
ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল ও বন্যার তা-বে উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে ইতিমধ্যে সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া দেশটির ডেরনা শহরের সমুদ্র উপকূলে হাজার হাজার মৃতদেহ ভাসতে দেখা গেছে বলে দাবি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর। বহু মানুষ লাশের ব্যাগ জড়িয়ে ত্রাণ সহায়তার জন্য আকুতি জানাচ্ছেন, নিহতদের অনেককে গণকবরে দাফন করা হয়েছে। ডেরনা শহরের মেয়র আবদেল মোনেইম আল-ঘাইত অবশ্য আশঙ্কা করেছেন, স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় নিহতের সংখ্যা ২০ হাজারের পৌঁছাতে পারে।
বিবিসি জানাচ্ছে, ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল গত রবিবার আঘাত হানলে একটি বাঁধ ভেঙে ডেরনা শহর বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। পানির তোড়ে ধসে পড়ে বহু ভবন। কোনো কোনো এলাকায় দ্বিতীয়তলার বাসিন্দারাও ঘরে আটকা পড়ে মারা যান। উদ্ধারকর্মীরা এখনো ভবনগুলোর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জীবিত মানুষের সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সবচেয়ে ভয়ংকর চিত্র ফুটে উঠেছে সাগরপাড়ে।
গতকাল দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রশাসনের একজন মন্ত্রী হিশাম চোকিওয়াত বলছেন, সাগরে ক্রমাগত আছড়ে পড়ছে লাশের পর লাশ।
কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত দিয়ে জাতিসংঘ অভিবাসন সংস্থা বা আইওএম বলেছে, এখনো অন্তত ১০ হাজার মানুষ নিখোঁজ আছে আর বাস্তুচ্যুত হয়েছে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ।
ডেরনার কাছে একটি হাসপাতালে কর্মরত লিবিয়ার চিকিৎসক নাজিম তারহনি বলছেন, আরও সহায়তা দরকার। তিনি বিবিসিকে বলেন, হাসপাতালে আমার অনেক বন্ধু আছে যারা তাদের পরিবারের সদস্যদের হারিয়ে আছে। তারা সবকিছু হারিয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বহু মানুষ লাশের ব্যাগ জড়িয়ে ত্রাণ সহায়তার জন্য আকুতি জানাচ্ছে। নিহতদের অনেককে গণকবরে দাফন করা হয়েছে। হাসপাতাল আর মর্গগুলো সয়লাব হয়ে পড়েছে মানুষের মৃতদেহ।
লিবিয়ান ডক্টরস ইউনিয়নের প্রদান মোহাম্মেদ আল ঘৌস তুর্কি গণমাধ্যমে বলেছেন, সেখানে বিশেষায়িত ফরেনসিক ও রেসকিউ টিম দরকার। এ ছাড়া আরেক দল দরকার যারা মৃতদেহ উদ্ধারে বিশেষজ্ঞ।
মেডিসিনস স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স বা এমএসএফ বলেছেন, মেডিকেল সহায়তার প্রয়োজনীয়তা যাচাই করা এবং জরুরি মেডিকেল উপকরণ ও বডি ব্যাগ লিবিয়ার রেড ক্রিসেন্টকে দেওয়ার জন্য একটি দল সেখানে যাচ্ছে।
ওদিকে শহরের রাস্তাঘাট কাদা আর ধ্বংসস্তূপে ঢেকে আছে। রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তছনছ হয়ে যাওয়া অসংখ্য গাড়ি।
মন্ত্রী চোকিওয়াত বলছেন, ডেরনা শহরের কিছু এলাকা একেবারেই হাওয়া হয়ে গেছে। তিনি বলেন, কল্পনা করুন একটি আবাসিক এলাকায় পুরো ধ্বংস হয়ে গেছে। আপনি এখন দেখতেই পারছেন না। এটা আর নেই। আমি এমন দৃশ্য এর আগে কখনো দেখিনি। এটা সুনামির জন্য হয়েছে।
তাহা মুফতাহ ডেরনার একজন ফটোসাংবাদিক। তিনি বলেন, ২০১১ সাল থেকেই বিশেষজ্ঞরা বাঁধ নিয়ে সতর্ক করে আসছিলেন। কিন্তু কেউ এজন্য কিছু করেনি।
তেলসমৃদ্ধ দেশ লিবিয়া ২০১১ সালে মুয়াম্মার গাদ্দাফির মৃত্যুর পর থেকেই রাজনৈতিক সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। এর একটি সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃত, যা রাজধানী ত্রিপোলিভিত্তিক। আরেকটি সরকার পূর্বাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে।
ডেরনা শহরটি বেনগাজির আড়াইশ কিলোমিটার পূর্বদিকে। গাদ্দাফির পতনের পর এ শহরটি ছিল ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের একটি ঘাঁটি। পরে লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি বা এলএনএ তাদের বিতাড়িত করে। এই এলএনএ পূর্বাঞ্চল নিয়ন্ত্রণকারী প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ জেনারেল খালিফা হাফতারের প্রতি অনুগত। প্রভাবশালী এ জেনারেল বলেছেন, বন্যার কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতি তারা নিরূপণ করছেন।
