
জামালপুরের জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বুধবার জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হক এ তথ্য জানান। তিনি জানান, ঘটনার সত্যতা যাচাই সাপেক্ষে জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো. ইমরান আহমেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, জামালপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. ইমরান আহমেদ স্থানীয় সংসদ সদস্য মির্জা আজমের উপস্থিতিতে জনবহুল এক সভায় বক্তব্য রেখেছেন। ডিসি তার বক্তব্যে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ সরকারকে পুনরায় নির্বাচিত করে ক্ষমতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য মির্জা আজমকে আগামী নির্বাচনের পর মন্ত্রী হিসেবে দেখার আশা প্রকাশ করেন। তার বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পক্ষপাতহীন নিরপেক্ষ আচরণ করতে হবে। এটি সংবিধান ও সংশ্লিষ্ট সব আইনের অর্থ ও অন্তর্নিহিত চেতনা। সংবিধানের ১২০ ও ১২৬ নম্বর অনুচ্ছেদ এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৫ ও ৯১ (গ) নম্বর অনুচ্ছেদসহ আরও বিভিন্ন আইন ও ধারায় এ বিষয়টি সুস্পষ্ট। নির্বাচন বিষয়ে কমিশনের এখতিয়ার কেবল তফসিল ঘোষণার পর নয়, সব সময় বিদ্যমান থাকে।
ইসি আরও জানায়, জেলা প্রশাসকেরা সাধারণত রিটার্নিং অফিসার হিসাবে নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করে থাকেন এবং নির্বাচনের সময় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করে থাকেন। এ অবস্থায় সরকার, গণতন্ত্র, নির্বাচন ব্যবস্থা এবং নির্বাচন কমিশনের ওপর জনমানুষের আস্থা অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে মো. ইমরান আহমেদকে ঘটনার সত্যতা যাচাই সাপেক্ষে জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনোরূপ নির্বাচনী দায়িত্ব প্রদান করা থেকে বিরত রাখা সমীচীন হবে। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের এ ধরনের আচরণ থেকে বিরত থাকতে সতর্কবার্তা দেওয়া প্রয়োজন চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমনির্ভর আর্থিক প্রতারণা বেড়েছে বহুগুণ। সবচেয়ে বেশি শোনা যায় মূল্যবান উপহার পাঠানোর নামে ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা। একই কৌশলে বছরের পর বছর বহু মানুষ প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে অবাক হন অনেকেই। আর এমন প্রতারণা নিয়ে আলোচানা উঠতেই চলে আসে বিপ্লব লস্করের নাম, যিনি লোভ দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেন বহু মানুষের। বেশি পরিমাণে টাকা হারানো ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে, কিন্তু কিছুদিন পরই জামিনে বেরিয়ে বিপ্লব ফের শুরু করেন প্রতারণা। অবশ্য নাছোড়বান্দা এই প্রতারকের মূলোৎপাটনে নেমেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। কয়েক বছর ধরে তদন্ত করে তার জমি, বাড়ি, নগদ টাকাসহ প্রায় ১৩ কোটির অবৈধ সম্পদের সন্ধান পেয়েছেন সিআইডি কর্মকর্তারা।
সিআইডির তদন্তকারীরা বলছেন, প্রায় ১০ বছর প্রতারণা করে শূন্য থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন প্রতারক বিপ্লব লস্কর। প্রতারণার টাকায় নিজের নামে জমি কেনা ও বাড়ি বানানোর প্রমাণও মিলেছে। বিপ্লব লস্কর প্রতারণা করে হাতিয়ে নেওয়া টাকা লুকাতে অন্যের ব্যাংক হিসাবে জমা করেছেন। এ জন্য দিয়েছেন মোটা অঙ্কের লাভ। এ ছাড়া অন্যের পরিচয়ে খোলা ব্যাংক হিসাবে জমা করেছেন টাকা। তদন্তে এভাবে আড়াল করা ৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যাংক হিসাবে পাওয়া গেছে। তবে তার প্রতারণা থেকে আয় এর চেয়ে বেশি হতে পারে। সিআইডির মুখপাত্র অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই প্রতারক চক্রটির বিরুদ্ধে আমাদের তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এখন পর্যন্ত যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে, তাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া হাতিয়ে নেওয়া অর্থ জব্দ করা হয়েছে।’
যেভাবে হাতিয়ে নিল এত টাকা : মানিকগঞ্জের মো. সাব্বির হোসেন পেশায় প্রকৌশলী, কাজ করছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। বিপ্লব চক্রের ফাঁদে পড়ে হারিয়েছেন ৫০ হাজার টাকা। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর নারী সদস্য পরিচয়ে তার সঙ্গে কথিত বন্ধুত্ব গড়ে তুলে উপহার হিসেবে নগদ অর্থ পাঠানোর নামে হাতিয়ে নেওয়া হয় এই টাকা।
সাব্বির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ওই নারী আমার সাথে ফেসবুকে বন্ধুত্ব করেছিল। আমিও তার সাথে যোগাযোগ রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম, তার মাধ্যমে বিদেশে যাব এমন পরিকল্পনা থেকে। অনেক দিন কথার একপর্যায়ে সে জানায়, এক যুদ্ধে সে অংশ নিয়েছে এবং সেখানে অনেক নগদ টাকা পেয়েছে। এই টাকাগুলো সে নিরাপদে রাখতে পারছে না। আমার কাছে পাঠানোর কথা বলে। আমি তার কথায় রাজি হওয়ার কিছুদিন পর কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়ে আমাকে এক ব্যক্তি ফোন করেন। তিনি বলেন, আপনার মাল খালাসের জন্য ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। তার কথামতো টাকা দেওয়ার পর বুঝতে পারি এটা প্রতারণা।’
এমন অন্তত ১০ জন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদেরই একজন হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের বাসিন্দা তানজিলা আক্তার লুনা। সিঙ্গাপুরপ্রবাসী এক আত্মীয়কে ল্যাপটপসহ প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস পাঠাতে বলেছিলেন। এর কিছুদিন পর তার কাছে ফোন আসে কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়ে। এরপর তার কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় ১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।
তানজিলা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেবরের সাথে (সিঙ্গাপুরপ্রবাসী) কথা বলার কিছুদিন পর আমাকে একটি নম্বর থেকে ফোন করে কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়ে আমার উপহার এসেছে বলে জানায়। আমি দেবরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করি, কিন্তু তখন কোনো কারণে তাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু আমার নামে উপহার এসেছে, সেটা পেতে আগ্রহী হয়ে উঠি। তাদের শর্ত অনুযায়ী ২৮ হাজার টাকা দিই। কিন্তু উপহারটি না দিয়ে তারা আমাকে বলে আপনার প্যাকেটে অবৈধ জিনিস পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মামলা হলে আপনি এবং আপনার দেবর আসামি হবেন। এরপর আমি আরও ১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা দিই। এরপর ওই নম্বর বন্ধ পেয়ে বুঝতে পারি এটা প্রতারণা।’
