
উজানের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জ ও জামালপুরে যমুনার পানি বাড়ছে। দুই জেলায় যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। অন্যদিকে কুড়িগ্রামে নতুন করে ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়তে শুরু করেছে। তবে তিস্তা, দুধকুমার ও ধরলার পানি কমলেও বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ তিন জেলায় নদীর পানি বাড়তে থাকায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে ফসলের ক্ষেত। জামালপুরে বন্ধ হয়ে গেছে ২৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান।
আমাদের সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ৯ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে প্রতিদিনই জেলার অধিকাংশ নিচু এলাকা বন্যার পানিতে ডুবছে। অনেক বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট ও আবাদি জমি বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় শাকসবজি, বীজতলা ও রোপা আমন ধানের জমি বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রঞ্জিত কুমার সরকার এ বিষয়ে বলেন, পানি বাড়লেও এ মুহূর্তে বড় বন্যার আশঙ্কা নেই।
এলাকাবাসী জানায়, যমুনার পানি বাড়ায় করতোয়া, ইছামতী, বড়াল, ফুলজোড় ও হুড়াসাগর নদীর পানি বেড়েছে। এ কারণে জেলার পাঁচটি উপজেলার প্রায় ৪২টি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের নিচু জমি ডুবে গেছে। অনেক বাড়িঘরেও পানি উঠতে শুরু করেছে। নিচু রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। চৌহালী উপজেলার ১ হাজার ১৫টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কাওয়াকোলা, মেছড়া, কালিয়া হরিপুর, সয়দাবাদ ইউনিয়নের বন্যাকবলিত মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। শাহজাদপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ গো-চারণভূমি ও ঘাসের জমি বন্যার পানিতে ডুরে যাওয়ায় গো-খামারি ও গবাদি পশু পালনকারীরা চরম গো-খাদ্য সংকটে পড়েছে।
জামালপুর সংবাদদাতা জানান, জেলার দেওয়ানগঞ্জ, বকশিগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলার যমুনা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ইসলামপুর উপজেলার ২৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে পড়েছে। ওই সব উপজেলায় যমুনা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ১৩২৮ হেক্টর ফসলি জমি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ইসলামপুর উপজেলার দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা ও ২৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বন্যার কারণে ইসলামপুর উপজেলায় চিনাডুলী উচ্চ বিদ্যালয়, সাপধরী উচ্চ বিদ্যালয় ও সাপধরী মাদ্রাসাসহ ওই উপজেলার ২৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, পানি কমলেও ধরলা বিপদসীমার খুব কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে আর তিস্তা নদীর পানি গত ছয় দিন থেকে বিপদসীমার ওপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিকেল ৩টার দেওয়া তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুন খাওয়া পয়েন্টে বেড়ে বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে বেড়ে বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার, ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে কমে বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার, দুধকুমার পাটেশ্বরী পয়েন্টে কমে বিপদসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে কমে বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ৫ হাজার ৩২৮ হেক্টর জমির আমনক্ষেত, ৬৭ হেক্টর জমির বীজতলা ও ২৮৮ হেক্টর জমির বিভিন্ন শাকসবজি।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, ৩৬২ টন চাল, ৫ লাখ টাকা ও ৩ হাজার ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার উপজেলাভিত্তিক চাহিদামতো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
রাজধানীতে বাসাভাড়া পেতে ভোগান্তিতে পড়েন ব্যাচেলর শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীরা। সমস্যাটি অনেক দিনের। এখন ব্যাচেলরদের বাসা পাওয়া নিয়ে নতুন ভোগান্তি ‘তৃতীয় পক্ষ’ বা থার্ড ফ্যাক্টর।
ঢাকা ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী অন্তর এমন একজন ভুক্তভোগী। স্নাতক সম্পন্ন করে কয়েক বছর ধরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মেসে সিটভাড়ায় থাকছেন। তিন বছরে ঢাকার মেসে থাকার তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে তার। এলাকা অনুযায়ী মেসের নিয়ম একেক রকম। তবে সব নিয়মেই একটি কমন ফ্যাক্টর আছে। কম টাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে চক্রাকারে বাড়তি ভাড়া আদায় করা মেসওয়ালাদের লক্ষ্য। অন্তরকে প্রতি মাসেই ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়েছে। মাসের গড় হিসাবে তিন বছরে অন্তত সাড়ে ২১ হাজার টাকা বাড়তি দিয়ে মেসে থাকতে হয়েছে তাকে।
জানা গেছে, এলাকাভেদে একটি ফ্ল্যাট কয়েক হাত বদল হয়ে শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীরদের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়। প্রথম পক্ষ বাড়ির মালিক। তারা দ্বিতীয় পক্ষকে নির্ধারিত হারে ফ্ল্যাট ভাড়া দেন। দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা লাভে তৃতীয় পক্ষের কাছে ভাড়া দেন দ্বিতীয় পক্ষ। ব্যাচেলরদের কাছ থেকে রুমের ভাড়া ২ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা এবং সিটপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি আদায় করে ফ্ল্যাট ভাড়া নেয় তৃতীয় পক্ষ। এ ব্যাপারে মালিকরা কিছুই জানেন না বলে তাদের দাবি।
রাজধানীর মেসভাড়া বিড়ম্বনা নিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী অন্তর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঢাকায় ব্যাচেলর-রুম পাওয়া যে কতটা কষ্টের তা একমাত্র ভুক্তভোগীই জানেন। জানা থাকা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়ায় সিট অথবা রুম নিতে হয়েছে। মূল ভাড়ার বাইরে গত তিন বছরে ২০ হাজার টাকার বেশি বাড়িভাড়া দিয়েছি। ব্যাচেলরদের প্রতি বাড়িওয়ালাদের বিরূপ ধারণা এবং নির্দিষ্ট নিয়ম না থাকায় ভুগেছি আমরা। এ শহরে ব্যাচেলর-পরিচয় বড় অপরাধ। সিটি করপোরেশনের এলাকাভিত্তিক বাড়িভাড়ার নিয়ম আছে কি না আমার জানা নেই। সিটি করপোরেশনের ডিজিটাল বাড়িভাড়া পদ্ধতি এবং এলাকাভিত্তিক ভাড়া নির্ধারণ করা এখন সময়ের দাবি। শুধু আইন করলেই হবে না। সে আইন জনসাধারণকে জানাতে হবে এবং আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
স্কিল ডেভেলপমেন্ট এবং ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ভর্তি কোচিং প্রভৃতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজধানীর মহাখালী, ফার্মগেট, ধানম-ি, নীলক্ষেত ও মিরপুর এলাকায় অবস্থিত। কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়পড়া ব্যাচেলর শিক্ষার্থীরা সাধারণত এসব এলাকায় থাকেন। এ সুযোগে তাদের কাছ থেকে প্রতি মাসে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
ঘনবসতিপূর্ণ মহাখালীর এক বাসা থেকে আরেক বাসা এত কাছে যে, জানালা দিয়ে উঁকি মারলে পরস্পরকে দেখা যায়, খুব কাছের মনে হয়। এ এলাকায় সরকারি তিতুমীর কলেজ ও বেসরকারি ব্র্যাক বিশ^বিদ্যালয়। তাই বাসার চাহিদা বেশি সব শ্রেণির শিক্ষার্থীর কাছেই। তবে ভাড়ানৈরাজ্য সৃষ্টিকারী তৃতীয় পক্ষের কারণে ফ্ল্যাটে/মেসে থাকা রীতিমতো একটা যন্ত্রণার নাম।
