
ডেঙ্গু রোগীর জ্বর ছেড়ে যাওয়ার পরের তিন দিন (৪৮-৭২ ঘণ্টা) ক্রিটিক্যাল সময় বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা বলেছেন, এই সময়টা রোগীর জন্য খুবই বিপজ্জনক। এ সময় রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।
গতকাল রবিবার ডেঙ্গু চিকিৎসাসংক্রান্ত এক মাসিক সেমিনারে চিকিৎসকরা এ তথ্য জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল সেমিনার সাব কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ-ব্লক মিলনায়তনে এ সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রটোকল না ভাঙার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকের পাশাপাশি বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকদের সম্পৃক্ত হতে হবে। সাধারণ মানুষের ধারণা প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে নামলে রক্ত দেওয়া লাগে। এজন্য প্লাটিলেট কমলে তারা চিকিৎসককে রক্ত দেওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করেন। কিন্তু ১০ হাজারের নিচে প্লাটিলেট নামলে রক্ত দিতে হবে কি না সেটি চিকিৎসক নির্ধারণ করবে। চিকিৎসকদের কোনো অবস্থায় চিকিৎসা প্রটোকল ভাঙা যাবে না। প্রটোকল অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে।
সেমিনারে চিকিৎসকরা জানান, ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফ্লুইড ম্যানেজমেন্টে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ ওভার ফ্লুইড এবং ফ্লুইডের অভাব রোগীর জন্য ক্ষতিকর। এমনকি রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
চিকিৎসকরা আরও জানান, ডেঙ্গুজ্বরের বিপজ্জনক উপসর্গ হলো অনবরত বমি হওয়া, রক্তক্ষরণ হওয়া, তীব্র দুর্বলতা অনুভব করা, তীব্র পেটব্যথা, ফুসফুসে পানি জমা ও তীব্র শ্বাসকষ্ট।
চিকিৎসকরা বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের রক্তের প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকার পরিমাণ ১০ হাজারের নিচে নামলেও রক্ত পরিসঞ্চালনের কোনো প্রয়োজন নেই। এরপরও যদি রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন দেখা দেয় তা হলে হোল ব্লাড বা পুরো রক্ত সঞ্চালন করাই ভালো, শুধু প্লাটিলেট সঞ্চালনের কোনো প্রয়োজন নেই।
ডেঙ্গু শক সিনড্রোম রোগীদের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে চিকিৎসকরা জানান, ডেঙ্গু শক সিনড্রোম রোগীদের শকে যাওয়ার ৪-৬ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা দিতে হয়। এ ধরনের রক্তচাপ কমের রোগীকে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে রেফার করলে পথেই রোগীর অবস্থা খারাপ হতে পারে। তাই ডেঙ্গু শকের রোগীকে রেফার না করে ওই হাসপাতালেই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
ডেঙ্গুজ¦রে আলাদা করে ডাব, পেপে পাতা, পেপে জুস, ড্রাগন ফল বেদানা ইত্যাদি খাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই বলেও জানান চিকিৎসকরা। তারা বলেন, ডেঙ্গু রোগী ব্যবস্থাপনায় অনেক বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন নেই। সিবিসি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) টেস্টই যথেষ্ট। সিবিসি টেস্টের মধ্যে ডব্লিউবিসি কাউন্ট এবং হেমাটোক্রিট (এইচসিটি) কাউন্ট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
চিকিৎসকরা জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের প্রতি বেশি যত্নশীল হতে হয়। কারণ শিশুদের শরীরে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তারা সেটা স্পষ্ট করে বলতে পারে না। ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের বাইরে থেকে স্বাভাবিক মনে হলেও যেকোনো সময় শিশুরা ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে চলে যেতে পারে। তাই ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের যথাযথ মনিটরিং করতে হবে। যাতে কোনো সমস্যা হলে দ্রুত ব্যবস্থাপনা করা যায়।
এ ছাড়া গর্ভবতী মা, ক্যানসার রোগী, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে বলেও সতর্ক করে দেন চিকিৎসকরা।
সেমিনারে উপাচার্য জানান, বিএসএমএমইউ ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় দেশ সেরা। এ বছর এ পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭০০ জন পূর্ণবয়স্ক ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন মারা গেছে। শিশু বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত ২০০ শিশু চিকিৎসা নিয়েছে এবং শিশুদের কেউ মারা যায়নি।
এ সময় উপাচার্য বলেন, ডেঙ্গু চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ করাই উত্তম। ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ডেঙ্গুর এডিস মশা নিধনে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, এনজিও কর্মী এবং রাজনৈতিক কর্মীদের সম্পৃক্ত করতে হবে। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বর্তমান সময়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধের ওপর গুরুত্ব দিয়ে কর্মসূচি পালন করা উচিত।
সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আফজালুন নেসা ‘ডায়নামেকিস অব ডেঙ্গু ভাইরাস ইন বাংলাদেশ অ্যান্ড ডেঙ্গু ভ্যাকসিন আপডেটস’, শিশু বিভাগের অধ্যাপক ডা. মাহবুব মোতানাব্বি ‘ক্লিনিক্যাল প্রেজেন্টেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অব ডেঙ্গু : পেডিয়াট্রিক অ্যাসপেক্ট’ ও ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফজলে রাব্বী চৌধুরী ‘ম্যানেজমেন্ট অব ডেঙ্গু ইনফেকশন : টিপস অ্যান্ড ট্যাকটিস’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্যানেল অব এক্সপার্ট হিসেবে মতমত দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ।
