
প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করে ঘুষের বিনিময়ে শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ দেওয়াসহ নানা অনিয়ম তদন্তে কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। আগামী ২০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়ে গতকাল রবিবার ওই কমিটি গঠন করে অফিস আদেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং জ্বালানি বিভাগের চিঠির পাশাপাশি কিছু অভিযোগের সূত্র ধরে ‘তিতাস এমডির ঘুষ বাণিজ্য!’ শিরোনামে গতকাল রবিবার দেশ রূপান্তর পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
পেট্রোবাংলার পরিচালক (প্রশাসন) মো. আলতাফ হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটিতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের একজন প্রতিনিধি, পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক (ইএসডি) ডিএম জোবায়েদ হোসেন, মহাব্যবস্থাপক (নিরীক্ষা) শামীম হাসান সদস্য হিসেবে রয়েছেন। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার উপমহাব্যবস্থাপক (এইচআর) মো. শহিদুল ইসলাম বিন হেলালকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কমিটির একজন সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিকেলে চিঠি পেয়েছি। অন্য সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত কাজ শুরু করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রতিবেদন দিতে পারব বলে আশা করছি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নাম ব্যবহার করে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হারুনুর রশিদ মোল্লাহ ঘুষের বিনিময়ে শিল্পে গ্যাস সংযোগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিষয়টি নজরে আসার পর গত ২৯ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জ্বালানি বিভাগে চিঠি দিয়ে পরীক্ষা করে বিধি অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের চিঠি পেয়ে বিষয়টি এক মাসের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য গত ১২ সেপ্টেম্বর পেট্রোবাংলাকে নির্দেশ দিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
ঘুষের বিনিময়ে কারখানায় গ্যাস সংযোগ দেওয়া ছাড়াও আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগে অনিয়ম, উৎকোচ নিয়ে ঘুষের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জরিমানা মওকুফ, বিল বকেয়া থাকা সত্ত্বেও সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করা, সরকারি গাড়ির যথেচ্ছ ব্যবহার করাসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে তিতাস এমডির বিরুদ্ধে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে তিতাসের এমডির মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। পরে বিষয়বস্তু লিখে তাকে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তার সাড়া মেলেনি।
২০২১ সালে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান হারুনুর রশিদ। পরে দ্বিতীয় দফায় আরও এক বছরের জন্য নিয়োগ পান তিনি। সম্প্রতি আবারও তার মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
গ্যাস সংকটের কারণে ২০১০ সাল থেকে দেশে আবাসিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে নানারকম যাচাই-বাছাই ও বিবেচনা করে সীমিত পরিসরে শিল্পে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। শিল্পে গ্যাস সংযোগের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কয়েকশ আবেদন জমা রয়েছে।
