
সক্কাল সক্কাল ঘুম ভেঙে মোবাইলে চোখ রাখতেই স্ক্রিনে ভেসে এলো, আমার এক বিশিষ্ট বন্ধুর পোস্ট। সোশ্যাল মিডিয়ায় আজকাল যা-সব লেখালেখি হয়, বলা বাহুল্য, অধিকাংশই তা নিম্নমানের। ফলে মনে মনে বন্ধুর পোস্টের তারিফ না করে পারলাম না। পোস্টটি হুবহু তুলে দিলাম ‘সত্তর দশকের কলকাতা। একটি সংস্থার চাকরিপ্রার্থী যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন কোম্পানির উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিরা।
হোয়াট ইজ দ্য মোস্ট আউটস্ট্যান্ডিং অ্যান্ড সিগনিফিকেন্ট ইভেন্ট অব দ্য লাস্ট ডিকেড?
আই থিংক ওয়ার ইন ভিয়েতনাম স্যার।
মোর সিগনিফিকেন্ট দ্যান দ্য ল্যান্ডিং অন মুন?
আই থিংক সো স্যার।
কুড ইউ টেল আস, হোয়াই ইউ থিংক সো?
নট দ্য ওয়ার ইটসেল্ফ বাট ইট ইজ রিভিল্ট অ্যাবাউট দ্য ভিয়েতনামিজ পিপল, অ্যাবাউট দেয়ার এক্সট্রা অর্ডিনারি পাওয়ার অব রেজিস্টেন্স, দেয়ার পিপল, পিজান্টস... ইটস নট ম্যাটার অব টেকনোলজি, ইটস জাস্ট প্লেন হিউম্যান কারেজ।
অবধারিতভাবে পরের প্রশ্ন ছিল তুমি কি কমিউনিস্ট!
ছেলেটি উত্তর দিলেও তাকে এরপরে বিদায় করা হলো।
আর একটি ইন্টারভিউয়ে আর এক তরুণকে জিজ্ঞাসা করা হলো, হোয়াট ইজ দ্য ওয়েট অব মুন? চাঁদের ওজন কত? ছেলেটি ঈষৎ বিস্মিত গলায় জানতে চাইল, চাঁদের ওজন! এর সঙ্গে চাকরির কী সম্পর্ক?
তোমাকে যা জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, যদি জানো, উত্তর দাও।’
দুটিই সত্যজিৎ রায়ের প্রতিদ্বন্দ্বী ও জন অরণ্য সিনেমার। অনেকেই দেখেছেন। জানেন। তবুও আমার বন্ধু মনে করিয়ে দিল বলে মনে পড়ে গেল। ছোট্ট একটা ডিসক্লেমার অবশ্যই বন্ধু দিতে ভোলেননি এই পোস্টের সঙ্গে চন্দ্রযান অভিযানের কোনো সম্পর্ক নেই।
ভারতের চন্দ্রযান অভিযানের সাফল্য নিয়ে এমন একজন ভারতীয় নাগরিক নেই যে আনন্দে উদ্বেল হয়নি। ইসরোর বিজ্ঞানীরা যেভাবে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত পরিশ্রম করে সারা বিশ্বের কোটি কোটি লোককে গর্বিত করলেন, তাতে কোনো প্রশংসাই তাদের জন্য যথেষ্ট নয়। তারা দুনিয়ার ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায়ের জন্ম দিলেন। আসলে এটা খুব জোর গলায় বলার দরকার যে ভারতের বিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, লেখক, সমাজকর্মী, বিজ্ঞাপন জগতের রথী-মহারথীদের প্রতিভা, যোগ্যতা নিঃসন্দেহে দুনিয়ার সেরা। শিল্প, সাহিত্য, খেলা সব ক্ষেত্রেই আপনি, যত সমালোচক হোন না কেন, তাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবেন না। এবারের চন্দ্রযান অভিযানের কথাই ধরুন। চন্দ্রযান অভিযান-২ ব্যর্থ হওয়ার পরও একজনও ভেঙে না পড়ে অসাধ্যসাধন করলেন যে বিজ্ঞানীরা তাদের নামগুলো দেখলেই বুঝবেন, অধিকাংশই উঠে এসেছেন নিতান্তই সাধারণ ঘর থেকে। কেউ কেউ অতি দরিদ্র পরিবারের। এমন বিশাল কর্মযজ্ঞ সফল হলো মাত্র ৬১৫ কোটি টাকা বাজেটে। যেখানে ‘আদিপুরুষ’ সিনেমার বাজেটই ছিল সাতশ কোটি টাকা।
এমন একসময়ে বিজ্ঞানীরা সাফল্য পেলেন, যখন দেশে জ্যোতির্বিজ্ঞান নয়, প্রাধান্য পাচ্ছে জ্যোতিষ শাস্ত্র। যখন চারপাশে নব্য হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিক দেশকে ঠেলে দিচ্ছেন প্রাচীন অন্ধকার সময়ে। ডিরোজিও, রামমোহন, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথের যুক্তি ও প্রজ্ঞা নয়, গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে অলৌকিক ক্ষমতা ও বিশ্বাসের ওপর। এমন একসময়, যখন সাম্প্রদায়িক হানাহানি ক্রমবর্ধমান। যখন মণিপুর, হরিয়ানা জ্বলছে। যখন গরু নিয়ে যাওয়ার অপরাধে নির্দিষ্ট একটি সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হচ্ছে। এমন একসময়, যখন দেশের মাননীয় নেতারা ক্ষুধা, অভাব, চাকরি না পাওয়া, অর্থনৈতিক সংকট থেকে কীভাবে বের হতে পারা সম্ভব সে আলোচনায় না গিয়ে কাল্পনিক গালগল্প জনমনে চারিয়ে দিতে ব্যস্ত। সে কাহিনি নির্মাণে কখনো পাঠ্য সিলেবাস থেকে পুরো মুঘল যুগ বাদ পড়ে যাচ্ছে। কখনো শোনা যাচ্ছে আধুনিক প্লাস্টিক সার্জারি সনাতন ভারতে ছিল বলেই গণেশের কাটা মাথায় হাতির মাথা জুড়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। যে দেশের নীতিনির্ধারকরা বিজ্ঞানচর্চার ধারে-কাছে যান না। সেখানে এই চন্দ্রযাত্রা নিশ্চিত কৃতিত্বের। বিক্রম সফলভাবে ল্যান্ড করার পর থেকে অবশ্য ঠিক বুঝতে পারছি না, ইসরোর বিজ্ঞানীরা না আমাদের মাননীয় সর্বজ্ঞানী শ্রীল শ্রীযুক্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদিজি ঠিক কার কৃতিত্ব এই যুগান্তকারী সাফল্য!
