
মানহীন ও নকল কসমেটিকসের বাজারজাত ঠেকাতে সংসদে বিল পাস হয়েছে। বিদ্যমান ওষুধ আইনে কসমেটিকস শব্দটি যুক্ত করে ‘ঔষধ ও কসমেটিকস’ বিলে ওষুধের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও বেশি মুনাফার লোভে মজুদ করলে ১৪ বছর জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। কসমেটিকসের ব্যবসা করতে হলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। বিলের ওপর জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব করেন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা (এমপি)। তারা বাজারে ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ এবং লাগামহীনভাবে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সরকার জনস্বার্থে এসব বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
বিলটি পাসের প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ওষুধের যে আন্তর্জাতিক মান রয়েছে, সেই লেভেলটা আমাদের ঠিক রাখতে হবে। নিবিড় নজরদারি থাকতে হবে। স্যালাইনের দাম ১০০ টাকা নির্ধারিত থাকলে বিক্রি হয় ২০০ বা ৩০০ বা ৪০০ টাকায়। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এগুলো করা হয়। এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
একই দলের পীর ফজলুর রহমান বলেন, ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণই ঠিকমতো করতে পারছি না, এর সঙ্গে আবার কসমেটিকস কেন আনা হলো। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব যে কাজ সেটা ঠিকমতো করতে আমরা পারছি না। ওষুধের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে, কোনো ব্যবস্থা নেই। ওষুধ ও কসমেটিস দুটো এক জায়গায় আনা হলো কেন?
গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, ওষুধ জীবন রক্ষার উপাদান। এ বিলটি এমনভাবে আনা হয়েছে যাতে জনস্বার্থের পরিপন্থী হতে পারে। ওষুধ ও কসমেটিকস বিভিন্ন জিনিস, কাজও ভিন্ন। কিছু মানুষের স্বার্থরক্ষার জন্য এটা করা হয়েছে। এতে ওষুধ উৎপাদন ও মান নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না। এর মধ্যে অসৎ উদ্দেশ্য আছে।
জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, কারও ব্যবসা ক্ষতি করার জন্য কসমেটিকস বিষয়টি আমরা এখানে নিয়ে আসিনি। বহু দেশে আমেরিকা, ভারত, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডসহ বহু দেশে এ আইনটি একসঙ্গে আছে। আমাদের উদ্দেশ্য কারও ক্ষতি করা নয়, প্রস্তুতকারীদের অবৈধ সুবিধা দেওয়া নয়, আমাদের মানুষের স্বাস্থ্য যাতে ঠিক থাকে, মানুষের যাতে ক্ষতি না হয়। অনেক ধরনের ভেজাল কসমেটিকস ও ওষুধ তৈরি হচ্ছে, যেগুলো মুখে লাগানো হয় এবং বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়। এই কসমেটিকস ব্যবহারের কারণে মানুষের স্কিন ক্যানসার হচ্ছে, লিভার, কিডনি ফেইলর হচ্ছে, অনেক ধরনের সমস্যা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, দোকানে আমরা যাব না, তাদের ম্যানুফ্যাকচারিং প্রসেসটা আমরা দেখব, ইমপোর্ট, এক্সপোর্ট প্রসেসটা দেখব। কিন্তু কোন দোকানে দেবে এ বিষয়গুলো আমরা দেখব না। সর্বোপরি আমরা কসমেটিকসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করব।
পাস হওয়া বিলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের দায়িত্ব ও কর্মপরিধি সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কসমেটিকস বিক্রি, আমদানি ও উৎপাদন করতে হলে লাইসেন্স নিতে হবে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর লাইসেন্স অথরিটি হিসেবে কাজ করবে। এখন যারা কসমেটিকসের ব্যবসা বা উৎপাদন করছেন তাদের লাইসেন্স নিতে হবে। এজন্য ঔষধ প্রশাসন বিধি প্রণয়ন করবে।
১৯৪০ সালের ড্রাগস আইন ও ১৯৮২ সালের দ্য ড্রাগস কন্ট্রোল অ্যাক্টে দুটোকে এক করে যুগোপযোগী করে এ বিল আনা হয়েছে। বিলে চিকিৎসকের প্রেসক্রাইব ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে ওষুধের নিরাপত্তা, কার্যকারিতা, নতুন ওষুধ ও ভ্যাকসিন মেডিকেল ডেভেলপ করার বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে বিলে। বলা হয়েছে, রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনো ওষুধ বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধ থাকবে। এমনটা করা হলে এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। মেডিকেল ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত আইনে ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মেডিকেল ডিভাইসকে ওষুধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কিছু ওষুধের দাম সরকার নির্ধারণ করে দেবে বলে বিলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিলের তফসিলে ৩০ ধরনের অপরাধ চিহ্নিত করে সেগুলোর ক্ষেত্রে কী সাজা হবে তা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অপরাধের ধরন অনুযায়ী সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা জরিমানা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (সংশোধন) বিল উত্থাপন : ভিসি ও প্রো-ভিসিদের নিয়োগের মেয়াদ তিন বছরের স্থলে চার বছরে উন্নীত করে জাতীয় সংসদে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (সংশোধন) বিল-২০২৩’ উত্থাপন করা হয়েছে।
গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সংসদে বিলটি উত্থাপন করেন। বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