আলু, ডিম ও পেঁয়াজের দাম গত বৃহস্পতিবার সরকার নির্ধারণ করে দেয়। এতে খুচরা বিক্রেতাদের অনেকেই এসব পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে বাজারে পণ্যের সংকট তৈরি হয়েছে। আবার যেসব দোকানে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে, সেখানেও মানা হচ্ছে না সরকারি দাম।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্ত গোঁজামিল ছাড়া কিছুই না। সরকার যে নিয়ম করেছে তা কেবল খুচরা ব্যবসায়ীদের জন্য। বড় পাইকার ও আড়ত মালিকরা সব সময় আড়ালে থেকে যান। তাদের ক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন নেই। ফলে তারা এখনো সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছেন। এ জন্য খুচরা ব্যবসায়ীরা অনেকেই নতুন করে আলু তুলছেন না। এতে এক সপ্তাহের মধ্যে বাজারে আলু ও পেঁয়াজের সংকট তৈরির আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, নির্ধারিত দামের চেয়ে ১০-১৫ টাকা বেশিতে প্রতি দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজ ৭০ টাকার নিচে মিলছে না। বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রির বিষয়ে জানতে কারওয়ান বাজারের কুতুবপুর বাণিজ্যালয়ের ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে তার থেকে ২৫ টাকা বেশি দাম দিয়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। অন্যান্য খরচ মিলিয়ে কেজি দাঁড়ায় ৭৯-৮০ টাকা। এক বস্তায় অন্তত ২-৩ কেজি পেঁয়াজ পচা থাকে। সব মিলিয়ে সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেই দামে পেঁয়াজ বিক্রি করা একেবারেই অসম্ভব। এ ছাড়া, ভোক্তার অধিদপ্তর অভিযানে এলেই জরিমানা করে থাকে। তাদের অভিযানের ভয়ে অনেক ব্যবসায়ী পেঁয়াজ তোলা বন্ধ রেখেছেন।’
আলুর বাজারে গিয়ে একই পরিস্থিতি দেখা গেছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অন্তত ১৫ টাকা বেশি দামে আলু বিক্রি হচ্ছে। অপরিবর্তিত দামে পাইকারি বাজারে ৪০-৪২ টাকায় প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে যা ৫০ টাকার নিচে বিক্রি করছেন না ব্যবসায়ীরা।
জানতে চাইলে বিক্রমপুর ভান্ডারের আলুর বিক্রেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত দামে আলু কিনতে না পারায় নতুন করে আলু তোলা বন্ধ রেখেছি। যেখানে প্রতিদিন অন্তত ৩০০ থেকে ৫০০ বস্তা আলুর চাহিদা, সেখানে আমার কাছে মাত্র ৪০-৫০ বস্তা আলু রয়েছে। অবশিষ্ট আলু বিক্রির পরে যত দিন কম দামের আলু কিনতে পারছি না, তত দিন আলু বিক্রি বন্ধ রাখব। বাজারে অন্তত ৫০ জন আলু ব্যবসায়ী রয়েছে। প্রায় সবাই একই পথে হাঁটছেন।’
ডিমের বাজার ঘুরে দেখা যায়, সরকার নির্ধারিত দামে কোনো ব্যবসায়ীকে ডিম বিক্রি করতে দেখা যায়নি। উল্টো গত তিন দিনের ব্যবধানে প্রতি পিস ডিমে ১ টাকা ৩৩ পয়সা বেড়ে প্রতি ডজন খুচরায় ১৬০ ও পাইকারি ১৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। জানতে চাইলে তেজগাঁও এলাকার ডিম ব্যবসায়ী তোফায়েল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাজারে ডিমের সংকট নেই। তবে নতুন করে আরও এক দফা ডিমের দাম বেড়েছে। তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতি ১০০ ডিম বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১ হাজার ১৭০ টাকায়। অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ১ হাজার ২৫০ টাকা পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে একটি ডিম ১২ টাকা বিক্রি করলে দেড় টাকার মতো লস হবে। ফলে বাড়তি দামে ডিম কিনে সরকারের সিদ্ধান্তে কোনোভাবেই ডিম বিক্রি সম্ভব নয়।’
বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পণ্যবাজার নিয়ন্ত্রণে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাতে সংকট আরও বাড়বে। ব্যবসায়ীরা যদি কম দামে পণ্য কিনতে না পারেন, তাহলে তারা তো কম দামে বিক্রি করবেন না। এখন দাম নির্ধারণ করে দেওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দেবেন। এতে সংকট আরও বাড়বে। বিষয়টি এমন নয় যে কারা কারসাজির সঙ্গে জড়িত তা সরকার জানে না। পণ্যবাজারে অস্থিরতা সৃষ্টিকারীদের ধরতে আমাদের সমস্যা কোথায়?’
