
সরকার অবিবেচকের মতো দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে কথাবার্তা বলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘আজকে তাদের কারণে বাংলাদেশ বিশে^র বৃহৎ শক্তিগুলোর ক্ষমতার প্রভাব বলয়ের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে চলেছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’
গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এ মন্তব্য করেন। মহিলা দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালির আগে সংক্ষিপ্ত এ সমাবেশ হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন সবচেয়ে আশঙ্কার কথা যেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসার পর তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেখানে একটা কথা খুব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, আজকে বাংলাদেশ একটা বৃহৎ শক্তিগুলোর মর্যাদার লড়াইয়ে তাদের ক্ষমতার প্রভাব বলয়ের একটা ক্ষেত্রে হিসেবে ব্যবহৃত হতে চলেছে। এটার জন্য সম্পূর্ণ দায়ী বর্তমান সরকার। সরকার অবিবেচকের মতো দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে কথাবার্তা বলে তাদের কূটনীতিকে পরিচালিত করে আজকে বাংলাদেশকে সেরকম একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারত যাওয়ার পথে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় আসেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। এরপর প্রধানমন্ত্রী ভারতের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন।
মহিলা দলের র্যালি নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে কাকরাইলের নাইটিংগেল রেস্তোরাঁ মোড় ঘুরে আবার নয়াপল্টনে এসে শেষ হয়। মহিলা দলের কর্মসূচির কারণে বিপুলসংখ্যক মহিলা পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। ১৯৭৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মহিলা দল গঠন করেন জিয়াউর রহমান।
মহিলা দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে এ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আপনাদের শপথ নিতে হবে যে, আমরা যেকোনো মূল্যে এ সরকারকে সরিয়ে জনগণের একটা সরকার করতে চাই এবং একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চাই। আমাদের কথা খুব পরিষ্কার। আমরা কোনো সংঘাত চাই না, আমরা কোনো গোলযোগ চাই না। আমরা দেশে একটা সুষ্ঠু, অবাধ গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে চাই। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
সবাইকে আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষ এগিয়ে আসছে, জনগণ বেরিয়ে আসছে। এ সরকারের পতন অনিবার্য এবং জনগণের সরকার অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত হবে।’
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘এ সরকারের দুঃশাসন নারীদের অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। মহিলা দলের নেতাকর্মীরা নানা জায়গায় নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।’
মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস বলেন, ‘নারীরা এখন সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত। নারীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে, এর বদলা নেওয়া হবে।’
মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে আরও বক্তব্য রাখেন মহিলা দলের নেত্রী হেলেন জেরিন খান, রাশেদা বেগম হীরা, নেওয়াজ হালিমা আরলী, ইয়াসমীন আরা হক, শাম্মী আখতার, সাবিনা ইয়াসমিন, নায়েবা ইউসুফ, রুমা আখতার প্রমুখ।
এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় গতকাল বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে যুবদল। স্বেচ্ছাসেবক দল আগামী রবিবার রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করবে। অন্য অঙ্গ সংগঠনগুলো ধারাবাহিকভাবে একই কর্মসূচি পালন করবে।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে বাধাহীন যাত্রা শুরু হয়েছে গত রবিবার। বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত গাড়ি ১০ থেকে ১২ মিনিটে যাওয়া-আসা করতে পারে। যদিও এক্সপ্রেসওয়েতে সিএনজি ও মোটরসাইকেল না চলায় ব্যক্তিগত গাড়ি শুধু দেখা যায়। কিন্তু বাড়তি টাকা দিয়ে গণপরিবহনকে চলতে দেখা যায় না। রাতের বেলায়ও (অফপিক আওয়ারে) নিচের রাস্তা ফাঁকা থাকায় এক্সপ্রেসওয়ে বাড়তি টোল দিয়ে কেউ ব্যবহার করে না।
বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট দুই প্রান্তেই সকাল থেকে তীব্র যানজট থাকে। গত সপ্তাহে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালুর পর এ পথ ব্যবহার করে দ্রুত বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেটে যাওয়া-আসা করছে অনেক গাড়ি। এখন পর্যন্ত বাড়ছে এক্সপ্রেওয়েতে চলাচলকারী গাড়ির সংখ্যা। কিন্তু এটি থেকে সরকারের অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে অনেক সময় লাগবে।
এ পথে চলাচলকারী এক বাসমালিক নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে গাড়ি চালালে আমরা যাত্রী পাব না। তাই বাস চলছে না। দ্রুত যাওয়ার জন্য এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করা যেত যদি টোল কমানো হতো।’
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ঢাকা শহরের যানজট নিরসনসহ ভ্রমণে সময় ও ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাংলাদেশ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। পুরো প্রকল্প শেষ হলে ঢাকা শহরের উত্তর-দক্ষিণ করিডরের সড়কপথের ধারণক্ষমতা বাড়বে। যে উদ্দেশ্যে এটি করা হচ্ছে তার সুফল তখন মিলবে।
