ধনী হওয়ার কৌশল
অনলাইন ডেস্ক | ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১২:৩৮
টাকা-পয়সা কি ভাগ্যের ব্যাপার? কপালে না থাকলে কি ধনী হওয়া যায় না?- প্রশ্নগুলো চিরন্তন। উত্তর আছে ভিন্নভিন্ন। কিংবদন্তি লেখক নেপলিয়ন হিল তার বিখ্যাত বই ‘থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ’এ বলেছেন, ভাগ্যের দোহাই দেন কাপুরুষ। সব আসলে কৌশলের খেলা। একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই ধনী হওয়া যায়!
হ্যাঁ, শুধু চিন্তার দ্বারাই আপনি ধনী হওয়ার পথ আবিষ্কার করতে পারবেন। এই লেখায় আপনাকে সেই পথের সন্ধান দেওয়া হবে। তার আগে ‘থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ’ বইটি নিয়ে কিছু জানতে হবে। না হলে আপনার মনে হবে, এই লেখা পড়ে কোনো কাজ হবে না।
নেপলিয়ন হিল ২৫ বছর গবেষণা করে এবং শতাধিক সফল ব্যক্তির জীবন বিশ্লেষণ করে বইটি লিখেছেন। ১৯৩৭ সালে বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর প্রথম মাসে ১৫ লাখ কপি বিক্রি হয়! বিশ্বের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি এই বইটি পড়ার পর বলেছেন, ‘কেন এটি আরও আগে পড়লাম না।’
বইটি সম্পর্কে এসব বলার উদ্দেশ্য একটাই- আপনার মনে বিশ্বাস আনা। ভেবে দেখুন, একজন লেখক দুই দশকের বেশি সময় ধরে যা উপলব্ধি করেছেন, আপনি তা এই লেখায় পেয়ে যাচ্ছেন। জীবন বদলাতে আপনি এগুলো গ্রহণ করবেন কি না, সেটি এখন আপনার হাতে।
ধনী হওয়ার প্রথম পদক্ষেপ: নিজের ভেতর বিশ্বাস স্থাপন ধনী হওয়ার মৌলিক পদক্ষেপ। ‘থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ’ পড়তে পড়তে বারবার আপনি একটি কথা পাবেন, সেটি হলো ‘বিশ্বাস’। লেখক বলছেন, ‘বিশ্বাস বাধ্য করে প্রকৃতিকে আপনার পক্ষে আনতে।’ আপনি যদি বিশ্বাস করেন আপনি একদিন ধনী হবেন, তাহলে অবশ্যই একদিন ধনী হবেন। লেখক তার ২৫ বছরের গবেষণায় দেখেছেন, বিশ্বাস জাদুর মতো কাজ করে।
আপনার অন্তরে, চেতনে-অবচেতনে আপনাকে সব সময় বিশ্বাস করতে হবে, আপনি একদিন ধনী হবেন। হিল জীবনে যত কোটিপতির সঙ্গে কথা বলেছেন, সবাই একটা কথাই জানিয়েছেন। প্রবল বিশ্বাস ছিল বলেই তিনি ধীরে ধীরে ধনী হয়ে উঠেছেন।
দ্বিতীয় পদক্ষেপ: আপনার মস্তিষ্ক এখন একটা ঘোরের ভেতর চলে গেছে। আপনি বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন, আপনি ধনী হবেন। এবার কার্যকরী কৌশল প্রয়োগের পালা।
১. সুন্দর একটি ডায়েরি হাতে নিন। স্পষ্ট করে তাতে লিখুন, আমি প্রতি মাসে এত টাকা অর্জন করতে চাই। এটি লিখতে গিয়ে অনেকে ভুল করে বসেন। অধিকাংশ মানুষ লিখে ফেলেন, ‘আমি অনেক টাকা অর্জন করতে চাই।’ হলো না! আপনি ঠিক কত টাকা আয় করতে চান সেটি আগে আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে।