কুড়িগ্রামে আলুর আড়ত ও হিমাগারে অভিযান, জরিমানা : কুড়িগ্রামে বেশি দামে বিক্রির অভিযোগে এক আলুর আড়তের মালিককে চার হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি আলুর হিমাগারে অভিযান চালায় কুড়িগ্রাম জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
গতকাল রবিবার দুপুরের দিকে পৌর শহরের জিয়া বাজারে অভিযান চালানো হয় বলে জেলা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান। তিনি বলেন, বেশি দামে আলু বিক্রি করার অপরাধে ব্যবসায়ী তাজুল ইসলামকে চার হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া এক আলু ব্যবসায়ী ও আড়তদার মকবুল হোসেনকে সতর্ক করে তাকে মোস্তফা কোল্ড স্টোরেজে নিয়ে যাওয়া হয়।
রাজশাহীর চারঘাট থানার ওসি মাহবুবুল আলমকে থানাটির দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে নির্বিঘ্নে মাদক কারবারের সুযোগ দেওয়ার বিনিময়ে গৃহবধূর কাছে সাত লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ ওঠার পর এমন সিদ্ধান্ত নেয় জেলা পুলিশ। গত শনিবার রাতে মাহবুবুল আলমকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
তিনি জেলার পুলিশ সুপারের (এসপি) নাম ভাঙিয়ে ঘুষ দাবি করেছিলেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী গৃহবধূর। ওই নারী চারঘাট থানার একটি মাদক মামলায় কারাবন্দি এক আসামির স্ত্রী। সাত লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে তার সঙ্গে ওসি মাহবুবুল আলমের কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ওই অডিও ক্লিপে অর্থ দাবির পাশাপাশি মাদক কারবারের পরামর্শ এবং নির্বিঘেœ মাদক কারবারের জন্য রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এক ওসিকে বদলি করতে দুই লাখ টাকা দাবি করতে শোনা যায় মাহবুবুল আলমকে। তিনি বলেন, ‘এক মন্ত্রী ছাড়া কারও কথা শুনতে আমি এখানে আসিনি। তিনি আমাকে গাইবান্ধা থেকে এখানে নিয়ে এসেছেন।’
মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে রাজশাহীর পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই নারী। এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী গৃহবধূর নাম সাহারা বেগম। তিনি চারঘাট থানার চামটা গ্রামের আব্দুল আলিম কালুর স্ত্রী। কালু মাদক মামলায় কারাগারে আছেন। লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী নারী জানান, ১৩ সেপ্টেম্বর ছেলে রাব্বিসহ তাকে চারঘাট থানার ওসি মাহবুবুল আলম নিজের কক্ষে ডেকে নেন। এরপর তাদের কাছ থেকে ওসি মোবাইল ফোন নিয়ে নেন এবং তাদের কাছে অর্থ দাবি করেন।
ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপে মাহবুবুল আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘মন্ত্রী আমাকে গাইবান্ধা থেকে এখানে নিয়ে এসেছেন। আমি তার কথা ছাড়া কারও কথা শুনি না।’ চারঘাট এলাকায় গিয়ে মাদক কারবারিদের ধরে মামলা দেওয়ার কারণে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসির সমালোচনা করেন তিনি। এরপর বলেন, ‘দুই লাখ টাকা দেন, কালকেই ডিবির ওসিকে বদলি করে দেব।’
সাহারা বেগমকে মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আপনার স্বামী আমার অনেক ক্ষতি করে গেছে (ওসির বিরুদ্ধে এসপি অফিসে অভিযোগ করেছিলেন)। এবার আপনার পরিবারের কাউকে ধরলে ১০ লাখ টাকার কমে ছাড়াতে পারব না।’
এরপর ওসি বলেন, ‘এখনো তোমার গায়ে আঁচড় দিইনি। বহুত ফাঁকি দিয়েছ। কালকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে আসবা। এখন সে রকম সময় নয় যে কেউ পয়সা খায় না। সবাই পয়সা খাচ্ছে। এমন কেউ বাদ নেই যে পয়সা খাচ্ছে না। পুরো জেলা পয়সা খাচ্ছে। এখানে আমার থানা চালাতে মাসিক অনেক টাকা লাগছে। আমি স্যারকে (এসপি) কথা দিয়ে এসেছি। স্যারকে বলেছি, এখানে মাদক ছাড়া কিছু নেই। মুক্তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে পারবে না, শুভর বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে পারবে না। তোমরা পাঁচ লাখ টাকা দিতে পারবা? ধরে ওদের চালান দিয়ে দেব। থাকি না থাকি ওদের সাইজ করব। তোমরা বাইরে থেকে ব্যবসা (মাদক কারবার) করবে।’
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আতিকুর রেজা সরকার আতিকের সমালোচনা করে মাহবুবুল আলম বলেন, ‘যদি আতিকের বদলি চাও, দুই লাখ টাকা দাও। কালকেই আতিকের বদলি হয়ে যাবে।’
তাকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘পাঁচ লাখ আর দুই লাখ সাত লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করো। আমার সব ওপরের লাইন। যে টাকা দিবা, এই টাকাই ওপরে কাজ করবে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলম বলেন, ‘অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরই আমরা এ নিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটি ওসির কণ্ঠ। এগুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। একটি লিখিত অভিযোগও পেয়েছি। ওসিকে পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনা সত্যি হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দেশে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পের সবচেয়ে বড় উৎপত্তিস্থল হচ্ছে সিলেট। এর অন্যতম কারণ সিলেটের সীমান্তসংলগ্ন অঞ্চলে টেকটোনিক প্লেট থাকার কারণে সেখানে একাধিক চ্যুতি রয়েছে। এর মধ্যে ডাউকি চ্যুতি খুব বড়। এই চ্যুতি বাংলাদেশের দিকে চলে এসেছে। অন্যদিকে শাহবাজপুর চ্যুতিও কাছাকাছি। এটিও ভূমিকম্পের একটি বড় উৎপত্তিস্থল। এগুলোতে যদি বড় ভূমিকম্প হয় তাহলে সিলেট অঞ্চলে বড় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
তবে সম্প্রতি ঢাকার আশপাশে ঘন ঘন ভূমিকম্প হচ্ছে। সর্বশেষ গতকাল রবিবার যে ভূমিকম্পনে ঢাকা কাঁপল, এর উৎপত্তিস্থল ছিল ৫৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলে। রিখটার স্কেলে এই কম্পনের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ২। চলতি বছর ঢাকার কাছাকাছি তিনটি ভূকম্পন হয়েছে। বিষয়টিকে সতর্ক বার্তা হিসেবে ধরে নিয়ে আগামী দিনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করা উচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে গতকালের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ইউএসজিএস, ব্রেকলি বিশ^বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি সংস্থা বলছে, ঢাকায় অনুভূত ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী। তবে বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, উৎপত্তিস্থল টাঙ্গাইলে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প গবেষণাগারের কর্মকর্তা রোবায়েত কবীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সংস্থার আমাদের দেশে কোনো সেন্সর নেই। কিন্তু আমাদের ১৩টি সেন্সর রয়েছে। আমরা আমাদের প্রাপ্ত তথ্য বিচার বিশ্লেষণ করেই উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করেছি। কিন্তু বিদেশি সংস্থাগুলো যে তথ্য দিয়েছে, সেটা আমরা দেওয়ার চার ঘণ্টা পর দিয়েছে। তারা যে লোকেশন দিয়েছেন এটা সঠিক নয়।’
এর আগেও চলতি বছর রাজধানীর পাশে দোহারে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ইউএসজিএসকে অনুসরণ করে উৎপত্তিস্থল ঢাকার দোহার বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, উৎপত্তিস্থল ছিল রূপগঞ্জ।
এদিকে গত ২০ বছরে ঢাকার কাছাকাছি নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা অঞ্চলে বেশ কয়েকটি ভূমিকম্প হয়েছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল অঞ্চলেও একাধিক ছোট ছোট ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে।
ভূমিকম্পের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকায় ২০০১ সালের ১৯ ডিসেম্বর ৪ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল আগারগাঁও থেকে ৯ কিলোমিটারের মধ্যে। সেই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ১০ কিলোমিটার গভীরে। ২০০৮ সালের ২৬ জুলাই ময়মনসিংয়ে ৪ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পটি ছিল ১৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার গভীরে। ২০১০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে উৎপত্তি হওয়া ৪ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পটি ছিল ১৬ কিলোমিটার গভীরে। ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরে ৪ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পটির উৎপত্তি ছিল আগারগাঁও থেকে ৩৭ কিলোমিটার দূরে, ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আগারগাঁও থেকে ৭১ কিলোমিটার দূরের টাঙ্গাইলে উৎপত্তি হয়েছিল ৩ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প।
