
আজ শুক্রবার বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা ছিল টাঙ্গাইলের করটিয়া সরকারি সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রসায়ন বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মুনিয়া মুক্তির (২২)। গতকাল বৃহস্পতিবার পাত্রপক্ষের আসার কথা ছিল মুনিয়ার গ্রামের বাড়ি সখীপুর উপজেলার গজারিয়া গ্রামে। হওয়ার কথা ছিল হলুদ সন্ধ্যা। কিন্তু বুধবার রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন মুনিয়া। বিয়ের প্রস্তুতি নেওয়া মুনিয়ার বাড়িতে এখন শোকের মাতম।
মুনিয়া ছাড়াও গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আরও সাতজন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। দেশ রূপান্তরের প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত
টাঙ্গাইলের সখীপুর সংবাদদাতা জানান, সদ্য চাকরি পাওয়া এক পাত্রের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় গজারিয়া গ্রামের মজিবুর রহমানের মেয়ে মুনিয়ার। কিন্তু বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সখীপুর-নলুয়া-বাসাইল সড়কের বাসুলিয়া নামক স্থানে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যায় মোটরসাইকেলযোগে বিশ্ববিদ্যালয় হলে যাওয়ার পথে সখীপুর-নলুয়া-বাসাইল সড়কের বাসুলিয়া নামক স্থানে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা অন্য একটি বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল ধাক্কা দিলে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে তাকে টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়। অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাত ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
নিহত মুনিয়ার চাচতো ভাই আমিনুল ইসলাম বলেন, তার অকাল মৃত্যুতে পরিবারে শোকের মাতম চলছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
এদিকে টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, জেলার ধনবাড়ীতে কাভার্ড ভ্যানের নিচে চাপা পড়ে দুজন এনজিও কর্মী নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার দড়িরামপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেনÑ পাবনা জেলার ভাঙ্গুরা উপজেলার মোতালেব হোসেন ও টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার হাতিবান্ধা গ্রামের জাহিদ হাসান। তারা বেসরকারি সংস্থা একটি এনজিওতে চাকরি করতেন।
ধনবাড়ী থানার ওসি (তদন্ত) ইদ্রিস মিয়া জানান, ঢাকা থেকে জামালপুরগামী একটি কাভার্ড ভ্যান ঘটনাস্থলে পৌঁছালে চাকা ফেটে যায়। এতে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মোটরসাইকেলের ওপর উল্টে যায়। এতে কাভার্ড ভ্যানের নিচে চাপা পড়ে মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত হন।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, জেলার পুবাইলে কাভার্ড ভ্যান-অটোরিকশার সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও তিনজন আহত হয়েছেন। আহতদের গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পুবাইল বাসস্ট্যান্ড ও খোকন ফিলিং স্টেশনের মাঝামাঝি জায়গায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার মো. মাহবুব উজজামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে আহত ও নিহতদের নাম পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ। স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টঙ্গী-কালীগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে একটি কাভার্ড ভ্যান কালীঞ্জের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে অটোরিকশায় থাকা পাঁচ যাত্রী গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা হতাহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠায়।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, শৈলকুপায় যাত্রীবাহী বাস ও ইঞ্জিনচালিত আলমসাধুর মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুজন। আহতদের উদ্ধার করে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়কে গাড়াগঞ্জ এলাকায় এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত স্বপন হোসেন (৪০) হরিনাকু-ু উপজেলার আক্কাচ আলীর ছেলে। অন্য নিহত ও আহতদের নাম পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। ঝিনাইদহ আরাপপুর হাইওয়ে থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঢাকা-মাওয়া তথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে গাড়ির ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও একজন। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে জেলার শ্রীনগর উপজেলার সমষপুর গ্রামের এক্সপ্রেসওয়েতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মো. নিরব হোসেন (২২) ঢাকার ভাটারা এলাকার মৃত আয়নাল সরকারের ছেলে।
