন্সির লোকদের হাতেই তুলে দিছে। এজেন্সির লোক আমাকে আভার অফিসে নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ি থেকে ফের পালিয়ে আসছি। এরপর দুদিন না খেয়ে থাকছি। খারাপ ছেলের হাতে পড়ে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে পালিয়ে রাস্তার পাশে পড়েছিলাম। সেখান থেকে এক বাঙালি ভাই আমাকে উদ্ধার করে আভা শহরে তার পরিবারের সঙ্গে বাসায় রাখছে। এখানে কত দিন আর থাকব।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে এজেন্সি আমাকে এখানে আনছে তারা দেশে পাঠাবে না। তারা আমাকে বলতেছে, তোরে টাকা দিয়ে আনছি কাজ করার জন্য, তোরে কাজ করতে হইবো। কিন্তু আমার উপর যে নির্যাতন করতেছে আমার পক্ষে সেখানে কাজ করা সম্ভব না।’
স্মৃতি বেগম যখন সৌদিতে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন তখন তার স্বামী রাসেল হোসাইন দেশে এজেন্সি অফিস, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দৌড়ঝাঁপ করেও স্ত্রীকে দেশে ফেরাতে পারছেন না। রাসেল হোসাইন অভিযোগ করে বলেন, ‘এজেন্সির কাছে গেলে সেখান থেকে হুমকি দেওয়া হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে মাসখানেক আগে মতিঝিল থানায় মামলা করতে যায়। অভিযোগ লিখিত আকারে জমা দিয়েছি থানায়। পরে থানার এক এসআই আমাকে নিয়ে এজেন্সি অফিসে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলে আসছেন। এরপর মাস পেরিয়ে গেলেও মামলা রেকর্ড হয়নি। আমার স্ত্রী দেশে ফিরতে পারছে না।’
মতিঝিল থানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযোগটির তদন্ত করতে যান এসআই হাসান মিয়া। মামলা রেকর্ড না করার কারণ জানতে চাইলে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে তারা ওই নারীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিল। বিষয়টি অভিযোগকারী মেনে নেয়। পরে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। আর খোঁজ নিতে পারিনি। এখন থানায় এলে মামলা নেওয়া হবে।’
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অরক্ষিত একটি রেলক্রসিংয়ে আটকেপড়া পিকআপ ভ্যানে ট্রেনের ধাক্কায় তিন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন পুলিশের আরও দুই সদস্য এবং ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্য (মেম্বার)। গতকাল রবিবার দুপুরে সলিমপুর ইউনিয়নের ফকিরহাট এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
এদিকে গতকাল বগুড়ায় কাভার্ডভ্যানের চাপায় এক মোটরসাইকেল আরোহী, ময়মনসিংহের নান্দাইলে অটোরিকশার ধাক্কায় শিশু এবং রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলা ব্রিজে গাড়ি চাপায় অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রামে নিহতরা হলেন সীতাকুণ্ড থানার কনস্টেবল মোহাম্মদ হোসাইন, মিজানুর রহমান ও এসকান্দার আলী মোল্লা। আহত হয়েছেন একই থানার এসআই সুজন শর্মা, কনস্টেবল সমর চন্দ্র সূত্রধর ও স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহাদাত হোসেন।
জানা গেছে, দুপুর সোয়া ১২টার দিকে সীতাকুণ্ড থানা পুলিশের একটি টহল দল স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহাদাত হোসেনকে নিয়ে একটি চুরির মামলার আসামি ধরতে যাচ্ছিল। তাদের বহনকারী পিকআপ ভ্যানটি পশ্চিম থেকে পূর্ব পাশে পার হওয়ার সময় রেলক্রসিংয়ে আটকে যায়। এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী একটি ট্রেন পিকআপ ভ্যানটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই কনস্টেবল মিজানুর রহমান নিহত হন। আর আহত চার পুলিশ সদস্য ও ইউপি সদস্য শাহাদাত হোসেনকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার শামীম আহসান জানান, আহত দুই পুলিশ সদস্যের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহত আরেক পুলিশ সদস্য এবং ইউপি সদস্য শাহাদাতের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত। এই দুজনের চিকিৎসা চলছে চমেক হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগে।
এই দুর্ঘটনার বিষয়ে সীতাকুণ্ড থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘ইউপি সদস্য শাহাদাত হোসেনকে নিয়ে একটি মোবাইল ফোন উদ্ধারে যাচ্ছিল থানা পুলিশের টিম। ঘটনাস্থল ছলিমপুর রেলক্রসিংয়ে কোনো ব্যারিয়ার ছিল না। ফলে পুলিশ বহনকারী ভ্যানটি রেললাইন পার হচ্ছিল। এ সময় ট্রেন আসার বিষয়টি চালক টের পাননি। ওই রেলক্রসিংয়ে ছিল না কোনো গার্ড। দায়িত্বে গার্ডের অবহেলার কারণে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।’
গেটম্যান বরখাস্ত : চট্টগ্রামের সীতাকু-ের ফকিরহাট রেল ক্রসিংয়ের দুর্ঘটনায় রেলের গেটম্যানের গাফিলতির প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় গেটম্যান শাহরিয়ার মাহমুদ দীপুকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া বিস্তারিত জানতে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ।
তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) আনিসুর রহমান, বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (লোকো) সাজিদ হাসান ও বিভাগীয় প্রকৌশলী (ডিএন-১) রফিকুল ইসলাম এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ড্যাট রেজাউনুর রহমান।
সড়কে নিহত আরও ৩ : বগুড়ায় কাভার্ডভ্যানের চাপায় নজরুল ইসলাম (৪৫) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল বেলা ১২টার দিকে শিবগঞ্জের মহাস্থান হাতিবান্ধা এলাকায় বগুড়া-রংপুর মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত নজরুল ইসলাম বগুড়ার গাবতলী উপজেলার কাগইল ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পেশায় পরিবহন ও ইটভাটা ব্যবসায়ী ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মোবাইল ফোনে কথা বলা অবস্থায় মোটরসাইকেলে গ্রামের বাড়ি ফিরছিলেন নজরুল ইসলাম। পথে রংপুরগামী একটি কাভার্ডভ্যান মোটরসাইকেলটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে ছিটকে গিয়ে কাভার্ড ভ্যানের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান নজরুল ইসলাম। গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, কাভার্ডভ্যানটি আটক করে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তবে এর চালক ও তার সহকারী পালিয়ে গেছে।
ময়মনসিংহের নান্দাইলে দাদার সঙ্গে বাজারে গিয়ে অটোরিকশার ধাক্কায় মুসা (৩) নামে এক শিশু নিহত হয়েছে। সে উপজেলার সিংরইল ইউনিয়নের মধ্যনগর গ্রামের আলম মিয়ার ছেলে। জানা গেছে, শিশুটি দাদা জিল্লু মিয়ার সঙ্গে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে স্থানীয় ফকিরেরবাজারে যায়। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় হঠাৎ শিশুটি দাদার হাত ছেড়ে রাস্তায় চলে যায়। এ সময় চলমান একটি অটোরিকশার সঙ্গে সে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
