
নরসিংদীতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে চার ঘণ্টার মধ্যে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলেসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন ১০ জন। এর মধ্যে গত শুক্রবার রাত পৌনে ১০টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রায়পুরা উপজেলার মরজালের শিমুতলী এলাকায় বাস ও সিএনজির সংঘর্ষে সিএনজির তিন যাত্রী নিহত হয়। আর আহত হয় আরও তিনজন। পরে রাত ২টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শিবপুর উপজেলার শ্রীফুলিয়া এলাকায় ট্রাক ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে বাবা-ছেলেসহ তিনজন নিহত হন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও সাতজন।
এদিকে গত শুক্রবার রাত ও শনিবার সকালে পাবনা, চট্টগ্রাম ও কুড়িগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন আরও তিনজন।
গতকাল আমাদের নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, রায়পুরায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন রায়পুরা উপজেলার উত্তর বাখরনগর ইউনিয়নের বড়চর গ্রামের মো. কাসেম মিয়ার স্ত্রী দোলনা বেগম (৫৫), তার নাতি আরিয়ান (৭) ও বেলাব উপজেলার ধুকুন্দি গ্রামের রানা মিয়া (১৮)। আর শিবপুরে নিহতরা হলেন মাইক্রোবাসের চালক নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার সাবদীবাজার এলাকার সুভাষ চন্দ্রের ছেলে সাগর চন্দ্র (৩২। যাত্রী চাঁদপুরের মতলব থানার মুন্সীরকান্দি গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে এফাজুল হক (৫০) ও তার ছেলে মোস্তাকিম (১৮)।
হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস জানায়, রাতে রায়পুরার মরজাল থেকে পাঁচজন যাত্রী নিয়ে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভিটি মরজাল যাচ্ছিল। সিএনজিটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রায়পুরা উপজেলার মরজাল শিমুলতলী এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ওই সময় ঘটনাস্থলেই এক নারীসহ সিএনজিতে থাকা তিন যাত্রী মারা যান। আহত হন আরও তিনজন। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। খবর পেয়ে ভৈবর হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে মাইক্রোবাসে করে দুটি পরিবার সিলেটে মাজার জিয়ারতে গিয়েছিল। জিযারত শেষে তারা শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জ ফিরছিল। তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শিবপুরের শ্রীফুলিয়া এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা সিলেটগামী একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। আর ঘটনাস্থলেই চালকসহ তিনজন নিহত হন। পরে ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে দুর্ঘটনাস্থলে এসে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় ফায়ার সার্ভিস।
নরসিংদী ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মো. রায়হান বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে গাড়ির ভেতর থেকে তিনজনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করি। আর আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাই। পরে মরদেহগুলো হাইওয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।’
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চাপায় প্রাণ গেছে হাওয়ানুর (৭) নামের এক শিশুর। গতকাল শনিবার দুপুরে উপজেলার চাকিরপশা ইউনিয়নের রাজারহাট- নাজিম খান সড়কের মিলেরপাড় বাজারে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শিশুটি চাকিরপশা ইউনিয়নের মিলেরপাড় এলাকার আব্দুল হাকিমের মেয়ে।
স্থানীয়রা জানান, শিশুটি তার দাদুর সঙ্গে বাড়ির পাশের মিলেরপাড় বাজারে যায়। বাজারে দোকান থেকে বিস্কুট কিনে রাস্তা পার হতে গিয়ে রাজারহাটগামী একটি অটোরিকশার চাপায় সে গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয় লোকজন শিশুটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।
পাবনার ঈশ্বরদী প্রতিনিধি জানান, পাবনার ঈশ্বরদীতে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাককে ধাক্কা দিয়ে এক মোটরসাইকেল আরোহী যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাত ৯টার দিকে ঈশ্বরদী-পাবনা মহাসড়কের কালিকাপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। মোটরসাইকেলচালক সজীব হোসেন তালুকদার ঈশ্বরদীর মুলাডুলি এলাকার ইসমাইল তালুকদারের ছেলে।
পাকশী হাইওয়ে পুলিশের এএসআই বেলাল হোসেন জানান, পাবনা সুগার মিল এলাকায় রাস্তার পাশে একাধিক খাবার হোটেল রয়েছে। ট্রাকচালকরা সেখানে গাড়ি থামিয়ে খাবার খান। রাতের অন্ধকারে দেখতে না পেয়ে সেই থামানো গাড়িতেই সজীব পেছন থেকে সজোরে আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
চট্টগ্রামের চন্দনাইশ প্রতিনিধি জানান, উপজেলার পাক্কা দোকান এলাকায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় আহত আবদুল লতিফ (৫২) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার পাক্কা দোকান এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। আবদুল লতিফ উপজেলার জোয়ারা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড নগরপাড়া এলাকার সেলিম মেম্বারের বাড়ির মৃত আলী বকসুর ছেলে।
