
বাড়তে থাকা বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত অঞ্চলগুলোর অন্যতম দক্ষিণ এশিয়ার বাসিন্দাদের প্রত্যাশিত গড় আয়ু কমছে। দূষণের কারণে বিশ্বব্যাপী মানুষ যত বছর আয়ুষ্কাল হারায়, তার অর্ধেকেরও বেশি ঘটে এই অঞ্চলের দেশগুলোতে। এর মধ্যে বাংলাদেশে বায়ুদূষণের কারণে মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ছয় বছর সাড়ে ৯ মাস কমার ঝুঁকিতে আছে।
গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট (ইপিআইসি) তাদের সর্বশেষ এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্সে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে জনস্বাস্থ্যের ওপর দূষিত বায়ুর ক্রমবর্ধমান ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরে বাংলাদেশকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অবশ্য শহর হিসেবে এ তালিকায় সবার ওপরে আছে ভারতের দিল্লি। ইপিআইসি বলছে, বায়ুদূষণের কারণে শহরটির মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু কমছে ১২ বছরের বেশি!
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত কয়েকটি দেশের অবস্থান। এর মধ্যে সবার ওপরে আছে বাংলাদেশ। এরপর ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানের অবস্থান। দূষণের কারণে বিশ্বব্যাপী মানুষ যত বছর আয়ুষ্কাল হারায় তার অর্ধেকেরও বেশি ঘটে এই দেশগুলোতে।
এই অঞ্চলে দ্রুত শিল্পায়ন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বায়ুর গুণমান হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমানে এখানে কণা দূষণের (পিএম ২.৫) মাত্রা এই শতাব্দীর শুরুর দিকের তুলনায় ৫০ শতাংশেরও বেশি। এখানে দূষণ এখন বড় ধরনের স্বাস্থ্যগত হুমকির বিপদগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছে।
ইপিআইসির গবেষণা প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। বায়ুদূষণের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দাদের গড় আয়ু কমবে মাত্র ৩ মাস ১৮ দিন। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে বৈশ্বিক দূষণ বৃদ্ধির প্রায় ৫৯ শতাংশের জন্য দায়ী ভারত।
পিএম ২ দশমিক ৫ নামে পরিচিত ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকারক বায়ুবাহিত কণার বৈশ্বিক মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও)
প্রস্তাবিত মাত্রায় নামিয়ে আনতে পারলে সম্ভাব্য গড় আয়ুষ্কাল দুই বছর সাড়ে তিন মাস বেড়ে যেতে পারে বলে এতে বলা হয়েছে।
ডব্লিউএইচওর গাইডলাইন মেনে প্রতি ঘনমিটারে পিএম ২ দশমিক ৫-এর মাত্রা বার্ষিক পাঁচ মাইক্রোগ্রামে নামিয়ে আনতে পারলে গড় আয়ু পাকিস্তানের বাসিন্দাদের বাড়তে পারে প্রায় ৩ বছর ১১ মাস আর নেপালের বাসিন্দাদের বাড়তে পারে চার বছর সাত মাসেরও বেশি।
এদিকে চীন ২০১৩ থেকে ২০২১ পর্যন্ত দূষণ ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ হ্রাস করতে কাজ করেছে বলে প্রতিবেদনটিতে জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, দেশটি দূষণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। দূষণরোধে তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করেছে। দূষণকারী শিল্প-কারখানার সংখ্যা কমিয়েছে। রাস্তায় পানি ছিটানোসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এতে দেশটির বায়ুর মান ৪২ শতাংশে বেশি উন্নতি হয়েছে।
প্রতিবেদনের জন্য মূলত স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ২০২১ সালের বাতাসের গুণমান বিশ্লেষণ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে দেখা যাচ্ছে, প্রতি ঘনমিটারে বাতাসে সর্বোচ্চ যে দূষণকণা মান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, অর্থাৎ পাঁচ মাইক্রোগ্রাম, বাংলাদেশের বাতাসে দূষণকারী এসব গ্যাসীয় কণার উপস্থিতি তার চেয়ে ১৪ থেকে ১৬ গুণ বেশি।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার ১৫ মাইক্রোগ্রামকে মানদণ্ড হিসেবে নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের বাতাসে দূষণকারী এসব গ্যাসীয় কণার উপস্থিতি প্রতি ঘনমিটারে ৭০ থেকে ৮০ মাইক্রোগ্রাম, যা দেশ হিসেবে বিশ্বে সর্বোচ্চ, যদিও ভারতের উত্তর সমতল, বিশেষত রাজধানী দিল্লির আশপাশে এ রকম কণার উপস্থিতি প্রতি ঘনমিটারে ১২৬ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত পাওয়া গেছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত মানের চেয়ে প্রায় ২৫ গুণ বেশি।
বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সবচেয়ে দূষিত দেশ বললেও গবেষকরা জানিয়েছেন, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে বাংলাদেশে বায়ুদূষণ ২ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে, যদিও এর কোনো কারণ তারা উল্লেখ করেননি। তবে বাংলাদেশের স্থানীয় বিশেজ্ঞরা বলেছেন, কভিডকালীন লকডাউনের কারণেই মূলত সে সময় সাময়িক কিছু অগ্রগতি হয়েছে। তবে ২০২২ সালে কভিড-পরবর্তী সময়ে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করলে আবার বায়ুদূষণ বেড়েছে বলেই তারা জানিয়েছেন।
স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও সেন্টার ফর অ্যাটমোস্ফেয়ারিক পলিউশন স্টাডিজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার মনে করেন, বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে সরকারের সমন্বিত উদ্যোগের অভাবের ফলেই এ ক্ষেত্রে দৃশ্যমান তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।
‘বায়ুদূষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এটার জন্য রেসপসনিবল অথরিটি এই দুটিকে যদি বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখা যাবে প্রায় ১৮টি সংস্থা বা তারও বেশি, প্রায় ২০-২২টি অধিদপ্তরের এই বায়ুদূষণের বিষয়ে কাজ করার সুযোগ আছে এবং বায়ুদূষণের যে কারণগুলো আমরা চিহ্নিত করি, সেখানেও দেখা যায় বিভিন্ন মিনিস্ট্রির যে অ্যাকটিভিটিগুলো আছে, সেখান থেকে বায়ুদূষণ হয়ে থাকে,’ বলেছেন অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার।
