
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিতে সংসদে বিল উত্থাপন করা হয়েছে। ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন-২০২৩’ নামের বিলের বিধান অনুযায়ী, আগামীতে জন্মের পর একটি স্বতন্ত্র আইডি নম্বর পাবেন দেশের সব নাগরিক। এ সংক্রান্ত কাজের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে একটি ‘নিবন্ধকের কার্যালয়’ স্থাপন ও পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। এ ছাড়া বিলে এনআইডি-সংক্রান্ত অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
গতকাল সোমবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিলটি উত্থাপন করেন। বিরোধীদলীয় সদস্য ফখরুল ইমাম বিলটি উত্থাপনের বিরোধিতা করলেও তা কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটিকে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। গত ১২ জুন মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিলটি অনুমোদন দেওয়া হয়।
সংসদে উত্থাপিত বিলে বলা হয়েছে, ‘একজন নাগরিককে নিবন্ধক কর্র্তৃক কেবল একটি জাতীয় পরিচিতি নম্বর প্রদান করা যাইবে, যাহা উক্ত নাগরিকের একক পরিচিতি নম্বর হিসেবে সর্বত্র ব্যবহৃত হইবে। এর অধীন প্রদত্ত জাতীয় পরিচিতি নম্বরের ভিত্তিতে একজন নাগরিককে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করা হইবে। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, প্রয়োজনীয় তথ্য-সংবলিত একটি জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন রেজিস্টার থাকিবে।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক নাগরিক নির্ধারিত পদ্ধতি ও শর্তসাপেক্ষে, জাতীয় পরিচয়পত্র ও জাতীয় পরিচিতি নম্বর পাইবার অধিকারী হইবেন। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে একজন নিবন্ধক থাকিবে। নিবন্ধক সরকার কর্র্তৃক নিযুক্ত হইবে এবং তাহার চাকরির শর্তাদি সরকার কর্র্তৃক জারিকৃত হইবে। নিবন্ধক জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা, পরিচয়পত্র প্রস্তুতকরণ, বিতরণ ও রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুষঙ্গিক সকল দায়িত্ব পালন করিবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য-উপাত্তের সংশোধনের প্রয়োজন হইলে নাগরিক কর্র্তৃক প্রদত্ত আবেদনের ভিত্তিতে, নির্ধারিত পদ্ধতিতে ও ফি প্রদান সাপেক্ষে, নিবন্ধক কর্র্তৃক উহা সংশোধন করা যাইবে।’
বিলে অপরাধ ও শাস্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘কোনো নাগরিক জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তির লক্ষ্যে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো মিথ্যা তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপন করিলে তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে। এই অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ এক বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’ এ ছাড়া ‘কোনো নাগরিক জ্ঞাতসারে একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করিলে তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে এবং এ অপরাধের জন্য এক বৎসর অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
তথ্য-উপাত্ত বিকৃত বা বিনষ্টসংক্রান্ত অপরাধের বিষয়ে বিলে বলা হয়েছে, ‘সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মচারী অথবা এই আইন দ্বারা বা ইহার অধীন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা পরিচয়পত্র প্রস্তুতকরণ, বিতরণ ও রক্ষণাবেক্ষণসংক্রান্ত দায়িত্ব পালনরত কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নিবন্ধকের নিকট সংরক্ষিত জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কোনো তথ্য-উপাত্ত বিকৃত বা বিনষ্ট করিলে তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত অপবাদের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ৭ বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’ কোনো ব্যক্তি জাতীয় পরিচয়পত্র জাল করলে বা উক্ত পরিচয়পত্র বহন করলে একই শাস্তি পাবেন।
বিলে বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি তথ্য-উপাত্তে অননুমোদিত প্রবেশ করিলে বা বেআইনিভাবে তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করিলে তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ৫ বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’ নিবন্ধন কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মচারী বা উহার প্রতিনিধির অপরাধের জন্য একই শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
