
আন্দোলন-সংগ্রামে ব্যর্থ হয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইস্যু করে বিএনপি এবার অশুভ খেলা খেলতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন সামনে রেখে অশুভ শক্তি তৎপর। তারা আবার ওয়ান-ইলেভেনের মতো দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। তাদের এ আশা পূরণ হবে না।’
গতকাল বুধবার রাজধানীর পলাশী চৌরাস্তায় কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আয়োজিত শোভাযাত্রা-পূর্বক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। খবর বাসস।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘সময়টা খুব ভালো নয়। এখানে অসুরের আস্ফালন হচ্ছে। এখানে দুষ্টের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এখানে অশান্তির হুমকি আছে। শ্রীকৃষ্ণের উপদেশমতো শান্তি যাতে বজায় থাকে, সে ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গত সাড়ে ১৪ বছরে এটা প্রমাণ হয়েছে, শাসক হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেয়ে রাজনীতিতে সনাতন ধর্মের মানুষের আপন অন্তত নেই। আওয়ামী লীগ থাকাকালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাই-বোনরা নিরাপদে ছিলেন।’
সবাইকে দুর্গাপূজার সময় সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, ‘অশুভ শক্তি বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এমন কোনো ঘটনা যদি ঘটায়, যা হিন্দুদের সঙ্গে বা ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে ফাটল ধরাতে পারে। সুতরাং আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি সবাইকে আহ্বান করব, আপনাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। নিরাপত্তা দিতে হবে। বাসাবাড়ির নিরাপত্তা, মন্দিরের নিরাপত্তা ও মণ্ডপের নিরাপত্তা। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সতর্ক আছে। আমাদের জনগণকেও সতর্ক থাকতে হবে।’
মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথের সভাপতিত্বে সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জেএল ভৌমিক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্মল চ্যাটার্জি, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রমেন মণ্ডল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজী সেলিম উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভা শেষে ওবায়দুল কাদের ও শেখ ফজলে নূর তাপস জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আয়োজিত শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ঢাকা কাস্টম হাউজের নিজস্ব গুদাম থেকে ৫৫ দশমিক ৫১ কেজি সোনা গায়েবের মামলার চার দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়েছেন কাস্টমসের শীর্ষকর্তারা। অথচ তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারাই বলছেন, পরিকল্পিতভাবে সরানো হয়েছে গুদামের সোনা। এর সঙ্গে কাস্টমসের অনেকেই জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার পর প্রথমে বিমানবন্দর থানা পুলিশ মামলার তদন্ত শুরু করে। তারা কাস্টম হাউজের চার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও চার সিপাহিকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছিল। এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার মামলা চলে গেছে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে (ডিবি)। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্তও ডিবি কাউকে গ্রেপ্তার দেখায়নি।
ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ঘটনাস্থলে যেতেই তাদের বেগ পেতে হচ্ছে। আর থানা পুলিশ সূত্র বলছে, এ ঘটনায় সন্দেহের তালিকায় থাকা কাস্টমসের অনেক কর্মকর্তা প্রভাবশালী। তাদের হুট করে জিজ্ঞাসাবাদ করা পুলিশের জন্য কঠিন। তদন্ত কর্মকর্তারা অনেক স্থানে ঠিকমতো যেতেও পারছেন না।