এ প্রকল্পের সংযোগ সড়কসহ দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এতে ১১টি টোল প্লাজা থাকবে, পাঁচটি এক্সপ্রেসওয়ের ওপরে। এর ওপর দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার যান চলাচল করতে পারবে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগে (পিপিপি) তিন ধাপে এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রথম ধাপ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত। দ্বিতীয় ধাপ বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত। তৃতীয় ধাপ মগবাজার রেলক্রসিং থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যানজট নিরসন, ভ্রমণে সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ের লক্ষ্যে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাংলাদেশ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। যে অংশ চালু হয়েছে সেটি শহরের মধ্যে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে কর্মচারী কিন্তু সব সময় নিয়োজিত আছে। অফপিক আওয়ারে টোল কমালে রাতেও গাড়ির সংখ্যা বাড়বে। তখন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ব্যয়ের অনেকটা ওঠানো যাবে।’
এ বিষয়ে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এএইচএমএস আকতারকে একাধিকবার দেশ রূপান্তর থেকে ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
‘আচ্ছা, এখন থেকে ৫০ বছর পরে আমাদের কথা, আমাদের কা-কারখানাগুলি কেউ মনে রাখবে?’ হ্যাপি ভাই এখন থেকে বছর ৩০ আগে মাঝে মাঝে প্রশ্নটা করতেন। সংগীত শিল্পী, গিটার বাদক হ্যাপি আখন্দ। সেই শহরে আমাদের তুমুল হইহুল্লোড় দিনগুলোতে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের হাকিম ভাইয়ের চায়ের দোকানের আড্ডায় তার হাজিরা ছিল প্রায় নিয়মিত। গভীর নেশার তলদেশ থেকে অসহায় ডুবুরির মতো সাঁতরে উঠে আসতে আসতে এ রকম অনেক অদ্ভুত প্রশ্ন করতেন। তার কোনো কোনোটির উত্তর দিতে পারতাম। আবার কখনো মৌনব্রত পালনই শ্রেয় বলে মনে করতাম। এখন মনে হয়, সত্যি সত্যি সেই দিনগুলো কি অতীতের দেয়ালের কোনো তাকে সাজানো আছে? টাইম মেশিনে চড়ে পৌঁছে গেলে সেই অতীতে আমাদের ছড়িয়ে থাকা কথা, নানান বেঢপ কান্ড-কারখানার নাগাল পাওয়া যাবে? অমরত্ব কী নির্মম! কারও ঠাঁই হয় না তার বারান্দায়। বৃষ্টির জলে ধোয়ামোছা সেই বারান্দায় মানুষের, সময়ের আশ্রয় নেই।
তবুও আমরা যারা বেঁচে আছি, এখনো মনে রাখি কাউকে কাউকে নিভৃতে। কখনো অস্থির হয়ে শোভন স্মরণসভার আয়োজন করি।
একদা সেই শহরে বিপরীত স্রোতে সাঁতার কাটা কিছু মানুষের সঙ্গে দেখা হয়েছিল আমার। তাদের সঙ্গ জাগিয়ে রেখেছিল আমাকে তুমুল। হ্যাপি ভাই তেমনি একজন মানুষ ছিলেন। লম্বা চুল কাঁধ বেয়ে নেমেছে। অবিন্যস্ত পোশাক। কিন্তু চোখজোড়া ভীষণ স্বপ্নে মুখর। রিকশা থেকে রোকেয়া হলের গেটের উল্টোদিকে নামতেন হাতে একটা ইট নিয়ে। প্রশ্ন করতেই একদিন বললেন, লোকে পোষা কুকুর নিয়ে ঘোরে আর উনি ইট নিয়ে ঘোরেন। ইষ্টক খন্ডটা তার পোষ্য। অবিস্মরণীয় সুর তৈরি করে রেখে গেছেন হ্যাপি আখন্দ। কত দিন আড্ডায় খালি গলায় আমাদের অনুরোধে গেয়ে শুনিয়েছেন সেই বিখ্যাত গান আবার এলো যে সন্ধ্যা...। আজও অতীতের দেয়ালের তাকে সেই মুহূর্তগুলো হয়তো সাজানো আছে।
তখনকার শাহরিক সুস্থির, সাজানো জীবনের বিপরীতে তিনি ছিলেন এক অস্থির প্রাণ। আঁচড় কেটে গেছেন আমাদের সম্মিলিত শূন্যতার দেয়ালে। পোষ্য ইট হাতে হ্যাপি ভাইয়ের সেই ভ্রমণকাল শেষ হয়েছিল খুব দ্রুত। গিটার ফেলে বাতাসের উৎসবে মিলিয়ে গেছেন হ্যাপি আখন্দ।
ছোটদের চালানোর উপযোগী একটা সাইকেলে চেপে ক্যাম্পাসে আসতেন কবি সাবদার সিদ্দিকী। পরনে চটের বস্তার তৈরি এক উদ্ভট পোশাক। চোখে সানগ্লাস আর দাঁতে কামড়ে ধরা সস্তা চুরুট। ভাড়া করা সাইকেলটা শিরীষগাছের গায়ে হেলান দিয়ে রেখে কবিতা আওড়াতেন, ‘হোন্ডা চড়ে গুন্ডা’। তার নিজেরই লেখা কবিতার চরণ। সাবদার ভাই আমাদের সঙ্গে মাঝে মাঝে কথা বলতেন। বেশিরভাগ দিন গুম হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পেছন দিকে ফেলে রাখা ভাস্কর্যগুলোর গায়ে হেলান দিয়ে বসে থাকতেন। তবে চওড়া আকৃতির সানগ্লাসটা চোখ থেকে খুলতেন না।
সাবদার ভাইয়ের সঙ্গে আমার কিছুদিন আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের প্রয়াত অধ্যাপক আনিস রহমান ও গল্পকার সৈয়দ কামরুল আহসানের সৌজন্যে। আনিস ভাই অনিয়মের ধারাপাত মুখস্থ করা আরেক মানুষ। আড্ডায় মাঝে মাঝে চেঁচিয়ে বলতেন, ‘আমি আরব গেরিলাদের সমর্থন করি। পশ্চিমবঙ্গের কথাশিল্পী সন্দীপ চট্টোপাধ্যায়ের এই নামে একটি উপন্যাস আশির দশকের গোড়ার দিকে বাংলাদেশে পাঠকপ্রিয়তা লাভ করেছিল। সাবদার ভাই আনিস ভাইয়ের সেই হুঙ্কার শুনে নিজেও লাফিয়ে উঠে বলতেন, ‘আমিও সমর্থন করি।’
সাবদার ভাই তখনকার হোটেল শেরাটনে যেতেন প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদন করতে। তখনো তিনি চটের বস্তা কেটে তৈরি পোশাক পরিধান করতে শুরু করেননি। আমাকে বলেছিলেন, তিনি শেরাটনে ঢুকে চলে যেতেন হোটেলের ম্যাগাজিন আর বইয়ের দোকানে। তারপর কিছুক্ষণ গভীর মনোযোগে বইপত্র ঘেঁটে বের হয়ে সোজা ঢুকে পড়তেন বাথরুমে। আমিও তখন বার কয়েক তার শেখানো ফর্মুলা প্রয়োগ করেছিলাম। সাবদার ভাই বলতেন, প্রাকৃতিক কর্মের কোনো শ্রেণিবৈষম্য নেই।
সাবদার ভাই দীর্ঘ সময় হাকিম ভাইয়ের চত্বরে থাকতেন না। কিছুক্ষণ বসেই আবার তার সাইকেল নিয়ে বের হয়ে যেতেন অজানায়। কোথায় যেতেন সেই শহরের অস্থির এক প্রাণ সাবদার সিদ্দিকী?