টিভির পর্দায় কোটি কোটি লোক অধীর উৎকণ্ঠা নিয়ে তাকিয়ে আছেন, সবার বুকের ধড়ফড়ানির শব্দ ক্রমেই বাড়ছে। শেষ মুহূর্তে সব ঠিকঠাক কাজ করাই আসল। হাততালি সবে দিতে যাবেন আপামর ভারতবাসী, সেই প্রতীক্ষিত মুহূর্তেই বিদেশ থেকে মোদিজির সহাস্য মুখ আর বাণী বিতরণে ক্যামেরা ফোকাস করায় ল্যান্ডিং দেখা থেকে বঞ্চিত হলেন কোটি কোটি মানুষ। তারপর থেকে দৃষ্টিকটুভাবে মিডিয়ার বড় অংশ ও সংঘ পরিবারের কেষ্ট-বিষ্টুরা উঠেপড়ে লেগেছেন যাবতীয় কৃতিত্ব একজনকে দিয়ে নতুন এক জাতীয়তাবাদী জোয়ার তুলে আগামী নির্বাচনে সফল হতে। বিপুল এই মোদি হাইপে চাপা পড়ে যাচ্ছে বিজ্ঞানীদের কৃতিত্ব। বিজ্ঞানগাথা গৌণ হয়ে তুলে আনা হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় আবেগকে। যে জায়গায় বিক্রম চাঁদের মাটি ছুঁয়েছে, তার নাম রাখা হয়েছে শিবশক্তি। হঠাৎ শিবশক্তি কেন? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, শিব মানবতার কল্যাণে সদাই তৎপর। সংকল্প সম্পূর্ণ করার শক্তি দেয় মহাশক্তি। দুইয়ে মিলে শিবশক্তি। ফলে এটাও পরিষ্কার, প্রযুক্তি, বিজ্ঞান যত লম্ফঝম্প করুক, মহাশক্তি বা শিবশক্তি সহায় না হলে কোথাও কোনো অভিযান করে লাভ নেই। প্রধানমন্ত্রীজি আরও বলেছেন এই সাফল্যের পেছনে আছে নারী শক্তি। আসলে তিনি নারী বিজ্ঞানীদের প্রশংসা করেছেন। উচিত কাজ। যথার্থ দেশ নেতাসম কাজ। আমার কেন জানি না আচমকাই কয়েক মাস আগে ভারতের পদক জেতা মহিলা কুস্তিগিরদের ওপর পুলিশি অত্যাচার ও মণিপুরের কুকি দুই তরুণীকে নগ্ন করে প্রকাশ্যে ধর্ষণ করার ভাইরাল ছবি মনে পড়ে যাচ্ছিল। হাথরাস ও অন্যান্য ঘটনা তো ভুলেই গেছি। বড় ভালো বলেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। অসাধারণ বাগ্মী। তিনি সব সময় বলেন, ‘বেটি বাঁচাও, বলেন, সবকা সাথ সবকা বিকাশ...।’ আবার তিনিই কোনো জাদুমন্ত্রে শুধু পোশাক দেখে সন্ত্রাসবাদী চিহ্নিত করতে পারেন!
এক-এক লোকসভা নির্বাচনে এক-এক ইস্যু। কখনো কালো টাকা বন্ধের প্রতিশ্রুতি, কখনো দেশের সব নাগরিকের পনেরো লাখ টাকা দেওয়ার আশ্বাস, কখনো দুই কোটি চাকরির স্বপ্ন দেখানো। পাশাপাশি রামমন্দির নির্মাণের মহতী উদ্যোগ, নতুন পার্লামেন্ট ভবনের গায়ে অখণ্ড ভারতের ম্যাপের ম্যুরাল, সাধুদের পায়ে উপুড় হয়ে লুটিয়ে থাকা, একের পর এক কোলাজ। সবকা সাথ বাণী চাপা পড়ে যায়, নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীর দিকে আঙুল তুলে, গোলি মারো শালাকো আওয়াজে। এ ছাড়া রয়েছে উত্তর প্রদেশের কুখ্যাত ফেক এনকাউন্টার ও বুলডোজার রাজ। এসব ধামাচাপা দিতেও তো এখন দরকার চন্দ্র অভিযানের বিজ্ঞানীদের সাফল্যকে নিজের বলে ঢাক পেটানো।
কাকে আর কি বলব! খোদ ইসরোর ডিরেক্টর বলে দিয়েছেন, চন্দ্রযান অভিযানের গূঢ় রহস্য। তা হচ্ছে যাবতীয় বিজ্ঞান নিহিত রয়েছে বেদের পাতায়। পাশ্চাত্য পরে সেসব অনুসরণ করেছে। ভারতের প্রথম দিকের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানী হোমি জাহাঙ্গীর ভাবা, বিক্রম সারাভাই ও অন্যদের কথা খুব মনে পড়ছে। আর মনে পড়ছে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে। মূলত যার উৎসাহেই ১৯৬২ সালে জন্ম নিয়েছিল, ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কমিটি ফর স্পেস রিসার্চ। স্পেস সায়েন্সের সাফল্য কোনো অলৌকিক ঘটনা নয়। দীর্ঘ অনুশীলনের ফল, সবই বেদে আছে বলে তাকে অগ্রাহ্য করা যায় না।
লেখক : ভারতীয় প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ও লেখক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০১৭ সালে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক দায়িত্বে থাকাকালে রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করা হয়। এরপর থেকে কলেজগুলোর অ্যাকাডেমিক বিষয়গুলো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিচালিত হচ্ছে। তবে ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রিতা, ত্রুটিযুক্ত ফলাফল প্রকাশ, সিলেবাসবহির্ভূত প্রশ্ন পদ্ধতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে প্রায় তিন লাখ শিক্ষার্থীকে।
এসব সমস্যার সমাধানের দাবিতে বারবার রাস্তায় নেমে আসছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। চলতি বছর জুন থেকে আগস্ট মাসে অন্তত ১০ বার সড়ক অরোধ করে বিক্ষোভ করেছে তারা। সর্বশেষ সিজিপিএর শর্ত শিথিল ও সর্বোচ্চ তিন বিষয় পর্যন্ত মানোন্নয়ন দিয়ে পরবর্তী বর্ষে প্রমোশন দেওয়ার দাবিতে টানা আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। গত রবিবার রাজধানীর নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন তারা। এ সময় অন্তত ১০ শিক্ষার্থী অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আন্দোলনের কারণে যানজটে অসহনীয় ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে রাস্তা ছাড়েন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার ঢাবির সিনেট ভবনে বিশেষ পরামর্শ সভা ডেকেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, পাঠদান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো না হলেও প্রমোশনের ক্ষেত্রে সিজিপিএর ধরা-বাঁধায় আটকে রাখা হয় তাদের। বিজ্ঞান অনুষদে যেকোনো বর্ষে সিজিপিএ ৪.০০-এর মধ্যে জিপিএ ২.০০ পেলেই পরবর্তী বর্ষে প্রমোশন পাওয়া যায়। কিন্তু কলা ও বাণিজ্য অনুষদের সিজিপিএর ক্ষেত্রে প্রথম বর্ষে ২.০০, দ্বিতীয় বর্ষে ২.২৫, তৃতীয় বর্ষে ২.৫০ না পেলে চতুর্থ বর্ষে উত্তীর্ণ হওয়া যায় না। ফলে সব বিষয়ে পাস করেও সিজিপিএ কম থাকায় পরবর্তী বর্ষে প্রমোশন হয় না।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে ফলাফল দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয় ৭-৯ মাসে। নেই নির্দিষ্ট কোনো অ্যাকাডেমিক প্ল্যান। ক্লাস নেন এক শিক্ষক, প্রশ্ন করেন আরেকজন, খাতা দেখেন অন্যজন। ফলে গণহারে ফেল করেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া একজন মাত্র সমন্বয়ক হওয়ায় সুবিধা-অসুবিধাগুলো জানাতে পারেন না শিক্ষার্থীরা। কোনো সমস্যা হলেই দৌড়াতে হয় ঢাবিতে। সমাধানে চলে যায় মাসের পর মাস। শিক্ষক সংকটের কারণে নিয়মিত ক্লাস হয় না। শিক্ষার্থীর অনুপাতে যতজন শিক্ষক থাকার কথা, তার আদর্শ মানের ধারেকাছেও নেই সাত কলেজ। তবে পর্যায়ক্রমে আসন সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে বলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন সাত কলেজের প্রধান সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল।
সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের দাবি, সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করতে হবে, অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রণয়ন, শিক্ষক সংকটের সমাধান, ক্লাসরুম সংকট নিরসন, সিজিপিএ শর্ত শিথিলসহ সাত কলেজেই ডেডিকেটেড ডেস্ক বসাতে হবে। একই সঙ্গে সাত কলেজ নিয়ে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি শিক্ষার্থীদের।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মাইনুর রহমান মাহিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা দ্বিতীয় বর্ষের আট মাস ক্লাস করে জানতে পারি আমরা প্রথম বর্ষে অকৃতকার্য হয়েছি। তখন হয়তো সাত দিন সময় আছে। এর মধ্যে প্রস্তুতি নিয়ে প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। এ নিয়ে আমাদের কলেজ কর্তৃপক্ষের কিছুই করার থাকে না। তারা আমাদের পাঠায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।’
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রুহেল রানা বলেন, ‘আমি ফোর্থ ইয়ারে উঠে ইনকোর্স, ক্লাস টেস্ট, অ্যাসাইনমেন্ট যাবতীয় সব শেষে জানতে পারি আমাকে আবার থার্ড ইয়ারে পরীক্ষা দিতে হবে। সব বিষয়ে পাস করার পরও সিজিপিএ ২.৫০ না হওয়ায় পুনরায় একই বর্ষে থাকতে হচ্ছে। আমরা নামেমাত্র অধিভুক্ত, এ ছাড়া কিছুই নই।’
কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘ঢাবির শিক্ষার্থীরা শতভাগ সুবিধা পেলে আমরা পাছি ১০ ভাগ। আমাদের শুধু লোগো ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
ঢাকা কলেজের আরেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রাকিব বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাত কলেজের সংকট নিরসন না করতে পারলে আমি মনে করি ঢাকা কলেজকে অধিভুক্ত থেকে আলাদা করে দেওয়া হোক। এর জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় করা হোক।’
এদিকে সাত কলেজ অধিভুক্তির পর থেকেই তা বাতিল চেয়ে আন্দোলন করে আসছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক সক্ষমতা নিজেদের শিক্ষার্থীদের জন্যই অপ্রতুল বলে মনে করেন তারা। সেখানে সাত কলেজকে অধিভুক্ত করা একটা ভুল সিদ্ধান্ত বলে দাবি করে আসছেন তারা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অধিভুক্তি বাতিলই একমাত্র সমাধান বলে মত ঢাবি শিক্ষার্থীদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত রাশিদ বলেন, ‘ঢাবি প্রশাসনের আয়ের একটা বিশাল উৎস এই সাত কলেজ। ঢাবি প্রশাসন তাই এই সোনার ডিম দেওয়া হাঁসের অধিকার ছাড়তে চায় না। সাত কলেজের একদল শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোওয়ালা সার্টিফিকেটের লোভে এ অধিভুক্তি বাতিল চায় না। কিন্তু সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল আসলে সময়ের দাবি।’
ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, ঢাবি এবং সাত কলেজের লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে বিপদে ফেলা, ভোগান্তি বাড়ানো এবং কিছু ক্ষেত্রে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরির মূলে আছে এই অপরিকল্পিত অধিভুক্তি। এর ফলে সীমাহীন অসুবিধার সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও সেসবের কোনো সুরাহা হয়নি। এসব থেকে মুক্তিতে অধিভুক্তি বাতিলই একমাত্র সমাধান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সাত কলেজকে অধিভুক্ত করা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং ভুল সিদ্ধান্ত বলেও মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞ শিক্ষকরা। কথাসাহিত্যিক ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছে সেটা যৌক্তিক, তাদের সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান করা উচিত। আমি মনে করি এটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল, কী কারণে নেওয়া হলো এটা আমার বোধগম্য নয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়েছিল এসব কলেজ দেখাশোনা করার জন্য, তারা সেভাবে অভ্যস্তও হয়েছিল কিন্তু হঠাৎ করে কেন বিভাজন করা হলো এটা আমার মাথায় আসে না। এই যে আমাদের কোনো বিবেচনা ছাড়া, চিন্তা ছাড়া পরিকল্পনা করি তারই ফলাফল হচ্ছে আজকের এ অবস্থা। যার প্রভাব পড়ছে ঢাবিতেও। এখানের শিক্ষকরা, কর্মচারীরা দিনের বেশিরভাগ সময় সাত কলেজ নিয়ে পড়ে থাকতে হচ্ছে। আমি মনে করি অতিদ্রুত তাদের পুনরায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্তান্তর করা উচিত।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে প্রক্রিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাত কলেজের দায়িত্ব নিয়েছে সেটিই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কোন যুক্তিতে এ কলেজগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হলো সেটা জানা নেই। মূলত এটা আমাদের জন্য বোঝা। কিন্তু এখানে আমাদের কোনো কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। দিনশেষে আমাদের শিক্ষার্থীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
সাত কলেজের সমন্বয়ক ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা বলেছি যার যার কলেজের শিক্ষার্থী নিজ নিজ কলেজের বিভাগে তাদের সমস্যাটা জানাবে। প্রক্রিয়াটাই হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপে। যাতে তাদের সময় এবং অর্থ ব্যয় না হয়। আমি বলেছি ঢাবির রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে যাওয়ার দরকার নেই। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই হবে। কিছু জটিলতার কারণে শিক্ষার্থীদের ফলাফলে দেরি হয়েছে, আশা করি আগামীতে আর হবে না। আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে তিন বিষয় পর্যন্ত যারা ফেল করেছে, তাদের প্রমোশন দেওয়া হবে না তবে সিজিপিএ নিয়ে যে সমস্যা হচ্ছে, সেটার সমন্বয়ের কাজ করছি।’
সাত কলেজের প্রধান সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেসব শিক্ষার্থী মনে করেছে সাত কলেজ আগের মতো চলবে তারা এখান থেকে পিছিয়ে পড়েছে। আমরাও তাদের সহানুভূতিশীল দৃষ্টি দিয়ে দেখতে চাই কিন্তু এ সহানুভূতিশীল দৃষ্টি যদি বেশি দিন ধরে রাখি তাহলে যে লক্ষ্যে সাত কলেজকে দেওয়া হয়েছে সে লক্ষ্য পূরণ হবে না। তাদের চিত্র যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খুব খারাপ এবং তাদের পড়ালেখার মান খুব খারাপ সেটা কিন্তু বলা যাবে না। গত কয়েক বছরে সাত কলেজের লেখাপড়ার মান অনেক উন্নত হয়েছে, সিলেবাসের পরিবর্তন হয়েছে, পাসের হারের দিক থেকেও ঢাবির চেয়ে কম নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাত কলেজ দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় ছিল। দীর্ঘদিনের যে প্রভাব, সে প্রভাব ছয় থেকে সাত বছরের মধ্যে দূর হয়ে যাবে এমন চিন্তা করা সঠিক নয়। কিছু কিছু জায়গায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও দুর্বলতা আছে, যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মেই সাত কলেজ চলছে তার প্রভাব সেখানেও পড়ে। আমরা সেসব সংস্কারের চেষ্টা করছি। আশা করি নিকট ভবিষ্যতে আমরা অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারব।’
জেমকন গ্রুপের চেয়ারম্যান কাজী শাহেদ আহমেদ মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার। এই শিল্পোদ্যোক্তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। কাজী শাহেদ আহমেদের মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল।
ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, ক্রীড়া সংগঠক, প্রকাশক কাজী শাহেদ আহমেদ ১৯৪০ সালের ৭ নভেম্বর যশোরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রকৌশলবিদ্যায় লেখাপড়া শেষে ১৪ বছর সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমির প্রতিষ্ঠাকালীন প্লাটুন কমান্ডারদের একজন।
বাংলাদেশে প্রকাশিত পত্রিকায় যে আধুনিকতার উপস্থিতি, তার শুরু কাজী শাহেদ আহমেদের মালিকানায় প্রকাশিত ‘আজকের কাগজ’ পত্রিকার হাত ধরে। যা তৎকালীন মুক্তমত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। পরে সাপ্তাহিক ‘খবরের কাগজ’ প্রকাশিত হয় তার মাধ্যমে।
সাহিত্য পরিমণ্ডলেও তিনি সুপরিচিত। কাজী শাহেদ আহমেদের প্রথম গ্রন্থ ‘আমার লেখা’। এটি ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত হয়। সে বছরই তার ‘ঘরে আগুন লেগেছে’ বইটিও প্রকাশিত হয়। ২০১৩ সালে তার ৭৩ বছর বয়সে প্রথম উপন্যাস ‘ভৈরব’ প্রকাশিত হয়। আত্মজীবনী ‘জীবনের শিলালিপি’ প্রকাশিত হয় ২০১৪ সালে। একই বছর প্রকাশিত হয় উপন্যাস ‘পাশা’।
২০১৭ সালে প্রকাশিত হয় উপন্যাস ‘দাঁতে কাটা পেনসিল’। ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয় উপন্যাস ‘অপেক্ষা’। ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে ‘ভৈরব’।