বিপ্লব লস্করের চক্রটি এভাবে বিদেশ থেকে পার্সেল ও উপহার পাঠানোর নাম করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করত। প্রায় ১০ বছর আগে নাইরেজিয়ার একটি প্রতারক চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে এই প্রতারণার কাজ শুরু করে। এরপর কাস্টমস অফিসার পরিচয়ে টাকা হাতিয়ে নিতেন। তার এই চক্রে জড়িত বাংলাদেশে বসবাসকারী নাইজেরীয় প্রতারকরা গ্রেপ্তার হয়েছে বিভিন্ন সময়। যাদের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী, শিক্ষক ও চাকরিজীবীদের টার্গেট করে ফেসবুকে বন্ধুত গড়ে তুলত। পরে ডলার ও দামি উপহার পাঠানোর নামে ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিত লাখ লাখ টাকা।
শূন্য থেকে কোটিপতি : বিপ্লবের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে। পরিবারে অভাবের কারণে স্কুলে যাওয়া হয়নি। তবে তিনি প্রতারণায় জড়িয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। প্রতারণার অভিযোগে সারা দেশে তার নেতৃত্বাধীন চক্রটির বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা রয়েছে। এসব মামলার অধিকাংশ তদন্ত করেছে পুলিশের বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এই চক্রের বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক মামলা হয়েছে। এ ছাড়া সিআইডি বাদী হয়ে চারটি মামলা করেছে। অর্থ পাচার আইনে করা এসব মামলায় উঠে এসেছে বিপ্লব লস্করের অবৈধ সম্পদের তথ্য।
সংশ্লিষ্টরা বলছে, তদন্তে এখন পর্যন্ত বিপ্লব লস্করের ১২ কোটি ৯৭ লাখ টাকার বেশি অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তার ও সহযোগীদের ব্যাংক হিসাবে পাওয়া যায় ৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আর একটি জমিসহ বাড়ি পাওয়া গেছে, যার আনুমানিক দাম তিন কোটি টাকা। গত বছর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকায় ওই জমি কেনেন এক চিকিৎসকের কাছ থেকে। এই বাড়িতেই স্ত্রীসহ থাকতেন।
সিআইডির করা মামলাগুলোয় বিপ্লব ছাড়াও অন্য আসামিরা হলেন মো. হামিদুর রহমান, রুমা আক্তার, মো. আলাল হোসেন, মো. শহিদুল ইসলাম, মো. হেলাল মিয়া, মো. হারুন অর রশিদ, কাউছার, মো. শাহিন, নাফিসা নওরিন ঐশী, লতা আক্তার, আয়েশা আক্তার, মো. হাবিবুর রহমান, মো. আশরাফুল ইসলাম ও মো. আল আমিন।
তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, হামিদুর রহমানকে বিপ্লব লস্কর হাতিয়ে নেওয়া টাকা থেকে প্রতি লাখে ১৫ হাজার লাভ দিতেন। এ জন্য তার পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলে হাতিয়ে নেওয়া টাকা সরিয়ে নেওয়ার কাজ করতেন। তার স্ত্রী রুমা কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়ে মানুষকে ফাঁদে ফেলার কাজ করতেন। বিপ্লবের চক্রে থাকা এই প্রতারক দম্পতি নিজেদের ভোগবিলাসে প্রতারণার অর্থ ব্যয় করেছেন।
অন্য আসামি আলাল হোসেন হামিদুরের অ্যাকাউন্ট থেকে চেক ব্যবহার করে টাকা তুলে মূলহোতা বিপ্লবের কাছে পৌঁছে দিতেন। এ জন্য আনুপাতিক হারে টাকা পেতেন। অন্যদিকে আসামি হারুন অর রশিদ ফেসবুকে মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ার কাজ করতেন। এ জন্য বিভিন্ন অঙ্কের টাকা পেয়েছেন। চক্রের অন্য সদস্যরাও বিভিন্ন পন্থায় সাধারণ মানুষের ফেসবুক আইডি, হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর ও ই-মেইল অ্যাড্রেস সংগ্রহ করে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীর কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পরিচয় ব্যবহার করে টার্গেট করা ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। একপর্যায়ে দামি উপহার, স্বর্ণ, মূল্যবান পাথর, হীরা ও বিশাল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানোর কথা বলে ফাঁদে ফেলতেন।
সম্প্রতি ৬ দশমিক ৮ মাত্রার এক ভূমিকম্পে তছনছ হয়ে গেছে মরক্কো। বিশেষ করে দেশটির গ্রামাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘরগুলো মিশে গেছে মাটিতে। ভয়াবহ ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। যারা মারা গেছেন তাদের বেশির ভাগেরই মৃত্যু হয়েছে ধসে পড়া বাড়ি-ঘরের নিচে চাপা পড়ে। তবে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের খুব কাছে থাকা আদাসিল অঞ্চলের ইগিল তালগুমত নামের একটি গ্রামে ভূমিকম্পে কোনো মানুষের মৃত্যু হয়নি। যদিও ওই গ্রামের প্রায় সব বাড়ি-ঘর ভূমিকম্পে পুরো ধসে পড়েছে।
সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানায়, শুক্রবার ভূমিকম্পের কিছু সময় আগে ওই গ্রামবাসীরা কনে পক্ষের আয়োজনে একটি বিয়ে পূর্ববর্তী অনুষ্ঠানে উন্মুক্ত স্থানে সমবেত হয়েছিলেন। সেখানে স্থানীয় সংগীত ও অন্যান্য আয়োজন উপভোগ করছিলেন তারা। আর তখনই শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে পুরো গ্রাম।
অনুষ্ঠানকালে অনেকেই মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করছিলেন। সেসব ভিডিওতে ভূমিকম্পের আতঙ্কজনক সময়ের ফুটেজ ওঠে আসে। ফুটেজগুলোতে সেখানকার আমন্ত্রিত অতিথিদের ভয়ে-আতঙ্কে চিৎকার-চেঁচামেচি করতে শোনা যায়। অনুষ্ঠানে আগত এক অতিথি ভূমিকম্প আঘাত হানার আগ থেকেই ভিডিও করছিলেন। সেই ভিডিওতে দেখা যায় সংগীত শিল্পীরা দেশটির ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে বাঁশি ও ছাগলের চামড়ার তৈরি ড্রাম বাজাচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই সেখানে হই-হুল্লোড় ও মানুষের আর্তনাদ শুরু হয়।
ভূমিকম্প আঘাত হানার পরের দিন অর্থাৎ শনিবার ৩০ বছর বয়সী মোহাম্মদ বাওদাদের সঙ্গে ২২ বছর বয়সী হাবীবা আজদিরের বিয়ের দিন ধার্য করা হয়েছিল। আর সেখানকার রীতি অনুযায়ী, বিয়ের আগের দিন কনের বাড়িতে বিবাহ পূর্ববর্তী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সেই বিয়ের আয়োজনই সৌভাগ্যক্রমে তাদের ভয়াবহ বিপদ থেকে রক্ষা করেছে।
ভয়াবহ সেই ভূমিকম্পের চতুর্থদিন, মঙ্গলবার বর-কনের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় গার্ডিয়ান প্রতিনিধির। তারা দুজন এই কদিনে পোশাকও বদলাতে পারেননি, কারণ সব চাপা পড়ে আছে ধ্বংসস্তূপের নিচে। বর বাওদাদ গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘আমরা বিয়েটা বেশ ঘটা করে উদযাপন করতে শুরু করেছিলাম, আর তখনই আঘাত হানলো ভূমিকম্প। সেসময় আমি ছিলাম আমার গ্রামে। বুঝতে পারছিলাম না আমি আমাদের গ্রামের কথা ভাবব নাকি ওদের (কনে হাবীবা) গ্রামের কী হলো তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করব।’
এ কথা বলেই স্ত্রীর হাত ধরে স্মিত হাসেন বাওদাদ। পরিস্থিতি সহজ করতে গার্ডিয়ান প্রতিনিধি প্রশ্ন করেন কীভাবে তাদের পরিচয় হলো? উত্তরে বাওদাদ বলেন, ‘ভাগ্যই আমাদের মিলিয়ে দিয়েছে।’
