
২০১৫ সালে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন কিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) ভর্তি হয়েছেন অন্তত ৪০ শিক্ষার্থী। তাদের অনেকেই পরীক্ষায় বারবার অকৃতকার্য হয়ে বের হতে পারেননি। এই ৪০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩০ জনকে নজরদারিতে রেখেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের শিগগিরই গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
সিআইডির সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে ধারাবাহিক অভিযান চলছে। এখন অবৈধভাবে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন কিনে যারা বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছেন তাদের সবাইকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এজন্য গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করা হচ্ছে। এ ছাড়া এই চক্রের পেছনে যারা কাজ করেছে তাদের শনাক্তে কাজ করছে একাধিক তদন্তকারী দল।
গতকাল বুধবার সিআইডির মুখপাত্র অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় আমাদের সাইবার পুলিশ সেন্টার ও ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট কাজ করছে। এ ঘটনায় হওয়া মামলার তদন্তে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে তাদের গ্রেপ্তার করে ইতিমধ্যে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। আরও কারা এই চক্রে জড়িত তাদের শনাক্তে কাজ চলছে, শিগগিরই তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন ছড়িয়েছে। সে বছর প্রশ্ন কিনে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া অন্তত ১৫ জনের নাম পাওয়া গেছে। তাদের প্রাথমিক তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। এই ১৫ শিক্ষার্থীকেও গ্রেপ্তার করা হবে। মেডিকেলে ১৬ বছরে ১০ বার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় অসংখ্য শিক্ষার্থী অসদুপায় অবলম্বন করে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে তাদের পরিচয় শনাক্ত করে তাদের সার্টিফিকেট বাতিল করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করা হবে। গত ১৩ আগস্ট মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় ১২ জনকে গ্রেপ্তার সিআইডি। তাদের মধ্যে আটজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের মধ্যে চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীম উদ্দিন ভূঁইয়ার কাছ থেকে একটি ডায়েরি উদ্ধার করা হয়। এতে অন্য সদস্যদের নাম পাওয়া যায়। এই অভিযানের ধারাবাহিকতায় খুলনার পাঁচ চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হয়।
খুলনা থেকে গ্রেপ্তার মো. ইউনুচ উজ্জামান খান তারিম খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার। খুলনা শহরের আলোচিত মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার থ্রি ডক্টরসের মালিক। মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে অবৈধভাবে শত শত শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়েছেন তিনি। তাদের মধ্যে ডা. মুসতাহিন হাসান লামিয়া ২০১৫-১৬ সেশনের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধায় ১১তম স্থান অর্জন করেন। জাতীয় মেধায় ১১তম হওয়ার পরও তিনি চারটি ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষার সব বিষয়েই ফেল করেছেন। একাধিকবারের চেষ্টায় তিনি পাস করেন। এ ছাড়া ডা. শর্মিষ্ঠা মণ্ডল ও ডা. নাজিয়া মেহজাবিন তিশা উভয়েই ২০১৫-১৬ সেশনের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ডা. মো. ইউনুচ উজ্জামান খান তারিমের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্র কিনে খুলনা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন।
রবিবার ভোর ৫টা। রাজধানীর সদরঘাটে আসতে শুরু করেছে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের যাত্রীবাহী লঞ্চ। এ সময় ভোলার চরফ্যাশন থেকে আসা তাসরিফ-৪ নোঙর করে। লঞ্চটি ঘাটে নোঙরের সঙ্গে সঙ্গে হইহই করে লাফিয়ে উঠে পড়েন ১০-১৫ জন হলুদ পোশাকের ঘাটশ্রমিক (কুলি)। লঞ্চের এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত ডেক, কেবিন সবখানে চিরুনি অভিযানের মতো উঁকি মেরে বেড়াচ্ছিলেন তারা। একপর্যায়ে বেশ কয়েকটি কেবিন ও ডেকের যাত্রীদের ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তাদের। যাত্রীদের সঙ্গে কারও কারও আবার তর্কও চলছিল। ইঞ্জিনরুমের পাশে এক যাত্রীর সঙ্গে তর্ক করছিলেন দুজন। আরেকজন ওই যাত্রীর বহন করা একটি মাছের বাক্স (ককশিট) আটকে রেখেছেন।