অন্যদিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলা ব্রিজে সড়ক দুর্ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবক নিহত হয়েছেন। তার বয়স আনুমানিক ২৭ বছর। গত শনিবার রাত ১২টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে যাত্রাবাড়ী থানার এসআই ওসমান আলী উল্লেখ করেন, মধ্যরাতে যাত্রাবাড়ী কাজলা ব্রিজের পাকা রাস্তার ওপর বেপরোয়া গতির কোনো যানবাহন ওই যুবককে চাপা দিয়ে চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। নিহতের পরনে ছিল নীল রঙের ফুলহাতা শার্ট ও আকাশি রঙের থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট।
কট্টর ‘সরকারবিরোধী’ নেতাদের কমিটিতে রাখা নিয়ে দোটানায় পড়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সর্বশেষ কাউন্সিলে গঠিত কমিটির সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে খসড়া তালিকা তৈরির তিন সপ্তাহেও ঘোষণা দিতে পারেনি কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটির দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা।
একাধিক সূত্র বলেছে, চলতি মাসের শুরুতে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় আগের কমিটি থেকে বাদপড়া সবাইকে নিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়। কমিটিতে পদবিন্যাসের জন্য একটি উপ-কমিটিও করে দেওয়া হয়। কিন্তু কমিটি থেকে বাদ দেওয়া সরকারবিরোধী নেতাদের আবার অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবে দেখছে না সরকার। এ নিয়ে চাপে রয়েছেন নেতারা। আবার কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় সিদ্ধান্তের তিন সপ্তাহেও তা কার্যকর করতে গড়িমসিতে সংগঠনে অসন্তোষ বাড়ছে। হেফাজতের এখন ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’ অবস্থা।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগের কমিটিতে যারা ছিল তাদের সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন কমিটি গঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তাদের পদবিন্যাসের বিষয়টি নিয়ে আমরা একবার বসেছিলাম; আরও বসতে হবে। আশা করছি আগামী সপ্তাহে কমিটি ঘোষণা করা সম্ভব হবে।’ কমিটি ঘোষণার বিষয়ে চাপ বা প্রতিবন্ধকতার কথা অস্বীকার করেন তিনি।
হেফাজতের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করতে গিয়ে ২০২১ সালের মার্চে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ওই সংঘাতে বেশ কিছু প্রাণহানি ঘটে। মামলায় জড়ান বিভিন্ন এলাকার প্রচুর নেতাকর্মী। গ্রেপ্তার হন সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ অনেকে। পরে সরকারের চাপের মুখে ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল রাতে হেফাজতের ১৫১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করতে বাধ্য হন তৎকালীন আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। ওই বছরের ৭ জুন সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত নেতাদের বাদ দিয়ে ৩৩ সদস্যের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। সরকারের প্রেসক্রিপশনেই তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে সংগঠনে।
বাদপড়া নেতাদের মধ্যে যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, নাছির উদ্দিন মুনির, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, জাকারিয়া নোমান, খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, হাসান জামিল, মুফতি হারুন ইজহার, মুফতি মুনির হোসাইন কাশেমী ও হাফেজ মুহাম্মদ রয়েছেন।
সংগঠন সূত্র জানায়, নেতাদের বাদ পড়ার বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে নেয়নি সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরাট অংশ। তারা ক্ষুব্ধ। ক্ষোভ বাড়তে থাকার পরিপ্রেক্ষিতে বাদপড়াদের ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয় বর্তমান নেতৃত্ব। কিন্তু তা কার্যকর করতে গিয়ে সরকারের চাপের মুখে পড়েছেন তারা। কট্টর সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন রাজি, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী, মাওলানা হারুন ইজহার প্রমুখকে কমিটিতে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সরকারের আপত্তির কথা ইতিমধ্যে জেনেছেন সংগঠনের বর্তমান নেতৃত্ব। এদের কমিটিভুক্ত করা হলে সরকার কঠোর অবস্থানে যেতে পারে।
কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত কার্যকরে গড়িমসিতে সংগঠনে অসন্তোষ বাড়ছে। বাদপড়া নেতাদের অনুসারীরা এটিকে বর্তমান নেতৃত্বের দুর্বলতা হিসেবে দেখছে।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১২ সদস্যের উপ-কমিটি এ নিয়ে কাজ করছেন। আমরা আশা করছি, দ্রুত সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি ঘোষণা করা হবে।’ কমিটি ঘোষণায় গড়িমসির বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিচালক আল্লামা আহমদ শফির নেতৃত্বে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ গঠিত হয়। তার মৃত্যুর পর ২০২১ সালের জুন মাসে মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির নির্বাচিত করা হয়। ওই বছর ২১ আগস্ট মারা যান জুনায়েদ বাবুনগরী। বর্তমানে মাওলানা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী হেফাজতের আমির ও মাওলানা সাজিদুর রহমান মহাসচিব।
টাঙ্গাইলের গোপালপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে শিশুটি (১০)। স্কুলপর্যায়ে ক্রিকেট আর ফুটবল খেলে সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে। এবার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে স্ট্রাইকার হিসেবে ইউনিয়ন পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পুরস্কারও পেয়েছে। কিন্তু ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়ে মুষড়ে পড়েছে শিশুটি।
এরই মধ্যে তাকে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় হওয়া মামলার একমাত্র আসামি আলেপ শেখ (৬০) গত বৃহস্পতিবার আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। আর জামিনে কারামুক্ত হয়েই গলায় মালা ঝুলিয়ে ব্যান্ডপার্টি বাজিয়ে পুরো গ্রামে উল্লাস করেছেন। এতেই শেষ নয়, ধর্ষণচেষ্টার শিকার শিশুটির মা এবং মামলার বাদীর বাড়ির আঙিনায় গিয়েও আসামি ও তার লোকজন নেচে-গেয়ে আনন্দ প্রকাশ করে। এ ঘটনার পর শিশুটিকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার কথা জানিয়ে তার মা গত শনিবার থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। অন্যদিকে এমন ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন এলাকার অনেকেই। তারা ধর্ষণচেষ্টা মামলার আসামি আলেপ শেখের কঠিন শাস্তি দাবি করেন।
ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় হওয়া মামলার এজাহার অনুযায়ী, চতুর্থ শ্রেণির ওই শিশুছাত্রীকে গত ২৪ জুলাই দুপুরে কাঁঠাল খাওয়ার লোভ দেখিয়ে নির্জন বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালান গ্রামের মুদিদোকানি আলেপ শেখ। তখন শিশুটির কান্নাকাটির শব্দে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে আলেপ শেখ পালিয়ে যান। এ ঘটনায় ওই দিন বিকেলে থানায় মামলা হলে পুলিশ আলেপ শেখকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়।
শিশুটির মা শনিবার থানায় করা লিখিত অভিযোগে জানান, গত বৃহস্পতিবার আদালত থেকে জামিন নিয়ে রাত ৯টায় আলেপ শেখ গলায় মালা পরা অবস্থায় ব্যান্ডপার্টি নিয়ে গ্রামে প্রবেশ করেন। ব্যান্ডপার্টির সঙ্গে তার আত্মীয়সহ বেশ কয়েকজন উৎসুক মানুষ যোগ দেয়। তারা নেচে-গেয়ে পুরো গ্রামে উল্লাস করে। একপর্যায়ে আলেপ শেখ দলবল নিয়ে বাদীর বাড়ির আঙিনায় প্রবেশ করে নাচানাচি শুরু করে। পাশাপশি গালিগালাজ ও মারধরের হুমকি দেয়।
হেমনগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) আলীম হোসেন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় ব্যান্ডপার্টি এবং কিছু মানুষের কোলাহলের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। শিশুটির পরিবার খুবই নিরীহ। তারা এখন আতঙ্কে আছে। আসামি খারাপ প্রকৃতির লোক।’
একই গ্রামের বাসিন্দা সাহার আলী, ইব্রাহীম খলিল ও মকবুল হোসেন বলেন, শিশু নির্যাতনের মামলায় আদালত থেকে জামিন পেয়ে গলায় মালা জড়িয়ে ব্যান্ডপার্টির বাদ্যের তালে নেচে-গেয়ে এমনভাবে আনন্দ প্রকাশ কোনো সভ্যতার পর্যায়ে পড়ে না। তবে প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ আলেপ শেখের অপকর্মের প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।
উড়িয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আছিয়া বেগম বলেন, ‘শিশুটি (ধর্ষণচেষ্টার শিকার) খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বেশ ভালো। এমন ঘটনায় সে চুপসে গেছে। কয়েক দিন স্কুলে আসেনি। ব্যান্ডপার্টির ঘটনায় ওই শিশু আর তার অসহায় পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আমরা এর কঠিন শাস্তি চাই। যাতে ভবিষ্যতে এমন অপরাধ করার সাহস কেউ না পায়।’
আলেপ শেখের সঙ্গে যাওয়া ব্যান্ডপার্টির প্রধান কালিহাতী উপজেলার নারান্দিয়া গ্রামের বাসিন্দা অনিক মিয়া বলেন, ‘অ্যাডভোকেট রবিউল হাসান রতন আমাদের ব্যান্ডপার্টিকে ৩ হাজার ৪০০ টাকায় ভাড়া করেন। রাত ৯টায় আমরা ওই গ্রামে যাই। রাত ১২টা পর্যন্ত সারা গ্রাম ঘুরে বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে সবাইকে আনন্দ দিই। জেলখানা থেকে আসামি বের হলে যে বাজনা বাজায়, এ কাজ প্রথম করলাম।’
হেমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান তালুকদার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘ধর্ষণচেষ্টা মামলায় জামিন পেয়ে কোনো আসামি এভাবে আনন্দ উৎসব করে বলে আমার জানা নেই। এতে ভুক্তভোগী শিশুটি আরও নিরাপত্তাহীনতা এবং সম্মানহানির অবস্থায় আছে। আমরা অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
মুক্তিযোদ্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আঞ্জুয়ারা ময়না বলেন, ‘তালিকাভুক্ত শিশু ফুটবলার ও ক্রিকেটার এই শিশু মানসিকভাবে শকড হওয়ায় (আঘাত পাওয়ায়) আমরা তাকে হয়তো হারাতে বসেছি। এ ঘটনার তদন্ত এবং শাস্তি দাবি করছি।’
শিশুটির মামা বলেন, ‘আমার বোনটি অসহায়। আসামিরা অত্যন্ত প্রভাবশালী। জামিনে বের হয়ে যে কাণ্ড করেছে, এটা কেউ করে না। আমরা যথাযথ বিচার চাই।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আসামি আলেপ শেখের ছেলে জীবন মিয়া বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে তাদের (শিশুটির পরিবার) বাপ-দাদার আমল থেকে বিরোধ। মামলাটি মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক। আমার বাবা এক মাস জেল খাটার পর অ্যাডভোকেট রবিউল হাসান রতনের উদ্যোগে ব্যান্ডপার্টি বাজানো হয়েছে।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও হেমনগর পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের এসআই বশির আহমেদ বলেন, ‘জামিন পাওয়ার পর বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গ্রামে আনন্দ-উৎসব করার ঘটনা সত্য। ধর্ষণচেষ্টায় হওয়া মামলার অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। দ্রুতই আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেওয়া হবে।’
গোপালপুর থানার ওসি মোশারফ হোসেন জানান, বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে আসামি দলবল নিয়ে বাদী ও ভুক্তভোগীর বাড়িতে গিয়ে গালিগালাজ ও হুমকির অভিযোগে থানায় জিডি করা হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করবে।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, আঞ্চলিক ভারসাম্য রক্ষার কারণেই বাংলাদেশ এবার অর্থনৈতিক জোট ব্রিকসের সদস্য হতে পারেনি। এতে আশাহতের তেমন কিছু দেখছি না। আমাদের আরও সময় আছে। আগামীতে জোটের সদস্যপদ পাওয়া যাবে। গতকাল রবিবার রাতে সাংবাদিকদের ব্রিকসে বাংলাদেশের যুক্ত হতে না পারা নিয়ে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
ইথিওপিয়ার মতো একটি দেশ আমন্ত্রণ পেল অথচ বাংলাদেশ পেল না এ নিয়ে সরকারের মূল্যায়ন কী, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র সচিব মোমেন বলেন, এখানে রাজনৈতিক এবং আঞ্চলিক অনেক ইস্যু আছে। এটা সদস্যপদগুলো খেয়াল করলেই দেখা যায়। লাতিন আমেরিকা থেকে এক দেশ, নর্থ আফ্রিকা থেকে একটা, আবার মধ্যপ্রাচ্য থেকেও নিয়েছে। সুতরাং তারাও জিওগ্রাফিক্যাল একটা ব্যালান্স করার চেষ্টা করেছে।
তিনি বলেন, আমাদের পাশে আরও দেশ ছিল এবং তারা বেশ আগ্রহী ছিল, কিন্তু পায়নি। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। এখানে রাজনৈতিক পর্যায়ে বলতে পারেন, আমরা ছয়জনের মধ্যে এবার ছিলাম না। কিন্তু আমরা ব্রিকসের রিয়েল যে আউটরিচটা (নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) আছে, ওটার মাধ্যমে আমাদের লাভবান হওয়ার সুযোগটা আছে। সেটাতে আমরা আছি।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আগামীতে ব্রিকসে সদস্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবার ব্রিকস সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট তার বক্তব্যে বলেছেন, এটা প্রথম ধাপ। পরে আরও ধাপ আসবে। আমরা আশা করছি যে, পরবর্তী ধাপে হবে। ইতিমধ্যে আমরা একটু সময় পেলাম।