তিনি ইটের ভাটা এবং শিল্প-কারখানায় যে বায়ুদূষণ হয়, সেটা নিয়ন্ত্রণে শিল্প মন্ত্রণালয়ের কাজ করার কথা বলেছেন। আবার নির্মাণকাজের যে বায়ুদূষণ হয়, গৃহায়ন বা গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বা রাজউককে তার দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলছেন। আবার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির ফলে যে দূষণ হচ্ছে তা নিয়ন্ত্রণে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় কিংবা সিটি করপোরেশনকে কাজ করার কথা বলেছেন। ‘এখানে মাল্টি মিনিস্ট্রিয়াল কিছু বিষয় আছে। ফলে বায়ুদূষণের কাজটিও মাল্টি মিনিস্ট্রিয়াল বা সমন্বিতভাবে করতে হবে। সবার সম্মিলিত বা অংশীদারত্বমূলক চেষ্টা থাকলেই বায়ুদূষণ কমবে,’ বলেছেন অধ্যাপক অধ্যাপক কামরুজ্জামান।
খবরটি চমকে দেওয়ার, খবরটি ভয় ধরানোর। যে ঘটনা বিশ্বে কখনো ঘটেনি, কেউ কখনো শোনেনি তাই ঘটেছে অস্ট্রেলিয়ার মাঝবয়সী এক নারীর ক্ষেত্রে। চিকিৎসকরা তার মস্তিষ্ক থেকে বের করে এনেছেন ৮ সেন্টিমিটার দীর্ঘ জীবন্ত এক কৃমি! বিবিসি জানাচ্ছে, গত বছর দেশটির রাজধানী ক্যানবেরায় ওই নারীর ক্ষতিগ্রস্ত ফ্রন্টাল লোব টিস্যু অপসারণের লক্ষ্যে অস্ত্রোপচারের সময় দড়ির মতো লাল ওই পরজীবীকে বের করে আনা হয়।
চিকিৎসকরা বলছেন, তাদের ধারণা পরজীবীটি ওই নারীর মস্তিষ্কে দুই মাস ধরে বসবাস করছিল। তাদের ভাষ্য, এই ঘটনা প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমণের ক্রমবর্ধমান বিপদ তুলে ধরছে।
বিবিসি বলছে, হাসপাতালের নিউরো সার্জন হরি প্রিয়া বান্দি ওই নারী রোগীর মস্তিষ্ক থেকে কৃমিটি বের করে আনেন। এরপরই তিনি ক্যানবেরা হাসপাতালের সংক্রামক ব্যাধির চিকিৎসক সঞ্জয় সেনানায়েকসহ অন্য সহকর্মীদের ফোনে বিষয়টি জানান। হরি প্রিয়া সঞ্জয়কে বলেন, হায় ঈশ্বর, আমি ওই নারী রোগীর মস্তিষ্ক থেকে যা বের করেছি, আপনি তা দেখে বিশ্বাস করবেন না। ওই কীট জীবিত এবং নড়াচড়া করছে।
সঞ্জয় সেনানায়েক বলেন, ওই নারীর মাথায় অস্ত্রোপচারের সময় চিকিৎসক যখন চিমটা নিয়ে অস্বাভাবিক কিছু তুলে আনছিলেন, তখন উপস্থিত চিকিৎসকদের সবাই ধাক্কা খান। কারণ অস্বাভাবিক সেই জিনিসটি ছিল বাঁকানো আট সেন্টিমিটার লম্বা উজ্জ্বল একটি লাল কৃমি। মানুষের মস্তিষ্কে এই পরজীবী সংক্রমণ আগে কখনো দেখা যায়নি।
বিবিসি জানিয়েছে, ওফিডাসকারিস রবার্তসি প্রজাতির গোলকৃমি কার্পেট পাইথনের (অজগর) মধ্যে খুব সাধারণ। অস্ট্রেলিয়া-জুড়ে দেখা মেলে এই অজগর। বিজ্ঞানীদের ধারণা, খুব সম্ভবত ওই নারী যেখানে থাকেন, সেখানে লেকের পাশে স্থানীয় সবজি ওয়ারিগাল গ্রিনস তুলতে গিয়ে তিনি সংক্রমিত হয়েছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ার পরজীবীবিদ্যা-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ড. মেহরাব হোসেন ‘ইমার্জিং ইনফেকসাস ডিসিসেস’ নামের জার্নালে এক লেখায় উল্লেখ করেন, তিনি যে সবজি তুলেছিলেন, তাতে অজগরের বিষ্ঠা আর পরজীবী কীটের ডিম থাকতে পারে। সেই সবজি রান্না করে খাওয়ার পর তার মস্তিষ্কে এই কীট বেড়ে উঠেছে বলে মনে হচ্ছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওয়ারিগাল গ্রিনস খাওয়ার পর অস্বাভাবিক পেটে ব্যথা ও কাশির পাশাপাশি রাতে প্রচুর ঘাম এবং ডায়রিয়া হয়। এর ফলে স্মৃতিভ্রষ্টের ঘটনা ও বিষণœতাও বাড়ছিল। ২০২১ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে ওই নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে মস্তিষ্কে স্ক্যান করলে মগজের ডান ফ্রন্টাল লোবে একটি ক্ষত দেখা যায়। পরে ২০২২ সালের জুনে বায়োপসি করার পর তার আসল অবস্থা সম্পর্কে কিছু আঁচ করা যায়। পরে অস্ত্রোপচার করলে ওই নারী ধীরে ধীরে সেরে উঠছেন।
ড. মেহরাব হোসেন তার নিবন্ধে উল্লেখ করেন, অফিডাসকারিস লার্ভা কোনো মানুষের মস্তিষ্কে হানা দিয়েছে, এমন ঘটনা আগে শোনা যায়নি।
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় জীবিত মাকে মৃত দেখিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে এক শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার মাসিক সম্মানী ভাতার টাকা উত্তোলন করছেন তার মেয়ে। জীবিত মায়ের সঙ্গে জালিয়াতি করে প্রায় ১০ বছর ধরে তার বড় মেয়ে আরজিনা বেগম ভাতার টাকা উত্তোলন করে আসছেন। অন্যদিকে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী বুলবুলি খাতুন অভাব-অনটনের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। সম্প্রতি জালিয়াতির এই ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর এলাকায় আলোড়ন তৈরি হয়েছে। এ ঘটনা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে উপজেলা প্রশাসন।
জানা গেছে, উপজেলার চাঁদখানা ইউনিয়নের উত্তর চাঁদখানা আলুপাড়া গ্রামের মৃত আয়েন উদ্দিনের ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদ আলী। তিনি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে রণাঙ্গনে শহীদ হন। তার বেসামরিক গেজেট নম্বর ১৭৩, লাল মুক্তিবার্তা নম্বর ৩১৫০৩০০৩৯। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী বুলবুলি খাতুন এবং দুই মেয়ে আরজিনা বেগম ও আরফিনা বেগমকে রেখে যান। মেয়ে দুজনের বিয়ে হয়েছে। তারা স্বামী-সন্তান নিয়ে সংসার করছেন।
সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে প্রতি মাসে ভাতা চালু করলে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদ আলীর স্ত্রী বুলবুলি খাতুন (৭০) ভাতার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। তিনি সোনালী ব্যাংকের কিশোরগঞ্জ শাখা থেকে ভাতার টাকা উত্তোলন করছিলেন। যার হিসাব নম্বর ৫৩০৭৪০১০২৩৪৭৩। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আজাদ আলীর বড় মেয়ে আরজিনা বেগম (৫৩) ও তার জামাই ইনছান আলী থাকেন কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী ইউনিয়নের উত্তর কালিকাপুর গ্রামে। অন্যদিকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আজাদ আলীর স্ত্রী বুলবুলি খাতুন বসবাস করছেন তার স্বামীর বসতভিটায়। ২০১৪ সালে আরজিনা বেগম তার স্বামী ইনছান আলীর সহায়তায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বাবার ভাতা হাতিয়ে নিতে জালিয়াতির মাধ্যমে মা বুলবুলি খাতুনকে মৃত দেখান। এরপর ভাতার কাগজপত্র তৈরি হয় আরজিনার নামে। তখন থেকে আরজিনা অগ্রণী ব্যাংকের নীলফামারী শাখা থেকে প্রতি মাসে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রাথমিক পর্যায়ে ১০ হাজার ও বর্ধিত ভাতা হিসাবে বর্তমানে ২০ হাজার টাকা করে উত্তোলন করে আসছেন। তার ব্যাংক হিসাবটির নম্বর ০২০০০১৮২১১৮৯৬।