জানা হয়নি কোনো দিন! সময় তাকে তাড়া করে ফিরত এখন বুঝতে পারি। চোখ বন্ধ করলে দেখতে পাই তার ছায়া পড়ে আছে হাকিমের মাঠে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
তখন এই শহরে এমন অস্থির প্রাণ জাহাজ এসে ভিড়ত। যাদের শরীরে দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রার নুন আর শেওলা লেগে আছে। দেখতাম শহরময় ঘুরে বেড়াচ্ছে সাজ্জাদ জ্যোতি ভাই একটা লাল প্যান্ট আর হলুদ শার্ট পরে। মাথায় চুল গজানোর জন্য কবি জাহাঙ্গীর ফিরোজ মাখছেন মরিচ আর পেঁয়াজের মিশ্রণ। অভিনেতা হাবিবুল হাসানকে দেখতাম এক হাতে একাধিক ঘড়ি পরে ঝিম ধরে বসে থাকতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ইনস্টিটিউটের ভাঙা দেয়ালে। জ্যোতি ভাই নিখোঁজ হয়ে গেলেন একদিন। লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ করা, ছবি আঁকা কত কিছুর মধ্যে যে জড়িয়ে ছিলেন! জ্যোতি ভাইয়ের সেই অজ্ঞাত নিবাসের ঠিকানা আমরা কেউ আজও খুঁজে বের করতে পারিনি। কেউ কেউ বলেন, জ্যোতি ভাই বহু বছর আগে পৃথিবীকে বিদায় বলেছেন। তার প্রাণহীন দেহ কোনো এক অখ্যাত রেলস্টেশনে পড়ে ছিল।
তখন এই শহরে আমরা আহমদ ছফাকে পেয়েছিলাম, আমরা একজন হুমায়ুন আজাদকে পেয়েছিলাম। সবাই ছিলেন বিরুদ্ধ স্রোতের যাত্রী। সব স্থিতির বিরুদ্ধে, সব মেকির বিরুদ্ধে তারা বিদ্রোহ করেছিলেন নিজেদের লেখায় এবং জীবনাচরণে।
এই শহর হয়তো এখন দুর্বিনীত আত্মাদের ধারণে অক্ষম। নিয়ম ভাঙা এই মানুষদের আমি বলি অস্থির প্রাণ। এই শহর থেকে অস্থির প্রাণ মানুুষেরা হারিয়ে গেছে।
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে উল্লেখ করে এ সুযোগ লুফে নিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেডের (ইউএমপিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। তিনি বলেছেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানিসহ অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশ যে প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে, তা অর্জনে বিদেশি বিনিয়োগকারী ও ঋণদাতাদের এগিয়ে আসতে হবে।
গত বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে জার্মান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন (ডিইজি) আয়োজিত এক সম্মেলনে বক্তৃতাকালে চৌধুরী নাফিজ সরাফাত এ কথা বলেন। ব্যাংকক ম্যারিয়ট মার্কিজ কুইন্স পার্কে অনুষ্ঠিত ‘সাউথ-ইস্ট এশিয়া ক্লায়েন্ট ফোরাম ২০২৩-শেপিং ট্রান্সফরমেশন’ শীর্ষক এ সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
এ আয়োজনের জন্য ডিইজিকে ধন্যবাদ জানিয়ে চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বলেন, ‘আমরা আজকে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং বন্ধুত্ব উদযাপন করতে এ আয়োজনে যোগ দিয়েছি, যার ফলাফল শুধু একটি নির্বাচিত গোষ্ঠীকে নয়, বরং গোটা বিশ্বের সব পর্যায়ের সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্তরের মানুষকে সমৃদ্ধ করবে। আন্তঃদেশীয় বিনিময় এবং অর্জিত জ্ঞান ভাগাভাগির মধ্য দিয়ে নতুন বৈশ্বিক প্রবণতা ও সুবিধার ব্যবহার করে বিশ্ব জুড়ে দেশগুলো ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধি গতিশীল করবে।’
ডিইজির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ সংস্থার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হলো বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের সহযোগিতায় উন্নয়নশীল এবং উদীয়মান অর্থনীতিকে সাহায্য করা, যা পশ্চাৎপদ ও সুবিধাবঞ্চিতদের একটি উন্নততর এবং টেকসই ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে। ডিইজি গত ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে, এ নীতিবাক্য নিয়ে কাজ করেছে এবং সারা বিশ্বে লাখ লাখ মানুষের জীবনমান পরিবর্তনে সাহায্য করেছে। এজন্য আমি বিশ্বের সেই উপকারভোগী মানুষদের পক্ষ থেকে ডিইজিকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই, যাদের জীবন ডিইজি তার অংশীদারত্ব এবং নির্দেশনায় বদলে দিতে সাহায্য করেছে।’
বাংলাদেশ বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক উন্নয়নে এক বিস্ময়কর নজির উল্লেখ করে চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বলেন, “একসময় এই দেশটিকে বলা হয়েছিল ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আর এখন এটি অর্থনীতিতে ‘এশিয়ান টাইগার’ হিসেবে আভির্ভূত হচ্ছে। সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে এখন অর্থনীতিতে উন্নয়নের মডেল হিসেবে ধরা হয়। আর এই উন্নয়নের কারণ অনুসন্ধানে এখন তাবৎ বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতিবিদ রীতিমতো গবেষণা করছেন।”
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ২০১৬ সাল থেকে ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছিল এবং কভিড-১৯ মহামারী আঘাতের আগে ২০১৯ সালের মধ্যে ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল। কভিডের সময় যখন বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ মন্দা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাসের মুখে পড়েছিল, তখনো ২০২০ সালে বাংলাদেশ আকর্ষণীয় ইতিবাচক ৩ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধির হার বজায় রাখে। আর ২০২২ সালের মধ্যে আবার ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির ধারায় পৌঁছে দেশটি। অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্থিতিশীলতা এবং ধারাবাহিকতা বাংলাদেশের লাখো মানুষের জীবনযাত্রায়ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) তথ্যমতে, আমাদের দারিদ্র্যের হার ১৯৯০ সালে যেখানে ছিল ৫০ দশমিক ৪ শতাংশ, তা ২০১৯ সালে নেমে এসেছে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে।’
এ ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৈশ্বিক বিশেষজ্ঞদের ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বাংলাদেশকে ‘রোল মডেল’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ২০১২ সালে বিশ্বখ্যাত বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকসের ‘পরবর্তী ১১’ তালিকায় স্থান লাভ করে বাংলাদেশ। জেপি মরগান স্যাকস তার ‘ফ্রন্টিয়ার ফাইভ’ তালিকায় স্থান দিয়েছে বাংলাদেশকে। বৈশ্বিক সংস্থা পিডব্লিউসি ২০১৭ সালে ঘোষণা দিয়েছে যে, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৮তম অর্থনীতি হবে।’