চিটাগাং চেম্বারের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কেউ পদত্যাগ করলেন। এর আগে এই চেম্বারের নেতৃত্ব নিয়ে অনাস্থা প্রস্তাব, প্রকাশ্য বিরোধ থাকলেও কেউ লিখিতভাবে পদত্যাগ করেনি। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বনেদি এই চেম্বারের পরিচালক থেকে পদত্যাগ করলেন প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর। গতকাল বুধবার তিনি চেম্বারের নতুন সভাপতি ওমর হাজ্জাজের বরাবর এই পদত্যাগপত্র জমা দেন। তিনি এর আগে চিটাগাং চেম্বারের গত টার্মের (২০২১-২৩) ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ২০১৯-২১ টার্মে পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। গত মাসে ২০২৩-২৪ টার্মের জন্য পরিচালক হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বর্তমানে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার বাবা এম নাসির উদ্দিনের হাতে গড়া এই শিল্প গ্রুপ বাংলাদেশ থেকে প্রথম জিন্স রপ্তানিতে পথ দেখিয়েছিল। তার বাবার উত্তরসূরি হিসেবে তিনি গ্রুপটিকে এগিয়ে নিচ্ছেন। ব্যবসা পরিচালনার পাশাপাশি ব্যবসায়ী নেতৃত্বেও প্রতিভাবান হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হচ্ছিল। গত দুই টার্মে চিটাগাং চেম্বারের দায়িত্বে থেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে অনেক উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এ সময় তার উদ্যোগে ব্যবসা-বাণিজ্য এগিয়ে নিতে গবেষণা ও প্রশিক্ষণনির্ভর ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স’ নামে একটি স্বাধীন ট্রাস্ট গঠন করা হয়। প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি চট্টগ্রাম চেম্বারের নীতি নির্ধারণ কাজে সহায়তা করে আসছিল এই সংস্থাটি।
কিন্তু তানভীর কেন পদত্যাগ করলেন? এ বিষয়ে জানতে চাইতে গতকাল তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগত কারণে চেম্বার পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেছি।’
চট্টগ্রাম চেম্বারের ১১৭ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম নতুন কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় কোনো পরিচালক পদত্যাগ করলেন। পদত্যাগপত্রের চিঠিতে সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর চেম্বারের বর্তমান পরিস্থিতিতে এই মেয়াদে চেম্বারের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে অপারগতার কথা জানান।
চট্টগ্রাম চেম্বারের নতুন কমিটির পরিচালকরা পাঁচবারের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। নির্বাচিত পরিচালকরা চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) এম এ লতিফের তৃতীয় সন্তান ওমর হাজ্জাজকে সভাপতি নির্বাচিত করেন। ৩২ বছর বয়সী ওমর হাজ্জাজকে চেম্বারের মতো শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের সভাপতি নির্বাচন করায় বিষয়টি অনেকে মেনে নিতে পারেননি। এ নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হলেও প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলেননি এত দিন। এবার কোনো পরিচালকের পদত্যাগে বিষয়টি সামনে এসেছে আবার।
চলচ্চিত্র পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান মারা গেছেন। গতকাল বুধবার সন্ধ্যার দিকে ঘুমের মধ্যে মারা গেছেন বলে দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেন চলচ্চিত্র পরিচালক অপূর্ব রানা।
তিনি বলেন, ‘আজকে (গতকাল) দুপুরে সোহান ভাই ঘুমিয়ে ছিলেন। বিকেলে তাকে ডাকতে গেলে দেখা যায় তিনি উঠছেন না। এরপর তাকে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’ তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার ওনার স্ত্রী মারা গেছেন। তিনি হয়তো সে শোক নিতে পারেননি। কিছুদিন পরেই চিকিৎসার জন্য ওনার (সোহানুর রহমান সোহান) জাপান যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আর হলো না।’
এর আগে মঙ্গলবার ব্রেনস্ট্রোকে মৃত্যুবরণ করেন সোহানুর রহমান সোহানের স্ত্রী।
বহু সফল চলচ্চিত্রের নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান। তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘বিশ্বাস অবিশ্বাস’। এ নির্মাতার হাত ধরেই চলচ্চিত্রে আসেন সালমান শাহ, মৌসুমী, পপি ও ইরিন জামান। শাকিব খানের মুক্তি পাওয়া প্রথম সিনেমার পরিচালকও ছিলেন তিনি।
সোহানুর রহমান সোহানের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলোÑ কেয়ামত থেকে কেয়ামত, স্বজন, আমার ঘর আমার বেহেশত, অনন্ত ভালোবাসা প্রমুখ।
সোহানুর রহমান সোহান বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে টানা দুবার মহাসচিব এবং দুবার সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। শিবলী সাদিকের সহকারী হিসেবে তিনি তার চলচ্চিত্র কর্মজীবন শুরু করেন।
ছাত্রলীগের তিন নেতাকে নির্যাতনের ঘটনায় শাহবাগ থানার পুলিশ সদস্যদের কার কী ভূমিকা ছিল তা খতিয়ে দেখছে তদন্ত কমিটি। রমনা বিভাগের বরখাস্ত হওয়া অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন-অর-রশীদ এবং শাহবাগ থানা থেকে প্রত্যাহার করা পরিদর্শক (অপারেশন) গোলাম মোস্তফা ছাড়াও প্রায় ১৫ পুলিশ সদস্য নির্যাতনে অংশ নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। বিভাগীয় তদন্তের এ পর্যায়ে তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তদন্ত শেষে পরিদর্শক ছাড়াও থানার একাধিক পুলিশ সদস্য অভিযুক্ত হতে পারেন। যার আলোকে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার।
এ ছাড়া ঘটনার সূত্রপাতের সময় বারডেম হাসপাতালে কার কী ভূমিকা ছিল সেসবও গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে তদন্ত প্রতিবেদন জমার জন্য আরও পাঁচ কর্মদিবস সময় পেয়েছে তদন্ত কমিটি। গতকাল বুধবার ডিএমপির গঠন করা এই কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের কথা ছিল। তবে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করতে না পারায় এর আগেই তারা সময় বাড়ানোর আবেদন করেছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচ দিন সময় বাড়ানো হয়েছে বলে ডিএমপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (অপারেশন) আবু ইউসুফকে প্রধান করে গঠিত এই তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন ডিএমপির নিউমার্কেট জোনের এডিসি শাহেন শাহ মাহমুদ এবং ডিবির মতিঝিল জোনের এডিসি রফিকুল ইসলাম।
ডিএমপির মুখপাত্র উপকমিশনার ফারুক হোসেন গতকাল এক ভিডিও বার্তায় বলেন, শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের অভিযোগ ওঠার পর ডিএমপির পক্ষ থেকে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করে এবং তাদের দুই কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছিল। পূর্ণাঙ্গ তদন্তের স্বার্থে এবং এডিসি হারুন ছাড়া অন্য কারা কারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাদের কার কী ভূমিকা ছিল এবং ঘটনার সূত্রপাত যেখানে বারডেম হাসপাতাল, সেখানে কারা কারা ছিলেন, কার কী ভূমিকা ছিল সব তদন্ত করতে আরও সময় প্রয়োজন। সেজন্য তদন্ত কমিটি আরও পাঁচ কার্যদিবস সময় আবেদন করেছিল। ডিএমপি কমিশনার তাদের তদন্তকাজ শেষ করতে আরও পাঁচ কার্যদিবস সময় দিয়েছেন। এই পাঁচ দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে যারা ঘটনার সঙ্গে দায়ী থাকবেন, সে অনুযায়ী ডিএমপি কমিশনার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