এ প্রসঙ্গে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদ আলীর স্ত্রী বুলবুলি খাতুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার স্বামী মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে পাকসেনাদের গুলিতে শহীদ হয়। ভাতার ন্যায্য দাবিদার আমি। অথচ আমার বড় মেয়ে ও জামাই মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমাকে মৃত দেখিয়ে কাগজপত্র জালিয়াতি করে ভাতার টাকা উত্তোলন করে ভোগ করছে। আমি অভিযোগ দিতে গেলে কিশোরগঞ্জ সোনালী ব্যাংক উল্টো আমার ভাতা বন্ধ করে দিয়ে আমার বড় মেয়ের নামে ভাতা চালু রেখেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’
আরজিনা বেগমও জালিয়াতির মাধ্যমে ভাতার টাকা উত্তোলনের কথা অকপটে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ উপজেলার এক ব্যক্তি আমার কাছ থেকে ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা নিয়ে এই জালিয়াতির কাজ করে দিয়েছেন। ভাতা উত্তোলনের পর প্রতি মাসে ওই ব্যক্তি ভাতার একটি অংশ নিয়ে থাকেন। আপনারা (সাংবাদিকরা) যদি পারেন আমার ভাতাটি বন্ধ করে দেন। আমি আর এই ভাতা নিতে চাই না। আমার মাকে এই ভাতা প্রদান করা হোক।’
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের আহ্বায়ক নুর-ই আলম সিদ্দিকী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জালিয়াতির এমন অভিযোগ পেয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক শরীফ হাসানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
তোশাখানা মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের চেয়ারম্যান ইমরান খানকে দেওয়া তিন বছর কারাবাসের সাজা স্থগিত করেছে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট (এএইচসি)। গতকাল মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি আমের ফারুক ও বিচারপতি মেহমুদ জাহানগিরির ডিভিশন বেঞ্চ এই আদেশ দেয়। তবে এখনই তিনি মুক্তি পাচ্ছেন না। কূটনৈতিক তারবার্তা ফাঁসের (সাইফার) মামলায় তাকে কারাগারে থাকতে হচ্ছে। গতকাল পাকিস্তানের ইংরেজি ভাষার দৈনিক ডন জানিয়েছে, গত ৫ আগস্ট তোশাখানা মামলার রায়ে ইমরানকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ রুপি জরিমানা করেছিল ইসলামাবাদের জেলা বিচারিক আদালত। পরে ৮ আগস্ট ইসলামাবাদ হাইকোর্টে জেলা বিচারিক আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করেছিলেন ইমরান। সেই আবেদনের রায় ঘোষণাকালে গতকাল বিচারপতি ফারুক বলেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই রায়ের কপি পাওয়া যাবে। এখন আমরা জানাচ্ছি যে, ইমরানের আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে।
পরে ইমরানের আইনজীবী নাঈম হায়দায় পাঞ্জুথাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) করা এক পোস্টে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রধান বিচারপতি আমাদের অনুরোধ গ্রহণ করেছেন, সাজা স্থগিত করেছেন এবং সিদ্ধান্তের বিস্তারিত পরে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন।
তবে কারাবাসের সাজা স্থগিতও হলেও ইমরান সম্ভবত এখনই কারাগার থেকে ছাড়া পাচ্ছেন না। কারণ অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের অধীনে হওয়া মামলাগুলোর শুনানির জন্য সম্প্রতি গঠিত বিশেষ আদালত কারাগার কর্র্তৃপক্ষকে ইমরানকে ‘জুডিশিয়াল লকআপে’ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। বিশেষ আদালত ইমরানকে ৩০ আগস্ট সাইফার মামলায় হাজির করারও নির্দেশ দিয়েছে।
ডন বলছে, কারাগারের সুপার বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে বিশেষ আদালতের বিচারক আবদুল হাসনাত মুহাম্মদ জুলকারনাইন বলেছেন, অভিযুক্ত ইমরান খান নিয়াজি, বাবা : ইকরামুল্লাহ খান নিয়াজি, ঠিকানা : জামান পার্ক, লাহোরকে উল্লিখিত মামলায় জুডিশিয়াল রিমান্ডে রাখার জন্য আদেশ দেওয়া হচ্ছে, যিনি ইতিমধ্যেই আত্তক জেলা কারাগারে বন্দি আছেন।
এই সাইফার মামলা একটি কূটনৈতিক নথি সম্পর্কিত, যা ইমরানের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে বলে জানা যায়। পিটিআই অভিযোগ করে বলেছে, হারিয়ে যাওয়া এই নথিটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইমরানকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার’ হুমকি ছিল। একই মামলায় পিটিআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান ও পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশিকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশে সন্তান প্রসবে প্রতি বছর ৩০-৩২ লাখ ডেলিভারি হয়। এরমধ্যে ৬ লাখ শিশু অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেয়, যা মোট জন্ম নেওয়া শিশুর ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ। অপরিণত বা কম ওজনের জন্ম নেওয়া শিশু নানা জটিলতার শিকার হয়। আর এই শিশুদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম থাকে।
এ ছাড়া ২০২০ সালে জন্ম নেওয়া ১৩ কোটি ৫০ লাখ শিশুর মধ্যে প্রায় ৩ কোটি ৫৩ লাখ শিশু কম ওজন নিয়ে বা অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেয়। ওই বছর যে ২০ লাখ ৪০ হাজার নবজাতক মারা যায়, তার অর্ধেক বা ৫৫ দশমিক ৪ শতাংশের মৃত্যুর কারণ অপরিণত। এছাড়া যে সব অপরিণত শিশু বেঁচে থাকে, তাদেরও নানা স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দেয়। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রে (আইসিডিডিআর,বি) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সম্মেলনে অবস্টেট্রিকাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. সামিনা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে ১টি অ্যান্টিনেটাল কেয়ারের (প্রসবপূর্ব সেবা) আওতায় আসে ৮৮ শতাংশ গর্ভবতী মা, ৪টি অ্যান্টিনেটাল কেয়ারের আওতায় আসে ৪১ শতাংশ গর্ভবতী মা। এর অধিক সময় অ্যান্টিনেটাল কেয়ারে আসতে আমরা খুব বেশি একটা দেখি না। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, একজন গর্ভবতী মাকে প্রসবপূর্ব সময়ে অন্তত ৮ বার অ্যান্টিনেটাল কেয়ারের আওতায় আসতে হবে। অর্থাৎ এই জায়গাটায় আমরা অনেকটাই পিছিয়ে আছি।
