
বাংলার সোনালি আঁশ পাটের সুদিন আর নেই।
প্রকৃতির বিরূপ আচরণ পাট আবাদ ও প্রক্রিয়াকরণে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। পাশাপাশি কয়েক বছর ধরে পাটের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না চাষিরা। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, সঠিক দাম না পাওয়া ও সিন্ডিকেটের কারসাজিতে কৃষক দিশেহারা। এর মধ্যে বিশ^বাজারে কমছে পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার। পাটের পরিবর্তে শিল্প কারখানার ঝুটের ব্যবহার হচ্ছে দেশ-বিদেশে। আর পলিথিনের ব্যবহারে নষ্ট হচ্ছে দেশের বাজার। যে কারণে পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক।
পাট উৎপাদনে ফরিদপুর জেলা বরাবরের মতো এবারও রয়েছে শীর্ষ অবস্থানে। আর এই শীর্ষস্থানীয় জেলার এ বছর প্রকৃতির বিরূপ আচরণে অনেকটাই ফিকে হয় গেছে কৃষকের মুখের হাসি। মৌসুমের শুরুতেই অতিবৃষ্টির কারণে একদিকে যেমন পাট চাষে বিঘ্ন ঘটেছে, ঠিক তেমনি পাটের আঁশ ছাড়ানো মৌসুমেও পানির অভাবে সময়মতো পাট জাগ দিতে পারেননি কৃষক। এতে কাক্সিক্ষত ফলন ব্যাহত হচ্ছে। তা ছাড়া অল্প পানিতে পাট জাগ দেওয়ার কারণে পাটের রঙ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাজারে এর দামও কম পাওয়া যাচ্ছে। গত বছর যেখানে এ সময় পাটের দাম ছিল ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা, সেখানে এ বছর ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে পাট কেনাবেচা হচ্ছে। ভালো দাম না পাওয়ায় দিশেহারা এ অঞ্চলের কৃষকরা।
মাটি আর আবহাওয়াগত কারণে দেশের পাট উৎপাদনের মধ্যে ফরিদপুর জেলা অন্যতম। ২০১৩ সালে এ জেলায় ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছিল। সেখানে ২০২৩ সালে ৮৮ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। অর্থাৎ গত ১০ বছরে পাটের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে। কিন্তু সেভাবে পাটচাষিরা পাটের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না।
এদিকে রংপুরের চলতি মৌসুমে সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় চাষিদের পাট জাগ দেওয়া বা পচানোর ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। পাটচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর পাট চাষের সময় নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে। প্রথমত, বীজ বপনের সময় খরা হওয়ায় ঠিকমতো চারা গজায়নি। আবার চারা গজালেও পাতলা হয়েছে। এতে ব্যাহত হয়েছে পাটের ফলন। এ ছাড়া শ্রমিকের বাড়তি মজুরি, সেচ, বীজ, কীটনাশক, সারের দাম বৃদ্ধিতে বেড়েছে উৎপাদন খরচও। অন্যদিকে পাট কাটার সময় পানির অভাবে অনেক কৃষককে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে এবং নষ্ট হয়েছে পাটের রঙ।
বরিশালে ধান আবাদের পাশাপাশি পাট চাষেও আগ্রহ দেখিয়েছেন প্রান্তিক জনপদের কৃষকরা। প্রতিবছরের তুলনায় এবার জেলার চার উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক ফলন হয়েছে। জেলায় পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১ হাজার ৩৫৬ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৩৩৩ হেক্টর জমিতে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় কৃষকরা বর্তমান বাজারে পাটের দাম পাচ্ছেন কম। এ ছাড়া বিশ্ববাজারের প্রভাবের কারণে ব্যবসায়ীরাও এখন সন্দিহান অবস্থায় আছেন।
এদিকে দিন দিন খরচ বাড়ছে পাট চাষে। চাষিরা বলছেন, এক বিঘা জমিতে হাল চাষ থেকে শুরু করে বীজ, সার, কীটনাশক, পানি সেচ, নিড়ানি, কাটা, জাগ দেওয়া, শ্রমিকসহ ঘরে তোলা পর্যন্ত খরচ হয় ১৬ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। বিঘাপ্রতি ফলন হচ্ছে ১০ থেকে ১৩ মণ। শুরুতে পাটের দাম ২ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। বর্তমানে তা ২ হাজার টাকায় নেমে গেছে। পাটের ভরা মৌসুমে দাম কমে যাওয়ায় হতাশ কৃষক।
ফরিদপুর সদর উপজেলার পাটচাষি শেখ জামাল জানান, প্রতিবছরই পাটের আবাদ বৃদ্ধি পায় কিন্তু সেভাবে পাটের দাম বৃদ্ধি পায় না। বর্তমানে কৃষকরা পাটের যে দাম পাচ্ছেন, তা দিয়ে ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। এর বাইরে ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ পাটচাষিদের।
সালথা উপজেলার আরেক পাটচাষি উজ্জ্বল সাহা বলেন, এ বছর পানি সংকটের কারণে পাট পচাতে অনেক কষ্ট হয়েছে। ছোট ছোট খাল থেকে পাম্প দিয়ে পানি এনে পাট পচানো হয়েছে। সে কারণে পাটের রঙ ভালো না হওয়ায় বাজারে সেভাবে পাটের দাম পাওয়া যাচ্ছে না। তবে পাটের দাম ভালো না থাকলেও কৃষকরা এ বছর পাটকাঠি বিক্রি করে কিছুটা লোকসান পুষিয়ে নিচ্ছেন।