এদিকে বিমানবন্দর থানা পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গায়েব করা সোনার বেশিরভাগই বিক্রি হয়েছে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম ও তাঁতীবাজারের বিভিন্ন স্বর্ণের দোকানে। কাস্টম হাউজের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম শাহেদ, শহিদুল ইসলাম এবং সিপাহি নিয়ামত হাওলাদার ওইসব স্বর্ণ ব্যবসায়ীর মাধ্যমে গুদাম থেকে সরানো সোনা বিক্রি করেছেন। সোনা বিক্রিতে সহায়তা করেছেন তাঁতীবাজারের দুই ব্যবসায়ী। আর টাকার ভাগ পেয়েছেন কাস্টম হাউজের অনেক কর্মকর্তাই।
তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, চোরাই সোনা কেনা অন্তত সাত ব্যবসায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছে। তাদের যেকোনো সময় গ্রেপ্তার করা হতে পারে।
মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক মো. খোরশেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সন্দেহভাজনদের হেফাজতে নিয়ে তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে ঢাকা কাস্টম হাউজের বেশ কয়েকজন এই সোনা চুরির সঙ্গে জড়িত। আমরা মামলা তদন্ত করে অনেকটা এগিয়েছিলাম। এখন ডিবি তদন্ত করবে।’
সোনা গায়েবের ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় হওয়া মামলাটি গত মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) যাওয়ার পর থানা হেফাজতে থাকা কাস্টমসের চার কর্মকর্তা ও চার সিপাহিকে ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ডিবি উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার বদরুজ্জামান জিল্লু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘থানা হেফাজতে থাকা আটজনকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এখনো কাউকেই গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি।’
গত রবিবার অফিস খোলার পর সোনা চুরির বিষয়টি কাস্টম হাউজের কর্মকর্তাদের নজরে আসে। পরে রাতেই সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এয়ারপোর্ট প্রিভেন্টিভ টিম) মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন। এতে অজ্ঞাতপরিচয়ের ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। এ ঘটনায় কাস্টমসের একজন যুগ্ম কমিশনারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি অনুযায়ী, হেফাজতে থাকা আটজনের মধ্যে তিনজন জড়িত। তবে তাদের গ্রেপ্তার না দেখানোর বিষয়টি রহস্যের জন্ম দিয়েছে। গত চার দিন ধরে আটজনকে হেফাজতে রেখেছে পুলিশ ও ডিবি। এদিকে ঘটনার পর থেকে ঢাকা কাস্টম হাউজের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হয়নি। যদিও পুলিশের দাবি, সোনা গায়েবের সঙ্গে কাস্টম হাউজের অনেকেই জড়িত রয়েছেন। এ বিষয়ে গণমাধ্যমকেও এড়িয়ে চলার নীতিতে রয়েছেন কাস্টমসের শীর্ষকর্তারা।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় ডিবি উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. আকরামুল হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনো কাউকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি।’
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম শাহেদ ও শহিদুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে কাস্টম হাউজের গুদামের দায়িত্বে ছিলেন। বিমানবন্দরে আটক হওয়া অবৈধ সোনা ওই গুদামে রাখা হতো। তারা বিভিন্ন সময়ে গুদামের আলমারি থেকে সোনা সরিয়েছেন। এসব সোনা কত ক্যারেটের তা যাচাই করেছে রাজধানীর তাঁতীবাজারের দুই স্বর্ণ ব্যবসায়ী। ওই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাহেদ ও শহিদুলের দীর্ঘদিনের সখ্য রয়েছে। মূলত তাদের মাধ্যমেই রাজধানীর বায়তুল মোকাররম ও তাঁতীবাজারের সোনার দোকানে বিক্রি করা হয়েছে গুদামের সোনা।
