
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাদ পড়া ভোটারদের তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে চাইলে ১৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভোটার হওয়ার জন্য তাদের আবেদন করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে কেউ চাইলে ভোটার এলাকা পরিবর্তনও করতে পারবেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে কমিশন সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি বলেন, ‘ভোটার নিবন্ধন আইন অনুযায়ী প্রতি বছর ২ মার্চ পূর্ববর্তী বছরের হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ২ মার্চ আমরা আগের বছরের ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছি। যেহেতু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে। সেই ক্ষেত্রে এই মধ্যবর্তী সময়ে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি যারা ভোটারযোগ্য হয়েছিলেন, কিন্তু ভোটার হতে পারেননি, তাদের ভোটার হওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।’
রায়েরবাজার এলাকায় সনাতনগড় নামে একটা জায়গা আছে। অভিজাত ধানমণ্ডি থেকে অল্পই দূরে, কিন্তু মনে হয় অনেকটা ভেতরে। আমাদের ছেলেবেলায় চারদিক অনেক খোলামেলা ছিল। তাই অনেক দূর থেকেই দেখা যেত সেখানকার পথঘাট, মাটির তৈরি পুরনো বাড়ি, আর অল্প কিছু নতুন বিল্ডিং অথবা টিনের ঘর। জিকাতলা থেকে কিছুদূর গেলেই একটা আলাদা জগৎ। ইট-বিছানো সরু রাস্তা। এক পাশের ইট সরিয়ে সদ্য বসানো হয়েছে ওয়াসার পানির পাইপ। তারপর তিতাস গ্যাসের লাইন বসানোর জন্য নতুন করে খোঁড়াখুঁড়ি। বাকি রাস্তার অনেকটাই ভেঙেচুরে গেছে বর্ষার বৃষ্টিতে। এই রাস্তার বেশ খানিকটা ভেতরে আমাদের বাড়ি। সুতরাং আমার কলেজে যাতায়াত আর অন্য সব ভাইবোনের প্রতিদিনের চলাফেরা এই ভাঙা রাস্তার ওপর দিয়েই করতে হয়। বৃষ্টির পানি রাস্তায় জমে গেলে জুতো খুলে হাতে নিয়ে হাঁটা। সদ্য স্বাধীন দেশে মধ্য-সত্তরে এটা কোনো ব্যাপার না। কিন্তু এরই মধ্যে হঠাৎ শুনি, আমাদের এই রাস্তার সংস্কার হবে। পুরো রাস্তা ঢালাইয়ের কাজ করে দেবে মিউনিসিপ্যালিটি, আজ যার নাম সিটি করপোরেশন। আমরা সেই অপেক্ষায় থাকি দীর্ঘকাল। তারপর একদিন সেখানে ইট-পাথর-বালি এনে জমা করা হয়। কিছু যন্ত্রপাতি আসে। কাজ শুরু হয়। মাঝেমধ্যে কাজের তত্ত্বাবধান করে এক তরুণ কন্ট্রাক্টর। একদিন দূর থেকে ওকে দেখি। মনে হয়, ওর সঙ্গে আগে অন্য কোথাও দেখা হয়েছে। বোধহয় লেখালেখির সূত্রেই পরিচয়। তাই এখানে ওকে দেখে আমি একটু বিস্মিত হই। একদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে ওর সঙ্গে গল্প করি। বুঝতে চেষ্টা করি, কীভাবে এই পেশায় এলো অল্প বয়সের ছেলেটি। প্রায় আমারই বয়সের জিন্স, টি-শার্ট পরা এই স্মার্ট তরুণের নাম ইমদাদুল হক মিলন।
আমাদের জন্মদিন যে একই তারিখে, সেটা জানা ছিল না। তখনো আমাদের মধ্যে তেমন ঘনিষ্ঠতা নেই। ওই বয়সে কেন এবং কীভাবে মিলন প্রথম শ্রেণির কন্ট্রাক্টর হিসেবে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কাজ শুরু করেছিল, সেটাও জানা হয়নি।
কিছুদিন পর নিয়মিত হয় আমাদের দেখা-সাক্ষাৎ। আরও কজন বন্ধুর সঙ্গে একত্রে আড্ডা, লেখালেখি ও নানা রকম পরিকল্পনা। এভাবে দিন কাটে। আনন্দ, হইচই আর হতাশার দিন। বন্ধুত্ব গভীরতর ও স্থায়ী হতে থাকে। সে সময় দেখেছি মিলন বই পড়ে প্রচুর আর লেখালেখিতে অসম্ভব সিরিয়াস। অথচ জীবিকার জন্য ও অন্য কিছু করতে চায়। এটা কীভাবে সম্ভব?