বৈজ্ঞানিক পন্থা অনুসরণ না করে অদক্ষ লোক দিয়ে কীটনাশক ছিটানো এবং নিজস্ব কীটতত্ত্ববিদ না থাকায় প্রজনন ক্ষেত্র চিহ্নিত করতে না পারার কারণে কোটি কোটি টাকা খরচ করেও মশার উৎপাত বন্ধ করতে পারছে না চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। ফলে ডেঙ্গুর ভয়াল থাবা থেকে রেহায় মিলছে না নগরবাসীর। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামে মারা গেছে ৬০ জন। এরই মধ্যে ২২ জনই শিশু।
সংস্থাটির প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা আবুল হাশেম জানিয়েছেন, মশক নিধনে গত ২২ জুন ১০০ দিনের ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছিল চসিক। চার ধরনের ওষুধ ছিটিয়ে এবং অভিযান চালিয়ে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কাজও করে যাচ্ছে সংস্থাটি। মশক নিধনে চলতি অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ করা পাঁচ কোটি টাকার মধ্যে গত দুই মাসে দুই কোটি টাকা খরচও করে ফেলা হয়েছে। কিন্তু বিপুল পরিমাণের এই অর্থ খরচ করেও ফল মিলছে না।
চসিকের এই কর্মকর্তা জানান, মশক নিধনে কোটি কোটি টাকার খরচ করেও প্রত্যাশিত ফল মিলছে না। কারণ কার্যকর ওষুধ কেনা হলেও অদক্ষ জনবল দিয়ে মশার ওষুধ প্রয়োগ, মশার প্রজনন ক্ষেত্র চিহ্নিত করার জন্য নিজস্ব লোকবল (কীটতত্ত্ববিদ ও কীট সংগ্রাহক) না থাকায় মশার উৎপাত বন্ধ করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, সংস্থায় ছয়জন কীট সংগ্রাহক থাকলেও নেই একজন কীটতত্ত্ববিদ। মশক নিধনে ১০টি টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিদিন পাঁচটি ওয়ার্ডে এবং পাঁচটি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।
আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা জামিল হায়দারের অভিযোগে, চসিককর্মীরা নিয়মিত খাল-নালা পরিষ্কার না করায় এগুলো মশার প্রজননের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।’ ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ফতেয়াবাদ এলাকার বাসিন্দা নুরুল আবছার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য নিয়মিত কর দিচ্ছি। খাল-নালাগুলো পরিষ্কার করা হয় না। মশার ওষুধ ছিটাতেও দেখি না চসিকের লোকজনকে। দিনে-রাতে মশার কামড় খেতে হয়।’ চসিকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ‘ইনভেন্ট লিকুইড ইনসেকটিসাইড’ নামে এডাল্টিসাইড এবং ‘টেমিফস ফিফটি পার্সেন্ট ইসি’ নামে লার্ভা ধ্বংসকারী লার্ভিসাইড ও ‘মাসকুবার’ নামে এডাল্টিসাইডসহ চার ধরনের কীটনাশক নিয়মিত ব্যবহার করে চসিক।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার দেশ রূপান্তরকে বলেন, এডিস মশা তার জীবনচক্রই পাল্টে ফেলেছে। সব ধরনের পরিবেশের খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। আগে শুধু বৃষ্টির পানি, ঘরে বা বাইরে জমা পরিষ্কার পানিতেই এডিস হতো। এখন এডিস শুধু নোংরা পানি নয়, লোনা পানিতেও জন্মাচ্ছে। আবার শুধু দিন নয় এবার গবেষণা বলছে, দিন এবং রাত সব সময়ই এডিস মশা কামড়াচ্ছে। মশার উৎপাত বন্ধে কার্যকর কীটনাশক ব্যবহার এবং সচেতনতার বিকল্প নেই।’
চসিক সূত্র জানাচ্ছে, মশক নিধনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ কোটি ২৫ লাখ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ কোটি ৮৫ লাখ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ কোটি ১৫ লাখ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ কোটি ৫ লাখ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে খরচ হয় ৯০ লাখ টাকা। চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছরে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে গত দুই মাসেই চসিকের খরচ হয়ে গেছে ২ কোটি টাকা। তবে প্রয়োজনে আরও পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে বলে জানিয়েছেন চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা আবুল হাশেম।
চসিকের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহী বলেন, ‘মশক নিধনে আমরা নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করছি। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় প্রতিদিন কীটনাশক ছিটানো হচ্ছে। এজন্য চসিকের দশটি বিশেষ টিম কাজ করছে। সচেতনতামূলক কার্যক্রমেও জোর দিচ্ছি।’