গত শনিবার রাতে রাজধানীর শাহবাগ থানায় নির্যাতনের শিকার হন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল শাখার সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ। ঘটনার সূত্রপাত হয় বারডেম হাসপাতালে। সেখানে দুপক্ষের মধ্যে মারামারি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে ছাত্রলীগ নেতাদের মারধর করা হয়। এ ঘটনার নেপথ্যের কারণ হিসেবে রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক ও এডিসি হারুন-অর-রশীদের মধ্যে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের বিষয়টি সামনে আসে। সেই দ্বন্দ্ব ছিল আজিজুলের স্ত্রী ডিএমপির আরেক এডিসি সানজিদা আফরিনকে কেন্দ্র করে। এ ঘটনায় এডিসি হারুনকে গত সোমবার সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। পরে গত মঙ্গলবার হারুন-অর-রশীদকে রংপুর রেঞ্জ উপমহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে এডিসি সানজিদা আফরিনকেও রংপুর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে (পিটিসি) বদলি করা হতে পারে বলে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। তবে সানজিদার বদলির বিষয়ে গতকাল পর্যন্ত কোনো প্রজ্ঞাপন হয়নি বলে জানিয়েছেন ডিএমপির মুখপাত্র ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, ‘এডিসি সানজিদাকে রংপুর বদলি করার খবরের সত্যতা নেই। এখন পর্যন্ত এমন কোনো অর্ডার হয়নি। এডিসির বদলি বিষয়ে কোনো আদেশের কপি পাই নাই।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের কারণে চলমান রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে নতুন করে উত্তাপ তৈরি হয়েছে। দুই দলের এ পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের মূল টার্গেট ঢাকা দখলে নেওয়া। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসা নিতে বিদেশ পাঠাতে রবিবার বিএনপি ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে। পাল্টা জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও একই পথে হেঁটেছে। বিএনপিকে ‘আগুন সন্ত্রাস, অপরাজনীতি ও নাশকতার রাজনীতি’ ছাড়ার জন্য সোমবার ৩৬ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এরপর পাল্টা ৩৬ ঘণ্টার হুঁশিয়ারি এসেছে বিএনপির কাছ থেকে।
তার আগে গত শনিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে আবেদন করলে অনুমতির বিষয়টি দেখা যাবে। তবে তার কাছে এরকম কোনো কাগজপত্র আসেনি। ওইদিনই খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার বলেছেন, সরকারের মনোভাব ইতিবাচক হলে তারা আবারও আবেদন করবেন।
পরদিন রবিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আলটিমেটাম দেন। ওইদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে বিএনপি বলছে, সরকার চাইলে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে পারে।
দুই দলের রাজনীতি ও ঘোষিত আলটিমেটাম মাঠের রাজনীতিতে কোনো পরিবর্তন আনবে কি না, সে সম্পর্কে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। বিএনপির আলটিমেটামের ফল কী হবে আর আওয়ামী লীগেরও দীর্ঘ ৩৬ দিনের আলটিমেটাম কেন এ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভেতর বেশ কৌতূহল দেখা দিয়েছে।
দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত রাজধানী ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এমন পাল্টাপাল্টি আলটিমেটাম। ঢাকায় বিএনপির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার কৌশলের অংশ হিসেবেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইস্যুতে দলটি আলটিমেটাম দিয়েছে। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতেই তার পাল্টা জবাব দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
দুই দলের ওই নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির রাজনীতির মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা। ঢাকার রাজনীতি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে বের করে আনতে না পারলে রাজনীতিতে জুতসই অবস্থান সৃষ্টি করতে পারবে না বিএনপি।
সারা দেশের নিয়ন্ত্রণে রাখা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেয়ে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রাজনৈতিক জয়-পরাজয় নির্ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিএনপির ওই শীর্ষসারির নেতারা। তাই বিএনপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসাকে ইস্যু করে নেতাকর্মীদের ঢাকায় ডেকে পাঠানোর কৌশল গ্রহণ করেছে। পর্যাপ্ত নেতাকর্মী ঢাকায় ঢুকে গেলে অবস্থা বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তাই ইস্যু খালেদার চিকিৎসা, কিন্তু লক্ষ্য ঢাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ৩৬ দিনের আলটিমেটামের পেছনে রয়েছে নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার আগপর্যন্ত ঢাকায় নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখা। সেই সঙ্গে নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে নির্দেশনা দিয়ে রাখা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে ততই ষড়যন্ত্রের নীল নকশা আঁকছে।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের শান্তি যেন বিঘিœত না হয়, সেজন্যই আমরা বিএনপির কর্মসূচির দিন মাঠে থাকি। বিএনপিকে জনগণ বিশ্বাস করে না। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে সত্যিই নিতে চাইলে আলটিমেটাম কেন দেবে বিএনপি? আইনি জটিলতা নিরসন করে বিদেশ নেওয়ার চেষ্টা করবে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘বিএনপি সন্ত্রাস-সহিংসতানির্ভর রাজনীতি করে, বিশ্বাস করে। তারা পাকিস্তানের প্রেতাত্মা।’ তিনি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করাতে চাইলে কেন বিএনপি আইনি প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে না? তার কিছু হলে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দায় নিতে হবে।’