ফরিদপুর জেলার সর্ববৃহৎ পাটশিল্প প্রতিষ্ঠান জোবায়দা-করিম জুটমিলের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে দেশের পাটের চাহিদা কিছুটা কমেছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বেশ কটি দেশ বাংলাদেশের পাটের সুতার প্রয়োজন হতো। কিন্তু গত বছর হঠাৎ করে পাটের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ওইসব দেশ পাটের তৈরি পণ্য বা সুতা ক্রয়ে অনীহা দেখায়। এ কারণে এ বছর পাটের অর্ডার কমে যায়। বর্তমানে পাটশিল্প প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত পাট মজুদ রয়েছে, তাই পাট কম কিনছেন মিলমালিকরা। অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো গত বছর পাটের মূল্যবৃদ্ধির ফলে বিকল্প হিসেবে গার্মেন্টসের ঝুট দিয়ে তৈরি সুতা ব্যবহার শুরু করে। এসব কারণেও প্রভাব পড়েছে দেশীয় পাটশিল্পের ওপর।
রংপুরের তকিপল বাজারে পাট কিনতে আসা ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন জানান, চলতি মৌসুমে পাটের দর ও চাহিদা কম থাকায় প্রতি মণ পাট প্রকারভেদে ২১০০ থেকে ২৬০০ টাকা হিসেবে কেনাবেচা হচ্ছে, যা কয়েক দিন আগে তিন হাজার টাকা মণে কিনতে হয়েছে।
রংপুরের ছোট ব্যবসায়ী ও চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বড় বড় ব্যবসায়ী ভরা মৌসুমে সিন্ডিকেট করে নানা অজুহাতে পাট ক্রয় থেকে বিরত থাকেন। এদিকে চাষিরা নানা অভাব-অনটনের কারণে অনেকটা বাধ্য হয়েই কম দামে পাট বিক্রি করেন। পরে এই পাট ছোট ব্যবসায়ীদের কিছু লাভ দিয়ে কেনেন বড় ব্যবসায়ীরা। তারা কিছুদিন গুদামজাত করার পর সিন্ডিকেট করে বেশি দামে বিক্রি করেন।
সূত্রমতে, রংপুরে ১১টি জুটমিল রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটির কার্যক্রম বন্ধ। চালু মিলগুলোর একেকটিতে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ মণ পাটের চাহিদা রয়েছে। রংপুরের ভাই ভাই জুটমিলের প্রোপ্রাইটর টিপু সুলতান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিছু কিছু সময় পাটের বাজার অস্থির হয়ে যায়। গত কয়েক বছরে আমার কয়েক কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এ কারণে বর্তমানে আমি অনেক হিসাবনিকাশ করে পাট কিনি।’ সিন্ডিকেটের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
বরিশালে কৃষকদের পাট বিক্রির লাভের টাকা যায় সুদ ব্যবসায়ীদের কাছে। চাষিদের জমানো টাকা না থাকায় অনেকেই সুদ এবং ধারকর্জ করে পাট চাষ করেন। চাষিদের মধ্যে যার সংখ্যা প্রায় অর্ধেকেও বেশি। ফলে পাট বিক্রি করে যে টাকা হাতে আসে তা সুদ ও ধারকর্জ করে পাওনাদারকে পরিষদ করতে করতেই তাদের লাভের টাকা আর হাতে থাকে না। ফলে দিন শেষে খালি হাতেই বাড়ি ফিরতে হয় কৃষকদের। আবার নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে পাট চাষ করে বাজারে চাহিদা অনুযায়ী দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা। এ ছাড়া সরকার ও কৃষি অফিসের কোনো সহযোগিতা না পেয়ে সোনালি আঁশ পাট চাষ করতে গিয়ে হতাশায় পড়েছেন চাষিরা।
বরিশাল আঞ্চলিক কৃষি অফিসের কৃষি তথ্য সার্ভিস কর্মকর্তা নাহিদ বিন রফিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বরিশাল জেলার মধ্যে সব থেকে বেশি পাট উৎপাদন হয় মুলাদিতে। এরপর মেহেন্দিগঞ্জ, হিজলা ও বাবুগঞ্জে। আসলে কৃষক ভাইয়েরা বিভিন্ন ফসল চাষ করে থাকেন। তারা সব সময় চান যেটা বেশি লাভ সেটাই আবাদ করতে। পাট যেহেতু পরিবেশবান্ধব আর দিন দিন এর কদরও বাড়ছে, এ কারণে বরিশালের কৃষকদেরও পাট চাষে আগ্রহ বেশি।’
পাট অধিদপ্তর বরিশাল অফিসের মুখ্য পরিদর্শক মো. নওশের আজাদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ার কারণে পাটের গুণগত মান ঠিক রাখা সম্ভব হয়নি। পাট উৎপাদনকারী অন্যান্য অঞ্চল যেমন মাদারীপুর বা ফরিদপুরের তুলনায় বরিশালে পাটের উৎপাদন তুলনামূলক কম এবং একটু মানের দিক থেকেও শক্ত।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবছরই ফরিদপুর আর মাদারীপুরের তুলনায় বরিশালে পাটের দামটা একটু কম থাকে। এ ছাড়া বর্তমানে বিশ্ববাজারের জন্য ব্যবসায়ীরা একটু সন্দিহান। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। তাই বিদেশে পাট রপ্তানি হবে কী হবে না, এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী, ফ্যাক্টরি সবাই হিমশিম খাচ্ছেন।’
বাংলাদেশ পাটচাষি ও ক্ষুদ্র পাট ব্যবসায়ী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশিদ বলেন, ‘বর্তমানে সরকারি মালিকানাধীন বিজেএমসির ১০টি পাটকল অবিলম্বে চালু না করলে পাটের বাজারে আরও ধস নামবে। পাটচাষিরা বর্তমানে যে দামে পাট বিক্রি করছেন, এভাবে চলতে থাকলে একসময় সোনালি আঁশ এ পাট কৃষকের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়াবে।’
প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন সুজাউজ্জামান জুয়েল, ফরিদপুর, তাজিদুল ইসলাম লাল, রংপুর ও সুকান্ত অপি, বরিশাল প্রতিনিধি
খুব ভালোভাবে সংরক্ষিত বিরল একটি ডাইনোসরের কঙ্কাল নিলামে বিক্রির জন্য তোলা হচ্ছে। আগামী মাসে প্যারিসে এ নিলাম হবে। প্যারিসের নিলামকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হোটেল ড্রুয়োটে ডাইনোসরের কঙ্কালটির নিলাম হবে। ক্যাম্পটোসোরাস প্রজাতির ডাইনোসরের এ কঙ্কাল প্রায় ১৫ কোটি বছর আগে জুরাসিক যুগের। প্রাথমিকভাবে এর দাম ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ডলার।