বিভাগ ও অনুষদের প্রস্তাবের বাইরে গিয়ে সম্প্রতি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কলা অনুষদের নাট্যকলা ও পরিবেশনাবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তির শর্তের বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিভাগ সূত্রে এ কথা জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদে ভর্তিতে এসএসসি ও এইচএসসির মিলিত জিপিএ ‘৬’ হওয়ার কথা। নাট্যকলা ও পরিবেশনাবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক হওয়ার জন্য এসএসসি ও এইচএসসিতে আলাদাভাবে জিপিএ ৪ হওয়ার শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। যদিও এ শর্তের উল্লেখ নেই ইউজিসির অভিন্ন নীতিমালায়।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ও ৮১তম সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) প্রণীত শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতিতে অভিন্ন নীতিমালা মানার সিদ্ধান্ত হয়। ইউজিসির অভিন্ন নীতিমালায় শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে একটিতে ৩.৫০ (৪.০০) ও অন্যটিতে ৩.২৫ (৪.০০) থাকার কথা বলা হয়েছে। নীতিমালার কোথাও এসএসসি ও এইচএসসির ফলকে যোগ্যতার মাপকাঠি হিসেবে উল্লেখ করেনি ইউজিসি।
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তি প্রসঙ্গে ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার অভিন্ন নীতিমালা করতে ইউজিসিকে দায়িত্ব দিয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আমরা একটি অভিন্ন নীতিমালা করেছি। এটিকে মানার জন্য সবাইকে বলাও হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য জিপিএ আর চাকরির জন্য জিপিএ নিয়ে প্রশ্ন করলে মন্তব্য করতে রাজি হননি ইউজিসি সচিব।
কলা অনুষদের বিভাগগুলোতে এমন জিপিএ চাওয়া প্রত্যাশিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন কলা অনুষদের একাধিক শিক্ষক। সংগীত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. জাহিদুল কবীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এমন শর্তে আটকে থাকা উচিত নয়। যে যোগ্যতায় শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হয় এবং যে যোগ্যতা তারা অর্জন করে তার সমন্বয় থাকা উচিত। এতে মেধাবীদের বেছে নিতে সুবিধা হবে।’
নাট্যকলার এমন বিজ্ঞপ্তি কি বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশেই হয়েছে? জানতে চাইলে বিভাগটির প্রধান ড. কামাল উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের চাহিদা যা ছিল তা-ই প্ল্যানিং কমিটি পাঠিয়েছে। বাকিটা প্রশাসনের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। আমরা আবেগে অনেক কথা বলতে পারি, বাস্তবে তাতে কাজ হবে না।’
বিভাগটির প্ল্যানিং কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘প্ল্যানিং কমিটির প্রস্তাব ছিল জিপিএ ৩.৫০। আমরা জিপিএ ৪ (৫.০০) চাইনি।’
বিজ্ঞপ্তির শর্ত বিষয়ে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুশাররাত শবনম বলেন, ‘এটি অনুষদ, বিভাগ বা ইউজিসির নিয়মে হয়নি; উপাচার্যের মনে হয়েছে তাই দিয়েছে। আমার বলার কিছু নেই।’
বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে সৌরভ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় নাকি মানুষ গড়ার প্রতিষ্ঠান, অথচ ২০২৩ সালে যে সার্কুলার হলো কোনোভাবেই বোধগম্য নয়। শিক্ষক নিয়োগে এসএসসি ও এইচএসসির রেজাল্টের যে মাপকাঠি উল্লেখ করা হয়েছে তা ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। আমাদের জিপিএ ২.৭৫ নিয়ে ভর্তি করানোর পর এখন জিপিএ ৪.০০ চাওয়াটা কি ঠিক? আমাদের গোল্ড মেডালিস্টও যদি বাদ পড়ে তাহলে আমাদের ভর্তি করানো হলো কেন? উচ্চ আদালতে আমরা যেতে চাই কিন্তু আমি জানি এজন্য আমাদের নানা হুমকি দেওয়া হবে, ভিসির অনুসারীরা ভবিষ্যতেও আমাদের ক্যারিয়ারে প্রভাব ফেলবে। শঙ্কায় আমরা উচ্চ আদালতে রিট করতে পারছি না।’
বিজ্ঞপ্তির শর্ত, ইউজিসির অভিন্ন নীতিমালা ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়য়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরকে খুদে বার্তা ও কল দিয়েও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘অভিন্ন নীতিমালা পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা নয়, এটি গাইডলাইন মাত্র। তাই ব্যত্যয় হয়েছে বলে মনে করিনি। এসএসসি ও এইচএসসি হলো বেসিক, সেখানে ভালো না করলে শিক্ষক হতে পারবে না কেউ।’ তিনি বলেন, ‘অনেকে নিজের লোক ঢোকানোর জন্য ভর্তির সময় কম জিপিএ চায়।’ তবে ভর্তির যোগ্যতা আর চাকরির যোগ্যতা বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি বিশ্ববিদ্যালয়টির এ কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কম রেজাল্টধারী শিক্ষকদের নিয়ে প্রশাসন বিপদে আছে, তাই জিপিএ বাড়ানো হয়েছে।’