১৯৭৯ সালে ‘জেমকন গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ব্যবসায় জীবন শুরু কাজী শাহেদ আহমেদের। বাংলাদেশে প্রথম অর্গানিক চা বাগানের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। বন্ধ হওয়ার আগে তিনি আজকের কাগজের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীকে মারধর এবং প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ। গতকাল সোমবার সকালে ওই হামলার ঘটনার পর ক্যাম্পাসে তিন ঘণ্টা গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সরবরাহসহ সব কার্যক্রম বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ ছাড়া উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করে হামলাকারী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুব সম্পাদক রাজু মুন্সীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স সমিতি। তবে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা এরপরও দিয়েছেন ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য। বলেছেন, পুলিশে ধরলে শেখ হাসিনাই কল দিয়ে তাকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করবেন! হাটহাজারী থানা সূত্র জানিয়েছে, প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বাদী হয়ে রাজু মুন্সী ও অজ্ঞাতনামা তিন-চারজনের নামে মামলা করেছেন।
জানা যায়, ঘটনার সূত্রপাত গত রবিবার ক্যাম্পাসের কাটা পাহাড় রাস্তায়। প্রধান প্রকৌশলী ছৈয়দ জাহাঙ্গীর ফজল সেখানে রাজু মুন্সীর হাতে মারধরের শিকার ও লাঞ্ছিত হন। গতকাল প্রধান প্রকৌশলী ছৈয়দ জাহাঙ্গীর ফজল বলেন, ‘কাটা পাহাড় এলাকায় নির্মাণকাজ পরিদর্শনকালে রাজু মুন্সী আমাকে মারধর করেন। পরে রেজিস্ট্রার অফিসের সামনেও আমাকে মারতে আসেন।’
ছৈয়দ জাহাঙ্গীর ফজল বলেন, ‘রাজু মুন্সী বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের প্রত্যেক কনট্রাকটরের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করছেন। রড-সিমেন্টসহ নির্মাণসামগ্রী চুরি করেছেন। এসব বিষয়ে আমি উপাচার্য, প্রক্টর ও রেজিস্ট্রারের কাছে অভিযোগ জানানোয় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে এ কাজ করেছেন।’
জানা গেছে, রাজু মুন্সী শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপুর অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিতে এই পক্ষটি নগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে ওই ঘটনার কাছাকাছি সময়ে রাজু মুন্সী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন বলেও অভিযোগ ওঠে।
প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শেখ মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমি তখন ওপরে নিজের অফিসে ছিলাম। নিচে আমাদের এক গার্ডের কাছে এসে রাজু মুন্সী বলেন, তোর স্যারকে গিয়ে বলবি ১০ হাজার টাকা রেডি রাখতে। নিচ থেকে ওই গার্ড উঠে এসে আমাকে বিষয়টি জানায়। এর ২০-২৫ মিনিট পর আমি নিচে নেমে কর্মচারীদের হাজিরা খাতা দেখছিলাম। তখন রাজু মুন্সী এসে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করতে থাকে। তুই-তুকারি করে এবং আমাকে ধাক্কা মারে। তখন লোকজন এসে তাকে ধরে সরিয়ে নেয়।’
আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘এরপর আমি প্রশাসনিক ভবনে জানাই। বিষয়টি প্রক্টরকে জানালে তিনি আমাকে আশ্বস্ত করে আমার অফিসে যেতে বলেন। তখন আমি নিজের অফিসে যাই। এর কিছুক্ষণ পর পুলিশ এসে ঘটনার বিষয়ে জানতে চায়। তাদের সঙ্গে কথা বলার পর তারা চলে যান। এরপর আমি আবার প্রশাসনিক ভবনে যাই। সেখানে নিচে অনেক লোকজন জড়ো দেখে দাঁড়াই। তখনই প্রক্টর অফিসের দিক থেকে রাজু মুন্সী এসে আমাকে ধাক্কা দেয়। এ সময় উপস্থিত ডেপুটি রেজিস্ট্রার আমাকে রক্ষা করেন। এরপর রাজু মুন্সী দৌড়ে গিয়ে প্রধান প্রকৌশলীকে মারতে যায়।’
এসব ঘটনার কথা জানাজানি হলে শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এবং পরে সব বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ বন্ধ করে দেন। এ সময় পুরো ক্যাম্পাসে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষের আশ্বাসে তারা কাজে ফেরেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ হামিদ হাসান নোমানী বলেন, ‘উপাচার্যের সঙ্গে আমরা দেখা করেছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন ব্যবস্থা নেবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কেএম নুর আহমদ বলেন, এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। রাজু মুন্সীকে আসামি করে মারধর ও চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত রাজু মুন্সী বলেন, ‘তারা দুজন (প্রকৌশলী ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা) বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। আমি প্রতিবাদ জানিয়েছি। প্রতিবাদের কারণে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন।’ নিজেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রিজার্ভ ফোর্স দাবি করে রাজু বলেন, ‘আমাকে পুলিশে নিয়ে গেলে শেখ হাসিনা কল দিয়ে আমাকে ছাড়াবেন। আমি শেখ হাসিনার রিজার্ভ ফোর্স। নির্বাচনে আমাকে কাজে লাগবে।’
রাজধানীর মিরপুর-১-এ ‘রূপায়ণ লতিফা শামসুদ্দীন স্কয়ার’ প্রকল্প জমির মালিক ও গ্রাহকদের কাছে হস্তান্তর করেছে দেশের অন্যতম আবাসন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট লিমিটেড। এ সময় প্রকল্পের জমির মালিক এবং গ্রাহকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে দেশের বৃহৎ এ প্রতিষ্ঠানটি।
গত রবিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরায় ‘রূপায়ণ সিটি উত্তরা’তে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘রূপায়ণ লতিফা শামসুদ্দীন স্কয়ার’ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পটি হস্তান্তর করে প্রতিষ্ঠানটি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডক্টর লতিফা শামসুদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক মো. আলী মর্তুজা পলাশ, মো. আনিছুর রহমান লাবু ও রূপায়ণের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা ক্যাপ্টেন পি. জে উল্লাহ (অব.), রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট লিমিটেডের সিইও মো. আলীনুর রহমান, সহকারী পরিচালক এইচ আর অ্যাডমিন মাহফুজুর রহমান, সিজিএম অ্যান্ড হেড অব কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ার মো. কামাল আহম্মেদ, হেড অব কাস্টমার সার্ভিস মীর মাজেদুল ইসলাম, রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট লিমিটেডের অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তা ও অতিথিরা।
‘রূপায়ণ লতিফা শামসুদ্দীন স্কয়ার’ প্রকল্পটি মিরপুরের প্রাণকেন্দ্র রোড-১, সেকশন-১, মিরপুর-১-এর ১২০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা সংলগ্ন এলাকায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার মনোরম পরিবেশে ২০ দশমিক ৮৬ কাঠা জমির ওপর নির্মিত দুটি বেজমেন্ট, গ্রাউন্ড ফ্লোর এবং ১৩তম তলাবিশিষ্ট একটি সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক ভবন।
এ প্রকল্পটি মিরপুর এলাকায় সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন বাণিজ্যিক ভবনে পরিণত হয়েছে। ভবনটিতে রয়েছে চারটি অত্যাধুনিক লিফট, সাবস্টেশন, জেনারেটর, পঞ্চমতলা পর্যন্ত ভিআরএফ সিস্টেম, অগ্নিনিরাপত্তার জন্য ফায়ার হাইড্রান্টসহ ফায়ার এক্সটিংগুইশার, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য রয়েছে সোলার প্যানেল সিস্টেম, গ্রাহকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ভবনে রাখা রয়েছে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা, ম্যানেজমেন্ট মিটিং রুম, প্রেয়ার রুম, ড্রাইভারস ওয়েটিং রুম, কমন ওয়াশরুম, সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য কমপ্লেক্সের গ্রাউন্ড ফ্লোর এবং ফ্রন্ট সাইডে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ভূমি। এ ছাড়া রয়েছে আরও অনেক আধুনিক সুযোগ-সুবিধা।