চসিক সূত্র জানায়, নিজস্ব কীটতত্ত্ববিদ না থাকায় যথাযথভাবে নগরে মশার প্রজনন ক্ষেত্র চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। চসিকের জনবল কাঠামোতে কীট সংগ্রাহক থাকলেও কীটতত্ত্ববিদ নেই। নগরের ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১২টি ওয়ার্ডে মশার প্রজনন ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একটি টিম। চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, নগরে মশার প্রজনন ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণে চসিকের সঙ্গে কোনো সমন্বয় করছে না সিভিল সার্জন অফিস। নিজস্ব কীটতত্ত্ববিদ না থাকায় ৪১টি ওয়ার্ডে মশার প্রজনন ক্ষেত্র চিহ্নিত করা যাচ্ছে না।
চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা আবুল হাশেম বলেন, ‘সিভিল সার্জন অফিসের টিমের করা ১২টি ওয়ার্ডের জরিপে ৪১ ওয়ার্ডের মশক নিধন কার্যক্রম সম্ভব নয়। তাই বিদ্যমান জনবল কাঠামোতে কীটতত্ত্ববিদ পদ সৃষ্টি করে জরুরি ভিত্তিতে লোকবল নিয়োগ দিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’ এদিকে চসিকের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ শাখা সম্প্রতি নগরে ৪৩৩টি মশার হটস্পট চিহ্নিত করে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপে দেখা যায়, নগরের ৩০ শতাংশ বাসাবাড়িতে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভা রয়েছে। ২১টি ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ শতাংশে।
সুদানের যত উত্তরে যাওয়া যায়, জমি ততই শুষ্ক হয়ে ওঠে। কয়েকশ কিলোমিটার জুড়ে শুধু মরুভূমি। কিন্তু গবেষকরা বলছেন, সুদানসহ আফ্রিকার বড় কয়েকটি দেশজুড়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভূগর্ভস্থ ভাণ্ডারের অস্তিত্ব রয়েছে। মিসর, সুদান থেকে শাদ ও লিবিয়া পর্যন্ত সেই জলাধার বিস্তৃত। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে বলছে, গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে খননের সময় ‘নিউবিয়ান স্যান্ডস্টোন অ্যাকুইফার’ নামের পানির সেই ভাণ্ডার আবিষ্কার করা হয়েছিল।
ভূতত্ত্ববিদ হিসেবে আব্দাল্লাহ ওমর গত ২০ বছর ধরে অ্যাকুইফার নিয়ে গবেষণা করছেন। কয়েকটি জায়গায় ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি পানির নাগাল পাওয়া যায়। ২০০৪ সালে খননের সময় ওমর এল গা-আব অঞ্চলে একটি উৎস খুলে দেন। ওমর বলেন, উত্তরের অংশে গভীরতা ৬০ মিটার অথবা আরও কম। ভাবতে পারেন? একটি সেচ প্রণালী দিয়ে ৫০ হেক্টর জমিতে সেচ করা সম্ভব। সেটা সত্যি অনন্য। এতে জলাধারের শক্তিশালী প্রবাহ স্পষ্ট হয়ে যায়। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গা-আব এল-হাশার মতো স্থানীয় গ্রাম এর ফলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছে। ২০ বছর আগে সেই উৎস আবিষ্কারের পর থেকে মানুষ নিয়মিত পানির নাগাল পাচ্ছে।
চাষিরা সেই সুযোগের পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করছেন। আবদুল হাফিজ তেমন এক চাষি। কয়েকশ হেক্টর জুড়ে তার নিজস্ব খেতে তিনি নানা ধরনের শাকসবজি ও ফলমূল উৎপাদন করছেন। ফাভা বিনস, জোয়ার এবং আলফালফার পাশাপাশি চলতি বছর তিনি গম উৎপাদনে মনোযোগ দিয়েছেন। হাফিজ বলেন, কৃষিকাজে পানি ঠিকমতো ব্যবহার করা উচিত। অর্থাৎ আমার মতে, উন্নত পদ্ধতি ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে পানির সাশ্রয় করা সম্ভব। কিন্তু প্রথাগত পদ্ধতি ব্যবহার ডয়েচে ভেলে বলছে, ‘নিউবিয়ান স্যান্ডস্টোন অ্যাকুইফার’ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘জীবাশ্ম’ জলাধার। অর্থাৎ কয়েক লাখ বছর আগে সেখানে পানি জমা হয়ে মাটির নিচে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু অ্যাকুইফারের পানির ভাণ্ডার মোটেই অফুরন্ত নয়। কয়েকটি জায়গায় কম হলেও নতুন করে পানি আসে। অন্য জায়গায় একেবারেই সেটা ঘটে না।
কয়েকজন গবেষকের ধারণা, অ্যাকুইফারের আয়ু কমপক্ষে আরও দুশো বছর। তবে সে বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাছাড়া সময়টাও বেশি নয়। এক আন্তর্জাতিক চুক্তি ও জাতিসংঘের এক প্রকল্পের মাধ্যমে সেই পানি ন্যায্য ও টেকসই উপায়ে ব্যবহার করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে।