বিচিত্র কিছু করার চেষ্টা মিলন চালিয়ে গেছে আরও কিছুদিন। সত্তর-আশির দশকে আমাদের বেশ কিছু নামি কবি-লেখক অ্যাড এজেন্সিতে চাকরি করতেন। কপি, ক্যাপশন ও ট্যাগ লাইন লেখা আর কিছু অনুবাদ। তাদের মতো আমিও ছাত্রজীবনে বেশ কিছুদিন এ ধরনের কাজ করি। কিন্তু মিলন আরও বড় কিছু করতে চায়। তাই চাকরির চেষ্টা না করে নিজেই একসময় অ্যাড এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করে ফেলে। তখন এ বিষয়টি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। আমাদের বন্ধু ও পরিচিতজনদের প্রত্যেকে একটা করে এজেন্সি বা বিজ্ঞাপন সংস্থা তৈরি করছে। আর মিলন নিজে যখন দোয়েল নাম দিয়ে অফিস সাজিয়ে বসে, মনে হয় ও বিশাল কোনো ব্যবসায়ী হতে চলেছে। তাহলে ওর লেখালেখির কী হবে? সেটা নিয়ে অবশ্য বেশিদিন দুশ্চিন্তা করতে হয় না। শুরুতে ব্যবসায় বিপুল উত্তেজনা থাকলেও তা বেশ দ্রুতই স্তিমিত হয়ে আসে।
এর পরও ও থেমে থাকেনি। চেষ্টা করেছে প্রকাশক হতে। প্রকাশক হিসেবে সফল হওয়া যেকোনো ব্যাপার না, সেটা ওর কাছে অনেকবার শুনেছি। ওই প্রকল্পে বোধ করি হুমায়ূন আহমেদকেও যুক্ত করতে চেয়েছিল। তবে এগুলো যে আসলে অন্যের কাজ, সেটা বুঝতে ওর খুব বেশি সময় লাগেনি।
জীবিকার প্রয়োজনে অন্য কিছু করতে চাইলেও আসলে মিলন শুরু থেকে মনেপ্রাণে শুধু লেখক হতেই চেয়েছে। সেখানেই ওর সব উচ্চাকাক্সক্ষা। তাই মিলনকে নিজের লেখালেখির জন্য যথেষ্ট সময় দিতে হয়। আরও অনেকটা সময় ও ব্যয় করে পড়ার জন্য। এরপর আর সময় কোথায়? অথচ লেখার বাইরে অন্য যেকোনো পেশায় সফল হতে হলে সেখানে দিতে হয় গভীর মনোযোগ। সেটা মিলনের জন্য মোটেই সহজ নয়। ওখানে ও স্বচ্ছন্দ হবে কী করে? কাজেই একসময় তুচ্ছ হয়ে যায় এসব জাগতিক কর্মকাণ্ড।
আগেই বলেছি, একসময় আমাদের বন্ধুদের মধ্যে ছিল সার্বক্ষণিক যোগাযোগ। তখন আমাদের অনেকের বাড়িতেই ফোন ছিল না। মোবাইল ফোন, ই-মেইল, ফেসবুক ছাড়া নিত্যদিনের এই যোগাযোগ কেমন করে সম্ভব হতো, সেটা ভাবলে এখন আশ্চর্যই লাগে। তার পরও আমরা ঠিকই সময়মতো একত্র হয়ে যেতাম। ছাত্রজীবনে আমি যেখানে কাজ করতাম, সেই ‘অরিয়ল অ্যাডভার্টাইজিং’-এর অফিসে আর ফরিদুর রেজা সাগরের ‘খাবার দাবার’ রেস্তোরাঁয় ছিল আমাদের আড্ডা।
বিভিন্ন কারণে সিনিয়র কবি, লেখক, সম্পাদক, নাট্যকার ও অধ্যাপকদের সঙ্গে আমাদের অনেকের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মতো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মিলনের অবস্থা ছিল একেবারে অন্য রকম। নিজে গদ্যলেখক। কিন্তু ছোট-বড় নানা বয়সের কবির সঙ্গে ওর ঘনিষ্ঠতা। কবিরা কেন ওকে এত পছন্দ করত আর এত ভালোবাসত তা আমার কাছে রহস্যময়। রফিক আজাদের সঙ্গে মিলনের সম্পর্ক তো সে সময় রীতিমতো বিখ্যাত। সেটাকে মিলন আরও জনপ্রিয় ও প্রবাদতুল্য করে তোলে নিজেদের নিয়ে লেখা উপন্যাসে।
আমার ঢাকা কলেজের শিক্ষক কবি মোহাম্মদ রফিক পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর হন। আমার সঙ্গে ওই সময় তার সম্পর্ক ছিল ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মতো। ‘বৈশাখী পূর্ণিমা’র পর তার কাব্যগ্রন্থ ‘কীর্তিনাশা’ তখন সদ্য বের হয়েছে। আমরা তার মুগ্ধ পাঠক। জাহাঙ্গীরনগরে তার বাসায় গিয়েছি অনেকবার। তিনি ঢাকায় এলে একবার না একবার অরিয়ল অফিসে আসবেনই। অন্যান্য কাজ শেষে আমাদের অফিসে এসে কখনো কখনো গোসল ও বিশ্রাম সেরে তারপর ইউনিভার্সিটির বাস ধরতেন। কিছুদিন পর ঈর্ষার সঙ্গে লক্ষ করি যে, এই কবির সঙ্গে মিলনের ঘনিষ্ঠতা হলো সবচেয়ে গভীর।