রয়টার্স জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইওমিং অঙ্গরাজ্যে গত শতকের নব্বইয়ের দশকে ডাইনোসরের কঙ্কালটি পাওয়া যায়। ২০০০ সালে জীবাশ্মবিদ ব্যারি জেমস প্রাথমিকভাবে এটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেন। তার নামানুসারেই কঙ্কালটির নাম দেওয়া হয় ব্যারি।
ডাইনোসরের কঙ্কালটি উচ্চতায় ২ দশমিক ১ মিটার (৬ দশমিক ৯ ফুট)। এটি ৫ মিটার (১৬ দশমিক ৪ ফুট) দীর্ঘ। গত বছর কঙ্কালটি ইতালির পরীক্ষাগার জোইকে নেওয়া হয়। সেখানে এটিকে সংরক্ষণের জন্য আরও কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
হোটেল ড্রুয়োটের কর্মকর্তা আলেক্সান্দ্রে জিকুয়েলো বলেন, এটি খুব ভালোভাবে সংরক্ষিত একটি নমুনা, যা একেবারে বিরল। উদাহরণ হিসেবে এর খুলির কথা বলতে পারি। এটির ৯০ শতাংশ ঠিকঠাক আছে। আর কঙ্কালের বাকি অংশের ৮০ ভাগ ভালো আছে।
জিকুয়েলো বলেন, শিল্পকর্মের বাজারে ডাইনোসরের নমুনা খুব বিরল জিনিস। বিশ্বজুড়ে বছরে হাতে গোনা কয়েকটি বেচাকেনা হয়।
নিলামে বিক্রির আগে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে কঙ্কালটি নিয়ে প্রদর্শনী আয়োজনের কথা আছে।
মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের চ্যানেল নির্মাণের প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে। আর এ শর্তেই তা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে।
আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার উপস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মাতারবাড়ী চ্যানেল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর হতে পারে। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। এ বৈঠকে নৌ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফা কামাল ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সচিব হাবিবুর রহমানেরও উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেলটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের বিষয়টি কয়লা বিদ্যুৎ (কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পনি বাংলাদেশ লিমিটেড-সিপিজিসিবিএল) প্রকল্পের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিশ্চিত করেছেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চ্যানেল তো চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষই ব্যবহার করছে। জেটিতে জাহাজ ভেড়ানোর কাজ বন্দর কর্তৃপক্ষই করছে। তবে কাগজে-কলমে চ্যানেলটি আমাদের আওতায় রয়েছে। এখন তা আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে।’
কিন্তু এ চ্যানেল নির্মাণের সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার ঋণ কে পরিশোধ করবে? এ প্রশ্নের উত্তরে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘চ্যানেল নির্মাণে খরচ দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। এখন শুধু নির্ধারিত সময়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। চ্যানেলে যেহেতু জাহাজ ভেড়ানোর রাজস্ব পাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং ব্যবহারও করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ, স্বভাবতই ঋণও পরিশোধ করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ।’
কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালকের এমন বক্তব্যের বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কেউ সরাসরি উত্তর দিতে নারাজ। একপর্যায়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার) কমোডর এম ফজলার রহমান বলেন, ‘চ্যানেল হস্তান্তরের বিষয়ে কথা চলছে। আমাদের পক্ষ থেকে প্রস্তুতিও রয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মুখ্য সচিবের পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও নৌ সচিবও উপস্থিত থাকবেন। দেখা যাক হস্তান্তর হয় কি না।’
কিন্তু চ্যানেল নির্মাণের টাকা কে বহন করবে তা নিয়ে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে চিঠি চালাচালি ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর পর্যন্ত বৈঠক হয়েছিল। এখন চ্যানেল নির্মাণের এ টাকা কি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বহন করবে? এমন প্রশ্নের জবাবে কমোডর এম ফজলার রহমান বলেন, ‘কয়লা বিদ্যুৎও সরকারের প্রকল্প এবং মাতারবাড়ী বন্দরও সরকারের। তাই সরকারের পক্ষ থেকে যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে, তাই হবে।’
১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ, ২৫০ মিটার চওড়া ও ১৮ মিটার গভীরতার চ্যানেলটি নির্মাণের কাজ ২০২০ সালে শেষ হয়। পরবর্তীকালে প্রস্থ আরও ১০০ মিটার বাড়ানো হয় চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য। একই সঙ্গে গভীরতাও বাড়ানো হয়। আর এতেই গভীর সমুদ্রবন্দরের উপযোগী জাহাজ ভেড়ানোর পর্যায়ে পৌঁছে মাতারবাড়ী। গত ২৫ এপ্রিল ৬৩ হাজার টন কয়লা নিয়ে ২২৯ মিটার দীর্ঘ ও ১২ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের (পানির নিচের গভীরতা) জাহাজ প্রথম ভিড়েছে এই বন্দরে। যদিও এর আগে কয়লা বিদ্যুতের উপকরণ নিয়ে ১১২টি জাহাজ ভিড়েছিল মাতারবাড়ীতে। গত এপ্রিলের পর এ পর্যন্ত আরও সাতটি জাহাজ কয়লা নিয়ে ভিড়েছে। এসব জাহাজ কয়লা বিদ্যুতের জেটিতে ভিড়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি নির্মাণের কাজ শুরু হবে এখন। আগামী মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের জেটি নির্মাণের কাজ উদ্বোধন করার পরিকল্পনা রয়েছে। আর এরই অংশ হিসেবে পুরো চ্যানেলটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আওতায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