বৈজ্ঞানিক পন্থা অনুসরণ না করে অদক্ষ লোক দিয়ে কীটনাশক ছিটানো এবং নিজস্ব কীটতত্ত্ববিদ না থাকায় প্রজনন ক্ষেত্র চিহ্নিত করতে না পারার কারণে কোটি কোটি টাকা খরচ করেও মশার উৎপাত বন্ধ করতে পারছে না চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। ফলে ডেঙ্গুর ভয়াল থাবা থেকে রেহায় মিলছে না নগরবাসীর। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামে মারা গেছে ৬০ জন। এরই মধ্যে ২২ জনই শিশু।
সংস্থাটির প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা আবুল হাশেম জানিয়েছেন, মশক নিধনে গত ২২ জুন ১০০ দিনের ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছিল চসিক। চার ধরনের ওষুধ ছিটিয়ে এবং অভিযান চালিয়ে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কাজও করে যাচ্ছে সংস্থাটি। মশক নিধনে চলতি অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ করা পাঁচ কোটি টাকার মধ্যে গত দুই মাসে দুই কোটি টাকা খরচও করে ফেলা হয়েছে। কিন্তু বিপুল পরিমাণের এই অর্থ খরচ করেও ফল মিলছে না।
চসিকের এই কর্মকর্তা জানান, মশক নিধনে কোটি কোটি টাকার খরচ করেও প্রত্যাশিত ফল মিলছে না। কারণ কার্যকর ওষুধ কেনা হলেও অদক্ষ জনবল দিয়ে মশার ওষুধ প্রয়োগ, মশার প্রজনন ক্ষেত্র চিহ্নিত করার জন্য নিজস্ব লোকবল (কীটতত্ত্ববিদ ও কীট সংগ্রাহক) না থাকায় মশার উৎপাত বন্ধ করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, সংস্থায় ছয়জন কীট সংগ্রাহক থাকলেও নেই একজন কীটতত্ত্ববিদ। মশক নিধনে ১০টি টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিদিন পাঁচটি ওয়ার্ডে এবং পাঁচটি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।
আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা জামিল হায়দারের অভিযোগে, চসিককর্মীরা নিয়মিত খাল-নালা পরিষ্কার না করায় এগুলো মশার প্রজননের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।’ ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ফতেয়াবাদ এলাকার বাসিন্দা নুরুল আবছার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য নিয়মিত কর দিচ্ছি। খাল-নালাগুলো পরিষ্কার করা হয় না। মশার ওষুধ ছিটাতেও দেখি না চসিকের লোকজনকে। দিনে-রাতে মশার কামড় খেতে হয়।’ চসিকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ‘ইনভেন্ট লিকুইড ইনসেকটিসাইড’ নামে এডাল্টিসাইড এবং ‘টেমিফস ফিফটি পার্সেন্ট ইসি’ নামে লার্ভা ধ্বংসকারী লার্ভিসাইড ও ‘মাসকুবার’ নামে এডাল্টিসাইডসহ চার ধরনের কীটনাশক নিয়মিত ব্যবহার করে চসিক।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার দেশ রূপান্তরকে বলেন, এডিস মশা তার জীবনচক্রই পাল্টে ফেলেছে। সব ধরনের পরিবেশের খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। আগে শুধু বৃষ্টির পানি, ঘরে বা বাইরে জমা পরিষ্কার পানিতেই এডিস হতো। এখন এডিস শুধু নোংরা পানি নয়, লোনা পানিতেও জন্মাচ্ছে। আবার শুধু দিন নয় এবার গবেষণা বলছে, দিন এবং রাত সব সময়ই এডিস মশা কামড়াচ্ছে। মশার উৎপাত বন্ধে কার্যকর কীটনাশক ব্যবহার এবং সচেতনতার বিকল্প নেই।’
চসিক সূত্র জানাচ্ছে, মশক নিধনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ কোটি ২৫ লাখ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ কোটি ৮৫ লাখ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ কোটি ১৫ লাখ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ কোটি ৫ লাখ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে খরচ হয় ৯০ লাখ টাকা। চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছরে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে গত দুই মাসেই চসিকের খরচ হয়ে গেছে ২ কোটি টাকা। তবে প্রয়োজনে আরও পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে বলে জানিয়েছেন চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা আবুল হাশেম।
চসিকের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহী বলেন, ‘মশক নিধনে আমরা নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করছি। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় প্রতিদিন কীটনাশক ছিটানো হচ্ছে। এজন্য চসিকের দশটি বিশেষ টিম কাজ করছে। সচেতনতামূলক কার্যক্রমেও জোর দিচ্ছি।’
চসিক সূত্র জানায়, নিজস্ব কীটতত্ত্ববিদ না থাকায় যথাযথভাবে নগরে মশার প্রজনন ক্ষেত্র চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। চসিকের জনবল কাঠামোতে কীট সংগ্রাহক থাকলেও কীটতত্ত্ববিদ নেই। নগরের ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১২টি ওয়ার্ডে মশার প্রজনন ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একটি টিম। চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, নগরে মশার প্রজনন ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণে চসিকের সঙ্গে কোনো সমন্বয় করছে না সিভিল সার্জন অফিস। নিজস্ব কীটতত্ত্ববিদ না থাকায় ৪১টি ওয়ার্ডে মশার প্রজনন ক্ষেত্র চিহ্নিত করা যাচ্ছে না।
চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা আবুল হাশেম বলেন, ‘সিভিল সার্জন অফিসের টিমের করা ১২টি ওয়ার্ডের জরিপে ৪১ ওয়ার্ডের মশক নিধন কার্যক্রম সম্ভব নয়। তাই বিদ্যমান জনবল কাঠামোতে কীটতত্ত্ববিদ পদ সৃষ্টি করে জরুরি ভিত্তিতে লোকবল নিয়োগ দিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’ এদিকে চসিকের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ শাখা সম্প্রতি নগরে ৪৩৩টি মশার হটস্পট চিহ্নিত করে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপে দেখা যায়, নগরের ৩০ শতাংশ বাসাবাড়িতে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভা রয়েছে। ২১টি ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ শতাংশে।
সুদানের যত উত্তরে যাওয়া যায়, জমি ততই শুষ্ক হয়ে ওঠে। কয়েকশ কিলোমিটার জুড়ে শুধু মরুভূমি। কিন্তু গবেষকরা বলছেন, সুদানসহ আফ্রিকার বড় কয়েকটি দেশজুড়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভূগর্ভস্থ ভাণ্ডারের অস্তিত্ব রয়েছে। মিসর, সুদান থেকে শাদ ও লিবিয়া পর্যন্ত সেই জলাধার বিস্তৃত। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে বলছে, গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে খননের সময় ‘নিউবিয়ান স্যান্ডস্টোন অ্যাকুইফার’ নামের পানির সেই ভাণ্ডার আবিষ্কার করা হয়েছিল।
ভূতত্ত্ববিদ হিসেবে আব্দাল্লাহ ওমর গত ২০ বছর ধরে অ্যাকুইফার নিয়ে গবেষণা করছেন। কয়েকটি জায়গায় ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি পানির নাগাল পাওয়া যায়। ২০০৪ সালে খননের সময় ওমর এল গা-আব অঞ্চলে একটি উৎস খুলে দেন। ওমর বলেন, উত্তরের অংশে গভীরতা ৬০ মিটার অথবা আরও কম। ভাবতে পারেন? একটি সেচ প্রণালী দিয়ে ৫০ হেক্টর জমিতে সেচ করা সম্ভব। সেটা সত্যি অনন্য। এতে জলাধারের শক্তিশালী প্রবাহ স্পষ্ট হয়ে যায়। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গা-আব এল-হাশার মতো স্থানীয় গ্রাম এর ফলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছে। ২০ বছর আগে সেই উৎস আবিষ্কারের পর থেকে মানুষ নিয়মিত পানির নাগাল পাচ্ছে।
চাষিরা সেই সুযোগের পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করছেন। আবদুল হাফিজ তেমন এক চাষি। কয়েকশ হেক্টর জুড়ে তার নিজস্ব খেতে তিনি নানা ধরনের শাকসবজি ও ফলমূল উৎপাদন করছেন। ফাভা বিনস, জোয়ার এবং আলফালফার পাশাপাশি চলতি বছর তিনি গম উৎপাদনে মনোযোগ দিয়েছেন। হাফিজ বলেন, কৃষিকাজে পানি ঠিকমতো ব্যবহার করা উচিত। অর্থাৎ আমার মতে, উন্নত পদ্ধতি ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে পানির সাশ্রয় করা সম্ভব। কিন্তু প্রথাগত পদ্ধতি ব্যবহার ডয়েচে ভেলে বলছে, ‘নিউবিয়ান স্যান্ডস্টোন অ্যাকুইফার’ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘জীবাশ্ম’ জলাধার। অর্থাৎ কয়েক লাখ বছর আগে সেখানে পানি জমা হয়ে মাটির নিচে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু অ্যাকুইফারের পানির ভাণ্ডার মোটেই অফুরন্ত নয়। কয়েকটি জায়গায় কম হলেও নতুন করে পানি আসে। অন্য জায়গায় একেবারেই সেটা ঘটে না।
কয়েকজন গবেষকের ধারণা, অ্যাকুইফারের আয়ু কমপক্ষে আরও দুশো বছর। তবে সে বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাছাড়া সময়টাও বেশি নয়। এক আন্তর্জাতিক চুক্তি ও জাতিসংঘের এক প্রকল্পের মাধ্যমে সেই পানি ন্যায্য ও টেকসই উপায়ে ব্যবহার করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে।
সুদানের সরকার ২০২২ সালে পানির ব্যবহার সংক্রান্ত একটি আইনে সম্মতি জানিয়েছিল। সেচ ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে সেটি কার্যকর করার কথা। এখনো পর্যন্ত সরকার জনগণের জন্য ৩৮টি ছোট এবং ছয়টি গভীর কূপ তৈরি করেছে। তা থেকে হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে গম উৎপাদন করছে।
ভূতত্ত্ববিদ আব্দুল্লাহ ওমর বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেড়ে চলা মরুকরণের অর্থ, এই অঞ্চলে অতীতের তুলনায় পানির গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। বিশাল অ্যাকুইফারের জীবাশ্ম পানি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজে লাগাতে পারলে সেখানে মানুষ ও প্রাণীর অস্তিত্ব রক্ষা করা অনেক সহজ হবে।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের কোন্দল দিন দিন আরও প্রকট হচ্ছে। ছাত্র সমাবেশে নেতাদের বক্তব্য দিতে না দেওয়া, সাত কলেজ নিয়ে টানাটানি, আধিপত্যকে কেন্দ্র করে বেশ কিছুদিন ধরে চলছে তাদের রেষারেষি। এর প্রভাব পড়ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। তাদের এ চলমান অস্থিরতা বন্ধ না হলে বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