ডিএমপির অপরাধ বিভাগের এক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাহেদ ও শহিদুল গুদাম থেকে সোনা সরানোর বিষয়টি জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। ওইসব সোনা কাদের কাছে কবে বিক্রি করা হয়েছে, সে বিষয়ে প্রাথমিক তথ্যও পাওয়া গেছে। যেহেতু মামলা ডিবিতে গেছে এখন ডিবি তাদের আটক করলে বিস্তারিত জানা যাবে।’
ওই দুই সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা কয়েক ধাপে এ সোনা বিক্রি করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সোনা গায়েবের বিষয়টি যখন প্রকাশ পেয়েছে তখন তারা চুরির নাটক সাজিয়েছেন। এ বিষয়টি কাস্টম হাউজের শীর্ষপর্যায় আগে থেকেই জানত।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, কাস্টম হাউজের অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু তারা বরাবরই পার পেয়ে গেছেন। এবারও সোনা গায়েবের ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তারা। কিন্তু শেষ পর্যায়ে আর সম্ভব হয়নি। এ ঘটনার পর থেকে কাস্টমসের শীর্ষকর্তারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। ঢাকা কাস্টম হাউজের কমিশনার একেএম নুরুল হুদা আজাদকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। মামলার বাদী সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলবেন কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) মোকাদ্দেস হোসেন স্যার।’ কিন্তু মোকাদ্দেস হোসেনকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। মোবাইল ফোনে খুদেবার্তা পাঠালেও কোনো সাড়া দেননি।
ভারতে দেশের নাম বদল নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। দেশটির ক্ষমতাসীন বিজেপি শিবিরের মতে, ইন্ডিয়া নামটির সঙ্গে দাসত্বের ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। তাই ভারত নামটি ব্যবহার করা উচিত। বিরোধীরা অবশ্য বলছে, বিরোধী জোটের নাম ইন্ডিয়া রাখাতেই কেঁপে গেছে শাসক দল। তাই এই নাম বদলের প্রসঙ্গ টানা হচ্ছে। অবশ্য কোনো দেশের নাম বদলের ঘটনা নতুন বিষয় নয়। আধুনিক বিশে^ বেশ কয়েকটি দেশ নাম বদল করেছে। তাই ইন্ডিয়া নাম থাকা উচিত কি অনুচিত, এই বিতর্কে না ঢুকে দেখে নেওয়া যাক গেল ১০০ বছরে কোন কোন দেশ তাদের নাম বদল করেছে।
নাম বদলের তালিকায় সবার আগের নামটি ইরান। ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বে, বিশেষ করে পশ্চিমা দুনিয়ায় ইরান পরিচিত ছিল পারস্য নামেই। ওই বছর ইরান সরকার তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকা দেশগুলোকে অনুরোধ করেছিল, পারস্যের পরিবর্তে তাদের যেন ইরান নামে ডাকা হয়।
ইরানের পরে এই তালিকায় আছে আয়ারল্যান্ড। দেশটির আগের নাম ছিল আইরিশ ফ্রি স্টেট। ১৯৩৭ সালে আইরিশ সংবিধান আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের নাম পরিবর্তন করে আয়ারল্যান্ড বা আইরিশ ভাষায় ইরি রাখে। পরে ১৯৪৯ আয়ারল্যান্ডকে প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল, নাম হয়েছিল আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্র।
থাইল্যান্ডের আগের নাম ছিল সিয়াম। এটি সম্ভবত সংস্কৃত থেকে এসেছিল, অর্থ ছিল ‘অন্ধকার’। ১৯৩৯ সালে দেশের আধুনিকীকরণের অংশ হিসেবে এবং চীনের প্রভাবের মোকাবিলা করতে দেশীয় সংস্কৃতি এবং ভাষায় থাইল্যান্ড নামকরণ করা হয়।
‘থাই’ কথাটির অর্থ ‘মানুষ’ বা ‘মুক্ত মানুষ’।
বতসোয়ানার আগের নাম বেচুয়ানাল্যান্ড প্রটেক্টরেট। ১৯৬৬ সালে দেশের প্রধান জাতিগোষ্ঠী সোয়ানার নাম অনুসারে হয়। বতসোয়ানা; কথাটির অর্থ সোয়ানাদের জায়গা।