কাছে গিয়ে জানতে চাইলে নাজমুল নামের ওই যাত্রী বলেন, তিনি ঢাকায় ছেলের বাসায় বেড়াতে এসেছেন। আসার সময় কিছু মাছ নিয়ে এসেছেন ককশিটের ওই বাক্সে করে। লঞ্চ থেকে নামার যখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন তিন কুলি তাকে ঘিরে ধরেন। ককশিট নামিয়ে দেওয়ার জন্য তার কাছে ৩০০ টাকা দাবি করেন। কুলিদের দিয়ে বাক্সটি নামাতে তিনি রাজি নন, নিজেই বহন করবেন এ কথা জানালে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তিন ঘাটশ্রমিক। তাদের দাবি, নিজে বহন করলেও তাদের একই টাকা দিতে হবে।
দেশ রূপান্তরের এই প্রতিবেদককে নাজমুল বলেন, ‘আমার ককশিটে ১০-১২ কেজি মাছ রয়েছে। যেটা আমি নিজেই বহন করতে পারি। এখন টাকা না দিলে তারা ককশিট রেখে দেবে বলে হুমকি দিচ্ছে। লঞ্চের স্টাফদের জানালে তারা বলেন, এসব দেখার বিষয় তাদের না।’
১০-১২ কেজি ওজনের একটি বাক্সের জন্য কেন ৩০০ টাকা দিতে হবে জানতে চাইলে ঘাটশ্রমিকদের একজন বলেন, ‘এডাই নিয়ম। কোটি কোটি টাকা দিয়া ঘাট রাখছে কি মাগনা যাওনের লাইগা। ট্যাকা দিয়াই নামাইতে হইব।’
বহনযোগ্য কোনো মালামাল কুলিরা ধরতে পারবেন না। এমনকি যাত্রীদের বহনযোগ্য কোনো মালামালের জন্য ফি বা শুল্ক দিতে হবে না সরকার তো এমন নিয়মই করেছে। তারপরও কেন টাকা চাইছেন? জবাবে ওই কুলি বলেন, ‘এসব আমরা জানি না। আপনেরা সরকাররে গিয়া জিগান।’
পাশেই ফাতেমা নামে আরেক যাত্রীর বস্তা নিয়ে টানাটানি করছিলেন আরও দুজন কুলি। জানতে চাইলে ওই যাত্রী বলেন, ‘বস্তায় কিছু নারকেল আর চাল রয়েছে। কুলিরা আমার কাছে ১০০ টাকা দাবি করছেন। টাকা দিইনি বলে আমার বস্তা নিয়ে টানাটানি করছে।’
শুধু এই দুই যাত্রীই নন, বছরের পর বছর ধরে লঞ্চে রাজধানীতে আসা-যাওয়া করা দক্ষিণাঞ্চলের লাখো যাত্রী ঘাটশ্রমিকদের দৌরাত্ম্যে নাজেহাল হচ্ছেন। মাল বহন করার জন্য যাত্রীদের কাছ থেকে জোর করে নেওয়া হচ্ছে নির্ধারিত হারের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি মজুরি। বাড়তি টাকা না দিলে মারধর বা হেনস্তার শিকার হতে হয় যাত্রীদের। আর এসব ঘটনা ঘটছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সামনেই।
যাত্রীদের অভিযোগ, সদরঘাটের ইজারাদারের লোকেরা ইচ্ছামতো টাকা আদায় করেন। এ ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানা হয় না। প্রশাসনের লোকজন দেখেও না দেখার ভান করছে।
বরগুনা থেকে আসা লঞ্চের যাত্রী সুখদেব বলছিলেন, ‘লঞ্চ ছাড়া দেশের আর কোনো পরিবহনে এমন হয়রানির শিকার হতে হয় না। একটি ২০ কেজি ওজনের চালের বস্তার জন্য বরগুনা ঘাটে দিতে হয়েছে ৫০ টাকা। আবার এখানে চাচ্ছে ২৫০ টাকা। অথচ জানি সরকারনির্ধারিত হার প্রতি দশ কেজির জন্য ১০ টাকা মজুরি। কিন্তু তারা এই নিয়ম মানে না। এখানে প্রশাসনের লোক রয়েছে। তাদের সামনেই এসব হচ্ছে।’
ইমতিয়াজ নামে এক প্রবাসী বলেন, মাস দুয়েক আগে তিনি ওমান থেকে দেশে ফিরেছেন। তার সঙ্গে দুটো লাগেজ ছিল। এর জন্য তিন হাজার টাকা দাবি করেন ঘাটশ্রমিকরা। পরে দেড় হাজার টাকায় রফা হয়। অথচ তারা পরিবার ছেড়ে বছরের পর বছর বিদেশে পড়ে থাকেন। পরিশ্রম করে দেশে রেমিট্যান্স পাঠান। আর নিজের দেশে এসে যখন এ রকম হেনস্তা হতে হয়, এর চেয়ে কষ্টের আর কিছু হয় না।
অভিযোগ রয়েছে, ঘাটশ্রমিকদের এমন দৌরাত্ম্যে মদদ দিচ্ছেন সদরঘাট নৌযান শ্রমিক ইউনিয়ন ও ঘাট শ্রমিক লীগের কয়েকজন নেতা। তাদের নির্দেশেই মূলত যাত্রীদের হয়রানি করে বাড়তি টাকা আদায় করা হচ্ছে। আর এসব টাকার ভাগ যায় ওপরমহল পর্যন্ত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ঘাটশ্রমিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, তারা ইচ্ছে করে এটা করেন না। তাদের বাধ্য করা হয়। যখন কোনো যাত্রী মালামাল বহন করেন, তখন দালালরা ঘাটে এর হিসাব রাখে। মালামাল বহন করে যে মজুরি পাওয়া যায় তার ৬০ শতাংশ দিতে হয় ঘাটে থাকা সরদারদের। না হলে এখানে কাজ করতে দেয় না। ফলে তারা যাত্রীদের থেকে বাড়তি টাকা আদায় করেন। এই টাকার ভাগ অনেকেই পায়।