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার আমার ঢাকা কলেজের শিক্ষক। ধারণা করি, আমি তার প্রিয় ছাত্রদের একজন। তার সম্পাদিত বিখ্যাত ‘কণ্ঠস্বর’ পত্রিকায় আমার লেখা ছাপা হয়। কিন্তু কিছুদিন অন্য কাজে ব্যস্ত থাকলে আমার কথা একদম ভুলে যান স্যার। জনপ্রিয় লেখক এবং জনপ্রিয় ধারার কথাসাহিত্য সম্পর্কে স্যার কতটা কঠোর মনোভাব পোষণ করেন, সেটা আমরা সবাই জানি। অথচ আশ্চর্য হয়ে দেখি, আমাদের বন্ধু মিলনের প্রতি স্যারের অসামান্য স্নেহ। আসলে একজন লেখকের একাগ্রতাকে সবাই মূল্য দেয়। সাহিত্যের মতো একটা বিষয়ের জন্য নিজেকে পুরোপুরি উৎসর্গ করে দেওয়াটা কোনো দেশে কোনো সমাজেই খুব বেশি দেখা যায় না। মিলনের এই অঙ্গীকারকে সম্মান জানিয়েছেন সবাই।
তরুণ লেখক হিসেবে মিলনকে কবিরা কতটা ভালোবাসে তার আরও পরিচয় পাই সেই দিনটাতে, যেদিন মিলন জার্মানি চলে যায়। আমরা তখনো ছাত্র। অল্প বয়সে ওর এই স্বেচ্ছা-নির্বাসন আমাদের সবাইকে ব্যথিত করেছে। ওর যাওয়ার দিনটাতে অনেকেই রীতিমতো শোকার্ত। কিন্তু যাকে বলে ক্রমাগত অশ্র“ বিসর্জন, সেটার প্রত্যক্ষদর্শী আমি ছাড়া খুব বেশি নেই।
স্মৃতি জিনিসটা এমনিতেই ঝামেলাজনক। আরও বিপজ্জনক হচ্ছে আমাদের বেপরোয়া তারুণ্যের স্মৃতি। এখন এ নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করে না। কখন সেটা কার কোন অনুভূতিতে আঘাত করবে বলা মুশকিল। সে জন্যই এ ধরনের স্মৃতিচারণায় আমন্ত্রণ জানালে আমি সাধারণত এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করি। বলি যে আমার হয়েছে সিলেক্টিভ অ্যামনেশিয়া। নিরাপত্তাজনিত কারণে বিশেষ বিশেষ জিনিস ভুলে গেছি। আর বিশেষ উপাদানগুলো বাদ দিলে যে স্মৃতিটুকু বাকি থাকে, সেটা নিজেদের যেমন অল্পই আনন্দ দেয়, অন্য পাঠকের জন্যও হয়ে যায় উত্তেজনাহীন ও নিরুত্তাপ।
তবু আমাদের সতর্ক থাকতেই হয়। ভুলে যেতে হয় কিছু গল্প। আর এভাবে আমাদের না-বলা গল্পগুলো হারিয়ে যায়। অন্যদিকে মিলনের স্মৃতিশক্তি ভয়াবহ রকমের প্রবল। ও সতীনাথ ভাদুড়ী অথবা তারাশঙ্করের কোনো উপন্যাসের চরিত্র, ঘটনা, সংলাপ এমনকি আস্ত প্যারাগ্রাফ মুখস্থ বলে দিতে পারে যেকোনো সময়। তাই ওর সঙ্গে সাহিত্য আলোচনা অতি আনন্দের। এহেন স্মৃতিশক্তি নিয়ে ও যদি যৌবনের স্মৃতিচারণা শুরু করে, তাহলে আমাদের অনেককেই রাজনৈতিক আশ্রয় খুঁজতে হবে অন্য কোনোখানে।
আশ্রয় খোঁজার প্রয়োজন ইতিমধ্যেই হতে পারত। ‘বন্ধুবান্ধব’ নামে মিলনের একটা বড়সড় বই আছে। এই লেখা এক মাসিকপত্রে বের হয় ধারাবাহিকভাবে। একেক কিস্তি লেখা ছাপা হয় আর আমি আতঙ্কের সঙ্গে পত্রিকা কিনে এনে গোপনে পড়ে দেখি ওতে কার কার কথা লেখা আছে। কোন ঘটনার কী ধরনের স্মৃতি। পত্রিকাটা বাড়িতে নিয়ে যাওয়া চলবে কি না। শেষ পর্যন্ত কোনো বড় দুর্বিপাক ছাড়াই লেখাটা শেষ হয়েছে। বই বের হয়েছে, কিন্তু বিরাট কোনো ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেনি। আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার আগেই অবশ্য মিলন হুমকি দিয়ে রেখেছে যে এই বইটা কেবল শুরু। বন্ধুদের সঙ্গে নানা স্মৃতি নিয়ে আরও বিস্তারিত রচনা লেখার পরিকল্পনা আছে ওর। আমার কথা হলো, বন্ধুদের নিয়ে লেখার কী দরকার? ঊনষাট-ষাট বছর বয়সে আমাদের সতেরো-আঠারো অথবা একুশ বছর বয়সের স্মৃতিগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া না করাটাই নিরাপদ।