লিখতে হবে এভাবে- ‘আমি প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করতে চাই।’
২. প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা আয়ের জন্য আপনি কী কী বিসর্জন দিতে প্রস্তুত, সেটি এবার লিখে ফেলুন। এখানেও ব্যাপারটি আগের মতো। কখনো লিখবেন না, ‘আমি সব বিসর্জন দিতে প্রস্তুত।’ নির্দিষ্ট ক্ষেত্র বের করুন। ঠিক কী কী বিষয়ে আপনি ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত, সেটি আগে চিন্তা করে বের করুন। তারপর স্পষ্ট করে লিখে ফেলুন।
৩. কত দিনের মধ্যে আপনি টাকাগুলো আয় করা শুরু করতে চান তার নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করুন।
৪. এবার সম্ভাব্য কতগুলো উৎসের নাম লিখুন। যেখান থেকে আপনি টাকাগুলো আয় করতে পারেন। অর্থাৎ পরিকল্পনা করুন কীভাবে টাকাগুলো আপনার কাছে আসবে।
এ ক্ষেত্রে আপনি আরেক বিখ্যাত লেখক পিটার থিয়েলকে অনুসরণ করতে পারেন। তার কালজয়ী বই, ‘জিরো টু ওয়ান’-এ তিনি বলেছেন, ‘ব্যবসায় একটি ঘটনা মাত্র একবারই ঘটে। পরবর্তী বিল গেটস কখনোই অপারেটিং সিস্টেম বানাবেন না। ভবিষ্যতের মার্ক জাকারবার্গ কখনোই ফেসবুক বানাবেন না। যদি আপনি তাদের অনুকরণ করেন, তাহলে আপনি তাদের থেকে কিছুই শিখলেন না।’
পিটারকে টেনে আনার কারণ নিশ্চয়ই আপনি বুঝেছেন। এমন কোনো পরিকল্পনা করার চেষ্টা করুন, যাতে চমক কিংবা নতুনত্ব আছে। যদি একান্তই না পারেন, তাহলে মনের কথা শুনুন। মন যা পছন্দ করে, সেভাবে পরিকল্পনা সাজান।
৫. আপনি এখন জানেন কত টাকা চান। কত দিনের মধ্যে চান, সেটিও জানেন। কী কী ত্যাগ স্বীকার করতে চান, সেটিও জানা। উৎসগুলোও আপনার জানা।
৬. লিখিত এই তালিকা প্রতিদিন দুইবার করে পড়তে হবে। শব্দ করে। সকালে ঘুম থেকে উঠে। রাতে ঘুমানোর আগে।
পড়তে থাকুন। আর প্রতিদিন অবচেতন মনে কল্পনা করুন, আপনি ধনী হয়ে উঠছেন। আপনার কাছে আপনার চাহিদা মতো টাকা আসছে। এই কল্পনা করতে না পারলে আপনি সফল হবেন না। কল্পনা করুন, সফলতার জন্য মনে তীব্র ইচ্ছা জাগান।
হিল বলেছেন এভাবে, ‘আপনি আপনার কল্পনায় সম্পদ দেখতে না পারলে, কখনোই সেগুলো আপনার ব্যাংকে দেখতে পারবেন না।’
এসবের পাশাপাশি আপনার লেখা সম্ভাব্য উৎসগুলোর কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করুন। কোথায় গেলে, কার কাছে গেলে আপনার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে পারে তার খোঁজ করুন। প্রথমে সফল হবেন না। কেউ সেটি হয় না। যারা লেগে থাকে, তারাই কেবল সফল হয়।
লেগে থাকা নিয়ে নেপলিয়ন হিল তার বইয়ে অনেক উদাহরণ দিয়েছেন। বইটি সংগ্রহ করে বিস্তারিত পড়তে পারেন। এক পরিবারের কথা তিনি বলেছেন, যারা সোনার খনি খুঁড়তে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যান। অথচ সোনা পান না। যেখানে তারা হাল ছেড়ে দেন, তার তিন ফুট দূরে ছিল কাঙ্ক্ষিত সোনা!