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দুই দলের ঘোষিত আলটিমেটামকে কথার বাকযুদ্ধ হিসেবে নিয়েছেন। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এগুলো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের অবস্থান ধরে নেওয়া যায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে তাদের কোনো গা নেই। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিভিন্ন বক্তব্যে সেটাই স্পষ্ট করেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে হলে আইনগতভাবে যেতে হবে। নির্বাহী কোনো সিদ্ধান্তে এ সুযোগ দেওয়া হবে না। ফলে আলটিমেটাম মূলত নিষ্ফল হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দাবি আদায় করার জন্য জনগণ থেকে দাবি উঠতে হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণকে রাস্তায় নামাতে পারবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘এখন যেসব বক্তব্য এগুলো মঞ্চের বাকযুদ্ধ।’
বিএনপির আলটিমেটাম নিয়ে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারব না। আমি (গতকাল মঙ্গলবার) সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষ করে এসেছি।’ আলটিমেটামের পেছনে ঢাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় তো আমরা সভা-সমাবেশ করছিই।’
জানতে চাইলে বিএনপির আরেক নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আলটিমেটাম সম্পর্কে ক্লিয়ার কিছু জানি না।’
বিএনপিকে ‘অপরাজনীতি’ ছাড়তে ৩৬ দিন সময় বেঁধে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ সময়ের মধ্যে ‘সঠিক পথে’ না এলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির ‘অপরাজনীতির কালো হাত’ গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে আলটিমেটাম দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এটি বিএনপির জন্য শেষ বার্তা।’ গত সোমবার রাজধানীর উত্তরায় এবং যাত্রাবাড়ীতে পৃথক সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। উত্তরার সমাবেশে ওবায়দুল কাদের এ আলটিমেটাম দেন।
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপি দুই সপ্তাহের কর্মসূচি নিয়ে এখন রাজপথে আছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগও ২১ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ঢাকায় গত সোমবার দুটি সমাবেশ হয়।
এর আগে থেকেই ঢাকায় বিএনপির কর্মসূচির দিন শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীনরা বিএনপির সভা-সমাবেশের বিষয়ে নমনীয়তা প্রদর্শন করলেও মাঠের নিয়ন্ত্রণ ছাড়েনি।
তামিম ইকবাল দলে না থাকাতে যেন অনেকেরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে! আবার বিশ্বকাপের দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অন্তর্ভুক্তিতেও অনেকের চোখ কপালে! দল ঘোষণার পর যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা এলেন সংবাদ সম্মেলনে, তখন আলোচনায় শুধু ছিলেন এই দুজনেই। তাদের এই বিরহ বেদনায় চাপা পড়ে যায় অনেক প্রশ্ন। লিটন দাসকে বাদ দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত কেন সহ-অধিনায়ক! বাড়তি কোনো ওপেনার ছাড়া কিংবা পাঁচ পেসারকে নিয়ে কেন দল গড়া?
প্রায় মিনিট পনেরোর সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে এসেছে একই প্রশ্ন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও ঘুরেফিরে বন্দী ছিলেন একই কথার বৃত্তে। প্রশ্নোত্তর শেষে বেরিয়ে যান তিন নির্বাচক। যেতে যেতে কথা হয় তাদেরই একজন হাবিবুল বাশারের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল চাপা পড়া সেইসব প্রশ্নের উত্তর।
শুরুতেই জানতে চাওয়া হয় লিটনকে বাদ দিয়ে শান্তকে কেন সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ একটা কারণ। আর লিটনের অনাগ্রহও তাকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর একটি কারণ। লিটন নিজেও চায় না নেতৃত্বের চাপ নিতে। সে একটু ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগ দিতে চায়।’
বিশ্বকাপ দলে বিকল্প ওপেনার না থাকার কারণও জানা গেল এই নির্বাচকের কথায়। তিনি জানালেন, ‘আমরা ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে মিরাজকে ভাবছি।’
বিকল্প ওপেনার হিসেবে বিশেষজ্ঞ কাউকে না নেওয়ায় একজন বাড়তি বোলার দলে রাখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে শেখ মেহেদি হাসান সুযোগ পেয়েছেন সে কারণে। পাশাপাশি জায়গা হয়েছে পাঁচ পেসারেরও। এর পেছনে বাশার ভারতের কন্ডিশনের কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারতে এখন আর্লি সিজন। উইকেট সতেজ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই পাঁচজন পেসার দরকার হবে।’
যেতে যেতে আরও বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক মুখোমুখি হলেন, এই দলটা বিশ্বকাপে কেমন করবে? এই প্রশ্নটা শুনেই ঘুরে দাঁড়ালেন হাবিবুল। উত্তরে মজা করে বললেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হবে এই দল।’ এরপর একটু গাম্ভীর্য ফিরিয়ে এনে যোগ করলেন, ‘আমি এদের অনেক দিন ধরে দেখছি। ওরা কয়টা ম্যাচ জিতবে জানি না। তবে বিশ্বকাপে প্রতিটি দলকে ভোগাবে, এটা জানি।’
ভারতের বিপক্ষেই খেলেছিলেন বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। এবার বিশ্বকাপটাই ভারতে, যে ধর্মশালা দিয়ে শুরু হবে বিশ্বকাপ অভিযান, সেখানেই আছে বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির কৃতিত্ব। হিমালয়ের কোলে, ছবির মতো সুন্দর সেই মাঠে আবারও খেলবে বাংলাদেশ, কিন্তু খেলবেন না তামিম ইকবাল।
অনেক নাটকীয়তার পর অবশেষে বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বরাবরের মতো সংবাদ সম্মেলনে নিরাবেগ কণ্ঠে একের পর এক নাম পড়ে শোনাননি প্রধান নির্বাচক, গভীর রাতে কোনো ইমেইলেও আসেনি খেলোয়াড় তালিকা। বিশ্বকাপগামী ১৫ ক্রিকেটারের প্রত্যেকের হাতে হাতে সুন্দর করে বাক্সবন্দি বিশ্বকাপ জার্সি তুলে দেওয়ার ভিডিও নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে ২০২৩ বিশ্বকাপের জন্য নির্বাচিতদের পরিচিত করেছে বিসিবি। এজন্য বিসিবির সংশ্লিষ্টরা বাহবা পেতেই পারেন, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড যেমনটা হৃদয় জিতে নিয়েছে ক্রিকেটারদের পরিবারের আপনজনদের দিয়ে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করিয়ে।
কারা থাকছেন আর কারা থাকছেন না, তা নিয়ে খুব বড় কোনো চমক ছিল না বিশ্বকাপ দলে। সবাই শুধু একটাই কোটি টাকার প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলেন। তামিম ইকবাল শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ দলে আছেন নাকি নেই। অবসর, প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে প্রত্যাবর্তন, ব্যক্তিগত কাজে দুবাই ভ্রমণ, ইংল্যান্ডে ইনজেকশন, দেশে অনুশীলন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এক ইনিংসে ব্যাট করে ৪৪ রান এবং পরে নিজেকে আবারও পুরোপুরি ফিট নয় বলে পরের ম্যাচে বিশ্রাম। স্বভাবতই এই তামিম ইকবালকে বিশ্বকাপে দেখতে চাইবেন না কোনো কোচ এবং অধিনায়ক। সোমবার গভীর রাতে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসায় সাকিবের ছুটে যাওয়া এবং সিডনি থেকে নেমে তড়িঘড়ি করে বোর্ড সভাপতির বাসায় কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের পা রাখাই প্রমাণ করে, বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করতেই তাদের এ তৎপরতা।