নরসিংদীর পলাশে ঘোড়াশাল সার কারখানায় ‘ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্প’টির কাজ প্রায় শেষ। আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর জাপানকে পরিশোধ করতে হবে ৫২২ কোটি টাকা। এ ছাড়া জ্বালানি বিভাগের কাছে বিসিআইসির গ্যাস বিল বকেয়া ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। জাপানের প্রথম কিস্তি পরিশোধ নিয়ে অর্থ বিভাগ ও বিসিআইসির মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি চলছে। অর্থ বিভাগ বলছে, টাকা পরিশোধের দায়িত্ব আমাদেরই কিন্তু অর্থ বিভাগের টাকার সংকট। বিসিআইসি বলছে, আমাদের কাছেও কোনো অর্থ নেই, ফান্ড খালি।
গত ১৭ আগস্ট প্রকল্পটির ওপর স্টিয়ারিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে এ প্রকল্পের রিপেমেন্টের বিষয়টি আলোচনায় আসে। পিআইসি সভার বিবরণী ইতিমধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সভায় প্রকল্প পরিচালক রাজিউর রহমান মল্লিক জানান, সাধারণ ঠিকাদার প্রকল্পের সব কার্যক্রম শেষ করে আগামী অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে উৎপাদন শুরু করে আগামী ৩১ ডিসেম্বর কারখানাটি বিসিআইসির কাছে হস্তান্তর করবে। ফলে প্রকল্পটি উৎপাদনে যাওয়ার আগেই জাপানি ইয়েন অংশের রিপেমেন্ট প্রথম কিস্তি আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর পরিশোধ করতে হবে।
এখন এটাই প্রকল্পের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি সভাকে জানান, জাপানি ইয়েন অংশের প্রথম কিস্তি বাবদ আনুমানিক ৫২২ টাকা বিসিআইসি থেকে সংস্থান করা সম্ভব নয়। রিপেমেন্টের প্রয়োজনীয় অর্থ বিভাগের মাধ্যমে পরিশোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ বিভাগের প্রতিনিধি বলেন, প্রকল্পের সভেরিন গ্যারান্টি যেহেতু সরকার দিয়েছে, তাই সরকারকে রিপেমেন্ট সময়মতো করতে হবে। কিন্তু বর্তমান বাজেটে প্রকল্পটির রিপেমেন্টের ৫০০ কোটি টাকা কোথাও ধরা নেই। বিষয়টি অনুমোদিত হয়ে এলে অন্য কোনো খাত থেকে ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিসিআইসি কর্তৃক অন্য কোনো ফান্ড থেকে কিছু অর্থ দেওয়া সম্ভব হলে এবং বাকি টাকা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হলে ফান্ড ব্যবস্থা করতে সুবিধা হবে। বিসিআইসিকে ১০০ কোটি টাকা দেওয়ার জন্য তিনি অনুরোধ করেন।
এ সময় শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, যেহেতু সময়মতো প্রকল্পটি শেষ করে উৎপাদনে যেতে পারেনি, তাই কারখানায় উৎপাদিত সার বিক্রির মাধ্যমে লব্ধ এবং ভর্তুকি বাবদপ্রাপ্ত অর্থের মাধ্যমে ঋণের কিস্তির প্রয়োজনীয় অর্থ সময়মতো পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
বিসিআইসির ফান্ড থেকে অর্থ দেওয়ার ব্যাপারে শিল্প সচিব বলেন, বিসিআইসির হাতে এখন টাকা নেই। যদি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ট্রেড গ্যাপের টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হয়, তাহলে সেই অর্থ থেকে রিপেমেন্টের অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব। তিনি বলেন, ট্রেড গ্যাপের টাকা না পাওয়ার কারণে বিসিআইসির পক্ষে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগকে গ্যাস বিল পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্ধিত গ্যাস বিল বাবদ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা পাবে। গ্যাসের সংকটের কারণে গত বছর বিসিআইসির চারটি কারখানা প্রায় বন্ধ ছিল। যার ফলে বিসিআইসির পক্ষে রিপেমেন্টের প্রয়োজনীয় অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক রাজিউর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমি প্রকল্প পরিচালক, এটি পরিশোধের দায়িত্ব বিসিআইসি ম্যানেজমেন্টের। আমি যতটুকু জানি বিসিআইসি ইতিবাচকভাবে এগোচ্ছে। ১৩ তারিখের মধ্যে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আশা করি দেওয়া সম্ভব হবে। গ্যাস সংকট প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক বলেন, এখন তিতাস আমাদের গ্যাস দিচ্ছে। সংকট আছে, তবুও তারা বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করে দিচ্ছে। অক্টোবরে উৎপাদনে গেলে আমরা সার বিক্রির টাকা দিয়েই বকেয়া পরিশোধ করতে পারব।
প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় বিদ্যমান পলাশ ইউরিয়া সার কারখানার জায়গায় দৈনিক ২ হাজার ৮০০ টন অর্থাৎ বার্ষিক ৯ লাখ ২৪ হাজার টন ইউরিয়া সার উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন শক্তি সাশ্রয়ী অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর পরিবেশবান্ধব ইউরিয়া সার কারখানা স্থাপন।
সভায় জানানো হয়, চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত প্রকল্পটির ক্রমপঞ্জীভূত বাস্তব অগ্রগতি ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি ৭১ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং এলএসটিকে অংশের বাস্তব অগ্রগতি ৯৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ। প্রকল্পের জিওবি অংশের বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা, যার মধ্যে জুলাই, ২০২৩ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৬২২ কোটি টাকা অর্থাৎ আর্থিক অগ্রগতি ৩৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। প্রকল্পের জিওবি অংশের মধ্যে পুরাতন ভবনগুলো ভেঙে নতুন বিল্ডিং স্থাপন, নতুন আরএমএস স্থাপন এবং রেললাইন স্থাপনকাজ অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে তুলনামূলক কঠিন শর্তে সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট হিসেবে জাপান ও চীনের ঠিকাদারদের যৌথ কনসোর্টিয়াম ব্যাংক অব টোকিও-মিতসুবিশি ইউএফজে লিমিটেড (এমইউএফজি) ও দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন লিমিটেড (এইচএসবিসি) ৮ হাজার ৬১৭ কোটি টাকার ঋণ সংগ্রহ করে দেয়। কমিটমেন্ট ফি, সার্ভিস চার্জ মিলিয়ে এ ঋণের সুদের হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। চার বছরের নির্মাণকালসহ ১৫ বছরে কনসোর্টিয়ামকে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
মন্ত্রণালয়ের প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির সভায় প্রকল্প পরিচালক জানান, ২০২০ সালের মার্চ থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতির ভিত্তিতে প্রকল্পের সাধারণ ঠিকাদারকে ৪০টি প্রোগ্রেস পেমেন্ট বাবদ ৬ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বর্তমানে সাধারণ ঠিকাদারের বিভিন্ন পর্যায়ের দেশি-বিদেশি ৩ হাজার ২৭২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত আছেন।