ভূমিসংক্রান্ত তিনটি বিল উত্থাপন : ভূমিসংক্রান্ত নতুন আইন প্রণয়ন ও আইন সংশোধনের লক্ষ্যে আলাদা তিনটি বিল সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ‘ভূমি সংস্কার আইন-২০২৩’ শীর্ষক বিলে একজন সর্বোচ্চ ৬০ বিঘা কৃষিজমির মালিক থাকতে পারবেন, এমন বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সংসদে তোলা অন্য দুটি বিল হলো ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন-২০২৩’ এবং ‘বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইন-২০২৩’।
গতকাল সংসদ অধিবেশনে বিল তিনটি উত্থাপন করেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। বিলগুলো অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
নতুন আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে সংসদে আনীত ‘ভূমি সংস্কার আইন-২০২৩’ বিলে ব্যক্তিক্ষেত্রে কৃষিজমি মালিকানার সর্বোচ্চ সীমা ৬০ বিঘার বিধান রাখা হয়েছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইনটিকে শিথিল করা হয়েছে। সমবায় সমিতির মাধ্যমে চা, কফি ও রাবার বাগান, শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম, রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আইনটি শিথিল থাকবে। প্রস্তাবিত এই আইনে বাস্তুভিটার অধিকার, বর্গাচুক্তির অবসান ও উৎপন্ন ফসলের ন্যায্য ভাগের কথাও বলা হয়েছে।
সংসদে উত্থাপিত ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন-২০২৩’ বিলে ভূমি সম্পর্কিত বেশ কিছু অপরাধকে চিহ্নিত করে তা ফৌজদারি অপরাধের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। সেসব অপরাধের জন্য শাস্তির বিধানও রাখা হয়েছে। এতে নাগরিকরা নিজ নিজ মালিকানাধীন ভূমির নিরবচ্ছিন্ন ভোগদখলের প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করতে পারবেন। এ বিলে ভূমিবিষয়ক প্রতারণা ও জালিয়াতির ক্ষেত্রগুলো সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে এবং একই সঙ্গে প্রতিরোধ, দমন ও প্রয়োজনে প্রতিকারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই আইন ভঙ্গ করলে জরিমানা ও কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা আছে।
এ ছাড়া ‘বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইন-২০২৩’ বিলে কোনো ফসলি জমি থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ করার বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া নদীর নাব্য নষ্ট হতে পারে, এমন স্থান থেকেও বালু উত্তোলন করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের যন্ত্র জব্দ করা যাবে। বালু পরিবহনে রাস্তার কোনো ক্ষতি হলে ইজারাদার কর্র্তৃপক্ষকে রাস্তা মেরামত করে দিতে হবে, এমন বিধান রাখা হয়েছে বিলে।
পারিবারিক আদালত ও ক্ষুদ্র কুটির শিল্প বিল পাস : পারিবারিক আদালত আইনের অধীনে বিচারিক আদালতে হওয়া মামলার রায়ের বিরুদ্ধে জেলা জজ মর্যাদার অন্যান্য আদালতে আপিলের বিধান রেখে ‘পারিবারিক আদালত বিল-২০২৩’ পাস হয়েছে। গতকাল সোমবার সংসদ অধিবেশনে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। বিলের ওপর জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব করেন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা (এমপি)। তবে সেই প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। এরপর স্পিকার সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করেন।
পাস হওয়া বিলে পারিবারিক আদালত আইনের অধীনে বিচারিক আদালতে হওয়া মামলার রায়ের বিরুদ্ধে জেলা জজ মর্যাদার অন্যান্য আদালতে আপিল করার বিধান রাখা হয়েছে। আগের আইনে বিচারিক আদালতে হওয়া এ সংক্রান্ত মামলার আপিল শুধু জেলা জজ আদালতে করার সুযোগ ছিল। এতে জেলা জজের ওপর মামলার শুনানির চাপ বাড়ছিল। মামলার চাপ কমাতে আইনে এ সংশোধনী আনা হয়েছে।
সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, জেলা পর্যায়ে আরও জজ আছেন নারী-শিশু বা শ্রম আদালত। সরকার গেজেট জারি করে কোনো জেলাতে আপিলের জন্য অতিরিক্ত মামলা থাকলে জেলা জজ পর্যায়ের অন্যান্য যে জজরা আছেন, তাদেরও আপিল আদালত হিসেবে বিবেচনা করা যাবে।
এ ছাড়া বিলে দাম্পত্য কলহ, তালাক, বিয়ে এবং শিশুদের ভরণপোষণের বিষয়গুলো আছে। সেখানে পারিবারিক আদালতের মামলার কোর্ট ফি ৫০ থেকে বাড়িয়ে ২০০ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) থেকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঋণ নিলে এবং প্লট বরাদ্দ নিয়ে তা বিক্রি বা ভাড়া দিলে শাস্তির বিধান রেখে সংসদে নতুন আইন পাস হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ‘বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন বিল-২০২২’ নামের বিলটি পাসের প্রস্তাব সংসদে উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