দেশের এই অন্যতম শীর্ষ উদ্যোক্তা বলেন, ‘দ্রুত প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক দূরদর্শিতা দেখিয়েছে। দেশটি ৩২ দশমিক ৫৫ শতাংশের একটি ঋণজিডিপি অনুপাত বজায় রেখেছে, যা আইএমএফের প্রস্তাবিত ৫৫ শতাংশ থেকে অনেক নিচে। বাংলাদেশ কোনো বিদেশি ঋণ পরিশোধের শর্তে কখনই খেলাপি হয়নি এবং বছরের পর বছর ধরে সর্বদা দূরদর্শী অর্থনৈতিক চর্চা বজায় রেখেছে এই দেশ। এই উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধিতে অন্যতম বড় অবদান রেখেছে বিদ্যুৎ খাত, যা দেশটির অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত। এই বৃহৎ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গতি দিয়েছে জ্বালানি খাতও, যা দেশে প্রয়োজনীয় জ্বালানি চাহিদা পূরণ করেছে। গত এক দশকে ঈর্ষণীয় অগ্রগতির মাধ্যমে জ্বালানি খাতের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এটি শুধু প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তিই নয়, বরং বিনিয়োগের উল্লেখযোগ্য সুযোগসহ একটি সম্ভাবনাময় খাত।’
তিনি উল্লেখ করেন, সরকারের ২০১৬ পাওয়ার সেক্টর মাস্টার প্ল্যান (পিএসএমপি) অনুযায়ী, ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে ৬০ হাজার মেগাওয়াট। ঘণ্টায় মাথাপিছু বিদ্যুতের ব্যবহার ২০১৯ সালে যেখানে ছিল ৫১০ কিলোওয়াট, ২০৪১ সালে তা দাঁড়াবে ১ হাজার ৪৭৫ কিলোওয়াটে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের চাহিদার এ ব্যাপক বৃদ্ধি জ্বালানি উৎপাদনের বর্তমান কাঠামোতেও গতিশীল পরিবর্তন আনবে।
চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বলেন, ‘আমরা আরও বৈচিত্র্যময় জ্বালানি উৎসের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছি, যা জ¦ালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং কম গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন নিশ্চিত করতে নবায়নযোগ্যতায় জোর দেবে। এটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং দেশটিকে সাশ্রয়ী ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি, উপযুক্ত কর্মকাণ্ড এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শিল্প, উদ্ভাবন ও অবকাঠামো এবং জলবায়ু কর্মকাণ্ডবিষয়ক এসডিজি লক্ষ্য ৭, ৮, ৯ ও ১৪ অর্জনে সহায়তা করবে। পিএসএমপি অনুসারে, ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা গ্যাসভিত্তিক উৎপাদন ৩৫ শতাংশে নামানোর পরিকল্পনা করছি, যা বর্তমানে ৬০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে কমপক্ষে ১৫ শতাংশ উৎপাদন করতে চাই, যা বর্তমানে মাত্র ২ শতাংশের কাছাকাছি।’
ইউএমপিএল এমডি বলেন, ‘বৈচিত্র্যময় উৎসে চালিত এ জ্বালানি খাতের প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং ঋণদাতাদের এগিয়ে আসতে হবে। তাদের দক্ষতা এবং তহবিল বিদ্যুৎ খাতের দৃশ্যপটকে দ্রুত বদলে দিতে পারে এবং আমাদের দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে পারে। বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ লাভজনক বিনিয়োগ সুযোগ দিচ্ছে। জ্বালানিকে আমাদের সরকার অগ্রাধিকার খাতে পরিণত করেছে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য এ ক্ষেত্রেও প্রচুর প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি ও বেসরকারি উভয় প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য এ ধরনের প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। যার ফলে বিপুল লাভজনক বিনিয়োগের দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে বেসরকারি অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য নীতি নির্দেশিকা, ২০০৮-এর মতো বিধিবিধান এ ধরনের বিনিয়োগ কার্যক্রমের অগ্রগতির জন্যই তৈরি করা হয়েছে।’
কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা খাত বিদ্যুতে ক্রমবর্ধমান কর্মশক্তির চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট যোগ্যতাসম্পন্ন গ্র্যাজুয়েট তৈরি করেছে। ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও বিদ্যুৎ খাতের বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা রাখছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোও রাখছে একই ধরনের সহযোগিতামূলক ভূমিকা। এ কারণেই ডিইজির মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগের সুবর্ণ সুযোগ মিলছে।’
তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শুধু একটি অত্যন্ত লাভজনক শিল্পে বিনিয়োগের সুযোগই পাচ্ছে না, তারা লাখ লাখ মানুষের জীবনমানের পরিবর্তনেও ভূমিকা রাখতে পারছে। উপরন্তু, বিনিয়োগকারীরা সৌর, বায়ু এবং অন্যান্য নবায়নযোগ্য উৎসের মতো বিকল্প খাতে বিনিয়োগ করে বর্তমান শিল্পের চিত্রই পুনর্গঠন করতে পারেন। একটি সহযোগিতামূলক পরিবেশই সাফল্য লাভে সর্বোচ্চ গতি আনতে পারে।’
চৌধুরী নাফিজ সরাফাত আরও বলেন, ‘যখন জার্মানি একটি ফিড-ইন-ট্যারিফ সিস্টেম চালু করেছিল, যেটি শুধু ওই দেশে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি দেয়নি, বরং সৌর প্যানেল উৎপাদন বৃদ্ধিতেও সাহায্য করেছিল, যা এখন চীনে বহুল প্রচলিত। আজ হয়তো বাংলাদেশের জ্বালানি উৎপাদনের প্রয়োজন, অন্যদিকে কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও লাভজনক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন, যেটা আমাদের বিদ্যুৎ খাত দিতে পারে। এটি প্রবৃদ্ধি বাড়াবে, বৈশ্বিক বাণিজ্য বাড়াবে এবং অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক জোরদার করবে।’
এক হয়ে কাজ করে সবার জন্য আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, সমৃদ্ধ এবং স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা সম্ভব জানিয়ে এ শিল্পপতি বলেন, ‘এ উদ্দেশ্যে আমি ডিইজিকে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে তার সহায়তা অব্যাহত রাখতে স্বাগত জানাই। এখানে বাংলাদেশি উদ্যোক্তা, ডিইজি বা অন্য যেকোনো বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য পারস্পরিক লাভজনক পরিবেশ বিদ্যমান, যার মধ্য দিয়ে আমরা একসঙ্গে আরও গণতান্ত্রিক, অংশগ্রহণমূলক এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের অগ্রযাত্রায় নেতৃত্ব দিতে পারি।’