প্রকল্প পরিচালক সভায় জানান, প্রকল্পে নতুন রেগুলেটরি মিটারিং স্টেশন স্থাপনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৭১ দশমিক ৯০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার লক্ষ্যে গত ২৬ জুলাই শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী গত ৩১ জুলাই ১৬ টাকা হারে গ্যাস বিল পরিশোধের শর্তে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ থেকে গ্যাস সরবরাহের অনুমোদন পাওয়া গেছে। পরে সেপ্টেম্বর, ২০২৩-এ দৈনিক ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট এবং পরে অক্টোবর, ২০২৩-এ দৈনিক ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দেওয়ার কথা উল্লেখ আছে। সাধারণ ঠিকাদারের চাহিদা মোতাবেক সময়মতো গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব না হলে প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হবে, প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, সার উৎপাদন বিলম্বিত হবে এবং ঋণের সুদ আরও বাড়বে। সাধারণ ঠিকাদারের চাহিদা মোতাবেক প্রকল্পে নতুন আরএমএস স্থাপনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৭১ দশমিক ৯০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রকল্পের রেললাইন স্থাপনের কাজটি সম্পাদনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক প্রাক্কলিত ২৬৫ কোটি টাকা ইতিমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে। ব্যাটারি লিমিটের অংশটুকুর জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে ই-জিপি সিস্টেমে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দরপত্র মূল্যায়ন শেষে অনুমোদন প্রসেসিংয়ে আছে।
প্রকল্পের ব্যাটারি লিমিটের অভ্যন্তরে রেললাইন নির্মাণের সঙ্গে প্রকল্পের অন্যান্য ভৌত কার্যক্রম যেমন রাস্তা নির্মাণ, ড্রেন নির্মাণ, কনভেয়ার বেল্ট কাঠামো নির্মাণ, পাইপ ব্ল্যাক কাঠামো ইত্যাদি কার্যক্রম সম্পর্ক রয়েছে, যা প্রকল্পের সাধারণ ঠিকাদার দ্বারা নির্মাণাধীন। প্রকল্পের ব্যাটারি লিমিটের অভ্যন্তরে রেললাইন স্থাপনের কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সাধারণ ঠিকাদার কর্তৃক বারবার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। এ পর্যায়ে যুগ্ম সচিব (পরিকল্পনা), শিল্প মন্ত্রণালয় ব্যাটারি লিমিটের অভ্যন্তরে রেললাইন স্থাপনের কাজটি কবে শেষ হবে জানতে চান। প্রকল্প পরিচালক ব্যাটারি লিমিটের অভ্যন্তরে রেললাইন স্থাপনের কাজটি ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন।
দিন কয়েক আগেই জাপানের একটি খবর নজর কেড়েছিল বিশ্বের। দেশটির এক ক্যাফেতে মানুষের আড্ডার সঙ্গী হিসেবে রোবট কাজে লাগানোর উদ্যোগের সে খবর অনেককে চমকেও দিয়েছিল। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের এই যুগে রোবট আর মানুষের যৌথ প্রচেষ্টার সে উদ্যোগের খবর ছিল আশাজাগানিয়া। রোবট নিয়ে আবারও খবরের শিরোনাম জাপান।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের বদলে এবার ক্লাসে উপস্থিত থাকবে রোবট। দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় কুমামোতো শহরের স্কুলে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে কার্যত উপস্থিত দেখাতে রোবট ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে। এই রোবট ওই অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচিত হবে।
জাপানের এই শহরে বিষন্নতা ও অপদস্থ করার কারণে স্কুল পালানো শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এ কারণে শহর কর্র্তৃপক্ষ স্কুলে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ভার্চুয়ালি উপস্থিত রাখতে প্রতিনিধি হিসেবে রোবট ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে। আগামী নভেম্বরেই কুমামোতো শহরের স্কুলগুলোর শ্রেণিকক্ষে এই রোবট ব্যবহার শুরু হওয়ার কথা। মাইক্রোফোন, স্পিকার ও ক্যামেরাযুক্ত এসব রোবট দ্বিমুখী যোগাযোগ করবে।
কুমামোতো মিউনিসিপ্যাল বোর্ড অব এডুকেশন বলেছে, এ ধরনের উদ্যোগ দেশে বিরল। এর উদ্দেশ্য হলো অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ কমিয়ে শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনা।
শহর কর্র্তৃপক্ষ বলছে, শিশুরা স্কুলে তাদের প্রতিনিধিত্বকারী রোবটগুলোকে ডিভাইসের মাধ্যমে বাসা থেকেই ব্যবহার করতে পারবে। এর সাহায্যে তারা শ্রেণিকক্ষে অংশ নিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গেও আলোচনা করতে পারবে।
দেশটির সরকারি তদন্তে জানা গেছে, অন্যান্য দেশের মতো জাপানে করোনা মহামারীর পরে স্কুলে না যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। শ্রেণিকক্ষে শিশুদের ধমক দেওয়া বা অপদস্থ করা এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক মিটার লম্বা রোবটগুলো স্বয়ংক্রিয় হবে। শিক্ষার্থীরা বাসা থেকেই নিজেদের প্রতিনিধিত্ব করা রোবটের মাধ্যমে নানা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবে।
মরক্কোর মধ্যাঞ্চলে গত শুক্রবার রাতে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃত্যু বেড়ে দুই হাজার ছাড়িয়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল রবিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ভূমিকম্পে কমপক্ষে ২ হাজার ১২ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছে ২ হাজার ৫৯ জন। তাদের মধ্যে ১ হাজার ৪০৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ওই ভূমিকম্পে দেশটির তিন লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের জন্য জরুরিভিত্তিতে খাবার ও আশ্রয় দরকার। রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ইতিমধ্যে ১০ লাখ ডলারের সহায়তা তহবিল পাঠিয়েছে। দেশটিতে এত প্রাণহানির ঘটনায় তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।