সুদানের সরকার ২০২২ সালে পানির ব্যবহার সংক্রান্ত একটি আইনে সম্মতি জানিয়েছিল। সেচ ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে সেটি কার্যকর করার কথা। এখনো পর্যন্ত সরকার জনগণের জন্য ৩৮টি ছোট এবং ছয়টি গভীর কূপ তৈরি করেছে। তা থেকে হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে গম উৎপাদন করছে।
ভূতত্ত্ববিদ আব্দুল্লাহ ওমর বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেড়ে চলা মরুকরণের অর্থ, এই অঞ্চলে অতীতের তুলনায় পানির গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। বিশাল অ্যাকুইফারের জীবাশ্ম পানি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজে লাগাতে পারলে সেখানে মানুষ ও প্রাণীর অস্তিত্ব রক্ষা করা অনেক সহজ হবে।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের কোন্দল দিন দিন আরও প্রকট হচ্ছে। ছাত্র সমাবেশে নেতাদের বক্তব্য দিতে না দেওয়া, সাত কলেজ নিয়ে টানাটানি, আধিপত্যকে কেন্দ্র করে বেশ কিছুদিন ধরে চলছে তাদের রেষারেষি। এর প্রভাব পড়ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। তাদের এ চলমান অস্থিরতা বন্ধ না হলে বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
অধিভুক্ত সাত কলেজ শাখার নিয়ন্ত্রণ চায় সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। তাদের দাবি, এতে অ্যাকাডেমিক মানের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক মানেরও উন্নয়ন ঘটবে শিক্ষার্থীদের। তবে এতে সম্মতি জানায়নি কেন্দ্রীয় কমিটি। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি, বিক্ষোভ ও শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে সাত কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি হওয়ার সুযোগ নেই এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতে অধিভুক্তবিষয়ক সম্পাদক পদ যুক্ত করার ঘোষণা দেন সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত।
এ নিয়ে সাত কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সৈকতের মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে মঙ্গলবার রাতেই বিক্ষোভ করেছে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের একাংশ। বুধবার বিক্ষোভ মিছিল করেছে কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগ।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকায় ঢাকা কলেজের দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে বেধড়ক মারধরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোররাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে, সাত কলেজ ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণ ইস্যুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের টানাপড়েন চলছে তার পরিপ্রেক্ষিতে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে যেতে নারাজ সাত কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের একাংশ। কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বেলায়েত হোসেন একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা আপার প্রমোশন যুগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চাইল আমাদের ডিমোশন। এটা একেবারেই অনাকাক্সিক্ষত। সাত কলেজের জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আছে।’
তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রিপন মিয়া বলেন, ‘আগে সাত কলেজ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতে সাত কলেজের যোগ্য কর্মীদের স্থান দেওয়া হোক। তারপর না হয় আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটির অনুসারী হব।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যে ক্ষেপেছেন ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভাও। সৈকতকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনি আগে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র পড়েন, তারপর কথা বলেন। একটা জেলা ইউনিটকে কোন সাহসে আপনি উপজেলা ইউনিট বানাতে চান? আপনি যত শিক্ষার্থীর নেতৃত্ব দেন আমি তার থেকে বেশি শিক্ষার্থীর নেতৃত্ব দিই।’