ডা. সামিনা চৌধুরী বলেন, এই অ্যান্টিনেটাল কেয়ার শুধু আয়রন ট্যাবলেট আর টিটি ইনজেকশন নয়। কোয়ালিটি অ্যান্টিনেটাল কেয়ার বলতে আমরা বুঝি, অন্তত পক্ষে মেডিক্যালি ট্রেইনড একজন চিকিৎসক অন্তত একবার গর্ভবতী মাকে দেখবেন। এর পাশাপাশি তার ওজন ঠিক আছে কি না, ব্লাড প্রেশার দেখা হয়েছে কি না, ইউরিন টেস্ট করা হয়েছে কি না, ব্লাড টেস্ট এবং প্রেগনেন্সি নিয়ে কাউন্সেলিং করা হয়েছে কি না এই পাঁচটি জিনিস অবশ্যই দেখতে হবে।
সম্মেলনে ল্যানসেটের প্রকাশিতব্য সিরিজের চারটি গবেষণাপত্রের সারমর্ম উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআর,বির মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের বিজ্ঞানী এবং এনটিডব্লিউসি-এনবিএইচের সদস্য ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান। গবেষণাপত্রে মৃত জন্ম এবং অপরিণত বা কম ওজনের শিশুর ঘটনা রোধে গর্ভাবস্থায় আটটি সহজ এবং সাশ্রয়ী ইন্টারভেনশনের পরামর্শ দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, মায়েদের ওপর এই আটটি বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া গেলে বছরে আনুমানিক পাঁচ লাখ ৬৬ হাজার মৃত জন্ম এবং ৫২ লাখ অপরিণত বা কম ওজনের শিশুজন্মের ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব। এতে সমাজ ও রাষ্ট্র লাভবান হবে।
আটটি হস্তক্ষেপের মধ্যে রয়েছে একাধিক মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সম্পূরক, সুষম প্রোটিন সম্পূরক, অ্যাসপিরিন, সিফিলিস চিকিৎসা, ধূমপান ত্যাগের শিক্ষা, গর্ভাবস্থায় ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ, উপসর্গহীন ব্যাকটেরিয়ার চিকিৎসা এবং ভাজাইনাল প্রোজেস্টেরন সাপ্লিমেন্ট, অপরিণত জন্মের জটিলতা প্রশমিত করার জন্য দুটি প্রমাণিত কৌশল প্রসবপূর্ব কর্টিকোস্টেরয়েড এবং বিলম্বিত কর্ড ক্ল্যাম্পিং।
ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, এই সম্মিলিত হস্তক্ষেপগুলোর মাধ্যমে চার লাখ ৭ হাজার ৬০০ নবজাতকের মৃত্যু প্রতিরোধ করার সম্ভব। ২০৩০ সালের মধ্যে এই ব্যবস্থা বাস্তবায়নে আনুমানিক খরচ হবে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার।
সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন ফিনল্যান্ডের টাম্পেইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের টাম্পেইরে সেন্টার ফর চাইল্ড, অ্যাডোলোসেন্ট এবং দ্য ল্যানসেট এসভিএন সিরিজের প্রধান লেখক ড. পার অ্যাশন, বাংলাদেশ পেরিনেটাল সোসাইটির (বিপিএস) মহাসচিব এবং ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং কমিটি-নিউবর্ন হেলথের (এনটিডব্লিউসি-এনবিএইচ) সদস্য অধ্যাপক ডা. আব্দুল মান্নান।
পরীক্ষার ফলে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় পরীক্ষা সংক্রান্ত সব কার্যক্রম থেকে তিন বছরের জন্য নিষিদ্ধ হওয়া শিক্ষককে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে রাখতে তোড়জোড় চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওই শিক্ষক ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন। গত বছরের ১৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কর্তৃক নিষিদ্ধ হন তিনি।
জানা যায়, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে লেকচারার পদে দুজন শিক্ষক নিয়োগের ভাইভা গত ১৭ মে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তা স্থগিত করে দেন বোর্ডের সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। নিয়োগ বোর্ডে চেয়ারম্যান ক্যাটাগরিতে থাকার কথা ছিল অধ্যাপক বাহাউদ্দিনের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন সূত্রে জানা যায়, ভাইভা স্থগিত করে পরীক্ষা সংক্রান্ত কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ হয়েও শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে থাকতে পারেন কিনা এ বিষয়ে রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে আইন উপদেষ্টার মতামত চাওয়া হয়। মতামতে থাকতে পারবেন না বলে মত দেন আইন উপদেষ্টা। পরবর্তী সময়ে উপাচার্যের চাওয়ায় আবার থাকার পক্ষে মত দেন তিনি। এরপর এই শিক্ষককে রেখেই শিগগিরই ভাইভার তারিখ ঘোষণা করার তোড়জোড় চলছে।
এদিকে, যেসব শিক্ষার্থীর ফলে অনিয়ম করা হয়েছে তাদের মধ্যেও কয়েকজন প্রার্থী হিসেবে ভাইভায় উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এতে ভাইভা বোর্ডে অনিয়মের আশঙ্কা করছেন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক বাহাউদ্দিন নিয়োগ বোর্ডে থাকতে পারবেন বলে মত দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তবে শিক্ষকদের অনেকেই বলছেন, একজন শিক্ষক যেখানে বিভাগের পরীক্ষা সংক্রান্ত সব কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ তিনি আবার শিক্ষক নিয়োগের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় বোর্ড মেম্বার হিসেবে কোনোভাবেই থাকতে পারেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় পরীক্ষা সংক্রান্ত সব কার্যক্রমে থাকার যোগ্যতা হারান তিনি। শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড এর বাইরে কিছু নয়। বরং এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। কোনোভাবেই তিনি এখানে থাকার যোগ্যতা রাখেন না। অধ্যাপক বাহাউদ্দিন যদি নিয়োগ বোর্ডে শেষ পর্যন্ত থাকেন তাহলে অনিয়মের শঙ্কা রয়েছে।