সাহিত্যে মিলন যে একটা বড় কাজ করতে এসেছে, তা শুরু থেকেই স্পষ্ট ছিল। প্রথম দিকে লেখা কিছু উপন্যাস, কয়েকটি ছোটগল্প আর পরবর্তীকালে রচিত দীর্ঘ উপন্যাস ‘নূরজাহান’ পর্যন্ত নিজের আকাক্সক্ষা পূরণে অবিরত কাজ করেছে মিলন। ওর অসামান্য সাফল্য দেখি কাহিনির বিস্তারে, চরিত্র-সৃজন ও বিকাশে, পরিপাশের্^র অনুপুঙ্খ বিবরণে। সমাজের অন্তর্গত নানাবিধ ঘাত-প্রতিঘাত এবং তা থেকে তৈরি মানবিক জটিলতার উদ্ঘাটনে কথাসাহিত্যিক হিসেবে মিলন ওর উচ্চ সামর্থ্য এবং সুচারু শক্তিমত্তার স্বাক্ষর রেখেছে। বিশেষত ও অসামান্য কৃতিত্বের সঙ্গে আয়ত্ত করেছে গ্রামীণ জীবনপ্রবাহের সব খুঁটিনাটি। সমাজের অন্তর্গত সব মানবিক দ্বন্দ্ব^-জটিলতা এবং নানা ধরনের সংঘাতের সূত্র ওর জানা। এটা এক বিস্ময়।
কামনা করি, মিলন দীর্ঘজীবী হোক। দীর্ঘজীবী হোক ওর রচনাবলি। আমি আর মিলন যেন একসঙ্গে আমাদের জন্মদিন উদ্যাপন করতে পারি আরও অনেক বছর।
ব্যাচেলর জীবনে ডিম-আলুর ব্যবহার কার না জানা। করোনাকালে তো মেসের তিনবেলা খাবার উপাদান ছিল ভর্তা-ডিম ভাজি। কিন্তু সাম্প্রতিককালে অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়ায় এই দুটি পণ্যের খাবার তালিকা থেকে কাটছাঁট করছেন অধিকাংশ মেস সদস্যরা। কেবল প্রোটিন ও শর্করা পূরণীয় ডিম-আলুরই দাম বাড়েনি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রত্যেকের নাভিশ্বাস ওঠার মতো অবস্থা। পাশাপাশি আনুষঙ্গিক খরচ বাড়ায় মাস শেষে হিসাব মেলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে। ফলে মেস জীবনে ডিম-আলু খাওয়া যেন অনেকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তেমনি একজন স্বপ্না রানী দাশ। চাকরির সুবাদে নারায়ণগঞ্জের চাষা এলাকার ১০ জনের একটি মেসে থাকেন। পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে কাজ করেন স্থানীয় এক গার্মেন্টসে। মূল বেতনের বাইরে অতিরিক্ত কাজ করে সব মিলিয়ে ১৪ হাজার টাকা বেতন পান। তবে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় প্রাপ্ত বেতনে তার সংসার চালানো প্রায় কষ্টসাধ্য। তিনি বলেন, নির্মাণ শ্রমিক স্বামীর একার আয়েই চলে সংসার। পরিবারের হাল ধরতে গার্মেন্টসে কাজ করছি। এর জন্য খাবার তালিকাসহ প্রতিদিনের খরচের জন্য রুটিন মেনে চলি। মাংস কবে খেয়েছি মনে নেই। তবে সপ্তাহের চার দিন ডিম কিংবা আলু ভর্তা দিয়ে দুপুর-রাতের খাবার খেতাম। কিন্তু ডিম ও আলুর দাম বাড়ায় ডিমকে দুবেলা ও পরিমাণে আলু ভর্তাও কম খাচ্ছি। বাজারে ২০০ টাকার নিচে কোনো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। আমার একার জন্য ২০০ টাকায় মাছ কিনলে গ্রামে থাকা পরিবারের বাকি সদস্যদের খাবার জোগান দেওয়া কঠিন হয়। তাই মাছ খাওয়া বাদ দিয়ে কম কম সবজিতে দিন পার করতে হচ্ছে।
ভিড়ের শহরে এমন গল্প স্বপ্না রানী দাশের একার নয়। প্রায় প্রতিটি নিম্ন আয়ের মানুষের গল্প একই সূত্রে গাঁথা। তেমনি আরেক ব্যাচেলর মোহাম্মদ মাইদুল ইসলাম। বন্ধুদের সঙ্গে থাকেন যাত্রাবাড়ী এলাকায়। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, মেসে আগে দেখা যেত যেকোনো বেলায় তরকারি না
থাকলে তখন ডিমটা বেশি খাওয়া হতো। এমন করে সপ্তাহে কয়েকবেলাই ডিম খাওয়া হতো। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেখা যাচ্ছে যে, দাম অনেক বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিম কেনা বন্ধ করে দিয়েছি।
পর্যায়ক্রমে ডিম ও আলুর দাম বাড়ায় সব শ্রেণির মানুষের কষ্টের রেখাটা আরও বেড়েছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়। এক মাস আগেও ৩০-৩৫ টাকার মধ্যে ছিল। আলুর মতো প্রতি ডজন ডিম ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকায়। এ ছাড়া বাজারে কম দামের সবজির মধ্যে একমাত্র ঢেঁড়স পাওয়া যাচ্ছে ৬০ টাকায়। বাকি সবজি ৭০-১০০ টাকার মধ্যে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাকে।
রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজার, বাড্ডা ও রামপুরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের সবজির কেজিতে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বেগুন কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০, লম্বা বেগুন ৮০-৯০, কচুরমুখী ৮০-৮৫, বরবটি ৭০, করলা ৭০-৯০, আলু ৪৫-৫০ ও কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কাঁচা সবজির দাম প্রতি সপ্তাহে বাড়ে কমে। এর সঙ্গে প্রাকৃতিক একটা সম্পর্ক রয়েছে। তবে বাজারে আলুর দাম বাড়ার পেছনে সুপারশপগুলোর হাত রয়েছে। চলতি মৌসুমে বড় বড় সুপারশপ অস্বাভাবিক আলুর মজুদ করেছে। ফলে আলুর বাজার আরও চড়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাড্ডা বাজারের সবজি বিক্রেতার রাব্বি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সবজির বাজার দীর্ঘসময় থেকে ওঠানামা করছে। সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের সবজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের জন্য কোনোটিতে আবার ৩০ টাকা বেড়েছে। তবে বাজারে পর্যাপ্ত আলুর সরবরাহ থাকলেও এর দাম বাড়ছে। যা অস্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে।
দাম অপরিবর্তিত থেকে সব ধরনের মাংস বিক্রি হতে দেখা গেলেও ১০ টাকা বেড়ে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০-২০০ টাকায়। গরু ৭৫০-৭৮০ টাকা, খাসি ১ হাজার ১০০ টাকা ও প্রতি কেজি ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ টাকায়।
মাংসের বাজার স্থিতিশীল থাকলেও মাছের বাজার যেন নিম্নমধ্যবিত্তের আয়ত্তের বাইরে। তেলাপিয়া কিনতেও এখন গুনতে হচ্ছে ২৬০-২৮০ টাকা। প্রতি কেজি পাঙ্গাশ বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৪০, রুই ৩৫০-৪২০, কাতল ৩৫০-৪০০, নদীর লইট্ট্যা ২৩০-২৫০, পাবদা ৮৫০-৫০০, কই মাছ ৩০০ ও প্রতি কেজি ট্যাংরা বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকা।
কয়েক দিন আগে মামলার বিচার শুরু হয়েছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমার ধারণা, আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে আমানের (ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান) মতো আমাকেও চলে যেতে হবে ভেতরে (জেলে)।’ গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাদের (সরকার) উদ্দেশ্যটা অত্যন্ত পরিষ্কার। যারা সরকারের বিরোধিতা করছে, সরকারের পক্ষে নয়, তাদের সবাইকে কারাগারে ঢোকাতে চায়। এই লক্ষ্যে তারা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।’
আইন মন্ত্রণালয়ে চারজনের একটি সেল তৈরি করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘সেই সেলকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তাদের ভাষায় চাঞ্চল্যকর মামলা ও রাষ্ট্রবিরোধী মামলাগুলোকে যেন অতি দ্রুত রায় দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ড. ইউনূস একজন নোবেল লরেট। তার বিরুদ্ধে এমনভাবে লেগেছে, তাকে জেলে ঢুকিয়েই ছাড়বে।’