তামিমের মতো ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা সহজ নয়। নিঃসন্দেহে দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান, ওয়ানডেতে ১৪টা সেঞ্চুরি। হুট করে অবসর নিলে যাকে ফিরিয়ে আনেন স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী। সাক্ষাৎকারেও তামিম বলেছেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগের কথাও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেশাদারির কাছে হার মেনেছে আবেগ, যুক্তির কাছে হেরে গেছে অতীত। তামিম নামটা আছে বিশ্বকাপ দলে, তবে পদবিটা ইকবাল নয়। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তানজিদ হাসান তামিমকে নিয়েই বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান, যার বয়স আর তামিম ইকবালের ক্যারিয়ারের বয়স প্রায় কাছাকাছি।
২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিবের পারফরম্যান্স ছিল অতিমানবীয়। ৬০৬ রান আর ১১ উইকেট। তবু দল হলো অষ্টম। গোটা আসর চোটজর্জর অধিনায়ককে বইল দল। প্রতিটি সকাল শুরু হতো এক অনিশ্চয়তা নিয়ে, খেলতে পারবেন তো মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা? শুরুর দিকে নতুন বলে কোনো উইকেট ফেলতে পারেনি বাংলাদেশ, প্রতিপক্ষ গড়েছে রানের পাহাড়। সেই অভিজ্ঞতা কী করে ভুলবেন সাকিব। অস্ট্রেলিয়ান জেমি সিডন্স আর অধিনায়ক সাকিব এজন্যই ২০১১ সালের বিশ্বকাপে দলে রাখেননি চোটগ্রস্ত মাশরাফীকে। হাথুরুসিংহে জাতীয়তায় শ্রীলঙ্কান হলেও অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে থাকতে হয়ে গেছেন তাদের মতোই পেশাদার। তাই তো কঠিন সিদ্ধান্তটা নেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন।
কাল বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডের পর সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন জাতীয় নির্বাচকরা। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন এবং দুই নির্বাচক হাবিবুল বাশার ও আবদুর রাজ্জাক। তামিমকে বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে মিনহাজুল শুনিয়েছেন মুখস্থ কথাই, ‘আপনারা তো এবারের বিশ্বকাপের দলটা এরই মধ্যে পেয়ে গেছেন। তামিম ইকবালের তো অনেক দিন ধরেই ইনজুরি নিয়ে চিন্তা আছে। নিউজিল্যান্ড সিরিজের পর... সবকিছু বিবেচনা করেই, সবাই আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া। বিশ্বকাপে অনেক দিনের ব্যাপার। অনেক ম্যাচ আছে।’
তামিমের চোটটা তো নতুন নয়। অনেক দিন ধরেই এ চোট নিয়ে তিনি ভুগছেন, নিজের ইচ্ছামতো ভারতের বিপক্ষে সিরিজ, আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ এসব থেকে নিজেকে সরিয়েও রেখেছিলেন। চিকিৎসাও করিয়ে আনা হয়েছে। সবকিছু জেনেশুনে কেন তাকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে সুযোগ দেওয়া এবং ম্যাচ খেলিয়ে বাদ দেওয়া এ প্রসঙ্গে মিনহাজুলের উত্তর, ‘দেখুন, কিছু কিছু ইনজুরি আছে আপনি ঝুঁকি নিতে পারেন না। টিম ম্যানেজমেন্ট কিন্তু বেকায়দায় পড়বে। আপনি দেখুন, নিউজিল্যান্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলার পর দ্বিতীয় ম্যাচে... প্রথম ম্যাচ খেলেছে, দ্বিতীয় ম্যাচটা খেলেছে... এরপর কিন্তু শেষ ম্যাচে বিশ্রাম দিতে হয়েছে।’
‘তামিম অন্যতম সেরা। কিন্তু চোটের দুশ্চিন্তা থাকলে নিজেকে মেলে ধরা কঠিন। মেডিকেলের সঙ্গে আলোচনা করেছি, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। এটা আগেই বলেছি, এখন দল ঘোষণা করা হয়েছে’বলছিলেন প্রধান নির্বাচক। বিসিবি সভাপতি বা সাকিব ও কোচের সঙ্গে আলাপ হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কী আলাপ হয়েছে সেটা তো এখানে প্রকাশ করব না।’
১০ দলের বিশ্বকাপে দশম দল হিসেবে বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। কেন এত দেরি, ফ্লাইটে ওঠার ২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে বিশ্বকাপের দল দেওয়া হলো কেন এ নিয়ে হাবিবুল বাশারের ব্যাখ্যা, ‘আমাদের সঙ্গে কী হয়েছে সেটা তো আমাদের সঙ্গের ব্যাপার। দল নির্বাচন করতে যখন বসি... খেলোয়াড় হিসেবে তামিমের... আমরা সুস্থ-সবল তামিমকে পেতে... এটা নিয়ে আমাদের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত ভাবতে হয়েছে। তাই দেরি হয়েছে।’
তামিমের বাদ পড়ার ডামাডোলে হারিয়ে গেছে মাহমুদউল্লাহর ফেরাটাও। সেই ইংল্যান্ড সিরিজের পর বিশ্রামের মোড়কে বাদ পড়েছিলেন। তার বদলে অনেক বিকল্প খুঁজেও শেষ পর্যন্ত ঘুরেফিরে আবার তার কাছেই ফিরলেন নির্বাচকরা। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ৪৯ আর ২১ রানের দুটো ইনিংসেই হয়ে গেছে বিশ্বকাপের টিকিট। প্রধান নির্বাচক বললেন, ‘আগেই বলেছি, বিশ্বকাপের আগে যেকোনো খেলোয়াড়কে যেকোনো সিরিজে দেখব। ও পরিকল্পনাতেই ছিল। নিউজিল্যান্ড সিরিজে দেখেছি।’
২০১৫ সালের বিশ্বকাপের আগে, মাত্র দুই ম্যাচ দেখে সৌম্য সরকারকে দলে নিয়েছিলেন হাথুরুসিংহে। তানজিদ তামিম আর তানজিম সাকিব নিজেদের ভাগ্যবান ভাবতে পারেন। যথাক্রমে মাত্র পাঁচ আর দুই ম্যাচ খেলে তারা বিশ্বকাপ যাত্রার সঙ্গী হয়েছেন। এমন নয় যে, এ স্বল্প সময়ে দারুণ কিছু করে দেখিয়েছেন, প্রধান কারণ বিকল্পের অভাব।
শুধু তামিম ইকবালই নয়, দলের লজিস্টিক ম্যানেজারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তার বড় ভাই ও সাবেক খেলোয়াড় নাফিস ইকবালকেও। তামিমের অবসর-কা-ে তিনি বিসিবি সভাপতির মেসেজের জবাব দেননি, যা পাপন নিজে বলেছেন গণমাধ্যমে। হয়তো তারই প্রতিশোধ, সেই সঙ্গে ড্রেসিংরুমের সঙ্গে তামিমের সব সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া।
অবসর ভেঙে ফিরেছিলেন তামিম, দুটি ম্যাচ খেললেন। কিন্তু যেভাবে বাদ পড়লেন, তাতে মনে হতে পারে অবসরের সিদ্ধান্তটাই ছিল সঠিক। বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগামীতেও তামিমের দলে ফেরাটা বোধহয় অনিশ্চিতই হয়ে গেল।
তামিম প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে দলটা কেমন হয়েছে দেখা যাক। পাঁচ পেসার, দুই অফ স্পিনার, দুই বাঁহাতি স্পিনার মিলিয়ে বোলিং আক্রমণটা নেহায়েত খারাপ নয়। লিটন দাসের সঙ্গে তানজিদ তামিম অথবা মেকশিফট ওপেনার মিরাজ। সহঅধিনায়কের পদ থেকে বাদ পড়েছেন লিটন, সেটা করা হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তকে। সাকিব, মুশফিক, তাওহীদ হৃদয়দের নিয়ে মিডল অর্ডারের পর ফিনিশার রোলে মাহমুদউল্লাহ। এ নিয়েই ধর্মশালায় আফগানদের বিপক্ষে লড়াইয়ের শুরু। প্রত্যাশা অনেক বড়, প্রস্তুতি গোলমেলে। ভরসা একটাই, শুরুর আগে পরিস্থিতি এমন গোলমেলে হলেই কেন যেন ভালো করে বাংলাদেশ!