গ্রাহকরা বলেন, বিভিন্ন প্রতিকূলতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক মন্দা, বিশ্বব্যাপী কভিড-১৯ মহামারী এবং নানা ধরনের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সর্বাধুনিক দৃষ্টিনন্দন বাণিজ্যিক ভবনটি তৈরি করতে পেরেছে রূপায়ণ। গ্রাহকরা রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট লিমিটেডের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং সবসময় পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
ঢাকার নবাবগঞ্জের দড়িকান্দা গ্রামের তোতা মিয়ার ছেলে মোসলেম মোল্লা পরিবারের সচ্ছলতার আশায় ২০১৬ সালে ইরাকে যান। ইরাকের সাইদিয়া শহরে থাকতেন তিনি। ২০২১ সালের শুরুতে হঠাৎ চাকরি হারান। বেকার অবস্থায় তিনি যখন চাকরি খুঁজছিলেন, তখন এক বিকেলে পরিচয় হয় সেলিম নামে এক বাংলাদেশির সঙ্গে। সেলিমের কাছে চাকরির জন্য অনুরোধ করেন মোসলেম। এই সুযোগে মাসিক ৫০০ ডলারে অফিস সহকারীর চাকরির লোভ দেখান সেলিম। চাকরির সাক্ষাৎকারের কথা বলে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি মোসলেমকে তিনি সাইদিয়া শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে আল মনসুর বা কাবাদ শহরে পাঠান। একটি প্রাইভেট কারে করে মোসলেমকে নেওয়া হয় আল মনসুর শহরের একটি বাড়িতে। সেখানে যাওয়ার দুই ঘণ্টা পরই মোসলেম বুঝতে পারেন তিনি অপহরণের শিকার হয়েছেন। সেখানে একটি ফ্ল্যাটে চার মাস বন্দি ছিলেন মোসলেম। মোসলেম দেশ রূপান্তরকে জানান, এই চার মাসে তিনি ছাড়াও ৯ বাংলাদেশিকে একইভাবে অপহরণ করে নির্যাতন করে অন্তত কোটি টাকা আদায় করেছে ওই চক্র। তারাও অধিকাংশই বেকার ছিল। কেউ আবার ভালো বেতনের আশায় সেখানে এসেছিলেন।
ভুক্তভোগী ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সূত্রে জানা গেছে, ইরাকের আল মনসুর শহরে আবাসিক ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদেরই অসাধু এক চক্র রমরমা অপহরণ-মুক্তিপণ বাণিজ্য চালাচ্ছেন। বেকার বা ভালো বেতনে চাকরি খুঁজছেন এমন বাংলাদেশিদের টার্গেট করছে চক্রটি। অপহরণকৃতদের নির্মম নির্যাতন করে সে দৃশ্য ভিডিও করে দেশে স্বজনদের পাঠিয়ে মুক্তিপণ আদায় করছে। অনেক ক্ষেত্রে আবার মুক্তিপণের টাকা দিলেও মিলছে না মুক্তি। ২০২১ সালের শুরুর দিকে মাত্র চার মসে ১০ বাংলাদেশিকে তারা অপহরণ করে কোটি টাকা মুক্তিপণ আদায় করেছে। চক্রটি মুক্তিপণের টাকা নিচ্ছে তাদের দেশে থাকা স্বজনদের মাধ্যমে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন হচ্ছে অপহরণের টাকা।
ভুক্তভোগীর মায়ের কাছ থেকে ছয় লাখ টাকা নিলেও মুক্তি দেয়নি তাকে। মুক্তি না দিয়ে আরও টাকা দাবি করে চক্রটি। চার মাস আটকা থাকার পর সুযোগ পেয়ে সেই বন্দিদশা থেকে পালান মোসলেম। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশে রয়েছেন।
মোসলেম গতকাল সোমবার মোবাইল ফোনে দেশ রূপান্তরকে ভয়াবহ সেই ঘটনার কথা জানান। তিনি বলেন, আমাকে যে ফ্ল্যাটে আটকে রেখেছিল সেটি ছিল দুই রুমের। ভবনটি ছিল দোতলার। অপহরণকারীদের মধ্যে ছয়জন ছিল পুরুষ ও একজন নারী। চক্রের ওই নারী সদস্য অসামাজিক কাজে লিপ্ত হতো। তারা সবাই বাংলাদেশি। আমি গিয়ে প্রথমপর্যায়ে আরও তিনজনকে দেখেছি, যাদের একইভাবে চাকরির কথা বলে অপহরণ করেছে। এর মাস-দুই পর তাদের স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। এরপর আরও ছয়জনকে এনে আটকে রেখে মুক্তিপণের জন্য নির্যাতন করতে থাকে। যেদিন সেখান থেকে পালিয়েছিলাম সেদিন আরও কয়েকজনকে আনতে গিয়েছিল তারা। এ সময় অপহরণকারী চক্রের মাত্র দুজন ফ্ল্যাটে ছিল। আমরা তাদের হাত-পা বেঁধে রেখে ভবনের ছাদ টপকে পালাতে সক্ষম হই।
মোসলেমের মা খতেজা বেগমের করা মামলার তদন্তে নেমে বাংলাদেশ থেকে আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলে আলী হোসেন, মো. শামীম, শিরিন সুলতানা, মোহাম্মদ ঘরামী, রবিউল ঘরামী, শাহিদা বেগম, সাহনাজ আক্তার লিপি ও মো. আকবর সরদার। তারা সবাই অপহরণকারী চক্রের স্বজন, যারা বাংলাদেশ থেকে অপহরণের টাকা গ্রহণ করেছে। ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশের বরিশাল, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মাগুরা এবং খুলনায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তবে মূল অপহরণকারীরা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকা জেলার এসআই একেএম সামসুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, মূল অপহরণকারীরা ইরাকে রয়েছে। যাদের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে মুক্তিপণের টাকা আদায় করেছে তাদের আমরা গ্রেপ্তার করেছি। তারা টাকা নেওয়ার কথা স্বীকারও করেছে।
পিবিআই ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা বলেন, ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি মোসলেম মোল্লা ইরাকে অবস্থানকালে সেলিম মিয়া ও শামীমসহ অজ্ঞাতপরিচয়ের আরও কয়েকজনের হাতে অপহরণের শিকার হন। মোসলেমকে কাজের কথা বলে ইরাকে তার বর্তমান কর্মস্থল থেকে অন্যত্র অপহরণ করে তার মা খতেজা বেগমের কাছ মুক্তিপণ দাবি করে। ছেলেকে বাঁচানোর জন্য আসামিদের দেওয়া ১২টি বিকাশ নম্বরে ২৬ বার ছয় লাখ টাকা দেন তিনি। পরে তারা মোসলেমকে মুক্তি না দিয়ে পুনরায় তার মায়ের কাছে টাকা দাবি করে। এ ঘটনায় মা খতেজা বেগম বাদী হয়ে নবাবগঞ্জ থানায় মামলা করেন। পরে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে পিবিআই ঢাকা জেলা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে।
মো. কুদরত-ই-খুদা বলেন, তদন্তে জানা গেছে ইরাকে অবস্থানকালে সেলিম মিয়া নামে একজনের সঙ্গে ভুক্তভোগী মোসলেমের পরিচয় হয়। ভালো বেতনের কাজের প্রলোভন দেখিয়ে মোসলেমকে তিনি অপহরণকারী চক্রের সদস্য আনোয়ার, শাহনেওয়াজ, রুহুল আমিন, মনির, হাসিবুর, সাব্বিরদের হাতে তুলে দেয়। মোসলেমকে নিয়ে তারা একটি আবদ্ধ রুমে আটকে রেখে তার কাছে থাকা প্রায় দুই লাখ টাকা ও দেড় লাখ টাকা মূল্যের একটি আইফোন ছিনিয়ে নেয়। এর থেকে তাকে নির্যাতন করতে থাকে। তিন দিন ধরে নির্মম, বর্বর নির্যাতনের পর সেই নির্যাতনের দৃশ্য ভিডিও করে ইমো অ্যাপের মাধ্যমে মোসলেমের মা খতেজা বেগমকে দেখিয়ে ১১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। খতেজা বেগম ছেলের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আসামিদের পাঠানো ১২টি বিকাশ নম্বরে ২৬টি ট্রানজেকশনের মাধ্যমে ছয় লাখ টাকা পাঠান।
তিনি আরও বলেন, আসামি আনোয়ার, শাহনেওয়াজ, রুহুল আমিন, মনির, হাসিবুর, সাব্বিররা ইরাকে অবস্থান করলেও বাংলাদেশ তাদের পরিবারের সদস্যরা এই মুক্তিপণের টাকা বিভিন্ন বিকাশ এজেন্টের দোকান ও নিজেদের পারসোনাল বিকাশ নম্বর থেকে ক্যাশআউট করে নেয়। শাহনেওয়াজ অপহরণ চক্রের দলনেতা বলে গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়। গ্রেপ্তারকৃত আটজন আসামিকে আদালতে সোপর্দ করা হলে ছয়জন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দি অনুযায়ী ইরাকে অবস্থানকারী মামলার আসামি আনোয়ার, মনির, রুহুল আমিন, সাব্বির, শাহনেওয়াজ, হাসিবুর ও সোহাগকে শনাক্ত করা হয়।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আইন মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি বলছে, আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে। সরকারের এমন নেতিবাচক সিদ্ধান্তের পর এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি দেয়নি দলটি। তবে এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে যোগ হতে পারে বলে জানা গেছে।