অধিভুক্ত সাত কলেজ শাখার নিয়ন্ত্রণ চায় সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। তাদের দাবি, এতে অ্যাকাডেমিক মানের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক মানেরও উন্নয়ন ঘটবে শিক্ষার্থীদের। তবে এতে সম্মতি জানায়নি কেন্দ্রীয় কমিটি। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি, বিক্ষোভ ও শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে সাত কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি হওয়ার সুযোগ নেই এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতে অধিভুক্তবিষয়ক সম্পাদক পদ যুক্ত করার ঘোষণা দেন সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত।
এ নিয়ে সাত কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সৈকতের মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে মঙ্গলবার রাতেই বিক্ষোভ করেছে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের একাংশ। বুধবার বিক্ষোভ মিছিল করেছে কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগ।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকায় ঢাকা কলেজের দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে বেধড়ক মারধরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোররাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে, সাত কলেজ ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণ ইস্যুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের টানাপড়েন চলছে তার পরিপ্রেক্ষিতে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে যেতে নারাজ সাত কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের একাংশ। কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বেলায়েত হোসেন একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা আপার প্রমোশন যুগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চাইল আমাদের ডিমোশন। এটা একেবারেই অনাকাক্সিক্ষত। সাত কলেজের জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আছে।’
তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রিপন মিয়া বলেন, ‘আগে সাত কলেজ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতে সাত কলেজের যোগ্য কর্মীদের স্থান দেওয়া হোক। তারপর না হয় আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটির অনুসারী হব।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যে ক্ষেপেছেন ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভাও। সৈকতকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনি আগে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র পড়েন, তারপর কথা বলেন। একটা জেলা ইউনিটকে কোন সাহসে আপনি উপজেলা ইউনিট বানাতে চান? আপনি যত শিক্ষার্থীর নেতৃত্ব দেন আমি তার থেকে বেশি শিক্ষার্থীর নেতৃত্ব দিই।’
ছাত্রলীগের মধ্যে এমন অস্থিরতায় নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কায় ভুগছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সাত কলেজ ছাত্রলীগের নেতাদের যুক্ত করা হলে শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হবে বলে মনে করেন তারা। গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সুমন বলেন, ‘ছাত্রলীগের চলমান ঝামেলা মিটমাট না করলে যেকোনো সময় সহিংস রূপ ধারণ করতে পারে পরিস্থিতি। আর এর বলি হতে পারি আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা।’
রাকিবুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আন্ডারে নিয়ে এলে ক্যাম্পাসের পরিবেশ আরও নষ্ট হবে। তারা ভবিষ্যতে লাইব্রেরি ব্যবহার, বাস ব্যবহার এমনকি হল ব্যবহারের দাবিগুলোও জানাতে পারে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা এমন সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হতে পারি না।’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের স্বার্থেই আমরা তাদের অধিভুক্ত করতে চাইছি আর তা শান্তিপূর্ণভাবে। কিন্তু কেউ কেউ তাদের দিয়ে বিক্ষোভ করাচ্ছে। সাত কলেজ ছাত্রলীগের বেশিরভাগই আমাদের পক্ষে রয়েছে। অল্প কিছু নেতাকর্মীকে আমাদের বিরুদ্ধে উসকে দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, দুই কর্মীকে মারধরের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ‘এটি একটি সাংগঠনিক বিষয়। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাজ হবে। গঠনতন্ত্রে যেভাবে ছাত্রলীগের ইউনিটগুলোর কমিটি গঠন করার কথা রয়েছে সেভাবেই কাজ করা হবে। এর বাইরে আমাদের চিন্তা নেই।’ যারা হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের কাছে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা জোরদার করতে আমরা কাজ করছি। এর ব্যত্যয় ঘটলে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং নেব।’ তিনি আরও বলেন, শুধু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নয়, শিক্ষার্থী এবং ছাত্র সংগঠনগুলোর উচিত এ বিষয়ে লক্ষ রাখা। যাতে কোনোভাবেই ক্যাম্পাসের পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে।
ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত কলেজ পড়ুয়া একমাত্র ছেলে আদনান যখন ঘরের বিছানায় কাতরাচ্ছেন তখন মা সানোয়ারা বেগমের কাছে খবর এলো ঢাকায় স্বামীর সঙ্গে বসবাসরত মেয়ে পপি আক্তারের শরীরেও গত ১১ সেপ্টেম্বর ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে পপি আক্তার স্বামীকে নিয়ে চলে আসেন চট্টগ্রামে। আসার দিনই জ্বর ওঠে তার স্বামী আরমানের।
গত ১২ সেপ্টেম্বর পরীক্ষায় আরমানের শরীরেও ডেঙ্গু ধরা পড়ে। মেয়ে এবং মেয়ের জামাই আরমানকে ১৪ সেপ্টেম্বর ভোরে ভর্তি করা হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮২ নম্বর ডেঙ্গু ওয়ার্ডে।
মেয়ের জামাইসহ একই পরিবারের তিনজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সানোয়ারা বেগম। হাসপাতালের বিছানায় ডেঙ্গু আক্রান্ত মেয়ে ও মেয়ের জামাই এবং বাড়িতে একমাত্র ছেলেকে নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ করছেন মা সানোয়ারা। কখনো বাড়িতে ছুটছেন ছেলের কাছে, কখনো মেয়ে এবং জামাইয়ের শুশ্রুষা করতে ছুটে আসছেন চমেক হাসপাতালে।
‘ফজরের নামাজ পড়েই বাড়িতে অসুস্থ ছেলেকে রেখে হাসপাতালে মেয়ের কাছে ছুটে এসেছি। জামাইও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। তার (জামাই) পরিবারও কোনো খবর রাখছেন না। আমার স্বামী মো. ইয়াছিন সিএনজি অটোরিকশা চালক। আমরা দিনে এনে দিনে খাই। সবকিছু একাই সামলাতে হচ্ছে আমাকে’ বলেন সানোয়ারা। তাদের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা সদর এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চমেক হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, নারী ইউনিটে মেয়েকে নিয়ে এক শয্যায় বসে আছেন মা সানোয়ারা। জামাই আরমানের চিকিৎসা চলছে একই ওয়ার্ডের পুরুষ ইউনিটের ১৯ নম্বর শয্যায়।
সানোয়ারা জানান, মেয়ের জামাই আরমান ঢাকায় বেসরকারি একটি ব্যাংকে পিয়নের চাকরি করেন। বছর দুয়েক আগে পপির সঙ্গে বিয়ে হয় আরমানের। দেড় বছর ধরে তারা ঢাকার বাড্ডায় বসবাস করছেন। পপি পটিয়া সরকারি কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষে পড়াশোনা করছেন। মেয়ের সংসারে কোনো সন্তান হয়নি। তার (সানোয়ারা) তিন মেয়ে এক ছেলে। পপি আক্তারসহ সানোয়ারার দুই মেয়ে ও এক ছেলে পটিয়া সরকারি কলেজে পড়াশোনা করে।
জানা গেছে, স্বামীর সীমিত আয়ের সংসারে জামাইসহ তিন ছেলেমেয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ায় ব্যয় মেটাতে নাভিশ্বাস অবস্থা সানোয়ারার। খরচ কুলাতে না পেরে ছেলেমেয়ে ও জামাইয়ের চিকিৎসার জন্য বেসরকারি আশা ব্যাংক থেকে ৭০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। তাদের চিকিৎসার পেছনে ইতিমধ্যে প্রায় লাখ টাকা খরচও হয়ে গেছে।
সানোয়ারা বলেন, ‘পরিবারের তিন সদস্য ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। চিকিৎসকের পরামর্শে বাড়িতে চলছে ছেলের চিকিৎসা। সেখানে তাকে দেখার কেউ নেই। শুধু আল্লাহ ছাড়া। আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে ছোট মেয়ে গেছে এইচএসসি প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিতে। কিছুক্ষণ পর ছুটতে হবে বাড়িতে। স্বামী গেছেন অটোরিকশা চালাতে। যুদ্ধটা করছি একাই।’
ডেঙ্গু ওয়ার্ডের নারীদের বিভাগে একটি শয্যায় শুয়ে আছেন পপি আক্তার। হাতে চলছে স্যালাইন। জানতে চাইলে পপি বলেন, ‘জ¦র উঠানামা করছে। ডাক্তাররা ওষুধ দিয়েছেন। ৫ সেপ্টেম্বর জ্বর ওঠে। ১১ সেপ্টেম্বর পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ে। ঢাকায় দেখার কেউ নেই। তাই চট্টগ্রামে মায়ের কাছে চলে এসেছি। গতকাল পরীক্ষায় আমার স্বামীরও ডেঙ্গু ধরা পড়ে। দুজন আজ (বৃহস্পতিবার) ভোরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।’
এক প্রশ্নের উত্তরে সানোয়ারা বলেন, ‘চমেক হাসপাতালের চিকিৎসা বিনামূল্যে হলেও সংসার চালানোর দুশ্চিন্তা যাচ্ছে না। ছেলেমেয়ে অসুস্থ হওয়ায় ঠিকভাবে গাড়ি চালাতেও যেতে পারছেন না স্বামী। চিকিৎসকের পরামর্শে বাড়িতে চিকিৎসা চলছে ছেলের। পরিবারের চার সদস্যের মধ্যে মেয়ের জামাইসহ তিনজনই অসুস্থ হওয়ায় কী করব, কিছু বুঝে উঠতে পারছি না।’
দেখা গেছে, ডেঙ্গু ওয়ার্ডের ১৯ নম্বর শয্যায় শুয়ে আছেন পপির স্বামী আরমান। তার হাতে ক্যানুলা লাগানো। দেশ রূপান্তরকে আরমান বলেন, ‘জ্বর পড়ছে না। ব্যাথায় কাতরাচ্ছি। আজ সকালে বড় ডাক্তাররা দেখেছেন। ওষুধ চলছে। দোয়া করবেন।’