কলা অনুষদের একাধিক শিক্ষক বলেন, সম্প্রতি কলা অনুষদভুক্ত একটি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এসএসসি ও এইচএসসির যে রেজাল্ট চাওয়া হয়েছে, তা নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। নিয়োগে এইচএসসি ও এসএসসি কেন গুরুত্ব পাবে? গুরুত্ব পাওয়ার কথা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অর্জিত ফলের। এমন শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বা এ বিশ^বিদ্যালয়ের বাইরের কোনো শিক্ষার্থী যত ভালোই করুক, শিক্ষক হতে পারবে না।’
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তির জন্য কলা অনুষদগুলোতে এসএসসি ও এইচএসসির সম্মিলিত জিপিএ ৭ বা সাড়ে ৭ চাওয়া হয়। এ জিপিএ নিয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম নয়। কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষক নিয়োগে এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ বাড়িয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসন। তবে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তে সরে আসতে হয় তাদের। জিপিএ সর্বনিম্ন ৩ থাকলেই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চাকরির আবেদন করতে পারেন প্রার্থীরা।
একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের কারণেই শিক্ষক নিয়োগে এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ৩-এর বেশি চাইতে পারে না বিশ্ববিদ্যালয়টি।
একই জটিলতায় পড়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও আইনি কার্যক্রম চালাচ্ছেন একাধিক চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থী। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েরও একাধিক শিক্ষার্থী রিট করেছেন উচ্চ আদালতে। চূড়ান্ত শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে গাজী ইব্রাহিম আল মামুনের রিট। আরেক রিটকারী আল-আমিন হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী।
নাম প্রকাশ না করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়য়ের ২০০৪-০৫ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বর্তমানে যে নিয়োগ প্রক্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলছে তাতে শিক্ষার্থীদের অধিকার ক্ষুণœ হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো রেজাল্ট করার পরও এসএসসি ও এইচএসসির রেজাল্ট ভালো না থাকায় আবেদনই করা যাচ্ছে না। বিশ্বের কোথাও প্রিলিমিনারি পর্যায়ের রেজাল্ট বিবেচ্য হয় না। স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের রেজাল্টের পাশাপাশি রিসার্চ ওয়ার্ক প্রাধান্য পেয়ে থাকে। ইউজিসিকে এর সমাধান বের করতে হবে। না হলে আইনের আশ্রয় নেওয়া ছাড়া আমাদের উপায় থাকবে না।’
মরক্কোর পাহাড়ি গ্রাম আদাসেলের একটি স্কুলে পড়ান নাসরিন আবু এলফাদেল। ছোট্ট স্কুলটিতে ৩২ শিক্ষার্থীকে আরবি ও ফরাসি ভাষা শেখাতেন তিনি। গত ৮ সেপ্টেম্বর শক্তিশালী ভূমিকম্পে মরক্কো যখন বিধ্বস্ত হয় সে সময় মারাক্কেশ শহরে ছিলেন তিনি। ভূমিকম্পের পর সবার আগে নিজের শিক্ষার্থীদের কথাই মনে আসে তার। পরের দিনই ছুটে যান আদাসেলে। ধসেপড়া স্কুলভবন দেখেই তার কেমন একটা অনুভূতি হয়। পরে প্রতিটি শিক্ষার্থীর বাড়িতে খোঁজ নেন তিনি। কিন্তু তিনি যা আবিষ্কার করেন তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি জানতে পারেন ভয়াবহ ওই ভূমিকম্পে তার স্কুলের সব শিক্ষার্থীই নিহত হয়েছে।
মরক্কো শত বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প দেখেছে এবার। এতে প্রাণ গেছে প্রায় তিন হাজার মানুষের; আহতও হয়েছে সমসংখ্যক মানুষ। ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মারাক্কেশের দক্ষিণের এলাকাগুলো। ওই এলাকার পাহাড়ি গ্রামগুলো মাটিতে মিশে গেছে; যার মধ্যে আসে আদাসেল গ্রামও।
গতকাল শনিবার বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গ্রামটির অবস্থান ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি। নাসরিন আবু এলফাদেলের স্কুলটি ছিল সেই গ্রামেই। তার স্কুলের শিক্ষার্থীদের বয়স ছিল ৬ থেকে ১২ বছরের মধ্যে।
নাসরিন বলেন, আমি গ্রামে গিয়ে আমার বাচ্চাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে লাগলাম; সুমাইয়া কোথায়, ইউসুফ কোথায়, এই মেয়েটা কোথায়, ওই ছেলেটা কোথায়? কয়েক ঘণ্টা পরে উত্তর এলো : ওরা সবাই মারা গেছে। তিনি বিবিসিকে বলেন, আমার মনে হলো আমি ক্লাসে হাজিরা খাতা নিয়ে ওদের নাম ডাকছি। একজনের পর আরেকজন। এভাবে ৩২ জনের নাম ডাকি। ওরা সবাই এখন মৃত।
কীভাবে তিনি ছয় বছর বয়সী খাদিজার ঘটনা শোনেন, সে বিষয়টি বর্ণনা করেন নাসরিন। তিনি জানান, খাদিজার মরদেহটি তার ভাই মোহাম্মদ ও দুই বোন মেনা এবং হানানের পাশেই পড়েছিল। ভূমিকম্পের সময় তারা সবাই বিছানায় ছিল; সম্ভবত ঘুমিয়ে। তারা চার ভাইবোনই তার স্কুলের শিক্ষার্থী ছিল। তিনি বলেন, খাদিজা আমার অনেক প্রিয় শিক্ষার্থী ছিল। সে খুব সুন্দর, স্মার্ট, সক্রিয় এবং গান গাইতে পছন্দ করত। সে আমার বাড়িতে আসত। ওকে পড়া দেখিয়ে দিতে আমার খুব ভালো লাগত।