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চার্ট অনুযায়ী টার্মিনালে নোঙর করা লঞ্চ, স্টিমার, নৌযান থেকে ঘাটের শ্রমিকদের দিয়ে ১০ কেজি পর্যন্ত ওজনের একটি ব্যাগেজ বা মালামাল রাস্তায় থাকা যানবাহনে বা রাস্তা থেকে নৌযানে তুলে দেওয়ার জন্য ১২ টাকা, ২০ কেজির জন্য ২৩ টাকা, ৩০ কেজির জন্য ৩৫ টাকা, ৪০ কেজি ওজনের দুটি লাগেজ ৪৬ টাকা, ৬০ কেজি ওজনের দুটি লাগেজ ৫৮ টাকা, কাঠ বা স্টিলের (১০০ কেজি পর্যন্ত ওজনের) একটি খাট ১১৫ টাকা, কাঠ বা স্টিলের চেয়ার বা একটি টেবিল ২৩ টাকা, একটি ফ্রিজ বা টেলিভিশন ৫৮ টাকা, কম্পিউটার ৩৫ টাকা, মোটরসাইকেল নৌযানে ওঠানো বা নামানোর জন্য ২৯ টাকা, বাইসাইকেল ২৩ টাকা দিতে হবে।
এ ছাড়া ব্যবসায়িক পণ্য যারা বহন করবে, তাদের পোশাক হলুদ রঙের আর যারা যাত্রীর মালামাল বহন করবে, তাদের পোশাক আকাশি রঙের হবে। তাদের সঙ্গে পরিচয়পত্র থাকতে হবে। তবে এসব নিয়ম মানতে দেখা যায়নি কুলিদের। ফলে অভিযোগ দিলেও তাদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, সদরঘাটের কুলিদের রাখা হয়েছে যাত্রীদের সেবা দেওয়ার জন্য। এখন তারা স্পষ্টত যাত্রী হয়রানিতে লিপ্ত। যাত্রীর পকেট কাটার মধ্যে দিয়ে নৈরাজ্য চালাচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএ, নৌবন্দর বিভাগ, নৌপুলিশের নজদারিতে থাকলে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। কিন্তু সেটা দেখা যায় না।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বদিউজ্জামান বাদল বলেন, দেশের অন্য কোনো টার্মিনালে প্রবেশ করতে গেলে টাকা লাগে না। কিন্তু লঞ্চঘাটে প্রবেশ করতে হলে টাকার প্রয়োজন হয়। এসব টাকা যাত্রীদের কল্যাণে ব্যয় করার কথা কিন্তু তা হচ্ছে না। তাহলে এসব টাকা কোথায় যায়।
তিনি বলেন, ‘ইজারার নামে লঞ্চঘাটগুলোতে যাত্রী নির্যাতনের একটা কারখানা তৈরি করা হয়েছে। ঘাটের কুলিদের দৌরাত্ম্যের কারণে লঞ্চের ৩০ শতাংশ যাত্রী কমেছে। আমরা চাই ঘাটে ইজারাপ্রথা বাতিল করা হোক।’
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক মো. আলমগীর কবীরের বক্তব্য নিতে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
মেহেদি পরা নিয়ে ভারত-বাংলাদেশে নানা রকমের সংস্কার রয়েছে। যার বেশিরভাগটাই মূলত বিবাহিতাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সে কারণেই মেহেদি পরানোর সময়ে নকশার এক কোণে লেখা থাকত প্রিয়তমের নামের আদ্যক্ষর। কালের ধারায় তার রঙ আর নকশার সাজ এসেছে অবিবাহিতাদের মধ্যেও। তবে এখন অনেকেই শুধু বিয়ে উপলক্ষে নয়, যে কোনো উৎসবে, অনুষ্ঠানে হাতে তুলে নেন মেহেদির সাজ।
ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, ভারতের আনাচে-কানাচে অনেক বোনই রাখি উৎসব উপলক্ষে সেজেছেন মেহেদিতে। তাদের মেহেদি রাঙা হাত যখন ভাইয়ের কবজিতে রাখি বাঁধবে, নিঃসন্দেহে তা হয়ে উঠবে মনে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধরে রাখার মতো মুহূর্ত। তবে এবার নতুন এক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে রাখিবন্ধনের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে এক বোনের মেহেদি রাঙা হাত। সেই হাতের নকশা বেশ ভালোই চোখ টানে। কিন্তু একটু নজর দিয়ে দেখতে গেলেই চোখ কপালে উঠবে। সেই নকশায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আদতে একটি কিউআর কোড। এর পরের ধাপে ভাইকে দেখা যাচ্ছে সেই কিউআর কোড স্ক্যান করতে। সাবলীল ভাবেই সম্পন্ন হয়েছে সেই স্ক্যানিং, ত্বকে মেহেদি দিয়ে তৈরি করা হলেও কোনো অসুবিধা হয়নি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ভাইটি ভালো মতোই একটা টাকার রাশি ট্রান্সফার করেছেন বোনের অ্যাকাউন্টে। বোন চেয়েছিলেন ৫০০০ টাকা, তবে ঠিক কত টাকা তিনি পাঠিয়েছেন, তা ভিডিওতে দেখা যায়নি। এই ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন রবি সুতানজানি নামের এক ইউজার, লিখেছেন ডিজিটাল ইন্ডিয়ার এটাই শীর্ষ মুহূর্ত।
ভিডিও দেখে কেউ বলছেন এর চেয়ে মজার কিছু হয় না, আবার অনেকের দাবি এবার থেকে বিয়ের মেহেদি নকশায় কিউআর কোড ট্রেন্ড হয়ে যাবে, কনের হাত স্ক্যান করেই তাকে উপহার দেবেন আমন্ত্রিতরা!
রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) জমির ওপর বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেড যে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে, সেই ভবনের শেয়ারের অংশ একে অন্যের মধ্যে বুঝে ও দখলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। উভয়পক্ষের আপসে নিষ্পত্তির ভিত্তিতে ভবনের ১৫ থেকে ২৮ তলার মালিকানা ডিএনসিসির ৪০ শতাংশ এবং বোরাক রিয়েল এস্টেটের ৬০ শতাংশ শেয়ার বণ্টনের বিষয়টি আদালতকে অবহিত করলে তা চূড়ান্ত করে ৩০ দিনের মধ্যে তাদের পাওনা দখল বুঝে নিতে বলেছে আদালত। একই সঙ্গে এ বিষয়ে আগামী এক মাসের মধ্যে আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ও আদালতের নির্দেশে এ সংক্রান্ত ডিএনসিসি এবং রাজউকের প্রতিবেদন পেয়ে শুনানির পর গত মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ৯ অক্টোবর দিন ঠিক করেছে।
আদালতে বোরাক রিয়েল এস্টেটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সাবেক বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. আবু তালেব, শেখ মোসফেক কবির, আবুল কাশেম ও এনামুল হক তুহিন। অন্যদিকে ডিএনসিসির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম নীলিম। রাজধানী উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষের (রাজউক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ইমাম হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুদ্দিন খালেদ।
শুনানিতে ডিএনসিসির আইনজীবী ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম বলেন, বোরাক রিয়েল এস্টেটের সঙ্গে এই ভবন নির্মাণ ও শেয়ার বণ্টনের বিষয়ে বোর্ডসভার সিদ্ধান্ত আমরা স্থানীয় সরকার বিভাগকে অবহিত করেছি। সিটি করপোরেশনের জায়গায় ইতিপূর্বে যতগুলো ভবন নির্মিত হয়েছে, কোনোটিতেই ২২ শতাংশের বেশি সিটি কপোরেশন পায়নি। শুধু বোরাক থেকেই সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ভবনের প্রথমাংশের ৩০ শতাংশ এবং ওপরের ১৫ থেকে ২৮ তলা পর্যন্ত ৪০ শতাংশ চুক্তিবদ্ধ হয়ে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ২৫ শতাংশ কমন এরিয়া, যা সিটি করপোরেশনের অংশ; তা বিবেচনায় নিলে আনুপাতিক হারে সিটি করপোরেশনের প্রাপ্য অংশ যথাক্রমে ৫৫ ও ৬৫ শতাংশ।
এ আইনজীবী আদালতকে আরও বলেন, ভবনের কমন স্পেস, দোকানপাটসহ এসব মিলিয়ে গড়ে ৫৫ থেকে ৬৫ শতাংশের মালিকানা সিটি করপোরেশনের। তুলনামূলকভাবে এ চুক্তিতে আমরা সন্তুষ্ট। বিষয়টি স্থানীয় সরকার বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে।
অন্যদিকে শুনানিতে বোরাক রিয়েল এস্টেটের আইনজীবী আলতাফ হোসেন বলেন, যেহেতু বিষয়টি একটি সেটেলমেন্টে এসেছে; এখন আপনাদের একটা আদেশ পেলে ২০১৫ সাল থেকে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা, পেন্ডিং বিষয়টির সমাধান হয়ে যাবে।
এ সময় সিটি করপোরেশনের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলে, তারা (বোরাক রিয়েল এস্টেট) তো দিতে প্রস্তুত; এখন আপনারা একটা চূড়ান্ত চুক্তি সম্পন্ন করে নিয়ে আসেন। পরে আদালত ৩০ দিনের সময় দিয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৯ অক্টোবর দিন ধার্য করে।
আদালতের আদেশের পর ডিএনসিসির আইনজীবী ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম নীলিম বলেন, ‘এখন ডিএনসিসি এ বিষয়ে এগিয়ে যাবে, চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে যার যার পাওনা বুঝে নেবে। আদালতের নির্ধারিত সময় আগামী এক মাসের মধ্যে তা সম্পন্ন করা হবে।’
আদেশের বিষয়ে বোরাক রিয়েল এস্টেটের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আলতাফ হোসেন বলেন, আপস-নিষ্পত্তির জন্য আদালতের নির্দেশে ডিএনসিসি-বোরাক রিয়েল এস্টেটসহ সংশ্লিষ্টরা বসে ভবনের বর্ধিত অংশ (১৫ থেকে ২৮ তলা) বণ্টনের সিদ্ধান্ত নেয় যে, ৪০ শতাংশ পাবে সিটি করপোরেশন এবং বাকি ৬০ শতাংশ পাবে বোরাক রিয়েল এস্টেট। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশন চূড়ান্ত চুক্তিপত্র জমা দেবে। একই সঙ্গে তাদের একে অন্যের পাওনা বুঝে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত; সেটাও সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, আপস-নিষ্পত্তির ভিত্তিতে একটি খসড়া চুক্তিপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। এখন এটি চূড়ান্ত করে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করার জন্য আদালত নির্দেশ দিয়েছে।
এ আইনজীবী বলেন, আমরা আদালতকে বলেছি যে, এখানে নিয়মের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। যত ধরনের অনুমোদন প্রয়োজন সব অনুমোদন নিয়েই এ ভবন নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়। এতে সিটি করপোরেশন লাভবান হয়েছে। সিটি করপোরেশনের নিজস্ব জমিতে ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদনের জন্য সিটি করপোরেশনে সরকার নিযুক্ত অথরাইজড অফিসার আছেন। উনি যথাযথ নিয়ম ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছেন। সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন অন্যান্য ভবন নির্মাণেও সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী অথরাইজড অফিসার হিসেবে নকশার অনুমোদন দিয়েছেন।
গত ২০ অক্টোবর বহুতল এ ভবনের ১৫ থেকে ২৮ তলার শেয়ার বণ্টনের খসড়া চুক্তিপত্র ও নির্মাণসংক্রান্ত অনুমোদনপত্র দাখিল করতে ডিএনসিসিকে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের জমিতে ভবন নির্মাণ করতে রাজউক থেকে অনুমোদন নিতে হবে কি না, এ বিষয়ে রাজউককে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।