বিলটি উত্থাপনকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৯৮ প্রণয়নের মাধ্যমে প্রাক্তন ইনস্টিটিউট অব পোস্টগ্র্যাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চকে (আইপিজিএমআর) দেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তর করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১২ সালে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৯৮’ প্রথম সংশোধন করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃক এ আইনের কতিপয় ধারা পুনরায় সংশোধনের লক্ষ্যে দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়।’
তিনি জানান, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৯৮’-এর বিভিন্ন ধারায় উল্লিখিত ‘চ্যান্সেলর’, ‘ভাইস চ্যান্সেলর’ ও ‘প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর’ অভিব্যক্তির পরিবর্তে যথাক্রমে ‘আচার্য’, ‘উপাচার্য’ ও ‘উপ-উপাচার্য’ অভিব্যক্তি প্রতিস্থাপনসহ অন্যান্য মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের মেয়াদ তিন থেকে চার বছরে উন্নীতকরণ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী চিকিৎসা শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি)’ নামে নতুন একটি সেল গঠন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল পুনর্গঠন এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মনোনীত ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) নিবন্ধিত চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্ম ও মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরীক্ষা কার্যক্রম সম্পাদনের সুযোগ রেখে প্রস্তাবিত আইনের খসড়াটি প্রণয়ন করা হয়েছে।
সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচন ও অর্থনৈতিক অঞ্চলের সংশোধিত বিল যাচ্ছে সংসদে : সংরক্ষিত মহিলা আসন নির্বাচন ও অর্থনৈতিক অঞ্চলের সংশোধিত বিল যাচাই-বাছাই শেষে রিপোর্ট দিয়েছে সংসদীয় কমিটি। বিল দুটি চলতি সংসদ অধিবেশনেই অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে।
গতকাল সংসদ ভবনে একাদশ জাতীয় সংসদের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি জানানো হয়। সভায় মো. শহীদুজ্জামান সরকার সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে কমিটির সদস্য ও আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, মোস্তাফিজুর রহমান, মো. আব্দুল মজিদ খান, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার এবং খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন অংশগ্রহণ করেন।
বৈঠকে ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (সংশোধন) বিল, ২০২৩’-এর ওপর আলোচনা ও রিপোর্ট প্রদানপূর্বক চলতি সংসদ অধিবেশনে উত্থাপনের জন্য কমিটি কর্র্তৃক সুপারিশ এবং ‘জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন (সংশোধন) বিল, ২০২৩’-এর ওপর বিস্তারিত আলোচনা ও অধিকতর সংশোধনপূর্বক কমিটি কর্র্তৃক রিপোর্ট প্রদান করা হয়। বৈঠকে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্র্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রায়েরবাজার এলাকায় সনাতনগড় নামে একটা জায়গা আছে। অভিজাত ধানমণ্ডি থেকে অল্পই দূরে, কিন্তু মনে হয় অনেকটা ভেতরে। আমাদের ছেলেবেলায় চারদিক অনেক খোলামেলা ছিল। তাই অনেক দূর থেকেই দেখা যেত সেখানকার পথঘাট, মাটির তৈরি পুরনো বাড়ি, আর অল্প কিছু নতুন বিল্ডিং অথবা টিনের ঘর। জিকাতলা থেকে কিছুদূর গেলেই একটা আলাদা জগৎ। ইট-বিছানো সরু রাস্তা। এক পাশের ইট সরিয়ে সদ্য বসানো হয়েছে ওয়াসার পানির পাইপ। তারপর তিতাস গ্যাসের লাইন বসানোর জন্য নতুন করে খোঁড়াখুঁড়ি। বাকি রাস্তার অনেকটাই ভেঙেচুরে গেছে বর্ষার বৃষ্টিতে। এই রাস্তার বেশ খানিকটা ভেতরে আমাদের বাড়ি। সুতরাং আমার কলেজে যাতায়াত আর অন্য সব ভাইবোনের প্রতিদিনের চলাফেরা এই ভাঙা রাস্তার ওপর দিয়েই করতে হয়। বৃষ্টির পানি রাস্তায় জমে গেলে জুতো খুলে হাতে নিয়ে হাঁটা। সদ্য স্বাধীন দেশে মধ্য-সত্তরে এটা কোনো ব্যাপার না। কিন্তু এরই মধ্যে হঠাৎ শুনি, আমাদের এই রাস্তার সংস্কার হবে। পুরো রাস্তা ঢালাইয়ের কাজ করে দেবে মিউনিসিপ্যালিটি, আজ যার নাম সিটি করপোরেশন। আমরা সেই অপেক্ষায় থাকি দীর্ঘকাল। তারপর একদিন সেখানে ইট-পাথর-বালি এনে জমা করা হয়। কিছু যন্ত্রপাতি আসে। কাজ শুরু হয়। মাঝেমধ্যে কাজের তত্ত্বাবধান করে এক তরুণ কন্ট্রাক্টর। একদিন দূর থেকে ওকে দেখি। মনে হয়, ওর সঙ্গে আগে অন্য কোথাও দেখা হয়েছে। বোধহয় লেখালেখির সূত্রেই পরিচয়। তাই এখানে ওকে দেখে আমি একটু বিস্মিত হই। একদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে ওর সঙ্গে গল্প করি। বুঝতে চেষ্টা করি, কীভাবে এই পেশায় এলো অল্প বয়সের ছেলেটি। প্রায় আমারই বয়সের জিন্স, টি-শার্ট পরা এই স্মার্ট তরুণের নাম ইমদাদুল হক মিলন।
আমাদের জন্মদিন যে একই তারিখে, সেটা জানা ছিল না। তখনো আমাদের মধ্যে তেমন ঘনিষ্ঠতা নেই। ওই বয়সে কেন এবং কীভাবে মিলন প্রথম শ্রেণির কন্ট্রাক্টর হিসেবে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কাজ শুরু করেছিল, সেটাও জানা হয়নি।
কিছুদিন পর নিয়মিত হয় আমাদের দেখা-সাক্ষাৎ। আরও কজন বন্ধুর সঙ্গে একত্রে আড্ডা, লেখালেখি ও নানা রকম পরিকল্পনা। এভাবে দিন কাটে। আনন্দ, হইচই আর হতাশার দিন। বন্ধুত্ব গভীরতর ও স্থায়ী হতে থাকে। সে সময় দেখেছি মিলন বই পড়ে প্রচুর আর লেখালেখিতে অসম্ভব সিরিয়াস। অথচ জীবিকার জন্য ও অন্য কিছু করতে চায়। এটা কীভাবে সম্ভব?