নাসরিন বলেন, তার সব ছেলেমেয়েই পড়াশোনার প্রতি বেশ মনোযোগী ছিল। ওদের দারিদ্র্য ও জীবনযাপনে নানা সংকট ছিল। তার পরও পড়াশোনাকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করত। তিনি বলেন, আমাদের শেষ ক্লাস ছিল শুক্রবার, ভূমিকম্পের ঠিক ঘণ্টা-পাঁচেক আগে। আমরা মরক্কোর জাতীয় সংগীত শিখছিলাম। সোমবার সকালে পুরো স্কুলের সামনে এটি গাওয়ার কথা ছিল।
বিবিসি বলছে, ওই ঘটনায় স্কুলশিক্ষিক নাসরিন চরম মানসিক আঘাত পেয়েছেন; ভুগছেন ট্রমায়। তিনি বলেন, আমি ঘুমাতে পারি না। এখনো শোকের মধ্যে আছি। মানুষ আমাকে ভাগ্যবতী মনে করে। তবে আমি জানি না বাকি জীবন আমি কীভাবে বাঁচব।
ভূমিকম্পে সব শেষ হয়ে গেলেও এখনো আশা ছেড়ে দেননি এই ভাষা শিক্ষিকা। দৃঢ়কণ্ঠে জানালেন, চালিয়ে যাবেন শিক্ষকতা। বাকি জীবন ছেলেমেয়েদের পড়িয়েই কাটাতে চান। ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তাদের স্কুলটি আবারও নির্মাণ করা হবে এমনটাই আশা নাসরিনের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলন হতে যাচ্ছে আগামীকাল সোমবার। ইতিমধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এই দুই শীর্ষ পদের জন্য ৯৪ জন পদপ্রত্যাশীর জীবনবৃত্তান্ত জমা নিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তবে তাদের মধ্যে আলোচনায় আছেন ১০-১২ জন, যার অধিকাংশই রাবিতে এরই মধ্যে পাঠ শেষ করেছেন। আবার কিছু নেতা পড়াশোনা থেকে ঝরেপড়া বা ড্রপআউট হয়েছেন। এখন পদ পেতে তাদের কেউ সান্ধ্যকালীন কোর্স আবার কেউবা শর্ট কোর্সে ভর্তি হয়ে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রেখেছেন।
তবে এই পদপ্রত্যাশীদের পদায়ন করলে ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন হবে বলে মনে করছেন বর্তমান নেতারা। তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বলছে, জমা পড়া জীবনবৃত্তান্ত বিশ্লেষণ, পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণ করে নতুন কমিটি গঠন করা হবে।
দীর্ঘ এক যুগ পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই সম্মেলনে ১০-১২ জন ছাত্রনেতা আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছেন বর্তমান কমিটির সহসভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকন ও মেজবাহুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহিনুল ইসলাম সরকার ডন, মেহেদী হাসান মিশু, গণযোগাযোগ ও উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবু, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহমেদ ও উপ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক তাওহীদ দূর্জয়। তবে নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে থাকা এসব নেতার অধিকাংশের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে অনেক আগেই। আবার অনেকে হয়েছেন ড্রপআউট।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সভাপতির পদপ্রত্যাশী সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম লিংকন মার্কেটিং বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ২০১৮ সালে অনার্স এবং ২০২১ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এখন ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে ভর্তি আছেন মার্কেটিং বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্সে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লিংকন বলেন, ‘আমাদের বর্তমান যে কমিটি সেটা ২০১৬ সালের কমিটি। তো সেই ক্ষেত্রে সম্মেলন যারা পায়নি অর্থাৎ অনেকে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েও সম্মেলন দেখেনি। এই সাংগঠনিক জটে অনেকেরই পড়ালেখা শেষ হয়ে গেছে। এখন অনেকে ডিপার্টমেন্টের অন্য কোর্সগুলোতে ভর্তি হয়ে আছে। আমারও পড়ালেখা শেষ হয়ে গেছে।’
আরেক সহসভাপতি মেসবাহুল ইসলাম ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৯ সালে অনার্স এবং পরের বছর মাস্টার্স শেষ করেন। তিনিও সভাপতি পদে প্রার্থী। বর্তমানে ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাংগুয়েজের শর্ট কোর্সে ভর্তি আছেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মেসবাহর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও রিসিভ করেননি।
একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহিনুল ইসলাম সরকার ডন। তিনিও সভাপতি পদ প্রত্যাশা করছেন। ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ডন ফাইন্যান্স বিভাগ থেকে ২০১৬ সালে অনার্স এবং ২০১৮ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। বর্তমানে ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাংগুয়েজের জার্মান ভাষার শর্ট কোর্সে ভর্তি রয়েছেন।
এ বিষয়ে সরকার ডন বলেন, ‘লেখাপড়া শেষ হওয়ার পর প্রথমে ফ্রেন্স ল্যাংগুয়েজে ভর্তি হয়েছিলাম। সেটা শেষ হওয়ার পর জার্মান ভাষা শিক্ষা কোর্সে ভর্তি হয়েছিলাম। এটার পরীক্ষা শেষ হয়েছে। কিন্তু আমি পরীক্ষা দিইনি। আমার লেখাপড়া শেষ হলেও এখানে একটা বয়সের বিষয় আছে। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমার বয়স এখনো এক মাস আছে। আর আমি তো ড্রপআউট না বা ইন্টার পাস না। বিবিএ এবং এমবিএ শেষ করেছি নিয়মিতভাবে। আমার ছাত্রত্ব এখনো আছে।’
সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় আছেন গণযোগাযোগ ও উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবু। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের এই শিক্ষার্থী ২০১৮ সালে অনার্স এবং পরের বছর মাস্টার্স শেষ করেছেন। তবে ছাত্রত্ব ধরে রাখতে ইনস্টিটিউট অব ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাংগুয়েজের শর্ট কোর্সে ভর্তি আছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তো অছাত্র না, আমি আদার ল্যাংগুয়েজ কোর্সে ভর্তি আছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে এখানে যারা অনার্স শেষ করেন তারা যেকোনো কোর্সে ভর্তি হতে পারেন। আমি তো বলিনি আমি অছাত্র। এখানে যারা গবেষণা করেন, পিএইচডি করেন তারাও শিক্ষার্থী।’
তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে দীর্ঘদিন রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। যদিও বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বাবু। তিনি বলেন, ‘এটাতে তোমাদের জানার ভুল আছে। করোনার মধ্যে কে ক্যাম্পাসে ছিল?’
ড্রপআউট দুই নেতা : সাধারণ সম্পাদক পদের দৌড়ে বেশ এগিয়ে থাকা বর্তমান কমিটির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লা হিল গালিব। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তবে ড্রপআউট হয়ে ছাত্রত্ব হারিয়েছেন। এরপর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি আছেন বলে তিনি একাধিক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। অভিযোগ আছে ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে তিনি সান্ধ্য কোর্সে ভর্তি হয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে গালিব বলেন, ‘আপাতত কিছু বলতে চাচ্ছি না। তবে বর্তমানে আমি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি আছি।’
ড্রপআউট হয়ে ছাত্রত্ব হারিয়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, হলের সিট-বাণিজ্য ও দোকান ভাঙচুরের অভিযোগ রয়েছে। ২০১৯ সালে এক শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে ভয়ভীতি দেখিয়ে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনে নাফিউল ইসলাম জীবন নামে এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে। বক্তব্য জানতে তার মোবাইল ফোনে কল করা হলেও রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে রাবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘অছাত্ররা কিংবা ড্রপআউটের বিষয়টি সংগঠনের গঠনতন্ত্রের সম্পূর্ণ বিরোধী। পদ পেতে অবশ্যই নিয়মিত শিক্ষার্থী হতে হবে। গঠনতন্ত্রের যে নিয়মনীতিগুলো আছে সেগুলো পূর্ণ না করে কেউ যদি প্রার্থী হতে চান সেটা তার বিষয়। তবে প্রার্থী নির্বাচন করবেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদক এবং আলোচনা সাপেক্ষে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সাহেব। তাদের প্রতি আমাদের এতটুকু বিশ্বাস আছে যে তারা এমন নেতৃত্ব নির্বাচন করবে, যাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি করার পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে। আগামী দিনের প্রতিকূল সময়ে কীভাবে সংগঠনকে গতিশীল করা যায়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের যে ঐতিহ্য সেটাকে বজায় রাখবে তাদেরই তারা নেতৃত্বে নিয়ে আসবেন।’
সার্বিক বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ‘আমাদের কাছে জমা পড়া জীবনবৃত্তান্ত বিশ্লেষণ, পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণ করে আমরা কমিটি গঠন করব। সুন্দর, সৃজনশীল, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে স্মার্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার লক্ষ্যে যে শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখতে পারবেন, তারাই নির্বাচিত হবেন।’
কোনো শর্ট কোর্সে ভর্তি বা ড্রপআউট শিক্ষার্থীরা নেতৃত্বে আসবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জীবনবৃত্তান্ত বিচার-বিশ্লেষণ করেই কমিটি করা হবে। কমিটি হওয়ার পর যদি কোনো অসংগতি পান তখন আপনি আপনার সংবাদপত্রের মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরবেন।’
খুলনায় ১১৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ১৮২টি বিদ্যালয়ের ভবন। ফলে ওইসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই অথবা অস্থায়ী চালা টিনের ঘরে পাঠদান চলছে। এমন পরিস্থিতিতে সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে দুর্ঘটনার শঙ্কায় অভিভাবকরা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় ভবনগুলোর এমন হাল হয়েছে। মেরামত ও নতুন ভবণ নির্মাণে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মহানগরীসহ জেলার ৯ উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১১৫৯টি। এরমধ্যে ১৮২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও অস্থায়ী চালাঘরে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনগুলোর মধ্যে রয়েছে সদরে ১২, কয়রায় ২৬, ডুমুরিয়ায় ২১, তেরখাদায় ১৯, দাকোপে ১৫, দিঘলিয়ায় ১৩, পাইকগাছায় ৩৭, বটিয়াঘাটায় ১৫ ও রূপসা উপজেলায় ২৪টি।