ব্রিকসকে পশ্চিমা অর্থনীতির বিকল্প প্ল্যাটফর্ম বলা হচ্ছেÑ এ প্রসঙ্গে মাসুদ বিন মোমেনের মন্তব্য, সবাই যেভাবে বলছিলÑ ব্রিকস জি-৭ বা পশ্চিমা অর্থনীতির বিকল্প প্ল্যাটফর্ম হবে, বিষয়টি এত সহজ নয়। এবার কিন্তু আমরা সে ধরনের কিছু দেখিনি। ব্রিকসের তো ১৫ বছর হয়ে গেল। সুতরাং ট্যানজিবল আউটকামের দিকে যদি আপনারা দেখেন, একমাত্র এনডিবি ছাড়া তেমন একটা চোখে পড়েনি। সুতরাং আমরা এনডিবির পার্ট আছি, এখানে আশাহতের তেমন কিছু দেখছি না। সুতরাং আমাদের আরও সময় আছে।
তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ সফরে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আগামী বছরের মার্চ মাসে হয়তো আসবেন। আমাদের সঙ্গে অনেক প্রজেক্ট তিনি করবেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের বাংলাদেশ সফরের সম্ভাবনা রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়েছে; কিন্তু আনুষ্ঠানিক আলোচনার প্রেক্ষাপটে নয়। তার আসার একটা সম্ভাবনা তো আছে। টাইমিং নিয়ে আমরা কাজ করছি।
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের জামালপুর ইউনিয়নের শ্রীকলা গ্রামে মায়ের সঙ্গে নানার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল দেড় বছরের রুহান। গত মঙ্গলবার বাড়ির উঠানে খেলা করছিল শিশুটি। পরে বাড়িতে না দেখে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে তাকে পাশের পুকুরে ভাসতে দেখেন স্বজনরা। পুকুর থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রুহানকে মৃত ঘোষণা করেন।
একইদিন হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের আউশকান্দি ইউনিয়নের সদরাবাদ গ্রামে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তারা হলো সদরাবা গ্রামের মালেক মিয়ার ছেলে ইকবাল হোসেন, বাবুল হোসেনের ছেলে রাফি আহমেদ। পরিবারের সদস্যদের অগোচরে বাড়ির পাশের পুকুরে গোসল করতে নেমে তলিয়ে যায় ইকবাল ও রাফি। খোঁজখুঁজির একপর্যায়ে পুকুরে তাদের লাশ দেখতে পান স্বজনরা।
দেশে কোনো না কোনো প্রান্তে প্রতিদিনই এরকম ঘটনা ঘটছে। গত এক মাসে তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা একশর বেশি। চলতি বছর জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬১।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো দুর্ঘটনার মধ্যে পানিতে ডুবে মৃত্যু তালিকার প্রথম দিকেই থাকবে। এটি একটি অবহেলাজনিত জাতীয় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাস্থ্য ও তথ্য জরিপ ২০১৬ অনুযায়ী, বছরে ১ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১৪ হাজার ৪৩৮ শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এ সংখ্যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। এসব মৃত্যুর ৮৮ শতাংশই বাড়ি থেকে ২০ মিটারের মধ্যে ঘটে। পানিতে ডোবার ঘটনা বেশি ঘটে মিঠাপানিতে, যেমন বাড়ির পাশের পুকুর-দীঘি-ডোবায়। খেলতে খেলতে কিংবা গ্রামাঞ্চলে হাত-মুখ ধুতে গিয়েও পানিতে ডুবে মৃত্যুর অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। আবার কখন ডুবে যাওয়া শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে একই সঙ্গে দুজন বা তারও বেশি মৃত্যুর ঘটনাও আছে। এ ছাড়া নদী বা খালে ডুবেও মৃত্যুর ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে।
দেশে দীর্ঘদিন ধরে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু নিয়ে কাজ করছে গণমাধ্যম উন্নয়ন ও যোগাযোগবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘সমষ্টি’। সংবাদপত্রে প্রকাশিত পানিতে ডুবে মৃত্যুর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তারা। সংগঠনটির হিসাবে, ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত পানিতে ডুবে ৩ হাজার ৮৪৬ জন মারা গেছে। এর ৮৮ শতাংশই ৫-৯ বছর বয়সী শিশু।
প্রতিষ্ঠানটির তথ্য বলছে, ২০২০ সালে মৃত্যু হয়েছিল ৮০৭ জনের। এর মধ্যে ৫ বছরের শিশু রয়েছে ২৬০টি। এর পরেই আছে ৫-৯ বছর বয়সী ২৮৭, ১০-১৪ বছর বয়সী ১০৬, ১৫-১৮ বছর বয়সী ৩০ জন। আর ১৮ বছরের বেশি বয়সী ১৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০২১ সালে মৃত্যু ছিল প্রায় দ্বিগুণ। ওই বছর পানিতে ডুবে মারা গেছে ১ হাজার ৩৪৮ জন। এর মধ্যে অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সী শিশুমৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৫৯৭। তার পরেই আছে ৫-৯ বয়সী ৩৮৭, ১০-১৪ বছর বয়সী ১০৬ ও ১৫-১৮ বছর বয়সী ৪৩ জন। এ ছাড়া ১৮ বছরের বেশি বয়সী তরুণ মারা গেছে ২১৫ জন।
২০২২ সালে মারা গেছে ১ হাজার ১৩০ জন। এ সময় অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সী শিশু মারা গেছে ৫৬৬ জন, যা মোট মৃত্যুর প্রায় অর্ধেক। অন্যদিকে ৫-৯ বছর বয়সী শিশু মারা গেছে ৩৬৩ জন। এরপরই ১০-১৪ বছর বয়সী ৯৩, ১৫-১৮ বছর বয়সী ৩৮ ও ১৮ বছরের বেশি বয়সী ৬৭ জন মারা গেছে।
২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে দেশে পানিতে ডুবে মারা গেছে ৫৬১ জন। এর মধ্যে ২৯০ জনের বয়স ছিল ৫ বছরের মধ্যে। ৫-৯ বছর বয়সী শিশু মারা গেছে ১৯৪ জন। ১০-১৪ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা ৪৮। ১৫-১৮ বছর বয়সী রয়েছে ৯ জন। এ ছাড়া ১৮ বছরের বেশি বয়সী মারা গেছে ১৩ জন।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের সব বিভাগেই পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার প্রায় কাছাকাছি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় চট্টগ্রাম বিভাগে। এরপরের অবস্থান ঢাকা বিভাগের। এ বিভাগে রাজধানী ঢাকাসহ প্রতিটি জেলায় গড়ে ৪০ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
বছর জুড়ে পানিতে ডুবে শিশু মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটলেও সাধারণত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যায়। এ সময় বর্ষার কারণে পুকুর, খাল-বিল ও নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার ফলে শিশুমৃত্যুর ঘটনা বেশি ঘটে। পানির উৎস বাড়ির যত কাছাকাছি থাকে, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি ততই বেড়ে যায়।
পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু নিয়ে ‘সমষ্টি’র পরিচালক মীর মাসরুর জামান রনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় আমরা যে তথ্য পাই সেখান থেকে এ প্রতিবেদন তৈরি করা। বাস্তবে চিত্র আরও ভয়াবহ। মাত্র ২৫ শতাংশ মৃত্যুর সংবাদ আমরা পেয়ে থাকি।’
তিনি বলেন, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর একটি বড় কারণ হচ্ছে পারিবারিক অসচেতনতা ও অবহেলা। শুধু বড় জলাশয় বা পুকুরে ডুবে মৃত্যু হয় বিষয়টা এমন নয়। অনেক সময় বালতির পানিতে ডুবেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ দুর্ঘটনাগুলো ঘটে থাকে পরিবার বা বাবা-মায়ের অসচেতনতার কারণে। ছয় বছরের বেশি বয়সী একটি শিশুর মৃত্যু হয় পানিতে ডুবে। অথচ এ বয়সের শিশুদের সাঁতার শেখানোর কথা। যদি তারা সাঁতার জানত তাহলে এ মৃত্যু অনেকাংশে কমে আসত।
বাংলাদেশ সরকার ২০১১ সালের স্বাস্থ্যনীতিতে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুকে একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। শিশু নিরাপত্তায় পাইলট প্রকল্পে পানিতে ডুবে মৃত্যুও বিবেচনা করলেও সরকারের বাস্তবায়িত প্রকল্প এখনো সীমিত। গত বছর সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশুযতœ কেন্দ্রের মাধ্যমে ‘শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং শিশুর সাঁতার সুবিধা প্রদান’ নামে কর্মসূচি নিয়েছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে ২৭১ কোটি ৮২ লাখ ৫৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘ইনটেগ্রেটেড কমিউনিটি বেইজড সেন্টার ফর চাইল্ড কেয়ার, প্রটেকশন অ্যান্ড সুইম-সেইফ ফ্যাসিলিটিজ’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সারা দেশে ১৬টি জেলার ৪৫টি উপজেলায় আট হাজার শিশুযত্ন কেন্দ্র পরিচালনা করা হবে। এসব যতœকেন্দ্রে কাজ পাবে ১৬ হাজার গ্রামীণ নারী। প্রতিটি যতœকেন্দ্রে ২৫ শিশুকে ভর্তি করা হবে। একই সঙ্গে ৬-১০ বছর বয়সী শিশুদের সাঁতার শেখানো হবে।
মীর মাসরুর জামান বলেন, ‘শিশুমৃত্যু ঠেকাতে হলে শহর থেকে গ্রামপর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সেখানে প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি অথবা কমিউনিটির নেতাদেরও কাজে লাগানো যেতে পারে।’
তিনি বলেন, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু কমানোকে গুরুত্ব দিয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমির অধীনে প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। যদিও এসব প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে বেশিদিন হয়নি। প্রয়োজনে এ ধরনের প্রকল্পকে সরকারীকরণ করতে হবে।
শিশু-কিশোর সংগঠক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদীর বাইরেও খাল-বিল, জলা, ডোবা-পুকুর এখন যথেষ্ট রয়েছে। ফলে পানির সঙ্গে এ দেশের মানুষের মিলেমিশে বসবাস করতে হবে। এজন্য সাঁতার শেখার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে স্কুলের কারিকুলামের মধ্যেই থাকবে সাঁতার শেখা।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার একটা কথা বলি, আনন্দের মধ্যে এবং চারপাশের চেনা প্রতিবেশ ও পরিবেশের মধ্যে দিয়েই শিশুকে শিক্ষা দিতে হবে।’
ডা. লেলিন বলেন, ‘একটি শিশু যখন স্কুলে গেল সেখানেই সাঁতার শেখানো সম্ভব। কারণ দেশের সব জায়াগায় সাঁতার শেখানোর যথেষ্ট উপকরণ রয়েছে। এ ছাড়া যেসব মহানগর বা শহরে সাঁতার শেখানোর জায়গার অপ্রতুলতা রয়েছে, সেসব জায়গায়ও বিশেষ ব্যবস্থায় সাঁতার শেখানোর ব্যবস্থা করতে পারে। প্রাথমিক জীবনের অঙ্গ হিসেবে শিক্ষার শুরু থেকেই সাঁতার শেখানোটা বাধ্যতামূলক করলে এ সমস্যার বড় অংশ সমাধান করা যাবে। দ্বিতীয়ত অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। যেসব জায়গায় ছোট শিশু রয়েছে সেখানে জলাধারগুলোকে চারপাশে ঘেরাও দিতে হবে। যেন শিশু বাইরে থাকলেও সুরক্ষিত থাকে। এ ছাড়া সরকারকে এ বিষয়ে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। যে প্রকল্পগুলো রয়েছে, সেগুলো যেন কার্যকর ভূমিকা রাখে সেটা নজরদারিতে রাখতে হবে।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেই হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি দেবে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি। এক দফার যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে থাকা দলগুলোও এই কর্মসূচি পালন করবে। চলতি মাসে অনুষ্ঠিত দলটির স্থায়ী কমিটির দুটি বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বিএনপি সূত্রের দাবি। যার প্রতিফলন দেখা গেছে গতকাল বৃহস্পতিবার বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতেও।
সূত্রের দাবি, দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অন্তত তিন নেতা হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন নেতাকর্মীদের।
সূত্রগুলো বলছে, নভেম্বরের যেকোনো সময় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে ওই তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। বিএনপি চাচ্ছে তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক ফয়সালা নিশ্চিত করতে। এ লক্ষ্যে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বড় ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণার চিন্তা রয়েছে তাদের। এসব কর্মসূচির মধ্যে ঢাকা ঘেরাও, সচিবালয় ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘিরে কর্মসূচিসহ নানা ধরনের কর্মসূচি নিয়ে দলটির অভ্যন্তরে আলোচনা রয়েছে।
জানা গেছে, এসব কর্মসূচিতে সরকার পক্ষ বাধা দিলে ‘যদি পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠে’ তাহলে এক পর্যায়ে অসহযোগ আন্দোলনের দিকেও যেতে পারে দলটি। বিএনপি নেতারা বলছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে দুই ধাপে কর্মসূচি সাজিয়েছে বিএনপি। প্রতিটি ধাপের শেষ দিনের কর্মসূচি হবে শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক। সরকার কঠোর হলে কর্মসূচিও কঠোর হবে। তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত যতটুকু সম্ভব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ রাখতে চাইবে দলটি। পরিস্থিতি বিবেচনায় তফসিলের আগেই হরতালের কর্মসূচি আসতে পারে। তবে দলটির এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হচ্ছে, তফসিল ঘোষণা হলেই তারা হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