বিচিত্র কিছু করার চেষ্টা মিলন চালিয়ে গেছে আরও কিছুদিন। সত্তর-আশির দশকে আমাদের বেশ কিছু নামি কবি-লেখক অ্যাড এজেন্সিতে চাকরি করতেন। কপি, ক্যাপশন ও ট্যাগ লাইন লেখা আর কিছু অনুবাদ। তাদের মতো আমিও ছাত্রজীবনে বেশ কিছুদিন এ ধরনের কাজ করি। কিন্তু মিলন আরও বড় কিছু করতে চায়। তাই চাকরির চেষ্টা না করে নিজেই একসময় অ্যাড এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করে ফেলে। তখন এ বিষয়টি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। আমাদের বন্ধু ও পরিচিতজনদের প্রত্যেকে একটা করে এজেন্সি বা বিজ্ঞাপন সংস্থা তৈরি করছে। আর মিলন নিজে যখন দোয়েল নাম দিয়ে অফিস সাজিয়ে বসে, মনে হয় ও বিশাল কোনো ব্যবসায়ী হতে চলেছে। তাহলে ওর লেখালেখির কী হবে? সেটা নিয়ে অবশ্য বেশিদিন দুশ্চিন্তা করতে হয় না। শুরুতে ব্যবসায় বিপুল উত্তেজনা থাকলেও তা বেশ দ্রুতই স্তিমিত হয়ে আসে।
এর পরও ও থেমে থাকেনি। চেষ্টা করেছে প্রকাশক হতে। প্রকাশক হিসেবে সফল হওয়া যেকোনো ব্যাপার না, সেটা ওর কাছে অনেকবার শুনেছি। ওই প্রকল্পে বোধ করি হুমায়ূন আহমেদকেও যুক্ত করতে চেয়েছিল। তবে এগুলো যে আসলে অন্যের কাজ, সেটা বুঝতে ওর খুব বেশি সময় লাগেনি।
জীবিকার প্রয়োজনে অন্য কিছু করতে চাইলেও আসলে মিলন শুরু থেকে মনেপ্রাণে শুধু লেখক হতেই চেয়েছে। সেখানেই ওর সব উচ্চাকাক্সক্ষা। তাই মিলনকে নিজের লেখালেখির জন্য যথেষ্ট সময় দিতে হয়। আরও অনেকটা সময় ও ব্যয় করে পড়ার জন্য। এরপর আর সময় কোথায়? অথচ লেখার বাইরে অন্য যেকোনো পেশায় সফল হতে হলে সেখানে দিতে হয় গভীর মনোযোগ। সেটা মিলনের জন্য মোটেই সহজ নয়। ওখানে ও স্বচ্ছন্দ হবে কী করে? কাজেই একসময় তুচ্ছ হয়ে যায় এসব জাগতিক কর্মকাণ্ড।
আগেই বলেছি, একসময় আমাদের বন্ধুদের মধ্যে ছিল সার্বক্ষণিক যোগাযোগ। তখন আমাদের অনেকের বাড়িতেই ফোন ছিল না। মোবাইল ফোন, ই-মেইল, ফেসবুক ছাড়া নিত্যদিনের এই যোগাযোগ কেমন করে সম্ভব হতো, সেটা ভাবলে এখন আশ্চর্যই লাগে। তার পরও আমরা ঠিকই সময়মতো একত্র হয়ে যেতাম। ছাত্রজীবনে আমি যেখানে কাজ করতাম, সেই ‘অরিয়ল অ্যাডভার্টাইজিং’-এর অফিসে আর ফরিদুর রেজা সাগরের ‘খাবার দাবার’ রেস্তোরাঁয় ছিল আমাদের আড্ডা।
বিভিন্ন কারণে সিনিয়র কবি, লেখক, সম্পাদক, নাট্যকার ও অধ্যাপকদের সঙ্গে আমাদের অনেকের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মতো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মিলনের অবস্থা ছিল একেবারে অন্য রকম। নিজে গদ্যলেখক। কিন্তু ছোট-বড় নানা বয়সের কবির সঙ্গে ওর ঘনিষ্ঠতা। কবিরা কেন ওকে এত পছন্দ করত আর এত ভালোবাসত তা আমার কাছে রহস্যময়। রফিক আজাদের সঙ্গে মিলনের সম্পর্ক তো সে সময় রীতিমতো বিখ্যাত। সেটাকে মিলন আরও জনপ্রিয় ও প্রবাদতুল্য করে তোলে নিজেদের নিয়ে লেখা উপন্যাসে।
আমার ঢাকা কলেজের শিক্ষক কবি মোহাম্মদ রফিক পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর হন। আমার সঙ্গে ওই সময় তার সম্পর্ক ছিল ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মতো। ‘বৈশাখী পূর্ণিমা’র পর তার কাব্যগ্রন্থ ‘কীর্তিনাশা’ তখন সদ্য বের হয়েছে। আমরা তার মুগ্ধ পাঠক। জাহাঙ্গীরনগরে তার বাসায় গিয়েছি অনেকবার। তিনি ঢাকায় এলে একবার না একবার অরিয়ল অফিসে আসবেনই। অন্যান্য কাজ শেষে আমাদের অফিসে এসে কখনো কখনো গোসল ও বিশ্রাম সেরে তারপর ইউনিভার্সিটির বাস ধরতেন। কিছুদিন পর ঈর্ষার সঙ্গে লক্ষ করি যে, এই কবির সঙ্গে মিলনের ঘনিষ্ঠতা হলো সবচেয়ে গভীর।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার আমার ঢাকা কলেজের শিক্ষক। ধারণা করি, আমি তার প্রিয় ছাত্রদের একজন। তার সম্পাদিত বিখ্যাত ‘কণ্ঠস্বর’ পত্রিকায় আমার লেখা ছাপা হয়। কিন্তু কিছুদিন অন্য কাজে ব্যস্ত থাকলে আমার কথা একদম ভুলে যান স্যার। জনপ্রিয় লেখক এবং জনপ্রিয় ধারার কথাসাহিত্য সম্পর্কে স্যার কতটা কঠোর মনোভাব পোষণ করেন, সেটা আমরা সবাই জানি। অথচ আশ্চর্য হয়ে দেখি, আমাদের বন্ধু মিলনের প্রতি স্যারের অসামান্য স্নেহ। আসলে একজন লেখকের একাগ্রতাকে সবাই মূল্য দেয়। সাহিত্যের মতো একটা বিষয়ের জন্য নিজেকে পুরোপুরি উৎসর্গ করে দেওয়াটা কোনো দেশে কোনো সমাজেই খুব বেশি দেখা যায় না। মিলনের এই অঙ্গীকারকে সম্মান জানিয়েছেন সবাই।