এর আগে গত ১২ জুন ভবন নির্মাণ চুক্তিপত্র, প্রচলিত আইন ও ইক্যুইটি অনুযায়ী দুই মাসের মধ্যে সেই ভবনের ডিএনসিসির প্রাপ্য হিস্যা বুঝে নিতে বোরাক রিয়েল এস্টেট ও ডিএনসিসিকে আপস-মীমাংসার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী গত মঙ্গলবার ডিএনসিসি ও বোরাক রিয়েল এস্টেট তাদের সমঝোতা ও শেয়ার বণ্টনসংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে তুলে ধরে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া সব মামলা বাতিলের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছে ১৯টি আন্তর্জাতিক সংস্থা। একই সঙ্গে সাংবাদিকসহ এ আইনের মামলায় আটক ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে মানবাধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করা এ সংস্থাগুলো। গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) ওয়েবসাইটে ১৯ সংস্থার চিঠিটি প্রকাশ করা হয়েছে।
এদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বদলে সরকার সাইবার নিরাপত্তা আইন করার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার খসড়া এখন যেভাবে রয়েছে, শেষ পর্যন্ত সেটাই আইনে পরিণত হলে এটি একটি ‘কালো আইন’ হিসেবে চিহ্নিত হবে বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে এমন মতামত তুলে ধরে টিআইবি।
১৯টি আন্তর্জাতিক সংস্থার চিঠিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়েছে। তবে এ আইনের বদলে যে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হচ্ছে, তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত আইনটিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশ কয়েকটি দমনমূলক ধারা থাকছে, যেগুলো আগে বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, নাগরিক স্বাধীনতাসহ স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মানবাধিকারকর্মীদের কণ্ঠরোধে ব্যবহার করা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ই-মেইলে চিঠিটি পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমদকে চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, শুধু শান্তিপূর্ণভাবে নিজের মতপ্রকাশের কারণে যাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে, কর্র্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে সেসব মামলা বাতিল করা। একই সঙ্গে এসব মামলায় যাদের আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
যে সংস্থাগুলো চিঠি দিয়েছে সেগুলো হলো অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, আর্টিকেল নাইনটিন (দক্ষিণ এশিয়া), এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, বাংলাদেশি জার্নালিস্ট ইন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া, ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট, সিভিকাস : ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন, কোয়ালিশন ফর উইমেন ইন জার্নালিজম (সিএফডব্লিউআইজে), কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস, ফোরাম ফর ফ্রিডম এক্সপ্রেশন, বাংলাদেশ; ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড, আইএফইএক্স, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস (এফআইডিএইচ), ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্টস (আইএফজে), ইন্টারন্যাশনাল ওমেন’স মিডিয়া ফাউন্ডেশন, পেন আমেরিকা; পেন বাংলাদেশ, পেন ইন্টারন্যাশনাল, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস ও রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস।
চিঠিতে সংবাদ প্রকাশের জেরে আরটিভির ঢাকা কার্যালয়ের নিজস্ব প্রতিবেদক অধরা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তা আইনও ‘কালো আইন’ হবে মনে করছে টিআইবি : সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়া যেভাবে রয়েছে, শেষ পর্যন্ত সেটাই আইনে পরিণত হলে এটি একটি ‘কালো আইন’ হিসেবে চিহ্নিত হবে বলে মনে করছে টিআইবি। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে ‘খসড়া সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ : পর্যালোচনা ও সুপারিশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির এ মতামত তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমি মনে করি, এটি নিবর্তনমূলক আইন। যেভাবে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট কালো আইন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল, বর্তমানে যে অবস্থায় আছে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের খসড়া, সেটি প্রণীত হয়ে গেলে, এটাও কালো আইন হিসেবে চিহ্নিত হবে। এটি বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করবে। এক ধরনের বার্তা দেশবাসীর মধ্যে দেওয়া হচ্ছিল যে, মতপ্রকাশ করলে, তথ্য প্রকাশ করলে নিজের বিবেক-চিন্তা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ করলে আপনি ঝুঁকির সম্মুখীন হবেন, ওই বার্তাটিই পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।’