আল-মামুন নামের তিতুমীর কলেজের এমএ শেষ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘তিতুমীর কলেজে ভর্তি হই ২০১৬ সালের শেষের দিকে। সে সময় ক্যাম্পাসে হলে থাকায় বাইরের বাসাভাড়া নিয়ে যে প্রতারণা হয় তা জানতাম না। করোনার পরে ২০২১ সালে মেসে থাকতে শুরু করি। প্রথম বছর প্রতি মাসে অতিরিক্ত ৭০০ টাকা সিটভাড়া দিচ্ছিলাম। এ হিসাবে আমাদের ফ্ল্যাটের ভাড়া পড়েছে প্রায় ৩২ হাজার টাকা। পরে জেনেছি, বাসার ভাড়া মাত্র ২৩ হাজার টাকা নিচ্ছে বাড়ির মালিক। তখনই মেসের পরিচালকের সঙ্গে আমাদের ঝামেলা হয়। বিষয়টি বাড়ির মালিক যেন জানতে না পারেন সেজন্য পরিচালক বাসা ছেড়ে দেন। বছরে প্রায় ৮ হাজার টাকা বেশি ভাড়া গুনতে হয়েছে আমাকে।’
বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১ রয়েছে। প্রচারের অভাবে বাড়ির মালিক বা ভাড়াটিয়া কেউ আইনটি সম্পর্কে অবহিত নন। বাড়ির মালিকরা জানলেও স্বীকার করেন না। ভাড়ানৈরাজ্য রোধে আইনের ৭ ধারায় বলা হয়েছে, বাড়িভাড়া বাবদ ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা যাবে না। বাস্তবতা ভিন্ন। কোথাও কোথাও কয়েকগুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
মহাখালী ও মিরপুর ১০ নম্বর এলাকার ব্যাচেলর শিক্ষার্থীদের বাসাভাড়া বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মহাখালী এলাকার চেয়ে মিরপুর এলাকার বাসাভাড়া কিছুটা কম। মহাখালী এলাকায় ৩ রুমের একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করতে অধিকাংশ মালিককে ১৭ থেকে ২০ হাজার টাকা দিতে হয়। এর বাইরে বিদ্যুৎবিল ১২০০ থেকে ১৬০০ টাকা, গ্যাসবিল ১০৮০ ও পানির বিল ১০০০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ৩ রুম ও এক ড্রইংরুমের একটি ফ্ল্যাটের ভাড়া ২১ হাজার থেকে ২৩ হাজার ৭০০ টাকা। ইউটিলিটি বিলসহ মিরপুর এলাকায় ফ্ল্যাট বেশ কম ভাড়ায় পান ব্যাচেলর শিক্ষার্থীরা।
মিরপুরে মহাখালীর চিত্র নতুন রূপে প্রকাশ পাচ্ছে। মিরপুর ১০ নম্বর আবাসিক এলাকার ৬ তলা নয়ন ভিলার ৪ তলায় ব্যাচেলর শিক্ষার্থীরা থাকেন। সি ব্লকের ৩ রুমের ফ্ল্যাটটিতে থাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। সিটপ্রতি ৩ হাজার টাকা করে মোট ২৪ হাজার টাকা আদায় করছে তৃতীয় পক্ষ। অথচ মালিক বাড়িভাড়া পান ১৭ হাজার টাকা।
ব্যাচেলর মেসগুলোতে মধ্যস্বত্বভোগীদের বিষয়ে বাড়ির মালিকরা বলেন, ঢাকায় বাড়ির মালিক হওয়া যেমন ভাগ্যের তেমনি ভোগান্তিরও। নানা ঝামেলার মুখে পড়তে হয়। মালিকরাই কেবল তা টের পান। তবে অধিকাংশ মালিক বাড়িভাড়ার ব্যাপারে মধ্যস্বত্বভোগীদের বিষয়ে জানেন না।
মিরপুর ১০ নম্বর আবাসিক এলাকার বাড়ির মালিক সরদার আরিফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটি নির্ধারিত হারে বাসাভাড়া দিয়েছি। যার কাছে ভাড়া নিয়ে চুক্তি হয়েছে কেবল তার সঙ্গে আমার লেনদেন হয়। তবে যাকে ভাড়া দিয়েছি তিনি বা ওই ফ্ল্যাটে থাকা কোনো ভাড়াটিয়া আজ পর্যন্ত এ ব্যাপারে অভিযোগ দেননি। যাকে ভাড়া দিয়েছি তিনি অন্য কাউকে ভাড়া দিয়ে অপরাধ না করলে আমার আপত্তি নেই। আমি নির্ধারিত ভাড়া পেলেই খুশি।’
মহাখালী ওয়্যারলেস গেটের ‘ছ’ ব্লকের বাড়ির মালিক মাহবুব আলম দেশ রূপান্তরকে প্রায় একই কথা জানান। তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয় আমাদের নজরে আসেনি। যে ছেলেটি ভাড়া নিচ্ছে তার পক্ষ থেকেই ভাড়ার বা অন্যান্য অনুষঙ্গিক বিষয়ে আমাদের যোগাযোগ হয়। বাড়িওয়ালা হিসেবে আমরা সব সময় চাই, বাসাভাড়া দেওয়ার পরে যেন কোনো ঝামেলা না হয়। এখন পর্যন্ত কেউ আমাদের অভিযোগ জানাননি। জানালে সমাধানের পথে হাঁটতে পারি। আমরা চাই না কেউ জুলুমের শিকার হোক।’
ভাড়াটিয়া ঐক্য পরিষদের সভাপতি মো. আশরাফ আলী হাওলাদার বলেন, ‘বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১ অনুযায়ী এটি একেবারে নিষিদ্ধ। কেউ করে থাকলে তা অবৈধ। বাড়ির মালিক যেমন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে পারেন না ভাড়াটিয়াও তেমন ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে দ্বিতীয় বা তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিতে পারেন না।’
তিনি বলেন, ‘মেসবাণিজ্যের বিষয়টি আমরা শুনিনি। তবে কেউ অভিযোগ করলে আমরা তা নিয়ে কথা বলতে পারি। বাড়ির মালিকদের সতর্ক হতে হবে। নাহলে এই ‘তৃতীয় পক্ষ’ থেকে শিক্ষার্থী ও ব্যাচেলররা রেহাই পাবেন না।’
বাংলাদেশের লোকসাহিত্য আয়নার মতো স্বচ্ছ। এতে প্রতিফলিত হয়েছে বিভিন্ন অঞ্চলের আশা-আকাক্সক্ষা, ধ্যান-ধারণা, সাহিত্য-সংস্কৃতি, বিভিন্ন আচার, অনুষ্ঠান ও ধাঁধা। যাতে বিধৃত হয়েছে সামগ্রিকভাবে লোকায়ত বাংলাদেশের মানস চিত্র।
লোকসাহিত্যে ধাঁধা বহু প্রাচীন। নৃ-তাত্ত্বিকদের মতে, আদিম অধিবাসী থেকে শুরু করে বর্তমান শতাব্দী পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ধাঁধার প্রচলন আছে। বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে ধাঁধার বিকাশ ঘটেছে মঙ্গলকাব্যের ভেতর দিয়ে। বাংলাদেশের ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে তার ভিন্নতা দেখা যায়। লোকসাহিত্যের দৃষ্টিকোণ থেকে এসব ধাঁধা সে অঞ্চলের সজীব প্রাণের সরল ও জীবন্ত উৎস।
নোয়াখালী অঞ্চলের হাটঘাট, প্রান্তর, আর গ্রামগঞ্জ ভরে আছে লোকসাহিত্যের নানা ধাঁধায়। এ অঞ্চলের মানুষের মনে আজও কচিৎ-কদাচিৎ আকাশে বিদ্যুৎ চমকানোর মতো এসব ধাঁধা জ্বলে ওঠে। কোনো বিবাহ অনুষ্ঠানে, গ্রামীণ বৈঠক আর মজলিসে মানুষের মুখে শোনা যায়। নোয়াখালীর গ্রামের মানুষ আজও ধাঁধার মাধ্যমে তাদের অঞ্চলের সংস্কৃতি টিকিয়ে রেখেছে, বিস্মৃতির অতলে ডুবিয়ে দেয়নি।
নোয়াখালী অঞ্চলের ধাঁধা বাংলা লোকসাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। এর স্বাধীন সত্তাটি লোকশ্রুতিবিদের কাছে স্বীকৃত। এ অঞ্চলের ধাঁধা সরস, অন্তর্নিহিত পরিচয় অপ্রত্যক্ষ হলেও বুদ্ধিগম্য। স্থানীয় ভাষায় বলেÑ শোল্লক।
‘বসলে চন্দ ছেঁচলে কড়ি।
এই শোল্লকগা ভাঙ্গাই দিতে
দোয়াদশ ঘড়ি।’
এর মানে হলো মরিচ।
ওই অঞ্চলের আরেকটি বহুপ্রচলিত ধাঁধা
‘জল কুমকুম হানিত ভাসে।
আড্ডি নাই তার মাংস আছে।’
এই ধাঁধাটির উত্তর হলো জোঁক।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো এ অঞ্চলের ধাঁধার সন্ধান মেলে আনুষ্ঠানিক ধাঁধা জিজ্ঞাসার আদলে। যেমন :
‘গাছ গা কালা ফুল গা ধলা
গাছের নাম রক্তমালা’
এর মানে হলো মোস্তাক (পাটিবেত)।
নোয়াখালীর বিভিন্ন স্থানে প্রচলিত ধাঁধার শব্দপ্রয়োগ, উপমা, উৎপ্রেক্ষা, রূপক ও চরণ বিন্যাসে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। যেমন :
‘ওরে ভাই চুড়িয়াক মনা,
গাছের আগায় হৈল হোনা।’
এই ধাঁধার অর্থ হলো খেজুর।
ফেনী থেকে সংগৃহীত একটি ধাঁধা আছে :
‘এক বৈরাগীর এগার ছেলে
চার ছেলে তার কাতুর কুতুর
চার ছেলে তার ঘি মধুর
দুই ছেলে তার সেগুন কাঠ
এক ছেলে তার পাগল নাথ।’
এর ধাঁধায় বোঝাচ্ছে গাই বা গাভী
প্রচলিত কতকগুলো ধাঁধার মধ্যে প্রচ্ছন্ন গল্প লুকিয়ে থাকে। বাস্তব উপলব্ধি, পরিবেশ ও অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে লতিয়ে উঠেছে এসব ধাঁধা। এর গল্পের ভেতর একদিকে যেমন থাকে লুকানো সংস্কার, রসিকতা, তেমনি থাকে বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতার মারপ্যাঁচ। এই দুইয়ে মিলে প্রত্যেকটি গল্পমূলক ধাঁধাই স্বকীয়তায় উজ্জ্বল আর হাস্যরসিকতায় ভরপুর। যেমন : এ অঞ্চলে প্রচলিত গোঁসা গানের মধ্যে কিছু শোল্লক প্রতিপক্ষের সামনে উত্তরের জন্য হাজির করা হয়। সে রকম একটি ধাঁধা
‘উরু উরু বুরু বুরু রমণী দেখায় না তার উরু
রমণী দেখায় না তার লজ্জার কারণ!