তরুণ লেখক হিসেবে মিলনকে কবিরা কতটা ভালোবাসে তার আরও পরিচয় পাই সেই দিনটাতে, যেদিন মিলন জার্মানি চলে যায়। আমরা তখনো ছাত্র। অল্প বয়সে ওর এই স্বেচ্ছা-নির্বাসন আমাদের সবাইকে ব্যথিত করেছে। ওর যাওয়ার দিনটাতে অনেকেই রীতিমতো শোকার্ত। কিন্তু যাকে বলে ক্রমাগত অশ্র“ বিসর্জন, সেটার প্রত্যক্ষদর্শী আমি ছাড়া খুব বেশি নেই।
স্মৃতি জিনিসটা এমনিতেই ঝামেলাজনক। আরও বিপজ্জনক হচ্ছে আমাদের বেপরোয়া তারুণ্যের স্মৃতি। এখন এ নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করে না। কখন সেটা কার কোন অনুভূতিতে আঘাত করবে বলা মুশকিল। সে জন্যই এ ধরনের স্মৃতিচারণায় আমন্ত্রণ জানালে আমি সাধারণত এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করি। বলি যে আমার হয়েছে সিলেক্টিভ অ্যামনেশিয়া। নিরাপত্তাজনিত কারণে বিশেষ বিশেষ জিনিস ভুলে গেছি। আর বিশেষ উপাদানগুলো বাদ দিলে যে স্মৃতিটুকু বাকি থাকে, সেটা নিজেদের যেমন অল্পই আনন্দ দেয়, অন্য পাঠকের জন্যও হয়ে যায় উত্তেজনাহীন ও নিরুত্তাপ।
তবু আমাদের সতর্ক থাকতেই হয়। ভুলে যেতে হয় কিছু গল্প। আর এভাবে আমাদের না-বলা গল্পগুলো হারিয়ে যায়। অন্যদিকে মিলনের স্মৃতিশক্তি ভয়াবহ রকমের প্রবল। ও সতীনাথ ভাদুড়ী অথবা তারাশঙ্করের কোনো উপন্যাসের চরিত্র, ঘটনা, সংলাপ এমনকি আস্ত প্যারাগ্রাফ মুখস্থ বলে দিতে পারে যেকোনো সময়। তাই ওর সঙ্গে সাহিত্য আলোচনা অতি আনন্দের। এহেন স্মৃতিশক্তি নিয়ে ও যদি যৌবনের স্মৃতিচারণা শুরু করে, তাহলে আমাদের অনেককেই রাজনৈতিক আশ্রয় খুঁজতে হবে অন্য কোনোখানে।
আশ্রয় খোঁজার প্রয়োজন ইতিমধ্যেই হতে পারত। ‘বন্ধুবান্ধব’ নামে মিলনের একটা বড়সড় বই আছে। এই লেখা এক মাসিকপত্রে বের হয় ধারাবাহিকভাবে। একেক কিস্তি লেখা ছাপা হয় আর আমি আতঙ্কের সঙ্গে পত্রিকা কিনে এনে গোপনে পড়ে দেখি ওতে কার কার কথা লেখা আছে। কোন ঘটনার কী ধরনের স্মৃতি। পত্রিকাটা বাড়িতে নিয়ে যাওয়া চলবে কি না। শেষ পর্যন্ত কোনো বড় দুর্বিপাক ছাড়াই লেখাটা শেষ হয়েছে। বই বের হয়েছে, কিন্তু বিরাট কোনো ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেনি। আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার আগেই অবশ্য মিলন হুমকি দিয়ে রেখেছে যে এই বইটা কেবল শুরু। বন্ধুদের সঙ্গে নানা স্মৃতি নিয়ে আরও বিস্তারিত রচনা লেখার পরিকল্পনা আছে ওর। আমার কথা হলো, বন্ধুদের নিয়ে লেখার কী দরকার? ঊনষাট-ষাট বছর বয়সে আমাদের সতেরো-আঠারো অথবা একুশ বছর বয়সের স্মৃতিগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া না করাটাই নিরাপদ।
সাহিত্যে মিলন যে একটা বড় কাজ করতে এসেছে, তা শুরু থেকেই স্পষ্ট ছিল। প্রথম দিকে লেখা কিছু উপন্যাস, কয়েকটি ছোটগল্প আর পরবর্তীকালে রচিত দীর্ঘ উপন্যাস ‘নূরজাহান’ পর্যন্ত নিজের আকাক্সক্ষা পূরণে অবিরত কাজ করেছে মিলন। ওর অসামান্য সাফল্য দেখি কাহিনির বিস্তারে, চরিত্র-সৃজন ও বিকাশে, পরিপাশের্^র অনুপুঙ্খ বিবরণে। সমাজের অন্তর্গত নানাবিধ ঘাত-প্রতিঘাত এবং তা থেকে তৈরি মানবিক জটিলতার উদ্ঘাটনে কথাসাহিত্যিক হিসেবে মিলন ওর উচ্চ সামর্থ্য এবং সুচারু শক্তিমত্তার স্বাক্ষর রেখেছে। বিশেষত ও অসামান্য কৃতিত্বের সঙ্গে আয়ত্ত করেছে গ্রামীণ জীবনপ্রবাহের সব খুঁটিনাটি। সমাজের অন্তর্গত সব মানবিক দ্বন্দ্ব^-জটিলতা এবং নানা ধরনের সংঘাতের সূত্র ওর জানা। এটা এক বিস্ময়।
কামনা করি, মিলন দীর্ঘজীবী হোক। দীর্ঘজীবী হোক ওর রচনাবলি। আমি আর মিলন যেন একসঙ্গে আমাদের জন্মদিন উদ্যাপন করতে পারি আরও অনেক বছর।
ব্যাচেলর জীবনে ডিম-আলুর ব্যবহার কার না জানা। করোনাকালে তো মেসের তিনবেলা খাবার উপাদান ছিল ভর্তা-ডিম ভাজি। কিন্তু সাম্প্রতিককালে অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়ায় এই দুটি পণ্যের খাবার তালিকা থেকে কাটছাঁট করছেন অধিকাংশ মেস সদস্যরা। কেবল প্রোটিন ও শর্করা পূরণীয় ডিম-আলুরই দাম বাড়েনি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রত্যেকের নাভিশ্বাস ওঠার মতো অবস্থা। পাশাপাশি আনুষঙ্গিক খরচ বাড়ায় মাস শেষে হিসাব মেলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে। ফলে মেস জীবনে ডিম-আলু খাওয়া যেন অনেকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তেমনি একজন স্বপ্না রানী দাশ। চাকরির সুবাদে নারায়ণগঞ্জের চাষা এলাকার ১০ জনের একটি মেসে থাকেন। পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে কাজ করেন স্থানীয় এক গার্মেন্টসে। মূল বেতনের বাইরে অতিরিক্ত কাজ করে সব মিলিয়ে ১৪ হাজার টাকা বেতন পান। তবে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় প্রাপ্ত