এদিকে অধ্যাপক বাহাউদ্দিনের বিরুদ্ধে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, গবেষণার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তিনি একই গবেষণা পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা এমফিল এবং পিএইচডিতে ব্যবহার করেছেন। এমফিল গবেষণায় ব্যবহৃত শিরোনামের সামান্য পরিবর্তন করে ব্যবহার করেছেন পিএইচডি গবেষণায়। একই লেখা দিয়ে নিয়েছেন দুই ডিগ্রি। তিনি নিজের এমফিল গবেষণায় ব্যবহৃত উদ্ধৃতি-কবিতা, বক্তব্য পিএইচডি গবেষণায় ব্যবহারের সময় রেফারেন্স উল্লেখ করেননি। একই গবেষণায় এমফিল এবং পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে দ্রুততম সময়ে প্রভাষক থেকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি দৃষ্টির অগোচরে থাকলেও সম্প্রতি বিষয়টি আবার প্রকাশ্যে আসে। গতকাল মঙ্গলবার ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক আরিফ বিল্লাহ এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেন উপাচার্য বরাবর। এতে বলা হয়, অধ্যাপক বাহাউদ্দিনের দুটি শিরোনামে একই গবেষণা প্রকাশ হয়েছে। প্রথমে এমফিল থিসিস সম্পন্ন করা হয়েছে এবং এই থিসিস থেকে অসংখ্য উদ্ধৃতি ও অনুচ্ছেদ হুবহু পিএইচডি থিসিসে ব্যবহার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে রেফারেন্স ব্যবহার করা হয়নি, যা অ্যাকাডেমিক বিচারে গুরুতর চৌর্যবৃত্তিমূলক অপরাধ। একই ধরনের লেখা বা তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে দুটি অভিসন্দর্ভ সম্পন্ন করে দুটি ডিগ্রি অর্জন করা হয়েছে। এছাড়াও অভিযোগপত্রে এমফিল ও পিএইচডি থিসিসে ব্যবহৃত রেফারেন্সবিহীন উদ্ধৃতি, হুবহু সাদৃশ্য ও আনুষঙ্গিক বিষয় সংবলিত ৩৩ পৃষ্ঠার পর্যবেক্ষণ ফলাফল সারসংক্ষেপ পরিসংখ্যান আকারে তুলে ধরেন তিনি।
এ বিষয়ে সাবেক সহযোগী অধ্যাপক আরিফ বিল্লাহ বলেন, অধ্যাপক বাহাউদ্দিন যে এমফিল ও পিএইচডি করেছেন সেটা একই বিষয়ের ওপরে। এসবের ভিত্তিতে তিনি অতি দ্রুত বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পেয়ে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। এর আগেও তার নামে অনেক অভিযোগ এসেছে, বিভিন্ন অডিও রেকর্ডও ফাঁস হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন তার বিরুদ্ধে বড় কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। আমি চাই তার বিষয়টি বিবেচনা করা হোক।
নিয়োগ বোর্ডের বিষয়ে অধ্যাপক বাহাউদ্দিন বলেন, এটি সিন্ডিকেট কর্তৃক নির্ধারিত। বিভাগের চেয়ারম্যান ভাইভা বোর্ডে থাকবেন। এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত। এর বাইরে আমার কোনো মন্তব্য নেই। তবে গবেষণা জালিয়াতির বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির বলেন, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন। তবে, এ জায়গায় যদি আমি থাকতাম তাহলে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিতাম। কারণ, শিক্ষক হিসেবে সবার আগে আমাদের আদর্শ ও নীতি-নৈতিকতা ঠিক রাখতে হবে। গবেষণা জালিয়াতির বিষয়ে তিনি বলেন, কেউ অভিযোগ দিলে সেটি বিশ্ববিদ্যালয় দেখবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ভাইভাটি স্থগিত আছে। এর বাইরে আমার কিছু জানা নেই এবং সিদ্ধান্ত নেই। তবে একই টপিকে এমফিল এবং পিএইচডি ডিগ্রি নেওয়ার বিপক্ষে মত দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, একজন সাবেক শিক্ষক গবেষণা জালিয়াতির অভিযোগটি দিয়েছেন। আমরা সেটি পরীক্ষা করে দেখব। নিয়োগ বোর্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি থাকতে পারেন। বিভাগের পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজ থেকে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টা আলাদা।
একদিকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানির দিকে হাঁটছে, অন্যদিকে রপ্তানি আয় স্বাভাবিক থাকলেও প্রবাসী আয় গত সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যেই বিদেশি ঋণে বড় ধাক্কার মুখে বাংলাদেশ। সরকারি কর্মকর্তাদের অদক্ষতায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারায় একদিকে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমে গেছে, অন্যদিকে ঋণ পরিশোধের চাপ ক্রমেই বাড়ছে। আগস্ট শেষে ঋণ পরিশোধ করতে গত বছরের তুলনায় ৩৮ শতাংশ বেশি, বিপরীতে অর্থছাড় কম হয়েছে ১৭ শতাংশ। অর্থাৎ এ বছর ঋণ পাওয়ার চেয়ে ঋণ পরিশোধের চাপ গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমে দাঁড়িয়েছে ৭৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারে। গত বছর একই সময়ে তা ছিল ৮৬ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমেছে ১৭ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের দুর্বলতার কারণে অর্থছাড় কমেছে। তাছাড়া ঋণ পরিশোধে আরও বেশি চাপের মুখে পড়তে হবে বলেও মনে করেন তারা।
ইআরডির হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছর আগস্ট শেষে সুদসহ ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ৪০ কোটি ডলার বা ৪ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। অথচ গত বছর একই সময়ে সুদসহ ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ২৮ কোটি ৯৭ লাখ ডলার বা ২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বছর বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ৩৮ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। ঋণ থেকে সুদকে আলাদা করলে দেখা যায়, সুদের চাপও দ্বিগুণ হয়েছে। আগস্ট শেষে সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ১৪ কোটি ৬৩ লাখ ডলার বা ১ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের শুরু থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে উন্নয়ন প্রকল্পে বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়েছে। উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রীর মূল্য ঊর্ধ্বমুখী ছিল। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও এলসি ওপেনিং নিয়ে অনেক প্রকল্পে জটিলতায় পড়তে হয়েছে। এ কারণে ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন হার কম ছিল। এ ছাড়া সক্ষমতার অভাবে এডিপিতে বৈদেশিক ঋণের বরাদ্দের ব্যবহার এর আগের অর্থবছরের চেয়ে কিছুটা কম ছিল।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগে আমরা বড় বড় প্রকল্পের যেসব ঋণ নিয়েছিলাম, অধিকাংশ ঋণের ম্যাচিউরিটি শেষ হয়েছে। এ ঋণগুলোর সুদহারও বেশি আবার গ্রেস পিরিয়ডও কম। গ্রেস পিরিয়ড কম অর্থাৎ আমাদের ঋণ পরিশোধের সময় দ্রুততর হয়ে আসছে।’