রমণীরে দেখে সে করিল গ্রহণ।
রমণীকে ধরে যে করল লন্ড ভন্ড ।
তাহা হতে মুক্তি পেতে লাগে দোয়াদশ দন্ড।’
এই ধাঁধার উত্তর হলো বাডিয়া, নিলুজী, চোরকাঁটা বা প্রেমকাঁটা।
এভাবে নিসর্গ, জীবজন্তু, নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র প্রভৃতি জানা বস্তুকে অজানার মতো করে উপস্থাপিত অনেক শোল্লক আজও টিকে আছে।
ধাঁধার কোনো সুস্পষ্ট রূপরেখা নেই। ধাঁধা কখনো গদ্য, অমিত্রাক্ষর পদ্য বা যেকোনো রূপেই ধাঁধা রচিত হতে পারে। ধাঁধার বিষয়বস্তু প্রাকৃতিক, গার্হস্থ্য ও জীবনের ব্যবহারিক দিককে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে পারে। তবে ধাঁধার সবচেয়ে বড় কথা হলো ধাঁধার প্রচ্ছন্ন ভাব, ইঙ্গিত ও রসোজ্জ্বল চিত্র। এসবই ধাঁধার প্রাণ। ধাঁধার চিত্রধর্মীগুণই ধাঁধাকে সব সমাজে সবকালে আকর্ষণীয় ও চিত্তাকর্ষক করে তোলে।
নোয়াখালী অঞ্চলের সব ধাঁধায় এসব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। যাতে আমরা আমাদের পূর্ব পুরুষদের কথা মনে করতে পারি।
গাজীপুরের শ্রীপুরে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভাঙচুর ও গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যের অনুসারী ছাত্রলীগ ও যুবলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে পৌরশহরের মাওনা চৌরাস্তা ও মাওনা বাজার আঞ্চলিক সড়কের প্রশিকা মোড়ের ফায়ার সার্ভিস স্টেশন এলাকায় এ গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ কটি ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। এতে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা। তবে পুলিশ বলছে, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছে।
এদিকে বুধবার রাতে মাওনার গোলাগুলি ও ভাঙচুরের ঘটনায় গতকাল দুপুরে দুজনকে আটক করা হয়েছে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও থানা-পুলিশের যৌথ অভিযান চালিয়ে মাওনা চৌরাস্তা থেকে তাদের আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন মো. হৃদয় শেখ (২৩)। সে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক নাছির মোড়লের অনুসারী। অন্যদিকে আটক শিহাব হাসান (২৫) ছাত্রলীগ কর্মী ও আজিজুর রহমান জনের অনুসারী।
এ ঘটনায় বিকেলে দুপক্ষই থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে। তবে এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা গ্রহণ করেনি পুলিশ। পুলিশ বলছে, তদন্ত করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক নাছির মোড়ল ও স্বঘোষিত জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সদস্য আজিজুর রহমান জনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে বেশ কিছুদিন ধরেই। এর জের ধরেই এ গুলির ঘটনা ঘটেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাজীপুর জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সদস্য (স্বঘোষিত) আজিজুর রহমান জন তার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিল বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও গাড়ি নিয়ে। এ সময় তার সঙ্গে অস্ত্রধারী বেশ কজন অনুসারীও ছিল। তখন জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক নাছির মোড়ল তার অনুসারীসহ যুবলীগ নেতা জনের বাসার সামনে তাদের মধ্যে একটি বিষয় নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে জনের লোকজন আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে প্রায় ২০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। মধ্যরাতে এমন মুহুর্মুহু গুলির শব্দে এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বেশ কিছুক্ষণ এ সড়কে বিভিন্ন যানবাহন আটকা পড়ে থাকে। তারা আরও জানান, কোনো একটি সাধারণ বিষয় নিয়ে আজিজুর রহমান জনের লোকজন আচমকা গুলি ছোড়তে থাকে। এ সময় বেশ কটি মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট গাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে। দুপক্ষের লোকজনের মধ্যে ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
এদিকে সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজে দেখা যায়, ১৫ থেকে ২০টি মোটরসাইকেলে উচ্চশব্দে হর্ন বাজিয়ে এসে তিনটি ব্যক্তিগত গাড়ির কাছে থামে। তারা লাঠিসোঁটা নিয়ে ওই গাড়িগুলোতে আচমকা ভাঙচুর চালায়। এরপর সেখানে বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলে মোটরসাইকেল ও গাড়ি ভাঙচুর।
আজিজুর রহমান জন দাবি করেন, ‘আমি আমাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমার লোকজন নিয়ে। এ সময় গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক নাছির মোড়ল ও তার অনুসারীরা এসে আচমকা এ হামলা চালায় আমাদের ওপর। এ সময় হামলাকারীরা বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছে।’ তিনি দাবি করেন, ‘আমার অনুসারী আল আমিন ও মইনুল আহত হয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়া ও বিভিন্ন সময় দাবি করা চাঁদা না দেওয়ায় তাদের ওপর হামলা করেছে নাছির মোড়লের লোকজন।
গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক নাছির মোড়ল অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘আজিজুর রহমান জনের লোকজন সন্ধ্যারাতে আমার ব্যক্তিগত গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে। পরে রাতে এ বিষয়ে জানতে তার বাড়ির সামনে গেলে তার লোকজন আচমকা আমাদের ওপর চড়াও হয়। এ সময় তাদের লোকজনই নিজেদের গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে। নিজেরাই নিজেদের গাড়ি ভাঙচুর করে ষড়যন্ত্র করছে আমাদের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
ঘটনাস্থলে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, আজিজুর রহমান জন এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। সে নিজেকে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সদস্য দাবি করে আধিপত্য বজায় রাখে। সে ভুয়া পরিচয় দিয়ে চলে এলাকায়। এ নিয়ে জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব চলে আসছে। তারা আরও বলেন, সে সময় আজিজুর রহমান জনের একান্ত অনুসারী রুবেল, আল আমীন, শিহাব, কাইয়ুম অন্ত্র উঁচিয়ে গুলি ছুড়েছে। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ফুটেজে স্পষ্ট চেহারা বোঝা যাচ্ছে ওদের। এমন স্পষ্ট ভিডিও থাকার পরও তারা ঘটনা অস্বীকার করছে। পুলিশ ভিডিও বিশ্লেষণ করলেই সব বের হয়ে আসবে।
শ্রীপুর উপজেলা যুবলীগ সভাপতি কমর উদ্দিন জানান, আজিজুর রহমান জন যুবলীগের কোনো পদে নেই। সে নিজেকে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সদস্য হিসেবে এলাকায় প্রচার করে তার আধিপত্য বিস্তারের জন্য। জেলা যুবলীগের পাঁচজন আহ্বায়ক সদস্য আছেন, তাদের আমি ভালো করে চিনি। জন নানা অপরাধ কর্মকা- নিয়ন্ত্রণে রাখতেই এ কৌশল অবলম্বন করে যুবলীগের পরিচয় দিয়ে চলে। এ ঘটনায় জড়িত দুজনই সংসদ সদস্যের একনিষ্ঠ অনুসারী বলে এলাকায় বেশ পরিচিত।
শ্রীপুর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যেই এ হামলা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করে। ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজ নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্লেষণ করছি ফুটেজ। সেখানে গোলাগুলির বিষয়টি আরও তদন্ত করে বলা যাবে।’
শিক্ষার্থীদের দাবি ও অ্যাকাডেমিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বর্ষে শিক্ষার্থীদের প্রমোশনের ক্ষেত্রে জিপিএ-সিজিপিএ শর্তে পরিবর্তন আনছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষদ এবং সাত কলেজ অভিন্ন নীতিতে চলবে। তবে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের তিন বিষয় পর্যন্ত অকৃতকার্যদের মানোন্নয়ন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমোশন দিতে নারাজ ঢাবি কর্র্তৃপক্ষ।