আল জাজিরা বলছে, গত শুক্রবার মাঝরাতে শক্তিশালী ভূমিকম্প মরক্কোতে আঘাত হানে। মরক্কোতে এ যাবৎকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প ছিল এটি। ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৮। শক্তিশালী এ ভূমিকম্পে মারাক্কেশসহ মরক্কোর বিস্তীর্ণ জনপদ এক রকম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ভূমিকম্পে ওই শহরের আশপাশের এলাকায় শত শত ভবন ধসে পড়েছে, নয়তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হতাহত ব্যক্তি ও ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে থাকা লোকজনকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ভূমিকম্পের দুদিন পরও জীবিত ব্যক্তিদের খোঁজে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা।
মধ্যরাতের সেই ভূমিকম্পের পরই আতঙ্কিত মানুষজন বাড়িঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে। সেদিন বাইরেই কাটে তাদের। গতকাল শনিবার রাতও ঘরের বাইরেই কাটাতে হয়েছে অনেককে। এদিকে দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় ত্রাণ নিয়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যেতে পারছেন না ত্রাণকর্মীরা।
ভূমিকম্পে বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। পাহাড়ধসে অনেক সড়ক যান চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। বাড়িঘর ছেড়ে আসা লোকজনের কেউ কেউ খোলা জায়গা, খেলার মাঠ বা সড়কে তাঁবু গেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন। রোগীর চাপ সামলাতেও হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো।
ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মারাক্কেশ শহর থেকে ৭১ কিলোমিটার দূরে এটলাস পর্বতমালা এলাকার ১৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার গভীরে। ওই এলাকার একটি গ্রাম মাওলায় ব্রাহিম গ্রামের বাসিন্দা লাহচেন। গত শুক্রবার রাতে ভূমিকম্পে স্ত্রী ও চার সন্তানকে হারানোর পর শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছেন তিনি। শনিবার বিকেলে তিনি এএফপিকে জানান, উদ্ধারকর্মীরা তখন পর্যন্ত ধ্বংসাবশেষ থেকে তার স্ত্রী আর ছেলের লাশ উদ্ধার করতে পারেননি। ভূমিকম্পে ভেঙে পড়া নিজেদের বাড়ির ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়েন তারা। তবে তার তিন মেয়ের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে।
এএফপিকে তিনি বলেন, আমি এ মুহূর্তে কিছু করতে পারছি না। আমি শুধু জগৎ থেকে দূরে থেকে শোক করতে চাই।
এএফপি বলছে, নিহত মানুষের মধ্যে অর্ধেকের বেশি আল হাউস প্রদেশের বাসিন্দা। মাওলায় ব্রাহিম গ্রামটির অবস্থানও আল হাউস প্রদেশে। সেখানে ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ১২ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানির ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আরও প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভূমিকম্পের আগে মাওলায় ব্রাহিম গ্রামে প্রায় তিন হাজার মানুষের বসবাস ছিল।
ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে উদ্ধারকারীরা অনুসন্ধানকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ ধ্বংসাবশেষে আটকে আছেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। লাশ দাফনের জন্য পাহাড়ে কবর খোঁড়া হচ্ছে।
গ্রামের উঁচু একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে কবর খোঁড়ার দৃশ্য দেখছিলেন আর ওড়নায় চোখের পানি মুছছিলেন বুশরা। এএফপিকে তিনি বলেন, ভূমিকম্পে তার চাচাতো ভাইয়ের নাতি-নাতনিরা প্রাণ হারিয়েছে।
ভূমিকম্পের সময়কার পরিস্থিতি বর্ণনা করে বুশরা বলেন, আমি এখনো কাঁপছি। মনে হলো যেন একটি আগুনের গোলা এসে সবকিছু গ্রাস করে নিয়েছে। এখানকার সবাই স্বজন হারিয়েছে। হয় এ গ্রামে, না হয় অন্য কোনোখানে।
মরক্কো এর আগেও বেশ কয়েকবার ভয়াবহ ভূমিকম্পের কবলে পড়েছে। ২০০৪ সালে দেশটির উত্তর-পূর্বের আল হোসেইমা অঞ্চলে ভূমিকম্পে ৬২৮ জন মারা গিয়েছিল। আর ১৯৬০ সালে আগাদির অঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্পে অন্তত ১২ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা ভূমিকম্পে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতিতে সমবেদনা জানিয়েছেন এবং মরক্কোকে প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। মরক্কোতে যেন মানবিক সহায়তা পাঠানো সহজ হয়, সেজন্য আলজেরিয়া তাদের এয়ারস্পেস ব্যবহার করতে দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তা আইনে করা মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হলে বাদীকে শাস্তি পেতে হবে। মিথ্যা মামলাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে সাজার বিধান যুক্ত করার সুপারিশ জানিয়ে জাতীয় সংসদে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। সুপারিশে বলা হয়েছে, মিথ্যা মামলার শিকার হওয়া ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ দিলে আদালত তা আমলে নেবে।
গতকাল রবিবার সাইবার নিরাপত্তা বিল-২০২৩ পাসের সুপারিশ করে সংসদে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংসদীয় কমিটির সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সাংবাদিক নেতাদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এ সংক্রান্ত সুপারিশ চূড়ান্ত করে কমিটি। বিলের ৩২ নম্বর ধারা বাদ দেওয়াসহ কয়েকটি ধারায় শব্দগত পরিবর্তন আনার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে স্বাধীন গণমাধ্যমের জন্য বিলের ৪২ ধারা বড় হুমকি উল্লেখ করে সাংবাদিক নেতারা প্রবল আপত্তি জানানো সত্ত্বেও ওই ধারা বহাল রাখা হয়েছে।
বিলের ৪২ ধারায় বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া আছে পুলিশকে। এখানে সংশোধনী এনে বলা হচ্ছে, এ ধারায় সাব উপপরিদর্শক পর্যায়ের কর্মকর্তার জায়গায় পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) পর্যায়ের কর্মকর্তা বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি ও গ্রেপ্তার করতে পারবেন।