ছাত্রলীগের মধ্যে এমন অস্থিরতায় নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কায় ভুগছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সাত কলেজ ছাত্রলীগের নেতাদের যুক্ত করা হলে শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হবে বলে মনে করেন তারা। গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সুমন বলেন, ‘ছাত্রলীগের চলমান ঝামেলা মিটমাট না করলে যেকোনো সময় সহিংস রূপ ধারণ করতে পারে পরিস্থিতি। আর এর বলি হতে পারি আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা।’
রাকিবুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আন্ডারে নিয়ে এলে ক্যাম্পাসের পরিবেশ আরও নষ্ট হবে। তারা ভবিষ্যতে লাইব্রেরি ব্যবহার, বাস ব্যবহার এমনকি হল ব্যবহারের দাবিগুলোও জানাতে পারে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা এমন সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হতে পারি না।’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের স্বার্থেই আমরা তাদের অধিভুক্ত করতে চাইছি আর তা শান্তিপূর্ণভাবে। কিন্তু কেউ কেউ তাদের দিয়ে বিক্ষোভ করাচ্ছে। সাত কলেজ ছাত্রলীগের বেশিরভাগই আমাদের পক্ষে রয়েছে। অল্প কিছু নেতাকর্মীকে আমাদের বিরুদ্ধে উসকে দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, দুই কর্মীকে মারধরের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ‘এটি একটি সাংগঠনিক বিষয়। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাজ হবে। গঠনতন্ত্রে যেভাবে ছাত্রলীগের ইউনিটগুলোর কমিটি গঠন করার কথা রয়েছে সেভাবেই কাজ করা হবে। এর বাইরে আমাদের চিন্তা নেই।’ যারা হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের কাছে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা জোরদার করতে আমরা কাজ করছি। এর ব্যত্যয় ঘটলে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং নেব।’ তিনি আরও বলেন, শুধু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নয়, শিক্ষার্থী এবং ছাত্র সংগঠনগুলোর উচিত এ বিষয়ে লক্ষ রাখা। যাতে কোনোভাবেই ক্যাম্পাসের পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে।
ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত কলেজ পড়ুয়া একমাত্র ছেলে আদনান যখন ঘরের বিছানায় কাতরাচ্ছেন তখন মা সানোয়ারা বেগমের কাছে খবর এলো ঢাকায় স্বামীর সঙ্গে বসবাসরত মেয়ে পপি আক্তারের শরীরেও গত ১১ সেপ্টেম্বর ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে পপি আক্তার স্বামীকে নিয়ে চলে আসেন চট্টগ্রামে। আসার দিনই জ্বর ওঠে তার স্বামী আরমানের।
গত ১২ সেপ্টেম্বর পরীক্ষায় আরমানের শরীরেও ডেঙ্গু ধরা পড়ে। মেয়ে এবং মেয়ের জামাই আরমানকে ১৪ সেপ্টেম্বর ভোরে ভর্তি করা হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮২ নম্বর ডেঙ্গু ওয়ার্ডে।
মেয়ের জামাইসহ একই পরিবারের তিনজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সানোয়ারা বেগম। হাসপাতালের বিছানায় ডেঙ্গু আক্রান্ত মেয়ে ও মেয়ের জামাই এবং বাড়িতে একমাত্র ছেলেকে নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ করছেন মা সানোয়ারা। কখনো বাড়িতে ছুটছেন ছেলের কাছে, কখনো মেয়ে এবং জামাইয়ের শুশ্রুষা করতে ছুটে আসছেন চমেক হাসপাতালে।
‘ফজরের নামাজ পড়েই বাড়িতে অসুস্থ ছেলেকে রেখে হাসপাতালে মেয়ের কাছে ছুটে এসেছি। জামাইও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। তার (জামাই) পরিবারও কোনো খবর রাখছেন না। আমার স্বামী মো. ইয়াছিন সিএনজি অটোরিকশা চালক। আমরা দিনে এনে দিনে খাই। সবকিছু একাই সামলাতে হচ্ছে আমাকে’ বলেন সানোয়ারা। তাদের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা সদর এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চমেক হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, নারী ইউনিটে মেয়েকে নিয়ে এক শয্যায় বসে আছেন মা সানোয়ারা। জামাই আরমানের চিকিৎসা চলছে একই ওয়ার্ডের পুরুষ ইউনিটের ১৯ নম্বর শয্যায়।
সানোয়ারা জানান, মেয়ের জামাই আরমান ঢাকায় বেসরকারি একটি ব্যাংকে পিয়নের চাকরি করেন। বছর দুয়েক আগে পপির সঙ্গে বিয়ে হয় আরমানের। দেড় বছর ধরে তারা ঢাকার বাড্ডায় বসবাস করছেন। পপি পটিয়া সরকারি কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষে পড়াশোনা করছেন। মেয়ের সংসারে কোনো সন্তান হয়নি। তার (সানোয়ারা) তিন মেয়ে এক ছেলে। পপি আক্তারসহ সানোয়ারার দুই মেয়ে ও এক ছেলে পটিয়া সরকারি কলেজে পড়াশোনা করে।