জানা যায়, গত ২৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটির সভায় জিপিএ-সিজিপিএ শর্তের বিষয়ে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষদে সর্বনিম্ন ২.০০ জিপিএ-সিজিপিএ পেলে পরবর্তী বর্ষে প্রমোশনের সুযোগ থাকবে। এ ছাড়া ২.২৫ করার আলোচনাও রয়েছে, যা বর্তমানে অনুষদ ও বর্ষভিত্তিক ভিন্ন রয়েছে। প্রস্তাবটি আরও পর্যালোচনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় উঠবে এবং সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ছাড়া গত মঙ্গলবার ঢাবির সিনেট ভবনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে ঢাবি ও কলেজ প্রশাসনের যৌথ বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে সাত কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধিরাও এ প্রস্তাবনা দেন। পরে সাত কলেজেও অভিন্ন নীতির বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাবির বিভিন্ন অনুষদে এক বর্ষ থেকে পরবর্তী বর্ষে প্রমোশনের জন্য সিজিপিএর বিভিন্ন শর্ত রয়েছে। কলা অনুষদের সব বর্ষেই প্রমোশনের জন্য সর্বনিম্ন ২.০০ পেতে হয়, বিজ্ঞান অনুষদে প্রথম থেকে তৃতীয় বর্ষে ২.০০ এবং অনার্স ডিগ্রিপ্রাপ্তির জন্য সিজিপিএ ২.৫০ পেতে হয়। বাণিজ্য অনুষদে প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে জিপিএ ২.০০, দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় বর্ষে ২.২৫ এবং চতুর্র্থ বর্ষ এবং ডিগ্রিপ্রাপ্তির জন্য সিজিপিএ ২.৫০ পেতে হয়। এ ছাড়া সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে জিপিএ ২.০০, দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় বর্ষে ২.২৫, তৃতীয় থেকে চতুর্থ বর্ষে ২.৫০ এবং অনার্স ডিগ্রি লাভের ক্ষেত্রে সিজিপিএ ২.২৫ পেতে হয়। প্রস্তাবনা চূড়ান্ত রূপ লাভ করলে সব অনুষের জন্য অভিন্ন নীতিমালা থাকবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষদের ডিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং সব অনুষদের শিক্ষার্থীরা যাতে সহজে পাস করে বের হতে পারে সেজন্য জিপিএ-সিজিপিএর শর্ত অভিন্ন এবং সহজ করা হচ্ছে। সব অনুষদে এটি ২.০০ কিংবা ২.২৫ করা হতে পারে। ডিনস কমিটির সভায় নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে পর্যালোচনা করা হবে এবং সিন্ডিকেটে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।
সিজিপিএ শর্ত শিথিল করে তিন বিষয় পর্যন্ত অকৃতকার্যদের মানোন্নয়ন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমোশন দেওয়ার দাবিতে কিছুদিন ধরে আন্দোলন করেছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট তারা। আন্দোলনের মাঠ থেকে পুরোপুরি সরে গেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে তিন বিষয় পর্যন্ত অকৃতকার্যদের মানোন্নয়নের সুযোগের জন্য অনুরোধ করেছেন তারা।
এ বিষয়ে সাত কলেজ আন্দোলনের সমন্বয়ক ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার মাহমুদ অপু দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের জন্য সিজিপিএ শর্ত শিথিল করার কথা জানিয়েছেন সাত কলেজের সমন্বয়ক। এটা আমাদের জন্য ভালো সিদ্ধান্ত। আমরা চাই এটা কার্যকর হোক। তবে তিন বিষয় মানোন্নয়নের সুযোগ চেয়েছিলাম কিন্তু সেটা নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দ্রুত ফল প্রকাশের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এ সমস্যাটা দূর হলে আমাদের অনেক কিছুর সমাধান হয়ে যাবে।
সাত কলেজের সমন্বয়ক ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য্য বলেন, সাত কলেজের বিজ্ঞান, বাণিজ্য এবং কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে এক বর্ষ থেকে পরবর্তী বর্ষে প্রমোশনের জন্য সিজিপিএর বিভিন্ন শর্ত ছিল। গতকালের মিটিংয়ে সাত কলেজের পক্ষ থেকে সব বর্ষে অভিন্ন সিজিপিএর প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। সেটি হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের সিজিপিএর অনুরূপ, যা প্রাথমিকভাবে সবার আলোচনার ভিত্তিতে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হিসেবে গৃহীত হয়েছে।
সাত কলেজের প্রধান সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমরা প্রমোশনের ক্ষেত্রে সিজিপিএ ২.০০ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন একেক অনুষদে একেক নিয়ম রয়েছে। ফেলের সংখ্যা বেড়ে গেছে, জরিমানা দেওয়া এসব ভোগান্তি। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে এগুলো বহুলাংশে কমে যাবে। সাত কলেজের জন্যও একই সিদ্ধান্ত থাকবে। তবে তিন বিষয় পর্যন্ত অকৃতকার্যদের মানোন্নয়ন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমোশনের সুযোগ নেই।
হবিগঞ্জের বাহুবল থানার সদ্য বিদায়ী ওসি রাকিবুল ইসলাম খান সরকারি অর্থে স্থাপিত যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) খুলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে তার বরাদ্দ এসেছিল গ্রামীণ আবকাঠামো উন্নয়নের (টিআর) বরাদ্দ থেকে। গতকাল হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) গাজী মোহাম্মদ শাহ নওয়াজ দেশ রূপান্তরকে নিজেই এ তথ্য জানিয়েছেন। টিআরের টাকায় এসব দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই স্বীকার করে তিনি বলেছেন, ওসি আবদার করেছিলেন বলেই তিনি এসি কেনার টাকা দিয়েছিলেন। এসি খুলে নিয়ে ওসি বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন।
ওসি রাকিবুল ইসলাম খান বদলি হওযার পর এসি খুলে নিয়ে যাওয়ার খবর গতকাল বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরে প্রকাশের পর উপজেলা জুড়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। টিআর এর অর্থ থানায় এসি কেনার জন্য এমপি বরাদ্দ দিতে পারেন কি না তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল এমপিকে প্রশ্ন করা হলে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ওসি সাহেব আবদার করেছিলেন বলে বাহুবল থানায় দুটি এসি দিয়েছিলাম। একটি ওসি অপরটি এএসপি (সার্কেল) অফিসে ব্যবহার করবেন। মনে করেছিলাম অফিসে বসে আরামে কাজ করবেন।’
টিআরের টাকায় এসব দেওয়ার কোনো সুযোগ আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একজন ওসি আবদার করলে তো না বলতে পারি না। তবে টিআরের টাকায় এসব দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টিআর কর্মসূচির আওতায় ১৯টি কাজে অর্থ ব্যয় করা যাবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, গ্রামীণ রাস্তা, বাঁধ, খাল, নালা সংস্কার ও সংরক্ষণ, বাঁশ বা কাঠের সাঁকো নির্মাণ, স্বল্প খরচে সাইক্লোন সহনীয় গৃহ নির্মাণ, মসজিদ, মন্দির, উপসনালয়ের মতো সামাজিক প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজারের উন্নয়ন বা সংস্কারের মতো কয়েকটি খাত।
বাহুবল প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তাজ উদ্দিন বলেন, প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ সংসদ সদস্য দিয়ে থাকেন। এগুলো জেলা থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর বাস্তবায়ন করা হয়। টিআর নীতিমালায় যাই থাকুক কোনটি অনুমোদন দেওয়া না দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের কিছু করার থাকে না।
তিনি জানান, তার যোগদানের আগে বাহুবল থানায় এসি স্থাপন করা হয়েছে। তার প্রকল্প চেয়ারম্যান ছিলেন বাহুবল সদর ইউপি মেম্বার সামায়ুন কবীর চৌধুরী।
এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন বলেন, টিআর, কাবিখা, কাবিটা ইত্যাদি গ্রামের সাধারণ মানুষের উপকারের জন্য। অথচ জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের স্বার্থের জন্য তা যাচ্ছেতাই ব্যবহার করছেন। বিষয়টি ভাবতেই কষ্ট হয়। পুলিশ প্রশাসনও বিলাসিতার জন্য এ ধরনের আবদার কীভাবে করে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। বিষয়টির ভালো তদন্ত হওয়া উচিত।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নবীগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী বলেন, টিআরের অর্থ দিয়ে বাহুবল থানায় এসি দিয়ে আইনত ঠিক করেননি এমপি মহোদয়।