১৯৫৭ সালের ‘স্মল অ্যান্ড কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন অ্যাক্ট’ স্থগিত করে নতুন আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে ওই বিলটি সংসদে আনা হয়। পাস হওয়া ওই বিলে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি করপোরেশন থেকে ঋণ বা অন্য কোনো সুবিধা পাওয়ার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা তথ্য দেন বা জ্ঞাতসারে মিথ্যা বিবরণী ব্যবহার করেন বা করপোরেশনকে কোনো প্রকারে মিথ্যা প্রতিবেদন গ্রহণ করতে প্ররোচনা দেন, তাহলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের কড়া নজরদারিতে আনা হচ্ছে দুর্নীতিবাজদের। গত সাড়ে পাঁচ বছরে ঢাকাসহ সারা দেশ ১ হাজার ৭৮২টি মামলা করেছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি। মামলা পর্যালোচনা করে নানা তথ্য পাওয়া গেছে।
অনেকে মামলা থেকে রেহাই পেতে তদবির করছেন। এ নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা চিন্তিত। রাজনীতিকদের নামেও মামলা হচ্ছে। তবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংখ্যা অনেক বেশি। যদিও যে হারে মামলা হচ্ছে, সে হারে নিষ্পত্তি হচ্ছে না। এর জন্য আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। কোনো কোনো মামলায় স্থগিতাদেশও দেওয়া হচ্ছে। ফলে বিচারপ্রক্রিয়া ঝুলে যাচ্ছে।
অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন, অর্থ পাচার, ঘুষ নেওয়া, জালিয়াতি ও সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করা হচ্ছে বেশি। বিভিন্ন বিচারিক আদালতে এখনো প্রায় তিন হাজার মামলা বিচারাধীন। উচ্চতর আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে বেশ কিছু মামলা। মামলা কবে শেষ হবে তা সংশ্লিষ্টরা বলতে পারছে না।
মামলাসংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, অনেক দিন ধরেই দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) রাজনৈতিক নেতা ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে অভিযোগ আসছে। কিছু কিছু অভিযোগ আমলে নেওয়া হচ্ছে। নেতাদের মধ্যে কেউ সংসদ সদস্য, কেউ সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও জেলা-উপজেলার নেতা। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিব, অধস্তন কর্মচারী ও সাবেক আমলা রয়েছেন।
অভিযুক্তদের জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, আয়কর রিটার্নের কপি, ব্যাংকের হিসাব বিবরণী, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের ক্রয়-বিক্রয়ের দলিল এবং তাদের ওপর নির্ভরশীলদের চাকরি বা ব্যবসা অথবা অন্য উৎস থেকে প্রাপ্ত আয়ের বিবরণীসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ড তদন্তের পর কারোর বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। কারোর বিষয়ে বিস্তর তদন্ত চলছে।
নাম প্রকাশ না করে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত যত মামলা হয়েছে তার বেশিরভাগের আসামি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। রাজনৈতিক নেতা ও সাবেক আমলাদের নামেও মামলা হচ্ছে। যেসব মামলা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি তার কারণ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। আসামিরা নিজেদের বাঁচাতে নানা কায়দায় তদবির করছেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও কালক্ষেপণ করছেন। সাক্ষীরা ঠিকমতো আদালতে আসছেন না। উচ্চতর আদালতেও একই অবস্থা। তবে আমরা আশাবাদী দ্রুত সময়ে মামলাগুলোর নিষ্পত্তি হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আগের চেয়ে দুর্নীতির মামলা বেশি হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে কাউকে দুদকে তলব বা মামলা হচ্ছে তা ঠিক নয়। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। সব পেশার লোকের বিরুদ্ধেই দুদকে অভিযোগ আসছে। নিজেদের পক্ষে সাফাই গাইতে সরকারি কর্মকর্তা, বর্তমান ও সাবেক এমপিদের কেউ সরাসরি যোগাযোগ করছেন আমাদের সঙ্গে। দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও দেখা করার চেষ্টা করছেন কেউ। প্রভাবশালী রাজনীতিকদের মাধ্যমে চাপও দেওয়া হচ্ছে। রাজনীতির বাইরের লোকজনদের মাধ্যমেও তদবির চলছে। কিন্তু দুদক পিছু হটবে না। অনেকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।’