এই কর্মসূচি ঘোষণার আগে আন্দোলনে থাকা সমমনা দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করা হবে। কীভাবে কর্মসূচি সফল করা যায় তা নিয়ে নতুন করে ছক সাজানো হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে হরতালের মতো কর্মসূচির ইঙ্গিত দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যতদিন আপনি (শেখ হাসিনা) থাকবেন দেশ আরও সংঘাতের দিকে যাবে, খারাপের দিকে যাবে এবং সংঘাত আরও বাড়তে থাকবে। এখনো তো সংঘাত শুরু হয়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগ যেভাবে এগোচ্ছে তাতে এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে জনগণ রুখে দাঁড়াবে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘শত প্ররোচনার মুখেও আমরা একেবারে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। এটার শেষ পরিণতি কী হবে তা নির্ভর করবে সরকারের আচরণ কী হচ্ছে তার ওপর।’
একই দিন পৃথক কর্মসূচিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী হরতাল কর্মসূচি ঘোষণার কথা বলেন। ভৈরব বাসস্ট্যান্ডে সিলেট অভিমুখী রোডমার্চ কর্মসূচির প্রথম পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমরা হরতাল করিনি, কিন্তু করব না সেই প্রতিজ্ঞাও করিনি। জনগণের চাপের কারণে হরতাল অবরোধ যা যা করা দরকার, গণতান্ত্রিক পন্থায় এই অবৈধ সরকারকে মাটিতে বসিয়ে দেওয়ার জন্য দল, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে সব ধরনের কর্মসূচি হবে। সেই জন্য আপনারা প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। আমাদের এবারের আন্দোলন ডু অর ডাই। হয় মরব, নয়তো লড়ব।’
আর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের উদ্যোগে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সম্মেলনে প্রধান অতিথির বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘জনগণকে সম্পৃক্ত করে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছি। হরতাল অবরোধ শান্তির প্রবক্তারাই চালু করেছে। সরকার যদি আমাদের রোডমার্চ, মিছিলে জনগণের সম্পৃক্ততায় কোনো বার্তা না পায় বা না বোঝে তাহলে দিনের পর দিন হরতাল অবরোধ করে দেশ অচল করে দেওয়া হবে। সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।’
জাতীয় সংসদের পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে। চলতি সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হবে আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি। এর আগের ৯০ দিন; অর্থাৎ আগামী ১ নভেম্বর থেকে ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করতে হবে। সাধারণত নির্বাচনের ৪০ থেকে ৪৫ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করা হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর। মাঝখানে ৪৫ দিন সময় রেখে ভোটের তারিখ ছিল ২৩ ডিসেম্বর। তবে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির মুখে ভোটের তারিখ এক সপ্তাহ পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর করা হয়েছিল। দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর। ভোটগ্রহণ করা হয়েছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। তফসিল ঘোষণা ও ভোট গ্রহণের মধ্যে সময় ছিল ৪০ দিন।০
আশ্বিন মাসের সন্ধ্যায় ঢাকায় নামল শ্রাবণের বৃষ্টি। আকাশ ভেঙে পড়া বর্ষণে তলিয়ে গেছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তা। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে টানা কয়েক ঘণ্টার মুষলধারে বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকার রাস্তা তলিয়ে যায়। কোথাও কোথাও বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। মাঝরাত পর্যন্ত ওইসব সড়কে থমকে থাকে গাড়ি। অনেকেই যেমন বৃষ্টির কারণে কর্মস্থলেই আটকা পড়েন তেমনি অনেকের অপেক্ষার প্রহর কেটেছে জলমগ্ন সড়কে গাড়িতে বসেই।
এদিকে মিরপুরে সড়কের পাশে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও কয়েকজন। নিহতদের মধ্যে তিনজন একই পরিবারের। তাদের মধ্যে এক শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে মিরপুর মডেল থানার পুলিশ। গতকাল দিনভর মেঘলা আকাশ ও থেকে থেকে বৃষ্টির পর সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি বাড়তে শুরু করে। সঙ্গে থেমে থেমে শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ঢাকায় সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, এদিন সন্ধ্যার পর ঢাকা ছাড়াও রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে বৃষ্টি হয়েছে। আর ঢাকায় বৃষ্টি হতে পারে আজও।
গতকাল রাতের বৃষ্টিতে ঢাকার ফার্মগেট, ধানমন্ডি, এলিফ্যান্ট রোড, নিউ মার্কেট, মিরপুর, বনানী এলাকার সড়ক পানিতে ডুবে যায়। রাজধানীর প্রায় সব সড়কে দেখা দেয় তীব্র যানজট। দীর্ঘ সময় স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় যানবাহনকে। অনেকে জানান, তাদের ব্যক্তিগত গাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। রাতে কখন তারা বাসায় ফিরতে পারবেন তা অনিশ্চিত।
জানা গেছে, মিরপুর ১০ নম্বরে প্রধান সড়কসহ অলিগলিতে কোমরসমান পানি জমেছে। পানি প্রধান সড়কে চলাচলরত প্রাইভেট গাড়ির ভেতরেও ঢুকে গেছে।
গ্রিন রোড, নর্থ ধানমন্ডিসহ আশপাশের সব গলিতে পানি জমেছে। সেখানকার গ্রিন লাইফ হাসপাতাল, সেন্ট্রাল হাসপাতাল এবং ল্যাবএইডে আসা রোগীরা পড়েছেন বিপদে। একই অবস্থা রাজধানীর মগবাজার, মালিবাগ, সিদ্ধেশ্বরী, বেইলি রোড এবং শান্তিনগরেও। মতিঝিলে রাতে লোক কম থাকলেও পানি হাঁটুর ওপরে উঠে গেছে।
হঠাৎ ভারী বৃষ্টির জন্য পথচারী ও ঘরমুখো মানুষরা মোটেও তৈরি ছিলেন না। এ সময় অনেকেই কাকভেজা হয়ে বাসায় ফেরেন আবার কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন যাত্রীছাউনি বা দোকানের নিচে। গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাংলা মোটর মোড়ে বাসে ৩০ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলেন ফাহাদ হোসাইন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, বৃষ্টি শুরু হলে একটি উঁচু ভবনের নিচে দাঁড়িয়েছিলাম। বৃষ্টি কিছুটা কমলে বাসে উঠি। আধা ঘণ্টা হলো বাস একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।
সরকার সৌরভ নামের একজন জানান, তার মোহাম্মদপুর থেকে শাহবাগ আসতে ৩ ঘণ্টার বেশি লেগেছে। ফেরার পথে বাংলা মোটর মোড়েই আটকে আছেন এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে।
গতকাল রাত সাড়ে ১২টার সময়ও গুগল ম্যাপে দেখা যায় রাজধানী জুড়ে তীব্র যানজটের সংকেত। বেশিরভাগ সড়ক রেড মার্ক ছিল সে সময়। গ্রিন রোড, মিরপুর রোডের ধানমন্ডি ২৭, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউসহ বেশ কয়েকটি সড়কেই ছিল যান চলাচল বন্ধের সংকেত। গুগলের তথ্য বলছিল, ওইসব এলাকায় সে সময় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ ছিল।
আহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ শুক্রবারও রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের বেশিরভাগ জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। এ সময় বজ্রপাতও হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
মিরপুরে চারজনের মৃত্যু : মিরপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও কয়েকজন। নিহতদের মধ্যে তিনজন একই পরিবারের। তাদের মধ্যে এক শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে মিরপুর মডেল থানার পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে মিরপুর-১ নম্বর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে আহতদের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এ দুর্ঘটনার বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেন মিরপুর থানার এসআই রুহুল আমিন। তিনি বলেন, বৃষ্টির মধ্যে রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন মিজান, তার স্ত্রী মুক্তা, তাদের মেয়ে লিমা এবং এই তিনজনকে বাঁচাতে যাওয়া যুবক অনিক। মৃত মিজান পেশায় সিএনজি অটোরিকশাচালক ছিলেন বলে জানা গেছে।
অভিষেকে ২৬ মিনিট খেলে দুই অ্যাসিস্টের অবদান রাখতে পেরেছিলেন নেইমার। আল হিলাল জিতেছিল। কিন্তু পর পর দুম্যাচ খেললেন পুরো সময়। তেমন কিছুই করতে পারলেন না। ড্র করেছে আল হিলাল আবার।
এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে শেষ দিকের গোলে ১-১ ড্র করে পরাজয় বাঁচিয়েছিল আল হিলাল। আজ সৌদি প্রো লিগে দামাক এফসির বিপক্ষে ম্যালকমের গোলে ৯ মিনিটে এগিয়ে গেলেও শেষপর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারেনি।
সাত ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে তবুও শীর্ষেই রইলো আল হিলাল।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক যাত্রীর কাছ থেকে মূল্য দেড় কোটি টাকা মূল্যের ১৭০০ গ্রাম স্বর্ণ উদ্ধার করেছে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টা ২৪ মিনিটে শারজাহ থেকে এয়ার অ্যারাবিয়ার ফ্লাইটে আসা মোহাম্মদ আলী নামের এক যাত্রীর রাইস কুকারে এসব স্বর্ণ পাওয়া যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার মো. আহসান উল্লাহ বলেন, আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ব্যাংকপাড়াখ্যাত মতিঝিল এখন মৃতপ্রায়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে না পারায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র সরে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা ঘোরানো মতিঝিলে আবাসিক ভবন, শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান তৈরি না হলে দেশের প্রধান এই বাণিজ্যিক অঞ্চল প্রাণ হারাবে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাদের মতে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় অবদান রয়েছে মতিঝিলের টাকার। শুধু তা-ই নয়, মতিঝিলে উপার্জিত অর্থে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, কানাডাসহ আরও অনেক দেশে। এখানকার উপার্জিত টাকা অনেকে জমা রেখেছেন সুইস ব্যাংকেও। শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মতিঝিলে। এ যেন মা কাঁকড়ার আত্মত্যাগের গল্প। মা কাঁকড়া বাচ্চাদের আগলে রাখে বুকের ভেতর; যেদিন বাচ্চাগুলো বের হয়ে আসে, সেদিন খোলস ছাড়া মা কাঁকড়ার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। মা কাঁকড়ার মতো দুঃখী ও ত্যাগী বাণিজ্যিক মতিঝিল।
ষাটের দশকে মতিঝিলে গড়ে ওঠে দেশের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট-সিবিডি)। সেই থেকে এখনো দেশের প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল মতিঝিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে সরকারি ৮টি, বেসরকারি ৪৫টি এবং বিদেশি ব্যাংক রয়েছে ৮টি। এ ছাড়া ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৮১টি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের বেশির প্রধান কার্যালয় চলে গেছে কারওয়ান বাজার, গুলশান-বনানী ও উত্তরায়। নতুন করে যেসব ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাচ্ছে, সেগুলোর প্রধান কার্যালয় মতিঝিলের বাইরে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মতিঝিলের আশপাশে পরিকল্পিত কোনো আবাসিক এলাকা, অভিজাত হোটেল, কাজের ফাঁকে অবসর কাটানোর মতো উন্মুক্ত স্থান, শপিং কমপ্লেক্স না থাকায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সুবিধার জন্য অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়গুলোও মতিঝিলের বাইরের এলাকা, অর্থাৎ কারওয়ান বাজার, গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে গড়ে উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর, মধুমিতা সিনেমা হল এবং ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এবং দিলকুশা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবন এবং বঙ্গভবনের পাশের এলাকাজুড়ে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল। বিশ্বের বাণিজ্যিক অঞ্চলের ভবনগুলো সুউচ্চ হয়ে থাকে। কিন্তু মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের পাশেই বঙ্গভবন। নিরাপত্তার কারণে বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর কোনো বহুতল ভবন করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, মতিঝিলের প্লটগুলোর ‘নন-রেসট্রিকটেড’ উচ্চতা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর সাড়ে চারতলার বেশি উচ্চতার ভবনের অনুমোদন মেলে না। ফলে মূল্যবান ওই প্লটগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারছেন না মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ জরাজীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণও রয়েছে কয়েকটি ভবন। একটির সঙ্গে অন্যটি লাগানো। দুটি ভবনের মাঝখানে উন্মুক্ত জায়গা নেই বেশিরভাগ ভবনের। দিলকুশা এলাকার বঙ্গভবন লাগানো ভবনগুলোর মাঝখানেও কোনো ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, মতিঝিল এলাকার ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে। ভাঙাচোরা এবড়োখেবড়ো সড়ক। সড়ক বিভাজকগুলো শ্রীহীন। এগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হয়নি। প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলে মতিঝিলের আরও করুণ দশা চোখে পড়ে। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার সড়কের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে চটের ছালা দিয়ে ঘেরা খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান এবং নানা পণ্যের অস্থায়ী দোকান। সামান্য বৃষ্টিতে মতিঝিল এলাকার সড়কগুলো তলিয়ে থাকে পানির নিচে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত। ডিএসসিসি এলাকার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে। খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে মূল্যায়ন করলে মতিঝিল ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। যদিও এটা মানতে নারাজ ডিএসসিসির কারিগরি কমিটি।