বাহুবল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবুল খয়ের বলেন, এমপি সাহেব বাহুবল থানায় দুটি এসি দিয়েছিলেন। এর একটি আমার সরকারি কোয়ার্টারে আছে। ওসি সাহেব রুমে লাগানোর এনটাইটেল নেই। তাই সেটিও তার বাসায় লাগিয়েছিলেন। এখন কোথায় আছে জানি না। আর এমপি সাহেব সরকারি না ব্যক্তিগত অর্থে দিয়েছেন সেটা আমার জানা নেই।
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের জামালপুর ইউনিয়নের শ্রীকলা গ্রামে মায়ের সঙ্গে নানার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল দেড় বছরের রুহান। গত মঙ্গলবার বাড়ির উঠানে খেলা করছিল শিশুটি। পরে বাড়িতে না দেখে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে তাকে পাশের পুকুরে ভাসতে দেখেন স্বজনরা। পুকুর থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রুহানকে মৃত ঘোষণা করেন।
একইদিন হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের আউশকান্দি ইউনিয়নের সদরাবাদ গ্রামে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তারা হলো সদরাবা গ্রামের মালেক মিয়ার ছেলে ইকবাল হোসেন, বাবুল হোসেনের ছেলে রাফি আহমেদ। পরিবারের সদস্যদের অগোচরে বাড়ির পাশের পুকুরে গোসল করতে নেমে তলিয়ে যায় ইকবাল ও রাফি। খোঁজখুঁজির একপর্যায়ে পুকুরে তাদের লাশ দেখতে পান স্বজনরা।
দেশে কোনো না কোনো প্রান্তে প্রতিদিনই এরকম ঘটনা ঘটছে। গত এক মাসে তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা একশর বেশি। চলতি বছর জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬১।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো দুর্ঘটনার মধ্যে পানিতে ডুবে মৃত্যু তালিকার প্রথম দিকেই থাকবে। এটি একটি অবহেলাজনিত জাতীয় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাস্থ্য ও তথ্য জরিপ ২০১৬ অনুযায়ী, বছরে ১ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১৪ হাজার ৪৩৮ শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এ সংখ্যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। এসব মৃত্যুর ৮৮ শতাংশই বাড়ি থেকে ২০ মিটারের মধ্যে ঘটে। পানিতে ডোবার ঘটনা বেশি ঘটে মিঠাপানিতে, যেমন বাড়ির পাশের পুকুর-দীঘি-ডোবায়। খেলতে খেলতে কিংবা গ্রামাঞ্চলে হাত-মুখ ধুতে গিয়েও পানিতে ডুবে মৃত্যুর অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। আবার কখন ডুবে যাওয়া শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে একই সঙ্গে দুজন বা তারও বেশি মৃত্যুর ঘটনাও আছে। এ ছাড়া নদী বা খালে ডুবেও মৃত্যুর ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে।
দেশে দীর্ঘদিন ধরে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু নিয়ে কাজ করছে গণমাধ্যম উন্নয়ন ও যোগাযোগবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘সমষ্টি’। সংবাদপত্রে প্রকাশিত পানিতে ডুবে মৃত্যুর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তারা। সংগঠনটির হিসাবে, ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত পানিতে ডুবে ৩ হাজার ৮৪৬ জন মারা গেছে। এর ৮৮ শতাংশই ৫-৯ বছর বয়সী শিশু।
প্রতিষ্ঠানটির তথ্য বলছে, ২০২০ সালে মৃত্যু হয়েছিল ৮০৭ জনের। এর মধ্যে ৫ বছরের শিশু রয়েছে ২৬০টি। এর পরেই আছে ৫-৯ বছর বয়সী ২৮৭, ১০-১৪ বছর বয়সী ১০৬, ১৫-১৮ বছর বয়সী ৩০ জন। আর ১৮ বছরের বেশি বয়সী ১৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০২১ সালে মৃত্যু ছিল প্রায় দ্বিগুণ। ওই বছর পানিতে ডুবে মারা গেছে ১ হাজার ৩৪৮ জন। এর মধ্যে অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সী শিশুমৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৫৯৭। তার পরেই আছে ৫-৯ বয়সী ৩৮৭, ১০-১৪ বছর বয়সী ১০৬ ও ১৫-১৮ বছর বয়সী ৪৩ জন। এ ছাড়া ১৮ বছরের বেশি বয়সী তরুণ মারা গেছে ২১৫ জন।
২০২২ সালে মারা গেছে ১ হাজার ১৩০ জন। এ সময় অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সী শিশু মারা গেছে ৫৬৬ জন, যা মোট মৃত্যুর প্রায় অর্ধেক। অন্যদিকে ৫-৯ বছর বয়সী শিশু মারা গেছে ৩৬৩ জন। এরপরই ১০-১৪ বছর বয়সী ৯৩, ১৫-১৮ বছর বয়সী ৩৮ ও ১৮ বছরের বেশি বয়সী ৬৭ জন মারা গেছে।
২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে দেশে পানিতে ডুবে মারা গেছে ৫৬১ জন। এর মধ্যে ২৯০ জনের বয়স ছিল ৫ বছরের মধ্যে। ৫-৯ বছর বয়সী শিশু মারা গেছে ১৯৪ জন। ১০-১৪ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা ৪৮। ১৫-১৮ বছর বয়সী রয়েছে ৯ জন। এ ছাড়া ১৮ বছরের বেশি বয়সী মারা গেছে ১৩ জন।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের সব বিভাগেই পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার প্রায় কাছাকাছি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় চট্টগ্রাম বিভাগে। এরপরের অবস্থান ঢাকা বিভাগের। এ বিভাগে রাজধানী ঢাকাসহ প্রতিটি জেলায় গড়ে ৪০ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
বছর জুড়ে পানিতে ডুবে শিশু মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটলেও সাধারণত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যায়। এ সময় বর্ষার কারণে পুকুর, খাল-বিল ও নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার ফলে শিশুমৃত্যুর ঘটনা বেশি ঘটে। পানির উৎস বাড়ির যত কাছাকাছি থাকে, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি ততই বেড়ে যায়।
পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু নিয়ে ‘সমষ্টি’র পরিচালক মীর মাসরুর জামান রনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় আমরা যে তথ্য পাই সেখান থেকে এ প্রতিবেদন তৈরি করা। বাস্তবে চিত্র আরও ভয়াবহ। মাত্র ২৫ শতাংশ মৃত্যুর সংবাদ আমরা পেয়ে থাকি।’
তিনি বলেন, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর একটি বড় কারণ হচ্ছে পারিবারিক অসচেতনতা ও অবহেলা। শুধু বড় জলাশয় বা পুকুরে ডুবে মৃত্যু হয় বিষয়টা এমন নয়। অনেক সময় বালতির পানিতে ডুবেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ দুর্ঘটনাগুলো ঘটে থাকে পরিবার বা বাবা-মায়ের অসচেতনতার কারণে। ছয় বছরের বেশি বয়সী একটি শিশুর মৃত্যু হয় পানিতে ডুবে। অথচ এ বয়সের শিশুদের সাঁতার শেখানোর কথা। যদি তারা সাঁতার জানত তাহলে এ মৃত্যু অনেকাংশে কমে আসত।
বাংলাদেশ সরকার ২০১১ সালের স্বাস্থ্যনীতিতে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুকে একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। শিশু নিরাপত্তায় পাইলট প্রকল্পে পানিতে ডুবে মৃত্যুও বিবেচনা করলেও সরকারের বাস্তবায়িত প্রকল্প এখনো সীমিত। গত বছর সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশুযতœ কেন্দ্রের মাধ্যমে ‘শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং শিশুর সাঁতার সুবিধা প্রদান’ নামে কর্মসূচি নিয়েছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে ২৭১ কোটি ৮২ লাখ ৫৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘ইনটেগ্রেটেড কমিউনিটি বেইজড সেন্টার ফর চাইল্ড কেয়ার, প্রটেকশন অ্যান্ড সুইম-সেইফ ফ্যাসিলিটিজ’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সারা দেশে ১৬টি জেলার ৪৫টি উপজেলায় আট হাজার শিশুযত্ন কেন্দ্র পরিচালনা করা হবে। এসব যতœকেন্দ্রে কাজ পাবে ১৬ হাজার গ্রামীণ নারী। প্রতিটি যতœকেন্দ্রে ২৫ শিশুকে ভর্তি করা হবে। একই সঙ্গে ৬-১০ বছর বয়সী শিশুদের সাঁতার শেখানো হবে।
মীর মাসরুর জামান বলেন, ‘শিশুমৃত্যু ঠেকাতে হলে শহর থেকে গ্রামপর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সেখানে প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি অথবা কমিউনিটির নেতাদেরও কাজে লাগানো যেতে পারে।’