এ ছাড়া চলতি বছর ঢাকার আশপাশে আরও দুটো ভূমিকম্প হয়। যার একটি গত ২৫ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে উৎপত্তি হয়। রিখটার স্কেলে এটি ছিল ৪ মাত্রার। অন্যটি গত ৫ মে ঢাকা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে দোহারের কাছে উৎপত্তি হয়। রিখটার স্কেলে এটি ছিল ৪ দশমিক ৩ মাত্রার।
রোবায়েত কবীর বলেন, ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান এবং মিয়ানমার এই তিনটি গতিশীল প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। আমাদের এ অঞ্চলটি ভূমিকম্প অ্যাকটিভ এরিয়া। আমাদের হিমালয় পর্বত থেকে শুরু করে আসাম হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের যে অঞ্চলজুড়ে ফল্ট আছে, এটাকে আসাম ফল্ট বা আসাম চ্যুতি বলে। এটি টাঙ্গাইল পর্যন্ত বিস্তৃত। ভূমিকম্প হওয়ার আগে যেসব উপাদান ও অ্যাকটিভিটি প্রয়োজন তার সবকিছুই বিদ্যমান। ফলে আমাদের এই অঞ্চলে প্রায়ই ভূমিকম্প ঘটে থাকে। হয়তো এগুলো অনেক বড় ফল্ট নয়। ফলে ছোট মাত্রার ভূমিকম্প হয়।
তিনি বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শহরীকরণ এসব কারণেও কিন্তু ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তন হচ্ছে। পরিবেশের এই যে পরিবর্তন, সেটাও কিন্তু ভূমিকম্প হওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব রাখছে। তাই আমাদের সব ক্ষেত্রে ভূমিকম্পের বিষয়টি মাথায় রেখে পরিকল্পনা করা উচিত। না হলে বড় ধরনের বিপর্যয় হতে পারে।
বাংলাদেশে প্রবাসীদের বিনিয়োগের জন্য যে তিনটি বন্ড রয়েছে, তাতে বিনিয়োগসীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। বর্তমানে দেশের যে ডলার সংকট রয়েছে, তা দূর করতে প্রবাসী বন্ডে বিনিয়োগসীমা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন প্রবাসীরা। একই সঙ্গে এসব বন্ডের সুদহার বাড়ানোর পাশাপাশি বিডার মাধ্যমে প্রবাসীদের বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিত করে সব ধরনের হেনস্তা থেকে মুক্তি দেওয়ার দাবিও তুলেছেন তারা।
গতকাল রবিবার এনআরবি সিআইপি অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত তৃতীয় গ্লোবাল বিজনেস সামিটে এসব দাবি জানান প্রবাসীরা। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। এনআরবি সিআইপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহতাবুর রহমানের সভাপতিত্বে দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ড. মো. এনামুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ নাসের, রূপায়ণ গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান ও দৈনিক দেশ রূপান্তরের প্রকাশক মাহির আলী খাঁন রাতুলসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছেন, প্রবাসীরা আগে যত ইচ্ছা বন্ড কিনতে পারতেন। পরবর্তীকালে সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় সরকার নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল। এখন সুদের হার কম, প্রবাসী বন্ড ক্যাপিং করে রাখার কোনো মানে হয় না।
তিনি বলেন, বন্ড মার্কেট কীসের জন্য। কেউ যাতে বিনিয়োগ করে একটু লাভ করতে পারে। এখানে সুদহার নির্দিষ্ট করে রাখার মানে হয় না। প্রবাসীদের ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হয়। আগে থেকেই বলে এসেছি এটি অপ্রতুল। বিদেশিরা যখন ফেরত আসবে, তাদের সব সুবিধা যাতে দেওয়া হয়।
আত্মমর্যাদার কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্যি, প্রবাসীদের মর্যাদা সেভাবে দেওয়া হয় না। ডলার এনে ব্ল্যাক মার্কেটে বিক্রি না করলে সরকার লাভবান হবে। সঠিক চ্যানেলে ডলার আনুন, দেশের জন্য অন্তত এ ত্যাগটুকু করেন।
তিনি মনে করেন, প্রবাসীদের কর দেওয়ার বিষয়টি আরও ক্লিয়ার কাট হতে হবে। ইতিমধ্যে প্রবাসীদের জন্য পলিসি ড্রাফট করেছি, সবাইকে বলব সেটি স্টাডি করে মতামত দিন। প্রবাসীরা সামাজিক মর্যাদা পান না, এটা দুঃখজনক। কিন্তু এটার দায়িত্ব আমার একার নয়, সিভিল অ্যাভিয়েশনও এগিয়ে আসতে পারে। এ পলিসি বাস্তবায়ন করতে পারলে এসব বৈষম্য থাকবে না। বিমানবন্দরে প্রবাসীরা এলে এক কাপ কফি দিলে সরকারের খুব বেশি ক্ষতি হবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, রেমিট্যান্সের ওপর আমরা নির্ভরশীল। তারা আমাদের অর্থনীতির বুস্টার হিসেবে কাজ করেন।