ব্রিটিশরা শ্রীলঙ্কা নাম দিয়েছিল সিলোন। আরবিতে শ্রীলঙ্কাকে সাহেলান নামে ডাকা হতো। তারই অপভ্রংশ সিলোন। ১৯৭২ সালে দেশের নাম পরিবর্তন করে স্বাধীন সার্বভৌম শ্রীলঙ্কা প্রজাতন্ত্র রাখা হয়েছিল। ছয় বছর পরে ফের একবার নাম বদলে রাখা হয়, গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক শ্রীলঙ্কা প্রজাতন্ত্র। এই দ্বীপরাষ্ট্রের প্রাচীন নাম ছিল লঙ্কা। তার সঙ্গে সম্মানসূচক শব্দ ‘শ্রী’ যুক্ত করা হয়।
বেনিনের আগের নাম ছিল দাহোমে। দাহোমে ছিল পশ্চিম আফ্রিকার পনেরো শতকের এক রাজ্য। বেনিনের একটা অংশ এই রাজ্যের দখলে ছিল। ১৮৭২ সালে ফরাসিরা এই দেশ দখল করার পর, আটলান্টিক উপকূলের এই আফ্রিকান দেশটিকে তারা ডাকত দাহোমে বলে। ১৯৬০ সালে স্বাধীন হয় রাষ্ট্রটি। ১৯৭৫-এ নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বেনিন।
উল্লিখিত দেশগুলো ছাড়াও আরও কিছু দেশ তাদের নাম বদল করেছে নানা কারণে। যেমন সুরিনাম থেকে হয়েছে সুরিনামে, রিপাবলিক অব রোডেশিয়া নাম বদলে হয়েছে জিম্বাবুয়ে, রিপাবলিক অব আপার ভোল্টা থেকে হয়েছে বুরকিনা ফাসো, জাইরে প্রজাতন্ত্র থেকে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, চেক প্রজাতন্ত্র থেকে চেকিয়া, বার্মা থেকে মিয়ানমার, হল্যান্ড থেকে নেদারল্যান্ডস, তুরস্ক থেকে তুর্কিয়ে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ড. ইউনূসের ব্যাপারটা ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার ব্যাপার। আরেকটা ব্যাপার আছে, এই মুহূর্তে এটাকে দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসা; ইটস অ্যা ডাইভার্সন অব দ্য মেইন ইস্যু। আমাদের প্রধান ইস্যু, সরকার পরিবর্তন করতে হবে, পদত্যাগ করতে হবে। সেটা ডাইভার্টের জন্য এই ইউনূস ইস্যুকে সামনে এনেছে সরকার। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তিনি (ইউনূস) প্রাধান্য পাচ্ছেন; অর্থাৎ তাদের লক্ষ্য ছিল, কিছুটা হলেও করতে পেরেছে।’
গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর পান্থপথে শমরিতা হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধনকালে মির্জা ফখরুল এ অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার মেগা প্রজেক্ট দেখাচ্ছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এটা এখন মানুষের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে আপনি নামছেন যানজট এমনভাবে সৃষ্টি হয়েছে, যা দুই ঘণ্টাতেও ফার্মগেট পার হওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই অবস্থা প্রতিটিতে। তিনি বলেন, ‘সরকার এবং দুই সিটি করপোরেশন সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে ডেঙ্গু মহামারী নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। স্বাস্থ্য খাতে চরম অরাজকতা কভিডের সময় দেখেছি। তখন কী পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে। এডিস মশা ধ্বংসের জন্য যে ওষুধ ক্রয় করা হয়েছে, সেখানও ব্যাপক দুর্নীতি করা হয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে পথ একটাইÑ জনগণের মেয়র নির্বাচিত করা।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বরখাস্তের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, এ রকম একটা রাষ্ট্র, যেখানে সত্য কথা বলার উপায় নেই। সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে না পারলে দেশ রক্ষাই খুব কঠিন হয়ে যাবে। এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ডা. রফিকুল ইসলাম, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, দেশের একটা মানুষও বিশ্বাস করে না, এই সরকার আগামীতে ক্ষমতায় থাকবে। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সরকারের মেয়াদ। পুলিশ প্রশাসন, পেশাজীবীরা হয়তো বলতে পারেন না। কিন্তু একটা কথা দিবালোকের মতো সত্য, ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