বেতনে তার সংসার চালানো প্রায় কষ্টসাধ্য। তিনি বলেন, নির্মাণ শ্রমিক স্বামীর একার আয়েই চলে সংসার। পরিবারের হাল ধরতে গার্মেন্টসে কাজ করছি। এর জন্য খাবার তালিকাসহ প্রতিদিনের খরচের জন্য রুটিন মেনে চলি। মাংস কবে খেয়েছি মনে নেই। তবে সপ্তাহের চার দিন ডিম কিংবা আলু ভর্তা দিয়ে দুপুর-রাতের খাবার খেতাম। কিন্তু ডিম ও আলুর দাম বাড়ায় ডিমকে দুবেলা ও পরিমাণে আলু ভর্তাও কম খাচ্ছি। বাজারে ২০০ টাকার নিচে কোনো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। আমার একার জন্য ২০০ টাকায় মাছ কিনলে গ্রামে থাকা পরিবারের বাকি সদস্যদের খাবার জোগান দেওয়া কঠিন হয়। তাই মাছ খাওয়া বাদ দিয়ে কম কম সবজিতে দিন পার করতে হচ্ছে।
ভিড়ের শহরে এমন গল্প স্বপ্না রানী দাশের একার নয়। প্রায় প্রতিটি নিম্ন আয়ের মানুষের গল্প একই সূত্রে গাঁথা। তেমনি আরেক ব্যাচেলর মোহাম্মদ মাইদুল ইসলাম। বন্ধুদের সঙ্গে থাকেন যাত্রাবাড়ী এলাকায়। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, মেসে আগে দেখা যেত যেকোনো বেলায় তরকারি না
থাকলে তখন ডিমটা বেশি খাওয়া হতো। এমন করে সপ্তাহে কয়েকবেলাই ডিম খাওয়া হতো। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেখা যাচ্ছে যে, দাম অনেক বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিম কেনা বন্ধ করে দিয়েছি।
পর্যায়ক্রমে ডিম ও আলুর দাম বাড়ায় সব শ্রেণির মানুষের কষ্টের রেখাটা আরও বেড়েছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়। এক মাস আগেও ৩০-৩৫ টাকার মধ্যে ছিল। আলুর মতো প্রতি ডজন ডিম ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকায়। এ ছাড়া বাজারে কম দামের সবজির মধ্যে একমাত্র ঢেঁড়স পাওয়া যাচ্ছে ৬০ টাকায়। বাকি সবজি ৭০-১০০ টাকার মধ্যে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাকে।
রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজার, বাড্ডা ও রামপুরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের সবজির কেজিতে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বেগুন কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০, লম্বা বেগুন ৮০-৯০, কচুরমুখী ৮০-৮৫, বরবটি ৭০, করলা ৭০-৯০, আলু ৪৫-৫০ ও কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কাঁচা সবজির দাম প্রতি সপ্তাহে বাড়ে কমে। এর সঙ্গে প্রাকৃতিক একটা সম্পর্ক রয়েছে। তবে বাজারে আলুর দাম বাড়ার পেছনে সুপারশপগুলোর হাত রয়েছে। চলতি মৌসুমে বড় বড় সুপারশপ অস্বাভাবিক আলুর মজুদ করেছে। ফলে আলুর বাজার আরও চড়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাড্ডা বাজারের সবজি বিক্রেতার রাব্বি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সবজির বাজার দীর্ঘসময় থেকে ওঠানামা করছে। সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের সবজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের জন্য কোনোটিতে আবার ৩০ টাকা বেড়েছে। তবে বাজারে পর্যাপ্ত আলুর সরবরাহ থাকলেও এর দাম বাড়ছে। যা অস্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে।
দাম অপরিবর্তিত থেকে সব ধরনের মাংস বিক্রি হতে দেখা গেলেও ১০ টাকা বেড়ে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০-২০০ টাকায়। গরু ৭৫০-৭৮০ টাকা, খাসি ১ হাজার ১০০ টাকা ও প্রতি কেজি ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ টাকায়।
মাংসের বাজার স্থিতিশীল থাকলেও মাছের বাজার যেন নিম্নমধ্যবিত্তের আয়ত্তের বাইরে। তেলাপিয়া কিনতেও এখন গুনতে হচ্ছে ২৬০-২৮০ টাকা। প্রতি কেজি পাঙ্গাশ বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৪০, রুই ৩৫০-৪২০, কাতল ৩৫০-৪০০, নদীর লইট্ট্যা ২৩০-২৫০, পাবদা ৮৫০-৫০০, কই মাছ ৩০০ ও প্রতি কেজি ট্যাংরা বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকা।
কয়েক দিন আগে মামলার বিচার শুরু হয়েছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমার ধারণা, আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে আমানের (ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান) মতো আমাকেও চলে যেতে হবে ভেতরে (জেলে)।’ গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাদের (সরকার) উদ্দেশ্যটা অত্যন্ত পরিষ্কার। যারা সরকারের বিরোধিতা করছে, সরকারের পক্ষে নয়, তাদের সবাইকে কারাগারে ঢোকাতে চায়। এই লক্ষ্যে তারা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।’