পাঁচ বছর আগে সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম বদলে সাইবার সিকিউরিটি আইন করতে যাচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, নাম বদলের সঙ্গে আইনের অনেক ধারায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ব্যাপক সমালোচিত ৫৭সহ কয়েকটি ধারা বাতিল করে নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হলেও এর অপপ্রয়োগের অভিযোগ ছিল। কারণ পুরনো আইনের বাতিল হওয়া ধারাগুলো নতুন আইনে রেখে দেওয়া হয়েছিল।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে যোগাযোগ না রেখে নিজেদের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তাই বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত শুক্রবার ঢাকাসহ সারা দেশে কালো পতাকা মিছিল করলেও ছিল না জামায়াত। তবে সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা ও কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির দাবিতে রাজপথে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে দলটি।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা সব সময় জনগণের পক্ষে, জনগণের জন্য রাজনীতি করি। বিগত দুটি সংসদ নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। বর্তমান সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হলে জনগণ ভোট দিতে পারবে না। তাই আমরা জনগণের ভোটাধিকারসহ সংবিধানস্বীকৃত সব অধিকার আদায়ে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাব। আমরা মনে করি জামায়াতে ইসলামীর ১২ থেকে ১৫ শতাংশ ভোট রয়েছে। আমাদের এখন লক্ষ্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে সফল করা। নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে সরকারকে বাধ্য করা। আমরা সে লক্ষ্যেই এগোচ্ছি। সামনে আন্দোলন আরও জোরদার হবে।’
সংগঠন শক্তিশালী হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে আমরা সমাজকল্যাণ ও সংগঠন গোছানোর কাজ করে আসছি। এই সময়ে কয়েক লাখ কর্মী এবং নেতার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। জ্যেষ্ঠ নেতাদের হারালেও তরুণ নেতৃত্ব তৈরি হয়েছে কয়েক লাখ। তাই আমরা দেখছি আমাদের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি যেমন আমাদের মনোবল বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি রাজনীতিতে আলোচনার জন্ম দিতে পেরেছি।’
মূলত আগমী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে না থাকলেও তাদের দাবি সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। প্রায় প্রতিদিনই গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতির মাধ্যমে দলের বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের কথা জানিয়ে আসছে দলটি। ইতিপূর্বে জানানো হয়েছে, জামায়াতে ইসলামী বিভিন্ন সংসদীয় আসনে তাদের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে। তাদের প্রার্থীরা সামাজিক মাধ্যমেও এলাকাভিত্তিক তাদের কার্যক্রম তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি ভার্চুয়ালি বিভিন্ন জেলা নেতাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রাখছেন। প্রায় প্রতিদিনই তারা বিভিন্ন জেলার সব ইউনিটের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করছেন।
এদিকে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শীর্ষ নেতাদের সাজা, প্রকাশ্য রাজনীতিতে দীর্ঘ অনুপস্থিতি, নিবন্ধন বাতিল এবং সরকারের নানামুখী চাপে থাকার পরেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা অবস্থান আছে দলটির। গত প্রায় চার দশকেরও বেশি সময় ধরে দলটি নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থে কখনো বিএনপি অথবা আওয়ামী লীগের সঙ্গে এক ধরনের বোঝাপড়া করে রাজনীতি করে আসছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আদালতের একটি রায়ের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করেছিল। এরই মধ্যে নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে জামায়াতে ইসলামী।
মহানগর জামায়াতের এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের সাবেক নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর তার জানাজা পড়তে দেওয়া হয়নি। এর প্রতিবাদে আমরা রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে তিনদিনের কর্মসূচি পালন করেছি। সামনের দিনগুলোতে জনগণের দাবি নিয়ে রাজপথে থাকব। আশা করছি সরকার আমাদের রাজপথে কর্মসূচি পালন করতে দেবে।’
দলটির নেতাদের আশা নির্বাচন নিয়ে সব পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হলে এবং সবাই তাতে অংশ নেওয়ার পরিবেশ তৈরি হলে তারাও তাদের নিবন্ধন ফেরত পাবেন আইনি প্রক্রিয়াতেই। তাই এখন দলকে রাজনীতির মাঠে চাঙ্গা ও দৃশ্যমান করাই তাদের মূল লক্ষ্য। আর এর মাধ্যমেই তারা সরকারবিরোধী আন্দোলনে নিজেদের অবস্থানও জোরদার করতে চান। আমরা সবসময়ই বলছি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক বা নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা লাগবে। বর্তমান সরকার বিদায় নিলেই জামায়াতের বিরুদ্ধে নেওয়া সব বেআইনি পদক্ষেপের প্রতিকার পাবে।