জানা গেছে, স্বামীর সীমিত আয়ের সংসারে জামাইসহ তিন ছেলেমেয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ায় ব্যয় মেটাতে নাভিশ্বাস অবস্থা সানোয়ারার। খরচ কুলাতে না পেরে ছেলেমেয়ে ও জামাইয়ের চিকিৎসার জন্য বেসরকারি আশা ব্যাংক থেকে ৭০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। তাদের চিকিৎসার পেছনে ইতিমধ্যে প্রায় লাখ টাকা খরচও হয়ে গেছে।
সানোয়ারা বলেন, ‘পরিবারের তিন সদস্য ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। চিকিৎসকের পরামর্শে বাড়িতে চলছে ছেলের চিকিৎসা। সেখানে তাকে দেখার কেউ নেই। শুধু আল্লাহ ছাড়া। আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে ছোট মেয়ে গেছে এইচএসসি প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিতে। কিছুক্ষণ পর ছুটতে হবে বাড়িতে। স্বামী গেছেন অটোরিকশা চালাতে। যুদ্ধটা করছি একাই।’
ডেঙ্গু ওয়ার্ডের নারীদের বিভাগে একটি শয্যায় শুয়ে আছেন পপি আক্তার। হাতে চলছে স্যালাইন। জানতে চাইলে পপি বলেন, ‘জ¦র উঠানামা করছে। ডাক্তাররা ওষুধ দিয়েছেন। ৫ সেপ্টেম্বর জ্বর ওঠে। ১১ সেপ্টেম্বর পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ে। ঢাকায় দেখার কেউ নেই। তাই চট্টগ্রামে মায়ের কাছে চলে এসেছি। গতকাল পরীক্ষায় আমার স্বামীরও ডেঙ্গু ধরা পড়ে। দুজন আজ (বৃহস্পতিবার) ভোরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।’
এক প্রশ্নের উত্তরে সানোয়ারা বলেন, ‘চমেক হাসপাতালের চিকিৎসা বিনামূল্যে হলেও সংসার চালানোর দুশ্চিন্তা যাচ্ছে না। ছেলেমেয়ে অসুস্থ হওয়ায় ঠিকভাবে গাড়ি চালাতেও যেতে পারছেন না স্বামী। চিকিৎসকের পরামর্শে বাড়িতে চিকিৎসা চলছে ছেলের। পরিবারের চার সদস্যের মধ্যে মেয়ের জামাইসহ তিনজনই অসুস্থ হওয়ায় কী করব, কিছু বুঝে উঠতে পারছি না।’
দেখা গেছে, ডেঙ্গু ওয়ার্ডের ১৯ নম্বর শয্যায় শুয়ে আছেন পপির স্বামী আরমান। তার হাতে ক্যানুলা লাগানো। দেশ রূপান্তরকে আরমান বলেন, ‘জ্বর পড়ছে না। ব্যাথায় কাতরাচ্ছি। আজ সকালে বড় ডাক্তাররা দেখেছেন। ওষুধ চলছে। দোয়া করবেন।’
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় কোনো মৃত্যু না হলেও চলতি বছরে চট্টগ্রামে ৭ হাজার ৪৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। এ সময়ে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে নতুন করে ১০০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়া চলতি বছর ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে ২৩ জনই শিশু।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান জানান, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই। এজন্য নতুন ভবনে ডেঙ্গু ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। আজ (১৪ সেপ্টেম্বর) ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ৪১ জন নারী-পুরুষ ও শিশু ভর্তি আছে। চলতি বছর ডেঙ্গুর ধরন পরিবর্তন হওয়ায় আক্রান্তদের শরীরে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিচ্ছে। জ্বর, ডায়রিয়া, বমি, পেট ও ফুসফুসে পানি জমাসহ ডেঙ্গু শক সিনড্রোম ও ডেঙ্গু হেমরোজিক ফিভারে অধিকাংশ রোগীর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ ও পিআইসিইউ) প্রয়োজন হচ্ছে।
আজ শুক্রবার বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা ছিল টাঙ্গাইলের করটিয়া সরকারি সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রসায়ন বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মুনিয়া মুক্তির (২২)। গতকাল বৃহস্পতিবার পাত্রপক্ষের আসার কথা ছিল মুনিয়ার গ্রামের বাড়ি সখীপুর উপজেলার গজারিয়া গ্রামে। হওয়ার কথা ছিল হলুদ সন্ধ্যা। কিন্তু বুধবার রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন মুনিয়া। বিয়ের প্রস্তুতি নেওয়া মুনিয়ার বাড়িতে এখন শোকের মাতম।
মুনিয়া ছাড়াও গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আরও সাতজন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। দেশ রূপান্তরের প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত
টাঙ্গাইলের সখীপুর সংবাদদাতা জানান, সদ্য চাকরি পাওয়া এক পাত্রের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় গজারিয়া গ্রামের মজিবুর রহমানের মেয়ে মুনিয়ার। কিন্তু বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সখীপুর-নলুয়া-বাসাইল সড়কের বাসুলিয়া নামক স্থানে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যায় মোটরসাইকেলযোগে বিশ্ববিদ্যালয় হলে যাওয়ার পথে সখীপুর-নলুয়া-বাসাইল সড়কের বাসুলিয়া নামক স্থানে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা অন্য একটি বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল ধাক্কা দিলে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে তাকে টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়। অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাত ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
নিহত মুনিয়ার চাচতো ভাই আমিনুল ইসলাম বলেন, তার অকাল মৃত্যুতে পরিবারে শোকের মাতম চলছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
এদিকে টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, জেলার ধনবাড়ীতে কাভার্ড ভ্যানের নিচে চাপা পড়ে দুজন এনজিও কর্মী নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার দড়িরামপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেনÑ পাবনা জেলার ভাঙ্গুরা উপজেলার মোতালেব হোসেন ও টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার হাতিবান্ধা গ্রামের জাহিদ হাসান। তারা বেসরকারি সংস্থা একটি এনজিওতে চাকরি করতেন।
ধনবাড়ী থানার ওসি (তদন্ত) ইদ্রিস মিয়া জানান, ঢাকা থেকে জামালপুরগামী একটি কাভার্ড ভ্যান ঘটনাস্থলে পৌঁছালে চাকা ফেটে যায়। এতে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মোটরসাইকেলের ওপর উল্টে যায়। এতে কাভার্ড ভ্যানের নিচে চাপা পড়ে মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত হন।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, জেলার পুবাইলে কাভার্ড ভ্যান-অটোরিকশার সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও তিনজন আহত হয়েছেন। আহতদের গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পুবাইল বাসস্ট্যান্ড ও খোকন ফিলিং স্টেশনের মাঝামাঝি জায়গায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার মো. মাহবুব উজজামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে আহত ও নিহতদের নাম পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ। স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টঙ্গী-কালীগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে একটি কাভার্ড ভ্যান কালীঞ্জের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে অটোরিকশায় থাকা পাঁচ যাত্রী গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা হতাহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠায়।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, শৈলকুপায় যাত্রীবাহী বাস ও ইঞ্জিনচালিত আলমসাধুর মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুজন। আহতদের উদ্ধার করে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়কে গাড়াগঞ্জ এলাকায় এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত স্বপন হোসেন (৪০) হরিনাকু-ু উপজেলার আক্কাচ আলীর ছেলে। অন্য নিহত ও আহতদের নাম পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। ঝিনাইদহ আরাপপুর হাইওয়ে থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঢাকা-মাওয়া তথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে গাড়ির ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও একজন। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে জেলার শ্রীনগর উপজেলার সমষপুর গ্রামের এক্সপ্রেসওয়েতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মো. নিরব হোসেন (২২) ঢাকার ভাটারা এলাকার মৃত আয়নাল সরকারের ছেলে।
অপেক্ষা আর মাত্র ৩ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই।
শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে। কিং খানের ‘জাওয়ান’ কাঁপাচ্ছে পর্দা, কাটতি বাড়ছে বক্স অফিসে; বিশ্বকাপে আইসিসির পকেট ভরবে তো?