ডুমুরিয়ার ১৬২ নম্বর গজালিয়া অগ্নিবীণা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেবদাস দেশ রূপান্তরকে বলেন, ৭-৮ বছর আগে থেকে ওই বিদ্যালয়ের ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এরপর ২০১৯ সালে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু পরিত্যক্ত ওই ভবন অপসারণ করা হয়নি। সে কারণে বিদ্যালয় ভবনের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান হয় না। পাশে তৈরি করা চালাঘরে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে।
একই উপজেলার খর্ণিয়া ইউনিয়নের টিপনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মৃদুলা দেবনাথ জানান, চার-পাঁচ বছর আগে বিদ্যালয় ভবনটিতে অসংখ্য ফাটল দেখা দেয়। বর্তমানে একদম জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের নিচতলা। সে কারণে আপাতত টিনশেড ঘর তৈরি করে সেখানে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে। তবে শ্রেণিকক্ষ সংকট থাকায় ভবনের ওপরের তলায় ক্লাস নেওয়া হয়।
আসমা বেগম ও লাইলি বেগমসহ বেশ কয়েকজন অভিভাবক জানান, ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে খুব আতঙ্কে থাকেন তারা। প্রায়ই বিদ্যালয় ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে। অনেক সময় ছেলে-মেয়েদের গায়ের ওপরও পড়ে। যে কোনো সময়ই ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। তাই ভবনগুলো দ্রুতই ভেঙে নতুন করে নির্মাণের দাবি জানান তারা।
বটিয়াঘাটা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জিএম আলমগীর কবির বলেন, তার উপজেলায় ১৫টি বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। এরমধ্যে খুব বেহাল অবস্থা বুজবুনিয়াসহ তিন-চারটি ভবন। সেখানে টিনশেড ঘর তৈরি করে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষা কমিটির সভার আলোচনার ভিত্তিতে মন্ত্রণালয়ে তালিকা পাঠানো হয়েছে।
পাইকগাছা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যুৎ রঞ্জন সাহা বলেন, জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর মধ্যে যেখানে যেখানে সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষক লিখিতভাবে জানিয়েছেন সেসব বিদ্যালয় ভবনে পাঠদানের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়া মন্ত্রণালয়েও বিষয়টি জানানো হয়েছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, তার উপজেলায় ২০টির মতো ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে পাঠদান সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয়েছে। তবে যেগুলো চালানোর মতো সেগুলোতে এখনো ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।
তেরখাদা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, তেরখাদা উপজেলায় ১৯টি বিদ্যালয় ভবনেই পাঠদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দোচালা টিনশেড ঘর তৈরি করে সেখানে পাঠদান করানো হচ্ছে।
খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম বলেন, জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। নতুন করে ভবন নির্মাণ ও সংস্কার করা হবে।
ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতু পার হয়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পাথরবোঝাই করে গতি পরীক্ষা করেছে মালবাহী ট্রায়াল স্পেশাল ট্রেন। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ভাঙ্গা থেকে মাওয়ার উদ্দেশ্যে ট্রেনটি ছেড়ে যায়। মাওয়া থেকে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফের ভাঙ্গার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। এই প্রথম পদ্মা সেতু পার হয়ে মালবাহী ট্রেনের গতির পরীক্ষা হলো।
ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ভাঙ্গা থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরের মাওয়া রেলওয়ে স্টেশনের উদ্দেশ্যে মালবাহী ট্রায়াল ট্রেনটি রওনা হয়। ট্রেনটি পদ্মা সেতু পার হয়ে মাওয়া স্টেশনে গিয়ে থামে। মালবাহী ট্রায়াল স্পেশাল ট্রেনটি সকাল ৯টা ৬ মিনিটে মাওয়া স্টেশনে পৌঁছায়। যাত্রাপথে ট্রেনটির গতি ছিল ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। এরপর মাওয়া থেকে ভাঙ্গার উদ্দেশ্যে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রওনা হয়ে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভাঙ্গায় আসে।
ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. শাহজাহান বলেন, ‘সকাল থেকে যাওয়া-আসা মিলিয়ে দুইবার পদ্মা সেতু পার হয়ে পাথর ভর্তি মালবাহী ট্রেনের গতি পরীক্ষা করা হয়। সাতটি বগির মাধ্যমে এই মালবাহী ট্রায়াল ট্রেনটি ভাঙ্গা স্টেশনেই ছিল। এর আগে এই ট্রেনটি করেই পদ্মা সেতুর রেল প্রকল্পের পাথর আনা নেওয়া করা হতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘সব ঠিক থাকলে আগামী ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা-ভাঙ্গা রেল চলাচলের উদ্বোধন করবেন। এরপর দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই রেলপথ বাণিজ্যিকভাবে চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।’