গত বছরের ১০ ডিসেম্বর বিএনপি রাজধানীর গোলাপবাগে মহাসমাবেশ করে। এর আগে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের ডেকে জোটের বিলুপ্তির কথা জানানো হয়। তবে এটি বিএনপিকে জামায়াত-বিতর্ক থেকে স্বস্তি দেওয়ার কোনো কৌশল কি না তা নিয়ে জোর আলোচনা রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। এরপর চলতি বছরের ১০ জুন ঢাকায় সমাবেশ করে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয় দলটি। বিশেষ করে হঠাৎই কর্তৃপক্ষ সমাবেশের জন্য দলটিকে অনুমতি দেওয়ায় এ নিয়ে নানা ধরনের তর্ক-বিতর্ক শুরু হয় রাজনৈতিক অঙ্গনে। কারণ এর আগে পুলিশ যেমন দলটিকে কোথাও কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি, তেমনি পুলিশের বাধার কারণে এর কর্মী-সমর্থকরাও প্রকাশ্যে কোথাও বৈঠকেরও সুযোগ পাননি। আবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকেই বহুবার দলটিকে নিষিদ্ধ করে আইন করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সেই দলটি একটি প্রতিনিধিদল যখন সমাবেশের জন্য পুলিশ কমিশনারের অফিসে যান তখনই এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। সঙ্গে সঙ্গে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীর বক্তব্যও মানুষের দৃষ্টি কেড়েছে। ঢাকার সমাবেশের পর সিলেট, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি বিভাগে সমাবেশের কর্মসূচি করতে চেয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। কিন্তু ‘নাশকতার আশঙ্কা’ দেখিয়ে সমাবেশে সায় দেয়নি স্থানীয় পুলিশ।
তবে দলটির প্রচারের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মতিউর রহমান আকন্দ সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ার বিষয়ে বলেছেন, ‘পুলিশ আমাদের সমাবেশ নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছে। তারা নাশকতার কথা বলছে। অথচ গত কয়েকদিন আমরা যে সমাবেশ করেছি, প্রচার করেছি তাতে কিন্তু অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে অনুমতি নিয়ে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে দেশের সর্বত্রই সমাবেশের কর্মসূচি সফলের চেষ্টা আমাদের থাকবে।
রাজপথে কর্মসূচি নিয়ে নামার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় নির্বাচনকে সামনে রেখে মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণার পর থেকে।
বর্তমান জামায়াতের মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখন সামনের দিনগুলোতে তারা জনগণের দাবি নিয়ে জনমত সংগঠন করবেন যার মূল উদ্দেশ্যই থাকবে সরকারের বিরুদ্ধে মানুষকে সংগঠিত করা। কারণ আমরা মনে করি সরকারকে বিদায় করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করতে পারলে আমাদের নিবন্ধন, দল, জোট, নির্বাচনসহ সব কিছু নিয়েই আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারব।’
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।
প্রাচীন সময় থেকে মানুষের খাদ্যতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে চীজ বা পনির। গরুর দুধের তৈরি পনিরে শরীরকে সুস্থ রাখার প্রয়োজনীয় সব উপাদান পাওয়া যায়।
বর্তমানে সময়ের সাথে সাথে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পনিরের ব্যবহার। আর তাই বিস্কিট থেকে শুরু করে পাউরুটি, পাস্তা, পিৎজা অনেক কিছুতেই পনির ব্যবহার হয়।
পনিরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের মতে, ১০০ গ্রাম পনিরের মধ্যে রয়েছে:
শক্তি - ৩৬২ কিলোক্যালরি
প্রোটিন – ৫.১৭ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট - ৫০ গ্রাম
ক্যালসিয়াম - ৬৯ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম - ১৮১ মিলিগ্রাম
স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড – ৩.৪৫ গ্রাম
কোলেস্টেরল - ৩৪ মিলিগ্রাম
এটি প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস। পনিরের বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে।
পনির ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এবং প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এটি বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অনেক উপকারি। পনিরে থাকা ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পনির খেলে অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করা যায়।
পনির ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা শক্তিশালী ও মজবুত দাঁত তৈরিতে অবদান রাখে। পনিরে থাকা কেসিন ফসফোপেপটাইড উপাদান দাঁতের গহ্বর কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া চিউইং চিজ মুখের পিএইচ মাত্রা বাড়াতে পারে এবং সামগ্রিক মৌখিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
পনিরে অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড যেমন কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস। কোরিয়া ইউনিভার্সিটি এবং ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ফ্যাটি অ্যাসিডে ক্যান্সার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ ছাড়া এই ফ্যাটি অ্যাসিড এথেরোস্ক্লেরোসিস এর বিকাশ রোধ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে।
পনিরে কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড এবং স্ফিংগোলিপিড রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে স্ফিংগোলিপিড মানুষের কোলন ক্যান্সারকে বাধা দিতে পারে।
এ ছাড়া পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে খাদ্যতালিকাগত ক্যালসিয়াম কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ উপকারি।
পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই উপকারি। এটি প্রসবের সময় সংকোচনকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া উকের দুধ পান করানোর সময় ক্যালসিয়াম পুষ্টির ঘাটতিও পূরণ করে পনির। এটি গর্ভবতী মহিলাদের ভ্রূণের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে।