বিশ্বকাপ দল : সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন (সহঅধিনায়ক), তাওহীদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, শরীফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, মেহেদি হাসান, তানজিদ হাসান, তানজিম হাসান ও মাহমুদউল্লাহ।
নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আখেরি নবী ও রাসুল। তিনি মানবজাতির জন্য আল্লাহতায়ালার সর্বশেষ দূত। তার প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্য ছাড়া আল্লাহকে বিশ্বাস ও আনুগত্যের দাবি অর্থহীন। কোরআন মাজিদের বিভিন্ন জায়গায় এ বিষয়টি ঘোষিত হয়েছে। আল্লাহকে পাওয়ার একমাত্র পথ খাতামুন্নাবিয়ীন হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর অনুসরণ। তাই তার জন্য হৃদয়ে গভীর ভালোবাসা পোষণ করা এবং তার জন্য আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে দোয়া করা প্রত্যেক উম্মতের ইমানি কর্তব্য।
কোরআন মাজিদে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা নবী কারিম (সা.)-এর জন্য দরুদ পাঠের তথা আল্লাহর দরবারে তার জন্য দোয়া করার আদেশ করেছেন। এটা একদিকে যেমন আল্লাহর কাছে তার রাসুলের মর্যাদার প্রমাণ অন্যদিকে মুমিন বান্দার রহমত ও বরকত লাভের অন্যতম উপায়। আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানকে এই সহজ ও মূল্যবান আমলটি বেশি বেশি করার তৌফিক দান করুন। নিম্নে দরুদ ও সালামের কিছু ফজিলত উল্লেখ করা হলো-
গোনাহ মাফের আমল : দরুদ রহমত, মাগফিরাত ও দরজা বুলন্দির আমল। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, যে আমার ওপর একবার দরুদ পড়বে, বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা তার ওপর দশটি রহমত নাজিল করবেন। -সহিহ মুসলিম : ১/১৬৬
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে আমার ওপর একবার দরুদ পড়বে আল্লাহ তার ওপর দশটি রহমত নাজিল করবেন, তার দশটি গোনাহ ক্ষমা করা হবে এবং দশটি দরজা বুলন্দ হবে। -সুনানে নাসায়ি : ১/১৪৫
ফেরেশতাদের দোয়া লাভ : দরুদ পাঠকারীর জন্য ফেরেশতারা মাগফিরাতের দোয়া করেন। হজরত আমের ইবনে রবিয়া (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে খুতবার মধ্যে বলতে শুনেছি, আমার ওপর দরুদ পাঠকারী যতক্ষণ দরুদ পড়ে ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। সুতরাং বান্দার ইচ্ছা, সে দরুদ বেশি পড়বে না কম। -মুসনাদে আহমদ : ৩/৪৪৫
কিয়ামতের দিন নবীর নিকটবর্তী থাকার সুযোগ : কিয়ামতের দিন দরুদ পাঠকারী নবীজির সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন ওই ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে, যে আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পড়েছে। - জামে তিরমিজি : ১/১১০
দুনিয়া ও আখেরাতের মকসুদ হাসিল : দুনিয়া ও আখেরাতের সব মকসুদ হাসিল হবে দরুদ পাঠকারীর। হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, একবার আল্লাহর রাসুল (সা.) জিকরুল্লাহর (আল্লাহর জিকিরের) খুব তাকিদ করলেন। আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি আপনার প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করে থাকি। আমি আমার দোয়ার কতভাগ আপনার জন্য নির্ধারণ করব? তিনি বললেন, তোমার যে পরিমাণ ইচ্ছা।
আমি বললাম, চার ভাগের এক ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরও ভালো। আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরও ভালো। আমি বললাম, তাহলে তিন ভাগের দুই ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা হয়। তবে বেশি করলে আরও ভালো। আমি বললাম, তাহলে কি আমার দোয়ার পুরোটাই হবে আপনার প্রতি দরুদ? তিনি বললেন, তবে তো তোমার মকসুদ হাসিল হবে, তোমার গোনাহ মাফ করা হবে। -জামে তিরমিজি : ২/৭২
দরুদ গরিবের সদকা : দরুদের আমলের মাধ্যমে গরিব পাবে সদকার সওয়াব। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে মুসলমানের দান করার সামর্থ্য নেই, সে যেন দোয়ায় বলে- এটা তার জন্য জাকাত (সদকা) হিসেবে গণ্য হবে। -ইবনে হিব্বান : ৩/১৮৫
সালাম নবীর কাছে পৌঁছানো হয় : উম্মতের সালাম নবীজির কাছে পৌঁছানো হয়। রাসুলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহতায়ালার জমিনে বিচরণকারী কিছু ফেরেশতা আছেন, তারা আমার কাছে উম্মতের পক্ষ থেকে প্রেরিত সালাম পৌঁছিয়ে থাকেন। -মুসনাদে আহমদ : ১/৪৪১
দরুদ ছাড়া দোয়া ঝুলন্ত থাকে : দরুদবিহীন দোয়া আসমান-জমিনের মধ্যে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, যে পর্যন্ত তুমি তোমার নবীর (সা.) ওপর দরুদ না পড়বে ততক্ষণ দোয়া আসমানে যাবে না, আসমান-জমিনের মধ্যে থেমে থাকবে।
নেক সন্তান আল্লাহর অপূর্ব নেয়ামত। পবিত্র কোরআনে সন্তান-সন্ততিকে জীবনের শোভা বলা হয়েছে। হাদিসের ভাষায় তাদের আখ্যা দেওয়া হয়েছে সদকায়ে জারিয়া হিসেবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন কোনো লোক মারা যায়, তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিন প্রকার আমল (জারি থাকে)। (প্রথম) সদকায়ে জারিয়া; (দ্বিতীয়) ওই ইলম, যা দ্বারা অন্য লোক উপকৃত হয়; (তৃতীয়) নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে। -সুনানে নাসায়ি : ৩৬৫১