তিনি বলেন, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু কমানোকে গুরুত্ব দিয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমির অধীনে প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। যদিও এসব প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে বেশিদিন হয়নি। প্রয়োজনে এ ধরনের প্রকল্পকে সরকারীকরণ করতে হবে।
শিশু-কিশোর সংগঠক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদীর বাইরেও খাল-বিল, জলা, ডোবা-পুকুর এখন যথেষ্ট রয়েছে। ফলে পানির সঙ্গে এ দেশের মানুষের মিলেমিশে বসবাস করতে হবে। এজন্য সাঁতার শেখার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে স্কুলের কারিকুলামের মধ্যেই থাকবে সাঁতার শেখা।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার একটা কথা বলি, আনন্দের মধ্যে এবং চারপাশের চেনা প্রতিবেশ ও পরিবেশের মধ্যে দিয়েই শিশুকে শিক্ষা দিতে হবে।’
ডা. লেলিন বলেন, ‘একটি শিশু যখন স্কুলে গেল সেখানেই সাঁতার শেখানো সম্ভব। কারণ দেশের সব জায়াগায় সাঁতার শেখানোর যথেষ্ট উপকরণ রয়েছে। এ ছাড়া যেসব মহানগর বা শহরে সাঁতার শেখানোর জায়গার অপ্রতুলতা রয়েছে, সেসব জায়গায়ও বিশেষ ব্যবস্থায় সাঁতার শেখানোর ব্যবস্থা করতে পারে। প্রাথমিক জীবনের অঙ্গ হিসেবে শিক্ষার শুরু থেকেই সাঁতার শেখানোটা বাধ্যতামূলক করলে এ সমস্যার বড় অংশ সমাধান করা যাবে। দ্বিতীয়ত অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। যেসব জায়গায় ছোট শিশু রয়েছে সেখানে জলাধারগুলোকে চারপাশে ঘেরাও দিতে হবে। যেন শিশু বাইরে থাকলেও সুরক্ষিত থাকে। এ ছাড়া সরকারকে এ বিষয়ে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। যে প্রকল্পগুলো রয়েছে, সেগুলো যেন কার্যকর ভূমিকা রাখে সেটা নজরদারিতে রাখতে হবে।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেই হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি দেবে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি। এক দফার যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে থাকা দলগুলোও এই কর্মসূচি পালন করবে। চলতি মাসে অনুষ্ঠিত দলটির স্থায়ী কমিটির দুটি বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বিএনপি সূত্রের দাবি। যার প্রতিফলন দেখা গেছে গতকাল বৃহস্পতিবার বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতেও।
সূত্রের দাবি, দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অন্তত তিন নেতা হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন নেতাকর্মীদের।
সূত্রগুলো বলছে, নভেম্বরের যেকোনো সময় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে ওই তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। বিএনপি চাচ্ছে তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক ফয়সালা নিশ্চিত করতে। এ লক্ষ্যে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বড় ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণার চিন্তা রয়েছে তাদের। এসব কর্মসূচির মধ্যে ঢাকা ঘেরাও, সচিবালয় ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘিরে কর্মসূচিসহ নানা ধরনের কর্মসূচি নিয়ে দলটির অভ্যন্তরে আলোচনা রয়েছে।
জানা গেছে, এসব কর্মসূচিতে সরকার পক্ষ বাধা দিলে ‘যদি পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠে’ তাহলে এক পর্যায়ে অসহযোগ আন্দোলনের দিকেও যেতে পারে দলটি। বিএনপি নেতারা বলছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে দুই ধাপে কর্মসূচি সাজিয়েছে বিএনপি। প্রতিটি ধাপের শেষ দিনের কর্মসূচি হবে শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক। সরকার কঠোর হলে কর্মসূচিও কঠোর হবে। তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত যতটুকু সম্ভব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ রাখতে চাইবে দলটি। পরিস্থিতি বিবেচনায় তফসিলের আগেই হরতালের কর্মসূচি আসতে পারে। তবে দলটির এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হচ্ছে, তফসিল ঘোষণা হলেই তারা হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
এই কর্মসূচি ঘোষণার আগে আন্দোলনে থাকা সমমনা দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করা হবে। কীভাবে কর্মসূচি সফল করা যায় তা নিয়ে নতুন করে ছক সাজানো হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে হরতালের মতো কর্মসূচির ইঙ্গিত দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যতদিন আপনি (শেখ হাসিনা) থাকবেন দেশ আরও সংঘাতের দিকে যাবে, খারাপের দিকে যাবে এবং সংঘাত আরও বাড়তে থাকবে। এখনো তো সংঘাত শুরু হয়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগ যেভাবে এগোচ্ছে তাতে এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে জনগণ রুখে দাঁড়াবে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘শত প্ররোচনার মুখেও আমরা একেবারে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। এটার শেষ পরিণতি কী হবে তা নির্ভর করবে সরকারের আচরণ কী হচ্ছে তার ওপর।’
একই দিন পৃথক কর্মসূচিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী হরতাল কর্মসূচি ঘোষণার কথা বলেন। ভৈরব বাসস্ট্যান্ডে সিলেট অভিমুখী রোডমার্চ কর্মসূচির প্রথম পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমরা হরতাল করিনি, কিন্তু করব না সেই প্রতিজ্ঞাও করিনি। জনগণের চাপের কারণে হরতাল অবরোধ যা যা করা দরকার, গণতান্ত্রিক পন্থায় এই অবৈধ সরকারকে মাটিতে বসিয়ে দেওয়ার জন্য দল, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে সব ধরনের কর্মসূচি হবে। সেই জন্য আপনারা প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। আমাদের এবারের আন্দোলন ডু অর ডাই। হয় মরব, নয়তো লড়ব।’
আর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের উদ্যোগে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সম্মেলনে প্রধান অতিথির বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘জনগণকে সম্পৃক্ত করে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছি। হরতাল অবরোধ শান্তির প্রবক্তারাই চালু করেছে। সরকার যদি আমাদের রোডমার্চ, মিছিলে জনগণের সম্পৃক্ততায় কোনো বার্তা না পায় বা না বোঝে তাহলে দিনের পর দিন হরতাল অবরোধ করে দেশ অচল করে দেওয়া হবে। সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।’
জাতীয় সংসদের পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে। চলতি সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হবে আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি। এর আগের ৯০ দিন; অর্থাৎ আগামী ১ নভেম্বর থেকে ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করতে হবে। সাধারণত নির্বাচনের ৪০ থেকে ৪৫ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করা হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর। মাঝখানে ৪৫ দিন সময় রেখে ভোটের তারিখ ছিল ২৩ ডিসেম্বর। তবে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির মুখে ভোটের তারিখ এক সপ্তাহ পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর করা হয়েছিল। দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর। ভোটগ্রহণ করা হয়েছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। তফসিল ঘোষণা ও ভোট গ্রহণের মধ্যে সময় ছিল ৪০ দিন।০
আশ্বিন মাসের সন্ধ্যায় ঢাকায় নামল শ্রাবণের বৃষ্টি। আকাশ ভেঙে পড়া বর্ষণে তলিয়ে গেছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তা। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে টানা কয়েক ঘণ্টার মুষলধারে বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকার রাস্তা তলিয়ে যায়। কোথাও কোথাও বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। মাঝরাত পর্যন্ত ওইসব সড়কে থমকে থাকে গাড়ি। অনেকেই যেমন বৃষ্টির কারণে কর্মস্থলেই আটকা পড়েন তেমনি অনেকের অপেক্ষার প্রহর কেটেছে জলমগ্ন সড়কে গাড়িতে বসেই।