আইন মন্ত্রণালয়ে চারজনের একটি সেল তৈরি করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘সেই সেলকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তাদের ভাষায় চাঞ্চল্যকর মামলা ও রাষ্ট্রবিরোধী মামলাগুলোকে যেন অতি দ্রুত রায় দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ড. ইউনূস একজন নোবেল লরেট। তার বিরুদ্ধে এমনভাবে লেগেছে, তাকে জেলে ঢুকিয়েই ছাড়বে।’
কালকে একজন মন্ত্রী বলেছেন, ‘আমেরিকার প্রেসিডেন্টকেও তো জেলে যেতে হয়। ড. ইউনূসকে আপনারা (সরকার) ব্যক্তিগতভাবে প্রতিহিংসা ও শত্রুতার কারণে ভিকটিম করে মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর চেষ্টা করছেন। আবার বলে কি, আমরা (বিএনপি) নাকি ড. ইউনূসের ওপর ভর করেছি। আমরা পুরোপুরিভাবে এ দেশের জনগণের ওপর ভর করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা (আওয়ামী লীগ) কেন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চান না। কারণ আপনারা জানেন, ওইটা করলে ১০টা আসনও পাবেন না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে (গতকাল) কোর্টে গিয়েছিলাম। প্রতিদিন হাজিরা দিতে হয়। আমানকে ১০ তারিখ হাজিরা দিতে হবে এবং সেখান থেকে কারাগারে চলে যেতে হবে মিথ্যা মামলায়। খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় গৃহবন্দি, তারেক রহমান নির্বাসিত। প্রতিদিনই হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মী কোর্টের বারান্দায় ঘোরাঘুরি করছে, বিভিন্ন আদালতে ঢুকছে। এই দৃশ্য কোনো গণতান্ত্রিক বিশ্বে নেই।’
‘নব্বইয়ে ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যে’র উদ্যোগে ‘নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান ও কিছু কথা’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে আলোচনা সভাটি আয়োজন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানের লেখা গ্রন্থটির প্রকাশক শাহজী প্রকাশনী সংস্থা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দারের সভাপতিত্বে ডাকসুর সাবেক এ জি এস নাজিম উদ্দিন আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আমান উল্লাহ আমান, সাবেক ছাত্রনেতা খায়রুল কবির খোকন, জহির উদ্দিন স্বপন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
‘পুলিশ কর্তাদের টাকা পাচারের সুযোগ দিয়েছে সরকার’
গতকাল দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের নিচতলায় ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের উদ্যোগে দোয়া মাহফিল হয়েছে। এই মাহফিলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘পুলিশ ও প্রশাসনের ২৭২ জন কর্মকর্তা বিদেশে টাকা পাচার করেছে, সেখানে তাদের স্ত্রী-পুত্রদেরও রেখেছে। পুলিশের ৩০ জন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টাকা পাচার করেছে। এগুলো কি শেখ হাসিনা জানেন না। পুলিশের জন্য ৯০ হাজার কোটি টাকার টিয়ারগ্যাস আমদানি করেছে জনগণের মুক্তির সংগ্রামে বাধা দেওয়ার জন্য।’
গণমিছিলের রুট জানাল বিএনপি
আগামীকাল শনিবার দুপুর আড়াইটায় রাজধানীতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি পৃথকভাবে গণমিছিল করবে। বিএনপি জানিয়েছে, ঢাকা উত্তরের গণমিছিলটি রামপুরার বেটার লাইফ হাসপাতালের সামনে থেকে শুরু হবে। আবুল হোটেল থেকে মালিবাগ রেলগেট, মৌচাক, মালিবাগ মোড় শান্তিনগর হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় পার হয়ে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হবে। আর দক্ষিণ বিএনপির গণমিছিল কমলাপুর থেকে শুরু হয়ে পীরজঙ্গি মাজার, আরামবাগ, ফকিরাপুল মোড় হয়ে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজের অপরাধ ঢাকতে এবং সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতেই কারান্তরীণ হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন বলে দাবি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের। তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ (গতকাল) গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে তার কারান্তরীণ হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। মির্জা ফখরুল নিশ্চয়ই কোনো অপরাধ করেছেন, তা না হলে কারান্তরীণ হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করবেন কেন?’
গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। তিনি মনে করেন, মির্জা ফখরুলের এই বক্তব্য অমূলক। নিজের অপরাধ ঢাকতে বা বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে তিনি গণমাধ্যমের সামনে এ বক্তব্য দিয়েছেন। খবর বাসস।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সরকার বিনা দোষে নিরপরাধ কাউকে আটক রাখে না বা আটক রাখার এখতিয়ারও সরকারের নেই। সরকার নির্দোষ কাউকে কোনো হয়রানি করছে না। দেশের বিচার বিভাগ স্বাধীন। তাই অপরাধী যে-ই হোক তাকে আইনের আওতায় আসতে হবে। আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। এখানে কারও সামাজিক বা রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচ্য নয়। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগ বিরোধী মত দমন কিংবা কোনো ধরনের মামলা-হামলা দিয়ে হয়রানি করে না বলে দাবি করেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতের যেসব ক্যাডার বাহিনী আগুন দিয়ে শত শত নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করেছে, সন্ত্রাস সৃষ্টি করে দেশের মানুষকে জিম্মি করার অপচেষ্টা চালিয়েছে এবং ফৌজদারি অপরাধ সংঘটন করেছে; আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাসে নিহত অসহায় পরিবারের সদস্যদের এবং অগ্নিদগ্ধ যেসব মানুষ এখনো ভয়াবহ যন্ত্রণা ভোগ করছে তাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আগুনসন্ত্রাসী মানবতাবিরোধী খুনিদের মামলার উদাহরণ টেনে মির্জা ফখরুল বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে হয়রানির তথাকথিত অভিযোগ উত্থাপন করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছেন।’
নিবন্ধন ও অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি ছাড়া বেসরকারি পর্যায়ের কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় চালানো যাবে না। কিন্ডারগার্টেন, নার্সারি স্কুল এমনকি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সংযুক্ত যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে, সবারই নিবন্ধন নিতে হবে। নিবন্ধন শেষে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতিও নিতে হবে স্কুলগুলোকে।
আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ। এ সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা তিন-চার মাস ধরে কাজ করেছি। আইন মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত ভেটিং শেষ হয়েছে। এখন এসআরও নম্বরের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। এটি পেলে হয়তো আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই গেজেট জারি হয়ে যাবে। এতে আমাদের প্রাথমিক পর্যায়ের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো একটা নির্দিষ্ট নিয়মনীতির আওতায় আসবে।’
সচিব বলেন, ‘বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় ৪০ হাজারের বেশি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। এর ৯০ শতাংশই চলছে নিবন্ধন ও অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি ছাড়া। তবে আমাদের ২০১১ সালের যে বিধিমালা ছিল, তাতে নিবন্ধনের জন্য সচিব পর্যন্ত ফাইল আসতে হতো। এখন এটাকে আমরা সহজ করে দিচ্ছি। উপজেলা শিক্ষা অফিসার তদন্ত করে রিপোর্ট দেবে এবং এর ভিত্তিতে বিভাগীয় উপপরিচালক নিবন্ধন দেবেন।’
ফরিদ আহাম্মদ আরও বলেন, গতানুগতিক পদ্ধতিতে আর প্রাথমিকে বৃত্তি দেওয়া হবে না। তবে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ ভাতা দেওয়া হবে। কোন পদ্ধতিতে দেওয়া হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ বিষয়ে কমিটি করা হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কুড়িগ্রাম জেলায় বর্তমানে একটি প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (পিটিআই) আছে। তারপরও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের সেই নিজ জেলার রৌমারি উপজেলায় নিজের গ্রামে নতুন একটি পিটিআই স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, ‘চরাঞ্চলের শিক্ষকদের সুবিধার্থে এই পিটিআই করা হচ্ছে। আর সেখানে তার পরিবারের কোনো জমি নেই। তবে গ্রামের আত্মীয়স্বজনের জমি আছে। কিন্তু সেখানকার জমি বাস্তবে দাম সরকারি দামের (অধিগ্রহণের হার) চেয়ে তিনগুণ বেশি। তার দাবি, লাভ নয় বরং লস (লোকসান) হচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বর্তমানে দেশে সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। এখনো ২৩ দশমিক ২ শতাংশ জনগোষ্ঠী নিরক্ষর। ইউনেস্কো ঘোষিত দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘পরিবর্তনশীল ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে সাক্ষরতার প্রসার’। আজ শুক্রবার নানা আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
অপেক্ষা আর মাত্র ৩ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই।
শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে। কিং খানের ‘জাওয়ান’ কাঁপাচ্ছে পর্দা, কাটতি বাড়ছে বক্স অফিসে; বিশ্বকাপে আইসিসির পকেট ভরবে তো?