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার সাঈদ আহমেদ বলেন, ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে রেল চলাচলের চূড়ান্ত প্রস্তুতি হিসেবে এই পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল করছে।’
গত ৭ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা রেলপথে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল করে।
তামিম ইকবাল দলে না থাকাতে যেন অনেকেরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে! আবার বিশ্বকাপের দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অন্তর্ভুক্তিতেও অনেকের চোখ কপালে! দল ঘোষণার পর যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা এলেন সংবাদ সম্মেলনে, তখন আলোচনায় শুধু ছিলেন এই দুজনেই। তাদের এই বিরহ বেদনায় চাপা পড়ে যায় অনেক প্রশ্ন। লিটন দাসকে বাদ দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত কেন সহ-অধিনায়ক! বাড়তি কোনো ওপেনার ছাড়া কিংবা পাঁচ পেসারকে নিয়ে কেন দল গড়া?
প্রায় মিনিট পনেরোর সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে এসেছে একই প্রশ্ন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও ঘুরেফিরে বন্দী ছিলেন একই কথার বৃত্তে। প্রশ্নোত্তর শেষে বেরিয়ে যান তিন নির্বাচক। যেতে যেতে কথা হয় তাদেরই একজন হাবিবুল বাশারের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল চাপা পড়া সেইসব প্রশ্নের উত্তর।
শুরুতেই জানতে চাওয়া হয় লিটনকে বাদ দিয়ে শান্তকে কেন সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ একটা কারণ। আর লিটনের অনাগ্রহও তাকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর একটি কারণ। লিটন নিজেও চায় না নেতৃত্বের চাপ নিতে। সে একটু ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগ দিতে চায়।’
বিশ্বকাপ দলে বিকল্প ওপেনার না থাকার কারণও জানা গেল এই নির্বাচকের কথায়। তিনি জানালেন, ‘আমরা ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে মিরাজকে ভাবছি।’
বিকল্প ওপেনার হিসেবে বিশেষজ্ঞ কাউকে না নেওয়ায় একজন বাড়তি বোলার দলে রাখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে শেখ মেহেদি হাসান সুযোগ পেয়েছেন সে কারণে। পাশাপাশি জায়গা হয়েছে পাঁচ পেসারেরও। এর পেছনে বাশার ভারতের কন্ডিশনের কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারতে এখন আর্লি সিজন। উইকেট সতেজ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই পাঁচজন পেসার দরকার হবে।’
যেতে যেতে আরও বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক মুখোমুখি হলেন, এই দলটা বিশ্বকাপে কেমন করবে? এই প্রশ্নটা শুনেই ঘুরে দাঁড়ালেন হাবিবুল। উত্তরে মজা করে বললেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হবে এই দল।’ এরপর একটু গাম্ভীর্য ফিরিয়ে এনে যোগ করলেন, ‘আমি এদের অনেক দিন ধরে দেখছি। ওরা কয়টা ম্যাচ জিতবে জানি না। তবে বিশ্বকাপে প্রতিটি দলকে ভোগাবে, এটা জানি।’
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনে রদবদলের সুযোগ নেই সরকারের। তাই এর আগেই নির্বাচনী প্রশাসনে ধাপে ধাপে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রশাসনে চলছে পদোন্নতি ও রদবদল। ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রশাসন সাজাতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে বদলি-পদায়ন হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে বড় পদোন্নতি হয়েছে। নির্বাচনের আগে অবসরে যাওয়া কয়েকজন সচিবেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২০ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৮ জন ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিসিএসের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৫ সালে, ২৫তম ব্যাচ ২০০৬ সালে এবং ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৮ সালে।
জানা যায়, নির্বাচনের সময় ডিসিরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকেন। তাদের যে কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে বাতিলের ক্ষমতাও থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও থাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা ডিসির অধীনে। নির্বাচনের সময় সমন্বয়কারীর ভূমিকায়ও থাকেন ডিসিরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন তাদের দুটি ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে। আর সে সময় বিসিএস নিয়ে বেশ বিতর্ক ছিল। বিসিএসে ছিল নানা ধরনের তদবির। ২৪ ও ২৫তম ব্যাচ দুটি বিএনপির সময়ে নিয়োগ পেলেও ২৭তম ব্যাচ নিয়োগ পেয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। কারণ বিএনপির শেষ সময়ে ২৭তম ব্যাচের নিয়োগে বড় ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকায় তা