শনিবার ঢাকায় আবারও গণমিছিল : এদিকে গতকাল বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, ভোটাধিকার হরণকারী বর্তমান ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী সরকারের পদত্যাগ, বিদ্যমান অবৈধ সংসদ বিলুপ্তি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে তাদের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা, খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, সব ধরনের মিথ্যা-গায়েবি মামলা প্রত্যাহার, ফরমায়েশি সাজা বাতিল এবং সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় গণমিছিল হবে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতৃত্বে। এটা কেন্দ্রীয় কর্মসূচি। সময়সূচি পরে জানানো হবে।
পুরো গাজীপুর সিটি নয়, শুধুমাত্র সিটির ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের উন্নয়নের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা, যার সিংহভাগই যাবে ড্রেন নির্মাণে। ৫ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার সড়কের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এত বেশি ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
সম্প্রতি ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫২ নম্বর ওয়ার্ড অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন। এতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নের এ প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার মূল উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, নগর উন্নয়নের মাধ্যমে সিটি করপোরেশনের নাগরিক সুবিধা বাড়ানো হবে। পাশাপাশি পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাও এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।
কিন্তু উদ্দেশ্যের মধ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা উল্লেখ করা হলেও প্রকল্পের ব্যয়ের কোথাও নির্দিষ্টভাবে কর্মসংস্থানের জন্য কোনো ব্যয় ধরা হয়নি।
এ প্রকল্পের কিছু অস্বাভাবিক ব্যয়ের কারণে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্প প্রস্তাবে বিভিন্ন প্রস্থের প্রায় ২ দশমিক ৯৩৫ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের জন্য ১০ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পে সড়কের ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি কী তা স্পষ্ট করা হয়নি।
প্রকল্পে ৫ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার ফুটপাতসহ ড্রেন নির্মাণের জন্য ৩১ কোটি ২৬ লাখ টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি কিলোমিটার ড্রেনে ব্যয় হবে ৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, ভবিষ্যৎ মাস্টারপ্ল্যানের সঙ্গে সমন্বয় করে এই ড্রেনের ব্যবস্থার পরিকল্পনা করা হয়েছে কি না এবং ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের পুরো এলাকা এই ড্রেনেজ সুবিধার আওতাভুক্ত হবে কি না তা ডিপিপিতে স্পষ্ট করেনি। প্রকল্প মূল্যায়ণ কমিটির সভায় এ নিয়ে প্রশ্ন করা হবে। একই সঙ্গে এ খাতে এত ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি এবং যৌক্তিকভাবে ব্যয় নির্ধারণের বিষয়ে সিটি করপোরেশনকে প্রশ্ন করা হবে।
প্রকল্পের ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, আলোচ্য প্রকল্পে পানি সরবরাহের জন্য পাঁচ কোটি টাকা এবং সড়কবাতি স্থাপন খাতে ২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু কতটি সড়কবাতি স্থাপন করা হবে এ প্রকল্পের মাধ্যমে তা স্পষ্ট করা হয়নি। এ ছাড়া পানি সরবরাহের ব্যবস্থাপনা কেমন হবে ও সমগ্র ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের কাভার করবে কি না তার ধারণাগত কর্মকৌশল এবং সড়কবাতি স্থাপনের সংখ্যা ও স্পেসিফিকেশন নিয়ে প্রশ্ন করবে পরিকল্পনা কমিশন।