সংশোধিত বিলের মিথ্যা মামলাসংক্রান্ত ৩৪ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কারও ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এ আইনের অন্য কোনো ধারার অধীন মামলা বা অভিযোগ দায়ের করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ না জেনেও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন বা করান, তাহলে তা হবে একটি অপরাধ। এই অপরাধে মামলা বা অভিযোগ দায়েরকারী ব্যক্তি এবং যিনি অভিযোগ দায়ের করিয়েছেন ওই ব্যক্তি মূল অপরাধটির জন্য যে দণ্ড নির্ধারিত রয়েছে সে দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
আরও বলা হয়েছে, যদি এ আইনের একাধিক ধারায় কোনো মামলা বা অভিযোগ করেন, তাহলে ওই ধারায় বর্ণিত অপরাধগুলোর মধ্যে মূল অপরাধের জন্য যে দণ্ডের পরিমাণ বেশি হয় সেটাই দণ্ডের পরিমাণ হিসেবে নির্ধারণ করা যাবে।
এ ছাড়া বিলের ২১ ধারায় শব্দগত পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রোপাগান্ডা ও প্রচারণাসংক্রান্ত অপরাধের কথা বলা আছে। এখানে ‘পতাকার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রোপাগান্ডা’-এর স্থলে ‘পতাকা সম্পর্কে বিদ্বেষ, বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক’ শব্দ প্রতিস্থাপন করা হবে।
কমিটি বিলের ৩২ ধারা বাতিলের প্রস্তাব করেছে। এ ধারায় অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট যুক্ত করা হয়েছিল। এটি ডিজিটাল মাধ্যমে কেউ অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টভুক্ত অপরাধ করলে তার সাজার বিধান করতে যুক্ত করা হয়।
বিলের ৮ ধারায়ও সংশোধনী আনা হচ্ছে। ডিজিটাল মাধ্যম থেকে তথ্য-উপাত্ত অপসারণ ও ব্লক করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এই ধারায়। এখানে আগে বলা ছিল যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘প্রতীয়মান’ হয় ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত দেশের বা এর কোনো অংশের সংহতি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ বা জনশৃঙ্খলা ক্ষুন্ন করে বা জাতিগত বিদ্বেষ ও ঘৃণার সঞ্চার করে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ওই তথ্য-উপাত্ত অপসারণ বা ব্লক করার জন্য মহাপরিচালকের মাধ্যমে বিটিআরসিকে অনুরোধ করতে পারবে। এখানে ‘প্রতীয়মান’ শব্দের জায়গায় ‘তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ সাপেক্ষে, বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে’ প্রতিস্থাপন করা হবে।
বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হচ্ছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর সাইবার নিরাপত্তা বিল সংসদে তোলা হয়। এরপর বিলটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। চলতি অধিবেশনেই বিলটি পাস হবে।
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিএনপি মহাসচিব তার বক্তব্যে স্বীকার করে নিয়েছেন, তাদের এক দফার দাবি আদায় সম্ভব নয়।’
গতকাল রবিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবের গতকালের বক্তব্যে স্পষ্ট যে তাদের এক দফা আন্দোলনের দাবি আদায় সম্ভব নয়। এটি তিনি তার বক্তব্যে স্বীকার করে নিয়েছেন। ওনারা তো বহু আগে থেকেই এক দফার আন্দোলনে আছেন। সেটি একবার গরুর হাটে মারা গেছে, তারপর আগস্ট মাসের আগে জোর এক দফা আন্দোলন শুরু করবে বলেছিল; সেটিও হালে পানি পায়নি। তাদের আন্দোলনের হাট ভেঙে গেছে। এখন শুধু কর্মীদের চাঙা রাখার জন্য তারা এসব কথা বলছে।’
বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর ‘আন্দোলনের জোয়ারে আওয়ামী লীগ কোথায় যাবে’ মন্তব্য বিষয়ে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কোথাও যাব না, আমরা এ দেশেই আছি, এ দেশেই থাকব। রিজভী সাহেবরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন পাকিস্তানে যাবেন না অন্য কোথাও যাবেন, না এখানে থাকবেন। ওনাদের মহাসচিব বলেছেন, পাকিস্তানই ভালো ছিল।’
ভারতে জি-২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর যোগদান প্রসঙ্গে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ জি-২০-এর সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও জি-২০-এর বর্তমান সভাপতি ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে শুধু বাংলাদেশকে, অর্থাৎ আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, উপমহাদেশের আর কোনো রাষ্ট্রনায়ককে ডাকা হয়নি। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিজেই প্রধানমন্ত্রী ও তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সঙ্গে সেলফি তুলেছেন। কুশলবিনিময়ও করেছেন; আলোচনাও হয়েছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আরব আমিরাত ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টদের বৈঠক হয়েছে। অন্যান্য রাষ্ট্রনায়কদের সঙ্গেও তার সাক্ষাৎ এবং সাইডলাইনে আলোচনা হয়েছে। বাইডেনের সঙ্গে সেলফি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ছবি অনেক কথা বলে। সাংবাদিক ও বোদ্ধা ব্যক্তিরা বুঝতে পারছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ, আগামী দিনে আরও ঘনিষ্ঠ হবে।’
ড. ইউনূস ইস্যুতে সাবেক একজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের মার্কিন দূতাবাসে আশ্রয় চাওয়া প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মার্কিন দূতাবাসে তিনি গিয়েছিলেন কিন্তু আশ্রয় পাননি। অপেক্ষা করে গেট থেকে চলে এসেছেন। বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষ সরকারি কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত আছেন। বিএনপি যে বলে শুধু দলীয় কর্মীদের আমরা বিভিন্ন জায়গায় পদে বসিয়েছি, সেটি ঠিক নয়। এ ঘটনার মধ্যেই তা প্রমাণিত।’
বিকেলে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) আওতাধীন চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর ১ একর ৩৭ শতক জমি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনকে (বিএফডিসি) হস্তান্তরের চুক্তি স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করেন। তথ্যমন্ত্রীর দপ্তরে বিটিভির পক্ষে মহাপরিচালক ড. জাহাঙ্গীর আলম ও বিএফডিসির পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিন চুক্তিপত্রে সই করেন।
ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ১৮ আগস্ট ৯ বছরের শিশু আরাফাতের মৃত্যু হয়। সপ্তাহ না যেতেই ২৫ আগস্ট মারা যায় আরাফাতের ছোট বোন ৬ বছরের রাইদা। রাজধানীর মধ্যপাইকপাড়ার ছাপাখানা মোড়ের একটি বাসায় দুই সন্তান আরাফাত ও রাইদাকে নিয়ে থাকতেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও রাবেয়া আক্তার দম্পতি। সন্তানদের মৃত্যুর পর জীবনটাই বদলে গেছে তাদের। তছনছ হয়ে গেছে সাজানো সংসার। ইব্রাহিম ও রাবেয়া দম্পতির মতো বহু পরিবার এবার সর্বস্বান্ত হয়েছে ডেঙ্গুজ¦রের থাবায়। সন্তান হারানো এমন বাবা-মায়েরা পাগলপ্রায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর ডেঙ্গুতে শূন্য থেকে ২০ বছর বয়সী ১৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ১৮ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ ৮৬ এবং নারী ৯১ জন। এবার শুধু শহর নয়, গ্রামেও ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। সেখানেও মারা গেছে অনেক শিশু। এ বছর ডেঙ্গুতে শিশুমৃত্যু নিয়মিত ঘটনা হয়ে দেখা দিয়েছে। এই রোগে এত শিশুর মৃত্যু আগে কখনো হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এ বছর শূন্য থেকে ২০ বছর বয়সীরা আক্রান্ত হয়েছে ৬৩ হাজার ৯১৯ জন; যা মোট আক্রান্তের ৩২ শতাংশ। এর মধ্যে নারী ২৩ হাজার ৬১৭ এবং পুরুষ ৪০ হাজার ৩০২ জন। ডেঙ্গুতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। তথ্য বলছে, ডেঙ্গুতে শিশুদের আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার কম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া শিশুদের যারা সুস্থ হয়ে উঠছে, তাদের মধ্যে ভবিষ্যতে শারীরিক জটিলতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ডেঙ্গুর বর্তমান সংক্রমণের মধ্য দিয়ে শিশুদের জন্য নতুন ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তাদের মানসিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ডেঙ্গুর এই পরিস্থিতি শিশুদের নতুন বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার বিরূপ প্রভাব শিশুদের মধ্যে ভবিষ্যতে দেখা যেতে পারে। মস্তিষ্ক ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে এর প্রভাব থাকতে পারে। এতে তাদের মেধাবিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাদের যদি কিডনি কিংবা লিভারের মতো অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে সেই ভার সারা জীবন বহন করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শিশুদের মৃত্যু নিয়ে ভালোভাবে অ্যানালাইসিস করতে পারছি না। এসব মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে অটোপসি করতে পারলে ভালো হতো। বিভিন্ন দেশে মৃত্যু নিয়ে ডেথ রিভিউ বা অটোপসি করা হয়। এটি করতে পারলে বাংলাদেশে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যেত।’
এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। কোনো শিশুর শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হলে পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে, ১ মাস থেকে ১২ বছর বয়সী মুমূর্ষু শিশু রোগীদের পৃথক পিআইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দিতে হয়। তবে দেশে পিআইসিইউ সংকট রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে পিআইসিইউর জন্য স্বজনদের হাহাকার করতে দেখা গেছে। হাসপাতালগুলোতে দেখা গেছে ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ শিশুকে সেবা দিতে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যেমন বেশি, সেখানে শিশু রোগীও উল্লেখযোগ্য। এই দুটি হাসপাতালে একেকটি শয্যায় একাধিক শিশু রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। ঢামেক হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড খুলেছে কর্তৃপক্ষ। ৭০ থেকে ৮০ জনের সেবা পাওয়ার কথা, কিন্তু সেখানে প্রতিদিন সেবা নিচ্ছে প্রায় ৩০০ শিশু। ঢামেক হাসপাতালের ২৫ শিশুকে একসঙ্গে পিআইসিইউতে সেবা দেওয়ার সক্ষমতা আছে। কিন্তু মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোনো পিআইসিইউ নেই।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখানে শিশুদের ওয়ার্ডেই ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পিআইসিইউ নেই, তবে এনআইসিইউ (নিউনেটাল আইসিইউ বা নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) আছে।
এদিকে শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের শরীরে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু শনাক্তে পরীক্ষা করা প্রয়োজন। শিশুদের ডেঙ্গুর চিকিৎসা প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামীমা ইয়াসমীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিশুদের জ্বর আসার তিন দিনের মধ্যে পরীক্ষা করাতে হবে। এবার অনেকের মধ্যে হঠাৎ করে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। ফলে তারা দেরিতে চিকিৎসা নিতে আসছে। দেখা গেছে, ডেঙ্গুজ্বরে যেসব শিশু মারা গেছে, তারা বাড়ি থেকেই জটিলতা নিয়ে এসেছে। এখানে একটি বিষয় লক্ষ রাখতে হবে, শুধু প্লাটিলেট কমা আশঙ্কার নয়, রক্তচাপ কমে যাওয়া প্লাটিলেট কমার চেয়ে ভয়ের। তাই আমাদের শিশুদের রক্তচাপ নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে।’
স্যাংশন নিয়ে ভয় না পাওয়ার বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার মেথডিস্ট সেন্ট্রাল হলে নাগরিক সংবর্ধনায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি পাল্টা স্যাংশন দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
সংবিধান অনুযায়ী সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে জানান তিনি। খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা ইস্যু সম্পর্কে প্রশ্ন রাখেন, সাজাপ্রাপ্ত কাউকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠায় কোন দেশ?