এদিকে মিরপুরে সড়কের পাশে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও কয়েকজন। নিহতদের মধ্যে তিনজন একই পরিবারের। তাদের মধ্যে এক শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে মিরপুর মডেল থানার পুলিশ। গতকাল দিনভর মেঘলা আকাশ ও থেকে থেকে বৃষ্টির পর সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি বাড়তে শুরু করে। সঙ্গে থেমে থেমে শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ঢাকায় সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, এদিন সন্ধ্যার পর ঢাকা ছাড়াও রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে বৃষ্টি হয়েছে। আর ঢাকায় বৃষ্টি হতে পারে আজও।
গতকাল রাতের বৃষ্টিতে ঢাকার ফার্মগেট, ধানমন্ডি, এলিফ্যান্ট রোড, নিউ মার্কেট, মিরপুর, বনানী এলাকার সড়ক পানিতে ডুবে যায়। রাজধানীর প্রায় সব সড়কে দেখা দেয় তীব্র যানজট। দীর্ঘ সময় স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় যানবাহনকে। অনেকে জানান, তাদের ব্যক্তিগত গাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। রাতে কখন তারা বাসায় ফিরতে পারবেন তা অনিশ্চিত।
জানা গেছে, মিরপুর ১০ নম্বরে প্রধান সড়কসহ অলিগলিতে কোমরসমান পানি জমেছে। পানি প্রধান সড়কে চলাচলরত প্রাইভেট গাড়ির ভেতরেও ঢুকে গেছে।
গ্রিন রোড, নর্থ ধানমন্ডিসহ আশপাশের সব গলিতে পানি জমেছে। সেখানকার গ্রিন লাইফ হাসপাতাল, সেন্ট্রাল হাসপাতাল এবং ল্যাবএইডে আসা রোগীরা পড়েছেন বিপদে। একই অবস্থা রাজধানীর মগবাজার, মালিবাগ, সিদ্ধেশ্বরী, বেইলি রোড এবং শান্তিনগরেও। মতিঝিলে রাতে লোক কম থাকলেও পানি হাঁটুর ওপরে উঠে গেছে।
হঠাৎ ভারী বৃষ্টির জন্য পথচারী ও ঘরমুখো মানুষরা মোটেও তৈরি ছিলেন না। এ সময় অনেকেই কাকভেজা হয়ে বাসায় ফেরেন আবার কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন যাত্রীছাউনি বা দোকানের নিচে। গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাংলা মোটর মোড়ে বাসে ৩০ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলেন ফাহাদ হোসাইন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, বৃষ্টি শুরু হলে একটি উঁচু ভবনের নিচে দাঁড়িয়েছিলাম। বৃষ্টি কিছুটা কমলে বাসে উঠি। আধা ঘণ্টা হলো বাস একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।
সরকার সৌরভ নামের একজন জানান, তার মোহাম্মদপুর থেকে শাহবাগ আসতে ৩ ঘণ্টার বেশি লেগেছে। ফেরার পথে বাংলা মোটর মোড়েই আটকে আছেন এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে।
গতকাল রাত সাড়ে ১২টার সময়ও গুগল ম্যাপে দেখা যায় রাজধানী জুড়ে তীব্র যানজটের সংকেত। বেশিরভাগ সড়ক রেড মার্ক ছিল সে সময়। গ্রিন রোড, মিরপুর রোডের ধানমন্ডি ২৭, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউসহ বেশ কয়েকটি সড়কেই ছিল যান চলাচল বন্ধের সংকেত। গুগলের তথ্য বলছিল, ওইসব এলাকায় সে সময় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ ছিল।
আহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ শুক্রবারও রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের বেশিরভাগ জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। এ সময় বজ্রপাতও হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
মিরপুরে চারজনের মৃত্যু : মিরপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও কয়েকজন। নিহতদের মধ্যে তিনজন একই পরিবারের। তাদের মধ্যে এক শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে মিরপুর মডেল থানার পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে মিরপুর-১ নম্বর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে আহতদের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এ দুর্ঘটনার বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেন মিরপুর থানার এসআই রুহুল আমিন। তিনি বলেন, বৃষ্টির মধ্যে রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন মিজান, তার স্ত্রী মুক্তা, তাদের মেয়ে লিমা এবং এই তিনজনকে বাঁচাতে যাওয়া যুবক অনিক। মৃত মিজান পেশায় সিএনজি অটোরিকশাচালক ছিলেন বলে জানা গেছে।
অভিষেকে ২৬ মিনিট খেলে দুই অ্যাসিস্টের অবদান রাখতে পেরেছিলেন নেইমার। আল হিলাল জিতেছিল। কিন্তু পর পর দুম্যাচ খেললেন পুরো সময়। তেমন কিছুই করতে পারলেন না। ড্র করেছে আল হিলাল আবার।
এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে শেষ দিকের গোলে ১-১ ড্র করে পরাজয় বাঁচিয়েছিল আল হিলাল। আজ সৌদি প্রো লিগে দামাক এফসির বিপক্ষে ম্যালকমের গোলে ৯ মিনিটে এগিয়ে গেলেও শেষপর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারেনি।
সাত ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে তবুও শীর্ষেই রইলো আল হিলাল।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক যাত্রীর কাছ থেকে মূল্য দেড় কোটি টাকা মূল্যের ১৭০০ গ্রাম স্বর্ণ উদ্ধার করেছে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টা ২৪ মিনিটে শারজাহ থেকে এয়ার অ্যারাবিয়ার ফ্লাইটে আসা মোহাম্মদ আলী নামের এক যাত্রীর রাইস কুকারে এসব স্বর্ণ পাওয়া যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার মো. আহসান উল্লাহ বলেন, আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ব্যাংকপাড়াখ্যাত মতিঝিল এখন মৃতপ্রায়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে না পারায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র সরে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা ঘোরানো মতিঝিলে আবাসিক ভবন, শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান তৈরি না হলে দেশের প্রধান এই বাণিজ্যিক অঞ্চল প্রাণ হারাবে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাদের মতে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় অবদান রয়েছে মতিঝিলের টাকার। শুধু তা-ই নয়, মতিঝিলে উপার্জিত অর্থে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, কানাডাসহ আরও অনেক দেশে। এখানকার উপার্জিত টাকা অনেকে জমা রেখেছেন সুইস ব্যাংকেও। শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মতিঝিলে। এ যেন মা কাঁকড়ার আত্মত্যাগের গল্প। মা কাঁকড়া বাচ্চাদের আগলে রাখে বুকের ভেতর; যেদিন বাচ্চাগুলো বের হয়ে আসে, সেদিন খোলস ছাড়া মা কাঁকড়ার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। মা কাঁকড়ার মতো দুঃখী ও ত্যাগী বাণিজ্যিক মতিঝিল।
ষাটের দশকে মতিঝিলে গড়ে ওঠে দেশের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট-সিবিডি)। সেই থেকে এখনো দেশের প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল মতিঝিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে সরকারি ৮টি, বেসরকারি ৪৫টি এবং বিদেশি ব্যাংক রয়েছে ৮টি। এ ছাড়া ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৮১টি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের বেশির প্রধান কার্যালয় চলে গেছে কারওয়ান বাজার, গুলশান-বনানী ও উত্তরায়। নতুন করে যেসব ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাচ্ছে, সেগুলোর প্রধান কার্যালয় মতিঝিলের বাইরে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মতিঝিলের আশপাশে পরিকল্পিত কোনো আবাসিক এলাকা, অভিজাত হোটেল, কাজের ফাঁকে অবসর কাটানোর মতো উন্মুক্ত স্থান, শপিং কমপ্লেক্স না থাকায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সুবিধার জন্য অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়গুলোও মতিঝিলের বাইরের এলাকা, অর্থাৎ কারওয়ান বাজার, গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে গড়ে উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর, মধুমিতা সিনেমা হল এবং ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এবং দিলকুশা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবন এবং বঙ্গভবনের পাশের এলাকাজুড়ে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল। বিশ্বের বাণিজ্যিক