ডিইজির সিইওর সঙ্গে চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের বৈঠক : সম্মেলনের ফাঁকে ডিইজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রোনাল্ড সিলারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ইউএমপিএলের এমডি চৌধুরী নাফিজ সরাফাত।
বৈঠকে তারা বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ঈর্ষণীয় অগ্রগতি ও সম্ভাবনা সম্পর্কে আলোচনা করেন। এ ক্ষেত্রে অব্যাহত সহায়তার জন্য ডিইজি সিইওকে ধন্যবাদ জানান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। এ ছাড়া দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট আরও বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ করেন তারা।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিইজির সিনিয়র ডিরেক্টর (ব্যাংকিং অ্যান্ড জার্মান বিজনেস) পেত্রা কোত্তে, ডিরেক্টর (ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড এনার্জি ডেট) লজার রোকেন প্রমুখ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চট্টগ্রামে বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনে সরব থাকলেও মাঠে নামতে পারছে না জামায়াতে ইসলামী। দলের নেতাকর্মীদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। এর মধ্যেও কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালনে ফের মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াতের নেতাকর্মীরা।
১০ সেপ্টেম্বর রবিবার দেশের সবকটি মহানগরীতে (ঢাকা ছাড়া) মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজায় বাধা, গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের মুক্তি, কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে এ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, কেন্দ্র ঘোষিত এ কর্মসূচি পালনে রবিবার মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। এ ব্যাপারে নেতাকর্মীদের প্রাথমিক দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। তবে পুলিশ প্রশাসনের কঠোর মনোভাবের কারণে মিছিলের স্থান ও সময়ের বিষয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করছে তারা।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দেয় আমরা সেভাবেই কর্মসূচি পালন করব। তিনি বলেন, মিছিল-সমাবেশ এগুলো গণতান্ত্রিক অধিকার। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এ কর্মসূচি পালন করতে চাই।
বিএনপির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র হিসেবে একসময় চট্টগ্রাম মহানগরীতে অত্যন্ত দাপটের সঙ্গে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেছে জামায়াত। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ক্রমেই চাপের মুখে পড়ে দলটি। ফলে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো চট্টগ্রামেও তাদের অবস্থা হয়ে পড়ে শোচনীয়। মাঝেমধ্যে ঝটিকা মিছিল ছাড়া বর্তমানে প্রকাশ্যে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম চোখে পড়ে না। দুঃসময়ে পাশে না পাওয়ায় বিএনপি নেতাদের সঙ্গেও দূরত্ব রয়েছে জামায়াত নেতাদের। বিএনপি বিভিন্ন ইস্যুতে নিয়মিত কর্মসূচি পালন করলেও এ ক্ষেত্রে জামায়াত পুরোপুরি নীরব।
সর্বশেষ ২০১২ সালে চট্টগ্রাম মহানগরীতে সমাবেশ করে জামায়াত। এরপর গত ১১ বছর কোনো সমাবেশের সুযোগ পায়নি তারা। তবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইস্যুতে ঝটিকা মিছিল বের করে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছে দলের নেতাকর্মীরা।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) সূত্র জানায়, দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানের মুক্তি ও কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবিতে ২২ জুলাই দুপুর ২টায় লালদীঘি ময়দানে সমাবেশ করার জন্য পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি চেয়েছিল জামায়াত। কিন্তু তাদের সেই অনুমতি দেওয়া হয়নি। যে কারণে তারা সমাবেশ করতে পারেনি।
এদিকে গত ২৮ জুলাই জুমার নামাজের পর নগরীর আগ্রাবাদ এলাকা থেকে কোনো ধরনের পূর্বঘোষণা ছাড়াই একটি মিছিল বের করে জামায়াত। দেওয়ান হাট মোড়ে ওই মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলায় বেশ কজন পুলিশ সদস্য আহত হন। এ সময় পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। একইভাবে সাঈদীর গায়েবানা জানাজা কেন্দ্র করে গত ১৫ আগস্ট নগরীর কাজির দেউড়ি ও আলমাস মোড়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হন জামায়াত নেতাকর্মীরা। দুটি ঘটনাতেই দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মী।
জামায়াতের কর্মসূচি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ সার্বিক বিষয় আমাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। দলীয় কর্মসূচির নামে কেউ যাতে শান্তি শৃঙ্খলা নষ্ট করতে না পারে, জনগণের সম্পদহানি ঘটাতে না পারে, এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসন সবসময় কঠোর অবস্থানে থাকবে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাটল ট্রেনের ছাদে হেলে পড়া গাছের ডালের ধাক্কা লেগে কমপক্ষে ১৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের বটতলী স্টেশন থেকে ছেড়ে ক্যাম্পাসগামী শাটল ট্রেন ফতেয়াবাদ স্টেশনের কাছে পৌঁছালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে নয়জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ ছাড়া গুরুতর আহত তিনজনকে গতকাল শুক্রবার নেওয়া হয়েছে চমেকের আইসিইউতে।