কালকে একজন মন্ত্রী বলেছেন, ‘আমেরিকার প্রেসিডেন্টকেও তো জেলে যেতে হয়। ড. ইউনূসকে আপনারা (সরকার) ব্যক্তিগতভাবে প্রতিহিংসা ও শত্রুতার কারণে ভিকটিম করে মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর চেষ্টা করছেন। আবার বলে কি, আমরা (বিএনপি) নাকি ড. ইউনূসের ওপর ভর করেছি। আমরা পুরোপুরিভাবে এ দেশের জনগণের ওপর ভর করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা (আওয়ামী লীগ) কেন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চান না। কারণ আপনারা জানেন, ওইটা করলে ১০টা আসনও পাবেন না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে (গতকাল) কোর্টে গিয়েছিলাম। প্রতিদিন হাজিরা দিতে হয়। আমানকে ১০ তারিখ হাজিরা দিতে হবে এবং সেখান থেকে কারাগারে চলে যেতে হবে মিথ্যা মামলায়। খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় গৃহবন্দি, তারেক রহমান নির্বাসিত। প্রতিদিনই হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মী কোর্টের বারান্দায় ঘোরাঘুরি করছে, বিভিন্ন আদালতে ঢুকছে। এই দৃশ্য কোনো গণতান্ত্রিক বিশ্বে নেই।’
‘নব্বইয়ে ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যে’র উদ্যোগে ‘নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান ও কিছু কথা’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে আলোচনা সভাটি আয়োজন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানের লেখা গ্রন্থটির প্রকাশক শাহজী প্রকাশনী সংস্থা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দারের সভাপতিত্বে ডাকসুর সাবেক এ জি এস নাজিম উদ্দিন আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আমান উল্লাহ আমান, সাবেক ছাত্রনেতা খায়রুল কবির খোকন, জহির উদ্দিন স্বপন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
‘পুলিশ কর্তাদের টাকা পাচারের সুযোগ দিয়েছে সরকার’
গতকাল দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের নিচতলায় ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের উদ্যোগে দোয়া মাহফিল হয়েছে। এই মাহফিলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘পুলিশ ও প্রশাসনের ২৭২ জন কর্মকর্তা বিদেশে টাকা পাচার করেছে, সেখানে তাদের স্ত্রী-পুত্রদেরও রেখেছে। পুলিশের ৩০ জন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টাকা পাচার করেছে। এগুলো কি শেখ হাসিনা জানেন না। পুলিশের জন্য ৯০ হাজার কোটি টাকার টিয়ারগ্যাস আমদানি করেছে জনগণের মুক্তির সংগ্রামে বাধা দেওয়ার জন্য।’
গণমিছিলের রুট জানাল বিএনপি
আগামীকাল শনিবার দুপুর আড়াইটায় রাজধানীতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি পৃথকভাবে গণমিছিল করবে। বিএনপি জানিয়েছে, ঢাকা উত্তরের গণমিছিলটি রামপুরার বেটার লাইফ হাসপাতালের সামনে থেকে শুরু হবে। আবুল হোটেল থেকে মালিবাগ রেলগেট, মৌচাক, মালিবাগ মোড় শান্তিনগর হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় পার হয়ে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হবে। আর দক্ষিণ বিএনপির গণমিছিল কমলাপুর থেকে শুরু হয়ে পীরজঙ্গি মাজার, আরামবাগ, ফকিরাপুল মোড় হয়ে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজের অপরাধ ঢাকতে এবং সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতেই কারান্তরীণ হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন বলে দাবি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের। তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ (গতকাল) গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে তার কারান্তরীণ হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। মির্জা ফখরুল নিশ্চয়ই কোনো অপরাধ করেছেন, তা না হলে কারান্তরীণ হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করবেন কেন?’
গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। তিনি মনে করেন, মির্জা ফখরুলের এই বক্তব্য অমূলক। নিজের অপরাধ ঢাকতে বা বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে তিনি গণমাধ্যমের সামনে এ বক্তব্য দিয়েছেন। খবর বাসস।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সরকার বিনা দোষে নিরপরাধ কাউকে আটক রাখে না বা আটক রাখার এখতিয়ারও সরকারের নেই। সরকার নির্দোষ কাউকে কোনো হয়রানি করছে না। দেশের বিচার বিভাগ স্বাধীন। তাই অপরাধী যে-ই হোক তাকে আইনের আওতায় আসতে হবে। আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। এখানে কারও সামাজিক বা রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচ্য নয়। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগ বিরোধী মত দমন কিংবা কোনো ধরনের মামলা-হামলা দিয়ে হয়রানি করে না বলে দাবি করেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতের যেসব ক্যাডার বাহিনী আগুন দিয়ে শত শত নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করেছে, সন্ত্রাস সৃষ্টি করে দেশের মানুষকে জিম্মি করার অপচেষ্টা চালিয়েছে এবং ফৌজদারি অপরাধ সংঘটন করেছে; আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাসে নিহত অসহায় পরিবারের সদস্যদের এবং অগ্নিদগ্ধ যেসব মানুষ এখনো ভয়াবহ যন্ত্রণা ভোগ করছে তাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আগুনসন্ত্রাসী মানবতাবিরোধী খুনিদের মামলার উদাহরণ টেনে মির্জা ফখরুল বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে হয়রানির তথাকথিত অভিযোগ উত্থাপন করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছেন।’
নিবন্ধন ও অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি ছাড়া বেসরকারি পর্যায়ের কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় চালানো যাবে না। কিন্ডারগার্টেন, নার্সারি স্কুল এমনকি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সংযুক্ত যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে, সবারই নিবন্ধন নিতে হবে। নিবন্ধন শেষে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতিও নিতে হবে স্কুলগুলোকে।
আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ। এ সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা তিন-চার মাস ধরে কাজ করেছি। আইন মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত ভেটিং শেষ হয়েছে। এখন এসআরও নম্বরের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। এটি পেলে হয়তো আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই গেজেট জারি হয়ে যাবে। এতে আমাদের প্রাথমিক পর্যায়ের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো একটা নির্দিষ্ট নিয়মনীতির আওতায় আসবে।’
সচিব বলেন, ‘বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় ৪০ হাজারের বেশি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। এর ৯০ শতাংশই চলছে নিবন্ধন ও অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি ছাড়া। তবে আমাদের ২০১১ সালের যে বিধিমালা ছিল, তাতে নিবন্ধনের জন্য সচিব পর্যন্ত ফাইল আসতে হতো। এখন এটাকে আমরা সহজ করে দিচ্ছি। উপজেলা শিক্ষা অফিসার তদন্ত করে রিপোর্ট দেবে এবং এর ভিত্তিতে বিভাগীয় উপপরিচালক নিবন্ধন দেবেন।’