সংস্থাগুলো সুদের হার বাড়াচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটা সময় ছিল গ্রেস পিরিয়ড ১০ বছর দেওয়া হতো, এখন বেশিরভাগ ঋণেই ৫ বছর দেওয়া হয়। সুদের হার বাড়াচ্ছে ঋণদাতা সংস্থাগুলো। ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাংক ৫ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে কথা বলেছে, অথচ তারা আমাদের শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ ঋণ দিত।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঋণদাতা সংস্থাগুলোর মধ্যে এ দুই মাসে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে জাপান। এ দেশের কাছ থেকে ছাড় হয়েছে ৩০ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা এডিবির কাছ থেকে। এ সংস্থার কাছ থেকে ঋণের অর্থছাড় হয়েছে ১৫ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। তৃতীয় সর্বোচ্চ করেছে বিশ^ব্যাংক। এ সংস্থার আইডিএ প্রোগ্রামের অর্থছাড় হয়েছে ১৩ কোটি ২৯ লাখ ডলার।
চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে অর্থছাড় কম হলেও এ সময়ে ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে প্রায় চারগুণ। আগস্ট শেষে অনুদানসহ বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে ১১৪ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। গত বছর একই সময়ে প্রতিশ্রুতি ছিল ৩০ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের। এ সময়ে পাইপলাইনে থাকা সম্ভাব্য ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৭০ কোটি ডলারের বেশি।
ইআরডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সুদের হার বৃদ্ধির ফলে সরকারের বৈদেশিক ঋণের পরিশোধের চাপ বেড়েছে। এর ফলে ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।
ইআরডির হিসাবে, সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের সুদ ও আসল মিলিয়ে ২ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে। এর মধ্যে সুদ হিসাবে পরিশোধ করেছে ৯৩৫ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ডলার আর আসল পরিশোধ করেছে ১ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকার আসল ও সুদ বাবদ পরিশোধ করেছে ২ দশমিক ০১৭ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে আসল ১ দশমিক ৫২ বিলিয়ন এবং সুদ ৪৯১ মিলিয়ন ডলার।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) রেট বেড়ে ৫ শতাংশের বেশি হয়েছে। এ কারণে বাজারভিত্তিক ঋণের জন্য বাংলাদেশকে এখন ৫ শতাংশের বেশি সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের আগে এই রেট ছিল ১ শতাংশের কম।
ঋণের চাপ আরও বাড়বে বলে মনে করেন ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের ঋণ পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে। যদিও এখন পর্যন্ত রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের শতাংশ হিসাবে বা জিডিপির শতাংশ হিসাবে এটি কম। কিন্তু তারপরও এটি ধীরে ধীরে বেড়ে এখন ৩৮ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। এমন সময়ে ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে যখন আমাদের রিজার্ভও চাপে আছে।’ তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের প্রতিবছর প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স মিলিয়ে আমাদের আয় ৮০ বিলিয়ন ডলার। এ অর্থ আবার আমদানির জন্য ব্যয় করতে হচ্ছে। রিজার্ভের নিরিখে এটি এখন অবশ্যই চাপ। যখন রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছিল তখন এ চাপ অনুভূত হয়নি। এখন রিজার্ভ কমতির দিকে আর ঋণ পরিশোধের দায়ভার বৃদ্ধির দিকে।’
বর্তমানে চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য সরকার যে ঋণ নিয়েছে, সেসব ঋণের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হলে ঋণ পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে বলে ধারণা করছে ইআরডি।
সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রের প্রভাব পড়েছে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে। এডিপি বাস্তবায়নও চলছে ঢিমেতালে। অর্থ সংকট ছিল না, এমন প্রকল্পের অগ্রগতিও আশানুরূপ হয়নি। অগ্রাধিকার পাওয়া মেগা প্রকল্পের কাজও চলছে ঢিমেতালে। আর ব্যয় করতে না পারায় বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমে গেছে।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণের সিংহভাগই এসেছে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির মতো বড় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে পাইপলাইনে বৈদেশিক ঋণ রয়েছে ৪৪.৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এ ঋণের জন্য সরকার ইতিমধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে।
ফরিদপুরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। গত এক মাসে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ৪৫ ডেঙ্গু রোগীর। আর গত এক সপ্তাহেই মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। চলতি বছর সব মিলিয়ে জেলাটিতে এ নিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ৬১ জন। জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে এবার ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ৬৩২। এর আগে এক বছরে এত আক্রান্ত আর মৃত্যু দেখেনি জেলাটি। রোগীর চাপে বিভিন্ন হাসপাতালে দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। ডেঙ্গু রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছে হাসপাতালের বারান্দা ও সিঁড়িতে। তাতে ব্যাহত হচ্ছে অন্য রোগীদের চিকিৎসাসেবাও।
ডেঙ্গুতে জেলার এমন পরিস্থিতির জন্য সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে জেলা প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সব কার্যক্রম চলমান। সরকারি সংস্থাগুলোর পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিভিন্ন এলাকায় মশা নিধন কার্যক্রম চলছে। বিভিন্ন হাসপাতালে বিনামূল্যে স্যালাইন বিতরণ করা হচ্ছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসাবে এ বছর জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ১২ হাজার ৬৩২ রোগী। বর্তমানে ফরিদপুরে ভর্তি হয়ে ৮২৪ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে সেবা নিচ্ছে। ডেঙ্গু আক্রান্তের সঙ্গে যেন পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে মৃত্যুও। এদের অধিকাংশই নারী। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, গত এক মাসে এ জেলার হাসপাতালগুলোতে মৃত্যু হয়েছে ৪৫ জনের। এর মধ্যে ফরিদপুরের ৩১ এবং অন্যান্য জেলার ১৪ জন। আর এ বছর জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ৬১ জন। এর মধ্যে ফরিদপুরে ৪১ জন, বাকি ২০ জন রাজবাড়ী, মাগুরা, গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরের।
হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় শয্যা সংকটের পাশাপাশি তীব্র গরমে অনেকটাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা। তবে ডেঙ্গু রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে দিন-রাত চেষ্টা করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সব স্কুল-কলেজ, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থানে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার আশা প্রকাশ করেন, শিগগিরই সবার সমন্বয়ে ডেঙ্গু মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
সিভিল সার্জন অফিস বলছে, বিভিন্ন হাসপাতালে দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে জেলার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ২ হাজারের অধিক রোগী। ফলে রোগীদের চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এনামুল হক বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের চিকিৎসকসহ সব বিভাগের কর্মীরা দিন-রাত কাজ করছেন। তবে শুধু সেবা দিলেই চলবে না। এর প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে মৃত্যুর মিছিল থামানো যাবে না। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শুধু ফরিদপুর নয়, এ অঞ্চলের ৫ থেকে ৬টি জেলার রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
ডেঙ্গু রোগীদের বিষয়ে জেলার সিভিল সার্জন ডা. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘গত এক মাসে এ জেলায় অতিরিক্ত ডেঙ্গু রোগীর চাপ লক্ষ করা গেছে। আমরা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জেলার সব হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে বলেছি। তিনি জানান, ফরিদপুরে এ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১২ হাজার ৬৩২ ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছে ১১ হাজার ৭৪৭ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৬১ জনের। গতকাল সোমবার জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল ৮২৪ জন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজ দেশের মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। কারণ এ সরকার খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রেখেছে। তার মুক্তির বিষয়ে ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে। এরা কাপুরুষ। এরা জানে খালেদা জিয়া সুস্থ হলে তাদের ক্ষমতার মসনদ ভেঙে পড়বে। বন্দি রেখে খালেদা জিয়াকে এরা হত্যা করতে চায়।
গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তির’ দাবিতে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল আয়োজিত কৃষক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও সকাল থেকে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন নেতাকর্মীরা। কাকরাইল থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত সড়কে হলুদ-সবুজ রঙের টুপি মাথায় দিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী ‘খালেদা জিয়ার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’, ‘এক দফা এক দাবি শেখ হাসিনা কবে যাবি’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য তারা (সরকার) বিভিন্ন রকম আইনকানুন দেখাচ্ছে। যখন আপনার (শেখ হাসিনার) কানের সমস্যা হয়েছিল তখন আপনি আমেরিকা চলে গিয়েছিলেন। যান নাই? আজকে খালেদা জিয়ার যখন জীবন-মরণের সমস্যা তখন এইসব কথা বলছেন কেন? কারণ রাজনৈতিকভাবেই তারা বেগম জিয়াকে হিংসা করে, তাকে সুস্থ করতে চায় না। বেগম জিয়াকে রাজনীতি করতে দিচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সম্পূর্ণ লক্ষ্য একটাই, এ দেশে কোনো বিরোধী দল থাকবে না, তারাই সরকার চালাবে, সরকারে থাকবে। তাদের কথাবার্তা শুনলে মনে হবে তারাই শুধু এ দেশের মালিক আর আমরা সব প্রজা।’
তিনি আরও বলেন, ‘পিটার হাসকে (মার্কিন রাষ্ট্রদূত) নিয়ে তারা (সরকার) খুব রেগেছে। তাদের নেতা-মন্ত্রীরা সমস্ত ডিপ্লোমেটিক নর্মসকে উপেক্ষা করে তার বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলছে। তাদের বংশবদ টেলিভিশন চ্যানেলগুলো মিথ্যাচার করছে। এরা এত দায়িত্বজ্ঞানহীন। যে দেশটাতে আমরা সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করি, সেই দেশের সঙ্গে সমস্যা তৈরি করেছে। আরেকটা খবর আছে, সেপ্টেম্বর মাসে সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে। এর অর্থ বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর তাদের আস্থা নেই। সেজন্য তারা অর্থ পাঠাচ্ছে না।’
দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা খালেদা জিয়া উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ নেতারা) তো মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। তারা পাকিস্তানের সরকারের ভাতা খেয়েছিলেন।’
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে কেনো বিকল্প নেই। একটাই পথ। সরকারকে সরাসরি বলতে চাই, এখনো সময় আছে মানে মানে পদত্যাগ করে একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিন, সংসদ বিলুপ্ত করুন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় দেশের মানুষ জানে কীভাবে স্বৈরাচারকে, ফ্যাসিবাদকে দূর করতে হয়।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখানে আমাদের রংপুর-দিনাজপুরের মানুষ আছেন। এক কৃষক নেতা ব্রিটিশ পিরিয়ডে বিদ্রোহ করেছিলেন। কৃষককে ডাক দিয়েছিলেন, কোনঠে বাহে জাগো সবাই। এই হচ্ছে ডাক। কোথায় আছেন, সবাই জাগেন, জেগে ওঠেন। প্রতিরোধ গড়ে তুলি, সমস্ত নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই।’