এদিকে এ দুর্ঘটনার পর গত বৃহস্পতিবার রাতে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা কয়েক ঘণ্টা চবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা উপাচার্যের বাসভবন, শিক্ষক ক্লাব, পুলিশ বক্স এবং বেশকিছু বাস, মোটরসাইকেল ও কার ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করেন।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে চট্টগ্রাম শহরের বটতলী স্টেশন থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা শাটল ট্রেন রাত সোয়া ৯টায় চৌধুরীহাট স্টেশন এলাকায় এলে হেলে পড়া গাছের ডালের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ট্রেনের ছাদে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থীর মাথা ফেটে যায়। এ ছাড়া কয়েকজন চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে নিচে পড়ে যান। আহতদের মধ্যে নয়জন চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। আর গুরুতর আহত তিনজনকে গতকাল সকালে নেওয়া হয় চমেকের আইসিইউতে।
দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আহতের খবরে রাত ১০টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপাচার্যের বাসভবনের তিনতলা ভবনের প্রত্যেকটি কক্ষে ভাঙচুর করেন বিক্ষোভকারীরা। এ ছাড়াও পরিবহন দপ্তরের ২২টি বাস, একটি মোটরসাইকেল ও ১৬টি কার ভাঙচুর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্র্তৃপক্ষ। ভাঙচুর করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্লাব ও জিরো পয়েন্টের পুলিশ বক্সও।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রায়ই শাটল ট্রেনের ভেতরে জায়গা না পেয়ে তারা ছাদে উঠতে বাধ্য হন। তবে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে শাটল ট্রেনের বগির সংখ্যা বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। গতকাল বিকেলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘শাটল ট্রেনের ব্যাপারে আমরা রেলওয়েকে বলতে বলতে শেষ। রেলওয়ে মন্ত্রী আমাদের গত বছরই বলেছিলেন ট্রেন দেবেন। কিন্তু আমরা তা পাইনি। তারা বলেছে তারা চেষ্টা করছে আরও দুই-তিনটি বগি বাড়ানোর।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নুরুল আজিম সিকদার বলেন, ‘উপাচার্যের বাসভবন, শিক্ষক ক্লাব, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসসহ বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুরের ঘটনায় কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনো নিরূপণ করা যায়নি। এ ঘটনার তদন্তে আমরা কমিটি গঠন করব। এই ন্যক্কারজনক ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রশাসনের অসতর্কতা ও প্রস্তুতির অভাবে এত ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। কোনো একটা ঘটনা ঘটলে শিক্ষার্থীরা প্রতিক্রিয়া দেখায়, কিন্তু প্রশাসনকে এসব মোকাবিলা করার জন্য সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকতে হয়।’
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে চবি প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার বলেন, ‘মেইন গেটে তালা দেওয়া ছিল, তাই পুলিশ ঢুকতে পারেনি। পুলিশ শহর থেকে আসতে দেরি করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেসব শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন তাদের প্রতি প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমবেদনা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের চিকিৎসার সব ব্যয়ভার বহন করবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনের নামে ভাঙচুর করা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক।’
ভাঙচুরের ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের সংশ্লিষ্টতা আছে উল্লেখ করে প্রক্টর বলেন, ‘উপাচার্যের বাসভবন, পুলিশ কক্ষ, শিক্ষক ক্লাব ও পরিবহন দপ্তরে যে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে তা আমার সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে সম্ভব নয়। এখানে জামায়াত-শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়নের ব্যর্থ চেষ্টা ছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীদের চেষ্টায় তাদের এই এজেন্ডা বাস্তবায়ন ব্যর্থ হয়েছে।’
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
মূল লড়াইয়ের আগে গা গরমের খেলা। সেখানে ব্যাটসম্যানরা ছিলেন আগ্রাসী। তাতে পাকিস্তান পায় ৩৪৫ রানের বড় সংগ্রহ। তারপরও জিততে পারল না। নিউজিল্যান্ড জয় তুলে নিয়েছে ৩৮ বল হাতে রেখেই।
পাকিস্তানের ব্যাটারদের মধ্যে সেঞ্চুরি পেয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৯৪ বলে ১০৩ রান করে অবসর নেন তিনি। এছাড়া বাবর আজম ৮০ ও সৌদ শাকিল ৭৫ রান সংগ্রহ করেছেন।
পাকিস্তানের দেয়া ৩৪৬ রানের জবাব দিতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে নিউজিল্যান্ড।
কিউই ব্যাটারদের মধ্যে ওপেনিংয়ে নামা রাচিন রবীন্দ্র ৭২ বলে ৯৭ রান সংগ্রহ করে দলের জয়ে বড় অবদান রাখেন। এছাড়া দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা কেন উইলিয়ামসন ৫৪, ড্যারেল মিচেল ৫৯ আর মার্ক চাপম্যান ৬৫ রান করে দলকে ৫ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
গোটা দেশ এখন দুই ভাগে বিভক্ত। একদল সাকিব আল হাসানকে শূলে চড়াচ্ছে, অন্যরা তামিম ইকবালকে। অথচ জাতীয় ক্রিকেট দল ভারতে গেছে বিশ্বকাপ খেলতে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে খোঁচাখুঁচি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে। যে উদ্বোধনী জুটি নিয়ে এত দ্বিধা আর সংকোচ, যে কারণে তামিম না থাকায় এত হাহাকার, সেখানেই কিনা বাজিমাত করে পুরো জাতিকে অন্য এক বার্তা দিলেন তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস।
বিশ্বকাপের দলে যে তামিম ইকবাল থাকছেন না, সেটা জানা গিয়েছিল আগের দিনেই। তবু ক্রিকেট ভক্তদের মনের এক কোণে ক্ষীণ আশা ছিল। ওপেনারদের টানা ব্যর্থতার কথা বিবেচনায় হলেও এই ব্যাটসম্যান থাকবেন বলে ছিল তাদের। কিন্তু সেই আশার গুড়ে বালি। তাকে দলে না রাখায় অবশ্য রাস্তায় জনতার ঢল নামেনি, রাজপথে হয়নি কোনো সভা-সমাবেশ। তবে নতুন যুগের দেয়ালে দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদী নিন্দার বাণী। হাল জামানায় যাকে ‘টাইমলাইন’ বলে সম্বোধন করা হয়।