৫৩ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও দলীয় নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। বিদেশে নেওয়া ছাড়া তার উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে তার ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। এতে মতামত দিতে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় আইন মন্ত্রণালয় এতে মতামত দেয়। এ বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেছেন, তার সাময়িক মুক্তির আদেশটা বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) কারাগারে নেওয়া হলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বাসায় চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না এমন দুটো শর্ত সাপেক্ষে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে দন্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। দরখাস্তটা নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে আটবার দন্ড স্থগিত করা হয়েছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো সুযোগ আইনে থাকে না। আমরা ৪০১ ধারার উপধারা ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ ব্যাখ্যা করে মতামত পাঠিয়েছি। আমাদের মতামত হলো, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে, সেটা অতীত এবং মীমাংসিত। এটা আর খোলার কোনো উপায় নেই।’
এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) সাজা স্থগিত রেখে যে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সেটা বাতিল করে তারপর পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই উপমহাদেশে ৪০১ ধারার ক্ষমতা যখন প্রয়োগ করে, তখন এটি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলে সিদ্ধান্তের নজির আছে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন যে আদেশটা আছে, সেটা যদি বাতিল করা হয়, বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) যদি আবার কারাগারে নেওয়া হয়, তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু এ অবস্থায় আদালতে যেতে পারবেন না।’ খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের বিষয়টি বাতিল করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা অমানবিক হবে, বাতিল করব না।’
আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এক বার্তায় বলেন, ‘আজকের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, দেশে আইনের শাসন নেই। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক ভয়ংকর তামাশা করা হচ্ছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, নির্বাহী বিভাগ চাইলেই কাউকে মুক্তি দিতে পারে।’
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় বিএনপি কী এখন ভাবছে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে।’
আর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর নীলনকশার অংশ। মানবতাবিরোধী ও সরকারের বর্বর ইচ্ছা পূরণের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।’
দলটির নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা না করে, রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করতে না পারলে বিএনপিপ্রধানের মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমেই এই ইস্যুর সুরাহা করতে চায় দলটি।
কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। কিন্তু দেশে চিকিৎসা গ্রহণের শর্তারোপ করা হলে তা যে চিকিৎসার বিবেচনায় না করে রাজনীতির বিবেচনায় করা হবে, সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি সাধারণ মানুষের আছে।’
অসুস্থতার কারণে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের মার্চে করোনার সময় টানা দুই বছর কারাভোগের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরেছিলেন খালেদা জিয়া। পরে এ পর্যন্ত তার মুক্তির মেয়াদ আটবার বাড়িয়েছে সরকার।
এরই মধ্যে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ দিতে পরিবারের পক্ষে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এ বিষয়ে আইনি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি পাঠায়।
বিএনপিপ্রধানকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি সরকার ইতিবাচকভাবে দেখতে পারে’। কিন্তু সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘বিদেশে যাওয়ার আবেদন করতে হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত গিয়ে করতে হবে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের পর সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় এবারও ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না। গত শনিবার এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ শঙ্কাই প্রকাশ করেছিলেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা আছে, যেকোনো মূল্যে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকার মরিয়া। সে কারণে হয়তো খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি ঝুঁলিয়ে রাখতে চাইছে এমনটাই মনে করছে সরকারবিরোধীরা। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিলেই সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলেও বিরোধী নেতাদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। তবে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথাই নেতাদের বলে রেখেছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির হাইকমান্ড মনে করছেন, এ অবস্থায় চলমান এক দফার আন্দোলনে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিষয়টি থাকলেও সেটাকে আরও জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে; যাতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নেয়।
জানা গেছে, এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলটি। আজ সোমবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক রয়েছে। সূত্র বলছে, জোটগত ছাড়াও দলীয়ভাবেও কর্মসূচি আসতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক চিকিৎসক জানান, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তার কেবিনে এক্স-রে মেশিন নেওয়া হয়েছিল গতকাল ভোরে। শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে না এলে সিসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ ছিল। দুপুরে তার ইসিজি ও ইকো ডায়াগ্রাম করানো হয়েছে। ফুসফুসের পানি অপসারণের জন্য তার ডান পাশে যে ক্যাথেটার লাগানো ছিল, সেটা আপাতত খুলে ফেলা হয়েছে।
লিভার জটিলতা ছাড়াও ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ফুসফুস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। গত ৯ আগস্ট ফিরোজায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দলীয় মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সেটআপে কেবিনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে।
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘ওনার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সে জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানো দরকার।’
সদ্যোজাত থেকে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে অনেক সময়েই নানা কারণে কানের ব্যথা দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে দিন কয়েকের মধ্যেই তা সেরেও যায়। কিছু ক্ষেত্রে সেই ব্যথা ঘুরেফিরে আসে ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।
দীর্ঘস্থায়ী কানে ব্যথা কখনোই অবহেলা করা উচিত না। যদি কানে ব্যথা বাড়তে থাকে, সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। মূলত কানের সংক্রমণ থেকে দীর্ঘস্থায়ী এই ব্যথা হতে পারে।
অনেকেরই ধারণা থাকে যে, বাচ্চাদের কানে পানি ঢুকে বা সদ্যোজাতদের দুধ খাওয়ানোর সময়ে তা কানে ঢুকে সংক্রমণ হয়। এ ছাড়া কানে ময়লা জমেও কানে ব্যথা হয় বলে সাধারণ ধারণা রয়েছে। কিন্তু শিশু বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই ধারণাগুলো ঠিক নয়। স্বাভাবিক অক্ষত কানের পর্দা ভেদ করে পানি, দুধ কানের একদম ভেতরে ঢুকতে পারে না।
শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে কান, গলা ও নাক এগুলো একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। ফলে গলায় সংক্রমণ হলে তা সহজেই কানে চলে আসে। বাচ্চার ঠান্ডা লেগে জ্বর, সর্দি-কাশি বা গলায় সংক্রমণ হলে তা কানেও ছড়িয়ে পড়ে। কানের সঙ্গে ফ্যারিঙ্কসের যোগসূত্র তৈরি হয় ইউস্টেশিয়ান টিউবের মাধ্যমে। ফলে যখন সন্তান বা বড়দের ফ্যারিঞ্জাইটিস, ল্যারিঞ্জাইটিস বা টনসিলাইটিস হচ্ছে, তখন সেই সংক্রমণ কানের মধ্যে চলে যেতে পারে।
এ ছাড়া শিশুদের সর্দি থেকেও কানে ব্যথা হয়। বিশেষ করে নবজাতকদের মধ্যে এই উপসর্গ দেখা যায়। বাচ্চারা যেহেতু নিজে থেকে কফ বার করতে পারে না। তাদের ঠান্ডা লেগে গলায় কফ জমে এবং কানেও তরল জমতে পারে। ফলে কানে ব্যথা হয় ও বাচ্চা কাঁদতে থাকে।
শিশুদের কানে ব্যথা হলেই অনেকে কানের ড্রপ দিতে শুরু করেন। কিন্তু এসব করতে বারণ করেন শিশু বিশেষজ্ঞরা। বরং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল খাওয়ানো যেতে পারে।
শিশু এবং ছোট বাচ্চাদের কানের ব্যথা বা সংক্রমণ সম্পর্কে বোঝানোর ক্ষমতা থাকে না। তাই কিছু লক্ষণ দেখেই তাদের কানে সংক্রমণ নিশ্চিত করা যায়।
১. সংক্রমণের কারণে কানে ব্যথা এবং অস্বস্তি হয়। ব্যথা কমাতে শিশুরা তাদের কান ধরে টানতে থাকে।
২. সংক্রমণে আক্রান্ত শিশু শুয়ে থাকলে এটি মধ্যকর্ণে চাপের পরিবর্তন ঘটায়। যা ব্যথা এবং অস্বস্তির সৃষ্টি করে ফলে শিশুদের জন্য ঘুমানো বা শুয়ে থাকা কঠিন হয়ে যায়।
৩. কানের সংক্রমণের একটি নিশ্চিত লক্ষণ হল শিশুর কান থেকে তরল বা পুঁজ বের হওয়া।
৪. সংক্রমণের কারণে কানের ব্যথা হয় যার ফলে শিশু অতিরিক্ত কান্না করে বা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি খিটখিটে মেজাজ হতে পারে।
৫. সংক্রমণের কারণে কানে তরল জমা হয়ে সাময়িকভাবে শ্রবণশক্তি হারাতে পারে।
৬. জ্বর থাকতে পারে।
৭. ডায়রিয়া, বমি, ক্ষুধা কমে যাওয়া।
১. ঘরে বা রাস্তাঘাটে ধুলো নাক-মুখ দিয়ে ঢুকলে অনেক সময়ে আল্যার্জি ও প্রদাহ হয়। ফলে ইউস্টেশিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে যায়। তখন কানে ব্যথা হতে পারে।
২. বিমানে ওঠার সময়ে যেমন ইউস্টেশিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অনেকেরই কানে সমস্যা দেখা যায়। বাচ্চারা সেটা বোঝাতে বা বলতে না পেরে কেঁদে ওঠে। তখন বড় হোক বা বাচ্চা, ঢোঁক গিলতে হবে। তা হলেই আবার ইউস্টেশিয়ান টিউবের মুখটা খুলে যাবে। সন্তান খুব ছোট হলে পানি বা লজেন্স খাওয়ানো যায়। সেটা খাওয়ার সময়ে সে ঢোঁক গিললে সমস্যা মিটে যাবে।
৩. ইউস্টেশিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে গেলে বা কান বন্ধ হয়ে গেলে, তা ঠিক করার জন্য এক ধরনের ব্যায়াম ভালসালভা ম্যানুভার করা যেতে পারে। এর জন্য নাক দিয়ে অনেকটা শ্বাস গ্রহণ করে তারপরে নাক ও মুখ বন্ধ করে, বেলুন ফোলানোর মতো করে মুখ ফুলিয়ে সেই বাতাস বের করার চেষ্টা করতে হবে। এতে নাক ও মুখ বন্ধ থাকায় ভিতরের বাতাস কানের পথে বেরোনোর চেষ্টা করবে। ফলে বন্ধ কান খুলে যাবে।
৪. এ ছাড়া রাইনাইটিস বা নাকের ভিতরের শ্লেষ্মাঝিল্লির জ্বালাপোড়া ও প্রদাহ থেকেও কানে ব্যথা হতে পারে। তখন ন্যাজ়াল ড্রপ দেন বিশেষজ্ঞরা।
গলার সংক্রমণ যেমন কানে ছড়াতে পারে ঠিক তেমনি কানের সংক্রমণ মস্তিষ্কে ছড়িয়ে যেতে পারে। ট্রান্সভারস বা সিগময়েড সাইনাস কান ও মস্তিষ্কের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে।
দীর্ঘদিন কানের ইনফেকশন অবহেলা করলে, এই সংক্রমণ সিগময়েড সাইনাস দিয়ে ব্রেনে চলে যেতে পারে। তখন রোগের জটিলতা বেড়ে যায়। যেমন, গলায় যদি স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটিরিয়ার দ্বারা সংক্রমণ হয়, তা ব্রেনের মধ্যে চলে গেলে সেখানে মস্তিষ্কে পুঁজ তৈরি করে। এতে বাচ্চার খিঁচুনি হতে পারে, হাত-পায়ের দুর্বলতা দেখা যায়, চোখে কম দেখতে পারে সেই সময়।
তাই কানে সংক্রমণ বা ব্যথা হলেই অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।সোমবার (২ অক্টোবর) বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা শেষে উপাচার্যের সামনেই এ ঘটনা ঘটে।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে ২-০ গোলে আইন বিভাগকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। তবে খেলা শেষে পক্ষপাতিত্বমূলক সিদ্ধান্তের অভিযোগ এনে রেফারির দিকে তেড়ে যান আইন বিভাগের খেলোয়াড়রা। এসময় সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত তাদেরকে থামাতে এগিয়ে গেলে তার সাথে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ধস্তাধস্তি ঘটে। এক পর্যায়ে অমিত দত্তকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন শিক্ষার্থীরা। এরপর নাজমুল হোসেন হৃদয় নামে এক শিক্ষার্থী দৌড়ে চলে যেতে লাগলে তাকে বাধা দেন ক্রীড়া কমিটির আহ্বায়ক মো. আইনুল হক। এরপর তাকে মারধর করেন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী। এসময় আবারও হাতাহাতি শুরু হলে নৃবিজ্ঞান বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীও সেখানে গিয়ে যুক্ত হন। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফুটেজও প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সে ফুটেজে এসবের সত্যতা মিলেছে।এ বিষয়ে সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রক্টরিয়াল বডির যে কাজ ছিল, আমি তাই করেছি। শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে রেফারির দিকে তেড়ে যাচ্ছিল। আমি থামাতে গেলে তারা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। আমি দু’বার মাটিতে পড়ে গিয়েছি।’তবে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল দাবি করেন, ‘খেলা শেষে আমি স্টেজের পাশেই ছিলাম। হুড়োহুড়ির মধ্যে অমিত স্যার আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। আমি যখন উঠি তখন আবার আমাকে ফেলে দেন। রানা স্যার, প্রক্টর ওমর সিদ্দিকী, অমিত স্যার, লাল শার্ট পরা আরেকজন (আইনুল হক) আমার কলার চেপে ধরেন। তারপর রানা স্যার আমাকে চড়-থাপ্পড় মারেন। পেছন থেকে আমাকে গলা চেপে ধরেন আরেক স্যার। ধাক্কা লেগে পড়ে গিয়ে আমার ব্লেডিং হয়েছে।’আইন বিভাগের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেন, ‘কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে আমাদের দলের ছেলেরা হৈ-হুল্লোড় করে। এরপর অমিত স্যার আমাদের একজনের কলার ধরে নিচে ফেলে মারধর করেন। শিক্ষকের এমন মারধর দেখে আমরা বিস্মিত হয়েছি।’তবে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি কাউকে মারিনি। প্রক্টরিয়াল বডি নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছে।’
ক্রীড়া কমিটির আহ্বায়ক মো. আইনুল হক বলেন, ঘটনার সময় দেখলাম একটা ছেলে দৌড়াচ্ছে। তখন তার দৌড় দেখে মনে হলো কেন সে দৌড়াচ্ছে। তখন তাকে আটকানোর চেষ্টা করলাম। পরে শুনলাম ছেলেটা রেফারির সাথে উদ্ধত আচরণ করেছে। খেলায় যারা পরাজিত হয় তাদের একটা অভিযোগ থাকে। রেফারির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগ সত্য নয়।উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈনের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি কোনো বক্তব্য দিবেন না বলে এই প্রতিবেদকের ফোন কল কেটে দেন।
হতাশায় শেষ খালেদার অপেক্ষা
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
সাড়ে ৩ বছরে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স