দুদক সূত্র জানায়, গত সাড়ে পাঁচ বছরে যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের অর্ধেকেরও বেশি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। কয়েকজন আছেন বেসরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী ও অন্য পেশার লোক। আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রে আসামির মধ্যে জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। সবচেয়ে বেশি আলোচিত মামলাগুলোর মধ্যে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উল্লেখযোগ্য। এ মামলায় আসামি হিসেবে আরও রয়েছেন গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও পরিচালক এসএম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফীসহ ১৩ জন।
এ ছাড়া বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স করপোরেশন লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের তহবিল লুটপাটের অভিযোগে ১১টি মামলা হয়েছে। তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েসহ পরিবারের সদস্যদের, বিআইএফসির এমডিসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের আসামি করা হয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সাবেক পরিচালক ফ্লাইট অপারেশনস ক্যাপ্টেন ইশরাত আহমেদ, প্রধান প্রকৌশলী এআরএম কায়সার জামান, প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার শরীফ রুহুল কুদ্দুস, সাবেক ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল আলম সিদ্দিক, সাবেক মুখ্য প্রকৌশলী শহীদ উদ্দিন মোহাম্মদ হানিফ, দেবেশ চৌধুরীসহ ৩৩ জন, তিতাস গ্যাস টিঅ্যান্ডডি কোং লিমিটেডের উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সিদ্দিকুর রহমান, হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হুমায়ুন কবির, নরসিংদী সদরের বরখাস্তকৃত সাব-রেজিস্ট্রার নীহার রঞ্জন বিশ্বাস, রাজশাহীর উপ-কর কমিশনার মুহিবুল ইসলাম ভূঁইয়া, ডলি কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দিন, রূপালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক খালেদ হোসেন মল্লিক, সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, একই ব্যাংকের পল্টন শাখার উপমহাব্যবস্থাপক এএসএম মোরশেদ আলী, প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌহিদুজ্জামান, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিক উদ্দিন, ঢাকা ওয়াসার সাবেক রাজস্ব পরিদর্শক মিঞা মিজানুর রহমান, ওয়াসার সাবেক রাজস্ব পরিদর্শক হাবিব উল্লাহ ভূঁইয়া, কুয়েত-বাংলাদেশ সরকারি মৈত্রী হাসপাতালের স্টোর অফিসার হাবিবুর রহমান প্রমুখের বিরুদ্ধে মামলা হলেও তাদের বিচার শুরু হয়নি। তারা নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করছেন। কেউ সরকারের ওপরমহলেও যোগাযোগ করছেন বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে।
দুদক সচিব মাহবুব হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ছি। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী যার বিরুদ্ধেই অভিযোগ আসে আমরা গভীরে গিয়ে তদন্ত করে মামলা করি। অহেতুক কাউকে হয়রানি করা হয় না।’
সূত্র জানায়, গত সাড়ে পাঁচ বছরে সারা দেশে ১ হাজার ৭৮২টি দুর্নীতি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত ১০২টি, ২০২২ সালে ৪০৬টি, ২০২১ সালে ৩৪৭টি, ২০২০ সালে ৩৪৮টি, ২০১৯ সালে ৩৬৩টি ও ২০১৮ সালে ২১৬টি মামলা হয়েছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিম্ন আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের ৩ হাজার ২৯৫টি মামলা বিচারাধীন। তার মধ্যে ২ হাজার ৮৬৭টি মামলার বিচার কার্যক্রম চলমান থাকলেও উচ্চ আদালতের আদেশে ৪২৮টি মামলার বিচার স্থগিত রয়েছে।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কোনো মামলার একাধিক আসামি থাকলে যেকোনো একজন আসামির আবেদনে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ আসছে। স্থগিতাদেশ আসার পর কমিশনকে অবহিত করা হয়। স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাওয়া হয়। এভাবে বেশ কিছু পুরনো মামলা সচল হয়েছে। তবে ঝিমিয়ে পড়া মামলাগুলো দ্রুত শেষ হওয়া উচিত। না হলে রাষ্ট্র বা সমাজ দুর্নীতিমুক্ত হবে না।’