সেই সব প্রতিবাদী স্ট্যাটাসও দুই ভাগে বিভক্ত। কেউ সাকিব আল হাসানের পক্ষে, কেউবা তামিম ইকবালের। একদল পরিসংখ্যান-পর্যালোচনা দিয়ে বোঝাতে ব্যস্ত যে এই যুগে তামিমের কৌশল ‘ওল্ড স্কুল’। ওসব এখন আর চলে না। অন্য দল ১৭ বছরের ইতিহাস আর আবেগ নিয়ে হাজির। তাদের কাছেও আছে পরিসংখ্যান। সেটা গত কয়েক বছরের তামিমের ওপেনার সঙ্গীদের একটা তালিকা। তারাই শূলে চড়াচ্ছেন সাকিব-হাথুরু থেকে শুরু করে বিসিবির শীর্ষ কর্তাদের।
বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে সাকিব ক্রীড়াভিত্তিক একটি টিভি চ্যানেলকে দিয়ে গেছেন সাক্ষাৎকার। সেখানে তিনি সরাসরি তামিমের সমালোচনা করেছেন। এই ওপেনার যে দলের প্রয়োজনে পজিশন পরিবর্তনে রাজি হতে চান না, সেই মানসিকতা বাচ্চাদের মতো বলে সমালোচনা করেছেন টাইগার অধিনায়ক। এমনকি তার স্পোর্টসম্যানশিপ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তার আগে তামিম নিজে একটা ভিডিও বার্তায় বলেছেন তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা। মাশারফী বিন মোর্ত্তজাও ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। তাতে করে ক্রিকেটাঙ্গনে এখন যেন ভিডিও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ক্রিকেট নিয়ে জাতির অবস্থা যখন এমন, তখন ভারতের গোয়াহাটিতে বাংলাদেশের ক্রিকেট দল। আসাম রাজ্যের রাজধানীর বরষাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম উদ্বোধনী ম্যাচ খেলতে নেমেছিল তারা। ছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, নাজমুল হোসেন শান্তও ছিলেন না থাকার মতো করেই। প্রথম গা গরমের ম্যাচে তাই নেতৃত্ব দেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
টসভাগ্যে মিরাজের পরাজয়ের পর বল হাতে নামে বাংলাদেশ। টানা ৪০ ওভার টাইগারদের বোলারদের যেন শাসন করছিলেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। ঐ সময় পর্যন্ত ৫ উইকেট হারালেও তারা করে ২০২ রান। তারপরই যেন ঘুরে দাঁড়ান টাইগার বোলাররা। শেষ ১০ ওভারের ৫ বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় লঙ্কানরা। ২৬৩ রানের বেশি তারা করতে পারেনি।
২৬৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নামা বাংলাদেশের হালটা যে সুখকর হবে না, মুহূর্তেই ধসে পড়বে ব্যাটিং লাইনআপ। সিনিয়রদের কাউকে এসে হাল ধরে নিয়ে টেনে নিয়ে যেতে হবে দলকে। খাঁদের কিনারা থেকে টেনে তুলে হয় জয়, নয়তো সম্মানজনক হার! এমনটাই ছিল অনুমিত। আমরা যে এতেই অভ্যস্ত।
কিন্তু তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস সব অনুমান ভুল প্রমাণ করে দেন। যে ওপেনিং জুটি বাংলাদেশকে ভোগাচ্ছিল, যে সমস্যার কারণে চোট প্রবণ তামিম ইকবালকেও সবাই চাইছিলেন দলে। সেটাই কিনা তারা প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে ভুলিয়ে দিলেন! উদ্বোধনীতে তারা গড়েন ১৩১ রানের জুটি। তাতে ১৩ ম্যাচ পর বাংলাদেশ ওপেনিংয়ে শতরানের জুটি দেখতে পেয়েছে। হোক সেটা প্রস্তুতি ম্যাচ, তবুও তো লড়াই!
সবচেয়ে বড় স্বস্তি লিটন-তানজিদের রানে ফেরা। এশিয়া কাপের আগে জ্বরে ভুগছিলেন লিটন। সেই জ্বরের ধকল কাটিয়ে উঠতে তার সময় লেগেছে। মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে যেতে হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর চোটের কারণে। কিন্তু নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। এই টুর্নামেন্টে ২ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তানজিদ। কিন্তু তিনিও প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজেও।
তাই বিশ্বকাপের দলে তামিম ইকবালকে বাদ দেওয়াতে ঝড় উঠেছিল। সেই ঝড় চলমান ছিল আজ দুপুর অবধি। অনেকেই ভেবে রেখেছিলেন, এই জুটি ব্যর্থ হবে। যা ধারাবাহিক থাকবে টুর্নামেন্টের শুরুতেও। তারপর বিশ্বকাপের মাঝপথে আচমকা ডাক পেয়ে তামিম ইকবাল উড়াল দেবেন ভারতে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলে। সেবার জাভেদ মিয়াঁদাদকে ছাড়াই তারা বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল। কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতার কারণে তাকে মাঝপথে উড়িয়ে নেওয়া হয়েছিল, এবং বিশ্বকাপ জিতেছিল।
এমন স্বপ্ন বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটভক্তরাও দেখতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তানজিদ তামিম আর লিটনের জুটি বদলে দিয়েছে সব হিসেব-নিকেশ। তামিমের ফেরার প্রত্যাশায় যারা গুনছিলেন প্রহর, তাদের মাথায় যেন এবার আকাশ ভেঙে পড়েছে। কারণ তারা যে রানে ফিরেছেন। যুববিশ্বকাপজয়ী তামিম খেলেছেন ৮৪ রানের একটি ইনিংস। ৮৮ বলে যা সাজানো ছিল ১০টি চার ও ২টি ছক্কায়। অন্যপ্রান্তে লিটন ৫৬ বলে ১০ চারে খেলেছেন ৬১ রানের ইনিংস। শুধু কি তাই! এদিন তিনে নেমেছিলেন মিরাজ। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬৭ রান। ৬৪ বলের হার না মানা ইনিংসটি সাজানো ছিল ৫ চার ও ২ ছক্কায়।
পঞ্চপান্ডবের পরের প্রজন্ম তো তারাই। যাদের ব্যাটে শুক্রবার বরষাপাড়ায় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তাদের রানে ফেরা যেন নতুন দিনের বার্তা দেয়। যে বার্তা আগামীর পথচলার। যেখানে পুরনোকে আকড়ে ধরে রাখার প্রবণতা ক্ষীণ হয়ে আসার বার্তা। সহজ কথায়, তরুণদের রানে ফেরাতে মিয়াঁদাদ হওয়ার সুযোগ আর হচ্ছে না তামিম ইকবালের।
আল নাসরে প্রথম মৌসুমটা ভালো না কাটলেও দ্বিতীয় মৌসুমের শুরু থেকেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আছেন দারুণ ছন্দে। নিজে গোল করে দলকে জেতাচ্ছেন, সতীর্থদের দিয়ে গোল করাচ্ছেন।
শুক্রবারও সৌদি প্রো লিগে আল তা’য়ির বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতেছে আল নাসর। এ ম্যাচেও রোনালদো গোল করেছেন এবং করিয়েছেন। তবে তাঁকে নিয়ে বেশি আলোচনা তালিসকার গোলটিতে অসাধারণ এক অ্যাসিস্টের জন্য। অ্যাসিস্টটিতে যে সবার মন ভরিয়ে দিয়েছেন রোনালদো।
তা’য়ির মাঠে আল নাসর গতকাল শুরুটা করেছে দারুণ। একের পর এক আক্রমণে স্বাগতিক দলের রক্ষণ করে দিয়েছে এলোমেলো। ম্যাচের শুরুর দিকেই রোনালদোর দুর্দান্ত একটি প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে দেন তা’য়ির গোলকিপার। এ ছাড়া রোনালদোও খুব কাছ থেকে পাওয়া একটি সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি।