প্রকল্পের আওতায় সার্ভে বা জরিপ খাতে ১৫ লাখ টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কী ধরনের সার্ভে করা হবে, কারা সার্ভে করবে তা নিয়ে পিইসি সভায় প্রশ্ন তোলা হবে।
এ প্রকল্পে কম্পিউটার সামগ্রী খাতে ৩৬ মাস উল্লেখ করে ১০ লাখ টাকা, ছয়টি কম্পিউটার ও আনুসঙ্গিক খাতে ছয় লাখ টাকা এবং কম্পিউটার খাতে থোক উল্লেখ করে এক লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রকৃতই কতটি কম্পিউটার ক্রয় করা হবে, স্পেসিফিকেশন কী হবে তা স্পষ্ট করেনি গাজীপ্রু সিটি।
২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া গাজীপুর সিটি করপোরেশন আয়তনের দিক থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সিটি করপোরেশন।
যমুনা নদীতে বন্যার পানি কমতে থাকায় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার খুকনি, কৈজুরি ও জালালপুরÑ এ ৩টি ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামে ভয়াবহ আকারে যমুনা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। গত ৩ দিনে এসব গ্রামের অন্তত অর্ধশত বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
গ্রামগুলো হলো কৈজুরি ইউনিয়নের পাচিল, মোনাকষা, জালালপুর ইউনিয়নের ভেকা, উথুলি, গুচ্ছগ্রাম, হঠাৎপাড়া, পাকুরতলা, শক্তিধরপুর, বাঐখোলা, জালালপুর, পাড়া মোহনপুর, খুকনি ইউনিয়নের ঘাটাবাড়ি, আরকান্দি ও ব্রাহ্মণগ্রাম। বাড়িঘর হারিয়ে অনেক অসহায় মানুষ মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে ভাঙনকবলিত এলাকায় পলিথিন টানিয়ে ঝুপড়ি তুলে রোদবৃষ্টিতে ভিজে অতিকষ্টে বসবাস করছেন। এসব অসহায় মানুষের কোনো খোঁজ নেননি জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের লোকজন।
এ বিষয়ে পাঁচিল গ্রামের গো-খামারি মুল্লুক চাঁন মন্ডল বলেন, ২০২২ সালের ১৫ জানুয়ারি ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে পাঁচিল পর্যন্ত সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার যমুনা নদীর তীরসংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। এ কাজ উদ্বোধনের পর ঠিকাদার কিছু এলাকায় বালুর বস্তা ডাম্পিং করার পর কাজ বন্ধ রাখায় যমুনা নদীর তীব্র ভাঙনে আমাদের বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গরুর খামার ও বাড়িতে দোতলা বিল্ডিং দিয়েছিলাম। যমুনার কড়াল গ্রাসে গরুর খামার ও একটি বিল্ডিংয়ের আংশিক বিলীন হয়ে যাওয়ায় আর্থিকভাবে চরম লোকসানে পড়েছি। অপরদিকে ব্যাংকঋণ পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছে। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছি।
এ বিষয়ে আজিদা বেগম, আরশাদ মিয়া ও নূরুজজামান মন্ডল বলেন, যমুনায় বাড়িঘর বিলীন হয়ে যাওয়ায় এবং অন্যত্র মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে ভাঙনকবলিত এলাকায় পলিথিন দিয়ে ঝুপড়ি তুলে পরিবার-পরিজন নিয়ে রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে খেয়ে না খেয়ে অতিকষ্টে বসবাস করছি। এখনো পর্যন্ত কোনো জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের লোকজন আমাদের খোঁজখবর নেয়নি। কোনোরূপ ত্রাণ সহায়তা দেয়নি। তারা বলেন, গত ৩দিনে এ গ্রামে অন্তত ২৫টি বাড়িঘর যমুনায় বিলীন হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে ওই গ্রামের সিদ্দিক ম-ল, জরিনা খাতুন ও হনুফা বেগম বলেন, শুনেছি বন্যা ও ভাঙনকবলিতদের জন্য সরকার ১০ টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু আমরা যারা প্রকৃত নদীভাঙনে অসহায় তারা এ বরাদ্দের একমুঠ চালও পাইনি। এ চাল কাদের মধ্যে কখন কবে কোথায় বিতরণ করা হয়েছে তা আমরা জানি না।