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের এই যুগে রোবট ব্যবহারের অভিনব এক প্রকল্প নজর কেড়েছে বিশ্বের। জাপানে এক ক্যাফেতে মানুষের আড্ডার সঙ্গী হিসেবে রোবট কাজে লাগানো হচ্ছে। কফি প্রস্তুতকারক ও পরিচারকদের পাশাপাশি টোকিওর ‘ডন ক্যাফে’ নামের রেস্তোরাঁটিতে রোবটও কাজ করে। সেগুলোর কয়েকটি অর্ডার করা খাবার পরিবেশন করে। কয়েকটি আবার চেয়ারে বসে কফি পান করতে আসা অতিথিদের সঙ্গে গল্পগুজব করে। রোবটগুলোতে কোনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা না থাকলেও রেস্তোরাঁর অতিথিরা রোবটগুলোর সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান করতে পারেন! জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানুষের মতো দেখতে অ্যান্ড্রয়েড যন্ত্রমানবগুলোর একটা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো কোনো প্রযুক্তি নেই। এই রোবট আসলে এমন মানুষের অবতার, যারা দূর থেকে সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন। রোবটের চোখে বসানো ক্যামেরা, স্পিকার ও মাইক্রোফোনের কল্যাণে তথাকথিত পাইলটরা বা নিয়ন্ত্রকরা অতিথিদের সঙ্গে গল্পগুজব করতে পারেন। আর এ ক্ষেত্রে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আছে এমন মানুষরাই সেই কাজটি করেন। তারা শুধু বাসা অথবা হাসপাতালের ঘর থেকে কাজ করতে পারেন।
টোকিও শহরের ওই ক্যাফেতে কাজ করা তেমনই একজন মায়া। ডয়চে ভেলে বলছে, এক ক্রনিক রোগের কারণে তাকে এখন হুইলচেয়ারের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিছুদিন আগেই ২৪ বছর বয়সী সেই নারীর কোনো কাজ ছিল না। জীবন নিয়ে হতাশ ছিলেন তিনি। কিন্তু ডন ক্যাফেতে কাজ পেয়ে তার জীবনটা বদলে গেছে।
মায়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা শেষ করার পর কোনো কাজের সুযোগ না পেয়ে খুব দুঃখ ও অবসাদ হয়েছিল। তখনই পাইলটের এই চাকরির খবর পেলাম। সেটা সত্যি অসাধারণ। অতিথিদের মনোরঞ্জন হলে, পরেরবারও দেখা হবে কি না এমন প্রশ্ন শুনলে কৃতজ্ঞ বোধ করি। মানুষকে কোনোভাবে সাহায্য করছি, সেটা জানতে পেরে খুব আনন্দ হয়।
অরি ল্যাবরেটরি নামের কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা কেন্তারো ইয়োশিফুজি অভিনব ওই প্রকল্পের উদ্যোক্তা। তিনি জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি একাকিত্বের সমস্যায় ভুগতেন। স্বাস্থ্যের সমস্যার কারণে অনেক বছর তিনি ক্লাসে যেতে পারেননি। সে সময় তার মনে হতো, অন্য একটা শরীর পেলে কী ভালোই-না হতো! অন্য একটি শরীরের কল্যাণে সামাজিক জীবনে অংশ নিতে পারতেন।
সেই কেন্তারো ইয়োশিফুজি নতুন প্রযুক্তির সামাজিক সম্ভাবনা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। তবে এ ক্ষেত্রে তার দর্শনও ভিন্ন। তিনি বলেন, আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট কাজে লাগিয়ে আমাদের কাজ আরও দক্ষভাবে করা বা কর্মীর সংখ্যা কমাতে চাই না। বরং শয্যাশায়ী হয়ে পড়লে বা শরীর নড়াচড়া না করতে পারলেও যাতে আমরা কাজের জায়গা পেতে পারি, সেটাই হলো লক্ষ্য।
ওই ক্যাফেতে কফি পান করতে আসা রেই নামে এক অতিথি বলেন, আমার মনে হয়, এটা দারুণ প্রকল্প। আশা করি, ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এটিকে একটা সূচনার জায়গা হিসেবে আমরা কাজে লাগাতে পারি। মানুষ ও রোবটের মধ্যে যে সংযোগ তৈরি হয়েছে, তা সত্যি হৃদয় ভরিয়ে দেয়।
চীনের প্রেডিডেন্ট শি জিনপিং ভারতের দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না সে বিষয়টি আগেই জানা গিয়েছিল। গতকাল সোমবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি তার পরিবর্তে দেশটি প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং ওই সম্মেলনে অংশ নেবেন বলেও জানানো হয়েছে।
এদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট না আশার খবরে হতাশা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যাবেন না শুনে তিনি নিরাশ হয়েছেন। আগামী ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই সম্মেলনে থাকছেন না রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনও। অবশ্য বিষয় আগেই জানিয়েছিলেন তিনি। তার বদলে থাকবেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।
গতকাল রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জি-২০ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতির কোনো কারণ বিবৃতিতে জানানো হয়নি। তিনি চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে অনুষ্ঠেয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর আসিয়ানের সম্মেলনেও তিনি যোগ দিচ্ছেন না। দুই অনুষ্ঠানেই লি কিয়াং চীনের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে বলা হয়, চীন আশা করছে, আসন্ন জি-২০ সম্মেলনে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও উন্নয়ন নিয়ে নেতারা ঐকমত্যে পৌঁছাবেন।