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখে বলেন, পৃথিবীর কোন দেশের সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠায় বলতে পারেন? কোনো দেশে পাঠায়? তারা এটা দাবি করে। আমাদের কেউ কেউ আঁতেল আছে। তারা বলে, একটু কী সহানুভূতি দেখাতে পারেন না! সে এভারকেয়ার, বাংলাদেশের সবথেকে দামি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। আর রোজই শুনি এই মরে মরে, এই যায় যায়। বয়সতো আশির ওপর। মৃত্যুর সময় তো হয়ে গেছে। তার মধ্যে অসুস্থ। এখানে এত কান্নাকাটি করে লাভ নাই।
স্যাংশনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। আপনাদেরও বলব, স্যাংশন নিয়ে মাথা ঘামাবেন না।
বিএনপি চেয়ারপারসন ‘অসুস্থ’ খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে শর্ত দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সেই শর্তের অন্যতম ইস্যু হচ্ছে, বিএনপিকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। এমন ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিদেশে যাওয়ার অনুমতি মিলবে। কিন্তু সরকারের সেই শর্তে রাজি নন খালেদা জিয়া। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কোনো শর্তের বিনিময়ে তিনি মুক্তি চান না। ফলে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার সরকারের যে চেষ্টা, সেটা এ দফায় সফল হচ্ছে না বলে মনে করছেন আন্দোলনে থাকা নেতারা। তাদের মতে, সরকার ফাঁদ পাতলেও এতে পা না দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে বেগম জিয়ার। বরং আন্দোলনে এ সরকারকে বিদায় করে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলতে চান তারা। একই সঙ্গে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করেই আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন। এ লক্ষ্যে প্রায় অর্ধশত দল নিয়ে গত প্রায় এক বছর ধরে আন্দোলনে রয়েছেন তারা।
শর্তের বিনিময়ে মুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে গত রবিবার রাতে কিশোরগঞ্জে বিএনপির রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে দলটির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে শর্ত দেওয়া হয়েছিল তিনি যদি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চান, তাহলে বিএনপিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আসতে হবে। বিএনপি থেকে উত্তর দেওয়ার আগেই অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতাল থেকে খালেদা জিয়া বিদ্রোহ করে বলেছেন, তার জীবনে গণতন্ত্রের জন্য কোনো শর্ত নেই। ভোটের অধিকারের জন্য, এই দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য কোনো শর্ত নেই। কোনো শর্ত খালেদা জিয়ার নামের সঙ্গে যায় না এবং আমরাও তা মানি না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খালেদা জিয়া ৫৪ দিন ধরে টানা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিতই খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। এ সময় বেশ কয়েকবার শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়লে দলের কয়েকজন নেতার মাধ্যমে মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের দেওয়ার বক্তব্যের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি দলের মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির কয়েকজন সম্পাদক ও সদস্য খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন। সূত্রগুলো বলছে, একজন ভাইস চেয়ারম্যান ও স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য কথা প্রসঙ্গে এ ধরনের প্রসঙ্গেও ইঙ্গিত দিলে খালেদা জিয়ার শর্ত দিয়ে মুক্ত হতে চান না বলে পুনর্ব্যক্ত করেন। যদিও এর আগে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথা নেতাদের আগেই বলে রেখেছিলেন একসময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া এ নেত্রী। কোনো অবস্থায় শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়া যাবে না এবং এ ব্যাপারে কোনো ধরনের সমঝোতাও নয়Ñ এ ব্যাপারেও খালেদা জিয়ার স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে হাসপাতালে দেখা করেন। সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে এসে মঞ্চের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের এ আন্দোলনে উনার সমর্থন আছে। আমাদের একজন নেতা (ওই বৈঠকে) বলেছেন, সরকার একটা নির্বাচনের জাল বিছানোর চেষ্টা করছে। উনি (খালেদা জিয়া) বলেছেন, কোনো অবস্থায় এ সরকারের অধীনে নির্বাচনী ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।’
এর আগে ৮ মে রাতে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় সাক্ষাৎ শেষে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছিলেন, কেউ কেউ বলছেন আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাওয়া উচিত। এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া তাদের বলেছেন, প্রশ্নই আসে না। এ বিষয়ে আমি কোনো অনুমতি দেব না।
এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি মনে করছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনে এ সরকারকে বিদায় করতে না পারলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমে এ ইস্যুর সমাধান করবে তারা। এজন্য চলমান এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে এখন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসা ইস্যুটি জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে চান তারা। এতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নিতে পারে বলে তাদের বিশ্বাস।