এখানেও আসবে সেই শুরুর কথা। বিশ্বাস। যখন ওই পরিবার বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, তখনই তারা ব্যর্থ হন। শুধু টাকা নয়; জীবনের যেকোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এভাবে লিখে লিখে পরিকল্পনা সাজান। মনে রাখবেন, লক্ষ্য স্পষ্ট না হলে সফলতা দূরে থেকে যায়। বিশ্বাস রাখুন। লেগে থাকুন। প্রকৃতি আপনাকে রাস্তা দেখিয়ে দেবে।
এভাবেই হয়।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
অনলাইন ডেস্ক | ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১২:৩৮

টাকা-পয়সা কি ভাগ্যের ব্যাপার? কপালে না থাকলে কি ধনী হওয়া যায় না?- প্রশ্নগুলো চিরন্তন। উত্তর আছে ভিন্নভিন্ন। কিংবদন্তি লেখক নেপলিয়ন হিল তার বিখ্যাত বই ‘থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ’এ বলেছেন, ভাগ্যের দোহাই দেন কাপুরুষ। সব আসলে কৌশলের খেলা। একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই ধনী হওয়া যায়!
হ্যাঁ, শুধু চিন্তার দ্বারাই আপনি ধনী হওয়ার পথ আবিষ্কার করতে পারবেন। এই লেখায় আপনাকে সেই পথের সন্ধান দেওয়া হবে। তার আগে ‘থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ’ বইটি নিয়ে কিছু জানতে হবে। না হলে আপনার মনে হবে, এই লেখা পড়ে কোনো কাজ হবে না।
নেপলিয়ন হিল ২৫ বছর গবেষণা করে এবং শতাধিক সফল ব্যক্তির জীবন বিশ্লেষণ করে বইটি লিখেছেন। ১৯৩৭ সালে বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর প্রথম মাসে ১৫ লাখ কপি বিক্রি হয়! বিশ্বের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি এই বইটি পড়ার পর বলেছেন, ‘কেন এটি আরও আগে পড়লাম না।’
বইটি সম্পর্কে এসব বলার উদ্দেশ্য একটাই- আপনার মনে বিশ্বাস আনা। ভেবে দেখুন, একজন লেখক দুই দশকের বেশি সময় ধরে যা উপলব্ধি করেছেন, আপনি তা এই লেখায় পেয়ে যাচ্ছেন। জীবন বদলাতে আপনি এগুলো গ্রহণ করবেন কি না, সেটি এখন আপনার হাতে।
ধনী হওয়ার প্রথম পদক্ষেপ: নিজের ভেতর বিশ্বাস স্থাপন ধনী হওয়ার মৌলিক পদক্ষেপ। ‘থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ’ পড়তে পড়তে বারবার আপনি একটি কথা পাবেন, সেটি হলো ‘বিশ্বাস’। লেখক বলছেন, ‘বিশ্বাস বাধ্য করে প্রকৃতিকে আপনার পক্ষে আনতে।’ আপনি যদি বিশ্বাস করেন আপনি একদিন ধনী হবেন, তাহলে অবশ্যই একদিন ধনী হবেন। লেখক তার ২৫ বছরের গবেষণায় দেখেছেন, বিশ্বাস জাদুর মতো কাজ করে।
আপনার অন্তরে, চেতনে-অবচেতনে আপনাকে সব সময় বিশ্বাস করতে হবে, আপনি একদিন ধনী হবেন। হিল জীবনে যত কোটিপতির সঙ্গে কথা বলেছেন, সবাই একটা কথাই জানিয়েছেন। প্রবল বিশ্বাস ছিল বলেই তিনি ধীরে ধীরে ধনী হয়ে উঠেছেন।
দ্বিতীয় পদক্ষেপ: আপনার মস্তিষ্ক এখন একটা ঘোরের ভেতর চলে গেছে। আপনি বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন, আপনি ধনী হবেন। এবার কার্যকরী কৌশল প্রয়োগের পালা।
১. সুন্দর একটি ডায়েরি হাতে নিন। স্পষ্ট করে তাতে লিখুন, আমি প্রতি মাসে এত টাকা অর্জন করতে চাই। এটি লিখতে গিয়ে অনেকে ভুল করে বসেন। অধিকাংশ মানুষ লিখে ফেলেন, ‘আমি অনেক টাকা অর্জন করতে চাই।’ হলো না! আপনি ঠিক কত টাকা আয় করতে চান সেটি আগে আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে।