প্রস্তুতি বলছে, ভরবে। উইকেটে হবে রান উৎসব, লড়াই হবে ধুন্ধুমার। তাতেই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হবে এক ব্লকবাস্টার মেগা হিট।
মাস তিনেক আগে, বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচগুলো যে ১০ ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে সেই ভেন্যুগুলোর কিউরেটরদের সঙ্গে বসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কিউরেটর। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের একটাই মন্ত্র, রান চাই।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে, ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলেছে সেই ম্যাচগুলো যদিও বিশ্বকাপের ভেন্যুতে হয়নি তবে সেই সব ম্যাচেও রানের বন্যা বয়েছে।
প্রথম দুটো ওয়ানডেতে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার করা ২৭৬ রান অনায়াসে তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে ভারত। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ঠেঙিয়ে তুলেছেন ৩৯৯ রান। তিন নম্বর ম্যাচে আবার অস্ট্রেলিয়া করেছে ৩৫২ রান, যা তাড়া করে ভারতও গিয়েছিল ২৮৬ অবধি।
উদ্বোধনী ম্যাচ হবে গুজরাতের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এখানে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। ম্যাচে শুভমান গিল করেন সেঞ্চুরি, ভারত করে ৪ উইকেটে ২৩৪ রান আর জবাবে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ৬৬ রানে।
বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের ধরন বুঝে ব্যাট করতে পারলে ৫০ ওভারে এখানে রানবন্যা হবে। বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দুই দল এখানে মুখোমুখি হয়েছে বহুবার, পোশাকের রঙ কখনো রঙিন কিংবা কখনো সাদা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ কমেনি। এই মাঠে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রান করে ভারতকে ২১ রানে হারিয়েছে সবশেষ ম্যাচে।
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ঘরের মাঠে সবশেষ মৌসুমে ধোনির ‘ইয়েলো আর্মি’ ৮ ম্যাচ খেলে ২০০ রানের ওপরে করেছে দুইবার, একবার জিতেছে অন্যবার হেরেছে। তবে দুই ইনিংসেই ২০০’র বেশি রান হয়েছে দুটো ম্যাচেই। অর্থাৎ চাইলে চেন্নাইকেও ব্যাটিং স্বর্গে পরিণত করা সম্ভব।
বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর টানা তিন ওয়ানডে জিতে সিরিজ তো নিশ্চিত করেছেই, টানা তিন ম্যাচে ৩০০’র ওপর রান করেছে। চতুর্থ ওয়ানডেতে তো ৪০০ পার করেছে প্রোটিয়ারা। ব্যাটিং উইকেটে তারাও যে কোনো প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। হেনরিক ক্লাসেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৮৩ বলে খেলেছেন ১৭৪ রানের ইনিংস। বিধ্বংসী রূপে ফিরছেন ডেভিড মিলারও।
প্রোটিয়ারা প্রথম ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে। সেখানে অবশ্য সবশেষ হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচেও খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে তারা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯৯ রানে। দিল্লির মাঠটা হয়তো খানিকটা স্পিনারদের দিকেই ঝুঁকবে, তবে অন্য মাঠগুলোতে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবে মেতে উঠতে দেখার সম্ভাবনা জোরালো। তাই অনেক সাবেক ক্রিকেটারই প্রোটিয়াদের দেখছেন শেষ চারে।
বিশ্বকাপের আগে ক্লাসেন ছাড়াও ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস খেলেছেন ১৮২ রানের ইনিংস, দারুণ ছন্দে ইংল্যান্ডের ডাভিড মালানও। তবে সেরা ছন্দে নিঃসন্দেহে শুভমান গিল। সবশেষ ৫ ইনিংসে দুটো শতরান আর একটা হাফসেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেলও আছেন দারুণ ছন্দে। দুটো হাফসেঞ্চুরি আর একটা সেঞ্চুরি সবশেষ ৫ ইনিংসে। হায়দ্রাবাদে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের ৩৪৫ রান কিউইরা তাড়া করেছে ৩৮ বল হাতে রেখে।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, এই বারের বিশ্বকাপে রানবন্যায় বোলারদের জন্য কাজটা হবে কঠিন। দেশ রূপান্তরকে আশরাফুল বলেন, ‘আমাদের পেসাররা গত এক দেড় বছর ধরে খুবই ভালো করছে। তবে যেহেতু ভারতের মাটিতে খেলা, আমরা দেখেছি যে সাড়ে ৩০০’র বেশি রান হচ্ছে প্রতিটা ম্যাচে। কেউ যদি ভালো না করে, তাকে মনে রাখতে হবে যে টুর্নামেন্টে পরের ম্যাচে ফিরে আসতে হবে। একজনের দিন খারাপ যেতেই পারে, কোনো ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান উঠেই যেতে পারে। ৯টা ম্যাচের ভেতর ৪-৫টা ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান হতে পারে। তাই বোলারদের ফিরে আসার মানসিকতা থাকতে হবে।’
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমও বলেছেন যে দেড় মাসের আসরে প্রস্তুত থাকতে হবে যে কোনো কিছুর জন্যই, ‘দেড় মাসের আসর, ৯টা ম্যাচ এই সময়ে খেলতে হবে বা তারও বেশি। অনেক উত্থান-পতন হবে। যে কোনো কিছুর জন্যই তৈরি থাকতে হবে।’
রান উৎসবের বিশ্বকাপ যে হতে যাচ্ছে, তার সব রসদই মজুদ। মাঠগুলোকে করা হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গ, বিশ্বকাপে আসার আগে সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরাও আছেন ছন্দে। শুধু প্রশ্ন এটাই, রান উৎসবের এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রান করবেন কে? সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাটিংয়ের ছবিটা যে মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।