দেশের বিদেশি মুদ্রা আয়ের অন্যতম হাতিয়ার প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের ধস নেমেছে। সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধপথে ও ব্যাংকের মাধ্যমে মাত্র ১৩৪ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। গত সাড়ে তিন বছরে এটি সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স। ৪১ মাস আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এর চেয়ে কম ১০৯ কোটি ডলার সমপরিমাণের রেমিট্যান্স এসেছিল। রেমিট্যান্স-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দামের ব্যবধান বেশি হলে হুন্ডিতে লেনদেন বেড়ে যায়। আর যখন হুন্ডির চাহিদা বাড়ে তখন রেমিট্যান্স কমে যায়। গত মাসে ব্যাংকের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দাম ৬ থেকে ৭ টাকা বেশি ছিল। তাই বেশি লাভের আশায় বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন প্রবাসীরা।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজার ছাড়াল
এ বছর অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে ডেঙ্গু। গতকাল রবিবার ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজারের কোটা ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) সারা দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬ জনে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৮৮২ জন।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
অকাজের ৩৭০০ কোটির সেতু
সেতু হয়। কিন্তু সড়ক হয় না। সেতু করার জন্য নানান প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু সেসব সেতু করেই দায়সারা বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়। ভোগান্তি সাধারণ মানুষের। আবার যতগুলো সেতু করার কথা ততগুলো না করেও প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করার প্রতিবেদনও দেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সারা দেশের গ্রামের রাস্তাগুলোতে সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পে। প্রকল্পের এসব অনিয়ম উঠে এসেছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবি আ.লীগ নেতার
আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার। গত শনিবার রাতে তার ফেসবুকে এ দাবি জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন তিনি।
মুহূর্তেই স্ট্যাটাসটি ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিএনপির অসংখ্য নেতা, কর্মী-সমর্থক তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রশংসা করেন। অন্যদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নিন্দা জানিয়ে দলীয় সব পদ থেকে তার বহিষ্কারের দাবি জানান।
আবদুল মোতালেব হাওলাদার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘রাজনৈতিক কারণে আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়া হউক।’
স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন অধরাই
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
ফুটপাত থেকে মদের বার সবখানে চাঁদাবাজি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের কমিটি পার করেছে পাঁচ বছরের বেশি সময়। মেয়াদোত্তীর্ণ এ কমিটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। কিছু নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে। সর্বশেষ মদের বার ভাঙচুর ও লুট করে আবারও আলোচনায় এ কমিটির নেতাকর্মীরা।
নতুন কমিটি না হওয়ায় নেতারা বেপরোয়া আচরণের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছেন বলে মনে করেন সাধারণ কর্মীরা। তারা বলেন, সংগঠনের কর্মকাণ্ডও স্থবির হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান তারা।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মো. রিপন মিয়াকে সভাপতি ও মাহমুদুল হক জুয়েল মোড়লকে সাধারণ সম্পাদক করে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের জন্য আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে গত বছর ১২ জুন ৩২১ জনের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য।
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী, দেশে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১১৯। এ তালিকায় রয়েছে যারা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মাজার, ফুটপাত, সিঁড়ি, ওভারব্রিজের নিচে, লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাট, মার্কেটের বারান্দায় দিন কাটান। আর বস্তিতে বসবাস করছে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন। তারা মূলত শহর ও উপশহর এলাকায় টিনের ঘর, সেমিপাকা ঘর বা ঘিঞ্জি পাকা ঘরে বাস করে। তবে বস্তিবাসী কারা সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৬ সালে সরকার আবাসন নীতিমালা করেছে। আবাসন উন্নয়ন তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। আবাসন সংকট নিরসন করতে হলে সরকারকে আবাসন তহবিল করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বস্তিবাসী, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত কারা তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। না হলে বোঝা যাবে না কত মানুষ বস্তিতে থাকে।’
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে আবাসন সংকট কাটছে না। স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে আবাসন।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে ৯ লাখ গৃহহীন মানুষকে চিহ্নিত করে। ইতিমধ্যে আট লাখ মানুষের গৃহের ব্যবস্থা করেছে; প্রায় ৪০ লাখ মানুষের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বাকিদের জন্যও শেখ হাসিনা ব্যবস্থা করবেন। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যও আবাসনের ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা তার সৈনিক হিসেবে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জানা যায়, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার সবার জন্য আবাসন। অঙ্গীকার পূরণে সরকার নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সারা দেশে ৩০টি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, নোয়াখালী, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, শরীয়তপুর, নড়াইল, খুলনা, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব প্রকল্পে ৬ হাজার ৪৩২টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৭টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পে ৫ হাজার ৯৩০টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে। শেরপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, হবিগঞ্জ, সিলেট, ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ১৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৩৫টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় রাজউক পূর্বাচল, ঝিলমিল, উত্তরা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় আবাসন প্রকল্পে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ফ্ল্যাটগুলো উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। পূর্বাচল, ঝিলমিল ও উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনেও বিভিন্ন সংস্থা আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন শহরে বসবাসরত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্পদশালী ব্যক্তিরা। যাদের অনেক ফ্ল্যাট আছে তারা আরও ফ্ল্যাট কিনছেন। কিন্তু বাস্তুহারা, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত সরকারি এসব আবাসনের সুবিধা পাচ্ছেন না। অল্প দামে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার আবাসন প্রকল্প তৈরি করে যাদের নামে বরাদ্দ দিচ্ছে তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত।
জাতিসংঘ ১৯৮৫ সালে বিশ্ব বসতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশে^ অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার এ দিবসটি পালিত হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।