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, ‘সরকারের দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে দেশের কৃষকরা পণ্যের ন্যায্যমূল্য, সার-কীটনাশক-বীজ কোনো কিছুই পাচ্ছেন না। মেগা প্রকল্পের নামে সরকার লুটপাট করে বিদেশে অর্থ পাচার ও বাড়িঘর করে আখের গোছাচ্ছে।’
কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির শাহজাহান ওমর, বরকতউল্লা বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, ফরহাদ হালিম ডোনার, রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ বক্তব্য দেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার চারণকবি রাধাপদ রায়। দিন কাটে নিজ গ্রামসহ আশপাশের এলাকার মানুষকে স্বরচিত কবিতা শুনিয়ে। এতে লোকে খুশি হয়ে তাকে কিছু টাকা-পয়সা দেয়। তা দিয়েই অন্নের সংস্থান হয় তার। কারও সাতে-পাঁচে থাকেন না তিনি। কিন্তু গত শনিবার ভোরে নদীর পাড়ে মাছ ধরার সময় তাকেই পিটিয়ে জখম করল স্থানীয় দুই ভাই। রাধাপদ এখন হাসপাতালের বিছানায় কাঁতরাচ্ছেন। ঘটনার পর তার ছোট ছেলে জুগল রায় নাগেশ্বরী থানায় দুজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করলেও গতকাল সোমবার রাত পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়নি কেউই।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশের ভাষ্য, গত শনিবার উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের মাধাইখাল গ্রামে রাধাপদ রায়কে মারধর করে রক্তাক্ত করেন স্থানীয় কদুর আলী (৪২) ও তার ছোট ভাই রফিকুল ইসলাম (৩৬)। তারা ভিতরবন্দ ইউনিয়নের বচুয়ারপাড় গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে। এ ঘটনায় কদুর ও রফিকুলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন রাধাপদ। কিন্তু তিন দিনেও তাদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
গতকাল রাতে রাধাপদের ছোট ছেলে জুগল দেশ রূপান্তকে বলেন, পরিকল্পিতভাবে আমার বাবার ওপর হামলা চালায় রফিকুল ও কদুর। সাত মাস আগের এক ঘটনার জেরে এ হামলা হতে পারে।
জুগল বলেন, আমার বড় ভাই ও পাশের হাশেমপুর এলাকার এক ছেলে ঢাকায় একসঙ্গে নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। সাত মাস আগে তাদের মধ্যে টাকাপয়সার হিসাব নিয়ে বিরোধ বাধে। সে সময় সেই বিরোধে কদুর আলীও জড়িয়ে যান। তিনি আমাদের বাড়িতে এসে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। বাবা সে সময় তার প্রতিবাদ করেন। তাকে ধমকও দেন। সে সময় কদুর হুমকি দিয়ে চলে যান। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিশ হওয়ার কথা থাকলেও পরে আর তা হয়নি। এর মধ্যে কদুর আলীর ছোট ভাই রফিকুল নানা সময় আমাদের হুমকি দিয়েছেন। শনিবার বাবা মাছ ধরতে গেলে তাকে আটকে বেদম পিটিয়ে আহত করেন তারা দুই ভাই। পরে বাবাকে দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসি।
তিনি বলেন, আমার বৃদ্ধ বাবাকে তারা যেভাবে মেরেছে, তা বলে শেষ করতে পারব না। আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে ন্যায়বিচারের দাবি জানাই।
গতকাল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রাধাপদ রায় বলেন, আমার ওপর কেন হামলা করা হলো তা এখনো বুঝতে পারছি না। আমার তো কোনো শত্রু নেই। পাশের গ্রামের বাসিন্দা কদুর আলী ও রফিকুল ইসলাম গান-বাজনা পছন্দ করেন না। আমাকে পেটানোর সময় রফিকুল বলছিলেন, হিন্দু কবিকে পেটালে কিছু হয় না।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরাও বলছেন, আসামিরা গান-বাজনার সংস্কৃতির বিরোধিতা করেন। কিন্তু এ কারণেই কেন রাধাপদ রায়ের মতো একজন মানুষকে পেটানো হবে, সেটা বুঝে উঠতে পারছেন না তারা।
ভিতরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফি বলছেন, প্রায় সাত মাস আগে রফিকুলের বড় ভাই কদুর আলীর সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয়েছিল রাধাপদ রায়ের। তার জেরে এ হামলার ঘটনা ঘটতে পারে।
বিষয়টি নিয়ে নাগেশ্বরী থানার ওসি আশিকুর রহমান জানান, শনিবার সকালে রাধাপদ রায় বাড়ির পাশে বিলে মাছ ধরতে যান। কদুর আলীর নির্দেশে তার ছোট ভাই রফিকুল ইসলাম বাঁশের লাঠি দিয়ে তাকে বেদম মারধর করে। এ সময় আশপাশে থাকা লোকজন ছুটে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে তাকে নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। আসামিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারের জন্য তৎপর আছে।
রাধাপদ রায় জীবনে বেশিদূর পড়ালেখা করতে পারেননি। পড়েছেন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। নিজের লেখা গান, কবিতা মানুষকে শুনিয়ে সামান্য উপার্জনে চলে তার সংসার। আঞ্চলিক ভাষায় তার লেখা গান ও কবিতাগুলো বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ইতিমধ্যে তার লেখা ‘কেয়ামতের আলামত জানি কিন্তু মানি না’ শিরোনামে কবিতাটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এখন পর্যন্ত রাধাপদ রায়ের নিজের লেখা আঞ্চলিক ভাষায় শতাধিক গান ও কবিতা রয়েছে।
এবার বিশ্বকাপে কারা কোন দলের হয়ে আলো ছড়াবেন এ নিয়ে এক বিশ্লেষণে প্রখ্যাত ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে বাংলাদেশের বেলায় বেছে নিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মেহেদী হাসান মিরাজকে। সাকিব আল হাসান ও লিটন কুমার দাস ছাড়াও বাংলাদেশের এই দুই ক্রিকেটার আলো ছড়াবেন বলে মনে করেন হার্শা। হার্শা বলেন, ‘সাকিবের বাইরে কারা আছে? আমি লিটন দাসের বড় ভক্ত, মুশফিকুর রহিম আছে অনেক দিন ধরে। কিন্তু আমি বেছে নেব অন্য দুজনকে। মুগ্ধ করার মতো ধারাবাহিক এখন শান্ত। ওপেন করুক বা তিনে খেলুক, সে খেলাটাকে টেনে নিতে পারছে। সে মুশফিক ও সাকিবের কাছ থেকে চাপটা নিতে পারছে।’ হার্শার বিশেষ প্রশংসা পেয়েছেন মিরাজ। ‘আমি আরেকজন অলরাউন্ডারের কথা বলব। মেহেদী হাসান মিরাজ। আমি তাকে প্রথমে টেস্ট ম্যাচে দেখেছি। তাকে আমরা এখন দারুণ সব ইনিংস খেলতে দেখি। আমার মনে হয় মিরাজের মধ্যে পরের সাকিব আল হাসান হওয়ার সামর্থ্য আছে।’ বিশ্বকাপের দুই প্রস্তুতি ম্যাচেই ভালো ব্যাট করেছেন মিরাজ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলেন অপরাজিত ৬৭ রানের ইনিংস। আর গতকাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন ৭৪ রানের ইনিংস।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।