চ্যানেল নিয়ে বিপত্তি কী ছিল : সাগর থেকে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ খনন করে চ্যানেলটি নির্মাণ করা হয়েছিল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায়। কয়লা বিদ্যুতের জন্য কাঁচামাল কয়লা আনতে বড় জাহাজ ভেড়াতে হবে। সেই জাহাজ ভেড়ানোর জন্য ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ, ২৫০ মিটার চওড়া ও ১৬ মিটার গভীর চ্যানেল নির্মাণ করা হয় প্রকল্পের আওতায়। পরে এ চ্যানেলকে ব্যবহার করে গভীর সমুদ্রবন্দরের স্বপ্ন দেখে দেশ। এ নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইও করে জাইকা। জাইকার সুপারিশের ভিত্তিতেই এখানে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে অগ্রগতি আসে। এ চ্যানেলের চওড়া আরও ১০০ মিটার এবং গভীরতা ২ মিটার বাড়ালেই গভীর সমুদ্রবন্দরের উপযোগী একটি চ্যানেল পেয়ে যাবে দেশ। আর জাইকার এ সুপারিশের ভিত্তিতেই ‘মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প’ গ্রহণ করা হয়। এরই আওতায় চ্যানেলের চওড়া ১০০ মিটার বাড়ানোর পাশাপাশি গভীরতাও ১৮ মিটারে উন্নীত করা হয়। এজন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ ১৩ হাজার টাকার বাজেট একনেক থেকে অনুমোদন করে। এর মধ্যে জাইকার ঋণ ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ ৫ হাজার, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (নিজস্ব তহবিল) ২ হাজার ২১৩ কোটি ২৪ লাখ ৯৪ হাজার এবং সরকারের ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
কিন্তু চ্যানেল নির্মাণের খরচ কে বহন করবে তা নিয়ে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রশ্ন ছিল। বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য চ্যানেল নির্মাণে খরচ হয়েছিল ৯ হাজার ৩৫০ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ঋণ হিসেবে রয়েছে ৭ হাজার ৯২২ কোটি ১৬ লাখ এবং সরকারের ১ হাজার ৪২৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এ টাকা কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় খরচ করা হয়েছিল। এখন যেহেতু এ চ্যানেল ব্যবহার করে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে উঠছে, তাই তা নির্মাণের সব খরচ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। গত ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিবকে প্রধান করে একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছিল। যে কমিটি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাছ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে কীভাবে তা হস্তান্তর করা হবে, তা ঠিক করবে।
কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে। গত ২৫ জুন থেকে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করে কেন্দ্রটি। এখন বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাচ্ছে কেন্দ্রটি। দিনে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা পুড়বে ১০ হাজার টন। কেন্দ্রটিতে প্রতিনিয়ত ৬০ দিনের ছয় লাখ টন কয়লা মজুদ থাকবে।
ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় ভারত থেকে সরকারের কেনা স্যালাইন দেশে আসতে শুরু করেছে। গত সোমবার প্রথম চালানে তিনটি ট্রাকে ২০ হাজারের মতো স্যালাইন দেশে এসে পৌঁছেছে। এভাবে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে তিন লাখ স্যালাইন দেশে আনবে সরকারের ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)।
এ ব্যাপারে ইডিসিএলের জেনারেল ম্যানেজার (মার্কেটিং) জাকির হোসেন গতকাল মঙ্গলবার রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত সোমবার থেকে ভারত থেকে স্যালাইন আসতে শুরু করেছে। প্রতিদিন তিন ট্রাক করে আসবে। এভাবে ৪৫ ট্রাকে ৩ লাখ স্যালাইন আনা হবে। সে হিসাবে প্রতিদিন তিনটি ট্রাকে করে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার স্যালাইন দেশে এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রথমে তিন লাখ স্যালাইন আসবে। ২০ লাখ কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাকি স্যালাইন পর্যায়ক্রমে আসবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ইডিসিএলের কর্মকর্তারা জানান, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় জরুরি পরিস্থিতিতে ২০ লাখ পিস (নরমাল স্যালাইন ১০০০ এমএল ও গ্লুকোজ স্যালাইন ১০০০ এমএল) আইভি ফ্লুইড কেনার নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে ইডিসিএল। প্রতিষ্ঠানটি এসব স্যালাইন সরাসরি কিনতে পারবে। এতে ব্যয় হবে ২৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বিশেষ ব্যয় খাতের বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে এ ব্যয় বহন করা হবে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর এ অনুমোদন দেয় সরকারের অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