আকসাই চীন, অরুণাচল প্রদেশ ও বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশের ভূখণ্ডকে নিজেদের দাবি করে চীনের নতুন ‘মানচিত্রে’ প্রকাশ নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে জল্পনা-কল্পনা ছড়িয়ে পড়ে, সি চিন পিং জি-২০ সম্মেলনে নাও যোগ দিতে পারেন। শেষ অবধি সেটাই সত্যি হলো। যা নিয়েই এক দিন আগেই হতাশ প্রকাশ করেন জো বাইডেন।
গত রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়ারে রেহোবোথ বিচ এলাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাইডেন বলেন, আমি নিরাশ। তবে তার (সি চিন পিং) সঙ্গে আমার দেখা হবে।
শি জিনপিং দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে না এলেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস সম্মেলনের এক ফাঁকে দুই নেতার মধ্যে সংক্ষিপ্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বৈঠকে তারা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ লাইনে (এলএসি) উত্তেজনা কমিয়ে আনার বিষয়ে সম্মত হন।
চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গায় মার্সকের টার্মিনাল নির্মাণের নতুন স্থান হিসেবে লালদিয়ার চরের ১৪ ও ১৫ নম্বর খালের মধ্যবর্তী অংশে আসতে পারে। বিমান উড্ডয়নের ফানেলের জায়গা এবং কর্ণফুলী নদীর ওই অংশে বাঁক থাকায় নদীটি সরু। তাই কর্ণফুলীর চ্যানেলের স্বার্থে ও টার্মিনাল নির্মাণের উপযোগী নাও হতে পারে লালদিয়ার চর। এজন্যই আলোচনায় আসছে লালদিয়ার চরের ১৪ ও ১৫ নম্বর খালের মধ্যবর্তী অংশটি।
গতকাল সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার)-এর সভাপতিত্বে একটি পর্যালোচনা সভাও হয়েছে মার্সকের টার্মিনাল নির্মাণের স্থান নিয়ে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদস্য (হারবার) কমোডর এম ফজলার রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মার্সকের পক্ষ থেকে লালদিয়ার চর (১২ ও ১৩ নম্বর খালের মধ্যবর্তী) চাওয়া হয়েছিল। তবে এ স্থানে কর্ণফুলীর বাঁক রয়েছে এবং বিমান চলাচলের রুট রয়েছে। এ ছাড়া লালদিয়ার চরের দক্ষিণ (১৪ ও ১৫ নম্বর খালের মধ্যবর্তী) অংশের জায়গাটিও আলোচনায় এসেছে। এখন এই দুই জায়গার মধ্যে যে স্থানটি উপযোগী হয় সেখানে টার্মিনাল নির্মাণ হতে পারে।’
লালদিয়ার চরে তিনটি ব্লক রয়েছে। ১৯৩৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এই তিনটি ব্লক অধিগ্রহণ করেছিল। এর মধ্যে একটি ব্লক (১৩ ও ১৪ নম্বর খালের মধ্যবর্তী জায়গা) ২০০৫ সালের জুলাই মাসে উচ্ছেদ করেছিলেন তৎকালীন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ম্যাজিস্ট্রেট মুনীর চৌধুরী। সেই উচ্ছেদকৃত জায়গায় পরে গড়ে তোলা হয়েছে ইনকনট্রেন্ড টার্মিনাল। ১২ ও ১৩ নম্বর খালের মধ্যবর্তী এবং ১৪ ও ১৫ নম্বর খালের মধ্যবর্তী দুটি জায়গার অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়েছিল ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। আর এই উচ্ছেদ জায়গা দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এখন এই জায়গায় টার্মিনাল নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা দিয়েছে মার্সক গ্রুপ। নৌ-বাণিজ্যে বিশে^র দ্বিতীয় শীর্ষ কোম্পানি ডেনমার্কের এপি-মুলার মার্সক গ্রুপ চট্টগ্রাম বন্দরে বিনিয়োগের জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করে এলেও এত দিন সুযোগ পায়নি। গত এপ্রিলে তারা নৌ-মন্ত্রণালয়ে আবেদনের পর সেই চিঠি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে আসে মে মাসে। আর এরপরই ডেনমার্কের এই কোম্পানিটির বিনিয়োগের বিষয়টি সামনে চলে আসে।
গত ২৮ আগস্ট মার্সক গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রবার্ট মায়ের্স্ক উগলা এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনিশ চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড্রেস বি কার্লসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেই সাক্ষাতে চট্টগ্রামের লালদিয়ায় একটি নতুন কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য ডেনিশ শিপিং এবং লজিস্টিক জায়ান্ট মার্সক গ্রুপের প্রস্তাব বিবেচনার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতেই গতি পায় নতুন এই টার্মিনাল বরাদ্দের বিষয়টি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে মার্সকের বিনিয়োগ এটা দেশের শিপিং বাণিজ্যে বিশাল একটি বিষয়। এতে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ হতে পারে।’