এ বিষয়ে জালালপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য জিয়াউল হক বলেন, সঠিক সময়ে ঠিকাদার কাজ করলে এ বছর মানুষের আর ভাঙনের কবলে পড়তে হতো না। কিন্তু ঠিকাদার সঠিক সময়ে কাজ না করায় বর্ষা মৌসুম শুরুর পর থেকে এ ৩টি ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামের প্রায় ৩ শতাধিক বাড়িঘর যমুনা নদীভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়েছে। বাড়িঘর হারিয়ে শত শত অসহায় মানুষ যাওয়ার জায়গা না পেয়ে ভাঙন এলাকায় পলিথিন টানিয়ে অতিকষ্টে বাস করছে। তাদের জন্য কোনো বরাদ্দ না দেওয়ায় এদের দিন চলছে অর্ধহারে অনাহারে।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলার খুকনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুল্লুক চাঁন বলেন, গত ২ মাসে অন্তত দেড়শো বাড়িঘর যমুনা নদীতে বিলীন হয়েছে। গত ৩দিনে অন্তত ২০টি বাড়িঘর নতুন করে বিলীন হয়েছে।
শাহজাদপুর উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রাশিদুল ইসলাম বলেন, এটা স্বাভাবিক ঘটনা। বর্ষা মৌসুমে যমুনায় ভাঙন দেখা দেয়। এতে আমাদের কিছু করার নেই। তিনি আরও বলেন, ভাঙন ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১০ টন চাল বরাদ্দ পাওয়ার পর ৭ টন চাল ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। বাকি ৩ টন চাল গুদামে মজুদ আছে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, বন্যার পানি কমতে থাকায় শাহজাদপুরের কিছু অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ওই সব ভাঙনকবলিত এলাকায় অচিরেই বস্তা ফেলার কাজ শুরু করা হবে। তখন আর এ সমস্যা থাকবে না।
অপেক্ষা আর মাত্র ৩ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই।
শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে। কিং খানের ‘জাওয়ান’ কাঁপাচ্ছে পর্দা, কাটতি বাড়ছে বক্স অফিসে; বিশ্বকাপে আইসিসির পকেট ভরবে তো?
প্রস্তুতি বলছে, ভরবে। উইকেটে হবে রান উৎসব, লড়াই হবে ধুন্ধুমার। তাতেই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হবে এক ব্লকবাস্টার মেগা হিট।
মাস তিনেক আগে, বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচগুলো যে ১০ ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে সেই ভেন্যুগুলোর কিউরেটরদের সঙ্গে বসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কিউরেটর। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের একটাই মন্ত্র, রান চাই।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে, ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলেছে সেই ম্যাচগুলো যদিও বিশ্বকাপের ভেন্যুতে হয়নি তবে সেই সব ম্যাচেও রানের বন্যা বয়েছে।
প্রথম দুটো ওয়ানডেতে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার করা ২৭৬ রান অনায়াসে তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে ভারত। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ঠেঙিয়ে তুলেছেন ৩৯৯ রান। তিন নম্বর ম্যাচে আবার অস্ট্রেলিয়া করেছে ৩৫২ রান, যা তাড়া করে ভারতও গিয়েছিল ২৮৬ অবধি।
উদ্বোধনী ম্যাচ হবে গুজরাতের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এখানে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। ম্যাচে শুভমান গিল করেন সেঞ্চুরি, ভারত করে ৪ উইকেটে ২৩৪ রান আর জবাবে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ৬৬ রানে।
বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের ধরন বুঝে ব্যাট করতে পারলে ৫০ ওভারে এখানে রানবন্যা হবে। বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দুই দল এখানে মুখোমুখি হয়েছে বহুবার, পোশাকের রঙ কখনো রঙিন কিংবা কখনো সাদা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ কমেনি। এই মাঠে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রান করে ভারতকে ২১ রানে হারিয়েছে সবশেষ ম্যাচে।
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ঘরের মাঠে সবশেষ মৌসুমে ধোনির ‘ইয়েলো আর্মি’ ৮ ম্যাচ খেলে ২০০ রানের ওপরে করেছে দুইবার, একবার জিতেছে অন্যবার হেরেছে। তবে দুই ইনিংসেই ২০০’র বেশি রান হয়েছে দুটো ম্যাচেই। অর্থাৎ চাইলে চেন্নাইকেও ব্যাটিং স্বর্গে পরিণত করা সম্ভব।
বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর টানা তিন ওয়ানডে জিতে সিরিজ তো নিশ্চিত করেছেই, টানা তিন ম্যাচে ৩০০’র ওপর রান করেছে। চতুর্থ ওয়ানডেতে তো ৪০০ পার করেছে প্রোটিয়ারা। ব্যাটিং উইকেটে তারাও যে কোনো প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। হেনরিক ক্লাসেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৮৩ বলে খেলেছেন ১৭৪ রানের ইনিংস। বিধ্বংসী রূপে ফিরছেন ডেভিড মিলারও।
প্রোটিয়ারা প্রথম ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে। সেখানে অবশ্য সবশেষ হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচেও খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে তারা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯৯ রানে। দিল্লির মাঠটা হয়তো খানিকটা স্পিনারদের দিকেই ঝুঁকবে, তবে অন্য মাঠগুলোতে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবে মেতে উঠতে দেখার সম্ভাবনা জোরালো। তাই অনেক সাবেক ক্রিকেটারই প্রোটিয়াদের দেখছেন শেষ চারে।
বিশ্বকাপের আগে ক্লাসেন ছাড়াও ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস খেলেছেন ১৮২ রানের ইনিংস, দারুণ ছন্দে ইংল্যান্ডের ডাভিড মালানও। তবে সেরা ছন্দে নিঃসন্দেহে শুভমান গিল। সবশেষ ৫ ইনিংসে দুটো শতরান আর একটা হাফসেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেলও আছেন দারুণ ছন্দে। দুটো হাফসেঞ্চুরি আর একটা সেঞ্চুরি সবশেষ ৫ ইনিংসে। হায়দ্রাবাদে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের ৩৪৫ রান কিউইরা তাড়া করেছে ৩৮ বল হাতে রেখে।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, এই বারের বিশ্বকাপে রানবন্যায় বোলারদের জন্য কাজটা হবে কঠিন। দেশ রূপান্তরকে আশরাফুল বলেন, ‘আমাদের পেসাররা গত এক দেড় বছর ধরে খুবই ভালো করছে। তবে যেহেতু ভারতের মাটিতে খেলা, আমরা দেখেছি যে সাড়ে ৩০০’র বেশি রান হচ্ছে প্রতিটা ম্যাচে। কেউ যদি ভালো না করে, তাকে মনে রাখতে হবে যে টুর্নামেন্টে পরের ম্যাচে ফিরে আসতে হবে। একজনের দিন খারাপ যেতেই পারে, কোনো ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান উঠেই যেতে পারে। ৯টা ম্যাচের ভেতর ৪-৫টা ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান হতে পারে। তাই বোলারদের ফিরে আসার মানসিকতা থাকতে হবে।’
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমও বলেছেন যে দেড় মাসের আসরে প্রস্তুত থাকতে হবে যে কোনো কিছুর জন্যই, ‘দেড় মাসের আসর, ৯টা ম্যাচ এই সময়ে খেলতে হবে বা তারও বেশি। অনেক উত্থান-পতন হবে। যে কোনো কিছুর জন্যই তৈরি থাকতে হবে।’
রান উৎসবের বিশ্বকাপ যে হতে যাচ্ছে, তার সব রসদই মজুদ। মাঠগুলোকে করা হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গ, বিশ্বকাপে আসার আগে সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরাও আছেন ছন্দে। শুধু প্রশ্ন এটাই, রান উৎসবের এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রান করবেন কে? সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাটিংয়ের ছবিটা যে মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।