সন্তানকে নেক সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে ছোটবেলা থেকেই তাকে সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায় এই সন্তানই মা-বাবার ইহকাল-পরকালের অশান্তির কারণ হতে পারে। এখানে কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো- যা সন্তানকে সঠিকভাবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োগ করা যেতে পারে।
গোনাহমুক্ত পরিবেশ : শিশুদের নেক সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে ছোটবেলা থেকেই তার প্রতি যতœবান হতে হবে। তার মানসিক বিকাশে গুরুত্ব দিতে হবে। তার জন্য গোনাহমুক্ত পবিত্র পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদাররা! তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন থেকে রক্ষা করো।’ -সুরা তাহরিম : ৬
একটি শিশু যখন বড় হয়, তখন চারদিকের পরিবেশ তাকে অনেক বেশি প্রভাবিত করে এবং এর প্রতিফলন ঘটে তার বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে। শিশুর সামগ্রিক বিকাশের সঙ্গে পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা নিবিড়ভাবে জড়িত।
তাই তাদের সামনে কোনো ধরনের অসৌজন্যমূলক কথা ও কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তাদের সামনে ঝগড়াঝাটি, পরনিন্দা ইত্যাদি কাজ থেকেও বিরত থাকতে হবে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি রাখা : ছোটবেলা থেকেই শিশুদের পরিচ্ছন্নতার প্রতি সচেতন করে তুলতে হবে। মানুষের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য পরিচ্ছন্নতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) পরিচ্ছন্নতাকে ইমানের অঙ্গ বলেছেন। ছোট মানুষ বলে তাদের যেনতেনভাবে লালন-পালন করা উচিত নয়। কারণ এটিও ব্যক্তিত্ব গঠনে জোরালো ভূমিকা পালন করে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বলেন, ‘রাসুল (সা.) দিনের এক অংশে বের হন, তিনি আমার সঙ্গে কথা বলেননি এবং আমিও তার সঙ্গে কথা বলিনি। অবশেষে তিনি বনু কাইনুকা বাজারে এলেন (সেখান থেকে ফিরে এসে) ফাতেমা (রা.)-এর ঘরের আঙিনায় বসলেন। অতঃপর বলেন, এখানে খোকা [হাসান (রা.)] আছে কি? এখানে খোকা আছে কি? হজরত ফাতেমা (রা.) তাকে কিছুক্ষণ সময় দিলেন। আমার ধারণা হলো, তিনি তাকে পুঁতির মালা, সোনা-রুপা ছাড়া যা বাচ্চাদের পরানো হতো, পরাচ্ছিলেন (সাজিয়ে দিচ্ছিলেন)। তারপর তিনি দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং চুমু খেলেন। তখন তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি তাকে (হাসানকে) ভালোবাসো এবং তাকে যে ভালোবাসে তাকেও ভালোবাসো।’ -সহিহ বোখারি : ২১২২
সৃজনশীল খেলনা : শিশুর খেলনা হতে হবে আবিষ্কারধর্মী ও সৃজনশীল। বয়সভেদে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ উপযোগী খেলনা নির্বাচন করতে হবে গুরুত্বের সঙ্গে। ঘরে ও বাইরে দুই জায়গায়ই খেলা যায়- এমন খেলনা শিশুর মানসিক বিকাশে বেশি সহায়ক। শিশুকে এমন ধরনের খেলনা দিতে হবে, যা তার বুদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ খেলনা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
অনেকে সন্তানকে ঘরে নিরাপদে রাখতে ভিডিও গেম বা কার্টুনের প্রতি আকৃষ্ট করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিনিয়ত ভিডিও গেম খেললে শরীরে এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ হয়। এতে শিশু সব কিছু নিয়েই উত্তেজিত হয়ে পড়ে। মা-বাবার অবাধ্য হয়ে যায়। মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গেমিংয়ে আসক্ত ব্যক্তি মূলত অন্য সব কিছুর প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে। এ ছাড়া কারও সঙ্গে মিশতে না পারা, ঘুম, খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম তো রয়েছেই।
দীনি ইলম শিক্ষা দেওয়া : দীনি ইলম শিক্ষা করা সব মুসলমানের ওপর ফরজ। তাই সন্তানকে তার দৈনন্দিন ইবাদতের জন্য যতটুকু ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা দরকার, কমপক্ষে ততটুকু ইলম শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতেই হবে। তাকে পবিত্রতা শিক্ষা দিতে হবে, আল্লাহ-রাসুল ও ইসলামের সাধারণ জ্ঞানগুলো অল্প অল্প করে শেখাতে হবে। কোরআন শিক্ষা দিতে হবে, প্রয়োজনীয় মাসয়ালা-মাসায়েল শিক্ষা দিতে হবে। পাশাপাশি তাকে আস্তে আস্তে বিভিন্ন গোনাহ সম্পর্কে সতর্ক করাও মা-বাবার দায়িত্ব।
নামাজে অভ্যস্ত করা : শৈশব থেকে সন্তানকে নামাজে অভ্যস্ত করে না তুললে ভবিষ্যতে সে নামাজের প্রতি যতœবান হতে পারবে না। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘তোমরা সন্তানদের নামাজের প্রতি যতœবান হও এবং তাদের ভালো কাজে অভ্যস্ত করো। কেননা কল্যাণ লাভ অভ্যাসের ব্যাপার।’ -সুনানে বায়হাকি : ৫০৯৪
উল্লেখ্য, ১০ বছর বয়সে সন্তানের বিছানা আলাদা করে দেওয়ার বিষয়টিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারা ঘুমিয়ে গেলেও তাদের অবচেতন মন বড়দের অনেক কার্যক্রমই অনুসরণ করতে পারে।
এক কথায় সন্তানকে দীনদার হিসেবে গড়ে তুলতে হলে, মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যদেরও অত্যন্ত সচেতনভাবে চলতে হবে। ঘরে আমলের পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে, যাতে পরিবেশের কারণে তাদের মধ্যে আমল করার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।