ফরিদ আহাম্মদ আরও বলেন, গতানুগতিক পদ্ধতিতে আর প্রাথমিকে বৃত্তি দেওয়া হবে না। তবে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ ভাতা দেওয়া হবে। কোন পদ্ধতিতে দেওয়া হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ বিষয়ে কমিটি করা হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কুড়িগ্রাম জেলায় বর্তমানে একটি প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (পিটিআই) আছে। তারপরও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের সেই নিজ জেলার রৌমারি উপজেলায় নিজের গ্রামে নতুন একটি পিটিআই স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, ‘চরাঞ্চলের শিক্ষকদের সুবিধার্থে এই পিটিআই করা হচ্ছে। আর সেখানে তার পরিবারের কোনো জমি নেই। তবে গ্রামের আত্মীয়স্বজনের জমি আছে। কিন্তু সেখানকার জমি বাস্তবে দাম সরকারি দামের (অধিগ্রহণের হার) চেয়ে তিনগুণ বেশি। তার দাবি, লাভ নয় বরং লস (লোকসান) হচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বর্তমানে দেশে সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। এখনো ২৩ দশমিক ২ শতাংশ জনগোষ্ঠী নিরক্ষর। ইউনেস্কো ঘোষিত দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘পরিবর্তনশীল ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে সাক্ষরতার প্রসার’। আজ শুক্রবার নানা আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
আগামী চেস গিল্ড স্কুল দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আইয়ান রহমান ও মনন রেজা নীড়। একক ইভেন্টের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে আইয়ান ও ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নীড়। ৭ রাউন্ডের খেলায় আইয়ান ও নীড় দুজনই পেয়েছে সাড়ে ছয় পয়েন্ট করে।
বিটজ দলগত বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এলিগেন্ট চেস একাডেমি। এই দলে খেলেছে জারিফ হক আফনান, তাসরিক সায়হান, সিয়াম চৌধুরী ও নীলাভা চৌধুরী। আজ শনিবার দাবা ফেডারেশন কার্যালয়ে শেষ হয়েছে এই প্রতিযোগিতা।
আগামী চেস গিল্ডের আয়োজনে গত ২৮ সেপ্টেম্বর শুরু হয় ‘আমরা ৯২’ আগামী চেস গিল্ড স্কুল রেটিং টুর্নামেন্ট। সুইস লিগ পদ্ধতিতে হয়েছে খেলা। একক ও দলগত দুই বিভাগে অংশ নেয় ১৪৫ জন দাবাড়ু। টুর্নামেন্টে বিজয়ীরা ট্রফি, মেডেল ও সার্টিফিকেটের পাশাপাশি পেয়েছে ৭০ হাজার টাকা।
টুর্নামেন্ট শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন গ্র্যান্ডমাস্টার রিফাত বিন সাত্তার, আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার রানী হামিদ। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম।
টানা ৬ ম্যাচ জিতে লা লিগার শীর্ষে উঠে এসেছিল জিরোনা। আগের রাতে সেভিয়াকে হারানো বার্সেলোনা সেই জিরোনাকে পেছনে ফেলে। আর রিয়াল মাদ্রিদ এবার উড়তে থাকা জিরোনাকে হারিয়ে লা লিগার কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার করেছে।
শনিবার মন্তিলিভি স্টেডিয়ামে জিরোনাকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে কার্লো আনচেলত্তির দল। রিয়ালের হয়ে গোল তিনটি করেছেন জোসেলু, অঁরেলিয়ে চুয়ামেনি ও জুড বেলিংহাম।
আট ম্যাচের সাতটিতে জিতে রিয়ালের পয়েন্ট এখন ২১। সমান ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে বার্সেলোনা। আর টানা ছয় জয়ের পর রিয়ালের কাছে হেরে যাওয়া জিরোনা ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে তিনে।
সপ্তাহ খানেক আগেই আতলেতিকো মাদ্রিদে গিয়ে ৩-১ গোলে হেরেছিল রিয়াল। এবার জিরোনায় গিয়ে
প্রথমার্ধেই ২ গোলে এগিয়ে যায় আনচেলোত্তির শিষ্যরা। এর মধ্যে ১৭ মিনিটে বেলিংহামের ক্রস থেকে বল জালে পাঠান জোসেলু। আর ২২ মিনিটে টনি ক্রুসের কর্নার থেকে হেডে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন চুয়ামেনি।
রিয়াল ব্যবধান ৩-০ করে ৭১ মিনিটে। জোসেলুর শট জিরোনা গোলরক্ষক প্রতিহত করলেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি। নাগালে বল পেয়ে দারুণভাবে বল জালে পাঠান বেলিংহাম। এটি রিয়ালের হয়ে ৭ ম্যাচে তার অষ্টম গোল।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।