এসব কর্মকর্তা আরও জানান, সারা দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করায় ও বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত ১৩ আগস্ট ইডিসিএলের মাধ্যমে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করে সাত লাখ পিস আইভি ফ্লুইড কেনার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী ইতিমধ্যেই তিন লাখ পিস ফ্লুইড কেনা হয়েছে। এসব স্যালাইন গতকাল থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহ করা শুরু হয়েছে।
কর্মকর্তারা বলেন, ধারণা করা হয়েছিল সেপ্টেম্বরের মধ্যভাগে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমে যাবে। কিন্তু ডেঙ্গু আরও বেড়ে গেছে। এ কারণে সারা দেশে আইভি ফ্লুইডের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। এ পর্যায়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় সারা দেশের সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার স্বার্থে জরুরি প্রয়োজনে ২০ লাখ পিস আইভি ফ্লুইড কেনার প্রস্তাব করে ইডিসিএল।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বগুড়া বাস ডিপোতে বদলি করা কারিগর বিআরটিসির শ্রমিক কর্মচারী লীগের (সিবিএ) কথিত নেতা আফতাব উদ্দিন চৌধুরীকে অর্থঋণ মামলায় আটক করা হয়েছে। অর্থঋণ মামলায় জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ভিত্তিতে গত সোমবার রাত ৮টার দিকে তাকে মতিঝিল থানা পুলিশ আটক করে। এর আগে তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে বিআরটিসির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কার্যকলাপে লিপ্ত ছিলেন বলে জানিয়েছে মতিঝিল থানা পুলিশ।
এ বিষয়ে বিআরটিসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা শুনেছি আফতাব উদ্দিন চৌধুরী প্রতরণা ও অর্থঋণ মামলায় পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন। আফতাব চৌধুরী কারিগর-সি, বিআরটিসি শ্রমিক কর্মচারী লীগের বৈধ সদস্য না হয়েও সেক্রেটারির নাম ব্যবহার করে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছেন। সেই সঙ্গে বিআরটিসির ভাবমূর্তিও নষ্ট করেছেন। বিভিন্ন মামলা-মোকদ্দমায় হেরে গিয়ে বারবার বিআরটিসিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন। শ্রম আদালতের আপিল ট্রাইব্যুনাল ও হাইকোর্টেও হেরে যান। বিভিন্নভাবে শ্রমিক-কর্মচারীদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করতেন। তার নোংরামি শুধু বিআরটিসিতে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করায় খেলাপি হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন। অবশেষে গ্রেপ্তার হয়ে পুলিশ হাজতে আছেন। আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘একসময়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) সেবা ছিল ধীরগতির। তখন মানুষ বাধ্য না হলে বিআরটিসির সেবা নিতে চাইত না। বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কিন্তু পুরনো সেই চিত্র আর নেই বললেই চলে। এখন রাস্তায় বের হলেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বাসের সঙ্গে সঙ্গে বিআরটিসি বাসও দেখা যায়। বর্তমানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নিয়মিত পরিশোধ, পতেঙ্গায় পর্যটন বাস, ২০টি জায়গায় কারিগরি প্রশিক্ষণসহ দেশের ৬৩ জেলায় নিরবচ্ছিন্ন যাত্রীসেবা দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠানটি। সব মিলিয়ে যাত্রীসেবার মানোন্নয়ন ও পণ্য পরিবহন সেবায় গতির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করেছে। এখন পরিবহন সেবার আইকনিক হওয়ার পথে বিআরটিসি। আর সেই সময়ে আফতাবসহ কিছু অসাধু ব্যক্তি বর্তমান উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে নানাভাবে চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছেন। বিআরটিসিরি শ্রমিকদের মাঝে এক প্রকার অস্থিরতা তৈরি করছিল। এ ছাড়া এই আফতাবের সঙ্গে বিআরটিসির প্রধান কার্যালয়ের কিছু অসাধু সিনিয়র কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে। তারা বিআরটিসির সুনাম নষ্ট করার জন্য নানা অপকর্মে লিপ্ত রয়েছেন।’
জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার পুলিশ আদালতে হাজির করলে আফতাব উদ্দিন চৌধুরীকে কারাগারে পাঠায় আদালত।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা একটা ঘোর অন্ধকারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। রাষ্ট্র এখন আর রাষ্ট্র নেই। রাষ্ট্র এখন পুরোপুরিভাবে একটা যন্ত্রণা, অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়নের কারখানা হয়ে গেছে। একটা রাষ্ট্র তখনই গণন্ত্রতান্ত্রিক সফল রাষ্ট্র হতে পারে যখন তার তিনটা স্তম্ভই কাজ করে। সোজা কথায় বলি বাংলাদেশের আত্মাটাকে তারা (আওয়ামী লীগ) ধ্বংস করে দিয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিলনায়তনে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই। লজ্জা পাই, যখন টেলিভিশনে দেখি কয়েকজন প্রথিতযশা সম্পাদক এবং বিভিন্ন সাংবাদিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা এই ভয়াবহ অত্যাচার-নির্যাতন, গণতন্ত্র হত্যার কর্মযজ্ঞকে সমর্থন করেন। আমাদের কথা বাদ দেন। রাস্তার কর্মী, মাঠের কর্মী, মাঠের মধ্যে লড়াই করি, জেলে যাই, অনেকের ফাঁসিও হয়েছে। গত কয়েকদিন আগে আমাদের ঈশ্বরদীর প্রায় ৫০ জন নেতাকর্মীকে ৩০ বছর আগে শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে কি ঢিল-টিল মেরেছিল সেজন্য বিচারকরা ৯ জনকে মৃত্যুদন্ড, ১৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন। হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে ৭০ বছর কারাদন্ড দিয়েছেন। তিনি বলেন, ইলিয়াস আলীর মতো ৬৪৮ জনকে গুম করেছে। সহস্রাধিক মানুষকে হত্যা করেছে, এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং করেছে। সম্পাদক শফিক রেহমান, মাহমুদুর রহমানকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। যারা দেশে আছেন এমন অনেক সম্পাদক সাংবাদিকদের নিগৃহীত হতে হয়েছে, কারাগারে যেতে হয়েছে। কত বলব, কার কথা বলব? অত্যাচার-নির্যাতন এমন একটা পর্যায় চলে গেছে এখান থেকে মুক্তি পেতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামতে হবে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে রুহুল আমিন গাজী, এম আবদুল্লাহ, নুরুল আমিন রোকন, এম এ আজিজ, আবদুল হাই শিকদার, ইলিয়াস খান, মোরসালিন নোমানী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অন্যদের মধ্যে কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, জামায়াতে ইসলামীর মোয়াজ্জেম হোসেন হেলালসহ বিরোধী রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সরকারকে আরেকটু ধাক্কা দিলেই তারা পড়ে যাবে : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত সমাবেশ ও পদযাত্রা কর্মসূচিতে মঞ্চের নেতা জোনায়েদ সাকি বলেন, সরকারকে আরেকটু ধাক্কা দিলেই তারা পড়ে যাবে। ওদের ভয় দেখানোর অস্ত্রটা ভোঁতা করে দিতে হবে।
পূর্ব সমাবেশে জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, চলমান কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় অক্টোবরে আন্দোলন আরও উত্তাল হবে। সরকার যদি তফসিল ঘোষণার চেষ্টা করে, একতরফা নির্বাচন করার চেষ্টা করে, জনগণ রাজপথে নেমে গলায় গামছা বেঁধে তাদের ক্ষমতা থেকে নামাবে।
সমাবেশ শেষে টিকাটুলী মোড় পর্যন্ত গণমিছিল করেন মঞ্চের নেতাকর্মীরা। এ সময় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) শহীদউদ্দিন মাহমুদ, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ অংশ নেন।
হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের শুভেচ্ছা বিনিময় : জন্মাষ্টমী উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন বিএনপির নেতারা। গতকাল বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জন্মাষ্টমীর এই অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে স্কাইপে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্ত হয়ে হিন্দু সম্প্রদায়কে জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানান।
এতে ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন ও ইসকন মন্দিরের পুরোহিতরা ও বাংলাদেশ পূজা পরিষদের নেতারা অংশ নেন।
জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বলেন, আজকে আমাদের দায়িত্ব এই দেশকে রক্ষা করার। এটা শুধু বিএনপির আন্দোলন নয়। এটা সমস্ত মানুষের আন্দোলন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশ যেভাবে সামাজিক, অর্থনৈতিকভাবে বিভক্ত হয়ে গেছে, এ দেশকে রক্ষা করতে হলে বর্তমান বিপর্যয় থেকে পরিবর্তন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিএনপির ড. আবদুল মঈন খান, বরকত উল্লাহ বুলু, নিতাই রায় চৌধুরী, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সভাপতি বিজন কান্তি সরকার, কেন্দ্রীয় নেতা জয়ন্ত কুমার কুণ্ড, আবদুল বারী ড্যানি, অমলেন্দু অপু, সুশীল বড়ুয়া, রমেশ দত্ত, দেবাশীষ রায় মধু, তরুণ দে প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। পরে জন্মাষ্টমীর প্রসাদ দিয়ে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়।