এদিকে প্রথমে যে জায়গাটি আলোচনায় এসেছিল সেই জায়গার ড্রাফট (পানির গভীরতা) প্রায় ১০ মিটার হলেও পরবর্তী জায়গায় (১৪ ও ১৫ নম্বর খালের মধ্যবর্তী) ড্রাফট কিছুটা কম। আর এই জায়গায় নদীর প্রশস্ততাও বেশি। এই পয়েন্টে উচ্চতা নিয়ে কোনো ব্যারিয়ার না থাকায় কি গ্যান্ট্রিক্রেনসহ আধুনিক ইকুইপমেন্ট স্থাপনেও কোনো সমস্যা হবে না। আর এই উচ্চতাসংক্রান্ত সমস্যার কারণে ২০১২ সালে লালদিয়ায় বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প নেওয়া হলেও তা বেশিদূর এগোয়নি। এ ছাড়া তখন লালদিয়াবাসীকে পুনর্বাসনের বিষয়টি সামনে চলে এসেছিল। পরে ২০১৪ সালে লালদিয়ায় পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা নিভে যায় একসময়। আর এখন এই স্থানে আসছে বিশে^র দ্বিতীয় শীর্ষ কোম্পানি মার্সক।
সাইফ মেরিটাইম চিফ অপারেটিং অফিসার আবদুল্লাহ জহির বলেন, ‘মার্সক কোম্পানি চট্টগ্রাম বন্দরে টার্মিনাল নির্মাণে এগিয়ে আসা দেশের অর্থনীতির জন্য বিশাল এক সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হওয়া। যেহেতু মার্সকের নিজস্ব জাহাজ ও কনটেইনার রয়েছে, এখন টার্মিনালও যদি অপারেট করতে পারে তাহলে নৌ-বাণিজ্যে গতি আসবে। এমনিতেই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি কনটেইনার পরিবহন করে মার্সক।’ তিনি আরও বলেন, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল চালু হচ্ছে আগামী মাসে। এখন যদি মার্সক লালদিয়ায় টার্মিনাল নির্মাণ করে তাহলে বন্দরের দুটি টার্মিনাল বাড়বে। এতে বে-টার্মিনাল নির্মাণ কার্যক্রম বিলম্ব হলেও দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে না।
জানা যায়, বর্তমানে কনটেইনার ও জাহাজ পরিচালনায় বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মার্সক। বাংলাদেশে শিপিং ও লজিস্টিকস খাতে ব্যবসা থাকলেও টার্মিনাল পরিচালনার ব্যবসা নেই তাদের। বিশ্বের ৩৭টি দেশে ৬৫টি টার্মিনাল ও বন্দর পরিচালনা করছে মার্সক।
মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হবে আগামী মাসে। একইসঙ্গে বে-টার্মিনালের মাস্টারপ্ল্যানের মোড়ক উন্মোচনও হবে একই সময়ে এবং পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের উদ্বোধন হবে। মাতারবাড়ী ২০২৬ সালে পুরোদমে চালুর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে নিউমুড়িং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি), চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) ও জেনারেল কার্গো বার্থ টার্মিনাল দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম করে চট্টগ্রাম বন্দর। আগামী মাস থেকে এর সঙ্গে যুক্ত হবে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কর্ণগোপ এলাকায় হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডে আগুনে পুড়ে ৫৪ শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এতে কারখানার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহেন শাহ্ আজাদসহ ছয়জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে কারখানার মালিক আবুল হাসেম ও তার চার ছেলেকে। তবে কারখানার মালিককে অব্যাহতি দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী ও স্বজনহারারা।
গতকাল সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান। তিনি জানান, রবিবার দুপুরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির নারায়ণগঞ্জ অফিসের পরিদর্শক মোকছেদুর রহমান ১৩ পৃষ্ঠার এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
অভিযোগপত্রের বিষয়ে মামলার বাদী তৎকালীন ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক নাজিম উদ্দিন আহমেদ (বর্তমানে চট্টগ্রামে এসবিতে কর্মরত) বলেন, মামলার ফলাফলের বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা তাকে কিছু জানাননি। তার ভাষ্য, এ ঘটনায় কারখানার মালিক দায় এড়াতে পারেন না। এ কারণে হত্যা মামলা করা হয়েছিল। আবুল হাসেমের সঙ্গে তার চার ছেলে হাসিব বিন হাসেম, তারেক ইব্রাহিম, তাওশীফ ইব্রাহিম ও তানজীম ইব্রাহিমকে আসামি করা হয়েছিল।
অগ্নিকাণ্ডে নিহত ইয়াসিনের মা নাজমা বেগম বলেন, ‘কারখানার মালিক ও তার ছেলেদের নাম মামলার এজাহার থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে শুনে খুব অবাক হলাম। আমরা এর পূর্ণ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’ আরেক নিহত শ্রমিক আমেনা বেগমের স্বামী রাজীব বলেন, ‘আমরা গরিবরা কখনোই বিচার পাব না। দেখেন কারখানার সিইও, ডিজিএম ও কলকারখানা অধিদপ্তরের রূপগঞ্জ শাখার নেছার উদ্দিন যদি আসামি হয়, তবে তারা বাদ যায় কীভাবে।’