গতকাল সোমবার স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে সভায় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। আগামী ৫ অক্টোবর বিএনপি ঘোষিত রোডমার্চ কর্মসূচি শেষ হবে। এর আগেই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি।
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু বলেন, ‘দাবার ঘুঁটি হিসেবে খালেদা জিয়াকে ব্যবহারের চিন্তা তারা কীভাবে করে সেটাই বোধগম্য নয়। সরকারের এ ধরনের চিন্তা বা পরিকল্পনা কোনো কাজে আসবে না।’
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে বিএনপিপ্রধানের পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদনের ওপর গত রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই। যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আবার গতকাল নিজ কার্যালয়ে সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি কিংবা আপিল বিভাগে আবেদন করতে পারেন। তবে তার আগে তাকে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জেলে যেতে হবে। রাষ্ট্রপতি বা আপিল বিভাগের খালেদা জিয়ার পরিবার আবেদন করবে না বলে দলীয় আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন নেই বলেই বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে ভয়ংকর তামাশা করা হয়েছে। যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। এর বাইরে দলের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেই।’
এদিকে চিকিৎসক সূত্র জানা গেছে, বর্তমানে খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। গতকাল তার আলট্রাসনোগ্রাম ও ইকো করা হয়েছে।
তিনি জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য প্রণীত আইনের অধীনে ধানমন্ডিতে যে বাড়ি পেয়েছিলেন শেখ রেহানা, বিএনপি ক্ষমতায় এসে সে বাড়ি উচ্ছেদ করে। সেখানে পুলিশ ফাঁড়ি করছে আর ‘লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে’ সেই পুলিশ ফাঁড়ি উদ্বোধন করেছে খালেদা জিয়া। ছেলে কোকোর মৃত্যুর পর তাকে (শেখ হাসিনা) খালেদা জিয়ার বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা কীভাবে খালেদা জিয়ার জন্য আমার কাছ থেকে আরও সহানুভূতি আশা করে।’
লন্ডনের মেথোডিস্ট সেন্ট্রাল হল ওয়েস্টমিনস্টারে তার সম্মানে আয়োজিত একটি কমিউনিটি সংবর্ধনায় তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলা বিএনপির পক্ষে শোভা পায় না কারণ তারা জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে ধোকাবাজি খেলেছে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি একটি প্রহসনমূলক নির্বাচন করে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার দেড় মাসের মধ্যেই দেশের জনগণ তাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে। তিনি বলেন, দেশের জনগণ কখনই ভোট কারচুপিকারীদের ক্ষমতায় বসতে দেয় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রধান হিসেবে তার ওপর ন্যস্ত নির্বাহী ক্ষমতা দিয়ে এতিমদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড স্থগিত করার পর খালেদা জিয়াকে তিনি বাড়িতে থাকতে দিয়েছেন। খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে তার কিছুই করার নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি আইন অনুযায়ী যা করতে পারেন তাই করেছেন। অনেকেই এখন যুক্তি দিচ্ছেন, ‘আইন নিজের গতিতে চললেও খালেদা জিয়ার প্রতি আমি বেশি সহানুভূতি দেখাতে পারি’।
অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজেদুর রহমান ফারুক।
উত্তর-পূর্ব পাকিস্তানে একটি অঙ্গ পাচারকারী চক্রের আট সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, পুলিশ বলছে। চক্রটির নেতা ফাওয়াদ মুখতারের বিরুদ্ধে ৩০০ জনেরও বেশি মানুষের কিডনি চুরি করে বের করে ধনী গ্রাহকদের মধ্যে প্রতিস্থাপন করার অভিযোগ রয়েছে।
মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা বিবিসি নিউজ।
বিবিসি জানায়, অস্ত্রোপচারের সময় রোগীর দেহ থেকে কিডনি সরিয়ে ফেলা এবং ধনী গ্রাহকদের কাছে বিক্রির অভিযোগে ফাওয়াদ মুখতার নামের এক চিকিৎসক ও তার দলের আট সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছে পাকিস্তান পুলিশ। ফাওয়াদ এ পর্যন্ত তিন শতাধিক রোগীর কিডনি চুরি করেছেন।
এমনকি অস্ত্রোপচারকালে কিডনি চুরির সময় তার হাতে অন্তত তিনজন রোগী মারা গেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ফাওয়াদ এর আগে পাঁচবার অসদাচরণের জন্য গ্রেপ্তার হলেও প্রতিবারই জামিন নিয়ে মুক্তি পেয়ে যান। রোববার (১ অক্টোবর) পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানায় পাকিস্তান পুলিশ। চক্রটি পূর্ব পাঞ্জাব প্রদেশের পাশাপাশি পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরে কাজ করছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মহসিন নকভি রবিবার একটি সংবাদ সম্মেলনে জানান, “কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টগুলি বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবনকে ক্লিনিক আকারে সাজিয়ে সেখানে রোগীদের অস্ত্রোপচার করার সময় রোগীদের অজান্তেই কিডনি সরিয়ে নেয়া হত।“
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফাওয়াদ মুখতার জানিয়েছেন, তার নেতৃত্বাধীন চক্র এখন পর্যন্ত মোট ৩২৮ রোগীর দেহ থেকে কিডনি চুরি করেছে। প্রতিটি কিডনি বিক্রি হয়েছে ১ কোটি রুপি করে।
২০১০ সালে মানবদেহের প্রত্যঙ্গ ব্যবসা নিষিদ্ধ করে পাকিস্তান। এ অপরাধের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও মোটা অঙ্কের জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।