মতিঝিল এলাকার বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিল এলাকার সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে ডিএসসিসি। পরিত্যক্ত প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মতিঝিলের সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত ও সড়ক বিভাজকের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা দরকার। পর্যায়ক্রমে এ এলাকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কাজ করবে ডিএসসিসি। তবে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের মূল সংস্কার ও আধুনিকায়নের দায়িত্ব রাজউকের। রাজউককে সেসব বিষয় পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব কাজে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা লাগলে করপোরেশন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলে রাজউক। রাজউক সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশক থেকেই মতিঝিলের পুরোপুরি বাণিজ্যিক বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্যিক অঞ্চলে শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান থাকে। আর কাছাকাছি এলাকায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা থাকে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে সেটা ছিল না। অভিজাত মানের হোটেল পূর্বাণী গড়ে উঠলেও আশপাশে সময় কাটানোর মতো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লোকজন গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় থাকেন। মতিঝিলের সৌন্দর্য নিশ্চিত করতে ও আধুনিকায়নে যেসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখা দরকার ছিল রাজউক ও সিটি করপোরেশন সেটা করেনি।
রাজউক সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধরা, উত্তরা। সেই সব এলাকা থেকে মানুষ মতিঝিলে আসেন। শহরের জনসংখ্যা বাড়ায় দিন দিন যানজট বাড়ছে। ওই সব এলাকা থেকে মতিঝিলে আসতে সড়কে এক থেকে দেড় ঘণ্টা চলে যায়। দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কর্মঘণ্টার মধ্যে ৩০ শতাংশ সময় সড়কে নষ্ট হচ্ছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে চিন্তা করেছে, তার কর্মস্থল এমন একটা জায়গায় হবে যা তার আবাসনের কাছাকাছি। মতিঝিল থেকে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও ভূমিকা রেখেছে।
কালের বিবর্তনে গুলশান হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক এলাকা। কারওয়ান বাজার, উত্তরায়ও গেছে কিছু। এসব জায়গায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমও সেখানে চলে গেছে। এসব এলাকার আশপাশে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় তাদের বসবাস। আবাসিক এলাকা ছাড়া, পৃথিবীর কোথাও শতভাগ জায়গা শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা অথবা একই শ্রেণির কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার হয় না।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, নগর পরিকল্পনায় ভূমির ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়, যেকোনো জায়গার ব্যবহার হবে ২৪ ঘণ্টা। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল কর্মচঞ্চল থাকে মাত্র ১২ ঘণ্টা। এরপর ওই জায়গার ব্যবহার হয় না। রাতে নীরব ও ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়।
তিনি বলেন, যে মতিঝিলে দিনের বেলায় হাঁটা যায় না; গাড়ির কারণে, যানজটে; সেই মতিঝিলে রাত ৮টার পরে আবার একাও হাঁটা যায় না; অনিরাপদ বোধ হয়। এ জন্য যারা দিনে বাণিজ্য করতে আসেন, তারা মতিঝিল এলাকার হোটেলগুলোতে থাকেন না। অন্যদিকে গুলশান-বনানী এলাকায় থাকলে তারা শপিংয়ে যেতে পারেন, কফি শপে যেতে পারেন। এসব কারণে সারা বিশ্বে ভূমির মিশ্র ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, মতিঝিল এলাকা যেহেতু ইতিমধ্যে তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলেছে, এ জন্য মতিঝিলের জমির শ্রেণিকে মিশ্র ব্যবহার হিসেবে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি নিয়েছে রাজউক। সংশোধিত ড্যাপে সে বিষয়ে নির্দেশনা রাখা হয়েছে। পৃথিবীর নগর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৫০, ৬০ বা ১০০ বছর অন্তর সেসব ঢেলে সাজানো হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়েই মতিঝিল এলাকাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে আবাসিকের বৈশিষ্ট্য দিতে হবে; কনডোমিনিয়াম গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে রাজউক বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ১৬ একর জায়গা নিয়ে একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে লাইব্রেরি, ওয়াকওয়ে থাকবে। বসার ব্যবস্থা থাকবে। মতিঝিল এলাকায় ঝিল ছিল, ওই ঝিলকে প্রাধান্য দিয়ে পার্কটি তৈরি করা হবে। বহুমুখী ব্যবহার ছাড়া মতিঝিলকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিলের আধুনিকায়ন ও ভূমির মিশ্র ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। তাহলে মতিঝিল সচল থাকবে; তবে ঢাকা শহর বড় হওয়ায় আরও বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে ওঠা ইতিবাচক। এসব পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দরকার ছিল; কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে সে রকম হয়নি। এটা দুঃখজনক। এ জন্য শহরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ঢাকায় এখন অনেকগুলো বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সব অঞ্চলে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় বড় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় মতিঝিলে রয়েছে। তবে ব্যবসা গুলশান, বনানী, উত্তরা, গাজীপুরে সরে যাওয়ায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ব্যবসা কেন্দ্রের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।