কিছু ধরণের পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যকারিতা বাড়াতে পরিচিত। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে পনির শরীরের প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটি অসুস্থতা এবং রোগ কমাতে পারে।
প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সুরক্ষিত পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। এটি বয়স্কদেরমধ্যে ইমিউনোসেনেসেন্স (প্রতিরোধ ব্যবস্থার ধীরে ধীরে দুর্বল হওয়া) প্রতিরোধ করতে পারে।
পনির সেলেনিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা থাইরয়েড ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সেলেনিয়ামের থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করে ভাইরাসের বিকাশকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে।
চেডার পনির হল এক ধরনের হার্ড পনির। এটি খাদ্যতালিকায় যোগ করলে তা থাইরয়েড রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
পনিরের আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলির মধ্যে একটি হল মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করা। বিশেষ করে ক্যামেমবার্ট জাতের পনির এই ধরনের কাজ করে থাকে। ক্যামেমবার্ট পনির প্রদাহজনক সাইটোকাইনের মাত্রা কমাতে পারে। এটি আলঝাইমার রোগের ঝুঁকি কমায় এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।
পনির ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। এতে থাকা ভিটামিন বি কোষের বিপাক এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে এটি উজ্জ্বল ত্বকের পাশাপাশি ত্বকের দাগ কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
যাদের গরুর দুধে অ্যালার্জি আছে তাদের পনির এড়ানো উচিত। এটি অ্যালার্জি, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথার কারণ ও হতে পারে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (অতিরিক্ত পনির খাওয়া) কার্ডিওভাসকুলার রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
পনিরের স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ও রয়েছে। যেমন,
কিছু লোকের দুধের প্রোটিন যেমন কেসিনে অ্যালার্জি থাকে। এটি সারা শরীর জুড়ে একটি প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং ত্বকে ফুসকুড়ি, সাইনাস কনজেশন এবং ব্রণ জ্বলতে পারে।
অনেকের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা থাকে। সেক্ষেত্রে তাদের পনির না খাওয়াই শ্রেয়। কারণ ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা গ্যাস, পেট ফোলাভাব এবং ডায়রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। অনেক সময় এর কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে।
প্রচুর পরিমাণে পনির খাওয়ার ফলে মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথা হতে পারে। পুরনো পনিরে থাকা টাইরামিন উপাদান কিছু ব্যক্তির মধ্যে মাইগ্রেনকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
যারা মোনোমাইন অক্সিডেস ইনহিবিটরস (MOIs) গ্রহণ করছেন তাদের পনির খাওয়া এড়ানো উচিত। এই ওষুধগুলি হতাশার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এসব ওষুধ পুরনো বা বয়স্ক পনিরে থাকা উপাদান টাইরামিনের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
ঠান্ডা-সর্দি-কাশির সমস্যায়, মেদ কামনো, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, বিভিন্ন সংক্রমণ রুখতে মধু খুবই উপকারী। এর পাশাপাশি মধু কিছুটা অ্যান্টিসেপ্টিকেরও কাজ করে। বাজারে এখন নানা রঙের মোড়কে মধু পাওয়া গেলেও বহু নামী কোম্পানির মধুতেও ভেজাল থাকে। তাহলে খাঁটি মধু চিনবেন কী করে? কয়েকটি সাধারণ পদ্ধতিতেই বোঝা যায় মধু খাঁটি না কি ভেজাল মেশানো। দেখে নিন, খাঁটি মধু চিনে নেওয়ার কিছু উপায়।
- এক গ্লাস পানিতে এক চামচ মধু দিন। তার পরে গ্লাসটি আস্তে আস্তে নাড়াতে থাকুন। মধু যদি খাঁটি হয় তবে এটি গোলকার পিণ্ডের মতো হয়ে গ্লাসের নিচে বসে যাবে এবং পানির সঙ্গে মিশবে না। তবে মধু যদি পানির সঙ্গে তাড়াতাড়ি মিশে যায়, তা হলে সেটি নকল।
- এক টুকরো কাগজের ওপর কয়েক ফোঁটা মধু দিন। খাঁটি মধু হলে তা ছড়িয়ে পড়বে না এবং কাগজে শোষিত হবে না। এক জায়গায় অক্ষত থাকবে। এতে কাগজ হালকা চটচটে হয়ে যেতে পারে। তবে মধু যদি খাঁটি না হয়, তাহলে তা দ্রুত কাগজ শুষে নেবে এবং কাগজে ভেজা দাগ পড়ে যাবে।
- মধু খাঁটি কিনা তা পরীক্ষা করতে, আপনার বুড়ো আঙুলে এক ফোঁটা মধু নিন। যদি খুব চটচট করে এবং আঠালো মনে হয়, তবে সেই মধু খাঁটি। তবে মধু যদি পানির মতো লাগে, তাহলে তা নকল।
- খাঁটি মধুতে খুব মিষ্টি এবং মনোরম সুগন্ধ রয়েছে। অল্প পরিমাণে মধু মুখে দিয়ে দেখুন, যদি তাতে ফুল বা ফলের মতো মিষ্টি গন্ধ থাকে, তবে তা খাঁটি। আর মধু ভেজাল হলে তার স্বাদ অতিরিক্ত মিষ্টি হতে পারে, অথবা মধুতে আরও কিছু উপাদান থাকার কারণে তার স্বাদ কম হতে পারে।
- মধু খাঁটি অথবা নকল কি না, তা বোঝার আরও এক সহজ রাস্তা হল, মধুতে ফেনা হচ্ছে কি না সেটা দেখা। যদি খুব ফেনা হয় তাহলে তাতে ভেজাল মেশানো।
- মোমবাতির সলতে মধুতে ডুবিয়ে সেটা জ্বালানোর চেষ্টা করুন। যদি তা জ্বালাতে সক্ষম হন, তা হলে বুঝবেন এই মধু খাঁটি। আর যদি মোমবাতি না জ্বলে, তাহলে সেই মধুতে ভেজাল রয়েছে।
- এক টুকরো পরিষ্কার সাদা কাপড়ে কয়েক ফোঁটা মধু ফেলে অপেক্ষা করুন খানিকক্ষণ। তারপর পানি দিয়ে তা ধুয়ে ফেলুন। যদি মধুর দাগ একেবারে উঠে যায়, তবে সেই মধু একেবারেই খাঁটি নয়। কারণ মধুর দাগ সহজে যায় না।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।