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় কোনো মৃত্যু না হলেও চলতি বছরে চট্টগ্রামে ৭ হাজার ৪৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। এ সময়ে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে নতুন করে ১০০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়া চলতি বছর ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে ২৩ জনই শিশু।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান জানান, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই। এজন্য নতুন ভবনে ডেঙ্গু ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। আজ (১৪ সেপ্টেম্বর) ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ৪১ জন নারী-পুরুষ ও শিশু ভর্তি আছে। চলতি বছর ডেঙ্গুর ধরন পরিবর্তন হওয়ায় আক্রান্তদের শরীরে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিচ্ছে। জ্বর, ডায়রিয়া, বমি, পেট ও ফুসফুসে পানি জমাসহ ডেঙ্গু শক সিনড্রোম ও ডেঙ্গু হেমরোজিক ফিভারে অধিকাংশ রোগীর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ ও পিআইসিইউ) প্রয়োজন হচ্ছে।
সরকারকে আবারও নির্বাচিত করে ক্ষমতায় আনার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বক্তব্য দেওয়ায় জামালপুরের ডিসি মো. ইমরান আহমেদকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আর বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন অ্যাকাডেমির উপপরিচালক (উপসচিব) মো. শফিউর রহমানকে সেই জায়গায় নতুন ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত দুটি আলাদা আদেশ জারি করেছে।
ওই আদেশের পত্র সূত্রে জানা যায়, জামালপুরের ডিসি মো. ইমরান আহমেদকে প্রত্যাহার করে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব করা হয়েছে। অপর একটি আদেশে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন অ্যাকাডেমির উপপরিচালক (উপসচিব) মো. শফিউর রহমানকে জামালপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিয়োগ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১১ সেপ্টেম্বর বিকেলে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় নবনির্মিত পৌর ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তব্যে জেলা প্রশাসক ইমরান আহমেদ এ সরকারকে নির্বাচিত করে ক্ষমতায় নিয়ে আসার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তার ওই ভিডিও বক্তব্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে সেই বিষয়টি বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রচার হয়।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।
প্রাচীন সময় থেকে মানুষের খাদ্যতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে চীজ বা পনির। গরুর দুধের তৈরি পনিরে শরীরকে সুস্থ রাখার প্রয়োজনীয় সব উপাদান পাওয়া যায়।
বর্তমানে সময়ের সাথে সাথে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পনিরের ব্যবহার। আর তাই বিস্কিট থেকে শুরু করে পাউরুটি, পাস্তা, পিৎজা অনেক কিছুতেই পনির ব্যবহার হয়।
পনিরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের মতে, ১০০ গ্রাম পনিরের মধ্যে রয়েছে:
শক্তি - ৩৬২ কিলোক্যালরি
প্রোটিন – ৫.১৭ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট - ৫০ গ্রাম
ক্যালসিয়াম - ৬৯ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম - ১৮১ মিলিগ্রাম
স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড – ৩.৪৫ গ্রাম
কোলেস্টেরল - ৩৪ মিলিগ্রাম
এটি প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস। পনিরের বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে।
পনির ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এবং প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এটি বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অনেক উপকারি। পনিরে থাকা ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পনির খেলে অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করা যায়।
পনির ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা শক্তিশালী ও মজবুত দাঁত তৈরিতে অবদান রাখে। পনিরে থাকা কেসিন ফসফোপেপটাইড উপাদান দাঁতের গহ্বর কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া চিউইং চিজ মুখের পিএইচ মাত্রা বাড়াতে পারে এবং সামগ্রিক মৌখিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
পনিরে অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড যেমন কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস। কোরিয়া ইউনিভার্সিটি এবং ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ফ্যাটি অ্যাসিডে ক্যান্সার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ ছাড়া এই ফ্যাটি অ্যাসিড এথেরোস্ক্লেরোসিস এর বিকাশ রোধ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে।
পনিরে কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড এবং স্ফিংগোলিপিড রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে স্ফিংগোলিপিড মানুষের কোলন ক্যান্সারকে বাধা দিতে পারে।
এ ছাড়া পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে খাদ্যতালিকাগত ক্যালসিয়াম কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ উপকারি।
পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই উপকারি। এটি প্রসবের সময় সংকোচনকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া উকের দুধ পান করানোর সময় ক্যালসিয়াম পুষ্টির ঘাটতিও পূরণ করে পনির। এটি গর্ভবতী মহিলাদের ভ্রূণের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে।
কিছু ধরণের পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যকারিতা বাড়াতে পরিচিত। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে পনির শরীরের প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটি অসুস্থতা এবং রোগ কমাতে পারে।
প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সুরক্ষিত পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। এটি বয়স্কদেরমধ্যে ইমিউনোসেনেসেন্স (প্রতিরোধ ব্যবস্থার ধীরে ধীরে দুর্বল হওয়া) প্রতিরোধ করতে পারে।
পনির সেলেনিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা থাইরয়েড ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সেলেনিয়ামের থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করে ভাইরাসের বিকাশকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে।
চেডার পনির হল এক ধরনের হার্ড পনির। এটি খাদ্যতালিকায় যোগ করলে তা থাইরয়েড রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
পনিরের আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলির মধ্যে একটি হল মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করা। বিশেষ করে ক্যামেমবার্ট জাতের পনির এই ধরনের কাজ করে থাকে। ক্যামেমবার্ট পনির প্রদাহজনক সাইটোকাইনের মাত্রা কমাতে পারে। এটি আলঝাইমার রোগের ঝুঁকি কমায় এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।
পনির ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। এতে থাকা ভিটামিন বি কোষের বিপাক এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে এটি উজ্জ্বল ত্বকের পাশাপাশি ত্বকের দাগ কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
যাদের গরুর দুধে অ্যালার্জি আছে তাদের পনির এড়ানো উচিত। এটি অ্যালার্জি, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথার কারণ ও হতে পারে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (অতিরিক্ত পনির খাওয়া) কার্ডিওভাসকুলার রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
পনিরের স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ও রয়েছে। যেমন,
কিছু লোকের দুধের প্রোটিন যেমন কেসিনে অ্যালার্জি থাকে। এটি সারা শরীর জুড়ে একটি প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং ত্বকে ফুসকুড়ি, সাইনাস কনজেশন এবং ব্রণ জ্বলতে পারে।
অনেকের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা থাকে। সেক্ষেত্রে তাদের পনির না খাওয়াই শ্রেয়। কারণ ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা গ্যাস, পেট ফোলাভাব এবং ডায়রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। অনেক সময় এর কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে।
প্রচুর পরিমাণে পনির খাওয়ার ফলে মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথা হতে পারে। পুরনো পনিরে থাকা টাইরামিন উপাদান কিছু ব্যক্তির মধ্যে মাইগ্রেনকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
যারা মোনোমাইন অক্সিডেস ইনহিবিটরস (MOIs) গ্রহণ করছেন তাদের পনির খাওয়া এড়ানো উচিত। এই ওষুধগুলি হতাশার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এসব ওষুধ পুরনো বা বয়স্ক পনিরে থাকা উপাদান টাইরামিনের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হবে ২ নভেম্বর। পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন তা নিয়ে এখন চলছে আলোচনা, কানাঘুষা; শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ।
বর্তমান উপাচার্যই আবার দায়িত্ব পাবেন নাকি নতুন কাউকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে এ আলোচনাই চলছে এখন। আলোচিত হচ্ছে কয়েকজন শিক্ষকের নামও। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন কানাঘুষারও অবসান হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ পদে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের মধ্য থেকেই কাউকে বাছাই করার বিষয়টি একপ্রকার নিশ্চিত। বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের এ বিষয়ে আগ্রহ নেই। গুণী কোনো শিক্ষক উপাচার্যবিষয়ক আলোচনার মধ্যে নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা হবে কি না, এ বিষয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের ১১(১) ধারা অনুযায়ী, উপাচার্য নিয়োগে তিন সদস্যবিশিষ্ট প্যানেল নির্বাচনের দায়িত্ব সিনেটের। সিনেট নির্বাচিত তিনজনের মধ্য থেকে একজনকে উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এবং রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। রাষ্ট্রপতি তাকে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেন।