অঞ্চলের ভবনগুলো সুউচ্চ হয়ে থাকে। কিন্তু মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের পাশেই বঙ্গভবন। নিরাপত্তার কারণে বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর কোনো বহুতল ভবন করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, মতিঝিলের প্লটগুলোর ‘নন-রেসট্রিকটেড’ উচ্চতা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর সাড়ে চারতলার বেশি উচ্চতার ভবনের অনুমোদন মেলে না। ফলে মূল্যবান ওই প্লটগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারছেন না মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ জরাজীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণও রয়েছে কয়েকটি ভবন। একটির সঙ্গে অন্যটি লাগানো। দুটি ভবনের মাঝখানে উন্মুক্ত জায়গা নেই বেশিরভাগ ভবনের। দিলকুশা এলাকার বঙ্গভবন লাগানো ভবনগুলোর মাঝখানেও কোনো ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, মতিঝিল এলাকার ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে। ভাঙাচোরা এবড়োখেবড়ো সড়ক। সড়ক বিভাজকগুলো শ্রীহীন। এগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হয়নি। প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলে মতিঝিলের আরও করুণ দশা চোখে পড়ে। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার সড়কের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে চটের ছালা দিয়ে ঘেরা খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান এবং নানা পণ্যের অস্থায়ী দোকান। সামান্য বৃষ্টিতে মতিঝিল এলাকার সড়কগুলো তলিয়ে থাকে পানির নিচে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত। ডিএসসিসি এলাকার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে। খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে মূল্যায়ন করলে মতিঝিল ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। যদিও এটা মানতে নারাজ ডিএসসিসির কারিগরি কমিটি।
মতিঝিল এলাকার বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিল এলাকার সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে ডিএসসিসি। পরিত্যক্ত প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মতিঝিলের সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত ও সড়ক বিভাজকের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা দরকার। পর্যায়ক্রমে এ এলাকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কাজ করবে ডিএসসিসি। তবে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের মূল সংস্কার ও আধুনিকায়নের দায়িত্ব রাজউকের। রাজউককে সেসব বিষয় পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব কাজে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা লাগলে করপোরেশন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলে রাজউক। রাজউক সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশক থেকেই মতিঝিলের পুরোপুরি বাণিজ্যিক বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্যিক অঞ্চলে শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান থাকে। আর কাছাকাছি এলাকায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা থাকে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে সেটা ছিল না। অভিজাত মানের হোটেল পূর্বাণী গড়ে উঠলেও আশপাশে সময় কাটানোর মতো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লোকজন গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় থাকেন। মতিঝিলের সৌন্দর্য নিশ্চিত করতে ও আধুনিকায়নে যেসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখা দরকার ছিল রাজউক ও সিটি করপোরেশন সেটা করেনি।
রাজউক সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধরা, উত্তরা। সেই সব এলাকা থেকে মানুষ মতিঝিলে আসেন। শহরের জনসংখ্যা বাড়ায় দিন দিন যানজট বাড়ছে। ওই সব এলাকা থেকে মতিঝিলে আসতে সড়কে এক থেকে দেড় ঘণ্টা চলে যায়। দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কর্মঘণ্টার মধ্যে ৩০ শতাংশ সময় সড়কে নষ্ট হচ্ছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে চিন্তা করেছে, তার কর্মস্থল এমন একটা জায়গায় হবে যা তার আবাসনের কাছাকাছি। মতিঝিল থেকে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও ভূমিকা রেখেছে।
কালের বিবর্তনে গুলশান হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক এলাকা। কারওয়ান বাজার, উত্তরায়ও গেছে কিছু। এসব জায়গায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমও সেখানে চলে গেছে। এসব এলাকার আশপাশে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় তাদের বসবাস। আবাসিক এলাকা ছাড়া, পৃথিবীর কোথাও শতভাগ জায়গা শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা অথবা একই শ্রেণির কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার হয় না।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, নগর পরিকল্পনায় ভূমির ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়, যেকোনো জায়গার ব্যবহার হবে ২৪ ঘণ্টা। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল কর্মচঞ্চল থাকে মাত্র ১২ ঘণ্টা। এরপর ওই জায়গার ব্যবহার হয় না। রাতে নীরব ও ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়।
তিনি বলেন, যে মতিঝিলে দিনের বেলায় হাঁটা যায় না; গাড়ির কারণে, যানজটে; সেই মতিঝিলে রাত ৮টার পরে আবার একাও হাঁটা যায় না; অনিরাপদ বোধ হয়। এ জন্য যারা দিনে বাণিজ্য করতে আসেন, তারা মতিঝিল এলাকার হোটেলগুলোতে থাকেন না। অন্যদিকে গুলশান-বনানী এলাকায় থাকলে তারা শপিংয়ে যেতে পারেন, কফি শপে যেতে পারেন। এসব কারণে সারা বিশ্বে ভূমির মিশ্র ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, মতিঝিল এলাকা যেহেতু ইতিমধ্যে তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলেছে, এ জন্য মতিঝিলের জমির শ্রেণিকে মিশ্র ব্যবহার হিসেবে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি নিয়েছে রাজউক। সংশোধিত ড্যাপে সে বিষয়ে নির্দেশনা রাখা হয়েছে। পৃথিবীর নগর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৫০, ৬০ বা ১০০ বছর অন্তর সেসব ঢেলে সাজানো হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়েই মতিঝিল এলাকাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে আবাসিকের বৈশিষ্ট্য দিতে হবে; কনডোমিনিয়াম গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে রাজউক বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ১৬ একর জায়গা নিয়ে একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে লাইব্রেরি, ওয়াকওয়ে থাকবে। বসার ব্যবস্থা থাকবে। মতিঝিল এলাকায় ঝিল ছিল, ওই ঝিলকে প্রাধান্য দিয়ে পার্কটি তৈরি করা হবে। বহুমুখী ব্যবহার ছাড়া মতিঝিলকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিলের আধুনিকায়ন ও ভূমির মিশ্র ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। তাহলে মতিঝিল সচল থাকবে; তবে ঢাকা শহর বড় হওয়ায় আরও বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে ওঠা ইতিবাচক। এসব পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দরকার ছিল; কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে সে রকম হয়নি। এটা দুঃখজনক। এ জন্য শহরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ঢাকায় এখন অনেকগুলো বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সব অঞ্চলে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় বড় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় মতিঝিলে রয়েছে। তবে ব্যবসা গুলশান, বনানী, উত্তরা, গাজীপুরে সরে যাওয়ায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ব্যবসা কেন্দ্রের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।