প্রস্তুতি বলছে, ভরবে। উইকেটে হবে রান উৎসব, লড়াই হবে ধুন্ধুমার। তাতেই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হবে এক ব্লকবাস্টার মেগা হিট।
মাস তিনেক আগে, বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচগুলো যে ১০ ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে সেই ভেন্যুগুলোর কিউরেটরদের সঙ্গে বসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কিউরেটর। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের একটাই মন্ত্র, রান চাই।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে, ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলেছে সেই ম্যাচগুলো যদিও বিশ্বকাপের ভেন্যুতে হয়নি তবে সেই সব ম্যাচেও রানের বন্যা বয়েছে।
প্রথম দুটো ওয়ানডেতে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার করা ২৭৬ রান অনায়াসে তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে ভারত। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ঠেঙিয়ে তুলেছেন ৩৯৯ রান। তিন নম্বর ম্যাচে আবার অস্ট্রেলিয়া করেছে ৩৫২ রান, যা তাড়া করে ভারতও গিয়েছিল ২৮৬ অবধি।
উদ্বোধনী ম্যাচ হবে গুজরাতের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এখানে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। ম্যাচে শুভমান গিল করেন সেঞ্চুরি, ভারত করে ৪ উইকেটে ২৩৪ রান আর জবাবে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ৬৬ রানে।
বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের ধরন বুঝে ব্যাট করতে পারলে ৫০ ওভারে এখানে রানবন্যা হবে। বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দুই দল এখানে মুখোমুখি হয়েছে বহুবার, পোশাকের রঙ কখনো রঙিন কিংবা কখনো সাদা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ কমেনি। এই মাঠে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রান করে ভারতকে ২১ রানে হারিয়েছে সবশেষ ম্যাচে।
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ঘরের মাঠে সবশেষ মৌসুমে ধোনির ‘ইয়েলো আর্মি’ ৮ ম্যাচ খেলে ২০০ রানের ওপরে করেছে দুইবার, একবার জিতেছে অন্যবার হেরেছে। তবে দুই ইনিংসেই ২০০’র বেশি রান হয়েছে দুটো ম্যাচেই। অর্থাৎ চাইলে চেন্নাইকেও ব্যাটিং স্বর্গে পরিণত করা সম্ভব।
বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর টানা তিন ওয়ানডে জিতে সিরিজ তো নিশ্চিত করেছেই, টানা তিন ম্যাচে ৩০০’র ওপর রান করেছে। চতুর্থ ওয়ানডেতে তো ৪০০ পার করেছে প্রোটিয়ারা। ব্যাটিং উইকেটে তারাও যে কোনো প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। হেনরিক ক্লাসেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৮৩ বলে খেলেছেন ১৭৪ রানের ইনিংস। বিধ্বংসী রূপে ফিরছেন ডেভিড মিলারও।
প্রোটিয়ারা প্রথম ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে। সেখানে অবশ্য সবশেষ হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচেও খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে তারা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯৯ রানে। দিল্লির মাঠটা হয়তো খানিকটা স্পিনারদের দিকেই ঝুঁকবে, তবে অন্য মাঠগুলোতে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবে মেতে উঠতে দেখার সম্ভাবনা জোরালো। তাই অনেক সাবেক ক্রিকেটারই প্রোটিয়াদের দেখছেন শেষ চারে।
বিশ্বকাপের আগে ক্লাসেন ছাড়াও ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস খেলেছেন ১৮২ রানের ইনিংস, দারুণ ছন্দে ইংল্যান্ডের ডাভিড মালানও। তবে সেরা ছন্দে নিঃসন্দেহে শুভমান গিল। সবশেষ ৫ ইনিংসে দুটো শতরান আর একটা হাফসেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেলও আছেন দারুণ ছন্দে। দুটো হাফসেঞ্চুরি আর একটা সেঞ্চুরি সবশেষ ৫ ইনিংসে। হায়দ্রাবাদে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের ৩৪৫ রান কিউইরা তাড়া করেছে ৩৮ বল হাতে রেখে।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, এই বারের বিশ্বকাপে রানবন্যায় বোলারদের জন্য কাজটা হবে কঠিন। দেশ রূপান্তরকে আশরাফুল বলেন, ‘আমাদের পেসাররা গত এক দেড় বছর ধরে খুবই ভালো করছে। তবে যেহেতু ভারতের মাটিতে খেলা, আমরা দেখেছি যে সাড়ে ৩০০’র বেশি রান হচ্ছে প্রতিটা ম্যাচে। কেউ যদি ভালো না করে, তাকে মনে রাখতে হবে যে টুর্নামেন্টে পরের ম্যাচে ফিরে আসতে হবে। একজনের দিন খারাপ যেতেই পারে, কোনো ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান উঠেই যেতে পারে। ৯টা ম্যাচের ভেতর ৪-৫টা ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান হতে পারে। তাই বোলারদের ফিরে আসার মানসিকতা থাকতে হবে।’
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমও বলেছেন যে দেড় মাসের আসরে প্রস্তুত থাকতে হবে যে কোনো কিছুর জন্যই, ‘দেড় মাসের আসর, ৯টা ম্যাচ এই সময়ে খেলতে হবে বা তারও বেশি। অনেক উত্থান-পতন হবে। যে কোনো কিছুর জন্যই তৈরি থাকতে হবে।’
রান উৎসবের বিশ্বকাপ যে হতে যাচ্ছে, তার সব রসদই মজুদ। মাঠগুলোকে করা হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গ, বিশ্বকাপে আসার আগে সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরাও আছেন ছন্দে। শুধু প্রশ্ন এটাই, রান উৎসবের এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রান করবেন কে? সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাটিংয়ের ছবিটা যে মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।