পরে প্যানেল আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ নাসের বলেন, এ বন্ড সম্পর্কে ভুল ধারণা আছে সবার মধ্যে। এগুলো সরকারের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের। প্রবাসী বন্ডের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের নয়। এ মুহূর্তে প্রবাসীদের মাধ্যমে রিজার্ভ বাড়ানো ছাড়া কোনো উপায় নেই।
এনআরবি সিআইপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহতাবুর রহমান বলেন, সবাই আমাদের সমস্যার কথাগুলো ভলোভাবেই জানেন, কিন্তু মানেন না। মন্ত্রণালয়গুলোতে এমন কিছু লোক আছে যারা শুধু প্যাঁচান। তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিলেই এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
দেশ রূপান্তরের প্রকাশক মাহির আলী খাঁন রাতুল বলেন, আমাদের দেশ থেকে অনেক নারী প্রবাসে যান। কিন্তু তাদের ওপর যে ধরনের নির্যাতন করা হয় তা উদ্বেগের। আমি মনে করি এনআরবি সিআইপি অ্যাসোসিয়েশন এসব নির্যাতন বন্ধে উদ্যোগ নেবে। প্রবাসীদের সব ধরনের উদ্যোগের সঙ্গে রূপায়ণ গ্রুপ সবসময় আছে এবং থাকবে বলে জানান তিনি।
এ সময় মাহির আলী খাঁন সিআইপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহতাবুর রহমানকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, তিনি সিআইপি ধারণাই পাল্টে দিয়েছেন। এ সংগঠনের ওয়ানম্যান আর্মি হিসেবে দাঁড়িয়েছেন।
এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল বলেন, দেশ ছাড়ার সময় অনেক স্বপ্ন নিয়ে যাই, সেই সঙ্গে দেশে ফেরার কথাও চিন্তা করি। দেশে টাকা পাঠাতে গেলে প্রবাসীরা হেনস্তার শিকার হন। তিনি বলেন, প্রবাসীদের বিনিয়োগের জন্য ভালো পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন, তা না হলে এত কষ্টের অর্থ তারা কেন বিনিয়োগ করবে?
দেশে ১৯৮৮ সালে পাঁচ বছর মেয়াদি ওয়েজ-আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড এবং ২০০২ সালে তিন বছর মেয়াদি ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড ও ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড চালু করা হয়। এ তিনটি বন্ডের মুনাফা আয়করমুক্ত। শুরুতে এসব বন্ডে বিনিয়োগের কোনো সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারিত ছিল না। কিন্তু ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সরকার তিনটি বন্ডে প্রবাসীদের জনপ্রতি বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সীমা ১ কোটি টাকায় বেঁধে দেয়। এ ছাড়া এসব বন্ড কেনার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র থাকাটাও বাধ্যতামূলক করা হয়।
ওয়েজ-আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে এখন ৯ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়, আগে সুদ পাওয়া যেত ১২ শতাংশ। ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ডে এখন ৩.৫ শতাংশ সুদ দেওয়া হয়, আগে সুদ দেওয়া হতো ৭.৫ শতাংশ। আর ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে এখন ৩ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়, আগে পাওয়া যেত ৬.৫ শতাংশ।
জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। যে সিরিজে চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। আর এই সিরিজে পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল! এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। একদিন পরে অবশ্য অবসর ভাঙলেও সেই সিরিজ আর খেলেননি তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে সাকিব সেই সিরিজ হারের দায় দিলেন তামিমের ওপরই।
'আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হারটা আমি পুরোপুরি একজনকে দায় দেব, অধিনায়ক। এক ম্যাচ পরে আমাদের হাতে আরও দুই ম্যাচ ছিল। আমরা তৃতীয় ম্যাচে ঠিকই কামব্যাক করেছি কিন্তু একটা ম্যাচ সময় লেগেছে আমাদের। সুতরাং এটা আর কারো দায় নয়, পুরো সিরিজটায় দায় একজনের ওপর। বিশ্বের কোথাও অন্তত দেখিনি যে এক ম্যাচ পরেই এরকম অধিনায়ক এসে ইমোশনালি বলে ফেলেন যে আমি ভাই খেলব না আর ক্রিকেট।’
সাকিব বলেন, 'আমার ধারণা যদি কোনো অধিনায়কের দায়িত্ববোধ থাকত, সে এটা করতে পারত না। আমার কাছে মনে হয়, এটা দলকে অনেক বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে এবং আমার মনে হয় ওইটাই এখনো রিকভার করতে সময় লাগছে, যেটা আমি অনুভব করি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।