ব্যাংকপাড়াখ্যাত মতিঝিল এখন মৃতপ্রায়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে না পারায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র সরে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা ঘোরানো মতিঝিলে আবাসিক ভবন, শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান তৈরি না হলে দেশের প্রধান এই বাণিজ্যিক অঞ্চল প্রাণ হারাবে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাদের মতে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় অবদান রয়েছে মতিঝিলের টাকার। শুধু তা-ই নয়, মতিঝিলে উপার্জিত অর্থে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, কানাডাসহ আরও অনেক দেশে। এখানকার উপার্জিত টাকা অনেকে জমা রেখেছেন সুইস ব্যাংকেও। শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মতিঝিলে। এ যেন মা কাঁকড়ার আত্মত্যাগের গল্প। মা কাঁকড়া বাচ্চাদের আগলে রাখে বুকের ভেতর; যেদিন বাচ্চাগুলো বের হয়ে আসে, সেদিন খোলস ছাড়া মা কাঁকড়ার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। মা কাঁকড়ার মতো দুঃখী ও ত্যাগী বাণিজ্যিক মতিঝিল।
ষাটের দশকে মতিঝিলে গড়ে ওঠে দেশের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট-সিবিডি)। সেই থেকে এখনো দেশের প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল মতিঝিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে সরকারি ৮টি, বেসরকারি ৪৫টি এবং বিদেশি ব্যাংক রয়েছে ৮টি। এ ছাড়া ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৮১টি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের বেশির প্রধান কার্যালয় চলে গেছে কারওয়ান বাজার, গুলশান-বনানী ও উত্তরায়। নতুন করে যেসব ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাচ্ছে, সেগুলোর প্রধান কার্যালয় মতিঝিলের বাইরে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মতিঝিলের আশপাশে পরিকল্পিত কোনো আবাসিক এলাকা, অভিজাত হোটেল, কাজের ফাঁকে অবসর কাটানোর মতো উন্মুক্ত স্থান, শপিং কমপ্লেক্স না থাকায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সুবিধার জন্য অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়গুলোও মতিঝিলের বাইরের এলাকা, অর্থাৎ কারওয়ান বাজার, গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে গড়ে উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর, মধুমিতা সিনেমা হল এবং ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এবং দিলকুশা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবন এবং বঙ্গভবনের পাশের এলাকাজুড়ে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল। বিশ্বের বাণিজ্যিক অঞ্চলের ভবনগুলো সুউচ্চ হয়ে থাকে। কিন্তু মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের পাশেই বঙ্গভবন। নিরাপত্তার কারণে বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর কোনো বহুতল ভবন করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, মতিঝিলের প্লটগুলোর ‘নন-রেসট্রিকটেড’ উচ্চতা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর সাড়ে চারতলার বেশি উচ্চতার ভবনের অনুমোদন মেলে না। ফলে মূল্যবান ওই প্লটগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারছেন না মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ জরাজীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণও রয়েছে কয়েকটি ভবন। একটির সঙ্গে অন্যটি লাগানো। দুটি ভবনের মাঝখানে উন্মুক্ত জায়গা নেই বেশিরভাগ ভবনের। দিলকুশা এলাকার বঙ্গভবন লাগানো ভবনগুলোর মাঝখানেও কোনো ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, মতিঝিল এলাকার ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে। ভাঙাচোরা এবড়োখেবড়ো সড়ক। সড়ক বিভাজকগুলো শ্রীহীন। এগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হয়নি। প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলে মতিঝিলের আরও করুণ দশা চোখে পড়ে। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার সড়কের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে চটের ছালা দিয়ে ঘেরা খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান এবং নানা পণ্যের অস্থায়ী দোকান। সামান্য বৃষ্টিতে মতিঝিল এলাকার সড়কগুলো তলিয়ে থাকে পানির নিচে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত। ডিএসসিসি এলাকার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে। খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে মূল্যায়ন করলে মতিঝিল ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। যদিও এটা মানতে নারাজ ডিএসসিসির কারিগরি কমিটি।
মতিঝিল এলাকার বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিল এলাকার সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে ডিএসসিসি। পরিত্যক্ত প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মতিঝিলের সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত ও সড়ক বিভাজকের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা দরকার। পর্যায়ক্রমে এ এলাকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কাজ করবে ডিএসসিসি। তবে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের মূল সংস্কার ও আধুনিকায়নের দায়িত্ব রাজউকের। রাজউককে সেসব বিষয় পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব কাজে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা লাগলে করপোরেশন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলে রাজউক। রাজউক সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশক থেকেই মতিঝিলের পুরোপুরি বাণিজ্যিক বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্যিক অঞ্চলে শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান থাকে। আর কাছাকাছি এলাকায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা থাকে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে সেটা ছিল না। অভিজাত মানের হোটেল পূর্বাণী গড়ে উঠলেও আশপাশে সময় কাটানোর মতো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লোকজন গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় থাকেন। মতিঝিলের সৌন্দর্য নিশ্চিত করতে ও আধুনিকায়নে যেসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখা দরকার ছিল রাজউক ও সিটি করপোরেশন সেটা করেনি।
রাজউক সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধরা, উত্তরা। সেই সব এলাকা থেকে মানুষ মতিঝিলে আসেন। শহরের জনসংখ্যা বাড়ায় দিন দিন যানজট বাড়ছে। ওই সব এলাকা থেকে মতিঝিলে আসতে সড়কে এক থেকে দেড় ঘণ্টা চলে যায়। দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কর্মঘণ্টার মধ্যে ৩০ শতাংশ সময় সড়কে নষ্ট হচ্ছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে চিন্তা করেছে, তার কর্মস্থল এমন একটা জায়গায় হবে যা তার আবাসনের কাছাকাছি। মতিঝিল থেকে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও ভূমিকা রেখেছে।
কালের বিবর্তনে গুলশান হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক এলাকা। কারওয়ান বাজার, উত্তরায়ও গেছে কিছু। এসব জায়গায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমও সেখানে চলে গেছে। এসব এলাকার আশপাশে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় তাদের বসবাস। আবাসিক এলাকা ছাড়া, পৃথিবীর কোথাও শতভাগ জায়গা শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা অথবা একই শ্রেণির কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার হয় না।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, নগর পরিকল্পনায় ভূমির ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়, যেকোনো জায়গার ব্যবহার হবে ২৪ ঘণ্টা। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল কর্মচঞ্চল থাকে মাত্র ১২ ঘণ্টা। এরপর ওই জায়গার ব্যবহার হয় না। রাতে নীরব ও ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়।
তিনি বলেন, যে মতিঝিলে দিনের বেলায় হাঁটা যায় না; গাড়ির কারণে, যানজটে; সেই মতিঝিলে রাত ৮টার পরে আবার একাও হাঁটা যায় না; অনিরাপদ বোধ হয়। এ জন্য যারা দিনে বাণিজ্য করতে আসেন, তারা মতিঝিল এলাকার হোটেলগুলোতে থাকেন না। অন্যদিকে গুলশান-বনানী এলাকায় থাকলে তারা শপিংয়ে যেতে পারেন, কফি শপে যেতে পারেন। এসব কারণে সারা বিশ্বে ভূমির মিশ্র ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, মতিঝিল এলাকা যেহেতু ইতিমধ্যে তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলেছে, এ জন্য মতিঝিলের জমির শ্রেণিকে মিশ্র ব্যবহার হিসেবে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি নিয়েছে রাজউক। সংশোধিত ড্যাপে সে বিষয়ে নির্দেশনা রাখা হয়েছে। পৃথিবীর নগর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৫০, ৬০ বা ১০০ বছর অন্তর সেসব ঢেলে সাজানো হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়েই মতিঝিল এলাকাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে আবাসিকের বৈশিষ্ট্য দিতে হবে; কনডোমিনিয়াম গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে রাজউক বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ১৬ একর জায়গা নিয়ে একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে লাইব্রেরি, ওয়াকওয়ে থাকবে। বসার ব্যবস্থা থাকবে। মতিঝিল এলাকায় ঝিল ছিল, ওই ঝিলকে প্রাধান্য দিয়ে পার্কটি তৈরি করা হবে। বহুমুখী ব্যবহার ছাড়া মতিঝিলকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিলের আধুনিকায়ন ও ভূমির মিশ্র ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। তাহলে মতিঝিল সচল থাকবে; তবে ঢাকা শহর বড় হওয়ায় আরও বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে ওঠা ইতিবাচক। এসব পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দরকার ছিল; কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে সে রকম হয়নি। এটা দুঃখজনক। এ জন্য শহরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ঢাকায় এখন অনেকগুলো বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সব অঞ্চলে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় বড় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় মতিঝিলে রয়েছে। তবে ব্যবসা গুলশান, বনানী, উত্তরা, গাজীপুরে সরে যাওয়ায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ব্যবসা কেন্দ্রের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।