রীতি অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের জন্য সিনেটের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করা হয়। কিন্তু এবার সিনেট অধিবেশন হওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। উপাচার্য অধিবেশন ডাকবেন কি ডাকবেন না; ওপর মহলের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কেউ কিছু জানেন না। উপাচার্য নিজেও বিষয়টি খোলাসা করছেন না।
অধ্যাদেশের ১১(২) ধারা অনুযায়ী, কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যেমন অসুস্থতা, ছুটি, অপসারণ বা অন্য কোনো কারণে উপাচার্যের পদ শূন্য হলে একজনকে অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা বলছেন, অধ্যাদেশের নিয়ম অনুসরণ করে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করা হোক। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং আগামী নির্বাচনেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। নতুন উপাচার্যের গ্রহণযোগ্যতাও বাড়বে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, ‘ভিসি প্যানেল নিয়ে আলোচনা নেই। উপাচার্যও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে আমাদের জানা নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট সদস্য ও শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল সবচেয়ে বেশি আলোচিত। তাদের মধ্য থেকেই কারোর পরবর্তী উপাচার্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম এ বিষয়ক আলোচনায় রয়েছেন।
অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পান। পরে প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর উপাচার্য পদে পুনর্নিয়োগ পান তিনি। সাত বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সামলাচ্ছেন তিনি। দুই মেয়াদের বেশি উপাচার্য থাকার নজির নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই তার দায়িত্ব পালনের শেষ দেখছেন অনেকে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষকদের মধ্যেও তাকে নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে পুনরায় নিয়োগ পেতে পারেন তিনি।
ইমেরিটাস অধ্যাপক বা অন্য কোনো গুণী শিক্ষক নেই উপাচার্য নিয়োগের আলোচনায়। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গুণী শিক্ষকদের সামনে আনার যে ধরনের কাঠামো থাকা উচিত তা নেই। যারা তোশামোদ করতে পারে, অন্ধ আনুগত্য প্রকাশ করতে পারে, তাদেরই প্রশাসনের শীর্ষ পদে নিয়ে আসা হয়। সত্যিকারের গুণী শিক্ষক এবং অনেক ভালো গবেষক আছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারা কখনো প্রশাসনের দায়িত্বে আসতে পারেন না। তারা ব্যক্তিত্বের জলাঞ্জলি দিতেও রাজি নন।’
অতীতে উপাচার্যদের মধ্যে অ্যাকাডেমিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে একটা ভারসাম্য ছিল। এখন তা নেই। এখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও আনুগত্যের ভিত্তিতে প্রশাসনিক পদগুলো দেওয়া হয়।
পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন বা ভিসি প্যানেল নিয়ে আগ্রহ নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের। বিএনপিঘোষিত এক দফাতেই তারা মগ্ন। যদিও সিনেটে তিনজন প্রতিনিধি থাকায় সুযোগ তাদেরও রয়েছে। সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার পরিবর্তন না হলে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিষয়ে ভাবছি না। এ বিষয়ে আমাদের ফোকাস নেই। আমাদের ফোকাস হচ্ছে এ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। জাতীয় রাজনীতিতে পরিবর্তন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও পরিবর্তন আসবে।’
শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও সাংগঠনিকভাবে আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমরা নীল দল এখনো এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করিনি। যথাসময়ে দলের সভায় এ নিয়ে কথা হবে। মনোনয়ন কে পাবেন, তার আলোচনাও সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে। বর্তমান প্রশাসনের শীর্ষ তিনজন বিশেষভাবে আলোচনায় থাকবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই দায়িত্ব দেবেন। আমরা উনাদের সমর্থন করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ীই সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।’
বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইনের গতি অনুযায়ীই সব চলবে। এ বিষয়ে যাদের ভাবা প্রয়োজন তারা অবশ্যই ভাববেন।’ সিনেটের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশেষ অধিবেশন ডাকার প্রয়োজন হলে আমরা ডাকি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।