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান বলেন, ঘটনার দুই বছর পর এ অভিযোগপত্র দাখিল করা হলো। আসামিদের বিরুদ্ধে অবহেলার দ্বারা মৃত্যু সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ধারায় একজন আসামির সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে বিধান রয়েছে।
তিনি জানান, অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন কারখানার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহেন শাহ আজাদ (৪৩), উপ-মহাব্যবস্থাপক মামুনুর রশিদ (৫৪), সিভিল ইঞ্জিনিয়ার কাম প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন (২৬), প্রধান প্রকৌশলী (মেকানিক্যাল ও ইলেকট্রিক) ওমর ফারুক (৩৮), কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ অফিসের পরিদর্শক নেছার উদ্দিন (৪০) ও সৈকত মাহমুদ (৩৭)।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির নারায়ণগঞ্জ অফিসের পরিদর্শক মোকছেদুর রহমান জানান, তার আগে আরও চার কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করেছেন। তদন্তে তাদের প্রাপ্ত ফলাফল তিনি নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে ঊর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষের কাছে সাক্ষ্য স্মারকলিপি দাখিল করে কারখানার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় কারখানার মালিকসহ পাঁচজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ৩৪ হাজার ৫০০ বর্গফুটের হাসেম ফুড কারখানার মূল নকশায় তিনটি সারি থাকলেও নির্মাণকালে দুটি সিঁড়ি রাখা হয়। ২ দশমিক ৫৯ একর জমির ছাড়পত্র নেওয়া হলেও অনুমতি ছাড়া কারখানা সম্প্রসারণ করা হয়। কারখানায় পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখা হয়নি। দুর্ঘটনাকবলিত ভবনে শ্রমিকদের বের হতে ভেতর ও বাইরে থেকে খোলার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। প্রতিটি ফ্লোর নেট দিয়ে শ্রমিকদের আবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল ও সিঁড়ি তালাবদ্ধ ছিল। কারখানায় শ্রমিকদের ফায়ার প্রশিক্ষণ ও ফায়ার কর্মী ছিল না। দুর্ঘটনাকবলিত ভবনের নিচতলা থেকে ছয়তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোরে দাহ্য পদার্থ মজুদ ছিল। সেই দাহ্য পদার্থের সঙ্গে উৎপাদিত মালামাল মজুদ করে রাখা হয়েছিল। কারখানার ভবনের ভেতরে মেশিন স্থাপনে দূরত্বের লেআউট প্ল্যান মানা হয়নি। এ ছাড়া কারখানাটি ছয় মাসের শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদন নিয়ে করা হলেও সেই শর্ত বাস্তবায়ন করা হয়নি। শিশু আইন অমান্য করে শিশু শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। আগুনে পোড়া অধিকাংশ মৃতদেহ শিশু বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর নিয়মিত কারখানাটি পরিদর্শন করেনি। অথচ কারখানার লাইসেন্স অসাধুভাবে নবায়ন করে গেছেন। প্রতিষ্ঠানের উপমহাব্যবস্থাপক সৌমেন বড়ুয়া ও পরিদর্শক নেছার উদ্দিন কারখানা পরিদর্শনে উদাসীনতা দায়িত্বে অবহেলার কারণে ৫৪ জন শ্রমিক আগুনে পুড়ে মারা গেছে। ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক শাহ্ আলম যথাযথভাবে কারখানা পরিদর্শন না করে সনদ নবায়ন করেছেন। তারা যদি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতেন, তাহলে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটত না।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, সার্বিক তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা, সাক্ষ্য-প্রমাণে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, ভিডিও ফুটেজ, মরদেহ সুরতহাল, ডিএনএ টেস্ট প্রতিবেদন, ঘটনার পারিপাশির্^কতা হাসেম ফুডসের নিয়োজিত কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলা অপরিকল্পিত-অব্যবস্থাপনা ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য কার্যকলাপ, উদাসীনতাসহ নিজেদের খুশিমতো কারখানা পরিচালনা করার কারণে এ ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের সৃষ্ট হয়। এতে কারখানা কর্মকর্তা-শ্রমিক ৫১ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছে। আগুনের ঘটনায় তিনতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে মারাত্মক আহত হয়ে নির্মমভাবে তিন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। অত্র মামলার এজাহারনামীয় ছয় আসামির প্রাথমিকভাবে অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। তবে তদন্তকালে হাসেম ও তার চার ছেলের বিরুদ্ধে মামলায় জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই আসামি আবুল হাসেম ও তার চার ছেলেকে মামলার দায় হতে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।