লিখতে হবে এভাবে- ‘আমি প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করতে চাই।’
২. প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা আয়ের জন্য আপনি কী কী বিসর্জন দিতে প্রস্তুত, সেটি এবার লিখে ফেলুন। এখানেও ব্যাপারটি আগের মতো। কখনো লিখবেন না, ‘আমি সব বিসর্জন দিতে প্রস্তুত।’ নির্দিষ্ট ক্ষেত্র বের করুন। ঠিক কী কী বিষয়ে আপনি ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত, সেটি আগে চিন্তা করে বের করুন। তারপর স্পষ্ট করে লিখে ফেলুন।
৩. কত দিনের মধ্যে আপনি টাকাগুলো আয় করা শুরু করতে চান তার নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করুন।
৪. এবার সম্ভাব্য কতগুলো উৎসের নাম লিখুন। যেখান থেকে আপনি টাকাগুলো আয় করতে পারেন। অর্থাৎ পরিকল্পনা করুন কীভাবে টাকাগুলো আপনার কাছে আসবে।
এ ক্ষেত্রে আপনি আরেক বিখ্যাত লেখক পিটার থিয়েলকে অনুসরণ করতে পারেন। তার কালজয়ী বই, ‘জিরো টু ওয়ান’-এ তিনি বলেছেন, ‘ব্যবসায় একটি ঘটনা মাত্র একবারই ঘটে। পরবর্তী বিল গেটস কখনোই অপারেটিং সিস্টেম বানাবেন না। ভবিষ্যতের মার্ক জাকারবার্গ কখনোই ফেসবুক বানাবেন না। যদি আপনি তাদের অনুকরণ করেন, তাহলে আপনি তাদের থেকে কিছুই শিখলেন না।’
পিটারকে টেনে আনার কারণ নিশ্চয়ই আপনি বুঝেছেন। এমন কোনো পরিকল্পনা করার চেষ্টা করুন, যাতে চমক কিংবা নতুনত্ব আছে। যদি একান্তই না পারেন, তাহলে মনের কথা শুনুন। মন যা পছন্দ করে, সেভাবে পরিকল্পনা সাজান।
৫. আপনি এখন জানেন কত টাকা চান। কত দিনের মধ্যে চান, সেটিও জানেন। কী কী ত্যাগ স্বীকার করতে চান, সেটিও জানা। উৎসগুলোও আপনার জানা।
৬. লিখিত এই তালিকা প্রতিদিন দুইবার করে পড়তে হবে। শব্দ করে। সকালে ঘুম থেকে উঠে। রাতে ঘুমানোর আগে।
পড়তে থাকুন। আর প্রতিদিন অবচেতন মনে কল্পনা করুন, আপনি ধনী হয়ে উঠছেন। আপনার কাছে আপনার চাহিদা মতো টাকা আসছে। এই কল্পনা করতে না পারলে আপনি সফল হবেন না। কল্পনা করুন, সফলতার জন্য মনে তীব্র ইচ্ছা জাগান।
হিল বলেছেন এভাবে, ‘আপনি আপনার কল্পনায় সম্পদ দেখতে না পারলে, কখনোই সেগুলো আপনার ব্যাংকে দেখতে পারবেন না।’
এসবের পাশাপাশি আপনার লেখা সম্ভাব্য উৎসগুলোর কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করুন। কোথায় গেলে, কার কাছে গেলে আপনার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে পারে তার খোঁজ করুন। প্রথমে সফল হবেন না। কেউ সেটি হয় না। যারা লেগে থাকে, তারাই কেবল সফল হয়।
লেগে থাকা নিয়ে নেপলিয়ন হিল তার বইয়ে অনেক উদাহরণ দিয়েছেন। বইটি সংগ্রহ করে বিস্তারিত পড়তে পারেন। এক পরিবারের কথা তিনি বলেছেন, যারা সোনার খনি খুঁড়তে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যান। অথচ সোনা পান না। যেখানে তারা হাল ছেড়ে দেন, তার তিন ফুট দূরে ছিল কাঙ্ক্ষিত সোনা!
এখানেও আসবে সেই শুরুর কথা। বিশ্বাস। যখন ওই পরিবার বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, তখনই তারা ব্যর্থ হন। শুধু টাকা নয়; জীবনের যেকোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এভাবে লিখে লিখে পরিকল্পনা সাজান। মনে রাখবেন, লক্ষ্য স্পষ্ট না হলে সফলতা দূরে থেকে যায়। বিশ্বাস রাখুন। লেগে থাকুন। প্রকৃতি আপনাকে রাস্তা দেখিয়ে দেবে।
এভাবেই হয়।