বাতিল হয়। পরে ফের পরীক্ষা নিয়ে ২০০৮ সালে এ ব্যাচের নিয়োগ দেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল ২৪তম ব্যাচের নিয়োগ নিয়ে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২৪তম ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডিসির পদ থেকে তুলে আনা হতে পারে। নির্বাচনের সময় যারা ডিসির দায়িত্বে থাকবেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তাদের সবার ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে পরিবার ও নিকট আত্মীয়স্বজনদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো যাচাই করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে আর ডিসির পদে রাখা হবে না।
এ ছাড়া নির্বাচনে অন্যতম ভূমিকা পালন করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। বর্তমানে ৩৩, ৩৪ ও ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা রয়েছেন ইউএনও পদে, যারা আসন্ন নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এখন ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ইউএনওর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে; এ ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারের ২৯১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
জানতে চাইলে সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ইকরাম আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষা হয় যোগ্যতা, মেধা ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে। সেখানে ছাত্রজীবনে কে কোন পার্টি করেছিলেন, কোন দল ক্ষমতায় আছে তা বিবেচনা করা হয় না। বিসিএস কর্মকর্তাদের যে ফাউন্ডেশন ট্রেনিং হয়, তাতে তাকে একজন অফিসার হিসেবেই গড়ে তোলা হয়। এরপর এসিআর, সুপিরিয়রের মতামত, সুনাম, দক্ষতা, যোগ্যতার ভিত্তিতেই একজন কর্মকর্তাকে উচ্চতর পদে দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তবে সরকার যে দল পরিচালনা করে তাদের কিছু নীতিমালা ও উদ্দেশ্য থাকে। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সরকারের নেওয়া বৈধ ও জনকল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা। তিনি প্রলুব্ধ হবেন না, নিরপেক্ষ থেকে তার দায়িত্ব পালন করবেন। যদি কোনো নির্বাচনী দায়িত্বও দেওয়া হয়, সেটাও নিরপেক্ষভাবে তিনি পালন করবেন।’
গত মে মাসে অতিরিক্ত সচিব পদে ১১৪ জনের পদোন্নতি হয়। জুলাই মাসে পাঁচ বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার দেওয়া হয়েছে। গত জুলাই মাসেই বদলি ও নতুন মিলিয়ে ৩০টি জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উপসচিব পদমর্যাদার এই ডিসি পদে এবারও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আটজন পিএসকে পদায়ন দেওয়া হয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ২২১ কর্মকর্তা। এ পদোন্নতিতে মূল বিবেচনায় এসেছে ২২তম ব্যাচ। বর্তমানে যুগ্ম সচিবের স্থায়ী পদ ৫০২টি। এর বিপরীতে পদোন্নতি পাওয়ার পর যুগ্ম সচিবের সংখ্যা হলো ৯৪৬ জন। এর আগে সর্বশেষ গত বছর ২ নভেম্বর ১৭৫ জন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। আর গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২৭০ জন সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই অন্তত ১০ জন সচিবের স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার কথা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন আগামী ১৩ অক্টোবর অবসরে যেতে পারেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান ১৪ সেপ্টেম্বর, সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আবদুস সালামের ২৬ সেপ্টেম্বর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে আবদুস সালামের চাকরি এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ৯ অক্টোবর, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক ৩০ অক্টোবর, ইআরডি সচিব শরিফা খান ২৪ নভেম্বর, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহসানে এলাহী ২৫ নভেম্বর এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সিনিয়র সচিব কামাল হোসেন ২৯ নভেম্বর অবসরে যাবেন। ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোছাম্মৎ নাসিমা বেগম এবং ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম। এ ১০ জনের মধ্যে কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন।
গত কয়েক বছরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মুখ্য সচিব পদে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই স্বাভাবিক অবসরের মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। সর্বশেষ সাবেক চার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মধ্যে একমাত্র কবির বিন আনোয়ার ছাড়া বাকি তিনজনই স্বাভাবিক মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। তারা হলেন মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, মোহাম্মদ শফিউল আলম ও খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।