তবে ৩২ মিনিটে এগিয়ে যায় আল নাসর। গোলটি করেছেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার অ্যান্ডারসন তালিসকা। গোলটিতে রোনালদো অ্যাসিস্ট করেছেন অসাধারণ এক বাই-সাইকেল কিকে। সৌদি প্রো লিগে এ মৌসুমে এটা রোনালদোর পঞ্চম অ্যাসিস্ট।
খেলার স্রোতের বিপরীতে ৭৯ মিনিটে সমতায় ফেরে তা’য়ি। কিন্তু সমতা বেশিক্ষণ থাকেনি। ৩ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে আল নাসরের জয়সূচক গোলটি করেছেন রোনালদো। সৌদি প্রো লিগে এ মৌসুমে এটা ৭ ম্যাচে তার ১০ নম্বর গোল। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৫ ম্যাচ খেলে করেছেন ১৬ গোল।
এই জয়ের পর ৮ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে আল নাসর। আল ফেইহার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করা আল ইত্তিহাদ সমান ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে শীর্ষে। ৮ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে আল তা’য়ি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুলিশ। নির্বাচনে কী উপায়ে নিরাপত্তা দেওয়া হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। তবে সরকারের হাইকমান্ড থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে তথ্য এসেছে, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও সদস্য সরকারবিরোধীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছে। পুলিশের একটি প্রতিবেদনেও তথ্য এসেছে সারা দেশে অন্তত আড়াইশো কর্মকর্তা আছেন তারা সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাদের পুরো কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এদিকে, চলতি মাস ও আগামী মাসের মধ্যে পুলিশে আরও বড় ধরনের রদবদল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তালিকাও করা হয়েছে। পাশাপাশি উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদিও কেনার চেষ্টা করছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, সামনের দিনগুলোতে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এ নিয়ে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা আগাম সতর্কবার্তাও দিয়েছে। যেকোনো বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করতে কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিট প্রধান ও জেলার এসপিদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের মধ্যে কোনো সদস্য সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার তথ্য পেলে জানাতে বলা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশেই সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনকালীন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পেশাদার সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু সদস্যের কর্মকান্ড নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এই সংখ্যা প্রায় আড়াইশো মতো হবে। সংখ্যা আরও বাড়তেও পারে। ইতিমধ্যে তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিতও করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশে উদ্বেগ আছে। বৈধ অস্ত্রের সংখ্যার খোঁজ নেওয়া, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্র কারবারিদের গ্রেপ্তার করতে বিশেষ অভিযান চালাতে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযানের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। হুট করেই আমরা বিশেষ অভিযান শুরু করব। কেপিআই স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন যথাসময়ে হবে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো মহল বা চক্র নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাতে না পারে সে জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সতর্ক আছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের সবধরনের প্রস্তুতি আছে। দাগি সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বড় ধরনের অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের।
পুলিশ সূত্র জানায়, আড়াইশো পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকান্ড নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাদের মোবাইল নম্বর সার্বক্ষণিক ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও খোঁজ রাখা হচ্ছে। নজরদারির মধ্যে থাকা বেশ কয়েকজন পুলিশ সুপার, অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর আছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতাদের সাপোর্ট দেওয়া আমাদের কাজ না। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের জন্য উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্র ও যানবাহন ক্রয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৫০ লাখের মতো রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড কেনা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে এসব সরঞ্জাম বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করছি। ডিএমপি, সিএমপি, কেএমপি, আরএমপি, বিএমপি, এসএমপি, আরপিএমপি, জিএমপি কমিশনার, বিশেষ শাখা (এসবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), অপরাধ তদন্ত বিভাগ, পিবিআই, টুরিস্ট পুলিশ, এটিইউ, রেলওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ, এপিবিএন, হাইওয়ে, শিল্পাঞ্চল পুলিশ প্রধান, সব অ্যাডিশনাল আইজিপি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও রংপুর রেঞ্জে নতুন আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে ইউনিট প্রধানরা পুলিশ সদর দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন। বিষয়টি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্র করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। বিএনপি আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা করছে। যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। আর এসব মোকাবিলা করতে পুলিশকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুলিশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।